Monday, October 26, 2020

ইসলামী বিধানে মুহাম্মদের কার্টুন প্রসঙ্গ

১৬ই অক্টোবর শুক্রবার প্যারিসের শহরতলীর একটি হাই স্কুলের শিক্ষক স্যামুয়েল প্যাটিকে মুণ্ডুচ্ছেদ করে হত্যা করা হয়েছে। তাঁকে হত্যা করা হয়েছে কারণ, তিনি শার্লি এব্দু পত্রিকায় আঁকা মুহাম্মদের একটি কার্টুন নিয়ে শ্রেণীকক্ষে আলোচনা করেছিলেন। হত্যাকারী একজন চেচেন কিশোর যার বয়স মাত্র ১৭/১৮ বছর। হত্যাকারীর নাম ও পরিচয় জানা যায় নি। হত্যাকারী ঘটনাস্থলেই পুলিশের গুলিতে মারা যায়। অবশ্য নাম-ধামে তেমন কিছু যায় আসে না। যে কারণে এবং যে পদ্ধতিতে (মুণ্ডুচ্ছেদ করে) হত্যা করা হয়েছে তাতে তার প্রকৃত পরিচয় জানতে ও বুঝতে অসুবিধা হয় না। মুহাম্মদের কার্টুন পত্রিকায় ছাপানোর জন্যে ফ্রান্সেরই আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন কার্টুন পত্রিকা শার্লি এব্দু-এর অফিসে একবার বীভৎস হত্যাকাণ্ড চালিয়েছিলো আইএস জঙ্গিরা। সেটা ছিলো ২০১৫ সালের ৭ই জানুয়ারী। সেই হত্যাকাণ্ডে দশ জন কার্টুনিস্ট ও দু’জন সাংবাদিক সহ মোট বারো জন নিহত হয়েছিলেন। ২০০৫ সালেও একবার ঐ একই কারণে ঐ অফিসেই হামলা চালিয়েছিলো মুসলিম সন্ত্রাসবাদীরা। তাতে অবশ্য প্রাণহানির ঘটনা ঘটে নি। সুতরাং যে ছেলেটি মুহাম্মদের কার্টুন নিয়ে আলোচনা করার জন্যে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে সে যে একজন মুসলমান তা নিয়ে কোনো সংশয় নেই। এটা তো সর্বজন বিদিত যে, মুহাম্মদের সমালোচনায় বিশ্বের তামাম মুসলিম সমাজ প্রবল উত্তেজিত ও অস্থির হয়ে ওঠে। আর গলা থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করে হত্যা করা ইসলামি সংস্কৃতি যার প্রচলন হয়েছিলো আরবে ৭ম শতাব্দীতে। ধর্মীয় নেতাদের কার্টুন আঁকা বা সমালোচনা করা গণতন্ত্রে ন্যায়সঙ্গত অধিকার কার্টুন তো একটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্প যার মাধ্যমে রাষ্ট্রনায়ক কিংবা সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের জনবিরোধী নীতি ও কার্যকলাপের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো হয়ে থাকে। শুধু প্রতিবাদই নয়, রাষ্ট্রনায়ক এবং রাজনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের প্রয়োজনে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করার একটি মাধ্যমও। এতে কোনো অন্যায় নেই, এবং গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় এটা একটি স্বীকৃত অধিকার। কার্টুন বাক-স্বাধীনতা এবং মতপ্রকাশের অধিকার হিসাবে স্বীকৃতও। তাহলে মুহাম্মদের কার্টুন আঁকা, কিংবা সেই কার্টুন নিয়ে আলোচনা করার মধ্যে দোষ কোথায়? ফ্রান্স একটি গণতান্ত্রিক, উদারনৈতিক ও ধর্মনিরপেক্ষ দেশ যেখানে নাগরিকদের বাক-স্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সুপ্রতিষ্ঠিত ও অনেক বেশী বিস্তৃত। মুহাম্মদের কার্টুন নিয়ে আলোচনা করে শিক্ষক স্যানুয়েল কোনো বেআইনী কাজ করেন নি তা তিনি বিলক্ষণ জানতেন। তথাপি তিনি মুসলিম শিক্ষার্থীদের বিষয়ে যথেষ্ট সহানুভূতিশীল ছিলেন। তাই আলোচনা শুরু করার পূর্বে তিনি মুসলিম শিক্ষার্থীদের বলেছিলেন যে, তিনি কাউকে আঘাত করতে চান না, যারা মুহাম্মদের কার্টুন নিয়ে আলোচনায় ব্যথিত হতে পারে তারা শ্রেণীকক্ষের বাইরে চলে যেতে পারে। শোনা যাচ্ছে যে মুহাম্মদের কার্টুন নিয়ে শ্রেণীকক্ষে আলোচনার করার প্রতিবাদে কিছু অভিভাবক স্কুলের বাইরে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলো। কারও কার্টুন আঁকা কিংবা কার্টুন প্রদর্শন করা যেমন মানুষের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে স্বীকৃত অধিকার, তেমনি তার বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ জানানোর অধিকারও গণতন্ত্রে স্বীকৃত। তাই যারা স্কুলের বাইরে জড়ো হয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে তারা ঠিক করেছে না ভুল করেছে তা নিয়ে বিতর্ক চলতেই পারে, কিন্তু তারা আইন লঙ্ঘন করেছে তা বলা যাবে না। কিন্তু সমস্যা হলো এই যে মুসলিমদের প্রতিবাদ সেখানেই শেষ হয়ে যায় নি। মুসলিম সমাজের একজন কিশোর স্কুলের বাইরে সেই শিক্ষকের উপর ধারালো একটি ছুরি কিংবা ছুরির মতন অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। প্রথমে সেই অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে যে আঘাতে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তখন তাঁর গলায় ছুরি চালিয়ে নৃশংসভাবে তাঁর ধড় থেকে মাথা আলাদা করে দেয়। মায়া, মমতা, বিবেক, বুদ্ধি, এসব শব্দ ও উচ্চস্তরীয় মূল্যবোধ ধর্মান্ধদের অভিধানে নেই কিশোর ছেলেটি যখন শিক্ষক স্যামুয়েলকে হত্যা করার জন্যে অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে, তখন একবারের জন্যেও কি তার বুকে কাঁপে নি? স্যামুয়েলের জন্যে তার হৃদয়ে কি একটুও মায়া হয় নি? কিংবা হত্যা করার অপরাধে তাকেও যে চরম শাস্তি পেতে হবে সে ভয়েও কি সে বিচলিত হয় নি? না, এ প্রশ্নগুলি আমার নয়, প্রশ্নগুলি সব আম জনতার। আমি বিশ্বাস করি না যে সাধারণভাবে বিবেক-বুদ্ধি, মায়া-মমতা, ভয়-ডর, এসব কথা, শব্দ ও উচ্চস্তরীয় মানবিক মূল্যবোধগুলি ধর্মান্ধ মৌলবাদীদের শব্দভাণ্ডারে আছে। বিবেক-বুদ্ধি ও মায়া-মমতা থাকলে কেউ ধর্মান্ধ ও বর্বর হতে পারে তাও মনে করি না। আর পরকালে স্বর্গপ্রাপ্তির হাতছানিতে যারা প্রলুব্ধ তারা তো হেলায় নিজের জীবন উৎসর্গ করতে পারে যার অজস্র দৃষ্টান্ত আমাদের চারপাশে ছড়িয়ে রয়েছে। সুতরাং ধর্মান্ধদের কাছে বিবেক-বুদ্ধি, ন্যায়-অন্যায় বোধ, কিংবা মায়া-মমতা আশা করা বৃথা। মুসলিম সমাজ সামগ্রিকভাবে আজও ৭ম শতাব্দীতেই আটকে রয়েছে মুহাম্মদের কার্টুন আঁকার জন্যে ২০১৫ সালে ফ্রান্সের শার্লি এব্দু পত্রিকা অফিসে মুসলিম সন্ত্রাসবাদীদের গণহত্যা সংঘটিত করার ঘটনাটি মানুষ হয়তো কবেই ভুলে বসে আছে। এই ঘটনাটিও কিছুদিন পর মানুষ নিশ্চিতভাবেই ভুলে যাবে। কিন্তু এই হত্যাকাণ্ডে মানুষের মনে যে প্রশ্নটির জন্ম হয়েছে (প্রশ্নটি আগেও ছিলো) সেটা সহজে মানুষের মন থেকে যাবে না। প্রশ্নটি হলো, কোনো ধর্ম প্রবর্তককে নিয়ে কার্টুন আঁকা কিংবা তাঁর কার্টুন দেখানো কি খুব গর্হিত কাজ? মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার মতন গর্হিত? বৌদ্ধ, জৈন, খ্রিস্টান ও হিন্দুদের ধর্মপ্রবর্তক, ধর্মপ্রচারক ও দেব-দেবীদের নিয়ে তো কতো কার্টুন আঁকা হয়। তারজন্যে কোনো কার্টুনিস্টকে কেউ হত্যা করেছে, কিংবা কেউ হত্যা করতে উদ্যত হয়েছে এমন কথা তো শোনা যায় না। ওই সব কার্টুন আঁকার জন্যে অমুসলিম কোনো সমাজে এমনকি ভয়ঙ্কর কোনো উত্তেজনা বা অস্থিরতাও তো তৈরি না। সরস্বতীর নগ্ন ছবি আঁকার জন্যে হিন্দুদের মধ্যে একবার বড়ো রকমের উত্তেজনা ও অস্থিরতা তৈরি হতে দেখা গিয়েছে। কিন্তু সেটাও একতরফা হয় নি। যারা শিল্পীর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ ও উত্তেজনা তৈরি করেছিলো, হিংসা ছড়ানোর চেষ্টা করেছিলো তাদের বিরুদ্ধে পাল্টা প্রতিবাদও ধ্বনিত হয়েছিলো। তাহলে, মুহাম্মদের কার্টুন আঁকলে, তাঁর কার্টুন দেখালে, কিংবা তাঁর সমালোচনা করলে হত্যা করার ঘটনা ঘটে কেনো? গোটা মুসলিম সমাজই বা কেনো উত্তেজনায় অস্থির ও চঞ্চল হয়ে উঠে উন্মাদের মতন আচরণ করে? এই প্রশ্নটি গোটা বিশ্বকে অনেক দিন থেকে তাড়া করে ফিরছে। ধর্মীয় নেতাদের সমালোচনা করলে সমস্ত ধর্মপ্রাণ মানুষরেই ভাবাবেগে আঘাত লাগে, তারা মানসিকভাবে আহত হয়। অতীতে সব ধর্ম সম্প্রদায়ই এ রকম ক্ষেত্রে উত্তেজিত ও অস্থির হয়ে উঠতো। যার দ্বারা ধর্মীয় ভাবাবেগে আহত হতো তাকে চরম শাস্তি না দেওয়া পর্যন্ত তারা শান্ত হতো না। কিন্তু যুগ ও পরিস্থিতির পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সামগ্রিকভাবে সেই আদিম চিন্তাধারা ও মানসিকতার পরিবর্তন ঘটেছে। অমুসলিমরা মেনে নিয়েছে যে, তাদের ধর্মগুরুদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করার অধিকার যেমন আছে, তেমনি তাদের ধর্মগুরুদের সমালোচনা করা বা ব্যঙ্গ করার অধিকারও আছে। কিন্তু যুগের পরিবর্তনকে, যুগের পরিবর্তিত চিন্তাধারাকে মুসলমানরা মেনে নিতে আজও পারে নি। মুসলমান সমাজ আজও আটকে রয়েছে ৭ম শতাব্দীর সেই আদিম বিশ্বাসে ও ধ্যান-ধারণাতেই। অন্য সব ধর্মের ও ধর্মগুরুদের সমালোচনা ও নিন্দা করার অধিকার তাদের আছে, কিন্তু তাদের ধর্ম ও ধর্মপ্রবর্তকের সমালোচনা করার অধিকার কারও নেই, ৭ম শতাব্দীর সেই বস্তাপচা চিন্তা-ভাবনাতে তারা আজও আটকে রয়েছে। ইসলামের প্রবর্তকের কার্টুন এবং ইসলামের বিধান নিয়ে বিতর্ক শিক্ষক স্যামুয়েলের মুণ্ডুচ্ছেদ করার বর্বর ঘটনায় ফ্রান্সের বাইরে তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া এখন পর্যন্ত চোখে পড়ে নি। মুসলিম সমাজের প্রতিক্রিয়াও নয় (লেখাটি যখন শেষ করছি তখন পাকিস্তান ও তুরস্ক সরকারের প্রতিক্রিয়া নজরে পড়লো)। কোনো প্রতিক্রিয়া আসুক না বা না আসুক, একটা প্রশ্ন (ইসলামের প্রবর্তককে ব্যঙ্গ কিংবা তাঁর সমালোচনা করার শাস্তি কি মৃত্যুদণ্ড?) কিন্তু মানুষকে বিদ্ধ করছে। প্রশ্নটির দু’রকম উত্তর শুনতে পাওয়া যায়। একটা হলো, হ্যাঁ, আর একটা, না। স্বভাবতই মানুষ বিভ্রান্ত। একদল মুসলিম বুদ্ধিজীবী ও লেখক বলেন যে, ইসলাম একটি শান্তির ধর্ম, ইসলাম হিংসা ও হত্যাকে সমর্থন করে না। তাঁরা আরও দাবি করেন যে, মুহাম্মদ পৃথিবীতে এসেছিলেন আল্লাহ্র প্রেরিত শান্তির দূত হয়ে। সুতরাং যে হত্যা করেছে তার দায় কেবল তারই, ইসলামের নয়। বিশ্বের প্রায় সব রাষ্টনেতা এবং বুদ্ধিজীবীরা ওই বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গেই গলা মিলিয়ে থাকেন। সারা বিশ্বের প্রধান সংবাদ মাধ্যমগুলিও এই কথাগুলিকে আপ্তবাক্য জ্ঞানে নিরলস প্রচার করে। কিন্তু যারা হত্যা করে তারা তো দ্ব্যর্থহীনভাবে জানায় যে, নবীর সমালোচনাকারী ও বিদ্রুপকারীদের শাস্তি একমাত্র মৃত্যুদণ্ডই। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কোন উত্তরটি সঠিক? প্রসঙ্গত একটা কঠিন অপ্রিয় সত্যি কথা এখানে না বলে পারছি না। কথাটা হলো, রাজনৈতিক নেতারা কদাচিৎ সত্যা কথা বলেন। বিশেষ করে মুসলিমদের ধর্মীয় ভাবাবেগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সত্য কথা কখনও তাঁরা বলেছেন বলে শুনি নি। সততা ও সত্যতা এবং দলীয় স্বার্থের দ্বন্দে দ্বিতীয়টাই তাঁদের সর্বদা প্রথম অগ্রাধিকার। স্বভাবতই ইসলামের বিধান নিয়ে তাঁরা যা বলেন তার সত্যতা নিয়ে মনে সংশয় জাগে। অপরদিকে যুক্তির দিক থেকে বিচার করলে মুসলিম সমাজের সন্ত্রাসবাদী ধর্মীয় নেতাদের কথা অপেক্ষাকৃত অধিক বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে হয়। কারণ, যেহেতু তাদের সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপে প্রতি পদক্ষেপেই জীবনের ঝুঁকি থাকে, ইসলামের নামে তারা কেন মিথ্যা বলবে? তাছাড়া, কোরান, হাদিস ও ইসলামের ইতিহাসের বিষয়ে তারা এক একজন বিশেষজ্ঞ পণ্ডিত। তারা স্রেফ কোরান হাদিস ও মুখস্থ করা স্বল্প শিক্ষিত কাঠমোল্লা নয়। শুধু ইসলামি শিক্ষা ও জ্ঞানেই নয়, আধুনিক শিক্ষা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিদ্যাতেও তারা উচ্চশিক্ষা ও জ্ঞানের অধিকারী। ইসলামের প্রবর্তকের কার্টুন সম্পর্কে ইসলামে যে স্পষ্ট বিধান রয়েছে মুহাম্মদের কার্টুন আঁকা কিংবা তা প্রচার করা ইসলামের বিধানে শাস্তিযোগ্য কোনো অপরাধ কিনা, হলে তার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড কিনা তা জানা মোটেই কঠিন কিছু নয়। মুহাম্মদের জীবনী পড়লেই তার উত্তর পাওয়া যায়। তবে প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য যে, তাঁর কার্টুন নিয়ে সরাসরি কোনো বিধান পাওয়া যায় না। সেটা পাওয়া যায় না কোরান ও হাদিসেও। কারণ, কোরান ও হাদিসের যুগে কার্টুনের প্রচলন হয় নি। কিন্তু মুহাম্মদের সমালোচনা বা বিরোধিতা করা, কিংবা তাঁকে ব্যঙ্গ করা নিয়ে ইসলামের কী বিধান তা জানা যায় তাঁর জীবনী থেকে। যা জানা যায় তা এ রকম। মক্কা ও মদিনার কুরাইশ এবং ইহুদী সম্প্রদায়ের যে কবিগণ মুহাম্মদকে নবী বলে স্বীকার করেন নি, উল্টে তাঁর সমালোচনা ও বিরোধিতা করতেন, তাঁকে ব্যঙ্গ করতেন তাঁদের সবাইকেই নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিলো। যে কবিদের হত্যা করা হয়েছিলো তাঁদের কয়েকজন হলেন মহিলা কবি আসমা বিন মারওয়ান, কবি আফাক, কা’ব ইবন আশরাফ, কবি আবু রফি বিন আবি হুকাই, আল-নাজির ইবন আল-হারিস, উকবা বিন আবু মুয়াত প্রমুখ। মুসলমানদের হাতে নিহত শেষোক্ত দু’জন ছিলেন মক্কার কুরাইশ সম্প্রায়ভুক্ত। তাঁরা বদর যুদ্ধে মুহাম্মদের সৈন্যদের হাতে যে সত্তরজন বন্দি হয়েছিলেন তাঁদের মধ্যে ছিলেন। ৬৮জন বন্দিকে (একজন ছাড়া) মুহাম্মদ মুক্ত করে দেন মোটা মুক্তিপণের অর্থের বিনিময়ে। কিন্তু আল-নাজির ইবন আল-হারিস, উকবা বিন আবু মুয়াত মুক্তিপণ দিতে সম্মত হলেও তাঁদের মুক্তি দেওয়া হয় নি, তাদেরকে হত্যা করা হয়েছিলো। আল-নাজির ইবন আল-হারিসের অপরাধ ছিলো, তিনি তাঁর লেখা গল্পে মুহাম্মদের সমালোচনা করেছিলেন, আর উকবা বিন আবু মুয়াতের অপরাধ ছিলো এই যে, তিনি একবার মুহাম্মদ যখন নামাজ পড়ছিলেন তখন তাঁর গায়ে মৃত পশুর নাড়ীভুঁড়ি নিক্ষেপ করেছিলেন। বদর থেকে মদিনায় ফেরার পথে রাস্তাতেই আল-নাজির ইবন আল-হারিসকে হত্যা করা হয়েছিলো মুহাম্মদের নির্দেশে। কা’ব ইবন আশফাক ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন এবং মক্কা থেকে মদিনায় হিযরতও করেছিলেন। তবুও তাঁকে হত্যা করা হয়েছিলো, কারণ তিনি উক্ত দু’জন যুদ্ধবন্দিকে হত্যা করার বিরোধিতা করেছিলেন। এইসব হত্যাকাণ্ডগুলির উল্লেখ রয়েছে ইবন হিসাম ও ইবন ইশাক কর্তৃক লেখা মুহাম্মদের জীবনীতে। মুহাম্মদের অন্যান্য জীবনীকারদের লেখাতেও এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডলির উল্লেখ রয়েছে। বদর যুদ্ধের দু’জন যুদ্ধবন্দিকে হত্যা করার ঘটনার উল্লেখ রয়েছে বিশিষ্ট মুসলিম লেখক ও অধ্যাপক ডঃ ওসমান গণীর মহানবী গ্রন্থে। তিনি লিখেছেন, “বন্দীদের সকলকেই মদিনায় আনা হয়েছিল একমাত্র দু’জন ব্যতীত, উকবা বিন আবি মুয়াইত এবং নজর বিন হারিস। যারা সবসময় মক্কাতে মুসলমানদের প্রতি নিদারুণ নির্যাতন করেছিল এবং হযরত মহম্মদ (দঃ) ও কোরআন শরীফের প্রতি অকথ্য ভাষায় গালাগালি করত। তাদের পথিমধ্যে মৃত্যদণ্ডে দণ্ডিত করা হলো।” (পৃষ্ঠা – ২৪৭) ইহুদি কবিদের হত্যা করার ঘটনারও উল্লেখ রয়েছে উক্ত গ্রন্থে। তিনি লিখেছেন - “সেই সময় কাব বিন আশরাফ ও আবু আফাক নামে দু’জন এবং আসমা বিন মারওয়ান নামক একজন স্ত্রীলোকও তাদের সঙ্গে যোগ দিল, তারা সকলে মিলে সুন্দর সুন্দর গান লিখতে আরম্ভ করল নবীর বিরুদ্ধে, মুসলমানদের বিরুদ্ধে, তাদের স্ত্রী ও বিবাহযোগ্য কন্যাদের বিরুদ্ধে, এমনকি আল্লাহর বিরুদ্ধেও গানগুলো শুনতে শ্রুতিমধুর, কিন্তু অতি কুৎসিত শব্দে ভরা। তখন তাদের উদ্দেশ্য ছিল – রাজদ্রোহিতা সৃষ্টি করা, যার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। কিন্তু মুসলমানগণ নির্ভীক চিত্তে এগিয়ে যাচ্ছিল যে কোন অবস্থার সম্মুখীন হতে। এতে তাদের এতটুকু অসুবিধা ছিল না। তারা একদিন গোপনে ওই তিনজনকেই ইহজগৎ পার করে দিল। যদিও এখানে মহানবীর কোন নির্দেশ ছিল না। এটা আল্লাহ্র ইচ্ছানুযায়ী হয়েছে।” (পৃষ্ঠা – ২৫৪) ডঃ গণী হত্যার দায় থেকে তাঁর মহানবীকে মুক্তি দিয়ে তার দায় চাপিয়েছেন আল্লাহ্র ওপর। অথচ তিনিই লিখেছেন তাদের শাস্তি হলো মৃত্যুদণ্ড। কী নির্লজ্জ দ্বিচারিতা ও মিথ্যাচারিতা! এমন মিথ্যাচারিতা সচরাচর অন্য জীবনীকারদের মধ্যে দেখা যায় না। কা’ব নামক একজন কবিকে হত্যার নির্দেশ যে স্বয়ং মুহাম্মদের কাছ থেকেই এসেছিলো তা অকপটে লিখেছেন মুহাম্মদের জীবনীকার কবি গোলাম মোস্তফা। তিনি বিশ্বনবী গ্রন্থে কবি কা’বকে হত্যা প্রসঙ্গে লিখেছেন – দুষ্ট কবি কা’ব ... সিরিয়া হইতে সে গোপনে গোপনে মদিনায় ফিরিয়া আসিয়া কয়েকজন গোত্রপতিকে নিজেদের দলে ভিড়াইবার চেষ্টা করিল। ... হযরত এবার আর তাহাকে ক্ষমা করিলেন না। এই স্বদেশদ্রোহী ভণ্ড নীচমনা, ষড়যন্ত্রীকে প্রাণদণ্ডের আদেশ দিলেন। (পৃষ্ঠা – ১৬৮) এখন ইন্টারনেটের যুগ, অনুসন্ধান করলে সবকিছুই জানা যায়। মুহাম্মদের নির্দেশেই যে হত্যাকাণ্ডগুলি সংঘটিত হয়েছিলো তার প্রমাণ গুগল সার্চ করলেই পাওয়া যাবে। মহিলা কবি আসমা বিন মারওয়ানকে ঘুমন্ত অবস্থায় তাঁর ঘরে ঢুকে হত্যা করা হয়েছিল। যখন তাঁকে হত্যা করা হয় তখন তাঁর এক শিশু সন্তান তাঁর বুকের দুধ পান করছিলো। হত্যাকারী উমার বিন আদি আল-খাতমি সেই শিশুকে আসমার বুক থেকে টেনে ফেলে দিয়ে তাঁকে হত্যা করেন। এ তথ্যট রয়েছে মুহাম্মদের জীবনীকার ইবন ইশাকের লেখা মুহাম্মদের জীবনী গ্রন্থে। ইশাক লিখেছেন – He crept into her room in the dark of night where she was sleeping with her five children, with her infant child was closed to her bosom. Umayr removed the child from Asma’s breast and killed her. আসমার হত্যাকারী উমারকে হত্যা করার নির্দেশ মুহাম্মদ কেন এবং কখন দিয়েছিলেন সে প্রসঙ্গে ইবন ইশাকের লেখা থেকে উইকিপিডিয়া জানাচ্ছে – The story of Asma bint Marwan and her death appears in the works of Ibn Ishaq and Ibn Sa’d. According to the accounts, her family viewed Muhammad and his followers as unwelcome interlopers in Medina. After the Muslim victory over the Quraysh in Mecca in 623 in the battle of Badre, a number of Muhamad’s opponent was killed. In response, she composed poems that publicly criticized the local tribesmen who converted to Islam and allied with Muhammad, calling for his death. In her poems she ridiculed Medinians for obeying a chief not of her kin. Ibn Ishaq mentions that bint Marwan also displayed disgust after the Medinan Abu Afak for inciting rebellion against Muhammad. The poem said, “Do you expect good from Muhammad after the killings of your chief” and asked, “Is there no man of pride who would attack him by surprise/And cut off the hope of those who expect aught from him?” Upon hearing the poem, Muhammad then called for her death in turn, saying, “Who will rid me of Marwan’s daughter?” বৃদ্ধ কবি আবু আফাককে মুহাম্মদের নির্দেশেই যে হত্যা করা হয়েছিলো প্রমাণ রয়েছে ইবন ইশাকের লেখা মুহাম্মদের জীবনীতে। ইবন ইশাক এবং তাঁর সমসাময়িক মুহাম্মদের জীবনীকারদের লেখা থেকে ইসলামের ইতিহাস এবং মুহাম্মদের সম্পর্কে যা জানা যায় তা অনেক বেশী প্রামাণ্য। কারণ, তাঁরা কিছু গোপন করেন নি। ইবন ইশাকের লেখার থেকে তথ্য নিয়ে আবু আফাকের হত্যার ঘটনা সম্পর্কে উইকিপিডিয়া জানাচ্ছে – Abu Afak (died in 624) was a Jews poet who lived in the Hijaz region. Abu Afak did not convert to Islam and was vocal about his opposition to Muhammad. He became apolitical enemy of Muhammad. As an elderly man, Abu Afak Arwan wrote a politically charged poem against Muhammad and his followers that is preserved in the Sira. Muhammad then allegedly called for Abu Afak’s death, and Salim bin Umayr killed him. The affair was recorded by Ibn Ishaq in “Sirat Rasul Allah” (The Life of the Prophet of God) the oldest biography of Muhammad. মুহাম্মদের নির্দেশে ইহুদী কবিদের হত্যা করার ঘটনার উল্লেখ পাওয়া যায় হাদিসেও (ইসলামের দ্বিতীয় ধর্মগ্রন্থ)। লেখা বড়ো হচ্ছে তাই বেশী হাদিস উদ্ধৃত করা বাঞ্ছনীয় হবে না। তাই শুধু কা’ব ইবন আশরাফকে হত্যা করা সম্পর্কে একটা হাদিস থেকে কিছুটা অংশ উদ্ধৃত করা হলো। হাদিসটি হলো - হযরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, - একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন – কা’ব ইবনে আশরাফকে হত্যা করার জন্য কে প্রস্তুত আছ? সে আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলকে অনেক কষ্ট দিয়েছে। মুহাম্মদ ইবনে মাসলামা (রাঃ) উঠে বললেন, হে আল্লাহ্র রাসূল! আপনি কি চান, আমি গিয়ে তাকে হত্যা করি? তিনি বললেন, হ্যাঁ, তখন মুহাম্মদ ইবনে মাসলামা (রাঃ) বললেন, তা হলে এ ব্যাপারে আমি যা ভাল মনে করি আমাকে তা বলার অনুমতি দিন।।রাসূলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন – হ্যাঁ, বলো। ... এবার তিনি তার মাথার চুল দৃঢ় মুষ্টিতে ধরে সঙ্গীদেরকে বললেন, এবার নাও, তখন তারা তাকে হত্যা করল এবং নবী করীম রাসূলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম – এর কাছে ফিরে এসে তার হত্যার সুখবর জানাল। (দ্রঃ বোখারী শরীফ, ১ম থেকে ৭ম খণ্ড একত্রে, মল্লিক ব্রাদার্স, কলকাতা, হাদিস নং ২০১৬,) উপরে যে সর্বাধিক বিশ্বাসযোগ্য এবং প্রামাণ্য তথ্যগুলি আলোচনা ও উদ্ধৃত করা হয়েছে তা থেকে নিঃসংশয়ে এটা প্রতীয়মান হয় যে, মুহাম্মদের সমালোচনা ও বিরোধিতা করা এবং তাঁকে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করা শুধু শাস্তিযোগ্য অপরাধই নয়, তার শাস্তি হলো মৃত্যদণ্ড। আর মুহাম্মদকে যারা ব্যঙ্গ করে, কিংবা তাঁর সমালোচনা ও বিরোধিতা করে তাদের হত্যা করা শুধু একটা অমানবিক বিধানই নয়, সেটা একটা সংস্কৃতিও যার প্রচলন করেন স্বয়ং মুহামদ। ইংরাজী শব্দ কার্টুন (Cartoon) - এর অর্থ ব্যঙ্গচিত্র। বলা বাহুল্য যে মুহাম্মদের কার্টুন আঁকার উদ্দেশ্যই হলো তাঁকে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করা, কিংবা তাঁর নীতি ও কার্যাবলীর সমালোচনা করা। সুতরাং মুহাম্মদের কার্টুন আঁকা, তা প্রদর্শন করা ইসলামের বিধানে স্পষ্টতই মৃত্যুদণ্ডযোগ্য অপরাধ। ফ্রান্সের কড়া প্রতিক্রিয়া ও কঠোর পদক্ষেপ ফ্রান্সের সরকার স্যামুয়েল প্যাটির বর্বর হত্যাকাণ্ডে মুসলিম সংগঠন ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে অত্যন্ত কড়া মনোভাব ও অবস্থান গ্রহণ করেছে। ফ্রান্সের সরকার স্যামুয়েল প্যাটির পাশে দাঁড়িয়েছে এবং তাঁকে সে দেশের মরণোত্তর সর্বোচ্চ সম্মানে ভূষিত করেছে। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রন ‘ইসলামপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদ’ – এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ঘোষণা দিয়েছেন। তাঁর এই ঘোষণার পরই ফ্রান্সের পুলিশ প্রশাসন গোটা দেশ জুড়ে ব্যাপক অভিযান শুরু করেছে। ফ্রান্সে ইতিমধ্যেই ৭৩টি মসজিদ এবং ইসলামিক স্কুল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন যে ফ্রান্স থেকে ২৩১ জন বিদেশীকে বহিষ্কার করা হবে যাদের মধ্যে ১৮০ জন জেলে আছে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রন কিছুদিন আগেই মন্তব্য করেছিলেন যে, বিশ্বজুড়ে ইসলাম সংকটে রয়েছে। তিনি এটাও জানিয়ে ছিলেন যে, মসজিদগুলোর বৈদেশিক তহবিল নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সরকার দেশটির বিভিন্ন স্কুল ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণে নেবে। ফ্রান্সের জনগণও মানুষও এই হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ও ক্রোধে ফুঁসছে। ক্রোধান্বিত ফরাসিরা বেশ কয়েকটি মসজিদেও আক্রমণ করে। তারা নিহত শিক্ষকের কাজকে সমর্থন ও তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতে নানা কর্মসূচী নিয়েছে। ফ্রান্সের শহর মন্টপিলিয়ার আর টাউলুসে প্রয়াত শিক্ষককে শ্রদ্ধাঞ্জলি দেওয়ার জন্য হোটেলের দেওয়ালে শার্লি এব্দুর বানানো মুহাম্মদের বিতর্কিত কার্টুনটি প্রজেক্টরের মাধ্যমে দেখানো হচ্ছে। যারা এই কর্মসূচীটি গ্রহণ করেছে তাদের মুখপাত্র বলেন যে, ‘এই প্রতীকী পদক্ষেপটি ছাড়াও আমি আমার সহকর্মীদের কাছে একটি বার্তা পাঠাতে চাই যে ধর্মনিরপেক্ষতা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং বিবেকের স্বাধীনতা নিয়ে কোনো আপোষ করা হবে না। এটাই আমাদের প্রজাতন্ত্রের মডেলের ভীত।” তিনি আরও বলেন, যারা ধর্মকে যুদ্ধের অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করে তাদের সামনে আমরা দুর্বল হব না। এই প্রজাতন্ত্রকে নষ্ট করার রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আছে এমন লোকের সামনে রুখে দাঁড়াতে হবে। ফরাসী সরাকার এবং ফরাসী জনগণের কঠোর মনোভাব ও অবস্থান দেখে ফ্রান্সের মুসলিমরা সম্মিলিত শাস্তির আশংকা করছে। ফ্রান্স জুড়ে তারা আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে। তাং - ২৫.১০.২০ যে সংবাদ সূত্রগুলির সাহায্য নেওয়া হয়েছে - https://m.dailyhunt.in/news/india/english/india-epaper-india/french+teacher+beheaded+for+displaying+caricatures+of+prophet+mohammed+in+class+president+macron+calls+it+terrorist+attack-newsid-n222624938?s=a&uu=0xc984b92292303fec&ss=pd https://m.dailyhunt.in/news/india/bangla/aponzone+patrika-epaper-aponzon/73ti+masajid+bandh+karal+phrans-newsid-n223842838?s=a&uu=0xc984b92292303fec&ss=pd https://m.dailyhunt.in/news/india/bangla/banglahunt-epaper-banhun/phranse+chalache+abhinab+pratibad+shaharer+rastay+rastay+dekhano+hacche+payagambarer+bitarkit+kartun-newsid-n223882862?s=a&uu=0xc984b92292303fec&ss=pd

Saturday, October 10, 2020

করোনা ডায়রী (পাঁচ) - ভারতে করোনা ভাইরাসকে জিহাদের অস্ত্র করার নির্দেশ পাঠিয়েছে আইএস তার অনুগামীদের

শিরোনামের মধ্যেকার খবরটি ভারতের গুটিকয়েক মিডিয়ায় এক ঝলক দেখা গেছে। মিডিয়ার অধিকাংশই খবরটি ছাপেনি বা প্রচার করেনি। যারা ছেপেছে তাদের মিডিয়ায় ওই এক ঝলকই দেখা গেছে, তারপর খবরটা নিয়ে আর কোনো আলোচনা-পর্যালোচনা করতে দেখা যায় নি। করোনা ভাইরাসকে অস্ত্র বানিয়ে জিহাদ শুরু করার যে পরিকল্পনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে ইসলামি জঙ্গি সংগঠনটি তাঁর নিশানা কিন্ত আমাদের দেশ ভারতই। সংগঠনটি তার সদস্য ও অনুগামীদের নির্দেশ দিয়েছে তারা যেন করোনা ভাইরাসকে নিজের মধ্যে ধারণ করে ভারতের মানুষ ও পুলিশের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়। যার উদ্দেশ্য হলো, বলা বাহুল্য, ভারতের মাটিতে গণহত্যা সংগঠিত করা। আইএস একটি পৃথক মাসিক অনলাইন ম্যাগাজিন চালু করেছে শুধু ভারতের জন্যে এমন একটি ভয়ঙ্কর খবর ভারতের অধিকাংশ মিডিয়া প্রচারই করলো না, যারা করলো তারা নম নম করে দায় সারলো। তার মানে এই নয় যে খবরটি মিথ্যে কিংবা স্রেফ একটা গুজব মাত্র। না, তা নয়। খবরটি ইসলাম ও মুসলিমদের বদনাম করা বা তাদের বিরুদ্ধে কুৎসা করার জন্যে কারো মস্তিষ্কপ্রসূত বানানো খবরও নয়। খবরটি একশ’ শতাংশই সত্যি এবং বিশুদ্ধ সত্যি। আইএস (IS) তার সদস্য ও অনুগামীদের করোনাকে তাদের দেহে ধারণ করে কাফেরদের বিরুদ্ধে জিহাদ শুরু করার এই ভয়ঙ্কর নির্দেশটি পাঠিয়েছে আল-কিতাল নামে একটি প্রকাশনার মাধ্যমে। প্রকাশনাটি চালায় তাদের সমর্থকরা। তাছাড়া আইএস ‘সোয়াট উল হিন্দ’ নামে একটি মাসিক অনলাইন ম্যাগাজিন চালাচ্ছে কেবল ভারতের জন্যে। ম্যাগাজিনটি গতো ফেব্রুয়ারী মাস থেকে প্রকাশিত হচ্ছে। এই পত্রিকায় ভারতে জিহাদি কার্যকলাপের নির্দেশ পাঠানো হয়। করোনা ভাইরাসকে জিহাদের অস্ত্রে পরিণত করার পরিকল্পনা এবং তা বাস্তবায়নের নির্দেশটি আইএস পাঠিয়েছে তাদের সদস্য ও অনুগামীদের কাছে মে ও জুন মাসের মাঝামাঝি কোন একটা সময়ে ‘লকডাউন স্পেশ্যাল’ নামে ১৭ পাতার একটি বিশেষ বুলেটিনে। বুলেটিনটি প্রকাশ করেছে আল-কিতাল প্রকাশনা। অন্তরালে থেকেই আইএস ভারতের সবকিছুর প্রতি তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রেখে চলেছে ইসলামি জঙ্গি সংগঠনগুলির মধ্যে আইএস একটি ব্যতিক্রমী সংগঠন। আইএস-ই একমাত্র জিহাদি সংগঠন যে নিজস্ব সশস্ত্র মুজাহিদবাহিনী তৈরি করে ইরাক ও ইরানের সামরিক বাহিনীকে পরাস্ত করে ইসলামিক স্টেট নামে একটি ইসলামি রাষ্ট্র (‘ইসলামি খেলাফত’) স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছিলো। ১৯৯৬ সালেও নাজিবুল্লাহর নেতৃত্বাধীন কমিউনিস্ট পার্টির সরকারকে পরাস্ত করে তালিবানরা আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখল করেছিল। কিন্তু সেক্ষত্রে তাদের পেছনে অর্থ ও অস্ত্রশস্ত্র সহ সব রকমের মদত ও সহযোগিতা দিয়েছিলো মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ, আর তাছাড়া তালিবানদের সঙ্গে ছিলো ওসামা বিন লাদেনের প্রচণ্ড শক্তিশালী ইসলামি জঙ্গি সংগঠন আল-কায়দা। কিন্তু আইএস ইরাক ও ইরানের ভূখণ্ডে ইসলামি রাষ্ট্র স্থাপন করে সম্পূর্ণ নিজের শক্তিতে। এই রাষ্ট্রটি তারা স্থাপন করে ইরাকের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মসুলে ২০১৪ সালের ২৯শে জুন (রমজান মাসের ১লা তারিখ)। আইএস নেতা ইরাকের আবুবকর আল-বাগদাদি সেই খেলাফতের খলিফা হিসাবে নিজের নাম ঘোষণা করেন। ইসলাম ধর্মের প্রবর্তকের মৃত্যুতে ৬৩২ খ্রিস্টাব্দে মদিনায় সর্বপ্রথম খেলাফতি শাসনব্যবস্থা চালু হয়েছিল আবুবকরের নেতৃত্বে। সেই খেলাফতি ব্যবস্থা ফিরিয়ে এনে আল-বাগদাদি ঘোষণা দেন যে বিশ্বের সমস্ত মুসলিম রাষ্ট্র ও মুসলমানদের তিনি খলিফা এবং সবাইকেই তার কাছে বয়াত নিতে হবে (তার আনুগত্য স্বীকার করতে হবে)। বাগদাদি আরও ঘোষণা দিয়েছিলো যে গোটা বিশ্বকে সে পদানত করবে এবং খেলাফতি শাসনব্যবস্থার অধীনে নিয়ে আসবে। বাগদাদীর দিবাস্বপ্ন ভাঙতে অবশ্য বেশি বিলম্ব হয় নি। কারণ, সেই খেলাফত বেশি দিন স্থায়ী হয় নি। বিশ্বের কয়েকটি দেশের সম্মিলিত সামরিক বাহিনীর কাছে তারা চূড়ান্ত রূপে পরাস্ত হয়েছে। সম্মিলিত সামরিক বাহিনী তাদের সমস্ত ঘাঁটি ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়ে ধ্বংস স্তূপে পরিণত করেছে। সেই আক্রমণে বাগদাদি সহ আইএস-এর অসংখ্য নেতা ও মুজাহিদের মৃত্যুও হয়েছে। তারপরেও যারা পালিয়ে গিয়ে কোনো রকমে বেঁচে যায় তারা আত্মগোপন করে এবং আত্মগোপনে থেকে আইএসকে পুনর্গঠিত করার কাজ করে। এটা প্রমাণ করে যে, আদর্শগত লড়াই ব্যতীত শুধু রাষ্ট্রীয় শক্তির সাহায্যে জঙ্গি সংগঠনের শীর্ষ নেতৃত্বকে হত্যা ও তাদের সমস্ত ঘাঁটি ধ্বংস করা সম্ভব, কিন্তু জঙ্গি সংগঠনকে শেষ করা সম্ভব নয়। আমার এ কথা বলার অর্থ এই নয় যে, আমি জঙ্গি সংগঠন ও জঙ্গিদের দমন করতে রাষ্ট্রশক্তি প্রয়োগের বিরোধী। যাক যা বলছিলাম তা হলো, পুলিশ ও সামরিক বাহিনীর হাতে শীর্ষ নেতাদের মৃত্যু হলেও জিহাদিদের হৃদয়ে থাকা জিহাদি আদর্শের মৃত্যু হয় না। ফলে তারা জিহাদি মন্ত্রশক্তির জোরে তাদের সংগঠনকে পুনরায় গড়ে তোলে। আমরা এও দেখেছি যে, লাদেন নিহত হয়েছে কিন্তু আল-কায়দার মৃত্যু হয় নি এবং মোল্লা ওমরের মৃত্যু হয়েছে কিন্তু তালিবানের মৃত্যু হয় নি। তাই আল-বাগদাদী সহ বহু শীর্ষ নেতা নিহত হলেও আইএস-এর মৃত্যু হয় নি, আইএস যখন ইরাক থেকে তাদের জিহাদি কর্মকাণ্ডকে পরিচালনা করতো তখনই তারা ভারতকেও নিশানা করেছিলো। ভারতে জিহাদ রপ্তানি করার জন্যে ভারতের মাটিতে তাদের সংগঠন তৈরি করার প্রচাষ্টা চালানোর পাশাপাশি জামাআতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশকে (জেএমবিকে) তাদের সহযোগী শক্তি হিসেবে নিয়োগ করেছিলো। আইএস এখনো সম্ভবত কোথাও ঘাঁটি তৈরি করে উঠতে পারে নি। তবুও পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা তাদের সদস্য, অনুগামী ও সহযোগী সংগঠনগুলিকে অনলাইনে জিহাদে উৎসাহ ও নির্দেশনা দিয়ে চলেছে। অন্যান্য দেশের পাশাপাশি ভারতের প্রতিও যে তারা তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রেখাছে তার প্রমাণ রয়েছে ‘সোয়াট উল হিন্দ’ নামের তাদের অনলাইন মাসিক ম্যাগাজিনে এবং ‘লকডাউন স্পেশাল’ নামের ১৭ পাতার বিশেষ বুলেটিনে। ‘সোয়াট উল হিন্দ’ এবং ‘লকডাউন স্পেশাল’ বুলেটিনে সিএএ ও এনসিআর বিরোধী আন্দোলন, জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিস্যালয়ের শিক্ষাত্রীদের উপর পুলিশী অত্যাচার, দিল্লির নিজামুদ্দিনে তাবলিগ জামাআতের মার্কজ অনুষ্ঠিত করা ইত্যাদি বিষয়গুলির উল্লেখ রয়েছে। লকডাউনের মধ্যে নিজামুদ্দিনে মার্কজ আয়োজন করার জন্যে আইএস মার্কজের প্রধান মাওলানা সাদ-এর প্রচুর প্রশংসা করা হয়েছে। তাবলিগ জামাআত নিজামুদ্দিনের মার্কজ থেকে গোটা দিল্লীতে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে দেওয়ায় আইএস তার গভীর সন্তোষ ব্যক্ত করে বলেছে যে এর ফলে শত্রুদের (বিধর্মীদের) অনেকটা দুর্বল করে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। করোনা ভাইরাস নিয়ে আইএস-এর পরিকল্পনা ও নির্দেশনাকে উপেক্ষা করলে মহা ভুল হবে ভারত সরকার সহ সমস্ত রাজ্য ও কেন্দ্র শাসিত সরকারগুলি এখন করোনাজনিত বৈশ্বিক অতিমারির বিরুদ্ধে যুদ্ধরত রয়েছে। এ যুদ্ধে সরকারগুলির পরিকল্পনায় ও কাজে অনেক ত্রুটি-বিচ্যুতি, ঘাটতি, ফাঁক-ফোঁকড় নিশ্চয় আছে, তবু এটা অনস্বীকার্য যে সব সরকারই করোনা-শৃঙ্খল ভাঙতে চেষ্টা করে যাচ্ছে। করোনাকে পরাস্ত করার ক্ষেত্রে সরকারি প্রচাষ্টা বা লড়াইকে নানা রকম প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছে, তার মধ্যে তিনটি প্রধান প্রতিকূলতা হলো বিপুল জন-ঘনত্ব, মানুষের আত্মসচেতনার লজ্জাজনক দৈন্যতা এবং হিন্দু মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের ব্যাপক মানুষের মধ্যেকার সীমাহীন ধর্মান্ধতা। এই প্রতিকূলতাগুলি ভেদ করতে না পারায় এবং সরকারি পরিকল্পনা ও কাজে কিছু ভুল-ত্রুটি, ফাঁক-ফোকড় ও ঘাটতি থাকায় করোনা সংক্রমণ প্রতিদিনই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন ইতিমধ্যেই গোষ্ঠী সংক্রমণ শুরু হয়ে গিয়েছে যার ফলে আগামী দিনে করোনা সংক্রমণের লেখচিত্র আরও ঊর্ধগামী হবে। মোদ্দা কথায় ভারতের পরিস্থিতি খুবই খারাপ ও উদ্বেগজনক জায়গায় রয়েছে। এরূপ জটিল ও গুরুতর পরিস্থিতিতে আইএস তার সহযোগী জঙ্গি সংগঠনগুলোকে সঙ্গে নিয়ে ভারতে কীভাবে এবং কেন করোনা ভাইরাসকে জনগণ ও পুলিশের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে বদ্ধপরিকর সে খবর সামনে এসেছে। আমরা কি এটাকে উপেক্ষা করতে পারি? আইএস-এর এখন সেই দোর্দ্দণ্ড প্রতাপ আর নেই তা সত্যি, কিন্তু আইএস একেবারেই শক্তিহীন কিংবা কাগুজে বাঘ হয়ে গেছে ভাবলে ভুল হবে। কেরল ও কর্নাটকে আইএস যে ভালই সক্রিয় তার খবর তো জাতীয় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাই (এন.আই.এ) তো স্বীকার করেছে। তাদের কাছ থেকে এও জানা গেছে যে জম্মু-কাশ্মীর ও পশ্চিমবঙ্গেও অনেক দিন ধরেই আইএস তার সংগঠন গড়ে তোলার চেষ্টা করছে যার অর্থ হলো আইএস-এর বেশ কিছু সদস্য এই দুটি রাজ্যে গোপনে কাজ করছে। তাছাড়া আইএস-এর সহযোগী সংগঠন নব্য জেএমবি পশ্চিমবঙ্গ সহ গোটা দেশে যে প্রচণ্ড সক্রিয় সে খবর এখন আর কারও অজানা নেই। আর একটা জিনিষ মাথায় রাখা বাঞ্ছনীয়, তা হলো, বহু ইসলামি জঙ্গি সংগঠনেরই যে আত্মঘাতী বাহিনী (suicide squad) মজুত আছে যার সদস্যরা নিজেদের মানব-বোমা বানিয়ে অবিশ্বাসীদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্যে নেতৃত্বের নির্দেশের অপেক্ষায় মুখিয়ে থাকে। সুতরাং এই আইএস-এর সদস্য এবং তাদের সহযোগী জঙ্গি সংগঠনের সদস্যরা যে করোনা ভাইরাসকে আপন দেহে ধারণ করে ভারতে জনসমুদ্রে ঝাঁপ দিতে প্রস্তুত হবে তা নিয়ে আমার অন্তত কোনো সংশয় নেই। তাই আজকের করোনাজনিত গভীর সঙ্কজনক পরিস্থিতিতে ভারতের মতন বিপুল জনসংখ্যার দেশ আইএস ও অন্যান্য মুসলিম জঙ্গি সংগঠনগুলিকে উপেক্ষা করতে কিংবা অগ্রাহ্য করতে পারে না। তা করলে সেটা হবে নিঃসন্দেহে আত্মহনন করার শামিল। ৯/৯/২০ শেষ সংবাদ সূত্রঃ https://www.anandabazar.com/national/isis-asked-supporters-to-spread-covid-19-virus-in-indian-population-being-carrier-of-the-virus-dgtl-1.1181825

KARBALA: Truth and Lies

  KARBALA : Truth and Lies           GIASUDDIN                 Translated by SRIJIB BISWAS        ...