Monday, August 10, 2020

অযোধ্যায় রামমন্দিরের শিলান্যাস শুধু একটা মন্দিরের শিলান্যাসই নয়

Narendra Modi

 

১৯৯২ সালের ৬ই ডিসেম্বর বিতর্কিত বাবরি মসজিদ গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। সেই ধ্বংসকাণ্ডে যাঁরা নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তাঁদেরই একজন গত ৫ই আগষ্ট রামমন্দিরের শিল্যান্যাস করলেন। বলা বাহুল্য তিনি নরেন্দ্র মোদি, ভারতের প্রধানমন্ত্রী। ৬ই ডিসেম্বর ধ্বংসকাণ্ড সংগঠিত করার নেতৃত্ব যাঁরা করেছিলেন তাঁরা সকলেই ছিলেন জনপ্রিতিনিধি। অর্থাৎ সংবিধান মেনে চলার ও তাকে রক্ষা করার শপথে আবদ্ধ মানুষ। কিন্তু সবাই সেদিন সংবিধানকে অমান্য, অগ্রাহ্য ও পদদলিত করেছিলেন হেলায় এবং সচেতনভাবেই। তাঁদের বিরুদ্ধে তাই ফৌজদারি মামলা হয়েছিলো যা আজও চলছে। অথচ গত ৫ই আগষ্ট সেই বাবরি মসজিদের ধ্বংসস্তূপের ওপরেই হলো ভূমিপূজন ও রামমন্দির নির্মাণের শিল্যান্যাস। আপাতদৃষ্টিতে এসব হলো সংবিধানের উল্লঙ্ঘন না করেই। আপাতদৃষ্টিতে বলার কারণ হলো, বিতির্কিত জায়গাটিতে রামমন্দির নির্মাণ করাকে বৈধতা দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালতের একটি বিতর্কিত রায়। আদালত রায় যাই দিক না কেন, কিন্তু বস্তবটা হলো এই উক্ত বিতর্কিত জায়গাতেই একটি আস্ত মসজিদ ছিলো যেটা সঙ্ঘ পরিবার ও বিজেপির লোকেরা ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছিলো। এ রকম কোনো জায়গায় মন্দির কিংবা অন্য যে কোনো প্রকার ধর্মীয় উপাসনালয় নির্মাণ করা ভারতের সংবিধানের আদর্শের যে পরিপন্থী তা নিয়ে সংশয়ের অবকাশ নেই। ভারতের সংবিধানে সকল নাগরিকের নিজের ধর্ম স্বাধীনভাবে পালন করার অধিকার স্বীকৃত এটা ঠিক, কিন্তু তাই বলে কি রাষ্ট্র ধর্ম পালন করবে কিংবা ধর্মীয় আচরণ করবে? রাষ্ট্র তা করতে পারে না, কারণ ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের কোনো ধর্ম থাকে না। তাই ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের কর্তব্য হচ্ছে মন্দির, মসজিদ, গীর্জা, গুরুদুয়ারা ইত্যাদি সকল প্রকার ধর্মীয় উপাসনালয় নির্মাণ ও সেগুলির পৃষ্ঠপোষকতা করা থেকে বিরত থাকা। তাই মন্দির নির্মাণে কিংবা তার পৃষ্ঠপোষকতায় ব্যক্তি নরেন্দ্র মোদি ভূমিকা নিতেই পারেন, কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তেমন কোনো কাজ করতে পারেন না।    

   

 অতীতের ত্রুটি-বিচ্যুতি ও ভুল-ভ্রান্তিগুলো অসাংবিধানিক কাজের লাইসেন্স হতে পারে না 

 

 

বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রী পারিষদের সদস্যগণ এবং শাসকদলের নেতারা যখনই সংবিধানকে লঙ্ঘন কিংবা সংবিধানের আদর্শের পরিপন্থী কোনো করছেন তখনই তাঁরা সেই কাজগুলিকে বৈধতা দিতে অতীতের শাসকবর্গের অনুরূপ কাজের নিদর্শনগুলিকে তুলে ধরছেন। এখন যেমন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অযোধ্যায় বিতর্কিত জমিতে ভূমিপূজন এবং রামমন্দিরের শিল্যানাস করাকে বৈধতা দেবার জন্যে ভারতের প্রথম রাষ্ট্রপতির রাজেন্দ্র প্রসাদের সোমনাথ মন্দিরের দ্বার উদ্ঘাটন অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার দৃষ্টান্তকে তুলে ধরা হচ্ছে। রাষ্ট্রপতি হিসাবে রাজেন্দ্র প্রসাদজীর ঐ অনুষ্ঠানে সেদিন অংশ নেওয়া যেমন সংবিধানের আদর্শ পন্থী কাজ ছিলো না, তেমনি প্রধানমন্ত্রী হিসাবে নরেন্দ্র মোদিজীরও রামমন্দিরের জন্যে ভূমিপূজা ও শিল্যান্যাস করা  সংবিধানের আদর্শ পন্থী কাজ নয়। অতীতে একজন রাষ্ট্রপতি ভুল করেছেন বলে এখন প্রধানমন্ত্রী তা করতেই পারেন – এটা হাস্যকর ও শিশুসুলভ দাবি। আবার বাবরি মসজিদ ধাংসকাণ্ডকেও তারা একই যুক্তিতে (অপযুক্তিতে) যৌক্তিক ও ন্যায় কাজ বলে মনে করে, যেহেতু মুসলিম শাসকরা ভারতে অতীতে মন্দির ভেঙে মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন। মুসলিম শাসকরা ছিলো বিদেশি এবং সেটা ছিলো সামন্ততন্ত্র ও রাজতন্ত্রের যুগ। সে যুগে মুসলিম শাসকরাই কেবল ভিন্ন ধর্মের উপাসনালয় ভাঙে নি,  খ্রিস্টান সম্রাট ও হিন্দু রাজারাও তেমনি অনুরূপ কাজ করেছিলেন। কিন্তু এটাতো গণতন্ত্রের যুগ যে যুগে কেউ কারও ধর্মাচারণে হস্তক্ষেপে ও বাধা দিতে পারে না। তাই অতীতে একদা মন্দির ভেঙে মসজিদ  বানানো হয়েছিলো বলে সেটা এ যুগে মসজিদ ভেঙে মন্দির নির্মাণ করার লাইসেন্স হতে পারে না।       

কেন্দ্রীয় সরকার ও শাসকদল আসলে অন্য এক সংবিধানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও আস্থাশীল

 

নরেন্দ্র মোদি ও তাঁর সরকারের মন্ত্রী এবং শাসক দলের নেতারা খুব ভালো করেই জানেন যে, অতীতের দোহায় দিয়ে বর্তমান সময়ে সংবিধানের আদর্শের পরিপন্থী কাজ করা যায় না। তবু তারা তাদের সমস্ত বেআইনী ও অসাংবিধানিক কার্যকলাপকে ঢাকার জন্যে বারবার অতীতের উদাহরণ তুলে ধরেন। সেটা করেন তাদের আসল অভিপ্রায়কে আড়াল করার জন্যে। শাসকদল আসলে ভারতের বর্তমান সংবিধানের প্রতি আস্থাশীল ও শ্রদ্ধাশীল নয়। কিন্তু যেহেতু বিজেপির নেতারা এই সংবিধান মেনেই জনপ্রিতিনিধি হয়েছেন এবং সরকার তৈরি করেছেন, তাই প্রকাশ্যে তাদের পক্ষে এ কথা বলা সম্ভব নয় যে তারা বর্তমান সংবিধানের প্রতি নয়, অন্য সংবিধানের প্রতি তাদের আস্থা ও আনুগত্য রয়েছে। আইনত বিজেপির কোনো মন্ত্রী ও সাংসদ সংবিধানের পরিপন্থী কথা বলতে পারেন না তবুও অনেক মন্ত্রী ও সাংসদের মুখে অহরহ তেমন কথা প্রায়ই শোনা যায়। তারা মুসলিমদের বিরুদ্ধে প্রায়ই উস্কানিমূলক মূলক বিবৃতি দেন। যেমন প্রায়শই তাদের মুখে এ কথা শোনা যায় - ভারতের মুসলিমরা ভারতে কেন থাকবে? মুসলিমরা তো ভারত ভেঙে তৈরি করেছে পাকিস্তান, সুতরাং তাদের পাকিস্তানই তাদের দেশ, চলে যেতে হবে তাদের সেখানেই। আর যদি একান্তই তারা ভারতে থাকতে চায়, তবে হিন্দুদের অধীনতা মেনে থাকতে হবে। মুসলিমদের উদ্দেশ্যে এ শ্লোগানও এক সময় হরদম তাদের মুখে শোনা যেত - হয় ভারত ছাড়ো, না হয় কোরআন ছাড়ো। এ সব সংবিধান বিরুদ্ধ ভয়ঙ্কর কথা প্রমাণ করে তারা কোন সংবিধান প্রতিষ্ঠা করতে চাই ভারতে।      

রামমন্দিরের শিল্যানাস করে প্রধানমন্ত্রী জানিয় দিলেন হিন্দুরাষ্ট্রই তাঁর লক্ষ্য

 

শিল্যানাসের পর প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে বলেছেন, ‘এত দিনে রামজন্মভূমির মুক্তি ঘটল ...  এত দিন তাঁবুতে মাথা গুঁজে ছিলেন রামলালা বার তাঁর জন্য সুবিশাল মন্দির নির্মিত হবে ...  সরযূ নদীর তীরে সূচনা হল স্বর্ণযুগের।’ তিনি আরও বলেন, ‘‘এই রামমন্দির ভারতের সংস্কৃতির আধুনিক প্রতীক আমাদের রাষ্ট্রীয় ভাবনার প্রতীক তিনি ৫ই আগষ্টকে ১৫ই আগষ্টের সঙ্গে সমতুল্য বলেছেন। ১৫ই আগষ্টের ভারতের স্বাধীনতা দিবসটি হলো    ভারতীয়দের জন্যে বৃটিশদের দাসত্ব থেকে মুক্তির দিবসও বটে।। প্রধানমন্ত্রী অবশ্য খোলসা করেন নি ৫ই আগষ্ট কাদের কাছ কাদের মুক্তির দিবস। তিনি খোলসা না করলেও কী বলতে চেয়েছেন তা কারও কাছে অবোধগম্য বা অস্পষ্ট থাকে নি। রামমন্দিরকে ভারতীয় সভ্যতার, সংস্কৃতির ও জাতীয়তাবোধের প্রতীক হিসাবে বর্ণনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী। সেটা বলার সময় তিনি আবেগকে সংযত রাখতে পর্যন্ত পারেন নি। সে সময় ভাষণ থামিয়ে তিনি নিজ কণ্ঠেই ‘শ্রী রাম’-এর জয়ধ্বনি দেন। সেই শ্লোগানে সবাইকে গলা মেলাতেও বলেন। ভাষণও শেষ করেন রাম-সীতার নামে জয়ধ্বনি দিয়ে। মোদিজি তাঁর ভাষণে আরও স্পষ্ট করে যা বলতে চেয়েছেন তা হলো, হিন্দুত্বই হলো ভারতের জাতীয়তা আর হিন্দুত্বের মধ্যেই নিহিত রয়েছে ভারতীয়দের সভ্যতা ও সংস্কৃতির শিকড়। তিনি বলেছেন যে ভগবান রামচন্দ্রই হবে ভারত রাষ্ট্রের আদর্শ আর রামরাজ্য স্থাপন করাই হলো তাঁর মূল গন্তব্য। খোলাখুলি না বললেও তিনি স্পষ্টই বুঝিয়ে দিয়েছেন যে, রামমন্দির নির্মাণের শিল্যানাসের মাধ্যমে আসলে তিনি হিন্দুরাষ্ট্র নির্মাণেরই শিল্যানাস করলেন। তাঁর স্বপ্নের সেই রাষ্ট্রে যে গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার স্থান হবে না তা বলা বাহুল্য। 

ইতিহাস সংশোধন করার চেষ্টা ভয়াবহ সর্বনাশ ডেকে আনবে

বাবরি মসজিদকে ভাঙার পর পরই সঙ্ঘ পরিবারের নেতাদের কণ্ঠে কাশি ও মথুরার মসজিদ ভেঙে মন্দির উদ্ধার করার আওয়াজ/হুঙ্কার শোনা গিয়েছিলো। আওয়াজ উঠলেও সেটা নিয়ে কোনো অভিযান তখন হয় নি। কিন্তু ইস্যুটি যে তারা পরিত্যাগ করে নি তা স্পষ্ট হলো রামমন্দিরের শিল্যানাসের পর। শিল্যানাসের অনুষ্ঠানে শেষ হতেই সঙ্ঘ পরিবার পুনরায় কাশি-মথুরার ইস্যুতে সরব হলো। সরব হয়েছে ফতেপুর সিক্রি নিয়েও। একদা পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদের কাটরা মসজিদও দখল করতে গিয়ে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধিয়েছিলো তারা। বাধাবার চেষ্টা করেছিল হিন্দু-মুসলিম সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাও। ১৯৯২ সালের ৬ই ডিসেম্বর বাবরি মসজিদ ধূলিস্যাত করার পরও চারিদিকে দাঙ্গা বেধে গিয়েছিলো যাতে বহু প্রাণহানি হয়েছিলো। বাবরি মসজিদ ধ্বংসের সবচেয়ে খারাপ প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছিলো বাংলাদেশে। সেখানে সংখ্যালঘু হিন্দুদের ওপর নেমে এসেছিলো ভয়ঙ্কর আক্রমণ। অসংখ্য মন্দির গুঁড়িয়ে দেওয়া, অনেক হিন্দু মহল্লা লুট করার পর জ্বালিয়ে দেওয়া, বহু হিন্দুকে হত্যা এবং হিন্দু নারীকে ধর্ষণ করার বর্বর ও নৃশংস ঘটনা ঘটেছিলো। সেই বর্বর ঘটনার জীবন্ত বর্ণনা লিপিবদ্ধ করেন তসলিমা নাসরিন ‘লজ্জা’ নামক একটি উপন্যাসে।   

সঙ্ঘ পরিবারের দীর্ঘদিনের অভিযোগ ছিলো রামমন্দিরটি ধ্বংস করে সেখানে বাবরি মসজিদ তৈরি করা হয়েছিলো। সঙ্ঘ পরিবার কিন্তু তাদের অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ আদালতে দেখাতে পারে নি। আদালতকে তারা বলেছে ওটা তাদের বিশ্বাস। সেই বিশ্বাসকে সত্যে পরিণত করার জন্যেই ১৯৯২ সালের ৬ই ডিসেম্বর তারা ব্যাপক সংখ্যক হিন্দু করসেবক সমবেত করে মসজিদটি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়। সেই কদর্য ঘটনার ২৭ বছর পর ২০১৯ সালের ৯ই নভেম্বর সুপ্রিম কোর্ট যুক্তি, তথ্য ও প্রমাণ ছাড়াই হিন্দুদের বিস্বাসকেই মান্যতা দিয়েছিলো। সেই রায়ে গোটা বিশ্ব সেদিন সম্ভবত স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিলো। গণতন্ত্রের পিলে চমকে দেওয়া সুপ্রিম কোর্টের রায়ে সেদিন পৌরাণিক ও কাল্পনিক রামকে কার্যত ঐতিহাসিক রামের স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছিলো। সেই বিতর্কিত রায়কে হাতিয়ার করে বিতর্কিত জায়গাতেই যুদ্ধকালীন তৎপরতায় প্রধানমন্ত্রী এবং উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর অফিস ঝাঁপিয়ে পড়লো রামমন্দির নির্মাণের কাজে। গত ৫ই আগষ্ট তারই প্রথম ধাপের কাজের সুচনা করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।  

ধরা যাক তর্কের খাতিরে যে রামমন্দির ভেঙেই বাবরি মসজিদ নির্মিত হয়েছিলো। কিন্তু তখনকার যুগ তো সামন্ততন্ত্র ও রাজতন্ত্রের যুগ। সে যুগে রাজা-সম্রাটদের ভিন্ন ধর্মের উপাসনালয় ভেঙে নিজ ধর্মের উপাসনালয় নির্মাণ করাই ছিলো দস্তুর। কিন্তু এ যুগ তো গণতন্ত্র যুগ যে যুগে রাষ্ট্রের মৌলিক কর্তব্য হলো সমস্ত  মানুষের ধর্মাচারণের অধিকার সুরক্ষিত রাখা। এ যুগে ভিন্ন ধর্ম সম্প্রদায়ের উপাসনালয়ের জায়গায় শাসক দলের ধর্মীয় উপাসনালয় তৈরি করা রাষ্ট্রের কাজ নয়। ফলে অধিকাংশ মুসলিম রাষ্ট্রই এখন সংখ্যালঘুদের ধর্মীয় উপাসনালয়গুলির সুরক্ষা দেয়, যদিও বহুলাংশেই তারা সংখ্যালঘুদের জান-মালের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। অথচ আমাদের প্রধানমন্ত্রী স্বহস্তে বাবরি মসজিদের ধ্বংসস্তূপের ওপর রামমন্দিরের শিল্যানাস করলেন! এ কিসের বার্তা? এটা কি ভারতের ইতিহাসের ত্রুটি সংশোধনের ভয়ঙ্কর কোনো বার্তা?            

ধর্মীয় মৌলবাদীরা এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ সাম্প্রদায়িক শক্তিগুলো সাধারণত ইতিহাসের ত্রুটি সংশোধন করার দাবি করে থাকে। এটা একটা বিপজ্জনক প্রবণতা, কিন্তু এর অনিষ্ট করার ক্ষমতা সীমিত। কারণ ধর্মীয় মৌলবাদীদের এই প্রবণতা রাষ্ট্র দমন করতে সক্ষম। কিন্তু রাষ্ট্র যদি স্বয়ং এরূপ কাজ করতে চায় তবে তা তো মানব সমাজের চরম সর্বনাশ ডেকে আনবে। কেননা দেশের অভ্যন্তরে এবং বিদেশেও তার যে ব্যাপক ও তীব্র প্রতিক্রিয়া হবে তা মোকাবিলা বা দমন করা হবে দুঃসাধ্য ব্যাপার। এ ব্যাপারে আমরা স্মরণ করতে পারি বাবরি মসজিদ ধ্বংস করার পর বাংলাদেশে কী ভয়ঙ্কর প্রতিক্রিয়া হয়েছিলো এবং তার জন্যে সেখানকার সংখ্যালঘু হিন্দুদের কী নিদারুণ মাশুল গুণতে হয়েছিলো তার কথা।  

 

   

 

Wednesday, August 5, 2020

করোনা ডায়রি ( চার) - ঈদ--উল-আযহা উদযাপনে ধর্মান্ধতা ও মূর্খতার সব সীমা ছাড়ালো মুসলিমরা

করোনা-সংক্রমণ এবং করোনা-মৃত্যুর সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে

বিশ্বে করোনা সংক্রমিতের সংখ্যা গতকাল (৩১.০৭.২০) পৌঁছে গেছে প্রায় পোনে দু’কোটিতে (১৭৭২৪২৭০), ভারতে প্রায় সতেরো লক্ষ (১৬৯৭০৫৪) এবং পশ্চিমবঙ্গে ছাড়িয়ে গেলো সত্তর হাজারের গণ্ডী (৭০১৮৮)। বিশ্বে সংক্রমিতের সংখ্যা বেড়েছে গত চব্বিশ ঘণ্টায় প্রায় তিন লক্ষ (২৮৩৬৩৮), ভারতে প্রায় ষাট হাজার (৫৭৭০৪) এবং পশ্চিমবঙ্গে প্রায় আড়াই হাজার (২৪৯৬)। ভারতে ইরিমধ্যে  গোষ্ঠী  সংক্রমণ শুরু হয়ে গেছে। ফলে সংক্রমণ আক্ষরিক অর্থেই লাফিয়ে বাড়ছে। গত মাসের (জুলাই মাসের) প্রথম চারদিনে সংক্রমণ বেড়েছিলো এক লক্ষ। আর মাসের শেষে এক লক্ষ বাড়লো দু’দিনে। গোষ্ঠী সংক্রমণ হয়েছে আমাদের রাজ্য পশ্চিবঙ্গেও। ফলে এখানেও করোনা রোগীর সংখ্যা অন্যদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। গত মাসে প্রথম চারদিনে আড়াই হাআর বেড়েছিল সংক্রমণের সংখ্যা, আর মাসের শেষে একদিনেই বেড়েছে আড়াই হাজার। সংক্রমণের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। সারা বিশ্বে গতকাল পর্যন্ত করোনায় মারা গেছে প্রায় সাত লক্ষ মানুষ (৬৮১৮২৪)। ভারতে সংখ্যাটা প্রায় চল্লিশ হাজার (৩৬৫৫১), আর এ রাজ্যে ছাড়িয়ে গেছে দেড় হাজারের গণ্ডী (১৫৮১)। ভারতে করোনা সংক্রমণের সংখ্যা বৃদ্ধির হার এত বেশী যে, এক সময় করোনা-আক্রান্তের সংখ্যায় ভারত ছিল সব পেছনে, এখন ভারত বহু দেশকে টপকে পৌঁছে গেছে তৃতীয় স্থানে। মৃত্যুর সংখ্যাতেও বহু দেশকে পেছনে ফেলে পৌঁছে গেছে পঞ্চম স্থানে। কী আক্রান্তের সংখ্যায়, কী মৃত্যুর সংখ্যায় ভারত যেন গোল্ড মেডেলিস্ট হওয়ার দৌড় শুরু করেছে।

মোদ্দা কথায় করোনার থাবা অতি দ্রুত গতিতে চওড়া হচ্ছে বিশ্বজুড়ে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা (হু) এ বিষয়ে প্রতিনিয়ত সতর্ক করছে এই বলে যে আগামী দিনে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে, আরও ভয়াবহ হবে।    ভারতের ক্ষেত্রে পরিস্থিতিটা হবে সব চেয়ে ভয়াবহ। এটা বলেছে ইউরোপের একটি (এই মুহূর্তে নাম মনে পড়ছে না) বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক দল। তাঁরা বলেছেন যে ফেব্রুয়ারী মাসের মধ্যে যদি ভ্যাকসিন না আসে তা হলে করোনা সংক্রমনের নিরিখে বিশ্বে এক নম্বর স্থানে চলে যাবে ভারত এবং ভারতে করোনা রোগীর সংখ্যা প্রতিদিন প্রায় তিন লক্ষ (২৮৭০০০) করে বৃদ্ধি পাবে। এ রকম বেনজির ভয়াবহ আবহের মধ্যে এবার ঈদুজ্জোহার (ঈদ-উল-আযহার) দিন নির্ধারিত ছিলো               

করোনা আবহের মধ্যে  ঈদ উদযাপনে মুসলিমদের প্রস্তুতি দেখে আমি হতভম্ব  

স্বচক্ষে দেখছি মুসলিম সম্প্রদায়ের সাড়ম্বরে ও সোৎসাহে ঈদ উদযাপন। দেখছি আর বিষ্ময়ে হতবাক, রুদ্ধবান হচ্ছি। বিষ্মিত হচ্ছি কারণ, বড়ো দুঃসময় চলছে এই সময় আমাদের প্রিয় গ্রহে। এত দুঃসময় এ বিশ্ব দেখেনি কখনো। তামাম মানব সমাজের বুকে নেমে এসেছে এক মহাবিপর্যয়। করোনা ভাইরাস যেন আজ বাস্তবেই রূপকথার দৈত্য হয়ে ঊঠেছে। তাকে বধ করার জন্যে বিশ্বজুড়ে বিজ্ঞানীরা দিনরাত অস্ত্রের (ভ্যাকসিন ও ওষুধ) সন্ধানে গবেষণায় মগ্ন রয়েছেন। কিন্তু কখন যে ভ্যাকসিন ও ওষুধ তৈরি হয়ে  বাজারে আসবে তা এখনো রয়েছে অন্ধকার ও ঘোর অনিশ্চিয়তার গর্ভে। কিন্তু এত বড়ো দুঃসময়, এত বড়ো বিপর্যপয়, এত মৃত্যু (ইতিমধ্যেই প্রায় সাত লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয়েছে) কোনো কিছুই মুসলিম সমাজকে এতটুকু ছুঁতে পারলো না। করোনা ভাইরাস, বৈশ্বিক মহামারি, মানুষের মৃত্যু মিছিল, বিশ্বজুড়ে চারিদিকে লক্ষ লক্ষ স্বজনহারা মানুষের আর্তনাদ, এসব যেন কিছুই ঘটেনি ও ঘটছে না, যেন পৃথিবীতে সর্বত্র বসন্তের সুশীতল মধুময় মনমাতানো পরিবেশ বিরাজ করছে এমন একটা ভাব দেখালো মুসলিমরা এই ঈদুজ্জোহায়। 

করোনা-মহামারী আবহেও মুসলিমরা যে প্রবল উৎসাহ ও উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে গতকাল যেভাবে ঈদ উদযাপন করলো তা স্বচক্ষে না দেখলে বিশ্বাস হতো না। গত ২৫শে মে ঈদ-উল-ফিতরের সময় আচমকা লকডাউন ঘাটে চেপে যাওয়ায় ব্যাঙ্গালোরে আটকে গিয়েছিলাম। সেখান থেকেই লক্ষ্য রাখছিলাম ঈদুল ফিতর উদযাপনে মুসলিম সমাজ দৈহিক দুরত্ব রক্ষা করার বিষয়টিকে প্রাধান্য দিচ্ছে নাকি অবহেলা করছে সে বিষয়ের প্রতি। সেবার সরকার, প্রশাসন ও মুসলিম ধর্মগুরুদের পক্ষ থেকে যে ভূমিকা পালন করা হয়েছিলো তাকে ইতিবাচক বলা যেতে পারে। বড়ো বড়ো মসজিদের ইমামগণ ইদগাহ-র বদলে  মুসলিমদের নিজ নিজ বাড়িতেই ঈদের নামাজ আদায় করার অনুরোধ জানিয়েছিলেন এবং এমনকি  লকডাউন চলাকালীন সময়ে মুসলিম সমাজকে দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজও নিজ নিজ বাড়িতেই পড়তে অনুরোধ জানিয়েছিলেন। ঈমামগণ বলেছিলেন, আগে মানুষ পরে ধর্ম, মানুষ বাঁচলে তবেই ধর্ম বাঁচবে। মুসলিম ধর্মগুরুদের এই সাহসী ও ইতিবাচক ভূমিকা আমাকে যারপরনাই অবাক করেছিলো। অপরদিকে প্রশাসনও থানা স্তরে ঈদগাহ কিংবা মসজিদের পরিবর্তে বাড়িতেই ঈদ-উল-ফিতর উদযাপন করার জন্যে জোর তৎপরতা দেখিয়েছিলো, মসজিদের ইমামদের নিয়ে আলোচনা সভা সংগঠিত করেছিলো। প্রশাসন ও ধর্মগুরুদের ইতিবাচক ও সাহসি পদক্ষেপ একদম বিফলে যায় নি। কিন্তু এখন যখন করোনা সংক্রমণ ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে তখন ঈদ-উল-আযহা উদযাপনে প্রশাসনের সেই তৎপরতা চোখে পড়লো না। সরকার কি তবে ২০২১ –এর বিধানসভা নির্বাচনের কথা ভেবে প্রশাসনকে চুপ থাকতে নির্দেশ দিয়েছিলো? মুসলিমরা যাতে ঈদুল ফিতরের মতন ঈদুজ্জোহার নামাজও নিজের বাড়িতেই পড়ে সে বিষয়ে মুসলিম ধর্মগুরুদেরও কোনো ভূমিকা দেখা গেলো না। তাহলে কি রাজ্য সরকার ও মুসলিম ধর্মগুরুরা পারষ্পরিক বোঝাপাড়ার ভিত্তিতেই একটা ঈদে দৈহিক দুরত্ব রক্ষা করার জন্যে তৎপর হয়েছিলেন এবং আর একটা ঈদে অতৎপর থাকলেন? নাকি এটা একান্তই কাকতলীয়? এ কথা থাক। মোটের ওপর আমার মনে হয়েছিলো যে ঈদুজ্জোহা উদযাপনে দৈহিক দুরত্ব রক্ষার বিষয়টি এবার বোধ হয় অনেকটা  অবহেলিতই হবে। তবুও একটা আগ্রহ ছিলো ঈদুজ্জোহা উদযাপনে মুসলিমরা কী ভূমিকা নেয় তা স্বচক্ষে কিছুটা পর্যবেক্ষণ করার।

রোজ ভোর সওয়া পাঁচটায় হাঁটতে যায়। গতকাল (ঈদের দিন) ঠিক করলাম যে হাঁটতে হাঁটতেই মুসলিমদের ঈদের প্রস্তুতিটাও একটুখানি পর্যবেক্ষণ করে নেবো। বাড়ি থেকে বেড়িয়ে পঞ্চাশ গজ খানেক  দূরেই প্রথম চোখে পড়লো ইদগাহে নামজ পড়ার প্রস্তুতি সারা। আমাদের গ্রামে ইদের নামাজের জামাত হয়ে সে ইদগাহে তার পাশের রাস্তাটা সাজানো হয়েছে হরেক রকমের রঙের ঝলমলে কাগজের তৈরি  অসংখ্য চেন দিয়ে। তার মানে স্পষ্ট হয়ে গেলো যে এবার আর নিজ নিজ বাড়িতে নয়, ইদুজ্জোহার নামাজ পড়া হবে ইদগাহে একসঙ্গে জামাত করেই। ৬/৭ শো গজ যেতেই কানে ভেসে এলো কোনো এক ইমামের সদম্ভ ঘোষণা। তিনি যে মসজিদে কর্মরত সেই মসজিদের মাইক থেকে আরবীতে বারবার চিৎকার করে আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্বের ঘোষণা দিচ্ছেন। একই সঙ্গে এও ঘোষণা দিচ্ছেন যে আল্লাহ ছাড়া দ্বিতীয় আর কোনো উপাস্য নেই। ঘোষণা দুটি আরবীতে এ রকম – আল্লাহো আকবর,  আল্লাহো আকবর। লা এলাহা ইল্লালাহু। ইদের জামাতে নামাজ শুরু করার আগে ইমামগণ বারবার এগুলো উচ্চারণ করে থাকেন। ইমাম সাহেব আরবীতে এই কথাগুলি মাইকে বলে মুসলিমদের ঈদের নামাজ পড়ার জন্যে তাড়াতাড়ি ইদগাহে যেতে বলছেন। আর একটু দূর গিয়ে শোনা গেলো আর একটা মসজিদ থেকে মাইকে সেই কথাগুলিই। এ কণ্ঠটি কিন্তু ইমামের নয়, একটা অল্প বয়সী বালকের। গ্রামের মসজিদগুলিতে নামাজ পড়ার পাশাপাশি আরবী ও ধর্মীয় শিক্ষাও দেওয়া হয়। তাই মসজিদকে মকতবও (মাদ্রাসাও) বলা হয়। সেই মকতবের কোনো এক তালবিলিমকে (শিক্ষার্থীকে) বালকদের এভাবেই তালিম (শিক্ষা) দিয়ে ভবিষ্যতের ইমাম বা মৌলানা বা মুজাহিদ তৈরি করার পাঠ দেওয়া হয়। আর একটু দূর যেতে দেখলাম আমার পরিচিত দু’ই ব্যক্তি (ওরা দু’ই ভাই) একটা চালার তলে বসে গল্প করছে। হাঁটতে হাঁটতেই ওদের সঙ্গে কথা বললাম। ওদের মুখে শুনলাম যে ঈদের জামাত শুরু হবে সকাল সাতটায় ওদের ইদগাহে। ইতিমধ্যেই রাস্তার ধারে কয়েকটা পশুকে (ঈদে কুরবানি দেওয়ার উদ্দেশ্যে) গোসল দেওয়ার দৃশ্য চোখে পড়েছে। সামনে যেতে এগোতে থাকলাম ততই বেশী বেশী করে পশু গোসল দেওয়ার দৃশ্য চোখের সামনে পড়তে থাকলো। একটা গ্রামের মধ্যে এ রকম আর একটা পশু গোসলের দৃশ্য চোখে পড়লো। এটা দেখে একটু অবাক হলাম। যে একটা ছাগলকে গোসল দেওয়ার পবিত্র(!) কাজটি সম্পন্ন করছে সে আমার ছাত্র। ছেলেটি কিন্তু গোঁড়া নয়, এবং এমনকি খুব একটা যে ধর্মনিষ্ঠ তাও নয়, বরং অনেক উদার। ওকে আমি খুব ভালো করে চিনি। কারণ, সে আমাদের ‘ভিন্ন স্বর ভিন্ন মঞ্চ’-এর সদস্য এবং আমার ছাত্রও। সে উচ্চ শিক্ষিত (ন্যূনতম স্নাতক তো বটেই) এবং ভীষণ মার্জিত। কুরবানি দেওয়ার জন্যে মুসলিমরা অনেকেই বাড়িতেই ছাগল পোষে। এ রকম ছাগলদের বাড়ির সবাই খুবই যত্ন করে প্রতিপালন করে। কথিত আছে যে, ইসমাইলকে কুরবানি করার উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়ার আগে তাকে গোসল দেওয়া হয়েছিলো। সে জন্যেই মুসলিমদের কুরবানির পশুকে কুরবানি করার আগে গোসল করানোর রীতির প্রচলন আছে। অতি যত্নে সন্তান স্নেহে পালন করা ছাগলটিকেই ঈদের নামাজের শেষে শানিত ছুরি হাতে দাঁড়িয়ে থাকা ইমামের হাতে তুলে দেওয়া হবে পরমানন্দে কুরবানি তথা হত্যা করার জন্যে। ইমাম সাহেব তারপর পাকা কসাইয়ের মতন নির্মমভাবে একটার পর একটা পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে পশুগুলিকে জবেহ (হত্যা) করে মালিকের হাতে তুলে দিবেন। তারপর মালিকরা কয়েকজন মিলে সদ্য কুরবানি (খুন) হওয়া ছাগলটির রক্তাক্ত লাশ থেকে চামড়া খালিয়ে (ছাড়িয়ে) হাড় ও মাংস আলাদা করে মাংসের তিন ভাগের এক রেখে দু’ভাগ আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া প্রতিবেশীদের মধ্যে মহানন্দে বিলি-বণ্ডনে মেতে উঠবে। তারপর কয়েকদিন ধরে সন্তান স্নেহে পালিত সেই ছাগলটার মাংস পরম তৃপ্তি সহকারে ভক্ষণ করবে। ছ’মাস/এক বছর বা তারও বেশী সময় ধরে বাড়ির সবাই মিলে একটা ছাগলটাকে পরম স্নেহে ও আদরে পেতিপালন করে তাকেই হাসতে হাসতে ইমামে ছুরির নীচে দিয়ে দেওয়া এবং তারপর তারই মাংসকে পরম তৃপ্তিতে ভক্ষণ করা যে খুবই বেদনাদায়ক, মর্মান্তিক, অমানবিল ও বর্বর প্রথা তা বলা বাহুল্য। ধর্মান্ধ ও প্রগাঢ় ধর্মনিষ্ঠ মুসলমাদের কথা স্বতন্ত্র, কারণ তাদের বিবেকবোধ নষ্ট হয়ে গেছে ধর্মের জাঁতাকলে। কিন্তু আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত, আধুনিক মনস্ক ও মার্জিত ছেলেমেয়েরা (মেয়েরাই তো মহানন্দে তাদেরই প্রিয় ও প্রতিপালিত ছাগলের মাংস রান্না করে) যখন এই প্রক্রিয়ায় নিজেকে মনের সুখে সম্পৃক্ত করে তখন বিস্মিত না হয়ে পারি না। তাই অবাক হয়েছিলাম আমার সেই ছাত্রটিকে যে উচ্চ শিক্ষিত এবং আমার সঙ্গে ‘ভিন্ন স্বর ভিন্ন মঞ্চে’ সামিল (অন্তর্ভুক্ত) থেকে নারীর উচ্চশিক্ষা ও সমানাধিকারের দাবিতে সামাজিক আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেয় তাকে তাদের গৃহপালিত ছাগলটিকে কুরবানি (হত্যা) করার নিমিত্ত গোসল করাতে দেখে। পঞ্চাশ মিনিট ধরে কয়েকটা গ্রাম ও পাড়ার মধ্যে দিয়ে হেঁটে যখন ঘরে ফিরলাম তখন বুঝে গেলাম যে এবার অন্যান্য বারের মতনই সাড়ম্বরে ঈদ উদযাপন হতে যাচ্ছে।

ঈদ যাপনের প্রস্তুতিতে মুসলিম নারীর ব্যস্ততাও অবাক করার মতন

গতকাল (অর্থাৎ ঈদের দিন) ভোরবেলা হাঁটতে গিয়ে আর একটা জিনিষ লক্ষ্য করলাম। মুসলিম নারীরা এখন বহুমূত্র ব্যাধির কারণে ভোরবেলা রোজ দলে দলে হাঁটে। কিন্তু কাল একজন মুসলিম নারীকে রাস্তায় দেখলাম না। আসলে ঈদের দিন তাদের ভোরবেলা হাঁটতে যাওয়ার ফুরসত থোরায় থাকে। খুব ভোরে উঠেই ঈদের প্রস্তুতিতে কর্মকাণ্ডে ঝাঁপিয়ে পড়তে হয়, তখন তাদের দম ফেলার যো থাকে না। বাড়ির পুরুষরা সবাই গোসল করে সেজেগুজে চোখে সুরমা দিয়ে গায়ে আতর মেখে এবং আতর লাগানো এক টুকরো তুলো কানে গুঁজে ঈদের নামাজ পড়তে যাবার আগে তাদের সামনে লুচি, পুরি, পায়েস, সিমাই ইত্যদি নানা রকম উপাদেয় খাবারের প্লেট সাজিয়ে দিতে হয়। খুব ভোরে উঠে বাড়ির সব মেয়েদের সেই খাবার তৈরি করার কাজে লেগে পড়তে হয়। পুরুষরা নামাজ পড়তে বেরিয়ে গেলে বাড়ির মেয়েরা তাড়াহুড়ো করে নিজেদের গোসল ও সাজগোজ সেরে বাড়ির মধ্যেই ঈদের নামাজ পড়ার ইমানি কর্তব্যটা সম্পন্ন করে ফেলে পুরুষরা বাড়ি ফেরার আগেই। তারপর কিছুটা দম ফেলার পরই বাড়ত্র চলে আসে কুরবানির মাংস। সেগুলো তিন ভাগ করে দু’ভাগ পাড়ায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিলি করা। তারপর রানাবান্না কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়া। ঈদের দিন মেয়েদের কাজের শেষ থাকে না। মুসলিম নারীদের ঈদের প্রস্তুতি পর্বটা শুরু হয় ঈদের ২/৩ দি আগে থেকেই। বাড়ির সমস্ত ময়লা কাপড় পরিষ্কার করা, গোটা বাড়িটা মুছে-ধুয়ে পরিষ্কার করা, ঈদের মাংস রান্না করার জন্যে নানা রকম মশলা তৈরি করা, ইত্যাদি কত কাজ করতে হয় মেয়েদের। আমি অবাক হয়ে দেখি, ঈদ উপলক্ষে এত সব কাজ মেয়েরা আনন্দের সঙ্গেই সম্পন্ন করে। হায় রে নারী! তার ঈদগাহে নামাজ পড়তে যাবার অনুমতি ও অধিকার নেই, অধিকার নেই মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়ার, নেই অধিকার ইমামতি করার, তবু ঈদের সব কাজই (পশু জবাই বাদে) মেয়েরাই করে, করতে তাদের হয়। এটা যে চরম অবিচার, বৈষম্য ও বঞ্চনা সে কথা মুসলিম মেয়েরা কবে যে বুঝবে?

দৈহিক দুরত্ব বিধি মানা তো পরের কথা, কারও মুখে মাস্ক পর্যন্ত দেখলাম না

data:image/jpeg;base64,/9j/4AAQSkZJRgABAQAAAQABAAD/2wCEAAkGBwgHBgkIBwgKCgkLDRYPDQwMDRsUFRAWIB0iIiAdHx8kKDQsJCYxJx8fLT0tMTU3Ojo6Iys/RD84QzQ5OjcBCgoKDQwNGg8PGjclHyU3Nzc3Nzc3Nzc3Nzc3Nzc3Nzc3Nzc3Nzc3Nzc3Nzc3Nzc3Nzc3Nzc3Nzc3Nzc3Nzc3N//AABEIAIIAsQMBIgACEQEDEQH/xAAbAAABBQEBAAAAAAAAAAAAAAAFAAIDBAYBB//EAD4QAAIBAwMCBAMEBwYHAQAAAAECAwAEEQUSIRMxBiJBUWFxgRQyQpEHFSOhscHRFjNSkuHwJFRicpPS8VP/xAAZAQADAQEBAAAAAAAAAAAAAAAAAQIDBAX/xAAkEQACAgIBBAMAAwAAAAAAAAAAAQIRAxIhEyIxQQRRYSOR8P/aAAwDAQACEQMRAD8AOhaeEFOC04LXpWeXQwLTwtO208LRYUIWsxiEoUdP1OefhxTNtCNU06zWJZzK1vE77mcW5U58xLdT7wPPHp5R6UcC8DHIx396yx5NrNsuLSiPZxXQtSBa7trWzGiLbXQtSba7tosKIttLZUu2u7aLCiHbS21Ltru2iwoh21wKQOcfSpsVzFFhREV4HxrhWptvwrm2iwor47iuFagjv7ibMKWMccysA+/dnbuP4wNucAnHPp2zVxlqY5FIueNxohK0x04qfGaaVNVZFFfZSqbbXadhRIop+Kcq04Cs7NKGgU4LXQKcBzRY6BN9GXnttzsR1xwScYyDiioWh12yNf26K2dk4UjHZsA/wIoqF4rm+M3qzq+XFKSX4M210LUmKWK6LOShm2ltqQL6007U5d1RO2WOMH50bD1G7aWBT42jlQPE6uh7MpyK50pftHU2Ho9PGc/iz/Sk5JDULG7aa/lKjazFjgYqfAzTXRDy5UAc8vj8qHKhKNkUfnUMAQD707bUgUAADsKW2nYURFa5tqbbXMUWFAsRy9OSF57iRups39dkwDg8BeB3/dVwrwTULnE1wgHmOCPyFW8Z7dq58D7pI6/kR7IP8KxXmkV4qcrXCMiuizk1INtKpMUqdhqOAp6KW9RiuIAWOewpxfOAPSs9jTU6VAY45GM1yRT02w7JwTlOD+ddBrrfcb5VMnwxwj3IBzF5b2zihnvI95BLNLvwO/4s+1HwMj2oJ21azBPby9/YNRysfjvtOn5canQsVxgQVwDjPPwGDUkSF2A/OrElvHsC/thzkgSsCO/x+FXPLrwYwxOXJW21DeN0rSaTbu2IW2+4xXVkSKZYGZyzfdL9/fFQ6jKRDNEOC0YwfbOae9xtC0akkzthNBJaxGW4WMlQTyMjPt8s04iJmVWuigZCu7rE8gjBrul2Mcmm2bdJZXaAO7PNIMkkjjB4qS7tYrWEzTWkMcSgl2N7IB++uSU5SO1QhEjjmiAQNOkgI+8SAc/Gq97JAz25GyQtIEUjBxk/w70Q/VgMQdbVCMcN9sfBHoe1UdStFtntTEnRdbpUdRKXBBGfWrWWTVMjowTtF4qKanmXPxI/fUsSq7EB9pUjOBmppowfM0rtheCUH8hW7ypOjmWJtWVgmflTWGO1PLBvu9qaRxV7EagSWWSTUrq1kgt0XKFXZ3YuvcHA27eR7miNqzvaxtIIwzKCennH0zzVG9yuqOQAd0SD5cmiFsQ1vGR2xWGN1kZ15Y/wxZ0iozUpNRtXTZyJDc1yu0qB0NU08NVcNUd5fQ2MBnuCRGuMkDNZt0Uotui6GFNnmSKEtIWCnjKoW/cBmgmpeNNMWGI2ttMuHCncCCcnn057H8qLyHrwHbkBhnnIPy+FZue0WzZY3GaQJlvbWHU7aSW5IG/A3QuMkjAH3cetG/tam46O2UEZy5j8n50Egt2m1e3iklZQZi45yF8h9/lWpaxjXGJywJx6ccVyxyOKqJ15MMZO5+SBrpbc7/MV9Qoyaa+r7nBNvdgHksI1/wDbPrVn9XoBxcBvhxmuPpyqci7JHsCvHf4UpTlJ2OOPHFVYAklkn1u0lKTJEpZmZ49oyFIFWdQaTzvtXAC9zjjJH86JTaZkBvtknlycDac+vt8Kq3emNFayub13ZQTjAyfnx8KpZJJUQ8UHK0xlxq6aD4Whv2j6jLaIkaZ4ZyxAz8K8vvdR1bX7nq308kzZ8ka/dX/tUf8A2tr4uBfwrpEJPlfZuGO/LH+Nchm8PeG47eC9vYEvJIwzqNzsgPOSAPKKVtLgtJXbM9oWtax4ZuVTEjWhOWt35Rvl7H5fXNeka1cx3FjbXkWOm1xG659AUqnc2llfWcbwvb3UEi7opYzvU8E5B+lNfzaDGpLH/iFGTjI+8KlSfscox8ofbX7Q3EqyB2HUBXZGSMfP61dk1aPZhknwBgnpH+lQHSHUDp6iw4wQFXmrSWDIgEl2ZPw5wOPj2ocpWJQgl5KiXaJavcS7tm4/dQk9/bvUkNzHPGHiLbT23oUP5HmrH2FVG37QDnnsMUjYguAkw5H3gB++tFmmvRm/jwfNge62tqTMk0IKxDKs3mzk44HNWrZkWPph1LIcMBnj19ah1CxMFzGVkEm9Tu4A4BHr+dVBr1hpUrW+oxyyMwMn7PkKCacJ99seTG+morwgqxpjGqljqVvqULz2m/pBiBvXFSs9dSdnC406H7qVRbqVUKjzGy8Z6jbBlBilDEHbJHnHHphs1Zn8b3FxH05rW1wfZX/mTVm2/R0BcBDrCA4Zm/Zk8DvjnsBzVs/o7gMcStqshyRskWDAfPtk4J9ax5Oi4gqDxDDdSQQNBbxruyxaMsDgHAwAPf8AjW4tdXtbyR1hDJKsTMUIIXHp3H+/pQkfovt42UnU7k84O2NRjPrz6CiNt4YgtJJOlqbLOE2OCis5GM/dAznjtWU4uuDeEo33FLU72S0ke4gjVpIleQI54OFbv8KD+E/GWrTtqovltrgQWct2mYgmNmMr5ceXzDj4d60z+H0u4p5H1PyhWWTMSjbkYOefbn61No3hiw+xzy2P2aUXlu8QlEBIKnGRkNtxlRxx296mMKiGSdyM14V8WavdT3638dtcbLWW5X9kI9pUfdG30Oex/Oo/B/jTV7/Vry2voraZBbyzLtiEewoOwx6H2Na3TfDC29zcydSN3uIWTcIANqt37HB+vpU1p4Ttra8luYYrOCd45UMscGGO/wCG49v51WpnsZLwr4u1nUNTmiv47WaJ4JJFRYgnTKrnCkenB4Oe9D/C3jTVtY1prW/W1NvcJIwCQhDFhCRtI9OPXPetxZeGrXTD9oeePeFZSRaAOQykcgHvyPaotK8HWOk6kl1bG3Z49ybWtwoXj55HGaNUPZ2ReI4mm0DSdoOI41kJPbGW/rXmF7ZXuq+Jru2hRWuJrmQq7HHC59fbC/ur22OyRtNFp07WZocJ0o49xHIHmwf6VUt/B+nRTG9M6u5LbJBbdi2QSOe+T8qUVQSlaAfgKCey0CSzum2yQzsu0H3BIx/Gick+PDRk2lgtwrAH1wWpkH2iKWO1tIXZw4M6vDGHXBUZLEkejc+xIHwIfZrg6f0BaosssMpTeqqytnyj67jj5c1GjuzTdJJGN8J+J9Yv9R23qw9KaCSYQtbiNU2rldhAzgjvknNR+GPFmuzNqVzfx20sK2M95EnRCbWiCnYMenmUYPPJ+uitreS31BjOqNHb2u/O4MqDaVMRPvyeBx8cVbsbbRo4NklygZIXieLoJv2SYXBwvI8o+HbPYY01/DNyr2ZTw34n1yfTNanumtppbeDrRF4AMMTgAAYyvrg/Dmu2mv8AiBfBd5eySw3F0Gh6MhgXeokbB8oGDjnGRWpFnZW8zQJI7dYiGSUKmcD1PlGRx/PtTmOl2kIsRhArKzqAuQA4K5wO2TxxjFGj+hbL7AvhjUry90OCfUZY3l3yRhwoVjgfiA4zxVXxNqQ06eO4BBR1KP5Nw47fzo+P1YzCKO9Jih3SMyMFILckthc++PyqrcW2gSFobm4mmRuG6ko4znA9D647VPSalZss0NdfZlrbxg8MbJb229EGcdE+Udh+IV1vGV04yls/Pb9kP/aisVj4bjgfrWqQHP8AeCZisvJ9s8ZJ4PvVl9J0Bgip9rV4zycNgrjB57e1a6y9GO0G+TN/2wvP8B/yD+tKtD+q/Dn/ADEv/k/0pUVMe2L/ACH+J7/VI55ItNjs+kzCJpGcGaEcYwOMDgDglue1FYLWOJLe0jtJ8bgszTzt1FB9Tg8sT2X+FYXQLLVoL6HUrqNY7m7kU2i3OS7H08gIwMkHJOa2MvhO/upzDfakX6jda9MMRRP+1Dkkcj689qndtcCcIJpB59Pt7K2Wa4kVVE6rJJJK0m30YDJwODjjgZz3qG11FLi3ae2vIpkaeSKJUDfeHqQD6AHvjv6Vk7vSHj02/uLK+nMv2jyQKr3H3SV37S3HJIJ+FZbwLqWtz649nbyiSdI3KxPBkIONx2jHPYZPbPyq+NLompPJSar9PUdFguJLdyl7EzMMLb43JGyklsHuQTjueBxToNPZLORIriOG8vIHLdFSBG+PuggZwMn4n91Y3S7a8fXi93pNzMlrbftTLKiouWI3kkYP3TgD8xWtl1S30Xw/ZS9VTOkCkRBwx2HGTz3Az3pOr4B7LhlqeOwtFjjSCVrZ1GDAu1VcghjgDGOcn4j3q7p3Qt9PWfqySpAcSSSWxV2U+oGAQM4+eKxcHiK7uPDkuohraCS2nYxwSN5goIHr9cdhWm0q8GuRz2eqILSTULYSfZkmDSoMDOSBwcEelSpN+VQ3GMUubBM3imERRaW/QhvWVmeO+YquCxJO/n8ANVfBviRxJc28vUW3t53CyiImN1yCBuYbt5zgD/D8TQuHSU8NaxcaZDFa7nfrC/u5B+yiB4XHZWwyg4wTn6C5py6rqMt1f3+p29vBBcpseII4mVQGO0kdyARzTbfpFRjGXmRobjXLp9KuNVsbKURwXipMjlUYJuBcgd84wMHHf87FnqEeqWH2zTLie7mRui6NIYiAzjlgQQdoYcjv715z4g8WRC4ubDTbW+VLnyrBLL5i/beMdydq4z2xivRPC3h650uzXq6s7xgbgjADDt3LH1x6Dt/KXHRUuRLJdvwXXtOnbs0DTSSxKMnftMuAfKSR/OnreGLTI3lspkURAiGRgzH27Eg9h+fwpWbS/ZIeoy3Lpw5Uk7j2JrD+PNUl6jJpVwvTLKZZUOGjHrgdjk49OOaSk065DhycpD9WuJZ55BGi27LEzRWskuBICTkKBgZ57/HtVZ9S2stvuWK9ZCI1iVSNmDx1D2PzNAdH1ux1TUZ47p5JZUXehZPMcEnjknIBwe/PbjihC6ZIr3MkV43TkL5iePDYJzhh6Hn510Qly4pGE1fLZoTrK9aCOO9SKeMftIYjue49s7T8fn61NbzadLfie6intbkR7QZNwZ0AxyM5IoFpmmXB6EZ0oRXIIlhuBHuPlOR5lPA+f5Vpn8R20Fxsv1kjnSMBlweMjt8a1jTVsidcKPIM197mMIbcobFkDJES8buwzkq49fga5Jc6rMqX08wgaJfudASOpJOec8D14Hr6U2zbVL65ngM8Zsi26F5CFds8jGPbsaCza7JZ3k1vqdr03IAO2YkAe49xQ1y6FdL7C02s2dzfwm93JLEAoZwFKt24GAGHrjkc046pFE0t3dPBOmQiyu3oPTHpUwnleNJJLdzauBu8hwo/KhC7ba76BvZ5BISUTKlfl27/ABpx2aFLVPkvf2q0X/Bb/wCcUqZ/w3/Lt+Z/pXaupkXD9/st+G3uYIoXuIrltUkkYwyyq223XBHY+uMn64rT6t4qbT4o7ePeSzeeTIySTye1Ya410pczXHV6gOABG+c85OefoO1ULW+ur/UHxFHMkh8r4OUG4MfX2GM+xrgcGpdp6Dbcbkel2euadaeH5IZVRNSvVJkKqQCx4UZx3wfzNP8A0eQNp0Wq3V7F0b67kCorgb+kiDDH5sTWU0aSUa9bS6giOUDFVXBCv+E/DjNF/wBa3MN+bm5Tpq6FQT8+OK6oQclbOWc6fAbh1W30gXdgple4lV597EYBA9vQVktB/VclpqOr369bULsEDemcKiqOB2+NZvV/F1zaazOyRRyYR42WbJBDrg9sehqnoCza9N045vs6Qh8lCeAygfWpnV8DS45PaNFj0zR9AgiNnEZZIQbh2UEuxGTkn0yTxWL8MQRSfpA1HVbaZoY4osqqDJZnHm7+2P3ipbq+aRvsks5Mj4VCFwAB3+uM1Qc2+lSG6t55hIxLN+04bjsR2xV9NSXaZ9TV0y1rt7aaZ4qt767M19G2Ve2lUFnfugHp95Rx8KG+LbzU9R1TSTc2g0pZZ1hdIZBIse4hd+BjzYP7qPQ2ltc2lveTwJPO2JRJKM7W9CPbFCkgj1y8W8nuXRbOVf2ar94qcjJ+dJ4nRSyGgWysPC6p9gklluJ5Vj610Q5GRt9ADjnOKMX93FaWkYknkVUfLSqoJAPcAHOPhnOKyEzw3UypPM423AcFTznIIqLxHdOYkjEzYkbCuxyAR70LDw5CeXxFm8s9esdOlW1RCI+w82SWJ9fqTWN8fa7dWGYI7KA2127Asy7gox2I45PNZkaIukXsGqT6nNOwO6Ty7dzHtzntzV3xSE1GzixOVYFZFcnOR6/XBrPiKp+TRpyVp8A/wTb2d3cEPPNFLaKHjCFQpGfXIo7eaG9/OZk1TaokHVVIgGZAOwJPft3oRp+m6Vp8CXdrcyhnTBaZwAwzzxjvVqDVIo7NpGZYjuKk7u/5/OunFFKPd5Oebd8B6f7NpdjE1tukSFF8sj5I5+HrQPX7SPV5VnhkmhlA2bymQQOeR3+tOhvbCXS5WuSIkU8TGbg+xBPxqiNTihdYzewymUbkVDkhTzVScJdrFUo9yKTZ0mFIutdSTocqIkDb/kPb60FvmfUZ908DiUKAxYbCB7HNaG21vo3e2MqMsN7Yxn4VH4nnt7qIMzKtwv8AdsTyfh8RWLSSqzZSvwi7oXiNY3jsrreuI9qlsEHA9/er82qiNstGcebYdvqPavNLie6GWI2qfUc4+tWrXVNQsFSZZnCsduC24Nj/AH6VUM+vBMsV8noH66k/66VZn+1Ev/5N/kpVt1o/Zn039AOK1uo24XCkYIDDmtHoVxFpdgUZ3a4fl8A4BPoPhRH9H8kMPjfRpLp40gWZ97SEBR+yfGc8d8Vt/wBId6lx4PuFmubR53uYWjiiljdl77sFScge/HyFci7ZHXJbKmeZW+oSW97LeGLqyKR0Yy2M/En2/wBKj1jUrrVBGzxNC4PmxKCDWp+0+E9sUIcdASK8g6M+JCokGe2VJDLxzg8c8moBN4ZMgigtBL5gEyZVaTgYGScDLcZ9Aaptk6RMDJY3czu8hXceTubkn/fvRjw7dXGjW0yxxRdeaUbncnaqgcZx39eKPI2hW2p3sUiq9tEUW3kYOxlKnzHavGHIPcgAYxmprybw0wuTbC26hINv1IbkRjJBfeAM/wCLZtHHG74TqigaL3N5HdS3quwBBRFfAJ+Y+dVbu6NxbtFuy25gOPw+h/hR2aXRLzWri6jMJsxaiRuuko/adRAcheT5S2Ao7d+QTUk134YuJizx7QvTjVnjm80YWMHO38fEgB7Z79wapOlSIeNN2xia9bpCsImYRrEFXCHvj/QULtNUaGKdWfa0k4YYH4doH8qua1PoE9vI+nrEs5RCojilVg+Rnv5Nu0HPru57c1n6dtjUUiU3t0H6qMQ5Ocg1Ppswnkd9av7ogPujiHKjnOeB/SqdKp1/R0voL6zfxXoWOK4YxMRu3Icpj1HvQ+9SGSBujezs6xkKrLwf6VBSo1T8jGTWizwx77tRKoxkox+ntUljYWssYGpag0QA4SKNmOffOMY/3xXKVOkTRT1iwdhFDZ3ZuYUyfMCmPoaqJZXW3DRqMf8AUKL0qWqux+ihb20wOJfKMg7gQSMVNqcElzhonJYDGG+eas1bFjlVIvLLJx5etyM+/FDjY1SQBS0ucDKgH23Cu9G8DqdowpyvmHB+A9K1QWJCgMektgYz1GwcAd8fPPzoZc/374MRGTjpfd+lTogBfRvP8T/+U/1rlEKVVqhCruAG4AHf+VKlVrwM43AOPau+3x70qVJ+QEPxD4Uk5Jz7ilSoA4fvflS/EtKlTA76GuUqVSgFSpUqYhUqVKgBUqVKgBUqVKgDo5NcHPfmlSpAIfdHz/rS96VKgYqVKlTEf//Z

সকাল সাতটায় জামাত। কতো মানুষ ঈদগাহ যায় তা দেখার কৌতূহল নিয়ে ছাদে গিয়ে দাঁড়ালাম পোনে সাতটার কিছুক্ষণ আগে। যা আঁচ করেছিলাম তাই দেখলাম। মানুষ ইদগাহ-র উদ্দেশ্যে দল বেঁধে চলেছে। প্রায় সাতটা পর্যন্ত রাস্তা ধরে মানুষ হেঁটে চলেছে জামাত ধরার জন্যে। মাত্র দু’জনের মুখ মাস্ক ও একজনের মুখ রুমাল দিয়ে ঢাকা দেখলাম। করোনা আর দূরে পারে নেই, আমাদের গ্রামেও ঢুকে পড়েছে। তবুও মানুষ যেন বেপরোয়া। যেন করোনা ভাইরাস এবং সরকারকে ইদগাহ মুখি মুসলিম জনতার চ্যালেঞ্জ  জানানোর মেজাজ। তা অবশ্য নিশ্চয়ই নয়। এ হচ্ছে তাদের চরম অজ্ঞতা, আত্মসচেতনতার  দৈন্যতা, ও মূর্খতার নিদর্শন। আমি একজন ঘোষিত নাস্তিক। ২০০৫ সালে আমাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয় এবং আমার মাথার দাম ধার্য করা পাঁচ লক্ষ টাকা। তখন থেকেই আমি মুসলিম সমাজ থেকে বহিষ্কৃতও। এতদসত্বেও আমি আমার বাড়ি থেকে পালিয়ে যায় নি, এবং আজও মুসলিম সমাজেই বাস করছি। মুসলিম সমাজের উন্নতি, প্রগতি ও বিকাশের জন্যে নানাবিধ সানাজিক কাজ ও আন্দোলনের কাজ আজও করি। সুতরাং কোনো সনশয় নেই যে আমি মুসলিম সমাজেরই একজন। মুসলিম সমাজের লোক হিসাবে গতকাল ১লা আগষ্ট ঈদ-উল-আযহার দিনে মুসলিমদের করোনার বৈশ্বিক মহামারী সম্পর্কে যে চরম ও লজ্জাজনক অজ্ঞতা, অজ্ঞানতা, অসেচতনতা ও মুর্খতা স্বচক্ষে দেখলাম তা আমাকে শুধু অবাকই করে না, আমাকে লজ্জিতও করে, আমার মাথা হেঁটও করে।

সমাপ্ত। ০২.০৮.২০

Thursday, July 23, 2020

জঙ্গি উৎপাদনকেন্দ্র খারিজি মাদ্রাসাগুলি নিষিদ্ধ করতে হবে

ছ’বছরের বিরতির পর জেএমবি-র নাম আবার আন্তর্জাতিক খবরের শিরনামে (বাংলাদেশ ও ভারতের খবরের কাগজে ও বৈদ্যুতিন মাধ্যমে) ভেসে উঠলো। ২০১৪ সালে বর্ধমান শহরের খাগড়াগড়ে আমরা পরিচয় পায় জেএমবি কতো বড়ো ভয়ংকর একটা সন্ত্রাসবাদী সংগঠন তার। ওই বছরের ২রা অক্টোবর প্রবল ক্ষমতাসম্পন্ন আইইডি (ইমপ্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস) বিস্ফোরণ ঘটে খাগড়াগড়ের একটা বাড়িতে। প্রসঙ্গত বলি যে সাধারণত যুদ্ধক্ষেত্রে যেসব অতিশয় বিস্ফোরক রাসায়নিক মশলা ব্যবহার করা হয় সেসব দিয়ে ওই আইইডিগুলো বানানো হচ্ছিল। বিস্ফোরণস্থলেই দু’জন মারা গেলেও ওদের স্ত্রীরা বেঁচেছিল। তারা ধরা পড়ায় জানা যায় যে বিস্ফোরণের পেছনে জেএমবি রয়েছে। খাগড়াগড়ের বিস্ফোরণ কাণ্ডের ছ’বছর পর গত ১৬ই জুলাই জেএমবি-র মহিলা শাখার প্রধানের পদে কর্মরত জেএমবি নেত্রী আয়েশা জন্নত মোহনা ধরা পড়ে ঢাকায় বাংলাদেশের পুলিশের সন্ত্রাস দমন শাখার হাতে। ফলে করোনা ভাইরাসকৃত বৈশ্বিক মহামারীর খবরকে পেছনে সরিয়ে দিয়ে জেএমবি পুনরায় খবরের কাগুজের শিরোনাম দখল করে নেয়। প্রসঙ্গত বিশেষ উল্লেখযোগ্য যে জঙ্গি আয়েশা হলো পশ্চিমবঙ্গর একজন হিন্দু বালা। ওর পিতৃদত্ত নাম প্রজ্ঞা দেবনাথ। জেএমবি-র সংস্পর্শে এসে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করলে তার নাম রাখা হয় আয়েশা জন্নত মোহনা। জেএমবিতে প্রজ্ঞার আর একট নাম রয়েছে - জান্নাতুত তাসনিম। সংক্ষেপে জেএমবি-র পরিচয় দেওয়া যাক। এর পুরো নাম হলো জামাআতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ। ১৯৯৮ সালে এর জন্ম বাংলাদেশে এবং এটি ওসামা বিন লাদেনের আল-কায়দা কতৃক অনুমোদিত। পরে বিশ্বত্রাস আইএস-এর সঙ্গেও এরা সম্পৃক্ত হয়। ভারতের জঙ্গি সংগঠন ইণ্ডিয়ান মুজাহিদ সহ আরও কিছু সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের সাথে তাদের গাঁটছড়া রয়েছে। আর্থিক সহায়তা সহ সব রকমের মদত পায় এরা পাকিস্তান সরকার ও আইএসআই-এর কাছ থেকে। এদের মূল কর্মকাণ্ড বাংলাদেশের মাটিতে হলেও সাংগঠনিক জাল (নেটওয়ার্ক) ও কর্মকাণ্ড দেশের বাইরেও বিস্তৃত। বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গে এরা খুবই সক্রিয়। পশ্চিমবঙ্গে ওরা ঘাঁটি বানিয়ে ফেলেছে। বাংলাদেশের রাষ্ট্রব্যবস্থা দখল করা ওদের মূল লক্ষ্য। কিন্রু সেখানেই থেমে থাকতে চায় না। পশ্চিমবঙ্গ দখল করে বৃহত্তর বাঙ্গালিস্তান তৈরি করাও ওদের পরিকল্পনার অন্তর্ভুক্ত। ২০০৫ সালে বাংলাদেশ সরকার জেএমবিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। তাতে হতোদ্যম না হয়ে এক দিনে গোটা দেশে ১৭ট জেলায় ৩৭৬টি জায়গায় ৫০০টি বোমা ফাটিয়ে বাংলাদেশ সরকারকে চ্যালেঞ্জ জানায়। তারা নিজেদের আল্লাহ ও ইসলামের সৈনিক বলে দাবি করে এবং বাংলাদেশে ইসলামি রাষ্ট্র গড়া থেকে কোনো শক্তি তাদের নিরস্ত করতে পারবে না ঘোষণা দেয়। আরও ঘোষণা দেয় যে আল্লাহর সৃষ্ট ভূখণ্ডে আল্লাহর শাসন ছাড়া মানুষের তৈরি করা সংবিধানের শাসন চলতে পারে না। বর্তমানের জঙ্গি জেএমবি সংগঠনটি কিন্তু মূল জেএমবি নয়। এরা নব্য জেএমবি তথা নব্য জামাআতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ। সেখ আব্দুর রহমান এবং সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলা ভাই সহ জেএমবি-র ছ’জন শীর্ষ নেতা বাংলাদেশের র্যাবের হাতে ধরা পড়ে ২০০৫ সালে। দু’জন সহকারি বিচারক সহ কয়েকজন সরকারি আধিকারিককে খুনের অভিযোগে ২০০৭ সালে তাদের ফাঁসী হয়। তারপর সংগঠনটির ঝাঁপ বন্ধ হয়ে যায়। ফাঁসীতে নেতাদের মৃত্যু হলে তো আর মন্ত্রের (আদর্শের) মৃত্যু হয় না। তাই জেএমবি-র ছত্রভঙ্গ সদস্যরা পরে সংগঠনটির পুনর্জন্ম দেয় যেটা নব্য জেএমবি বলে পরিচিতি লাভ করে। বর্ধমানের খাগড়াগড়ের হোতা জেএমবি হলো সেই নব্য জেএমবি এবং ঢাকায় ধরা পড়া মহিলা জঙ্গি আয়েশা জন্নত মোহনা সেই নব্য জেএমবি-র একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। শীর্ষ নেতাদের হারিয়ে সাময়িকভাবে জেএমবি দুর্বল হয়ে গেলেও বাকি জঙ্গিরা সংগঠনটিকে পুনর্গঠন করে নব্য জেএমবি নামে আত্মপ্রকাশ করে ২০১৪ সালে। ২০১০ সাল থেকেই জেএমবি-এর অস্তিত্ব ও সক্রিয়তা চোখে পড়ে পশ্চিমবঙ্গে। নব্য জেএমবি যে পশ্চিমবঙ্গে ঘাঁটি তৈরি করে ফেলেছে সেটা টের পায় ২০১৪ সালেই খাগড়াগড়ের বিস্ফোরণ কাণ্ডে। পশ্চিমবঙ্গরেও অনেক সদস্য রয়েছে জেএমবিতে সেটাও জানা যায় ওই বিস্ফোরণ কাণ্ডে এন.আই.এ (National Investigation Agency)-এর তদন্ত রিপোর্ট থেকে। নব্য জেএমবিতে যে নারী জঙ্গিদের জন্যে আলাদা শাখা রয়েছে সে তথ্যও ছিলো এন.আই.এ)-এর রিপোর্টে। মুসলিম জঙ্গি সংগঠনে নারী সদস্য থাকাটা নতুন কোনো ব্যাপার নয়। ইসলামের নবীর আমল থেকেই এটা হয়ে আসছে। আইএস (Islamic State)-এর যখন রমরমা অবস্থা তখন দেখেছি বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে পুরুষদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নারীরাও দলে দলে ইরাকে গিয়ে আইএস-এর পতাকা স্বেচ্ছায় হাতে তুলে নিয়েছে। উচ্চশিক্ষিত মুসলিম নারী-পুরুষদের একাংশের মধ্যে এই প্রবণতাটি পরিলক্ষিত হচ্ছে। এটা এ জম্যেই ঘটে যেহেতু ইসলাম ধর্মে নারী ও পুরুষ নির্বিশেষে সকল মুসলমানের জন্যেই জিহাদ ফরজ (অবশ্যই পালনীয় কর্তব্য)। ইসলাম এও বলেছে যে জিহাদিরা বেহেস্তে (স্বর্গে) যাবে আর জিহাদে অংশ না নিয়েই যারা মারা যাবে তাদের দোজখের (নরকের) আগুনে অনন্তকাল পুড়তে হবে। তাই যুগে যুগে মুসলিম জঙ্গি সংগঠনে নারীদের উপস্থিতি দেখা যায়। স্বভাবতই মূল সংগঠনের অধীনে তাদের জন্যে পৃথক মহিলা শাখা থাকাটাও খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। নব্য জেএমবি কিন্তু আমাকে ভীষণভাবে বিষ্মিত করেছে অন্য দু’টি কারণে। তা হলো, প্রথমতঃ, ২০০৭ সালে শীর্ষ নেতাদের ফাঁসী হবার পর মাত্র সাত বছরের মধ্যেই বিধ্বস্ত ও ছন্নছাড়া সদস্যরা জেএমবিকে পুনর্গঠিত ও পুনরুজ্জীবিত করতে সক্ষম হয়েছে। এবং সক্ষম হয়েছে বিশ্বকে চমকে দেবার মতন বিরল একটি ঘটনা ঘটাতে। সেটা হলো, হিন্দু পরিবার থেকে একজন তরুণিকে সংগঠনের সদস্য করে তাকে সংগঠনের একজন আদর্শ ও যোগ্য নেত্রী হিসাবে গড়ে তুলতে। একজন বিধর্মী মেয়ের মস্তিষ্ক ধোলাই করে সংগঠনে নিয়ে আসা এবং তাকে পুরোদস্তুর জিহাদি আদর্শে গড়ে তুলে আপাদমস্তক জঙ্গি করে তোলার ঘটনা নিঃসন্দেহে বিশ্বকে চমকে দেওয়ার মতন ঘটনা। এটা আমাদেরকে যুগপৎ বিষ্ময়ে হতবাক ও উদ্বিগ্ন করে তোলার মতন ঘটনাও বটে। চাপ সৃষ্টি না করে কিংবা ভয় না দেখিয়ে কোনো কাফের কন্যাকে কট্টর ইসলামি আদর্শে দীক্ষিত করতে পারার ঘটনা ইসলামের ইতিহাসে বেনজির ঘটনা কিনা জানা নেই, তবে এটা নিশ্চয়ই ইতিহাসের বিরল ঘটনার একটা। সদস্য সংগ্রহ করার জন্যে দরিদ্র হিন্দুরাও এখন ওদের নিশানায় প্রজ্ঞা দেবনাথকে সাফল্যের সাথে একজন জঙ্গিনেত্রী হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে নব্য জেএমবি-র বিষ্ময়কর ও চমকপ্রদ সাফল্য আমাদের চিন্তা-ভাবনার জগতে একটা নতুন দিগন্ত খুলে দিলো। আমরা এতদিন পর্যন্ত দেখে এসেছি যে মুসলিম জঙ্গি সংগঠনগুলো মূলত জঙ্গি সদস্য সংগ্রহ করে খারিজি বা কওমি মাদ্রাসা থেকে এবং তাদের নিশানায় থাকে প্রধানত মুসলিম সম্প্রদায়ের দরিদ্র পরিবারগুলি। খারিজি/কওমি মাদ্রাসাগুলি সাধারণত আবাসিক হয় যেখানে পড়ুয়াদের কোনো খরচ লাগে না। সাধারণত দরিদ্র বাবা-মায়েরাই তাই তাদের সন্তানদের এইসব মাদ্রাসায় পাঠিয়ে থাকে। সেটা ততোটা ধর্মের মোহে নয় যতোটা অভাবের তাড়নায়, ছেলেটা অন্তত দু’বেলা দু’মুঠো খেতে তো পাবে। বাস্তবে তাই দেখা যায় যে, খারিজি মাদ্রাসাগুলিই মূলত জঙ্গি সংগঠনগুলিকে জঙ্গি সরবরাহ করে থাকে। এই ধরণের মাদ্রাসাগুলি শুধু জঙ্গি সরবারাহই করে না, মাদ্রাসাগুলিতে জঙ্গিদের জিহাদের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণও দেয়া হয়। খাগড়াগড় বিস্ফোরণ কাণ্ডে এন.এই.এ (NIA) – এর তদন্তে রিপোর্টে তার প্রমাণও পাওয়া গেছে। পশ্চিমবঙ্গের কোন কোন খারিজি মাদ্রাসায় নব্য জেএমবি ঘাঁটি তৈরি করে জিহাদের প্রশিক্ষণও দিতো সেটাও জানা যায় উক্ত রিপোর্ট থেকে। খারিজি মাদ্রাসায় যে জিহাদের পাঠ ও প্রশিক্ষণও দেয়া হয় সে কথা অবশ্য সম্পূর্ণ অস্বীকার করে গণতন্ত্রের আলখাল্লা (মুখোশ) পড়া মুসলিম ধর্মগুরু ও বুদ্ধিজীবীরা। জেএমবি ও প্রজ্ঞার কথায় আবার ফিরে আসি। প্রজ্ঞার মুসলিম জঙ্গি হবার ঘটনা আমাদের সামনে এতদিনের যে অজানা দিকটার উন্মোচন করলো তা হলো, জঙ্গি সংগঠনগুলোর নিশানা শুধু আর মুসলিম সমাজের দরিদ্র পরিবারগুলোতেই আটকে নেই, তারা বিধর্মীদের হতদরিদ্র পরিবারগুলিকেও নিশানা করেছে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে প্রজ্ঞা দেবনাথের জন্ম ও মানুষ হওয়া সে রকমই একটি অতি দরিদ্র পরিবারেই। প্রজ্ঞার বাবা দিনমজুরি করেন এবং মা বাড়িতে কাপড় সেলাই করে কোনো রকমে দিন গুজরান করেন। বাংলাদেশ পুলিশের কাছ থেকে আর একটা বিষ্ময়কর তথ্য পাওয়া গেছে। তা হলো, কলেজে পড়তে পড়তে নয়, প্রজ্ঞা জঙ্গি আদর্শে দীক্ষিত হয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে স্কুলে ৯ম শ্রেণিতে পড়ার সময় ২০০৯ সালে। আর সে বাড়ি ছেড়ে পাকাপাকিভাবে জঙ্গি শিবিরে চলে যায় ২০১৬ সালে। সেই সাত/আট বছর (২০০৯ থেকে ২০১৬) সে তার মুসলিম জঙ্গি পরিচয় গোপন রেখে সবার চোখে ধূলো দিয়ে হিন্দু হয়েই তার পরিবারের সঙ্গে থেকেছে এবং একজন হিন্দু মেয়ের মতনই সমস্ত রকম ধর্মাচারণ করেছে। জেএমবি-র সদস্য হওয়ার পর আর পাঁচজন নারী জঙ্গির মতন সেও একজন প্রবাসী বাংলাদেশি জঙ্গিকে বিয়ে করে। তার স্বামী ওমানে থাকে বিধায় তাদের বিয়ে হয় ফোনের মাধ্যমে। জেএমবির শিবিরে পাকাপাকিভাবে চলে যাবার পরও ফোনে সে তার পরিবারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতো। ফোনেই তার মাকে সে একদিন জানায় যে সে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছে এবং একজন মুসলিম যুবককে বিয়েও করেছে। এশিয়া মহাদেশে কোনো পরিবার ও সমাজই কারও ধর্মান্তরিত হবার ঘটনা মেনে নেয় না। এমন ঘটনা চরম অন্যায় ও লজ্জাজনক ঘটনা বলে মনে করা হয়। তাই তার পরিবার তাদের লজ্জার কথা কখনো ফাঁস করে নি। প্রজ্ঞা ওরফে আয়েশা জন্নত মোহনা ওরফে জান্নাতুত তাসমিন বাংলাদেশ পুলিশের হাতে ধরা না পড়লে প্রজ্ঞার জঙ্গি হবার বিরলতম ঘটনা এবং নব্য জেএমবি যে তাদের সংগঠনের জাল বিস্তার করার কাজ পুনরায় পূর্ণ উদ্যমে শুরু করেছে সে খবর অজানাই থেকে যেতো। ২০১৬ থেকে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হবার আগে পর্যন্ত প্রজ্ঞা ওরফে আয়েশা বাংলাদেশ ও ভারতে যাতায়াত করে জঙ্গি ও অর্থ সংগ্রহ করার কাজ করেছে। অনলাইনের মাধ্যমেও সে জঙ্গি সংগ্রহের কাজ করতো। অনলাইনের মাধ্যমেই সেও জেএমবির সংস্পর্শে এসে ইসলামে দীক্ষা নিয়েছে। প্রজ্ঞা ওরফে আয়েশা খারিজি মাদ্রাসাগুলিতে নব্য জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ দেবার কাজের দায়িত্বও পালন করতো। জেএমবি-র মহিলা শাখার প্রধান আসমানি খাতুন পুলিশের হাতে ধরা পড়ার পর থেকে মহিলা শাখার প্রধানের দায়িত্ব এই প্রজ্ঞাই যোগ্যতা ও দক্ষতার সাথে পালন করেছে। বাংলাদেশ পুলিশ আয়েশাকে (প্রজ্ঞাকে) ধরতে পারলো, পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ পারলো না কেন? উপরের প্রশ্নটি নিঃসংশয়ে বৈধ প্রশ্ন। এক কথায় এর জবাব হলো – বাংলাদেশ সরকার চেয়েছে তাই পেরেছে আর পশ্চিমবঙ্গ সরকার চায় নি তাই পারে নি। বাংলাদেশ সরকার যে আন্তরিকভাবেই মুসলিম জঙ্গি কার্যকলাপ বন্ধ করতে চায় তার অজস্র দৃষ্টান্ত চোখের সামনে রয়েছে। অবশ্য যে দেশে যুক্তিবাদীদের নিরাপত্তা নেই এবং তাদের বেছে বেছে অবাধে হত্যা করা হয় সেই দেশই আবার মুসলিম জঙ্গিদের ঘাঁটিগুলি একটা করে গুঁড়িয়ে দিয়েছে, এটা অবাক করার মতনই ঘটনা। এটা কীভাবে সম্ভব তা আলোচনা করার অবকাশ এখানে নেই। এখানে শুধু একটু সংকেত বা ইঙ্গিত দেওয়া যেতে পারে। মুসলিম মৌলবাদীরা প্রধানত দু’ভাগে বিভক্ত যদিও বাস্তবে তারা বহু শাখা-উপশাখায় বিভক্ত। প্রধান দু’টি ভাগের এক ভাগ জিহাদ ও ইসলামি রাষ্ট্র স্থাপনে বিশ্বাস করে, আর এক দল অজঙ্গি যারা কেবল মুসলিম সমাজের শরিয়তিকরণ চায়। বাংলাদেশের প্রধানমন্রী শেখ হাসিনা দ্বিতীয় ভাগকে তাঁর পক্ষে টানতে সক্ষম হয়েছেন। ফলে জঙ্গি মৌলবাদীরা ক্রমশ শক্তিহীন হয়ে পড়েছে। জঙ্গি দমনের ক্ষেত্রে এই সুযোগকে কাজে লাগিয়েছেন হাসিনা এবং জঙ্গিদের দমন সহ তাদের ঘাঁটিগুলি ধ্বংস করার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সাফল্য পেয়েছেন। কিন্তু অজিঙ্গি মুসলিম মৌলবাদীদের কাছে টানার যেমন ইতিবাচক একটা দিক (জঙ্গি দমনে সাফল্য) রয়েছে তেমনি তার একটি নেতিবাচক দিকও রয়েছে। তা হলো, অজঙ্গি মৌলবাদীদের সঙ্গে আপোষ করতে হয়েছে এবং তার জন্যে তাঁকে অনেক মূল্য দিতে হয়েছে। এতে তাঁর হয়তো আশু ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক ক্ষতি হয় নি, কিন্তু বাংলাদেশের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কারণ, হাসিনাকে মুসলিম মৌলবাদীদের কাছে গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ আদর্শকে বন্ধক দিতে হয়েছে। এ প্রসঙ্গ এখানেই থাক, কারণ এটা এই পরিসরে লেখার বিষয় নয়। ফিরে আসি আমাদের ও রাজ্যের প্রশ্নে। আমাদের দেশ ও রাজ্যে জঙ্গি মৌলবাদী ও অজঙ্গি মৌলবাদীদের পারষ্পরিক চমৎকার বোঝাপাড়া রয়েছে। ভয়ংকর কোনো জঙ্গি কার্যকলাপ যখন সামনে চলে আসে এবং প্রশাসন ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় হোক তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করে তখন জঙ্গিদের ত্রাতার ভূমিকায় আসরে অবতীর্ণ হয় অজঙ্গি মৌলবাদীরা। মুসলিমদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের ধুয়া তুলে সরকার ও শাসকদলকে ভোটে হারিয়ে দেবার ভয় দেখায়। সরকার তখন সুর সুর করে লেজ গুটিয়ে ঘরে ঢুকে যায় এবং পুলিশ-প্রশাসনের ভূমিকাও আস্তে আস্তে বন্ধ হয়ে যায়। যদিও মুসলিম মৌলবাদীদের কথায় মুসলিমরা দল বেঁধে ভোট দেয় না, তবুও পাছে মুসলিমরা ক্ষুব্ধ হয় এই ভয়ে সরকার মুসলিম জঙ্গি কার্যকলাপগুলি দেখেও না দেখার ভান করে থাকে। বাম সরকারও এ রকম অন্যায় আপোষও অনেক ক্ষেত্রে করেছে।আর মমতা ব্যানার্জীর সরকারের তো এটাই নীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর প্রতিদানও ষোলো আনায় বিশ আনা পায় তৃণমূল কংগ্রেস। প্রত্যেকটা ভোটে মুসলিম মৌলবাদীরা ঝাঁপিয়ে ভোট করে তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষে। এমনকি বাংলাদেশের মৌলবাদীরাও নির্বাচনের সময় শাসক দলের হয়ে কাজ করে – এ তথ্য দিয়েছিলো সিবিআই সারদা কেলেঙ্কারির তদন্ত করার সময়। খাগড়াগড় বিস্ফোরণ কাণ্ডে এই সরকার জেএমবি জঙ্গিদের এবং তাদের চিহ্নিত প্রধান আশ্রয়স্থল খারিজি মাদ্রাসাগুলিকে আড়াল করতে কীভাবে নগ্ন প্রয়াস করেছিলো সেটাতো আমাদের সবার জানা। রাজ্য সরকারের এই আত্মঘাতী বিপজ্জনক আপোষকামী নীতির জন্যেই হিন্দু পরিবারের প্রজ্ঞা দেবনাথরা কার্যত বিনা বাধায় মুসলিম জঙ্গি হয়ে উঠতে পারে এবং জঙ্গি আয়েশারাও অবাধে তাদের জঙ্গি কার্যকলাপ চালিয়ে যেতে পারে। জঙ্গি আয়েশারা বাংলাদেশে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে আর এ রাজ্যে ধরা পড়ে না। জঙ্গি উৎপাদনকারী খারিজি মাদ্রাসাগুলি নিষিদ্ধ করতেই হবে বদর যুদ্ধ (মুসলমান ও মক্কার কোরেশদের মধ্যে যুদ্ধ) ছিল প্রকৃত পক্ষে একটি অসম যুদ্ধ। কারণ প্রথম পক্ষে ছিলো মাত্র ৩১৩ জন সৈন্য, আর অপর পক্ষে ছিলো একহাজার। তবুও আশ্চর্যজনকভাবে প্রথম পক্ষই জিতে গিয়েছিলো। মুসলিমরা বিশ্বাস করে যে এটা সম্ভব হয়েছিলো কারণ আল্লাহ মুসলিমদের পক্ষে হাজার হাজার ফেরেশতা পাঠিয়েছিলো যুদ্ধ করার জন্যে। সে রকম জেএমবিও বিশ্বাস করে যে একদিন তারাও বাংলাদেশে ইসলামি রাষ্ট্র স্থাপন করতে পারবে এবং পারবে পশ্চিমবঙ্গকে নিয়ে বৃহৎ বাঙ্গালিস্তান গড়ে তুলতে পারবে। বিশ্বাস করে কারণ তারা মনে করে আল্লাহ তাদের সঙ্গে আছে। কোনোদিনই ওদের এই অবাস্তব স্বপ্ন পূরণ হবে না ঠিকই, কিন্তু মানুষের জীবনহানি ও ধন-সম্পদ ধ্বংস করার এবং মানবজাতির মধ্যে বিভেদের বিষ ঢুকিয়ে দেবার মতন যথেষ্ট ক্ষমতা ওদের আছে তাতো অনস্বীকার্য। তাই তাদের দিক থেকে কোনো দায়িত্বশীল সরকারই চোখ ঘুরিয়ে রাখতে পারে না। প্রত্যেকটি সরকারেরই প্রধান কর্তব্য হলো দেশ ও নাগরিকদের নিরাপত্তা প্রদান করাকে দলীয় সংকীর্ণ স্বার্থের উপরে স্থাপন করা। সমগ্র মানবজাতি ও মানবসভ্যতার স্বার্থে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সমস্ত সরকারের প্রধান দায়িত্ব হলো জঙ্গি সংগঠন ও জঙ্গি কার্যকলাপ নির্মূল করা একান্ত আবশ্যক। আর তা করতে হলে সেই সরকারকে যেমন জঙ্গিদের বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতার মনোভাব নিয়ে কঠোর প্রশাসনিক পদক্ষেপ করতে হবে, তেমনি তারই পাশাপাশি একই সঙ্গে জঙ্গি সংগঠনগুলির সাপ্লাই লাইনটাকে সম্পূর্ণ বন্ধ করতে হবে অর্থাৎ জঙ্গি উৎপাদনকারী খারিজি মাদ্রাসাগুলিকেও চিরতরে নিষিদ্ধ করতে হবে। তা না হলে কোনোদিনই জঙ্গি কার্যকলাপ বন্ধ করা যাবে না। সমাপ্ত (২১.০৭.২০)

বাংলাদেশের গণঅভ্যুত্থানে ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাইনি – পাঁচ

  দ্বিতীয় অধ্যায় শেখ হাসিনা ও শেখ মুজিবের প্রতি তীব্র গণরোষের নেপথ্যে ২০২৪ এর জুলাই অভ্যুত্থানের সফল পরিসমাপ্তি ঘটে ৩৬ দিন পর (৫ই ...