Wednesday, July 23, 2014

আইএস জঙ্গিরা ইরাকের মসুল শহর ছেড়ে যেতে বাধ্য করলো ২৫০০০ খৃস্টানকে


সময় সীমা ছিলো গত রবিবার (২০.০৭.১৪) সকাল স্থানীয় সময় ৯টা পর্যন্ত। হয় ইসলাম গ্রহণ করবে, নতুবা জিজিয়া কর দিবে, নতুবা খেলাফত (ইসলামিক স্টেট, IS) ত্যাগ করে চলে যাবে, নতুবা মৃত্যুর জন্যে তৈরী থাকবে। ইরাকের মসুলে সদ্য স্থাপিত ইসলামি খেলাফতের পক্ষ থেকে চরম নোটিশ দেওয়া হয়েছিলো খৃষ্টানদের। সমস্ত খৃষ্টান, সংখ্যায় ২৫০০০,  তিন নম্বর অপশনটা বেছে নিয়ে সদ্য স্থাপিত ইসলামি খেলাফতের রাজধানী শহর ‘মসুল’ ত্যাগ করে চলে গেলো অজানা ঠিকানার উদ্দেশ্যে সময়সীমা অতিক্রম করার আগেইএ ছাড়া তাদের অন্য কোনো বিকল্প ছিলো না প্রাণে বাঁচার জন্যে। না পালালে ইসলামি খেলাফতের আল্লাহর সৈনিকরা সকল প্রাপ্ত বয়স্ক খৃষ্টানদের শিরচ্ছেদ করে নির্মমভাবে হত্যা করতো এবং নারী ও শিশুদের ক্রীতদাস ও ক্রীতদাসী  বানাতো। মসুল শহর এখন খৃষ্টানশুন্য হলো  এবং  ইরাকের ইতিহাসে  এমন ঘটনা ঘটলো এই প্রথমপ্রসঙ্গত উল্লেখ্য, মসুল হলো ইরাকের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর।  
ইরাক ও সিরিয়ায় অনেকদিন ধরে গৃহযুদ্ধ চলছে।গৃহযুদ্ধের নেতৃত্ব করছে আই.এস.আই.এল (ইসলামিক স্টেট অফ ইরাক এন্ড লেভ্যান্ট) আই.এস.আই.এল অবশ্য অধিক পরিচিত আই.এস.আই.এস (ইসলামিক স্টেট অফ ইরাক এন্ড সিরিয়া) নামেএই সংগঠনের জঙ্গি মুসলিমরা সকলেই সুন্নি মুসলিম। তারা ইরাক ও সিরিয়ায় জিহাদ করছে ইসলামি রাষ্ট্র স্থাপনের উদ্দেশ্যে। হাজার হাজার মুসলিম পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে গিয়ে যোগ দিয়েছে তাদের সঙ্গে যাদের মধ্যে ভারত থেকে যাওয়া কিছু জঙ্গিও রয়েছে। এই মুজাহিদরা (জিহাদি) আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত এবং তারা নিজেদেরকে পবিত্র জিহাদের জন্যে উৎসর্গীকৃত করেছে। তারা বিশ্বাস করে তাদের জয় হবেই কারণ, আল্লাহ তাদের সহায় এবং জিহাদের পথে যাদের মৃত্যু হবে তারা আল্লাহর কাছে শহিদের মর্যাদা লাভ করবে। তারা এও বিশ্বাস করে যে সত্যিকারের মুসলমানদের এরূপ মৃত্যু সর্বাধিক গর্বের ও আনন্দেরও, কারণ মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে তারা জান্নাতে (স্বর্গ) প্রবেশ করবে যেখানে ৭২ জন অপ্সরা/হুর তাদেরকে বরণ করে  নেবার জন্যে বেহেস্তের দ্বারে অপেক্ষা করবে। বেহেস্তে অঢেল বন্দোবস্ত থাকবে মদ-তারির (সুরা)। বেহেস্ত এমন জায়গা যেখানে মহান আল্লাহ মুজাহিদদের অনন্ত আনন্দ ও সুখের জন্যে চির যৌবনা স্বর্গীয় সুন্দরী নারী ও মদ সহ এলাহি ব্যবস্থার পরিপূর্ণ আয়োজন করবেআর জিহাদ না করলে জাহান্নামে (নরকে) ঠাঁই হবে, যেখানে অনন্তকাল আগুনে পুড়ে অপরিসীম যন্ত্রণা ভোগ করতে হবে। নরকের আগুন থেকে নিষ্কৃতি পেতে এবং বেহেস্তের লোভে ভীতু ও লোভী এবং বিবেকহীন নির্বোধ মুসলমানরা তাই জিহাদের রাস্তাটাই বেছে নিচ্ছে দলে দলে।  তারা মৃত্যুকে তুচ্ছ জ্ঞান করে অমুসলমানদের উপর এবং যে মুসলমানরা তাদের বিচারে ইসলামের আসল পথ ত্যাগ করেছে তাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ছে। এই মুসলমানরা  হাজারে হাজারে ISIS – এর পতাকা তলে সংগঠিত হয়ে ইরাক ও সিরিয়ার রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে জিহাদ পরিচালনা করছে।     
 
                           ইসলামী রাষ্ট্র তথা খেলাফত স্থাপন

ইরাক ও সিরিয়ার সরকার এই গৃহযুদ্ধটিকে শিয়াদের বিরুদ্ধে সৌদি আরবের মদতপুষ্ট সুন্নীদের ষড়যন্ত্রমূলক বিদ্রোহ  বলে মনে করেতারা সর্বশক্তি নিয়োগ করছে বিদ্রোহীদের দমন করার  জন্যে। কিন্তু রাষ্ট্রের ভাড়া করা সৈনিকরা পেরে উঠছে না আল্লাহর রাহে (পথে) পবিত্র জিহাদের পথে যারা নিজেদের জীবনকে সম্পূর্ন উৎসর্গ করে দিয়ে মরণপণ জিহাদ (যুদ্ধ) করছে তাদের সঙ্গে। ফলে ইরাক ও সিরিয়ার   সামরিকবাহিনী সুন্নি বিদ্রোহীদের (মুজাহিদদের) কাছে পরাস্ত হয়ে অনেক খানি পিছু হটতে বাধ্য হয়েছে। সেই জায়গাগুলিতে দখল নিয়ে ইসলামি শাসন কায়েম করেছে ISIS। সেই দখলকৃত  অঞ্চলের  মধ্যেই  রয়েছে ইরাকের ২য় বৃহত্তম শহর মসুল দখলকৃত অঞ্চলে  তারা ইসলামি খেলাফত প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়েছে। খেলাফত প্রতিষ্ঠার পর তারা তাদের সংগঠন ও খেলাফতের নাম দিয়েছে আই.এস তথা IS (ইসলামিক স্টেট)। নতুন এই খেলাফতের  খলিফা নির্বাচিত হয়েছেন ইরাকের অধিবাসী আবুবকর আল-বাগদাদি
একট বিশেষ লক্ষ্যনীয় ঘটনা হলো, এই খেলাফত তারা ঘোষণা করেছে এ বছরের পবিত্র রমজান মাসের প্রথম দিন (ইংরাজী জুন মাসের ২৯ তারিখ, শনিবার)খেলাফত ঘোষণা করেই তারা জানিয়ে দিয়েছে যে সমগ্র পৃথিবীর বুকে ইসলামি রাষ্ট্র স্থাপন করাই তাদের লক্ষ্য।  সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে প্রথম ধাপে  ২০২০ সাল পর্যন্ত কোন কোন দেশ তারা দখল করবে তার একটা একটা রোডম্যাপ তৈরী করেছে। সেই রোডম্যাপের মধ্যে পড়ছে মধ্য প্রাচ্য, এশিয়া মহাদেশের বৃহৎ অঞ্চল, উত্তর আফ্রিকা, স্পেন ও বাল্কান স্টেটগুলি। 
                       আইএসের বীভৎস শরিয়তি তাণ্ডব
  
দখলিকৃত অঞ্চলে মুজাহিদরা শিয়া সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষ ও তাদের সমস্ত ধর্মীয় সৌধগুলির উপর বেপরোয়া হত্যালীলা ও ধ্বংসলীলা চালাচ্ছেতারা ইতিমধ্যেই ফাঁসীতে  ঝুলিয়েছে সেই বিচারককে যে সাদ্দাম হোসেনকে  মৃত্যুদন্ড  প্রদান করেছিলো।  তারা ইরাক ও সিরিয়ার কয়েক হাজার সেনাকে বন্দি করে পরে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। এমনকি শিয়া সম্প্রদায়ের অসামরিক মানুষদেরও নির্বিচারে হত্যা করছে। শিয়াদের  স্মৃতিসৌধ ও মাজার সহ  যা কিছু স্মারকচিহ্ন ছিলো তার সব কিছুই ধ্বংস করেছে  নির্বিচারেএই বীভৎস ও বর্বর হত্যাকান্ড ও ধ্বংসলীলা  আজো সমানে অব্যহত রয়েছে। শিয়া নামটাই মুছে দিতে চাইছে ওরা ওদের খেলাফতের নিয়ন্ত্রণাধীন ভূখন্ড থেকে। বস্তুতঃ সুন্নি মুসলমানরা পৃথিবীর বুক থেকেই সকল শিয়াদের ও শিয়া নামটাই মুছে দিতে বদ্ধ পরিকরতারা মনে করে শিয়ারা মুসলমানই নয়, তারা আল্লাহ ও মুহাম্মদের প্রদর্শিত পথ ত্যাগ করে বিপথগামী হয়েছে এবং মুসলমানদের ভুল পথে পরিচালিত করছে। তারা প্রবলভাবে বিশ্বাস করে যে  শিয়ারা কাফিরদের থেকেও ইসলাম ও মুসলমানদের বড়ো শত্রু এবং তাদেরকে হত্যা করা ও পৃথিবী থেকে মুছে দেওয়া পবিত্র ইসলামি কর্তব্য।
ধর্মীয় বিশ্বাসের কারণে বা অন্য যে কারণেই হোক, কাউকে হত্যা করা, কিংবা কাউকে নির্বাসিত করা চরম অমানবিক,  পৈশাচিক ও ঘৃণ্য কাজ। মানবাধিকার লঙ্ঘন ও হরণের এর চেয়ে খারাপ দৃষ্টান্ত আর হয় না। সেই কাজ করছে আইসিসের জঙ্গি মুসলমানরা আল্লাহ ও মুহাম্মদেরর নামে। একই রকম কাজ করছে পৃথিবীর নানা প্রান্তে অন্য মুসলিম জঙ্গি সংগঠনের মুজাহিদরাওবস্তুতঃ সারা বিশ্বে ইসলামের পতাকা নিয়ে মুসলিম জঙ্গিরা কখনও চোরাগোপ্তাভাবে, কখনও সরাসরি জিহাদি অভিযানের মাধ্যমে ইসলাম ও মুসলমানের শত্রু আখ্যা দিয়ে ব্যাপক হত্যাকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে। গোটা বিশ্বকেই তারা এক মৃত্যুপুরী বানিয়ে ফেলতে মত্ত হয়ে  উঠেছে।
তাদের এইসব নিষ্ঠুর, নির্মম, পৈশাচিক, বর্বর ও অমানবিক কর্মকান্ড কিন্তু মোটেও ইসলামবিরোধী নয়। খৃষ্টানদের বিতাড়ন ও শিয়া মুসলিমদের নির্মমভাবে গণহত্যা করা এবং তাদের স্মৃতিসৌধ  ও মাজারগুলি ধ্বংস করা, প্রভৃতি কাজগুলি সম্পূর্ণই ইসলামসম্মত। যারা মুখে মুসলমান, কিন্তু হৃদয়ে নয়,  তারা ইসলামের পরিভাষায় মুনাফিক। তাদের বিরুদ্ধে কড়া শাস্তির কথা আল্লাহ ঘোষণা করেছে  কোরানের ২/৮, ৯ ও ১০ নং আয়াতে। আল্লাহ বলেছে – “মানুষের মধ্যে এমন মানুষ আছে যারা  বলে – আমরা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসী, অথচ তারা বিশ্বাসী নয়। ... তাদের অন্তরে রোগ আছে, অনন্তর আল্লাহ তাদের  রোগ বৃদ্ধি করেছেন, তাদের জন্যে গুরুতর শাস্তি আছে।” সুন্নিদের চোখে শিয়ারা সেই সম্প্রদায়ভুক্ত অর্থাৎ মুনাফিক গোত্রভুক্ত যাদের অন্তরে রোগ আছে এবং আল্লাহ তাদের রোগ  বৃদ্ধি করেছে। সতরাং তারা (শিয়া সম্প্রদায়) আল্লাহর শত্রু ও কঠিন শাস্তি পাওয়ার যোগ্য। আর ইহুদি ও খৃষ্টানরা তো আল্লাহর ঘোষিত শত্রু। কোরানে এরূপ অসংখ্য আয়াত আছে। একটি আয়াতে আল্লাহ মুসলমানদের ওদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার আদেশ দিয়েছে যতক্ষণ না ওরা মুসলমানদের অধীনতা স্বীকার করে ও স্বহস্ত্বে জিজিয়া  দিতে সম্মত না হয়।  কোরানের সেই আয়াতটি (৯/২৯) হলো – “যাদের গ্রন্থ দেওয়া হয়েছে তাদের মধ্যে যারা সত্য ধর্ম স্বীকার করে না, তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করো যে পর্যন্ত না তারা অধীনতা স্বীকার করে স্বহস্তে জিজিয়া দেয়।”  “যাদের গ্রন্থ দেওয়া হয়েছে” – এই কথাগুলি ইহুদি ও খৃষ্টানদের সম্পর্কে বলা হয়েছে।
এক ধরণের লোক আছে যারা বলে ইসলামে হিংসা, ঘৃণা, ও হত্যার স্থান নেই এবং যে জঙ্গি সংগঠনগুলি হিংসাত্মক কর্মকান্ড চালাচ্ছে জিহাদের নামে তা অনৈসলামিকএরূপ  দাবি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।  রূপ প্রচারণা সম্পূর্ণ মিথ্যাচার এবং মানুষের সঙ্গে প্রতারণা বৈ নয়। বস্তুত ইসলাম ধর্ম এবং  তার ধর্মগ্রন্থ কোরান ও হাদিসের মধ্যেই হিংসাত্মক ও ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ডের বীজগুলি নিহিত রয়েছে। যতদিন পৃথিবীর বুকে কোরান ও হাদিসের চর্চা করার সুযোগ থাকবে ততদিন মুসলিম সন্ত্রাসবাদী কর্মকান্ড অব্যাহত থাকবেইসলামি সন্ত্রাস সম্পূর্ন বন্ধ করতে হলে একদিকে মানুষকে হিংসার বিরুদ্ধে সচেতন করতে হবে, অন্য দিকে কোরান ও হাদিস কেন্দ্রিক শিক্ষা নিষিদ্ধ করতে হবে। 

বাংলাদেশের গণঅভ্যুত্থানে ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাইনি – পাঁচ

  দ্বিতীয় অধ্যায় শেখ হাসিনা ও শেখ মুজিবের প্রতি তীব্র গণরোষের নেপথ্যে ২০২৪ এর জুলাই অভ্যুত্থানের সফল পরিসমাপ্তি ঘটে ৩৬ দিন পর (৫ই ...