Tuesday, July 14, 2015

রোযা-নামাজ-হজ এসব ধর্মীয় আচারগুলি সবই প্যাগান আরবদের থেকে মুহাম্মদের টুকলি করা





রমজান বা রামাদান মাস হলো আরবী ক্যালেণ্ডারের নবম মাস। এ মাসে ৩০টি [কোনো মাসে ২৯টি] রোযা রাখার নির্দেশ আছে মুসলমানদের প্রতি। এ মাসটি মুসলিমদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ মাস। তাদের কাছে এটি পবিত্র মাসও বটেতারা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে যে এ মাসে কোরান অবতীর্ণ হয়েছিলো। অন্যান্য আসমানি গ্রন্থ যেমন তাউরাত, ইঞ্জিল, যবুর ইত্যাদি গ্রন্থগুলিও অবতীর্ণ হয়েছিলো এ মাসেই। তাদের বিশ্বাস এ মাসে এক রাত্রির এবাদত হাজার রাত্রির এবাদত অপেক্ষা বেশী ফলদায়ক। রাত্রিটি লাইলাতুল কদর নামে অভিহিত। বিশ্বাস করে যে এ মাসে বেহেস্তের দরজা খুলে দেওয়া হয় এবং বন্ধ রাখা হয় দোজখের দরজা। এ মাসে আল্লাহ শয়তানকে বেঁধে রাখে যাতে সে পাপ কাজে মানুষকে টেনে নিয়ে যেতে না পারে। মুসলিমদের বিশ্বাস রামাদান মাসে মাস ব্যাপী রোযা রাখার নির্দেশ মানব জাতির কাছে আল্লহর এক এমন বিশেষ দান বা উপহার যার তুলনা হয় না। তারা আরও বিশ্বাস করে যে আল্লাহ তার দেওয়া সব উপহারের সেরা এই উপহারটি মুহাম্মদের মাধ্যমে মানব জাতির কাছে প্রথম প্রেরণ করেছিল ৬২৪ খৃষ্টাব্দে বদর যুদ্ধের প্রাক্কালে। এবং সেবারই প্রথম রোযা রেখে মুহাম্মদ ও তাঁর সাহাবিগণ বদর প্রান্তে জিহাদের জন্যে যাত্রা শুরু করেছিলেন।   
রমাদান মাসের রোযা মুহাম্মদের উপরেই প্রথম নাযিল (অবতীর্ণ) হয়েছিল বলে মুসলমানরা যা বিশ্বাস করে দৃঢ়ভাবে তা কিন্তু মোটেই সত্য ঘটনা নয়। রোযা হলো প্যাগান আরবদের তথা মক্কার কুরাইশ ও অন্যান্য আরব পৌত্তলিক তথা মুশরিকদের বহু পুরানো ধর্মীয় আচার ও রীতি। মুহাম্মদ নিজেও তা পালন করতেন পরম নিষ্ঠায় ও রোযা রাখতেন। প্যাগান আরবরা রোযার সময় সারা দিন নির্জলা উপবাস থাকতো এবং রোযাব্রত পালন করার সময় যৌনক্রিয়া থেকে বিরত থাকতো ঠিক যেমন মুসলমানরা এখন করে। মুহাম্মদ রমাদান মাসের সবটাই নিয়েছেন প্যাগান আরবদের নিকট থেকে এবং পরে সেগুলির ইসলামিকরণ করেছেন। হ্যাঁ, হাদিসে এর প্রমাণ রয়েছে। আয়েষা, মুহাম্মদের সর্ব কনিষ্ঠ ও প্রিতম বউ, হাদিসটি এভাবে বর্ণনা করেছেন, - "Ashura was a day on which the tribal of Quraish used to fast in the pre-Islamic period of ignorance. The Prophet also used to fast on this day. So when he migrated to Medina, he fasted on it and ordered (the Muslims) to fast on it.**When the fasting of Ramadan was enjoined, it became optional for the people to fast or not to fast on the day of Ashura.’ [Shahih Bukheri 5:58:172] পৌত্তলিক আরবরা ইসলামের আগমনের বহুকাল পূর্ব থেকেই মহরম মাসের দশ তারিখ রোযা রাখতো যাকে আশুরা বলা হয়।  দশই মহরম আজও মুসলমানদের মধ্যে রোযা রাখার রীতি চালু আছে। এই দশ তারিখেই মুহাম্মদের নাতি ইমাম হোসাইন ইসলামের ৬ষ্ঠ খলিফা ইয়াজিদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছিলেন। আশুরার অনেক পরে রমাদান মাসে মাসব্যাপী রোযা রাখার প্রচলন শুরু হয়েছিলো সাবিয়ানদের হাত ধরেঅর্থাৎ রমাদান মাসে মাসব্যাপী রোযা রাখাটা সাবিয়ানদের ট্র্যাডিশন। মুহাম্মদ সাবিয়ানদের কাছ থেকেই নামাজ ও রোযার ধর্মীয় রীতিগুলি গ্রহণ করে পরে সেগুলির ইসলামিকরণ করেন। সাবিয়ানরা ছিলো  ইরাকের একটি উপজাতি যারা একেশ্বরবাদে বিশ্বাস করতো। সাবিয়ানদের সম্পর্কে কোরানেও কয়েকটা আয়াত আছে। একটি আয়াত হলো –“যারা বিশ্বাস করে, যারা ইহুদি হয়েছে এবং খৃস্টান ও সাবেইনদের মধ্যে যে আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস করে ও সৎকাজ করে, তাদের জন্য প্রতিপালকের নিকট পুরস্কার আছে ও তাদের জন্য কোনো ভয় নেই, এবং তারা দুঃখিত হবে না।” [২/৬২]   রোযার মাসকে কৃচ্ছ্ব সাধনের মাস বলে বড়াই করা হয়। এই মাসে খুবই কম খেয়ে দরিদ্র মানুষদের অনাহারে থাকার কষ্টগুলি শেয়ার করার মাস বলে রমাদান মাস নিয়ে অহঙ্কার করা হয়। বাস্তবে কিন্তু ঘটে উল্টোটাই, চলে মাসব্যাপী খাওয়ার উৎসব ও ভুড়িভোজের ফূর্তি। 
 
শুধু নামাজ ও রোযা নয়, প্যাগান আরবদের থেকে আরো অন্যান্য অনেক ধর্মীয় আচার-আচরণই  মুহাম্মদ গ্রহণ করেছিলেন। তাদের থেকে গ্রহণ করলেও তিনি তা কখনোই স্বীকার করেন নি। মক্কা জয় করার পর তিনি সাহাবিদের সঙ্গে নিয়ে প্রথম কাবা মন্দিরে প্রবেশ করে সেখানে প্যাগান আরবের যে ৩৬০ টি দেব-দেবীর বিগ্রহ ছিলো সেগুলি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেন। মুহাম্মদ একটি লাঠি নিয়ে ‘সত্য এসেছে, মিথ্যে দূরীভূত হয়েছে’ বলতে বলতে স্বহস্তে মূর্তিগুলি ভাঙা শুরু করেছিলেন। হাদিসে এ ঘটনাটির উল্লেখ আছে। আবদুল্লাহ বিন মাসুদ হাদিসটি এভাবে বর্ণনা করেছেন, :The Prophet entered into Mecca and (at that time) there were 360 idols around the Ka'aba. He started stabbing the idols with a stick he had in his hand and reciting: 'The truth (Islam) has come and falsehood (disbelief) was vanished.' [Shahih Bukheri, 3:43:658] মুহাম্মদ মূর্তিপূজা সম্পূর্ণ অবলুপ্তি ঘটান নি। একটি কালো পাথর যেটা পৌত্তলিকদের একটি দেবী হিসেবে পূজিত হতো সেটা তিনি রেখে দেনযারা ঐ পাথরটাকে তাদের দেবী জ্ঞানে পূজা করতো তারা সেতাকে চুম্বন করতো। মুহাম্মদ সেই পাথরটি এবং সেটাকে প্রাক-ইসলাম যুগের চুম্বন করার ধর্মীয় রীতিটিও বহাল রেখে দেন। সেই পাথরটিই এখন মুসলমানদের কাছে একটি পবিত্র পাথর [বড়ো উপাস্য] হিসেবে পূজিত হচ্ছে।  মুসলমানরা হজ বা উমরাহ করতে মক্কা গেলে  সেই  পাথরটিকে চুম্বন করে। পাথটি আল-হজর আল-আসওয়াদ নামে খ্যাতি লাভ করেছে। মুসলমানরা বিশ্বাস করে যে পাথরটি স্বয়ং আল্লাহ পাঠিয়েছিলো আদমের [বিশ্বের প্রথম মানব] সময়। পাথরটি ছিলো দুধের মতো ধবধবে সাদা, মুসলমানদের পাপ শোষণ করে করে কালো হয়ে গেছে। এই পাথরটি কিন্তু সেই পাথর যেটা একদা আরবের তাইফ অঞ্চলের পৌতলিকদের দ্বারা চন্দ্রের দেবী ‘আল-লাত’ হিসেবে পূজিত হতো।  প্রথম দিককার মুসলিম ঐতিহাসিক ও মুহাম্মদের জীবনীকারগণ এ কথা  তাঁদের রচনায় লিখে গেছেন।  হিসাম ইবন আল কালবি তাঁর "The book of idols" গ্রন্থে লিখেছেন,that 'AL-LAT' stood in al-Taif and more recent than Manah. She was a cubic rock beside which a certain Jew used to prepare barley porridge (sawiq). Her custody was in the hands of the banu 'Attab-ibn-Malik' of the Tayif, who had built an edifice over. (...).আল-লাত’কে প্যাগান আরবরা তাদের প্রধান দেবতা আল্লাহর তিন কন্যার এক কন্যা বলে বিশ্বাস করতো। এ কথা কোরানের ৫৩/১৯-২২ নং আয়াতে উল্লেখ আছে। কোরান লিখছে, “তোমরা ভেবে দেখেছো কি ‘লাত’ ও ‘ওজ্জা’ এবং তৃতীয় আরেকটি ‘মানাত’ – এর  সম্পর্কে? তোমরা কি মনে করো পুত্র-সন্তান তোমাদের জন্য আর কন্যা-সন্তান আল্লাহর জন্য? এরূপ বণ্টন তো অসঙ্গত বণ্টন।”
প্রাক ইসলাম যুগে আরবরা দিনে পাঁচ বার নামাজ পড়তো। তারা নামাজ পড়তো মক্কার দিকে মুখ করে। পারসিয়ান জরথ্রুস্টরাও দিনে পাঁচ বার নামাজ পড়তো। তারা নামাজ পড়তো সুর্যের দিকে মুখ করে। নামাজ পড়ার আগে জরথ্রুস্টরা হাত-পা-মুখ ধুয়ে নিতো [ওজু করতো]  যেমন মুসলিমরা করে। অর্থাৎ ‘নামাজ’ ও ‘ওজু’ এসব ধর্মীয় রীতি ও আচার-আচরণও মুসলমানদের নিজস্ব আবিষ্কার আদৌ  নয়, সবই তারা নিয়েছে প্যাগান আরব ও পারসিক জরথ্রুস্টদের নিকট থেকে। পরে সেগুলির ইসলামিকরণ করা হয়েছে। নামাজের ইসলামিকরণ করণ করতে গিয়ে মুহাম্মদ একটা মজার গল্প তৈরী করেছিলেন যা মুসলমানরা সত্যি বলে বিশ্বাস করে। গল্পটা মিরাজের গল্প নামে খ্যাততিনি একরাত্রে বিশেষ এক যানে সাত আসমান পার হয়ে আল্লাহর দরবারে আলাহর মুখোমুখি হাজির হন। আসমান মানে আকাশ, আর আকাশ মানে মহাশূন্য। সুতরাং আসমান বা আকাশ পার হওয়াটা নিছকই আকাশ সম্পর্কে অজ্ঞ মানুষদের সামনে বলা বানানো গল্প। আল্লাহ তখনই নাকি মুহাম্মদের মাধ্যমে মুসলমানদের উপর নামাজ পড়ার বাধ্যতামূলক আদেশ দেন। 
 
আল্লাহ প্রথমে দিনে পঞ্চাশ বার নামাজ পড়ার আদেশ দিয়েছিলেন মুহাম্মদকে এবং সেটাই শিরোধার্য করে তিনি ফিরে এসেছিলেনে। মুসা নবি এ কথা শুনে মুহাম্মদকে বলেন যে এতবার তোমার উম্মতরা নামাজ পড়তে পারবে না, তুমি আল্লাহর কাছে ফিরে যাও এবং কমিয়ে নিয়ে এসো। মুহাম্মদ নাকি তখন উপলব্ধি করেন যে, তাই তো, এটা তো বড্ড বেশী হয়ে গেছে। তখন তিনি আল্লাহর কাছে ফিরে গিয়ে নামাজের সংখ্যা কমানোর আর্জি করেন। আল্লাহ সেটা কমিয়ে পাঁচ ওয়াক্ত করে দেন। পঞ্চাশ থেকে কমে একবারে পাঁচ হয় নি কিন্তু। মুসার পরামর্শে মুহাম্মদ বার কয়েক গিয়ে পাঁচে নামিয়ে এনেছিলেন। প্রশ্ন ওঠে যে দিনে পাঁচ বারের বেশি নামাজ পড়া সম্ভব নয় এই সহজ কথাটা মুসা বুঝতে পেরেছিলেন কিন্তু আল্লাহ বা তার সর্ব শ্রেষ্ঠ ও শেষ নবি বুঝতে পারে নি কেনো? পঞ্চাশ বার কেনো, এখন তো প্রতিটি মুহূর্ত মহা মূল্যবান, ফলে ব্যস্ত মানুষের পক্ষে পাঁচ বারও নামাজ পড়া অসম্ভব। যাক সে কথা। হাদিসে এ গল্পটি বর্ণিত হয়েছে এভাবে – ‘when Muhammed met Allah in heaven, Allah demanded 50 prayers per day. But with help of Moses Muhammed bargained with Allah and finally he was successful to reduce 50 prayers per day to 5 prayers a day. Even the Quran says (4:28) 'god wished to lighten your burden, for the human being is created weak.' (Shahih Bukhari Book- b, no-345). নামাজের ভার লঘু করা প্রসঙ্গে ৪/২৮ নং আয়াতের বাংলা ভাষ্যটি হলো, “আল্লাহ তোমাদের ভার লঘু করতে ইচ্ছা করেন, যেহেতু মানুষ সৃষ্টিগতপভাবেই দুর্বল।”
হজের সময় মুসলিমরা দুটি পাহাড়ের মধ্যে সাত বার হাঁটাহাঁটি করেপাহাড় দুটির নাম আল-সাফা ও আল-মারওয়া। এই ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানটাও প্যাগান আরবরা বহুকাল প্রাচীন কাল থেকেই পালন করতো। একটি হাদিসে এর প্রমাণ রয়েছে। হাদিসটি এ রকম - “I asked Anas bin Malik, "Did you dislike to perform Tawef between mountain Al-Safa and mountain Al-Marwa?" He said, "Yes, as it was one of the ceremonies of the days of the pre-Islamic period of ignorance, till Allah revealed 'verily al-Safa and al-Marwa are among the rites (symbols) of Allah. It is therefore no sin for him who performs the pilgrimage to the Kaa’ba, or performs Umrah to perform Tawaf between them.(Bukheri, vol-2, Book-26, no-710) শুধু হাদিসে নয়, এটা কোরানের ২/১৫৮ নং আয়াতেও আছে। আল্লাহ বলছে, “নিশ্চয় ‘সাফা’ ও ‘মারওয়া’ আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্তর্গত, সুতরাং যে কেউ এই গৃহের [কা’বা] ‘হজ’ ‘ওমরা’ সম্পন্ন করে, এ দুটি প্রদক্ষিণ করলে তার কোনো পাপ নেই এবং যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় সৎকাজ করে নিশ্চয় আল্লাহ গুণগ্রাহী সর্বজ্ঞ।”
অর্ধচন্দ্রাকার চাঁদকে মুসলিমরা প্রায় দেবতার মতোই জ্ঞান করে। চাঁদ দেখে রোজা শুরু করে, চাঁদ দেখে রোজা শেষ করে, এবং চাঁদ দেখে ঈদের নামাজ পড়ে। এটাও প্যাগান আরবদের সময় থেকে চলে আসছে। অর্ধচন্দ্রাকৃতির চাঁদ ছিলো তাদের দেবতার প্রতীকহজের সময় কাবা প্রদক্ষিণ করা, এহরাম বাঁধা ও মাথা মুণ্ডন করা – এগুলোও ছিলো প্যাগান আরবদের ধর্মীয় রীতি।  ইসলাম প্যাগান আরবদের এগুলোর সব কিছুই নিয়েছে কেবল একটা বাদ দিয়ে। প্যাগানরা হজ করার সময় উলঙ্গ হয়ে কা’বা প্রদক্ষিণ করতো, এটা [উলঙ্গ হয়ে প্রদক্ষিণ করাটা] মুহাম্মদ বাদ দিয়েছেন। এখনও মুসলমানরা আগের মতোই প্রদক্ষিণ করে, শুধু উলঙ্গ হয় না। রমাদানের রোজা রাখার নিয়ম সংক্রান্ত আয়াতগুলি খুবই  অবাস্তব ও অবৈজ্ঞানিক যা মানুষের স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর। রোযা ধরা ও রোযা ছাড়া প্রসঙ্গে আয়াতটি হলো – তোমরা পানাহার করো যতক্ষণ রাতের কৃষ্ণরেখা হতে ঊষার শুভ্ররেখা স্পষ্টরূপে তোমাদের নিকট প্রতিভাত না হয়। অতঃপর রাত্রি সমাগম পর্যন্ত তোমরা রোযা পূর্ণ করো। [২/১৮৭]  সূর্যোদয়ের আগে থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়টা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন রকম। ভারতে এই সময়টা এখন [জুলাই মাসে] ১৪/১৫ ঘণ্টা। সুইডেনে এই সময়টা ২০ ঘণ্টা মতো। এতো দীর্ঘ সময় নির্জলা উপবাস করা স্বাস্থ্যের পক্ষে ভীষণ ক্ষতিকর। গ্রীনল্যাণ্ডে তো একদিন ও এক রাত্রি আমাদের ছ’মাসের সমান। ওখানে রোযা রাখতে হলে ৪৩৮০ ঘণ্টা উপোষ করতে হবে। সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত সম্পর্কে ইসলাম যা বলেছে তা খুবই হাস্যকর। শুধু তাই নয়, ইসলামের সেই ঘোষণা মুহাম্মদের বিজ্ঞান সম্পর্কে  অজ্ঞতাকে একেবারেই নগ্ন করে দিয়েছে। আল্লাহ বলছে, “চলতে চলতে সে [যুলকুরনাইন] সূর্যাস্ত-স্থলে পৌঁছালো, তখন সে ওকে এক পঙ্কল জলাশয়ে অস্তাগমন করতে দেখলো।” [১৮/৮৬]  সূর্যোদয় সম্পর্কে মহাবিজ্ঞানী আল্লাহ বলছে, “চলতে চলতে সে [যুলকুরনাইন] সূর্যাদয়-স্থলে পৌঁছালো, তখন সে দেখলো তা এমন এক সম্প্রদায়ের উপর উদয় হচ্ছে যাদের জন্য সূর্যতাপ হতে আত্মরক্ষার কোনো অন্তরাল আমি সৃষ্টি করি নি।” [১৮/৯০] 


                             

  

 

Sunday, July 12, 2015

বিজেপির পক্ষে মুসলিম ভোট টানতে অবশেষে আরএসএসও মোল্লাতোষণের নাটক শুরু করলো




আরএসএস সম্প্রতি একটি কিছু কর্মসূচী হাতে নিয়েছে যা একেবারেই অবিশ্বাস্য ও অকল্পনীয় । তারা ঠিক করেছে যে উলামার [উলামা হলো আলেমের বহু বচন;  মাওলানা, মুফতি, ইমামদের আলেম বলে]  সাথে তারা বৈঠ ক করবে । এ কর্মসূচী রূপায়নের  জন্যে আরএসএস তাদের মুসলিম শাখাকে দায়িত্ব দিয়েছে । ৮ই আগষ্ট লক্ষৌতে এ রকম একটি বৈঠক হওয়ার কর্মসূচী নির্ধারিত আছে  । আরএসএস এ বছর বেশ কিছু ইফতার পার্টি দেওয়ারও পরিকল্পনা করেছে যেখানে বিশিষ্ট মাওলানা, মুফতি ও ইমামদের  অনেককেই তারা উপস্থিত  করতে চায় ।  গত ৭ই জুলাই মোরাদাবাদে  একটি  ইফতার পার্টি তারা ইতিমধ্যেই সেরেও ফেলেছে । আরএসএস জানিয়েছে যে হিন্দু ও মুসলিমদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি স্থাপনের জন্যে এ উদ্যোগ তারা নিচ্ছে যার মধ্যে কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নেই । কিন্তু তাদের এই কথা কারো বিশ্বাসযোগ্য হয়ে উঠছে না, হওয়ার কথাও নয় ।  তারা যে মুসলিম ভোট ব্যাঙ্কে ভাগ বসাবার জন্যেই এ সব পদক্ষেপ  করছে তা একেবারেই সংশয়াতীত ।  এ সব পদক্ষেপ স্পষ্টতঃই তাদের আদর্শ, লক্ষ্য  ও নীতিবিরুদ্ধ তা হলে তারা এ সব কেনো করছে ?  করছে তার কারণ হলো,  অনেক দেরীতে হলেও তারা এটা উপলব্ধি  করতে পেরেছে যে, মুসলিমদের  সম্পূর্ণ ব্রাত্য রেখে ভারতের ক্ষমতায় বেশি দিন থাকা যাবে না  বা পুনরায় ক্ষমতায় ফেরা যাবে না     তাই তারা মুসলিমদের সম্পর্কে তাদের দৃষ্টিভঙ্গী এবং  তাদের যে মূল লক্ষ্য তার প্রতি অবিচল ও অটল থেকেই তারা এ সব কর্মসূচী নিচ্ছে । বলা বাহুল্য যে  সংসদীয় রাজনীতিতে তারা এক নতুন রণকৌশল ও ধারা আনতে চাইছে    
বাহ্যিকভাবে হলেও আলেম সমাজের  প্রতি আরএসএস এরূপ  নরম মনোভাব নিতে পারে  তা এতো দিন কল্পনারো অতীত ছিলো ।  আরএসএসকে এতো নমনীয় করার মূল কারিগর অবশ্যই  প্রধান মন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ।   বিজেপির নেতাদের  মধ্যে  মোদির প্রতিই সর্বাধিক আস্থাশীল বর্তমান আরএসএস নেতৃত্বের । সে কারণেই তারা লালকৃষ্ণ আদবানির বদলে মোদিকেই প্রধানমন্ত্রীর পদে অধিক উপযুক্ত মনে করেছিলেন । গভীর এই আস্থার জায়গা থেকেই মোদি আরএসএস নেতৃত্বকে এটা বোঝাতে সক্ষম হয়েছেন যে, আরএসএসের  লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পূরণ করা  তাঁর সরকারের পক্ষে  মাত্র পাঁচ বছরে  কোনোমতেই  সম্ভব  নয় ।  এর জন্যে চায় দীর্ঘ সময়  ব্যাপক ধৈর্যআর দীর্ঘ সময় ধরে কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসীন থাকতে হলে   মুসলিমদের সমর্থন লাভ করা অত্যন্ত  জরুরী  । সমস্ত মুসলিম ভোট যদি বিরোধী শিবিরে চলে যায় তবে  পুনর্বার ক্ষমতায় ফিরে আসার সম্ভাবণা খুবই ক্ষীণ  । অবশেষে আরএসএস নেতৃত্ব নরেন্দ্র মোদির এই যুক্তি ও বাখ্যা মেনে নিয়েছেন । এবং তারই ফলশ্রুতিতে তারাও  মোল্লাতোষণের রাজনীতি শুরু করেছেন । তবে তাদের এই মোল্লাতোষণ কিন্তু মোটেই আন্তরিক বা  আসল নয়, যেমনটি  ইন্দিরা কংগ্রেস ও  অন্যান্য পেটি বুর্জোয়া দল এবং বামপন্থী দলগুলি করে  থাকে ।  আরএসএসের যা আদর্শ ও কর্মসূচী তাতে তাদের পক্ষে সত্যিকারের মোল্লাতোষণ করা মোটেই সম্ভবও নয় ।  তাই তারা মোল্লাতোষণের ভাণ  করছে মাত্র      মোল্লা সমাজের সঙ্গে এভাবে প্রতারণা করে  মুসলিম সমাজের আস্থা অর্জন করতে চাইছে । তারা বোঝাতে চাইছে যে আরএসএস ও মোদিকে মুসলমানদের আর ভয় পাওয়ার কিছু নেই, এখন তারাই মুসলমানদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করবে ।  এতে কাজ কিছু যে হচ্ছে তা বলা বাহুল্য । বিজেপিকে মুসলমানরা এতদিন তাদের শত্রু ভেবে তাদের বিরুদ্ধে যেখানে বিকল্প দল বা শক্তি পেতো তাদেরকেই সমর্থন করতো । এখন মুসলমানরাও ভোট দিচ্ছে বিজেপিকে । মাওলানারাও প্রধান মন্ত্রীর কাছে যাচ্ছে, দরবার করছে । এই ধর্মীয় নেতারা যে সম্পূর্ণ বিশ্বাস করে মোদির স্মরণাপন্ন হচ্ছেন তা নয় । প্রধানতঃ ভয়েই যাচ্ছেন । এটা বুঝেই যাচ্ছেন যে হিন্দু মৌলবাদিদের হাত থেকে বাঁচালে মোদিই বাঁচাবেন, অন্যরা পারবে না । মাওলানারা যে উদ্দেশ্যে বা যে কারণেই যাক না কেনো, তাতে একটা বার্তা যাচ্ছে মুসলিমদের মধ্যে নীচু মহলে যে বিজেপি ও মোদিকে এখন কিছুটা নিশ্চয়ই ভরসা করা যায় এবং সেই ভরসার জায়গা থেকেই দেখা যাচ্ছে যে  পশ্চিমবঙ্গে অনেক জায়গায় মুসলিমরা কংগ্রেস ও বাম শিবির ছেড়ে  বিজেপিতে যোগ দিচ্ছে ।  মাওলানাদের আরএসএসের পোস্টারবয় মোদির স্মরণাপন্ন হওয়াটা আবার মুসলিমদের অনেকেই পছন্দ করছে না । কারণ, হিন্দু সাম্প্রদায়িক দল আরএসএস ও বিজেপি তো মুসলিম সমাজের,  বিশেষ করে মোল্লা সমাজের ঘোষিত শত্রু ।  শত্রুর বিরুদ্ধে জিহাদ করা কর্তব্য, তার কাছে দরবার করাটা ইসলামে নাজায়েজ [অবৈধ] ।  সাধারণভাবে এতাই ইসলামি নীতি ও সংস্কৃতি । কিন্তু না, ইসলামে এটাই একমাত্র নীতি নয় । সত্যি কথা বলতে গেলে ইসলামের কোনো নির্দিষ্ট নীতিই নেই ।  যেখানে যেমন সেখানে তেমন নীতি – এটাই ইসলামের বৈশিষ্ট । ইসলাম  বিশ্বাস করে ‘দার-উল-ইসলাম’ ও ‘দার-উল-হারব’ নীতিতে । ‘ইসলামের দেশে’ এক নীতি   ‘শত্রুর দেশে’ আর এক নীতি – এই সুবিধাবাদী নীতিতে ইসলাম বিশ্বাসী  । ইসলামের দেশে কঠোরভাবে ইসলামি নীতি অনুসরণ ও প্রয়োগ করো এবং শত্রুর দেশে আপোষ করো – এই হলো  ইসলামের নীতি  । এ প্রসঙ্গ থাক, ফিরে আসা যাক মূল প্রসঙ্গে  । কথা হচ্ছিল আরএসএস কীভাবে  মাওলানাদের সঙ্গে প্রতারণা করছে ।
নরেন্দ্র মোদি  স্বয়ং এটা শুরু করেছিলেন গত লোকসভা নির্বাচনের আগে  বিজেপির প্রধান মন্ত্রী পদে মনোনীত হওয়ার পর ।  তিনি তখন একবারও আরএসএসের নাম তাদের কর্মসূচীর কথা মুখে আনেন নি পাছে মুসলমানরা বিজেপির বিরুদ্ধে এককাট্টা হয়ে যায় এই ভয়ে    সংখ্যালঘুদের, বিশেষ করে মুসলিমদের মন থেকে আরএসএস ও বিজেপির আতঙ্ক দূর করা লক্ষ্যে একদিকে তিনি যেমন  বিকাশ ও সুশাসনের কথা বলেছেন  তেমনি তারই পাশাপাশি   শান্তি, সম্প্রীতি ও সৌহার্দের পরিবেশ নির্মাণের অঙ্গীকারও  ব্যক্ত করেছেন বারংবার    প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরও তিনি সেই একই কৌশল অবলম্বন করে চলেছেন ।  তাঁর কণ্ঠে  মুসলিমবিরোধী বা  মুসলিমবিদ্বেষী স্বর আর  শোনা যায় না । বরং  ইসলাম ও  মুসলমানদের প্রতি প্রশংসাই  বারবার  পঞ্চমুখ হতে দেখা যাচ্ছে তাঁকে  । ইসলামি সন্ত্রাসবাদের পেছনে তিনি এখন ইসলামের হাত দেখতে পাচ্ছেন না, পাচ্ছেন না সত্যিকারের মুসলমানদের হাতও ।  ইসলামি সন্ত্রাসবাদের মোকাবিলায়   মুসলমানদে উপর তাঁর ষোলো আনা ভরসা আছে বলে পুনঃপুনঃ জানান দিচ্ছেন । বলছেন ইসলামি আদর্শ ও সংস্কৃতির কাছে মুসলিম সন্ত্রাসবাদ পরাস্ত হয়েছে ভারতে ও মধ্যপ্রাচ্যে । ইসলাম ও মুসলমানদের প্রতি এই যে তার এতো প্রশস্তি, সবই নাটকীয় সংলাপ । তিনি মৌলানা ও মুসলমান সমাজে র সঙ্গে প্রতারণা করছেন,  তাদের বোকা বানিয়ে তাদের সমর্থন পেতে চেষ্টা করছেন     এটা ভাবলে ভুল হবে যে  তিনি  আরএসএসের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য তাঁর মাথা থেকে সরিয়ে দিয়েছেন ।  চারিদিকে ভালভাবে  লক্ষ্য করলে এটা বুঝতে অসুবিধা হয় না যে তিনি শনৈ শনৈ গতিতে  নীরবে ও নিঃশব্দে  আরএসএসের কর্মসূচী রূপায়ন করে চলেছন । এ কাজে আরএসএস নেতৃত্ব তাঁকে পূরণ সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছেন  তাঁরা মুখে সম্প্রীতির কথা বলছেন, লোক দেখানো ইফতার পার্টি দিচ্ছেন  এবং উলামর সঙ্গে বৈঠকে বসতে চাইছেন, কিন্তু  তাদের মাথায় তাদের আসল যে মূল কর্মসুচী সেটা যেমনটা ছিলো তেমনটাই আছে ।  একদিকে বলছেন ভারতবাসী মানেই হিন্দু, পাঁচ বছরের মধ্যে অযোধ্যায় রামমন্দির নির্মাণ করা চাই, সারা দেশে গোহত্যা নিষিদ্ধ করতে হবে, যারা খৃস্টান ও ইসলাম ধর্মে চলে গিয়েছিল তাদের আবার হিন্দু ধর্মে ফিরে আসতে হবে, আর একদিকে ইফতার পার্টি দিচ্ছেন ও মাওলানাদের সঙ্গে আলোচনায় বসছেন । এক কথায় নরমে-গরমে  তাঁরা তাঁদের হিন্দুত্বের কর্মসূচী রূপায়নের কাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাইছে ।
মোদি ও আরএসএস কিন্তু তাদের  এই প্রতারণামূলক  নয়া রণকৌশলকে  মসৃণভাবে  প্রয়োগ করতে পারছে না ।   বাধা আসছে হিন্দুত্ববাদীদের মধ্যে থেকেই ।  বাধা আসছে যেমন সঙ্ঘপরিবারের ভিতর থেকে, বাধা আসছে বাহির থেকেও ।  সঙ্ঘপরিবারের বাইরের  হিন্দু মৌলবাদী শক্তি ইফতার পার্টি ও উলামার সঙ্গে বৈঠকের বিরুদ্ধে সোচ্চারে প্রতিবাদ জানাচ্ছে । তারা বলেছে এ সব কর্মসূচী তারা হতে দেবে না, তাতে যদি সঙ্ঘর্ষ হয় তবু তারা পিছু হটবে না । হিন্দু মহাসভা একটা পৃথক হিন্দু মৌলবাদী রাজনৈতিক দল যার জন্ম হয় আরএসএসের আগেই । হিন্দু মহাসভারই একটা অংশ হিন্দু মহাসভা থেকে বেরিয়ে গিয়ে আরএসএস তৈরী করেছিলো । সেই হিন্দু মহাসভার সভাপতি কমলেশ তেওয়ারি বলেছেন,  ‘ ইফতার পার্টিতে আলেমদের আমন্ত্রণ করে আরএসএস নাটক করছে । এই নাটক  করছে তারা বিজেপির হয়ে মুসলম ভোট টানার জন্যে । এরা এভাবে হিন্দু ও মুসলমান উভয়ের সঙ্গেই প্রতারণা করছে ।’  তিওয়ারি আরো অভিযোগ হলো – ‘আরএসএস প্রথমে রামমন্দির ইস্যু তুলে হিন্দু ভোট টানার চেষ্টা করেছে, এখন ইফতার পার্টি করে মুসলমানদের সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করছে । ঈদ, ইফতার ও মোল্লাদের সঙ্গে বৈঠক করে তারা আসলে বিজেপির পক্ষে রাজনৈতিক ফায়দা তোলার প্রয়াস করছে । উত্তর প্রদেশের নির্বাচন  বেশি দেরি নেই  । সেই নির্বাচনকে মাথায় রেখেই তারা এ সব কর্মসূচী নিচ্ছে ।’ হিন্দু মহাসভা চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে আরএসএসের প্রতি । বলেছে, ‘আরএসএস ও উলামার বৈঠক আমরা হতে দেব না । বৈঠকে আমরা ওদের কাউকে ঢুকতেই দেব না । যেখানে বৈঠক করবে সে জায়গাটাকে ঘিরে রেখে দেব, তাতে সঙ্ঘর্ষ যদি হয় হবে, তবু আমরা পিছিয়ে আসবো না ।’  হিন্দু মহাসভা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে যে ভারতের ইতিহাসে হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যেকার সম্পর্ক ছিলো সর্বদায় বৈরীতামূলক । সেই ইতিহাসের প্রসঙ্গ টেনে হিন্দু মহাসভার সভাপতি  বলছেন যে, ‘ইতিহাস বলছে হিন্দু ও মুসলমানের ঐক্যবদ্ধ হতে পারে না । কারণ অতীতে তারা কখনো ঐক্যবদ্ধ হয় নি ।’   আরএসএসের উদ্দেশ্যে  তিওয়ারি আরো বলেন যে, ‘দেশের মানুষ হিন্দু ও মুসলিমদের মধ্যে সম্প্রীতি চাই না ।‘ আরএসএসকে সাবধান করে দিয়ে তিনি বলেন যে, ‘হিন্দুরা কিন্তু আরএসএসকে ছেড়ে দেবে না । হিন্দু রাষ্ট্র কবে হবে ? এ প্রশ্নের উত্তর তাদের দিতে হবে ।’ তিওয়ারি আরএসএসকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে বনলেন যে, ‘রোযা ভাঙার জন্যে ইফতার করা ও উলামার সঙ্গে বৈঠক করা যেমন হিন্দু মহাসভার আদর্শবিরুদ্ধ তেমনই আরএসেসেরও আদর্শবিরুদ্ধ । হিন্দুরা এটা কিছুতেই মেনে নেবে না ।’
হিন্দু মহাসভার নেতা কিন্তু এক বর্ণও মিথ্যে বা ভুল বলে নি । আরএসএসের জন্মই হয়েছিলো ভারতকে হিন্দুরাষ্ট্র বানানোর জন্যে যেখানে  মুসলমানদের ঠাঁই থাকবে না, আর যদি তারা থাকতেই চায় তবে তাদের হিন্দুদের আধিপত্য স্বীকার করেই  থাকতে হবে । আরএসএসের নেতা হিসাবে যে ক’জনের নাম সবার আগে উঠে আসে তাঁদের একজন হলেন গোলওয়ালকার । ১৯৩৮ সালে ‘উই অর আওয়ার নেশনহুড ডিফাইনড’ [আমরা বা আমাদের জাতিত্বের সংজ্ঞা] নামে একটি গ্রন্থ লেখেন যে গ্রন্থে তিনি হিন্দুত্ব তত্ত্বের বিশদ আলোচনা করেছেন   সেই গ্রন্থ থেকে মাত্র দু’টি উদ্ধৃতি এখানে উল্লেখ করলেই যথেষ্ট হবে মুসলিমদের সম্পর্কে আরএসএসের দৃষ্টিভঙ্গি বোঝার জন্যে । গোলওয়ালকার  সেই গ্রন্থের ৫২ পৃষ্ঠায়  লিখেছেন, “হিন্দুস্থানের সমস্ত অহিন্দু মানুষ হয় হিন্দু ভাষা ও সংস্কৃতি গ্রহণ করবে, হিন্দু ধর্মকে শ্রদ্ধা করবে ও পবিত্র বলে জ্ঞান করবে, হিন্দু জাতির গৌরব-গাথা ভিন্ন অন্য কোন ধারণাকে প্রশ্রয় দেবে না, অর্থাৎ তারা শুধু তাদের অসহিষ্ণুতার মনোভাব এবং এই সুপ্রাচীন দেশ ও তার ঐতিহ্যের প্রতি অবজ্ঞার মনোভাবই ত্যাগ করবে না, এর প্রতি  ভালোবাসা ও ভক্তির মনোভাব তৈরী করবে; এক কথায় তারা আর হয় বিদেশী হয়ে থাকবে না, না হলে সম্পূর্ণভাবে হিন্দু জাতির এই দেশে তারা থাকবে অধীনস্থ হয়ে, কোনও সুবিধা ছাড়া এবং কোনও রকমের পক্ষপাতমূলক ব্যবহার ছাড়া । এমনকি নাগরিক অধিকারও তাদের থাকবে না ।” গোলওয়ালকার ঐ গ্রন্থেই  লিখেছেন হিন্দুরাই কেবল ভারতের সন্তান, অন্যরা নয় । এ প্রসঙ্গে ১২৩-১২৪ পৃষ্ঠায় তিনি লিখেছেন, “আমাদের এই বিশাল দেশ – উত্তরে হিমালয় – উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব ও পশ্চিমে এর সমস্ত শাখা এবং সেখানে অবস্থিত অঞ্চল সমেত- থেকে দক্ষিণে সমুদ্র এবং তার সমস্ত দ্বীপ সমেত বিস্তৃত এবং তার পুরোটা মিলে এটি একটি বিশাল প্রাকৃতিক একক । এই মাটির সন্তান রূপে, আমাদের বিকশিত সমাজ হাজার হাজার বছর ধরে এখানে তৈরী হয়েছে । এই সমাজের পরিচয়, অন্তত আধুনিক সময়ে, হিন্দু সমাজ বলে । একথা ঐতিহাসিক সত্যও বটে । কারণ হিন্দুদের পূর্বপুরুষরাই এই ঐতিহ্য ও নিয়ম তৈরী করেছেন ... অধিকার ও কর্তব্য সম্পর্কে স্পচেতন করেছেন ... [এবং] মাতৃভূমির পবিত্রতা ও অখণ্ডতা রক্ষায় রক্ত ঝরিয়েছেন । আমাদের দেশের হাজার হাজার বছরের ইতিহাস এই কথাই বলে যে সমস্ত কিছু করেছে হিন্দুরা । এর অর্থ এই যে কেবল হিন্দুরাই এই মাটির সন্তান হিসেবে এখানে বসবাস করেছে ।”  মুসলমান এবং খৃস্টানদের সম্পর্কে তিনি বলেছেন – “তারা এদেশে জন্মেছে ঠিকই, কিন্তু তারা কি যথার্থ এদেশের প্রতি অনুগত? ... না । তাদের ধর্মবিশ্বাসের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে জাতির প্রতি ভালোবাসা ও ভক্তি চলে গেছে ।” (ঐ, পৃ – ১২৭-১২৮)  মুসলিম ও খৃস্টানদের সম্পর্কে এই হলো গোলওয়ালকারের তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ ও বাখ্যা । বলা বাহুল্য যে আরএসএস সেই তত্ত্বের উপরে দাঁড়িয়েই ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্র বানাতে চায় ।
মোল্লাতোষণের যে নাটক শুরু করেছে রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘ তার ফলে হয়তো মুসলিমদের আস্থা অর্জনের ক্ষেত্রে সাময়িকভাবে কিছুটা হলেও সফল হতে পারে, কিন্তু এর উল্টো প্রতিক্রিয়া হওয়ার সম্ভাবনাও প্রবল । সঙ্ঘ পরিবারের বাইরের হিন্দু মৌলবাদী শক্তি হিন্দু মহাসভা ইতিমধ্যেই এই নাটকের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে এবং আগামি দিনে তারা কড়া বিরোধিতা করবে বলে জানিয়ে দিয়েছে । তাদের এই বিরোধিতা ও প্রতিবাদের ঢেউ আছড়ে পড়বে সঙ্ঘ পরিবারের অন্দর মহলেও । কট্টর পন্থী আরএসএস ও বিজেপির কর্মী ও সমর্থকদের বিরাট অংশই ইমাম ও মাওলানাদের সঙ্গে হিন্দু নেতাদের গা ঘেঁষাঘেঁষি কিছুতেই মেনে নেবে না । তাছাড়া সবাই এটাকে নাটক বলে নাও মানতে পারে, একটা অংশ   এই নাটক বা ঘটনাটিকে রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘের আদর্শগত বিচ্যুতি বলে  ভাবতেই পারে। তারা স্বভাবতই বিচ্যুতির বিরুদ্ধে  সরব হবে ।
রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘের ইফতার পার্টি দেওয়া এবং  উলামার সঙ্গে বৈঠক করার করার কর্মসূচীর পরিণতি কী হয় তা ভবিষ্যতই বলবে এবং সেই পরিণতি চাক্ষুস করার জন্যে আমাদের আরো কিছু দিন অপেক্ষা করতে হবে ।  এর পরিণতি যাই হোক না কেনো, কিন্তু ভারতীয় রাজনীতির রঙ্গমঞ্চে এটা যে একটা নতুন সংযোজন তা নিয়ে কোনো সংশয় নেই । শুধু তাই নয়, ভারত এক বিরল ও অত্যাশ্চর্য ঘটনার সাক্ষী হয়ে রইলো আরএসেসের সৌজন্যে । সেটা এ রকম - একদল ধর্মীয় মৌলবাদী  আর এক দল  অন্য ধর্মীয় মৌলবাদীদের প্রতারণা করার জন্যে আমন্ত্রণ করছে, আর দ্বিতীয় দলটি প্রতারিত হবে জেনেও  প্রথম দলের ডাকে সাড়া দিচ্ছে । এ যেন সিনেমার চিত্রনাট্যকেও হার মানায় ।  এই ঘটনাটি রামায়নের  সেই দৃশ্যটার কথা আমাদের মনে করিয়ে দেয় যেখানে রাম রাবণকেই ডাকছে একটা পূজো করে দিতে রাবণকে বধ করবে বলে  । এবং রাবণ সেটা বুঝেও রামের ডাকে সাড়া দিতে অসম্মতি জ্ঞাপন করছে না । অনুরূপভাবে মুসলিম সমাজের ধর্মীয় নেতারাও  জানেন যে মুসলমানদের বধ করাই হলো আরএসএস ও বিজেপির প্রধান উদ্দেশ্য, কিন্তু  তা জেনেও তারা  আরএসএস ও বিজেপির ডাক প্রত্যাখান করতে পারছেন না ।  রাম-রাবণের আখ্যানের সঙ্গে এ ঘটনার অবশ্য একটা মৌলিক পার্থক্য আছে । রামের আহ্বানে রাবণ সাড়া দিয়েছিলেন যার মধ্যে রাবণের পৌরুষের প্রকাশ পেয়েছে । কিন্তু ইমাম ও মাওলানারা রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘের আহ্বানে সাড়া দিচ্ছেন, এটা তাঁদের মজবুরী । পাছে রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘ, বিজেপি এবং প্রধান মন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আরো রুষ্ট হয় এ ভয়ে তাঁরা বাধ্য হয়ে সাড়া দিচ্ছেন । 
      



বাংলাদেশের গণঅভ্যুত্থানে ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাইনি – পাঁচ

  দ্বিতীয় অধ্যায় শেখ হাসিনা ও শেখ মুজিবের প্রতি তীব্র গণরোষের নেপথ্যে ২০২৪ এর জুলাই অভ্যুত্থানের সফল পরিসমাপ্তি ঘটে ৩৬ দিন পর (৫ই ...