Saturday, October 10, 2020

করোনা ডায়রী (পাঁচ) - ভারতে করোনা ভাইরাসকে জিহাদের অস্ত্র করার নির্দেশ পাঠিয়েছে আইএস তার অনুগামীদের

শিরোনামের মধ্যেকার খবরটি ভারতের গুটিকয়েক মিডিয়ায় এক ঝলক দেখা গেছে। মিডিয়ার অধিকাংশই খবরটি ছাপেনি বা প্রচার করেনি। যারা ছেপেছে তাদের মিডিয়ায় ওই এক ঝলকই দেখা গেছে, তারপর খবরটা নিয়ে আর কোনো আলোচনা-পর্যালোচনা করতে দেখা যায় নি। করোনা ভাইরাসকে অস্ত্র বানিয়ে জিহাদ শুরু করার যে পরিকল্পনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে ইসলামি জঙ্গি সংগঠনটি তাঁর নিশানা কিন্ত আমাদের দেশ ভারতই। সংগঠনটি তার সদস্য ও অনুগামীদের নির্দেশ দিয়েছে তারা যেন করোনা ভাইরাসকে নিজের মধ্যে ধারণ করে ভারতের মানুষ ও পুলিশের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়। যার উদ্দেশ্য হলো, বলা বাহুল্য, ভারতের মাটিতে গণহত্যা সংগঠিত করা। আইএস একটি পৃথক মাসিক অনলাইন ম্যাগাজিন চালু করেছে শুধু ভারতের জন্যে এমন একটি ভয়ঙ্কর খবর ভারতের অধিকাংশ মিডিয়া প্রচারই করলো না, যারা করলো তারা নম নম করে দায় সারলো। তার মানে এই নয় যে খবরটি মিথ্যে কিংবা স্রেফ একটা গুজব মাত্র। না, তা নয়। খবরটি ইসলাম ও মুসলিমদের বদনাম করা বা তাদের বিরুদ্ধে কুৎসা করার জন্যে কারো মস্তিষ্কপ্রসূত বানানো খবরও নয়। খবরটি একশ’ শতাংশই সত্যি এবং বিশুদ্ধ সত্যি। আইএস (IS) তার সদস্য ও অনুগামীদের করোনাকে তাদের দেহে ধারণ করে কাফেরদের বিরুদ্ধে জিহাদ শুরু করার এই ভয়ঙ্কর নির্দেশটি পাঠিয়েছে আল-কিতাল নামে একটি প্রকাশনার মাধ্যমে। প্রকাশনাটি চালায় তাদের সমর্থকরা। তাছাড়া আইএস ‘সোয়াট উল হিন্দ’ নামে একটি মাসিক অনলাইন ম্যাগাজিন চালাচ্ছে কেবল ভারতের জন্যে। ম্যাগাজিনটি গতো ফেব্রুয়ারী মাস থেকে প্রকাশিত হচ্ছে। এই পত্রিকায় ভারতে জিহাদি কার্যকলাপের নির্দেশ পাঠানো হয়। করোনা ভাইরাসকে জিহাদের অস্ত্রে পরিণত করার পরিকল্পনা এবং তা বাস্তবায়নের নির্দেশটি আইএস পাঠিয়েছে তাদের সদস্য ও অনুগামীদের কাছে মে ও জুন মাসের মাঝামাঝি কোন একটা সময়ে ‘লকডাউন স্পেশ্যাল’ নামে ১৭ পাতার একটি বিশেষ বুলেটিনে। বুলেটিনটি প্রকাশ করেছে আল-কিতাল প্রকাশনা। অন্তরালে থেকেই আইএস ভারতের সবকিছুর প্রতি তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রেখে চলেছে ইসলামি জঙ্গি সংগঠনগুলির মধ্যে আইএস একটি ব্যতিক্রমী সংগঠন। আইএস-ই একমাত্র জিহাদি সংগঠন যে নিজস্ব সশস্ত্র মুজাহিদবাহিনী তৈরি করে ইরাক ও ইরানের সামরিক বাহিনীকে পরাস্ত করে ইসলামিক স্টেট নামে একটি ইসলামি রাষ্ট্র (‘ইসলামি খেলাফত’) স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছিলো। ১৯৯৬ সালেও নাজিবুল্লাহর নেতৃত্বাধীন কমিউনিস্ট পার্টির সরকারকে পরাস্ত করে তালিবানরা আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখল করেছিল। কিন্তু সেক্ষত্রে তাদের পেছনে অর্থ ও অস্ত্রশস্ত্র সহ সব রকমের মদত ও সহযোগিতা দিয়েছিলো মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ, আর তাছাড়া তালিবানদের সঙ্গে ছিলো ওসামা বিন লাদেনের প্রচণ্ড শক্তিশালী ইসলামি জঙ্গি সংগঠন আল-কায়দা। কিন্তু আইএস ইরাক ও ইরানের ভূখণ্ডে ইসলামি রাষ্ট্র স্থাপন করে সম্পূর্ণ নিজের শক্তিতে। এই রাষ্ট্রটি তারা স্থাপন করে ইরাকের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মসুলে ২০১৪ সালের ২৯শে জুন (রমজান মাসের ১লা তারিখ)। আইএস নেতা ইরাকের আবুবকর আল-বাগদাদি সেই খেলাফতের খলিফা হিসাবে নিজের নাম ঘোষণা করেন। ইসলাম ধর্মের প্রবর্তকের মৃত্যুতে ৬৩২ খ্রিস্টাব্দে মদিনায় সর্বপ্রথম খেলাফতি শাসনব্যবস্থা চালু হয়েছিল আবুবকরের নেতৃত্বে। সেই খেলাফতি ব্যবস্থা ফিরিয়ে এনে আল-বাগদাদি ঘোষণা দেন যে বিশ্বের সমস্ত মুসলিম রাষ্ট্র ও মুসলমানদের তিনি খলিফা এবং সবাইকেই তার কাছে বয়াত নিতে হবে (তার আনুগত্য স্বীকার করতে হবে)। বাগদাদি আরও ঘোষণা দিয়েছিলো যে গোটা বিশ্বকে সে পদানত করবে এবং খেলাফতি শাসনব্যবস্থার অধীনে নিয়ে আসবে। বাগদাদীর দিবাস্বপ্ন ভাঙতে অবশ্য বেশি বিলম্ব হয় নি। কারণ, সেই খেলাফত বেশি দিন স্থায়ী হয় নি। বিশ্বের কয়েকটি দেশের সম্মিলিত সামরিক বাহিনীর কাছে তারা চূড়ান্ত রূপে পরাস্ত হয়েছে। সম্মিলিত সামরিক বাহিনী তাদের সমস্ত ঘাঁটি ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়ে ধ্বংস স্তূপে পরিণত করেছে। সেই আক্রমণে বাগদাদি সহ আইএস-এর অসংখ্য নেতা ও মুজাহিদের মৃত্যুও হয়েছে। তারপরেও যারা পালিয়ে গিয়ে কোনো রকমে বেঁচে যায় তারা আত্মগোপন করে এবং আত্মগোপনে থেকে আইএসকে পুনর্গঠিত করার কাজ করে। এটা প্রমাণ করে যে, আদর্শগত লড়াই ব্যতীত শুধু রাষ্ট্রীয় শক্তির সাহায্যে জঙ্গি সংগঠনের শীর্ষ নেতৃত্বকে হত্যা ও তাদের সমস্ত ঘাঁটি ধ্বংস করা সম্ভব, কিন্তু জঙ্গি সংগঠনকে শেষ করা সম্ভব নয়। আমার এ কথা বলার অর্থ এই নয় যে, আমি জঙ্গি সংগঠন ও জঙ্গিদের দমন করতে রাষ্ট্রশক্তি প্রয়োগের বিরোধী। যাক যা বলছিলাম তা হলো, পুলিশ ও সামরিক বাহিনীর হাতে শীর্ষ নেতাদের মৃত্যু হলেও জিহাদিদের হৃদয়ে থাকা জিহাদি আদর্শের মৃত্যু হয় না। ফলে তারা জিহাদি মন্ত্রশক্তির জোরে তাদের সংগঠনকে পুনরায় গড়ে তোলে। আমরা এও দেখেছি যে, লাদেন নিহত হয়েছে কিন্তু আল-কায়দার মৃত্যু হয় নি এবং মোল্লা ওমরের মৃত্যু হয়েছে কিন্তু তালিবানের মৃত্যু হয় নি। তাই আল-বাগদাদী সহ বহু শীর্ষ নেতা নিহত হলেও আইএস-এর মৃত্যু হয় নি, আইএস যখন ইরাক থেকে তাদের জিহাদি কর্মকাণ্ডকে পরিচালনা করতো তখনই তারা ভারতকেও নিশানা করেছিলো। ভারতে জিহাদ রপ্তানি করার জন্যে ভারতের মাটিতে তাদের সংগঠন তৈরি করার প্রচাষ্টা চালানোর পাশাপাশি জামাআতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশকে (জেএমবিকে) তাদের সহযোগী শক্তি হিসেবে নিয়োগ করেছিলো। আইএস এখনো সম্ভবত কোথাও ঘাঁটি তৈরি করে উঠতে পারে নি। তবুও পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা তাদের সদস্য, অনুগামী ও সহযোগী সংগঠনগুলিকে অনলাইনে জিহাদে উৎসাহ ও নির্দেশনা দিয়ে চলেছে। অন্যান্য দেশের পাশাপাশি ভারতের প্রতিও যে তারা তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রেখাছে তার প্রমাণ রয়েছে ‘সোয়াট উল হিন্দ’ নামের তাদের অনলাইন মাসিক ম্যাগাজিনে এবং ‘লকডাউন স্পেশাল’ নামের ১৭ পাতার বিশেষ বুলেটিনে। ‘সোয়াট উল হিন্দ’ এবং ‘লকডাউন স্পেশাল’ বুলেটিনে সিএএ ও এনসিআর বিরোধী আন্দোলন, জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিস্যালয়ের শিক্ষাত্রীদের উপর পুলিশী অত্যাচার, দিল্লির নিজামুদ্দিনে তাবলিগ জামাআতের মার্কজ অনুষ্ঠিত করা ইত্যাদি বিষয়গুলির উল্লেখ রয়েছে। লকডাউনের মধ্যে নিজামুদ্দিনে মার্কজ আয়োজন করার জন্যে আইএস মার্কজের প্রধান মাওলানা সাদ-এর প্রচুর প্রশংসা করা হয়েছে। তাবলিগ জামাআত নিজামুদ্দিনের মার্কজ থেকে গোটা দিল্লীতে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে দেওয়ায় আইএস তার গভীর সন্তোষ ব্যক্ত করে বলেছে যে এর ফলে শত্রুদের (বিধর্মীদের) অনেকটা দুর্বল করে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। করোনা ভাইরাস নিয়ে আইএস-এর পরিকল্পনা ও নির্দেশনাকে উপেক্ষা করলে মহা ভুল হবে ভারত সরকার সহ সমস্ত রাজ্য ও কেন্দ্র শাসিত সরকারগুলি এখন করোনাজনিত বৈশ্বিক অতিমারির বিরুদ্ধে যুদ্ধরত রয়েছে। এ যুদ্ধে সরকারগুলির পরিকল্পনায় ও কাজে অনেক ত্রুটি-বিচ্যুতি, ঘাটতি, ফাঁক-ফোঁকড় নিশ্চয় আছে, তবু এটা অনস্বীকার্য যে সব সরকারই করোনা-শৃঙ্খল ভাঙতে চেষ্টা করে যাচ্ছে। করোনাকে পরাস্ত করার ক্ষেত্রে সরকারি প্রচাষ্টা বা লড়াইকে নানা রকম প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছে, তার মধ্যে তিনটি প্রধান প্রতিকূলতা হলো বিপুল জন-ঘনত্ব, মানুষের আত্মসচেতনার লজ্জাজনক দৈন্যতা এবং হিন্দু মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের ব্যাপক মানুষের মধ্যেকার সীমাহীন ধর্মান্ধতা। এই প্রতিকূলতাগুলি ভেদ করতে না পারায় এবং সরকারি পরিকল্পনা ও কাজে কিছু ভুল-ত্রুটি, ফাঁক-ফোকড় ও ঘাটতি থাকায় করোনা সংক্রমণ প্রতিদিনই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন ইতিমধ্যেই গোষ্ঠী সংক্রমণ শুরু হয়ে গিয়েছে যার ফলে আগামী দিনে করোনা সংক্রমণের লেখচিত্র আরও ঊর্ধগামী হবে। মোদ্দা কথায় ভারতের পরিস্থিতি খুবই খারাপ ও উদ্বেগজনক জায়গায় রয়েছে। এরূপ জটিল ও গুরুতর পরিস্থিতিতে আইএস তার সহযোগী জঙ্গি সংগঠনগুলোকে সঙ্গে নিয়ে ভারতে কীভাবে এবং কেন করোনা ভাইরাসকে জনগণ ও পুলিশের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে বদ্ধপরিকর সে খবর সামনে এসেছে। আমরা কি এটাকে উপেক্ষা করতে পারি? আইএস-এর এখন সেই দোর্দ্দণ্ড প্রতাপ আর নেই তা সত্যি, কিন্তু আইএস একেবারেই শক্তিহীন কিংবা কাগুজে বাঘ হয়ে গেছে ভাবলে ভুল হবে। কেরল ও কর্নাটকে আইএস যে ভালই সক্রিয় তার খবর তো জাতীয় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাই (এন.আই.এ) তো স্বীকার করেছে। তাদের কাছ থেকে এও জানা গেছে যে জম্মু-কাশ্মীর ও পশ্চিমবঙ্গেও অনেক দিন ধরেই আইএস তার সংগঠন গড়ে তোলার চেষ্টা করছে যার অর্থ হলো আইএস-এর বেশ কিছু সদস্য এই দুটি রাজ্যে গোপনে কাজ করছে। তাছাড়া আইএস-এর সহযোগী সংগঠন নব্য জেএমবি পশ্চিমবঙ্গ সহ গোটা দেশে যে প্রচণ্ড সক্রিয় সে খবর এখন আর কারও অজানা নেই। আর একটা জিনিষ মাথায় রাখা বাঞ্ছনীয়, তা হলো, বহু ইসলামি জঙ্গি সংগঠনেরই যে আত্মঘাতী বাহিনী (suicide squad) মজুত আছে যার সদস্যরা নিজেদের মানব-বোমা বানিয়ে অবিশ্বাসীদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্যে নেতৃত্বের নির্দেশের অপেক্ষায় মুখিয়ে থাকে। সুতরাং এই আইএস-এর সদস্য এবং তাদের সহযোগী জঙ্গি সংগঠনের সদস্যরা যে করোনা ভাইরাসকে আপন দেহে ধারণ করে ভারতে জনসমুদ্রে ঝাঁপ দিতে প্রস্তুত হবে তা নিয়ে আমার অন্তত কোনো সংশয় নেই। তাই আজকের করোনাজনিত গভীর সঙ্কজনক পরিস্থিতিতে ভারতের মতন বিপুল জনসংখ্যার দেশ আইএস ও অন্যান্য মুসলিম জঙ্গি সংগঠনগুলিকে উপেক্ষা করতে কিংবা অগ্রাহ্য করতে পারে না। তা করলে সেটা হবে নিঃসন্দেহে আত্মহনন করার শামিল। ৯/৯/২০ শেষ সংবাদ সূত্রঃ https://www.anandabazar.com/national/isis-asked-supporters-to-spread-covid-19-virus-in-indian-population-being-carrier-of-the-virus-dgtl-1.1181825

KARBALA: Truth and Lies

  KARBALA : Truth and Lies           GIASUDDIN                 Translated by SRIJIB BISWAS        ...