আজ নবী দিবস। হযরত মুহাম্মদের জন্মদিনটি উদযাপিত
হয় সারা বিশ্বে নবী দিবসরূপে। মুহাম্মদকে কেউ বলেন বিশ্বনবী, কেউ বলে মহানবী, কেউ
বলে আখেরী নবী, এভাবে নানা নামে ডাকা হয়, আসলে এভাবেও তাঁর বন্দনা করা হয়। আজ,
আরবী ক্যালেন্ডারের ১২ই রবিউল, তাঁর ১৪৪৬
তম জন্মদিন, যদিও তাঁর জন্মদিনটি নিয়ে
ভিন্ন মতও আছ। আর একটি মত হলো তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন ৯ই রবিউল, তবে বিশ্বজুড়ে তাঁর জন্মদিন পালন করা হয়
সাধারণতঃ আজকের দিনটিতেই অর্থাৎ ১২ই
রবিউলেই। সারা বিশ্বেই মুসলিমদের বাস, তারা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম জনগোষ্ঠী এবং
তাদের এখন জনসংখ্যা ১৬০ কোটি। তাই সারা
বিশ্ব আজ মুখরিত নবী বন্দনায়। নানাভাবে মুসলিমরা এই দিনটি খুবই উদ্দীপনার সঙ্গে
উদযাপন করছেন। আজ নানা প্রকার কর্মসূচীর মধ্যে দুটি সাধারণ কর্মসূচী পালন করতে
দেখা যাচ্ছে। সকাল বেলায় মিছিল ও বিকেল থেকে জালসা [ধর্মী সভা]। মিছিল ও জালসায়
একটা সাধারণ শ্লোগান শোনা যাচ্ছে – ‘আল-কোরানের আলো, ঘরে ঘরে জ্বালো।’
একদিকে যখন –
‘আল-কোরানের আলো, ঘরে ঘরে জ্বালো’ শ্লোগানে বিশ্ব মুখরিত তখন আমরা দেখছি পৃথিবী সত্যিই জ্বলছে, তবে কোরানের আলোয় নয়, জ্বলছে কোরানের আগুনে। মুসলিম জঙ্গিরা গোটা বিশ্বজুড়েই এখন অপহরণ, লুঠপাট ও হত্য্যালীলায় মেতে উঠেছে। গত এক বছরে শুধু সিরিয়াতেই তারা ৭৫ হাজার মানুষকে হত্যা করেছে এবং ইরাকে হত্যা করেছে ১৫ হাজার মানুষকে যাদের অধিকাংশই শিয়া সম্প্রদায়ের। দেড় কোটিরও মানুষ ঘর ও দেশ ছেড়েছে প্রাণের তাগিদে ঐ দুটি দেশ থেকে। এই হত্যালীলা, অপহরণ ও লুঠপাট চালাচ্ছে বোকো হারাম গোটা নাইজিরিয়া জুড়ে এবং সেখান থেকেও হাজার হাজার মানুষ দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। এই জঙ্গিদের আগুনে পুড়ছে ভারত, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানও, পুড়ছে মধ্য প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের বহু দেশও। যারা এভাবে পৃথিবীকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে তারা ইসলাম ও কোরান সম্পর্কে আমাদের দেশের কাঠমোল্লা এবং সুবিধাবাদী ও কাপুরুষ বুদ্ধিজীবীদের মতো মোটেই অজ্ঞ নয়, এ বিষয়ে তারা যথেষ্ট বিজ্ঞ। শুধু বিজ্ঞও নয়, তারা রীতিমতো বিশেষজ্ঞও বটে। তারা আবার কেবল কোরান সম্পর্কেই বিশেষজ্ঞই নয়, তারা বিশেষজ্ঞ হাদিস ও ইসলামের ইতিহাস সম্পর্কেও। হাদিস ও ইসলামের ইতিহাস সম্পর্কে যারা বিজ্ঞ বা বিশেষজ্ঞ তারা মুহাম্মদ সম্পর্কেও যে বিশেষজ্ঞ হবে তা বলা বাহুল্য। এই জঙ্গি ও জিহাদি ইসলামি পণ্ডিতগণ আমাদের দেশের ইসলামি পণ্ডিত ও বুদ্ধিজীবীদের মতো অসৎ ও প্রতারক নয়, তারা তাদের পেশায় সৎ। তারা আমাদের দেশের ইসলামি পণ্ডিত ও বুদ্ধিজীবীদের মতো ইসলাম ও মুহাম্মদকে নিয়ে মিথ্যাচার করে না, তারা ইসলাম ও মুহাম্মদের কিছু কথা ও কাজের কিছুই অবিশ্বাস করে না, গোপনও করেনা। তারা এ রকম মিথ্যাচার করে না যে মুহাম্মদ শান্তি ও সাম্যের বাণী প্রচার করে ইসলামকে প্রতিষ্ঠিত করে গেছেন । তারা এও গোপন করে না যে অমুসলিমদের বিরুদ্ধে জিহাদ করে, তাদের লুঠ করে, হত্যা করে, বন্দি করে, ক্রীতদাস বানিয়ে, বিধর্মী নারীদের যথেচ্ছ ভোগ করে ইসলাম ধর্মের প্রসার ঘটিয়েছেন এবং ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত করে গেছেন। তারা এও বিশ্বাস করে যে ঐ পথেই
একদিন সমগ্র পৃথিবীতে ইসলামের পতাকা উড়বে। তারা সেই স্বপ্নে বিভোর হয়েই ক্রমশঃ জিহাদের জাল
বুনে চলেছে।
৬২২ খৃষ্টাব্দে মুহাম্মদ মক্কা
থেকে মদিনা এসে এই পথে অর্থাৎ জিহাদের পথে পা দেন। তিনি শিষ্যদের বলেন যে আল্লাহ তাঁকে
অবিশ্বাসীদের বিরুদ্ধে জিহাদ [যুদ্ধ] করার আদেশ দিয়েছেন। তিনি বললেন - “যুদ্ধকে তোমাদের জন্য অপরিহার্য কর্তব্যরূপে অবধারিত করা হয়েছে এবং
এটা তোমাদের নিকট অপ্রীতিকর; বস্তুতঃ তোমরা এমন বিষয়কে অপছন্দ করছো যা তোমাদের পক্ষে বাস্তবিকই
মঙ্গলজনক, পক্ষান্তরে তোমরা এমন বিষয়কে পছন্দ করছো যা তোমাদের জন্য বাস্তবিকই
অনিষ্টকর, এবং আল্লাহই (তোমাদের ইষ্ট ও অনিষ্ট) অবগত আছেন এবং তোমরা অবগত নও।” [কোরান ২/২১৬]
কিন্তু যুদ্ধ তথা জিহাদ করলে তো যুদ্ধের উপকরণ লাগবে। সে উপকরণ সংগ্রহ
করতে হলে প্রচুর অর্থ দরকার যা মুহাম্মদের ছিলো না। তাই ডাকাতি ও রাহাজানি করে তিনি অর্থ সংগ্রহ করার
পরিকল্পনা করলেন। ৬২৪ খৃষ্টাব্দের ঘটনা। মক্কার কোরেশদের একজন ধনী বণিক আবু
সুফিয়ানের একটি বিশাল বাণিজ্য কাফেলা নিয়ে সিরিয়া যাওয়ার খবর তার কানে এলো। আবু সুফিয়ান ছিলেন মুহাম্মদের ধর্ম প্রচারের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড়ো বাধা ও
মুহাম্মদের শত্রুভাবাপন্ন। মক্কা ও সিরিয়ার পথে মদিনা পড়ে। মুহাম্মদ ঠিক করলেন আবু
সুফিয়ানের ফেরার সময় তাঁর বাণিজ্য কাফেলার উপর অতর্কিতে আক্রমণ করে আবু সুফিয়ান ও তার সঙ্গীদের হত্যা করেতাদের সর্বস্ব লুুট করবেন। সেই মতো
তিনি তিন শতাধিক শিষ্যসহ মদিনা থেকে কিছুটা দূরে মক্কা ও সিরিয়ার রাস্তার মধ্যে অবস্থিত বদর নামক স্থানে গিয়ে শিবির স্থাপন করলেন। এদিকে আবু সুফিয়ান মুহাম্মদ
তাঁদের উপর হামলা করবেন সে খবরটি পেয়ে যান এবং খবরটি মক্কায় পাঠিয়েও দেন। সে খবর পেয়ে মক্কা থেকে কোরেশদের ১০০০ জনের একটি দল আবু সুফিয়ান ও তাঁর কাফেলাকে রক্ষা করতে দ্রুত ছুটে এসে উপস্থিত হয় ঐ বদর প্রান্তে। অন্যদিকে আবু
সুফিয়ান কিন্তু মুহাম্মদের হাত থেকে রক্ষা পেতে মক্কা ফিরে যেতে অন্য পথ ধরেন। কিন্তু ততক্ষণে কোরেশদলটি মদিনার কাছে সেই
বদর প্রান্তে পৌঁছে গেছে। ফলে কোরেশোদের সঙ্গে মুহাম্মদের নেতৃত্বাধীন মুসলিমদের
যুদ্ধ বেধে যায়। সেই যুদ্ধে অবিশ্বাস্যভাবে মুহাম্মদ জয়লাভ করেন। সেই যুদ্ধে মুসলমানদের
হাতে ৭০ জন কোরেশের মৃত্যু বরণ করে, ৭০ জন বন্দি হয়, বাকিরা পালিয়ে যায়। যুদ্ধ শেষে কোরেশদের বহু অর্থ, উট ও ঘোড়া মুহাম্মদের হস্তগত
হয়। মুহাম্মদ পরে বন্দিদের দুজনকে হত্যা করেন এবং বাকিদের মোটা টাকা মুক্তিপণ নিয়ে পরে
ছেড়ে দেন। এই ডাকাতি ও রাহাজানি থেকে এককালীন প্রচুর অর্থ এসে যায় মুহাম্মদের হাতে। সেই অর্থের তিনি এক-পঞ্চমাংশ নিয়ে বাকি চার ভাগ সমান করে
বিলি করে দেন তাদের মধ্যে যারা তাঁঁর সঙ্গে ডাকাতিতে যোগ দিয়েছিলো। এই ঘটনার খবর চারিদিকে
ছড়িয়ে পড়লে মদিনা ও আশপাশের বিভিন্ন গোত্রের অবিশ্বাসীগণ দলে দলে এসে মুহাম্মদের শিষ্য হতে শুরু করে দেয়। ফলে মুহাম্মদের শিষ্য সংখ্যা দ্রুতহারে বৃদ্ধি পেতে শুরু করলো ।
বদরের জয়ে মুহাম্মদের অর্থশক্তি
ও বাহুশক্তি দুটোই বৃদ্ধি পায়, ফলে পরের সম্পত্তি লুঠ করার স্পৃহা ও সাহস দু'টোই তাঁর বহুগুণ বেড়ে যায়। বদর যুুদ্ধের পর তাঁর চোখ পড়ে মদিনার
ইহুদিদের দিকে। বদরে কোরেশদের লুঠপাট ও হত্যা করার পর এক বছরের মধ্যেই ইহুদিদের বানু কাইনুকা গোষ্ঠীকে মুহাম্মদ অবরোধ করে বলেন, এক] হয় তোমরা ইসলাম গ্রহণ করো, দুই] না হয়, অবিলম্বে সমস্ত বিষয়-আশয় ছেড়ে মদিনা ত্যাগ করো, তিন] না হয়, মৃত্যুর জন্যে প্রস্তুত
হও। ইহুদিগণ দ্বিতীয় পথটিই বেছে নিয়ে মদিনা ত্যাগ করে চলে যায়। ৬২৫ খৃষ্টাব্দে আর একবার কোরেশদের সঙ্গে উহুদ
প্রান্তে মুহাম্মদের বাহিনীর যুদ্ধ হয়। সেই যুদ্ধের পর মুহাম্মদ আক্রমণ ও অবরোধ
করেন মদিনার ইহুদিদের বানু নাজির গোষ্ঠীকে। তাদেরকেও বানু কাইনুকা গোষ্ঠীর মতো
তিনটি পথের যে কোনো একটিকে বেছে নিতে বলেন। নিরীহ ইহুদিরা মুহাম্মদের সশস্ত্র ডাকাত বাহিনীর সঙ্গে পারবে
কেনো, তারাও সব কিছু ফেলে চিরদিনের মতো নিজের মাতৃভূমি পরিত্যাগ করে চলে যায়। এই ঘটনার এক বছর পর
মুহাম্মদ অবরোধ করেন ইহিদিদের বাকি তৃতীয় গোষ্ঠী বানু কুরাইজাদের উপর। তারাও আত্মসমর্পণ করে এবং মদিনা থেকে খালি
হাতে চলে যাওয়ার জন্যে মুহাম্মদের কাছে
অনুমতি চায়। মুহাম্মদ এবার সে অনুমতি দেন না। তিনি বলেন যে
আগের দুটি গোষ্ঠীর মতো এবার সহজে ছেড়ে দেওয়া হবে না। হয় ইহুদি ধর্ম ত্যাগ করে
মুসলমান হতে হবে, না হয় তোমাদের বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। ইহুদিরা মুসলমান হতে সম্মত না হলে
তাদের বিরুদ্ধে বিচারের নামে প্রহসন করে তাদের দোষী সাব্যস্ত করা হয়। বিচারে তাদের তিন প্রকারের শাস্তির হুকুম দেওয়া হয়। রায় তিনটি হলো –
এক]. অস্ত্র ধরতে সক্ষম এমন কিশোর ও বালকসহ সমস্ত পুরুষের মুণ্ডুচ্ছেদ করতে হবে । দুই]. সমস্ত শিশু ও নারীদের বন্দি করে
মুসলমানদের মধ্যে বণ্টন করে দিতে হবে। এবং তিন]. ইহুদিদের সমস্ত স্থাবর-অস্থাবর
সম্পত্তি মুসলমানদের মধ্যে বণ্টন করতে হবে । এই রায় শুনে হরষে মুহাম্মদের মুখমণ্ডল
উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিলো এবং তিনি বলেছিলেন যে আল্লাহ নিজে বিচার করলে ঠিক এই রায়ই দিতেন।
বিচার তথা প্রহসন পর্ব শেষ হলে ৯০০ জন ইহুদির মুণ্ডূচ্ছেদ করা হয় যার
তত্ত্বাবধান করেন স্বয়ং মুহাম্মদ। সমস্ত বিষয়-সম্পত্তি এবং নারী ও শিশুদের তিনি
স্বহস্তে ভাগ করে দেন মুসলমানদের মধ্যে। বলা বাহুল্য যে তিনি নিয়েছিলেন
একাই পাঁচ ভাগের এক ভাগ।
এছারাও বহু আক্রমণ তথা ডাকাতি ও
রাহাজানি এবং লুঠপাট ও হত্যালীলার বিবরণ
পাওয়া যায় ইসলামের ইতিহাসে। কোরানে ও হাদিসেও এগুলোর উল্লেখ রয়েছে। এগুলোই আল্লাহর পথে পবিত্র [!]
যুদ্ধ তথা জিহাদ বলে খ্যাত। এ রকম আরো বহু পবিত্র [!] যুদ্ধ করে মুহাম্মদ ইসলামকে
আরবের বুকে প্রতিষ্ঠিত করেন, এবং স্থাপন করেন ইসলামিক রাষ্ট্র। মুহাম্মদের
করা সেই সেই পবিত্র [!] জিহাদ তথা সশস্ত্র
অভিযানগুলির মধ্যে যেগুলি ইতিহাসে প্রসিদ্ধ তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো খায়বার যুদ্ধ, বানু মুস্তালিকের যুদ্ধ, হুনায়ুনের যুদ্ধ, তাবুক অভিযান, তায়েফ অভিযান, ইত্যাদি ।
এই হলো সেই পথ যে পথে মুহম্মদ
ইসলামকে আরবের বুকে তথা দুনিয়ার বুকে প্রতিষ্ঠিত করে গিয়েছেন। আর এই পথগুলি হলো বলা বাহুল্য যে কোরান নির্দেশিত পথ। কোরান তাই অন্ধকারে
আলো ছড়াতে পারে না, বরং মানুষের মধ্যে মানবতার, মনুষত্ব্যের, উদারতার, সহিষ্ণুতার,
ভালবাসার, প্রেম-প্রীতির যে সহজাত গুণ ও প্রবৃত্তিগুলি থাকে কোরান সেগুলি পুড়িয়ে
ছাই করে দেয় । কিন্তু বিশ্বের কোটি কোটি মুসলমান জানে না কোরানের এই আসল পরিচয়, জানে
না এই কোরান একটি জীবন্ত আগ্নেয়গিরির চেয়েও ভয়ঙ্কর অগ্নিকুণ্ডু । তাই তারা আজো বিশ্বাস করে যে কোরান সত্যি সত্যিই
মানব সমাজকে অজ্ঞানতার অন্ধকার থেকে আলোর
পথে নিয়ে আসার জন্যে উজ্জ্বল আলোক-বর্তিকার কাজ করছে এবং সেই বিশ্বাস থেকেই উৎসারিত
হয়ে আসে তাদের এই শ্লোগান – ‘আল-কোরানের আলো, ঘরে ঘরে জ্বালো ।’ কে জানে মুসলমানরা
আর কতোকাল কোরান ও কোরানের স্রষ্টা মুহাম্মদ সম্পর্কে অজ্ঞ থাকবে এবং কোরানের
আগুনে পৃথিবী পুড়তে থাকবে !