Saturday, January 30, 2021

হায়দ্রাবাদী আসাদুদ্দিন ওয়াইসি এবং ফুরফুরা শরীফের পীরজাদা টিএমসি ও বাম-কংগ্রেসের নেতা-নেত্রীদের চোখের ঘুম কেড়ে নিয়েছে

 

আমাদের দেশে, বিশেষ করে রাজ্যে, মুসলিমদের ভোটার ছাড়া কেউ অন্য কিছু ভাবে না। এই কেউ-এর দলে যেমন রাজনৈতিক দল ও রাজনৈতিক নেতারা আছেন, তেমনি আছেন অরাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব-বর্গ এবং প্রচার মাধ্যমও। মুসলিমরা কি তাদের সম্পর্কে অন্য রকম ভাবেন, কিংবা ভাবতে চান? না। একদমই না। কেন “না” ? এর উত্তর সবিস্তারে যদি কখনও সুযোগ আসে তবে পরে দেব। মুসলিমরা যেহেতু নিজেরাই নিজেদের মূলত ভোটার বলে ভাবে এবং তার দাম পেতে দর কষাকষি করে, অপরদিকে রাজনৈতিক দলগুলোও তেমনটাই ভাবে এবং দাম দিয়ে তাদের কিনতে চায়, তাই নির্বাচনের সময় সব রাজনৈতিক দলই মুসলিম ভোট-ব্যাংকের বখরা পেতে মরিয়া হয়ে ওঠে। রাজনীতির কারবারির সঙ্গে মুসলিমদের সম্পর্কে আসলে ক্রেতা-বিক্রেতার সম্পর্ক। মুসলিমরা বিক্রি হতে চায় এবং রাজনীতির কারবারিরা তাদের কিনতে চায় কুরবানির ঈদে কুরবানির পশুর বখরা কেনার মতন। আমাদের পশ্চিমবঙ্গে আসন্ন বিধানসভা মুসলিম ভোটের বখরা পেতে বা নিতে এবার দুটো নতুন বখরাদার বা ক্রেতা ভোটের ময়দানে অবতীর্ণ হয়েছে। একটা ভিন রাজ্য থেকে এসেছে, আর একটা এ রাজ্যেরই। ভিন রাজ্য থেকে আসা ক্রেতা হলেন আসাদুদ্দিন ওয়াইসির দল এআইমিম (অল ইন্ডিয়া মুসলিম-ই-ইত্তেহাদ-উল-মুমেনিন) এবং আর একজন হলেন ফুরফুরা শরীফের পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকী।

 আসন্ন নির্বাচনে ওয়াইসি ও আব্বাস সিদ্দিকীকে কেউই উপেক্ষা করতে পারছে না

আসাদুদ্দিন ওয়াইসির দল সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হওয়া বিহারের বিধানসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গ লাগোয়া পাঁচটি বিধানসভা কেন্দ্রে জয়যুক্ত হয়েছে যা রাজনৈতিক দলগুলোকে চমকে দেওয়ার মতন ঘটনা। সেই ফলে উল্লসিত হয়ে ওয়াইসি ঘোষণা দেন যে পশ্চিমবঙ্গে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে তাঁর দল অংশ গ্রহণ করবে এবং ৭০টি আসনে প্রার্থী দেবে। তখন থেকেই এ রাজ্যের শাসকদল বিরোধী অবিজেপি দলগুলি প্রমাদ গুণতে শুরু করে। এদিকে বেশ কিছুদিন থেকে আবার একটার পর একটা প্রকাশ্য সভা করে পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকী ঘোষণা দিচ্ছেন যে তিনি নতুন দল তৈরি করে আসন্ন বিধানসভা প্রার্থী দেবেন। তিনি জানিয়ে দিয়েছেন যে আগামী ২১শে জানুয়ারী তাঁর নতুন দলের নাম ঘোষণা করবেন। 

                                  

এর ফলে শাসক দল এবং অবিজেপি বিরোধী দলগুলোর চিন্তার ভাঁজ আরও বেড়েছে। কারণ তাঁরা যত ভোট পাবেন ততটাই বিজেপির জয়ের রাস্তা প্রশস্ত হবে। শাসকদল ও অবিজেপি বিরোধী দলগুলি আসাদুদ্দিন ওয়াইসি এবং আব্বাস সিদ্দিকীকে যে ভয় পাচ্ছে তা তারা লুকিয়ে রাখতে পারছে না। আসাদুদ্দিন ওয়াইসি তৃণমূল কংগ্রেস সরকারের বিরুদ্ধে মুসলিমদের প্রতি বঞ্চনা ও প্রতারণার যে অভিযোগ করছেন তার জবাব রাজনৈতিকভাবে দিতে না পেরে ওয়াইসিকে বহিরাগত, তাঁর দলকে ভোট কাটুয়া এবং বিজেপির বি-টিম বলে আক্রমণ করা হচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে। অন্যদিকে আব্বাসের জনসভায় ব্যাপক ভিড় হচ্ছে যা দেখে ভয় পেয়ে শাসকদল এবং কংগ্রেস ও সিপিএম দল ফুরফুরা শরীফে গিয়ে প্রায় হত্যে দিয়ে পড়েছে পীরজাদা ত্বহা সিদ্দিকীর কাছে। যখন দেখা যাচ্ছে যে আব্বাস সিদ্দিকীকে ভোটে অংশ নেওয়া থেকে নিরস্ত করা কোনোভাবেই সম্ভব হচ্ছে না তখন কংগ্রেস ও সিপিএম তাঁকে প্রস্তাবিত বাম-কংগ্রেস জোটে ভেড়ানোর জন্য তৎপরতা শুরু করেছে। একদিকে আসাদুদ্দিন ওয়াইসি যেমন শাসকদলের অরাজনৈতিক আক্রমণকে ফুৎকারে উড়িয়ে দিচ্ছেন, অপরদিকে আব্বাসও তেমনি মুসলিম এবং আদিবাসী, বনবাসী ও দলিতদের নিয়ে একটি ফ্রণ্ট তৈরি করে তৃণমূল কংগ্রেস এবং বিজেপির বিরুদ্ধে ভোটে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্তে দৃঢ় থাকার ঘোষণা দিয়েছেন। ইতিমধ্যেই আসাদুদ্দিন ওয়াইসি হায়দ্রাবাদ থেকে উড়ে এসে ফুরফুরা শরীফে গিয়ে আব্বাসের সঙ্গে আলোচনা করেছেন এবং আব্বাসের নেতৃত্বেই তাঁর দল ভোটে লড়বে বলে জানিয়েছেন যা তৃণমূল কংগ্রেস এবং সিপিএম-কংগ্রেসের দুশ্চিন্তা অনেকটাই বাড়িয়ে দিয়েছে।  

     

ত্রিমুখী নয়, পশ্চিমবঙ্গে এবার চতুর্মুখী লড়াই হতে যাচ্ছে  

২১০৯ এর লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি পশ্চিমবঙ্গে ৪২টি আসনের ১৮টিতে জয় পায়। ২০১৪-য় ছিলো দু’জন সাংসদ, একলাফে সেটা ন’গুণ (৯০০ শতাংশ) বেড়ে হয় আঠারো। শুধু সাংসদ সংখ্যার নিরিখেই নয়, বিজেপি শাসকদলের ঘাড়ে নিশ্বাস ফেলতে সমর্থ হয় প্রাপ্ত ভোট-শতাংশের দিক থেকেও। ২১০৯ এর লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রাপ্ত ভোট ছিলো ৪৩.৬৯%, বিজেপি সেখানে পায় ৪০.৬৪%। ২০১৬-র বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির প্রাপ্ত ভোট ছিলো মাত্র ১০.১৬%, মাত্র তিন বছরে বৃদ্ধি হয় চারগুণ (৪০০%)। ২১০৯ এর লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির এই প্রায় অবিশ্বাস্য ও চমকপ্রদ সাফল্য তাদের মধ্যে একটা প্রত্যয়ের জন্ম দিতে শুরু করে যে, পশ্চিমবঙ্গে সরকার তৈরি করা শুধু একটা শ্লোগান বা স্বপ্ন নয়, তা সম্ভবও। তাদের মনে বিশ্বাস জন্মে যে নবান্ন দখল করার জন্যে পায়ের নীচে যে জমি প্রয়োজন সেটা তারা পেয়ে গেছে। সেই মাটির উপর দাঁড়িয়ে তারা হুঙ্কার ছাড়ে তৃণমূল কংগ্রেসকে উদ্দেশ্য করে যে, ২০১৯-এ হাফ, ২০২১-এ সাফ।

২০১৯-এর নির্বাচনে শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসও উপলব্ধি করে যে পশ্চিমবঙ্গে তারা আর অপ্রতিদ্বন্দী নয় এবং বিজেপি সত্যিই তাদের বিকল্প হিসাবে দ্রুত উঠে আসছে। লোকসভার সেই নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস ২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনের তুলনায় ১২টি আসন কম (৫৫%) পেলেও ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের তুলনায় তাদের প্রাপ্ত ভোটের হার বিশেষ কমেনি। ২০১৬ সালে তাদের প্রাপ্ত ভোট ছিলো ৪৪.৯১%, আর ২০১৯ সালে ৪৩.৬৯%, হ্রাস মাত্র ১.২২%। অপরদিকে ২০১৬-র বিধানসভা নির্বাচনে যেখানে পেয়েছিলো ১০.১৬% ভোট, সেটা ২০১৯-শের লোকসভার নির্বাচনে বেড়ে হয় ৪০.৬৪%, অর্থাৎ বৃদ্ধি হয় ৩০.৪৮%, পাটিগণিতের হিসাবে চারগুণ তথা ৪০০ শতাংশ। বিজেপির এই বিশাল ভোট বৃদ্ধি হয়েছে মূলত বামদলগুলি এবং কংগ্রেসের ব্যাপক রক্তক্ষরণের জন্যে। বামেদের (এসইউসি বাদে) ভোট কমেছে ২৩.৪১% এবং কংগ্রেসের ভোট কমেছে ৩.১৫%। অর্থাৎ বাম ও কংগ্রেসের ২৬.৫৫% ভোট বিজেপির ঝুলিতে গিয়েছে। ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের ফলাফল শুধু কোনো দলের জয়-পরাজয়ই সূচিত করেনি, অন্য একটি বিশেষ দিকের প্রতিও আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। পশ্চিমবঙ্গ কি দ্বিদলীয় রাজনীতির দিকে ধাবিত হচ্ছে? জনগণ তৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপির বাইরে কি তৃতীয় কোনো দল বা জোটকে চায় না? সে রকমই একটা ঝোঁক যেন পরিলক্ষিত হচ্ছে। ২০১৬-এর বিধানসভা নির্বাচন ও ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণ করলে সেই ছবিটাই তো সামনে আসছে। ২০১৬-য় তৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপির সম্মিলিত ভোটের অংশ ছিল যেখানে ৫৫.০৭%, ২০১৯-এ সেটা একলাফে ২৯.২৬% বেড়ে হয়েছে ৮৪.৩৩%। সংসদীয় রাজনীতিতে বহুদলীয় ব্যবস্থার পরিবর্তে দ্বিদলীয় ব্যবস্থার প্রবর্তন শুধু বাম-কংগ্রেস দলের পক্ষেই অশুভ নয়, অশুভ গণতন্ত্রের পক্ষেও। তৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপি মনে হচ্ছে এখানে দ্বিদলীয় শাসনব্যবস্থাটাই মনে প্রাণে চাইছে। তৃণমূল কংগ্রেস ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনের পর থেকে বলা শুরু করেছেন যে সিপিএম ও কংগ্রেস বিজেপির সঙ্গে আঁতাত করেছে তাদের বিরুদ্ধে। মমতা ব্যানার্জী বলছেন বিজেপি, সিপিএম ও কংগ্রেস হলো আসলে নিমাই, জগাই ও মাধাই। একথা বলে তিনি বিজেপি তথা হিন্দু মৌলবাদবিরোধী সব ভোট তাঁর পক্ষে একত্রিত করতে চাইছেন। অপরদিকে বলা বাহুল্য যে দ্বিদলীয় ব্যবস্থা তো বিজেপির ধর্মীয় মেরুকরণের রাজনীতির জন্যে আদর্শ ব্যবস্থা। তাই তাদের শ্লোগান হলো - তৃণমূল কংগ্রেসের স্বৈরশাসন ও অপশাসন থেকে বাংলাকে বাঁচাতে পারে একমাত্র বিজেপিই, বাম ও কংগ্রেস নয়।

পরিস্থিতিটা সম্যক উপলব্ধি করেছে কংগ্রেস ও বামেরাও। তাই তারা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপির বিরুদ্ধে জোট বেঁধে লড়াই করার। একদা বাম ও কংগ্রেস ছিলো দুই যুযুধান পক্ষ, ফলে তাদের জোট বাঁধাটা মোটেই সহজ নয়। তবু যেহেতু দেওয়ালে তাদের পিঠ ঠেকে গেছে তাই দ্বিদলীয় শাসনব্যবস্থা ঠেকাতে যে কোনো উপায়েই হোক তারা জোট বাঁধতে মরিয়া। তাদের প্রয়াস সার্থক হলে পশ্চিমবঙ্গে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে ত্রিমুখী লড়াই হওয়ার কথা। কিন্তু পরিস্থিতিটা সেখানেও আটকে নেই এখন। পরিস্থিতিটা এগিয়ে যাচ্ছে ক্রমশ যেন চতুর্মুখী লড়াইয়ের দিকে।

হ্যাঁ, ঠিক তাই। কারণ, ভোটের ময়দানে নামার জন্যে ইতিমধ্যেই পুরোদমে গা ঘামাতে শুরু করেছে আসাদুদ্দিন ওয়াইসি এবং পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকী যে কথা ইতিমধ্যেই ওপরে আলোচনা করা হয়েছে। যদি আব্বাসের প্রস্তাবিত ছোট ছোট দশটি দলের ফ্রণ্ট গড়ার পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয় এবং ওয়াইসির সঙ্গে আব্বাসের যদি জোট বা বোঝাপাড়া তৈরি হয় তবে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে নিশ্চিতভাবেই চতুর্মুখী লড়াই হবে তা বলাই যায়।   

এখন সব দলেরই সর্বাধিক মাথাব্যাথা মুসলিম ভোটারদের নিয়েই, মায় বিজেপির পর্যন্ত

মুসলিম ভোট নিয়ে সমস্ত রাজনৈতিক দলেরই মাথাব্যাথা হওয়ার বা থাকার যথেষ্ট কারণ আছে। অবিজেপি সব দলই চায় যে কোনো মূল্যে মুসলিম ভোট-ব্যাংককে কব্জা করতে। হ্যাঁ, ‘যে কোনো মূল্যেই’ কথাটা বলছি সম্পূর্ণ সচেতনভাবাবেই। ‘মুসলিম ভোট-ব্যাংক অটুট রাখার জন্যে নীতি ও আদর্শের সঙ্গে যতটা আপোষ করতে হয় করো, - এই হলো অবিজেপি দলগুলির এখন একটা অন্যতম প্রধান মন্ত্র। আগে দলের নীতি ও আদর্শ, পরে ভোট বা ক্ষমতা – এই রাজনৈতিক সংস্কৃতি এখন সম্পূর্ণ অতীত। এক্ষেত্রে এ রাজ্যে, হয়তো সমগ্র দেশেও, তৃণমূল কংগ্রেস অতুলনীয়।

                                                                      West Bengal Muslims: How Owaisi & Furfura Sharif's Abbas Siddiqui Are Where  Siddiqullah Chowdhury Once Was

নীতি ও আদর্শ পদদলিত করে রাজনৈতিক দলগুলি মুসলিম ভোট-ব্যাঙ্ক কব্জা করতে, কিংবা মুসলিম ভোট-ব্যাঙ্কে ভাগ বসাতে মরিয়া প্রধানত দুটি কারণে। প্রথমত, মুসলিমরা নিজেদের আজও কেবলই ভোটার করেই রেখেছে, তারা তাদের এখনও নিজেদের দেশের নাগরিক হিসাবে ভাবে না, বলা ভালো ভাবতে চায় না। নিজের ভালো পাগলেও বোঝে, শুধু মুসলমানরা বোঝে না। নিজেদের শুধু ভোটার বা ভোটের পণ্য করে রাখার ফলে তারা যে ক্রমশ পিছিয়ে পড়ছে তা বোঝে না, বোঝার চেষ্টাও নেই। রাজনৈতিক দলগুলিও তাদেরকে শুধু ভোটার হিসাবেই দেখতে চায়, নাগরিক হিসেবে নয়। দ্বিতীয়ত, মুসলিমদের জনসংখ্যা। মুসলিমদের জনসংখ্যা এখন প্রায় ৩০% (তিরিশ শতাংশ) এবং তিনটি জেলায় (মুর্শিদাবাদ, মালদা ও রায়গঞ্জ) তারা সংখ্যাগুরু। এই তিনটি জেলায় বিধানসভা সিটের সংখ্যা যথাক্রমে  বাইশ, বারো এবং নয়, মোট তেতাল্লিশ। তাছাড়া আরও আটটি জেলায় মুসলিম জনসংখ্যা কুড়ি শতাংশের ওপর যার মধ্যে দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা ও বীরভূমে মুসলিম জনসংখ্যা প্রায় চল্লিশ শতাংশ। এর ফলে রাজ্যের ১২৫টি বিধানসভা আসনে তাদের ভূমিকা বেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। একটি তথ্য বলছে যে, ২০০৬ সালে বামফ্রণ্ট যে বিশাল জয় পেয়েছিলো (২৯৪ সিটের মধ্যে ২৩৫টি) তার কারণ ওই ১২৫টি আসনের মধ্যে তারা পেয়েছিলো ১০২টি আসন। আবার মমতা ব্যানার্জী ২০১৬ সালের বিশাল জয়ের (২১১টি আসনে জয়) কারণ হলো, ওই ১২৫টি আসনের মধ্যে তিন ৯০টি আসনে বিজয় প্রাপ্তি। স্বভাবতই ভোটের ময়দানে ওয়াইসি ও আব্বাসের আবির্ভাবে শাসক দল এবং কংগ্রেস ও বামেরা ভীষণ চিন্তিত, উদ্বিগ্নও বটে। ওয়াইসি ও আব্বাসরা যদি মুসলিম ভোট-ব্যাঙ্কে ভাগ বসাতে পারে তবে তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষে তৃতীয় বারের মতন সরকার তৈরি করা যেমন কঠিন হয়ে পড়বে, তেমনি অনুরূপভাবে কংগ্রেস ও বামেদেরও পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিক থাকাও শক্ত হয়ে দাঁড়াবে। আর এসবের অর্থ হলো নবান্নে বিজেপি রাজের সূচনা হওয়া। 

ওয়াইসি ও আব্বাসদের ভূমিকা ও তৎপরতায় শাসকদলের ঘনিষ্ঠ ধর্মীয় নেতারাও সমান চিন্তিত ও উদ্বিগ্ন। কারণ, পশ্চিমবঙ্গের মসনদে বিজেপি ক্ষমতায় আসলে তাঁরা সব রকমের সরকারি দাক্ষিণ্য ও সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবেন। তাই তাঁরা নিজেদের স্বার্থেই মমতা ব্যানার্জীকে ক্ষমতায় পুনরায় ফিরিয়ে আনতে ওয়াইসি ও আব্বাসদের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই আসরে নেমে পড়েছে। যাঁরা আসরে নেমে পড়েছে তাঁদের মধ্যে যেমন পীরজাদা ত্বহা সিদ্দিকী ও সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী রয়েছেন, তেমনি রয়েছে ইমামদের সংগঠনও। অন্যদিকে কংগ্রেস ও সিপিএম নেতারাও পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকীকে তাদের জোটে টানতে তৎপরতা শুরু করেছেন।

অন্যদিকে মুসলিম ভোট নিয়ে বিজেপিকেও বেশ সতর্ক দেখাচ্ছে। ৩০% মুসলিমদের বাদ দিয়ে এ রাজ্যে সরকার তৈরি করা যে অসম্ভব তা বিজেপি বোঝে। সেজন্যে মুসলিম ভোট-ব্যাঙ্কে ভাগ বসাতে বিজেপিও সমানে সচেষ্ট। এ কাজে বিজেপি কিছুটা সাফল্যও পেয়েছে এবং সংখ্যায় কম হলেও বিজেপিতে মুসলিমদের যোগদান অব্যাহত রয়েছে। এটা অব্যাহত রাখতে বিজেপি একটি বিশেষ রণকৌশল গ্রহণ করেছে। সেটা হলো প্রধান ইস্যুগুলিকে (অনুপ্রবেশ, মাদ্রাসা, অভিন্ন দেওয়ানি আইন, লাভ জিহাদ, গোরক্ষা ইত্যাদি) আপাতত ঠাণ্ডা ঘরে পাঠিয়ে দেওয়া। এমনকি অনুপ্রবেশকারী ইস্যুতে যে দুটি কঠোর ও বিতর্কিত আইন(এনআরসি ও সিএএ) প্রণয়ন করেছে কেন্দ্রীয় সরকার সেগুলি কার্যকরী করাও আপাতত স্থগিত রেখে দেওয়া হয়েছে, যদিও বিজেপির মতুয়া প্রতিনিধিদের সিএএ কার্যকরী করার জন্যে নেতৃত্বের ওপর প্রবল চাপ রয়েছে।   ১২.০১.২০২১

 

 পুনশ্চঃ ২১শে জানুয়ারী পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকী তাঁর রাজনৈতিক দলের নাম – Indian Secular Front - ঘোষণা করেছেন।

 

 

KARBALA: Truth and Lies

  KARBALA : Truth and Lies           GIASUDDIN                 Translated by SRIJIB BISWAS        ...