মারিয়া ছিলেন একজন অল্প বয়সী খৃস্টান মেয়ে যাঁকে উপহার হিসেবে মুহাম্মদ
পেয়েছিলেন মিশরের সম্রাট মুকাউকিসের নিকট থেকে । তিনি ছিলেন সম্রাটের অনেক
দাসীদের একজন । মুহাম্মদ মুকাউকিসকে ইসলামের দাওয়াত [আমন্ত্রণ] পাঠিয়েছিলেন
পত্রযোগে । মুকাউকিস ইসলাম গ্রহণ না করলেও মুহাম্মদকে পুরোপুরি হতাশ করেন নি ।
তিনি তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা
জানিয়ে কিছু উপঢৌকন পাঠিয়েছিলেন । উপহার সামগ্রীর মধ্যে দু’জন
কপটিক খৃস্টান দাসী বালিকাও ছিলেন যাঁদের একজন ছিলেন মারিয়া । মারিয়ার
নাম ছিলো মেরী, অপরজনের নাম ছিলো শিরী । মুহাম্মদ মেরীকে তাঁর নিকট উপপত্নী করে রেখে দেন, এবং
শিরীকে তুলে দেন তাঁর বিশ্বস্ত অনুগামী কবি হাসসানের হাতে । মুহাম্মদ মেরীর নাম
পাল্টে মারিয়া রাখেন । মুহাম্মদের কতগুলি
দাসী ও উপপত্নী ছিলো সে বিষয়ে নির্ভরযোগ্য
কোনো তথ্য পাওয়া যায় না । জানা যায় না সেই
দাসী উপপত্নীদের নাম,ধাম ও পরিচয়ও। এক্ষেত্রে কেবল মারিয়াই ব্যতিক্রম । মারিয়া সম্পর্কে
বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায় । এই তথ্যগুলির প্রধান উৎস হলো কোরান ও হাদিস । তবে
মারিয়া সম্পর্কে যে সব তথ্য পাওয়া যায় তার মধ্যে প্রচুর মতভেদ দেখা যায় ।
মারিয়াকে নিয়ে যে প্রশ্নে তীব্র মতভেদ রয়েছে তা হলো মুহাম্মদ কি মারিয়াকে বিয়ে করেছিলেন, না কি
তাঁকে উপপত্নী করেই রেখে দিয়েছিলেন ? এ মতটাই প্রবল যে মুহাম্মদ তাঁকে বিয়ে
করেছিলেন । কিন্তু কখন বিয়ে করেছিলেন সে
প্রশ্নেও মতভেদ রয়েছে । একটা মত হলো যে, মারিয়া একটি পুত্র সন্তান জন্ম দেওয়ার পর
মুহাম্মদ তাঁকে বিয়ে করেছিলেন এবং মুহাম্মদ সেই সন্তানের পিতৃত্ব দাবি করেছিলেন ।
অন্য মতটি হলো, সম্রাট মুকাকিউসের অনুরোধে মুহাম্মদ মারিয়াকে বিয়ে করেছিলেন উপহার
হিসেবে পাওয়ার অল্প কিছুদিন পরেই । তবে বিভিন্ন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এটা স্পষ্ট যে মারিয়ার গর্ভে সন্তান আসার পূর্বে
মুহাম্মদ তাঁকে বিয়ে করে স্ত্রীর মর্যাদা দেন নি । মুহাম্মদের একনিষ্ঠ অনুগামী
জীবনীকারদের অনেকেরই মত এটাই । এ প্রসঙ্গে জীবনীকার মহম্মদ হেইকল কী লিখেছেন তা
উদ্ধৃত করে মহম্মদ সাদাত আলী জানাচ্ছেন, “তবে অন্যান্য অনেকের সঙ্গে গলা মিলিয়ে
তিনিও বলেছেন যে, প্রথমে তিনি বাঁদি-বিবি ছিলেন পরে সন্তান জন্মদানে সমর্থ হলে
তাঁর মর্যাদা উন্নীত হয় । [মহানবী [সঃ] এঁর বিবাহ, পৃষ্ঠা – ১০৪]
মারিয়াকে কেন্দ্র করে মুহাম্মদ এমন
কয়েকটি ঘটনা ঘটিয়েছেন যা লোক সমাজে
– কী সে যুগে কী এ যুগে – খুবই নিন্দার্হ ও কলঙ্কজনক । সেই ঘটনাগুলোর মধ্যে একটা
হলো উপপত্নী মারিয়াকে বিয়ে করা, কারণ তখন ইতিমধ্যেই মুহাম্মদের হারেমে ন’জন স্ত্রী মজুত ছিলেন যাঁরা বংশ ও
কূল মর্যাদায় ছিলেন অভিজাত শ্রেণীর । মুহাম্মদ এতো বেশী সংখ্যক বিয়ে করেছিলেন যে তার সঠিক সংখ্যা পাওয়া যায় না
। মুহাম্মদ নিজেও কি হিসেব রেখেছিলেন ? সন্দেহ আছে । একজন সাধারণ ব্যক্তির জন্যেও বহু বিবাহ
অসমর্থনযোগ্য ও নিন্দাযোগ্য কাজ, আর
মুহাম্মদ তো দাবি করেছেন যে তিনি আল্লাহর নবি । সুতরাং তাঁর বেলায় এটা তো আরো বেশী খারাপ
কাজ । এই খারাপ কাজকে বৈধতা দেওয়ার জন্যে তিনি আল্লাহর দোহায়
দিয়েছেন কখনো, কখনো মানবতার দোহাই দিয়েছেন, আবার কখনো বা ইসলামের
স্বার্থের দোহাই পেড়েছেন । এই অবিশ্বাসযোগ্য, অগ্রহণযোগ্য ও অযৌক্তিক
দোহাইগুলির সাহায্যেই মুহাম্মদের অনুরাগীরা
তাঁর প্রতিটি বিয়ের পক্ষে সাফাই
গেয়ে চলেছেন যুগ যুগ ধরে । মারিয়ার ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয় নি
। মারিয়ার ক্ষেত্রে কী দোহাই বা অজুহাত
দেখানো হয়েছে তা শোনা যাক । মারিয়াকে মুহাম্মদ যখন বিয়ে করেন তখন তাঁর হারেম প্রায় নয়/দশ জন স্ত্রী, অর্থাৎ স্ত্রীতে স্ত্রীতে হারেম একেবারে টইটুম্বর । মুহাম্মদের
একনিষ্ঠ সেবক ড.ওসমান গণিই বলেছেন যে মারিয়া ছিলেন মুহাম্মদের দ্বাদশ স্ত্রী [দ্রঃ
মহানবী, পৃ-৩৯৩] । তৎসত্ত্বেও মুহাম্মদ
কেনো তাঁকে বিয়ে করেছিলেন সে কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেছেন, “আবিসিনিয়ার বাদশা
খৃস্টান বিধবা মহিলা মরিয়মকে দাসীরূপে হযরতের নিকট উপহার স্বরুপ পাঠান । তখনকার
দিনের নীতি অনুযায়ী কোন রাজা বাদশার উপহার অন্যকে দেওয়া সেই বাদশার প্রতি অবমাননা
দেখান । তাই হযরত মারিয়াকে নিজ পত্নীত্বে বরণ করে আবিসিনিয়ারাজের সঙ্গে এক
অকৃত্রিম ভালবাসার বন্ধন স্থাপন করেন ।” [দ্রঃ - ঐ] ওসমানের এই যুক্তি শুধু
শিশুসুলভই নয়, প্রতারণামূলকও । আবিসিনিয়ার
সম্রাট দু’জন বালিকা দাসীকে পাঠিয়েছিলেন উপহার স্বরূপ, শুধু মারিয়াকেই নয় ।
মুহাম্মদ মারিয়াকে নিজের জন্যে রেখে অন্যজনকে [শিরীকে] তাঁর অনুগত কবি হাসসানের হাতে তুলে দেন । ওসমান গণি শিরীর কথা গোপন করেছেন । দ্বিতীয়তঃ তিনি মারিয়াকে বিধবা বলে মিথ্যাচার
করেছেন । মুহাম্মদের সকল জীবনীকারগণই বলেছেন যে মারিয়া ছিলেন কুমারী। মোহাম্মদ
বরকাতুল্লাহ মারিয়া সম্পর্কে বলতে গিয়ে লিখেছেন, “কুমারীদ্বয় খৃষ্টান ছিলেন, মদিনায় পৌঁছিয়া ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন । তাঁহারা
নবীর হেরেমে সেবিকা ছিলেন, পরে মিরাকিউসের অনুরোধে নবী মেরীকে বিবাহ করেন এবং
শিরীনকে বিবাহ দেন কবি হাসসান ইবনে সাবেতের সঙ্গে । অতঃপর মেরির নাম হয় মারিয়া
কিবতিয়া তাঁহার বংশগত উপাধি ।” [
দ্রঃ মহানবী [সঃ] এঁর বিবাহ, পৃষ্ঠা – ১০৪]
রাজা-বাদশার পাঠানো উপহার অন্যকে দিলে যদি তাঁর প্রতি অবমাননা প্রদর্শন করা
হয় তবে মুহাম্মদ শিরীকে [শিরীন] অন্যজনের সাথে বিয়ে দেন কীভাবে ? সুতরাং মুহাম্মদ মিশরের সম্রাট মিরাকিউস বা মুকাকিউসের প্রতি
সম্মান প্রদর্শনের জন্যে মারিয়াকে যে বিয়ে করেন নি
তা সংশয়াতীত । তাহলে প্রশ্ন হল, তিনি
মারিয়াকে কেনো বিয়ে করেছিলেন ?
মুহাম্মদ মারিয়াকে সেই একই কারণে বিয়ে করেছিলেন যে
কারণে হাফসা, জয়নব, রায়হানা, জুয়াইরিয়া, সাফিয়া প্রমুখ রূপসী ও যুবতী মেয়েদের বিয়ে
করেছিলেন । খাদিজা ও আয়েশা ব্যতীত মুহাম্মদের প্রত্যেকে স্ত্রীই যুবতী ছিলেন । যুবতী
যাদের মধ্যে শেষের চারজন ছিলেন যেমন অসাধারণ সুন্দরী তেমনি অল্প বয়সীও । আর মারিয়া তো ছিলেন মুহাম্মদের সকল স্ত্রীর চেয়েই রূপে ও যৌবনে শ্রেষ্ঠ । মারিয়া কুমারিও ছিলেন । মুহাম্মদ
তাই মারিয়াকে দেখেই মুগ্ধ হয়ে তাই তাঁকে উপপত্নী করে নিজের হেফাজতে রেখে দেন এবং শিরীকে কবি হাসসানের হাতে তুলে দেন । মারিয়া এতোই সুন্দরী ও আকর্ষণীয়
ছিলেন যে মুহাম্মদের স্ত্রীরা সকলেই তাঁকে প্রবল হিংসা
করতেন । মুহাম্মদের কনিষ্ঠতম ও প্রিয়তম স্ত্রী আয়েশা নিজেই সে কথা বলেছেন । আয়েশা কি
বলেছেন তা তাঁর মুখ থেকেই শোনা যাক –
I was never so jealous
as I was with Mariya, that is because she was very beautiful curly haired
woman. The Prophet was very attracted to her. [Vide: Women and the Koran, p-73]
আনোয়ার হেকমত আয়েশার উক্ত কথাটা উদ্ধৃত করেছেন
একজন প্রথম দিককার নির্ভরযোগ্য মুহাম্মদের জীবনীকার ইবনে সা’দের
গ্রন্থ থেকে যে গ্রন্থটির নাম ও পৃষ্ঠা নম্বর হলো Kitab al – Tabaqat al – kabir, p.404 । শুধু কি মারিয়ার অসাধারণ রূপের
জন্যেই আয়েশা এবং তাঁর সতীনরা মারিয়াকে হিংসা করতেন ? না, আয়েশা বলেছেন যে মুহাম্মদ মারিয়ার প্রতি
ভীষণই অনুরক্ত ছিলেন [The Prophet was very attracted to her], এবং এটাই তাঁদের [মুহাম্মদের অন্যান্য স্ত্রীদের]
মারিয়াকে হিংসা করার প্রধান কারণ । মারিয়ার একদম কচি বয়স এবং ভুবন ভোলানো রূপের
জন্যেই মুহাম্মদ মারিয়াকে বিয়ে না করেও সব চেয়ে বেশী ভালবাসতেন, এবং তাঁর কাছেই
বেশী সময় থাকতে পছন্দ করতেন । এটা আয়েশা ও অন্য মুহাম্মদের অন্য স্ত্রীরা একদম পছন্দ
করতেন না, এবং সহ্যও করতে পারতেন না । আবার একজন কচি মেয়ের রূপ ও যৌবনের
প্রতি এমন অনুরাগ ও কামনা আল্লাহর নবির চারিত্রিক ভাবমূর্তির সঙ্গে মোটেই
সামঙ্গস্যপূর্ণ নয় । তাই এটা আড়াল করার জন্যে মুহাম্মদের অন্ধ অনুরাগীদের প্রাণান্তকর প্রয়াসে অন্ত নেই
। সে রকম একটা প্রয়াস দেখতে পাই মোহাম্মদ বরকাতুল্লাহর রচনায় । তিনি লিখেছেন, “এই মারিয়ার গর্ভে নবীর শেষ
সন্তান ইব্রাহীম জন্মগ্রহণ করেন । প্রিয় পুত্রের জননী হিসাবে নবী তাঁহাকে অত্যন্ত
স্নেহ করতেন ।” [দ্রঃ মহানবী [সঃ]
এঁর বিবাহ, পৃষ্ঠা – ১০৪] বরকাতুল্লাহ সাহেবরা তাঁদের দাবির পক্ষে যে যুক্তি সাজিয়েছেন তা এ রকম। খাদিজা
ব্যতীত মুহাম্মদের অন্য স্ত্রীরা একটিও সন্তানের জন্ম দিতে পারেন নি । এ দিকে
খাদিজার গর্ভে যে ছ’ জন সন্তান এসেছিলো তাদের মধ্যে একমাত্র কনিষ্ঠ কন্যা ফতেমা
ছাড়া বাকিরা সকলেই মুহাম্মদের জীবদ্দশাতেই
মারা যায় । মুহাম্মদ তাই অন্ততঃ একটা সন্তানের জন্যে, বিশেষ করে একটা পুত্র সন্তানের জন্যে ভীষণ
লালায়িত ছিলেন । ফতেমার জন্মের পঁচিশ বছর
পর মারিয়া একজন পুত্রের জন্ম দিয়ে
মুহাম্মদের সেই প্রবল মনোবাসনা পূর্ণ করেছিলেন
। সেজন্যেই মারিয়ার প্রতি মুহাম্মদের গভীর ভালোবাসার জন্ম
হয়েছিলো ।
ইব্রাহীমের জন্ম দিয়েছিলেন বিধায়
মুহাম্মদ মারিয়াকে অত্যন্ত বেশী ভালবাসতেন – এটা যে একটা অসত্য প্রচারণা তার প্রমাণ
রয়েছে কোরান ও হাদিসে । কোরানের ৬৬/১ নম্বর আয়াতটি তার একটা প্রমাণ । আয়াতটির
ভাষ্য হলো – “ হে প্রিয় নবী! কেনো তুমি তা
নিষিদ্ধ করছো যা আল্লাহ তোমার জন্যে বৈধ করেছেন । তুমি চাইছো তোমার স্ত্রীদের খুশী
করতে ?” এই আয়াতটি মুহাম্মদ ও মারিয়াকে নিয়ে একটি ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে । এই ঘটনাটি
‘মুহাম্মদের দাম্পত্যজীবন’ অধ্যায়ে ‘হাফসাকে তালাক’ শিরোনামাঙ্কিত লেখায় বিশদে
বর্ণনা করা হয়েছে । সুতরাং এখানে খুবই সংক্ষেপে
বিষয়টি আলোচনা করবো । মুহাম্মদ তাঁর স্ত্রীদের মধ্যে কবে কার সঙ্গে থাকবেন তা নির্দিষ্ট করে দিতেন । যেদিনের যে ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে
উক্ত আয়াতটির অবতারণা সেদিন মুহাম্মদের রাত্রী যাপন করার কথা ছিলো হাফসার সঙ্গে ।
হাফসা একটা বিশেষ কাজে সেদিন সন্ধ্যার আগে তাঁর বাবার বাড়ি গিয়েছিলেন । অবশ্য এ বিষয়ে অন্য একটা মত হলো যে মুহাম্মদই
তাঁকে ছল করে পাঠিয়েছিলেন। তারপর মুহাম্মদ হাফসার
অনুপস্থিতির সুযোগ নিয়ে মারিয়াকে হাফসার
ঘরে ডেকে নিয়ে তাঁর সঙ্গে যৌনসংগমে লিপ্ত হয়ে যান । এদিকে
মুহাম্মদ তাঁর ঘরে আসবেন বলে হাফসা অতি দ্রুতই পিতৃগৃহ থেকে তাঁর নিজের ঘরে
ফিরে আসেন । তখনও মুহাম্মদ মারিয়ার সঙ্গে রতিক্রিয়ায় মগ্ন ছিলেন । তাই হাফসা দরজা ঠেলে ঘরে ঢুকেই মুহাম্মদ ও মারিয়াকে যৌনসঙ্গমে লিপ্ত অবস্থায়ই
দেখতে পান । মুহাম্মদ একেবেরে হাতেনাতে
ধরা পড়ে যান হাফসার কাছে । হাফসা তখন রাগে
মেজাজ হারিয়ে তীব্র ভাষায় এবং উচু গলায়
মুহাম্মদকে ভর্ৎসনা করতে শুরু করেন । হাফসার মুখ বন্ধ করতে নিরুপায় হয়ে মুহাম্মদ
প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হন যে তিনি মারিয়াকে আর কোনোদিন স্পর্শ করবেন না । কয়েকদিন পরেই
মুহাম্মদ উপলব্ধি করেন যে তাঁর পক্ষে মারিয়া বিহনে বেশী দিন অতিবাহিত করা একেবারেই সম্ভব নয় । মুহাম্মদ যখনই কঠিন কোনো
সমস্যায় পড়েছেন আল্লাহ তৎক্ষণাৎ তাঁর কাছে প্রয়োজনীয় ওহি বা আয়াত প্রেরণ করতে বিলম্ব করে নি । এক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম হয় নি । আল্লাহ দ্রুতই সেই ৬৬/১ নং আয়াতটি পাঠিয়ে দেয় যাতে তার প্রিয় নবি হাফসাকে দেয়া প্রতিশ্রুতি থেকে নিষ্কৃতি লাভ করে এবং আবার ইচ্ছা মতো মারিয়ার সঙ্গে নিশিদিন সময় অতিবাহিত করতে পারেন ।
মারিয়ার সঙ্গ লাভের জন্যে মুহাম্মদ প্রায় পাগল হয়ে উঠেছিলেন । এদিকে মুহাম্মদের স্ত্রীদের, বিশেষ করে হাফসা
ও আয়েষার মারিয়ার প্রশ্নে ছিলো অসম্ভব কড়া ও অনড় মনোভাব । ৬৬/১ নং ওহি এনে মুহাম্মদ যখন ওঁদের বোঝালেন যে হাফসাকে মারিয়ার
প্রশ্নে যে প্রতিশ্রুতি তিনি দিয়েছেন তা আল্লাহর অপছন্দ, তখনও তাঁরা তাঁদের কঠোর
মনোভাবে ত্যাগ করেন নি । অর্থাৎ মুহাম্মদ মারিয়ার কাছে যান এবং তাঁর সঙ্গে সহবাস করেন তা তাঁরা কিছুতেই মানবেন না । এ অবস্থায় মুহাম্মদ আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠেন । ফলে
মুহাম্মদের দাম্পত্যজীবনে কলহ চরম রূপ নেয় । মুহাম্মদ ক্রমশঃ তাঁর স্ত্রীদের
আল্লাহর ভয় দেখাতে থাকেন এবং একটা পর্যায়ে
তিনি আয়েষা ও হাফসাকে তালাক দেবার হুমকিও দেন । মুহাম্মদের দাম্পত্যজীবনের এরূপ নিম্ন
মানের কলহ যা নিরক্ষর এবং চাল-চূলোহীন বস্তিবাসীদের দাম্পত্যকলহকেও লজ্জা দেবে । না, এটা মোটেই বানানো কোনো গল্প নয় । এটা যে একটা নির্মম সত্য ঘটনা তার সাক্ষ্য বহন করে চলেছে কোরান ও
হাদিস । মারিয়াকে কেন্দ্র করে মুহাম্মদের সঙ্গে তাঁর স্ত্রীদের সংঘাত যে চূড়ান্ত
মাত্রায় পৌঁছে গিয়েছিলো তার প্রমাণ রয়েছে ৬৬/৪,
৬৬/৫ এবং ৩৩/২৮ নং আয়াতগুলিতে । এখানে খুবই সংক্ষেপে এই ঘটনাটি আলোচনা করবো,
কারণ এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে ‘মুহাম্মদের দাম্পত্যজীবন’ অধ্যায়ে । মুহাম্মদ ভেবেছিলেন যে ৬৫/১ নং আয়াতের কথা শুনে
তাঁর স্ত্রীরা মারিয়ার ব্যাপারে আর আপত্তি
করবেন না। কিন্তু তা তো হয়ই নি, ফল হয়েছিলো উল্টো । হাফসা ও আয়েশা মুহাম্মদের প্রতি আরো বিরূপ হয়ে ওঠেন এবং তাঁর
সঙ্গে বিছানা ভাগ করে নিতে অস্বীকার করেন । মুহাম্মদ তখন আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠেন
মারিয়ার ব্যাপারে । অন্য স্ত্রীদের ছেড়ে মারিয়ার কাছে চলে যান এবং দীর্ঘ একমাস কাল
তাঁর সঙ্গে অতিবাহিত করেন । ৩৩/২৮ নং আয়াতের তফসিরে তার ইঙ্গিত আছে । এই আয়াতের
অর্থ হলো – “ ... যদি তোমরা পার্থিব জীবন ও তাহার শোভা অভিলাষ করিয়া থাক তবে এস,
তোমাদিগকে তাহার ফল ভোগ করাইব, এবং তোমাদিগকে উত্তম বিদায় দান করিব ।” এই
আয়াতটির তফসীরে গিরিশচন্দ্র সেন লিখেছেন, “মদীনা প্রস্থানের নবম বৎসরে হজরত সেই
পত্নীগণ হইতে বিচ্ছিন্ন হইয়াছিলেন ও শপথ
করিয়াছিলেন যে একমাস কাল তাঁহাদের সঙ্গ করিবেন না, কারণ এই যে, তাহারা সাধ্যাতীত
বস্ত্রাদি প্রার্থনা করিয়াছিলেন ।” তফসীরে কারণ হিসেবে যা উল্লেখ করা হয়েছে তা
কিন্তু একদম সঠিক নয় । কারণ, নবম বৎসরে মুহাম্মদ তখন একজন বড়ো বিত্তবান হয়ে উঠেছেন
। কীভাবে দরিদ্র মুহাম্মদ বিত্তবান হয়ে উঠেছিলেন তা সংক্ষেপে 'মুহাম্মদের দাম্পত্যজীবন' অধ্যায়ে বর্ণনা করা হয়েছে । প্রকৃত কারণ হলো হাফসা ও আয়েশা কিছুতেই মারিয়াকে তাঁদের সহ-পত্নী বা সতীন হিসেবে
মেনে নিতে পারেন নি । মুহাম্মদ তাঁর স্ত্রীদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে একমাস কাল যে
বাইরে [মারিয়ার সঙ্গে] কাটিয়েছিলেন তার উল্লেখ হাদিসেও পাওয়া যায়। হাদিসটি হলো – “
... রাসূলে পাক [সাঃ] তাঁর স্ত্রীদের
আচরণে ক্ষুব্ধ হয়ে কসম করেছিলেন যে, তিনি দীর্ঘ
একমাস তাদের সাথে একত্রে কালযাপন করবেন না । শেষ পর্যন্ত আল্লাহ পাক তাঁকে এ
আচরণের জন্য মৃদ্যু ভর্ৎসনা করেন । যুহুরী [রাঃ] বলেন, ওরওয়াহ [রঃ] আয়েশা [রাঃ]
হতে আমাকে রেওয়াত করেছেন যে, আয়েসা [রাঃ] বলেছেন, ঊনত্রিশ দিন অতিবাহিত হলে প্রথমে
রাসূলে পাক [সাঃ] আমার নিকট আগমন করলেন । তখন আমি বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ [সাঃ]
আপনি তো কসম করেছিলেন যে, একমাস যাবত আপনি
আমাদের নিকট আসবেন না । অথচ ঊনত্রিশ দিন পরই আপনি আমাদের নিকট প্রত্যাবর্তন করলেন
। আমি দিনগুলোর হিসেব রেখেছিলাম । তিনি বলেন, মাস ঊন্ত্রিশ দিনেও হয়ে থাকে ।” [মুসলিম শরীফ, ১-৮ খন্ড একত্রে, সোলেমানিয়া বুক
হাউস, ঢাকা, হাঃ নং ৩৫৬০] একমাস মারিয়ার
সঙ্গে অতিবাহিত করে মুহাম্মদ তাঁর স্ত্রীদের কাছে ফিরে যাওয়ার পরও হাফসা ও আয়েশা তাঁদের পূর্বাবস্থানে অনড় ছিলেন
। মুহাম্মদের সঙ্গে রাত্রি না যাপনের
অঙ্গীকার থেকে একচুলও নড়েন নি । তাঁরা মুহাম্মদকে জানিয়ে দেন, যতদিন
না মারিয়াকে ত্যাগ করবেন ততদিন আমাদের
সঙ্গে রাত্রি যাপন করতে পারবেন না । মুহাম্মদ তাঁদের অনড় অবস্থান ত্যাগে বাধ্য
করানোর জন্যে তখন আবার আল্লাহর ওহির আশ্রয় নেন । জারি করেন ৬৬/৪ নং আয়াত । তাতে
বলা হচ্ছে যে তাঁদের এরূপ আচরণের জন্যে আল্লাহ তাঁদের উপর ভীষণ রুষ্ট হুয়েছেন।
আয়াতটির ভাষ্য হলো – “ ... তোমাদের দুজনের হৃদয় অন্যায়-প্রবণ হয়েছে, এখন যদি তোমরা
অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করো আল্লাহ তোমাদের ক্ষমা করবেন ।” কিন্তু
না, তাতেও মুহাম্মদের কার্যসিদ্ধি হয় নি, হাফসা ও আয়েসা আল্লাহর দিকে তথা
মুহাম্মদের দিকে প্রত্যাবর্তন করেন নি । মুহাম্মদ তখন আর কোনো উপায়ান্তর নে দেখে
তাঁর শেষ অস্ত্র প্রয়োগ করেন । তালাক দেবার হুমকি দেন । ৬৬/৫ নং আয়াতটি বা ওহিটির
অবতারণা সেই উদ্দেশ্যেই । আয়াতটির বক্তব্য হলো – “যদি নবি তোমাদের সকলকে
পরিত্য্যাগ করে, তবে তার প্রতিপালক তোমাদের পরিবর্তে সম্ভবত তাকে তোমাদের অপেক্ষা
উৎকৃষ্ট স্ত্রী দেবেনে, যারা হবে আত্মসমর্পণকারী, বিশ্বাসী, তওবাকারী,
ইবাদতকারী, রোজা পালনকারী এবং বিধবা ও কুমারী।”
বলা বাহুল্য যে তালাক দেবার হুমকি ব্যর্থ হয় নি । পাছে সত্যিই তালাক দিয়ে
দেন এই ভয়ে হাফসা ও আয়েশা পিছু হটেন এবং মারিয়ার ব্যাপারে অনড় অবস্থান ত্যাগ করেন
। মারিয়াকে নিয়ে এসব কাণ্ড ঘটেছিলো মারিয়ার গর্ভে তাঁর পুত্র সন্তান ইব্রাহীম আসার
পূর্বেই । সুতরাং এটা সত্যি নয় যে ইব্রাহীমকে জন্ম দেওয়ার জন্যেই মারিয়া
মুহাম্মদের অতি প্রিয় হয়ে উঠেছিলেন । নির্মম সত্যিটা হলো মারিয়ার অসাধারণ রূপ, উদ্দাম
যৌবন ও দেহসৌষ্ঠবের কারণেই মুহাম্মদ তা৬র প্রতি অতিশয় আসক্ত হয়ে পড়েছিলেন ।