Wednesday, March 9, 2022

শিয়া ও সুন্নিদের মধ্যে পারষ্পরিক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ও যুদ্ধের নেপথ্য কারণ

 গতকাল শুক্রবার (৪ঠা মার্চ) পাকিস্তানের পেশোয়ারে শিয়া মুসলমানদের একটি মসজিদে সুন্নি মুসলমানদের প্রতিনিধিত্বকারী ইসলামি সন্ত্রাসবাদী সংগঠন আইএসের একজন মানববোমার হামলায় ৬৫জন মুসলমান (সংখ্যাটা বাড়তে পারে) নিহত হয়েছে, আহত হয়েছে প্রায় ২০০ জন। হামলা সংগঠিত করে আইএস সদর্পে জানিয়েছে,  Blue Mosque, Istanbul, People, Area

·         শুক্রবার, একটি শিয়া মসজিদে সফলভাবে হামলা চালিয়েছে আমাদের এক যোদ্ধা

নৃশংস এই গেরিলা হানার ঘটনাটি নিয়েই এ লেখার অবতারণা। ঘটনাটি আমাকে আহত করেছে ভীষণই, কিন্তু অবাক করে নি একটুও সেটা এজন্য যে, শিয়া ও সুন্নীদের মধ্যে এরূপ বীভৎস সন্ত্রাসী হানা ও পাল্টা হানার ঘটনা প্রায়শই ঘটে থাকে। এই দুটি মুসলিম গোষ্ঠীর মধ্যে রক্তক্ষয়ী সন্ত্রাসী হানা ধারাবাহিকভাবে অবিরাম ঘটে চলেছে যার বিরাম নেই। ভবিষ্যতেও এমন সন্ত্রাসী আক্রমণ যে সংঘটিত হবে তা নিয়ে কারো সংশয় আছে বলে মনে হয় না।   

শিয়া-সুন্নী দ্বন্দ্ব বহু পুরনো ও বৈরিভাবাপণ্ণ একটি দ্বন্দ্ব। এর সূত্রপাত হয় ৬৮০ খৃস্টাব্দে কারবালা যুদ্ধের সময়। প্রসঙ্গত আর একটি কথা উল্লেখ্যনীয় যে, শিয়া ও সুন্নীদের মধ্যেকার দ্বন্দ্ব ও সংঘর্ষ ছাড়াও মুসলমানদের মধ্যে আরও বহু গোষ্ঠীগত দ্বন্দ্ব ও সংঘর্ষ বিদ্যমান। সুন্নী ও শিয়ারা যে সবাই ঐক্যবদ্ধ তা নয়। তাদের মধ্যেও বহু সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে যারা পরষ্পর যুদ্ধ ও সংঘর্ষে লিপ্ত। সুন্নীদের মধ্যে এই সময়ে সমগ্র পৃথিবীতে যে দ্বন্দ্বটি সবচেয়ে বেশি প্রকটিত সেটি হলো আইএস ও তালিবানদের দ্বন্দ্ব। আফগানিস্তানে তালিবানের ক্ষমতা দখলটা আইএস মেনে নিতে পারছে না। তাই আইএস একটার পর গেরিলা সন্ত্রাসী হামলা চালাচ্ছে আফগানিস্তানে। এসব হামলার লক্ষ্য হলো আফগানিস্তান থেক তালিবানি সরকারকে উচ্ছেদ করা। সুন্নি ও শিয়াদের মধ্যেকার অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কথা থাক। এখন ফেরা যাক শিয়া ও সুন্নিদের মধ্যেকার দ্বন্দ্ব ও ধারাবাহিক সংঘর্ষের আলোচনায় যেটা এই লেখার আলোচ্য বিষয়। 

 শিয়া-সুন্নি বিভাজন ও দ্বন্দ্বের সূত্রপাত

ক্ষমতার দ্বন্দ্বে, কে খলিফা হবে তাই নিয়ে, মুসলিম সমাজ সর্বপ্রথম সরাসরি দু’ভাগে ভাগ হয় ৬৮০ খৃস্টাব্দে। ইসলামি সাম্রাজ্যের ৫ম খলিফা মৃত্যুর আগে তাঁর পুত্র ইয়াজিদকে পরবর্তী খলিফা মনোনীত করেন। নবীর কনিষ্ঠ নাতি ইমাম হোসেন এবং তাঁর গুটি কয়েকজন সহযোগী সেটা মানতে পারেন নি। ফলত ইয়াজিদ যখন খলিফা হন তখন তিনি তাঁর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। খলিফাকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্যে তিনি সৈন্যবাহিনী গড়ে তোলার উদ্দেশ্য কতিপয় সঙ্গী নিয়ে তিনি কুফা শহরের পথে রওনা দেন। কিন্তু পথিমধ্যেই কারবালা নামক একটি প্রান্তরে খলিফার সৈন্যবাহিনী তাঁর পথরোধ করে এবং সেখানেই একটা অসম যুদ্ধ সংগঠিত হয় এবং সদলবলে হোসেন মারা যান। যুদ্ধটি ইতিহাসে কারবালা যুদ্ধ নামে খ্যাত। যুদ্ধটি হয় ৬৮০ খ্রিস্টাব্দে।

সেই প্রথম মুসলিম সমাজ সরাসরি দু’ভাগে ভাগ হয়ে পড়ে। একভাগ হোসেনের পক্ষ অবলম্বন করে এবং অপর পক্ষ খলিফা ইয়াজিদের। সেই যে দু’ভাগ বিভাজন হয়েছিলো সেটা যতদিন গেছে ততই দিনে দিনে আরও প্রকট ও তীব্র হয়েছে। আজও সে ধারা অব্যাহত রয়েছে। সেই দু’ভাগের একভাগকে বলা হয় শিয়া এবং অপরভাগকে সুন্নি। যারা হোসেনের পক্ষ অবলম্বন করেছিলো তারা শিয়া এবং ইয়াজিদের পক্ষালম্বীরা পরিচিত হয় সুন্নি হিসাবে।

ইমাম হোসেন ইয়াজিদকে খলিফা হিসেবে স্বীকার করেন নি, কারণ তিনি নিজেই ছিলেন খলিফা পদের দাবিদার। তিনি যেহেতু নবীর নাতি ও বংশধর তাই ধরেই নিয়েছিলেন যে, খলিফা মুয়াবিয়ার মৃত্যুর পর তিনিই হবেন পরবর্তী খলিফা। তিনি মনেপ্রাণে এ কথা বিশ্বাসও করতেন যে, তিনি ইসলামি সাম্রাজ্যের একমাত্র  উত্তরাধিকার। তিনি তাই খলিফা মুয়াবিয়ার মৃত্যুর দিন গুণতেন সর্বদা। কারণ তিনি ধরেই নিয়েছিলেন যে তিনি যেহেতু নবীর নাতি তাই মুয়াবিয়া তাঁকেই পরবর্তী খলিফা মনোনীত করে যাবেন।

ইসলামি সাম্রাজ্যকে সুষ্ঠভাবে পরিচালনা করা এবং আরও সম্প্রসারণ করার জন্যে যে যোগ্যতা ও দক্ষতার আবশ্যক তা হোসেনের মধ্যে একদমই ছিলো না। তাছাড়া তাঁকে খলিফা করলে ইসলামি সাম্রাজ্যের গভর্ণরগণ কেউ মেনে নিতে পারতেন না কারণ, তাঁর আচার ব্যবহারে ইসলামি সাম্রাজ্যের গভর্ণরগণ সকলেই অসন্তুষ্ট ছিলেন। তাই মুয়াবিয়া পরবর্তী খলিফা হিসাবে হোসেনের কথা ভাবতে পারেন নি। মুয়াবিয়া এটাও লক্ষ্য করেছিলেন যে বিশাল ইসলামি সাম্রাজ্যের হাল ধরার জন্যে যারা যোগ্য ব্যক্তই তাদের সকলের মধ্যেই খলিফা হওয়ার বাসনা ও আকাঙ্খা আছে। ফলে কোনো একজনকে নির্বাচন করলে বাকিরা প্রবলভাবে অসন্তুষ্ট যা ইসলামি সাম্রাজ্যের পতন ডেকে নিয়ে আসতে পারে। তাই তিনি তাঁর পুত্র ইয়াজিদকেই পরবর্তী খলিফা মনোনীত করেন।

মুয়াবিয়ার সেই চিন্তাভাবনার সঙ্গে তৎকালীন ইসলাম বিশ্ব সহমত ছিলেন এবং তাই ইয়াজিদকে সবাই খলিফা হিসাবে মনেপ্রাণে স্বীকার করে নিয়েছিলেন। শুধু বাদ সেধেছিলেন হোসেন এবং তাঁর পরিবার ও গুটিকয়েক অনুগামী। সেটা যে নিছকই ক্ষমতার স্বার্থে তা দিনের আলোর মতন স্পষ্ট।  

প্রসঙ্গত একটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কথা বলা দরকার। তা হলো এই যে, কারবালা যুদ্ধের সময় হোসেনের পক্ষে অতি নগণ্য সংখ্যক মানুষের সমর্থন থাকলেও পরবর্তী পরবর্তী কালে সেই বিন্যাসটা সম্পূর্ণ পাল্টে যায়। আজকের মুসলিম বিশ্ব হোসেনের খলিফা হওয়ার দাবিকেই সমর্থন করে এবং মুয়াবিয়ার ইয়াজিদকে খলিফা করে যাওয়াটাকে প্রবলভাবে নিন্দা করে। এটা হওয়ার পেছনে রয়েছে যুক্তি ও আবেগের খেলা। সে সময় মুসলিম সমাজ তৎকালীন পরিস্থিতি বিচার ও পর্যালোচনা করেছিলো যুক্তি দিয়ে বিধায় তারা ইয়াজিদকে খলিফা নির্বাচন করাটা সমর্থন করেছিলো। আর এখন মুসলমানরা কারবালা যুদ্ধের ঘটনাটা বিচার করে তাদের নবী ও তাঁর বংশধরদের প্রতি আবেগ দিয়ে যার মধ্যে যুক্তি, পরিপ্রেক্ষিত ও বাস্তবার লেশ নেই 

ত্রূটিপূর্ণ প্রথম খলিফা নির্বাচনই মুসলিম সমাজের বিভাজন অব্যশম্ভাবী করে তুলেছিলো

মুসলিমদের নবীর মৃত্যুর পর প্রথম খলিফা নির্বাচিত হন আবুবকর। খুবই বিষ্ময়কর ও লজ্জাজনক ঘটনা হলো মুসলমানরা তাদের নবীর মৃতদেহের দাফন-কাফন (সৎকার) না করেই কে খলিফা (নবীর উত্ত্রাধিকারী) হবে তা নিয়ে কলহে লিপ্ত হয়ে পড়ে। সেই কলহের আপাত নিষ্পত্তি হতে সময় লেগেছিলো তিনদিন। স্বভাবতই তিনদিন পর নবীর মৃতদেহ সমাধিস্থ করা হয়। প্রবল ঝগড়ার পর আবুবকর নির্বাচিত হন প্রথম খলিফা। আলোচনা বা ঝগড়াস্থলে উপস্থিত ছিলেন মাত্র আবুবকর সহ মাত্র তিনজন সাহাবী। আবুবকরের খলিফা নির্বাচন অধিকাংশেরই মনপসন্দ হয় নি এবং তাদের মধ্যে অনেকেই তাঁকে খলিফা হিসাবে স্বীকার করেন নি। যারা স্বীকার করেন নি এবং প্রকাশ্যেই আবুবকরের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন তাদের মধ্যে ছিলেন নবীর চাচাতো ভাই তথা জামাই আলি এবং নবীর সর্বকনিষ্ঠ কন্যা তথা আলীর স্ত্রী বিবি ফাতেমা ফলে তখনই মানসিকভাবে মুসলিম সমাজে দু’ভাগে ভাগ হয়ে যায়।  এক দল আবুবকরের পক্ষ নেয়, আর এক দল আলি ও ফাতেমার।

আলি ও ফাতেমা এবং তাদের অনুগামীরা মনে করতেন যে নবীর মৃত্যুর পর প্রথম খলিফা হওয়ার দাবীদার ছিলেন একমাত্র আলী, আর অন্য কেউ নয়। কারণ, আলী ছিলেন যুগপৎ নবীর বংশধর ও জামাই এবং ইসলামের একজন অসমসাহসী বীর ও যোদ্ধা। তারা এও মনে করতেন যে আবুবকর অন্যায়ভাবে আলীকে বঞ্চিত করে নিজে খলিফা হয়েছেন এবং তিনি বৈধ খলিফা নন। তাই তারা আবুবকরকে খলিফা হিসাবে স্বীকৃতি দেন নি এবং তাঁর কাছে বয়াত (আনুগত্যের শপথ) গ্রহণ করেন নি। ফাতেমা আবুবকরকে বেইমান, বিশ্বাসঘাতক ও প্রতারক বলে তাঁর বাড়ি থেকে তাড়িয়েও দিয়েছিলেন। খলিফা আবুবকর সেই অপমানের প্রতিশোধ নিতে কোনো কার্পণ্য করেন নি। তিনি ফাতেমার কাছ থেকে তার পিতার দেওয়া ফাদাকের একটি অতি উৎকৃষ্ট খেজুর বাগান কেড়ে নিয়েছিলেন এবং মৃত্যুর পর ওমরকে পরবর্তী খলিফা করে আলির বিরুদ্ধেও প্রতিশোধ নিয়েছিলেন। ওমরও আলির বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিয়েছিলেন কৌশল করে ওসমান গণিকে তৃতীয় খলিফা নির্বাচন করার ব্যবস্থা করে।

আবুবকরের প্রথম খলিফা হওয়াটা ছিলো খুবই বিতর্কিত। তার ফলে অনিবার্যভাবেই ঐক্যবদ্ধ মুসলিম সমাজের একতায় প্রথম ফাটল সৃষ্টি হয়। তার পর সেই ফাটল দিনে রাতে ক্রমশ দৈর্ঘে ও প্রস্থে বৃদ্ধি পায়। এবং অবশেষে ৬ষ্ঠ খলিফা নির্বাচনকে ঘিরে প্রবল বিষ্ফোরণে মুসলিম সমাজ সরাসরি দু’ভাগে বিভক্ত ও খণ্ডিত হয়ে যায়। সেটা একটা লম্বা ইতিহাস। সেই ইতিহাস নিয়ে কারবালাঃ মিথ ও মিথ্যা’ নামে আমার লেখা একটি বই আছে।    

শিয়া ও সুন্নিদের দ্বন্দ্ব ও বিরোধ নিষ্পত্তি হবার নয়

এ যুগে মুসলিমরা (শিয়া ও সুন্নি নির্বিশেষে সকলেরই) বিশ্বাস করে যে ইসলামের আদর্শকে রক্ষা করতে গিয়ে হোসেন কারবালা যুদ্ধে আত্মবলিদান করেছিলেন। এ দাবিটির কোনো ঐতিহাসিক বাস্তব ভিত্তি নেই। খলিফা হওয়ার তীব্র বাসনার জন্যেই হোসেন বিদ্রোহ করে যুদ্ধ ডেকে আনেন এবং মারা যান। হোসেনের জন্যেই যেমন কারবালা যুদ্ধ হয়েছিলো এবং তাঁর জন্যেই মুসলিমরা দ্বিখণ্ডিত হয়ে শিয়া ও সুন্নি গোষ্ঠীতে বিভক্ত হয়েছিলো।

শুরুতে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার জন্যেই শিয়া ও সুন্নিদের উদ্ভব হলেও পরে তার সঙ্গে যুক্ত হয় মতাদর্শগত বিষয়ও। শিয়া গোষ্ঠী মতাদর্শগতভাবে সুন্নি গোষ্ঠীর লোকজনকে মুসলমান বলেই মানে না। সুন্নিদের সঙ্গে শিয়াদের মতাদর্শগত বিরোধ রয়েছে মূলত দুটি বিষয়ে। তা হলো –

·         প্রথমতঃ সুন্নিদের মতে প্রথম চারজন খলিফা (আবুবকর, ওমর, ওসমান ও আলি) ছিলেন বৈধ ও সৎ খলিফা। শিয়ারা প্রথম তিনজনকে খলিফা বলে স্বীকার করে না। তাদের মতাদর্শগত দৃঢ় অভিমত হলো, মুহাম্মদের মৃত্যুর পর তাঁর একমাত্র যোগ্য উত্তরাধিকারী ছিলেন আলি। প্রথম তিনজন খলিফা অন্যায়ভাবে আলির সঙ্গে প্রতারণা করে খলিফা হয়েছিলেন।

·         দ্বিতীয়তঃ খলিফা ওসমান সর্বপ্রথম কোরান সংকলন করেন। সুন্নিরা সেটাকেই আল্লাহ্‌র প্রেরিত আসল কোরান বলে মানেন। শিয়ারা সেই কোরানকে জাল কোরান বলে প্রত্যাখান করেছেসেই কোরানের বিরুদ্ধে তাদের গুরুতর অভিযোগ রয়েছে তিনটি। যেমন এক. খলিফা ওসমান আসল কোরানের এক-চতুর্থাংশ পুড়িয়ে নষ্ট করে দিয়েছে। দুই. কোরানের অনেকগুলি ওহি সংশোধন করেছে। এবং তিন. ওসমানের কোরানে বহু প্রক্ষিপ্ত আয়াত/বাণী রয়েছে। অর্থাৎ ওসমান তাঁর তৈরি করা বহু কথা আয়াত হিসাবে কোরানে অন্তর্ভুক্ত করে দিয়েছেন।

দু’জনের মধ্যে কিংবা দু’টি গোষ্ঠীর মধ্যে শুধু ক্ষমতাকে কেন্দ্র করে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়ে থাকলে তার নিষ্পত্তি হওয়া অসম্ভব নয়। এর বহু উদাহরণ আছে। কিন্তু দ্বন্দ্বের মূল কারণ যদি মতাদর্শগত হয় তবে সেই দ্বন্দ্বের নিষ্পত্তি বা সমাধান অসম্ভব। ভারতের কম্যুনিস্ট পার্টি দ্বিখণ্ডিত হয়েছিলো মতাদর্শগত কারণে। ভারতের কম্যুনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী) ঐ একই কারণে দ্বিক্ষণ্ডিত হয়েছিলো। রাশিয়ার কম্যুনিস্ট পার্টিও একই কারণে দ্বিখণ্ডিত হয়ে বলশেভিক পার্টি ও মেনশেভিক পার্টিতে বিভক্ত হয়েছিলো। দ্বিধা বিভক্ত বা ত্রিধা বিভক্ত হওয়ার পর সেই কম্যুনিস্ট পার্টিগুলো আর কখনো তাদের মতাদর্শগত মতপার্থক্যের সমাধান করতে পারেনি। এই একই কারণে শিয়া ও সুন্নিদের মধ্যেকার মতাদর্শগত পার্থক্য মুছে যাওয়ার নয়। সেজন্যেই তাদের মধ্যে বিশ্বজুড়ে যে বৈরিতামূলক রক্তক্ষয়ী হিংস্র সংঘর্ষ ও যুদ্ধ চলছে তা আগামী দিনেও চলতে থাকবে। এটা মুসলিমদের উপর একটা ভয়ংকর অভিশাপ যার বীজ নিহিত আছে ইসলামের গর্ভে। তাই পৃথিবিতে যতদিন ইসলাম থাকবে ততদিন গত ৪ঠা মার্চ শুক্রবার পেশোয়ারের মসজিদে যে গণহত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে সেরূপ বীভৎস হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হতে থাকবে। আর সেই ধর্ম যুদ্ধে জঙ্গি ও সন্ত্রাসীরা যত মারা পড়বে তার চেয়ে হাজারগুণ বেশি সাধারণ গোবেচারা মুসলমানরা মারা পড়বে। এ হচ্ছে মুসলমানদের উপর একটা ভয়ংকর অভিশাপ যার বীজ নিহিত রয়েছে ইসলামের গর্ভে।

 

 

KARBALA: Truth and Lies

  KARBALA : Truth and Lies           GIASUDDIN                 Translated by SRIJIB BISWAS        ...