২১ শে জানুয়ারী তারিখটি স্থান করে নিল বাংলাদেশের ইতিহাসের পাতায় । স্বর্ণোজ্জ্বল আভায় বাংলাদেশের ইতিহাসের শোভা বর্ধন করবে এই দিনিটি , কেননা এই দিনেই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল-২
জামাত-ই-ইসলামের সাবেক সদস্য মাওলানা আবুল কালাম আযাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকারকে যুদ্ধাপরাধী সাব্যস্ত
করে মৃত্যু দন্ডাদেশ প্রদান করেছে । ট্রাইবুনাল বলেছে এই আদেশ ফাঁসীতে ঝুলিয়ে
কার্যকর করতে । এই রায়টি ছিল বাংলাদেশের
মানুষের কাছে বহু প্রতীক্ষিত ও আকাঙ্খিত । মানুষ দীর্ঘদিন ধরে দাবী জানিয়ে আসছিলেন
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করে তাদের চরম শাস্তি দেওয়ার জন্য ।
যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে বিচার করে শাস্তি
দেওয়াটা মোটেই সহজ কাজ ছিল না । প্রথম থেকেই দেশের ভিতর থেকে এবং এমনকি আন্তর্জাতিক দুনিয়া থেকেও প্রবল বাধা ছিল যাতে
বাংলাদেশ সরকার কোনো মতেই যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে বিচার সংগঠিত করতে না পারে ।
সৌদি আরব, ইরান, পাকিস্তান প্রভৃতি বহু মুসলিম দেশ ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা
বিরুদ্ধে । তাই এই দেশগুলি নানাভাবে ষড়যন্ত্র চালিয়েছে বাংলাদেশ সরকার যখনই
যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে বিচার শুরু করার উদ্যোগ নিয়েছে । আর বাংলাদেশের ভিতরে
পাকপন্থী বিএনপি এবং জামাআত ও অন্যান্য মুসলিম মৌলবাদীগুলি তো সর্বদাই ষড়যন্ত্র ও
চক্রান্ত করে এসেছে ওই বিচার প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে । মুজিব সরকার ৬৫ হাজার বাংলাদেশী
যুদ্ধাপরাধীকে গ্রেপ্তার করে জেলে পুড়ে তাদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু করেছিল । তখন
চিকন আলী নামের একজন কুখ্যাত রাজাকারকে ফাঁসীতে ঝোলানোও হয়েছিল । মুজিবকে হত্যা
করে সেবার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়াকে স্তব্ধ করে দিয়েছিল পাকপন্থী
বাংলাদেশীরা । জিয়াউর রহমানের সরকার ওই ৬৫ হাজার যুদ্ধাপরাধীদের সকলকেই ছেড়ে
দিয়েছিল । শুধু তাই নয় , জিয়াউর রহমান যুদ্ধাপরাধী জামাআতের সকল সদস্য সহ ও
অন্যান্য সমস্ত মুসলিম মৌলবাদী নেতাদের রাজনৈতিক পুনুর্বাসনও দিয়েছিলেন । জিয়া
পরবর্তী জামানায় তাঁর পত্নী জিয়ার কাজের ধারাকে আরও অনেকদূর এগিয়ে নিয়ে গেছেন ।
তিনি এইসব যুদ্ধাপরাধীদের নিয়ে নির্বাচিনী জোট করে তাদের ক্ষমতার অংশীদার করে
নিতেও দ্বিধা করেন নি । আওয়ামি লিগের বর্তমান মহাজোট সরকার যখন এবার আবার দৃঢ়
সঙ্কল্প নিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু করে তখনও একেবারে গোড়া থেকেই
খালেদা জিয়া জামাতকে সঙ্গে নিয়ে যৌথভাবে
নানা অজুহাত খাড়া করে পদে পদে বাধা দিতে শুরু করেন । ট্রাইবুনালের বিচার
প্রক্রিয়া যত এগিয়েছে বিএনপি ও জামাতের পক্ষ থেকে সেই বাধা তত তীব্র করা হয়েছে । শেষের দিকে একেবারে মরিয়া হয়ে প্রায়
প্রতিদিন হরতাল, অবরোধ, মিছিলের নামে সহিংস রাজনৈতিক কর্মসূচী দিয়ে ব্যপক ভাঙচুর,
অগ্নি সংযোগ , পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে বাংলাদেশের জনজীবন ও বাংলাদেশের বৈধ
সরকারকে স্তব্ধ করে দিতে চেয়েছে । এসব কর্মসূচীর প্রধান লক্ষ্যই ছিল
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়াকে ভেস্তে দেওয়া । এতশত বাধা অতিক্রম করে সেই বিচার
প্রক্রিয়াকে অব্যাহত রাখা কতখানি সম্ভব তা নিয়ে সর্বস্তরে সংশয় ছিল । শেষ পর্যন্ত
সকল বাধা অতিক্রম করে এবং সকল সংশয়ের অবসান ঘটিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল-২
তার রায় ঘোষণা করতে সক্ষম হলো । এটা বাংলাদেশের মানুষের একটা বিরাট জয় । এ জয় বাংলাদেশের মানুষের আর একটা স্বাধীনতা অর্জনের তুল্য । এই জয়
বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী সকল প্রতিক্রিয়াশীল শক্তির মনোবল ভেঙে দিতে সহায়ক
হবে । এই জয়ের ফলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও
সার্বভৌমত্ব আরও শক্তিশালী, সুদৃঢ় ও নিরাপদ হবে । এই
ঐতিহাসিক জয়ের প্রধান কৃতিত্ব অবশ্যই প্রধান মন্ত্রী হাসিনার । তাঁর অসীম সাহস, প্রবল সদিচ্ছা ও দৃঢ় সঙ্কল্প ব্যতীত এই জয় অর্জন করা অসম্ভব ছিল
। মুজিবের
হত্যাকারীদের এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও
চরম শাস্তি দাবী ছিল ইতিহাসের দাবী । মুজিবের হিত্যাকারীদের বিচারের মাধ্যমে
হাসিনা ইতিপূর্বেই ফাঁসীতে ঝুলিয়েছিলেন । বাকি ছিল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করে
শাস্তি প্রদান করা । সেই দাবীও তিনি মিটিয়ে দিলেন পাহাড় প্রমাণ বাধা ও শত-সহস্র
ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন-ভিন্ন করে । ইতিহাসের এই বিশাল দায় মিটিয়ে হাসিনা এবার
নিসংশয়ে নিজেই এক উজ্জ্বল ইতিহাস রচনা করে ফেললেন । এই স্বর্ণালী ইতিহাস রচনার কৃতিত্ব প্রাপ্য ট্রাইবুনালের বিচারপতিদের,
সরকারী কৌসুলীদের
এবং ট্রাইবুনালে গিয়ে যাঁরা সাক্ষ্য
প্রদান করেছেন তাঁদেরও , কারণ তাঁদের প্রত্যেকেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের
বিরুদ্ধে বিচার প্রক্রিয়াকে আকাঙ্খিত পরিণতি দিতে নির্ভিক ভূমিকা পালন করেছেন ।
এবং কৃতিত্ব প্রাপ্য অবশ্যই সেই অসংখ্য বাংলাদেশী জনগণের যাঁরা যুদ্ধাপরাধীদের
বিচার ও শাস্তির দাবীতে অকুতোভয়ে চার দশকের বেশী সময় ধরে নিরলস সংগ্রাম পরিচালনা
করে এসেছেন ।
যুদ্ধাপরাধী মাওলানা আযাদের মৃত্যুদন্ডের রায়ে বাংলাদেশের মানুষ ভীষণ খুশী । কারণ
এটা ছিল তাঁদের
গণদাবী ।
১৯৯১ সালে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে নতুন করে শুরু হয়েছিল
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও শাস্তির দাবীতে আন্দোলন । তার পরের বছর বাংলাদেশের মানুষ
সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করার লক্ষ্যে যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে গণআদালত স্থাপন করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছিলেন । ঐ গণআদালত যুদ্ধাপরাধীদের মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত করেছিল । একুশ বছরের দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর সেই দাবী
পূরণ হয়েছে, ফলে স্বাধীনতা প্রিয় মানুষদের তো খুশী হওয়ারই কথা । তবে সবচেয়ে বেশী
খুশী একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে যে সকল নিরস্ত্র বেসামরিক লোকজন নিহত হয়েছিলেন এবং
যাঁরা যুদ্ধ করতে গিয়ে শহীদের মৃত্যু বরণ করেছিলেন তাঁদের পরিবারের লোকজন । তাঁদের
স্বজন হারানোর ব্যাথা এবার অনেকটাই প্রশমিত হবে । কেউ কেউ বলেছেন যে তাঁদের নিহত
স্বজনদের আত্মা এবার শান্তি পাবে, এটা তাঁদের কাছে এক বিরাট পাওনা । মাওলানা
আযাদের হাতে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হওয়া চিত্তরঞ্জন দাশের পুত্র গোপাল দাস The Daily
Star এর প্রতিনিধিকে
তাঁর সেই খুশীর কথা ব্যক্ত করেছেন এভাবে, ‘ My father’s soul will now rest in
peace .’ গোপাল বাবু আরও বলেছেন যে, ‘আমার মত আরও হাজার
পুত্র, কন্যা এব্বং শহীদদের পরিবারের সদ্যসরা বাকী যুদ্ধাপরাধীদের ঐ একই সাজা
দেখার জন্য গভীর আগ্রহ ও আশা নিয়ে অপেক্ষা করছে । দি ডেইলি স্টার লিখেছে, ‘ Gopal das
said: Like me , thousands of sons, daughters and family members of martyrs are
waiting to see other war criminals walking gallows.’
ট্রাইবুনালের এই
রায়ের আর একটি অতি গুরুত্ত্বপূর্ণ দিক আছে । জামাত ও বিএনপি-র পক্ষ থেকে এতদিন ধরে
দেশের মধ্যে ও দেশের বাইরে সারা বিশ্বজুড়ে হাসিনার বিরুদ্ধে ব্যাপকপ্রচারাভিযান
সংগঠিত করে এসেছে এ কথা বলে যে যুদ্ধাপরাধী হিসাবে যাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে
তাঁরা সবাই নির্দোষ । সম্পূর্ণ রাজনৈতিক
উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়েই বেছে বেছে ধর্মভীরু সেই সব আল্লাহ ভক্ত মৌলানাদের গ্রেপ্তার
করা হয়েছে । ট্রাইবুনালের এই রায় প্রমাণ
করে দিল, আসলে জামাত ও বিএনপি-র এই প্রচারই মিথ্যা ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত
এবং জামাতের
নেতৃবৃন্দ ও
সদস্যরা তথা আল বদর ও রাজাকার বাহিনীর নেতা ও কর্মীরা সকলে প্রকৃতই যুদ্ধাপরাধী । আবুল
কালাম আযাদের বিরুদ্ধে দেওয়া রায়ে মুক্তিযুদ্ধকালে রাজনৈতিক দল হিসেবে
জামায়াতে ইসলামীর
ভূমিকাও উল্লেখ করা হয়েছে। রায়ে বলা হয়, ‘সংগঠন হিসেবে জামায়াত মুক্তিযুদ্ধকালে প্যারা-মিলিশিয়া বা সহযোগী বাহিনী গঠন করে
পাকিস্তান
রক্ষার নামে নিরস্ত্র বাঙালি বেসামরিক
ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছিল ।’ সুতরাং এটা স্পষ্ট যে, এই রায়ের আঘাতে খসে পড়লো জামাত ও বিএনপির মুখোশ এবং উন্মোচিত হয়ে
পড়লো তাদের আসল মুখ যেটা অতিশয় কদাকার,
কুৎসিত ও হিংস্র । বাংলাদেশের মানুষ সহ গোটা বিশ্ব দেখলো বিএনপি এবং তার দোসর জামাত-ই-ইসলাম দলটি ও
তার নেতৃবৃন্দ ধর্মগুরু মৌলানা সমাজের আসল চেহারা ও চরিত্র ।
নীতিগতভাবে
মৃত্যুদন্ডের বিরোধী হলেও ট্রাইবুনালের এই রায়ের প্রতি আমার দ্বিধহীন ও অকুন্ঠ
সমর্থন রয়েছে । কারণ সবক্ষেত্রেই কিছু ব্যতিক্রম থাকে । বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধে জামাত ও
মুসলিম মৌলবাদীরা যে বীভৎস অপরাধ সংগঠিত করেছে তা শুধু ব্যতিক্রমই নয়,
ব্যতিক্রমেরও ব্যতিক্রম । ত্রিশ লক্ষ মানুষকে নৃশংশভাবে হত্যা করা হয়েছে এবং প্রায়
চার লক্ষ নারী হয়েছেন ধর্ষণ ও নির্যাতন শিকার । বিশ্বের ইতিহাসে এত জঘন্য, ঘৃণ্য ও
বীভৎস নারকীয় ঘটনা খুবই বিরল । প্রায় নজিরবিহীন এই গণহত্যা , লুটপাট ও গণ নারী
ধর্ষণে পাক হানাদার বাহিনীকে জামাতের নেতৃবৃন্দ ওই মাওলানা সমাজ শুধু সহায়তা
প্রদানই করে নি , নিজেরাও অসংখ্য হত্যা, নারী ধর্ষণ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটিয়েছে ।
সুতরাং তাদের জন্য চরম শাস্তি হিসাবে মৃত্যুদন্ডই একমাত্র উপযুক্ত ।
জামাত নেতা
মাওলানা আযাদের বিরুদ্ধে মোট আটটি অভিযোগ নথিভুক্ত রাষ্ট্রপক্ষ মধ্যে হত্যা, ধর্ষণ
, অপহরণ ও লুটপাট প্রভৃতি মানবতাবিরোধী সকল অপরাধই ছিল । হত্যার বিষয়ে
রাষ্ট্রপক্ষের অভিযোগে ছিল, ‘ ... একাত্তরের ১৭ মে রাজাকার বাহিনীর সদস্য ও
স্থানীয় আলবদর নেতা আযাদ ৩০-৩৫ জন সশস্ত্র রাজাকার সঙ্গে নিয়ে ফরিদপুরের বোয়ালমারী
উপজেলার হাসামদিয়া গ্রামের হিন্দু পাড়ায় হামলা চালান । হিন্দু জনগোষ্ঠীকে সম্পূর্ণ বা আংশিক ধ্বংসের
উদ্দেশ্যে তাঁরা বাড়ীঘর লুঠ ও অগ্নি সংযোগ করেন , নির্বিচারে গুলি চালিয়ে
শরৎচন্দ্র পোদ্দার, সুরেশ পোদ্দার, শ্যামাপদ পোদ্দার, যতীন্দ্র মোহন সাহা, নীল রতন
সামাদ্দার, সুবল কয়াল ও মল্লিক চক্রবর্তীকে হত্যা করেন ।হরিপদ সাহা ও প্রবীর কুমার
সাহাক ওরফে পুইটাকে হত্যা করা হয় ময়েনদিয়া বাজারের নদীর ঘাটে নিয়ে ।’ এছাড়াও তার বিরুদ্ধে
সুধাংশু মোহন, মাধব ছন্দ্র বিশ্বাস ও চিত্তরঞ্জন
দাসকে খুনের অভিযোগও আছে । হত্যাকান্ডের এই ভয়ঙ্কর অভিযোগের
পরিপ্রেক্ষিতে ট্রাইবুনালের রায়ে বলা হয়েছে, প্রাপ্ত সাক্ষ্যে হিন্দু জনবসতি লক্ষ্য করে চালানো ওই লোমহর্ষক ধ্বংসযজ্ঞের ঘটনা প্রমাণিত হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষের ১৯তম
সাক্ষী (সত্য রঞ্জন সাহা) ওই ঘটনার চাক্ষুষ সাক্ষী। তাঁর বাবা ওই ঘটনায়
নিহত হন।
সাক্ষ্যে উঠে এসেছে, কীভাবে আসামি তাঁর সহযোগীদের নিয়ে সরাসরি ধ্বংসাত্মক অপরাধে অংশ নিয়েছিলেন। ১৬তম (আবদুল মান্নান), ১৭তম (সুশীল কুমার) ও ২০তম সাক্ষীর (অসিত বরণ সাহা) সাক্ষ্যের মধ্য দিয়েও রাষ্ট্রপক্ষ এই
অভিযোগে
আসামির শাস্তি পাওয়ার যথার্থতা প্রমাণ
করতে সক্ষম হয়েছে। ট্রাইবুনাল এ প্রসঙ্গে আরও বলেছে, বৃহৎ পরিসরে ওই হত্যাকাণ্ড ও
বিপুল ধ্বংসযজ্ঞ হিন্দু জনবসতিকে গ্রাম ছাড়তে
বাধ্য করে। হত্যা,
ধ্বংস, লুণ্ঠন, মানসিক আঘাত—সব ধরনের অপরাধ মিলিয়ে একটি অভ্রান্ত ধারণা তৈরি হয়, হামলাকারীরা ‘হিন্দু জনগোষ্ঠী বা সম্প্রদায়কে’ আংশিকভাবে
ধ্বংসের জন্য ওই হামলা চালায়। গণহত্যার উদ্দেশ্যে ওই
হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়,
যা গণহত্যার সমান অপরাধ।
আযাদের বিরুদ্ধে আনীত
একটি অভিযোগ- অপহরণ- বাদে সকল অভিযোগই প্রমাণিত হয়েছে বলে ট্রাইবুনালের জানানো হয়েছে । অর্থাৎ উক্ত
হিন্দু মহল্লায় লুটপাট সহ নারী ধর্ষণের অভিযোগগুলিও । ধর্ষণের অভিযোগটি এরূপঃ ‘ একাত্তরের ৮ জুন দুপুর ১২টার দিকে আযাদ
চার-পাঁচজন সশস্ত্র
রাজাকারকে সঙ্গে নিয়ে বোয়ালমারী থানার
নতিবদিয়া গ্রামের এক হিন্দু বাড়িতে হামলা চালিয়ে দুই
হিন্দু নারীকে গণধর্ষণ করেন।’ এই অভিযোগ সম্পর্কে রায়ে যা বলা হয়েছে, ‘ঘটনার
ধরন ও বিবরণ থেকে জানা যায়,
ওই হামলার লক্ষ্য ছিল হিন্দু জনগোষ্ঠী। ওই ঘটনায় আযাদের বিরুদ্ধে
মানবতাবিরোধী অপরাধ
হিসেবে ধর্ষণের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে।’
ঘাতক ও ধর্ষক জামাতের প্রাক্তন নেতা একজন প্রখ্যাত আলেম তথা শীর্ষস্থানীয় ধর্মগুরুও বটে । কিছুদিন পুর্বেও তিনি বাংলাদেশের দুটি বৈদ্যুতিন চ্যানেলে একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান পরিচালনা করতেন । ট্রাইবুনালে তার বিরুদ্ধে চার্জ গঠিত হওয়ার পরপরই চোরাপথে বাংলাদেশ ছেড়ে পালিয়ে যান এবং খুব সম্ভবত এখন পাকিস্তানে আত্মোগোপন করে আছেন । তার এই পালিয়ে যাওয়াটা প্রমাণ করে যে তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের আনীত অভিযোগ যথার্থ ও মোটেই উদ্দেশ্য প্রণোদিত নয় । ট্রাইবুনালের রায়ে এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, ‘একাধিক সাক্ষ্য থেকে এটা প্রমাণিত, আযাদ সশস্ত্র অবস্থায় অপরাধ করেছেন। তাঁকে নিছক ‘অনুপস্থিত অভিযুক্ত’ হিসেবে বিবেচনা করা যাবে না। তিনি একজন পলাতক আসামি। বিচারের মুখোমুখি না হওয়া তাঁর শাস্তি পাওয়ার যুক্তিকে সুদৃঢ় করে। তিনি আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ নেননি। এতে বোঝা যায় যে তিনি শাস্তি পাওয়ারই যোগ্য।’
ঘাতক ও ধর্ষক জামাতের প্রাক্তন নেতা একজন প্রখ্যাত আলেম তথা শীর্ষস্থানীয় ধর্মগুরুও বটে । কিছুদিন পুর্বেও তিনি বাংলাদেশের দুটি বৈদ্যুতিন চ্যানেলে একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান পরিচালনা করতেন । ট্রাইবুনালে তার বিরুদ্ধে চার্জ গঠিত হওয়ার পরপরই চোরাপথে বাংলাদেশ ছেড়ে পালিয়ে যান এবং খুব সম্ভবত এখন পাকিস্তানে আত্মোগোপন করে আছেন । তার এই পালিয়ে যাওয়াটা প্রমাণ করে যে তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের আনীত অভিযোগ যথার্থ ও মোটেই উদ্দেশ্য প্রণোদিত নয় । ট্রাইবুনালের রায়ে এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, ‘একাধিক সাক্ষ্য থেকে এটা প্রমাণিত, আযাদ সশস্ত্র অবস্থায় অপরাধ করেছেন। তাঁকে নিছক ‘অনুপস্থিত অভিযুক্ত’ হিসেবে বিবেচনা করা যাবে না। তিনি একজন পলাতক আসামি। বিচারের মুখোমুখি না হওয়া তাঁর শাস্তি পাওয়ার যুক্তিকে সুদৃঢ় করে। তিনি আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ নেননি। এতে বোঝা যায় যে তিনি শাস্তি পাওয়ারই যোগ্য।’
বাংলাদেশের মানুষ
ট্রাইবুনালের রায়ের সমর্থনে দলে দলে রাস্তায় নেমেছেন । এই রায়ে যে ঐতিহাসিক আর
একটা বিজয় অর্জিত হয়েছে সেটা শুধু উপভোগ করার জন্যে নয়, নেমেছেন অনতিবিলম্বে
সম্পূর্ণ বিচার প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করার দাবীতে । তাঁরা এখন সোচ্চার দুটো দাবীতেঃ এক) বাচ্চু রাজাকারের মৃত্যুদন্ড
অবিলম্বে কার্যকর করার জন্য সরকারকে দ্রুততার
সঙ্গে পদক্ষেপ করতে হবে । এবং দুই) জামাতের সাবেক আমির গোলাম আযম, বর্তমান আমির
মতিউর রহমান নিজামি, বর্তমান সাধারণ সচিব আলি হাসান মহম্মদ মুজাহিদ এবং বিএনপি
নেতা ও সাবেক মন্ত্রী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরি, আব্দুল আমিন সহ আর যে সব
যুদ্ধাপরাধীদের যে বিচার চলছে তা আতি দ্রুত সম্পন্ন করে টাদের চরম শাস্তি প্রদান
করতে হবে । গোলাম
আযমরা শুধু বাংলাদেশের মানুষের শত্রু নয়, ওরা মানবতার শত্রু, গণতন্ত্র,
সমাজতন্ত্র, প্রগতি ও শান্তির শত্রু । ওদেরও মৃত্যুদন্ডের আদেশের সংবাদ শোনার
জন্যে বাংলাদেশের মানুষ গভীর আগ্রহ ও প্রত্যাশা নিয়ে দিন গুনছেন । আমরাও সমান
আগ্রহ ও প্রত্যাশা নিয়ে কান পেতে থাকব সেই বজ্র ও দৃপ্ত ঘোষণাটি শুনবার জন্যে ।
গোটা বিশ্ব লক্ষ্য
রাখছিল বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল কী রায় দেয় কিংবা আদৌ কোনো রায়
দিতে পারে কিনা তার প্রতি । কিন্তু যখন সব আশঙ্কা ভুল প্রমাণ করে রায় দিল, এবং রায়
দিল একটি অত্যন্ত বলিষ্ঠ, ইতিবাচক
প্রতিক্রিয়া । কিন্তু সব আগে প্রতিক্রিয়া আসা উচিত ছিল ভারতের । কারণ মুসলিম
মৌলবাদী ও
জঙ্গীবাহিনীর
সন্ত্রাসবাদীদের বড় টার্গেট প্রতিবেশী দেশ এই ভারতই, আর এদেশের মাটিই সবথেকে বেশী ক্ষত-বিক্ষত ও রক্তাক্ত হোয়েছে
ওদের হাতে । বোম্বাই-এর ৯//১১ এর ভয়ংকর হানার জন্যে যে কাসবকে মৃত্যুদন্ড দিল ভারতের আদালত সেই কাসবরা ইসলামী সন্ত্রাসের
দাবার বোর্ডের বোরে মাত্র, আসল দাবারু বা মাষ্টার মাইন্ড হলো এই আবুল কালাম আযাদ
ওরফে বাচ্চু রাজাকার, গোলাম আযম , মতিউর রহমান নিযামির মত ধর্মগুরুরাই । ভারত যখন
আক্রান্ত ও রক্তাক্ত হয় তখন ভারত সরকার প্রতিবেশী দেশগুলিকে চাপ দেয় সন্ত্রাসীদের
বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্যে । অথচ প্রতিবেশী দেশ যখন ঐ সন্রাসীদের চরম
সাজা দিয়ে একটি ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করলো
তখন ভারত স্পিকটি নট । পাছে মুসলিম ভোটব্যাঙ্কে চিড় ধরে সেই ভয়ে । হায়রে
ভোট ! হায়রে রাজনীতি !
( এই নিবন্ধটি ২৫.০১.২০১৩ তারিখে লেখা । নিবন্ধটি দৈনিক স্টেটসম্যান কাগজে ছাপা হয় ১২ ই ফেব্রুয়ারী ।)
No comments:
Post a Comment