আচমকা বড়ো নোট বাতিল এবং
ডিজিট্যাল লেনদেনের প্রক্রিয়া শুরু করায় কালো টাকার মালিক ও কারবারীদের ত্রাহি
ত্রাহি রব উঠেছে। রাজনৈতিক দলগুলির নেতাদের গলাতেও সেই করুণ আর্তনাদ প্রতিধ্বনিত হচ্ছে।
বিজেপির অবস্থাটাও প্রায় তদ্রুপ, কিন্তু দলীয় শৃঙ্খলায় বন্দী বলে নেতাদের প্রকাশ্যে
রা বন্ধ রয়েছে। বড়ো নোট বাতিল এবং
ডিজিট্যাল লেনদেন – এই এক জোড়া প্রবল শক্তিশালী বোমার আঘাতে যারা ক্ষত-বিক্ষত ও বিধ্বস্ত তারা
ভাবেন নি যে আরো শক্তিশালী আর একটি বোমা অচিরেই তাদের উপর আছড়ে পড়বে। গতকাল সেই বোমাটি
নির্দিষ্ট লক্ষ্যে ছোঁড়া হয়েছে নীতি আয়োগের পক্ষ থেকে। ঘোষণা করা হয়েছে বছর তিনেক
পরে এটিম কার্ড/ডেবিট কার্ডও অচল করে দেওয়া হবে, তার পরিবর্তে বায়োমেট্রিক
পদ্ধতিতে ডিজিট্যাল লেনদেন হবে। এ যেন গোদের উপর বিষফোঁড়া! বিস্তারিত খবরটা দেখুন এখানে - www.anandabazar.com/national/credit-and-debit-cards-atm-s-will-be-redundant-by-2020-says-niti-aayog-s-ceo-dgtl-1.545534#
এই পদ্ধতি চালু হলে দু’রকম সুবিধা
পাওয়া যাবে বলে জানানো হয়েছে। এক). ডেবিট কার্ডের তথ্য সংগ্রহ করে এ্যাকাউণ্ট সাফ
করে দেওয়ার ঝুঁকি প্রায় থাকবে না। দুই). লেনদেন হবে ত্বরিৎ গতিতে, মাত্র আধা
সেকেণ্ডে।
প্রতীকী
ছবি
যেমনটা বলা হচ্ছে তা যদি সত্যি
হয় তবে ভালোই তো। ভালো জিনিষকে তো স্বাগত জানানোই উচিৎ। যদি দেখা যায় পরিণতি খারাপ
হচ্ছে তখন বিরোধিতা করা যাবে। যারা নোট বাতিল এবং ডিজিট্যাল লেনদেনের বিরুদ্ধে
খাপ্পা, কেন খাপ্পা তা তো দিনের আলোর মতো স্পষ্ট, তারা আবার চিৎকার চেঁচামেচি
করবে। ওদের চেঁচামেচিতে কান না দেওয়াই ভালো। ওরা নাকি গরীব মানুষের প্রবল দরদী হয়ে
উঠেছেন, গরীবদের সর্বনাশ হবে ভেবে রাতে নাকি উনারা ঘুমাতে পারছেন না, গরীব মানুষগুলোর জন্যে নাকি উনাদের চোখে ঝর্ণাধারার মতো অবিশ্রান্ত অশ্রু ঝরছে! উনাদের চোখ দিয়ে যা ঝরছে তা অশ্রু না কুম্ভীরাশ্রু তা তো সবাই জানে। গরিবী হটানোর
স্লোগানের কি দশা হয়েছে তাও কারো অজানা নেই। আর ভোটের সময় কিংবা কোনো বিপদে পড়লে (যেমন এখন পড়েছেন) উনারা গরীব মানুষের যে
দিনরাত ভজনা করেন সেটাও তো আমাদের সবার জানা বহু পুরানো গল্পো। সুতরাং উনারা চিৎকার করছেন করতে থাকুন, আসুন আমরা
বরং বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে বেনগদ (ডিজিট্যাল) লেনদেনের অর্থনীতিকে স্বাগত জানাই। যতদিন না এর কুফল
হাতে নাতে পাচ্ছি ততোদিন কেনো মেকি গরীব দরদীদের কথায় বিশ্বাস করতে যাবো? আর কেনোই বা কালো
টাকার বিরুদ্ধে কার্যকরী আরো উন্নত একটি প্রযুক্তির আগমনেই বা বাধা দেবো?
আমরা কম্পিউটর প্রযুক্তির আগমনকালটার কথা ভুলে যায় নি। কংগ্রেস সরকারের হাত ধরে কম্পিউটার প্রবেশ করেছিলো ভারতে।
গরীবের সর্বনাশ হবে, গরীব শ্রমিকরা ধ্বংস হয়ে যাবে, সব কাজ হারিয়ে বেকার হয়ে যাবে
- এসব কথা বলে, মায়া কান্না কেঁদে প্রবল বাধা
দিয়েছিলো তখন তথাকথিত গরীব দরদী বামপন্থী দলগুলো (গরীবদের দরদী হয় বামপন্থীরাই, আমি এ
কথাটি বললাম আমাদের দেশের প্রেক্ষিতে)। তারা বলেছিলো, বুর্জোয়াদের স্বার্থ চরিতার্থ
করার জন্যে কম্পিউটার ঢোকানো হচ্ছে, এটা গরীব মানুষদের বিরুদ্ধে কংগ্রেসের গভীর
ষড়যন্ত্র। জেনে হোক না জেনে হোক বামপন্থীরা
যা বলেছিলেন তা যে ঠিক বলেন নি তা তো প্রমাণিত, এটা তো কবেই স্পষ্ট হয়ে গেছে যে কম্পিউটার ছাড়া এক পা ফেলার
জো নেই আমাদের। অহেতুক গরীবের ধুয়া তুলে যারা কম্পিউটারের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমেছিলেন তারা অনুরূপভাবেই টেলিকম
প্রযুক্তির বিরোধিতা করেছিলেন। সেই তখনও একই ধুয়া ছিলো – শ্রমিকরা বেকার হয়ে যাবে। এখন কিন্তু সেই শ্রমিক দরদী(!) সকল নেতার হাতে শোভা পাচ্ছে সেল ফোন। আমাদের বাম নেতাদের
দূরদর্শিতার জ্ঞানের বহর এভাবেই বিশ্বের আঙ্গিনায় বারবার আমাদের মাথা হেঁট করেছে। এই নেতাদের তবুও কখনো
ভুল থেকে শিক্ষা নিতে দেখিনি। ভারতের শ্রমিক
শ্রেণির কাছে তাঁদের কৃত ভুলের জন্যে ক্ষমা চেয়েছেন বলে শুনি নি। সেই নেতারাই যেখন
আবার নোট বাতিল এবং ডিজিট্যাল লেনদেনের ফলে গরীব মানুষের সর্বনাশ হবে বলে আন্দলনের
নামে চিৎকার করেন তখন তাদের উপর কোন আক্কেলে ভরসা রাখতে যাবো? এই নেতারা শ্রমিক
শ্রেণির ধুয়া তুলে বারবার প্রতিবার প্রযুক্তির বিরোধিতা করেছেন, এবং তার
ফল যে ভালো হয় নি সেটা তো প্রতিবারই প্রমাণিত হয়েছে। সুতরাং তাদের কথায় কেনা-বেচা ও
লেনদেনে বিজেপির হাত ধরে বা মোদির হাত ধরে
যদি নতুন প্রযুক্তি আসে তবে কেনো তার বিরোধিতা করতে যাবো?
এ বিষয়ে আরো অনেক কথা বলার বাকি
থেকে গেলো, সেগুলো পরে বলা যাবে। আপাতত শুধু এটুকু বলতে চাই যে কয়েকটি রাজনৈতিক দল
এবং কিছু সংবাদ মাধ্যম নোট বন্দি ও ডিজিট্যাল লেনদনের বিরুদ্ধে যে হৈ চৈ করছে তা
মানুষের স্বার্থে করছে এমনটা বিশ্বাস করার কোনো কারণ দেখা যাচ্ছে না। সুতরাং তাদের কথায় আতঙ্কিত ও বিভ্রান্ত না হয়ে ডিজিট্যাল বা বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে লেনদেনের ব্যবস্থাকে আমাদের স্বাগত জানানোই শ্রেয় হবে।