ইরাক ও সিরিয়ার মাটি এখন আক্ষরিক অর্থেই
বধ্যভূমি । এ বছরের গোড়ার দিকে যখন আইএস [প্রথমে নাম ছিলো আইএসএল, পরে আইসিস,
এখন আইএস] জঙ্গিরা ইরাক ও সিরিয়ায় সশস্ত্র অভিযান শুরু করে তখন কেউ ভাবতে পারেনি
যে তারা দুটি রাষ্ট্রশক্তির বিরুদ্ধে বেশীদূর অগ্রসর হতে পারবে । সেই অভিযানের
পরিণতির কথা না ভেবেই অনেকেই পুলকিত হয়েছিলেন । বিশেষ করে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের
যাঁরা অন্ধভাবে বিরোধিতা করতে অভ্যস্ত তাঁদের মধ্যে এ ভাব আমরা লক্ষ্য করেছিলাম ।
ইরাকে যেহেতু আমেরিকার পুতুল সরকার ক্ষমতাসীন, সুতরাং ইরাকের বিরুদ্ধে যে কোনো
অভিযান ন্যায়সঙ্গত তাঁদের কাছে । একই উল্লাস লক্ষ্য করেছিলাম ৯/১১ – এর ঘটনায় । সেটা
যে ভুল ছিলো তা তাঁরা উপলব্ধি করেছেন কী না তা বোঝা যায় নি । তবে তাঁরা যে আমেরিকার সেই অন্ধ-বিরোধিতার
নীতি যে ছাড়েন নি তা তাঁরা স্পষ্ট করেছেন আইএস জঙ্গিদের ইরাক-সিরিয়া অভিযানে । সে
কথা থাক । এখন কথা হলো এই যে সমস্ত রকম জল্পনা-কল্পনা-অনুমান ভুল প্রমাণ করে আইএস
সত্যিই অনেকদূর অগ্রসর হতে সক্ষম হয়েছে । ইরাক ও সিরিয়ার সামরিকবাহিনী ক্রমশঃ পিছু হটছে, ফলে আইএসের দখলে চলে গেছে ইরাক-সিরিয়ার বিস্তীর্ণ
ভূখন্ড যেখানে তারা গঠন করেছে ইসলামি খেলাফত যে খেলাফতের সূত্রপাত ঘটেছিলো ৬৩২
খৃষ্টাব্দে । মুহাম্মদের মৃত্যুর পর
তাঁরই সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ সাহাবি ও প্রিয়তম বন্ধু আবুবকরের হাত ধরে আরবে শুরু হয়েছিলো
ইসলামি খেলাফতি শাসন-ব্যবস্থা । সেই খেলাফতের অবসান ঘটেছিলো ১২৫৭ খৃষ্টাব্দে ।
তারপরেও অবশ্য বিচ্ছিন্নভাবে কোথাও কোথাও খেলাফতি শাসন-ব্যবস্থা চালু ছিলো । ৭৫৭ বছর পর আবার সেই
কট্টর ইসলামি খেলাফত ফিরে এলো ইরাক ও সিরিয়ার মাটিতে আইএস-এর হাত ধরে যাদের খলিফা
হলেন আবুবকর আল-বাগদাদি ।
এই ইসলামি খেলাফতই আজ আক্ষরিক অর্থেই
বধ্যভূমি । বিধর্মীদের বধ্যভূমি । শুধু ইহুদি, খৃষ্টান, ইয়াজিদি প্রভৃতি
ধর্ম সম্প্রদায়ের মানুষদেরই নয়, বধ্যভূমি হয়ে উঠেছে মুসলমানদেরও । আইএস জঙ্গিরা সুন্নি
। যারা শিয়া মুসলমান, এমনকি যারা সুন্নি
মুসলমান কিন্তু তাদের সন্ত্রাসকে সমর্থন করে না তাদেরও বধ্যভূমি এই খেলাফত । আইএস ঘোষণা করেছে ইসলামিক খেলাফতে কেবল [সুন্নি] মুসলমানরাই
বাস করবে, অন্যদের হয় ইসলাম গ্রহণ করে মুসলমান হতে হবে নতুবা ইসলামি খেলাফত ত্যাগ
করে অন্য কোথাও চলে যেতে হবে । তাদের অভিযানে যারা বাধা দিয়েছে তাদেরকে তারা
নৃশংসভাবে হত্যা করেছে । যারা বাধা দেয়
নি, শুধু খবর সংগ্রহ করতে গিয়েছিলো সেই সাংবাদিকদেরও হত্যা করেছে । এমনকি
ইরাক-সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধে আহত মানুষদের, যাদের মধ্যে সুন্নি মুসলমানরাও রয়েছেন,
খাদ্য, চিকিৎসাও অন্যান্য পরিষেবা দেওয়ার কাজে নিযুক্ত থাকা স্বেচ্ছাসেবী
সংগঠনের লোকজনদেরও তারা হত্যা করতে দ্বিধা করছে না । এই সব হত্যাকান্ডগুলির
ভিডিও রেকর্ডিং তারা ফেসবুক ও টুইটারে
পোষ্ট করে দেখাচ্ছে তাদের বিরোধিতার পরিণাম কী হবে সেটা বোঝানোর
জন্যে । বিধর্মী ও শিয়া
সম্প্রদায়ের কত অসামরিক মানুষকে যে তারা ইতিমধ্যেই হত্যা করেছে, আর কতো মানুষকে
নির্বাসিত করেছে তার ইয়ত্তা নেই । গত নভেম্বর মাসেই শুধু পাঁচ হাজার মানুষকে
হত্যা করেছে । ইতিমধ্যেই
প্রায় দেড় কোটি মানুষ দেশত্যাগ করে প্রতিবেশী
রাষ্ট্রগুলিতে আশ্রয় নিয়েছে যারা স্মরণার্থী শিবিরে মানবেতর জীবন-যপন করতে বাধ্য
হচ্ছে । এই ধারা এখনো সমানে অব্যাহতো রয়েছে । শুধু ইরাকের মসুল শহর
থেকেই ২৫০০০ [পঁচিশ হাজার ] খৃষ্টান দেশত্যাগ করেছে জুলাই মাসে । এই বর্বর ঘটনার বিরুদ্ধে আমি প্রতিবাদ জানিয়েছিলাম এই একটি ব্লগটি [www.giasuddinonline.blogspot.in/2014_07_23_archive.html ] লিখে । আইএস এখন পৃথিবীতে সবচেয়ে ধনী জঙ্গিগোষ্ঠী
। কীভাবে রকেটের গতিতে তাদের এই
উত্থান তা নিয়ে আর একটি ব্লগ [http://giasuddinonline.blogspot.in/2014/09/blog-post_21.html ] লিখেছি গত সেপ্টেম্বর মাসে । এর পরেও আইএস নিয়ে আবার কলম ধরতে হলো । কারণ, আইএস জঙ্গিরা
এবার নৃশংসতার বুলডোজার চালিয়েছে খৃষ্টান সম্প্রদায়ের শিশুদের উপরেও । বাবা-মায়েরা ধর্মান্তরিত হয় নি বলে চারজন শিশুকে তারা হত্যা করেছে নজিরবিহীন নৃশংসতায় । ঘটনাটি ঘটেছে ইরাকের রাজধানী বাগদাদের খুব
কাছাকাছি একটি খৃষ্টান অধ্যুষিত অঞ্চলে । আইএস-এর পক্ষ থেকে প্রথমে তাদের কাছে গিয়ে তারা ফতোয়া জারী
করে বলেছিলো , তোমাদের সবাইকে তোমাদের খৃষ্টান ধর্ম ত্যাগ করে মুসলমান হতে হবে । এর অন্যথা হলে শুধু তোমাদের নয়, তোমাদের
বাচ্চাদেরও আমরা হত্যা করবো । এই ফতোয়া জারির পর অসংখ্য খৃষ্টান হয় স্বধর্ম ত্যাগ করে মুসলমান হয়েছে, না
হয় বাড়ি-ঘর ত্যাগ করে দেশান্তরী হয়েছে । যারা পালাতে পারেনি এবং স্বধর্ম
ত্যাগ করতেও সম্মত হয় নি তাদেরকে জঙ্গিরা হত্যা করেছে । এবার তারা শিশুদেরও রেহাই
দেয় নি । শিশুদের কাউকে কচু কাটা করে কেটেছে, কারো মাথা কেটেছে, কাউকে
আবার কেটে দুটুকরো করে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে
তাদের বাবা-মায়ের সামনে । তারপরেও ওদের বাবা-মায়েরা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ না করায় তাদের হত্যা করেছে । যে শিশুদের তারা হত্যা করলো তারা ধর্মের
কী বোঝে ? কী জানে তারা যীশু ও
মুহাম্মদ সম্পর্কে ? তারা কি বোঝে আল্লাহ ও ঈশ্বরের মধ্যে কোথায় মিল আর অমিলটা ? অথচ আইএস জঙ্গিরা এই অবোধ ও নিষ্পাপ
শিশুদেরও হত্যা করলো । হত্যা করলো তাদের বাবা-মা যেহেতু মুহাম্মদকে আল্লাহর নবী
বলে স্বীকার করতে সম্মত হয় নি তাই তার প্রতিশোধ নিতে । ইসলামি এই নৃশংসতা, পৈশাচিকতা ও বর্বতার কোনো নজির আছে
? এরূপ অমানবিক প্রতিশোধপরায়নতা ও
প্রতিহিংসাপরায়নতার প্রতিবাদ, নিন্দা ও ধিক্কার জানাবার জন্যে কোনো ভাষায় বোধ যথেষ্ট নয় । আইএস এভাবেই ইরাক-সিরিয়ার
মাটিতে এই যে বর্বর হত্যাকান্ড ও ধ্বন্সকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে মাসের পর মাস, তথাপি আমাদের দেশে বা রাজ্যে এর
বিরুদ্ধে তেমন কোনো প্রতিবাদই ধ্বনিত হচ্ছে না । ইরাক-সিরিয়া যেন আমাদের এই গ্রহের বাইরে অন্য
কোনো গ্রহে অবস্থিত । এই বোবা ভারত ও
পশ্চিমবঙ্গকে দেখেছি গাজায় ইজরায়েলি হানার বিরুদ্ধে সোচ্চারে ফেটে পড়তে ।
দেখেছি গোটা দেশ জুড়ে প্রতিযোগিতা কে কতো ইজরাইলের বিরুদ্ধে গলার রগ ফোলাতে পারে, দেখেছি কলমচিরা কে কতো বেশি কলমের কালি ও নিউজপ্রিন্টের কাগজ খরচ করতে পারে তার প্রতিযোগীতাও । ইজরায়েল গাজায় রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস
চালিয়ে যেভাবে অসংখ্য অসামরিক মানুষদের হত্যা করেছে, যে সন্ত্রাস থেকে শিশুরাও
রক্ষা পায় নি, তার বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে নিন্দা, ধিক্কার ও
প্রতিবাদ ধ্বনিত করা ন্যায়সঙ্গতই । কিন্তু আইএস জঙ্গিদের
খুন-সন্ত্রাস যখন সমস্ত রকমের সীমা ছাড়িয়ে যায় তখন কেন বোবা-কালার মতো এ দেশ ও এ
রাজ্য নীরব ও নির্বিকার থাকে ?
চোখের সামনে ভেসে উঠছে গত ৪রা অক্টোবরের
খাগড়াগড় বিষ্ফোরণ
কান্ডের কিছু স্মৃতি । ঘটনা স্থলেই দুজন জঙ্গি মারা যায় এবং দুজন নারী সহ তিন জন জঙ্গি পুলিশের হাতে ধরা পড়ে । দুই নারীর
কোলেই ছিলো একটা করে নিষ্পাপ শিশু যাদের বিমর্ষ মুখের ছবি বারবার ভেসে উঠেছে টিভির পর্দায় ।
বাবা-মায়ের অপরাধে তাদেরও জেল থকে কোর্ট, কোর্ট থেকে জেলে ঘুরতে হয়েছে ও হচ্ছে ।
কোলের শিশুদের ঐ দুর্দশা আমাদের ভারাক্রান্ত করেছে বারবার । তাই নিয়ে সমালোচনায়
মুখর হয়েছে অনেকেই । মহিলা ও শিশুদের সঙ্গে অমানবিক আচরণ করা হচ্ছে এই অভিযোগ তুলে
মুসিলম সমাজের বুদ্ধিজীবীদের একাংশ ও
ধর্মীয় নেতারা প্রবল সমালোচনা করেছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা দলের সদস্যদের বিরুদ্ধে ।
এপিডিআর, বন্দিমুক্তি কমিটি প্রভৃতি মানবাধিকার সংগঠনগুলি এবং কিছু প্রাক্তন নকশাল
নেতারাও সরব হয়েছেন একই অভিযোগ তুলে । খাগড়াগড় বিষ্ফোরণ কান্ডে ধৃত জঙ্গিদসের
মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে, এবং গাজায় ইজরায়েল রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস চালিয়ে গাজার
মানুষদের বিরু মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে
বলে যাঁরা প্রবল প্রতিবাদ করেছেন তাঁরা কি আইএস যে নারকীয়
হত্যালীলা চালাচ্ছে বছর ভোর সেটা কি দেখতে পাচ্ছেন না ?
ইরাক ও সিরিয়ায় আইএস যে বল্গাহীন হত্যালীলা চালাচ্ছে তার বিরুদ্ধে মুসলিম
সমাজের ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ ও বুদ্ধিজীবীরা মাঝে মাঝে যে মুখ খুলছেন না তা বলা যাবে
না । তাঁরা মুখ খুলছেন । কিন্তু তাঁরা আইএস সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছেন,
কিংবা তাদের নিন্দা ও ধিক্কার দিচ্ছেন এমনটা
মোটেই নয় । কিংবা তাঁরা যে লক্ষ লক্ষ
আক্রান্ত মানুষদের জন্যে দুঃখ, সমবেদনা ও সহানুভূতি প্রকাশ করছেন তাও নয় । তবে
তাঁরা কি জন্যে মুখ খুলছেন ? তাঁরা মাঝে
মাঝে মুখ খুলছেন ইসলামের সাফাই গাইবার জন্যে । তাঁরা এ প্রসঙ্গে যে কথা অনর্গল বলছেন
তা হলো এই যে, আইএস যা করছে তা ইসলাম সম্মত কাজ নয় । শিশুহত্যা তো নয়ই, যে কোনো হত্যাকেই কঠোরভাবে
নিন্দা করেছে ইসলাম । এ সমস্ত কথা বলে ইসলামের
সাফাই গেয়ে তাঁরা হাত ধুয়ে ফেলেন , কোনোদিন ইসলামি জঙ্গিদের বিরুদ্ধে রাস্তায়
নামেন না । কোনোদিন তাদের বিরুদ্ধে
নিন্দা করতেও তাঁদের দেখা যায় না । মোল্লা-মুফতি ও বুদ্ধিজীবীদের এই ভুমিকা নতুন কিছু নয় । প্রশ্ন হলো - ইসলামে কি সত্যি জিহাদের জন্যে সহিংসতার স্থান নেই, শিশুদের উপর অত্যাচার ও
তাদের হত্যা করা কি সত্যিই ইসলামে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ ? উলামা ও মুসলিম
বুদ্ধিজীবীদের এই দাবিকে ইসলামের ইতিহাস এবং কোরান ও হাদিস কিন্তু সমর্থন করে না । জিহাদ সম্পর্কে এবং
জিহাদের ময়দানে শিশুদের সম্পর্কে ইসলামের কি মনোভাব সে বিষয়ে ইমাম আল গাজ্জালি কী বলেছেন সে কথা বরং শোনা যাক । তিনি বলেছেন - - ‘প্রত্যেক মুসলিমকেবছরে অন্ততঃ একবার অবশ্যই জিহাদে যেতেই হবে ... দুর্গের ভিতর যদি নারী ও শিশুরা থাকে,তবুও তাদের বিরুদ্ধে ভারী পাথর বা তীর নিক্ষেপের যন্ত্র ব্যবহার করা যেতে পারে । তাদেরকে আগুনে পুড়িয়ে কিংবা ডুবিয়ে মারা যেতে পারে । (দ্রঃ - জিহাদ, এম.এ.খান, পৃ – ১) কে এই ইমাম গাজ্জালি ? মুহাম্মদের পর মুসলিম সমাজের সর্বোচ্চ ইসলামি পন্ডিত যিনি তাঁর নাম ইমাম গাজ্জালি যাঁর তিন লক্ষ
হাদিস মুখস্থ ছিলো । তাঁর সম্পর্কে এমন কথাও বলা হয়ে যে, আল্লাহ মুহাম্মদের পর কাউকে নবী করে পাঠালে আল-গাজ্জালীই হতেন সেই নবী । [দ্রঃ আরব জাতির ইতিহাস, ফিলিপ
কে.হিট্টি, পৃ – ৪২১] ইমাম গাজ্জালির চাইতে পশ্চিমবঙ্গের ধর্মীয় নেতারা বেশী
পন্ডিত ইসলামি শাস্ত্রে এমন দাবী পৃথিবীর কোনো ইসলামি পন্ডিতই করেন না । মানুষ
মাত্রই ভুল করে । তা হলে ইমাম গাজ্জালি কি ভুল বলেছেন ? গাজ্জালি যে ভুল বলেন
নি তার প্রমাণ দেয় কোরান-হাদিস এবং মুহাম্মদের জিহাদের ইতিহাস । কোরানীয় দর্শনানুসারে গণিমতের মাল [জিহাদলব্ধ মাল] মুসলমানদের জন্যে বৈধ । গণিমতের মালের মধ্যে শুধু
যাবতীয় স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি এবং টাকা-পয়সাই পড়ে না, যুদ্ধবন্দি নারী,পুরুষ ও
শিশুরাও গণিমতের মাল । কোরান এ কথাও স্পষ্ট করে বলেছে যে যুদ্ধবন্দি ক্রীতদাস নারীদের [সধবা, বিধবা, কুমারী ও শিশু কন্যা] স্ত্রী
রূপে ভোগ করা বৈধ । এ প্রসঙ্গে কোরান যে কথা বলছে - “তারা তোমাকে যুদ্ধলব্ধ অতিরিক্ত সম্পদ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করছে, তুমি বলো- যুদ্ধলব্ধ দ্রব্যসম্ভার
আল্লাহ ও তার রসুলের ।” [সুরা
আনফাল, ৮/১ ] অন্য একটি আয়াতে আরো
প্রাঞ্জল ভাষায় বলা হয়েছে গণিমতের মাল যা পেয়েছো তা উত্তম জেনে ভোগ করো । সেই আয়াতটি
হলো – “ যুদ্ধে যা তোমরা লাভ করেছ তা বৈধ ও উত্তম ভেবে উপভোগ করো ।” [৮/৬৯] যুদ্ধবন্দি
নারীদের
সঙ্গে
কীরূপ
আচরণ
করতে
হবে
তা মুহাম্মদ
হাতে কলমে তাঁর শিষ্যদের শিখিয়ে দিয়ে গেছেন
।
খন্দক
যুদ্ধের
পর
৬২৭
খৃষ্টাব্দে
মুহাম্মদ
মদিনায়
ইহুদিদের
বানু
কুরাইজা
গোষ্ঠীকে
অবরোধ
করেন
।
তাদের
বিরুদ্ধে
অভিযোগ
ছিলো
যে
তারা
ঐ
যুদ্ধে
কোরেশদের
পক্ষে
যোগ
দিয়েছিলো
।
দিন
পনেরো
পর
ইহুদিরা
মুহাম্মদের
কাছে
আত্মসমর্পণ
করলে
তিনি
ওদের বিরুদ্ধে কথিত
উক্ত অভিযোগের
বিচার
করেন
।
একজন নব্য মুসলমানকে সেই বিচারের বিচারক
নিযুক্ত করা হয়েছিলো । তিনি ইহুদিদের দোষী
সাব্যস্ত
করেন এবং তিন
রকমের
শাস্তি
প্রদান করেন । রায় তিনটি
ছিলো এরূপ - “মুসলমানদিগের সহিত
সন্ধির শর্ত ভঙ্গ করার দরুন সমুদয় ইহুদি পুরুষদিগের প্রাণদন্ড হইবে, স্ত্রীলোক এবং
বালক-বালিকাগণ দাস-দাসীরূপে পরিগণিত হইবে এবং ইহুদীদিগের সমস্ত সম্পতি মুসলিম
সৈন্যদিগের মধ্যে ভাগ করিয়া দেওয়া হইবে ।” রায় শুনে আনন্দে উত্তেজিত হয়ে মুহাম্মদ বলেন যে
আল্লাহ বিচার করলে ঠিক এই রায়টাই দিতেন । মুহাম্মদ সেই রায়ের তিনটিই নজিরবিহীন কঠোরতা ও নৃশংসতার সঙ্গ কার্যকর করেছিলেন, কোনো মায়া-মমতা দেখান নি
নারী ও শিশুদের প্রতিও । সেই বিচার নামক প্রহসনের বলি হয়েছিলো ৮০০/৯০০ জন পুরুষ যাদের মাথা কেটে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়েছিল এবং নারী ও শিশুদের ক্রীতদাস রূপে মুসলমানদের মধ্যে বন্টনও করে দেওয়া হয়েছিলো ।
এই হলো প্রকৃত ইসলাম যা
অনুসরণ করছে আইএস জঙ্গিরা, আর সম্পূর্ন মিথ্যা প্রচারণা দিয়ে ইসলামের নির্মম
সত্যিটাকে আড়াল করছেন এ দেশের মুসলিম ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ এবং বুদ্ধিজীবীগণ । আর এঁদের সঙ্গেই কোরাস গাইছেন তথাকথিত মানবাধিকার সংগঠনগুলি এবং প্রাক্তন নকশাল নেতারা ।
ভারতে মুসলিমরা সংখ্যালঘু, সুতরাং মুসলিম জঙ্গি সংগঠনগুলি যতই হত্যাকান্ড চালাক
তার বিরুদ্ধে কিছু বলা যাবে না । কারণ, তাহলে নাকি হিন্দু সাম্প্রদায়িক শক্তি
গায়ে-গতরে বাড়বে । উট
পাখির মতো এঁদের চিন্তা-ভাবনা । বালিতে মুখ গুঁজে থাকলে কি মরুঝড় থেকে রেহাই পাওয়া
যায় ? না
কি চোখ বুঁজলে প্রলয় বন্ধ হয় ?
ভারতে, প্রতিবেশী দেশে এবং গোটা বিশ্বে মুসলিমদের জঙ্গি কার্যকলাপকে বৃথা আড়াল
করার চেষ্টা করা হলো এ দেশের বামপন্থী রাজনীতির ঐতিহ্য । একই ঐতিহ্য জাতীয়
কংগ্রসও বহন করে চলেছে । মুসলিম মৌলবাদিদের আগ্রাসী ভূমিকা এ দেশেও হিন্দুদের মধ্যে
আতঙ্ক ও নিরাপত্তাহীনতার মেঘ তৈরী হচ্ছে । কে তাদের বাঁচাবে মুসলিম মৌলবাদী
আগ্রাসনের হাত থেকে ? কংগ্রেস, মুলায়ম,
লালু, মায়াবতী, বামেরা, প্রাক্তন নকসাল, মানবাধিকার কর্মীরা তো এই ভয়ঙ্কর
আগ্রাসনকে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ এবং কর্পোরেট মিডিয়ার চক্রান্ত বলে হাত গুটিয়ে বসে
থাকছে । আর তথাকথিত মানবাধিকার কর্মী ও নকসালরা তো আরো এক কাঠি উপরে । তারা
একেবারে মুসলিম মৌলবাদিদের কোলে বসে
তাদের হয়ে প্রতিনিয়ত সাফাই গাইছে । ধর্মনিরপেক্ষ
রাজনৈতিক দল ও সংগঠনগুলির এই নেতিবাচক ভূমিকা অসাম্প্রদায়িক হিন্দু জনগণকেও
ঠেলে দিচ্ছে সাম্প্রদায়িক দল বিজেপির দিকে । ফলে বিজেপির দ্রুত উত্থান হচ্ছে