২১ শে জুন ছিলো আন্তর্জাতিক বাবা দিবস । সেই বাবা দিবস
আর এক বাবা-দিবসের তলায় চাপা পড়ে গেলো । সে দিনই একই সঙ্গে উদযাপিত বিশ্ব যোগা
দিবস । বিশ্ব যোগা দিবসের প্রচার ও সাফল্যের আলোয়
সম্পূর্ণ ঢাকা পড়ে গেলো আন্তর্জাতিক বাবা দিবস । বিশ্ব যোগা দিবসের পরিকল্পনা মোদিজির, আর মনে
হয় চিত্রনাট্য রচনায় প্রধান ভূমিকায় ছিলেন বাবা রামদেবজি । প্রযোজনায় ছিলো বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক ও
ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র তথা ভারত সরকার । তাই বিশ্ব যোগা দিবসকে বাবা রামদেব দিবস বলা
যেতেই পারে । তাই বলছি বাবা রামদেব দিবসের নীচে চাপা পড়ে গেলো আন্তর্জাতিক বাবা
দিবস । সরকার ও ভারতীয় মিডিয়া এই যোগা দিবসকে
মহান করে চিত্রায়িত করার জন্যে তারস্বরে চিৎকার করে যে সব কথা
প্রচার করেছে এবং এখনও সমানে করা যাচ্ছে
তার মূল কথা হলো, ‘যোগা’ হলো এমন
একটা খাঁটি সংস্কৃতি যা দারুণভাবে ভারতীয়ত্বকে ধারণ করে । ‘যোগ’ যে ভারতীয় সহস্র বছর
প্রাচীন সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য তা সংশয়াতীত । এবং যতই বিতর্ক থাক তবু
এটাও অনস্বীকার্য যে শরীরকে সুস্থ রাখার ক্ষেত্রে যোগাভ্যাস বা
যোগ-ব্যায়াম কিছুটা ভূমিকা রাখতে সক্ষম ।
কিন্তু প্রশ্ন হলো সহস্র বছর প্রাচীন যে ‘যোগ’কে ভারত ধারণ করতো বর্তমান
ভারত তো আর সে ভারত নেই । প্রাচীন সে ‘যোগ’-এর সর্বাঙ্গে ছিলো সনাতন ধর্ম তথা প্রাচীন হিন্দু ধর্ম ও হিন্দু শাস্ত্রের প্রায়
অবিচ্ছেদ্য যোগ । আধুনিক ভারত কয়েক হাজার
বছরের প্রাচীন ও পশ্চাদপদ সেই ভারতকে
পেছনে ফেলে এসেছে । এখনকার ভারত তো অনেক আধুনিক ও উন্নত সমাজ ব্যবস্থা তথা
গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাস করে । কিন্তু ‘যোগ’ তো যেখানে ছিলো প্রায়
সেখানেই থেকে গেছে, হিন্দু ধর্মের আবহ ও হিন্দুত্ববাদী সংস্কৃতির আবহ থেকে বেরিয়ে
আসতে পারে নি । ‘যোগ’-এর কপিরাইট তাই সম্পূর্ণরূপেই থেকে গেছে বাবা রামদেব ও
অন্যান্য সাধু-সন্ন্যাসি তথা হিন্দু যাজকদের হাতেই ।
মোদিজির সরকার সেই সনাতনি ‘যোগ’ থেকে হিন্দুত্বকে বিয়োগ করে তার সঙ্গে বিজ্ঞান-ভাবনা
ও বিজ্ঞান-চেতনাকে যোগ করে আধুনিক ভারতের উপযুক্ত ও সর্বজনগ্রাহ্য করে তোলার কোনো প্রয়াসই করেন নি । তিনিও চান যে যোগাভ্যাস ও যোগ-ব্যায়ামের
শরীর-চর্চা হিন্দু ধর্ম ও হিন্দুদের সম্পত্তি হয়েই থাকুক । স্বভাবতই প্রশ্ন উঠছে
ভারতীয়ত্বের মোড়কে মোদিজি আধুনিক ভারতকে প্রাচীন ভারতের আদলে নির্মাণ করার প্রয়াস করছেন
না তো ? এ রকম প্রয়াস করার জন্যে মিশর আজ চরম অস্থিরতায় ভুগছে । মুসলিম
ব্রাদারহুডের নেতা মুহাম্মদ মুরসি ভোটে জিতে ক্ষমতায় এসে মিশরের ইসলামিকরণ করে
মিশরকে মধ্যযুগে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চেষ্টা
করেছিলেন । তার ফল যে ভালো হয় নি এবং নিশরের মানুষ মেনে নেয় নি তা বলা বাহুল্য । মুরসির মতো মোদিজিও কি আধুনিক ভারতের
হিন্দুত্বকরণ করার চেষ্টা করছেন ? - এ
প্রশ্ন উঠছে । প্রশ্ন তো এমনি এমনি উঠছে না । যোগা দিবসের সঙ্গে যোগ করেছেন সূর্য
নমস্কার । তার আগে গঙ্গা নদীকে গঙ্গামাতা জ্ঞানে পূজা করা শুরু করেছেন । উদ্দেশ্য হলো
ভারতবাসীর মধ্যে গঙ্গানদী সম্পর্কে হিন্দু ধর্মের প্রাচীন ও ভ্রান্ত বিশ্বাস ও হিন্দু ভাবধারার পুনর্জ্জীবন ঘটাবার
চেষ্টা করা । মহাভারতের কাল্পনিক চরিত্র কর্ণকে তিনি ঐতিহাসিক চরিত্র বলে প্রচার করা শুরু করেছেন । বলছেন কর্ণের
জন্ম-বৃত্তান্ত প্রমাণ করে যে প্রাচীন ভারতে জেনেটিক বিজ্ঞান আধুনিক ভারতের চেয়েও অনেক
উন্নত ছিলো । গণেশের ধড়ে হাতির মুণ্ডু
বসানোর পৌরাণিক গল্পকে তিনি প্রাচীন
ভারতের উন্নত প্লাস্টিক সার্জারীর সাফল্য বলে প্রচার চালাচ্ছেন ।
ব্যক্তি মোদি তা বিশ্বাস করতেই পারেন এবং প্রচারও করতে পারেন, কিন্তু প্রধান মন্ত্রীর
পদকে তিনি ব্যবহার করছেন এ সব অন্ধ বিশ্বাসকে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলে ধরার জন্যে যা
অনৈতিক এবং সংবিধানের মুল মর্মকথার পরিপন্থী । উক্ত ঘটনাগুলি থেকে এটা স্পষ্টঃই
প্রতিয়মান হয় যে তিনি পরিকল্পনামাফিক ধাপে ধাপে
ভারতের গৈরিকীকরণ করার প্রয়াস করছেন । প্রয়াস করছেন ভারতকে পিছন দিকে
বৈদিক যুগের দিকে টেনে নিতে । বিশ্ব যোগা দিবস উদযাপনের কর্মসূচীর মধ্যেও তাই অনেকেই
ভারতকে গৈরিকীকরণের অভিসন্ধি দেখছেন । গৈরিকীকরণের চেষ্টা করা মানে তো গণতন্ত্র ও
ধর্মনিরপেক্ষতার অন্তর্জলি যাত্রার আয়োজন করা । কিছুদিন আগে লালকৃষ্ণ আদবানিজিও সে
আশংকাই প্রকাশ করেছেন । তিনি বলেছেন যে ধর্মীয় মৌলবাদী শক্তিগুলো খুবই সক্রিয় হয়ে
উঠেছে, তাদের হাত ধরে যে ভারতে জরুরী অবস্থা ফিরে আসবে না, এ কথা হলফ করে বলা যায় না ।
প্রবীণ রাজনীতিবিদ যা বলেছেন তা
যে মিথ্যে আশঙ্কা নয় তা সহজেই বোঝা যায় চারিদিকে কী কী ঘটছে সে দিকে লক্ষ্য করলে । রাম মন্দির নির্মাণ,
গো-হত্যা বন্ধ, ঘর ওয়াপসি কর্মসূচী, লাভ জিহাদ ইত্যাদি সব হিন্দু মৌলবাদী দাবী,
শ্লোগান ও কর্মসূচীগুলি এক নতুন মাত্রা পেয়েছে মোদিজি ক্ষমতায় আসার পরপরই । আরএসএস প্রধান বারবার ঔদ্ধত্য ভরে উচ্চারণ করছেন ভারতবাসী মানেই
হিন্দু, ভারতীয় ঐতিহ্য মানেই হিন্দু ঐতিহ্য, ভারতীয় সংস্কৃতি মানেই হিন্দু
সংস্কৃতি । ‘আমরা সবাই হিন্দু’ – এই পোস্টার, ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ডে দেশ ছেয়ে যাচ্ছে
ক্রমশঃ । মোদি মন্ত্রীসভার এক নারী মন্ত্রী বলছেন সব ভারতবাসীকেই
বিজেপিকে ভোট দিতে হবে, কারণ ভারত হলো হিন্দুদের বাসভূমি আর বিজেপি হলো হিন্দুদের
পার্টি । সেই মন্ত্রী মহোদয়ের সদম্ভ আস্ফালন ও উক্তি, যারা বিজেপিকে ভোট দেবে তারা রামজাদা, যারা দেবে
না তারা হারামজাদ । এমন কথা বলার পরও তিনি মন্ত্রীসভা আলো করে বসে আছেন । সুতরাং
বুঝতে অসুবিধা হয় না যে তাঁর [মন্ত্রীর] মাথায় মোদিজির আশীর্বাদপুষ্ট হাত রয়েছে । শুধু হিন্দুত্বের প্রচারমাত্রাই
বাড়ে নি । হিন্দুত্ববাদী সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডও বেড়েছে । দিকে দিকে খৃস্টানদের উপর হামলা হচ্ছে, হামলা হচ্ছে
তাদের গীর্জার উপর, খৃস্টান আদিবাসীদের জোর করে ধর্মান্তর করা হচ্ছে । সমস্ত মুসলমানকেই ভারত ও হিন্দুদের শত্রু বলে
মুসলমানদের বিরুদ্ধে লাগাতার বিদ্বেষ, বিষ ও ঘৃণা ছড়ানো হচ্ছে । ফলে গো-বলয়ে মুসলিমরা আক্রান্ত হচ্ছে । যে সব অঞ্চলে আরএসএস ও বিজেপির শক্ত সংগঠন
আছে সে সব অঞ্চলে মোদিজির শাসনে সংখ্যালঘুরা
বিশেষ করে খৃস্টান ও মুসলিমরা আতঙ্ক ও
নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে । এই সাম্প্রদায়িক অবিশ্বাস ও বিদ্বেষপূর্ণ আবহের মধ্যে
সাড়ম্বরে উদযাপিত হলো বিশ্ব যোগা দিবস । তাই প্রশ্ন উঠছে, আড়ম্বরপূর্ণ এতো আয়জন
আরএসএস ও বিজেপির ভারতকে গৈরিকীকরণের রাজনৈতিক কর্মসূচীরই অংশ নয় তো ?
মোদিজি ভারতকে সেই বেদের যুগে নিয়ে যেতে এই যোগা দিবসের আয়োজন করেন নি তো ?
এই প্রশ্ন তুলেছে কংগ্রেস, বামদলগুলি সহ অন্যান্য বিরোধীদলগুলিও এবং তারা যোগা
দিবস উদযাপন থেকে বিরত থেকেছে ।
যারা যোগা দিবস উদযাপনের কর্মসুচীকে
বয়কট করেছে তারা দারুণ একটা সাহসি পদক্ষেপ নিতে পেরেছে । অবশ্য তারজন্যে তাদের
হয়তো কিছুটা ক্ষতিই হতে পারে । কারণ এর ফলে হিন্দু ভাবাবেগে কিঞ্চিত আঘাত লাগতে
পারে এবং তারফলে হিন্দুদের মধ্যে এই দলগুলির প্রতি কিছুটা হলেও নেতিবাচক
প্রতিক্রিয়া হতে পারে । কারণ, হিন্দুরা
বিশ্বাস করে যে বেদ হলো ভগবানের সৃষ্টি একটা পবিত্র গ্রন্থ এবং বেদে যা আছে তার সবই সত্য, কল্যাণকর, মঙ্গলদায়ক,
অকাট্য ও চিরন্তন । সুতরাং মোদিজি যোগাভ্যাসকে
সমুন্নত করার মাধ্যমে বৈদিক ধর্ম ও সংস্কতিকে ফিরিয়ে আনার যে উদ্যোগ নিয়েছেন তা তো এক শুভ উদ্যোগই, অহেতুক ও অযথা ব্যাগড়া
দিচ্ছে বিরোধী দলগুলি । তারা বিশ্বাস করে
যে বেদের মধ্যেই নিহিত রয়েছে মানব সমাজের
সকল সমস্যার সমাধান । এ ধারণা যতোই ভ্রান্ত হোক, এখনও বহু মানুষ তাদের মনে
মণিকোঠায় এই ধারণাই পোষণ এবং লালন-পালন করে
। সেটা এ জন্যে যে বেদ সম্পর্কে এবং বৈদিক যুগের আইন-কানুন, বিধি-নিষেধ, সামাজিক রীতিনীতি
ও সংস্কৃতি সম্পর্কে তারা সম্পূর্ণ
অজ্ঞ। এই অজ্ঞতা শুধু সাধারণ গরীব ও
নিরক্ষর বা অল্প শিক্ষিত হিন্দু মানুষদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে তা নয়, অজ্ঞতার শিকার
শিক্ষিত এবং মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত শ্রেণির হিন্দুরাও । মানুষের এই অজ্ঞতা,
ধর্মান্ধতা ও বেদ-পুরাণের প্রতি অন্ধানুগত্য ও শ্রদ্ধাকেই হাতিয়ার করেই টিকে
আছে হিন্দুমৌলবাদী শক্তি ও সংগঠনগুলি
। অটলবিহারী বাজপেয়ী যাঁকে নরমপন্থী
আরএসএস বলে মানা হয় সেই তিনিও প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন সারা দেশে নতুন করে বেদ-পাঠশালা খুলতে চেয়েছিলেন । ধর্মান্ধ মুসলিমরা যেমন মাদ্রাসার অন্ধানুরাগী ধর্মান্ধ হিন্দুরাও তেমনি মনে মনে টোল ও বেদ-পাঠশালার
অন্ধানুরাগী, যদিও তারাই নিজেদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ নির্মাণের জন্যে টোলকে বর্জন
করেছে বহুকাল পূর্বেই । অটলবিহারী বাজপেয়ী ধর্মান্ধ
হিন্দুদের ভাবাবেগকেই তাঁর দল বিজেপি ও আরএসএসের স্বার্থে ব্যবহার করার জন্যেই
বেদ-পাঠশালার খোলার কথা বলেছিলেন । আর মোদিজিও ধর্মান্ধ হিন্দু জনগোষ্ঠীকে
প্রলুব্ধ করে কাছে টানতেই টেনে এনেছেন
বৈদিক যুগের যোগা-সংস্কৃতিকে যা আপাদ-মস্তক হিন্দু ধর্মবিশ্বাস হিন্দু সংস্কৃতির
চাদরে মোড়া । গগণবিদীর্ণ করা প্রচার ও
আড়ম্বর যোগে ‘বিশ্ব যোগা দিবস’ উদযাপন করার তাঁর প্রধান উদ্দেশ্যই হলো সেই সব অন্ধ
বেদ-বিশ্বাসী মানুষদের সমর্থন জোগাড় করা
যারা এই নির্মম সত্যিটা জানে না যে বেদ একটা ভীষণ পশ্চাদপদ গ্রন্থ, আধুনিক যুগে যার
বিন্দুমাত্র প্রাসঙ্গিকতা নেই এবং এটাও
জানে না যে বৈদিক সমাজটাও ছিলো এক ভয়ানক
পশ্চাদপদ সমাজব্যবস্থা । সেই বৈদিক সমাজটা ঠিক কেমন ছিলো তা একটু দেখে নেওয়া যাক ।
আধুনিক সমাজে বর্ণবাদ ও জাতপাত
প্রথাগুলি জঘন্য ও কুৎসিত প্রথা বলে চিহ্নিত ও ধিকৃত । এই জাতপাত চলে আসছে বেদের
যুগ থেকে । বেদে মানবমণ্ডলীকে চারটি বর্ণে ভাগ করেছে – ব্রাক্ষণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য
ও শুদ্র । শুদ্রগণ বেদের বিধানে সমস্ত অধিকার থেকে বঞ্চিত, তারা বঞ্চিত মানবজীবনের সমস্ত সুযোগ-সুবিধা
থেকে, এমনকি বঞ্চিত মানুষের পদ মর্যাদা থেকেও
। চাষবাস, পশুপালন সহ উৎপাদন ব্যবস্থার সমস্ত কাজ শুধু
তারাই করবে একদিকে, আর অপরদিকে জীবনভোর ব্রাহ্মণ,
ক্ষত্রিয় ও বৈশ্যদের মুখ বুঁজে সেবা করবে
। এর এতটুক অন্যথা হলে ভোগ করতে হবে কড়া
শাস্তি । শাস্তি মানে পার্থিব জগতে
অমানুষিক নির্যাতন, আর অপার্থিব জগতে তথা পরকালে অনন্তকাল নরকবাস । বেদ শুদ্রদের মানুষ বলেই স্বীকৃতি দেয় নি । মনু
সঙ্ঘিতায় শুদ্রদের ঊনমানব বলা হয়েছে । শুদ্রদের জন্মগত অবস্থানকেই অপমান ও হেয় করে
দেখানো হয়েছে । গৃহ্যসূত্র মতে কোনো দেবতা থেকেই শুদ্রের উৎপত্তি হয় নি । আর
ঋগ্বেদ বলছে ব্রহ্মার পা থেকে শুদ্রের সৃষ্টি । তাই শুদ্রের কোনো গৃহ্যযাগ
[দশকর্ম] নেই; তার উপনয়ন নেই অর্থাৎ বেদপাঠ নেই । এমনকি তার মন্দিরে প্রবেশ করার
অধিকার নেই, নেই পূজার প্রসাদেও কোনো অধিকার । বেদপাঠে অধিকার তো নেই-ই, এমনকি বেদ
যদি সে কানে শোনে তাহলে তার কানে সিসা গলিয়ে ঢেলে দেওয়ার বিধান আছে বেদে । যদি বেদ
পাঠ করে তবে তার জিভ টেনে ছিড়ে ফেলে দিতে হবে বলেছে বেদ । বেদ বলছে, কেউ যদি বেশি
খরচের যজ্ঞ শুরু করার পর দেখে তার অর্থে কুলাচ্ছে না তখন সে অনায়াসে অনায়াসে
শুদ্রের ধন কেড়ে নিতে পারে যাতে কোনো পাপ হয় না । বেদ আর এক জায়গায় বলছে, ‘শুদ্রের
স্ত্রীকে অন্য বর্গের পুরুষরা যথেচ্ছ ভোগ
করতে পারবে ।’ বেদের মতে নারী, শুদ্র, কালো পাখি ও কুকুর মিথ্যা - এদের দেখা উচিত নয় । আর এক জায়গায়
বলছে, ছুঁচো, বেজি, নারী, শুদ্র ও কালসাপ মারলে একই প্রায়শ্চিত্ত । বেদে এক জায়গায়
বলা হচ্ছে, ব্রাহ্মণকে তৃপ্তি করে খাওয়ালে পাপমুক্তি । যতখুশি পাপ কর, পাপ করে
ব্রাহ্মণকে খাওয়াও, ব্যাস । কিন্তু শুদ্রের পাপমুক্তির রাস্তা বন্ধ। কারণ তার অন্ন
মানুষের গ্রহণীয় নয় । এর থেকে বোঝা যায় বৈদিক সমাজে নারী ও শুদ্রদের
সামাজিক অবস্থান ছিলো কতো নীচে । বৈদিক
যুগে নারীর অবস্থা কেমন ছিলো সেটা একটু দেখা যাক ।
বেদে নিঃসন্তান স্ত্রীকে দশ বছর পর ত্যাগ করার বিধান আছে
। কারণ স্ত্রীর কর্তব্যই হলো সন্তান উৎপাদন, তাই এখানে ত্রুটি ঘটলে বৈদিক শাস্ত্র
বা সমাজ তাকে ক্ষমা করত না । বেদ মতে যে স্ত্রী স্বামীর মুখের উপর কথা বলে
তাকে তৎক্ষণাৎ ত্যাগ করা যায় । বেদ পুরুষের বহুপত্নীকে ভগবানের বিধান বলেছে । মৈত্রায়ণি সংহিতা মনুর দশটি পত্নীর কথা বলে,
তৈত্তিরীয়ে চন্দ্রের সাতাশটি স্ত্রীর কথা শোনা যায় । রাজার তো অন্তত চারটি রানী
থাকত, মহিষী, বাবাতা, পরিবৃক্তি ও পালাগলি; এছারা উপপত্নী থাকত অনেক এবং উপপত্নীও নয় এমন ভোগ্যা বহু নারী
অন্তঃপুরে স্থান পেত । নারীকে যজ্ঞে দক্ষিণা দেওয়া হত শ’য়ে শ’য়ে; নিতেন ঋত্বিক,
গোরু বাছুর ষাঁড় বলদের সঙ্গে এক তালিকায় থাকত দক্ষিণায় দেওয়া নারীও । রামকে অনেক
দাসদাসী ও একশ’ কন্যা যৌতুক দেওয়া হয়েছিল । বেদের যুগে ‘যুদ্ধে পরাজিত শত্রুর
নারীদের দখল করত বিজেতা । দুর্ভিক্ষে দুর্দিনে নারীকে পিতামাতা বিক্রি
করতেন, দেবালয়ে দাসদাসীরূপেও পরের যুগে । বেদে বলা আছে, নিজের দেহের বা ধনের উপর
নারীর কোনো অধিকার নেই । ঋষি অঙ্গিরা বলেছেন, স্বামীর মৃত্যু হলে সাধ্বী স্ত্রীর
অগ্নিতে প্রবেশ করা ছাড়া অন্য ধর্ম নেই । বৃহদারণ্যক উপনিষদে যাজ্ঞবল্ক্য বলেন,
স্ত্রী স্বামীর শয্যসঙ্গিনী হতে অসম্মত হলে প্রথমে তাকে মিষ্টি কথায়, পরে উপহারের
লোভ দেখিয়ে কিনে নেবে; তাতেও সে সম্মত না হলে হাত দিয়ে বা লাঠি দিয়ে মারবে । নারীকে
ব্যাভিচারিণী বলেছে বেদ । মনু পুরুষকে সাবধান করে দিয়ে বলেছেন যে নারীর সব সময়
ব্যাভিচারিণী হওয়ার প্রবণতা থাকে, এবং সেই কারণে সব বর্ণের পুরুষদের উচিত সর্বদা
স্ত্রীকে পাহাড়া দেওয়া । হিন্দু শাস্ত্র বলছে নারী হলো নরকের দ্বার । তাই নারীকে
পতিসেবা করা স্বর্গলাভের লোভ দেখানো হয়েছে । মহাভারতের অনুশাসন পর্বে ভীষ্ম বলেছে,
জীবলোকে স্ত্রীজাতির পতিসেবাই পরম ধর্ম । স্ত্রীলোকদের জন্যে যজ্ঞ বা শ্রাদ্ধের
আলাদা কোনো নিয়ম নেই । তারা কেবল স্বামীর সেবা করেই ইচ্ছামতো পবিত্রলোকে যেতে পারে
। নারীর প্রতি পুরুষের কদর্য ও কুৎসিত রুচি ও মনোভাবের পরিচয় পাওয়া যায় রামায়ণ ও
মহাভারতেও । ধর্মপুত্র যুদ্ধিষ্ঠির জুয়ায় হেরে দেন স্ত্রীকে । ভগবান রাম কুৎসিত
ভাষায় অপমান করেন তার স্ত্রী সীতাকে । সীতাকে উদ্ধার করার পর রাম বলছে, ‘তোমার
কুশল হোক, জেনে রাখ, এই যে যুদ্ধের পরিশ্রম, বন্ধুদের বীরত্বের সাহায্যে যা থেকে
উত্তীর্ণ হয়েছি, তা তোমার জন্যে নয় । এ
আমার চরিত্র মর্যাদা রক্ষা করার জন্যে এবং প্রখ্যাত আত্মবংশের কলঙ্ক মোচন করার জন্যেই তা করেছি । তোমার চরিত্র সন্দেহজনক হয়ে উঠেছে ।
আমার সামনে তুমি আছ, চক্ষুপীড়াগ্রস্তের
সামনে প্রদীপ যেমন পীড়াদায়ক হয় তেমনই । তাই জনকত্মজা, এই দশদিক পড়ে আছে, যেখানে ইচ্ছা তুমি চলে যাও আমি অনুমতি দিলাম তোমাকে –
তোমাকে আর আমার কোনো প্রয়োজন নেই কোন সদ্বংশজাত তেজস্বী পুরুষ বন্ধুত্বের লোভে
পরগৃহবাস করেছে যে, স্ত্রী, তাকে ফিরিয়ে নেবে ? রাবনের কোলে বসে পরিক্লিষ্ট, তার
দুষ্ট দৃষ্টিতে ।’ হিন্দু
ধর্মের ভগবান রাম এ সব কুৎসিত ভাষায় সীতাকে হেয় ও অপমান করেই থেমে থাকে নি । এর
চেয়েও জঘন্য ভাষায় সীতার চরিত্রে কলঙ্ক লেপন করেছে । রাম বলছে, ‘তোমার মতো
দিব্যরূপা মনোরমা নারীকে দেখে, রাবন নিজগৃহে খুব বেশীদিন চুপচাপ সহ্য করে নি । ...
যাও বৈদেহী তুমি মুক্ত । যা করণীয় ছিল তা আমি করেছি । আমাকে স্বামী পেয়ে তুমি
রাক্ষসের বাড়িতে বুড়ো হয়ে যাবে এটা হয় না, তাই রাক্ষস [রাবণ]-কে হত্যা করেছি ।
আমার মতো ব্যক্তি ধর্ম ও অধর্মের ভেদ জেনেও পরহস্তাগতা নারীকে কেমন করে এক মুহূর্ত
ধারণ করবে ? তুনি সচ্চরিত্র হও আর অসচ্চিরত্রই হও, মৈথিলি তোমাকে আমি ভোগ করতে
পারি নে, তুমি যেন কুকুরে চাটা ঘি ।’
ভারত বহু ভাষাভাষি ও বহু ধর্ম সম্প্রদায়ের মানুষের দেশ ।
এ দেশের এখনকার ঐতিহ্য ও বৈশিষ্ট হলো
বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্য । বিজেপি ও আরএসএস চায় আমাদের এই ভারতে সেই বৈদিক সমাজকে
ফিরিয়ে আনতে এবং রামরাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে । সেই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে মোদিজি উদযাপন করলেন
‘বিশ্ব যোগা দিবস’ ।
[বিঃদ্রঃ নিবন্ধটি রচনায় যে বইগুলির সাহায্য নেওয়া হয়েছে
– সুকুমারী ভট্টাচার্যের মন্থন, প্রাচীন ভারত ও বাল্মীকির রাম ফিরে দেখা এবং
কল্যাণী বন্দোপাধ্যায়ের ধর্ম/সংস্কার ও কুসংস্কার।]
MKVToolNix Mac
ReplyDelete
ReplyDeleteanymp4-video-converter-ultimate-crack is a great video converter software that can help you convert 4K Ultra HD / 1080p / HD / General Video to many types of video formats like MP4 / AVI / WMV MKV / MOV as well as 3D videos.
freeprokeys
Adobe Creative Cloud Crack
ReplyDeleteTopaz Video Enhance Al Crack
download phpstorm full version
ReplyDeletedownload avs video editor full version crack
malwarebytes free full version
download antimalware full crack
malwarebytes anti-malware full crack
iobit uninstaller pro crack
ReplyDeleteiphone backup extractor crack
sandboxie crack
mathtype crack
final cut pro x crack
crossover mac crack
revo uninstaller pro crack
ReplyDeleteminitool partition wizard crack
bitwig studio crack
ntlite crack
edraw max crack
scriptcase crack
Its a Very Great and Amazing Blog Dear This is Very Great and Helpful..
ReplyDeleteTalha PC
Crackedithere
Epic Pen Pro Crack
Photopia Director Crack
Howdy! This post couldn’t be written any better! Reading this post reminds me of my good old room mate! He always kept chatting about this.
ReplyDeleteI will forward this post to him. Pretty sure he will have a good read.
Thanks for sharing!
max recorder serial number
quicktime pro torrent
norton utilities activation code free
bluebeam revu serial number and product key
pdq deploy crack
Crack Like
My cousin recommended this website to me. I'm not certain if
ReplyDeleteHe wrote this post since no one else knows as much about my condition as he does.
You're incredible! Thanks!
adobe after effects cc crack
smadav pro crack
winrar crack
adobe photoshop cs6 crack
if you'd want to hire a blogger, I'd be happy to do so.
ReplyDeleteI'm sure this will be a big help to you, and I look forward to it.
I'd be happy to help if you ever need someone to shoulder some of your responsibilities.
My blog will link back to yours in return for writing material for yours.
If you'd like to get in touch, please do so by email. I appreciate your kind words!
netflix video downloader 2022 crack
windows 7 ultimate crack
driver booster crack
teamviewer crack
Your writing and presentation skills as well as your overall style have really impressed me.
ReplyDeleteblog A purchased theme or one that you've modified is either the case.
You? Whatever the situation may be, the most important thing is to listen to new music with high-quality lyrics.
Today, I seldom come across a blog as nice as this one.
traktor dj software crack
thunderbird portable crack
wintousb enterprise crack
shareit crack
Thanks for writing this excellent article for us.
ReplyDeleteI have gained good stuff from this website.
I am looking forward to your next article.
Not only that, but I am happy to share this post with my friends. Keep it up.
eximioussoft banner maker pro crack
eximioussoft banner maker pro crack
eximioussoft banner maker pro crack
eximioussoft banner maker pro crack
eximioussoft banner maker pro crack
eximioussoft banner maker pro crack
eximioussoft banner maker pro crack
I am very thankful for the effort put on by you, to help us, Thank you so much for the post it is very helpful, keep posting such type of Article.
ReplyDeleteIObit Malware Fighter Crack
Pokken Tournament
Helium 10 Crack
Here at Karanpccrack, you will get all your favourite software. Our site has a collection of useful software. That will help for your, Visite here and get all your favourite and useful software free.
ReplyDeleteYouTube By Click Crack
reaper crack
ReplyDeletedriver reviver crack
avira phantom vpn pro crack
matlab crack
any video converter crack
4k video downloader crack
I am very impressed with your post because this post is very beneficial for me and provide a new knowledge to me. this blog has detailed information, its much more to learn from your blog post.I would like to thank you for the effort you put into writing this page.
ReplyDeleteI also hope that you will be able to check the same high-quality content later.Good work with the hard work you have done I appreciate your work thanks for sharing it. It Is very Wounder Full Post.This article is very helpful, I wondered about this amazing article.. This is very informative.
“you are doing a great job, and give us up to dated information”.
iobit smart defrag pro crack/
inpixio photo eraser crack/
imazing crack/
idm ultraedit crack/
helium streamer premium crack/
You have a great site, but I wanted to know if you know it
ReplyDeleteany community forum dedicated to the same topics
discussed in this article? I really want to be a part
of a society where they can receive information from others with knowledge and interests.
If you have any suggestions, please let us know. I appreciate!
mightytext pro crack
avast secureline vpn crack
driver talent crack
fl studio crack
I am very thankful for the effort put on by you, to help us, Thank you so much for the post it is very helpful, keep posting such type of Article.
ReplyDeletePassFab for PDF Crack
Norton Utilities Crack
avs video converter crack
ReplyDeletedisplayfusion crack
mobaxterm professional crack
roboform pro crack
virtual dj pro crack
reason Crack