সপ্তম হিজরীতে ৬০ বছর বয়সী
মুহাম্মদ মাত্র সতেরো বছর বয়সী সাফিয়াকে
বিয়ে করেছিলেন । সাফিয়া যে তখন সত্যিই মাত্র সতেরো বছরের বাচ্চা মেয়ে ছিলো তা
স্বীকার করেন মুসলিমরাও । মহম্মদ সাদাত আলী লিখেছেন – “যে সময়ে রাসুলুল্লাহর সঙ্গে
সাফিয়ার বিবাহ সম্পন্ন হয় তখন ছিলো ৭ম হিজরীর মহরম মাসের শেষ সপ্তাহ । বিবাহকালে
রাসূলে পাকের বয়স ছিলো ৬১০ এবং হযরত সাফিয়ার ১৭ বছর । [দ্রঃ মহানবী [সঃ] এঁর
বিবাহ, পৃ-১১১] সাফিয়া ছিলেন ইহুদি ।
সাফিয়া তাঁর আসল নাম নয় । তাঁর আসল নাম ছিলো জয়নব । সাফিয়া নামের একটা বিশেষ তাৎপর্য আছে । তৎকালীন
আরবে লুণ্ঠিত দ্রব্যের মধ্যে সেরা দ্রব্যটি পেতো দলপতি । সেই সেরা দ্রব্যটিকে বলা
হতো ‘সাফিয়া’ । সেই কারণে জয়নবের নাম দেওয়া হয়েছিলো সাফিয়া । মুহাম্মদ নিজেই সে নামটি দিয়েছিলেন । তাঁর
পিতার নাম ছিলো হুয়াই বিন আখতাব । আখতাব ছিলেন খায়বারের বনি নাজির গোষ্ঠীর দলপতি ।
মায়ের নাম ছিলো দুরাহ । তিনি
ছিলেন মদিনার বনি কুরাইজা গোষ্ঠীর প্রধান সেনাপতি সামওয়াল – এর কন্যা । সাফিয়ার এই বংশ পরিচয় থেকে এটা স্পষ্ট যে তিনি
ছিলেন একজন অভিজাত পরিবার ও বংশের মেয়ে । মুহাম্মদ তাঁকে বিয়ে করার পূর্বে তাঁর
আরো দু’বার বিয়ে হয়েছিলো । প্রথমে বিয়ে
হয়েছিলো ইহুদি গোত্রের এক কবির সাথে । মহম্মদ সাদাত আলী এ প্রসঙ্গে লিখেছেন, “হযরত
সাফিয়া [রাঃ] ছোটবেলা থেকেই অপরূপা
সুন্দরী ছিলেন । পরিণত বয়সে তাঁকে প্রথমে ইহুদী গোত্রের প্রধান কবি ছালাম বিন
মাশকামূল কাবশীর সাথে বিবাহ দেওয়া হয় । এই দাম্পত্য বেশী দিন স্থায়ী হয় নি ।” [সূত্রঃ – ঐ, পৃ-১০৮] সাদাত লিখেছেন ‘পরিণত বয়সে’ এই বিয়েটা
অনুষ্ঠিত হয়েছিলো । কিন্তু সাফিয়ার বয়স
তখন আনুমানিক ১৪/১৫ বছর ছিলো । ইসলামের দৃষ্টিতে অবশ্য সেটাই একটা মেয়ের বিয়ের
জন্যে পরিণত বয়স । মুহাম্মদ আয়েশাকে যখন বিয়ে করেন তখন তাঁর বয়স ছিলো মাত্র ছ’ বছর
। সাফিয়ার দ্বিতীয় বিয়ে হয়েছিল কিনানা বিন
আবুল হাফীকের সাথে । কিনানা ছিলেন খায়বারের একটি দূর্গের সেনাপতি ।
সাফিয়ার বিয়েটা অনুষ্ঠিত হয়েছিল একটি সম্পূর্ণ অস্বাভাবিক এবং শোকবিহ্বল
পরিস্থিতি ও পরিবেশের মধ্যে । দু’ বছর আগে
বনি কুরাইজা গোষ্ঠীর সেনাপতির স্ত্রী রায়হানাকে যে নৃশংস ও অমানবিক পরিবেশে মুহাম্মদ বিয়ে
করেছিলেন প্রায় সে রকম পরিবেশেই । কীভাবে সেই হৃদয়-বিদারক পরিবেশ তৈরী হয়েছিলো সেটা এবার
বর্ণনা করা যাক ।
মদিনার উত্তরে মদিনা থেকে প্রায়
৯০/১০০ মাইল দূরে খায়বার নামক একটি অঞ্চলে একটি বিশাল ইহুদি জনবসতি ছিলো । প্রায় ২০,০০০ [কুড়ি হাজার]
ইহুদির বাস ছিলো সেখানে । তারা সেখানে চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে কয়েকটি মহল্লায় বাস করতো
এবং প্রত্যেক মহল্লায় একটা করে দূর্গ ছিলো
। দূর্গগুলির নাম ছিলো ১. ওয়াতি, ২. সুলালিম, ৩. নায়িম, ৪. নাতাত, ৫. কামুস, ৬.
সাব এবং ৭. যুবাইর । খায়বার ছিলো একটি সুজলা, সুফলা, শস্যশ্যামলা
মরুদ্যান । সেখানকার মানুষরা চাষবাসে ছিলো অতিশয় দক্ষ, এবং তাদের নিপুণতা ছিলো
যুদ্ধবিদ্যাতেও । বহুকাল ব্যাপী প্রচুর
মেহনত করে তারা খায়বারকে একটি উর্বর ও সমৃদ্ধশালী কৃষি অঞ্চলে পরিণত
করেছিলো । তাল, নারকেল, খেজুর গাছ ছাড়াও গম, বার্লি ইত্যাদি ছিলো সেখানকার
উল্লেখযোগ্য ফসল । আরব উপদ্বীপের মধ্যে খায়বারের ইহুদীরাই ছিলো সব চেয়ে বেশী ধনী ও
সমৃদ্ধশালী । মদিনার ইহুদিদের এবং বনি মুস্তালিক গোষ্ঠীর ইহুদিদের সমস্ত স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির দখল নেওয়ার
পর মুহাম্মদের দৃষ্টি পড়েছিলো সমৃদ্ধশালী খায়বারের প্রতি । খায়বারের প্রতি
মুহাম্মদের শ্যেন দৃষ্টি পড়েছিলো অন্য
একটা কারণেও । মদিনার ইহুদিদের বনি
নাজির ও বনি কাইনুকা গোষ্ঠীর লোকেরা নির্বাসিত হওয়ার পর তাদের একটা অংশ খায়বারে গিয়ে বসবাস করছিল । মুহাম্মদ তাই আশংকা করতেন যে খায়বারের
ইহুদিরা যে কোনো সময়ে মুসলমানদের নির্মূল করার জন্যে মদিনা আক্রমণ করতে পারে । তিনি তাই আগে ভাগেই
খায়বার আক্রমণ করে তাদের মেরুদণ্ড ভেঙে দিতে চেয়েছিলেন ।
৬২৯ খৃস্টাব্দে ২০০ অশ্বারোহী
সৈন্যসহ মোট ১৬০০ সৈন্য নিয়ে মুহাম্মদ খায়বার অভিয়ান করেন এবং তিন দিন হেঁটে ভোরের আলো ফোটার আগেই একদিন অতর্কিতে খায়বারের ইহুদিদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েন । প্রথমেই
খায়বার থেকে বেরোনার সব কটা পথে তিনি সৈন্য মোতায়েন করে দেন যাতে কেউ খায়বার ছেড়ে
মালপত্র নিয়ে পালাতে না পারে । প্রতিদিনের মতো সেদিনও খুব ভোর বেলা চাষী ও মেষপালকরা মাঠে-ঘাটে যাওয়ার জন্যে মহল্লা থেকে বেরিয়েছে । বেরিয়েই দেখতে পায় সাক্ষাৎ যমদূতের
মতো মুহাম্মদ ও তাঁর সৈন্যবাহিনী তাদের সামনে দাঁড়িয়ে আছে । সঙ্গে সঙ্গে
ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে তারা মহল্লার ভিতরে ফিরে যায় । এ খবর পাওয়া মাত্র খায়বারের ইহুদিরা একত্রিত হয়ে আলোচনা করে ঠিক করে নেয় কীভাবে এই পরিস্থিতির মোকাবিলা
করবে । তারা সমস্ত নারী ও শিশু এবং খাদ্যশস্যসহ বাড়ির মূল্যবান
সমস্ত জিনিষপত্র কয়েকটা দূর্গের ভিতর নিরাপদ স্থানে রেখে মুহাম্মদের
বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে বলে স্থির করে । প্রত্যেকটা দূর্গের সঙ্গে দূর্গের
সূড়ঙ্গপথে যোগাযোগের ব্যবস্থা ছিলো । সেই সুড়ঙ্গ পথেই নারী ও শিশু এবং অন্যান্য
জিনিষপত্র বিভিন্ন দূর্গে পাঠানো হয়েছিলো ।
এ প্রসঙ্গে ড. ওসমান গণি লিখেছেন, “ইহুদিগণও পরিষ্কার বুঝতে পেরেছিল এ
যুদ্ধে তারা হারলে তাদের অবস্থা বানু কুরাইজাদের মতোই হবে । তাই তারা জীবন-মরণ পণ
করে তাদের নেতা সাল্লাম বিন মিসকামের সঙ্গে পরামর্শ করল, ওয়াতি এবং সুলালিম নামক
দূর্গে তারা তাদের ধন-সম্পদ ও মেয়েদের সুরক্ষিত করল । তাদের ধনাগার ছিল নায়িম নামক
দূর্গে । আর তাদের সৈন্যবাহিনী থাকত নাতাত নামক দূর্গে । [দ্রঃ মহানবী,
পৃ-.৩০৭] প্রায় দু’মাস ধরে [ভিন্ন মতে
যুদ্ধ চলেছিলো এক মাস] প্রবল যুদ্ধ চলার পর মুহাম্মদ খায়বারের সম্পূর্ণ দখল নিতে
সমর্থ হয়েছিলেন । যুদ্ধে ৯০ জন ইহুদি ও ২০ জন মুসলমান মারা গিয়েছিলো । ইহুদি
পক্ষের যারা মারা গিয়েছিলো তাদের মধ্যে সাফিয়ার বাবা, ভাই ও স্বামী এবং
আত্মীয়-স্বজনরাও ছিলেন । সাফিয়ার স্বামী
কিনানা ছিলেন ‘কামুস’ দূর্গের প্রধান
সেনাপতি । সেই দূর্গটির পতন হলে কিনানাকে হাত-পা বেঁধে মুহাম্মদের কাছে নিয়ে যাওয়া
হয়েছিলো । মুহাম্মদ কিনানার কাছে জানতে চেয়েছিলেন সে কোথায় বাকি মূল্যবান সামগ্রীগুলো লুকিয়ে রেখেছে । কিনানা অন্য কোথাও আর কোনো ধন-সম্পত্তি লুকানো নেই বলে
জানান । মুহাম্মদ তা বিশ্বাস করেন না । তিনি তাঁর শিষ্যদের কিনানার উপর কঠোর অত্যাচার চালানোর নির্দেশ দেন যতক্ষণ না সে লুকানো জিনিষপত্রের হদিস দেয়
। কিনানার উপর এত নিষ্ঠুর ও পৈশাচিক অত্যাচার চালানো হয়েছিল যার নজির ইতিহাসে খুবই
কম দেখা যায় । অত্যাচারের একটা পর্যায়ে
তাঁকে জ্বলন্ত আগুনের শিখার উপর হাত-পা বেঁধে উপুর করে শুইয়ে দেওয়া হয়েছিল । এরূপ অত্যাচার
চালানো হয়েছিলো তাঁর উপর ততক্ষণ যতক্ষণ না
তিনি জ্ঞান হারান নি । তারপর যখন তাঁর জ্ঞান ফিরে আসে তখন মুহাম্মদ তাঁর চাচাতো
ভাই জুবাইরকে নির্দেশ দেন তাঁর মুণ্ডুচ্ছেদ করে তাঁকে হত্যা করার । বিশিষ্ট
ঐতিহাসিক ও লেখক আনোয়ার হেকমতও বলেছেন যে কিনানার উপর এ রকম পৈশাচিক ও অমানবিক অত্যাচার চালিয়ে তাঁকে হত্যা করা হয়েছিলো । তিনি লিখেছেন –
Ninety male defenders fell and
thereafter the chief of one of the fortress, named Kinana, was brought to
Muhammad, who demanded to know where he had hidden his treasures. The chief
denied of having any hoard of goods, whereupon Muhammad ordered his men to force
this minformation from Kinana and his cousin under physical torture.
They tied the hand and legs of
the two men to wooden posts and as they lay prone a fire was lit upon their
breasts. The torture continued until they could bear it no longer and fainted.
When Kinana and his cousin regained consciousness, Muhammad instructed his
cousin Zubayr to kill them and sever their heads. [Vide: Women and the Koran, page-62]]
খায়বার জবর দখল করে সেখান থেকে
যে পরিমাণ ধন-দৌলত ও অন্যান্য দামী মালামাল মুহাম্মদের হাতে এসেছিলো তা ছিলো তাঁর
কাছে কল্পনাতীত । তিনি সে সব লুণ্ঠিত দ্রব্য ছাড়াও খায়বারের অনেক নারী ও শিশুকে
বন্দি করে নিয়ে এসেছিলেন । তবে একটা শর্তে কিছু ইহুদিকে বাঁচিয়ে রেখে তাদের হাতে
খায়বারকে তুলে দিয়ে এসেছিলেন । শর্ত ছিলো এটাই যে, খায়বারে যা উৎপাদন হবে তার অর্ধেক
মদিনায় মুহাম্মদের কাছে কর ববদ পাঠিয়ে দিতে হবে । মুহাম্মদ অবশ্য পরে তাঁর
শিষ্যদের বলেছিলেন যে আরব থেকে সমস্ত
মুশরিকদের বহিষ্কার করতে হবে । তাঁর মৃত্যুর পর দ্বিতীয় খলিফা ওমর ফারুক সেই
নির্দেশ অনুসারে খায়বার থেকে সমস্ত ইহুদিদের নির্বাসিত করেছিলেন ।
মুহাম্মদের কাছে যখন কিনানাকে
বন্দি করে নিয়ে আসা হয়েছিলো তখনই মুহাম্মদ জানতে পারেন যে খুবই অল্প বয়সী ও অপরূপ সুন্দরী একটি
মেয়ের সাথে কিনানার সম্প্রতি বিয়ে হয়েছে ।
কিনানাকে হত্যা করার পর মুহাম্মদ বিলালকে [বিলাল ছিলো একজন আফ্রিকান ক্রীতদাস]
নির্দেশ দেন কিনানার স্ত্রীকে তাঁর কাছে ধরে নিয়ে আসার জন্যে । বিলাল সাফিয়াকে রাস্তার ধারে পড়ে থাকা তাঁর
পিতা, স্বামি, ভ্রাতা ও আত্মীয় স্বজনসহ অন্যান্য ইহুদিদের মুণ্ডুহীন লাশগুলোর পাশ
দিয়ে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে এসে মুহাম্মদের কাছে সমর্পণ করেন । সাফিয়া মুহাম্মদের চরিত্র সম্পর্কে আগে থেকেই ওয়াকিবহাল ছিলেন । তাই মুহাম্মদকে দেখা মাত্রই তিনি যে ভয়ে শিউরে উঠেছিলেন
তা বলা বাহুল্য । আর এদিকে সাফিয়াকে দেখা মাত্রই মুহাম্মদ তাঁর প্রেমে পড়ে যান এবং
একটা ঢিলা জামা তাঁর [সাফিয়ার] গায়ে ফেলে দেন । তখনাকার রীতি অনুসারে এর অর্থ হলো
তিনিই এখন সাফিয়ার মালিক । তারপর মুহাম্মদ
তাঁকে বিয়ে করার প্রস্তাব দেন এবং তার জন্যে তাঁকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে
বলেন । প্রাণ রক্ষা করার জন্যে সাফিয়ার সামনে
মুহাম্মদের আদেশ পালন করা ছাড়া অন্য উপায় ছিলো না । কালক্ষেপ না করে সে দিনই চারিদিকে
শত্রুদের হাত কাটা, পা কাটা , মুণ্ডু কাটা
রক্তাক্ত লাশগুলো ছড়িয়ে রয়েছে এমন ভয়ঙ্কর ও ভয়াল পরিবেশে মুহাম্মদ সাফিয়াকে বিয়ে
করার অনুষ্ঠানটি সম্পন্ন করে ফেলেন । তারপর তিনি উম্মে সুকিম নামে তাঁর একজন দাসের মায়ের কাছে সাফিয়াকে পাঠিয়ে দেন ।
উম্মে সুকিম মালিকের নির্দেশ মতো তাঁকে
নব বধূর সাজে সাজিয়ে দিয়ে সে রাত্রেই
মুহাম্মদের ঘরে পাঠিয়ে দেন । মুহাস্মমদ সে
রাত্রেই প্রবল আনন্দে ফুলশয্যা উদযাপন করেন সাফিয়ার সঙ্গে । আর অসহায় সাফিয়া তাঁর
শরীরটা প্রবল বিষাদে মুহাম্মদের কাছে সঁপে দেন যাঁর নির্দেশে মাত্র কয়েক ঘণ্টা
আগেই তাঁর পিতা, ভ্রাতা ও স্বামীকে হত্যা
করা হয়েছে । পৃথিবীর ইতিহাসে এমন নজির নেই
যে একজন ঈশ্বরের দূত বলে নিজেকে দাবি
করে কেউ বিধর্মীদের এভাবে হত্যা করার আদেশ দিয়েছে এবং তাদের স্ত্রীদের বিয়ে করে তাদের সঙ্গে অক্লেশে
যৌনসঙ্গমে লিপ্ত হয়েছে । মুহাম্মদ সাফিয়াকে বিয়ে করে ও তার সঙ্গে যৌনসঙ্গম করে
শুধু সমস্ত নীতি ও নৈতিকতাকেই পদদলিত করেন নি, তিনি তাঁর নিজের প্রণয়ন করা আইনেরও
লঙ্ঘন করেছিলেন । স্বামী পরিত্যক্তা স্ত্রী কিংবা বিধবা নারীদের পুনর্বার বিবাহের
ক্ষেত্রে একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত তাদের অপেক্ষা করার বিধান আছে ইসলামি আইনে যেটাকে
ইসলামের পরিভাষায় বলে ‘ইদ্দত’ । কোরানের ভাষায় সেই বিধানের কথাগুলি হলো এ রকম – “ইদ্দতকালীন
স্ত্রীলোকদের নিকট তোমরা ইঙ্গিতে বিয়ের প্রস্তাব করলে অথবা তা তোমাদের অন্তরে গোপন রাখলে তোমাদের কোনো পাপ
নেই । আল্লাহ জানেন যে তোমরা তাদের সম্বন্ধে আলোচনা করবে, কিন্তু নিয়মিত কথাবার্তা
ব্যতীত গোপনে তাদের নিকট কোনো অঙ্গীকার করো না, নির্দ্দিষ্টকাল [ইদ্দতকাল] পূর্ণ
না হওয়া পর্যন্ত বিবাহ-কার্য সম্পন্ন করার সংকল্প করো না ।” [২/২৩৫] একজন বিধবার জন্যে ইদ্দতকাল হলো চার মাস দশ দিন
[২/২৩৪] । অল্প বয়সী সাফিয়ার অসাধারণ রূপ ও দেহ-সৌষ্ঠব দেখে তাঁর প্রতি মুহাম্মদ
এতোটাই কামাসক্ত হয়ে পড়েছিলেন যে তাঁর পক্ষে চার মাস দশ দিন অপেক্ষা করা তো দূরের
কথা, তিনি এক রাত্রিও অপেক্ষা করতে পারেন
নি । ফলশ্রুতিতে সাফিয়ার রূপ-সাগরে সাঁতার
কাটার প্রবল লালসায় তিনি নিজের তৈরী করা বিধানটিও [কোরানের ২/২৩৫ নং আয়াত] লঙ্ঘন করতে দ্বিধা করেন নি ।
ইসলামি পণ্ডিতরা স্বভাবসিদ্ধ ঢঙে মুহাম্মদ ও সাফিয়ার বিয়ের এই
নিকৃষ্ট, হীন ও জঘৃণ্য ঘটনাটিকে আড়াল করার
চেষ্টা করতে কম ত্রুটি করেন নি ।
মুহাম্মদের ভাবমূর্তি যাতে মলিন না হয় তার জন্যে তাঁরা যা মিথ্যাচার করেছেন
তার নজির নেই । তাঁরা বলেছেন যে সাফিয়া মুহাম্মদের প্রতি আগে থেকেই অনুরক্ত ছিলেন । তাই যখন মুহাম্মদ তাঁকে
বিয়ে করার জন্যে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার প্রস্তাব দেন তখন সহর্ষচিত্তে সে প্রস্তাবে
সম্মতি জ্ঞাপন করেছিলেন, কারণ মুহাম্মদকে স্বামী হিসেবে পেয়ে যে আনন্দ তিনি
পেয়েছিলেন তার তুলনায় তাঁর পিতা ও স্বামীসহ প্রিয়জনদের হারানোর ব্যাথা ছিলো তাঁর
কাছে অতিশয় তুচ্ছ । ড. মাজিদ আলি খান এ
প্রসঙ্গে লিখেছেন, “Lady Safiyyah [Rad.A]
was very happy with the marriage. It is related that she bore the mark of
bruise upon her eye; when the Holy Prophet [sm] asked her tenderly the cause,
she told him that while Kinana’s bride, she saw in a dream as if the moon had
fallen from the heaven into her lap; and
that when she told Kinana, he struck her violently, saying:”what is the dream
but that you covet this King of the Hijaz, the Prophet of your husband.” [দ্রঃ মহানবী [সঃ] এঁর
বিবাহ, মহম্মদ সাদাত আলী, পৃ-১১০]