Monday, March 28, 2016

ধর্মীয় নেতাদের তুষ্ট করা ছাড়া মমতা ব্যানার্জী মুসলিম সমাজের জন্যে কিছুই করেননি



ক্ষমতায় আসার তিন মাস পরই মমতা ব্যানার্জী মুসলমানদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, ‘আমি আপনাদের ৯০% কাজ করে দিয়েছি ।’ আর কুড়ি মাসের মাথায় বলেছিলেন,  ‘৯৯% কাজই  আমি আপনাদের করে  দিয়েছি হ্যাঁ, তিনি যা বলেছিলেন তার মধ্যে এ দাবি প্রচ্ছন্ন ছিলো যে, যে কাজ কংগ্রেস এবং সিপিএম ৬৪ বছরে করতে পারেননি  তা  শেষ করতে  তিনি দু’বছরও সময় নেননি   তাঁর এ দাবিকে  পাগলের প্রলাপ বা ফালতু বলে কিন্তু উড়িয়ে দেওয়া বা উপেক্ষা করা যাবে না । কারণ, ইমাম-মাওলানা-মুফতিগণও বলছেন যে মমতার আমলে মুসলিমদের উন্নয়নের কর্মযজ্ঞ চলছে হেঁজি-পেঁজি ইমাম বা মাওলানারা শুধু বলছেন না, বলছেন  ঐতিহ্যবাহী ‘টিপু সুলতান মসজিদ’ ও ‘নাখোদা মসজিদ’-এর ইমামগণ এবং সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীর মতো বিখ্যাত মাওলানারাও মমতার সমর্থনে  ব্যাট করছেন  নিষিদ্ধ সন্ত্রাসবাদী সংগঠন ‘সিমি’র  পশ্চিমবঙ্গের  প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক আহমদ হাসান ইমরানও ইমরানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের সন্ত্রাসবাদী সংগঠন জামায়াত-উল-মুজাহিদিন (জেএমবি) ও জামাতি ইসলামের যোগ রয়েছে এবং শারদার টাকা তাদের কাছে পাচার করার অভিযোগও রয়েছে । অর্থাৎ তিনি যে সে মুসলিম নেতা নন, একেবারে হাই প্রোফাইল নেতা । এই  স্বনামধন্য ইমরানের ‘শারদা’ ধন্য  ‘কলম’ ১৬ই মার্চ’১৬ ১ম পাতায় মমতার প্রশংসা করে একটি    প্রতিবেদন ছেপেছে যার শিরোনাম হলো -  ‘সংখ্যালঘু উন্নয়নে কথা রেখেছে তৃণমূল সরকার’ । বহিষ্কৃত সিপিএমের নেতা ও প্রাক্তন মন্ত্রী আব্দুর রেজ্জাক মোল্লাও  বলছেন যে মুসলমানদের জন্যে উন্নয়নের যে কর্মযজ্ঞ  চলছে পশ্চিমবঙ্গে তাতে সামিল হতেই তিনি মমতার  হাত ধরেছেন  
মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং  যদি কোনো  দাবি দৃঢ়তার সাথে বারবার উচ্চারণ করেন তখন  সাধারণভাবেই মানুষের মধ্যে তা সঠিক বলে মান্যতা পায় ।  আর মুখ্যমন্ত্রীর কোনো দাবিকে যদি চারিপাশ থেকে সমর্থন দেওয়ার ঢল নামে তখন সে দাবীটি নিশ্চয় সঠিক বলে মানুষ নিঃসংশয়ে বিশ্বাস করতে শুরু করে । মুসলিমদের উন্নয়নের প্রশ্নে তাই ব্যাপক মানুষের মধ্যে, বিশেষ করে ধর্মীয় সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের একটা বিশাল অংশের মধ্যে, এরূপ ধারণা  হয়েছে যে মমতা ব্যানার্জীর আমলে সব চেয়ে বেশী উপকৃত হয়েছে মুসলিম সমাজ । কিন্তু  এ রাজ্যের মুসলিমদের সত্যি সত্যিই কি উন্নতি হয়েছে ? সত্যি সত্যিই তারা এই পাঁচ বছরে সব চেয়ে বেশী উপকৃত হয়েছে ? যদি  সত্যি সত্যিই তেমনটা  হয়ে থাকে তাহলে এটা মানতেই হবে যে মুসলিমরা এ রাজ্যে আর পশ্চাদপদ নয়, তারা তাদের পশ্চাদপদতা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছে  এবং তাদের সকল সমস্যার সমাধান হয়ে গেছে ।   মুসলমানদের সত্যিই কি ব্যাপক উন্নতি হয়েছে, মুসলিমদের জন্যে সত্যিই কি আর সরকারের কিছু করণীয় নেই – এসব   খতিয়ে দেখতেই এই নিবন্ধের অবতারণা ।
এ দেশে এবং এ রাজ্যেও মুসলিমদের অবস্থা শুধু করুণ নয়, মুসলিমরা তপশীলি জাতি-উপজাতিদের চেয়েও তাদের অবস্থা শোচনীয় সেটা প্রথম জানায়  সাচার কমিটি ২০০৬ সালে এবং সাচার কমিটিই এই মিথটাও প্রথম ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছিলো যে পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্টের জামানায় মুসলিমদের ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে । সাচার কমিটির রিপোর্ট অবশ্য  সিপিএম  প্রথমে সঠিক বলে মানতেই চায়নি কিন্তু অক্সফোর্ড থেকে ২০০৪ ও  ২০০৬  সালে যে দুটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছিলো  মুসলিমদের অবস্থা নিয়ে তাতেও  সেই ছবিটাই  উঠে এসেছিলো যা সাচারের কমিটি বলেছিলো  রিপোর্ট দুটি তৈরী করেছিলো ‘ন্যাশনাল কাউন্সিল অফ  আ্যাপ্লায়েড রিসার্চ’ এবং ‘কাউন্সিল অফ সোশ্যাল ডেভেলপমন্ট’   ৮টি গ্রাম সমীক্ষা করে তারা যে দুটি রিপোর্ট  তৈরী করেছিলো তাতে  একদিকে  ছিলো  গ্রম বাংলার অভ্যন্তরে হিন্দুদের সঙ্গে  মুসলমানদের তুলনামূলক অবস্থার চিত্র, এবং আরেক দিকে ছিলো গ্রামীন ভারতের মুসলমান ও    গ্রাম বাংলার  মুসলমানদের তুলনামূলক অবস্থার ছবি । এ নিবন্ধে পরিসিরের স্বল্পতা হেতু সেই চিত্রটির কিয়দংশ তুলে ধরার চেষ্টা করছি ।  
                                                    সারণী - ১
                                                   হিন্দু                               মুসলমান
পারিবারিক বাৎসরিক আয়                   ১৮৮৪১টাকা                       ১৭৪০১টাকা
কাঁচা ঘরে বাস করে                               ৭৯.৯%                           ৮৯.`৯%
বাড়িতে টয়লেট আছে                              ২৪.৫%                          ১৩.৩%
বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ আছে                       ১৭.৪%                           ৯.`৪%
প্রসূতিরা বাড়িতে সন্তান প্রসব করে                ৬২.৮%                          ৯২.৩%
শিশুদের ডিটিপি টীকা                               ৫২.১৮                           ৩১.৯ 
বিসিজি টীকা                                         ৫০.৫৫                          ৩৮.৪

সারণী – ২
                            গ্রামীণ ভারতের মুসলিম                  গ্রামীণ বাংলার মুসলিম
পারিবারিক বাৎসরিক আয়          ২২৮০৭ টাকা                       ১৭৪০১টাকা
কাঁচা ঘরে বাস করে                   ৬৫.৯%                               ৮৯.৯%           
বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ আছে          ৩০%                                  ৯.`৪%
  বাড়িতে টয়লেট আছে                ২৬.৭%                                ১৩.৩%

গ্রামীণ ভারতের মুসলিমদের তুলনায় গ্রাম বাংলার মুসলমানরা যে পিছিয়ে পড়েছিলো বাম জামানায়  তা জানা গিয়েছিলো ভারত সরকারের পরিসংখ্যা ও পরিকল্পনা রূপায়ন দপ্তরের একটি সংস্থার ১৯৯৯-২০০০ সালের একটি প্রতিবেদনেওসেটা হলো এটা
সারণী – ৩
                                          গ্রামীণ ভারতের মুসলমান            গ্রামীণ বাংলার মুসলমান
এক হেক্টর জমির মালিকানা            ১০০০ পরিবারে ৯০০                 ১০০০ পরিবারে ৯৪৮
১০০০ শ্রমদলের কাজ পেয়েছে         ২২জন পুঃ  ১৮জন নারী              ১৮জন পুঃ   ৭জন নারী     
মাথাপিছু ৩০০ টা. ব্যয় করে                    ২৯%                                       ৩০%
 মাথাপিছু ৬২৫ টা. ব্যয় করে                     ১২%                                       ০৫%

মমতা ব্যানার্জী যেহেতু মুসলমানদের জন্যে যা যা করবার দরকার ছিলো তার ১০০% বা তার বেশীই সম্পন্ন করে দিয়েছেন । তাহলে মুসলমানরা নিশ্চয় আর পশ্চাদপদ নেই, তারা আর্থ-সামাজিক ও অন্যান্য সব দিক থেকেই তাদের ব্যাপক উন্নতি ঘটেছে এবং তারা হিন্দু, খৃস্টান, শিখ, জৈন, বৌদ্ধ ইত্যাদি  কোনো সম্প্রদায়ের  থেকেই পিছিয়ে নেই । কিন্তু বাস্তব চিত্রটা সম্পূর্ণই আলাদা । মুসলমানরা যে তিমিরে ছিলো তার চেয়েও বেশী তিমিরে নেমে গেছে । মুসলিমদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার কোনো উন্নতিই হয়নি সেটা ফাঁস হয়ে গেছে নোবেল অর্থজয়ী অর্থনীতিবিদের ‘প্রতীচি’ সংগঠনের রিপোর্টে । সে রিপোর্টটি বলছে, ‘৫৫ শতাংশ মুসলিম উল্লেখযোগ্য পেশার সঙ্গে যুক্ত নয় । ৮০ শতাংশ মুসলিম পরিবারের মাসিক আয় প্রায় পাঁচ হাজার টাকা বা তার কম । ৪৭ শতাংশ মানুষ কৃষির সঙ্গে যুক্ত বা দিন মজুরের কাজ করে । মুসলিম পরিবার ঋণ পান না ব্যাঙ্ক থেকে, ৪৩ শতাংশ মুসলিম ঋণ নেন বন্ধু বা মহাজনের কাছ থেকে । সরকারি চাকরি করে মাত্র ১.৫৪ শতাংশ ।’  প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য যে চাকরির ক্ষেত্রে বাম আমলে অবস্থাটা এর চেয়ে কিঞ্চিত ভালো ছিলো । প্রাথমিক শিক্ষকদের ক্ষেত্রে অবস্থা তো আরো শোচনীয়, মুসলিম শিক্ষক মাত্র ১.৪৫% । 
শিক্ষা হলো উন্নতির মূল চাবিকাঠি । শিক্ষার উন্নতি ছাড়া কোনো দেশ, কোনো জাতি এবং কোনো সম্প্রদায় উন্নতি সাধন করতে পারে নামুসলিমরা সবার চেয়ে পশ্চাদপদ তার প্রধান কারণ হলো তারা শিক্ষায় সব থেকে বেশী পশ্চাদপদ ।  শিক্ষায় মুসলিমরা কীভাবে বাম জামানাতেও অন্য সবার চেয়ে পশ্চিমবঙ্গে ধীরে ধীরে  পিছিয়ে পড়েছে তার চিত্রটি তুলে ধরেছে সাচার কমিটি । সেটা এরূপঃ
সারণী – ৪
                                            প্রাথমিক স্তর  
                                            ১৯৪৮                         ২০০১
মুসলিম                                   ১৪.৬%                         ৫০.৩%  
তপশীলি জাতি-উপজাতি                ১২.৮%                         ৫৪.৪%         
অন্যান্য                                    ৪২.২%                         ৮০.৪%

                                            উচ্চ প্রাথমিক স্তর
                                            ১৯৪৮                         ২০০১
মুসলিম                                    ৭.৫%                          ২৬% 
তপশীলি জাতি-উপজাতি                 ৬.৪%                          ২৯.৯%        
অন্যান্য                                     ৩০.৩%                         ৫৮.১%

                                             মাধ্যমিক স্তর                                               
                                            ১৯৫৩                         ২০০১
মুসলিম                                     ৩.৫%                        ১১.৯%
তপশীলি জাতি-উপজাতি                 ২.৭%                         ১৩.১%         
অন্যান্য                                     ১৯.৭%                         ৩৮%
মমতা ব্যানার্জীর পাঁচ বছরে মুসলিমদের শিক্ষার এই করুণ চেহারার কি উন্নতি হয়েছে ? না, বরং আরো অবনতি হয়েছে । ‘প্রতীচি’র প্রতিবেদন বলেছে - মুসলিমদের মধ্যে কেবল ২.৭ শতাংশের স্নাতক বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রি আছে ।  ২০১৪ সালের একটি তথ্যে দেখা যাচ্ছে - ‘আইআইএম’ এবং ‘আইআইটি’-তে অবস্থাটা মমতার শাসনামলে আরো করুণ । এই দুটি এলিট শিক্ষায় মুসলিম ছাত্র যথাক্রমে ১.৩% ও ১.৭% । (সূত্রঃ – নতুন গতি, ১৫-২১ ২০১৪)
মুসলমানদের উন্নতির জন্যে সব আগে দরকার ছিলো তাদের শিক্ষার অগ্রগতি ঘটানোর প্রতি বিশেষ মনোনিবেশ করা যা ৩৪ বছর বামপন্থীরা ক্ষমতায় থেকেও করেনি ।  বিশেষ মনোনিবেশ করা তো দূরের কথা, এ ক্ষেত্রে বামফ্রন্ট সরকার তাদের প্রতি বৈষম্যই করেছে । এর অনেক দৃষ্টান্ত রয়েছে । স্থানাভাবে শুধু শিক্ষাক্ষেত্রে  কিরূপ দৃষ্টকটূ  বৈষম্য ছিলো তার একটু নমুনা তুলে দিচ্ছি । সাচার কমিটি বলেছিলো যে ভারতের সবচেয়ে বেশী পিছিয়ে পড়া ৯০টি জেলার  মধ্যে পশ্চিমবঙ্গেই ছিলো ১২টি । সেই ১২টি জেলার মধ্যে আবার  মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ মুর্শিদাবাদ জেলায় ছিলো সবচেয় বেশী পশ্চাদপদ । ২০০৭ সালে মুর্শিদাবাদে (জনসংখ্যা-৫৮৬৬৫৩৯ জন, মোট জনসংখ্যার ৬৩.৫%)   প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ছিলো মাত্র ৩১৭০টি, অথচ পুরুলিয়া জেলায় (জনসংখ্যা - ২৫৩৬১১৬ জন, মুসলিম জনসংখ্যা ৭.১২%)  প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ছিলো ২৯৭৬টি ।   জনসংখ্যার অনুপাতে মুর্শিদাবাদে প্রাঃ বিদ্যালয় ছিলো ১৮৫০ জন মানুষ পিছু একটি, অথচ পুরুলিয়ায় ছিলো ৮৫২ জন মানুষ প্রতি একটি । এই ছিলো বৈষম্যের নগ্নরূপ! হাই স্কুল, বিশ্ববিদ্যালয়, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, মেডিকেল কলেজ, আইন কলেজ প্রভৃতি উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে বৈষম্য ছিলো আরো প্রকট ।  উল্টোদিকে বামফ্রন্ট সরকার জোর দিয়েছিলো মাদ্রাসা শিক্ষার প্রতি যা মুসলিম সমাজের পথে সব চেয়ে বড়ো অন্তরায় । বামফ্রন্ট যখন ক্ষমতায় আসে তখন সরকার অনুমোদিত হাই মাদ্রাসা এবং সিনিয়র মাদ্রাসার সংখ্যা ছিলো ২৩৮টি, সেটা বেড়ে হয় ২০০৮ সালে ৫০৬টি । 
মমতার শাসনে কি শিক্ষাক্ষেত্রে মুসলিমদের প্রতি বৈষম্যের অবসান ঘটেছে ? না,  মোটেই ঘটেনি ।  বরং বৈষম্য আরো বেড়েছে । মাটি উৎসব করে, ক্লাবগুলিকে অনুদান দিয়ে ও আরো নানাভাবে হাজার হাজার কোটি কোটি উড়ানো হচ্ছে অথচ মুসলিম অধ্যুষিত পিছিয়ে পড়া জেলা ও অঞ্চলগুলিতে মমতার সরকার স্কুল, কলেজ,  য়ুনিভার্সিটি স্থাপন করার কোনো পরিকল্পনা নেয় নি, অথচ শিক্ষক নিয়োগ করা হচ্ছে না ।   দুটি দৃষ্টান্ত দেওয়া যাক । দৃষ্টান্ত – এক). ২০১৩ সালের ঘটনা, মেটিয়াবুরুজ কলেজ । স্থায়ী শিক্ষক মাত্র একজনদৃষ্টান্ত - দুই). দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার ‘ঢোলাহাট মহাবিদ্যালয়’ – শুধু  ১৩ জন আংশিক সময়ের শিক্ষক । প্রঙ্গতঃ উল্লেখ্য যে, ছাত্র-ছাত্রীরা মূলতঃ মুসলিম সমাজের । (সূত্রঃ দৈনিক স্টেটসম্যান, ২রা জুন ২০১৩)
বামফ্রন্ট সরকারের তবু শিক্ষাক্ষেত্রে  মুসলিমদের পশ্চাদপদতার অবসান করার  কিছুটা সদিচ্ছা ছিলো। হাই মাদ্রাসার পশ্চাদপদ সিলেবাসের তারা আধুনিকিকরণ করেছে । সিনিয়র মাদ্রাসারও আধুনিকিকরণ  করার জন্যে কিদোয়াই কমিটি গঠন করেছিলো । সেই কমিটি ‘আলিম’ (মাধ্যমিকের সমতুল্য), ‘ফাজিল’ (উচ্চ মাধ্যমিকের সমতুল্য), ‘কামিল’ (স্নাতক স্তরের সমতুল্য)  এবং ‘এমএম’ (মাস্টার্সের সমতুল্য) – এর সিলেবাসের আধুনিকিকরণের সুপারিশও করেছিলো । বামফ্রন্ট সরকার সে সুপারিশ গ্রহণও করেছিলো । কিন্তু মুসলিম মৌলবাদীদের প্রবল চাপে শেষ পর্যন্ত পিছিয়ে  গিয়েছিলো । বামফ্রন্ট সরকার মুসলিমদের উন্নয়নে যেটুকু সদিচ্ছা দেখিয়েছিলো তার ছিঁটেফোঁটাও পরিলক্ষিত হচ্ছে না মমতার মধ্যে । তিনি মুসলিম সমাজের ধর্মগুরু মাওলানা, ইমাম, মুফতিদের খুশী করতেই সর্বদা ব্যস্ত । তাঁদের খুশি করতে তিনি ইমাম ও মোয়াজ্জিন ভাতা দিচ্ছেন, হজ হাউসের সংখ্যা বাড়াচ্ছেন, খারিজি মাদ্রাসার অনুমোদন দিচ্ছেন, হজ যাত্রীদের ভর্তুকি দিচ্ছেন, মুসলিম সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের সাথে যুক্ত খারিজি মাদ্রাসা ও মাওলানাদের আড়াল করছেন  এবং মাথায় আঁচল দিয়ে মুসলিমদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে গিয়ে মোনাজাত করছেন, সালেমালেকুম দিচ্ছেন, ইনশাল্লাহ ও খোদা হাফেজ বলছেনএসবই করছেন মুসলমানদের উন্নতির নামে যা মুসলমান সমাজের কোনো উপকারে লাগেনি ।  ফলে সচেতন মুসলিমদের মধ্যে এ ধারণা প্রকট হয়ে উঠেছে যে মমতা ব্যানার্জী মুসলিমদের  সঙ্গে  যতটা ভণ্ডামি ও প্রতারণা করেছেন তেমনটা আর কেউ করেনি ।
পরিশেষে একটা কথা বলি যে, সরকারি বঞ্চনা ও বৈষম্য কিন্তু প্রধান কারণ নয় মুসলিমদের পশ্চাদপদতার সংখ্যালঘুদের প্রতি বঞ্চনা শুধু এ দেশেই হয় না, এ রোগ ছড়িয়ে রয়েছে  সমগ্র বিশ্বেই । সেই বঞ্চনা সত্ত্বেও এ দেশে খৃস্টান, বৌদ্ধ ও জৈনদের উন্নতি থমকে যায় নি । তারা উন্নতি করতে পারে, মুসলমানরা পারে না কেনো ? মুসলিমদের আত্মজিজ্ঞাসা ও আত্মসমীক্ষা করে  পশ্চাদপদতার আসল কারণ জানতে হবে এবং তা তাদের নিজেদেরই নিরসন করতে প্রধান ভূমিকা নিতে হবে । 




বাংলাদেশের গণঅভ্যুত্থানে ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাইনি – পাঁচ

  দ্বিতীয় অধ্যায় শেখ হাসিনা ও শেখ মুজিবের প্রতি তীব্র গণরোষের নেপথ্যে ২০২৪ এর জুলাই অভ্যুত্থানের সফল পরিসমাপ্তি ঘটে ৩৬ দিন পর (৫ই ...