গত ৩রা
জানুয়ারী রবিবার মুসলিম মৌলবাদীদের
নেতৃত্বে
একদল
ধর্মান্ধ
হিংস্র মুসলমান মালদা জেলার
কালিয়াচক
পুলিশ
থানা
ও
পঞ্চায়েত
সমিতির
কার্যালয়ের
উপর
হিংস্র
হামলা
চালিয়েছে
। হামলাকারীরা পুলিশের উপর চরাও হয়ে তাদের ব্যাপক মারধোর
করে এবং পুলিশ ও বি.এস.এফের গাড়ি,
বাস-ট্রাক সহ ত্রিশটি গাড়ি আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দেয় । প্রাণ বাঁচাতে
পুলিশ থানা ছেড়ে পালিয়ে যায় । সশস্ত্র
দুষ্কৃতিদের আক্রমণে পুলিশ কর্মী-সহ ত্রিশ জন মানুষ আহত হয় । থানা ও বিডিও
অফিস ছাড়াও বেছে বেছে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষদের কতকগুলি দোকান ও বাড়িতেও অগ্নি
সংযোগ করে দুষ্কৃতিরা । দুষ্কৃতিরা হামলা চালায় কয়েকটি মন্দিরের উপরেও ।
হামলাকারীদের আক্রমণের লক্ষ্য প্রধানতঃ পুলিশ ও হিন্দুরা ।
এই ঘটনায় সরকারি ও বেসরকারি সম্পত্তির যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা হয়তো কোনোভাবে
একদিন পূরণ হয়ে যাবে । কিন্তু সামাজিক ও সাংস্কৃতিক
পরিবেশের যে ক্ষতি হলো তা কতদিনে পুরণ হবে
তা বলা মুশকিল । এই ঘটনার সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়তে পারে রাজ্যের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক পরিবেশে
। ধর্মান্ধ মুসলিম দুষ্কৃতিরা সংখ্যায় হয়তো কয়েক শ’ ছিলো, কিন্তু তাদের জন্যে কালিয়াচক
ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চল সমূহের হিন্দুদের মনে
সমস্ত মুসলিমদের সম্পর্কে তৈরী হয়ে গেলো গভীর অবিশ্বাস, ঘৃণা ও বৈরীতার মনোভাব । ফলে সেই বিস্তীর্ণ অঞ্চলে হিন্দু-মুসলিমদের মধ্যে যে সম্প্রীতি, সদ্ভাব, মিত্রতা ও ভ্রাতৃত্বের পরিবেশ ছিলো তা অনেকটাই নষ্ট হবে যা পুনরুদ্ধার করা
মোটেই সহজ কাজ হবে না
। হিন্দু ও মুসলিমদের মধ্যে সম্প্রীতি ও সদ্ভাবের পরিবেশ পুনরুদ্ধার করা যে বেশ
কঠিন হবে তা ক্রমশঃ স্পষ্ট হয়ে উঠছে সাম্প্রদায়িক দল ও সংগঠনগুলির তৎপরতা দেখে । ইতিমধ্যেই পরিস্থিতির ফায়দা তুলতে মাঠে নেমে
পড়েছে বিজেপি এবং ‘হিন্দু সংহতি’ নামের
একটি হিন্দু মৌলবাদী সংগঠন । বিজেপির রাজ্য নেতৃত্বের একটি দল
ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় গতকালই (০৬.০১.১৬) ঢুকতে চেয়েছিলো , কিন্তু পুলিশ তাদের অনুমতি দেয় নি। না দিয়ে
ভালোই করেছে । বিজেপি কোন্ উদ্দেশ্যে ক্ষতিগ্রস্ত ও আতঙ্কিত
মানুষদের পাশে গিয়ে নিশ্চয় সম্প্রীতির গান
গাইতো না । অপরদিকে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও ঘটনাটিকে জাতীয়
ইস্যু করতে তৎপর হয়ে উঠেছে । আব্বাস নাকভি ইতিমধ্যেই এই ঘটনার জন্যে রাজ্য সরকারের
বিরুদ্ধে মুসলিম তোষণের অভিযোগ উত্থাপন করেছেন। এভাবেই তাঁরা হিন্দু ও
মুসলমানদের মধ্যে ধর্মীয় মেরুকরণ করার লক্ষ্যে জোর তৎপরতা শুরু করেছেন । বিজেপিকে সহায়তা দিতে ‘হিন্দু সংহতি’ আগামী ১০ই জানুয়ারী কালিয়াচকে হিন্দু সমাবেশ ডেকেছে। আক্রান্ত হিন্দুদের পাশে সংহতি জ্ঞাপনের নামে তারা যে হিন্দু ও মুসলমানদের
মধ্যে যে বিরোধ বেধেছে সেটাকে আরো তীব্র করতে চাই তা বলা বাহুল্য ।
ঘটনাটি ঘটেছে উত্তর প্রদেশের হিন্দু মহাসভার নেতা কমলেশ তেওয়ারীর একটি প্ররোচনামূলক
উক্তিকে কেন্দ্র করে । তিনি গত বছর (২০১৫) ১লা ডিসেম্বর ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক মুহাম্মদ
সম্পর্কে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে একটি আপত্তিকর উক্তি করেন । সেই উক্তির প্রতিবাদে এবং কমলেশ তেওয়ারীর ফাঁসীর দাবিতে ‘’এদারা-এ-শারীয়া কালিয়াচক’’ এবং ‘‘আনজুমানে আহলে সুন্নাতুল জামাত’’ সেদিন (৩রা জানুয়ারী) সকাল ৯টায় একটি প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ সভার ডাক দিয়েছিলো । সেই সভায়
মুসলিমদের যোগ দিতে ‘’এদারা-এ-শারীয়া কালিয়াচক’’ একটি হ্যাণ্ডবিলে আহ্বান জানিয়ে লিখেছিলো – “আপনারা
সবাই নবীপ্রেমী মুসলিম ভ্রাতাগণ নিজ নিজ পাড়া-প্রতিবেশী
ভাইদের এই বিষয়ে অবগত করে তাদের সঙ্গে নিয়ে উক্ত প্রতিবাদ সভায় যোগদান করবেন বলে
আশা রাখি – ইনশআল্লাহ ।” হ্যাণ্ডবিলটি ‘’এদারা-এ-শারীয়া কালিয়াচক’’- এর
চেয়ারম্যানের পক্ষে দেওয়া হয়েছিলো যাঁর মো. নং হলো ৮১৪৫৮৩১৫২১ । প্রসংগতঃ উল্লেখ্য যে কমলেশ তিওয়ারীকে ঐ উক্তি করার পরের দিনই পুলিশ জামিন অযোগ্য ধারায় গ্রেপ্তার করে এবং
তিওয়ারী এখনও জেলে বন্দি রয়েছেন । এখন প্রশ্ন হলো তেওয়ারীর বিরুদ্ধে
তৎপরতার সাথে পুলিশ পদক্ষেপ নেওয়া
সত্ত্বেও এবং ঘটনার একমাস পর মুসলিম মৌলবাদীরা কেনো কমলেশ তিওয়ারীর বিরুদ্ধে
বিক্ষোভের কর্মসূচী নিলো এবং পুলিশ ও
হিন্দুদের উপর হামলা চালালো ? প্রশ্ন উঠছে
পুলিশের ভূমিকা নিয়েও । স্পর্শকাতর
ইস্যুতে ধর্মীয় নেতারা যখন ‘নবী’-র নামে মুসলমানদের সভায় আসার আহ্বান জানিয়েছিলেন
তখন পুলিশের অধিকতর সতর্ক হয়ে অধিক সংখ্যক
পুলিশ মোতায়েন করা আবশ্যক ছিলো । কিন্তু পুলিশ তা করেনি । সবার মনে প্রশ্ন – কেনো
করেনিঃ এই প্রশগুলির উত্তর নেই । তাই
প্রশ্ন উঠছে যে, বিধান সভা ভোটের আগে দাঙ্গা বাধিয়ে
ভোটারদের মধ্যে ধর্মীয় মেরুকরণ ঘটানোর জন্যে পরিকল্পনা করে এটা সংঘটিত করা
হয়নি তো ?
একটা জিনিষ বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয় । এতো বড়ো একটা
সাম্প্রদায়িক হাঙ্গামার ঘটনার পরও শাসকদল নীরব এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি শুধু
পুলিশ ও সরকারের উপর দোষ চাপাতে ব্যস্ত । কোনো দল বা নেতাই সংশ্লিষ্ট মুসলিম ধর্মীয় সংগঠন ও ধর্মীয় নেতাদের বিরুদ্ধে
একটি কথা বলছেন না । এর অর্থ হলো সব দলই মুসলিম ভোটের হিসেব-নিকেশ কষছে, কেউই দেশ ও মানুষের কথা ভাবছে না । একই
অবস্থা বুদ্ধিজীবী, বিদ্বজন, লেখক, শিল্পী ও কলাকুশলীদেরও । কিছুদিন আগে আমরা দেখেছি কয়েকজন বিজ্ঞান মনস্ক গুণিব্যক্তি এবং মুসলিমদের উপর হিন্দুত্ববাদীদের আক্রমণের প্রতিবাদে তাঁরা সোচ্চারে প্রতিবাদ জানিয়েছেন এবং অনেকেই সরকারের কাছে জাতীয় পুরস্কার ফিরিয়ে দিয়েছেন । উচিৎ কাজই করেছিলেন । আমি তখন তাঁদের
সেই ভূমিকাকে প্রবলভাবে সমর্থন জানিয়েছি । কিন্তু আজ যখন মুসলিম মৌলবাদীদের হাতে
সংখ্যালঘু হিন্দুরা আক্রান্ত, পুলিশ আক্রান্ত তখন তাঁরা বোবা । সারা বিশ্বে মুসলিম
জঙ্গীদের হাতে শিয়া মুসলিম-সহ ইয়াজিদি, ইহুদি, খৃস্টান, বৌদ্ধ প্রভৃতি অমুসলিমরা
আক্রান্ত, হাজারে হাজারে হত-নিহত-ক্ষত-বিক্ষত এবং নারী-শিশু সহ লক্ষ লক্ষ মানুষ
নির্বাসিত তখনও তাঁদের বিবেক জাগ্রত হতে দেখি না । এতো নগ্ন দ্বিচারিতা কেনো ? রাজনীতি এবং জ্ঞান ও বুদ্ধির জগতে এতো আদর্শগত
দেউলিয়া অবস্থা অতীতে কখনও তৈরী হয়েছিলো
বলে মনে হয় না ।
এই ঘটনাকে বিজেপি ও সঙ্ঘপরিবার মমতা ব্যানার্জীর মুসলিম তোষণ
বলছে । এটা অসত্য অভিযোগ, হিন্দুদের ভোট টানতে তারা এটা বলছে । এটা মমতার মোল্লাতন্ত্র তোষণ যা ডান বাম সবাই করে ।
কারণ এই ঘটনায় কেবল হাত শক্ত হবে উলামা
ও মুসলিম মৌলবাদীদের । অপরদিকে সবচেয় বেশী
ক্ষতি হবে সাধারণ শান্তিপ্রিয় মুসলমানদের
যারা মুসলিম সমাজের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ ।
আইএস, আল-কায়দা প্রভৃতি জঙ্গি সংগঠনগুলির সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ডের সকল
মুসলমানরা দায়ী নয়, তবু সারা বিশ্বই
আজ তাদের সন্দেহের চোখে দেখছে । ফলে পদে
পদে কঠিন সমস্যার মুখে তাদের পড়তে হচ্ছে,
এমনকি ইরাক-সিরিয়ার স্মরণার্থীদের আশ্রয় দিতেও বিভিন্ন দেশ ভয় পাচ্ছে । ভারতে
মুসলমানদের ক্ষেত্রেও এই সমস্যা ক্রমশঃ প্রকট হচ্ছে, যেখানে হিন্দুত্ববাদীরা
শক্তিশালী সেখানে মুসলিমদের প্রতি হেনস্থা ও আক্রমণের ঘটনা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে
। কালিয়াচকের এই সাম্প্রদায়িক হাঙ্গামার
ঘটনার বিরুদ্ধে সব আগে তাই মুসলিম সমাজের
বুদ্ধিজীবী, লেখক, শিল্পী ও কলাকুশলীদেরই নিন্দা ও প্রতিবাদ করা উচিত ছিলো । প্রতিবাদ করা উচিত
মমতা ব্যানার্জীর মোল্লা-তোষণ নীতির । কিন্তু পরিতাপের বিষয় এই যে তা হয় নি । তা তাঁরা
কখনই করেন না । তাঁরা হিন্দুত্ববাদীদের অসহিষ্ণুতার
বিরুদ্ধে প্রতিবাদে মুখর হন অথচ মুসলিম মৌলবাদীদের অসহিষ্ণুতার বেলায় নীরব থাকেন । এটাকে তাঁরা নীতি বানিয়ে
ফেলেছেন । তাঁদের এই দ্বিচারিতা যে
হিন্দুত্ববাদীদের হাতকেই শক্তিশালী করছে সে ব্যাপারে তাঁদের হুঁশ হয় না ।
কালিয়াচকের ঘটনায় অনেকের মনেই
একটা প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে - মুসলিম
মৌলবাদীদের পুলিশ থানায় হামলা করার দুঃসাহস হলো কী করে ? এর উত্তর পেতে হলে মুসলিম মৌলবাদীদের প্রতি মমতা
ব্যানার্জীর সরকারের পুলিশের ভূমিকাটি
আমাদের বিবেচনায় রাখতে হবে । আমারা যা লক্ষ্য করেছি তা হলো - মুসলিম মৌলবাদীরা বারবার বিভিন্ন ইস্যুতে
অগণতান্ত্রিক ও অসাংবিধানিক পথে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদের নামে পুলিশের উপর হামলা
করেছে, সরকারি-বেসরকারি সম্পত্তি ভাঙচুর
করেছে, কোথাও কোথাও তারা হিন্দু সমাজের মানুষদের উপরেও আক্রমণ করেছে, তথাপি পুলিশ
তাদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ করেনি । তিনটি উদাহরণ দেওয়া যাক যেগুলি শুধু গত বছরেই ঘটেছে । এক). মালদা জেলার হরিশচন্দ্রপুর ব্লকের চণ্ডিপুরে
একটি ক্লাব একটি মহিলা ফুটবল প্রদর্শনীর আয়োজন করেছিলো । খেলা হওয়ার কথা ছিলো
কলকাতা একাদশ ও উত্তরবঙ্গ একাদশের মধ্যে । মহিলা ফুটবল শরিয়তবিরোধী বলে মুসলিম ধর্মগুরুরা
খেলা বন্ধ করার ফতোয়া দিয়েছিলো বিডির উপর । ফতোয়া দিয়ে বলেছিলেন যে খেলা বন্ধ না করলে
আগুন জ্বলবে এবং তারজন্যে দায়ী থাকবে সরকার ও প্রশাসন । তারপরই জেলা প্রশাসন
ক্লাবকে খেলাটি বন্ধ করার সরকারি ফতোয়া জারি কর। দুই). মাদ্রসার
কিছু ছাত্রকে শিয়ালদহ ষ্টেশনে পুলিশ আটক
করেছিলো পরিচয় পত্র দেখাতে না পারায় । তার
প্রতিবাদে মুসলিম মৌলবাদীরা শিয়ালদহে ব্যাপক তাণ্ডব চালায় । পুলিশ তাণ্ডবকারীদের বিরুদ্ধে কোনো আইনি পদক্ষেপ
গ্রহণ করেনি । সেই ঘটনার পরের শুক্রবার
পার্ক সার্কাসে ঐ একই কারণে নামাজ শেষে
মুসলিমরা তাণ্ডব চালিয়েছিলো । পুলিশ সেদিনও নীরব ছিলো । তিন). গত বছরেই বর্ধমান জেলার সমুদ্রগড়ে মুসলিম
দুষ্কৃতিরা সাম্প্রদায়িক হামলা চালিয়েছিলো সেখানকার হিন্দুদের উপর । সে ক্ষেত্রেও
পুলিশ দাঙ্গাকারীদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেয় নি । মমতা
ব্যানার্জীর শাসনে এরূপ আরো ঘটনা ঘটেছে । এরূপ ঘটনা ঘটেছে বাম শাসনেও । এই হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের
রাজনৈতিক সংস্কৃতি যেখানে ইসলামের নামে যা খুশী করা যায়, এবং মুসলিম মৌলবাদীদের
সাত খুন মাফ । তারজন্যেই মুসলিম মৌলবাদীরা ভারতের সংবিধানকে পায়ে মাড়াতে পাই না, এবং আইন নিজের হাতে তুলে নিতে ভয় পাই না । তারজন্যেই
‘কালিয়াচকের ঘটনা ঘটেছে এবং ভবিষ্যতে আরো ঘটবে ।
পরিশেষ একটি বিশ্বজোড়া বিতর্কের অবতারণা করতে চাই যা খুবই প্রাসঙ্গিক এবং
প্রবলভাবেই আলোচিত হওয়ার দাবি রাখে । মুহাম্মদের সম্পর্কে কটুক্তি করায় কালিয়াচকে
মুসলিম ধর্মগুরুদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে একদল ধর্মান্ধ মুসলমান যেভাবে হিংসাত্মক পথে
প্রতিবাদ জানালো তা নিয়ে বিতর্ক হচ্ছে । একদল বলছে এটা ইসলামের পথ নয় । যারা করলো
তারা বলছে তারা যা করেছে তা ইসলামের নির্দেশ মেনেই করেছে । এখন প্রশ্ন হলো কারা
সত্যি ও সঠিক কথা বলছে ? এর সঠিক উত্তর পেতে হলে ইসলামের কোরান, ইতিহাসের পাতা এবং
হাদিস তথা মুহাম্মদের ব্যক্তিজীবনের কার্যকলাপের উপর দৃষ্টি রাখতে হবে । সেখানে
দৃষ্টিপাত করার আগে কমলেশ তিওয়ারি প্রসঙ্গে আর একবার ফিরে যেতে চাই । কারণ তাঁর ঐ আপত্তিজনক উক্তি করার একটি প্রেক্ষাপট আছে যেটা
সবার জানা দরকার । তিওয়ারি মুহাম্মদ
সম্পর্কে যে কটুক্তি করেছিলেন তা কিন্তু আকষ্মিক বা অপ্রাসঙ্গিক ছিলো না । তিনি সমাজবাদী পার্টির মুসলিম নেতা আজম খাঁ-র একটি আপত্তিকর উক্তির পাল্টা ঐ উক্তি করেছিলেন । তিনি বলেছিলেন যে আরএসএস নেতারা সমকামী (homosexual)
। তিওয়ারি তারই পাল্টা বলেছিলেন ।
অবশ্য তার মানে এই নয় যে তাঁকে দোষ দেওয়া যায় না । তিওয়ারিকে
কিন্তু উক্ত কথা বলার জন্যে হিন্দু মহাসভা হাত তালি দিয়ে সমর্থন দেওয়ার পরিবর্তে
কড়া তিরস্কার করেছে । হিন্দু মহাসভা কমলেশ তিওয়ারির উক্তির দায় নিতে অস্বীকার
করেছে । এবার আসা যাক মুসলিমদের দু’দলের
মধ্যে কারা সত্যি কথা বলছে ।
মক্কা পর্বে মুহাম্মদ নিজে কখনও অসহিষ্ণুতা দেখান নি এবং অসহিষ্ণু কোনো কথা
(ওহি/বাণী) বলেন নি । সেই মুহাম্মদ কিন্তু মদিনায় গিয়ে একের পর অসহিষ্ণু বাণী
প্রচার করা শুরু করেন যেখানে আল্লাহ ও মুহাম্মদের সমালচকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা,
তাদের হত্যা করার আদেশ ছিলো । মুহাম্মদ
নিজেও তাঁর সমালোচকদের হত্যা করার আদেশ দেন । মক্কা ও মদিনায় কোরায়েশ ও ইহুদি কবি ও লেখকরা যাঁরা মুহাম্মদের সমালোচনা করে
কিংবা তাঁকে ব্যঙ্গ করে লিখতেন তাঁদের হত্যা করার আদেশ দিয়েছিলেন । তাঁর নির্দেশে
বেশ কয়েকজন কবি ও গল্পকারকে হত্যা করা হয়েছিলো যাঁদের মধ্যে ইহুদি এক বৃদ্ধা নারী
কবি আসমা বিনতে মারওয়ান ও আবু আফাক ছিলেন এবং ছিলেন কোরেশ গল্পকার নাদির বিন হারিস
। ইসলামের ইতিহাস বলছে মুহাম্মদের
সমালচনা করার জন্যে কমপক্ষে ৪৩ জন বিধর্মীকে মুহাম্মদের নির্দেশেই হত্যা
করা হয়েছিলো । এই ইতিহাস থেকে প্রমাণিত হয় যে,
অসহিষ্ণুতা, প্রতিশোধস্পৃহা ও প্রতিহিংসাপরায়নতা ইসলামেরই সংস্কৃতি । তাই
যারা মুহাম্মদের নামে সামান্য সমালোচনা
শুনলে, তাঁর ব্যঙ্গচিত্র আঁকলে হিংসাত্মক ও ধ্বংসাত্মক পথে প্রতিবাদ করে তারা
ইসলামি সংস্কৃতির উত্তরাধিকার বহন করছে । মুহাম্মদকে ব্যঙ্গ করার জন্যে বা কিংবা
তাঁর বিরুদ্ধে লেখার জন্যে তাঁরই নির্দেশে যাদের
হত্যা করা হয়েছিলো তা জানার জন্যে এই লিংকটায় ক্লিক করুন - http://wikiislam.net/wiki/List_of_Killings_Ordered_or_Supported_by_Muhammad