Sunday, January 14, 2018

জেরুজালেমের ওপর ফিলিস্তিনি আরবদের দাবি অতিশয় দুর্বল



৬ই ডিসেম্বর জেরুজালেম নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের আচমকা দু’টি ঘোষণা ইসরায়েল-আরব সংঘাত যা আপাত শান্ত ছিলো তাকে উস্কে দিয়েছে। ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন, জেরুজালেম হলো ইসরাইলের রাজধানী এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস জেরুজালেমেই স্থানান্তরিত করা হবে। প্যালেস্টাইন বা ফিলিস্তিনের একটি সব চাইতে গুরুত্বপূর্ণ শহর হলো জেরুজালেম। জেরুজালেম আবার বাইতুল মুকাদ্দাস নামেও খ্যাত। এই শহরটি ১৯৬৭ সাল থেকে ইসরাইলের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ইহুদিরা বিশ্বাসের গভীরে প্রোথিত রয়েছে যে এই জেরুজালেমেই তাদের ঈশ্বর ‘ইয়াওয়ে’ (হিব্রু ভাষায় ঈশ্বরকে ইয়াওয়ে বলে) বাস করে। ফিলিস্তিনি আরবরা কিন্তু জেরুজালেমের উপর তাদের অধিকার ছাড়তে নারাজ। তাদের পেছনে রয়েছে এবং আরবের অধিকাংশ দেশ এবং বিশ্বের মুসলিম উম্মাহ। এ শহরটি যে বিশ্বের মুসলিমদের কাছে অতি পবিত্র এক তীর্থভূমি যার স্থান মক্কা ও মদিনার ঠিক পরেই। এই জেরুজালেমই ছিলো তাদের প্রথম কিবলা যে দিকে মুখ করে তারা নামায পড়তো। তাই জেরুজালেমের উপর থেকে দাবি ছাড়তে তারা নারাজ। স্বভাবতই ট্রাম্পের ঘোষণায় তৎক্ষণাৎ পরষ্পরবিরোধী তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। ইসরাইল প্রবল সোল্লাসে স্বাগত জানায়, আর আরবরা  প্রবল ক্ষোভে তীব্র নিন্দা ও ধিক্কার জানায়। বিশ্বব্যাপী মুসলিম উম্মাহও ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ক্রোধে ও ক্ষোভে ফেটে পড়ে।
এ বছরটি আর পাঁচটা বছরের মতো একটা সাধারণ বছর নয়, এটা একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বছর। বছরটি বিশ্বজুড়ে উদযাপন করছে একদিকে কম্যুনিস্ট ও বামপন্থীরা আর একদিকে ইহুদিরা। এ বছর নভেম্বর মাসে রুশ বিপ্লবের শত বছর পূর্ণ হয়েছে আবার ‘বেলফোর ঘোষণা’রও শত বছর পূর্ণ  হয়েছে  এ বছর নভেম্বর মাসেই ১৯১৭ সালের ২রা নভেম্বর বৃটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেমস আর্থার ইহুদি নেতা ব্যারন রথচাইল্ডের কাছে চিঠি লিখে জানান যে বৃটিশ সরকার ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইহুদি রাষ্ট্র গঠনে তাঁদের পূর্ণ সহায়তা দেবে। এটা ইতিহাসে ‘বেলফোর ঘোষণা’ নামে খ্যাত। এ বছরটি আবার ইহুদিদের কাছে আর একটি কারণে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বছর। কারণ, এ বছরটি জাতিসংঘে ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে ইসরাইল রাষ্ট্র স্থাপনের প্রস্তাব পাশ হওয়ার ৭০ বছর পূর্ণ হলো। ১৯৪৭ সালের ২৯শে নভেম্বর জাতিসংঘ ফিলিস্তিনি ভূখন্ডকে দ্বিখন্ডিত করে ইসরাইল ও ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের প্রস্তাব গ্রহণ করে। এই ঐতিহাসিক প্রস্তাবটি রাষ্ট্রসঙ্ঘের ১৮১ নং প্রস্তাব (United Nations Resolution 181, resolution passed by the United Nations (UN) General Assembly in 1947 that called for the partition of Palestine into Arab and Jewish states, with the city of Jerusalem as a corpus separatum (Latin: “separate entity”) to be governed by a special international regime. The resolution—which was considered by the Jewish community in Palestine to be a legal basis for the establishment of Israel, and which was rejected by the Arab community—was succeeded almost immediately by violence.) নামে খ্যাত। 


জেরুজালেম ইহুদি, খৃস্টান ও মুসলমানদের তীর্থভূমি। জেরুজালেম ছিলো একদা ইহুদিদের বাসভূমি খৃস্টের জন্মের এক হাজার বছর আগে ইহুদি রাজা ডেভিড ও তাঁর পুত্র সালমান এখানেই স্থাপন করেছিলেন জিহোভার মন্দির জিহোভা হলো ইহুদিদের ঈশ্বর যেমন আল্লাহ্‌ মুসলমানদের। একেশ্বরবাদী ইহুদিরা মোজেসকে ঈশ্বরের সর্বশেষ দূত বলে বিশ্বাস করে যে বিশ্বাসে যীশু নিজেকে ঈশ্বরের দূত ও পুত্র বলে দাবি করেতার পরিণতি কী চরম ভয়াবহ হয়েছিলো তা সর্বজন বিদিত। মোজেস ঈশ্বরের সর্বশেষ দূত – এ বিশ্বাস ও দাবিকে অগ্রাহ্য ও চ্যালেঞ্জ করার চরম মাশুল দিতে হয়েছিলো যীশুকে।  ত্রিশ খৃস্টাব্দের মাঝামাঝি  রাজা হেরড তাঁকে ক্রুশবিদ্ধ করে চরম যন্ত্রণা দিয়ে হত্যা করেছিলেন। তার আগে হত্যা করেছিলেন তাঁর ভাই জনকে কারাগারে বন্দি করে। খৃস্টানরা এর চরম প্রতিশোধ নিতে দ্বিধা করেনিযীশুকে হত্যা করার মাত্র চার দশক পর সত্তর খৃস্টাব্দে রোমান  রাজপুত্র টাইটাস ক্ষুধার্ত হিংস্র শ্বাপদের মতো ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন জেরুজালেমের ওপর। ইহুদিদের চরম বিশ্বাস ও অহংকারের প্রতীক জিহোভার মন্দিরটি ধূলায় মিশিয়ে দিয়েছিলেন রাষ্ট্রশক্তির দম্ভেশুধু মন্দির ধ্বংস করেই তাঁর প্রতিহিংসার আগুন নেভে নি। পাশবিক হিংস্রতায় ঝাঁপিয়েছিলেন নিরীহ ইহুদিদের উপর এবং তাদের হত্যা করেছিলেন  লাখে লাখে। বাকি ইহুদিরা প্রাণ বাঁচাতে দেশ ত্যাগ করে উদ্বাস্তু হয়ে ছড়িয়ে পড়েছিলেন পৃথিবীর পথে পথে।  তারপর থেকে ১৯৪৮ সালে ইসরাইলি রাষ্ট্র তৈরী হওয়ার আগে পর্যন্ত  প্রায় দু’হাজার ধরে তারা উদ্বাস্তু হয়ে পৃথিবীর দেশে দেশে যাযাবরের মতো ছুটে বেড়িয়েছে। রাজা ডেভিডের তৈরী মন্দিরটি অবশ্য প্রথম ভেঙে দিয়েছিলেন ব্যবিলিন সম্রাট নেবুচাদনেজার  খৃস্টের জন্মের ৬০০ বছর পূর্বে। কিন্তু পারসিক সম্রাট সাইরাস দ্য গ্রেট সেই শতকেই জেরুজালেম জয়ের পর মন্দিরটির পুনর্নিমাণ করেন। রোমান রাজপুত্র টাইটাস ধ্বংস করেছিলেন পুনর্নির্মিত সেই ২য় মন্দিরটিকেই কিন্তু ইতিহাসের কী নিষ্ঠুর পরিহাস, টাইটাসের উত্তরসূরী রোমান সম্রাটরা টাইটাসের ঐ ধ্বংসলীলায় ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন, ভেবেছিলেন জিহোভার মন্দির ভাঙার জন্যে ঈশ্বরের অভিশাপে তাঁদের অকল্যাণ হবে। তাই তাঁরা পুনরায় ঐ একই স্থানে ঐ মন্দিরের পুনর্নিমাণ করে  টাইটাসের পাপের প্রায়শ্চিত্ত করেন।    
জেরুজালেমের উপর আক্রমণ এসেছিল মুসলমান খলিফাদের দিক থেকেও। ৬৩৭ খৃস্টাব্দে ২য় খলিফা ওমর ফারুকের সেনাবাহিনী খৃস্টান সম্রাট সাফ্রোনিয়াসকে পরাস্ত করে জেরুজালেমের দখল নিয়েছিলো। তারপর খলিফা ওমরের নির্দেশে ইহুদি ও খৃস্টানদের পবিত্র তীর্থভূমি জেরুজালেমের মাটিতেই তৈরী করা হয় মুসলমানদের একটি উপাসনালয় যেটা আল-আকসা মসজিদ নামে খ্যাত। ইহুদি ও খৃস্টানদের পবিত্র তীর্থভূমিতে মুসলমানদের শাসন ও আধিপত্য বজায় ছিলো ১০৯৯ সাল পর্যন্ত। সেই বছর ১ম ক্রুসেডের সময় খৃস্টানরা জেরুজালেমকে মুসলমানদের হাত থেকে মুক্ত করে। নিজেদের পবিত্র তীর্থভূমির দখল নেওয়ার পর তারা শুরু করে প্রতিহিংসার রাজনীতি। আল-আকসা মসজিদটিকে  সালমানের মন্দির নাম দেয় এবং মসজিদের জায়গায় এক স্থানে একটি গীর্জা স্থাপন করে। খৃস্টানরা কিন্তু খুব বেশী দিন জেরুজালেমের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারে নি। ১১৮৭ খৃস্টাব্দেই সুলতান সালাহউদ্দিন আয়ুবী জেরুজালেম পুনরায় দখল করে নিয়ে ক্রুসেডের বদলা নেয়। সর্বশেষ প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়েও জেরুজালেম ছিলো উসমানিয়া খেলাফতের অধীনে তথা মুসলমানদের দখলে।    




 
বাইতুল মুকাদ্দাস
শুধু প্রাচীন ও মধ্য যুগের আদিম বর্বতার শিকার নয় ইহুদিরা। আধুনিক যুগেও পৈশাচিক হিংস্রতার শিকার হয়েছে তারা। হিটলার নানা অপবাদ দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন ইহুদিদের ওপরতিনি যেন পণ করেছিলেন যে পৃথিবীর বুকে ইহুদিদের নাম ও নিশানা রাখবেন না। তাঁর নাৎসীবাহিনী ৬০ লক্ষ ইহুদিকে কচু কাটা করে কেটেছিলো। টাইটাসের পরে ও হিটলারের আগে মুসলমানদের রোষানলে পড়তে হয়েছিলো আরবে বসবাসকারী সকল ইহুদিদেরতাদের অপরাধ ছিলো তারা মোজেস  (মুসা) ঈশ্বরের শেষ নবী/দূত এই বিশ্বাস থেকে টলে নি এবং মুহাম্মদকে ঈশ্বরের দূত বলে মান্যতা দেয় নি। ইসলামকে অস্বীকার করার ঔদ্ধত্য (?) মুসলমানদের সহ্য হয় নি।  লাগামহীন নৃশংস অত্যাচার ও নিপীড়ন চালিয়ে ইহুদিদের আরব ছাড়া করেছিলো। সে সময় হাজার হাজার ইহুদিকে নির্মমভাবে হত্যাও করেছিলো আরবের মুসলমানরা।      
বস্তুতঃ জেরুজালেম ও ইহুদিদের ইতিহাস খুবই করুণ। জেরুজালেমের মাটি শুধু খৃস্টান, পারসিক ও মুসলমানদের হাতেই লাঞ্ছিত, নিগৃহীত ও পদদলিতই হয় নি। আরো অনেক জাতি ও গোষ্ঠীই  জেরুজালেমের উপর অত্যাচারের স্টীম রোলার চালিয়েছে। জেরুজালেমের ভূমিপুত্র ইহুদিরাও বোধ হয় যত লাঞ্ছিত, উৎপীড়িত ও নির্যাতিত হয়েছে পৃথিবীর আর কোনো ধর্ম সম্প্রদায়ের মানুষ তত হয় নি অথচ তাদের জন্যে আমাদের (ভারতীয়দের) কোনো সমবেদনা নেই। নেই একটু সহানুভূতিও। উল্টে তারা তাদের পূর্ব পুরুষদের মাটিতে নিজেদের একটি রাষ্ট্র তৈরী করেছে, এবং সেটা রক্ষা করতে চাইছে বলে তাদের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযোগের অন্ত নেই।
জাতিসংঘ ট্রাম্পের ঘোষণা ধ্বনি ভোটে প্রত্যাখান করেছে। আন্তর্জাতিক সাম্প্রদায়িক মঞ্চ ইসলামি সহযোগী সংস্থা ওআইসি (Organization of Islamic Co-operation) তার শীর্ষ সম্মেলনে জাতিসংঘের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে জেরুজালেমকে ইসরাইলের হাত থেকে উদ্ধার করার জন্যে আরব দেশগুলিকে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই করার আহ্বান জানিয়েছে। ওআইসিভুক্ত দেশগুলি যদি ১৯৪৭ সালে জাতিসংঘ ফিলিস্তিন প্রশ্নে যে প্রস্তাবটি গ্রহণ করেছিলো সেটাকে স্বাগত ও সমর্থন জানাতো তবে  তখনই ফিলিস্তিন ও জেরুজালেম নিয়ে সব বিতর্ক এবং ইসরাইল ও আরবের মধ্যেকার দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের অবসান হয়ে যেতো। তাতে ইহুদিরা যেমন তাদের নিজেদের হারানো স্বদেশের খানিকটা ফিরে পেতো তেমনি  ফিলিস্তিনি আরবদেরও তাদের প্রিয় জন্মভূমি থেকে উচ্ছেদ হয়ে উদ্বাস্তু হতে হতো না।
১ম বিশ্বযুদ্ধের (১৯১৪ - ১৯১৮) ফিলিস্তিন ছিলো উসমানিয়া সাম্রাজ্যের অধীনে। সেই যুদ্ধে উসমানিয়া সাম্রাজ্যের পরাজয় ও পতন হয় এবং ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে চলে যায় বৃটিশদের হাতে। ১৯১৭ থেকে ১৯৪৮ পর্যন্ত  সময়কালে বৃটিশ সরকারের সহায়তা ও মদতে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে উদ্বাস্তু ইহুদিরা ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ঢুকে বসতি স্থাপন করতে শুরু করে। ক্রমে ক্রমে বাড়িতে থাকে ফিলিস্তিনি ভূমে ইহুদি জনসংখ্যা এবং একই সঙ্গে ইহুদি ও আরব সংঘাতও। ২য় বিশ্বযুদ্ধে বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদের পরাজয় ঘটলে মধ্যপ্রাচ্য থেকে হাত গুটিয়ে নেওয়ার জন্যে বৃটিশদের উপর চাপ ক্রমাগত বাড়তে থাকে। ফলে ১৯৪৭ সালে এপ্রিল মাসে বৃটিশ সরকার ফিলিস্তিন ইস্যুটি মীমাংসার জন্যে জাতিসংঘের কাছে  প্রেরণ করে। জাতিসংঘ তখন ১১টি দেশ নিয়ে তৈরী করে একটি বিশেষ তদন্ত কমিটি UNSCOP (UN Special Committee on Palestine) কমিটি দুটি প্রস্তাব দেয়। সংখ্যাগরিষ্ঠের প্রস্তাব ছিলো ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে দুটি পৃথক রাষ্ট্র গঠন করা এবং সংখ্যালঘিষ্ঠের মত ছিলো ফিলিস্তিনে একটি রাষ্ট্রের অধীনে ইহুদি ও আরবদের জন্যে পৃথক  স্বাশাসিত অঞ্চল গঠন করা। কমিটি জেরুজালেম সম্পর্কে খুবই সাবধানী প্রস্তাব দিয়েছিল, বলেছিলো, জেরুজালেম থাকবে আন্তর্জাতিক সংস্থার নিয়ন্ত্রণে।  ইহুদিরা ১ম প্রস্তাবটিকে স্বাগত জানায়, কিন্তু আরবরা পুরো প্রস্তাবটাই প্রত্যাখান করে। ১৯৪৭ সালের ২৯শে নভেম্বর জাতিসংঘে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের প্রস্তাবটি গৃহীত হয়। জাতিসংঘ  ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের ৫৭% অংশ ইসরাইল রাষ্ট্রকে এবং ৪৩% অংশ  ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের  জন্যে সুপারিশ করে।

ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে দুটি পৃথক রাষ্ট্র স্থাপন করার প্রস্তাব জাতিসংঘে গৃহীত হবার কিছুদিন পর (১৯৪৮ সালের ১২ই মে) ইহুদিরা স্বাধীন ইসরাইল রাষ্ট্রের ঘোষণা দেয়। সঙ্গে সঙ্গে আমেরিকা ইসরাইল রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেয় এবং তার পর স্বীকৃতি দেয় সোভিয়েত ইউনিয়ন। অন্ধভাবে কোরানের আজ্ঞা পালনকারী পাঁচটি আরব দেশ মিশর, ইরাক, সিরিয়া, লেবানন ও জর্ডান সম্মিলিত সেনাবাহিনী গঠন করে ১৯৪৮ সালের ৩০শে নভেম্বর ইসরাইলের বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে ইহুদিদের নিশ্চিহ্ন করে দেবার বাসনা ও সংকল্প নিয়ে। কিন্তু সেই যুদ্ধে ইসরাইলই বিজয়ী হয় এবং রাষ্ট্রসংঘ  ইহুদি রাষ্ট্র স্থাপনের জন্যে যতোটা জায়গা দিয়েছিলো তার চেয়ে বেশী এলাকা দখল করে নেয় ইহুদি সেনারা। এই যুদ্ধ থেকে আরবরা শিক্ষা নেয় নি। বারবার তারা ইসরাইলের উপর যুদ্ধ চাপিয়ে দেয়, ফলে ১৯৬৭, ১৯৭৩ ও ১৯৮২ সালে আরব ও ইসরাইলের মধ্যে তুমুল যুদ্ধ হয়। কিন্তু আক্রমণকারী আরবরা প্রত্যেকটা যুদ্ধেই পরাজিত হয় এবং অপরদিকে ইসরাইল তার সীমানা বাড়িয়ে নেয়। ১৯৬৭ সালের যুদ্ধে  যুদ্ধে  সিনাই মরুভূমির পাশাপাশি সিরিয়ার গোলান মালভূমি, জর্দান নদীর পশ্চিম তীর, গাজা উপতক্যা এবং জেরুজালেমের পূর্ব অংশ-সহ অবশিষ্ট সকল ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড ইসরাইল দখল করে নেয়। এই যুদ্ধে  ফিলিস্তিনি স্বাধীন রাষ্ট্র স্থাপনের সুযোগ ও সম্ভাবনা ছিলো সেটা একেবারেই বিলীন হয়ে যায়। ১৯৭৩ সালের যুদ্ধে শোচনীয়ভাবে পরাস্ত হয়ে মিশর ও জর্দান ইসরাইলের সঙ্গে শান্তিচুক্তি করে এবং ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংঘাত থেকে নিজেদের সরিয়ে নেয়। ১৯৭৮ সালের ১৭ই সেপ্টেম্বর ইসরাইল ও মিশরের মধ্যে শান্তি চুক্তি (ক্যাম্প-ডিভিড চুক্তি) হয় এবং মিশর ইসরাইলকে ইহুদি রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেয়। সৌদি আরব ২০১৬ সালে মিশর-ইসরাইল শান্তিচুক্তি মেনে নেয় তখন থেকেই সৌদি আরব ও ইসরাইলের মধ্যেকার বৈরীমূলক সম্পর্কের  অবসান হয় এখন তো সৌদি আরব ও ইসরাইল দু’ দেশই পারষ্পরিক সম্পর্কের উন্নতি ঘটাবার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। সৌদি আরব তার সেনাবাহিনীর একদল অফিসারকে পাঠিয়েছে সামরিক প্রশিক্ষণ নেওয়া এবং সৌদি আরব ও ইসরাইলের মধ্যে সামরিক সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্যে সৌদি আরব ইসরাইলের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্কের উন্নতিকরণের লক্ষ্যে একদল ব্যবসায়ী ও শিক্ষাবিদকেও ইসরাইল পাঠিয়েছিলো। সৌদি আরব ইতিমধ্যেই আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে পাঠ্যক্রমে ব্যাপক পরিবর্তন সাধন করেছে এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলি থেকে ইসলামিস্টদের সরিয়ে দিয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে
প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য ওআইসি যে শীর্ষ সম্মেলনের মঞ্চে ইসরাইলকে ফের হুঙ্কার দিয়েছে সেই সম্মেলনে  অংশ গ্রহণ করেন নি সৌদি রাজা সালমান ও সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মহম্মদ বিন সালমান। অংশ নেয় নি মিশর, আরব আমিরাত ও বাহরিনের রাষ্ট্রপ্রধানরাও। ওআইসির শীর্ষ সম্মেলনের অনুপস্থিত থেকে এই দেশগুলির রাষ্ট্রপ্রধানরা বুঝিয়ে দিয়েছেন যে, তাঁরা ইসরাইলের সঙ্গে আরবদের আর সংঘাত ও যুদ্ধ চাই না, তার পরিবর্তে আলচনার মাধ্যমে সমস্ত রকম বৈরীতা ও সংঘাতের অবসান চান। ইসরাইলও আরবদের সঙ্গে সংঘাতের স্থলে শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করতে আগ্রহী। সেই উদ্দেশ্যে ইসরাইলের পক্ষ থেকে সৌদি আরবের রাজপুত্রকে মধ্যস্থতা করার আহ্বান জানানো হয়েছে এবং ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু একই উদ্দেশ্যে সৌদি আরবে যাবেন স্থির করেছেন বলে শোনা যাচ্ছে। সৌদি আরবও মধ্যস্থতা করতে আগ্রহী। সৌদি ক্রাউন প্রিন্স  ইতিমধ্যেই পিএলও-র রাষ্ট্রপ্রধান মাহমুদ আব্বাসকে জেরুজালেমের দাবি থেকে সরে এসে ‘আবু দিস’ নামক একটি শহরে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের রাজধানী স্থাপন করার প্রস্তাব দিয়েছে বলে খবর এবং সেখানে রাজধানী গড়ে তোলার জন্যে অর্থ সিয়ে সাহায্য আশ্বাসও দিয়েছেন।
মিশর, আরব আমিরাত, বাহরিন, সৌদি আরব ইত্যাদি আরব দেশগুলির মতো বাকি দেশগুলিরও  উচিৎ ধর্মান্ধতা পরিত্যাগ করে ইতিহাস ও বাস্তবকে স্বীকার করে নেওয়। তারা যদি ইসরাইলের বিরুদ্ধে যুদ্ধংদেহী মনোভাব পরিত্যাগ করে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে ফিলিস্তিন ও জেরুজালেম সমস্যার সমাধানের পথ সন্ধান করতে সম্মত হয় তবে ইসরাইল ও ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের মধ্যেকার চির বৈরী সম্পর্কের অবসান অধরা থাকবে না। আর তার ফলে লাভবান হবে দু’পক্ষই, তবে ফিলিস্তিনিরাই  লাভবান হবে সবচেয়ে বেশী

Saturday, December 30, 2017

আরব বসন্তকে কুক্ষিগত করার মৌলবাদিদের অপচেষ্টা ব্যর্থ করে দিল মিশরের জনগণ


আরব বসন্ত তথা আরব বিপ্লবের স্রষ্টা মিশর আবার বিশ্ব সংবাদের শিরোনামে। মিশর চির বিখ্যাত পিরামিড ও মমির জন্যে। মিশরকে বিখ্যাত করে গেছেন দুই প্রবাদ প্রতিম পুরুষ গামাল আবদেল নাসের এবং আনোয়ার আল-সাদাতও। তুরস্কের পর তাঁরাই প্রথম মুসলিম বিশ্বের ইতিহাসে  মিশরকে শরিয়তি শাসন ও সংস্কৃতির কানাগলি থেকে মুক্ত করে আধুনিক ও উন্নত মিশর নির্মাণের লক্ষ্যে সামাজিক বিপ্লব ঘটিয়েছিলেনআফ্রিকা ও মধ্য প্রাচ্যে অবস্থিত এবং মধ্য প্রাচ্যের সর্বাধিক জনবহুল ৮.৩ কোটি মানুষের দেশ মিশরের বিপ্লবী জনগণ সম্প্রতি আবার যুগান্তকারী দু দুটো ইতিহাস সৃষ্টি করলেন মাত্র আড়াই বছরের ব্যবধানে।
গণতান্ত্রিক অধিকার,  বাক-স্বাধীনতা ও মতামত প্রকাশের স্বাধীনতার  দাবীতে মিশরের লক্ষ লক্ষ মানুষ রাজধানী কায়রোর তাহরির স্কয়ারে গণবিক্ষোভে সামিল হয়েছিলেন মুবারক হোসেনের বিরুদ্ধেসেটা অচিরেই গণ-অভ্যুত্থানের চেহারা নিয়েছিল। মুবারক হোসেন প্রথমে পুলিশ দিয়ে তা দমন করার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু তা ব্যর্থ হয়েছিল। তখন সেনা বাহিনীকে বিক্ষোভ দমনে তলব করেছিলেনসেনা বাহিনী সম্মত হয় নিফলে মুবারককে পদত্যাগ করে ক্ষমতা থেকে সরে যেতে হয়েছিলতারিখটা ছিল সেদিন ২০১১ সালের ২৫ শে জানুয়ারীঅবসান হয়েছিল মুবারকের তিন দশকের স্বৈরতান্ত্রিক শাসনের। সেই সফল গণ-অভ্যুত্থানকে কেউ বলেছে আরব বসন্ত, কেউ বলেছে আরব বিপ্লব। সারা বিশ্ব হৈ হৈ করে  স্বাগত জানিয়েছিল সেই বিপ্লবকে
কিন্তু অনাকাঙ্খিত দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছিল ঠিক তার পরের অধ্যায়েই। সেই বিপ্লবের দেড় বছর পর মিশরের জনগণ ভোট দেওয়ার সুযোগ পেলেন তাদের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্যে। সেই প্রথম তারা নিজের পছন্দ অনুসারে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট দিতে পারলেন। যুগ যুগ ব্যাপী স্বৈরতন্ত্রের দমবন্ধ পরিবেশ থেকে বেরিয়ে গণতন্ত্রের উন্মুক্ত পরিবেশে সেদিন তারা বুক ভরে নিঃশ্বাস নিলেন। কিন্তু মিশরের মানুষের দুর্ভাগ্য যে সেই নির্বাচনে পরাস্ত হলো ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক শক্তিগুলি, বিজয়ী হলো মুসলিম মৌলবাদী সংগঠন মুসলিম ব্রাদারহুডের রাজনৈতিক দল ফ্রিডাম ও জাস্টিস পার্টির প্রার্থী মহম্মদ মুরসি। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর মুরসি যথারীতি দেশটাকে পিছন দিকে নিয়ে যেতে শুরু করলেন। ফলে মিশরের মানুষ তার প্রতিবাদে আবার রাস্তায় নামলেন। কিন্তু মুরসি গ্রাহ্য করলেন না মানুষের প্রতিবাদবিক্ষুব্ধ জনগণ অগত্যা মুরসির পদত্যাগের দাবীতে আর একবার সেই ঐতিহাসিক তাহরির স্কয়ারে বিক্ষোভ ও অবস্থান শুরু করলেনতার সাথে সাথে শুরু হলো পথে পথে মুরসি-সমর্থক ও বিরোধীদের মধ্যে প্রবল সংঘর্ষ। অবস্থা হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে দেখে মুরসি সেনা বাহিনীকে বিক্ষোভ দমন করার জন্যে রাস্তায় নামতে নির্দেশ দিলেন। সেনা বাহিনী প্রত্যাখান করলেন সেই নির্দেশ এবং ঘুরিয়ে মুরসিকে জনগণের ইচ্ছাকে মর্যাদা দিয়ে একটা সমাধানের ব্যবস্থা করতে ৪৮ ঘন্টা সময়-সীমা বেঁধে দিলেনমুরসি তাতে সাড়া না দিলে সেনা বাহিনী গত ৩রা জুলাই তাঁকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দে মুবারক জামানার অবসানের মাত্র আড়াই বছরের মধ্যে প্রবল গণবিক্ষোভের ফলে বিদায় নিতে হলো জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রেসিডেণ্ট মহম্মদ মুরসিকে। জনগণের এই জয়কে এভাবে রাজনৈতিক ভাষ্যকাররা এভাবে দেখছেন, ২০১১ -এর আরব বসন্তকে মুসলিম ব্রাদারহুড ছিনতাই করে নিয়েছিল, মিশরের মানুষ সেটা আবার ওদের হাত থেকে পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হলেন।
আরব বসন্ত বা আরব বিপ্লবের ২য় অধ্যায়ের এই সাফল্যে বিশ্ব কিন্তু এবার দ্বিধাবিভক্ত। মুসিলিম সাম্প্রদায়িক শক্তি ও মৌলবাদীরা যথারীতি সেনা বাহিনীর ভূমিকা ক্ষুব্ধ বিশ্বের ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক চেতনা সম্পন্ন মানুষ, প্রতিষ্ঠান ও দেশগুলির  একাংশ  সেনা বাহিনীর হস্তক্ষেপের মধ্যে সদ্য প্রতিষ্ঠিত গণতন্ত্রের বিপদের আভাস দেখছেন আর একটা অংশ এটাকে ধর্মীয় মৌলবাদের বিরুদ্ধে ধর্মনিরপেক্ষতা ও গণতন্ত্রের জয়  হিসেবে দেখছেন সেনা বাহিনীর হস্তক্ষেপ গণতন্ত্রের পক্ষে শুভ নয় এটা অনস্বীকার্য মেনেও  আমি দ্বিতিয় মতকেই প্রবলভাবে সমর্থন করি। কারণ, সব নিয়মেরই ব্যতিক্রম থাকে,  এটা ব্যতিক্রমের শ্রেণীতেই পড়বে বলে আমার মনে হয়কেন ব্যতিক্রম সে বিষয়ের পরে আলোকপাত করা হবে, এখন শুধু একটা কথা বলে নিতে চাই – মুসলিম ব্রাদারহুডের মত মৌলবাদী দলের কাছে ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রত্যাশা করা আর সোনার হরিণ প্রত্যশা করা সমান।  
   সেনা প্রধান আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি প্রেসিডেণ্ট পদ থেকে মুরসিকে সরিয়ে দেওয়ার পর যে বিবৃতি দিয়েছিলেন তাতে বলেছিলেন, মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করে সেনা বাহিনী ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করেছে। জনগণ যা চেয়েছিল মুরসি সেই লক্ষ্য পূরণ করতে পারেন নি। সেনা প্রধানের এই দাবীর মধ্যে এতটুকু অতিরঞ্জিত কিছু নেই । আল-হায়াত টিভির একটি সমীক্ষার ফলাফল থেকে দেখা যাচ্ছে যে ৬০% মানুষ মনে করেন তাঁদের জীবনযাত্রার মান গত এক বছরে অনেক নীচে নেমে গেছে ,আর ৭৩% মানুষ মনে করে মুরসি জনগণের জন্যে কোনো ভালো কাজই করে নি। আল-হায়াত টিভির সমীক্ষার রিপোর্ট যে পূর্বনির্ধারিত নয় তা মু্রসিবিরোধী আন্দোলন এবং মিশরের বিদ্যমান অর্থোনৈতিক অবস্থার প্রতি খোলা মন নিয়ে দৃষ্টি নিবদ্ধ করলে বোঝা যায়। মুরসির শাসনকাল মাত্র এক বছর হলে কী হবে, এই অল্প সময়ের মধ্যেই অধিকাংশ মানুষই মুরসির প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলেছিলেন যাঁদের মধ্যে একটা উল্লেখযোগ্য অংশ রয়েছেন যাঁরা মুরসি ও তাঁর দলে্র পক্ষেই গত নির্বাচনে ভোট দিয়েছিলেন। মুরসির পদত্যাগের দাবী উঠতে শুরু করে গত বছর নভেম্বর মাস থেকেই এবং সমগ্র মিশর জুড়ে এই দাবীতে স্বাক্ষর সংগ্রহ অভিযান চালানো হয়েছিলতামরুদ, যে সংগঠনটি মুরসি ও ব্রাদারহুডের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগঠিত ও পরিচালনা করেছে , জানিয়েছে যে দু কোটি কুড়ি লক্ষ মানুষ মু্রসির পদত্যাগের দাবীপত্রে স্বাক্ষর করেছে যা পার্লামেন্ট নির্বাচনে মুরসির প্রাপ্ত ভোটের দ্বিগুণমুরসি এক কোটি ত্রিশ লক্ষ ভোট পেয়ে প্রেসিডেণ্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন। মুরসির পদত্যাগের দাবীতে তাহরির স্কয়ারে পাঁচ লক্ষ মানুষ বিক্ষোভ-অবস্থানে অংশ নিয়েছিলেন, এত বিপুল সংখ্যক মানুষ কিন্তু হোসনি মুবারকের পদত্যাগের দাবীতে তাহরির স্কয়ারে জমায়েত হয় নি। এই বিপুল সংখ্যক মানুষের সমর্থন ছিল বিধায় তামরুদের  নেতৃত্বের নৈতিক মনোবল ও আত্মবিশ্বাস ছিল তুঙ্গে যার জোরে তাঁরা মুরসিকে পদত্যাগ করার জন্যে সময়-সীমা বেঁধে দেওয়ার দুঃসাহস দেখাতে পেরেছিলেন। তামরুদ ঘোষণ দিয়েছিল – ‘আমরা মহম্মদ মুরসিকে পদত্যাগের জন্যে ২ রা জুলাই ( মঙ্গলবার) পর্যন্ত সময় দিচ্ছি। এই সময়ের মধ্যে পদত্যাগ না করলে সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলন শুরু করা হবে। সেই বিবৃতিতেই তামরুদের পক্ষ থেকে সেনা বাহিনী , পুলিশ ও বিচার বিভাগকে জনগণের ইচ্ছার পক্ষে অবস্থান নিতে আহ্বান জানানো হয়েছিল । এখানে একটা বিষয় বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয় তা হলো সেনা প্রধান আবদেল ফাত্তাহ জনগণের ইচ্ছাকে মর্যাদা দিয়ে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে বসে একটা সমাধানে আসার জন্যে মুরসিকে যে চরমপত্র (ultimatum) দিয়েছিলেন তার ঊর্দ্ধসীমাও ছিল ঐ ২ রা জুলাই মঙ্গলবারই।
হোসনি মুবারকের বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভের একটা অন্যতম বড়ো কারণ ছিল তীব্র আর্থিক সংকট।মুরসি মানুষকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল সেই সংকট থেকে মানুষকে উদ্ধার করবেন। কিন্তু ঘটনা হলো সেই তীব্র সংকট তীব্রতর হয়েছে মুরসির এক বছরের শাসনে যার ফলে মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। মিশরীয় মুদ্রা ‘ইজিপসিয়ান পাউন্ডে’র দাম পড়ে গেছে ২০%। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিষের দাম মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। গ্যাস ও বিদ্যুতের সংকটে মানুষ বিপর্যস্ত, ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইন দিয়েও গ্যাস অনেক সময় পাওয়া যাচ্ছে না। বেকারত্বের লেখচিত্রও প্রবলভাবে ঊর্ধমুখীএই অর্থনৈতিক সংকট একটা অন্যতম বড়ো কারণ যা মানুষকে বিক্ষুব্ধ করে তুলেছেমুরসি ও মুসলিম ব্রাদারহুড মানুষকে শান্ত করার চেষ্টা করেছে এ কথা বলে যে, এক বছরে সমস্যার সমাধান করা সম্ভব নয়, তাঁকে আরো সময় দিতে হবে। মানুষ এ কথায় সন্তুষ্ট হয় নি। তাঁদের বক্তব্য - এক বছরে ভালো কিছু করার প্রয়াস বা ইচ্ছাও দেখাতে পারেন নি মুরসি।
 তবে শুধু অর্থনৈতিক সংকটই নয়, তার চেয়ে আরো অনেক বড়ো কারণ আছে এই গণ-অভ্যুত্থানের পশ্চাতেআন্দোলনকারীদের একজন মুখপত্র বলেছেন – But there is more to this protest than a call for jobs, bread and safe street. রুজি, রুটি ও নিরাপত্তার চেয়েও বড়ো কী জিনিষ আছে যার জন্যে মানুষ মুরসিকে তাঁর মেয়াদ পর্যন্ত সময় দিতে সম্মত ছিলেন নামুরসির বিরুদ্ধে তাঁদের প্রধান অভিযোগ হলো - মিশরের মানুষের জন্যে নয়, মুরসি কাজ করছেন তাঁর দল মুসলিম ব্রাদারহুডের স্বার্থ রক্ষার জন্যে আন্দোলনকারীদের এই অভিযোগ কত বাস্তব ও সত্য তা বোঝার জন্যে মুরসির সরকারের সংস্কৃতি দপ্তরের মন্ত্রী আবদেল আজেজের একটা বিষ্ফোরক উক্তিই যথেষ্ট। তিনি বলেছেন – My concern is providing cultural services throughout Egypt, not financial benefit for a new intellectuals. অর্থনৈতিক সংকট থেকে দেশকে উদ্ধার করার কোনো প্রয়াসই সরকার করে নি সে কথার প্রমাণ মেলে আজেজের এই উক্তিতে আর মি.মুরসি ও মি.আজেজ কোন সংস্কৃতি মিশরের মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া নিয়ে সবচেয়ে বেশী উদ্বিগ্ন  ছিলেন?
যে সাংস্কৃতিক পরিসেবা দিতে মুরসির সরকার সব থেকে বেশী উদ্বিগ্ন ও তৎপর ছিল সেটাই মুরসির পতনকে অনিবার্য করে তুলেছিলোমুরসির সরকার ঘোষণা করেছিল, প্রকাশ্যে ব্যালেট বা ব্যালে নৃত্য প্রদর্শন করার অনুমতি তুলে নেওয়া হবে। সরকার আরো ঘোষণা করেছিল যে চলচিত্রের উপর সরকারি নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হবে এবং প্রেমের গল্প নিয়ে বানানো চিত্তাকর্ষক চলচিত্রের প্রদর্শনির মত অপসংস্কৃতি  বন্ধ করে সুস্থ সংস্কৃতি ফিরিয়ে আনা হবে। কী সে সুস্থ সংস্কৃতি ? সেটা যে শরিয়তি পশ্চাদপদ সংস্কৃতি তা বলা বাহুল্য। ব্যালেট বা ব্যালে নৃত্য ও আমেরিকার চলচিত্র সহ আধুনিক ও পাশ্চাত্য শিল্প-সংস্কৃতি মিশরবাসীদের কাছে খুবই জনপ্রিয়। মুরসি সরকারের এই আধুনিক সংস্কৃতি হলো অপসংস্কৃতি, কারণ ইসলামে এগুলি নিষিদ্ধতাদের কাছে একমাত্র শরিয়তি সংস্কৃতিই সুস্থ সংস্কৃতি। মুরসি সরকারী ক্ষমতার অপব্যবহার করে এভাবে প্রথম থেকেই মিশরের মানুষের উপর শরিয়তি সংস্কৃতি চাপানোর অপতৎপরতা শুরু করেছিল যা ছিল মিশরের মানুষের পছন্দ ও ঐতিহ্যের পরিপন্থী। শুধু শরিয়তি পশ্চাদপদ সংস্কৃতি প্রতিস্থাপন করাই নয়, মুরসি মুসলিম ব্রাদারহুডের গোপন কর্মসূচী রূপায়নের জন্যে অতিশয় তৎপরতার সাথে একটার পর একটা পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। মুসলিম ব্রাদারহুডের  গোপন কর্মসূচী হলো মিশরের ইসলামিকরণ কর্মসূচী। সেই লক্ষ্যেই তিনি নতুন সংবিধানের খসড়া তৈরী করেছিলেন , ডিক্রি জারি করে নিজের ক্ষমতা বৃদ্ধি করেছিলেন এবং সেনা প্রধান সহ বরিষ্ঠ সেনা আধিকারিকদের জোর করে অবসর নিতে বাধ্য করেছিলেন। মুরসির খসড়া সংবিধানে নারীর এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অধিকার ও নিরাপত্তা বহুলাংশে খর্ব করা হয়েছিল। তিনি যে ডিক্রি জারি করেছিলেন তাতে তিনি প্রেসিডেন্টের পদকে আইনের ঊর্দ্ধে স্থাপন করেছিলেন। ডিক্রিতে বলা হয়েছিল প্রেসিডেন্টের নেওয়া কোনো সিদ্ধান্তকে আদালতে চ্যালেঞ্জ করা যাবে না। মিশরের মানুষ প্রথম থেকেই এই সংবিধানের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে এসেছে এবং এটা প্রত্যাহার করার দাবীতে আন্দোলন করেছেন । মুরসি তা গ্রাহ্য করেন নি। মিশরের মানুষ সেনা প্রধান সহ বরিষ্ঠ সেনা অফিসারদের তাঁদের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়াটা ভালো চোখে নেয় নি। আর খসড়া সংবিধান ও প্রেসিডেন্টের জারি করা ডিক্রি একেবারেই মেনে নিতে পারেন নি। তাঁরা এ দুটোই ফিরিয়ে নেওয়ার জন্যে রাস্তায় নেমে তীব্র জানিয়েছিলেন। কিন্তু মুরসি তাঁর লক্ষ্যে অবিচল ছিলেন এবং জনগণের প্রতিবাদকে গ্রাহ্যই করেন নি।
প্রশ্ন উঠতে পারে যে, মুসলিম ব্রাদারহুড যে মিশরের ইসলামাইজেশন প্রক্রিয়া চালাবে সেটাই তো স্বাভাবিক। তাহলে তাদের এই কর্মসূচীটা গোপণ কর্মসূচী হতে যাবে কেন?  প্রশ্নটি সঙ্গত, কিন্তু এটাও একশ’ শতাংশ সত্য যে মিশরের মানুষের কাছে এটা গোপণ করেছিল মুসলিম ব্রাদারহুড এবং মহম্মদ মুরসি। মুবারক হোসেন ক্ষমতা থেকে সরানোর দাবীতে আন্দোলন গড়ে তুলতে যে ব্যাপক মঞ্চ হয়েছিল তাতে প্রথমে মুসলিম ব্রাদারহুডের রাজনৈতিক সংগঠন ফ্রিডাম ও জাস্টিস পার্টির ঠাঁই হয় নি। তখন মুসলিম ব্রাদারহুডের নেতৃবৃন্দ আশ্বাস দিয়ে বলেছিল যে মুবারককে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করা ছাড়া তাদের অন্য কোনো স্বার্থ নেই। তারা পার্লামেন্টের ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার কোনো প্রয়াস করবে না, এমন কি তারা প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থীও দেবে না। কিন্তু তারা মুবারকের বিদায়ের পর পার্লামেন্ট নির্বাচনের শুরুতেই কথার খেলাপ করে এবং মুরসিকে প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থী করে। এর ফলে স্বভাবতই মুসলিম ব্রাদারহুড ক্ষমতায় আসলে যে মিশরকে আবার গোঁড়া ইসলামি রাষ্ট্র বানানোর চেষ্টা হবে সে আশঙ্কা মানুষের মধ্যে জেগে ওঠে। মুসলিম ব্রাদারহুড তখন আশ্বাস দেয় যে তারা মিশরের ধর্মনিরপেক্ষ আদর্শ ও কাঠামো অক্ষুণ্ণ রেখেই মিশরের উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে চায়।  মুসলিম ব্রাদারহুড ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাসী মানুষদের ভোট নেওয়ার জন্যে এভাবেই তাদের আসল কর্মসূচীটি গোপণ করেছিল, কারণ তারা জানত যে তাদের নিজস্ব যে ভোট আছে তা দিয়ে তারা ভোটে জয়লাভ করতে পারবে না।  
এভাবে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে ক্ষমতায় এসে যখন একটার পর একটা পদক্ষেপ নিতে থাকলো মিশরের মানুষের উপর ইসলামি আইন ও অনুশাসন চাপিয়ে দেওয়ার জন্যে এবং বেকারি, মুল্যবৃদ্ধি, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের ক্রমবর্ধমান সংকট সমাধানের জন্যে কোনো প্রয়াসই করলো না, তখন যারা মুসলিম ব্রাদারহুডকে ভোট দিয়েছিল তারা দ্রুত মুরসির পাশ থেকে সরতে শুরু করলেন। অনেক মুসলমানই ভেবেছিলেন যে, একজন মুসলমান হিসেবে মুসলমানদের দল ফ্রিডাম ও জাসটিস পার্টিকে ভোট দিলে ক্ষতি কী? তাঁরা স্বপ্নেও ভাবতে পারেন নি যে, ধর্মকে হাতিয়ার করে ক্ষমতায় এসে কোনো দল কেবল শরিয়তি শাসনের প্রতিষ্ঠার নামে সাধারণ মানুষদের জীবন-জীবিকাকে উপেক্ষা করতে পারে কিংবা খর্ব করতে পারে নারী ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অধিকার ও নিরাপত্তাগুলি। তাই অতিদ্রুতই জনসমর্থন হ্রাস পেতে শুরু করে প্রেসিডেন্ট মুরসির। অচিরেই মুরসি এবং তাঁর সরকার ও  দল জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।  
মুসলিম ব্রাদারহুডের কর্মসূচী রূপায়ণ তথা মিশরের ইসলামাইজেশনের কর্মসূচী রূপায়ণের অপপ্রয়াস ও অপতৎপরতাই  মুরসির পতন ডেকে নিয়ে আসেএই অপপ্রয়াস অতিশয় ক্ষুব্ধ করে তুলেছিল মিশরের সেনা বাহিনীকেও। মিশরের মানুষ ও সেয়ান বাহিনী যে মিশরের ইসলামি করণের অপপ্রয়াস মেনে নেবেন না এটাই স্বাভাবিক। কারণ তাঁরা প্রবাদ পুরুষ আবদেল নাসের ও আনোয়ার আল-সাদাতের উত্তরাধিকার বহন করে চলেছেন। আবদেল নাসের গত শতাব্দীর পঞ্চাশ দশকে ক্ষমতায় এসে মিশরের ইসলামি রাষ্ট্র ও সমাজ ব্যবস্থার বৈপ্লবিক সংস্কার করেছিলেন। তিনি দেশের অভ্যন্ততরে ইসলামি একবগ্গা নীতির অবসান ঘটিয়ে ধর্মনিরপেক্ষ নীতি গ্রহণ করে ধর্মীয় সুংখ্যালঘু সহ সব ধরণের সংখ্যালঘুদের সমান মর্যাদা, অধিকার ও নিরাপত্তা প্রদান করেন। মিশরের মুসলমানদের মধ্যে শিয়া , আলাইটিস(Alwaties) ও দ্রুজ (Druze) গোষ্ঠীর মুসলমানর ভীষণ সংখ্যালঘু। এঁদেরকে সুন্নী মুসলমানরা প্রকৃত মুসলমান বলে স্বীকার করেন না । এই তিনটি গোষ্ঠীর মুসলমানদের কোনো নিরাপত্তা ছিল না। নাসের এই বৈষ্যমের অবসান ঘটিয়ে তাঁদেরকে সুন্নীদের সমান মর্যাদা , অধিকার ও নিরাপত্তা দেন। তাই পৃথিবীর সর্বত্র শিয়া-সুন্নি সংঘর্ষ হলেও মিশরে হয় না। ইসলামি শিক্ষা ব্যবস্থায় মাদ্রাসা শিক্ষার আধিপত্য খর্ব করে আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থার প্রবর্তন করেন। তিনি মুসলিম পারিবারিক আইনের ব্যাপক সংস্কার করেন। নারীদের তিনি অনেক ক্ষমতা ও অধিকার দেন। তিনি চালু করেন সহ-শিক্ষা, নারীদের ভোটাধিকার দেন এবং ভোটে দাঁড়াবার অধিকার পর্যন্ত দেন। ইসলামি তালাক আইনের সংস্কার করে পুরুষের এক তরফা তালাক দেওয়ার অধিকার রদ করে আদালতের হাতে তুলে দেন এবং নারীকেও তালাক দেওয়ার ক্ষমতা দেন। নাসের শরিয়তি আদালত তুলে দিয়ে সেগুলিকে দেশের সাংবিধানিক আদালতের অধীনে নিয়ে আসেন । তিনি জন্ম নিয়ন্ত্রণ করাকে আইন সিদ্ধ করেন এবং পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচী প্রণয়ন করেন। পঞ্চাশ/ষাট বছর পূর্বে নাসের শরিয়তি আইন ও অনুশাসনের সংস্কার সাধনে যে সব কাজ করেছিলেন তা আজও অধিকাংশ মুসলিম দেশই করতে পারে নি। নাসের এটা করতে সক্ষম হয়েছিলেন এ জন্যে যে মিশরের মানুষ তাঁর এই বৈপ্লবিক কাজগুলিকে সমর্থন করেছিলেন। আনোয়ার আল-সাদাত নাসেরের সেই উত্তরাধিকারকে আরো এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। তিনি ইসলামি বিধান ও নির্দেশকে উপেক্ষা করে ইসলামের চোখে শত্রু দেশ ইজরায়েলের সঙ্গে শান্তি চুক্তি সম্পন্ন করেছিলেন। সাদাতের এই পদক্ষেপকে বৈপ্লবিক বললেও কম বলা হয়। কারণ, কোরান ও হাদিসের স্পষ্ট বিধান হলো – ইহুদীরা অভিশপ্ত জাতি এবং আল্লাহ ও মুসলমানদের চরম শত্রু। তিনি এই দুঃসাহসিক কাজ করেছিলেন  মিশরের মানুষের নিরাপত্তা ও কল্যাণের স্বার্থে। এর জন্যে তাঁকে চরম মুল্য দিতে হয়েছিল, যুগান্তকারী ও ঐতিহাসিক ঐ চুক্তি সম্পাদন করার চার বছর পর ১৯৮১ সালে ধর্মান্ধ কয়েকজন সেনা অফিসার তাঁকে হত্যা করেছিল।
মিশরের মানুষ এবং সেনা বাহিনী নাসের ও সাদাতের উত্তরাধিকার বহন করে চলেছেন নিষ্ঠার সাথে। এ কথার প্রমাণ পাওয়া যায় সেনা প্রধান আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসির বক্তব্যেও। তিনি মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করে যে বিবৃতি দেন তাতে  বলেছিলেন, ‘সন্ত্রাসী, চরমপন্থী ও গোঁড়াদের হাত থেকে দেশ ও দেশের মানুষকে রক্ষা করতে আমাদের জীবন উৎসর্গের শপথই আমরা নিয়েছি।’ সুতরাং তাঁরা যে মিশরকে পুনরায় শরিয়তি অন্ধকারের মধ্যে টেনে নিয়ে যেতে চেষ্টা করলে মেনে নেবেন না সেটাই স্বাভাবিক। আরব বসন্তকে ছিনতাই করে নিয়ে যেতে চেয়েছিল মুসলিম ব্রাদারহুড মিশরের সেক্যুলার ও প্রতিবাদী জনতা সে অপপ্রয়াস ব্যর্থ করে দিয়েছেন।
যাঁরা মনে করেন যে মুরসির কাজ সমর্থনযোগ্য না হলেও সেনা অভ্যুথানও অসমর্থন যোগ্য, কারণ তাতে আখেরে গণতন্ত্রই দুর্বল হবে। এই বিষয়ে আলোচনা করার আর পরিসর নেই, কারণ ইতিমধ্যেই লেখা যথেষ্ট বড়ো হয়ে গিয়েছে। এ প্রসঙ্গে শুধু তাই বলতে চায় যে, মিশরের সেনা বাহিনীকে বাংলাদেশ কিংবা পাকিস্থানের মত দেশের সেনা বাহিনীর মত ক্ষমতালোভী মনে করলে ভুল হবে। মিশরের সেনা প্রধান বলেছিলেন যে তিনি সেনা অভ্যুত্থান ঘটান নি, মিশরকে রক্ষা করার জন্যে হস্তক্ষেপ করেছেন মাত্র এবং যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচনের ব্যবস্থা করে জনগণের হাতেই মিশরের ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে। সেনা প্রধান তাঁর কথা রেখেছেন। অন্তর্বর্তী সরকারের রাষ্ট্রপতি আদিল মানসুর বরখাস্ত রাষ্ট্রপতি মুরসির অপসারণের মাত্র ছ’ দিনের মাথায় – ৯ই জুলাই- আগামী বছরের গোঁড়ায় পার্লামেন্ট নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন।

Thursday, December 14, 2017

শুধু তাৎক্ষণিক তিন তালাক নয়, নিষিদ্ধ করতে হবে পুরো শরিয়তি তালাক আইনটাই

তাৎক্ষণিক তিন তালাক নিষিদ্ধ করার জন্যে কেন্দ্রীয় সরকার একটি খসড়া আইন তৈরী করেছে। এটা বিল আকারে আসন্ন শীতকালীন অধিবেশনে পেশ করা হবে। বিলটির নাম দেওয়া হয়েছে 'মুসলিম  উইমেন প্রটেকশন অব রাইটস অন ম্যারেজ বিল'এটা আইনে উন্নীত হলে কাশ্মীর ছাড়া সমগ্র ভারতে প্রযোজ্য হবেখসড়া বিলটি ইতিমধ্যেই রাজ্যগুলির কাছে পাঠানো হয়েছে তাদের মতামত দেবার জন্যে। বিয়ে ও বিবাহবিচ্ছেদ কেন্দ্রীয় তালিকাভুক্ত। অর্থাৎ রাজ্যের মতামত নেওয়া বাধ্যতামূলক নয়। তবুও রাজ্যগুলির মত চাওয়ার কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্দেশ্য সম্ভবতঃ দু’টি। (এক). এই বিলের পক্ষে গোটা বিরোধী পক্ষের সহমত আদায় করা। (দুই). বাম দলগুলি এবং কংগ্রেস-সহ সমস্ত ধর্মনিরপেক্ষ পেটি বুর্জোয়া দলগুলিকে  বিড়ম্বনায় ফেলা। কারণ, এসব দলের নেতারা মুসলিম মৌলবাদী ধর্মীয় নেতাদের তুষ্ট করতে এতোকাল তাৎক্ষণিক তালাক আইনটিকে সযত্নে রক্ষা করে এসেছেন। সুপ্রীম কোর্ট যেহেতু ইতিমধ্যেই এই আইনটিকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করেছে, তাই তাঁদের এই বিলকে এবার সমর্থন দিতেই হবে এটা জেনেও যে মুসলিম মৌলবাদীরা তাঁদের প্রতি বিরূপ  হবে।         
পাঁচ জন তালাকপ্রাপ্ত মুসলিম নারীর আবেদনের ভিত্তিতে সুপ্রীম কোর্ট গত আগস্ট মাসে এক সঙ্গে তিন তালাক প্রদানকে অসাংবিধানিক ও বেআইনী বলে রায় দিয়েছিলো। কিন্তু তৎসত্ত্বেও মুসলিম সমাজে এক সঙ্গে তিন তালাক দেওয়ার ঘটনা আকছার ঘটতেই আছে। মুসলিম সমাজের এই অসাংবিধানিক ঔদ্ধত্যমূলক ঘটনা নতুন কিছু নয়। কারণ, মুসলিম সমাজের একটি সাধারণ প্রবণতা হলো তাদের নিজেদের দেশের সংবিধান ও সংস্কৃতিকে অগ্রাহ্য করা এবং শরিয়তি আইন ও সংস্কৃতিকে অনুসরণ করে চলা। কেন্দ্রীয় সরকারের একজন প্রতিনিধি জানিয়েছেন যে সুপ্রিম কোর্টের উক্ত রায় প্রদানের পর ৬৭ জন মুসলিম নারী সরকারের কাছে অভিযোগ করেছে যে তাঁদেরকে তাৎক্ষণিক তিন তালাক প্রদান করে তাদের বিবাহবিচ্ছেদ ঘটানো হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টকে অগ্রাহ্য করে তিন তালাক দেওয়ার ঘটনা নিশ্চয় আরো বেশী হবে, কারণ এরূপ তালাক দেওয়ার সব ঘটনা যে সরকারের গোচরে আসেনি তা বলাই বাহুল্য। আর একটা কথা এখানে বলা দরকার। তা হলো, উচ্চ শিক্ষিত মুসলমানরাও আদালতে রায়কে অগ্রাহ্য করে তাৎক্ষণিক তিন তালাক দেওয়ার ঔদ্ধত্য দেখাতে দ্বিধা করছেন না। তালাকদাতা উচ্চ শিক্ষিত মুসলমানদের তালিকায় সম্প্রতি নাম নথিভুক্ত করেছেন আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক খালিদ বিন ইউসুফ খাঁনও। তিনি তাঁর বৌ ইয়াসমিন খালিদকে প্রথমে হোয়াটস অ্যাপের মাধ্যমে এবং পরে টেক্সট মেসেজ পাঠিয়ে তালাক দিয়েছেন। সুতরাং এটা স্পষ্ট যে সর্বোচ্চ আদালতের রায়কে সম্মান ও মান্যতা দিয়ে ভারতীয় মুসলিম সমাজ একসঙ্গে তিন তালাক দেবার কুৎসিত আইনটি বিসর্জন দিতে মোটেই প্রস্তুত নয়। তাই এ বিষয়ে কোনো সংশয় থাকতে পারে না যে কেন্দ্রীয় সরকার তাৎক্ষণিক তিন তালাককে নিষিদ্ধ ও বেআইনি করতে যে খসড়া আইনটি তৈরী করেছে সেটা অত্যন্ত জরুরী ছিলো।    
প্রস্তাবিত খসড়া বিলে কী কী বিধান রয়েছে তার প্রতি এবার একটু চোখ বোলানো যাক। পুরো খসড়া বিলটি সামনে আসেনি এখনো। যেটুকু খবর পাওয়া গিয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে যে, বিলটিতে তাৎক্ষণিক তিন তালাক প্রদান করাকে অবৈধ, নিষিদ্ধ ও বেআইনী ঘোষণা করার সংস্থান রয়েছে। যদি কেউ তাৎক্ষণিক তিন তালাক দেয় তবে সেটা আইনতঃ দন্ডনীয় অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে এবং যে তাৎক্ষণিক তিন তালাক দেবে তার তিন বছরের জেল ও জরিমানা হবে। তালাকদাতা যাতে জামিন না পায় তার ব্যবস্থা রয়েছে বিলে। খসড়া বিলে তালাকপ্রাপ্ত নারীকে আইনি সুরক্ষা দেওয়ার সংস্থান রাখা হয়েছে। যেমন, তিন তালাক দেওয়ার পর তালাকপ্রাপ্ত নারীকে যাতে তার বর বা শ্বশুরের বাড়ি থেকে বের করে দিতে না পারে তার আইনী রক্ষাকবচ রয়েছেতালাকপ্রাপ্ত নারী শুধু বর বা শ্বশুরের গৃহে থাকতে পারবে তাই-ই নয়, সে খোরপোষও পাবে। তার যদি সন্তানাদি থাকে তবে তারাও খোরপোষ পাবে।
মুসলিম ধর্মগুরু ও মুসলিম পুরুষ সমাজের তীব্র আপত্তি উপেক্ষা করে কেন্দ্রীয় সরকার তাৎক্ষণিক তিন তালাক বাতিল ও বেআইনী করার জন্যে যে খসড়া আইন প্রণয়ন করেছে তা অবশ্যই সাধুবাদযোগ্য। কিন্তু তবুও যে কথাটা বলা খুবই জরুরী তা হলো, শুধু তাৎক্ষণিক তিন তালাক আইনকে নিষিদ্ধ করলে মুসলিম নারীদের আখেরে কোনো লাভই হবে না। তাদের অবর্ণনীয় দুঃসহ অবস্থা এখন যেমনটি রয়েছে, তাৎক্ষণিক তিন তালাক নিষিদ্ধ হলে অবস্থাটা প্রায় তেমনটাই থেকে যাবে। কেননা, ‘তাৎক্ষণিক তিন তালাক’ বিধিটি মূল তালাক আইনের একটি ধারা মাত্র। ২য় খলিফা ওমর ফারুক এই ধারাটি কোরানের মূল তালাক আইনের সঙ্গে যুক্ত করেন মুহাম্মদের মৃত্যুর ২/৩ বছর পর অনেকের ধারণা যে মুহাম্মদ কর্তৃক প্রবর্তিত কোরানের মূল তালাক আইনটি নারীর পক্ষে কল্যাণকর ও সুখকর। এটা সম্পূর্ণ ভ্রান্ত ধারণা। কারণ, মূল তালাক আইনটি ভীষণ অগণতান্ত্রিক, অমানবিক এবং চরম নারীবিরোধী আইন। যতোই অবিশ্বাস্য শোনাক, কিন্তু এটাই বাস্তব যে ইসলামি আইনে নারীকে তালাক দেবার অধিকার দেওয়া হয়নি। একজন পুরুষ কিন্তু কারণে অকারণে যখন তখন খেয়ালখুশী মতো তালাক অধিকারী। এমনকি একজন বিবাহিত পুরুষের যদি অন্য নারীকে পছন্দ হয় তবে তাকে বিয়ে করার জন্যে সে তার আগের বৌদের  তালাক দিতে পারবে। কোরানের ৪/২০ নং আয়াতে পুরুষের এই অধিকারের কথা স্পষ্টাক্ষরে লেখা রয়েছে। কোরানের সেই অবিশ্বাস্য ভাষ্যটি হলোঃ তোমরা যদি এক স্ত্রীর স্থলে অন্য স্ত্রী গ্রহণ করা স্থির করো, এবং তাদের একজনকে প্রচুর অর্থও দিয়ে থাক, তবু তার থেকে কিছু গ্রহণ করো না, তোমরা কি মিথ্যা অপবাদ এবং প্রকাশ্য পাপাচরণ দ্বারা তা গ্রহণ করবে। তালাক আইনের এই বিধি থাকার সুযোগ নিয়েছিলেন মুহাম্মদের আপন জৈষ্ঠ নাতি ইমাম হাসানতিনি মোট একশ’টি বিয়ে করেছিলেন। একদিনে চারজন বৌকে তালাক দিয়ে সেদিনই চারজন নারীকে বিয়ে করার কুৎসিত নজিরও রেখে গিয়েছেন তিনিকোরানের তালাক আইনে পুরুষ তার প্রয়োজনে বা ইচ্ছা হলেই যখন খুশী তালাক দিতে পারবে। কিন্তু কোনো অবস্থাতেই, বর যতোই মাতাল, লম্পট, চোর-জোচ্চর, বদমাশ, অত্যাচারী ও নির্যাতনকারী হোক, মুসলিম নারী তালাক দিতে পারবে না। এইগুলো হলো কোরানের তালাক আইনের কয়েকটি নমুনা।  প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য যে কোরানে একসঙ্গে তিন তালাক দেওয়ার বিধান নেই।  
সুতরাং এটা স্পষ্ট যে শুধু তাৎক্ষণিক তিন তালাক বন্ধে কেন্দ্রীয় সরকার যে  আইন প্রণয়ন করতে চলেছে তার ফলে  মুসলিম পুরুষদের তালাক দেওয়ার অধিকারটি মোটেই রহিত বা খর্বিত হচ্ছে না। কারণ,  উক্ত আইনে তিন বারে বা তিন মাসে তিন তালাক দেওয়ার তালাক আইনটি রদ হচ্ছে না। ফলে তাৎক্ষণিক তিন তালাক প্রথা রদ করা হলে মুসলিম পুরুষরা তাদের তালাক দেওয়ার পদ্ধতি বা কৌশল পরিবর্তন করবে এবং একসনে তিন তালাক না দিয়ে তিন মাসে তিন তালাক দেবে। ফলে  মুসলিম নারীদের দুর্দশার  লাঘব বিশেষ হবে না।
মূল তালাক আইন বহাল থাকলে বহাল থাকবে ‘হিল্লা বিয়ে’ তথা ‘হালালা বিয়ে’ও। কারণ,  ‘হিল্লা/হালালা বিয়ে’ হলো মূল তালাক আইনের অবিচ্ছেদ্য ধারা বা অংশ। প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ যোগ্য যে, ‘হিল্লা বিয়ে’ নারীর পক্ষে চরম  অবমাননাকর শরিয়তি আইনে ভুলবশতঃ বা  ক্রোধবশতঃ কেউ তালাক দিলেও রক্ষে নেই, তৎক্ষণাৎ তাদের বিবাহ-বিচ্ছেদ কার্যকরী হয়ে যাবে। পরে সে যদি তালাক প্রত্যাহার করে নেয় এবং তারা উভয়েই যদি  দাম্পত্যজীবন পুনরায় শুরু করতে প্রবল ইচ্ছুক থাকে তবু তা করার ছাড়পত্র শরিয়তি বিধানে নেই। এমনকি যদি তারা ইসলামি মতে পরষ্পরকে বিয়ে করতে চাই তারও অনুমতি নেই। সেক্ষেত্রে বিধিটি হলো এ রকমঃ তালাকপ্রাপ্ত নারীকে বিয়ে করতে হবে অন্য একজন পুরুষকেবিয়ের পর  সেই পুরুষটিকে অবাধে তার সঙ্গে যৌনক্রিয়া (পড়ুন ধর্ষণ) করতে দিতে হবে। এই যৌনক্রিয়াটি কিন্তু বাধ্যতামূলক, ইচ্ছামূলক বা ঐচ্ছিক নয়। তারপর সেই লোকটি যদি অনুগ্রহ করে তাকে তালাক দেয় তবেই সে তার আগের পুরুষকে পুনরায় বিয়ে করার উপযুক্ত হতে পারবে, নচেৎ নয়। এই জঘন্য বিয়েকে ইসলামের পরিভাষায় বলে ‘হিল্লা বিয়ে’ বা ‘হালালা বিয়ে’। আল্লাহর  আইন এমনই যে  পুরুষ যদি ভুল করে  তালাক দেয় তবে তারজন্যেন তাকে কোনো শাস্তি পেতে হবে না, চড়া মাশুল দিতে হবে নারীকে তারে সতীত্ব ও সম্ভ্রম বিসর্জন দিয়ে এই চরম নিকৃষ্ট ও ঘৃণ্য বিধান কোরানের। ২/২৩০ নং আয়াতে রয়েছে এই বিধানটি। কোরান সেখানে বলছে, “তারপর যদি সে তালাক দেয় তবে এরপর সে তার জন্য বৈধ হবে না যে পর্যন্ত না সে অন্য স্বামীকে বিবাহ করে। এখন যদি সেও তালাক দিয়ে দেয় তাহলে তাদের উভয়ের অপরাধ হবে না যদি তারা পরষ্পরের কাছে ফিরে আসে, - যদি তারা বিবেচনা করে যে তারা আল্লাহর গণ্ডির মধ্যে থাকতে পারবে।” নতুন পুরুষটির সঙ্গে যৌনসঙ্গম করার বাধ্যতামূলক নির্দেশটি রয়েছে হাদিসে। সেই হাদিসটি হলো – “একটি বর্ণনায় এও রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) জিজ্ঞাসিত হন, ‘একটি লোক তার স্ত্রীকে তিন তালাক দিয়েছিলো। অতঃপর সে অন্য লোকের সাথে বিবাহিত হলো। এরপর দরজা বন্ধ করে ও পর্দা ঝুলিয়ে দিয়ে যৌন মিলন না করেই দ্বিতীয় স্বামী তাকে তালাক দিয়ে দিল। এখন কি স্ত্রীটি তার পূর্ব স্বামীর জন্যে হালাল হবে?’ রালুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ ‘না, যে পর্যন্ত না মধুর স্বাদ গ্রহণ করে’ (সহীহ বুখারী ও সহিহ মুসলিম) (দ্রঃ ইবনে কাসিরের তফসির, ১ম-৩য় খণ্ড, পৃ-৬৪২, ৬৪৩)     

পরিশেষে তাই আবার বলতে চাই যে তাৎক্ষণিক তিন তালাক প্রথা বা আইনটি রদ ও বেআইনি করা নিশ্চয়ই মোদি সরকারের একটি ঐতিহাসিক কাজ। সেটা এজন্যে যে, চরম নারীবিরোধী  বর্বর তালাক আইনটি  সহস্রাধিক বছর ধরে ভারতীয় মুসলিম সমাজের বুকে জগদ্দল পাথরের মতো চেপে রয়েছে, তাৎক্ষণিক তিন তালাক প্রথাটি বেআইনী হলে সেই জগদ্দল পাথরটাকে অন্ততঃ একটু হলেও নরানো তো যাবে আর এ কাজটাও তো মোটেই সহজ বা তুচ্ছ কাজ নয়। কিন্তু আবার এটাও চরম বাস্তব যে, এই আইনটি  মুসলিম নারীদের নিরাপত্তা প্রদানে এবং শোষণ ও নির্যাতন লাঘব করতে বিশেষ ফলপ্রসু হয়ে উঠতে পারবে না। কোরানের মধ্যযুগীয় তালাক আইনটির দানবীয় নির্যাতন থেকে মুসলিম নারীদের মুক্তি দিতে হলে সমগ্র তালাক আইনটাই বাতিল করতে হবে, এর কোনো বিকল্প নেই। 

বাংলাদেশের গণঅভ্যুত্থানে ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাইনি – পাঁচ

  দ্বিতীয় অধ্যায় শেখ হাসিনা ও শেখ মুজিবের প্রতি তীব্র গণরোষের নেপথ্যে ২০২৪ এর জুলাই অভ্যুত্থানের সফল পরিসমাপ্তি ঘটে ৩৬ দিন পর (৫ই ...