Monday, December 29, 2014

পেশওয়ার হত্যাকাণ্ড মানবতার লজ্জা - উলামা ও মুসলিম বুদ্ধিজীবীরা পথে নামলেন না কেনো ?



গত ১৬ই ডিসেম্বর মানব সভ্যতাকেই কলঙ্কিত  করে ‘তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান’ [টিটিপি]  ফুলের মতো নিষ্পাপ ১৩২ জন শিশু পড়ুয়াকে হত্যা করলো এই বর্বর হত্যাকাণ্ডটি তারা ঘটিয়েছে পাকিস্তানের ‘খায়বার পাখতুন খাওয়া’ প্রদেশের রাজধানী শহর পেশওয়ারে একটি সেনা স্কুলে হানা দিয়ে এই স্কুলে  প্রায় ৫০০ শিশু  অধ্যয়ন করে যাদের বয়স ৯ থেকে ১৮ বছর এই  বর্বর হত্যাকাণ্ডে  প্রাণ গিয়েছে প্রায় কয়েকজন শিক্ষক সহ  ১৫০ জনের   জঙ্গিরা মোট ছ’জন ছিলো যাদের মধ্যে একজন মানব-বোমাও ছিলো ।  জঙ্গিরা যখন অতর্কিতে স্কুলে প্রবেশ করে  বিভিন্ন শ্রেণী কক্ষে ঢুকে পড়ে, তখন পুরোদমে ক্লাস শুরু হয়ে গেছেমানব-বোমাটি একটি শ্রেণী কক্ষে ঢুকে বোতাম টিপে দিলো, আর মুহূর্তের মধ্যে একজন শিক্ষক ও ৬০ জন পড়ুয়ার দেহ টুকরো টুকরো হয়ে  রক্তাক্ত মাংসপিণ্ডরূপে এদিক ওদিক ছড়িয়ে পড়লো । একজন জঙ্গী অন্য একটি শ্রেণি কক্ষে পড়ুয়াদের সামনে তাদের প্রিয় শিক্ষকে চেয়ারে বেঁধে তাঁর গায়ে আগুন লাগিয়ে দিলো, তারপর এক একজন পড়ুয়ার বুক ও মাথা তাক করে গুলি চালাতে শুরু করলো, আর একে একে ফুলের কুঁড়ির মতো শিশুরা আর্তনাদ করতে করতে মেঝেয় লুটিয়ে পড়তে থাকলো । একটা শ্রেণী কক্ষে একজন জঙ্গি ৫/৬ জন করে পড়ুয়াদের দেওয়াল ঘেঁষে দাঁড় করিয়ে বাকিদের সামনে পর পর মাথা ও বুক লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়ে হত্যালীলায় মত্ত হয়ে উঠলো । এভাবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা চললো শিশুমেধ যজ্ঞ ।  হত্যালীলার এই ধরণ বলছে যে একেবারেই  ঠাণ্ডা মাথায় ও পরিকল্পনা মাফিকই টিটিপি’র জল্লাদবাহিনী এই হত্যালীলা  চালিয়েছে । পাকিস্তানের ইতিহাসে এমন মর্মান্তিক হত্যাকান্ড এর আগে কখনোও ঘটে নি তো বটেই,  এমনকি ২০০৪ সালে চেচেনিয়ায় চেচেন বিদ্রোহীরা যে ভয়ঙ্কর গণহত্যাকান্ড ঘটিয়েছিলো সেটা ব্যতীত  এর নজির সারা পৃথিবীতে আর দ্বিতীয়টি  নেই ।  স্বভাবতঃই এমন  নৃশংস, নির্মম, বর্বর, পৈশাচিক ও হৃদয়বিদারক হত্যাকাণ্ডে গোটা বিশ্ব বিস্মিত, স্তম্ভিত, হতবাক, পীড়িত, ব্যথিত ও  শোকে মুহ্যমান   এবং গোটা দুনিয়া কঠোরভাবে প্রতিবাদ ও নিন্দায় মুখরকিন্তু কেনো এমন হিংস্র ও মর্মান্তিক হত্যালীলার জন্যে বেছে নেওয়া হলো ফুলের মতো নিষ্পাপ ঐ শিশুদের  ?  তার জবাব খুঁজতে কাউকে কষ্ট করতে হয় নি ।  টিটিপি র মুখপত্র মুহাম্মদ ওমর খোরসানি,যার পরিকল্পনায় ও নির্দেশে এই হত্যাকাণ্ড হয়েছে,  এবং যে মালালাকে হত্যা করার নির্দেশও দিয়েছিলো, জানিয়েছে যে  সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতেই তারা সেনা স্কুলে  হামলা ও শিশুদের হত্যা করছে ।  খোরসানি বলেছেন - ‘এই উপহার তাদের জন্যে যারা ভেবেছিলো উত্তর ওয়াজিরিস্তানে সেনা অভিযান চালিয়ে আমাদের  খতম করা  যাবে ।  সরকার আমাদের পরিবারের ওপর চড়াও হয়েছে ।  তাই আক্রমণের জন্যে সেনা স্কুলটাকেই বেছে নিয়েছি আমরা ।  ওরাও বুঝুক যন্ত্রণা কাকে বলে ।’  কোনো কোনো মহল বলছে যে মালালাকে ইউসুফজাইকে  নোবেল পুরষ্কার দেওয়ার বদলা নিতেও এই হামলা হতে পারে ।  ২০১২ সালের ৯ই অক্টোবর মালালাকে তার  মাথায় গুলি করেছিলো  তারা   ঘটনাচক্রে মৃত্যুর হাত থেকে সে ফিরে এসেছিলো ।      টিটিপির চোখে মালালা ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা এক পশ্চিমা সৈনিক বৈ নয় তারা মনে করে, শিক্ষা-টিক্ষা সব বাজে কথা, মালালার আসল কাজ হলো পশ্চিমিদের হয়ে প্রচার করা এবং ইসলামের নিন্দা ও অবমাননা করা সেই মালালা ইউসুফজাই পেশোয়ারেরই মেয়ে যে টিটিপির নিষেধাজ্ঞাকে অগ্রাহ্য করে  রোজ স্কুলে যেতো এবং  সন্ত্রাসবাদী কাজকর্মের নিয়মিত প্রতিবাদ ও সমালোচনা করতো তার ব্লগে  সেই মালালার নোবেল প্রাপ্তি যে তাদের পক্ষে  সহ্য করা  যে কঠিন তা বলা বাহুল্য । 
এমন নজিরবিহীন হৃদয়বিদারক ও মর্মস্পর্শী এবং ঘৃণ্য হত্যাকাণ্ডের কী প্রতিক্রিয়া দেয় উলামা তথা মুসলিম সমাজের ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ ও  বুদ্ধিজীবীরা তার প্রতি লক্ষ্য আমি রাখছিলাম গভীর মনোযোগ  সহকারে । পাশাপাশি এটাও বুঝতে পারছিলাম যে বিশ্বজুড়ে  প্রবল নিন্দা, প্রতিবাদ ও ধিক্কার ধ্বনিত হওয়ার কারণে তাঁরা  ছিলেন স্বভাবতই  দৃশ্যত ভীষণ বিব্রত ও অস্বস্তিতে ।  কারণ সন্ত্রাসীরা এই শিশুমেধ যজ্ঞ করেছে আল্লাহ ও ইসলামের নামেই ।  এ রকম পরিস্থিতিতে  চুপচাপ থাকা যায় না, তাই  একের পর এক বিবৃতি  আসতে শুরু করলো তাঁদের পক্ষ থেকে । সংখ্যালঘু কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ কামারুজ্জামান বললেন – ‘স্কুল ছাত্রদের যারা নির্বিচারে গুলি চালিয়ে শতাধিক স্কুল-পড়ুয়াকে হত্যা   করল, তারা মনুষ্য সভ্যতার দুশমন । সমগ্র পৃথিবী থেকে এদের নির্মূল করা দরকার । ইসলাম ধর্ম এই ধরনের জঘন্য অপরাধকে ঘৃণা করে ।’ সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী বললেন – ‘নিরীহ মানুষকে খুন করাকে ইসলাম মোটেই সমর্থন করে না । যে-কোনও শিশু  ছাত্ররা দেশের ভবিষ্যৎ । তাদের উপর হামলা চালানো সভ্যতার লজ্জা । আমরা চাই, তালিবান বা অন্য যে-কোনও জঙ্গিদের কোনও দাবি-দাওয়া থাকলে তা নিয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করুক ।’ কলকাতার নাখোদা মসজিদের ইমাম মাওলানা মুহাম্মদ শফিক এই তালিবানি হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন । তিনি বলেছেন – ‘তালিবানরা যেভাবে স্কুলের নিরীহ শিশুদের হত্য করেছে, পাকিস্তান সরকারের উচিত তাদের ধরে ফাঁসীতে ঝোলানো ।’ বঙ্গীয় সংখ্যালঘু বুদ্ধিজীবী মঞ্চের সভাপতি  অধ্যাপক ওয়ায়েজুল হক  বলেন – ‘নিষ্পাপ শিশুদের উপর হামলা অত্যন্ত নিন্দনীয় অপরাধ । আমরা এ ব্যাপারে রাষ্ট্রসঙ্ঘের হস্তক্ষেপ দাবি করছি ।’  তাঁদের এই প্রতিক্রিয়া ফলাও করে ছাপা হয়েছে  তাঁদের  একমাত্র দৈনিক বাংলা মুখপত্র  ‘কলমে’ যে কাগজটি  সারদার কর্ণধার  কুখ্যাত প্রতারক প্রদীপ্তর জালিয়াতি করা কোটি কোটী টাকায় চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে ।  তাঁদের এই প্রতিবাদ  কতখানি  আন্তরিক তা নিয়ে সব মহলেই প্রশ্ন রয়েছে  । আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে   প্রতিবাদ না করে উপায় নেই তাই তাঁরা প্রতিবাদের ভাণ করছেন,  পিঠ বাঁচানর জন্যে বিশ্বজুড়ে যে প্রতিবাদ হচ্ছে তার সঙ্গে কণ্ঠ মিলাচ্ছেন । তা ছাড়া আর এই ভাণ করার পশ্চাতে আর একটা হীন উদ্দেশ্যও আছে ।  তা হলো, নিন্দা ও প্রতিবাদ করার ছলে  ইসলামের সাফাই গাওয়া । তাঁদের প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করলে দেখা যাবে তাঁরা যতো না ঘটনাটির নিন্দা ও প্রতিবাদ করেছেন তার থেকে বেশী ইসলামের সাফাই গেয়েছেন । তাঁদের এই ভূমিকা বা কপটাচার নতুন কিছু নয়, এটা তাঁদের রেডিমেড বিবৃতিঠিক যেন রথ দেখা ও কলা বেচার মতো । প্রতিবাদও জানানো হলো, তার সঙ্গে আসল কাজটি, ইসলামের ঘাড় থেকে দোষ নামিয়ে দেওয়া, সেটাও করা হলো ।   মুসলিম জঙ্গিরা যখনই এ রকম  অমানবিক ঘটনা ঘটায় তখনই তাঁরা নাম কা ওয়াস্তে তার প্রতিবাদে একটা বিবৃতি দিয়ে  ঘরে গিয়ে আরাম কেদারায় আরাম করেন কখনই রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করতে দেখা যায় নি তাঁদের । এ ক্ষেত্রেও তাই করেছেন, সেই রেডিমেড বিবৃতি কপচিয়ে ইসলামের ঘাড় থেকে সব দায় ঝেড়ে ফেলে দায়সারা কর্তব্য সেরেছেন । লক্ষ্য করুন সিদ্দিকুল্লাহর বিবৃতিটি । তিনি বিশ্বাস করেন যে টিটিপির কিছু ন্যায্য দাবি আছে যা নিয়ে  সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসা যেতে পারে । এটা সর্বজনবিদিত যে টিটিপি  চায় শরিয়তি শাসন । সিদ্দিকুল্লাহর বিবৃতি প্রমাণ করে যে তাঁরা মুখে গণতন্ত্রের কথা বললেও আসলে বিশ্বাস করেন শরিয়তি শাসনে । শরিয়তি শাসন প্রতিষ্ঠা তো জিহাদ করেই করতে হয়  যে কাজে নিয়োজিত আছে টিটিপি । কিন্তু ভারতে মাটিতে বসে  তো  জিহাদকে প্রকাশ্যে সমর্থন করা সম্ভব নয়, তাই উলামা ও মুসলিম বুদ্ধিজীবীরা  জিহাদি কার্যকলাপের বিরুদ্ধে কপটতার আশ্রয় নিতে হয়, এবং প্রতিবাদের ভাণ করতে হয় 
শুধু কপট-প্রতিবাদই নয়,  পেশওয়ার-হত্যাকাণ্ডের জন্যে কোনো ভাবেই যাতে ইসলামের দিকে আঙুল তোলা না যায় তার জন্যে  এই হত্যাকাণ্ডের জন্যে তাঁরা আঙুল তুলছেন আমেরিকার দিকে ।  এমনকি নিজের দেশ ভারতের দিকেও  আঙুল তুলতে  তাঁরা দ্বিধা করেন নি   ‘মিযান’ একটি কট্টর সাপ্তাহিক বাংল মুখপত্র তাঁদের । মিযান আঙুল তুলেছে আমেরিকার দিকে । ‘নতুন গতি’ তাঁদের আর একটি সাপ্তাহিক বাংলা কাগজ । কাগজটি গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার মুখোশের আড়ালে নিজেদের আড়াল করার হাস্যকর প্রয়াস করে থাকে । ‘শরিয়তি গণতন্ত্রে’ বিশ্বাসী এই কাগজটিই পেশওয়ার হত্যকাণ্ডের জন্যে ভারতের দিকে আঙুল তোলার ধৃষ্টতা দেখিয়েছে, অবশ্য চাতুর্যতার সাথে তার দায় চাপিয়েছে পাকিস্তানের ভারতিবিরোধী শক্তিগুলর উপর ভারতবিরোধী শক্তিগুলির উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কাল্পনিক অভিযোগগুলো এই কাগজটি ফলাও করে প্রচার করছে । কাগজটি ২৮/১২/১৪-এর সংখ্যায় লিখেছে  – “পাকিস্তানের কোন কোন জেহাদি সংগঠন এর মধ্যে দাবি তুলেছে, আসলে পাকিস্তানকে অশান্ত করে তুলতে ভারতই এসব করিয়েছে । মুশারফ ও অনেকে এই  সুরে কথা বলয়েছেনতার মতে রেডিও মোল্লা নাকি ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর হতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত । লক্ষণীয়, পাক রাজনৈতিক নেতৃত্ব কিন্তু এ কথার বিরোধিতা করেন নি ।”  ভারতের বিরুদ্ধে আঙুল তোলার আগে অবশ্য পেশওয়ার হত্যাকাণ্ডের দায় ইসলামের ঘাড় থেকে নামিয়ে পবিত্র কর্তব্যটি সম্পন্ন করতে ভুল করে নি ।  কাগজটি টিটিপিকে মানসিক রোগগ্রস্ত সংগঠনের তকমা দিয়ে লিখেছে – “এইসব মানসিক রোগগ্রস্ত স্বঘোষিত ধর্মীয় সংগঠনগুলো সম্ভবত নিজেরা জানেনা, তারা কি চায় ? জানেনা, তা পাওয়ার বাস্তব সম্মত পথ কী ! তারা বন্দুকের নলের সামনে ধর্মকে ঝুলিয়ে রেখে প্রকৃতপক্ষে ধর্মকেই অপমান করছে ।”    
আমাদের প্রশ্ন, আপনারা যদি  পেশোয়ার হত্যাকাণ্ডকে আন্তরিকভাবেই অনৈশ্লামিক ও বর্বর কাজ মনে করেন,  তবে কেনো রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করলেন না ? কেনো  মুসলিম সমাজের কাছে টিটিপি এবং সমস্ত মুসলিম জঙ্গি সংগঠনগুলোর   বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানালেন না ? কেনো ইমামদের কাছে মসজিদে মসজিদে শুক্রবারের জামাতে পেশোয়ারের  ঘটনার  বিরুদ্ধে  তীব্র প্রতিবাদ ও ধিক্কার জানিয়ে নিন্দা প্রস্তাব নিতে আহ্বান জানালেন না ?  কেনো সমস্ত মাদ্রাসাগুলির কাছে  অনুরূপভাবে  প্রতিবাদ ও নিন্দা জানানোর  কর্মসূচী গ্রহণ করার আহ্বান জানালেন  না  আপনারা  মুখে  বলছেন, আমরা  জঙ্গি কার্যকলাপের বিরুদ্ধে, আবার  জঙ্গিদের বিরুদ্ধে যখন পুলিশি  তৎপরতা হচ্ছে  তখন  আপনারাই সেই তৎপরতাকে মুসলিম বিরোধী তকমা দিতে মুহূর্ত বিলম্ব করছেন না ।  আপনারা অতি তৎপর হয়ে উঠছেন জঙ্গিদের বিরুদ্ধে  পুলিশি  তৎপরতা ঠেকাতে  জঙ্গিদের ধরলেই বলছেন, মুসলমানদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে   আপনাদের এই [অপ]তৎপরতা যে শুধু বিবৃতি প্রদানের   মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে তা নয়  আপনারা খাগড়াগড় বিষ্ফোরণ কাণ্ডে হাতেনাতে ধৃত জঙ্গিদের পক্ষে আদালতে উকিল নিয়োগ করতেও দ্বিধা করেন নি    খাগড়াগড় কাণ্ডে ধৃত  জঙ্গিদের  মুক্তির দাবিতে  এবং বাকি জঙ্গিদের খোঁজে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা বাহিনী যে তৎপরতা চালাচ্ছে  তার বিরুদ্ধে  আপনারাই তো অজস্র সভা-সমাবেশ করে মুসলমানদের রুখে দাঁড়ানোর জন্যে আহ্বান জানিয়েছেন । জঙ্গি কার্যকলাপের সঙ্গে সম্পৃক্ত  মাদ্রসাগুলি  এবং সন্দেহ ভাজন জঙ্গিদের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয়  বাহিনীর তৎপরতা আটকাতে গত ২৯ শে নভেম্বর শহিদ মিনারে আপনারা লক্ষাধিক মানুষ জমায়েত করেছেন ।   তো আপনারা জঙ্গিদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক অভিযান রুখতে এতো সক্রিয় ও তৎপর হতে পারেন, আর জঙ্গিদের নাশকতা ও সন্ত্রাসমূলক কাজের বিরুদ্ধে শুধুই বিবৃতি ?  
তবু  আপনাদের  কথায় মানুষ বিশ্বাস রাখে এবং  প্রতারিত হয় । আপনারা যখন বলেন ইসলাম শান্তির ধর্ম, ইসলামে হিংসা ও হত্যার স্থান নেই, তখন আপনাদের  কথাগুলি সত্যি বলে    মুসলিম সমাজ বিশ্বাস করে অন্যরাও অনেকেই বিশ্বাস করে   মানুষ এটা বিশ্বাস করে  সরলভাবেই, কারণ  আল্লাহ ও  আল্লাহর নবীর কাছে তারা তো এটাই প্রত্যাশা করে ।  আল্লাহ ও তার নবী  বিধর্মী এবং মুনাফেক মুসলমানদের বিরুদ্ধে হিংসা ও হত্যার কথা  বলতে পারে –  এমনটা  তো  সরল ও সাধারণ মানুষের বোধ ও বিশ্বাসের অতীত 
আপনারা যখন আপনাদের সপক্ষে বলেন, এক]. মুসলমান  হয়ে কেউ যদি আর একজন মুসলমানকে হত্যা করে তবে ইসলামে তার জন্যে কঠোর শাস্তির বিধান আছে,  দুই]. মুসলমানরা কিছুতেই শিশুদের হত্যা করতে পারে না, কারণ ইসলামে তা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ,  এবং তিন]. ইসলাম যেহেতু শিক্ষাকে সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদান করেছে, তাই  মুসলমানরা কিছুতেই স্কুলে হামলা চালিয় পড়ুয়াদের হত্যা করতে পারে না,  তখন সাধারণ মুসলিমরা এই কথাগুলি সহজেই বিশ্বাস করেন । বিশ্বাস করেন,  কারণ  এই কথাগুলি তো সম্পূর্ণ  ভিত্তিহীন নয়কোরানে তো ৪/৯৩ নং  আয়াতে ঘোষণা করেছে যে,  মুসলমান হয়ে মুসলমানকে হত্যা করলে তাকে জাহান্নামে  যেতে হবে   আর এটাও শোনা যায় যে শিক্ষার জন্যে মুহাম্মদ প্রয়োজনে চীনে যেতেও বলেছেন  । সুতরাং আপাত দৃষ্টিতে এ দাবি অবিশ্বাস করার কোনো কারণ থাকতে পারে না যে  পেশওয়ার-হত্যাকাণ্ড মোটেই  ইসলাম সম্মত  নয় ।   কিন্তু মুশকিল হলো এই যে, উলামা  ও মুসলিম বুদ্ধিজীবীগণ নিরন্তর এরূপ দাবি করে যাচ্ছেন একদিকে, অপরদিকে আর একদল উলামা একের পর এক হত্যাকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেনতাঁদের আবার নরমতম লক্ষ্যবস্তু হচ্ছে স্কুল এবং  স্কুলের   ছাত্র-ছাত্রীরা    গতবছর এই টিটিপিই পাকিস্তানেরই  একটি গীর্জায় হানা দিয়ে বহু মানুষকে হত্যা করেছে যাদের মধ্যে বহু শিশুও ছিলো । নাইজিরিয়ার জঙ্গি সংগঠন ‘বোকো হারাম’ গত এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি  একটি স্কুলে হানা দিয়ে ২৭৬ জন ছাত্রীকে অপহরণ  করে । আবারো খুব সম্প্রতি তারা উত্তর নাইজিরিয়া থেকে ১৭২ জন নারী ও শিশুকে কঅপহরণ করেছে । আইএস কয়েকদিন আগে ইরাকে কয়েকটি খৃষ্টান শিশুকে নির্মমভাবে হত্যা করেছেস্বভাবতঃই যে প্রশ্নটি আমাদের মতো যুক্তিবাদী মানুষদের, এমনকি সাধারণ মুসলমানদেরও তাড়া করে ফেরে,  তা হলো,  কারা ঠিক বলছেন ? ইসলাম কি সত্যিই শান্তির ধর্ম ? না কি ইসলাম আসলে জিহাদি ধর্ম ?
এর উত্তর খুঁজতে গিয়ে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে এ দেশের উলামা ও মুসলিম বুদ্ধিজীবীরা যা বলছেন তা হয় অসম্পূর্ণ, নয়তো অর্ধসত্য যা মিথ্যার চেয়েও ভয়ঙ্কর,নয়তো সম্পূর্ণ মিথ্যা  যেমন,  মুসলমান হয়ে মুসলমানকে হত্যা করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ - এ কথা সত্যি ঠিকই, কিন্তু  অসম্পূর্ণ । এই বিধানের  আর একটি দিক আছে  । সেখানে কোরান বলেছে সব মুসলমানই প্রকৃত মুসলমান নয় । বহু মুসলমান আছে যারা মুখে এক কথা বলে আর অন্তরে অন্য কিছু বিশ্বাস করে ।  তারা ইসলামের  পরিভাষায় মুনাফেক [কপট]কোরান  এ প্রসঙ্গে   নং আয়াতে বলেছে – “মানুষের মধ্যে এমন কিছুও আছে যাহারা বলে, আমরা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসী, আসলে তাহারা বিশ্বাসী নহে ।  তাহারা আল্লাহ ও মুমিনগণকে ধোঁকা দিতে চাহে । অথচ তাহারা নিজেদেরকেই ধোঁকা দেয় ।” [২/৮,৯]  মুনাফেকদের সম্পর্কে কোরান বলেছে -  “মুনাফেক নরনারী  একে অপরের দোসর, কুকাজের নির্দেশ দেয়, সৎকর্মে নিষেধ  করে ।”  [৯/৬৭]   কোরান তো মুনাফেকদের বিরুদ্ধে  যুদ্ধ করার আদেশও  দিয়েছে  -  “হে নবী ! কাফির ও মুনাফিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করুন ও কঠোর হউন, তাহাদের  আবাস জাহান্নাম, উহা নিকৃষ্ট স্থান ।”  [৯/৭৩]   কোরান বলছে মুনাফেকদের একটা বিশেষ বৈশিষ্ট হলো তারা  সৎকাজে বাধা দেয় কিন্তু  কোনটা সৎকাজ ?  প্রধান সৎকাজগুলির একটা হলো  ইসলামের জন্যে   জিহাদ করা    কোরান   বলছে - তোমাদের প্রতি যুদ্ধে-বিধান দেওয়া  হইল, যদিও উহা তোমাদের কাছে অপ্রিয়, সম্ভমবতঃ তোমরা যাহা খারাপ মনে কর, তাহাই তোমাদের জন্যে ভাল; আর যাহা ভাল মনে কর তাহাই  তোমাদের জন্য খারাপ ।  [২/২১৬]   যুদ্ধ কতদিন করতে হবে ?   কোরান বলছে – “যুদ্ধ কর যতদিন ফিতনা [অশান্তি] দূর না হয়, এবং আল্লাহর দ্বীন [ধর্ম] প্রতিষ্ঠিত না হয় । [২/১৯৩, ৮/৩৯] 
শিক্ষা সম্পর্কে  তাঁরা যা বলেন তা  অর্ধসত্য  ইসলামি শিক্ষার  প্রধান কথাটি হলো আল্লাহ ও তার নবীর আস্থা ও আনুগত্যকে আরো আরো দৃঢ় করতে হবে অবতীর্ণ হওয়া প্রথম সুরাটি [অধ্যায়টি] সেই কথাটিই দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ঘোষণা করছে - “ পড়ুন, রবের নামে, যিনি সৃজিলেন । মানুষকে রক্তপিণ্ড হইতে সৃজিলেন । পড়ুন, রব [আল্লাহ] সম্মানিত, যিনি কলমে শিখাইয়াছেন, মানুষের অজানাকে শিখাইলেন ।” [৯৬/১-৫]  তাই নির্দেশ হলো কোনো কাজ শুরু করার আগে বিসমিল্লাহের রহমানের রাহিম [করুণাময় আল্লাহর নামে শুরু করছি] বলতে হবে বা লিখতে হবে   হবেই ।  কে না জানে যে আধুনিক শিক্ষা ইসলামি শিক্ষার সঙ্গে সাংঘর্ষিক আধুনিক শিক্ষা ঈশ্বরের নামে পড়তে শেখায় না । আধুনিক শিক্ষা শেখায় -সূর্য নয় পৃথিবী ঘোরে; পৃথিবী চ্যাপ্টা ও সমতল নয়, গোলাকার; খরা,বন্যা,ভূমিকম্প, সুনামি প্রভৃতি প্রাকৃতিক দুর্‍্যোগগুলি ঈশ্বরের প্রকোপে হয় না; রুজি-রুটির মালিক বা ভাগ্যবিধাতা ঈশ্বর নয়; ইত্যাদি ইত্যাদি ।  এই হলো আধুনিক শিক্ষা যা মুসলমানদের ইমান [বিশ্বাস] দুর্বল করে দেয় । তাই  ইসলামের চোখে   স্কুল-কলেজগুলি  ইসলামের শত্রু এবং এ সব স্কুলে যারা পড়ে ও পড়ায় তারাও ইসলামের শত্রু   অতএব ধ্বংস করো শত্রু-স্কুলগুলি, খতম করো মুনাফেকদের বাচ্চাদের যারা ইসলামবিরোধী জ্ঞান অর্জন করছে ।  টিটিপি তাই গত ৪/৫ বছরে এক হাজার  স্কুল বন্ধ করে দিয়েছে এবং বাকি সমস্ত স্কুল বন্ধ করতে হবে বলে ফতোয়া দিয়েছে   আমাদের দেশের উলামাও তাই দেখতে পাই সরকারের কাছে কখনো ভুল করেও স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় চায় না, সরকারের কাছে কেবল মাদ্রাসা চায় ।  টিটিপির কৃত হত্যাকাণ্ডকে  আমরা যে চোখেই  দেখি  না কেন, ইসলামি শিক্ষা ও সংস্কৃতির বিচারে একদম সঠিক কাজ ।  আধুনিক শিক্ষার মূলোৎপাটন করাই ইসলামের প্রধান লক্ষ্য । মুহাম্মদের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ও প্রিয় সাহাবী এবং দ্বিতীয় খলিফা ওমর ফারুক স্বয়ং  আলেকজান্দ্রিয়ার আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বিশাল লাইব্রেরীটি পুড়িয়ে ভষ্মীভূত করে দিয়েছিলেন ।
আর শিশুদের হত্যা করা ইসলামে  কঠোরভাবে নিষিদ্ধ এমন দাবি তো মনগড়া । বরং এটাই নির্মম সত্যি যে জিহাদের ময়দানে শিশু ও নারী বলে কোনো ছাড় নেই ।  ইমাম আল-গাজ্জালি, মুহাম্মদের পর যাঁকে  সর্বোচ্চ ইসলামি পণ্ডিত বলে মান্য করা হয়, বলেছেন -  ‘ দুর্গের ভিতরে যদি নারী ও শিশুরাও থাকে তবুও তাদের ভিতর ভারী পাথর ও তীর নিক্ষেপের যন্ত্র ব্যবহার করা যেতে পারে, তাদের পুড়িয়ে বা ডুবিয়ে মারা যেতে পারে ।’ স্কুলগুলি যে ইসলামের শত্রুদের দূর্গ তা বলা বাহুল্য ।

বাংলাদেশের গণঅভ্যুত্থানে ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাইনি – পাঁচ

  দ্বিতীয় অধ্যায় শেখ হাসিনা ও শেখ মুজিবের প্রতি তীব্র গণরোষের নেপথ্যে ২০২৪ এর জুলাই অভ্যুত্থানের সফল পরিসমাপ্তি ঘটে ৩৬ দিন পর (৫ই ...