মমতার হাত ধরে এ রাজ্যে যে
পরিবর্তন এসেছে তা ছিলো মানুষের বহু আকাঙ্খিত। এমনকি বহু বামপন্থী মানুষও
পরিবর্তন চেয়েছিলেন এবং তাদের অনেকেই মমতার দলকে ভোট দিয়েছিলেন। অর্থাৎ মমতার
পক্ষে যেমন ইতিবাচক ভোট ছিলো তেমনি নেতিবাচক ভোটও যথেষ্ট ছিলো। মমতার যে
শ্লোগানটি মানুষকে সবচেয়ে বেশী আকৃষ্ট করেছিলো সেটা ছিলো – বদলা নয়, বদল চাই।
যাঁরা মমতার পক্ষে ইতিবাচক ভোট প্রয়োগ করেছিলেন
তাঁরা ভেবেছিলেন মমতা তাঁর সরকারের কাজের মাধ্যমে নেতিবাচক সমর্থনকে
ইতিবাচক সমর্থনে পরিণত করার প্রয়াস করবেন। কিন্তু না, মমতার অনুরাগীদের সে আশা পূরণ
হয় নি।
মমতার সরকারের কাজে ‘বদলা নয়,
বদল চাই’ – এর প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। যাঁরা আশা করেছিলেন বাম জামানার অপশাসন ও
কুশাসনের পরিবর্তন হবে এবং স্বচ্ছ ও
সুশাসন প্রতিষ্ঠার প্রয়াস করবেন মমতা তাঁদের আশা ভঙ্গ হয়েছে। পুলিশের ভূমিকা খুবই
নৈরাশ্যজনক – হয়, নিষ্ক্রিয় থাকছে, না হয় খুবই সক্রিয় হতে দেখা যাচ্ছে। পুলিশের
অধিকাংশই আগে সিপিএমের তাবেদারি করতো, এখন অবস্থার আরো অবনতি হয়েছে এবং প্রায়
সমস্ত পুলিশই শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের তাবেদারি করছে। পুলিশের তাবেদারিত্ব বাম
জামানার চেয়ে অনেক বেশী নগ্ন ও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে। ফলে দুষ্কৃতিদের কার্যকলাপ ক্রমাগত বেড়ে চলেছে, এবং বাড়ছে নারীর উপর অত্যাচার ও ধর্ষণের ঘটনাও। নারীর উপর অত্যাচারের ঘটনায় পশ্চিমবঙ্গ তো ভারতের শীর্ষে পৌঁছে গেছে যা বাঙালি হিসেবে
আমাদের ভীষণ লজ্জিত করেছে। কলেজগুলিতে
আগে এসএফআই দৌরাত্ম চালাতো, এখন টিএমসির ছাত্র সংগঠন চালাচ্ছে , কিন্তু টিএমসিপির
দৌরাত্ম এসএফআই – এর দৌরাত্মকে বহুগুণ ছাপিয়ে গেছে। গণতন্ত্র ও বাক স্বাধীনতার
উপর নগ্নভাবে হস্তক্ষেপ করছে মমতা ব্যানার্জির সরকার। মুখ্যমন্ত্রী মমতা
ব্যানার্জী বলেছেন সংবাদপত্রের উপর কাউনসিলিং করা প্রয়োজন। অনুগত হতে অস্বীকার করছে এমন
সংবাদপত্রকে বিজ্ঞাপন দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে তাঁর সরকার। নজরুল ইসলামের (আইপিএস)
সদ্য প্রকাশিত বইয়ের (মুসলমানদের করণীয়) প্রকাশককে যেভাবে ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে
তা কার্যতঃ বইটি নিষিদ্ধ করার সামিল।
এসব কাণ্ড দেখে যাঁরা মমতাকে মনেপ্রাণে
ভালবাসেন, সমর্থন করেন, শ্রদ্ধা করেন তাঁরাও
হতাশ। তাঁদের একাংশ ইতিমধ্যেই মুখ খুলতে শুরু করেছেন। সবচেয়ে বড়ো
উদ্বেগের কথা হলো মমতা সমস্ত সমালোচনা ও প্রতিবাদকে সিপিএমের ষড়যন্ত্র বলে উড়িয়ে
দিচ্ছেন যেমন সিপিএম সকল বিরোধী আন্দোলনে আমেরিকার ষড়যন্ত্র দেখতো।
হতাশা দেখা যাচ্ছে মুসলমানদের মধ্যেও। তারা এর আগে
কংগ্রেস ও সিপিএমের কাছে প্রতারিত হয়েছেন,
তাঁদের অনেকেই আশা করেছিলেন যে তাঁদের উন্নতির জন্যে মমতা এবার সত্যিই কিছু করবেন। তাঁরা অন্ততঃ এটা বিশ্বাস করতেন যে মমতা
আর যাই করুক তাঁদের সঙ্গে প্রতারণা করবেন না। কিন্তু তিনি এক্ষেত্রেও বাম ও কংগ্রেস সরকারের নীতির পরিবর্তন করার কোনো আগ্রহ এ পর্যন্ত দেখান নি। কংগ্রেস ও সিপিএমের
মতোই তিনিও মোল্লাতন্ত্র-তোষণের পথ ধরেই হাঁটছেন।
মোল্লাতন্ত্রকে তোষণে মুসলমানদের অপকার বৈ উপকার বা ক্ষতি বৈ উন্নতি যে হয় না তা সর্বজন সুবিদিত। মুসলমানদের উন্নতির নামে মমতা এ
পর্যন্ত যা করেছেন তাতে মুসলমান সমাজে কোনো কল্যাণ হবে না, বরং তাদের আরো অকল্যাণ ও ব্যাপক ক্ষতিই হবে। ক্ষতি হবে সমগ্র
দেশ ও সমাজেরই। মোদ্দা কথা হলো মুসলমানদের উন্নতির নামে মমতা যা করেছেন তা মুসলমানদের সঙ্গে প্রতারণা ব্যতীত নয়।
মমতা ব্যানার্জী এ পর্যন্ত মুসলমানদের উন্নতির নামে যে কাজগুলি
করেছেন এবং করে চলেছেন সেগুলি হলো – এক). আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে
‘আলিয়া মাদ্রাসা বিশ্ববিদ্যালয়’ করেছেন। দুই). জোর কদমে হজ ভবনের উন্নতি সাধন ও সম্প্রসারণের
কাজ চলছে। তিন). দশ হাজার মাদ্রাসাকে (ব্যাপক সংখ্যক খারিজি মাদ্রাসা-সহ) সরকারী
অনুমোদন দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। চার). ইমাম
ও মুয়াজ্জিনদের ভাতা মঞ্জুর করেছেন। পাঁচ). এবং নিয়ম করে মুসলমানদের ধর্মীয়
অনুষ্ঠানগুলিতে সপার্ষদ উপস্থিত থাকছেন। বলা বাহুল্য যে এই কাজগুলির কোনোটার
সাথেই মুসলিম সমাজের উন্নতির কোনো যোগ নেই। এখন প্রশ্ন হলো মমতা তাহলে এ কাজগুলি
কেনো রূপায়ন করছেন? করছেন কারণ এই
কাজগুলিই চায় মোল্লাতন্ত্রের প্রতিনিধিরা। তারা বলেছিলো আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় নামটা
পাল্টে আলিয়া মাদ্রাসা বিশ্ববিদ্যালয় করতে হবে।
মমতা ব্যানার্জী নিয়ম-কানুনের তোয়াক্কা না করে একটি সভায় ঘোষণা করে দিলেন
‘আলিয়া মাদ্রাসা বিশ্ববিদ্যালয়’ করে দিলাম। এই ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে উপস্থিত মুসলিম
শ্রোতাদের একাংশের তীব্র
প্রতিবাদ ওঠে। মমতা তখন তৎক্ষণাৎ বলেন, ঠিক আছে, যা ছিলো তাই থাকবে। প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য যে
বিশ্ববিদ্যালয়ের আগে ‘মাদ্রাসা’ শব্দটি বসানোর বিরুদ্ধে প্রথম থেকেই উচ্চ শিক্ষিত মুসলিম
সমাজের একাংশের প্রবল আপত্তি ছিলো। মমতা
এটা জানা সত্ত্বেও তা অগ্রাহ্য করেই ‘মাদ্রাসা’ শব্দটি জুড়ে দিয়েছিলেন যা প্রমাণ
করে মমতা ব্যানার্জীর কাছে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত
মুসলিমদের চেয়ে মোল্লা-মুফতিদের গুরুত্ব
অনেক বেশী।
হজ ভবনের উন্নতি ও সম্প্রসারণের
ফলে উপকৃত হবে যারা হজ করতে যান। তাঁরা তো অতি ক্ষুদ্র অংশ এবং আর্থিকভাবে যথেষ্ট স্বচ্ছল। হজ ভবনে যথেষ্ট স্থানাভাবের কারণে থাকার অসুবিধা
হলে তাঁরা অনায়াসে হোটেলে থাকতে পারেন। সুতরাং হজ
হাউসের উন্নতি ও সম্প্রসারনের কাজ করা জরুরী ছিলো না।
মাদ্রাসা শিক্ষায় মুসলমানরা যে
পিছিয়ে পড়ছে তা তাঁরা উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়েছেন। তাই তাঁরা সাধারণতঃ মাদ্রাসায় তাঁদের ছেলেমেয়েদের পাঠান না। কাছাকাছি হাই স্কুল না পেলে (হ্যাঁ, স্বাধিনতার প্রায় ৭০
বছর পরেও এখনও মুসলিম অধ্যুষিত বহু অঞ্চল আছে যেখানে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ অনুমোদিত হাই স্কুল নেই) অগত্যা মাদ্রাসায় ভর্তি করেন। মুসলিম সমাজ ক্রমশঃ আধুনিক শিক্ষার দিকে ঝুঁকলেও এ কথাও অনস্বীকার্য যে এখনও মুসলিমদের একাংশ মাদ্রাসার প্রতি ভীষণ দুর্বল। এঁরা যে সবাই মোলা-মুফতি-মাওলানা-ইমাম তা নয়। এমনকি
যাঁরা বুঝেছেন যে মাদ্রাসায় পড়ালে ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যত অন্ধকার তাঁদেরও মাদ্রাসার
প্রতি সীমাহীন দুর্বলতা দেখা যায়। মাদ্রাসা
গড়ে তোলার জন্যে তাঁরাও অকাতরে অর্থ সাহায্য করেন। একদিকে মুসলিমদের থেকে প্রাপ্ত
বিশাল অর্থ ভাণ্ডার, অপরদিকে সৌদি আরব এবং মধ্য প্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে আসা
অঢেল অর্থ – এই বিপুল অর্থের দৌলতে চারিদিকে ব্যাঙের ছাতার মতো ক্রমাগত গজিয়ে উঠছে শ’য়ে শ’য়ে
খারিজি মাদ্রসা। এই সব মাদ্রাসা পরিচালনা করেন মোল্লা সমাজ। তাঁরাই খারিজি সেই
মাদ্রাসাগুলির সরকারি অনুমোদনের দাবিতে সোচ্চার। মোল্লা সমাজকে তুষ্ট করতে বাম
সরকারও বহু মাদ্রাসার অনুমোদন দিয়েছিলো।
সে পথ ধরেই মমতা ব্যানারজী ক্ষমতায় এসে এসেই দশ হাজার মাদ্রাসার অনুমোদন দেবার
সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন। এক সঙ্গে এতো
বিপুল সংখ্যক খারিজি মাদ্রাসার সরকারি অনুমোদনের নজির সারা বিশ্বে নেই।
এটা করে তিনি বোঝালেন যে, মোল্লাতন্ত্রের প্রতিনিধিদের প্রতি বামেদের চেয়েও তাঁর দরদ ঢের বেশী। মোল্লাতন্ত্রকে তুষ্ট করতে গিয়ে
হাজার হাজার মাদ্রাসাকে সরকারী অনুমোদন দেবার ঘোষণার ফল হবে কিন্তু ভয়ঙ্কর। এর
ফলে শুধু মুসলনারাই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না, ক্ষতিগ্রস্ত হবে গোটা দেশ। কেনো তা হবে সে বিষয়ে আলোকপাত
করবো নিবন্ধের একেবারে শেষে।
ইমাম ও মুয়াজ্জিনদের ভাতা দিতে
হবে এ দাবি মুসলমানরা কোনোদিনই তোলেননি, এ দাবি শুধুমাত্র মোল্লা সমাজের। ইমাম ও মুয়াজ্জিনদের যে সমস্যা
আছে তা মুসলমান সমাজের ধর্মীয় অভ্যন্তরীণ বিষয় যা সমাধান করা তাঁদের নিজেদের
কর্তব্য। ওরা সংখ্যায় এতোই নগণ্য যে তাদের কিছু অর্থ প্রাপ্তির সঙ্গে মুসলিম
সমাজের কোনো কল্যাণের কোনো যোগসূত্রই খুঁজে পাওয়া যাবে না। তাছাড়া আর একটি বিষয় যুক্ত রয়েছে এর সঙ্গে।
তাহলো, সরকারী কোষাগার থেকে ধর্মীয় নেতাদের ভাতা দেওয়া অসাংবিধানিক কাজও বটে। তবুও এ কাজের ভার মমতা তাঁর কাঁধে তুলে নিয়েছেন যখন তাঁর সরকার
পূর্ববর্তী সরকারের করে যাওয়া বিপুল ঋণের ভারে ন্যুব্জ এবং যার ফলশ্রুতিতে অনেক জরুরী কাজ করতে তিনি পারছেন না। আর একটি বিষয় বিশেষ লক্ষ্যণীয়, তাহলো, ৩রা
এপ্রিল তিনি ইমামদের ভাতা দেওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পর মাত্র ছ’দিনের মাথায় বের করে দেন
সরকারী বিজ্ঞপ্তি। তারপর
মাত্র ৭৮ দিনের মাথায় ২৬ শে জুন তিনি ইমাম
ভাতার চেক তুলে দেন ইমামদের হাতে। এতো দ্রুততার সাথে সরকারী সিদ্ধান্ত রূপায়ণের
দৃষ্টান্ত সারা বিশ্বে সম্ভবতঃ নেই।
ইমামদের হাতে ভাতা তুলে দেওয়ার পদক্ষেপকে ধন্যবাদ জানিয়ে মোল্লাতন্ত্রের
প্রতিনিধিরা মমতাকে বলেন, মুয়াজ্জিনদেরও ভাতা দিতে হবে। মমতা সে দাবি তৎক্ষণাৎ
মঞ্জুর করেন। এ সব ঘটনা প্রমাণ করে, মমতা ব্যানার্জী মোল্লাতন্ত্রীদের আস্থা,
সহানুভূতি, দোয়া ও দয়া পেতে কতো মরিয়া।
আরো নানাভাবে মমতা মোল্লা
সমাজকে এ বার্তা দিতে যার পর নাই আকুল যে,
অন্য আর সকলের চেয়ে তিনিই তাঁদের অনেক বেশী আপনজন। যেমন তিনি প্রায়শঃই
ছুটে যান মুসলিম সমাজের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে এবং
মুসলিম সংগঠনগুলির মঞ্চে। গিয়ে মোল্লা-মুফতিদের মাঝে মধ্যমণি হয়ে বসেন
মাথায় বোরখা টেনে দিয়ে। সেখানে মুসলিমদের সঙ্গে মোনাজাত (দোয়া)
করেন, বক্তৃতা করার সময় ‘ইনশাল্লাহ’, ‘আল্লাহুয়াকবার’ ‘খোদা
হাফেজ’, ‘সালেমালেকুম’ ইত্যাদি ইসলামি
শব্দগুলি অর্থ না বুঝেই ভুলভাল করে উচ্চারণ করেন। রোযা এপ্তারের (ভাঙা) অনুষ্ঠানেও গিয়ে বসে পড়েন এবং
ঐরূপ আচরণ করেন যেখানে অমুসলিমদের অংশ গ্রহণ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
মাদ্রাসা শিক্ষা শুধু পশ্চাদপদ
নয়, ভয়ংকরও। কেনো তা, সে বিষয়ে এবার একটু আলোকপাত করা যাক। মাদ্রাসা শিক্ষা শুধু পশ্চাদপদ হলে তার মাশুল গুণতে হতো শুধু মুসলমানদেরই
(সেটাও কারো কাম্য হতে পারে না), কিন্তু
ব্যাপারটা কেবল তাই-ই নয়। এর মধ্যে নিহিত রয়েছে এমন এক ভয়ঙ্কর বীজ যা অঙ্কুরিত
হলে তার মাশুল দিতে হবে গোটা দেশ ও সমগ্র
মানবজাতিকে। মনে রাখতে হবে মাদ্রাসা বোর্ড পরিচালিত হাই মাদ্রসার মতো মাদ্রসার
সিলেবাসের মতো নিরীহ সিলেবাস নয় ঐ বোর্ডেরই অধীন সিনিয়র মাদ্রাসা এবং খারিজি
মাদ্রাসার সিলেবাস। এই মাদ্রসার সিলেবাসগুলি প্রধানতঃ কোরান এবং হাদিসকেন্দ্রিক।
সিনিয়র মাদ্রাসার সিলেবাসে রয়েছে নাম মাত্র আধুনিক শিক্ষা, কিন্তু খারিজি মাদ্রসাতে তাও নেই। এসব
মাদ্রসায় পড়ানো হয় কোরান, কোরানের তফসির, হাদিস ও ইসলামের ইতিহাস এবং ভাষা হিসেবে
শেখানো হয় আরবি, উর্দু ও ফার্সী ভাষা। মনে হতে বিদেশী ভাষা শিখলে এবং কোরান, হাদিস ও ইসলামের ইতিহাস পড়লে ক্ষতি
কি, ইসলাম তো শান্তির ধর্ম? না, ব্যাপারটা মোটেই অতো সহজ নয়। ইসলাম আদৌ শান্তির ধর্ম নয় এবং স্বভাবতঃই মাদ্রসায় যা শেখানো হয় তা
সম্পূর্ণরূপেই শান্তি ও সম্প্রীতির পরিপন্থী। হ্যাঁ, অবিশ্বাস্য মনে হলেও এটাই সত্যি যে হিংসা, ঘৃণা
এবং বিদ্বেষপূর্ণ নীতি ও বাণীতে কোরান ও হাদিস এবং ইসলামের ইতিহাস পরিপূর্ণ। এর
সপক্ষে কয়েকটি উদ্ধৃতি দেওয়া যাক। কোরান স্পষ্ট ভাষায়
মুসলমানদের জানাচ্ছে যে বিধর্মীরা তাদের শত্রু এবং তারা যেন তাদের সঙ্গে ভুলেও
বন্ধুত্ব না করে। যেমন কোরান বলছে, “হে মুমিনগণ! মুমিন ছাড়া
কাফেরকে বন্ধুরূপে নিও না।” (৪/১৪৪) কোরান
৩/১১৮ নং আয়াতে বিধর্মীদের বিরুদ্ধে মুসলিমদের মনে তীব্র বিদ্বেষ ও শত্রুতার
মনোভাব তৈরী করার উদ্দেশ্য বলছে, “হে মুমিনগণ! তোমরা মুমিন ব্যতীত অন্য কাউকে
অন্তরঙ্গ বন্ধুরূপে গ্রহণ করিও না, তারা তোমাদের অমঙ্গল সাধনে ত্রুটি করে না। তোমরা কষ্টে
থাক তাতেই তাদের আনন্দ। শত্রুতাপ্রসূত বিদ্বেষ তাদের মুখেই ফুটে ওঠে। আর যা কিছু তাদের মনের মধ্যে লুকিয়ে আছে তা আরও অনেকগুণ বেশী জঘন্য।” এরূপ ভয়ঙ্কর বিদ্বেষপূর্ণ আরো বহু আয়াত আছে কোরানে। প্রশ্ন হলো, মুসলমানরা কি এই আদেশটি উপেক্ষা করতে পারেন?
না, একজন মুসলমান নিজের বিবেক থেকে সে
কীভাবে চলবে, কার সঙ্গে কীরূপ সম্পর্ক রাখবে বা না রাখবে তা স্থির করতে পারেন না।
কোরান এ প্রসঙ্গে ৯/২৩ নং আয়াতে বলছে, “হে মুমিনগণ! তোমাদের পিতা ও ভাই ঈমান বাদে কুফরীকে ভালোবাসিলে
তাহাদেরকে অন্তরঙ্গ বানাইও না; যাহারা বানাই
তাহারাই যালিম।” কোরান তো ইহুদি ও খৃস্টানদের নাম ধরে বলেছে যে
তারা মুসলমানদের শত্রু। ৫/৫১ নং আয়াতে কোরান বলছে, “হে বিশ্বাসীগণ! ইহুদি
ও খ্রিস্টানগণকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না, তারা পরষ্পরের বন্ধু। তোমাদের মধ্যে কেউ
তাদের বন্ধুরূপে গ্রহণ করলে, সে তাদেরই একজন হবে। আল্লাহ্ অত্যাচারী সম্প্রদায়কে
সৎপথে পরিচালিত করেন না।” হাদিসেও
এরূপ আদেশ ও বাণী প্রচুর রয়েছে। এগুলোই পড়ানো হয়, শেখানো হয় এবং মাদ্রাসা পড়ুয়াদের মনে বিধর্মীদের বিরুদ্ধে চির বিদ্বেষ ও বৈরীতা সৃষ্টি করা হয় যা অন্য ধর্মের মানুষদের
সঙ্গে সম্প্রীতি ও সহবস্থানের পথকে রুদ্ধ করে।
জিহাদ মাদ্রাসা সিলেবাসের
একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। জিহাদ ইসলামের প্রতিষ্ঠা ও বিস্তারের ক্ষেত্রে সর্বাধিক
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। জিহাদ মানে বিধর্মীদের সাথে মুসলমানদের সশস্ত্র
যুদ্ধ। জিহাদ সম্পর্কে কোরান কী বলছে তার
কয়েকটা নমুনা দেওয়া যাক। “যেখানেই পাবে তাদের হত্যা করবে। যেখান থেকে তোমাদের
বহিষ্কার করেছে তোমরা তাদের সেখান থেকে বহিষ্কার করবে।” (২/১৯১) দাবি করা হয় যে
ইসলাম যে যুদ্ধের কথা বলেছে তা আক্রমণাত্মক নয়, আত্মরক্ষামূলক। না, তা নয়। যারা
আল্লাহ্র প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেনি তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করার স্পষ্ট নির্দেশ
দেওয়া হয়েছে ৯/২৯ নং আয়াতে। সেখানে বলা হয়েছে,
“যারা আল্লাহ পাক ও পরকালে বিশ্বাস করে না, এবং আল্লাহ ও তাঁর রসুল যা বৈধ করেছেন, তা বৈধ করে না। এবং যাদের গ্রন্থ দেওয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে
যারা সত্য ধর্ম স্বীকার করে না, তোমরা তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করো যে পর্যন্ত তারা অধীনতা
স্বীকার করে স্বহস্তে জিজিয়া না দান করে।” জিহাদি আদেশ মুসলমানদের
জন্যে আজো বহাল তাও স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে কোরানে। দেখুন কোরান কী বলছে ২/১৯৩ নং
আয়াতে – “তোমরা তাদের সাথে জিহাদ করতে
থাকবে যে পর্যন্ত ... আল্লাহর ধর্ম
প্রতিষ্ঠ না হয়।” এ রকম আরো অসংখ্য আয়াত আছে। জিহাদ করার জন্যে মুসলমানদের একদিকে
এ কথা বলে ব্যাপক উৎসাহ দেওয়া হয়েছে যে
জিহাদকারীরা সবাই জান্নাতে (স্বর্গে) যাবে। আবার জিহাদে যেতে অনিচ্ছুকদের এ কথা
বলে ভয় দেখানো হয়েছে যারা জিহাদ না করেই মারা যাবে তারা দোজখে (নরক) যাবে। এ সবই পাঠ দেওয়া হয় শুধু
তাই নয়, মাদ্রসায় সশস্ত্র জিহাদের প্রশিক্ষণও
জিহাদে নামিয়ে দেওয়া হয়। মাদ্রাসা তাই শুধু কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয়,
মাদ্রাসা হলো জিহাদিদের আঁতুর ঘরও বটে। তাই তো যারা জিহাদে নেতৃত্ব করছে বা সামনে থেকে
জিহাদ করছে তাদের প্রায় সবাই খারিজি মাদ্রাসার ছাত্র যাদের মধ্যে রয়েছে লাদেন,
মোল্লা ওমর, কাসভ প্রমুখ ত্রাস সৃষ্টিকারী জিহাদি।
আমাদের দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি হলো সংকীর্ণ দলীয় স্বার্থে
মোল্লা-মুফতি-ইমামদের তোয়াজ ও তুষ্ট করা। এই ধর্মীয় নেতারা যা যা দাবি করে শাসক
দল ও সরকার সে মতোই কাজ করে। আগে কংগ্রেস ও সিপিএম করেছে এখন মমতা করছেন । মমতা
করছেন আরো জঘন্যভাবে ও আরো নগ্নভাবে। এর ফলে মুসলমানরা আরো পিছিয়ে পড়বেন এবং
অপরদিকে মুসলিম মৌলবাদীদের হাত আরো বেশী বেশী করে শক্তিশালি হবে। ওদের হাত যত
শক্তিশালী হবে ততো জাতীয় সংহতি, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, ধর্মনিরপেক্ষতা ও
গণতন্ত্র বিপন্ন হবে।
(এ
নিবন্ধটি লেখা হয় মমতা ব্যানার্জীর সরকারে আসার ১৫ মাসের মধ্যে অর্থাৎ ২০১২ সালের
আগষ্ট মাসের মাঝামাঝি। দৈনিক স্টেটসম্যান এটা ছাপে ঐ বছরেই ২৩শে আগষ্ট। সেই
লেখাটাই একটি পরিমার্জিত করা [আপডেট
নয়] হয়েছে। লেখাটি এখনো অর্থাৎ ২০১৬
সালের এই মার্চেও সম্পূর্ণ প্রাসঙ্গিক)