Wednesday, November 17, 2021

নবীর দৃষ্টিকটু পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ

 

আখেরী নবী ছিলে প্রচণ্ড বিতর্কি পুরুষ আজও তিনি সমান বিতর্কিত। তিনি যে সব জন্যে বিতর্কিত চর্চিত তার মধ্যে অন্যতম একটি হলো তিনি ব্যক্তিবিশেষ, জনগোষ্ঠী এবং বৃহত্তর মানবসমাজকে নানা সময় নানা উপাধি তকমা দিয়ে গেছেন উপাধিগুলো ছিলো তাঁর দিক থেকে দেওয়া পুরষ্কার যারা তাঁকে বিশ্বাস করতেন, তাঁর আনুগত্য স্বীকার করতেন এবং বিনা প্রশ্নে তাঁর নির্দেশ পালন করতেন তাদের তিনি অকাতরে বিলি করে গেছেন নানা রকম উপাধি উপাধিগুলো ছিলো প্রশংসামূলক যারা তাকে বিশ্বাস করত না, তাঁকে নবী বলে স্বীকার করতো না, তাঁর কাজকর্মের সমালোচনা বিরোধিতা করতো তাদের মন ভরে দিতেন নানা রকম তকমা যাতে থাকতো নিন্দা, অশ্রাব্য কুৎসা, বিদ্বেষ, ঘৃণা, অভিশাপ ইত্যাদি  

সাহাবী আত্মীয়-স্বজনদের প্রতি নবীর পক্ষপাতিত্ব

 

আখেরী নবী নানান ধরণের উপাধি যা বিলিয়েছেন তা শুধু তাঁর সাহাবী এবং আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে আমরা প্রথমে লক্ষ্য রাখবো তিনি দুহাত খুলে কাদের মধ্যে কী কী উপাধি বিতরণ করে গেছেন যারা তাঁর কাছ থেকে নানান ধরণের উপাধি বা পুরষ্কার পেয়েছেন তাদের মধ্যে কয়েকজন বিশেষ উল্লেখযোগ্যরা ছিলেন ১ম খলিফা আবু বকর, ২য় খলিফা ওমর, ৪র্থ খলিফা আলি, খালিদ, নবীর কনিষ্ঠ কন্যা বিবি ফতেমা, নবীর দুই নাতি হাসান হোসেন প্রমুখ  

১ম খলিফা আবু বকরঃ আবু বকরের পুরো নাম আবু বকর বিন আবি কুহাফা তিনি ছিলেন প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষদের মধ্যে প্রথম ব্যক্তি যিনি আখেরি নবীর ধর্মে দীক্ষিত হয়েছিলেন তিনি ছিলেন আখেরী নবীর শ্বশুরও তাঁকে আখেরী নবী সিদ্দিকী উপাধি দিয়েছিলেনসিদ্দিকীমানে বিশ্বাসী আখেরী নবীর মিরাজ সফরের দাবিকে কোরেশগণ ভণ্ডামি বলে প্রত্যাখান করেছিলো এমনকি নবীর অনুগামী বিশ্বাসী মুসলিমরাও মিরাজ সফর নিয়ে সন্দিহান ছিলো তখন নবীর সেই প্রতিকূল পরিস্থিতিতে তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি বলেছিলেন, আমি আল্লাহ্ নামে শপথ নিয়ে বলছি নবীর মিরাজ সফর একশভাগ  সত্যি সন্দেহাতীত তারপর একে একে অন্যান্য মুসলিমরা মিরাজ সফরকে সত্যি বলে সাক্ষ্য দিয়েছিলো এই ঘটনার পরেই নবী আবু বকরকেসিদ্দিকউপাধিতে ভূষিত করেন তখন থেকে তাঁর নাম হয় আবু বকর সিদ্দিকী

২য় খলিফা ওমরঃ ওমরের পুরো নাম ওমর বিন খাত্তাব তিনি ছিলেন ভীষণ গোঁয়ার, অসম সাহসী প্রভাবশালী একজন ব্যক্তিত্ব তিনিও ছিলেন নবীর শ্বশুর তিনি মুসলিম হওয়ার আগে পর্যন্ত নবী তাঁর অনুগামীরা প্রকাশ্যে নামাজ পড়তো না তিনি মুসলিম হওয়ার পরেই নবীকে প্রকাশ্যে নামাজ পড়ার জন্যে সাহস দেন এবং তখন থেকেই মুসলিমরা প্রকাশ্যে নামাজ পড়া শুরু করে ওমরের ইসলাম ধর্মে অন্তর্ভুক্তি এভাবে ইসলামের অগ্রগতি উত্তরণের ইতিহাসের ক্ষেত্রে একটি নতুন যুগ বা অধ্যায়ের সূচনা করে আখেরী নবী সেজন্যে তাঁকে ফারুক; উপাধিতে ভূষিত করেনফারুকশব্দের অর্থ হলো সত্য মিথ্যার পার্থক্যকারী  

৪র্থ খলিফা আলিঃ আলির পুরো নাম আলি বিন আবু তালিব তিনি ছিলেন নবীর আপন চাচাতো ভাই পরে হয়েছিলেন নবীর জামাতা তিনি নবীর কাছেই প্রতিপালিত হন নবী যখন তাঁর নবুয়ত প্রাপ্তির দাবি করেন তখন আলি ছিলেন একজন অপ্রাপ্ত বয়স্ক বালক সেই অপ্রাপ্ত বয়সেই তিনি ইসলামে দীক্ষা নিয়ে মুসলমান হন সেই সুবাদে তিনিই হলেন প্রথম মুসলমান অপ্রাপ্ত বয়স্কদের মধ্যে তাঁকে আখেরী নবী ব্যতিক্রম হিসাবে দুদুটি উপাধিতে ভূষিত করেছিলেন একটা উপাধি হলো আসাদ আল্লাহ্‌’ তথা শের--খোদা (আল্লাহ্ সিংহ) এবং আর একটি হলো জ্ঞানের দরজা আখেরী নবী বলেছিলেন, আমি জ্ঞানের নগরী হলে আলি তার দরজা অর্থাৎ এভাবেই আখেরী নবী আলিকেজ্ঞানের দরজাউপাধি দেন শিয়াদের মতে আলিকে উক্ত মহামূল্যবান উপাধির চেয়েও অনেক বড়ো পুরষ্কারে ভূষিত করে গেছেন আখেরী নবী নবী বলেছেন, আলিই হচ্ছে ভুবনে আমার পরে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ

খালিদঃ খালিদের পুরো নাম খালিদ বিন ওয়ালিদ তিনিও ছিলেন একজন সাহাবী ইসলামি রণকৌশলের দিক থেকে তিনি ছিলেন একজন বিশেষজ্ঞ সেনাপতি হিসাবেও ছিলেন অত্যন্ত দক্ষ পারদর্শী অনেক কঠিন জিহাদে তিনি ইসলামকে অবিশ্বাস্য জয় এনে দিয়ে ইসলামের ইতিহাসে প্রাতঃ-স্মরণীয় হয়ে আছেন তাঁর এই স্মরণীয় কৃতিত্বের জন্যে তিনিও নবীর কাছে মহামূল্যবান উপাধিতে ভূষিত হয়েছিলেন সেটা হলো সাইফুল্লাহ তথা আল্লাহ্ তরবারি

বিবি ফাতেমাঃ ফাতেমা ছিলেন নবীর কনিষ্ঠ কন্যা তিনি ছিলেন নবীর প্রিয়তম কন্যাও বটে প্রত্যেক পিতামাতার কাছে, বিশেষ করে আল্লাহ্ নবীর কাছে, সকল সন্তানই সমান প্রিয় হওয়া বাঞ্ছনীয় একজন নবী তাঁর কোনো একজন সন্তানকে যদি অন্য সন্তানদের চেয়ে বেশি ভালোবাসেন তবে সেটা তাঁর নবীত্বের সঙ্গে বেমানান আখেরী নবী কিন্তু বিষয়ে ছিলেন বেপরোয়া তিনি অকপটেই ফতেমাকে দিয়ে গেছেন তাঁর প্রিয়তম কন্যার মহা মর্যাদা এটাই শেষ কথা নয় আখেরী নবী ফাতেমাকে এক অতুলনীয় দুর্লভ মর্যাদা সম্মানের আসনে অধিষ্ঠিত করে যান তাঁর মরণোত্তর জীবনে নবী বলেছেন ফাতেমা হবেন বেহেস্তের নারীদের সর্দার    

আল হাসান আল হোসেনঃ আল হাসান আল হোসেন ছিলেন বিবি ফাতেমার গর্ভজাত দুই সহদোর ভাই ইসলামের ইতিহাসে এই দুই ভাই আখেরী নবীর নয়নের মণি বলে খ্যাত আল হোসেন কারবালা যুদ্ধে ইসলামের ৬ষ্ঠ খলিফা ইয়াজিদের সৈন্যবাহিনীর হাতে নৃশংসভাবে খুন হয়েছিলেন শান্তিপ্রিয় ভোগবিলাসী আল হাসান একান্ত ব্যক্তিস্বার্থে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত খেলাফত ৫ম খলিফা মুয়াবিয়াকে হস্তান্তর করেছিলেন এই দুই ভাইকেও তাদের নানা আখেরী নবী এক অতুলনীয় মর্যাদার আসনে বসিয়ে দিয়ে গেছেন নবী বলেছেন, তাঁরা দুই ভাই হবেন বেহেস্তের যুবদলের সর্দার 

 অমুসলিমদের প্রতি বৈরিতা

আখেরী নবী অমুসলিমদের সারা জীবন নানা কটু বিশেষণে বিদ্ধ করেছেন তাদের অকারণ দোষারোপও করেছেন তাদের ভালো কাজের মূল্য এক কানাকড়িও তাঁর কাছে ছিলো না তাদের সকলকেই জাহান্নামের আগুনে পুড়ে কঠোর থেকে কঠোরতম শাস্তি ভোগ করার ব্যবস্থা করে গেছেন অবশ্য সবকিছুই করেছেন আল্লাহর নামে 

অমুসলিমদের মধ্যে মক্কায় অনেকেই ছিলেন তাঁর পরম হিতাকাঙ্ক্ষী হিতৈষী যারা মক্কায় নিরাপদে ধর্ম প্রচার করতে তাঁকে নানাভাবে সাহায্য করেছেন নবী তাদের প্রতিও বিরূপ মনোভাব লালন করতেন তাদের দোষ ছিল একটাই, তারা স্বধর্ম ত্যাগ করে মুসলমান হয় নি এক্ষেত্রে প্রকৃষ্ট উদাহরণ হলো তাঁর আপন চাচা আবু তালিব যিনি অনাথ নবীকে পুত্র স্নেহে যেমন প্রতিপালনই করেছেন তেমনি ইসলামের প্রচারেও তাঁকে সকল আপদবিপদ থেকে সযত্নে আগলেও রেখেছেন সেই চাচাকেও জাহান্নামের আগুনে অনন্তকাল পুড়তে হবে বলে নিদান দিয়ে গেছেন এই হলো তাঁর অকৃতজ্ঞতার নমুনা নবী তাঁর মায়ের প্রতিও অনুরূপ বিশ্রী আচরণ করেছেন মায়ের কবর জিয়ারত (প্রদক্ষিণ) করার সময় মৃত মাকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন যে, মা, তুমি পৌত্তলিক ছিলে বলে জাহান্নামের আগুন থেকে তোমাকে অব্যাহতি দিতে আল্লাহ্ কাছে প্রার্থনা করতে পারলাম না

শিষ্যকূল উম্মতদের প্রতি নবীর আচরণ

আখেরী নবী নিজেকে আল্লাহর সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ নবী বলে দাবি করেছেন নবীদের আগমনের হেতু সম্পর্কে যা শোনা যায় তাতে এটা স্পষ্ট যে তারা আসে সমস্ত মানুষ প্রাণীকূলের জন্যে সুতরাং নবীদের কাছে এটাই সবার প্রত্যাশা থাকবে যে তিনি হবেন একজন সত্যিকারের নিরপেক্ষ মানুষ যিনি থাকবেন স্বজনপ্রীতি, বংশপ্রীতি, গোষ্ঠীপ্রীতি ইত্যাকার যাবতীয় সংকীর্ণ বিচারধারার অনেক ঊর্ধে কিন্তু আখেরী নবীর যে পরিচয় আমরা পেয়েছি তা ভীষণ হতাশাব্যঞ্জক এবং মোটেই নবীসুলভ নয় নবুয়ত প্রাপ্তির সময় তিনি দাবি করেছিলেন যে তিনি সকলের জন্যেই এসেছেন, অর্থাৎ তিনি সবার নবী কিন্তু শেষমেশ তিনি সবার নবী থাকতে পারেন নি, তিনি ধীরে ধীরে হয়ে উঠেছিলেন শুধু মুসলমানদের নবী আর অমুসলমানদের শুনিয়েছেন যে তাঁর কাছে তাদের ভালো কাজের মূল্য এক কানাকড়িও নেই এবং  সবাইকে ভোগ করতে হবে জাহান্নামের কঠোর থেকে কঠোরতম শাস্তি এভাবে প্রথমেই তিনি বিচ্যুত হয়েছেন নিরপেক্ষ ন্যায়বিচার থেকে 

যতদিন গেছে নিরপেক্ষতা ন্যায়বিচার থেকে নবীর বিচ্যুতি তত বেড়েছে সাহাবীদের (যারা প্রথম থেকেই জীবনকে বাজি রেখে তাঁর সহযোদ্ধা ছিলেন) প্রতিও এক নজরে বিচার করার নিরপেক্ষতা প্রদর্শন করার উদারতা দেখাতে পারেন নি তাদের মধ্যে ভেদাভেদ করেছেন নানা দৃষ্টিকোণ থেকে তিনি তাঁর বংশ হাসেমি বংশের সাহাবীদের প্রতি যে দরদ, ভালবাসা অনুকম্পা দেখিয়েছেন তা থেকে বঞ্চিত করেছেন উমাইয়া বংশের সাহাবীদের হাসেমি বংশের সাহাবী আবু বকর, ওমর আলিকে এবং বনু মাখজুম গোত্রের সাহাবী খালিদকে নবীর পক্ষ থেকে নানা সম্মানজনক উপাধিতে ভূষিত করা হলেও উমাইয়া বংশের প্রতিনিধি সাহাবী ওসমান গণিকে তা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছিলো এর কারণ একটাই, তা হলো, উমাইয়া বংশের প্রতি বংশগত বহু যুগের পুঞ্জিভূত রাগ শত্রুতাকে ত্যাগ করার ক্ষেত্রে নবীর চূড়ান্ত ব্যর্থতা  

হাসেমি বংশের সাহাবিদের মধ্যেও নিজ পর ভাগ করেছেন আখেরী নবী তিনি যখন সবে নবুয়ত লাভের দাবি করেন তখন তাঁর চাচাতো ভাই (পরে জামাতা) আলি ছিলেন নিতান্ত বালক ফলত ইসলামের একেবারে গোড়ায় ইসলামের প্রচারে বিস্তারে আলির কোনো অবদানই ছিলেন না সেই পর্বে বিরাট অবদান রেখেছিলেন আবু বকর, ওমর ওসমান গণি অথচ নবী সেই আলিকেই দেন সবচেয়ে বড়ো সম্মাননা (মানবজাতির সর্বকালের দ্বিতীয় সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্বের সম্মান) অথচ গোড়া থেকেই যে দুজন (আবু বকর ওমর) ছিলেন ইসলামের প্রধান স্তম্ভ তাদেরকে নবী দেনসিদ্দিকীফারুকনামক দুটি মামুলি সম্মাননা যা আলিকে দেওয়া সম্মাননার তুলনায় বাচ্চাদের লজেঞ্চুসের ন্যায় অতিশয় তুচ্ছ, আর বেচারা ওসমানকে তো সেটাও দেন নি আলির প্রতি নবীর এই পক্ষপাতিত্ব যুগের রাজনৈতিক নেতাদের স্বজনপোষণ স্বজনপ্রীতির নিকৃষ্ট রাজনীতির সঙ্গেই কেবল তুলনীয়

না, এখানেই শেষ নয় নবী ক্ষমতার অপব্যবহার স্বজনপোষণের ক্ষেত্রে আরও এমন কিছু নজির তৈরি করে গেছেন যেগুলি আরও বেশি নিকৃষ্ট যার মধ্যে একটি নজির হলো নিম্নরূপঃ  

নবী তাঁর আপন কন্যা বিবি ফাতেমা হাতে তুলে দেন বেহেস্তের নারীদের সর্দারের সিংহাসনটি  এক্ষেত্রে তিনি একদিকে বঞ্চিত করেছেন তাঁর অন্য কন্যাদের এবং তাঁর প্রথম পত্নী খাদিজাকে এই ঘটনা প্রমাণ করে যে তিনি তাঁর সকল কন্যাদের প্রতিও সমান স্নেহ ভালবাসা প্রদর্শন করে যেতে পারেন নি না, এটা কোনো ঘটনা নয় যে ফাতেমা ইসলামের প্রচার প্রসারের ক্ষেত্রে বিশেষ কোনো অবদান রেখেছেন যা অন্য কন্যারা রাখতে পারেন নি আর যদি অবদানের প্রসঙ্গ ওঠে তাহলে তো খাদিজার সঙ্গে ফাতেমার তুলনা করাই যায় না তুলনা করলে সেটা হবে খাদিজাকে হেয় অপদস্থ করার শামিল কারণ, ইসলামকে এগিয়ে নিয়ে যেতে নবীকে সহযোগিতা দেওয়ার প্রশ্নে ফাতেমার অবদান কার্যত ছিলো শূন্য, আর খাদিজার যা অবদান ছিলো তা এক কথায় অপরিমেয় প্রথমত, খাদিজাই ছিলেন সেই ব্যক্তি যিনি নবীর ধর্ম ইসলাম তাঁর নবীত্বকে স্বীকৃতি দিয়ে প্রথম মুসলমান হয়েছিলেন দ্বিতীয়ত, খাদিজা একদা দীনদরিদ্র নবীকে কর্মচারী নিযুক্ত করে প্রথমে তাঁকে দয়া করুণা করেছিলেন, তারপর তাঁকে স্বামীত্বে বরণ করে তাঁকে ঈর্ষণীয় সামাজিক মর্যাদা দিয়েছিলেন তৃতীয়ত, তিনি তাঁকে বাণিজ্যিক কাজের বিশাল গুরুদায়িত্ব থেকে মুক্তি দিয়ে নবুয়ত প্রাপ্তির জন্যে মাসের পর মাস ব্যাপী গুহায় বসে ধ্যান করার সুযোগ দিয়েছিলেন চতুর্থত, আর্থিক প্রাচুর্য সামাজিক প্রভাব প্রতিপত্তি দিয়ে একদিকে তিনি নবীকে ইসলামের প্রচার প্রতিষ্ঠায় প্রভূত সাহায্য করেছিলেন এবং অপরদিকে প্রতিপক্ষের দিক থেকে আসা বাধাবিপত্তি থেকে রক্ষা করতে বিশেষ কার্যকরী ভূমিকা নিয়েছিলেন এটা সর্বজন স্বীকৃত যে নবী তাঁর চাচা আবু তালেব এবং পত্নী খাদিজার সক্রিয় সমর্থন ছাড়া নবীর পক্ষে মক্কায় ইসলামের প্রচার করা একদম অসম্ভব ছিলো নিরপেক্ষভাবে বিচার বিবেচনা করলে কোনো সংশয় থাকেন যে খাদিজার সেই সম্মান মর্যাদা পাওয়া উচিত ছিলো যেটা নবী তাঁর কন্যা ফাতেমাকে দেন হ্যাঁ, বেহেস্ত বলে কিছু যদি থেকে থাকে এবং সেখানে নারীদের সর্দারের কোনো পদ বা সিংহাসন থাকে তবে তার একমাত্র উপযুক্ত নারী ছিলেন খাদিজা, অন্য কেউ নয়, ফাতেমা তো নয়ই হায়রে নবীর বিচার! সেই অযোগ্য অনুপযুক্ত ফাতেমাই বেহেস্তে নারীদের নেতৃত্ব করবে এবং তার অধীনে মাথা নত করে থাকতে হবে নবী-পত্নী খাদিজাকেও যিনি ছিলেন ইসলামের প্রথম পর্বে নবীর ডান হাত প্রধান স্তম্ভ এবং ছিলেন তাঁর সময়ের মক্কার সবচেয়ে বিত্তশালী, উচ্চ মর্যাদাশীল প্রখর ব্যক্তিত্বসম্পন্ন নারী  

আরও বেশি নিকৃষ্ট দ্বিতীয় নজিরটি নিম্নরূপঃ   

নবী বেহেস্তে যুবাদের সর্দার নামে একটি পদ বা সিংহাসন সৃস্টি করেন এবং সেখানে বসিয়ে দিয়ে যান তাঁর পরম আদরের দুই নাতি - ইমাম হাসান ইমাম হোসাইন - যারা ছিলেন সেই ফাতেমারই সন্তান এই দুই ভাইয়ের ইসলামের জন্যে এক কানাকড়িও অবদান নেই ফলত বিশেষ কোনো সম্মাননা তো দূরস্থান, সামান্য কোনো সম্মাননাই পাওয়ার যোগ্যতা তাদের ছিলো না তথাপি বেহেস্তের সর্দারের মতন বিরল সম্মানে ভূষিত হয়েছেন কারণ, তারা ছিলেন নবীর নাতি নিরপেক্ষভাবে বিচার করা হলে হাসান হোসাইনের পাওয়া সম্মাননাটা পাওয়ার ক্ষেত্রে জায়েদ ছিলো অনেক বেশি যোগ্য জায়েদ ছিলেন একদা নবীর গোলাম (ক্রীতদাস) তিনিই গোলামদের মধ্যে সবার আগে নবীর ধর্মে দীক্ষিত হয়ে মুসলমান হয়েছিলেন তাঁর সেবায় অতিশয় মুগ্ধ হয়ে নবী তাকে গোলামি থেকে মুক্ত করে দেন তথাপি তিনি নবীকে ছেড়ে তার বাবা-মার কাছে যান নি তার এরূপ ত্যাগ সেবায় মুগ্ধ হয়ে নবী তাকে এক সময় দত্তক নেন জায়েদ নবীর কামনা পূরণের জন্যে তার প্রিয় পত্নীকে (জয়নব) তালাক দেন যাকে নবী পরে বিয়ে করে তাঁর হারেমে তুলে নেন জায়েদ তার জীবনে ইসলামের বহু জিহাদে অংশ নিয়েছিলেন এবং জিহাদের ময়দানেই শত্রুপক্ষের হাতে মৃত্যু বরণ করেন এহেন জায়েদকে বাদ দিয়ে নবী তাঁর সম্পূর্ণ অযোগ্য দুই নাতিকে বেছে নিয়েছিলেন বেহেস্তের যুবদের সর্দার করার জন্যে             

   নবীর পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ এক নজরে

আল্লাহর প্রেরিত দূতের কাছে সবার এটাই প্রত্যাশা যে তিনি আল্লাহর সৃষ্টিকূলের প্রতি দরদি মরমি আচরণ করবেন কিন্তু আখেরি নবী সেই আচরণ করতে যে সম্পূর্ণ তার প্রমাণ পাওয়া গেছে উপরের আলোচনায় সেই ব্যর্থতাগুলো এক নজরে দেখার বা বোঝার জন্যে এভাবে সাজানো যেতে পারে

·         এক) নবী মুসলমানদের প্রতি চরম পক্ষপাতিত্ব প্রদর্শন করেছেন, আর চরম শত্রুতা করেছেন অমুসলমানদের প্রতি

·         দুই) মুসলমানদের মধ্যে তাঁর নিজের বংশের (হাসেমি বংশ) সাহাবিদের প্রতি আচরণ করেছেন নিজের সন্তানের মতন, আর উমাইয়া বংশের সাহাবিদের সঙ্গে আচরণ করেছেন বৈমাত্রেয়সুলভ

·         তিন) নবী তাঁর বংশের (হাসেমি বংশের) সাহাবিদের ন্যায্য প্রাপ্য সম্মান মর্যাদা থেকে বঞ্চিত করে সেগুলি বণ্টন করেছেন তাঁর পরিবারের অযোগ্য সদস্যদের মধ্যে।

·         চার) সারা বিশ্বে নিজেকে নবী হিসাবে প্রতিষ্ঠা করার ক্ষেত্রে নবী তাঁর পত্নীদের মধ্যে যার কাছে সবচেয়ে বেশি ঋণী সেই খাদিজাকে তাঁর প্রাপ্য সম্মান মর্যাদা থেকে বঞ্চিত করে সেটা প্রদান করেছেন তাঁর নিজের কন্যা ফাতেমাকে ইসলামের জন্যে যার অবদান ছিলো শূন্য

·         পাঁচ) নবী তাঁর সকল কন্যার প্রতিও সমান ন্যায় বিচার দিতে পারেন নি

·         ছয়) জায়েদের মতন অনেক যুবক ছিলো যারা ইসলামকে প্রতিষ্ঠিত করতে নিজের জীবনকে উৎসর্গ করে গেছেন তাদের উপেক্ষা বঞ্চিত করে বেহেস্তের অন্যতম সেরা পুরষ্কারে ভূষিত করেছেন তাঁর নিজের দুই নাতিকে

 

 

KARBALA: Truth and Lies

  KARBALA : Truth and Lies           GIASUDDIN                 Translated by SRIJIB BISWAS        ...