Saturday, May 9, 2020

করোনা ডায়রি (দুই) - জান থেকে মান বড়ো

   
        জান থেকে মান বড়ো



    এক 

২৩শে মার্চের ট্রেনে
ঘরে ফেরার টিকিট কাটা ছিলো
কিন্তু ঊনিশ থেকেই
চাইছিলাম মন থেকে যেন
যাত্রীবাহী সব ট্রেন যেন স্তব্ধ হয়ে যায়
করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে।
করোনা বাসা বেঁধেছে তখন
বড় জোর দেড় হাজার মানব দেহে
তাতেই দেশজুড়ে কাঁপন ধরেছে মানব মনে
দূরপাল্লার ট্রেনের টিকিট বাতিল করার
ধূম পড়ে গেছে তাই দিকে দিকে।
কাঁপন ধরেছে ভয়ে আমার মনেও -
কিন্তু মেয়ের কাছে ব্যাঙ্গালোরে আছি অনেক দিন
চক্ষু লজ্জায় তাই বলি কী করে
যাবোনা এখন,  
অন্তর থেকে চাইছিলাম তাই
যাত্রীবাহী ট্রেনগুলো সব স্তব্ধ হয়ে যায়
যেনো তেইশের আগেই। 

           দুই 

রেলভ্রমণ বিমানভ্রমণ মনে হতো  
যেনো একটা মস্ত বড়ো মরণফাঁদ
করোনা ওৎ পেতে রয়েছে যেনো
রেল আর বিমানের প্রকাণ্ড দেহজুড়ে -  
প্রতিটি কামরায় প্রতিটি আসনে শৌচালয়ে
প্রতিটি দরজায় আর কোনায় কোনায়     
ভয়ে তাই কাঁটা হয়ে থাকতাম সর্বক্ষণ
ঠিক মতো ঘুম হয়না রাত্রে
করোনা তো নয় যেনো যমদূত
ফোঁস ফোঁস করে
নিঃশ্বাস ফেলছে ঘাড়ের উপর  
অবশেষে বহু আকাঙ্ক্ষিত ঘোষণাটি হলো
করোনা ঠেকাতে -
২৩শে মার্চ থেকে বন্ধ থাকবে
যাত্রীবাহী সব প্লেন ও ট্রেন,  
ক’দিন পর রাতে ঘুমালাম সেদিন
পরম স্বস্তিতে নিশ্চিন্তে নির্ভয়ে।

       তিন

লকডাউনের আজ ৪৭তম দিন
তৃতীয় দফার লকডাউন চলছে দেশজুড়ে
আড়াই লক্ষ প্রাণ সংহার করে এ গ্রহের
আক্ষরিক অর্থেই করোনা
আজ প্রকটিত ভয়াল করাল রূপে,
ভীত-সন্ত্রস্ত জবুথবু গোটা বিশ্ব
পরাক্রমশালী ট্রাম্প থেকে মোদি  
সবার কণ্ঠে পরাজিত সেনা নায়কের করুণ আর্তনাদ -  
বাঁচতে হবে আমাদের করোনাকে সঙ্গে নিয়েই।

            চার

ভারতেও করোনা সংহারের বলি ইতিমধ্যেই দুই সহস্রাধিক
সংক্রমণ ছুঁলো বলে লক্ষ শরীর
নিয়ন্ত্রণ শব্দটিকে দলে পিষে মাড়িয়ে
করোনা ছুটছে পাগলা ঘোড়ার মতন
ভারতকেও নিয়ে যেতে মৃত্যুপুরীর দিকে।
ঘরে বাইরে দরজার মুখেই দাঁড়িয়ে আছে যেনো
করোনা-রূপী মৃত্যুর সাক্ষাৎ যমদূত,
সত্তর ছুঁই ছুঁই আমি বহন
করে চলেছি দেহে তিন তিনটি মারণ রোগ –
বহুমূত্র রোগ, উচ্চ রক্তচাপ, থায়রয়েড
করোনা তো খুঁজছে হন্যে হয়ে আমাদেরই  
খাঁচাবন্দী পাখির মতন
তাই যাপন করছি বন্দীজীবন
ভয়ে ঘরের চৌকাঠ মাড়াইনি দেড় মাস।

           পাঁচ

সেই আমি দিন রাত জপছি   
ট্রেন প্লেন চলতে শুরু করুক এখনই 
লকডাউন থাকুক
কিন্তু ট্রেন চলুক প্লেন চলুক,  
করোনা তাণ্ডবে কাঁটা ভীত ত্রস্ত আজও
তবু আমার চাই এখনই
একটা ট্রেন কিংবা প্লেনের টিকিট,  
করোনা হানায় যদি জান যায় যাক
কিন্তু মন বড়োই উদগ্রীব উতলা আজ
যেভাবেই হোক ঘরে ফিরতে

        ছয় 

মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে চাওয়া
কি শুধু ঘরে ফেরার তাগিদে?
এমন মরিয়া মনোভাব কি হতোই
মেয়ের বদলে ছেলের কাছে এসে থাকলে,   
কিংবা মেয়ে আমার গৃহবধূ না হয়ে  
উপার্জনশীল স্বাবলম্বী ব্যক্তিত্ব হলে?
মেয়ের কাছে এসেছিলাম মেয়ে-জামায়েরই কাজে
তাদেরই একান্ত অনুরোধে   
কিন্তু সে প্রয়োজন ফুরিইয়েছে অনেক দিন
এখন তাই নিজেকে কেবলই মনে হয়
বোঝা জামাইয়ের সংসারে,  
যত দিন যায়
এ অনুভূতি তত তীক্ষ্ণ হয় -
নিষ্কৃতি চাই তাই এ জীবন থেকে।

         সাত 

জীবন আজ এক নির্মম উপলব্ধির সাক্ষী -
শুধু দিন বদলায় না দ্রুত
দ্রূত বদলায় পরিবেশ পরিস্থিতি
আর বদলায় দ্রুত মানুষের মনও -
জীবন তখন তুচ্ছ ক্ষুদ্র মনে হয় 
আর মনে হয়
আত্মসম্মান আত্মমর্যাদাই সব থেকে বড়ো
তার চেয় কিছু নয়।
আত্মসম্মান তখন বড়ো হয়ে ওঠে জীবনের চেয়েও।

১০ই মার্চ ২০২০ ব্যাঙ্গালোর  









KARBALA: Truth and Lies

  KARBALA : Truth and Lies           GIASUDDIN                 Translated by SRIJIB BISWAS        ...