Sunday, January 1, 2017

মুসলমানরা ইংরাজী নববর্ষ উদযাপন করতে পারে না



আজ ইংরাজী নববর্ষের শুরু। নববর্ষের ১ম দিনটিতে ‘শুভ নববর্ষ’ বলে শুভকামনা জানানোর ধূম পড়ে যায়। এটা আজকাল বিশ্ব-সংস্কৃতির অঙ্গ হয়ে গিয়েছে আজ আমাকেও অনেকেই ‘শুভ নববর্ষ’ জানিয়েছে। নববর্ষের ১ম দিন মানুষ নতুন বছরকে ধূমধাম করে স্বাগত জানাই, আনন্দ-উৎসবে মেতে ওঠে। আনন্দ-উৎসব তুলনামূলকভাবে সব চেয়ে বেশী হয় ইংরাজী নববর্ষে। এবারো হচ্ছে। যার-পর- নাই উচ্ছ্বাস ও আনন্দে মেতেছে মানুষ বিশ্বজুড়ে। মুসলমানরাও পিছিয়ে নেই। কিন্তু বিপুল এই আনন্দ ও উৎসবের মধ্যেও বিষাদের ছায়া নেমে এসেছে ইস্তাম্বুল শহরে। একটি বড়ো হোটেলে বহু মানুষ যখন মধ্য রাত্রে নববর্ষের মুহূর্তটাকে দারুণভাবে উপভোগ করছে তখনই তাদের উপর রাইফেল থেকে বেরিয়ে এলো ঝাঁকে ঝাঁকে গুলি। লুটিয়ে পড়লো বহু মানুষ যাদের মধ্যে নববর্ষকে চির বিদায় জানিয়ে চলে গেলো তরতাজা ৩৯টি প্রাণ। কে বা কারা গুলি চালালো  গোটা বিশ্ব তা জানে। নববর্ষ উদযাপনের অনুষ্ঠানে মানুষের উপর হামলা চালানো, মানুষকে হত্যা করা নতুন কোনো ঘটনা নয়।  বাংলাদেশ  স্বাধীন হওয়ার পর বিখ্যাত রমনার বটমূলে যেখানে বাংলাদেশে নববর্ষের সব চেয়ে বড়ো অনুষ্ঠান হয়   সেখানেও একবার সশস্ত্র হামলা চালিয়েছিলো ধর্মান্ধ সাচ্চা মুসলমানরা। সেই হামলাতেও  বহু মানুষের প্রাণ গিয়েছিলো। নববর্ষের অনুষ্ঠানে কেনো হামলা হয়? কারণ আরবি নববর্ষ ছাড়া অন্য নববর্ষ উদযাপন যে শরিয়তবিরোধী 
এখন প্রশ্ন হলো কোনটা ঠিক? কারা ঠিক? আরবি ব্যতীত অন্য জাতির নববর্ষ উদযাপনে মুসলমানদের অংশ গ্রহণ করাটা, না  বিরত থাকাটা? যে মুসলমানরা ইংরাজী নববর্ষ উদযাপন করছে তারা ঠিক, নাকি ঐ সব অনুষ্ঠানে যারা গুলি চালিয়ে মানুষ হত্যা করলো তারা? কারা ঠিক আর কারা বেঠিক তা নিয়ে তর্ক-বিতর্কের শেষ নেই। মুসলিম বুদ্ধিজীবীরা বলেন অমুসলিমদের ধর্মীয় বা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে মুসলমানদের অংশ গ্রহণ কোনো বাধা নেই ইসলামেআর ঐ সব অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার জন্যে যারা সশস্ত্র হামলা চালিয়ে মানুষকে হত্যা করছে তারা বুক বাজিয়ে বলছে যে তারা যা করছে তা আল্লাহ ও  মুহাম্মদের হুকুম মেনেই করছে। এই তরজায় মানুষ দ্বিধাবিভক্ত, বিভ্রান্ত। বিভ্রান্ত মুসলমানরাও।  বিভ্রান্ত মুসলমানদের মধ্যে স্কুল-কলেজের শিক্ষাপ্রাপ্ত মুসলমানরা এক অদ্ভূত চরিত্রের। তারা মুসলিম বুদ্ধিজীবীদের কথাকেই ধ্রুব সত্য জ্ঞান করে। বলে, ইসলামে শান্তি ও সম্প্রীতির ধর্ম, হিংসার স্থান ইসলামে নেই। এমন জোরের সঙ্গে এ কথাগুলি তারা বলে যেনো  কোরান-হাদিস পড়ে সব কিছু জেনে বুঝে বলছে। কিন্তু আসলে ওদের সঙ্গে আলোচনায় এটা বুঝেছি যে ওরা কোরান, হাদিস, তফসির এবং ইসলামের ইতিহাস - এসব কোনোটাই পড়েনি, পড়ে থাকলে নির্বাচিত কিছু নির্দিষ্ট অংশ হয়তো পড়েছে। অমুসলিমদের কী ধারণা? তাদের অধিকাংশই বিশ্বাস করে মুসলিম বুদ্ধিজীবীদের।  তাদের এই  বিশ্বাসটাও কোরান-হাদিস-তফসির না পড়েই। এরা ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞ, কিন্তু মতামত দেয় বিশেষজ্ঞের মতো। অজ্ঞতা সত্ত্বেও  যারা বিশেষজ্ঞর মতো আচরণ করে তাদের দু’টি শ্রেণি আছে।   একদল মূর্খ, একেবারে নিরেট মূর্খ, আর একদল ধান্দাবাজ। এই নিরেট মূর্খ ও ধান্দাবাজদের কথাকে ধ্রুবসত্য জ্ঞান না করে কৌতূহলী মানুষদের উচিৎ  কোনটা ঠিক বা কারা ঠিক জানার জন্যে ইসলামের ধর্মগ্রন্থের সাহায্য নেওয়া। যারা  সঠিক সিদ্ধান্তে আসতে চান তাদের জন্যে কোরান, হাদিস ও তফসির থেকে কিছু সূত্র/উদ্ধৃতি তুলে দিলাম নীচে।
ইংরেজদের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ ধর্মে খৃষ্টান হলেও নববর্ষ উদযাপনের উৎসব ধর্মীয় নয়,  তাই এতে  ধর্মীয় ভেদাভেদও থাকে না।  হিন্দু, মুসলমান, জৈন, ইহুদী, খৃষ্টান সবাই মিলেমিশে একসঙ্গে ইংরাজী নববর্ষ উদযপনের আনন্দে মেতে ওঠে। আসল কথা বন্ধুত্ব তো আর জাত-ধর্মের বেড়া মানে না।  বন্ধুত্বের প্রশ্নে ইসলাম কিন্তু অলঙ্ঘনীয় বেড়া দিয়ে রেখেছে।  সে বেড়া চীনের প্রাচীরকেও হার মানায়। বেড়াটা এ রকম – মুসলমানরা অমুসলমানদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে পারবে না। কোরান বলছে, হে বিশ্বাসীগণ! তোমাদের পূর্ববর্তী গ্রন্থপ্রাপ্তগণ যারা তোমাদের ধর্মকে উপহাস ও খেলার বস্তুরূপে গ্রহণ করেছে তাদের  ও অবিশ্বাসিগণকে  বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না। এবং তোমরা যদি বিশ্বাসী হও,  তবে আল্লাহকে ভয় করো  (সুরা মায়দা, ৫/৫৭) একটি আয়াতেই নয়, এ রকম নিষেধাজ্ঞা কোরানে রয়েছে আরো বহু আয়াতেই।  যেমন  ৩/২৮, ৩/১১৮-১২০;  ৪/১৪৪, ৯/২৩,   ৫৮/২২, ৫/৫৫-৫৭, ৫/৫১ ইত্যাদি।  মুসলমানরা যদি কাফেরদের বন্ধু ও অন্তরঙ্গ বন্ধু বানায় তবে ইসলামের চোখে তারা অত্যাচারী। এ প্রসঙ্গে কোরানের কোরানের ভাষ্যটি এ রকম,  হে মুমিনগণ! তোমাদের পিতা ও ভাই ঈমান বাদে কুফরীকে ভালোবাসিলে তাহাদেরকে অন্তরঙ্গ বানাইও না; যাহারা বানাই তাহারাই যালিম। (সুরা – তওবা, /২৩) ‘যালিম’ মানে অত্যাচারী। সুতরাং এটা স্পষ্ট প্রতীয়মান হুচ্ছে যে মুসলিমদের ইংরেজি নববর্ষ উদযাপন করা মানে কোরানের নির্দেশ লঙ্ঘন করা।
ইংরাজী নববর্ষ উদযাপন কোনো ধর্মীয় বিষয় নয়, এটা অধর্মীয় ও অসাম্প্রদায়িক বিষয়। কিন্তু ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে এটাও ভুল নয় যে এটা মুসলিমদের অনুষ্ঠান মোটেই নয়। কারণ ইসলাম যে ক্যালেণ্ডার অনুসরণ করে সেটা আরবি ক্যালেণ্ডার।  রোযা, নামায, হজ সবকিছু পালন করতে হয় আরবি ক্যালেণ্ডার অনুসারেই। সুতরাং আরবি ক্যালেণ্ডার বাদে আর সব ক্যালেণ্ডার হলো অবিশ্বাসীদের ক্যালেণ্ডার। কাফেরদের সঙ্গে যেখানে মেলামেশায় কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে সেখানে সেই ক্যালেণ্ডার অনুযায়ী মুসলমানদের নববর্ষ উদযাপন করা শরিয়তসম্মত কাজ না শরিয়তবিরোধী কাজ তা নির্ণয় করা নিশ্চয় কঠিন নয়।
কারো সঙ্গে বন্ধুত্ব না করা মানে তাকে শত্রু জ্ঞান করতে হবে এমন হওয়ার কথা নয়। কোরান কিন্তু এর উল্টো কথা বলে। বলে যে বন্ধু নয় সে শত্রু।  কোরান বলেছে,  হে মুমিনগণ! তোমরা মুমিন ব্যতীত  অন্য কাউকে অন্তরঙ্গ বন্ধুরূপে গ্রহণ করিও না, তারা তোমাদের অমঙ্গল সাধনে ত্রুটি করে নাতোমরা কষ্টে থাক তাতেই তাদের আনন্দশত্রুতাপ্রসূত বিদ্বেষ তাদের মুখেই ফুটে ওঠে আর যা কিছু তাদের মনের মধ্যে লুকিয়ে আছে তা আরও অনেকগুণ বেশী জঘন্য তোমাদের জন্য নিদর্শন বিশদভাবে বর্ণনা করে দেওয়া হলো, যদি তোমরা তা অনুধাবন করতে সামর্থ হও  (সুরা – ইমরান, /১১৮)  এ তো গেলো সমস্ত অবিশ্বাসীদের সম্পর্কে একটা সাধারণ মনোভাব। কিন্তু ইহুদি ও খৃষ্টানদের সম্পর্কে একেবারে তাদের নাম উল্লেখ করে বলা হয়েছে যে তারা মুসলমানদের শত্রু। কোরান বলছে, “- ইহুদীরা বলে - ওজায়ের আল্লাহর পুত্র, এবং খৃষ্টানরা বলে – মসীহ আল্লাহর পুত্র। এটি তাদের মুখের কথা, তারা পূর্ববর্তী অবিশ্বাসীদের কথা ও মত অনুকরণ করছে, আল্লাহ তাদের ধ্বংস করুক।” (সুরা – তওবা, ৯/৩০) এখানে ইহুদী ও খৃষ্টানদের ধ্বংস কামনা করা হয়েছে।  শুধু ধ্বংস কামনা নয়, কোরান ঘোষণা করেছে ইহুদিরা আল্লাহর কাছে চির অভিশপ্ত, কোনো কালেই ক্ষমা পাবে না এ প্রসঙ্গে কোরানের আয়াতটি বা ভাষ্যটি হলো,   ইহুদিগণ বলে যে আল্লাহর হাত আবদ্ধ। তাদের হস্তসমূহ শৃঙ্খলাবদ্ধ হবে  এবং তারা যা বলছে তার জন্যে  অভিশপ্ত হবে।  বরং তার উভয় হস্তই প্রসারিত, তিনি যেরূপ ইচ্ছা দান করে থাকেন এবং তোমার প্রতিপালক হতে তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তাতে তাদের অনেকেরই বিদ্রোহ ও অবিশ্বাস বাড়বে।  আমি তাদের মধ্যে উত্থানদিবস (কিয়ামত) পর্যন্ত শত্রুতা ও বিদ্বেষ সঞ্চার করেছি, যখন তারা যুদ্ধের অগ্নি প্রজ্বলিত করে, আল্লাহ তা নির্বাপিত করেন; এবং তারা পৃথিবীর বুকে অশান্তি করে বেড়ায়, বস্তুত আল্লাহ অশান্তি উৎপাদনকারীদের ভালোবাসেন না।” (সুরা – মায়দা, ৫/৬৪)    না, ওদের শুধু ধ্বংস কামনা করে এবং অভিশাপ দিয়েই মুহাম্মদ ক্ষান্ত হন নি, ওদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করারও আদেশ দিয়েছেন তিনি। সে আদেশটি হলো – “যারা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস করে না,  এবং আল্লাহ ও রাসুল যা বৈধ করেছেন, যারা তা বৈধ জ্ঞান করেনা, এবং যাদের গ্রন্থ দেওয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে যারা সত্য ধর্ম স্বীকার করে না, তোমরা তাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করো, যে পর্যন্ত তারা অধীনতা স্বীকার করে স্বহস্তে জিজিয়া দান না করে।”  (সুরা – তওবা, ৯/২৯)  – এই কথাগুলি বলা হয়েছে ইহুদী ও খৃষ্টানদের উদ্দেশ্যে।  যদি ‘সত্য’ ধর্ম স্বীকার না করে তার কী পরিণাম হবে? পরিণাম হবে মুণ্ডুচ্ছেদ যা এখন বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ইরাক, ইরান, নাইজিরিয়ায় এখন হরবকত হচ্ছে। এই দেশগুলিতে  অবিশ্বাসীদের নৃশংসভাবে যে হত্যাকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে তার শিক্ষা তো পেয়েছে মুহাম্মদের কাছ থেকেই। মুহাম্মদ নিজে হাতেই এরূপ শাস্তি দিতেন ইহুদি, খৃষ্টান ও পৌত্তলিকদের। এ প্রসঙ্গে স্মরণ করতে বলবো মদিনার ইহুদীদের বানু কোরাইজা গোষ্ঠীর ৯০০ জন পুরুষদের গলা কেটে হত্যা করার কথা। এই বীভৎস গণহত্যাকাণ্ডটি যে ঘটেছিলো সে কথা মুসলিম ধর্মগুরু এবং ঐতিহাসিকরাও অস্বীকার করেন না। আর তাছাড়া  কোরানেও এই ঘটনাটির উল্লেখ ও সমর্থন আছে ৩৩/২৬, ও ৩৩/২৭ নং আয়াতে। আয়াত দু’টি  হলো,  আর গ্রন্থধারীদের মধ্যের যারা তাদের পৃষ্ঠপোষকতা করেছিলো তাদের তিনি নামিয়ে এনেছিলেন তাদের দূর্গ থেকে, আর তাদের হৃদয়ে ভীতি সঞ্চার করেছিলেন; একদলকে তোমরা হত্যা করেছিলে ও বন্দি করেছিলে আর এক দলকে।  (৩৩/২৬)  আর তিনি তোমাদের উত্তরাধিকার করতে দিলেন তাদের জমিজমা ও তাদের বাড়িঘর ও তাদের ধনসম্পত্তি এবং এক দেশ যেখানে তোমরা অভিযান চালাও নি। আর আল্লাহ সব কিছুর উপরেই ক্ষমতাবান।” (৩৩/২৭)  একদলকে হত্যা করা বলতে ৯০০ জন পুরুষ ইহুদীকে হত্যা করার কথা বলা হয়েছে, আর একদলকে বন্দী করা বলতে তাদের শিশুসন্তান ও নারীদের কথা বলা হয়েছে। হ্যাঁ, সমস্ত নারী এবং নাবালক সন্তানদের ক্রীতদাস বানিয়ে মুসলমানদের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়েছিলো। 

হাদিসেও ভুরিভুরি নির্দেশ রয়েছে খৃষ্টান ও ইহুদিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার এবং তাদেরকে হত্যা করার। সে রকম একটি হাদিস হলো, - “রাসুলুল্লাহ (সাঃ বলেছেন, তোমরা ইহুদিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে। এমনকি তাদের কেউ যদি পাথরের আড়ালে ত্মোগোপন করে তাহলে পাথরও বলবে, ‘হে আল্লাহ আমার পেছনে ইহুদি আছে, তাকে হত্যা করো।” (বোখারী, ৫ম খন্ড, হাঃ নং- ২৭২৪)    

কোরানে ও ইসলামের ইতিহাসে এ রকম আয়াত ও দৃষ্টান্ত আরো অনেক রয়েছে।  উপরের আলোচনা থেকে নিশ্চয় আমাদের বুঝতে অসুবিধা হয় না যে মুসলমানদের অ-আরবীয়  কোনো কোনো ক্যালেণ্ডারের নববর্ষ উদযাপন করা ইসলাম মতে বৈধ, না অবৈধ। আর কোনো মুসলমান কাফেরদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করলে সে আর মুসলমান থাকে কী না সে বিষয়েই কোরান, হাদিস এবং মুহাম্মদের নিজস্ব কার্যকলাপ কোনো অস্পষ্টতা রাখে নি। আর এটাও বুঝতে অসুবিধা হয় না আল্লাহ ও মুহাম্মদের সংবিধানে কাফেরদের জন্যে কী কঠোর, নৃশংস ও বীভৎস শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে। অতএব এটাও বোধগম্য না ওয়ার কোনো কারণ দেখি না যে ইস্তাম্বুলে ইংরাজী নববর্ষ  এবং বাংলাদেশে রমনার বটমূলে বাংলা নববর্ষ উদযাপনকারীদের  গুলি চালিয়ে হত্যা করা ইসলাম অনুমোদন  করে কী না। আমি নিশ্চিত যে একদল মুসলমান আছে তারা এক কথায় বলবে যে আমি যা লিখেছি তা সব মথ্যে। দয়া করে তারা যেন সুনির্দিষ্ট করে বলে আমি কোনটা মিথ্যে লিখেছি। 


পরিশেষে মুসলিম বন্ধুদের উদ্দেশ্যে বলি যে ধর্মটার জন্যে নিজেদের সব থেকে বেশী গৌরবান্বিত বোধ করেন সেই ধর্মটাকে ভালো করে জানুন। এখন তো হাত বাড়ালেই সব কিছু পাওয়া যায়, জ্ঞানভাণ্ডার তো এখন বিজ্ঞানের দৌলতে হাতের মুঠোয়। পরের মুখে ঝাল খাওয়া আর কেনো, আর কতোদিন? নিজেরা পড়াশোনা করে যুক্তি ও বুদ্ধি দিয়ে সিদ্ধান্তে আসুন ইসলাম সম্পর্কে কারা ঠিক আর কারা ভুল বলছেন। ইসলাম সম্পর্কে মুসলিম বুদ্ধিজীবীরা যা বলছেন সেটা ঠিক, না কি লাদেন, মোল্লা ওমর, আবুবকর আল-বাগদাদি এবং জিহাদের জন্যে নিজেদের উৎসর্গ করেছে এমন অসংখ্যা মেধাবি মুজাহিদরা যা বলছে সেটা? যদি বোঝেন জিহাদিরা যা বলছে এবং করছে সেটাই আসল ইসলাম তাহলে আপনাদের কী করণীয় তা স্থির করুন। যদি মনে হয় একমাত্র আল্লাহর ধর্মই ঠিক এবং সেই ধর্মের পতাকার নীচে সবাইকে আনতে হবে যে কোনো উপায়ে তবে দেরী না করে যে কোনো একটা সন্ত্রাসবাদী জিহাদি গ্রুপে নাম লিখিয়ে ফেলুন। যদি মনে হয় ইসলাম শান্তি, সম্প্রীতি, সৌহার্দ, সহিষ্ণুতা ও মানবতার পক্ষে একটি বিপজ্জনক ধর্ম তাহলে কী করবেন সেটাও  নির্ণয় করুন। যদি আপনাদের বিবেক বলে সংকীর্ণতার ঊর্ধে উঠে মানবতার পক্ষে দাঁড়াতে তাহলে ইসলামের আসল স্বরূপ উন্মোচন করতে মুখ খুলুন এবং পারলে কলম ধরুন। যদি ভয়কে জয় করতে না পারেন চুপচাপ থাকুন, দয়া করে বুদ্ধিজীবীদের মতো ইসলাম শান্তি-সম্প্রীতি-সহিষ্ণুতা এবং দয়া-মায়া-ক্ষমার ধর্ম বলে ভণ্ডামি করবেন না।         

        
     

Saturday, December 24, 2016

অবিশ্বাসী নারীকে জোরপূর্বক বিয়ে



‘জোরপূর্বক বিয়ে’ মানে একজন নারীকে জবরদখল করে নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাকে বিয়ে করা। কোনো নারীকে বিয়ে করে তার সঙ্গে যৌনমিলন করলে সেটা ধর্ষণের পর্যায়ে পড়ে। এমন বিয়েকে নিন্দা করার জন্যে নিন্দাসূচক কোনো ভাষা বা বিশেষণই যথেষ্ট নয়। যথেষ্ট নয় কুৎসিৎ, কদর্য, পাশবিক, বর্বরোচিত, জঘন্য, অমানবিক, ইত্যাদি  কুশব্দগুলিও।  রূপ  বিয়ে এতোই অসভ্য প্রকৃতির যা  কোনো সভ্য সমাজের পক্ষেই গ্রহণযোগ্য নয়। প্রাচীন কালে ও মধ্য যুগে যখন দাসপ্রথা চালু ছিলো তখন রাজা-বাদশা-সম্রাটরা এভাবে তাদের দখলে থাকা দাসীদের মধ্যে যারা খুবই রূপসী তাদের বিয়ে করতো সেদাসপ্রথার যুগে রাজ্য বা সাম্রাজ্য বিস্তারের যুগে রাজা-মহারাজারা যুদ্ধ করতো। যে রাজা বা সম্রাট যুদ্ধে বিজয়ী হতো সে যেমন বিজিত রাজার রাজ্যের দখল নিতো তেমনই সেখানকার মানুষদেরও বন্দী করে নিয়ে এসে দাস বানাতো। বলা বাহুল্য যে বন্দীদের মধ্যে নারীরাও থাকতো। তাদের মধ্যে যাদের যৌবন ও রূপ দেখে তারা মোহিত হয়ে যেতো তাদের বিয়ে করতো। বিয়ে করতো শুধু ভোগ করবে বলে। ফলে রাজা-বাদশা-সম্রাটদের হারেম সদা রূপসী নারীদের ভিড়ে টইটম্বুর থাকতো। সেই রূপসী  জায়াদের সঙ্গে  রাজা-বাদশা-সম্রাটদের শুধু দৈহিক সম্পর্কই থাকতো, সেখানে প্রেমের প্রবেশ ছিলো নিষিদ্ধ। হারেমের বাসীন্দা  ঊর্বশীদের রাণী বা সম্রাজ্ঞী নামে অভিহিত করা  হতো এবং  তাদের সেবায়  অনেক দাসদাসী নিযুক্ত থাকতো বটে, কিন্তু  প্রকৃত পক্ষে তাদের কোনো অধিকার ও স্বাধীনতা ছিলো না দেওয়া হতো না তাদের এতটুকু সম্মান ও মর্যাদা  সুতরাং  সংশয়ের বিন্দুমাত্র অবকাশ নেই যে দাসীদের বেছে বেছে বিয়ে করাটা ছিলো বিয়ের নামে এক  প্রকারের প্রহসন ও তামাশাসে প্রহসন ও তামাশা  করা হতো  বস্তুতঃ  সমগ্র নারীজাতিরে সঙ্গে। ফলে রাজা-বাদশাদের ঐ তামাশা-বিয়ে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পেলেও  সামাজিক স্বীকৃতি পায়নি।  রাজা, বাদশা বা সম্রাটরা সর্ব যুগেই নিজেদের ঈশ্বরের প্রতিনিধি বলে দাবি করতো। তারা বলতো যে তারা যা বলছে তা ঈশ্বরের কথা, তারা যে আইন প্রণয়ন করছে তা ঈশ্বরের আইন। কিন্তু তারা কেউ  দাসীদের জোর করে বিয়ে করার অপরাধকে ঢাকবার জন্যে ঈশ্বরের নামে বৈধ বলে প্রচার করেনি ফলে যে যুগে দাসপ্রথার রমরমা ছিলো সে যুগেও ‘জোরপূর্বক বিয়ে’ সামাজিক প্রথা হিসেবে স্বীকৃতি ও প্রতিষ্ঠা পায়নি।    
সব যুগেই রাজা, বাদশা বা সম্রাটদের হুকুম তামিল করাই ছিলো ধর্মগুরুদের কাজতারা তো আসলে   রাজা-মহারাজাদের উচ্ছিষ্টভোগী ভৃত্যই ছিলো। এই ভৃত্যরা তাদের প্রভুদের স্বার্থে ধর্মের বিধান তৈরী করতো এবং সেগুলো ঈশ্বরের নামে প্রচার করতো। পরে সেই বিধানগুলোই ধর্মগ্রন্থে লিপিবদ্ধ হতো ঈশ্বরের বিধান বলে। কিন্তু কোনো ধর্মগুরু ‘জোরপূর্বক বিয়ে’কে ঈশ্বরের দোহায় দিয়ে বৈধতা দিয়েছে বলে শোনা যায় না।  ফলে কোনো ধর্ম ও ধর্মগ্রন্থই এরূপ বিয়েকে ঈশ্বরের নামে বিধিসম্মত বলে স্বীকৃতি প্রদান করেনিতবে এক্ষেত্রে একমাত্র ব্যতিক্রম হলো ইসলাম ধর্ম। ইসলামে এরূপ জোরপূর্বক বিয়ে করা দোষের কিংবা অপরাধের নয়। এভাবে বিয়ে করা ইসলাম ধর্মে জায়েজ তথা বিধিসম্মত। ইসলামের প্রবর্তক মুহাম্মদ এই বিয়েকে আল্লাহর নামে মান্যতা ও বৈধতা দেশুধু বৈধতা প্রদানই করেন নি,  আরবে এবং সমগ্র ইসলামি সাম্রাজ্যে মুসলিম সমাজে এই বিয়ের ব্যাপক প্রচলন ও প্রসার ঘটিয়েছিলেন। তিনি নিজেও কয়েকজন অপরূপ সুন্দরী যুবতীকে জোরপূর্বক বিয়ে  করেছিলেনএর মধ্যে দিয়ে নারীজাতিকে তিনি  কী চোখে দেখতেন তার সম্যক পরিচয় পাওয়া যায়। শুধু পণ্যই নয়, নারী ছিলো তাঁর চোখে স্থাবর সম্পত্তিও যাদের লুঠ করা ও ভোগ করা যায়। 
না, শরিয়তি আইনে কিন্তু ‘জোরপূর্বক বিয়ে’র উল্লেখ নেই যেমন ‘চুক্তি বিয়ে’ (contractual marriage), ‘হিল্লা বিয়ে’ এবং ‘মুতা বিয়ে’র উল্লেখ আছে। থাকার কথাও নয়। কারণ, জোরপূর্বক বিয়ে করার ঘটনা আজো ঘটে, কিন্তু সে কথা কেউ স্বীকার করে না।  বরং নিজেদের  কুকীর্তি ঢাকা দিতে সবাই অন্য গল্প বলে। মুহাম্মদ ও তাঁর শিষ্যরাও তাই সে কথা মুখে স্বীকার করেন নি এবং তাঁরাও তাঁদের কুকীর্তিগুলি ঢাকতে বহু গল্প বানিয়েছেন। এ সব কথা থাক। মূল কথা হলো, এটাই নির্মম সত্য ও বাস্তব যে  জোরপূর্বক বিয়ে  ইসলামে আইনসিদ্ধ।  এটা যে বাস্তব এবং সত্যি তার হাজারো প্রমাণ  রয়েছে কোরান, হাদিস এবং মুহাম্মদের জীবনচর্চায়। প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য যে  মক্কা থেকে মদিনা যাওয়ার পর মুহাম্মদ এ বিয়ের প্রবর্তন করেন। মক্কায় এটা প্রচলন করার কথা  তাঁর পক্ষে ভাবা সম্ভবই ছিলো না। কারণ, প্রথমতঃ প্রথম জায়া খাদিজার উপস্থিতি এবং দ্বিতীয়তঃ  সাংগঠনিক দুর্বলতা। খাদিজা শুধু তাঁর জায়া ছিলেন না, তিনি তাঁর মনিবও ছিলেন।  কারণ বিয়ের আগে খাদিজা তাঁকে তাঁর বাণিজ্য দেখভাল করার জন্যে কর্মচারী নিযুক্ত ছিলেন। সুতরাং খাদিজার অধীনে থেকে নারীবিরোধী ও নারীবিদ্বেষী আইন প্রণয়ন করার কথা তাঁর পক্ষে স্বপ্নেও ভাবা সম্ভব ছিলো না। আর নতুন আইন বা প্রথা্র প্রচলন ঘটাবার জন্যে শক্তি ও সংগঠন থাকা আবশ্যক তার কোনোটাই মুহাম্মদের ছিলো না যতদিন তিনি মক্কায় ছিলেন।  প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য যে খাদিজার জীবদ্দশায় নারীবিরোধী  আইন তো দূরের কথা, নারীবিরোধী  একটা উক্তিও মুহাম্মদের কণ্ঠে শোনা যায় নি।
মদিনায় গিয়ে মুহাম্মদ অচিরেই তাঁর মত ও পথের আমূল পরিবর্তন আনেন। শান্তি, সহিষ্ণুতা ও ধৈর্যের পথ ছেড়ে বলপ্রয়োগ ও হিংসার পথ অবলম্বন করেন। আর সে পথটাই ইসলামের পরিভাষায় হলো পবিত্র জিহাদ (The holy war)ইসলাম প্রচার ও প্রসারের  হিংসাত্মক মত ও পথকে ঢাকবার জন্যে মুহাম্মদ   তার গায়ে ‘পবিত্র জিহাদ’-এর চাদর (তত্ত্ব) জড়িয়ে দেন। জিহাদের অর্থ হলো আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠার জন্যে আল্লাহর শত্রুদের বিরুদ্ধে হিংসাত্মক সশস্ত্র যুদ্ধ। তিনি শত্রুর নতুন সংজ্ঞা বাঁধলেন। বললেন,  যারা আল্লাহ ও আল্লাহর প্রেরিত
পুরুষকেস্বীকার করে তারাই আল্লাহর শত্রুদের ইসলামের পরিভাষায়  আল্লাহর শত্রুদের অবিশ্বাসী বলা হয়।  মুহাম্মদ আরো বললেন যে জিহাদ করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্যে ওয়াজিব অবশ্য পালনীয় কর্তব্য)। প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য যে ইসলাম প্রতিষ্ঠা ও প্রসারের ক্ষেত্রে মুহাম্মদের  প্রধান অস্ত্রই ছিলো  জিহাদ।   
জিহাদে শত্রুদের উপর বিজয় অর্জিত হলে শত্রুদের অধিকারে থাকে ভূমিতে ইসলামের পতাকা ওড়ানো হতো। তারপর  তাদের সোনা-দানা, হীরে-জহরত যতকিছু মূল্যবান সম্পত্তি থাকতো সবই লুঠ করে  মদিনায় নিয়ে আনা হতো। আর সেই সঙ্গে শত্রুদের মধ্যে যারা পালাতে পারতো না তাদের নারী, পুরুষ ও শিশু নির্বিশেষে সকলকেই বন্দি করে নিয়ে আসা হতো। বন্দি মানুষগুলো-সহ লুণ্ঠিত সমস্ত দ্রব্যই   পাঁচ ভাগের চার ভাগ মুহাম্মদ বণ্টন করে দিতেন জিহাদে অংশগ্রহণকারী মুসলমানদের মধ্যে। একদা স্বাধীন মানুষগুলোকে মুহাম্মদ এভাবে দাসত্বের শিকলে বেঁধে ফেলতেন। বিশ্বজুড়ে যখন সমাজ বিকাশের অনিবার্য নিয়মে দাসপ্রথা অবসান হওয়ার পথে তখন মুহাম্মদ সেই দাসপ্রথাকে পুনরায়  ইসলামে প্রবর্তন করলেন বল্গাহীনভাবে। বলা বাহুক্য যে প্রবর্তন করলেন আল্লাহর নামে।  মুহাম্মদ তাঁর শিষ্যদের বললেন যে তোমরা যা অর্জন করেছো তা পবিত্র জেনে ভোগ করো – এটাই আল্লাহর হুকুম। অবিশ্বাসী নারীদের প্রসঙ্গে বললেন যে তোমাদের ভাগে যে নারীরা পড়েছে তাদের তোমরা তোমাদের  স্ত্রীর ন্যায় যথেচ্ছ ভোগ করতে পারো, পছন্দ হলে তাদের বিয়ে করতে পারো, তাদের বিক্রি করেতেও পারো। মুসলমানরা তাই স্বভাবতই অবিশ্বাসী বন্দি নারীদের স্ত্রীরূপে যথেচ্ছ ভোগ করতো এবং এরই পাশাপাশি অতিশয় সুন্দরী ও অল্পবয়সী নারীদের রূপলাবণ্য দেখে মুগ্ধ হলে বিয়েও করতো। বলা বাহুল্য যে অবিশ্বাসী অসহায় নারীদের প্রবল অনিচ্ছা, অনীহা,  অসম্মতি আপত্তিকে অগ্রাহ্য করেই তারা বিয়ে করতো। অবিশ্বাসী নারীদেরতো প্রবল আপত্তি থাকায় স্বাভাবিক ছিলো। কারণ, তাদের চোখে জেহাদে অংশগ্রহণকারী মুসলমানরা ছিলো এক একজন ভয়ঙ্কর দস্যু। সেই দস্যুদের তারা তারা মনে মনে প্রচণ্ড ঘৃণা করতো। ঘৃণা করাটাই স্বাভাবিক ছিলো, কারণ তারাই তো তাদের চোখের সামনে তাদের পতি-পিতা-ভ্রাতা-সহ আত্মীয়-স্বজনদের হত্যা করেছে নির্মমভাবে। অথচ কী আশ্চর্য যে, সেই হত্যাকারী দস্যুদেরই মুহাম্মদ সমাজের সর্বশ্রেষ্ঠ মহান সন্তান বলে আখ্যায়িত করেছেন।  সুতরাং এ কথা বলার অপেক্ষা থাকে না যে, কোনো অবিশ্বাসী বন্দি নারীদের যখন মুসলমানরা বিয়ে করতো তখন তারা সেই বিয়ে মন থেকে কখনোই মেনে নিতে পারতেন না। অসহায় নারীদের জোরপূর্বক এই বিয়েকে মুহাম্মদ তবুও  বৈধতা দিতে কুণ্ঠা ও দ্বিধা করেন নি।  
লুঠ করে নিয়ে আসা কতিপয় অবিশ্বাসী বন্দিনারী তথা দাসীকে মুহাম্মদ নিজেও বিয়ে করেছিলেন। তার জন্যে তাঁর প্রবল সমালচনাও হয়েছিলো সমগ্র আরবে। সমালোচনা শুধু বাইরেই হয় নি, প্রবল গুঞ্জন  হয়েছিলো তাঁর শিষ্যদের মধ্যে এবং এমনকি তাঁর পত্নীদের মধ্যেও। সে সব সমালোচনা বন্ধ করার জন্যে অবশ্য আল্লাহ তাঁর সহায় হতে ভোলেনি! আল্লাহ তৎপরতার সাথে তাঁকে বৈধতার সীলমোহর প্রদান করেছিলো!  কোরানের  সেই সীলমোহরের বয়ানটি লিপিবদ্ধ রয়েছে।  দেখা যাক সে বয়ানে আল্লাহ কী বলেছে -   হে নবী! আমি তোমার জন্য বৈধ করেছি তোমার স্ত্রীগণকে যাদের তুমি দেনমোহর দান করেছ এবং এবং বৈধ করেছি তোমার অধিকারভুক্ত দাসীগণকে, যাদের আমি দান করেছি, এবং বিবাহের জন্য বৈধ করেছি তোমার চাচাতো ভগ্নী ফুফুতো ভগ্নী, মামাতো ভগ্নী খালাতো ভগ্নী যারা তোমার জন্যে দেশ ত্যাগ করেছে, এবং কোনো বিশ্বাসী নারী নবীর নিকট নিবেদন করতে চাইলে সেও বৈধ, এটা বিশেষ করে তোমার জন্য, অন্য বিশ্বাসীদের জন্য নয়, যাতে তোমার কোনো অসুবিধা না হয়বিশ্বাসীদের স্ত্রী এবং তাদের দাসীগণ সম্বন্ধে যা নির্ধারিত করেছি তা আমি জানি । আল্লাহ্‌ ক্ষমাশীল, দয়াময়।” (সুরা আহযাব, ৩৩/৫০)  কোরান বলছে ‘এবং বৈধ করেছি তোমার অধিকারভুক্ত দাসীগণকে, যাদের আমি দান করেছি’। বলা বাহুল্য যে এই ‘অধিকারভুক্ত দাসীগণ’ হলো সেই অবিশ্বাসী অসহায় নারীগণ যাদের লুঠ করে নিয়ে এসে ক্রীতদাসী বানানো হয়েছে। অবিশ্বাসী অসংখ্য মানুষকে হত্যা করে তাদের মাতা-পত্নী-ভগ্নীদের লুঠ করে নিয়ে এসে মুহাম্মদ বললেন যে ঐ নারীরা হলো আল্লাহর দান। কী নিষ্ঠুর রসিকতা! সেই অবিশ্বাসী নারীদের ভোগ করা ও বিয়ে করা যে মুহাম্মদ ছাড়াও সকল মুসলমানদের জন্যেই বৈধ সে কথা আগেই উল্লেখ করা হয়েছে। এ বিষয়ে কোরানের  ভাষ্যটি হলো এ রকমঃ “এবং নারীদের মধ্যে সধবাগণ (অবৈধ); কিন্তু তোমাদের দক্ষিণ হস্ত যাদের অধিকারী – আল্লাহ তোমাদের জন্য তাদেরকে বিধিবদ্ধ করেছেন।” (সুরা নিসা, ৪/২৪)  প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য যে এখানে যে সধবা নারীদের অবৈধ করা হয়েছে তারা কেবল মুসলিম নারী, অবিশ্বাসী নারীদের জন্যে এটা প্রযোজ্য নয়, তারা সধবা হলেও মুসলমানদের জন্যে তারা বৈধ।  অধিকারভুক্ত দাসী তথা অবিশ্বাসী নারীগণ মুসলমানদের জন্যে বৈধ এ কথা কোরানের অনেক আয়াতেই বলা হয়েছে।  সে রকম আর একটি আয়াত হলো,  “আর যদি তোমরা আশংকা কর যে পিতৃহীনগণের প্রতি সুবিচার করতে পারবে না, তবে নারীগণের মধ্য হতে তোমাদের মন মতো দু’টি, ও তিনটি ও চারটিকে বিয়ে করো;কিন্তু যদি তোমরা আশংকা করো যে, ন্যায় বিচার করতে পারবে না, তবে মাত্র একটি অথবা তোমাদের দক্ষিণ হস্ত যার অধিকারী (ক্রীতদাসী), এটা অবিচার না করার নিকটবর্তী।” (সুরা নিসা, ৪/৩) প্রসঙ্গতঃ সাহাবিদের অনেকের মধ্যেই যথেষ্ট মূল্যবোধ ও বিবেকবোধ ছিলো। ফলে তারা পরনারীদের ভোগ করা ও বিয়ে করার বিধানটা তারা মেনে নিতে পারেনি। তাদের সেই বিবেক বোধ ও মূল্যবোধকে ধ্বংস করতে মুহাম্মদ বারবার আল্লাহর ওহি আবৃত্তি করেছেন। সে রকম একটি ওহি হলোঃ  যুদ্ধে যা তোমরা লাভ করেছ তা বৈধ ও উত্তম ভেবে উপভোগ করো (সুরা আনফাল, /৬৯)   
আগেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, অধিকারভুক্ত অবিশ্বাসী নারীদের সম্মতি ব্যতিরেকেই মুসলমানরা বিয়ে করতো। সুতরাং এ ধরণের বিয়ে বলা বাহুল্য যে জোরপূর্বক বিয়ের শ্রেণিতেই পড়ে। পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে যে  এরূপ জোরপূর্বক বিয়ে মুহাম্মদ নিজেও করেছিলেন। সে রূপ বিয়ে করা পত্নীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য তিনজন ছিলেন জুবেইরিয়া,  সাফিয়া এবং রায়হানা বলা বাহুল্য যে এই তিনজনই ছিলেন কম বয়সী এবং অতীব সুন্দরী। প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য যে এঁরা ছিলেন ইহুদী সম্প্রদায়ের অভিজাত পরিবারের সধবা নারী যাদের পতিদের নির্মভাবে হত্যা করা হয়েছিলো। এঁদের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে ‘মুহাম্মদের হারেম সংবাদ’ অধ্যায়ে।           


বাংলাদেশের গণঅভ্যুত্থানে ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাইনি – পাঁচ

  দ্বিতীয় অধ্যায় শেখ হাসিনা ও শেখ মুজিবের প্রতি তীব্র গণরোষের নেপথ্যে ২০২৪ এর জুলাই অভ্যুত্থানের সফল পরিসমাপ্তি ঘটে ৩৬ দিন পর (৫ই ...