মুসলিমরা দাবী করেন যে ইসলাম ধর্মই নারীমুক্তি ঘটিয়েছে এবং নারীকে পুরুষের সমান অধিকার ও স্বাধীনতা প্রদান করেছে। কিন্তু এ দাবী অবাস্তব ও আজগুবি
তো বটেই, এমনকি শিশুসুলভ ও হাস্যকরও বটে। কেনো হাস্যকর তা নিরপেক্ষ অবস্থান থেকে কোরান
ও হাদিস পড়লে স্পষ্ট বোঝা যায়।এ ব্যাপারে দু’টো দৃষ্টান্ত দেওয়া যেতে পারে। কোরান এক জায়গায় বলছে - নারীকে থাকতে হবে
গৃহকোণে, আর এক জায়গায় বলছে - একান্ত প্রয়োজনে তাদের যদি বাড়ির বাইরে বের হতে হয়
তবে অবশ্যই বোরখা পরতে হবে। কোরানের নির্দেশ মেনে চলা প্রত্যেক মুসলিমের জন্যে
বাধ্যতামূলক। যে মানবে না তাকে শরিয়তি শাস্তি পেতে হবে। শাস্তির প্রকার নিয়ে অবশ্য
মতভেদ ও মতবিরোধ রয়েছে। মুসলিম উগ্রপন্থীরা মনে করে যারা আল্লাহ্র নির্দেশ
অগ্রাহ্য করার ঔদ্ধত্য দেখাবে তাদের মৃত্যুদণ্ডই হলো উপযুক্ত শাস্তি। আইএস জঙ্গিরা
তাই বাংলাদেশে যাঁরা স্কুল-কলেজে শিক্ষকতা করছেন তাদের হত্যা করার হুমকি দিয়েছে। এ
খবরটি করেছে গতো ৪ঠা আগষ্ট কানাডার একটি বাংলা কাগজ ‘বেঙ্গলি টাইমস’। খবরটির
শিরোনাম ছিলো - ‘সব নারী শিক্ষকদের হত্যার হুমকি জঙ্গি কামান্ডারের’। প্রগতিশীল মুসলিমরা বলেন যে, একমাত্র ইসলামই
নারীকে শিক্ষার সম্পূর্ণ অধিকার দিয়েছে। সুতরাং মুসলিম জঙ্গীদের ঐ হুমকি
ইসলামবিরোধী। পূর্বেই বলেছি প্রগতিশীল মুসলিমদের এই দাবীর কোনো ভিত্তি নেই। বরং যেটা সত্যি তা হলো, মুসলিম জঙ্গীরা
যা বলে ও করে সেগুলো অধিকাংশই ইসলামসম্মত। তাই উক্ত হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে ফেসবুকে প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে লিখেছিলাম -
· “আল্লাহ বলেছে, নারী থাকবে
গৃহকোণে, সাজসজ্জা করে ঘরের বাইরে যাবে না। (কোরান -
৩৩/৩৩)
আল্লাহ আরো বলেছে ঘরের বাইরে একান্তই যদি যেতে হয় তবে তাকে বোরখা
পরতে
হবে এবং নিজের চোখকে সংযত রাখতে হবে, পর পুরুষের দিকে চোখ চেয়ে তাকাবে
না।
(কোরান-২৪/৩১) যে নারীরা আল্লাহর এই নির্দেশ অগ্রাহ্য করবে তাকে
শাস্তি
দেওয়া সাচ্চা মুসলমানদের ঈমানি দায়িত্ব। শাস্তি কী রূপ হবে -
মৃত্যুদণ্ড
না অন্য কিছু - তা নিয়ে মতভেদ থাকতে পারে, কিন্তু যারা
আল্লাহর নির্দেশ অগ্রাহ্য করে বোরখা না পরে পুরুষের সঙ্গে
মেলামেশা করবে, তাদের সঙ্গে চাকরি করবে
বা অন্য কাজ করবে তাদের তো কঠোর শাস্তি পেতেই হবে।”
আমার এই প্রতিক্রিয়ায় প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন মাহবুব আলম নামে জনৈক একজন
বাংলাদেশী মুসলিম ব্যক্তিত্ব। তিনি
রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে আমাকে কটাক্ষ করে মন্তব্য করেন,
·
“আপনি দেখি আর এক বাঁশের কেল্লা। কোরানের ৩৩/৩৩ আয়াতে
শুধু নবী স্ত্রীদের সম্বন্ধে বলা হয়েছে। এই আয়াতটা শুরু হয়েছে এবং দিয়ে যা আগের আয়াতের সাথে একে
সংযুক্ত। এটা সব নারিদের সম্পর্কে বলা হয় নাই। জামাত-শিবিরের মত আয়াতের শুধু
পছন্দসই অংশ ব্যাবহার করেন কেন। আপনি এর আগেও একটা স্ট্যাটাসে এই আয়াতের রেফারেন্স
দিছেন। শুধু ইসলাম বিরোধিতা করলেই অভিজিৎ হওয়া যায় না। গ্যন লাগে।”
এই মন্তব্যটির মাধ্যমে মাহবুব আলম আমার বিরুদ্ধে যে
অভিযোগটি আনতে চেয়েছেন তা অতিশয় গুরুতর। সেটা হলো, আমি ইসলামের
বিরুদ্ধে কুৎসা করার জন্যে
কোরানের বাণীর অপবাখ্যা করেছি। ইদানিং আনিষা রহমান নাম্নী
বাংলাদেশের আর একজন জনৈক ঈমানদার মুসলিম নারীও বারবার একই অভিযোগ তুলছেন আমার
বিরুদ্ধে। তাঁর
অভিযোগ, আমি নাকি কোরানের মিথ্যা রেফারেন্স দিচ্ছি। আমার
বিরুদ্ধে আনীত এ অভিযোগ অবশ্য নতুন কিছু নয়।
আমি কোরানের বাণীর
অপবাখ্যা করেছি কী না সে প্রসঙ্গে পরে আসছি। তার আগে কিন্তু এ কথাটা বলা আবশ্যক যে
মাহবুব আলম কিন্তু সত্যি কথাই বলেছেন যে কোরানের ঐ বাণীটি মুহাম্মদ তাঁর পত্নীদের
নিমিত্তই দিয়েছিলেন, এ কথাটার উল্লেখ রয়েছে আয়াতের একবারে শেষে।
আমি যেহেতু পুরো বাণীটি উদ্ধৃত করিনি তাই সে কথাটা অনুক্ত থেকে গেছে। এবার পুরো
বাণীটি দেখা যাক –
·
“এবং তোমরা স্বগৃহে অবস্থান করবে; প্রাচীন জাহিলী যুগের মত নিজেদেরকে
প্রদর্শন করে বেড়াবে না। তোমরা নামায কায়েম করবে এবং যাকাত প্রদান করবে এবং আল্লাহ
ও তাঁর রাসূল (সঃ) – এর অনুগত থাকবে; হে নবী পরিবার। আল্লাহ তো চান তোমাদের হতে
শুধু অপবিত্রতা দূর করতে এবং তোমাদেরকে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র করতে।” (৩৩/৩৩)
(অনুবাদ – ইবনে কাথির)
মাহবুব আলম আরো বলেছেন যে, পত্নীদের উদ্দেশ্যেই যে
বাণীটি দেওয়া হয়েছে তার প্রমাণ হলো ৩৩/৩২
নং আয়াতটি অর্থাৎ ঠিক তার পূর্বের আয়াতটি। হ্যাঁ, এ কথাটাও সত্যি যে ৩৩/৩২ ও ৩৩/৩৩ নং আয়াত
দু’টি পরষ্পর সম্পৃক্ত। ৩৩/৩২ নং আয়াতটির ভাষ্য থেকেই সেটা স্পষ্ট। সেই ভাষ্যটি হলো -
· হে নবী পত্নীরা! তোমরা অন্য নারীদের মতো নও; যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় কর তবে
পরপুরুষের সাথে কোমল কণ্ঠে এমনভাবে কথা বলো না যাতে অন্তরে যার ব্যাধি আছে, সে
প্রলুব্ধ হয় এবং তোমরা ন্যায়সঙ্গত কথা বলবে। (৩৩/৩২)
প্রসঙ্গতঃ আর একটা কথা বলি যে, মুসলিম ধর্মগুরুদের
মধ্যেও একটা অংশ রয়েছেন যাঁরা মাহবুব আলমের দাবী ও মতকে সমর্থন করেন। তাঁরাও মনে করেন যে ৩৩/৩৩ নং আয়াতটি শুধু
নবীপত্নীদের জন্যেই, সাধারণ মুসলিম নারীদের জন্যে আয়াতটি প্রযোজ্য নয়। এ পর্যন্ত
আমি যা আলোচনা করেছি তাতে এটা মনে হতে পারে যে, আমার বিরুদ্ধে মাহবুব আলম যে
অভিযোগ (কোরানের অপবাখ্যা করা) এনেছেন তা সত্যি বলে আমি স্বীকার করে নিচ্ছি এবং এটাও
স্বীকার করে নিচ্ছি যে উক্ত আয়াতটি (৩৩/৩৩) সাধারণ মুসলিম নারীদের জন্যে নয়। না, মোটেই তা নয়। কেনো তা নয়, সে কথায় এবার আসা
যাক।
৩৩/৩৩ নং আয়াতটি কাদের উদ্দেশ্যে (শুধু মুহাম্মদের
পত্নীদের উদ্দেশ্যে নাকি সকল নারীর উদ্দেশ্য) তা নিয়ে মুসলমানদের মধ্যে মতোবিরোধ
আছে। বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠের মত হলো সমস্ত মুসলিম নারীর জন্যে আয়াতটি প্রযোজ্য। অপর অংশটি
(এঁরা সংখ্যায় নগণ্য) মনে করেন যে, সকল
মুসলিম নারীর জন্যে প্রযোজ্য নয়। দ্বিতীয় মত পোষণকারীরা জোর দেন আগের আয়াতটির
(৩৩/৩২) উপর যে আয়াতটি শুরুই করা হয়েছে মুহাম্মদের স্ত্রীদের সম্বোধন করে। এখানে
আমি আর একটা কথা যোগ করতে চাই যা তাঁদের বক্তব্যকেই জোরালো করবে। সে কথাটা হলো, শুধু
দু’টি আয়াতই নয়, ৩৩/২৮ থেকে ৩৩/৩৫ পর্যন্ত পরপর আটটি আয়াতই মুহাম্মদের পত্নীদের
উদ্দেশ্যে ব্যক্ত বা বর্ষিত হয়েছে। কৌতূহলী
পাঠকদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিয়ে বলছি যে লেখাটা দীর্ঘ হবে বিধায় বাকি আয়াতগুলি উদ্ধৃত করা থেকে বিরত থাকুতে হচ্ছে। সে কথা থাক। এবার আমার
বক্তব্যে ফিরে আসি।
৩৩/৩২ ও
৩৩/৩৩ নং আয়াত দু’টোই উদ্ধৃত করা হয়েছে। পাঠক বন্ধুগণ আশা করি লক্ষ্য করেছেন যে, আয়াত
দুটির কথাগুলি মুহাম্মদের পত্নীদের উদ্দেশ্যে বলা হয়েছে ঠিকই, কিন্তু কোথাও এমন
কথা বলা হয় নি যে আয়াতদ্বয় সাধারণ মুসলিম নারীদের জন্যে প্রযোজ্য নয়। কিংবা এ কথাও
বলা হয় নি যে, সাধারণ মুসলিম নারীগণ যদি গৃহকোণে অবস্থান না করে বাইরে স্বাধীনভাবে
চলাফেরা করে তাতে দোষ নেই। বরং ৩৩/৩৩ নং আয়াতে স্পষ্ট করে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে
বাড়ির বাইরে নারীদের চলাফেরা করা, নিজেদের প্রদর্শন করা যা প্রাক ইসলাম যুগে আরবের
নারীগন করতেন তা আল্লাহ্ পছন্দ করে না।
আয়াতের ভাষ্য অনুযায়ী আল্লাহ্ মুহাম্মদের পত্নীদের বলছে যে, ‘প্রাচীন
জাহিলী যুগের মত নিজেদেরকে প্রদর্শন করে বেড়াবে না।’ এর
অর্থ স্পষ্ট যে আল্লাহ্ সকল নারীর জন্যেই প্রাক ইসলাম যুগের আরবের নারীদের মতো বাড়ির বাইরে চলাফেরা করা গর্হিত কাজ মনে করে। সুতরাং যাঁদের সামান্য বোধবুদ্ধি
আছে তাঁদেরও এটা বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয় যে নারীদের গৃহকোণের আবদ্ধ থাকার কোরানীয় নির্দেশটি সকল মুসলিম নারীদের জন্যেই প্রযোজ্য, শুধু
মুহাম্মদের স্ত্রীদের জন্যে নয়। পাঠকবন্ধুদের ৩৩/৩৩ নং আয়াতটির শেষাংশের প্রতি আরও একবার দৃষ্টি আকর্ষণ
করতে চাই। সেখানে মুহাম্মদের পত্নীদের উদ্দেশ্যে বলা হয়েছে যে, আল্লাহ্ চায় সকল অপবিত্রতা থেকে তাদের রক্ষা করতে এবং তাদেরকে সুম্পূর্ণরূপে
পবিত্র করতে। এ কথাটা থেকে কি এটা স্পষ্ট নয় যে, নারী স্বাধীনভাবে বাড়ির বাইরে
যাতায়াত করলে তাদের পবিত্রতা নষ্ট হয় এবং
অপবিত্রতা থেকে বাঁচতে ও নিজেদের সম্পূর্ণ পবিত্র রাখতে নারীর গৃহকোণে আবদ্ধ থাকা আবশ্যক। তাই যে সব তথাকথিত প্রগতিশীল
মুসলমানরা বলেন যে ঘরে আবদ্ধ থাকা ও বোরখা পরার আদেশ সাধারণ মুসলিম নারীদের
ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয় তাঁদের আমি জিজ্ঞাসা করতে চাই, আপনাদের আল্লাহ্ কি সাধারণ
মুসলিম নারীদের এবং আপনাদের পরিবারের নারীদেরকে ‘জাহিলি যুগের অপবিত্রতা’ থেকে
রক্ষা করতে কিংবা সম্পূর্ণ পবিত্র করতে চাই না? বলা বাহুল্য যে, আপনাদের আল্লাহ্
নিশ্চয়ই এমনটা চাইতে পারে না।
অতএব যুক্তি দিয়ে বিচার-বিশ্লেষণ করলে নিঃসংশয়ে এই
সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় যে, উক্ত আয়াত দু’টিতে মুহাম্মদের পত্নীদের সম্বোধন করে
এবং তাঁদের উদ্দেশ্যে যে কথাগুলি বলা হয়েছে সে কথাগুলি বিশ্বের সকল মুসলিম নারীর
জন্যেই প্রযোজ্য। এই যুক্তিকে মান্যতা শুধু আমরা যুক্তিবাদী মানুষরাই দিচ্ছি
তাই নয়, এটা মেনে নিয়েছেন বিশ্বের তাবড় তাবড় মুসলিম ধর্মগুরুরাও। তাঁরা কোরান ও হাদিসের আলোকে
আয়াতদ্বয় বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছেন যে, আয়াতদ্বয়ের প্রত্যেকটি কথা ও আদেশ সমস্ত
মুসলিম নারীদের জন্যে প্রযোজ্য এবং তাদের প্রত্যেকের জন্যেই সেগুলি অবশ্য পালনীয়
কর্তব্য। তফসিরকার
ইবনে কাসির একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন মুসলিম ধর্মগুরু। তিনি কোরানের যে তফসির
লিখেছেন তা সারা বিশ্বে মুসলিম সমাজে সমাদৃত। তিনি কী বলেছেন তা দেখা যাক।
ইবনে কাসির অত্যন্ত
দৃঢ়তার সাথে দাবী করেছেন যে উক্ত আয়াত
দু’টি সকল মুসলিম নারীদের জন্যে সমান প্রযোজ্য। তিনি তাঁর দাবিকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন
নানা তত্ত্ব, তথ্য ও যুক্তি দিয়ে। তিনি কী বলেছেন তা তাঁর বর্ণনা থেকেই শোনা যাক।
প্রথমেই আলোকপাত করবো তাঁর উপস্থাপিত দু’টি যুক্তির প্রতি। প্রথম যুক্তিটি এরূপ -
· আল্লাহ তা’আলা স্বীয় প্রিয়তম নবী (সঃ) – এর
সহধর্মিণীদেরকে আদব-কায়দা ও ভদ্রতা শিক্ষা দিচ্ছেন।সমস্ত স্ত্রীলোক তাদের
অধীনস্থ। সুতরাং এই নির্দেশাবলী সমস্ত মুসলিম নারীর জন্যেই প্রযোজ্য। তিনি নবী
(সঃ) – এর সহধর্মিণীদেরকে সম্বোধন করে বলেনঃ হে নবী পত্নীরা! তোমরা অন্যান্য
সাধারণ নারীদের মত নও। তাদের তুলনায় তোমাদেওর মর্যাদা অনেক বেশী। যদি তোমরা
আল্লাহকে ভয় কর তবে পরপুরুষের সাথে কোমল কণ্ঠে এমনভাবে কথা বলো না যাতে অন্তরে যার
ব্যাধি আছে সে প্রলুব্ধ হয় এবং তোমরা ন্যায়সঙ্গত কথা বলবে। স্ত্রীলোকদের পরপুরুষের
সাথে কোমল সুরে এবং লোভনীয় ভঙ্গিতে কথা
বলা নিষিদ্ধ। সুমিষ্ট ভাষায় ও নরম সুরে কেবল স্বামীর সঙ্গে কথা বলা যেতে পারে।
দ্বিতীয়
যুক্তিটি হলো -
· অজ্ঞতার যুগে নারীরা বেপর্দাভাবে চলাফেরা করতো। ইসলাম এরূপ বেপর্দাভাবে
চলাফেরা করাকে হারাম ঘোষণা করেছে। ভঙ্গিমা করে নেচে নেচে চলাকে ইসলামে নিষিদ্ধ
করেছে। দো-পাট্টা ও গায়ে চাদর গায়ে দিয়ে চলাফেরা করতে হবে। তা গায়ে দিয়ে গলায়
জড়িয়ে রাখা ঠিক নয়। যাতে গলা ও কানের অলঙ্কার
অন্যের নযরে না পড়ে সেভাবে গায়ে দিতে হবে। এগুলো অসত্য আ বর্বর যুগের
নিয়ম-পদ্ধতি ছিল। যা এ আয়াত দিয়ে নিষিদ্ধ করে দেয়া হয়েছে। (দ্রঃ ইবনে কাসিরের তফসির, পঞ্চদশ খণ্ড)
তারপর কোরান ও হাদিসকে উদ্ধৃত করে তিনি দেখিয়েছেন যে আল্লাহ্ সকল নারীদের ঘরের মধ্যেই থাকার নির্দেশ দিয়েছে। তিনি লিখেছেন –
তারপর কোরান ও হাদিসকে উদ্ধৃত করে তিনি দেখিয়েছেন যে আল্লাহ্ সকল নারীদের ঘরের মধ্যেই থাকার নির্দেশ দিয়েছে। তিনি লিখেছেন –
· এর পর মহিমাণ্বিত আল্লাহ বলেনঃ কোন জরুরী কাজকর্ম ছাড়া তোমরা বাড়ি হতে বের
হবে না। নামায পড়তে যাওয়া শরয়ী প্রয়োজন। যেমন রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আল্লাহর
বাঁদীদেরকে আল্লাহর মসজিদে যেতে বাধা প্রদান করবে না। কিন্তু তাদের উচিত যে, তারা
বাড়ীতে যে সাদাসিধা পোশাকে পরে থাকে ঐ পোশাক পরেই যেন মসজিদে গমন করে।” অন্য একটি
রেওয়াতে আছে যে, স্ত্রীলোকদের জন্য বাড়ীই উত্তম।
আল্লাহ্ সকল নারীকে ঘরে থাকার নির্দেশই যে
দিয়েছেন তার সমর্থনে কাসির আর একটি হাদিস বর্ণনা করেছেন যে হাদিসে মুহাম্মদ বলেছেন
নারী যদি নিজের বাড়িতেই পর্দার সাথে অবস্থান করে আল্লাহ্র নির্দেশ পালন করে তবে
সে জিহাদীদের সমান মর্যাদা পাবে। কাসিরের
কলমে বর্ণিত সেই হাদিসটি এরূপ –
·
হযরত আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলে, “একদা স্ত্রীলোকরা রাসূলুল্লাহ (সঃ)
– এর নিকট এসে বলেঃ হে আল্লাহর রাসূল!
পুরুষলোকেরা আল্লাহর পথে জিহাদের ফজিলত নিয়ে যায়। আমাদের জন্য কী এমন আমল
আছে যার দ্বারা আমরা আল্লাহর পথে জিহাদকারীদের সমমর্যাদা লাভ করতে পারি?” উত্তরে রাসূলুল্লাহ (সঃ)
বলেনঃ “যারা নিজেদের বাড়ীতে (পর্দার) বসে সাথে (অথবা এ ধরণের কথা বলেন), তারা
আল্লাহর পথে জিহাদকারীদের সমান মর্যাদা লাভ করবে।”
ইসলামে সকল নারীকেই যে ঘরে আবদ্ধ থাকার নির্দেশ
আছে তার সপক্ষে মুহাম্মদের আর একটি বাণীকে উদ্ধৃত করেছেন ইবন কাসির। সেখানে মুহাম্মদ সরাসরি বলেছেন যে ‘নারী হলো পর্দার বস্তু’। কথাটা অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে, কিন্তু একদম
সত্যি কথা । নারীকে ‘বস্তু’ বলে উল্লেখ করে কীভাবে মুহাম্মদ তাদের ঘরে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন তা
দেখুন কাসিরের বর্ণনা থেকে –
·
হযরত আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে,নবী (সঃ) বলেছেনঃ “নিশ্চয়
স্ত্রীলোক পর্দার বস্তু। এরা যখন বাড়ী হতে বের হয় তখন শয়তান তাদের প্রতি ওঁৎ পেতে
থাকে। তারা আল্লাহ তা’আলার খুব বেশী নিকটবর্তী হয় তখন যখন নিজের বাড়ীতে অবস্থান
করে।”
নারীদের ঘরে বন্দী করে রাখাটা নিশ্চিত করার জন্যে
মুহাম্মদ ঘরের অন্দর মহলেই তাদের নামায আদায় করা অধিক উত্তম বলে ফতোয়া (বিধান)
দিয়েছেন। এমনকি নারী যাতে ঘরের বাইরে না যায় তারজন্যে মুহাম্মদ তাঁদের শয়তানের ভয়ও
দেখিয়েছেন। এ দুটি হাদিসকেও কাসির
তাঁর দাবির সমর্থনে অকাট্য প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপিত করেছেন। হাদিস দু’টি হলো –
·
নবী (সঃ) বলেছেনঃ “নারীর অন্দর মহলের নামাজ তার বাড়ীর নামায হতে উত্তম এবং
বাড়ীর নামায আঙিনার নামায হতে উত্তম।”
·
হযরত আব্দুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী (সঃ) বলেছেনঃ “নিশ্চয়ই
স্ত্রীলোক পর্দার বস্তু। এরা যখন বাড়ী হতে বের হয় তখন শয়তান তাদের প্রতি ওঁৎ পেতে
থাকে। তারা আল্লাহ্ তা’আলার খুব বেশী নিকটবর্তী হয় তখন যখন তারা নিজেদের বাড়ীতে
অবস্থান করে।”
কাসির আরো অনেক হাদিস ও কোরানের সূত্র উল্লেখ করে
দেখিয়েছেন যে সকল নারীকেই গৃহকোণে আবদ্ধ থাকার আদেশটি অবশ্যই পালন করতে হবে। সেই
হাদিসগুলির মধ্যে মাত্র আর একটা হাদিসের উল্লেখ করে আলোচনায় ইতি টানবো। এই হাদিসটি
এখানে খুবই প্রাসঙ্গিক ও ভীষণ
গুরুত্বপূর্ণ। পাছে নারী ঘরে আটকে থাকতে থাকতে বিদ্রোহ করে বসে তাই মুহাম্মদ নারীদের বেহেস্তের লোভ দেখিয়ে বস
করতে চেয়েছেন। সেই হাদিসটি হলো -
·
হযরত আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা
স্ত্রীলোকেরা রাসুলূল্লাহ (সঃ)-এর নিকট এসে বলেঃ হে আল্লাহর রাসূল(সঃ)!
পুরুষলোকেরা আল্লাহর পথে জিহাদের ফজিলত নিয়ে যায়। আমাদের জন্যে কী এমন আমল আছে যার
দ্বারা আমরা আল্লাহর পথে জিহাদকারীদের সমমর্যাদা লাভ করিতে পারি?” উত্তরে
রাসুলূল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “যারা নিজেদের বাড়িতে (পর্দার সাথে) বসে থাকে (অথবা এ
ধরণের কথা তিনি বলেন), তারা আল্লাহর পথে জিহাদকারীদের আমলের মর্যাদা লাভ করবে।” ( কাসির প্রদত্ত উদ্ধৃতিগুলি নেওয়া হয়েছে তাঁর
তফসির গ্রন্থ থেকে। দ্রঃ ইবনে কাসিরের তফসির, ১৫শ খণ্ড, পৃঃ ৭৮৩-৭৮৪)
পরিশেষে যে কথাটি বলে লেখাটায় ইতি টানবো তা হলো, মুহাম্মদের পত্নীদের উদ্দেশ্যে যে আদেশ
বা পরামর্শগুলি কোরানের ঐ আয়াত দু’টিতে ব্যক্ত করা হয়েছে সেগুলি সকল মুসলিম নারির
জন্যেই সমান প্রযোজ্য তা বোঝার জন্যে তীক্ষ্ণ বুদ্ধির প্রয়োজন নেই। তা হলে এ টুকু বুদ্ধি কি মাহবুব আলমদের নেই? নিশ্চয়ই তা
নয়। আসলে মাহবুব আলমরা হলেন জ্ঞানপাপী। তাঁরা প্রচণ্ড অসৎ, সুবিধাবাদী, ধান্দাবাজ, ভণ্ড ও প্রতারকও
বটে। ৩৩/৩৩ নং আয়াতের আদেশটি গোটা নারীজাতির সমস্ত অধিকার হরণ
করার উদ্দেশ্যেই জারি করা হয়েছে তা মাহবুব আলমরা খুব ভালো করেই বোঝেন। তবু তাঁরা
গোঁড়া মুসলিম সমাজের তোপের মুখে পড়বেন এই ভয়ে আয়াতটির সমালোচনা করেন না এবং তাঁদের পরিবাররের নারীরা পাছে
বিদ্রোহ করেন সেই ভয়ে বলেন যে আদেশটি কেবল
মুহাম্মদের পত্নীদের জন্যেই জারি করা
হয়েছিলো।