Monday, May 20, 2013

ত্রিশ লাখ মানুষের হত্যাকারীদের শাস্তি ফাঁসীই - আসুন নির্দ্বিধায় শাহবাগের পাশে দাঁড়ায়


যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আদৌ হবে কি না তা নিয়ে সংশয় ছিল। তাই যেদিন প্রথম বাচ্চু রাজাকারের ফাঁসীর সাজা ঘোষিত হয় সেদিন গোটা বাংলাদেশ আনন্দে মেতে উঠেছিল। সেই রায়ে মানুষের মনের ভিতর যে সংশয় তৈরী হয়েছিল তার অবসানও ঘটেছিল। সংশয় তৈরী হওয়ার যথেষ্ট কারণ ছিল। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করে শাস্তি প্রদানের কাজ যখন শুরু হয়েছিল তখনই( ১৯৭৫ সালে ) স্বাধীনতার শত্রুরা মুজিবর রহমানকে হত্যা করে বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয় তারপর কেটে গেছে ৩৮ বছর    সেই যুদ্ধাপরাধীরাই দেশের সংবিধান পাল্টে দিয়ে দেশটাকে ইসলামি রাষ্ট্র বানিয়ে রাষ্ট্র ও সমাজের বুকে মধ্যযুগীয় অত্যাচার-নিপীড়ন চালিয়েছে এতদিনতাদের অত্যাচারের প্রধান লক্ষ্য ছিল একদিকে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের হিন্দু সমাজ এবং অপরদিকে ধর্মনিরপেক্ষ এবং যুক্তিবাদী বুদ্ধিজীবী, লেখক ও কলা-কুশলীরা এবং আওয়ামী লিগ ও বামপন্থী দলগুলিতারা বারেবারে হিন্দুনিধন যজ্ঞে মেতে উঠেছে, তাদের অসংখ্য গ্রাম-মহল্লা, ব্যবসা-বাণিজ্য লুট করেছে, অসংখ্য মন্দির ও বিগ্রহ ধ্বংস করেছে বাংলাদেশকে কাফেরমুক্ত করার লক্ষ্য নিয়ে এ সব অত্যাচার সংগঠিত করেছেফলে নিরুপায় হিন্দু জনগণ দলে দলে প্রাণ রক্ষার্থে ভারতে পালিয়ে এসেছেন। এসব বর্বরতা চলেছে চার দশক ব্যাপী ধারাবাহিকভাবে। ফলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আশা মানুষ প্রায় ছেড়েই দিয়েছিল       প্রথম রায়ে যখন মানুষ ভরসা পেল যে  যুদ্ধাপরাধীরা ছড়া পাবে না, ঠিক তখনই আবার বিশ্বাসের উপর আঘাত নামলো। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল, যে নতুন করে আশা সঞ্চার করেছিল, আঘাত এল সেখান থেকেইসেই ট্রাইবুনালই কাদের মোল্লার সাজা দিল (৫ই ফেব্রুয়ারী) যাবজ্জীবন কারাদন্ড। অবিশ্বাস্য ও অগ্রহণযোগ্য রায়। কারণ বাচ্চু রাজাকার অপেক্ষা কাদের মোল্লার অপরাধের মাত্রা অনেক অনেক বেশী। তার শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদন্ড! এই রায় বাংলাদেশের মানুষকে প্রচন্ড আঘাত করে। তাঁদের মধ্যে জন্ম দেয় নানা প্রশ্নের কাদের মোল্লার শরীরি ভাষা সে প্রশ্নকে আরও জোরদার করে এ কিসের ইঙ্গিত? জামাত নেতারা বলেছিল, বিচারের নামে প্রহসন করলে তারা গৃহযুদ্ধ বাধাবে। সরকার কি তাহলে ঐ হুমকিতে ভয় পেয়ে জামাতের সঙ্গে ভিতর ভিতর বোঝাপাড়া করেছে? তাহলে কি আর কারও ফাঁসীর সাজা হবে না? তাহলে কি বিএনপি ক্ষমতায় এলে যুদ্ধাপরাধীরা জেল থেকে মুক্তি পেয়ে যাবে?   তবে কি বিচারের নামে প্রহসন শুরু হলো?
এই সব প্রশ্ন জন্ম দিয়েছে শাহবাগ আন্দোলনের কতিপয় তরুণ প্রথমে পথে নামলেন কাদের মোল্লার ফাঁসীর দাবীতে। সঙ্গে সঙ্গে সেই দাবীর সমর্থনে এগিয়ে আসল গোটা দেশ সর্বস্তরেরমানুষ ব্যক্তিগতভাবে এবং সংগঠনগতভাবে এই আন্দোলনের সমর্থনে এগিয়ে এসে একাত্মতা ঘোষণা করলেনশাহবাগ আন্দোলনের পক্ষে গোটা দেশের স্বতঃস্ফূর্ত ও উত্তাল সমর্থন দেখে ক্ষমতাসীন ১৪ দলের মহাজোটের সব কটি দলও এগিয়ে এলো শাহবাগের পাশে ।  
শাহবাগের আন্দোলনের প্রধান দাবী দুটি - সমস্ত যুদ্ধাপরাধীর মৃত্যুদন্ড ও জামাতি ইসলামের নিষিদ্ধকরণের দাবিযুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাবার জন্যে প্রথম থেকেই তৎপর জামাতি ইসলাম। এই দলটাই মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে পাক সেনাবাহিনীর সঙ্গে অস্ত্র ধরেছিল। এরাই তৈরী করেছিল সশস্ত্র রাজাকার, আল-শামস ও আল-বদর বাহিনীএইসব খুনে বাহিনীতে যোগ দিয়েছিল হাজার হাজার জামাতি ইসলামি নেতা ও কর্মী  সেই নেতাদের কয়েকজন হলো গোলাম আযম,দেলওয়ার হোসেন সাঈদী, কাদের মোল্লা, মতিউর রহমান নিযামি প্রমুখ। তাই শাহবাগ আন্দোলন জামাতি ইসলামকে নিষিদ্ধ করার যে দাবী তুলেছে তা একদম ঠিকআর তাইতো জামাতি ইসলাম প্রথম থেকেই যেমন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার অপপ্রয়াসে লিপ্ত, তেমনি শাহবাগ আন্দোলনের বিরোধিতাতেও সমান সোচ্চার।    
তথাপি শাহবাগ আন্দোলন  ক্রমশঃ শক্তিশালী ও বেগবান হয়েছে। এর ফলে সরকার ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল প্রশাসনে যে  চাপ সৃষ্টি হয়েছিল সে চাপ অনেকটাই সরে যায়সরকারও শাহবাগের দাবী মেনে ট্রাইবুনাল আইনের সংশোধন করে কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদন্ডের সাজার পরিবর্তে ফাঁসীর দাবীতে আদালতে আর্জি পেশ করে এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল-২ এর বিচারকগণও স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে দেলওয়ার হোসেনের বিচার করতে সক্ষম হন।শাহবাগ আন্দোলনে মানুষ যত সামিল হয়েছে জামাতিরা ততই ক্ষিপ্ত হয়েছে ওরা আরও অধিক ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে দেলওয়ার হোসেনকে মৃত্যুদন্ড দন্ডিত করলে পরতার নিঃশর্ত মুক্তির দাবীতে সশস্ত্র আক্রমণ শুরু করে পুলিশ, আওয়ামি লিগ সহ ১৪ দলের শাসক জোটের নেতা-কর্মী, শাহবাগ আন্দোলনের নেতা-কর্মী ও অসামরিক মানুষের উপর বিএনপিও সরাসরি ওদের পাশে দাঁড়িয়ে যায়ফলে এই দুই বর্বর শক্তির মিলিত আক্রমণ যে চেহারা নেয় তাকে তান্ডব বললেও কম বলা হয়। তান্ডব চালিয়ে গোটা দেশে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে চায়ছে যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষা করার জন্যে
ওদের হিংসাত্মক কার্যকলাপে ইতিমধ্যেই ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।  গোটা দেশে ধ্বংস হয়েছে কয়েক হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি ও সম্পদ, নিহত হয়েছে শতাধিক মানুষ। সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে হিন্দু সমাজের মানুষ ওঁরা তো মুসলিম মৌলবাদীদের রোষানলের লক্ষ্যবস্তু সবসময়ের জন্যেই ( কোরানে এই নির্দেশ রয়েছে মুমিনদের প্রতি) , এবার সেই রোষানল আরও অনেকগুণ তীব্র, কারণ ওঁরাও ঘাতক রাজাকার বাহিনীর অপরাধের বিরুদ্ধে সাক্ষী দেওয়ার ঔদ্ধত্য দেখিয়েছেন যা যুদ্ধাপরাধী ঐ রাজাকারদের ফাঁসীর রায়ের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রেখেছে। হিন্দুদের ওপর আক্রমণ এমন মাত্রায় পৌঁছেছে যে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন ‘অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল’কেও বিবৃতি দিতে হয়েছে। সেই বিবৃতির অংশ বিশেষ হলো এ রকমঃ ‘ ... ৪০টির বেশি হিন্দু মন্দিরে ভাঙচুর আগুন দেওয়া হয় ছাড়া, এই সম্প্রদায়ের বহু বাড়িঘর দোকানপাট জ্বালিয়ে দেওয়া হয় এতে গৃহহীন হয়েছে শত শত মানুষ আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়কে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী চলতে থাকা ব্যাপক সহিংস বিক্ষোভের প্রেক্ষাপটে এসব হামলা অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটছে ...এটি খুবই বেদনাদায়ক যে দৃশ্যত কেবল ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে এমন হামলার শিকার হচ্ছে তারা কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পদক্ষেপ নিতে হবে (প্রথম আলো, ০৮.০৩.১৩)। এই বিবৃতির পরও আক্রমণ অব্যাহত আছে।  ফলে তার বলি হয়েছে সহস্রাধিক মন্দির, শত শত বাড়ি-ঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।       
 জামাত শিবির  জঙ্গী ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপের পাশাপাশি চালাচ্ছে সীমাহীন অপপ্রচারও প্রচার করছে যে,  যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে যাদের গ্রেপ্তার করে বিচার করা হচ্ছে তারা নির্দোষ। হাসিনার সরকার যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল গঠন করেছে সেটা ইসলামকে ফাঁসীতে ঝোলানোর ট্রাইবুনাল। হাসিনা ইসলামবিরোধী আন্তর্জাতিক চক্রান্তের সঙ্গে হাত মিলিয়ে এই ট্রাইবুনাল গঠন করেছে বাংলাদেশের আলেম সম্প্রদায়কে ফাঁসীতে ঝুলিয়ে ইসলামকে বাংলাদেশ থেকে নিশ্চিহ্ন করার জন্যে। মাওলানা দেলওয়ার হোসেন সাইদি সেই চক্রান্তের শিকারহাসিনার সরকার তার চক্রান্তকে কার্যকরী করার লক্ষ্যেই নাস্তিকদের নিয়ে তৈরী করেছে শাহবাগে তথাকথিত গণজাগরণ মঞ্চ । এরূপ ভয়ঙ্কর ও মিথ্যা প্রচারণা চালানো হচ্ছে অবিরাম যার উদ্দেশ্য হলো ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের বিভ্রান্ত করে বাংলাদেশকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়া।
এরূপ পরিস্থিতিতে বিশ্বের সমস্ত গণতন্ত্রিক মানুষের শাহবাগের আন্দোলনকে সমর্থন এবং বিএনপি-জামাত জোটের তান্ডবের প্রতিবাদ করা উচিত। আমাদের( এপারের বাঙালিদের) তো সবার আগে করা উচিত । কারণ আমরা প্রতিবেশী। আর শুধু কি প্রতিবেশী? ঢাকার ঐ শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চ থেকে যখন ওরা জাতীয় সঙ্গীত গায়, ‘ আমার সোনার বাংলা ...’ , কিংবা নিজেদের আত্মপরিচয়ের ঘোষণা দিয়ে সম্মিলিত কন্ঠে বলে ‘তোমার আমার ঠিকানা/পদ্মা মেঘনা যমুনা’, কিংবা যখন ‘জয় বাংলা’ বলে শ্লোগানে গগণ বিদীর্ণ করে, তখন সেই সুর ও ধ্বনি কি আমাদের  হৃদয় স্পর্শ করে ন? আমাদের শরীরে শিহরণ জাগায় না ?  তখন ঢাকাকে কি সত্যি বিদেশ বলে মনে হয় ?  হয় না।
কিন্তু এটা খুবই দুঃখের যে আমরা সেভাবে শাহবাগের পাশে দাঁড়াতে পারলাম না,  পারলাম না এমন কি  বিএনপি-জামাত জোটের হিংস্র তান্ডবের প্রতিবাদ করতেওআমরা পারলাম না ,কিন্তু মুসলিম এখানকার মৌলবাদীরা চুপচাপ বসে নেই। তারা দেলওয়ার হোসেন সাঈদী সহ ঘাতক রাজাকারদের মুক্তির জন্যে ওপারে মুসলিম মৌলবাদীরা যে তান্ডব ও ধ্বংসলীলা চালাচ্ছে তার সমর্থনে কলকাতায় পথে নেমে পড়েছেমিছিল করছে। মিছিল থেকে ঘোষণা দিচ্ছে, হাসিনাকে এই বাংলায় তারা ঢুকতে দেবে না। রাজাকারদের মুক্তির দাবীতে ওরা ২৬ শে মার্চ কলকাতায় বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দিয়েছে। এ রাজ্যেও ওরা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে ওরা এমন কি ওদের কাগজগুলিকে (কলম, মীযান, নতুন গতি প্রভৃতি) বিএনপি-জামাত জোটের মুখপত্রে পরিণত করেছে এবং লাগাতার অপপ্রচার চালাচ্ছে।
মুসলিম মৌলবাদীরা এ রাজ্যে যখন দাপটের সঙ্গে চরম অন্যায়ের পক্ষে গলা ফাটাচ্ছে তখন কলকাতার অধিক বুদ্ধিসম্পন্ন বুদ্ধিজীবীরা শুধু শাহবাগ নিয়ে শুধু নিস্পৃহই থাকছেন না, উল্টে বলছেন – শুধু শাহবাগের পাশে দাঁড়ালেই হবে না, ফাঁসীর দাবী কতটা যৌক্তিক সে প্রশ্নও তুলতে হবে। এ কি শুধু মানবতার জন্যে প্রশ্ন তোলা ? নাকি মানবতার আড়ালে মুসলিম মৌলবাদীদের পদলেহন করা?  ৩০ লক্ষ মানুষের হত্যা ও ৩ লক্ষ নারীর ধর্ষণের অপরাধে যারা অপরাধী তাদেরও ফাঁসীর দাবী করা যাবে না? 

written on 20.03.2013

Monday, April 15, 2013

যুদ্ধাপরাধী ও মানবতার শত্রুদের বিরুদ্ধে বাঙলাদেশ যখন উত্তাল বিএনপি-জামাত তখন হিংসা ও অপপ্রচারে মাতাল

যুদ্ধাপরাধী রাজাকার কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদন্ডের রায় বাংলাদেশের জনগণ মেনে নিতে পারেন নি । পারা সম্ভবও ছিল না । বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে যাঁরা কিঞ্চিত পরিমাণেও ওয়াকিবহাল তাঁরা নিশ্চয় এটা বোঝেন। তৎকালীন পূর্বপাকিস্তানের মুসলিম মৌলবাদীরা পাকিস্তানের সেনাদের সহকারীর ভূমিকা পালন করেছিল মুক্তিযুদ্ধকে নৃশংসভাবে দমন করার জন্যে । গড়ে তুলেছিল রাজাকার, আল-বদর ও আল-শামস নামে তিনটি সশস্ত্রবাহিনী । যত বর্বর ও পিশাচের দল ছিল এই সব বাহিনীর সদস্য ও নেতা । তারা পাক সেনাদের সঙ্গে যৌথভাবে যে পৈশাচিক ও নারকীয় হত্যাযজ্ঞ এবং নির্যাতন-নিপীড়ন চালিয়েছিল বাঙালি জাতির উপর তা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল ঘটনা । হত্যা করেছিল ৩০ লক্ষ বাঙালিকে, আর ধর্ষণ করেছিল তিন লক্ষাধিক বঙ্গনারীকে । এত মানুষকে হত্যা ও এত নারীকে ধর্ষণ ? ভাবাই যায় না । শুধু তাই নয় । এর বাইরে আরও কত মানুষকে পঙ্গু ও ক্ষত-বিক্ষত করেছিল , কত বাড়ি-ঘর লুট করে তারপর আগুনে পুড়িয়ে ধ্বংসস্তুপে পরিণত করেছিল, কতশত হিন্দুদের ধর্মান্তরিত এবং কত মন্দির ও বিগ্রহ ধ্বংস করেছিল তার ইয়ত্তা নেই । এত বীভৎস ও ভয়াবহ যাদের অপরাধের মাত্রা তাদের মৃত্যুদন্ড ব্যতীত উপযুক্ত শাস্তি আর কিছু হতেই পারে না । তাই গত ৫ ই ফেব্রুয়ারী আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল যেদিন জামাত নেতা ও যুদ্ধাপরাধী রাজাকার কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদন্ডের শাস্তি ঘোষণা করে সেদিনই থেকেই বাংলাদেশের মানুষ রাস্তায় নেমে আন্দোলন শুরু করেন, যে আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল শাহবাগ চত্বরে তরুণদের হাত ধরে । আন্দোলনের দাবী একটাই- অন্য কোনো রায় নয়, কাদের মোল্লা সহ সকল যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসী চাই । এই আন্দোলন প্রথম থেকেই পথ চলা শুরু করেছে গণতান্ত্রিক পথ ধরে এবং অহিংস ও শান্তিপূর্ণ পথে । এই আন্দোলন ইতিমধ্যেই এক মাস অতিক্রম করেছে এবং গোটা দেশ তাতে সামিল হয়েছে তবুও আন্দোলনের সেই ধারা আজও অব্যাহত রয়েছে । আন্দোলনকারীরা ঘোষণা দিয়েছেন দাবী আদায় না করে ঘরে ফিরবেন না, কিন্তু কখনই ধৈর্য হারিয়ে অহিংস হয়ে ওঠেননি বা হয়ে ওঠার হুমকি দেন নি । গণতান্ত্রিক আন্দোলনের রীতি-নীতি মেনে তাঁরা তাঁদের দাবী পেশ করেছেন সরকারের কাছে সংসদের অধ্যক্ষের মাধ্যমে । শাহবাগের আন্দোলনে গোটা দেশের সর্বস্তরের লক্ষ লক্ষ মানুষের সক্রিয় অংশ গ্রহণ দেখে বিএনপি প্রথমে এর বিরোধিতা করার সাহস সাহস পায় নি, যদিও এই দলের দুজন শীর্ষস্থানীয় নেতার ঐ একই অপরাধে বিচার চলছে । জামাত-ই-ইসলাম প্রথম থেকেই বিরোধী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে । সেটাই স্বাভাবিক । কারণ যুদ্ধাপরাধীরা অধিকাংশই জামাতের নেতা-কর্মী । তারা শাহবাগে আন্দোলন রত তরুণদের ইসলামের দুষমণ বলে অভিহিত করেছে যাতে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা এই আন্দোলন থেকে সরে যায় । কিন্তু জামাতের এই মিথ্যা দোষারোপ বাংলাদেশের মানুষকে খুব বেশী বিভ্রান্ত করতে পারে নি । ফলে আন্দোলন ক্রমাগত শক্তিশালী ও বেগবান হয়েছে ও হয়ে চলেছে । এটা জামাতের পক্ষে প্রবল হতাশা ও দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে । এটা খুবই স্বাভাবিক । কারণ তারা জানে যে যুদ্ধাপরাধীদের যদি রক্ষা করা না যায় তবে তারা অস্তিত্বের সংকটের মুখে পড়বে । তাই তারা মরিয়া হয়ে একদিকে তাদের অপপ্রচারের মাত্রা বাড়ায়, অপরদিকে হিংসা ও সন্ত্রাসের পথ অবলম্বন করতে শুরু করে । প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, হিংসা ও খুন-সত্রাসই হলো জামাত-ই-ইসলাম তথা মুসলিম মৌলবাদীদের প্রধান হাতিয়ার । মধ্যযুগীয়, পশ্চাদপদ ও প্রতিক্রিয়াশীল শরিয়তি আইনের সমালোচনা ও বিরোধিতা করলেই ওরা ইসলামের অবমাননা মানব না বলে কিরূপ ক্ষিপ্ত ও হিংস্র হয়ে ওঠে এবং হত্যা, অগ্নি সংযোগ ও লুটপাটে মত্ত হয়ে ওঠে তা তো সর্বজন সুবিদিত । এভাবেই ভয়-ভীতি ও আতঙ্ক সৃষ্টি করে বিরোধী ও ভিন্ন স্বর স্তব্ধ করাটা ওদের একটা রণনীতি । ঐ পথেই ওরা দেলু রাজাকারকে বাঁচাতে পরপর দুদিন হরতাল ডেকেছিল যদিন তার সাজা ঘোষণার দিন ধার্য ছিল । উদ্দেশ্য ছিল বিচারকমন্ডলীকে আতঙ্কগ্রস্ত করা যাতে তাঁরা দেলু রাজাকারকে সর্বোচ্চ শাস্তি দিতে ভয় করেন । প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, সর্বস্তরে আতঙ্ক সৃস্টি করার জন্যে ইতিমধ্যেই বারবার হুমকি দিয়েছে যে জামাতি ইসলামের নেতা-কর্মীদের মুক্তি না দিলে তারা গৃহযুদ্ধ বাধাবে । এদিকে শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চ থেকে দেশবাসীর কাছে জামাতের ডাকা হরতাল ব্যর্থ করার ডাক দেওয়া হয় । গোটা দেশে টানটান উত্তেজনার মধ্যে ২৮ শে ফেব্রুয়ারী আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল-১ মাওলানা দেলওয়ার হোসেন সাঈদী তথা দেলু রাজাকার তথা দ্যেইলা রাজাকারের ফাঁসীর সাজা ঘোষণা করে । এই রায়ের জন্যে অপেক্ষা করছিল গোটা দেশ এবং তারজন্যেই জামাতের ডাকা হরতাল ব্যর্থ করতে রাস্তায় নেমেছিল সেদিন । দেলু রাজাকারের মৃত্যুদন্ডের রায়ে সমগ্র দেশে তাই খুশীর লহর বয়ে যায় । উল্টোদিকে জামাত শিবিরে নেমে আসে প্রবল হতাশা ও বিপন্নতার কালো মেঘ । ফলে তারা আরও মরিয়া হয়ে ওঠে এবং মরণ কামর দিতে বল্গাহীন খুন-সন্ত্রাস ও অগ্নিসংযোগে মত্ত হয়ে ওঠে । ফাঁসীর রায় কী আনন্দ বয়ে নিয়ে এসেছিল সে প্রসঙ্গে ১ লা মার্চ প্রথম আলো (বাংলাদেশের কাগজ) লিখেছে, “সাঈদীর ফাঁসির আদেশ হওয়ার পর সারা দেশে জনতা আনন্দ-উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে, মিষ্টি বিতরণ করে। শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চে রায়ের খবর আসার সঙ্গে সঙ্গে আনন্দের বন্যা বয়ে যায়। অনেক মুক্তিযোদ্ধা এবং জাগরণ মঞ্চের যেসব কর্মী ২৪ দিন ধরে রাজপথে অহিংস আন্দোলন করছেন, তাঁদের অনেকে আনন্দে কেঁদে ফেলেন।” সেদিন মানুষ কত স্বতঃস্ফুর্তভাবে জামাতের হরতাল ভাঙতে পথে নেমেছিল এবং হতাশাগ্রস্ত জামাত কত ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠেছিল তার ছবি এঁকেছিল সে দেশেরই আর একটি কাগজ, জনকন্ঠ, এভাবেঃ “রাজপথে নামতেই পারেনি জামায়াত শিবির ॥ ফ্লপ হরতাল০ প্রতিহত করল জনতা০ রীতিমতো যানজট০ কয়েক স্থানে ঝটিকা মিছিল, ককটেল, বোমা বিস্ফোরণ ওভাংচুর০ কমলাপুর স্টেশনে ট্রেনের বগিতে আগুন০ আটক ৩০।” জনকন্ঠের প্রতিবেদনে আরও লেখা হয়, “রাজধানীর প্রধান প্রধান সড়কগুলোতে যানজটের দৃশ্য নতুন কিছু নয়। তবে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টিকারী জামায়াতের ডাকা হরতালেও যদি নগরীর বিভিন্ন রাজপথে এ দৃশ্য দেখা যায়, তাহলে সহজেই বোঝা যায় হরতালের ন্যূনতম প্রভাবও পড়েনি রাজধানীতে। অর্থাৎ আরও একটি ফ্লপ হরতালের কর্মসূচী শেষ করল দেশবিরোধী সংগঠন জামায়াত।” জামাতিদের আক্রমণের লক্ষ্য ছিল একদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও শাহবাগ আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ এবং অপরদিকে হিন্দু সম্প্রদায় । হিন্দু সম্প্রদায় তো সব সময়ই তাদের আক্রমণের লক্ষ্য যার ফলে সে দেশে হিন্দু জনসংখ্যা ২২% থেকে নেমে দাঁড়িয়েছে ৯.৫%-এ , এবার হিন্দুদের ওপর আক্রোশ অনেকগুণ তীব্র , কারণ যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে তাঁদের সাক্ষী প্রদান ফাঁসীর রায়ের ক্ষেত্রে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে । দেলওয়ার হোসেনের ফাঁসীর রায়ে ক্ষিপ্ত হয়ে জামাতিরা পাগলা হাতির মত উন্মত্ত হয়ে যে বীভৎস আক্রমণ সংঘটিত করেছে হিন্দুদের ওপর তা বিশদে উল্লেখ করার অবকাশ এখানে নেই । তবুও সেই পৈশাচিক আক্রমণের ছবিটার দিকে একটু চোখ ফেরানো যাক । সমকাল লিখেছে ৭ই মার্চ, “ চার স্থানে প্রতিমা ভাংচুর আনন্দ আশ্রমে আগুন এবার জয়পুরহাটের কালাইয়ে শিব এবং ভোলার বোরহানউদ্দিনসহ চার স্থানে কালী প্রতিমা ভাংচুর করেছে দুর্বৃত্তরা। ফরিদপুরের সালথায় পুড়িয়ে দিয়েছে আনন্দ আশ্রম মন্দির।... ভোলার বোরহানউদ্দিনে রাতের আঁধারে পক্ষিয়া ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের রায়মোহন ডাক্তার বাড়ির কালীমন্দিরের একটি প্রতিমা ভাংচুর করেছে দুর্বৃত্তরা। এছাড়া কাচিয়া ইউনিয়নের বোরহানগঞ্জ এলাকায় একই সময়ে ২৬টি বাড়ির খড়ের গাদা, গোয়ালঘর ও রান্নাঘরে অগি্নসংযোগ করে সংখ্যালঘু এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টির চেষ্টা চালানো হয়েছে। অগি্নসংযোগ করা বাড়ির মধ্যে ৬ হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ি রয়েছে”। সংখ্যালঘুদের ওপর যে বীভৎস আক্রমণের ঘটনা ইতিমধ্যেই ঘটেছে তা লিখলে একটা গ্রন্থ হয়ে যাবে । আক্রমণ এমন মাত্রায় সংগঠিত হচ্ছে যে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালকেও উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়ে সরকারকে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্যে অনুরোধ জানাতে হয়েছে । তারা বিবৃতিতে বলেছে, “ ... বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা, বিশেষত বর্তমান উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে চরম ঝুঁকিতে রয়েছে। এটি খুবই বেদনাদায়ক যে দৃশ্যত কেবল ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে এমন হামলার শিকার হচ্ছে তারা। কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পদক্ষেপ নিতে হবে।” (প্রথম আলো, ৮.৩.১৩) । জামাতিরা যখন ক্রমশঃ হিংস্র হয়ে উঠেছে ঠিক তখনই বিএনপি খোলস ছেড়ে বেরিয়ে এসে সরাসরি তাদের পাশে দাঁড়িয়ে যায় । ফলে পুলিশ এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর আক্রমণের মাত্রা বহুগুণে বৃদ্ধিলাভ করে । বিএনপি প্রকাশ্যেই হিংসার মাধ্যমে সরকার পতনের ডাক দেয় । ফলে গোটা দেশে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি তৈরী হয় । বিএনপি-জামাত জোট গণতান্ত্রিক পথ পরিহার করে সাধারণ জনতা ও পুলিশের উপর লাঠি-বোমা-গুলি চালিয়ে পরিকল্পনামাফিক সর্বত্র শান্তি-শৃঙ্খলা ধ্বংস করতে অপতৎপরতা চালাচ্ছে । এদের এই অপতৎপরতা তথা হিংসার বলি হয়েছে ইতিমধ্যেই প্রায় একশ মানুষ । অথচ এই জোটই অভিযোগ যে, সরকার শান্তিপূর্ণ মিছিল ও আন্দোলনে গুলি চালিয়ে গণহত্যা চালাচ্ছে । এই মিথ্যাচার চলছে বল্গাহীনভাবে । মিথ্যাচার চালানো হচ্ছে আর এক ধরণেরও যা আরও মারাত্মক । বিএনপি-জামাতের পক্ষ থেকে অভিযোগ তোলা হয়েছে যে, যুদ্ধাপরাধের দায়ে জামাতি ইসলামের যে সব নেতার বিচার হচ্ছে তারা সবাই নির্দোষ । হাসিনা সরকার এই বিচারের নামে জামাতি ইসলাম ও মুসলিম সমাজের ধুর্মীয় পুরো নেতৃবৃন্দকে ফাঁসীতে ঝুলানোর নীল নক্সা বাস্তবায়নের অপচেষ্টা চালাচ্ছে । আসলে এই সরকার বাংলাদেশ থেকে ইসলামকে মুছে দেওয়ার এক গভীর ও ভয়ঙ্কর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত । এই জঘন্য মিথ্যাচার চালানো হচ্ছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশ গড়ার দাবীতে যে উত্তাল গণজাগরণ ও গণআন্দোলন তৈরী হোয়েছে তা ব্যর্থ করে দিতে এবং পুনরায় ক্ষমতায় ফিরে আসার জন্যে । এই ভয়ঙ্কর কুৎসিত অপপ্রচার ও মিথ্যাচার শুধু বাংলাদেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে না , এটা চলছে সমগ্র বিশ্বজুড়ে । এই অপপ্রাচারে সামিল পশ্চিমবঙ্গের মুসলিম মৌলবাদীরাও । এখানকার একটি বাংলা খবরের কাগজ ও দুটি সাপ্তাহিক কাগজ জামাতি ইসলাম ও বিএনপির মুখপাত্রের ভূমিকায় অবতীর্ণ হোয়েছে । জামাতিরা, বিএনপির অনেকেও, হিন্দুদের ওপর নৃশংস অত্যাচার ও নিপীড়ন চালাচ্ছে অথচ বিএনপি তার দোষ আওয়ামি লিগের ঘাড়ে চাপিয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবী করছে । আর সেই কথাটা এখানকার মুসলিম মৌলবাদীরা তাদের খবরের কাগজে ফলাও করে প্রচার করছে । ওদের পরিচালিত বাংলা দৈনিক ১০ই মার্চ তিন কলম জুড়ে সে খবরটি হেড লাইন করেছে এভাবে, ‘সংখ্যালঘুদের ওপর হামলাঃ বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবী বিএনপির’ । শাহবাগ গণজাগরণ মঞ্চের নেতা আহমেদ রাজীব হায়দারকে কারা এবং কেন হত্যা করেছে তা দিবালোকের মতই স্পষ্ট । কিন্তু তার দোষ চাপিয়েছে বিএনপি সরকারের ঘাড়ে । সেই ঘৃণ্য মিথ্যা সংবাদটিরও তিন কলাম জুড়ে শিরনাম করেছে ঐ দৈনিকটি গত ২১ শে ফেব্রুয়ারী । শিরনামটি এরূপঃ ‘ শাহবাগঃ বিএনপির মতে রাজীব খুনের দায় সরকারের’ । হত্যার রাজনীতির আশ্রয় নিয়েছে বিএনপি-জামাত জোট, অথচ ঘুরিয়ে ওরাই দোষারোপ করছে সরকার ও আওয়ামি লিগের । সেটাও নিষ্ঠার সঙ্গে প্রচার করছে ঐ দৈনিকটি পশ্চিমবঙ্গে । ঐ তারিখেই ‘বাংলাদেশ তীব্র হচ্ছে হত্যার রাজনীতি’ এই শিরনামে একটি দীর্ঘ প্রতিবেদন ছাপা হয় প্রথম পাতায় । ঐ প্রতিবেদনে ছত্রে ছত্রে অভিযোগ করা হয় যে, নিরীহ আন্দোলনকারীদের পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালিয়ে হত্যা করছে । প্রতিবেদনে এক জায়গায় লেখা হয়েছে, ‘ অন্যদিকে, কক্সবাজারে ‘জামায়াতে ইসলামি বাংলাদেশ’ মাওলানা সাঈদীর মুক্তির দাবীতে হাশেমিয়া আলিয়া মাদ্রাসা জামে মসজিদে জুম্মার নামায শেষে মিছিলের জন্য সংঘবদ্ধ হওয়ার চেষ্টা করছিল, সেই সময় পুলিশ তাদের লক্ষ্য করে এলোপাথাড়ি গুলি চালায় বলে অভিযোগ । গুলিতে এক মহিলা সহ ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে ।’ জামাতি ইসলামের মিছিল থেকে ইট, পাথর,বোমা,গুলি প্রভৃতি ছোঁড়া হয়েছিল এবং মারমুখী সশস্ত্র ও হিংস্র জমায়েতকে ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশকে কঠোর ভূমিকা নিতে হয়েছিল তা অবলীলায় চেপে যাওয়া হয়েছে । শাহবাগ আন্দোলনের বিরুদ্ধে চালানো হচ্ছে অবিরাম কুৎসা প্রচার । তার একটি নমুনা এরূপঃ ঐ কাগজটি লন্ডনের একটি দৈনিককে উদ্ধৃত করে ১০ ই মার্চ একটি প্রতিবেদন ছাপায় ‘শাহবাগ বিভক্ত করেছে দেশকে’ এই শিরনামে । কিভাবে বিভক্ত করেছে ? প্রতিবেদনে বলে হয়েছে, ইসলাম বিরোধী ও ইসলামপন্থী- এই দুই শিবিরে দেশ বিভক্ত হয়ে পড়েছে । এ এক নজিরবিহীন মিথ্যাচার । হ্যাঁ, দেশ এখন বিভক্ত দুটো শিবিরে । একদিকে রয়েছে যারা যুদ্ধাপরাধীদের কঠোর শাস্তি চায়, স্বাধীন বাংলাদেশ চায়, গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশ চায় । আর একটা শিবিরে রয়েছে যারা এর বিপ্রতীপ অবস্থানে রয়েছে । দ্বিতীয় শিবির ক্রমশঃ দুর্বল হয়ে পড়ছে বলে ইসলামের দোহায় দিয়ে মুসলমানদের সঙ্গে প্রতারণা করছে । প্রতারণা করছে এমন কথা বলেও যে , বাংলাদেশের জনমত দেলওয়ার হোসেনের ফাঁসীর সাজার বিরুদ্ধে । একটি কষ্টকল্পিত সমীক্ষা রিপোর্ট তুলে ধরে বলছে ৮৭% মানুষ দেলওয়ার হোসেনের মুক্তি চায় । এই অবাস্তব ও সম্পূর্ণ মিথ্যা সংবাদটি এ রাজ্যেও মুসলিম মৌলবাদীরা কলকাতা থেকে প্রকাশিত তাদের একটি সাপ্তাহিক কাগজে গত ৩রা মার্চের সংখ্যায় ছেপেছে । এই সাপ্তাহিকটি আরও জানাচ্ছে যে, বাংলাদেশের মানুষ জামাতি ইসলামকে নিষিদ্ধের বিরুদ্ধেও । জামাত শিবির সবচেয়ে বেশী অপপ্রচার চালাচ্ছে ও মিথ্যাচার করছে দেলওয়ার হোসেন সংক্রান্ত বিষয়ে । সেই মিথ্যা প্রচারণাও এ রাজ্যে বল্গাহীনভাবে মুসলিম মৌলবাদীরা তাদের কাগগজ করে যাচ্ছে নির্দ্বিধায় ও অনায়াসভঙ্গীতে । উক্ত সাপ্তাহিকটি ৩রা মার্চের সংখ্যাতে একটি বিশাল প্রতিবেদন ছেপেছে যার শিরনাম হলো- সাঈদীর বিরুদ্ধে মামলা শতাব্দীর নিকৃষ্টতম মিথ্যাচার । দেলওয়ার হোসেন নির্দোষ এই দাবীকে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলার জন্য তার পরিচয় ও পরিচিতি নিয়ে নানা প্রকার বিভ্রান্তিকর খবর প্রচার করা হচ্ছে । দেলওয়ার হোসেনের তিনটি পরিচয় রয়েছে । একধারে তিনি জামাতি ইসলামের আমীর, অন্যদিকে তিনি একজন বিখ্যাত মাওলানা । তার আর একটা পরিচয় হলো তিনি একজন রাজাকার ও যুদ্ধাপরাধী । তৃতীয় পরিচয়টাকে অস্বীকার ও আড়াল করার জন্যে তার দ্বিতীয় পরিচয়টাকে অতিমাত্রায় ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে প্রচারের আলোয় নিয়ে আসা হচ্ছে । কারণ মুসলিমদের হৃদয়ে সর্বদা বিরাজ করে মাওলানাদের প্রতি অপরিসীম শ্রদ্ধা,সহানুভূতি, সম্মান ও বিশ্বাস । মাওলানারা খুন-খারাবি করতে পারে বলে মুসলমানরা বিশ্বাস করতে চায় না । মাওলানা দেলওয়ার হোসেনের প্রতি সেই শ্রদ্ধা ও আস্থার পারদ রয়েছে আরও অনেক উঁচুতে, কারণ তিনি একজন সাধারণ মাওলানা নয়, একজন জগদ্বিখ্যাত মাওলানা । তার এই পরিচয়টাকেই নানাভাবে সামনে রাখা হচ্ছে । তাকে তুলে ধরা হচ্ছে ‘ আন্তর্জাতিক মুফাসসিরে কুরআন, খ্যাতিমান আলেমে দ্বীন, কুরআনের পাখী, কুরআন প্রচারক, জনগণের কন্ঠস্বর, সুবক্তা আল্লামা দেলওয়ার হোসেন সাঈদী’ এই পরিচয়ে । তকে ‘মুসলিম উম্মাহর অহংকার’ বলে সম্পাদকীয় লিখেছে উক্ত সাপ্তাহিকটি ৩রা মার্চের সংখ্যায় । ঐ কাগজটি ১৭ই ফেব্রুয়ারির সংখ্যায় অতিরঞ্জনের সকল সীমা ছাড়িয়ে গিয়ে দেলওয়ার হোসেনকে তুলনা করেছে মুসা নবী, ইব্রাহীম নবী এবং খলিফা আবু বকর ও খলিফা ওমর ফারুকের সঙ্গেও । কাগজটি লিখেছে, যেখানেই ফেরাউন হামাগুড়ি দেওয়ার চেষ্টা করেছে , সেখানেই মুসা গর্জন করে উঠেছেন । নমরুদ যেখানে কথা বলার চেষ্টা করেছে ইব্রাহীম সেখানে আবির্ভূত হয়ে তার বাকরুদ্ধ করেছে । যেখানেই আবু জেহেল ফণা বিস্তার করার চেষ্টা করেছে সেখানেই ওমর, আবু বকর সে ফণা দলিত-মথিত করেছে । এসব অপপ্রচার, মিথ্যা প্রচার ও অতিশয় রঙ লাগানো প্রচারের উদ্দেশ্য একটায় । তা হলো, যুদ্ধাপরাধী রাজাকার দেলওয়ার হোসেনকে বাঁচানো এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত ও ভন্ডুল করা । ঘটনাচক্রে রাজাকার দেলওয়ার হোসেন ও মাওলানা দেলওয়ার হোসেন সাঈদী একই ব্যক্তি । বিচার ও শাস্তি হয়েছে প্রথম ব্যক্তির , দ্বিতীইয় ব্যক্তির নয় । সে কথাটা বিচারকরা খুব স্পষ্ট করে রায় দেওয়ার পূর্বেই ব্যক্ত করেছেন । সে কথাটা মানুষের সামনে আমাদের তুলে ধরতে হবে । কী সে কথা ? তা হলো- আসন গ্রহণ করার পর বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবীর বলেন, ‘আমরা আজ (বৃহস্পতিবার) যে রায় দিতে যাচ্ছি, তার আগে দুটো কথা বলতে চাই। এই মামলার আসামি দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, তাঁর পরিচয় বলার কোনো দরকার নাই। ওনার ওয়াজ শোনার জন্য হাজার হাজার মানুষ যান। তিনি শুধু প্রখ্যাত মওলানা নন, তিনি দুইবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য। তিনি জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির। প্রশ্ন আসতে পারে, আমরা কি জামায়াতের নায়েবে আমির বা সাংসদ হিসেবে তাঁর বিচার করছি? উত্তর, না। আসুন, আমরা ফিরে যাই ৪০ বছর আগে। তখন সাঈদী ৩০ বছরের যুবক ছিলেন। পিরোজপুরের সাউথখালি গ্রামে তাঁর বাড়ি, বিবাহিত ও এক সন্তানের জনক। তখন তিনি ধর্মীয় বা রাজনৈতিক নেতা ছিলেন না, সাধারণ মানুষ ছিলেন। গ্রামের লোকেরা তাঁকে দেলু বলে ডাকত। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি পিরোজপুরের শান্তি কমিটির সদস্য ছিলেন। তিনি আলিম পাস, উর্দুতে ভালো কথা বলতে পারতেন। তাই পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে তাঁর ভালো যোগাযোগ তৈরি হয়।’হ্যাঁ, বিচার ও শাস্তি হয়েছে ঐ কুখ্যাত দেলু রাজাকারের যে লোকটা নির্মম ও নৃশংসভাবে বহু লোককে হত্যা করেছে, বহু হিন্দু নারীকে ধর্ষণ করেছে, বহু হিন্দু বাড়ি লুটপাট করেছে এবং বহু হিন্দু নর-নারীকে হত্যা করার ভয় দেখিয়ে মুসলমান বানিয়েছে এবং জোর করে নামায ও রোযা রাখতে বাধ্য করেছে । ( বিঃদ্রঃ- প্রবন্ধে যে দৈনিক খবরের কাগজ ও সাপ্তাহিক কাগজটির উল্লেখ রয়েছে তাদের নাম হলো যথাক্রমে ‘কলম’ ও ‘মীযান’ । It was written on 20.03.13 for 'Dainik Statesman' and that paper published it on 31.03.13)

Sunday, March 17, 2013

যুদ্ধাপরাধীকে ফাঁসির দন্ড দিয়ে বাংলাদেশ সে দেশের মুক্তিযুদ্ধের শহিদদের প্রতিই গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করলো ।



২১ শে জানুয়ারী তারিখটি স্থান করে নিল বাংলাদেশের ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণোজ্জ্বল আভায় বাংলাদেশের  ইতিহাসের শোভা বর্ধন করবে এই দিনিটি , কেননা এই দিনেই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল-২  জামাত-ই-ইসলামের সাবেক সদস্য মাওলানা আবুল কালাম আযাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকারকে যুদ্ধাপরাধী  সাব্যস্ত করে মৃত্যু দন্ডাদেশ প্রদান করেছে । ট্রাইবুনাল বলেছে এই আদেশ ফাঁসীতে ঝুলিয়ে কার্যকর করতে ।  এই রায়টি ছিল বাংলাদেশের মানুষের কাছে বহু প্রতীক্ষিত ও আকাঙ্খিত । মানুষ দীর্ঘদিন ধরে দাবী জানিয়ে আসছিলেন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করে তাদের চরম শাস্তি দেওয়ার জন্য ।
যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে বিচার করে শাস্তি দেওয়াটা মোটেই সহজ কাজ ছিল নাপ্রথম থেকেই দেশের ভিতর থেকে এবং এমনকি  আন্তর্জাতিক দুনিয়া থেকেও প্রবল বাধা ছিল যাতে বাংলাদেশ সরকার কোনো মতেই যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে বিচার সংগঠিত করতে না পারে । সৌদি আরব, ইরান, পাকিস্তান প্রভৃতি বহু মুসলিম দেশ ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরুদ্ধে । তাই এই দেশগুলি নানাভাবে ষড়যন্ত্র চালিয়েছে বাংলাদেশ সরকার যখনই যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে বিচার শুরু করার উদ্যোগ নিয়েছে । আর বাংলাদেশের ভিতরে পাকপন্থী বিএনপি এবং জামাআত ও অন্যান্য মুসলিম মৌলবাদীগুলি তো সর্বদাই ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত করে এসেছে ওই বিচার প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে । মুজিব সরকার ৬৫ হাজার বাংলাদেশী যুদ্ধাপরাধীকে গ্রেপ্তার করে জেলে পুড়ে তাদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু করেছিল । তখন চিকন আলী নামের একজন কুখ্যাত রাজাকারকে ফাঁসীতে ঝোলানোও হয়েছিল । মুজিবকে হত্যা করে সেবার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়াকে স্তব্ধ করে দিয়েছিল পাকপন্থী বাংলাদেশীরা । জিয়াউর রহমানের সরকার ওই ৬৫ হাজার যুদ্ধাপরাধীদের সকলকেই ছেড়ে দিয়েছিল । শুধু তাই নয় , জিয়াউর রহমান যুদ্ধাপরাধী জামাআতের সকল সদস্য সহ ও অন্যান্য সমস্ত মুসলিম মৌলবাদী নেতাদের রাজনৈতিক পুনুর্বাসনও দিয়েছিলেন । জিয়া পরবর্তী জামানায় তাঁর পত্নী জিয়ার কাজের ধারাকে আরও অনেকদূর এগিয়ে নিয়ে গেছেন । তিনি এইসব যুদ্ধাপরাধীদের নিয়ে নির্বাচিনী জোট করে তাদের ক্ষমতার অংশীদার করে নিতেও দ্বিধা করেন নি । আওয়ামি লিগের বর্তমান মহাজোট সরকার যখন এবার আবার দৃঢ় সঙ্কল্প নিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু করে তখনও একেবারে গোড়া থেকেই খালেদা জিয়া  জামাতকে সঙ্গে নিয়ে যৌথভাবে নানা অজুহাত খাড়া করে পদে পদে বাধা দিতে শুরু করেনট্রাইবুনালের বিচার প্রক্রিয়া যত এগিয়েছে বিএনপি ও জামাতের পক্ষ থেকে সেই বাধা তত তীব্র করা হয়েছে । শেষের দিকে একেবারে মরিয়া হয়ে প্রায় প্রতিদিন হরতাল, অবরোধ, মিছিলের নামে সহিংস রাজনৈতিক কর্মসূচী দিয়ে ব্যপক ভাঙচুর, অগ্নি সংযোগ , পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে বাংলাদেশের জনজীবন ও বাংলাদেশের বৈধ সরকারকে স্তব্ধ করে দিতে চেয়েছে । এসব কর্মসূচীর প্রধান লক্ষ্যই ছিল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়াকে ভেস্তে দেওয়া । এতশত বাধা অতিক্রম করে সেই বিচার প্রক্রিয়াকে অব্যাহত রাখা কতখানি সম্ভব তা নিয়ে সর্বস্তরে সংশয় ছিল । শেষ পর্যন্ত সকল বাধা অতিক্রম করে এবং সকল সংশয়ের অবসান ঘটিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল-২ তার রায় ঘোষণা করতে সক্ষম হলো । এটা বাংলাদেশের মানুষের একটা বিরাট জয় এ জয় বাংলাদেশের মানুষের আর একটা স্বাধীনতা অর্জনের তুল্য । এই জয় বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী সকল প্রতিক্রিয়াশীল শক্তির মনোবল ভেঙে দিতে সহায়ক
হবে । এই জয়ের ফলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব আরও শক্তিশালী,  সুদৃঢ় নিরাপদ হবে । এই ঐতিহাসিক জয়ের প্রধান কৃতিত্ব অবশ্যই প্রধান মন্ত্রী হাসিনার । তাঁর অসীম সাহস, প্রবল সদিচ্ছা ও দৃঢ় সঙ্কল্প ব্যতীত এই জয় অর্জন করা অসম্ভব ছিল । মুজিবের হত্যাকারীদের এবং  যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও চরম শাস্তি দাবী ছিল ইতিহাসের দাবী । মুজিবের হিত্যাকারীদের বিচারের মাধ্যমে হাসিনা ইতিপূর্বেই ফাঁসীতে ঝুলিয়েছিলেন । বাকি ছিল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করে শাস্তি প্রদান করা । সেই দাবীও তিনি মিটিয়ে দিলেন পাহাড় প্রমাণ বাধা ও শত-সহস্র ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন-ভিন্ন করে । ইতিহাসের এই বিশাল দায় মিটিয়ে হাসিনা এবার নিসংশয়ে নিজেই এক উজ্জ্বল ইতিহাস রচনা করে ফেললেন । এই স্বর্ণালী ইতিহাস রচনার কৃতিত্ব প্রাপ্য ট্রাইবুনালের বিচারপতিদের, সরকারী কৌসুলীদের এবং ট্রাইবুনালে গিয়ে যাঁরা সাক্ষ্য প্রদান করেছেন তাঁদেরও , কারণ তাঁদের প্রত্যেকেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে বিচার প্রক্রিয়াকে আকাঙ্খিত পরিণতি দিতে নির্ভিক ভূমিকা পালন করেছেন । এবং কৃতিত্ব প্রাপ্য অবশ্যই সেই অসংখ্য বাংলাদেশী জনগণের যাঁরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও শাস্তির দাবীতে অকুতোভয়ে চার দশকের বেশী সময় ধরে নিরলস সংগ্রাম পরিচালনা করে এসেছেন ।
যুদ্ধাপরাধী মাওলানা আযাদের  মৃত্যুদন্ডের রায়ে  বাংলাদেশের  মানুষ ভীষণ খুশী কারণ  এটা ছিল তাঁদের গণদাবী ।  ১৯৯১ সালে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে নতুন করে শুরু হয়েছিল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও শাস্তির দাবীতে আন্দোলন । তার পরের বছর বাংলাদেশের মানুষ সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করার লক্ষ্যে যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে গণআদালত স্থাপন করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছিলেনঐ গণআদালত যুদ্ধাপরাধীদের মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত করেছিল । একুশ বছরের দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর সেই দাবী পূরণ হয়েছে, ফলে স্বাধীনতা প্রিয় মানুষদের তো খুশী হওয়ারই কথা । তবে সবচেয়ে বেশী খুশী একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে যে সকল নিরস্ত্র বেসামরিক লোকজন নিহত হয়েছিলেন এবং যাঁরা যুদ্ধ করতে গিয়ে শহীদের মৃত্যু বরণ করেছিলেন তাঁদের পরিবারের লোকজন । তাঁদের স্বজন হারানোর ব্যাথা এবার অনেকটাই প্রশমিত হবে । কেউ কেউ বলেছেন যে তাঁদের নিহত স্বজনদের আত্মা এবার শান্তি পাবে, এটা তাঁদের কাছে এক বিরাট পাওনা । মাওলানা আযাদের হাতে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হওয়া চিত্তরঞ্জন দাশের পুত্র গোপাল দাস The Daily Star এর প্রতিনিধিকে তাঁর সেই খুশীর কথা ব্যক্ত করেছেন এভাবে, My father’s soul will now rest in peace .’  গোপাল বাবু আরও বলেছেন যে, ‘আমার মত আরও হাজার পুত্র, কন্যা এব্বং শহীদদের পরিবারের সদ্যসরা বাকী যুদ্ধাপরাধীদের ঐ একই সাজা দেখার জন্য গভীর আগ্রহ ও আশা নিয়ে অপেক্ষা করছে । দি ডেইলি স্টার লিখেছে, ‘ Gopal das said: Like me , thousands of sons, daughters and family members of martyrs are waiting to see other war criminals walking gallows.’
ট্রাইবুনালের এই রায়ের আর একটি অতি গুরুত্ত্বপূর্ণ দিক আছে । জামাত ও বিএনপি-র পক্ষ থেকে এতদিন ধরে দেশের মধ্যে ও দেশের বাইরে সারা বিশ্বজুড়ে হাসিনার বিরুদ্ধে ব্যাপকপ্রচারাভিযান সংগঠিত করে এসেছে এ কথা বলে যে যুদ্ধাপরাধী হিসাবে যাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাঁরা সবাই নির্দোষ । সম্পূর্ণ  রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়েই বেছে বেছে ধর্মভীরু সেই সব আল্লাহ ভক্ত মৌলানাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে । ট্রাইবুনালের  এই রায় প্রমাণ করে দিল, আসলে জামাত ও বিএনপি-র এই প্রচারই মিথ্যা ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত এবং  জামাতের  
নেতৃবৃন্দ ও সদস্যরা তথা আল বদর ও রাজাকার বাহিনীর নেতা ও কর্মীরা সকলে প্রকৃতই যুদ্ধাপরাধী ।  আবুল কালাম আযাদের বিরুদ্ধে দেওয়া  রায়ে মুক্তিযুদ্ধকালে রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর ভূমিকাও উল্লেখ করা হয়েছে। রায়ে বলা হয়, ‘সংগঠন হিসেবে জামায়াত মুক্তিযুদ্ধকালে প্যারা-মিলিশিয়া বা সহযোগী বাহিনী গঠন করে পাকিস্তান রক্ষার নামে নিরস্ত্র বাঙালি বেসামরিক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছিল ’ সুতরাং এটা স্পষ্ট যে, এই রায়ের আঘাতে খসে পড়লো  জামাত ও বিএনপির মুখোশ এবং উন্মোচিত হয়ে পড়লো  তাদের আসল মুখ যেটা অতিশয় কদাকার, কুৎসিত ও হিংস্র বাংলাদেশের মানুষ সহ গোটা বিশ্ব  দেখলো বিএনপি এবং তার দোসর জামাত-ই-ইসলাম দলটি ও তার নেতৃবৃন্দ ধর্মগুরু মৌলানা সমাজের আসল চেহারা ও চরিত্র ।
নীতিগতভাবে মৃত্যুদন্ডের বিরোধী হলেও ট্রাইবুনালের এই রায়ের প্রতি আমার দ্বিধহীন ও অকুন্ঠ সমর্থন রয়েছেকারণ সবক্ষেত্রেই কিছু ব্যতিক্রম থাকে । বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধে জামাত ও মুসলিম মৌলবাদীরা যে বীভৎস অপরাধ সংগঠিত করেছে তা শুধু ব্যতিক্রমই নয়, ব্যতিক্রমেরও ব্যতিক্রম । ত্রিশ লক্ষ মানুষকে নৃশংশভাবে হত্যা করা হয়েছে এবং প্রায় চার লক্ষ নারী হয়েছেন ধর্ষণ ও নির্যাতন শিকার । বিশ্বের ইতিহাসে এত জঘন্য, ঘৃণ্য ও বীভৎস নারকীয় ঘটনা খুবই বিরল । প্রায় নজিরবিহীন এই গণহত্যা , লুটপাট ও গণ নারী ধর্ষণে পাক হানাদার বাহিনীকে জামাতের নেতৃবৃন্দ ওই মাওলানা সমাজ শুধু সহায়তা প্রদানই করে নি , নিজেরাও অসংখ্য হত্যা, নারী ধর্ষণ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটিয়েছে । সুতরাং তাদের জন্য চরম শাস্তি হিসাবে মৃত্যুদন্ডই একমাত্র উপযুক্ত ।
জামাত নেতা মাওলানা আযাদের বিরুদ্ধে মোট আটটি অভিযোগ নথিভুক্ত রাষ্ট্রপক্ষ মধ্যে হত্যা, ধর্ষণ , অপহরণ ও লুটপাট প্রভৃতি মানবতাবিরোধী সকল অপরাধই ছিল । হত্যার বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের অভিযোগে ছিল,   ... একাত্তরের ১৭ মে রাজাকার বাহিনীর সদস্য ও স্থানীয় আলবদর নেতা আযাদ ৩০-৩৫ জন সশস্ত্র রাজাকার সঙ্গে নিয়ে ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার হাসামদিয়া গ্রামের হিন্দু পাড়ায় হামলা চালান ।  হিন্দু জনগোষ্ঠীকে সম্পূর্ণ বা আংশিক ধ্বংসের উদ্দেশ্যে তাঁরা বাড়ীঘর লুঠ ও অগ্নি সংযোগ করেন , নির্বিচারে গুলি চালিয়ে শরৎচন্দ্র পোদ্দার, সুরেশ পোদ্দার, শ্যামাপদ পোদ্দার, যতীন্দ্র মোহন সাহা, নীল রতন সামাদ্দার, সুবল কয়াল ও মল্লিক চক্রবর্তীকে হত্যা করেন ।হরিপদ সাহা ও প্রবীর কুমার সাহাক ওরফে পুইটাকে হত্যা করা হয় ময়েনদিয়া বাজারের নদীর ঘাটে নিয়ে ।’  এছাড়াও তার বিরুদ্ধে   সুধাংশু মোহন, মাধব ছন্দ্র বিশ্বাস ও চিত্তরঞ্জন দাসকে খুনের অভিযোগও  আছে । হত্যাকান্ডের এই ভয়ঙ্কর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ট্রাইবুনালের রায়ে বলা হয়েছে, প্রাপ্ত সাক্ষ্যে হিন্দু জনবসতি লক্ষ্য করে চালানো ওই লোমহর্ষক ধ্বংসযজ্ঞের ঘটনা প্রমাণিত হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষের ১৯তম সাক্ষী (সত্য রঞ্জন সাহা) ওই ঘটনার চাক্ষুষ সাক্ষী। তাঁর বাবা ওই ঘটনায় নিহত হন। সাক্ষ্যে উঠে এসেছে, কীভাবে আসামি তাঁর সহযোগীদের নিয়ে সরাসরি ধ্বংসাত্মক অপরাধে অংশ নিয়েছিলেন। ১৬তম (আবদুল মান্নান), ১৭তম (সুশীল কুমার) ও ২০তম সাক্ষীর (অসিত বরণ সাহা) সাক্ষ্যের মধ্য দিয়েও রাষ্ট্রপক্ষ এই অভিযোগে আসামির শাস্তি পাওয়ার যথার্থতা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে। ট্রাইবুনাল এ প্রসঙ্গে আরও বলেছে, বৃহৎ পরিসরে ওই হত্যাকাণ্ড ও বিপুল ধ্বংসযজ্ঞ হিন্দু জনবসতিকে গ্রাম ছাড়তে বাধ্য করে। হত্যা, ধ্বংস, লুণ্ঠন, মানসিক আঘাতসব ধরনের অপরাধ মিলিয়ে একটি অভ্রান্ত ধারণা তৈরি হয়, হামলাকারীরা হিন্দু জনগোষ্ঠী বা সম্প্রদায়কেআংশিকভাবে ধ্বংসের জন্য ওই হামলা চালায়গণহত্যার উদ্দেশ্যে ওই হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়, যা গণহত্যার সমান অপরাধ।


আযাদের বিরুদ্ধে আনীত একটি অভিযোগ- অপহরণ- বাদে সকল অভিযোগই প্রমাণিত হয়েছে বলে  ট্রাইবুনালের জানানো হয়েছে । অর্থাৎ উক্ত হিন্দু মহল্লায় লুটপাট সহ নারী ধর্ষণের অভিযোগগুলিও । ধর্ষণের অভিযোগটি এরূপঃ  ‘ একাত্তরের ৮ জুন দুপুর ১২টার দিকে আযাদ চার-পাঁচজন সশস্ত্র রাজাকারকে সঙ্গে নিয়ে বোয়ালমারী থানার নতিবদিয়া গ্রামের এক হিন্দু বাড়িতে হামলা চালিয়ে দুই হিন্দু নারীকে গণধর্ষণ করেন।’  এই অভিযোগ সম্পর্কে রায়ে যা বলা হয়েছে, ‘ঘটনার ধরন ও বিবরণ থেকে জানা যায়, ওই হামলার লক্ষ্য ছিল হিন্দু জনগোষ্ঠী। ওই ঘটনায় আযাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে ধর্ষণের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে।’

ঘাতক ও ধর্ষক জামাতের প্রাক্তন নেতা একজন প্রখ্যাত আলেম তথা শীর্ষস্থানীয় ধর্মগুরুও বটে । কিছুদিন পুর্বেও তিনি বাংলাদেশের দুটি বৈদ্যুতিন চ্যানেলে একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান পরিচালনা করতেন । ট্রাইবুনালে তার বিরুদ্ধে চার্জ গঠিত হওয়ার পরপরই চোরাপথে বাংলাদেশ ছেড়ে পালিয়ে যান এবং খুব সম্ভবত এখন পাকিস্তানে আত্মোগোপন করে আছেন । তার এই পালিয়ে যাওয়াটা প্রমাণ করে যে তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের আনীত অভিযোগ যথার্থ ও মোটেই উদ্দেশ্য প্রণোদিত নয় । ট্রাইবুনালের রায়ে এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, ‘একাধিক সাক্ষ্য থেকে এটা প্রমাণিত, আযাদ সশস্ত্র অবস্থায় অপরাধ করেছেন। তাঁকে নিছক অনুপস্থিত অভিযুক্তহিসেবে বিবেচনা করা যাবে না। তিনি একজন পলাতক আসামি। বিচারের মুখোমুখি না হওয়া তাঁর শাস্তি পাওয়ার যুক্তিকে সুদৃঢ় করে। তিনি আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ নেননি। এতে বোঝা যায় যে তিনি শাস্তি পাওয়ারই যোগ্য।’
বাংলাদেশের মানুষ ট্রাইবুনালের রায়ের সমর্থনে দলে দলে রাস্তায় নেমেছেন । এই রায়ে যে ঐতিহাসিক আর একটা বিজয় অর্জিত হয়েছে সেটা শুধু উপভোগ করার জন্যে নয়, নেমেছেন অনতিবিলম্বে সম্পূর্ণ বিচার প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করার দাবীতেতাঁরা এখন সোচ্চার দুটো দাবীতেঃ এক) বাচ্চু রাজাকারের মৃত্যুদন্ড অবিলম্বে  কার্যকর করার জন্য সরকারকে দ্রুততার সঙ্গে পদক্ষেপ করতে হবে । এবং দুই) জামাতের সাবেক আমির গোলাম আযম, বর্তমান আমির মতিউর রহমান নিজামি, বর্তমান সাধারণ সচিব আলি হাসান মহম্মদ মুজাহিদ এবং বিএনপি নেতা ও সাবেক মন্ত্রী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরি, আব্দুল আমিন সহ আর যে সব যুদ্ধাপরাধীদের যে বিচার চলছে তা আতি দ্রুত সম্পন্ন করে টাদের চরম শাস্তি প্রদান করতে হবেগোলাম আযমরা শুধু বাংলাদেশের মানুষের শত্রু নয়, ওরা মানবতার শত্রু, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, প্রগতি ও শান্তির শত্রু । ওদেরও মৃত্যুদন্ডের আদেশের সংবাদ শোনার জন্যে বাংলাদেশের মানুষ গভীর আগ্রহ ও প্রত্যাশা নিয়ে দিন গুনছেন । আমরাও সমান আগ্রহ ও প্রত্যাশা নিয়ে কান পেতে থাকব সেই বজ্র ও দৃপ্ত ঘোষণাটি শুনবার জন্যে ।
গোটা বিশ্ব লক্ষ্য রাখছিল বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল কী রায় দেয় কিংবা আদৌ কোনো রায় দিতে পারে কিনা তার প্রতি । কিন্তু যখন সব আশঙ্কা ভুল প্রমাণ করে রায় দিল, এবং রায় দিল একটি অত্যন্ত বলিষ্ঠ,  ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া । কিন্তু সব আগে প্রতিক্রিয়া আসা উচিত ছিল ভারতের । কারণ মুসলিম মৌলবাদী ও


জঙ্গীবাহিনীর সন্ত্রাসবাদীদের বড় টার্গেট প্রতিবেশী দেশ এই ভারতই, আর এদেশের  মাটিই সবথেকে বেশী ক্ষত-বিক্ষত ও রক্তাক্ত হোয়েছে ওদের হাতে । বোম্বাই-এর ৯//১১ এর ভয়ংকর হানার জন্যে যে কাসবকে মৃত্যুদন্ড দিল  ভারতের আদালত সেই কাসবরা ইসলামী সন্ত্রাসের দাবার বোর্ডের বোরে মাত্র, আসল দাবারু বা মাষ্টার মাইন্ড হলো এই আবুল কালাম আযাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকার, গোলাম আযম , মতিউর রহমান নিযামির মত ধর্মগুরুরাই । ভারত যখন আক্রান্ত ও রক্তাক্ত হয় তখন ভারত সরকার প্রতিবেশী দেশগুলিকে চাপ দেয় সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্যে । অথচ প্রতিবেশী দেশ যখন ঐ সন্রাসীদের চরম সাজা দিয়ে একটি ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করলো  তখন ভারত স্পিকটি নট । পাছে মুসলিম ভোটব্যাঙ্কে চিড় ধরে সেই ভয়ে । হায়রে ভোট ! হায়রে রাজনীতি ! 

( এই নিবন্ধটি ২৫.০১.২০১৩ তারিখে লেখা । নিবন্ধটি দৈনিক স্টেটসম্যান কাগজে ছাপা হয় ১২ ই ফেব্রুয়ারী ।)

Tuesday, December 18, 2012

No difference between left and right in question of appeasement with mullahcracy




Khaleda and Buddhadeb queue up in appeasement of Mullahcracy

Prime minister, Khaleda Zia of Bangladesh adopted a mean and cruel instance of inhuman approach to banish Taslima Nasreen from her native land, in perpetuity, which was repeated by the allegedly culture minded chief minister of West Bengal. The government of Khaleda encouraged the fundamentalist fringe in a secret manner to excite the public mind to a frenzy, through unrestrained foul propaganda and hate and followed it up with the cry of “Off with Taslimas head” like the Queen of cards in Alice children classic, and filled the streets of Dhaka with mayhem and violence. Khaleda could not find any offense in the foul propaganda of the fundamentalist crowd, or in the fatwas of decapitation or in the ferocious violence unleashed by the Mullahs.She held Taslima guilty of provocation.Subsequently arrogated all the onus of disturbance on Taslima and in the guise of safety of Taslima, banished her from the land of her birth and work. Strangely, in West Bengal too, the same drama was staged.
Khaleda deed was on expected lines but, Buddhadeb Bhattacharjee's action did the unexpected, because, the political party, to which he appeared to belong, the CPM had in the past exhibited unalloyed secularism.In this instance, the part played by the Party and it's government was deplorable.This government forced the unfortunate Taslima into a flight bound for Rajasthan in the guise of safety and subsequently, arranged for the police to propagate, that she, Taslima, has left of her own volition- it may be noted, that, the CM is also the minister for police.The chosen destination Rajasthan, a then BJP ruled state was loaded with motive to denigrate Taslima further in the attempt of bringing her secular thought to be besmirched. Surprising that, such meanness can be exhibited in attempt to exculpate themselves and to blacken others at the same time. After a few days of the incidence, Taslima reiterated, that, she did not leave kolkata of her own will and that, she looks forward to return to kolkata. Needless to say, nobody was taken in by the hateful action and camouflage and propaganda of Buddhadeb babu and his cohorts.In 2005 itself, Buddhababu had informed the central government that, they did not approve of Taslima's permanent stay at kolkata. Dainik Statesman had highlighted a news item in this regard on 14-3-2005.
Subsequent to the Babri Masjid episode, the ferocious torture,excesses and violence that was unleashed upon the Bangladesh minorities ( Hindus) had found mention in Taslima's novel “LAJJA” and this enraged the Muslim fundamentalist fringe to a furious level. The secular forces should have congratulated Taslima for her boldness in bringing the shame to light.Wonder of wonders, the CPM leadership merged their voice with the Muslim fundamentalists! Since this time, Buddhababu and his cohorts used Taslima as the proverbial sacrifice for appeasement of the Muslim fundamentalist fringe in attempt to placate the vote bank that, according to them, sways to the tune of the Mullahcracy.
In the Muslim dominated pockets of Murshidabad and Maldah,the followers of Buddhababu faced landslide defeat in the Panchayet election. Thus, to regain lost ground, Buddha acceded to the Muslim fundamentalist demand and banned Taslima's “Dwikhandito” and robbed the freedom of speech of Taslima. Even this did not bring relief,the CPM failed to win three seats in Murshidabad and one in Maldah. In spite of this, their new find enthusiasm in placating the Muslim fundamentalist fringe did not abate. On 30-4-2005, a cultural group “Swar O Abritti” had extended an invitation to Taslima. The Muslim fundamentalists roared, that Medinipur will have bloodbath if Taslima makes an appearance. The government led by Buddhababu immediately complied and forced the function to be abandoned. Last BOIMELA at Shiliguri in its inauguration found Taslima as an invitee, kneejerk roar of the Muslim fundamentalists fetched faithful compliance of Buddhababu's cohorts in excluding Taslima from the function. Buddhababu, the alleged secularist,found it convenient to choose Mullahcracy over the secular and face of feminism Taslima. Consequently, Buddhababu and his cohorts have finally done the expected, and expelled Taslima from West Bengal.
The unholy alliance, that was covertly being perpetrated, between CPM and the Muslim fundamentalist fringe, was shamefully unveiled on21-11-2007. The Mad fringe spent the whole day in unprecedented violence, arson and mayhem on the avenues of Kolkata to demand cancellation of visa of Taslima, the day ended in Mr. Biman Bose in echoing the same. In the name of religion, the miscreants attacked the police, burnt buses and trams,held the whole city of kolkata at ransom but the police of “Singur-Nandigram fame of tolerance” exhibited exemplary forbearance (Buddha police is not well known for forbearance in people's movement). Again, the same ferocious fundamentalists showed extreme pacifism and forbearance when at the end of the day, when Exhaled Biman Bose led a peace procession through the desecrated locality. Fundamentalists are free to carry out unlimited violence and arson and the police will forbear, and when Biman Babu leads peace procession, the fundamentalists will forbear- what a peaceful co-existence! An example of creative understanding and coexistence. The next day found Taslima extruded out of kolkata. One ugly script and a contemptible effort at direction of the theater of Taslima expulsion. The government of Buddhadev had earlier conspired Taslima expulsion also. Pliant Lalbazar police brass were induced to threaten Taslima, but this attempt did not succeed.The mode and the fact of ejecting Taslima from kolkata was not only undemocratic,inhuman and illegal, but was contrary to Bengal's, especially Kolkata's culture, and tradition. During the twenties and thirtys of the previous century, the Muslim fundamentalists had persecuted Quazi Abdul Wadud, Quazi Motahar Hussein, poet Abdul Kader, Abdul Hussein and other Muslim intellectuals, by declaring them as enemies of Islam and kafir and forced and humiliated them to publicly rub their nose on the ground, consequently these intellectuals left Dacca and sought asylum at Calcutta for self preservation. Calcutta had offered safety and honour.
After partition in 1947, Said Mujtaba Ali, noted literateur, and then principal of Bogura College had to forsake the then East Pakistan and seek asullum at Calcutta. His assertion, that the poesy of Rabindra Nath Tagore was superior to that of Iqbalenraged the Muslim fundamentalists, who reacted by declaring Ali as pall bearer of Hindus and atheist and attacked him to cause bodily harm. 1971 freedom struggle of East Pakistan, presaged the entry of over 10 million refugees who crossed over to save themselves from the brutality of muslim fundamentalists and Pak soldiers. 90% of these were affectionately accomodated in Calcutta and west bengal. This is the nature and culture of Kolkata and west bengal.Persons displaced from Dacca by muslim fundamentalists and fanatics have found refuge. Earlier, Raja Rammohan Ray and Eashwarchandra struggled for social change, which enraged the Hindu fundamentalists, but none sought their decapitation or expel them out of their hearth. The joint action of the CPM in cohort with the muslim fundamentalists and expelled Taslima from Kolkata has besmirched the fair name of Kolkata as an asylum of the progressive.Kolkata did react, but the magnitude of exhibition of displeasure was disproportioned.This belied the Kolkata culture.

(N.B.  This  was written in Bengali when Taslima Nasrin was exiled from Kolkata by the left Govt. in 2007)


বাংলাদেশের গণঅভ্যুত্থানে ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাইনি – পাঁচ

  দ্বিতীয় অধ্যায় শেখ হাসিনা ও শেখ মুজিবের প্রতি তীব্র গণরোষের নেপথ্যে ২০২৪ এর জুলাই অভ্যুত্থানের সফল পরিসমাপ্তি ঘটে ৩৬ দিন পর (৫ই ...