মাদ্রাসা ও মক্তব বলতে মানুষ জানেন ইসলামি শিক্ষা
প্রতিষ্ঠান । মানেটা আরো স্পষ্ট করলে দাঁড়ায় আরবী, কোরান-হাদিস এবং ইসলাম শেখার স্কুল । মানুষের এই জানাটা ভুল ।
চরম ভুল । মাদ্রাসা হলো আরবি শব্দ এবং মক্তব হলো ফারসী শব্দ । এই শব্দ
দুটির বাংলা অর্থ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ইসলামি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয় । ইসলামি শাসনকালে আরব দুনিয়ায়
মাদ্রাসায় জ্ঞানবিজ্ঞান-সহ নানা বিষয় পড়ানো হতো । একদা তথাকথিত বর্বর আরবরা
জ্ঞানবিজ্ঞানে বিশ্বের নজর কেড়েছিলো । আব্বাসীয় যুগে তাঁরা জ্ঞানবিজ্ঞানের
আকাশছোঁয়া উন্নতি সাধন করেছিলেন । জ্ঞানের আলোকে সমগ্র ইউরোপকে উদ্ভাসিত করেছিলেন
। অংক, এ্যালজেবরা, ভূবিদ্যা, নৌবিদ্যা, আকাশবিদ্যা, চিকিৎসা বিদ্যা, রসায়ন
প্রভৃতি বিজ্ঞানের সমস্ত ক্ষেত্রে তাঁদের উন্নতি ও অগ্রগতি ছিলো চোখ ধাঁধানো ।
দর্শন ও সাহিত্যেও বিশ্বকে তাঁরা আলোকিত করেছিলেন, পথ দেখিয়েছিলেন । বিশ্বের বুকে
ইতিহাসের সূচনা হয় ইসলামি শাসনকালে আরবদের হাত ধরেই । জ্ঞানবিজ্ঞান আদান প্রদানের
ক্ষেত্রে আরবরা ছিলেন অকৃপণ ও উদারহস্ত । যে দেশ তাঁরা জয় করেছিলেন সে দেশের উন্নতি
ও বিকাশে যেমন ভূমিকা পালন করেছিলেন, তেমনি সে সব দেশ থেকে জ্ঞান আহরণ করে নিজেদের
জ্ঞানবিজ্ঞানের ভাণ্ডারকেও সমৃদ্ধ করেছিলেন । আরবদের ইতিহাসের এই চমকপ্রদ ও প্রায়
অবিশ্বাস্য অধ্যায়টি তৈরী হয়েছিলো ইসলামি সাম্রাজ্যের অধীনে আব্বাসীয় যুগে । আব্বাসীয় যুগের এই অধ্যায়ের বীজটি কিন্তু রোপিত
হয়েছিলো উমাইয়া যুগে (৬৬১-৭৫০ খৃঃ) । উমাইয়া যুগের স্থপতি ছিলেন পঞ্চম খলিফা
মুয়াবিয়া যিনি বিশ্ব-মুসলিম সমাজের কাছে এখন চরম ব্রাত্য এবং খলনায়ক হিসেবে
প্রত্যাখাত ও উপেক্ষিত । মুয়াবিয়াই কিন্তু ইসলামি সাম্রাজ্যকে প্রায় নিশ্চিত পতনের
হাত থেকে রক্ষা করেছিলেন এবং সেই সাম্রাজ্যের বিশাল বিস্তার ঘটিয়েছিলেন । তাঁর
শাসনকালেই মূলতঃ জ্ঞানবিজ্ঞানের সাধনার সূত্রপাত ঘটেছিলো । তখন যে সব বিষয় শেখানো হতো তা ছিলো – এক). আরবী
ন্যাকরণ, দুই). কোরান, হাদিস ও ফেকাহ শাস্ত্র, তিন). ইতিহাস, চার). সাহিত্য ও
ভাষা, পাঁচ). বাগ্মীতা, ছয়). দর্শন, সাত). বিজ্ঞান, আট). চিকিৎসা শাস্ত্র, এবং
নয়). রসায়ন শাস্ত্র । (দ্রঃ উমাইয়া খেলাফত,
ওসমান গণী, পৃ-২০৭) কয়েকজন আব্বাসীয় খলিফা
শিক্ষাব্যবস্থার সেই ধারাকে আরো দর্শনমুখী, বিজ্ঞানমুখী ও বাস্তবমুখী করেছিলেন। একাদশ-দ্বাদশ
শতাব্দীতে ইমাম আল- গাজ্জালীর নেতৃত্ব এবং গোঁড়া আলেম সমাজের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে
ইসলামি সাম্রাজ্যের খলিফারা
শিক্ষাব্যবস্থার ধারকে ১৮০ ডিগ্রী ঘুরিয়ে দিয়ে পুরোপুরি কোরানকেন্দ্রিক
শিক্ষাব্যবস্থার প্রবর্তন করেছিলেন যার মূল কথা ছিলো কোরানের উপর কোনো কথা চলতে পারেনা । সেই ট্রাডিশন আজো চলছে । আজো
তাই এ যুগের মাওলানা সমাজ জ্ঞানবিজ্ঞান-সহ আধুনিক শিক্ষাকে শরিয়তবিরোধী
বলে দূরে সরিয়ে রাখতে বদ্ধ পরিকর । প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য যে, সিনিয়র মাদ্রাসার আধুনিকীকরণের জন্যে বামফ্রন্ট
সরকার গঠিত কিদোয়ায়
কমিটি সিনিয়র মাদ্রাসার পাঠ্যক্রমের আধুনিকীকরণের যে সুপারিশ করেছিলো ভারত ও
পশ্চিমবঙ্গের উলামা (আলেম সমাজ তথা মুসলিম ধর্মগুরুগণ) তার প্রবল বিরোধিতা করেছিলেন । ফলতঃ বামফ্রন্ট
সরকার সিনিয়র মাদ্রাসার আধুনিকীকরণ করা থেকে পিছু হটেছিলো । ভাবতে অবাক লাগে প্রায়
সাড়ে তেরশো বছর পূর্বে শিক্ষা সম্পর্কে ইসলামের একজন খলিফা কতটা স্বচ্ছ ও
বাস্তবধর্মী দৃষ্টিভঙ্গীর অধিকারী ছিলেন ।
ইলম হলো আরবী শব্দ যার অর্থ জ্ঞান, এবং আলেম
হলো আরবী শব্দ যার অর্থ জ্ঞানী । আলেমের বহুবচন হলো উলামা । মুসলিম
সমাজ তাদের ধর্মীয় নেতাদের আলেম বলে অভিহিত করে
যাঁদের কোরান ও হাদিস ছাড়া বিজ্ঞান, দর্শন, ইতিহাস, ভূগোল ইত্যাদি বিষয়ে
কোনো জ্ঞান নেই তাঁরাই মুসলিম সমাজে নেতা । আধুনিক শিক্ষা বঞ্চিত এই তথাকথিত উলামা (জ্ঞানী ব্যক্তিগণ!) যে সমাজের নেতা তাদের
অধঃপতন কে ঠেকাবে ? যখন থেকে গোঁড়া আলেম
সমাজ শিক্ষাব্যবস্থাকে ইসলামি শিক্ষাব্যবস্থায় অবরুদ্ধ করে রেখেছে তখন থেকেই
মুসলিম সমাজের পতন শুরু হয়েছে । এ দেশের
মুসলিম সমাজের ক্রমশঃ পিছিয়ে পড়ার নেপথ্যেও রয়েছে প্রধানতঃ সেই একই কারণ, আধুনিক
শিক্ষা বর্জিত কোরানকেন্দ্রিক ইসলামি শিক্ষাব্যবস্থা ও সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে
না পারা ।
নবাবী আমলে সেনাবাহিনী, প্রশাসন
ও বিচারব্যবস্থায় মুসলমানদের একচ্ছত্র প্রাধান্য ছিলো । সেই মুসলমানরা ছিলো
বহিরাগত ও আওব দিক থেকেই অগ্রসর শ্রেণীভুক্ত । কিন্তু তখনও অধিকাংশ মুসলমানই ছিলো
গরীব । তাঁরা পেশায় ছিলেন প্রধানতঃ চাষী, কারিগর ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী । তাঁরা ছিলেন
বাঙালি । সেই মুসলিম বাঙালি সমাজের জন্ম হয়েছিলো ধর্মান্তরের ফলে । হিন্দু সমাজের
নিম্নবর্ণের মানুষরা প্রানের ভয়ে ও কিছুটা সরকারি দাক্ষিণ্য পাওয়ার আশায় স্বধর্ম
ত্যাগ করে মুসলমান হয়েছিলেন । কিন্তু তাঁদের আশা মোটেই পূর্ণ হয়নি, গরীবরা গরীবই
থেকে গিয়েছিলেন । নবাবী আমল, এখন যেমনটা দাবি করা হয়, মুসলমানদের জন্যে মোটেই
স্বর্ণযুগ ছিলো না । নবাবী আমলে ভূমিব্যবস্থা ছিলো প্রধানতঃ হিন্দুদের হাতে । ফলতঃ
অধিকাংশ জমিদারই ছিলেন হিন্দু, মুসলিম জমিদার ছিলো আঙুলে গণা কয়েকজন । বাংলার মুসলিম সমাজের আর্থিক দুর্গতি ও
পশ্চাদপদতার এই ছিলো ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট । তাই বৃটিশ যুগে বাংলার মুসলমানদের
ভাগ্য বিপর্যয় শুরু হয়েছিলো এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা । তবে এটা ঠিক যে বহিরাগত
অবাঙালি ধনী ও উচ্চবিত্ত মুসলমানদের নিশ্চিতভাবেই বৃটিশ যুগে ভাগ্য বিপর্যয় শুরু
হয়েছিলো । এর পেছনে প্রধান কারণ ছিলো
তাঁদের ধর্মীয় গোঁড়ামি । ইংরেজরা ক্ষমতা
দখল করার কিছুদিন পর নতুন প্রশাসনিক ব্যবস্থা ও তার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ
শিক্ষানীতি চালু করেন । শিক্ষানীতির প্রধান উদ্দেশ্য ছিলো মুসলমান সমাজের মধ্য
থেকে বৃটিশ অনুগত শিক্ষিত কর্মচারীবাহিনী তৈরী করা । সেই নতুন শিক্ষানীতির সুযোগ
নিতে মুসলমানরা ব্যর্থ হয়েছিলেন । উলামা ফতোয়া দিয়েছিলেন – ইংরাজী কাফেরদের ভাষা ।
তাই ইংরাজী শেখা, ইংরাজি পড়া এবং বাড়িতে ইংরাজি বই রাখা হারাম (অবৈধ) । যারা
ইংরাজি শিখবে ও পড়বে আল্লাহ্ তাদের জাহান্নাম (নরকে) নিক্ষেপ করবে । মুসলমান সমাজ
সেই ফতোয়াকে মান্যতা দিয়ে ইংরাজি ভাষা ও নতুন শিক্ষাব্যবস্থা থেকে মুখ ঘুরিয়ে
নিয়েছিলো । ফলে তাঁরা পশ্চাদপদ ইসলামি
শিক্ষাব্যবস্থাতেই আটকে গেলেন । অপরদিকে হিন্দু সমাজ ইংরাজি ভাষা শিখতে শুরু করে
দিলো । এককালে হিন্দুদের কাছে আরবি-ফার্সি ভাষা ছিলো অচ্ছ্যুত । তবু তাঁরা ধর্মীয়
গোঁড়ামি বর্জন করে আরবি-ফার্সি ভাষা শিখেছিলেন এবং ফলতঃ নবাবি আমলেও প্রশাসনে বহু পদে নিয়োগ পেয়েছিলেন।
যেহেতু তাঁরা ভাষা শেখার ক্ষেত্রে ধর্মীয় গোঁড়ামি নবাবি আমলেই ত্যাগ করতে সক্ষম হয়েছিলেন, তাই ইংরাজি
ভাষা শেখার সেই গোঁড়ামি কোনো প্রকার বাধা-বিঘ্ন সৃষ্টি করতে পারে নি । ফল হয়েছিলো
এই যে, বৃটিশ প্রশাসনে হিন্দুরা হু হু করে
ঢুকে পড়েছিলেন । ১৮৫৯ সালে কালেক্টর ও
ডেপুটি কালেক্টরের পদ দুটি সংরক্ষিত করা হয় ইংরাজি জানা শিক্ষিত ব্যক্তিদের জন্যে,
এবং ১৮৮৩ সালে অনুরূপভাবে সংরক্ষিত করা হয় দারোগা, সরকারি উকিল এবং মুন্সেফের
পদগুলি । ইংরাজি ভাষা বর্জন করার ফলে মুসলিম সমাজ শিক্ষাক্ষেত্রে কী ভয়ঙ্কর মাত্রায় পিছিয়ে পড়েছিলো তা জানা যায় ১৮৮২ সালের একটি সরকারি প্রতিবেদন থেকে । সেই প্রতিবেদনের শোচনীয় চিত্রটি এরূপ – বঙ্গদেশে কলেজ ছাত্রদের ৯২.৪১% ছাত্রই ছিলো হিন্দু, এবং হাই ও মিডল স্কুলের
ছাত্রদের মধ্যে হিন্দু ছাত্র ছিল ৮৬.৫৫% । (সূত্রঃ মুসলিম সমাজ-কয়েকটি প্রাসঙ্গিক
আলোচনা, মইনুল হাসান, পৃ-৩৪) এর ফলে সরকারী চাকরিতে উচ্চপদগুলিতে মুসলিমদের
প্রতিনিধিত্ব নেমে গিয়েছিলো প্রায় শূন্যে । ১৯০১
সালের একটি প্রতিবেদনেও ধরা পড়েছিলো ইংরাজি ভাষা বর্জন করার করুণ ছবিটা । সেটা হলো – সরকারী
উচ্চপদে বাঙালিদের মধ্যে হিন্দুদের প্রতিনিধিত্ব ছিলো ৮৯.৭ শতাংশ । একথা ঠিক যে বৃটিশ আমলের প্রথম দিকে মুসলমানদের
প্রতি উপেক্ষা ও বৈষম্য কিছুটা ছিলো । কিন্তু মুসলিম সমাজের আর্থিক মেরুদণ্ড বিধ্বস্ত হয়ে যাওয়ার পেছনে প্রধান কারণ ছিলো
উলামার ফতোয়া এবং মুসলমানদের ইসলামি শিক্ষা তথা মাদ্রসা শিক্ষার গোঁড়ামি । ধর্মীয় গোঁড়ামির
বিরুদ্ধে আধুনিক শিক্ষা প্রবর্তনের চেষ্টা হয়েছিলো যৎসামান্যই । ১৭৮০ সালে ক্যালকাটা মাদ্রাসা স্থাপিত
হয়েছিলো । আর সেই মাদ্রাসায় সেখানে ইংরাজি
শিক্ষা শুরু হয়েছিলো ১৮২৯ সালে, মাদ্রাসার জন্মের প্রায় ৫০ বছর পর । কিন্তু আলেম সমাজের প্রবল বিরোধিতার কারণে ইংরাজি বিভাগে ছাত্র তেমন পাওয়া
যায় নি, প্রথম বর্ষে ছাত্র ছিলো মাত্র ৪২ জন । (সূত্রঃ – ঐ, ৩১) অথচ সেই সময়েই সংস্কৃত কলেজে শুরু হয়ে গিয়েছিলো ইংরাজি শিক্ষা
এবং মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষাদান । ক্রমশঃ পিছু হটতে হটতে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া সম্ভ্রান্ত
মুসলিমদের একাংশ এক সময় উপলব্ধি করেছিলেন বটে যে ইংরাজি না শিখে উপায় নেই, কিন্তু ততদিনে অনেক দেরী হয়ে গিয়েছে । ১৮শ শতকের ষাটের দশকে তাঁরা বলা যায় যে ইংরাজি শিখতে
শুরু করেন ।
মুসলিম সমাজের সম্ভ্রান্ত
পরিবারগুলি পুরোপুরি ইংরাজি ও আধুনিক শিক্ষার মধ্যে প্রবেশ করে প্রায় একশ বছর পর ।
কিন্তু বাকি মুসলিম সমাজ আলেম সমাজের প্রভাব কাটাতে সময় লাগে প্রায় আরো একশ বছর পর
। ১৯৬০ সাল পর্যন্ত মুসলমান অধ্যুষিত মুর্শিদাবাদ ও মালদহ জেলার কলেজগুলিতে মুসলিম ছাত্র প্রায় ছিলো না বললেই
চলে । সমগ্র মুসলিম সমাজ আধুনিক শিক্ষার অঙ্গনে প্রবেশ করেছে আরো পরে । এবং খুবই
দুঃখজনক ঘটনা হলো মুসলিম সমাজের একটা অংশ আলেম সমাজের খপ্পড়ে পড়ে এখনও আটকে আছে মাদ্রাসা শিক্ষাতেই । এটা অবশ্যই একটা বড়ো কারণ
যার ফলে মুসলিম সমাজকে এখনো সব চেয়ে বেশী নিরক্ষতা ও কুসংস্কারের অভিশাপ বহন করতে হয় । সে কী বীভৎস অভিশাপ বহন করছে
মুসলিম সমাজ তার একটি চিত্র তুলে ধরেছেন সেন্ট পলস কলেজের অধ্যাপক ড. মকবুল হোসেন । ১৯৯৭ সালে বিভিন্ন জেলায় ছ’টি মুসলিম গ্রাম সমীক্ষা করে শিক্ষাক্ষেত্রে যে করুণ চিত্রটি পাওয়া গিয়েছে
বলে তিনি জানিয়েছেন তা এ রকমঃ প্রাথমিক
শিক্ষার হার ৬১.৩০ শতাংশ, নবম শ্রেণী পর্যন্ত হার ২৯.৬২ শতাংশ, মাধ্যমিক পাসের হার
৭.১১ শতাংশ, এবং উচ্চ শিক্ষা ১.৯৮ শতাংশ । আর ঐ ছ’টি গ্রামের নিরক্ষতার হার ৬৭.৭৩
শতাংশ। কী ভয়াবহ ও শোচনীয় চিত্র! এ অবস্থায় মুসলিম ছেলেমেয়েরা যে চাকরি-সহ সর্বক্ষেত্রে অন্য সমাজের ছেলেমেয়েদের
সঙ্গে প্রতিযোগিতায় এঁটে উঠতে পারবে না তা
সহজেই অনুমেয় । বিশেষ করে চাকুরি ক্ষেত্রে স্কুল-কলেজ পাস করা মুসলিম ছেলেমেয়েরা যে
হিন্দু ছেলেমেয়েদের সঙ্গে
প্রতিযোগিতা করতে পারছেনা তা বলা বাহুল্য ।
বেকার সমস্যা যতো তীব্র হচ্ছে
প্রতিযোগিতা ততো তীব্র হচ্ছে । যেহেতু মুসলিম ছেলেমেয়েরা প্রতিযোগিতায় পারছে না
তাই দাবি উঠছে – চাকরিতে মুসলিমদের জন্যে সংরক্ষণ চাই । এ দাবির মুখ্য প্রবক্তা
মুসলিম সাম্প্রদায়িক সংগঠনগুলি যারা মুসলিম সমাজকে আধুনিক শিক্ষা থেকে দূরে সরিয়ে
রেখেছিলো এবং সে অপপ্রয়াস তারা ত্যাগ করেনি । তাই শিক্ষিত মুসলিম বেকার
ছেলেমেয়েদের জন্যে চাকরির দাবি করার তাদের নৈতিক অধিকার নেই । এসব ওদের ভণ্ডামি
ছাড়া কিছু নয় । তবু একথাও অনস্বীকার্য যে সরকারি/বেসরকারি চাকরিতে মুসলিম ছেলেমেয়েরা অল্প কিছু ক্ষেত্রে হলেও শুধু মুসলিম বলে নিয়োগ থেকে বঞ্চিত হয় । এ শুধু নিছক অভিযোগ নয়, সরকারি তথ্য ও
পরিসংখ্যানও সে কথাই বলে । ১৯৯০ সাল থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত কর্মবিনিয়োগ কেন্দ্রের মাধ্যমে সরকারি
চাকরিতে যে নিয়োগ হয়েছে তাতে দেখা যায় মুসলিমরা চাকরি পেয়েছে ২.০৬ থেকে সর্বোচ্চ
৫.৭৭ শতাংশ পর্যন্ত । উল্লেখিত সময়কালে কর্মবিনিয়োগ কেন্দ্রে রেজিষ্ট্রিকৃত মুসলিম
বেকারদের সংখ্যা ছিলো ১৩ শতাংশ । চতুর্থ শ্রেণির পদে এবং পুলিশের কনস্টেবল-সহ বহু
পদ আছে যেসব পদে শিক্ষাগত যোগ্যতা ও মেধার
প্রতিযোগিতা ছাড়াই নিয়োগ দেওয়া হয় । এসব পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে নিয়োগকর্তাদের নিরপেক্ষতা ও সততার অভাবের জন্যে মুসলিমরা
চাকরিতে অত্যন্ত কম নিয়োগ পেয়েছে । চাকরিতে মুসলিমদের প্রতিনিধিত্ব যে কম সে কথা
সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রীও (বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য) স্বীকার করেছেন ।
বৈষম্য ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে
প্রতিবাদ থাকুক, কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিশ্রুতিতে এই
মোহও যেনো সৃষ্টি না হয় যে, মুসলিমদের প্রতি এই বঞ্চনার অবসান হবে । সারা
বিশ্বেই পুঁজিবাদী রাষ্ট্রে সংখ্যালঘুরা এই অবস্থার মধ্যে রয়েছে । এটা পুঁজিবাদী রাষ্ট্রের
অলিখিত বিধান । পাশের দেশ বাংলাদেশেও সংখ্যালঘু হিন্দুরা বঞ্চনার শিকার হচ্ছেন ।
১৯৯০ সালে সে দেশে তাদের প্রতি বঞ্চনার ছবিটা ছিলো এ রকমঃ “সেনাবাহিনীতে সংখ্যালঘু ব্রিগেডিয়ার বা
জেনারেল নেই, কর্ণেল সত্তরে মাত্র একজন । মেজর একহাজারে চল্লিশ, ক্যাপ্টেন তেরশতে
আট, সিপাহী আশি হাজারে পাঁচশ এবং চল্লিশ হাজার বিডিআরের মধ্যে সংখ্যালঘু মাত্র
তিনশ জন । আইজি এবং এ্যাডিশনাল আইজি পদে সংখ্যালঘু শুন্য । স্বরাষ্ট্র, পররাষ্ট্র
এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে কোনো সংখ্যালঘু নেই । নেই সচিব বা অতিরিক্ত সচিব পদেও
। কোনো ব্যাঙ্কেই ডাইরেকটর, চেয়ারম্যান এবং এম ডি পদে সংখ্যালঘু নেই । এমনকি
ব্যাঙ্কের কোনও শাখাতে ম্যানেজার পদেও একজন সংখ্যালঘু নেই ।” (দ্রঃ লজ্জা, তসলিমা নাসরিন) এই
চিত্রটা দেখাচ্ছে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুরা কীরুপ নগ্ন বৈষম্যের শিকার হয় । বঞ্চনা
সত্ত্বেও সে দেশে হিন্দুদের অগ্রগতি রুদ্ধ হয়নি । সুতরাং পশ্চিমবঙ্গে মুসলিম
সমাজের পশ্চাদপদতার জন্যে শুধু রাষ্ট্র বা
সরকারের বোষম্য ও বঞ্চনাকে দোষারোপ করলে ভুল হবে । কেনো মুসলিমরা পশ্চাদপদ
তার আলোচনা ইতিমধ্যেই করা হয়েছে । সেই
আলোচনায় এটা স্পষ্ট যে, ধর্মীয় গোঁড়ামি এবং মাদ্রাসা শিক্ষাই হলো মুসলিম সমাজের
উন্নয়নের পথে সবচেয়ে বড়ো প্রতিবন্ধকতা । সেই
প্রতিবন্ধকতা আজো বিদ্যমান যা নির্মূল করা আবশ্যক ।
এই রাজ্যে এখনও প্রায় দু’হাজার
খারিজি মাদ্রাসা আছে যেখানে ৫/৬ লক্ষ পড়ুয়া পড়াশোনা করছে । এদের মধ্যে অসংখ্য মেধাবী ছাত্র আছে যাদের
যাবতীয় মেধা ও সম্ভাবনাগুলি নষ্ট হচ্ছে । স্কুল-কলেজে পড়তে পারেনা হাজার হাজার মেধাবী ছেলেমেয়ে অর্থাভাবে । কীভাবে তাদের মেধা রক্ষা করা যায়, তাদের প্রতিভার বিকাশ ঘটানো
যায় তা ভাবতে মুসলিম সমাজকে । মুসলিম সমাজ গরীব, কিন্তু তাদের হাতে আছে একত্রীভূত বিশাল অর্থভাণ্ডার ।
জাকাত, ফেতরা, কোরবানির পশুর চামড়ার মূল্য ইত্যাদি বিভিন্ন খাত থেকে প্রতি বছর সেই
অর্থভাণ্ডার তৈরী হয় । এই অর্থভাণ্ডাররের বিপুল অংশ নষ্ট
হয় খারিজি মাদ্রাসার ব্যয় বহন করতে । প্রশ্ন কেনো উঠবে না মুসলিম সমাজ থেকে
যে, যে মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থা মুসলিম সমাজের অধঃপতন ও অনগ্রসরতার জন্যে বহুলাংশে
দায়ী সেই মাদ্রাসা শিক্ষা আর কতদিন চলবে ? কেনো খারিজি মাদ্রাসাগুলি বন্ধ হবেনা ?
কেনো দরিদ্র পরিবারের সন্তানদের আধুনিক শিক্ষার জন্যে, বিশেষ করে গরীব মেধাবী
ছেলেমেয়েদের উচ্চ শিক্ষার জন্যে ঐ অর্থভাণ্ডার থেকে টাকা ব্যয় করা হবে না ? গ্রামের স্কুল-কলেজের পরিকাঠামোর উন্নতি করার
জন্যে সেই অর্থ ব্যয় করা হবে না ? ধর্মীয় গোঁড়ামি
ও কুসংস্কারের কানাগলি থেকে বেরিয়ে এসে মুসলমানদের এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হবে
। ধর্মীয় গোঁড়ামি, কুসংস্কার ও সংকীর্ণতার চোরাবালিতে মুসলিম সমাজ পথ হারিয়েছে
কয়েক শতাব্দী আগে । সর্ব প্রকার গোঁড়ামি ও সংকীর্ণতাকে জয় করেই মুসলিম সমাজকে
সামগ্রিক উন্নয়নের পথ খুঁজতে হবে । একদিকে হিন্দু মৌলবাদীদের ফ্যাসীবাদী হামলা,
উল্টোদিকে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের মুসলিম মৌলবাদী
সন্ত্রাসবাদী হামলা – দুই হামলায় ভারতের ধর্মনিরপেক্ষতা ও অভ্যন্তরীণ
নিরাপত্তা কঠিন বিপদের মুখে । এই প্রেক্ষাপটে খারিজি মাদ্রাসাগুলিকে বিচার করতে
হবে । মাদ্রাসাগুলি শুধু আধ্যাত্মিক ধর্মতত্ত্ব শেখায় না, শেখায় ইসলামের মূল তত্ত্ব জিহাদও । আল-কায়দা, তালিবান,
জৈস-এ-মহম্মদ, লস্কর-ই-তৈবা, প্রভৃতি জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলির আঁতুড়ঘর এই
খারিজি মাদ্রসাগুল । সিনিয়র মাদ্রাসার সিলেবাসেও জিহাদ বড়ো জায়গা জুড়ে আছে । প্রতিবাদী
দেশের এই জিহাদি সংগঠনগুলি এবং পাকিস্তানের
গোয়েন্দা বাহিনী আই এস আই আমাদের দেশের অভ্যন্তরে বহুদিন থেকেই সক্রিয় । ভীষণ উদ্বেগের বিষয় হল এই যে, এ রাজ্যের কিছু
খারিজি মাদ্রাসায় শুধু জঙ্গী পাঠই দেওয়া হয় না,
বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের জিহাদি
সংগঠনগুলির সঙ্গে তাদের যোগাযোগের প্রমাণ পাওয়া গেছে । এর ফলে হিন্দু মৌলবাদীরা
গোটা মুসলিম সমাজের দিকেই আঙুল তুলছে এবং ভারতের সমস্ত মুসলমানদেরই দেশপ্রেম নিয়ে
প্রশ্ন তুলছে । তারা মুসলিম জঙ্গি
সংগঠনগুলির কার্যকলাপকে অজুহাত বানিয়ে
হিন্দুদের আত্মরক্ষা করার নামে মুসলমানদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়াচ্ছে এবং সশস্ত্র
আক্রমণ করার ডাক দিচ্ছে । এ এক কঠিন ও জটিল পরিস্থিতি । এই পরিস্থিতিতে হিন্দু
মৌলবাদের মোকাবিলায় ,মুসলিম মৌলবাদীরা মুসলিম মৌলবাদের তত্ত্ব ফেরি করতে চাইছে, তারা বলছে সমস্ত
মুসলমানকে হিন্দুদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে । না, এভাবে চলতে পারে না । হিন্দু
মৌলবাদকে বিচ্ছিন্ন করতে হলে মুসলিম মৌলবাদকেও বিচ্ছিন্ন করতে হবে । সেজন্যে
ইসলামি আধ্যাত্মিক ধর্মতত্ত্ব শেখানোর আড়ালে মুসলিম মৌলবাদীরা যাতে তাদের ডালপালা
বিস্তার করতে না পারে তার জন্যে মাদ্রাসাগুলি বন্ধ করার উদ্যোগ মুসলিম সমাজকেই
নিতে হবে ।
একধারে বিপুল জনবিষ্ফোরণ,
অন্যধারে তীব্র অর্থনৈতিক সংকট – এই পরিস্থিতিতে জন্ম নিয়ন্ত্রণ করে পরিবার ছোট
করা একান্ত জরুরী কর্তব্য । কিন্তু এক্ষেত্রেও বাধা আসছে মাদ্রাসা এবং মাদ্রাসার
ধারক ও বাহক আলেম সমাজের কাছ থেকে । আল্লাহ্ সবার রুজি-রোজগারের মালিক – কোরানের
এই তত্ত্ব প্রচার করছে এবং বলছে জন্ম নিয়ন্ত্রণ করা মহাপাপ । অন্যদিকে মুসলিম ব্যক্তিগত আইনের ফাঁসে মুসলিম
সমাজ হাসফাঁস করছে । কিন্তু আলেম সমাজ বলছেন, বহুবিবাহ ও তালাক আইনের মতো সুন্দর
আইন হয় না, কারণ আল্লাহ্র আইন খারাপ হতে পারে না । এদিকে কতশত তালাকপ্রাপ্তা মুসলিম নারীর
দীর্ঘশ্বাসে বাতাস ক্রমশঃ ভারী হয়ে উঠছে । একজন মুসলিম পুরুষের তিনটে চারটে স্ত্রী
থাকার ফলে কত পরিবারে যে অশান্তির আগুন জ্বলছে তার হিসেব কে রাখে ? স্বামীর দাসত্ব করতে করতে স্ত্রীর এতটুকু যদি ত্রুটি বা বিলম্ব
হয়, না হলেও, স্বামী স্ত্রীকে তালাক দিতে পারবে । স্বামী মাতাল হোক, লম্পট হোক,
জুয়াড়ী হোক, চোর হোক, খুনি হোক, চারটে বিয়ে করুক, স্ত্রী তাকে তালাক দিতে পারবে না
। স্বামী যখন যে অবস্থায় স্ত্রীকে শয্যায় ডাকবে, স্ত্রীকে তৎক্ষণাৎ সাড়া দিতে হবে
। কারণ, কোরান বলছে, স্ত্রী শস্যক্ষেত্র
স্বরূপ, পুরুষ স্ত্রীকে যখন খুশী যেখানে খুশী ভোগ করতে পারবে । স্ত্রী যদি সাড়া না
দেয় এবং তার ফলে স্বামী যদি অসন্তুষ্ট হয়, তবে ফেরেস্তারা একযোগে সেই স্ত্রীর উপর
অভিশাপ বর্ষণ করবে । স্বামীর দেহে রক্ত-পুঁজ বের হলে, স্বামীর হক আদায় করার জন্যে স্ত্রীকে সেই
রক্ত-পুঁজ প্রয়োজনে জিভ দিয়ে চেটে পরিষ্কার করতে হবে। যে
স্ত্রীর স্বামী তার উপর অসন্তুষ্ট হয় সে স্ত্রীর সত্তর বছরের এবাদত নষ্ট হয়ে যায়
। স্বামী ক্রুদ্ধ হলে স্ত্রী উত্তর
দেবে না, বরং করজোড়ে এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকবে স্ব্বামীর ক্রোধ প্রশমিত না হওয়া
পর্যন্ত । স্বামীর প্রতি কটূক্তি করলে স্ত্রীর জিভ সত্তর
ফুট লম্বা হয়ে যায় । নারী সম্পর্কে এমনই সব বিধান দিয়েছে ইসলাম । কিন্তু
নারী কি শুধুই স্ত্রী ? নারী তো আমাদের বোন,
দিদি, মা, মাসি, পিসি এবং আরো কতো
রকমের শ্রদ্ধা ও স্নেহের সম্পর্ক রয়েছে নারীর সঙ্গে পুরুষের । নারী সম্পর্কে এ রকম
ঘৃণ্য ও কুৎসিত শিক্ষা দেওয়ার জন্যে আর কতকাল মাদ্রাসা শিক্ষার পৃষ্ঠোপোষকতা করবে
মুসলিম সমাজ ?
উপসংহারে বলতে চাই যে, মাদ্রাসা
শিক্ষাব্যবস্থার অসারতা এ নেতিবাচক প্রভাব
সম্বন্ধে মুসলিম সমাজ উপলব্ধি করছে এবং
আধুনিক শিক্ষার প্রতি তাদের আগ্রহ ক্রমশঃ বাড়ছে
। কিন্তু গতি এখনও মন্থর । অন্যদিকে বিশ্বের অধিকাংশ মুসলিম প্রধান
রাষ্ট্রগুলি ধর্মশিক্ষার গুরুত্ব হ্রাস করে আধুনিক শিক্ষায় মনোনিবেশ করেছে । যে উদ্দাম গতিতে পৃথিবী এগুচ্ছে তার সঙ্গে
পাল্লা দিতে তারা জ্ঞানবিজ্ঞান ও আধুনিক প্রযুক্তির প্রয়োগ করছে ।
নয়া নয়া প্রযুক্তির উদ্ভাবনেও পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাচ্ছে । কম্পিউটার,
ইন্টারনেট ও তথ্যপ্রযুক্তির যুগে মাদ্রাসা শিক্ষা তথা ধর্মশিক্ষা অচল – এটা সে
দেশগুলি উপলব্ধি করেছে । এ দেশের মুসলিম
সমাজকেও এটা উপলব্ধি করতে হবে । যত দ্রুত উপলব্ধি করবে তত তাড়াতাড়ি মঙ্গল হবে তাদের । না হলে,
অনেক পিছিয়ে পড়া মুসলিম সমাজ আরো অনেক পিছিয়ে যাবে ।
(বিঃদ্রঃ এক যুগ আগে লেখা এ প্রবন্ধটি । ২০০৪ সালে ‘একুশ
শতক’ নামের একটি পত্রিকার একটি বিশেষ
সংখ্যার জন্যে লিখেছিলাম । প্রবন্ধটি
রয়েছে আমার প্রথম প্রবন্ধ সংকলন গ্রন্থে (মুসলিম সমাজ বনাম ফতোয়া সন্ত্রাস) । লেখাটি
আজো সমান প্রাসঙ্গিক । পড়লে মনে হবে এখনকার লেখা। তাই যৎসামান্য
সম্পাদিত ও পরিমার্জিত করে লেখাটি আমার পাঠকদের হাতে তুলে দিলাম । না, লেখাটির
হালনাগাদ তথা আপডেট করিনি । শিরোনামেও কোনো পরিবর্তন করিনি । )