Saturday, February 5, 2022

কোরান মনুষ্য রচিত গ্রন্থ - তিন

 

প্রসঙ্গঃ কোরানে বিজ্ঞান – এক  

কোরান একটি ধর্মগ্রন্থ হলেও তার মধ্যে বিজ্ঞান নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা ও ব্যাখ্যা রয়েছে। আলোচনা ছড়িয়ে রয়েছে বিজ্ঞানের বিভিন্ন দিক ও শাখা নিয়ে পৃথক পৃথকভাবে। যেমন ভূমণ্ডল, উদ্ভিদ, সমুদ্র, পাহাড়-পর্বত, আকাশ, মহাকাশ, জোতির্বিজ্ঞান, মেঘ, বৃষ্টি, বন্যা, ভূমিকম্প ইত্যাদি। কিভাবে ও কতদিনে বিশ্বব্রহ্মাণ্ড তৈরি হয়েছে, ভূমণ্ডলে কেন পাহাড়-পর্বত, কেন দিন-রাত্রি, কেন সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণ, কেন মেঘ ও বৃষ্টি, কেন প্রাকৃতিক বিপর্যয় (ঝড়-তুফান-ভূমিকম্প-সুনামি ইত্যাদি) - এসব নানা বিষয়ে কোরানে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ রয়েছে  

কোরানে বিজ্ঞানের প্রায় সবকটা দিক নিয়ে আলোচনা ও ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ থাকায় মুসলমানরা কোরানকে একটি বিজ্ঞান গ্রন্থ বলেও দাবি করে। শুধু মামুলি একটি বিজ্ঞানগ্রন্থ নয়, মুসলমানদের দাবি হলো, কোরান হলো পৃথিবীর সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ একটি মহাবিজ্ঞান।  মুসলমানরা কিসের জোরে এত বড়ো দাবি করে? তাদের জোরের জায়গাটা হলো তাদের আল্লাহ। তাদের যুক্তি হলো, আল্লাহ যেহেতু সমগ্র বিশ্বব্রহ্মাণ্ড এবং সমগ্র প্রাণী ও উদ্ভিদ জগতের সৃষ্টিকর্তা, সুতরাং তিনিই সবচেয়ে বড়ো বিজ্ঞানী যার তুল্য বিজ্ঞানী মানুষের পক্ষে হওয়া সম্ভব নয়। আর যেহেতু কোরান হলো স্বয়ং আল্লাহর সৃষ্টি, তাই কোরানের তুল্য বিজ্ঞান বই মানুষের পক্ষে সৃষ্টি করা বা লেখাও সম্ভব নয়।

এই লেখায় কোরানে আলোচিত বিজ্ঞানের নানা দিক নিয়ে আলোকপাত করা হবে। সমস্ত দিকের উপর আলোকপাত করতে হলে লেখাটা যথেষ্ট বড়ো হবে বিধায় দু’টো বা তিনটে ভাগে লেখাটা সম্পূর্ণ করা হবে।

  আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি প্রসঙ্গে কোরান  

বিশ্বব্রহ্মাণ্ড ও তার অভ্যন্তরে যা কিছু তাদের সৃষ্টি প্রসঙ্গে কোরানে বিস্তারিত আলোচনা ও ব্যাখ্যা রয়েছেকিন্তু সেই আলোচনা ও ব্যাখ্যায় বিজ্ঞানের লেশমাত্র গন্ধ নেই। যা আছে তা হলো একান্তই ব্যক্তিগত মনগড়া সিদ্ধান্ত, ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ। ফলে স্বভাবতই বিজ্ঞান বিষয়ক আলোচনায় স্থূলচোখেই ধরা পড়ে অজস্র গোঁজামিল, গরমিল, অসংলগ্নতা ও স্ববিরোধিতা। প্রথমেই চোখ রাখবো আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি প্রসঙ্গে কোরানের ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ।

8,870,339 Blue Sky Stock Photos, Pictures & Royalty-Free Images - iStock

·         তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহ যিনি আকাশমণ্ডল ও পৃথিবী ছয় দিনে সৃষ্টি করেন; অতঃপর তিনি আরশে সমাসীন হন(সুরা এরাফ, ৭/৫৪)

·         তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহ যিনি আকাশমণ্ডোল ও পৃথিবী ছয় দিনে সৃষ্টি করেন, তারপর আরশে উঠেছেন (সুরা ইউনুস, ১০/৩)

·         তিনি আকাশমণ্ডলী, পৃথিবী ও উহাদের মধ্যবর্তী সবকিছু ছয় দিবসে সৃষ্টি করেন; অতঃপর তিনি আরশে সমাসীন হন .. সুরা ফুরকান, ২৫/৫৯)      

·         আমি আকাশমণ্ডলী, পৃথিবী ও উহাদের মধ্যবর্তী সবকিছু ছয় দিবসে সৃষ্টি করেছি, আমাকে ক্লান্তি স্পর্শ করে নাই। (সুরা ক্বাফ, ৫০/৩৮)

·         বল, তোমরা কি অস্বীকার করিবেই যে যিনি পৃথিবী সৃষ্টি করিয়াছেন দুই দিনে এবং তোমরা কি তার সমকক্ষ দাঁড় করাইতেছ? তিনি তো জগতসমূহের প্রতিপালক। (সুরা হা-মীম, সেজদা, ৪১/৯)

·         আর তার উপরিভাগে তিনি অটল পর্বতমালা স্থাপন করিয়াছেন এবং উহাতে রাখিয়াছেন কল্যাণ ও চারদিনের মধ্যে উহাতে ব্যবস্থা করিয়াছেন খাদ্যের সমভাবে যাচ্ঞাকারিদের জন্য।  (সুরা হা-মীম, সেজদা, ৪১/১০) 

·         অতঃপর তিনি আকাশের দিকে মনোনিবেশ করেন যাহা ছিল ধূম্রপুঞ্জবিশেষ। অনন্তর তিনি উহাকে ও পৃথিবীকে বলিলেন, ‘তোমরা উভয়েই আস ইচ্ছায় অথবা অনিচ্ছায়’, উহারা বলিল, ‘আমরা  আসিলাম অনুগত হইয়া। (সুরা হা-মীম, সেজদা, ৪১/১১) 

·         অতঃপর তিনি আকাশমণ্ডলকে দুইদিনে সপ্তাকাশে পরিণত করিলেন এবং প্রত্যেক আকাশে উহার বিধান ব্যক্ত করিলেন, এবং আমি নিকটবর্তী আকাশকে সুশোভিত করিলাম প্রদীপমালা দ্বারা এবং করিলাম সুরক্ষিত। (সুরা হা-মীম, সেজদা, ৪১/১২)

 আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি প্রসঙ্গে কোরানের গরমিল ও স্ববিরোধিতা

স্বর্গ ও পৃথিবীর সৃষ্টিরহস্যের ভেদ উদ্ঘাটন প্রসঙ্গে কোরান যে তত্ত্বগুলি উপস্থাপিত করেছে তা বিজ্ঞানের বিচারে শিশুসুলভ হাস্যকর দাবি বৈ নয়।  কারণ, বিজ্ঞানের চোখে স্বর্গের কোনো বাস্তব অস্তিত্ব নেই।

যুক্তির বিচারেও স্বর্গ ও পৃথিবীর সৃষ্টি প্রসঙ্গে কোরানের তত্ত্বকে সত্যি বলে মান্যতা দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। কারণ, কোরানের তত্ত্বের মধ্যে রয়েছে একাধারে স্ববিরোধিতা ও দৃষ্টিকটু পুনরাবৃত্তি আকাশমণ্ডল ও পৃথিবী সৃষ্টি করা হয়েছে ছয় দিনে, কোরানে এই কথাটার পুনরাবৃত্তি করা হয়েছে ৭/৫৪, ১০/৩, ২৫/৫৯ ও ৫০/৩৮ নং আয়াতে। একই কথা বারবার বলা একটা বড়ো ধরনের ত্রুটিএমন ত্রুটি সচরাচর মানুষেরও  হয় না। তাহলে প্রশ্ন, আল্লাহ তথা বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টিকর্তার পক্ষে এত বড়ো দাগের ত্রুটি কি শোভা পায়? এ ছাড়া এর চেয়েও বড়ো একটা বিষ্ময়কর ত্রুটি রয়েছে উক্ত চারটি আয়াতে। সেটা হলো, স্ববিরোধিতাতত্ত্বের গরমিল ৭/৫৪, ১০/৩ ও ২৫/৫৯ নং আয়াত তিনটিতে বলা হয়েছে যে আল্লাহ ছয় দিনে আকাশমণ্ডল ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছে। কিন্তু ৫০/৩৮ নং আয়াতে বলা হয়েছে আকাশমণ্ডল, পৃথিবী ও উহাদের মধ্যবর্তী যা কিছু আছে তা সবই সৃষ্টি করা হয়েছে ছয় দিনে। ৭/৫৪, ১০/৩ ও ২৫/৫৯ নং আয়াতের সঙ্গে ৫০/৩৮ নং আয়াতের গরমিলটা দেখা যাচ্ছে অত্যন্ত প্রকটভাবেপ্রথম তিনটি আয়াতে  যেখানে বলা হয়েছে যে, শুধু আকাশমণ্ডল ও পৃথিবী সৃষ্টি করা হয়েছে ছয় দিনে, সেখানে  ৫০/৩৮ নং আয়াতে বলা হয়েছে যে ঐ ছয় দিনেই সৃষ্টি করা হয়েছে আকাশমণ্ডল, পৃথিবী উহাদের মধ্যে অবস্থিত সবকিছুই। এখন প্রশ্ন হলো, তত্ত্ব ও তথ্যের গরমিল বা অসংলগ্নতার মতন ত্রুটি মানুষের পক্ষে শোভনীয় হলেও সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর পক্ষে কি শোভনীয়?

আকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টিতত্ত্ব তথ্যের গরমিলের পাশাপাশি রয়েছে অত্যন্ত মোটা দাগের স্ববিরোধিতাওচারটি আয়াতে (৭/৫৪, ১০/৩, ২৫/৫৯ ও  ৫০/৩৮ নং) বলা হয়েছে যে আকাশমণ্ডল, পৃথিবী এবং উহাদের মধ্যের সবকিছু সৃষ্টি করা হয়েছে ছয় দিনেআর সেই তত্ত্বকে খণ্ডন করা হয়েছে সুরা হামীম সেজদার চারটি আয়াতে (৪১/৯-১২ নং)। পরের এই আয়াতগুলিতে দেখা যাচ্ছে আকাশমণ্ডল, পৃথিবী ও উহাদের মধ্য অন্তর্গত সবকিছু সৃষ্টি করতে সময় লেগেছে আট দিন। এখন প্রশ্ন হলো, এটা কি বিশ্বাসযোগ্য হতে পারে যে, সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ স্বয়ং (৭/৫৪, ১০/৩, ২৫/৫৯ ও  ৫০/৩৮) আয়াতগুলিকে খণ্ডন করেছে সুরা হামীম সেজদার চারটি আয়াত (৪১/৯-১২)  দিয়ে?

উপসংহার

তর্কের খাতিরে মনে করা যাক যে, আল্লাহ আছে এবং তিনিই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টিকর্তাতাহলে এটাও মানতে হয় যে, সেই সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ নিশ্চয়ই ভুলত্রুটির উর্ধে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে যে,  আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীর সৃষ্টি প্রসঙ্গে কোরান যে তত্ত্ব ও তথ্য দিয়েছে তাতে রয়েছে একদিকে বিস্তর পুনরাবৃত্তি, আর অন্যদিকে রয়েছে তথ্যের বিস্তর গরমিল এবং স্ববিরোধিতার মতন বিশাল বিশাল ত্রুটি। স্বভাবতই যে প্রশ্নের উদ্রেক হয় তা হলো, সমস্ত রকম ভুলত্রুটির উর্ধে যার অবস্থান সেই আল্লাহর পক্ষে এত বড়ো বড়ো ত্রুটি হওয়া কি সম্ভব? উত্তরটা হলো, নিশ্চয়ই না। সুতরাং এটা স্পষ্টত প্রতীয়মান হয় যে, আকাশমণ্ডল ও পৃথিবী সৃষ্টির কোরান বর্ণিত তত্ত্ব ও তথ্যগুলি আল্লাহর নয়, সেগুলি বর্ণনা করেছেন নিশ্চয়ই কোনো মানুষ এখন প্রশ্ন হলো কে সেই মানুষটি? এর উত্তরে প্রথমেই যার নাম সামনে আসে তিনি হলেন মুহাম্মদ। কারণ, তিনিই একমাত্র দাবি করেছেন যে, কোরানের কথাগুলো আল্লাহর যিনি সেই কথাগুলো তাঁর কাছে জিব্রাইল ফেরেস্তা মারফত পাঠিয়েছেন।

 

  

KARBALA: Truth and Lies

  KARBALA : Truth and Lies           GIASUDDIN                 Translated by SRIJIB BISWAS        ...