‘আইএস’ তথা ‘ইসলামিক স্টেট’ এখন নৃশংসতা, নিষ্ঠুরতা ও
পৈশাচিকতায় সারা বিশ্বের সমস্ত জঙ্গিসংগঠনগুলিকে ছাপিয়ে গিয়েছে এ কথা বোধ হয়
অনায়াসে বলা যায়। এই সময়ে হিংস্রতা, প্রতিশোধস্পৃহা ও প্রতিহিংসায় ‘আইএস’-এর
তুলনা বোধ হয় আর কারো সঙ্গে করা চলে না। ‘আইএস’ শুধু সাংগঠনিক শক্তির বিচারে কিংবা হাড় হিম করা
হিংসাত্মক ও ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ডেই বিশ্বের যে কোনো জঙ্গিবাদী সন্ত্রাসী সংগঠনকেই
পিছনে ফেলে দিয়েছে তাই নয়, আর্থিক সম্পদের দিক থেকেও সবার থেকে অনেক অনেক বেশি এগিয়ে গিয়েছে। নিজের নাম গোপন রেখে আমেরিকার গোয়েন্দা বিভাগের একজন বিশেষজ্ঞ বলেন
যে ‘আইএস’ হচ্ছে এ যাবত বিশ্বের সবচেয়ে ধনী জঙ্গিবাদী সন্ত্রাসী গোষ্ঠী। প্রতিদিন নানা
সূত্রে যে পরিমাণ অর্থ আয় করে এরা তা যে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছে
কল্পনারও অতীত। যে সূত্রগুলি ওদের আয়ের উৎস তার মধ্যে অন্যতম একটি হলো গ্যাসক্ষেত্র থেকে তেলের চোরাচালান। ত্রাণকর্মী, গবেষক ও গোয়েন্দা
সংস্থার পক্ষ থেকে এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে তেলের চোরাচালান থেকে প্রতিদিন ত্রিশ
লাখ ডলারেরও বেশী অর্থ তারা আয় করে। তাদের অধিকৃত অঞ্চলের মধ্যে ১১টি তৈল ক্ষেত্র
আছে। এ সব তৈল ক্ষেত্র
থেকে তারা তেলের চোরাচালান করে বাজার দর থেকে অনেক কম কম মূল্যে। কাতারের দোহা সেন্টারের ব্রুকিংস ইনস্টিটউশনের ভিজিটিং ফেলো লুয়াই খাত্তিব
জানিয়েছেন যে ব্যারেল প্রতি তেলে বাজার মূল্য যেখানে ১০০ ডলার, সেই তেল তারা
বিক্রি করে ব্যারেল প্রতি মাত্র ২৫ থেকে ৬০ ডলারে। এবং তাতেও তাদের অনেক লাভ থাকে
যেহেতু তারা চোরাকারবারিদের কাছ থেকে তেল খুব কম দামে কেনে।
এ বছর জুন মাসের শেষের দিকে ইরাকের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর
মসুল দখল করার পর ‘আইএস’ স্থানীয় ব্যবসায়ী ও জনসাধারণের কাছ থেকে ব্যাপক চাঁদাবাজীর মাধ্যমে
প্রচুর অর্থ সংগ্রহ করে। মসুলের দখল
নিয়েই তারা ফতোয়া দেয় যে, সমস্ত অমুসলমানদের হয় মুসলমান হতে হবে, নতুবা জিজিয়া
কর দিতে হবে, নতুবা মসুল শহর ছেড়ে চলে যেতে হবে, নতুবা মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়াতে হবে।
মসুলের পঁচিশ হাজার খৃষ্টান তখন দেশ ছেড়ে
চলে যায়, যারা যেতে পারে নি বা যেতে চায় নি তাদের কাছ থেকে ‘আইএস’ প্রচুর অর্থ
আদায় করে।
‘আইএস’ তাদের অধিকৃত অঞ্চল সমূহে অবস্থিত সমস্ত ব্যাঙ্ক
থেকে বিশাল অঙ্কের নগদ অর্থ তারা লুট করে। লুয়াই খাত্তিব বলেন যে, ইরাক থেকে প্রচুর প্রাচীনকালের মূল্যবান নিদর্শনগুলিও চোরাই পথে তুরস্কে বিক্রি
করেও প্রচুর অর্থ আয় করেছে। খাত্তিব আরো বলেন যে তাদের অবৈধ আয়ের আর একটি শাঁসালো
মাধ্যম হলো মানুষ পাচার। অসংখ্য নারী
ও শিশু যৌন-দাসী বা যৌন-দাস হিসেবে পাচার করে শত শত মিলিয়ন ডলার উপার্জন করছে। আমেরিকার অন্য আর একটি গোয়েন্দা সংস্থা জানিয়েছে যে তহবিল সংগ্রহ
ও সমৃদ্ধ করার জন্যে ‘আইএস’ অন্যান্য
মাফিয়া সংগঠনগুলির মতোই কাজ করছে। তাদের মতে ‘আইএস’ যেমন সুসংগঠিত ও নিয়মতান্ত্রিক, তেমনি ভীতি প্রদর্শন ও
সহিংসতাতেও অত্যন্ত পটু ও নৃৃৃশংস। আইএসের তহবিলে বিপুল অর্থ ঢোকানোর আর একটি বিরাট মাধ্যম হল শত্রু শিবিরের
গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের অপহরণ করে তাদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের মুক্তিপণ আদায় করা। এ বছর গোড়ার দিকে তারা চারজন ফরাসী ও
দু'জন স্পেনের সাংবাদিককে অপহরণ করে ও জিম্মি করে। মুক্তিপণ বাবদ মোটা অঙ্কের অর্থ দিয়ে সংস্লিষ্ট সরকার তাদের
মুক্ত করে নিয়ে যায়। আমেরিকা মুক্তিপণ দেয় নি বলে তাদের দুজন সাংবাদিককে – জেমস ফলি ও
স্টিভেন সটলফ – শিরচ্ছেদ করে হত্যা করে। সেই ছবি ভিডিও-র মাধ্যমে তারা বিশ্ববাসীর সামনে প্রকাশ করে আমেরিকা সহ গোটা বিশ্বকে ভীত-সন্ত্রস্ত করার জন্যে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, ‘আইএস’কে অর্থ সরবরাহ করতো প্রথম
দিকে মধ্যপ্রাচ্যের ধনী দেশগুলো এবং সে সব দেশের ধনকুবেররা। ‘আইএস’- এর
নৃশংসতম জঙ্গিবাদী সন্ত্রাসী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে প্রবল সমালোচনা ও
প্রতিবাদ ওঠায় তারা এখন অর্থ জোগান অনেক কমিয়ে দিয়েছ। অবশ্য এখন তাতে তাদের কোনো অসুবিধা হচ্ছে না, কারণ ঐ সব ধনী দেশ ও
ব্যক্তিদের নিকট থেকে যে পরিমাণ অর্থ পেতো তার চেয়ে অনেক অনেক বেশী অর্থ তারা এখন
চোরাচালান, চাঁদাবাজি, ব্যাঙ্ক-লুট ও মানুষ পাচার করে উপার্জন করছে।
‘আইএস’ যে পথে
অর্থ সংগ্রহ করছে তার চেয়ে বেআইনী,
অনৈতিক, নিকৃষ্ট ও জঘন্য পথ আর কিছু নেই। ‘আইএস’ – এর এভাবে অর্থ উপার্জন করার বিরুদ্ধে
স্বাভাবিকভাবেই তীব্র প্রতিবাদ, নিন্দা ও
ধিক্কার ধ্বনিত হচ্ছে চারিদিকে। এর পাশাপাশি এ প্রশ্নও উঠছে যে ‘আইএস’ অনুসৃত এই পথ ইসলাম সম্মত কি না? মুসলিম বুদ্ধিজীবীরা এবং
এমনকি মুসলিম সমাজের ধর্মীয় নেতাদের
[উলামা] একাংশ বলছেন যে ইসলাম চাঁদাবাজি, চোরাকারবারি, মানুষ পাচার, ব্যাঙ্ক লুট
প্রভৃতি কাজকে সমর্থন তো করেই না, বরং এসব কাজের বিরুদ্ধে ইসলামে কঠোর শাস্তির
বিধান রয়েছে।এই বক্তব্যের উপর আবার সীলমোহর লাগিয়ে দিচ্ছেন
অমুসলিম দেশ ও অমুসলিম সমাজের অধিকাংশ রাষ্ট্রনায়কগণ এবং আন্তর্জাতিক খ্যাতি
সম্পন্ন বিশিষ্ট ব্যক্তিদের অনেকেই। সাধারণভাবে এমনিতেই অধিকাংশ মানুষের বিশ্বাস যে কোনো ধর্মই
এমন জঘন্য পথে অর্থোপার্জন করাকে সমর্থন বা অনুমোদন করে না। আর মুসলমানরা তো একেবারেই অন্ধভাবে বিশ্বাস করে যে ইসলাম হলো শান্তির ধর্ম এবং এর মত ভালো ধর্ম আর নেই। তাই স্বতঃসিদ্ধভাবে এই মিথটাকেই
সত্যি বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে যে, ‘আইএস’ যে
পথে অর্থোপার্জন করছে তা সম্পূর্ণ অনৈস্লামিক।
কিন্তু রাষ্ট্রনায়ক বা বুদ্ধিজীবীরা সব সময় সত্যি বলেন
এমন নয়। বহু ক্ষেত্রেই তাঁরা নিজেদের কিংবা বিশেষ কোনো গোষ্ঠীর স্বার্থ সিদ্ধির
জন্যে মিথ্যার বেসাতি করতে দ্বিধা করেননা। এমনকি ইতিহাসকে বিকৃত করতেও দ্বিধা করেন না। তাঁরা ‘আইএস’-দের প্রসঙ্গে যা বলছেন বা
ইসলাম সম্পর্কে দরাজ হাতে যে সব শংসাপত্র
দিচ্ছেন তা যে সঠিক ও সত্যি তার সপক্ষে তারা কোনো
প্রমাণ দিচ্ছেন না। দেবেন কী করে? কারণ, সত্যিটা যে ঠিক তার বিপরীত।সাধারণ ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা এ কথা শুনে ভীষণ হতাশ হবেন ও দুঃখ পাবেন ঠিকই, কিন্তু
এটাই হলো বাস্তব ও সত্যি। সাধারণভাবে মুসলমানদের বিশ্বাস যে ইসলাম হলো শান্তি, সাম্য,
সহিষ্ণুতা ও ক্ষমার ধর্ম যা নিয়ে তাদের গর্বের অন্ত নেই। তাই তাদের দৃঢ় বিশ্বাস
যে, ‘আইএস’ যে পথে অর্থোপার্জন করছে তা
ইসলাম একদম অনুমোদন করে না এবং ‘আইএস’-এর কার্যকলাপে ইসলামের বদনাম হচ্ছে, ইসলামকে
কালিমালিপ্ত করছে ওরা। ধর্মপ্রাণ
মুসলিমরাই শুধু নয়, এই ধারণা ও বিশ্বাস অধিকাংশ অমুসলিমদের মধ্যেও লক্ষ্য করা যায়।
কিন্তু মুশকিল হলো বিশ্বাস ও বাস্তবের মধ্যে এবং ধারণা ও তথ্যের মধ্যে কোনো মিল
খুঁজে পাওয়া যায় না। ইসলামের ইতিহাস, কোরান-হাদিস ও মুহাম্মদের জীবনী বলে সম্পূর্ণ অন্য কথা। প্রকৃত ঘটনা হলো ইসলাম
শান্তি, সাম্য, সহিষ্ণুতা ও ক্ষমার ধর্ম বলে যে প্রচার করা হয় তা সম্পূর্ণ মিথ ও একেবারেই সত্যের
বিপরীত।স্বভাবতই এটা মোটেই
সত্যি নয় যে ‘আইএস’ যে পথে
অর্থোপার্জন করছে তা ইসলাম অনুমোদন করে না। শুধু মুহাম্মদের
জীবনকেই যদি সামান্য একটু পর্যালোচনা করে
দেখা হয় তাহলেই এই নির্মম সত্য ছবিটা দৃষ্টিগোচর হয়। তাই প্রকৃত সত্যিটা জানা দরকার। আর তারজন্য এবার আমাদের মুহাম্মদের জীবনের উপর একটু আলোকপাত করতে হবে।
মুহাম্মদ মক্কায় তাঁর ধর্ম প্রতিষ্ঠায় চূড়ান্ত ব্যর্থ
হয়ে ৬২২ খৃষ্টাব্দে যখন মদিনা যান তখন আর্থিক দিক দিয়ে তিনি ছিলেন সম্পূর্ন নিঃস্ব। তিনি তখন এতোটাই নিঃস্ব ছিলেন যে তাঁঁর নিজের গ্রাসাচ্ছাদন করার সঙ্গতিও ছিলো
না। মদিনার মুসলমানরা তাই তাঁর গ্রাসাচ্ছাদনের ব্যবস্থা করেন। সেই মুহাম্মদ মাত্র কয়েক বছরেই ধনবান হয়ে ওঠেন। কোন
জাদু-মন্ত্রে সম্ভব হয়েছিলো এটা? তাঁর নিজের যে ভরণপোষণের সামর্থ ছিলো না এবং
মাত্র কয়েক বছরেই বিপুল বৈভবের মালিক হয়ে উঠেছিলেন তা বানানো
কোনো গল্প বা অতিরঞ্জিত বর্ণনা নয়। কোরান, হাদিস ও
ইসলামের ইতিহাসে তার উজ্জ্বল প্রমাণ রয়েছে। সেই প্রমাণগুলির প্রতি এবার চোখ বুলানো যাক।
এ ইতিহাস সর্বজনবিদিত যে
মুহাম্মদ খাদিজা সূত্রে প্রাপ্ত বিপুল ধন-সম্পদ ত্যাগ করে খালি হাতে মদিনায় গিয়ে
উঠেছিলেন। ফলে মদিনায় তাঁকে প্রবল অর্থকষ্টের মধ্য দিয়ে দিন অতিবাহিত করতে হতো।
আর্থিক সংকট এতোটাই তীব্র আকার নিয়েছিলো যে তার প্রভাবে তাঁর দাম্পত্যজীবন বিষাক্ত হয়ে ওঠে। দাম্পত্যকলহ এমন মাত্রায় পৌঁছে যায় যে তিনি একবার এক মাস যাবৎ
স্ত্রীদের থেকে দূরে সরে গিয়ে মসজিদে থাকতে বাধ্য হন। তাতেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসায় অসন্তুষ্ট
স্ত্রীদের মুখ বন্ধ করার জন্যে তাঁদের তালাক দেবার ভয় দেখাাতেও দ্বিধা করেন নি।মুহাম্মদের দাম্পত্য জীবনের সেই বিশ্রী ও বিব্রতকর ঘটনার স্পষ্ট বিবরণ পাওয়া যায় কোরানের মধ্যেই। এ প্রসঙ্গে কোরানের একটি
ভাষ্য হলোঃ “হে নবী ! তুমি তোমার স্ত্রীদের বলো – তোমরা যদি
পার্থিব জীবনের ভোগ ও বিলাসিতা কামনা করো, তবে এসো, আমি তোমাদের ভোগ বিলাসের ব্যবস্থা করে দিই,
এবং সৌজন্যের সঙ্গে বিদায় দিই।” [সুরা
আহযাব, ৩৩/২৮] কেন মুহাম্মদ তাঁর স্ত্রীদের তালাক দেওয়ার ভয়
দেখিয়েছিলেন? এর স্পষ্ট ব্যাখ্যা রয়েছে কোরানের তফসীরে।তফসীরে বলা হয়েছে – “হজরত স্বীয় পত্নীগণ হইতে
বিচ্ছিন্ন হইয়াছিলেন ও শপথ করিয়াছিলেন যে, এক মাস কাল তাহাদের সঙ্গ করিবেন না,
কারণ এই যে, তাঁহারা তাঁহার সাধ্যাতীত বস্ত্রাদি প্রার্থনা করিতেছিলেন। এয়মনের
বিচিত্র বসন ও মেসরের পট্ট-বস্ত্র, এবং এইরূপ অন্যান্য সামগ্রীর প্রতি তাঁহাদের
লোভ হইয়াছিল। এই সকল হজরতের হস্তায়ত্ত ছিল না। তিনি তাঁহাদের কর্তৃক উত্যক্ত
হইয়া তাঁহাদের সঙ্গ পরিত্যাগ করেন, এবং এক মসজ্বেদে গিয়ে বসিয়া থাকেন, ঊনত্রিশ
দিবসের পর তিনি এই আয়াত প্রাপ্ত হন।” [দ্রঃ গিরিশচন্দ্র সেনের কুরআন শারীফ] মুহাম্মদের এই আর্থিক দৈন্যতার করুণ বর্ণনা
পাওয়া যায় হাদিসেও। যুবাইর ইবনে হরব
[রঃ} বর্ণিত একটি হাদিস এ প্রসঙ্গে বলছে – “ওমর ইবনে খাত্তাব [রাঃ] বলেন, যখন রাসূলে
পাক [সঃ] তাঁর স্ত্রীদের নিকট হতে সাময়িকভাবে পৃথক হয়ে গেলেন। তখন আমি মসজিদে
নববীতে প্রবেশ করে দেখতে পেলাম যে, লোকজন
হাতে কঙ্কর নিয়ে নাড়াচাড়া করছে। তারা পরষ্পর আলোচনা করিতেছিল যে, রাসূলে পাক [সঃ]
তাঁর স্ত্রীদের তালাক প্রদান করেছেন। ... আমি রাসূলে পাক [সাঃ] – এর নিকট এইবার প্রবেশ করলাম। তিনি
তখন খেজুর পত্র নির্মিত একটি চাটাইয়ের উপর কাত হয়ে শায়িত ছিলেন। আমি তাঁর নিকট
গিয়ে বসে পড়লাম। তিনি তাঁর চাদরটি স্বীয়
দেহের উপর টানিয়া দিলেন। তাছাড়া তাঁর পরিধানে তখন অন্য কাপড় ছিল না। তাঁর বাহুতে
চাটাইয়ের দাগ বসে গিয়েছিল। আমি তখন রাসূলে পাক [সঃ] – এর কক্ষস্থিত মাল-সামানের দিকে লক্ষ্য করছিলাম। সেখানে আমি একটা পাত্রে একছা’ পরিমাণ যব দেখতে পেলাম। আর
সলমের কিছু পাতা [যা দিয়ে চামড়া রঙ করা হয়] কামরার এক কোণে পড়ে থাকতে দেখলাম। আরও
দেখলাম যে, একখানি চামড়া যা পাকানো ছিল না, তা ঝুলন্ত অবস্থায় ছিল। এসব দেখে আমার
দু চক্ষু অশ্রুসিক্ত হয়ে গেল।” [মুসলিম শরীফ, সোলেমানিয়া বুক হাউস, ঢাকা, হাঃ নং
৩৩৫৬] কোরান ও হাদিস থেকে উদ্ধৃত এই দুটি
বর্ণনা থেকে যে চিত্রটি ফুটে উঠেছে তা
থেকে স্পষ্টতঃই বোঝা যায় মুহাম্মদের আর্থিক অবস্থা কতো করুণ ও শোচনীয় ছিলো। বর্ণনার অতীত এই দীন-দরিদ্র মানুষটি ৭/৮ বছরেই
বিশাল ধনী হয়ে উঠেছিলেন। কতো বড়ো ধনী হয়ে উঠেছিলেন এবং
তাঁর সম্পদ এতো বিপুুল পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছিল যে তা আন্দাজ করা সাধ্যাতীত ব্যাপার। তবে তিনি যে আক্ষরি অর্থেই বিরাট ধনবান হয়ে উঠেছিলেন তা তাঁর জীবনের
নানা ঘটনা থেকে বোঝা যায়।
পর্যাপ্ত ভরণপোষণের দিতে না পারার
জন্যে এক সময় যে মুহাম্মদকে একদা স্ত্রীদের প্রবল ক্ষোভেের মুখে পড়তে হয়েছিলো সেই তিনিই প্রত্যেক স্ত্রীকে আলাদা আলাদা ঘর তৈরী করে
দিয়েছিলেন। তাঁর স্ত্রীদের সংখ্যা ঠিক
কতো ছিলো তা নিয়ে প্রবল মতভেদ আছে। তবে এটা নিয়ে
কোনো সংশয় নেই যে, তাঁর মৃত্যুর সময় নয় জন স্ত্রী জীবিত ছিলেন। তবে আর
একটি মত হলো যে ন’জন নয়, ছিল এগারো জন। সুতরাং এটা স্পষ্ট যে তাঁর হারেমে স্ত্রীর সংখ্যা ছিলো নয়
বা এগারোর চেয়ে আরো বেশী, কেননা তিনি বিয়েে করেছিলেন এগারো অপেক্ষা অধিক সংখ্যাায় এবং তাঁর অনেক দাসদাসী ও উপপত্নীও ছিলো। এহেন একটা বিশাল
পরিবারের সকলের ভরণপোষণ ও বাসস্থান করতে
হলে বহু অর্থের প্রয়োজন হয় তা সহজেই অনুমেয়। মুহাম্মদ তাঁর বিদায় হজে একশোটা উট
কোরবানি দিয়েছিলেন। সেবার তিনি তাঁর সকল স্ত্রীদেরও সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন তাঁদের হজ
শিক্ষা দেওয়ার জন্যে। যে মানুষটা সপরিবারে
হজ সম্পন্ন করবার জন্যে এমন এলাহি কর্মকান্ড করতে পারেন
তিনি যে বিশাল ধনী ছিলেন তা বলা বাহুল্য।৬৩০ খৃষ্টাব্দে মুহাম্মদ হজ করার অছিলায় অতর্কিতে
মক্কা আক্রমণ করে মক্কা জয় করেন। সে বছর তিনি দশ হাজার সৈন্য
সঙ্গে নিয়ে যান।এই ঘটনাটিও প্রমাণ
করে যে মুহাম্মদ বিপুল ধন-সম্পত্তির মালিক
হয়ে উঠেছিলেন। এখন প্রশ্ন হলো, দারিদ্রের কশাঘাতে ধুঁকতে থাকা মুহাম্মদ এতো
অল্প অসময়ে কীভাবে এতো বিপুল সম্পত্তির মালিক হয়ে উঠেছিলেন? কোনো রাজা বাদশা কি তাঁকে তাঁর ধর্ম প্রচারের
জন্যে এতো অর্থ দান করেছিলেন? না।
তিনি কি মোটা অঙ্কের অর্থ কুড়িয়ে পেয়েছিলেন? না। তিনি কি লটারী জিতেছিলেন? না। তিনি কি ব্যবসা করে প্রচুর মুনাফা করে ধনী হয়েছিলেন? না। তবে কীভাবে তিনি রাতারাতি
ফকির থেকে বাদশা বনে গিয়েছিলেন? এর উত্তর রয়েছে ইতিহাস এবং কোরান ও হাদিসের পাতায়
পাতায়। সেই পাতাগুলির উপর এবার চোখ রাখা যাক।
ইসলামের ইতিহাসে সর্বাধিক
পরিচিত জিহাদ বা যুদ্ধটি হলো বদর যুদ্ধ। কিছুদিন হলো মুহাম্মদ মদিনায় এসেছেন
ইসলাম ধর্ম প্রাচারের জন্যে। তখন তীব্র আর্থিক কষ্ট চলছে। এমন সময় খবর পেলেন যে,
মক্কার কোরেশদের একজন বিশিষ্ট ধনী ব্যক্তি, আবু সুফিয়ান, সিরিয়া গিয়েছেন বাণিজ্য করতে এবং তাঁর সঙ্গে
রয়েছে একটি বেশ বড়ো বণিক দল। তিনি ঠিক করলেন সেই বণিক দলটিকে লুট করবেন। সেই
উদ্দেশ্যে তিন শতাধিক শিষ্য নিয়ে গিয়ে বদর নামক একটি স্থানে গিয়ে পথের ধারে ওৎ পেতে
রইলেন। আবু সুফিয়ান এ খবর পেয়ে অন্য পথ ধরে মক্কায় ফিরে যান। এদিকে মক্কার লোকেরা আবু সুফিয়ায়ানকে রক্ষা করতে
পৌঁছে যায় বদর প্রান্তে যার অদূরে মুহাম্মদ দলবল নিয়ে ওৎ পেতেছিলেন। ফলে তাদের সঙ্গে মুহাম্মদের দলবলের যুদ্ধ বেধে যায়। সেই যুদ্ধে মুহাম্মদ অবিশ্বাস্য জয় পেয়ে যান। যুদ্ধে কোরেশদের ৭০জন নিহত ও ৭০জন মুহাম্মদের হাতে বন্দি হয়েছিলেন।
কোরেশদের ফেলে যাওয়া অর্থ ও জিনিসপত্র মুহাম্মদ লুট করে নেন। এবং পরে মোটা
অংকের মুক্তিপণ নিয়ে বন্দি কোরেশদের মুক্তি দেন, যদিও দু'জন বন্দিকে শিরচ্ছেদ করে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছিল। যুদ্ধে মুহাম্মদের হাতে বলতে গেলে এক লহমায় বহু অর্থ চলে আসে যা তিনি স্বপ্নেও
ভাবতে পারেন নি।
বিধর্মীদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ
নেওয়া, তাদের ভীত সন্ত্রস্ত করা ও তাদের হত্যা ও লুট করে মোটা অর্থোপার্জন করা –
এটাকেই একমাত্র পথ হিসেবে বেছে নেন মুহাম্মদ বদর যুদ্ধে অভাবনীয় জয় পাওয়ার পর।
মদিনায় ইহুদীদের তিনটি গোষ্ঠী বাস করতো যারা ইসলাম ধর্ম গ্রহণের আবেদনকে
প্রত্যাখান করেছিলো। তাই তাদের প্রতি প্রতিহিংসাপরায়ণ
হয়ে মুহাম্মদ তাদের একে একে মদিনা থেকে নির্বাসিত করে
তাদের বিশাল পরিমাণ বিষয় সম্পত্তি ও ধন-দৌলত তিনি গ্রাস করে নেন। অবশ্য প্রতি ক্ষেত্রেই তিনি একটি মিথ্যে অভিযোগ [যদিও তা তুচ্ছ] খাড়া করেছিলেন তাদের বিরুদ্ধে।দুটি গোষ্ঠীকে খালি হাতে মদিনা থেকে নির্বাসিত করার পর সর্বশেষ যে গোষ্ঠীর [বানু কুরাইজা] উপর আক্রমণ সংগঠিত করেছিলেন এবং তাদের সমস্ত পুরুষ মানুষদের যেভাবে হত্যা করেছিলেন তার মতো নৃশংস ঘটনা ইতিহাসে বিরল। তাদের বিরুদ্ধে সম্পূর্ণ মিথ্যা দোষারোপ করে যে সাজানো বিচার করেছিলেন তার রায়ে শাস্তি ছিলো তিন রকমের। কী সে রায় ছিলো তা দেখা যাক একজন মুসলিম ঐতিহাসিকের বিবরণ থেকেই। তিনি লিখেছেন, "মুসলমানদিগের সহিত সন্ধির শর্ত ভঙ্গ করার দরুন সমুদয় ইহুদী পুরুষদিগের প্রাণদন্ড হইবে, স্ত্রীলোক এবং বালক-বালিকাগণ দাস-দাসীরূপে পরিগণিত হইবে এবং ইহুদীদিগের সকল সম্পত্তি মুসলিম সৈন্যদিগের মধ্যে ভাগ করিয়া দেওয়া হইবে।” [ বিশ্বনবী, গোলাম মোস্তফা, পৃঃ ২০৫] এখানে একটি বিশেষ উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটে। তা হলো এই যে, মুহাম্মদ নিজেই পুরুষ ইহুদীদের [৭০০/৮০০ জন] শিরচ্ছেদ করার পৈশাচিক প্রক্রিয়ার তত্ত্বাবধান করেছিলেন। এই বর্বরতম ঘটনাটিকে মুসলিম ঐতিহাসকরাও অস্বীকার করতে বা চাপা দিতে পারেন নি।বিধর্মীদের উপর অতর্কিতে আক্রমণ করা, তাদের নির্বিচারে হত্যা করা, তাদের যাবতীয় বিষয়-আশয় ও ধন-দৌলত লুট করা, এ রকম ঘটনা মুহাম্মদ তাঁর নিজের জীবনে কতবার ঘটিয়েছেন তার সঠিক তথ্য বা সংখ্যা পাওয়া খুব মুসকিল।
সংখ্যাটা কতো হতে পারে তা নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতভেদ আছে। তবে সংখ্যাটা ৭০ থেকে ১০০-এর মধ্যে হওয়ার সম্ভাবনা সর্বাধিক। এসব অতর্কিত সশস্ত্র হানায় তিনি প্রত্যক্ষভাবে অংশ নিয়েছিলেন বা নেতৃত্ব করেছিলেন এমন অভিযানের সংখ্যা ১৭ থেকে ৪৩টি। মুসলিম ঐতিহাসিক ড. ওসমান গণি লিখেছেন ৪৩টি অভিযানে মুহাম্মদ অংশ নিয়েছিলেন। [দ্রঃ মহানবী, পৃঃ ৩৯৫,৩৯৬] মুহাম্মদের জীবদ্দশায় যতগুলি অভিযান বা আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে তার প্রত্যেকটি ঘটনাই উল্লেখ করার মতো। এখানে আর মাত্র দুটি ঘটনার উল্লেখ করবো। ঘটনা দুটি সংক্ষেপে নীচে বর্ণনা করা হলো।
তাদের বিশাল পরিমাণ বিষয় সম্পত্তি ও ধন-দৌলত তিনি গ্রাস করে নেন। অবশ্য প্রতি ক্ষেত্রেই তিনি একটি মিথ্যে অভিযোগ [যদিও তা তুচ্ছ] খাড়া করেছিলেন তাদের বিরুদ্ধে।দুটি গোষ্ঠীকে খালি হাতে মদিনা থেকে নির্বাসিত করার পর সর্বশেষ যে গোষ্ঠীর [বানু কুরাইজা] উপর আক্রমণ সংগঠিত করেছিলেন এবং তাদের সমস্ত পুরুষ মানুষদের যেভাবে হত্যা করেছিলেন তার মতো নৃশংস ঘটনা ইতিহাসে বিরল। তাদের বিরুদ্ধে সম্পূর্ণ মিথ্যা দোষারোপ করে যে সাজানো বিচার করেছিলেন তার রায়ে শাস্তি ছিলো তিন রকমের। কী সে রায় ছিলো তা দেখা যাক একজন মুসলিম ঐতিহাসিকের বিবরণ থেকেই। তিনি লিখেছেন, "মুসলমানদিগের সহিত সন্ধির শর্ত ভঙ্গ করার দরুন সমুদয় ইহুদী পুরুষদিগের প্রাণদন্ড হইবে, স্ত্রীলোক এবং বালক-বালিকাগণ দাস-দাসীরূপে পরিগণিত হইবে এবং ইহুদীদিগের সকল সম্পত্তি মুসলিম সৈন্যদিগের মধ্যে ভাগ করিয়া দেওয়া হইবে।” [ বিশ্বনবী, গোলাম মোস্তফা, পৃঃ ২০৫] এখানে একটি বিশেষ উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটে। তা হলো এই যে, মুহাম্মদ নিজেই পুরুষ ইহুদীদের [৭০০/৮০০ জন] শিরচ্ছেদ করার পৈশাচিক প্রক্রিয়ার তত্ত্বাবধান করেছিলেন। এই বর্বরতম ঘটনাটিকে মুসলিম ঐতিহাসকরাও অস্বীকার করতে বা চাপা দিতে পারেন নি।বিধর্মীদের উপর অতর্কিতে আক্রমণ করা, তাদের নির্বিচারে হত্যা করা, তাদের যাবতীয় বিষয়-আশয় ও ধন-দৌলত লুট করা, এ রকম ঘটনা মুহাম্মদ তাঁর নিজের জীবনে কতবার ঘটিয়েছেন তার সঠিক তথ্য বা সংখ্যা পাওয়া খুব মুসকিল।
সংখ্যাটা কতো হতে পারে তা নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতভেদ আছে। তবে সংখ্যাটা ৭০ থেকে ১০০-এর মধ্যে হওয়ার সম্ভাবনা সর্বাধিক। এসব অতর্কিত সশস্ত্র হানায় তিনি প্রত্যক্ষভাবে অংশ নিয়েছিলেন বা নেতৃত্ব করেছিলেন এমন অভিযানের সংখ্যা ১৭ থেকে ৪৩টি। মুসলিম ঐতিহাসিক ড. ওসমান গণি লিখেছেন ৪৩টি অভিযানে মুহাম্মদ অংশ নিয়েছিলেন। [দ্রঃ মহানবী, পৃঃ ৩৯৫,৩৯৬] মুহাম্মদের জীবদ্দশায় যতগুলি অভিযান বা আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে তার প্রত্যেকটি ঘটনাই উল্লেখ করার মতো। এখানে আর মাত্র দুটি ঘটনার উল্লেখ করবো। ঘটনা দুটি সংক্ষেপে নীচে বর্ণনা করা হলো।
ইসলামের ইতিহাসে বানু মুস্তালিকের
যুদ্ধটিও যথেষ্ট পরিচিত। ৫ম হিজরিতে অর্থাৎ ৬২৭ খৃস্টাব্দে মুহাম্মদ এই অভিযানটি
সংগঠিত করেন। এই অভিযান সম্পর্কে হাদিসেও অনেক তথ্য পাওয়া যায়। ইরানের প্রখ্যাত
লেখক আলি সিনা ‘Understanding
Muhammad’ গ্রন্থের ২৮ পৃষ্ঠায় শাহী বুখারী থেকে এই ঘটনাটি সম্পর্কে একটি
হাদিস উদ্ধৃত করেছেন। সেটি এরূপঃ “The Prophet had suddenly attacked Banu Mustaliq
without warning while they were heedless and their cattle were being watered at
the places of water. Their fighting men were killed and their women and children
were taken as captives; the Prophet got Juwairiya on that day. Naïf said that
Ibn Omar had told him that above narration and that Ibn Omar was in that army.”
ঐ হিংসাত্মক আক্রমণের ঘটনায়
কতজন নারী ও শিশুদের বন্দি করে ক্রীতদাস-দাসী বানিয়ে এবং কত সম্পদ লুঠ করে
মুহাম্মদ মদিনায় নিয়ে গিয়েছিলেন তার বর্ণনাও হাদিসে লিপিবদ্ধ রয়েছে। আলি সিনা তাঁর উক্ত গ্রন্থে ২৯ পৃষ্ঠায় সেরূপ একটি হাদিসটি উদ্ধৃত করেছেন।
হাদিসটি হলো – “600 were taken prisoners by the Muslims. Among the booty there were 2,000 camels
and 5000 goats.[Sahih Bukhari, Vol.3, Book 46, Number 717] প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য যে মুসলিমরা
মুহাম্মদ ও জারিয়ার বিয়ের ঘটনাকে মুহাম্মদের একটি মহানুভবতা ও উদারতার ঘটনা হিসেবে পরিবেশন করেন। তাঁরা বলেন, ইহুদীরা মুহাম্মদের সঙ্গে শত্রুতা করলেও
মুহাম্মদ জারিয়াকে বিয়ে করে ইহুদীদের
প্রতি সম্মান ও মর্যাদা প্রদর্শন করতে দ্বিধা করেন নি। মিথ্যার বেসাতি আর কাকে
বলে!
মদিনা থেকে ৯০/১০০ মাইল দূরে
খায়বার ছিলো একটি ইহুদীদের আর একটি বসতি। এই অঞ্চলটি ছিলো খুবই আর্থিক দিক থেকে খুবই সমৃদ্ধ অঞ্চল। মদিনার ইহুদীরা মুহাম্মদের দ্বারা নির্বাসিত হয়ে অনেকেই খায়বারে গিয়ে
বসবাস শুরু করে। খায়বারের ধন-সম্পদ লুট এবং মদিনা থেকে নির্বাসিত ইহুদিদের শায়েস্তা
করতে মুহাম্মদ খায়বার আক্রমণ করেন। বলা বাহুল্য যে সেই আক্রমণও ছিলো সহসা,
একদিন অতি প্রত্যুষে খায়বারের মানুষরা দেখলো যে মুহাম্মদের নেতৃত্বে মুসলমানদের
বিরাট বাহিনী তাদের ঘিরে ফেলেছে। Sirat Rasul Allah গ্রন্থ থেকে এই আক্রমণের ঘটনার
বর্ণনাকে উদ্ধৃত করেছেন আলি সিনা তাঁর উক্ত গ্রন্থের ৩৩ পৃষ্ঠায়। বর্ণনাটি এরূপঃ “Ibn Ishaq in his narration of the conquest of Jewish town Khaibar
reports that Muhammd, without warning, attacked this fortress town and killed
its unarmed people as they were fleeing. Among the captured was Kinana.
Kinana al-Rabi who had the custody of the treasure of Banu Nadir, was brought
to the apostle who asked him about it. He denied that he knew where it was. A
Jew came, [Tabari a says, ‘was brought’] to the apostle and said that he had
seen Kinana going to a certain ruin every morning early. When the apostle said
Kinana, ‘Do you know that if we find you have it [the treasure] I shall kill
you? He said, ‘Yes.’
The apostle gave orders to
that the ruin was to be excavated and some of the treasures were found. When he
asked him about the rest [of the treasures?] he refused to produce it, so the
apostle gave orders to al-Zubayr Al-Awwam, ‘Torture him until you extract what
he has..’ So kindled a fire with flint and steel on his chest until he was
nearly dead. Then the apostle delivered him to Muhammad b. Maslama and he
struck off his head, in revenge for his brother Mahmud” বিধর্মীদের উপর মুহাম্মদ এই সমস্ত বর্বর আক্রমণ ও
হত্যাকান্ড ইসলাম ধর্মের ও প্রচার বা
প্রসারের উদ্দেশ্যে করতেন এমনটা নয়। তাঁর
উদ্দেশ্য ছিলো প্রধানতঃ লুঠতরাজ করা। আলি
সিনা তাঁর ঐ বইয়ের ২৯ পৃষ্ঠায় একটি হাদিস উল্লেখ করে এটা দেখিয়েছেন। সেই হাদিসটি হলো - “Ibn Aun reported: I wrote to
Nafi inquiring from him whether it was necessary to extend [to the
disbelievers] an invitation to accept [Islam] before meeting them in fight. He
wrote [in reply] to me that it was necessary in the early days of Islam. The
messenger of Allah [may peace be upon him] made a raid upon Banu Mustaliqu
while they were unaware and their cattle were having a drink at the water. He
killed those who fought and imprisoned others”
[Shahi Muslim Book 019, Number 4292]
মুহাম্মদের জীবনের ইতিহাস আমাদের সকলকে যেভাবে চমকে দেয় তার তুলনা ইতিহাসে বিরল।বস্তুত ইসলামের ইতিহাসকে অনেকগুণ ছাপিয়ে গেছে মুহাম্মদের জীবনের নিজস্ব ইতিহাস। উপরে মুহাম্মদের জীবনের সামান্য যে
কয়েকটি ঘটনার বর্ননা করা হয়েছে তা তাঁর সেই অতি দীর্ঘ ও ব্যাপক বিস্তৃত জীবনের
তুলনা করলে সিন্ধুতে বিন্দু সদৃশ হবে। তবুও সামান্য এই কয়েকটি ঘটনা থেকেই
এটা বুঝতে অসুবিধা হয় না যে, মুহাম্মদ ও ইসলাম সম্পর্কে যা যা প্রচার করা হয় তা কতো বড়ো মিথ এবং মিথ্যেয় ঠাসা। বুঝতে অসুবিধা হয় না এটাও যে, যে পথ ধরে ‘আইএস’ [IS] তথা ‘ইসলামিক স্টেট’ আজ বিশ্বের সবচেয়ে ধনী জঙ্গি গোষ্ঠী হতে পেরেছে, সে পথটি
মোটেই তাদের নতুন আবিষ্কার নয়। এ পথের
আবিষ্কর্তা স্বয়ং মুহাম্মদ। এ পথ ধরেই তিনি তাঁর মদিনার জীবনের প্রবল আর্থিক
সংকটের সমাধান খোঁজা শুরু করেন একদিন। আর এ পথেই পেয়েছিলেন সংকট সমাধানের
আশাতীত সাফল্যও। তারপর আর পিছন ফিরে তাকান নি। এ পথটাকেই তিনি তাঁর নিজের জন্যে এবং জিহাদের জন্যে তহবিল সংগ্রহ করার জন্য প্রধান পথ হিসেবে অবলম্বন করেছিলেন। সেই তখন
থেকেই জিহাদের নিমিত্ত চুরি, ডাকাতি,
রাহাজানি, লুটপাট, অপহরণ, হত্যা, মাল
পাচার, মানুষ পাচার প্রভৃতি
কার্যকলাপ ইসলামে বৈধ।