Monday, January 11, 2016

কালিয়াচকের সাম্প্রদায়িক হাঙ্গামার ঘটনার জন্যে সরকারের মোল্লা-তোষণ নীতিই দায়ী



গত ৩রা জানুয়ারী  রবিবার মুসলিম মৌলবাদীদের নেতৃত্বে একদল ধর্মান্ধ হিংস্র মুসলমান  মালদা জেলার কালিয়াচক পুলিশ থানা পঞ্চায়েত সমিতির কার্যালয়ের উপর হিংস্র হামলা চালিয়েছে  হামলাকারীরা পুলিশের উপর চরাও হয়ে তাদের ব্যাপক মারধোর করে এবং  পুলিশ ও বি.এস.এফের গাড়ি, বাস-ট্রাক সহ  ত্রিশটি  গাড়ি আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দেয় । প্রাণ বাঁচাতে পুলিশ থানা ছেড়ে পালিয়ে যায় ।  সশস্ত্র দুষ্কৃতিদের আক্রমণে পুলিশ কর্মী-সহ ত্রিশ জন মানুষ আহত হয়   থানা ও বিডিও অফিস ছাড়াও বেছে বেছে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষদের কতকগুলি দোকান ও বাড়িতেও অগ্নি সংযোগ করে দুষ্কৃতিরা । দুষ্কৃতিরা হামলা চালায় কয়েকটি মন্দিরের উপরেও । হামলাকারীদের আক্রমণের লক্ষ্য প্রধানতঃ পুলিশ ও হিন্দুরা 
এই ঘটনায় সরকারি ও বেসরকারি সম্পত্তির যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা হয়তো কোনোভাবে একদিন পূরণ হয়ে যাবে কিন্তু সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিবেশের যে ক্ষতি হলো তা  কতদিনে  পুরণ  হবে তা বলা মুশকিল । এই ঘটনার সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়তে পারে  রাজ্যের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক পরিবেশে    ধর্মান্ধ মুসলিম দুষ্কৃতিরা সংখ্যায় হয়তো কয়েক শ’ ছিলো,   কিন্তু তাদের জন্যে   কালিয়াচক ও পার্শ্ববর্তী  অঞ্চল সমূহের  হিন্দুদের   মনে সমস্ত মুসলিমদের সম্পর্কে তৈরী হয়ে গেলো গভীর অবিশ্বাস, ঘৃণা ও বৈরীতার মনোভাব  ফলে সেই বিস্তীর্ণ অঞ্চলে  হিন্দু-মুসলিমদের মধ্যে যে সম্প্রীতি, সদ্ভাব, মিত্রতা ও ভ্রাতৃত্বের পরিবেশ  ছিলো তা অনেকটাই নষ্ট হবে যা পুনরুদ্ধার করা মোটেই  সহজ কাজ  হবে  না । হিন্দু ও মুসলিমদের মধ্যে সম্প্রীতি ও সদ্ভাবের পরিবেশ পুনরুদ্ধার করা যে বেশ কঠিন হবে তা ক্রমশঃ স্পষ্ট  হয়ে উঠছে  সাম্প্রদায়িক দল ও  সংগঠনগুলির তৎপরতা দেখে ।  ইতিমধ্যেই পরিস্থিতির ফায়দা তুলতে মাঠে নেমে পড়েছে  বিজেপি এবং ‘হিন্দু সংহতি’ নামের একটি   হিন্দু মৌলবাদী  সংগঠন । বিজেপির রাজ্য নেতৃত্বের  একটি দল ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় গতকালই (০৬.০১.১৬) ঢুকতে চেয়েছিলো , কিন্তু পুলিশ তাদের  অনুমতি দেয় নি না দিয়ে ভালোই করেছে ।   বিজেপি কোন্ উদ্দেশ্যে ক্ষতিগ্রস্ত ও আতঙ্কিত মানুষদের  পাশে গিয়ে নিশ্চয়  সম্প্রীতির গান গাইতো  না । অপরদিকে  বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও ঘটনাটিকে জাতীয় ইস্যু করতে তৎপর হয়ে উঠেছে । আব্বাস নাকভি ইতিমধ্যেই এই ঘটনার জন্যে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে মুসলিম তোষণের অভিযোগ উত্থাপন করেছেন    এভাবেই তাঁরা হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে ধর্মীয় মেরুকরণ করার লক্ষ্যে জোর তৎপরতা শুরু করেছেনবিজেপিকে সহায়তা দিতে ‘হিন্দু সংহতি’  আগামী ১০ই জানুয়ারী  কালিয়াচকে হিন্দু সমাবেশ ডেকেছেআক্রান্ত হিন্দুদের পাশে সংহতি জ্ঞাপনের নামে তারা যে হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে যে বিরোধ বেধেছে সেটাকে আরো তীব্র করতে চাই তা বলা বাহুল্য ।
ঘটনাটি ঘটেছে উত্তর প্রদেশের হিন্দু মহাসভার নেতা কমলেশ তেওয়ারীর একটি প্ররোচনামূলক উক্তিকে কেন্দ্র করে তিনি গত বছর (২০১৫) ১লা ডিসেম্বর ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক মুহাম্মদ সম্পর্কে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে একটি  আপত্তিকর উক্তি করেন । সেই উক্তির প্রতিবাদে এবং কমলেশ তেওয়ারীর ফাঁসীর দাবিতে ‘’এদারা-এ-শারীয়া কালিয়াচক’’ এবং ‘‘আনজুমানে আহলে সুন্নাতুল জামাত’’ সেদিন (৩রা জানুয়ারী) সকাল ৯টায় একটি প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ সভার ডাক দিয়েছিলো ।  সেই সভায় মুসলিমদের যোগ দিতে ‘’এদারা-এ-শারীয়া কালিয়াচক’’ একটি হ্যাণ্ডবিলে আহ্বান জানিয়ে লিখেছিলো – “আপনারা সবাই নবীপ্রেমী মুসলিম  ভ্রাতাগণ নিজ নিজ পাড়া-প্রতিবেশী ভাইদের এই বিষয়ে অবগত করে তাদের সঙ্গে নিয়ে উক্ত প্রতিবাদ সভায় যোগদান করবেন বলে আশা রাখি – ইনশআল্লাহ  ।”  হ্যাণ্ডবিলটি ‘’এদারা-এ-শারীয়া কালিয়াচক’’- এর চেয়ারম্যানের পক্ষে দেওয়া হয়েছিলো যাঁর মো. নং হলো ৮১৪৫৮৩১৫২১ ।  প্রসংগতঃ উল্লেখ্য যে কমলেশ তিওয়ারীকে ঐ উক্তি করার পরের দিনই  পুলিশ জামিন অযোগ্য ধারায় গ্রেপ্তার করে এবং তিওয়ারী এখনও জেলে বন্দি রয়েছেন । এখন প্রশ্ন হলো তেওয়ারীর  বিরুদ্ধে  তৎপরতার সাথে পুলিশ  পদক্ষেপ নেওয়া সত্ত্বেও এবং ঘটনার একমাস পর মুসলিম মৌলবাদীরা কেনো কমলেশ তিওয়ারীর বিরুদ্ধে বিক্ষোভের কর্মসূচী নিলো এবং  পুলিশ ও হিন্দুদের উপর হামলা  চালালো ? প্রশ্ন উঠছে  পুলিশের ভূমিকা নিয়েও । স্পর্শকাতর ইস্যুতে ধর্মীয় নেতারা যখন ‘নবী’-র নামে মুসলমানদের সভায় আসার আহ্বান জানিয়েছিলেন তখন পুলিশের অধিকতর  সতর্ক হয়ে অধিক সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা আবশ্যক ছিলো । কিন্তু পুলিশ তা করেনি । সবার মনে প্রশ্ন – কেনো করেনিঃ  এই প্রশগুলির উত্তর নেই । তাই প্রশ্ন উঠছে যে, বিধান সভা ভোটের আগে  দাঙ্গা বাধিয়ে  ভোটারদের মধ্যে ধর্মীয় মেরুকরণ ঘটানোর জন্যে পরিকল্পনা করে এটা সংঘটিত করা হয়নি তো ?
একটা জিনিষ বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয় । এতো বড়ো একটা সাম্প্রদায়িক হাঙ্গামার ঘটনার পরও শাসকদল নীরব এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি শুধু পুলিশ ও সরকারের উপর দোষ চাপাতে ব্যস্ত । কোনো দল বা নেতাই সংশ্লিষ্ট  মুসলিম ধর্মীয় সংগঠন ও ধর্মীয় নেতাদের বিরুদ্ধে একটি কথা বলছেন না এর অর্থ হলো  সব দলই মুসলিম ভোটের হিসেব-নিকেশ  কষছে, কেউই দেশ ও  মানুষের  কথা ভাবছে না ।   একই অবস্থা বুদ্ধিজীবী, বিদ্বজন, লেখক, শিল্পী ও কলাকুশলীদেরওকিছুদিন আগে আমরা দেখেছি  কয়েকজন বিজ্ঞান মনস্ক গুণিব্যক্তি এবং মুসলিমদের উপর  হিন্দুত্ববাদীদের আক্রমণের প্রতিবাদে  তাঁরা সোচ্চারে প্রতিবাদ  জানিয়েছেন এবং অনেকেই  সরকারের কাছে জাতীয় পুরস্কার ফিরিয়ে  দিয়েছেন । উচিৎ কাজই করেছিলেন । আমি তখন তাঁদের সেই ভূমিকাকে প্রবলভাবে সমর্থন জানিয়েছি । কিন্তু আজ যখন মুসলিম মৌলবাদীদের হাতে সংখ্যালঘু হিন্দুরা আক্রান্ত, পুলিশ আক্রান্ত তখন তাঁরা বোবা । সারা বিশ্বে মুসলিম জঙ্গীদের হাতে শিয়া মুসলিম-সহ ইয়াজিদি, ইহুদি, খৃস্টান, বৌদ্ধ প্রভৃতি অমুসলিমরা আক্রান্ত, হাজারে হাজারে হত-নিহত-ক্ষত-বিক্ষত এবং নারী-শিশু সহ লক্ষ লক্ষ মানুষ নির্বাসিত তখনও তাঁদের বিবেক জাগ্রত হতে দেখি না । এতো নগ্ন  দ্বিচারিতা কেনো ?  রাজনীতি এবং জ্ঞান ও বুদ্ধির জগতে এতো আদর্শগত দেউলিয়া অবস্থা অতীতে  কখনও তৈরী হয়েছিলো বলে মনে হয় না ।
এই ঘটনাকে বিজেপি ও সঙ্ঘপরিবার মমতা ব্যানার্জীর মুসলিম তোষণ বলছে । এটা অসত্য অভিযোগ, হিন্দুদের ভোট টানতে তারা এটা বলছে । এটা মমতার মোল্লাতন্ত্র তোষণ যা ডান বাম সবাই করে । কারণ এই ঘটনায় কেবল হাত শক্ত হবে  উলামা ও  মুসলিম মৌলবাদীদের । অপরদিকে সবচেয় বেশী ক্ষতি হবে  সাধারণ শান্তিপ্রিয় মুসলমানদের যারা মুসলিম সমাজের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ ।  আইএস, আল-কায়দা প্রভৃতি জঙ্গি সংগঠনগুলির সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ডের সকল মুসলমানরা দায়ী নয়, তবু  সারা বিশ্বই আজ  তাদের সন্দেহের চোখে দেখছে । ফলে পদে পদে কঠিন সমস্যার মুখে তাদের  পড়তে হচ্ছে, এমনকি ইরাক-সিরিয়ার স্মরণার্থীদের আশ্রয় দিতেও বিভিন্ন দেশ ভয় পাচ্ছে । ভারতে মুসলমানদের ক্ষেত্রেও এই সমস্যা ক্রমশঃ প্রকট হচ্ছে, যেখানে হিন্দুত্ববাদীরা শক্তিশালী সেখানে মুসলিমদের প্রতি হেনস্থা ও আক্রমণের ঘটনা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে ।  কালিয়াচকের এই সাম্প্রদায়িক হাঙ্গামার ঘটনার  বিরুদ্ধে সব আগে তাই মুসলিম সমাজের বুদ্ধিজীবী, লেখক, শিল্পী ও কলাকুশলীদেরই নিন্দা ও  প্রতিবাদ করা উচিত ছিলো । প্রতিবাদ করা উচিত মমতা ব্যানার্জীর মোল্লা-তোষণ নীতির ।  কিন্তু পরিতাপের বিষয় এই যে তা হয় নি । তা তাঁরা কখনই করেন না । তাঁরা হিন্দুত্ববাদীদের  অসহিষ্ণুতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদে মুখর হন অথচ মুসলিম মৌলবাদীদের অসহিষ্ণুতার বেলায় নীরব থাকেন । এটাকে তাঁরা নীতি বানিয়ে ফেলেছেনতাঁদের এই দ্বিচারিতা যে হিন্দুত্ববাদীদের হাতকেই শক্তিশালী করছে সে ব্যাপারে তাঁদের হুঁশ হয় না   
কালিয়াচকের ঘটনায় অনেকের মনেই একটা  প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে - মুসলিম মৌলবাদীদের পুলিশ থানায় হামলা করার দুঃসাহস হলো কী করে ?  এর উত্তর পেতে হলে মুসলিম মৌলবাদীদের প্রতি মমতা ব্যানার্জীর সরকারের পুলিশের  ভূমিকাটি আমাদের  বিবেচনায় রাখতে  হবে । আমারা যা লক্ষ্য করেছি তা হলো -  মুসলিম মৌলবাদীরা বারবার বিভিন্ন ইস্যুতে অগণতান্ত্রিক ও অসাংবিধানিক পথে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদের নামে পুলিশের উপর হামলা করেছে,  সরকারি-বেসরকারি সম্পত্তি ভাঙচুর করেছে, কোথাও কোথাও তারা হিন্দু সমাজের মানুষদের উপরেও আক্রমণ করেছে, তথাপি পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে  আইনি  পদক্ষেপ  করেনি  তিনটি  উদাহরণ দেওয়া যাক যেগুলি শুধু গত বছরেই ঘটেছে ।  এক). মালদা জেলার হরিশচন্দ্রপুর ব্লকের চণ্ডিপুরে একটি ক্লাব একটি মহিলা ফুটবল প্রদর্শনীর আয়োজন করেছিলো । খেলা হওয়ার কথা ছিলো কলকাতা একাদশ ও উত্তরবঙ্গ একাদশের মধ্যে ।  মহিলা ফুটবল শরিয়তবিরোধী বলে মুসলিম ধর্মগুরুরা খেলা বন্ধ করার  ফতোয়া দিয়েছিলো  বিডির  উপর । ফতোয়া দিয়ে বলেছিলেন যে খেলা বন্ধ না করলে আগুন জ্বলবে এবং তারজন্যে দায়ী থাকবে সরকার ও প্রশাসন । তারপরই জেলা প্রশাসন ক্লাবকে খেলাটি বন্ধ করার সরকারি ফতোয়া জারি কর।  দুই).  মাদ্রসার কিছু  ছাত্রকে শিয়ালদহ ষ্টেশনে পুলিশ আটক করেছিলো  পরিচয় পত্র দেখাতে না পারায় । তার প্রতিবাদে মুসলিম মৌলবাদীরা শিয়ালদহে ব্যাপক তাণ্ডব চালায় ।  পুলিশ তাণ্ডবকারীদের বিরুদ্ধে কোনো আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি ।  সেই ঘটনার পরের শুক্রবার পার্ক  সার্কাসে ঐ একই কারণে নামাজ শেষে মুসলিমরা তাণ্ডব চালিয়েছিলো । পুলিশ সেদিনও নীরব ছিলো তিন). গত বছরেই বর্ধমান জেলার সমুদ্রগড়ে মুসলিম দুষ্কৃতিরা সাম্প্রদায়িক হামলা চালিয়েছিলো সেখানকার হিন্দুদের উপর । সে ক্ষেত্রেও পুলিশ দাঙ্গাকারীদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেয় নি ।   মমতা ব্যানার্জীর শাসনে এরূপ আরো ঘটনা ঘটেছে । এরূপ ঘটনা ঘটেছে বাম শাসনেও । এই হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক সংস্কৃতি যেখানে ইসলামের নামে যা খুশী করা যায়, এবং মুসলিম মৌলবাদীদের সাত খুন মাফ । তারজন্যেই মুসলিম মৌলবাদীরা  ভারতের সংবিধানকে পায়ে মাড়াতে পাই না, এবং  আইন নিজের হাতে তুলে নিতে ভয় পাই না । তারজন্যেই ‘কালিয়াচকের ঘটনা ঘটেছে এবং ভবিষ্যতে আরো ঘটবে ।  


পরিশেষ একটি বিশ্বজোড়া বিতর্কের অবতারণা করতে চাই যা খুবই প্রাসঙ্গিক এবং প্রবলভাবেই আলোচিত হওয়ার দাবি রাখে । মুহাম্মদের সম্পর্কে কটুক্তি করায় কালিয়াচকে মুসলিম ধর্মগুরুদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে একদল ধর্মান্ধ মুসলমান যেভাবে হিংসাত্মক পথে প্রতিবাদ জানালো তা নিয়ে বিতর্ক হচ্ছে । একদল বলছে এটা ইসলামের পথ নয় । যারা করলো তারা বলছে তারা যা করেছে তা ইসলামের নির্দেশ মেনেই করেছে । এখন প্রশ্ন হলো কারা সত্যি ও সঠিক কথা বলছে ? এর সঠিক উত্তর পেতে হলে ইসলামের কোরান, ইতিহাসের পাতা এবং হাদিস তথা মুহাম্মদের ব্যক্তিজীবনের কার্যকলাপের উপর দৃষ্টি রাখতে হবে । সেখানে দৃষ্টিপাত করার আগে কমলেশ তিওয়ারি প্রসঙ্গে আর একবার ফিরে যেতে চাই  কারণ তাঁর ঐ আপত্তিজনক উক্তি করার একটি প্রেক্ষাপট আছে যেটা সবার জানা দরকার । তিওয়ারি  মুহাম্মদ সম্পর্কে যে কটুক্তি করেছিলেন তা কিন্তু আকষ্মিক বা অপ্রাসঙ্গিক ছিলো না । তিনি সমাজবাদী পার্টির  মুসলিম নেতা আজম খাঁ-র একটি আপত্তিকর উক্তির  পাল্টা ঐ উক্তি করেছিলেন ।  তিনি  বলেছিলেন যে আরএসএস নেতারা সমকামী (homosexual) তিওয়ারি   তারই পাল্টা বলেছিলেন । অবশ্য তার মানে এই নয় যে তাঁকে দোষ দেওয়া যায় না । তিওয়ারিকে কিন্তু উক্ত কথা বলার জন্যে হিন্দু মহাসভা হাত তালি দিয়ে সমর্থন দেওয়ার পরিবর্তে কড়া তিরস্কার করেছে । হিন্দু মহাসভা কমলেশ তিওয়ারির উক্তির দায় নিতে অস্বীকার করেছে  । এবার আসা যাক মুসলিমদের দু’দলের মধ্যে কারা সত্যি কথা বলছে ।
মক্কা পর্বে মুহাম্মদ নিজে কখনও অসহিষ্ণুতা দেখান নি এবং অসহিষ্ণু কোনো কথা (ওহি/বাণী) বলেন নি । সেই মুহাম্মদ কিন্তু মদিনায় গিয়ে একের পর অসহিষ্ণু বাণী প্রচার করা শুরু করেন যেখানে আল্লাহ ও মুহাম্মদের সমালচকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা, তাদের হত্যা করার আদেশ ছিলো ।  মুহাম্মদ নিজেও তাঁর সমালোচকদের হত্যা করার আদেশ দেন । মক্কা ও মদিনায় কোরায়েশ ও ইহুদি  কবি ও লেখকরা যাঁরা মুহাম্মদের সমালোচনা করে কিংবা তাঁকে ব্যঙ্গ করে লিখতেন তাঁদের হত্যা করার আদেশ দিয়েছিলেন । তাঁর নির্দেশে বেশ কয়েকজন কবি ও গল্পকারকে হত্যা করা হয়েছিলো যাঁদের মধ্যে ইহুদি এক বৃদ্ধা নারী কবি আসমা বিনতে মারওয়ান ও আবু আফাক ছিলেন এবং ছিলেন কোরেশ গল্পকার নাদির বিন হারিস ।  ইসলামের ইতিহাস বলছে  মুহাম্মদের  সমালচনা করার জন্যে কমপক্ষে ৪৩ জন বিধর্মীকে মুহাম্মদের নির্দেশেই হত্যা করা হয়েছিলো । এই ইতিহাস থেকে প্রমাণিত হয় যে,  অসহিষ্ণুতা, প্রতিশোধস্পৃহা ও প্রতিহিংসাপরায়নতা ইসলামেরই সংস্কৃতি । তাই যারা  মুহাম্মদের নামে সামান্য সমালোচনা শুনলে, তাঁর ব্যঙ্গচিত্র আঁকলে হিংসাত্মক ও ধ্বংসাত্মক পথে প্রতিবাদ করে তারা ইসলামি সংস্কৃতির উত্তরাধিকার বহন করছে । মুহাম্মদকে ব্যঙ্গ করার জন্যে বা কিংবা তাঁর বিরুদ্ধে লেখার জন্যে তাঁরই নির্দেশে যাদের  হত্যা করা হয়েছিলো তা জানার জন্যে এই লিংকটায় ক্লিক করুন -    http://wikiislam.net/wiki/List_of_Killings_Ordered_or_Supported_by_Muhammad





বাংলাদেশের গণঅভ্যুত্থানে ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাইনি – পাঁচ

  দ্বিতীয় অধ্যায় শেখ হাসিনা ও শেখ মুজিবের প্রতি তীব্র গণরোষের নেপথ্যে ২০২৪ এর জুলাই অভ্যুত্থানের সফল পরিসমাপ্তি ঘটে ৩৬ দিন পর (৫ই ...