Wednesday, June 4, 2014

‘বোকো হারাম’ প্রকৃত অর্থেই ইসলাম ও মুহাম্মদকে প্রতিনিধিত্ব করে



এই এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে নাইজেরিয়ায় একটি ভয়ঙ্কর অপহরণের ঘটনা ঘটে। একটি মুসলিম সন্ত্রাসবাদী সংগঠন একটি স্কুলে হানা দিয়ে ২৭৬ জন স্কুলছাত্রীকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। অল্প কিছুদিন পর অতিশয় ঘৃণ্য এই অপহরণের ঘটনাটির দায় স্বীকার করে সেই সংগঠনটি। তখন থেকেই সংগঠনটির নাম সারা বিশ্বজুড়ে ব্যাপক প্রচার লাভ করে। ভারতের প্রচার মাধ্যম এ সব ঘটনা যে উদ্দেশ্যেই হোক (প্রধানতঃ মুসলিম বুদ্ধিজীবীদের সন্তুষ্ট রাখতে) চেপে যায়। এক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম হয় নি। কিন্তু ইন্টারনেটের যুগে এখন কোনো ঘটনাই আর চেপে রাখা সম্ভব নয়। ফলে উক্ত ঘটনাটি  এবং সংগঠনটির খবর ভারতেও ছড়িয়ে পড়েছে। সংগঠনটির নাম ‘বোকো হারাম’। ঘটনার দায় স্বীকার করে সংগঠনের প্রধান আবুবকর শেকাও ভিডিও রেকর্ডিং করে সরকারকে বলেছে, ‘আমি তোমাদের স্কুল-ছাত্রীদের অপহরণ করেছি। এবং আল্লাহর হুকুমে আমি ওদের বাজারে বিক্রী করে দেবো’। মে মাসে ৫ তারিখে সেই ভিডিও রেকর্ডিংটি World Nigeria প্রকাশ করেছে। তার বয়ান হলো - “I abducted your girls,” Abubakar Shekau said in the video, obtained by Agence France- Presse. “I will sell them on the market, by Allah.” ‘বোকো হারাম’ প্রধান ওই ভিডিওয় সরকারকে বলেছে  তাদের যে সব নেতা কারাগারে  বন্দী আছে তাদের  মুক্তি দিলে তারা অপহৃত স্কুলছাত্রীদের মুক্তি প্রদান করতে প্রস্তুত আছে।
জঘন্য এই ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পরপরই গোটা বিশ্বজুড়েই মুসলিম সমাজের বুদ্ধিজীবী মহল  থেকে দাবী করা হচ্ছে যে ঐ ঘটনার সঙ্গে ইসলাম ও মুসলমানদের সম্পর্ক নেই, ইসলাম ধর্ম এমন ঘটনার অনুমতি দেয় নি এবং যারা ঘটনাটি ঘটিয়েছে তারা আসলে মুসলমানই নয়, তারা মুসলমান সমাজ ও ইসলামের কলঙ্ক। এ দাবী শুধু মুসলমান সমাজের বুদ্ধিজীবী মহল থেকেই করা হচ্ছে তা  নয়, অমুসলিমদের পক্ষ থেকেও করা হচ্ছে। ফলে গোটা বিশ্বজুড়েই সাধারণভাবে একটা ধারণা বা বিশ্বাস তৈরী হয়ে যাচ্ছে যে সত্যি সত্যিই ‘বোকো হারাম’ যা ঘটিয়েছে তার দায় তাদেরই, ইসলামের নয়। শুধু এ ক্ষেত্রেই নয়, প্রতিটি ইসলামি সন্ত্রাসবাদী ঘটনার ক্ষেত্রেই এ রকম ঘটছে।  যখনই এ রকম কোনো সন্ত্রাসবাদী হামলা হয় তখন শুধু এরূপ  দাবী করাই হয় না, তার সাথে সাথে এও দাবী করা হয় যে বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনাকে হাতিয়ার করে ইসলাম একটি সন্ত্রাসবাদী ধর্ম এরূপ প্রচার করা হয় ইসলাম-বিদ্বেষীদের (ইহুদী-খ্রিষ্টান-হিন্দু ইত্যাদি) পক্ষ থেকে ইসলামকে হেয়, অপমান ও অপদস্থ করার জন্যে। তাঁদের দাবী - এ সব প্রচার আসলে ইসলামকে শেষ করার আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অংশ বৈ নয়।  
মুসলিম সমাজের পক্ষ থেকে যে দাবী করা হচ্ছে তা যদি যথার্থই হয়, তবে দুটি প্রশ্ন সামনে চলে আসে যার উত্তর পাওয়া খুবই জরুরী। প্রশ্ন এক – ইসলামের  অবস্থান যদি সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে থেকে থাকে তবে সারা বিশ্বজুড়ে প্রতিনিয়তই  মুসলিম সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলি যখন সন্ত্রাসী কার্যকলাপ সংগঠিত করে ব্যাপক হত্যাকান্ড সংগঠিত করে তখন তার বিরুদ্ধে মুসলমানরা রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করে না কেন? ইসলাম সন্ত্রাস ও হিংসাকে সমর্থন ও অনুমোদন করে না বলে মুসলিম বুদ্ধিজীবীরা শুধু একটা দায়সারা বিবৃতি দিয়ে চুপ থাকে কেন? প্রতি শুক্রবার মসজিদে যে জুম্মার নামায  হয় সেখানে প্রচুর মুসলমান সমবেত হয়ে একসঙ্গে নামায আদায় করেন, তখন ঐ সময় ইমাম যে খুতবা (ধর্মীয় ভাষণ) দেয় তাতে সন্ত্রাসবাদী কোনো হামলার বিরুদ্ধে কোনো প্রকার নিন্দা ও প্রতিবাদ থাকে না কেন? কেন সে দিন মসজিদ থেকে যারা সন্ত্রাস ও হিংসা ছড়াচ্ছে, অপহরণ করছে, শ’য়ে শ’য়ে মানুষ হত্যা করছে, রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি ধ্বংস না হয় লুটপাট করছে তাদের বিরুদ্ধে মুসলমানদের প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ করার ডাক দেওয়া হয় না? প্রশ্ন দুই – মুসলিম সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলি দিনের পর দিন বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে সারা দুনিয়ায়। বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলির সদস্য সংখ্যাও। ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে তাদের আক্রমণ ও আঘাত করার শক্তি এবং   সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপও।  ইসলামের সমর্থন ও অনুমোদন ব্যতীরেকে সন্ত্রাসবাদীদের এত বাড়-বাড়ন্ত কীভাবে সম্ভব? যারা সশস্ত্র হামলা চালিয়ে নারী-পুরুষ-শিশু-বৃদ্ধ নির্বিশেষে দিনের পর দিন শত শত  মানুষ হত্যা করে তারা তো শুধু অন্যদের  হত্যাই করে না, তারা নিজেরাও আহত হয় ও নিহত হয়। অনেককেই  সারাজীবন কারাযন্ত্রণা ভোগ করতে হয়, আবার অনেককেই ফাঁসীর দড়িতে  মৃত্যুবরণও করতে হয়।  দুর্নিবার কোনো আদর্শের আহ্বান ব্যতীত কিংবা  বিনিময়ে বিরাট কিছু প্রাপ্তির প্রলোভন ব্যতীত কেউ এভাবে নিজের জীবন উৎসর্গ করার জন্যে নিজেকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করতে পারে? এ সব প্রশ্নগুলি সুচতুরতার সঙ্গে  এড়িয়ে যায় ওই বুদ্ধিজীবীরা যারা দাবী করে ইসলাম সর্বদায় হিংসা ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে এবং শান্তি ও মানবতার পক্ষে কথা বলে।
‘বোকো হারাম’ ও ‘তালিবানে’র মধ্যে আদর্শগত কোনো পার্থক্য নেই। তিন-চার বছর আগে তালিবানরা পাকিস্তানের মালালা ইউসুফজাইকে মাথায় গুলি করেছিলো যখন সে বাড়ির পথে স্কুলবাসে উঠেছিল। তার অপরাধ ছিল সে নিজে লেখাপড়া করতে চেয়েছিলো এবং সমস্ত মুসলিম মেয়েদের লেখাপড়ার পক্ষে ওকালতি করেছিলো। তালিবানরা  ফতোয়া দিয়েছিলো, মেয়েরা স্কুলে যেতে পারবে না এবং মেয়েদের সমস্ত স্কুলগুলি বন্ধ করতে হবে। ‘বোকো হারাম’-এর শিকার হলো সেই মেয়েরাই যারা লেখাপড়া করতে চায়, শিখতে চায় ও জ্ঞান অর্জন করতে চায়। ‘বোকো হারাম’ ও ‘তালিবান’দের প্রধান লক্ষ্যবস্তু বা নিশানা মেয়েরা যারা স্কুল যায়। কেন ? এটা কি কাকতালীয় ঘটনা মাত্র? মোটেই না। নারী লেখাপড়া করবে, জ্ঞান অর্জন করবে, স্বাধিনতা চাইবে, সমানিধিকার চাইবে – এমনতর চাওয়া প্রকৃত ইমানদার (বিশ্বাসী) মুসলমানের কাছে  চূড়ান্ত অসহ্য ও চরম ঘৃণার বিষয়। ‘বোকো হারাম’ সেই নীতিতে বিশ্বাসী যে নীতি হলো মেয়েরা ঘরের মধ্যে বন্দি থাকবে, আর একান্তই যদি ঘরের বাইরে যাওয়া অপরিহার্য হয় তবে একজন পুরুষ অভিভাবকের সাথে বোরখাবৃত হয়ে যাবে। তাদের এই চাওয়াটা তাদের নিজেদের তৈরী করা কোনো বিধান বা সংবিধান নয়। কোরানের ৩৩/৩৩ নং আয়াতে ইসলাম নারীদের উদ্দেশ্যে ঠিক এই আদেশই প্রদান করেছে। কোরানের সেই ভাষ্যটি হলো –   তোমরা আপন গৃহ সকলে স্থিতি করিতে থাকো এবং পূর্বতন মূর্খতার বেশ-বিন্যাসের ন্যায় বেশ-বিন্যাস করিও না,  ... এবং ঈশ্বর ও তাহার প্রেরিত পুরুষের আনুগত্য করো ...।” এই আয়াত থেকে এটা স্পষ্ট যে,  মেয়েদের স্কুলে লেখাপড়া করতে যাওয়া সন্দেহাতীতভাবেই কোরান তথা আল্লাহ তথা মুহাম্মদ তথা ইসলামের আদেশ ও আইনের উল্লঙ্ঘন। বোকো হারাম ও তালিবানদের প্রধান লক্ষ্যবস্তু তাই সেই মেয়েরা যারা স্কুল-কলেজে পড়াশোনা করে এবং বোরখা ব্যতীতই স্বাধীনভাবে বাড়ির  বাইরে  চলাফেরা করে। ‘বোকো হারাম’ তাই যখন স্কুলছাত্রীদের অপহরণ করে সেটা তাদের সংগঠনের আদর্শগত  বা ইসলামের আদর্শগত কর্মসূচীকেই রুপায়ণ করে।  ‘বোকো হারাম’ অবশ্য শুধু নারী শিক্ষাকে নিষিদ্ধ করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে না, তারা পাশ্চাত্য শিক্ষাকেই নাইজিরিয়ায়  নিষিদ্ধ করতে চায়।   ‘বোকো হারাম’-এর বাংলা অর্থ হলো, ‘পাশ্চাত্য শিক্ষা নিষিদ্ধ’।  ‘পাশ্চাত্য শিক্ষা নিষিদ্ধ’ অপেক্ষা ‘অমুসলিম শিক্ষা নিষিদ্ধ’ এই নামটা হলেই বরং  অধিক যথার্থ হতো।
বোকো হারামের  জন্ম ২০০২ সালে। গোঁড়া ইসলামপন্থী অল্প বয়সী এক তরতাজা যুবক মহম্মদ ইউসুফ ছিলো এর প্রতিষ্ঠাতা। মূল উদ্দেশ্য ছিলো নাইজিরিয়ায় ইসলামি রাষ্ট্র তথা কোরানের শাসন কায়েম করা। সেই লক্ষ্যে জিহাদ করার জন্যে এর জন্ম। সে স্থাপন করেছিল একটি শিক্ষামূলক প্রতিষ্ঠান যার মধ্যে ছিলো একট মসজিদ ও একটি ইসলামি স্কুল।  সেই স্কুলে ও মসজিদে জিহাদের পক্ষে আলোচনা করা হতো ধারাবাহিকভাবে যেখানে প্রধানত দরিদ্র পরিবারের সন্তানরা নিয়মিত আসা হত। সরকার এটা জানতে পেরে ২০০৯ সালে সেখানে হানা দেয়। তখন ইউসুফ বাহিনী পুলিশের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরে ও ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে ৭০০ জন মারা যায় এবং ইউসুফ পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। পরে জেল থেকে পালাতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে ইউসুফের মৃত্য ঘটে। ইউসুফের মৃত্যু হলেও সে কাজের কাজটি করে যেতে সক্ষম হয়েছিল। জিহাদের যে চারাটি রোপণ করেছিলো সেটা তার মৃত্যুর আগে ততদিনে একটি বৃক্ষে পরিণত হয়ে গিয়েছিলো। ইউসুফের পর বোকো হারামের হাল ধরে তারই যোগ্য শিষ্য আবুবকর শেকাও।
মুহাম্মদের সময়ে জিহাদ করা এবং তাতে জয়যুক্ত হওয়া কঠিন থাকলেও অসম্ভব ছিলো না। এখন জিহাদ করা অনেক বেশি কঠিন ও ঝুঁকিপূর্ণ এবং কোনো দেশ বা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে জেহাদে সাফল্য অর্জন করা একেবারেই অসম্ভব। এখন জেহাদে অংশ নেওয়ার অর্থই হচ্ছে অবধারিতভাবে প্রাণ উৎসর্গ করে দেওয়া। লাদেনের মতো বিশাল ধনী ও পরাক্রমশালী জেহাদীও নিজেকে বাঁচাতে ব্যর্থ হয়েছে। বর্তমান বিশ্বে মুজাহিদের (যারা জেহাদ করে) খাতায় নাম লেখানো মানে তাই নিশ্চিতভাবেই মৃত্যুকে আলিঙ্গন করা। তথাপি দলে দলে মুসলিমরা মুসলিম সন্ত্রাসবাদী সগঠনে ঢুকে মুজাহিদের খাতায় নাম লিখাচ্ছে এবং একদিকে হত্যাকান্ড সংঘটিত করছে অপরদিকে অকাতরে প্রাণও দিচ্ছে। মানুষের কাছে সর্বাধিক প্রিয় হচ্ছে তার প্রাণ, কোনো মানুষই মরতে চায় না। তাহলে মুসলিমরা দলে দলে প্রাণ বিলানোর খেলায় মেতে উঠছে কেন? এর উত্তর পাওয়া মোটেই কঠিন নয়। যারা ঐ খাতায় নাম লেখাচ্ছে তারা সাধারণ মুসলমানদের মতো ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞ নয় কিংবা ইসলাম জানা বিজ্ঞ মুসলিম বুদ্ধিজীবীদের মতো ভন্ডও নয়। তারা  ইসলাম জানা সত্যিকারের মুসলমান। তবে তারা যুক্তিবুদ্ধিহীন গোঁড়া মুসলমান। কোরান ও হাদিসের পাতায় পাতায় ছত্রে ছত্রে যা লেখা আছে তা অন্ধের মতো বিশ্বাস করে। শুধু বিশ্বাস করলে ইমানদার মুসলমান হওয়া যায় না, কোরান ও হাদিসের বিধি-নিষেধ জীবনের প্রতি পদক্ষেপে অনুসরণ করতে হয়। তারা সেটাই করে। কোরান বলছে প্রত্যেক মুসলমানের জন্যে জিহাদ ফরজ (অবশ্য পালনীয় কর্তব্য)। না করলে মর্মন্তুদ শাস্তি দেবে আল্লাহ। কোরানের ভাষ্যটি এ রকম -  যদি তোমরা জিহাদে বের না হও, তবে আল্লাহ যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি দেবে। (৯/৩৯) তার আগে আল্লহ জিহাদ-বিমুখ মুসলমানদের তিরস্কার করছে এভাবে – তোমাদের কী হয়েছে যে, যখন তোমাদের আল্লাহর পথে জিহাদে যেতে বলা হয় তখন তোমরা ভারাক্রান্ত হয়ে জমিনে ঝুঁকে পড়ো? তবে কী তোমরা পরলোকের পরিবর্তে পার্থিব জীবনে তুষ্ট হয়েছ? (৯/৩৮) জিহাদ করলে   সব পাপ মাফ হয়ে যাবে এবং পাওয়া যাবে বেহেস্ত (স্বর্গ)। জিহাদে জয় পেলে গাজী, মরলে শহীদ। গাজী ও শহীদ উভয়ের জন্যেই রয়েছ পরলোকে সর্বোচ্চ পুরস্কার বেহেস্ত। এ প্রসঙ্গে কোরানের ভাষ্যটি হলো – “জিহাদ অংশ গ্রহণ করলে, সে মরুক বা বাঁচুক তাকে মহা পুরষ্কার দেওয়া হবে।” (৪/৭৪) আর বেহেস্তে থাকবে মদ ও নারীর (৭২ জন চির কুমারী স্বর্গীয় উর্বশী) ছড়াছড়ি। শুধু এই দুটিই নয়, এরূপ অসংখ্য ভাষ্যের (আয়াতের) সমারোহ রয়েছে কোরান ও হাদিসে। হয় জাহান্নামের (নরক) শাস্তির ভয়ে, আর না হয় অনন্তকাল ব্যাপী বেহেস্তের ভোগ সর্বস্ব জীবনে প্রলুব্ধ হয়ে ধর্মান্ধ মুসলমানরা দলে দলে সন্ত্রাসবাদী সংগঠনে নাম লেখাচ্ছে।  
মুসলিম বুদ্ধিজীবীরা গলা চড়িয়ে বলছে ইসলামের বিচারে  নারী অপহরণের মত ঘটনা চরম ঘৃণ্য। ভয়ংকর মিথ্যা দাবী। ইসলাম বলছে জিহাদে সবকিছুই বৈধ তা যতই নির্মম বা অমানবিক হোক। ইমাম আল গাজ্জালি বলেছেন,  ‘ দুর্গের ভিতরে যদি নারী ও শিশুরাও থাকে তবুও তাদের ভিতর ভারী পাথর ও তীর নিক্ষেপের যন্ত্র ব্যবহার করা যেতে পারে, তাদের পুড়িয়ে বা ডুবিয়ে মারা যেতে পারে।’ ইমাম গাজ্জালী সম্পর্কে বলা হয় যে, মুহাম্মদের পর যদি কাউকে আল্লাহ নবী করে পাঠাতো তবে ইমাম গাজ্জালীকেই পাঠানো হতো একজন প্রখ্যাত ইসলামি পন্ডিত আহমদ ইবন নকিব আল-মিসরী ১৩৬৮ সালে The Reliance of the Traveller: A Classic Manual of Islamic Sacred Law নামে একটি বই লেখেন,  তাতে ইসলামে যুদ্ধনীতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। বইটির ইংরাজী অনুবাদ করেন নুহ হামিম কেলার ১৯৯৪ সালে। যুদ্ধনীতির অধ্যায়ে সেখানে লেখা হয়েছে - “O.913 When a child or a woman is taken captive, they become slaves by the fact of capture, and the woman’s previous marriage is immediately annulled.” মুহাম্মদ নিজেও অনেক জিহাদে অংশ নিয়েছেন ও নেতৃত্ব প্রদান করেছেন। তাঁর জীবনের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে এরূপ ভুরিবুরি উদাহরণ পাওয়া যাবে যেখানে বিধর্মীদের নারী ও শিশুদের বন্দি করে নিয়ে এসে ক্রীতদাস ও দাসি বানিয়েছেন, তারপর তাদের মুসলমানদের মধ্যে বন্টন করে দিয়েছেন। তিনি তাঁর নিজের অংশের  নারীদের নিজে ভোগ করেছেন অথবা বিক্রী করে দিয়েছেন।  কোনো সংশয় নেই যে,  মুহাম্মদ কৃত ঐ সব ঘটনার তুলনায় বোকো হারাম কৃত উক্ত ঘটনাটি অতিশয় তুচ্ছ।
তাই  এটা সন্দেহাতীত যে বোকো হারাম যা করেছে ও বলেছে তা ইসলাম-সম্মতই। যারা বলছে বোকো হারাম কিংবা অন্যান্য মুসলিম সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলি ইসলাম-বিরোধী কাজ করছে তারা হয় ইসলাম সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজ্ঞ না হয় ভন্ড। তবে ভন্ডদের সংখ্যা মোটেই কম নয় এবং তারা ক্রমবর্ধমান। তারা মুসলিম সন্ত্রাসবাদীদের চেয়ে মোটেই খুব কম ক্ষতিকর নয়। কারণ,  ক্রমাগত  মিথ্যা প্রচার করে তারা ইসলামকে মহান ধর্ম বলে যেভাবে তুলে ধরছে তাতে ইসলামের প্রতি সাধারণ মুসলমানরা আরো বেশী বেশি করে মোহগ্রস্থ হচ্ছে। এর ফলে পরোক্ষভাবে মুসলিম মৌলবাদীদের হাতই শক্তিশালী হচ্ছে। ইসলাম আসলে যা, ঠিক সেভাবেই ইসলামকে তুলে ধরা হলে তবেই মুসলিমদের মধ্যে ইসলাম সম্পর্কে যে মিথ্যা মোহ রয়েছে তার অবসান হবে এবং মুসলিম সমাজ থেকেই তখন ইসলামি সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ধ্বনিত হবে। আর এ কাজে সবচেয়ে বেশী অন্তরায় সৃষ্টী করছে ওই ভন্ড মুসলিম বুদ্ধিজীবীরা।

Wednesday, May 21, 2014

একটি অসাধারণ খোলা চিঠি মোদিকে



মোদি প্রধান মন্ত্রী পদে শপথ নেওয়ার পূর্বেই তাঁকে খোলা একটি চিঠি দিলেন মহাত্মা গান্ধীর নাতি গোপাল কৃষ্ণ গান্ধী । এই চিঠির প্রতিটি কথার সঙ্গে আমি একমত নয় । তবুও আমি মনে করি যে, চিঠিটি ভাষায়, মেধায়, মননে, ঐশ্বর্যে, স্পর্ধায় ও বলিষ্ঠতায় একটি ঐতিহাসিক চিঠি হিসাবে গণ্য হওয়ার উপযুক্ত । এই চিঠিটি সম্পূর্ণরূপে উপেক্ষা করা মোদির পক্ষে খুবই কঠিন কাজ হবে, কারণ চিঠিটির পক্ষে গোটা দেশ জুড়েই রয়েছে প্রবল জনসমর্থন । তাই চিঠিটি আমার ফেসবুক ও টুইটার বন্ধুদের জন্যে পোষ্ট করতে মনস্থ করলাম ।  গোপাল কৃষ্ণ গান্ধী খোলা চিঠিতে যা লিখেছেনঃ
মনে রাখবেন যাঁরা আপনাকে এই সম্মানীয় পদে চাননি, আমি তাঁদের একজন । আপনিই সবচেয়ে ভালো জানেন, কেন এই দেশের অনেকেই মনে করেছিলেন যে, আপনি প্রধানমন্ত্রী হলে কয়েক কোটি মানুষের বিড়ম্বনা বাড়বে বৈ কমবে না । কিছুদিন আগেও যখন কিছু সমীক্ষা বলেছিল যে, আপনি প্রায় ক্ষমতার বৃত্তে চলে এসেছেন তখনও আমি বিশ্বাস করিনি । কারণ, যে পদে আপনি বসতে চলেছেন সে পদে জওহরলাল নেহরুর মতো মানুষ বসেছিছেন । লাল বাহাদুর শাস্ত্রী ছিলেন । ইন্দিরা গান্ধীর জরুরী অবস্থার বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক লড়াই করে আপনারই গুজরাতের একজন মোরারজি দেশাই ওই পদে বসেছিলেন । আর ছিলেন আপনার রাজনৈতিক গুরু অটলবিহারী বাজপেয়ীর মতো মানুষ । যাঁরা চেয়েছিলেন যে, আপনার ঐ পদে বসা উচিত নয় তাঁদেরও আজ মানতে হচ্ছে যে, আপনি ওখানে বসতে চলেছেন ।
কেউ খুব গরীব পরিবার থেকে উইঠে এসে প্রধানমন্ত্রীর পদে বৃত হতে চাইছেন, এমন লোককে আমি কুর্ণিশ করি । কারণ, এতে আমাদের সমানাধিকারের সংবিধানেরই মহত্ত্ব ফুটে ওঠে ।
দেশের ভাবনা
কেউ যখন আপনাকে ‘চা-ওয়ালা’ বলে কর্কশভাবে সম্বোধন করে, তখন আমার পেটের ভিতরটা মোচড় দিয়ে ওঠে । আমি নিজেকেই বলি, কী চমকপ্রদ ব্যাপার । যে লোকটা মানুষকে চা দিয়ে বেড়াত, সে এখন দেশের প্রধানমন্ত্রী হবে । একজনের চামচা হওয়ার চেয়ে অনেকে চায়ের পেয়ালা হাতে নিয়ে ঘুরে ঘুরে চা বিক্রি করা অনেক ভালো । ... মিস্টার মোদি আপনি নিশ্চয় জানেন, এবার ভোট হয়েছে, যাঁরা আপনাকে চান আর যাঁরা আপনাকে চান না তাঁদের মধ্যে । আমার কাছে মনে হয়, এই প্রশ্নটাই বড়ো, মোদি দেশের রক্ষাকর্তা, না তা নন? বিজেপি ক্ষমতা করায়ত্ত করেছে । কারণ তারা ভোটারদের ৩১ শতাংশকে প্রভাবিত করতে পেরেছে । তার মানে দেশের ৬৯ শতাংশ কিন্তু আপনাকে রক্ষাকর্তা হিসেবে চান নি । এই ৬৯ শতাংশ দেশগঠনে  আপনাদের চিন্তাভাবনার সাথে একমত নন ।
দেশের ওইক্য ও স্থায়িত্বের প্রস্নে আপনি প্রায়শই সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের নাম করেন । আপনার হয়তো জানা রয়েছে, সর্দার সাংবিধানিক পরিষদে সংখ্যালঘু সংক্রান্ত কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন । যদি ভারতের সংবিধান দেশের সংখ্যালঘুদের শিক্ষা, সংস্কৃতি ও ধর্মীয় স্বাধীনতা দিয়ে থাকে, তারজন্য ধন্যবাদ প্রাপ্য বল্লভভাই প্যাটেলের। একইসঙ্গে ধন্যবাদ প্রাপ্য কমিটির অন্য সদস্যদেরও । বিশেষ করে ধন্যবাদ প্রাপ্য রাজকুমারী অমৃতা কাউরের, কাপুরথালার শিখের খ্রিষ্টান কন্যার । মিস্টার মোদি, সংবিধান সংখ্যালঘুদের যে বিধান দিয়েছে, তা পুরোপুরি মানুন, কাটছাঁট করবেন না, তরলিকৃত করবেন না, আংশিক মানবেন না । আপনার দুর্মর বল্লভভাই সংখ্যালঘু কমিটিতে কী বলেছিলেন, তা পড়ে দেখতে পারেন । কেন আজ দেশজুড়ে এত মানুষের মধ্যেভয় ? কারণ আপনি যখ সমাবেশে ভাষণ দেন, তখন আপনি এমন এক ডেমোক্রাটের কথা শুনতে চান যিনি দেশের আমজনতার প্রতিনিধিত্ব করেন, আপনি কোনো সম্রাটকে চান না, যিনি শুধু ম্নির্দেশ দিয়ে বেড়ান । মিস্টার মোদি,  সংখ্যালঘুদের পুনরাশ্বস্ত করুন । মনে রাখবেন, উন্নয়ন নিরাপত্তার বিকল্প নয় । আপনি বলেন, একহাতে কুরআন আর অন্যহাতে ল্যাপটপ দেখতে চান । এই দৃশ্যটা তাদের পুনরাশ্বস্ত করতে পারে না । কারণ, একটা পাল্টা দৃশ্য তাদের চোখের সামনে জ্বল জ্বল করে ওঠে, তাদের আতণকিত করে তোলে । দৃশ্যটি এরকম – একজন মস্তান গোছের হিন্দু একহাতে গীতার ডিভিডি নিয়ে অন্যহাতে ত্রিশূল নিয়ে তান্ডবনৃত্য করছে ।
আগেকার দিনে প্রধানশিক্ষকেরা স্কুলের শ্রেণীকক্ষের এককোণে একটি বেত রেখে দিতেন । শরীরের বিশেষ অংশে চাবুকে দগদগে করে দেওয়ার স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে ঐ ভয়ঙ্করটি বেতটি শোভা পেত । কয়েক মাসের আগের স্মৃতি মুজাফফরনগরের দাঙ্গা, সেখানে ৪২ জন মুসলিম ও ২০ জন হিন্দুর মৃত্যু হলো । ৫০ হাজার মানুষ গৃহহীন হলেন । সেই ঘটনাও ওয়ি স্কুলে রাখা বেতের মতই ভয়ার্ত । ‘মনে রেখো, ঐ দশা তোমারও হতে পারে’ ... এমন হুমকি কোনো গণতান্ত্রিক দেশে মানা যায় না ।  কিন্তু এটা ঘটনা এই বার্তা লক্ষ লক্ষ মানুষের দিনের ও রাতের নিরাপত্তা হরণ করছে ।
এখন আপনার হাতেই রয়েছে এই ভয় কাটানোর মন্ত্র । আপনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এই ভয় ইচ্ছা করলেই দূর করতে পারেন । এর যাবতীয় ক্ষমতা রয়েছে আপনার । আমি আশা করব, ক্ষুদ্রমনের পরামর্শ উপেক্ষা করে আপনি এটা করবেন ।
শুধু মুসলিম নন, ভারতের সমস্ত ধর্মীয় সংখ্যালঘু, এমন কী পশ্চিম পাকিস্তানে উৎখাত হওয়া সমস্ত শিখ ও হিন্দু, কাশ্মীরি পন্ডিতদের মনে  এই আতঙ্ক রয়েছে । এই আতঙ্ক হলো সত্যিকারের অথবা ভুয়া প্ররোচনা থেকে দাঙ্গা বাধার এবং পরিণামে মেয়েদের উপর নির্যাতন নেমে আসার ভয় । এ দেশে প্রতি মিনিটে দলিত ও বৈচিত্রপূর্ণ অরণ্য আদিবাসীরা, বিশেষ করে তাদের মেয়েরা নির্যাতনকে সঙ্গী করে বেঁচে থাকে । অবিরাম চলছে বৈষম্য, নাগরিকত্ব হারানোর শিকারিকরণ, নৈতিকতাহীনতা ও অমানবিকতা । মিস্টার মোদি কেন এইসব হচ্ছে, তা খতিয়ে দেখে এসব নির্যাতিতাদের হৃদয় স্পর্শ করুন । আপনি পারেন তাদের এ বিষয়ে আশ্বস্ত করতে যে আপনিই হবেন তাদের স্বার্থের প্রথম প্রতিভু । আমাদের মতো বহুতন্ত্রে কারও অভিন্ন বিধি রচনার কথা বলার মতো অবিবেচক মন্তব্য করাই উচিত নয় । বহুত্বের কল্পনা করে একত্বের কথা আওড়ানোও তেমনই বিষয় ।  ভারত এক বৈচিত্রপূর্ণ অরণ্য । এই বৈচিত্রপূর্ণ অরণ্য চায় আপনি মানবসমাজকে লালন-পালন করুন । রাজনৈতিক একেশ্বরবাদের একরঙ্গা বহুসংস্কৃতিবাদকে আগে বসাবেন না । সংবিধানের ৩৭০ নং ধারা নিয়ে আপনার ধারণা, অভিন্ন দেওয়ানি বিধির ঘ্যানঘ্যানে মান্ধাতা আমলের দাবী, উত্তর-পূর্বের হিন্দু বাস্তুহারাদের সম্পর্কে আপনার যে বক্তব্য সংবাদমাধ্যমে বেরিয়েছিল, বাংলায় ও উত্ত্রপূর্বে মুসলিম বাস্তুহারাদের সম্পর্কে আপনার ধারণা মানুষকে শুধু আতঙ্কিতই করে, আস্থা জোগায় না । মিস্টার মোদি, গণআতঙ্ক ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের বৈশিষ্ট হতে পারে না । ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আপনি হবেন এই প্রজাতন্ত্রের রক্ষাকর্তা ।
ভারতের সংখ্যালঘুরা দেশবিচ্ছিন্ন এক জনগোষ্ঠী নয়, তাঁরা দেশের জনসাধারণের সঙ্গে মূল ধারায় সম্পৃক্ত হয়ে গিয়েছে । এদের কেউ বিচ্ছিন্ন করতে পারবে না । ভারতমাতা কি জয় যে কেউই বলতে পারেন । তার চেয়েও বড়ো হলো সুভাষচন্দ্রের স্লোগান, ‘জয় হিন্দ’ ।
আপনার এই ঐতিহাসিক জয়ের জন্যে আপনাকে আরও একবার ধন্যবাদ । এক ঐতিহাসিক ইনিংস শুরু করুন । আপনার যথেষ্ট বুদ্ধিমত্তা রয়েছে । প্রাগৈতিহাসিক যুগের একজনে পরামর্শ শুনে নিজেকে নষ্ট করবেন না । আপনাকে যেমন একাধারে আপনার জনসমর্থনের ভিত্তি সুদৃঢ় করতে হবে, তেমনই আপনাকে আপনার বিরোধীদেরও জয় করতে হবে । যখন আপনি সংখ্যালঘু কমিশন পুনর্গঠিত করবেন তখন বিরোধীদের কাছে নাম চান এবং সেই নাম্পগুলিও মেনে নিন । তপশিলি কমিশন ও ভাষাগত সংখ্যালঘুদের ক্ষেত্রেও তাই করুন । পরবর্তী মুখ্য তথ্য কমিশনার, পরবর্তী ক্যাগ, পরবর্তী ভিজিল্যান্স কমিশনার ঠিক করার সময়েও দলের লোকদের না নিয়ে অন্যদের মত নিয়ে নাম ঠিকি করুন । আপনার মনের দৃঢ়তা রয়েছে । তাই আপনি এসব করার ঝুঁকি নিতে পারেন ।
মিস্টার মোদি, আপনার পরিমন্ডলে দক্ষিণের লোকেওর বড়োই অভাব । হিন্দি বলয়ে আপনার সাফল্য কিন্তু উত্তর-দক্ষিণে বিভেদের জন্ম দিতে পারে ।  আপনি বরং দক্ষিণ থেকে একজনকে উপপ্রধানমন্ত্রী করুন । নেহরুর সঙ্গে ছিলেন সম্মুখ ম চেট্টি, জন মাথাই, সিডিদেশমুখ, কেএলরাও । এঁরা কেউই কংরেসি ছিলেন না । এমনকি রাজনীতির লোকই ছিলেন না । ইন্দিরা গান্ধীর আমলে ছিলেন এস চন্দ্রশেখর, ভিকেআরভিরাও ছিলেন । ইউপিএ কেন স্বামীনাথন বা শ্যাম বেনেগালকে রাজ্যসভার সদস্য করলো না জানি না । আপনি আচরণে মহারানা প্রতাপের মতো লড়াকু হোন । কিন্তু আকবরের কথাও মাথায় রাখবেন । আপনার হৃদয়ে সাভারকার থাকুক, অবশ্যই থাকবে জানি । কিন্তু আম্বেদকরকেও মনে রাখতে হবে ।  আপনি আগমার্কা আরএসএস প্রশিক্ষিত লোক, আপনার ডিএনএতে হিন্দুত্ব রয়েছে । আপনি যদি মনে করেন হিন্দুস্থানের ওয়াজিরে – এ – আলম হতে পারেন । যে ৬৯ শতাংশ আপনাকে ভোট দেয় নি, তারাও তখন ভাবতে বাধ্য হবে ।
ইতি গোপাল কৃষ্ণ গান্ধী
( চিঠিটির বাংলা তর্জমা করেছে ‘কলম’ পত্রিকা )

Thursday, April 24, 2014

‘স্ত্রী-প্রহার দন্ডনীয় অপরাধ’- আইন প্রণয়ন করলো নবীর মাতৃভূমিও


সৌদি আরব আবার এক ধাপ পিছু হটলো শরিয়ত আইন থেকে ।  সৌদি আরবের শরিয়ত থেকে এক একটা ধাপ পিছিয়ে যাওয়ার মানে একদিকে বিশ্বের গোঁড়া মুসলমান সমাজে একটা ভূমিকম্প সৃষ্টি হওয়া,  আর একদিকে সারা বিশ্বকে চমকে দেওয়া ।  কারণ, এই দেশটি বিশ্বের আর পাঁচটি মুসলিম দেশ বা ইসলামি রাষ্ট্র থেকে অনেক বেশী গুরুত্ব বহন করেতার প্রধান কারণ হলো, ইসলামের প্রবর্তক মুহাম্মদ এখানে (মক্কায়_) জন্ম গ্রহণ করেন ও এখান থেকেই শুরু করেন তাঁর ইসলাম ধর্মের  প্রচারের কাজ, এবং এখানেই  ৬৩০ খৃস্টাব্দে প্রতিষ্ঠা করেন প্রথম ইসলামি রাষ্ট্র যার রাজধানী ছিল মদিনা ।  সেই রাষ্ট্রের পরিচালিকা শক্তিই ছিল কোরান সেই রাষ্ট্রটি পরিচালনার সময় কোরানের বাইরেও কিছু বিধি-নিষেধ  তিনি তৈরী করেছিলেন  যেগুলি ইসলামের পরিভাষায় সুন্নাহ বা হাদিস নামে পরিচিত । এই কোরান ও হাদিসই হলো শরিয়িতি আইনের প্রধান ভিত্তি ।  তাই স্বাভাবিকভাবেই সৌদি আরবের রাজাদের কাছে  প্রধান কর্তব্য  হলো  কোরান-হাদিসের শাসন-ব্যবস্থাকে চোখের মণির মতো রক্ষা করা । এই কর্তব্য অন্যান্য মুসলিম দেশের উপর সেভাবে বর্তায় না । তার জন্যে অন্যান্য  মুসলিম দেশগুলি বা ইসলামি রাষ্ট্রগুলি কোরানের আইনের সুরক্ষাকে সব কিছুর ঊর্ধে স্থাপন করাকে তাদের প্রধান কর্তব্য বলে মনে করে না তাই এই দেশগুলি ১৪০০ বছর আগেকার মধ্যযুগীয় পশ্চাদপদ  আইন-কানুনগুলি  আঁকড়ে ধরে থাকার  ক্ষেত্রে অনড় অবস্থান নিয়ে বসে থাকে নি,বহু ক্ষেত্রেই শরিয়তি আইনে ব্যাপক সংশোধন করে অনেকটাই যুগোপযোগী করে নিয়েছে শরিয়তি আইনের এই সংস্কার আজো অব্যাহত রয়েছে তাই এই দেশগুলি এখন কোনো ক্ষেত্রে শরিয়ত থেকে সরে এসে নতুন কোন আইন প্রণয়ন করলে তা দেখে গোঁড়া মুসলমানরা খুব বেশি বিচলিত বোধ করে না,  এবং সেই খবরে বিশ্বের মানুষও আর চমকে ওঠে না । কিন্তু সৌদি আরবের কথা আলাদা । সৌদি আরব আবার যেই এক ধাপ পিছু হটেছে তেমনি একদিকে বিশ্বের গোঁড়া মুসলিম সমাজ যেমন আঁতকে উঠেছে, তেমনি অপরদিকে চমকে উঠেছে বিশ্বের তামাম মানুষও ।
সকল ঈশ্বরকেন্দ্রিক ধর্মই পুরুষতন্ত্রের হাত শক্তিশালী করেছে এবং তাকে আরো দৃঢ় ভিত্তির উপর স্থাপন করেছে । এক্ষেত্রে ইসলামও ব্যতিক্রম নয় । অবশ্য মুসলিম বুদ্ধিজীবীরা, এমনকি ইসলাম ধর্মের ধারক ও বাহকদের একাংশ তা মানতে রাজী নয় । তাঁরা দাবী করেন যে ইসলামই নারীকে পরাধীনতা ও দাসত্ব থেকে মুক্ত করেছে এবং পুরুষের সমান মর্যাদা ও অধিকার দিয়েছে । বলা বাহুল্য যে, এত হাস্যকর ও মিথ্যা দাবী আর হয় না । বরং নির্মম সত্য যেটা তা হলো, ইসলামও পুরুষকে   নারীর উপর নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব ও প্রভুত্ব করার ক্ষমতা প্রদান করেছে । নারীকে করেছে পুরুষের অধীনস্থ  দাসী । ইসলাম আল্লাহকে দিয়ে বলিয়েছে যে, নারীকে সৃষ্টি করা হয়েছে পুরুষের সেবা করার জন্যে, পুরুষকে আনন্দ দেওয়ার জন্যে, তাই স্বামী যখনই তার স্ত্রীকে সঙ্গম করার মানসে ডাকবে তখনই তাকে সে যে অবস্থায়ই থাকুক অতি তৎপরতার সাথে সাড়া দিতে হবে । স্বামী যেভাবে তাকে ভোগ করতে চায়বে, স্ত্রীকে হাসি মুখে সেভাবেই তার ভোগের জন্যে প্রস্তুত করতে হবে, কোন প্রকার ওজর-আপত্তি করা চলবে না বা অখুশী হওয়া চলবে না ।  এক্ষেত্রে নারী অসম্মত হলে বা অবাধ্য হলে ইসলাম সেই স্ত্রীকে পেটানোর জন্যে স্বামীকে হুকুম করেছে । ইসলাম পুরুষকে এমনই অসভ্য রকমের কর্তৃত্ব ও প্রভুত্ব প্রদান করেছে  নারীর উপর । কোনো নারীর পক্ষেই এটা মানা সম্ভব নয়, মুসলিম নারীরাও মানে নি যুগে যুগে দেশে দেশে ঘরে বাইরে মুসলিম নারীরাও এই অসভ্য আইনের বিরুদ্ধে সরবে নীরবে প্রতিবাদ করেছে, করে আসছে ।  ফলে বিশ্বের অধিকাংশ মুসলিম দেশই নারীর উপর থেকে পুরুষের প্রভুত্ব ও কর্তৃত্ব কিছুটা শিথিল করতে  শরিয়তি আইনে ব্যাপক সংস্কার করতে বাধ্য হয়েছে । এই সংস্কারগুলি শুধু নারীর জন্যেই হয়েছে তা নয়, হয়েছে সমগ্র মানবজাতির স্বার্থেই ।  শরিয়তের দোহায় দিয়ে নারীর প্রতিবাদ ও অধিকারকে সম্পূর্ণ  দাবিয়ে রাখতে পেরেছে এমন মুসলিম দেশ খুবই কম আছে । যারা পেরেছে তাদের মধ্যে  একটি দেশ হলো  সৌদি আরব । সৌদি আরব  বরাবরই অনড় শরিয়ত আইনেই । অবশেষে সেই অনড় অবস্থান  থেকে তারাও এবার সরে দাঁড়ালো এবং শরিয়ত থেকে অন্ততঃ একটা বেশ বড়ো ধাপ পিছু হটে প্রণয়ন করলো এমন একটা আইন যার ফলে পুরুষের আধিপত্য , কর্তৃত্ব ও প্রভুত্ব অনেকটাই হ্রাস পাবে । আইনটি হলো - স্ত্রী-প্রহার দন্ডনীয় অপরাধ
আগেই উল্লেখ করেছি যে শরিয়ত আইনে স্ত্রীকে প্রহার করা বৈধ ।  পরিষ্কার ভাষায় বলা আছে যে স্বামী যদি মনে করে যে তার স্ত্রী অবাধ্যতা প্রদর্শন করছে তাহলে সে তার স্ত্রীকে প্রহার করতে পারবে ।  ফলে প্রহৃত হয়ে স্বামীর বিরুদ্ধে স্ত্রীর অভিযোগ জানানোর বা বিচার চায়বার কোনো সুযোগ নেই শরিয়ত আইনেসৌদি আরব এতদিনে এই অসভ্য ও বর্বর আইনের সমাপ্তি ঘটাতে উক্ত আইনটি  প্রণয়ন করেছে    এই আইনে বলা হয়েছে যে স্ত্রীকে প্রহার করার  করার অপরাধে ৫ (পাঁচ) থেকে ৫০ (পঞ্চাশ) হাজার রিয়াল আর্থিক জরিমানা দিতে হবে স্বামীকে । এবং আরো বলা হয়েছে যে, নির্যাতনের কারণে স্ত্রীর অঙ্গহানি কিংবা প্রাণহানি হলে শাস্তির মাত্রা বাড়বে ।  সে দেশের ‘প্রোটেকশন অ্যাট দ্য সোশ্যাল অ্যাফেয়ার্স’ মন্ত্রকের ডাইরেক্টর মোহাম্মদ আল হাবিব জানিয়েছেন যে, এই শাস্তি কেবল আর্থিক জরিমানার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না । জরিমানার পাশাপাশি এক মাস থেকে এক বছর কারাদন্ডের বিধানও রাখা হয়েছে এই আইনে । তিনি আরো জানিয়েছেন যে, যদি কেউ একই অপরাধ বারংবার করে, তবে এই সাজা দ্বিগুণ হয়ে যাবে     আশা করা যায় যে সৌদি আরবের অত্যাচারী পুরুষদের শারিরীক ও মানসিক অত্যাচার  থেকে নারীদের  সুরক্ষা দিতে এই আইনটি  কিছুটা হলেও সহায়ক  ভূমিকা পালন করতে পারবে ।  তার চেয়ে বড়ো কথা হলো এই আইনটি স্বামীও স্ত্রীর মধ্যে শরিয়ত আইনে প্রভু-ভৃত্যের যে সম্পর্ক রয়েছে সেই সম্পর্কের একেবারে মূলেই আঘাত করবে । কোনো সন্দেহ নেই  যে এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়বে   যে মুষ্টিমেয় কয়েকটি মুসলিম রাষ্ট্রে স্ত্রীকে প্রহার করার আইনি অধিকার ভোগ করছে পুরুষরা সে দেশগুলিও এই অসভ্য আইনটির অবসান ঘটাতে বাধ্য হবে । ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বিশ্বব্যাপী মুসলিম সমাজের রক্ষণশীল মন-মানসিকাতেও।
এই খবরে মুসলিমদের মধ্যে আরো দু ধরণের প্রতিক্রিয়া হবে । অনেক গোঁড়া মুসলমান আছে যাঁদের সৌদি আরবে এ রকম শরিয়ত-বিরোধী আইন হয়েছে  তা বিশ্বাস বে না ।  তাঁরা এটাকে মক্কা-মদিনার বিরুদ্ধে এক ষড়যন্ত্র ও  গুজব বলে উড়িয়ে দিতে চাইবেতাঁদের সন্দেহ নিরসনের উদ্দেশ্যে বলি যে, এই সংবাদটি আপনাদের মতো রক্ষণশীল মুসলমানদের কাগজ  ‘কলম’ও খবরটি বের করেছে ১৯.০৪.১৪ তারিখে, দেখে নেবেন ।   আর এক ধরণের প্রতিক্রিয়া দেখা যাবে আধুনিক শিক্ষায় তথাকথিত শিক্ষিত মুসলিম বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে । তাঁরা বলবেন, এটাই তো আসল ইসলাম আইন এই বুদ্ধিজীবীরা সর্বদায় সচেষ্ট থাকেন এটা বোঝানোর জন্যে ইসলাম যে বিধান প্রণয়ন করেছে তা সর্বোত্তম, ইমাম-মোল্লা- মুফতিরা কোরান-হাদিসের ভুল বাখ্যা বা  অপবাখ্যা করে বলে ইসলামের বিধি-বিধানগুলোকে অমানবিক ও পশ্চাদপদ বলে মনে হয় । এই অংশের লোকগুলো বরাবরই দাবী করে থাকেন যে অন্য কোনো ধর্ম নয়, একমাত্র ইসলাম ধর্মই নারীকে স্বাধীনতা, সম্মান ও অধিকার দিয়েছে এবং স্ত্রীকে প্রহার করার অধিকার স্বামীকে দেয় নি । এই প্রতিক্রিয়া খুব স্বাভাবিকভাবেই বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে হবে সাধারণভাবে অধিকাংশ মুসলমানের কারণ, তারা  ইসলাম সম্পর্কে কিছু না জেনেই অন্ধভাবে বিশ্বাস করে যে তাদের ধর্মটাই শ্রেষ্ঠ  ধর্ম । মুসলিম বুদ্ধিজীবীদের এই প্রতিক্রিয়া প্রভাবিত করে অমুসলিম সমাজের মানুষদেরও এই বুদ্ধিজীবীরা যাই দাবী করুন না কেন, প্রকৃত ও  নির্মম সত্যিটা হলো ইসলাম সত্যি  সত্যিই স্বামীকে   হুকুম প্রদান করেছে প্রয়োজনে তার স্ত্রীকে প্রহার করার জন্যে এই বিষয়ে যাবতীয় বিভ্রান্তি ও সংশয় নিরসনের জন্যে বরং কোরান-হাদিস কী বলছে তা দেখা যাক ।
উল্লেখিত বিষয়ে কোরানের ভাষ্য অত্যন্ত স্পষ্টভাষ্যটী হলো “পুরুষগণ নারীদের উপর সুপ্রতিষ্ঠিত কর্তা । যেহেতু আল্লাহ্‌ তাদের মধ্যে একের উপর অপরকে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন, সেহেতু যে তারা স্বীয় ধন-সম্পদ থেকে ব্যয় করে থাকে; এইজন্য স্বাধ্বী স্ত্রীরা অনুগত হয়, আল্লাহ্‌র সংরক্ষিত প্রচ্ছন্ন বিষয় সংরক্ষণ করে, এবং যদি নারীগণের অবাধ্যতা  আশঙ্কা হয় তবে তাদের সৎ-উপদেশ দান করো, এবং তাদের শয্যা থেকে পৃথক করো,  এবং তাদের প্রহার করো, অনন্তর যদি তারা তোমাদের অনুগত হয়, তবে তাদের জন্য অন্য পথ অবলম্বন করো না ; নিশ্চয় আল্লাহ্‌ সমুন্নত মহীয়ান ” (সুরা নিসা, ৪/৩৪)  এই আয়াতের ভাষ্যে যেটা বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয় তা হলো  ‘প্রহার করতে পারো’ নয়, বলা হয়েছে ‘প্রহার করো’, অর্থাৎ একেবারে হুকুম করা হয়েছে ।  কেন স্ত্রীগণ তাদের স্বামীদের অনুগত থাকবে, এবং আনুগত্য অস্বীকার করলে তাদের স্বামীরা কেনো তাদের প্রহার করবে তার যুক্তি বা উত্তরও ওই আয়াতেই রয়েছে ।  এতদসত্বেও পরে মুহাম্মদ সে কথাটা তাঁর শিষ্যদের মাঝে আরো স্পষ্ট করে বাখ্যা করে দিয়ে গেছেন । কীভাবে স্পষ্ট করে দিয়ে গেছেন যে তা জানা যায় তফসীরকারদের লেখা গ্রন্থ থেকে । তফসীরকার ইবনে কাথির এ প্রসঙ্গে লিখেছেন, “রাসুলুল্লাহ (সাঃ) –কে জিজ্ঞাসা করা হয়, স্ত্রীর উপর কী হক আছে ? তিনি বলেনঃ ‘যখন তুমি খাবে তাকেও খাওয়াবে, যখন পরবে তাকেও পরাবে, তাকে মুখে মেরো না, গালি দিও না, ঘর  হতে পৃথক করো না, ক্রোধের সময় যদি শাস্তি দেওয়ার উদ্দেশ্যে কথা বন্ধ করো তথাপি তাকে ঘর থেকে বের করো না ’ অতঃপর বলেনঃ  ‘তাতেও যদি ঠিক না হয়, তবে তাকে শাসন-গর্জন করে এবং মেরে-পিটেও পথে সরল পথে আনয়ন করো’    (৪র্থ-৭ম খন্ড, পৃঃ ৩৮৭)  এখানে মুহাম্মদের বাখ্যা অত্যন্ত স্পষ্ট -  অবাধ্য স্ত্রীকে যেভাবেই হোক, প্রয়োজনে মেরে-পিটেও,  সরল পথে আনতে হবে ।
মুসলিম বুদ্ধিজীবীরা স্ত্রীকে মারার হুকুম নেই বলে যা দাবী করেন তার সপক্ষে অবশ্য একটা হাদিস আছে যেটা তাঁরা উল্লেখ করে থাকেন   কিন্তু সেটা আংশিক ও  অসম্পূর্ণ হাদিস  হাদিসের বাকি অংশটা তাঁরা চেপে যান ।  ফলে হাদিসের মূল অর্থটাই পাল্টে যায়  অর্থাৎ হাদিস নিয়ে মুসলিম বুদ্ধিজীবীরা সচেতনভাবে মিথ্যাচার করে থাকেন । সম্পূর্ণ হাদিসটি এরূপ ।  ইবনে কাথির উপরি উক্ত      তফসীরে ওই ৩৮৭ পৃষ্ঠাতেই  লিখেছেন,   একট হাদিসে রয়েছে যে  রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ   ‘আল্লাহর দাসীদের প্রহার কর নাএর পর একদা হযরত উমার ফারুক (রাঃ)  এসে আরয করেনঃ ‘নারীরা আপনার এ নির্দেশ শুনে তাদের স্বামীদের উপর বীরত্বপনা দেখাতে আরম্ভ করেছে ।’ এ কথা শুনে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) তাদেরকে মারার অনুমতি দেন ।”    
প্রহার করা নিয়ে মুসলিম সমাজের ধর্মীয় নেতাদের মধ্যে  অবশ্য কোনো মতভেদ নেই, মতভেদ যা আছে তা কেবল প্রহার করার মাত্রা নিয়ে ।  মতভেদের কারণ হলো মুহাম্মদ যা বলেছেন তাতে  কিছুটা অস্পষ্টতা রয়ে গেছেকীরূপ প্রহার করতে হবে তা বলতে গিয়ে বিদায় হজ্বে তিনি কী বলেছেন সে প্রসঙ্গে ইবনে কাথির তাঁর উক্ত তফসীরে ঐ একই পৃষ্ঠাতেই  লিখেছেন, সহীহ মুসলিমে নবী (সঃ) – এর বিদায় হজ্বের ভাষণে রয়েছেঃ নারীদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করো । তারা তোমাদের সেবিকা ও অধীনস্থা । তাদের উপর তোমাদের হক এই যে, যাদের যাতায়াতের ব্যাপারে তোমরা অসন্তুষ্ট তাদেরকে তারা আসতে দেবে না । যদি তারা এরূপ না করে তবে তোমরা তাদেরকে যেন তেন প্রকারে সতর্ক করতে পারো । কিন্তু তাদেরকে তোমরা কঠিনভাবে প্রহার করতে পার না, যে প্রহারের চিহ্ন প্রকাশ পায় । তোমাদের উপর তাদের হক এই যে, তোমরা তাদেরকে খাওয়াবে ও পরাবে এবং এমন প্রহার করা উচিৎ নয়  যার  চিহ্ন  অবশিষ্ট থাকে, কোনো অঙ্গ ভেঙ্গে যায় বা কোনো অঙ্গ আহত হয় । ”     
 প্রহারের ‘কঠিন’ শব্দটি নিয়েই  প্রবল মতভেদ  দেখা যায়একটি মত  হলো,  মুহাম্মদ স্ত্রীদের হালকা প্রহার করার কথা বলেছেন  । ২য় মতটি হলো, প্রহার করার উদ্দেশ্য  যেহেতু অবাধ্য স্ত্রীকে সোজা পথে আনা , তাই হাল্কা নয়, কড়া প্রহার  করার কথাই বলেছেন মুহাম্মদ যাতে সে ভয় পায় এবং স্বামীর বাধ্য হয়   যাঁরা  হাল্কা প্রহারের মতের পক্ষে তাঁদের অভিমত হলো, হয় চড় বা থাপ্পড় মারবে,  অথবা কিল-ঘুষি মারবে ; তবে সে আঘাত যেন খুব জোরের সঙ্গে না হয় ।   যাঁরা কড়া প্রহারের পক্ষে তাঁরা প্রহার করার জন্যে লাঠি, রড ও চাবুক ব্যবহার করার বিধান প্রদান করেছেন । যাঁরা হাল্কাভাবে প্রহার করা সমীচীন বলেছেন তাঁরা কি ধরণের ‘হাল্কা প্রহার’ হবে সেটাও নির্দিষ্ট  করে দিয়েছেন । বলেছেন, ‘স্ত্রীকে যতখুশী, যতক্ষণ খুশি প্রহার করা যাবে, কিন্তু প্রহারের ফলে যেন শরীরে কোনো চিহ্ন ফুটে না উঠে’ ।  আরও বলা হয়েছে যে, প্রহারের ফলে স্ত্রীর শরীরে যদি চিহ্ন ফুটে ওঠে তবে তা সীমা লঙ্ঘন হয়েছে বলে গণ্য করা হবে এবং সেটা হবে শাস্তিযোগ্য অপরাধ । আরব আমীর শাহী  সংবিধানে এই মতটিকে অনুসরণ করা হয়েছে । সম্প্রতি (২০১০ সালে) একজন প্রহৃত স্ত্রীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সর্বোচ্চ আদালত তার রায়ে বলে যে, স্ত্রীকে প্রহার করা স্বামীর ন্যায়সঙ্গত অধিকার । তবে প্রহারের ফলে স্ত্রীর শরীরে চিহ্ন ফুটে উঠলে তা দন্ডনীয় অপরাধ বলে গণ্য হবে । সেই রায়ে অভিযুক্ত স্বামীকে কারাদন্ড প্রদান করা হয়, কারণ তার  প্রহারে তার স্ত্রীর গায়ে প্রহারের চিহ্ন ফুটে উঠেছিলো ।
        এ প্রসঙ্গে আরো দুটি কথা না বললে এই আইনটি নিয়ে আলোচনার বৃত্তটি অসম্পূর্ণ থেকে যাবে    প্রথম কথাটি হলো স্ত্রীর অবাধ্যতা নিয়ে । স্ত্রী কোন কোন ক্ষেত্রে অসম্মতি বা আপত্তি জানালে স্বামীর প্রতি অবাধ্যতা বলে বিবেচিত হবে ?  অসম্মতি ও আপত্তির ক্ষেত্রগুলি এত বিস্তৃত ও ব্যাপক যা আলোচনা করা একটা নিবন্ধে অসম্ভব ।   এখানে তাই  মাত্র একটি ক্ষেত্রই উল্লেখ করতে চাই যেটার  উপর মুহাম্মদ সম্ভবতঃ সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ করেছেন । ক্ষেত্রটি হলো স্বামীর যৌন-সম্ভোগ । মুহাম্মদ বলেছেন স্বামী যখনই তার স্ত্রীকে সঙ্গম করার উদ্দেশ্যে ডাকবে তৎক্ষণাৎ স্ত্রীকে সেই ডাকে সাড়া দিতে হবে সে যে অবস্থাতেই থাকুক না কেন ।  সেই হাদিসটি হযরত তলব ইবনে আলি (রাঃ) হতে বর্ণিত । “তিনি বলেন রাসূলে (সঃ)পাক ইরশাদ করেছেনঃ যে কোনো ব্যক্তি তার স্ত্রীকে নিজের প্রয়োজনে ডাকলে সে যেন সাথে সাথে তার নিকটে চলে আসে, এমনকি সে রান্নার কাজে ব্যস্ত থাকলেও ।” ( তিরমযি শরিফ, হাদিস নং ১০৯৮) ।  মুহাম্মদ এ কথা বলেই চুপ থাকেন নি ।  স্বামীর যৌন কামনা তৎক্ষণাৎ পরিতৃপ্ত করতে কোনো কারণে স্ত্রী যদি অসম্মতি প্রকাশ করে তবে  তাকে(স্ত্রীকে) মুহাম্মদ আল্লাহর ফেরেস্তার ভয় দেখিয়েছেন আবু হোরায়রাহ(রাঃ) সূত্রে রাসূলে (সঃ) পাক হতে বর্ণিত হয়েছে। “তিনি বলেছেনঃ স্বামীর শয্যা পরিত্যাগ করে কোনো স্ত্রী রাত কাটালে ভোর পর্যন্ত ফিরিস্তাগণ তার উপর অভিসম্পাত করতে থাকে ।” (মুসলিম শরীফ, ১ম-৮ম খন্ড,  হা নং  ৩৪০৫) । 
স্ত্রীকে বাধ্য করার সমস্ত কদর্য ও বর্বর উপায়গুলি প্রয়োগ করার পরেও যদি কোনো স্ত্রী স্বামীর বাধ্য না হয় তাহলে কী হবে ? এর উত্তর ৪/৩৪ নং আয়াতে নেই । সে উত্তরও  দিয়ে গেছেন   মুহাম্মদ ।  সে ক্ষেত্রে তিনি তাঁর শিষ্যদের চূড়ান্ত শাস্তি তথা তালাক দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেনহযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ)-কে উদ্ধৃত করে ইবনে কাথির তাঁর ঐ তফসীরে ঐ পৃষ্ঠাতেই  সে কথা লিখেছেন -  এরপরেও যদি তারা বিরত না হয় তবে ক্ষতিপূরণ নিয়ে  তালাক দিয়ে দাও   এই  তফসীর যে নির্ভুল তা  পাকিস্তানের প্রখ্যাত  ধর্মগুরু মাওলানা মুহাম্মদ আলির বই থেকেও প্রমাণ পাওয়া যায় । তিনি তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থে (The Religion of Islam: A  Comprehensive Discussion of the Sources, Principles and Practices of Islam - Lahore, 1938 , p-652-653 ) লিখেছেন, “It appears that confining (women) to the house is the first step, and it is when they repeat their evil deeds in the house, or do not submit to the authority of the husband and desert him, that permission is given to inflict corporal punishment, which is  the last resort, and even if this last step does not make them mend their ways, matrimonial relations may be ended.” ( Vide: Women and the Koran, Anwar Hekmat, p-216)   
পরিশেষে যে কথা বলে এই নিবন্ধে ইতি টানতে চাই তা হলো, সৌদি আরব  ‘স্ত্রীকে প্রহার করা নিষিদ্ধ ও দন্ডনীয় অপরাধ’ বলে যে আইনটি করেছে তাতে শরিয়িত আইনের যে স্পষ্ট উল্লঙ্ঘন হয়েছে তা সংশয়োর্দ্ধে ।  তার জন্যে অসংখ্য ধন্যবাদ সৌদি আরবের প্রাপ্য ।  কারণ, এই আইনটি  প্রণয়ন করা মানে এটা স্বীকার করে নেওয়া যে কোরানকে আঁকড়ে ধরে থাকার যুগ শেষ হয়ে গিয়েছে । মুহাম্মদের নিজের হাতে স্থাপন করা ইসলামি রাষ্ট্রে  এমন পদক্ষেপ নেওয়া যে অত্যন্ত  কঠিন কাজ  তা বলা বাহুল্য   
প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য যে এর আগেও সৌদি আরব কিছু পদক্ষেপ নিয়েছিল যেগুলিও ছিলো শরিয়তের পরিপন্থী । সে রকম কয়েকটি ঘটনা হলো - () মুহাম্মদ বলে গেছেন ইহুদিরা অভিশপ্ত জাতি ও ইসলামের শত্রু । সেই ইহুদি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছে সৌদি আরব এবং এখনও ইস্রাইলের সঙ্গে মৈত্রী সম্পর্ক তাদের অব্যাহত রয়েছে । () সে কোন কালে গামেল নাসের মিশরকে ইসলামি শাসন থেকে মুক্ত করে সেখানে আধুনিক ও ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র স্থাপন করে যান । পরে তারাও ইস্রাইলের সঙ্গে মৈত্রী চুক্তি স্থাপন করে মুহাম্মদের নির্দেশকে অগ্রাহ্য করে । সৌদি আরব তথাপি মিশরের সঙ্গেই মৈত্রী বন্ধন  স্থাপন করতে দ্বিধা করে নি । () গত বছর মুসলিম ব্রাদারহুডের মত কট্টরপন্থী সংগঠনের নেতৃত্বাধীন মুরসির সরকারকে মিশরের সেনা-শাসিত সরকার বরখাস্ত করলে বিশ্বব্যাপী মুসলিমরা মিশরের নিন্দায় মুখর হয়ে ওঠে । সৌদি আরব কিন্তু তাদের দলে না গিয়ে মিশরের সরকারের পাশেই দাঁড়িয়েছে । () মুসলিম নারীদের গ্ররহের মধ্যেই পর্দানশীন থাকার কঠোর  নির্দেশ থাকায় সৌদি আরবে মুসলিম নারীদের ভোটাধিকার ছিলো না । সেই নির্দেশ উপেক্ষা করে সম্প্রতি সৌদি আরব নারীদের ভোটাধিকার প্রদান করেছে । () মুহাম্মদ নিজে হাতে মদিনা থেকে সমস্ত ইহুদীদের হয় হত্যা, না হয় নির্বাসিত, না হয় ধর্মান্তরিত করে মদিনাকে ইহুদিমুক্ত করেছিলেন । এবং মৃত্যুর সময় নির্দেশ দিয়ে যান আরব থেকে সমস্ত অমুসলিমদের তাড়িয়ে আরবের মাটিকে যেন  অপবিত্রতা থেকে অবিলম্বে মুক্ত করে তোলা হয় । সেই নির্দেশ কার্যকর করেছিলেন পরবর্তী খলিফারা এবং আরবের মাটিতে মুসলমান ছাড়া অন্য ধর্মাবলম্বীবীদের বসবাস ও ধর্মচর্চা নিষিদ্ধ করেছিলেন চিরদিনের জন্যে । সৌদি আরবে সেই আইন আজও বহাল আছে । অথচ কিছুদিন আগে সৌদি আরবের রাজা ভ্যাটকানে গিয়ে পোপের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাঁকে আশ্বাস দিয়ে এসেছেন খৃস্টানদের গীর্জা স্থাপন ও প্রকাশ্যে ধর্মচর্চা করার অধিকার দেওয়া হবে ।

বাংলাদেশের গণঅভ্যুত্থানে ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাইনি – পাঁচ

  দ্বিতীয় অধ্যায় শেখ হাসিনা ও শেখ মুজিবের প্রতি তীব্র গণরোষের নেপথ্যে ২০২৪ এর জুলাই অভ্যুত্থানের সফল পরিসমাপ্তি ঘটে ৩৬ দিন পর (৫ই ...