‘জিহাদিদের আড়াল করতে মাঠে নেমে পড়েছে সরকার ও মুসলিম
সমাজের ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ’ [http://giasuddinonline.blogspot.in/2014/10/blog-post_19.html] শিরোনামাঙ্কিত নিবন্ধটি [গত ৩০শে অক্টোবর দৈনিক
স্টেটসম্যানে প্রকাশিত] তীব্র আলোড়ন
সৃষ্টি করেছে মুসলিম মৌলবাদী ও গোঁড়া
মুসলিম বুদ্ধিজীবী সমাজে। ‘জমিয়তে
উলামায়ে হিন্দ’ পশ্চিমবঙ্গ শাখার পক্ষ থেকে
কয়েকশ’ কর্মী নিবন্ধটি ছাপানোর প্রতিবাদে পত্রিকা দপ্তরে চড়াও হয় এবং প্রবন্ধটি ছাপানোর জন্যে সম্পাদকের কাছে ক্ষমা চেয়ে বিবৃতি দাবি করে। প্রবন্ধটির
কড়া প্রতিবাদ করে একটি চিঠি পাঠিয়ে
আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ ওঁরা করেছেন তা হলো – এক]. ‘ইসলাম ধর্ম ও নবী মহম্মদ (সঃ) –
এর বিষয়ে বিকৃতভাবে ভুল বক্তব্য পরিবেশন করা হয়েছে।’ দুই]. ‘ইসলাম ধর্ম, মাদ্রাসার শিক্ষা ব্যবস্থা ও
মুসলিম সমাজ সম্পর্কে বিকৃত চরিত্র তুলে ধরা হয়েছে।’ সেই চিঠিতেই
তাদের দাবী – ‘হজরত মহম্মদ (সঃ) মক্কা মদিনার জীবনে খৃষ্টান, ইহুদি ও অন্যান্য অমুসলিম
সম্প্রদায়ের সঙ্গে একত্রে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করে আসছেন।’ [চিঠিটির বানান ও
ভাষা অপরিবর্তিত]
উক্ত চিঠিতে
জিহাদ
সম্পর্কে
যা
দাবি
করা
হয়েছে
তা
আসলে
সত্যকে
গোপন
করার
এক
করুণ
প্রয়াস
মাত্র। এ
দেশের
ধর্মীয়
নেতৃবৃন্দ
ও মুসলিম বুদ্ধিজীবীরা জিহাদের
প্রশ্নে
বরাবরই
এরূপ প্রতারণা করে
থাকেন। জিহাদ নিয়ে এখানে কিছু লিখছি না, তার
জবাব
দিয়েছি
আধ্যাত্মিক সংগ্রাম নয়,
‘জিহাদ’ হলো সহিংস রাজনৈতিক আগ্রাসন নিবন্ধে। [www.giasuddinonline.blogspot.in/2014_07_25_archive.html] মুহাম্মদের
সময়ে সব ধর্মের মানুষ একত্রে শান্তিতে বসবাস করতো বলে যে দাবি করা হয়েছে তারই জবাবে এই নিবন্ধের অবতারণা। মুহাম্মদের সময়ে মদিনায় সব ধর্মের মানুষ শান্তিতে বাস করতো এই দাবি ভিত্তিহীন। ইতিহাস সম্পূর্ণ এর বিপরীত সাক্ষ্য বহন করছে। সে ইতিহাস ভীষণ
বেদনা ও যন্ত্রণার ইতিহাস, হাজার হাজার
ইহুদির কান্না ও আর্তনাদের ইতিহাস,
এবং সে ইতিহাস ইহুদিদেরকে নির্বাসিত করার ইতিহাস, তাদের শিশু ও নারীদের ক্রীতদাস ও
ক্রীতদাসী বানানোর ইতিহাস, শত শত ইহুদিকে
নৃশংসভাবে হত্যা করার ইতিহাস।
মুহাম্মদের জন্মের বহু পূর্ব থেকেই মদিনায় বিভিন্ন ধর্ম
সম্প্রদায় ও উপজাতি গোষ্ঠীর মানুষ বসবাস করতো। তাদের মধ্যে
ইহুদিদের কয়েকটি উপজাতি গোষ্ঠীও ছিলো। মদিনার আশেপাশেও কয়েকটি ইহুদি উপজাতিদের
বাস ছিলো। মক্কা-মদিনায় মানুষের মধ্যে
গোষ্ঠীগত বিরোধ ছিলো, কিন্তু সাম্প্রদায়িক
বিরোধ ছিলো না। মদিনায় বাস করতো তিনটি ইহুদি উপজাতি গোষ্ঠীর মানুষ - বানু
কানুইকা, বানু নাজির ও বানু কুরাইজা গোষ্ঠী। তাদের মধ্যে
ছিলো প্রবল গোষ্ঠীগত অনৈক্য। মুহাম্মদ মক্কায় ইসলাম ধর্ম প্রচারে বাধা পাওয়ায় ৬২২ খ্রিষ্টাব্দে মদিনায় যান ধর্ম প্রচারের
জন্যে। তিনি আশা করেছিলেন যে ইহুদিরা
তাঁকে আল্লাহর নবী বলে মানবে এবং ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করবে। কিন্তু ইহুদিরা
স্বধর্ম ত্যাগ করার কোনো কারণ দেখতে পায় নি। মুহাম্মদ তাই তাদের বর্বরোচিতভাবে মদিনা মানচিত্র থেকে একেবারেই মুছে দিয়েছিলেন। তাদের দুটি গোষ্ঠীকে মদিনা থেকে নির্বাসিত করেছিলেন, আর একটি
গোষ্ঠীর সমস্ত শিশু ও নারীদের দাস-দাসী বানিয়েছিলেন এবং পুরুষদের নৃশংসভাবে
হত্যা করেছিলেন।
বানু কুনাইকা গোষ্ঠীর নির্বাসন
কেনো মুহাম্মদ বানু কানুইকাদের নির্বাসিত করেছিলেন তা নিয়ে নানা মত আছে। একটা
মত হলো যে তারা কোরেশদের সঙ্গে ভিতর ভিতর হাত মিলিয়েছিলো মুহাম্মদের বিরুদ্ধে
যুদ্ধ করে তাঁকে হত্যা করার জন্যে। দ্বিতীয় মতটি হলো তারা মুহাম্মদ ও
মুসলমানদের উপর আক্রমণ করেছিলো। তৃতীয় মতটি এরকম - তারা একজন মুসলিম নারীর শ্লীলতা হানি
করেছিলো। মুসলিম ঐতিহাসিকগণ তৃতীয়
মতটিকেই প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। অধুনা বাংলাদেশের কবি গোলাম মোস্তফা
এই ঘটনা প্রসঙ্গে যে বর্ণনা দিয়েছেন তা এ রকমঃ
“একদিন একটি পর্দানশীন মুসলিম যুবতী আবশ্যক বোধে ইহাদের একটি অলঙ্কারের
দিকে গিয়েছিলেন। ইহুদিরা ইহাকেই একটি সুবর্ণ সুযোগ মনে করিয়া মহিলাটিকে নানা
প্রকার ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করিতে আরম্ভ করিল। ইহাতে উত্যক্ত হইয়া তিনি
আর একটি স্বর্ণকারের দোকানে গিয়া আশ্রয় লইলেন, কিন্তু তাহাতেও নিষ্ক্রৃতি পাইলেন না। মহিলাটি বসিয়া আছেন, এমন সময় জনৈক দুর্বৃত্ত
গোপনে গোপনে পিছন দিক হইতে তাঁহার ওড়নার এক কোণ খুঁটির সহিত বাঁধিয়া দিল।
কিছুক্ষণ পর মহিলাটি যেই গাত্রোত্থান করিতে গিয়াছেন, অমনি তাঁহার অঙ্গাবরণখানি খসিয়া
পড়িল এবং তিনি লোকচক্ষে উন্মুক্ত হইয়া পড়িলেন। দুর্বৃত্তদিগের কুৎসিত
হাসি-তামাসায় তখন স্থানটি সরগরম হইয়া উঠিল। মহিলাটি লজ্জায় ও ক্রোধে আর্তনাদ
করিয়া উঠিলেন। উচ্চৈঃস্বরে বলিতে লাগিলেন, ‘কে আছ মুসলিম বীর। বিপন্না নারীকে
রক্ষা কর।’ জনৈক মুসলমান পথিকের কর্ণে এই
আহ্বান প্রবেশ মাত্র তিনি উন্মুক্ত তরবারি হস্তে ছুটিয়া আসিয়া মহিলাটিকে রক্ষা
করিলেন এবং পাষন্ডদিগের একজনকে তরবারির এক আঘাতে হত্যা করিয়া ফেলিলেন। ফলে
ইহুদীরাও সঙ্ঘবদ্ধভাবে তাঁহাকে আক্রমণ করিল। মুসলিম বীর ... নিহত হইলেন।” এই
ঘটনাই ক্ষিপ্ত হয়ে মুহাম্মদ তাদের কাছে গিয়ে বলেন, “হে ইহুদীগণ তোমরা যে জঘন্য
কুকর্ম করিয়াছ, তাহার যথাযোগ্য প্রতিকার করিতে আমরা প্রস্তুত, আমার উপদেশ এইঃ
তোমরা বশ্যতা স্বীকার কর, নতুবা কোরেশদিগের দশাই তোমাদের ঘটিবে।” [দ্রঃ বিশ্বনবী, আহমদ
পাবলিশিং হাউস, ঢাকা, পৃ – ১৬৬,১৬৭] মুহাম্মদের
এই আদেশ প্রত্যাখান করলে মুহাম্মদ তাদের উপর আক্রমণ করেন। তখন তারা ভয়ে
দূর্গের মধ্যে আশ্রয় নেয়। দু সপ্তাহ দূর্গে অবরুদ্ধ থাকার পর ইহুদিরা মুহাম্মদের
কাছে আত্মসমর্পণ করে। মুহাম্মদ
সকলকে নির্বাসন দন্ড দেন। বানু কুনাইকা গোষ্ঠীর ইহুদিরা স্বধর্ম ত্যাগ না করে মদিনা ত্যাগ করে চলে যায়।
উপরে যে কারণটির কথা বলা হয়েছে তা কেবল অজুহাত
ছিলো। আসল কারণটা প্রতিহিসামূলক ও অর্থনৈতিক। ইহুদিরা যেহেতু স্বধর্ম পরত্যাগ
করে মুহাম্মদের ধর্ম গ্রহণ করেনি তাই তাদের উপর প্রচন্ড ক্রোধ ছিলো মুহাম্মদের।
এটা (ইসলাম ধর্ম গ্রহণ না করা) ছিলো তাদের প্রথম অপরাধ। বানু কাইনুকা গোষ্ঠীর লোকজন ছিলো মদিনার মধ্যে সবচেয়ে ধনী, এটা ছিলো তাদের দ্বিতীয় অপরাধ। তারা মূলতঃ স্বর্ণকার ছিলো এবং মদিনার
বাজারটি ছিলো তাদের
নিয়ন্ত্রণে। বাজারে সোনার
অলঙ্কারের দোকান সহ অনেক রকম হাতের তৈরী জিনিষ ও
অস্ত্রশস্ত্র বেচাকেনা হতো। বানু কাইনুকা গোষ্ঠীকে বিতাড়িত করার প্রধান উদ্দেশ্য ছিলো ইসলাম ধর্মকে প্রত্যাখান করার পেতিশোধ নেওয়া এবং দ্বিতীয় উদ্দেশ্য ছিলো তাদের সোনাদানা ও অস্ত্রশস্ত্র সহ সমস্ত ধন-সম্পদ লুট করা। শন-সম্পদ লুট করার লোভ প্রবল রূপ ধারণ করে মুহাম্মদের মনের মধ্যে ৬২৪ খৃষ্টাব্দে বদর
যুদ্ধে কোরেশদের বিরুদ্ধে অবিশ্বাস্য জয় পাওয়ার পর। সেই যুদ্ধে
তিনি পরাজিত কোরেশদের ফেলে যাওয়া অনেক ধন-সম্পদ লট করে নিয়ে এসেছিলেন এবং তৎসহ ৭০ জন কোরেশকে বন্দি করে নিয়ে এসেছিলেন। পরে বন্দিদের দু’জনকে হত্যা করে বাকিদের মোটা অর্থের বিনিনিয়ে মুক্তি
দিয়েছিলেন। এই ঘটনা একদিকে যেমন তাঁকে দুঃসাহসী
করে তুলেছিলো, অপরদিকে তেমনি লুঠতরাজ চালিয়ে রাতারাতি ধনী হওয়ার লোভ ও আকাঙ্খাও তাঁর অনেকটাই বাড়িয়ে দিয়েছিলো। সেই লোভ ও আকাঙ্খার
বশবর্তী হয়ে মুহাম্মদ একটা সামান্য অজুহাত সৃষ্টি করে বানু কুনাইকাদের মদিনা থেকে নির্বাসিত করেছিলেন। এ প্রসঙ্গে James M. Arlandson বলেছেন, “It is unclear why the prophet
expelled the first tribe, the Qaynuqa. One source says that these Jews waged
war on Muhammad, but this is unlikely since he was flushed with victory over
the Meccans at the Battle of Badr, only a month before. But perhaps this
exaggeration reflects at least some level of conflict between the two sides.
Another source says that some Jews played a trick on a Muslim woman, but this
too is unlikely, since the trick is found in Arabic literature. These Jews controlled
the market of crafts and trade, and the new Muslim immigrants to Medina
were craftsmen, so maybe this is the reason.” [http://www.answering-islam.org/Authors/Arlandson/qurayza_jews.htm]
বানু নাজির গোষ্ঠীর নির্বাসন
৬২৫ খৃষ্টাব্দে ওহুদ যুদ্ধের পর
মুহাম্মদ বানু নাজির গোষ্ঠীকেও নির্বাসিত করেন
মিথ্যে অজুহাতে। ওরা নাকি
মুহাম্মদকে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করেছিলো। কী তার প্রমাণ? স্বয়ং আল্লাহ
মুহাম্মদকে এই ষড়যন্ত্রের খবর দিয়েছিলো। হ্যাঁ, এ রকম হাস্যকর ও শিশুসুলভ অভিযোগই করেছিলেন মুহাম্মদ। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান ড.ওসমান গণি এ প্রসঙ্গে
লিখেছেন, “তিনি আল্লাহর নিকট হতে গোপনে কি কথা জানতে পেরেছিলেন। ইহুদীগণ পুনরায়
চেষ্টা করেছিল, হযরতকে তাদের মধ্যে পাওয়ার জন্য। কিন্তু তিনি তা প্রত্যাখান করেন।” প্রত্যাখান করে মুহাম্মদ তাদের কাছে একটা চিঠি
পাঠিয়ে মদিনা ছেড়ে চলে যাবার আদেশ দেন। সেই চিঠিতে মুহাম্মদ লিখেছিলেন – “হে বনি নাজির তোমরা আমার সীমানা ছেড়ে দাও।
আমার জীবননাশের চক্রান্ত দ্বারা তোমরা আমার সঙ্গে সন্ধি ভঙ্গ করেছ। আমি তোমাদের
দশ দিন সময় দিলাম। যদি তোমাদের কাউকে এরপর আমার সীমানায় দেখি তাহলে তার শিরশ্ছেদ
করা হবে।” [দ্রঃ মহানবী, পৃ – ২৭২] বানু
নাজির গোষ্ঠীর মানুষরা মুহাম্মদের নির্দেশ পালন করে মদিনা ত্যাগ করেনি। মুহাম্মদ তখন তাদের উপর সশস্ত্র আক্রমণ সংগঠিত
করেন। প্রাণভয়ে তারা তাদের দূর্গের মধ্যে আশ্রয় নেয়। মুহাম্মদ তখন তাদের অবরোধ
করে রাখেন। মুহাম্মদের নির্দেশে তাঁর শিষ্যরা বানু নাজির গোষ্ঠীর সমস্ত খেজুর
গাছ কেটে নষ্ট করে দেয়। খেজুর গাছ কাটার জন্যে মুহাম্মদকে প্রবল সমালোচনার মুখে পড়তে হয়। এমন কি তাঁর শিষ্যরাও অনেকেই এটা মেনে নিতে পারেনি। তখন তিনি আল্লাহর দোহাই পাড়েন। বলেন আমি যা করেছি আল্লাহর নির্দেশেই করেছি। আবৃতি করে শোনান তা – তোমরা যে কতক
খেজুর গাছ কেটেছো অথবা ওর শিকড়ের উপর তাকে দন্ডায়মান অবস্থায় পরিত্যাগ করেছো
[অর্থাৎ কতকগুলো না কেটে রেখে দিয়েছো] তা তো আল্লাহর অনুমতিক্রমে। [কোরান –
৫৯/৫] বানু নাজির গোষ্ঠির লোকেরা দিন পনেরো পর মুহাম্মদের কাছে আত্মসমর্পণ করে। মুহাম্মদ তখন তাদের মিথ্যা অপরাধে দোষী সাব্যস্ত
করে নির্বাসন দন্ডে দন্ডিত করেন। ফলে প্রাণ রক্ষার্থে বানু নাজির গোষ্ঠীর লোজনও বানু কুনাইকাদের মতই চিরদিনের মতো মদিনা ছেড়ে
চলে যায়। এ প্রসঙ্গে James M. Arlandson লিখেছেন
– About the
Nadir tribe, an early Muslim source says that Muhammad suspected an
assassination attempt, while he was collecting some blood-wit money
(compensation for bloodshed) from the tribe. Muhammad called on his followers
to wage war on them, besieging
them in their strongholds for fifteen days in August. Muhammad set about
destroying their palm trees.
Their livelihood undergoing destruction, they surrendered and departed for the
north. Muhammad confiscated their property, just as he took the tools of the
Nadir tribe. [source: http://www.answering-islam.org/Authors/Arlandson/qurayza_jews.htm]
বানু কুরাইজা গোষ্ঠীর মূলোৎপাটন
মদিনার বানু কুরাইজা গোষ্ঠীকে নির্মূল করার ঘটনা
ইতিহাসের নৃশংসতম, বর্বরতম ও পৈশাচিক ঘটনাগুলির একটি। ৮০০/৯০০ জন পুরুষ ইহুদির
শিরশ্ছেদ করা হয়েছিলো, এবং সমস্ত
নারী ও শিশুকে দাস-দাসী বানানো হয়েছিলো। গোড়ার দিকে যাঁরা
মুহাম্মদের জীবনচরিত রচনা করেছেন তাঁদের মধ্যে ইবন ইশাক একজন প্রখ্যাত ঐতিহাসিক। তিনি লিখেছেন সম্ভবতঃ ৯০০ জন পুরুষ ও সদ্য যৌবনপ্রাপ্ত যুবককে হত্যা করেছিলো
মুসলমানেরা। Ibn Ishaq
says that possibly 900 Jewish men and pubescent boys were butchered. [http://www.answering-islam.org/Authors/Arlandson/qurayza_jews.htm] এমন
নৃশংস ঘটনাকেও মুসলিম ঐতিহাসিক ও ইসলামি চিন্তাবিদগণ প্রকাশ্যে সমর্থন করতে দ্বিধা করেন না। বানু কুরাইজাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিলো যে
তারা মুহাম্মদের সঙ্গে চুক্তি ভঙ্গ করেছিলেন এবং মক্কার কোরেশদের পক্ষ নিয়ে
মুহাম্মদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন। তাঁদের দাবি হলো, বানু কুরাইজারা মুহাম্মদের সঙ্গে যেহেতু প্রতারণা করেছিলো তাই তাদের ঐ নৃশংসতম শাস্তিই প্রাপ্য ছিলো। এ প্রসঙ্গে কবি গোলাম
মোস্তফা লিখেছেন, “সা’দের এই বিচার
কোনক্রমেই অসঙ্গত হয় নাই। এইরূপ অপরাধে চিরদিনই গুরুদন্ড হইয়া থাকে।” [বিশ্বনবী, পৃ – ২০৫] ড.ওসমান গণির অভিমতও
অনুরূপ। তিনি লিখেছেন, “কুরাইজাদের এই
শাস্তিকে কেউই অবিবেচনামূলক বলতে পারল না। মানুষ প্রশংসা করতে পারে তাদের সাহসের
যে, তারা ইসলাম গ্রহণ করল না, তাও অজ্ঞতা
হেতু। জগতের ইতিহাসে দেখা যায় বিশাসঘাতককে চিরদিনই কঠোর শাস্তি দেওয়া হয়েছে, যতক্ষণ
না তারা ক্ষমা প্রার্থনা করেছে। অথবা তখনকার পরিবেশ ও পরিস্থিতি বিবেচনা করেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ হয়ে থাকে।
মানুষের ইতিহাসে কোনদিনই কোন বিশ্বাসঘাতককেই আপনা থেকে মুক্তি দেওয়া হয়নি।”
[মহানবী, মল্লিক ব্রাদার্স, কলকাতা]
ইতিহাসে সংঘটিত হওয়া
পৈশাচিক, বর্বর ও অমানবিক এই বিরল ঘটনাটি ঘটে ৬২৭ খৃষ্টাব্দে খন্দক যুদ্ধের অব্যবহিত পরেই। মক্কার কোরেশগণ
আবু সুফিয়ানের নেতৃত্বে বিশাল সৈন্যবাহিনী নিয়ে মদিনা আক্রমণ করেছিলেন। কোরেশদের সেই
আক্রমণ ব্যর্থ হয় এবং তারা মক্কা ফিরে যায়। কোরেশদল ফিরে যাবার পরপরই মুহাম্মদ বানু কুরাইজাদের
মহল্লা অভিযান করেন। আচমকা সেই হানায় কুরাইজা গোষ্ঠীর লোকজন তাদের দূর্গের মধ্যে গিয়ে
আশ্রয় নেয়। মুহাম্মদ তখন তাদের অবরুদ্ধ করে রাখেন। পনের দিন অবরুদ্ধ থাকার পর তারাও অন্য দুই গোষ্ঠীর মতন
মুহাম্মদের কাছে আত্মসমর্পণ করতে চেয়ে প্রস্তাব পাঠায়। তারা প্রস্তাব দেয় যে
তাদের মুক্ত করে দেওয়া হোক, তাহলে বানু নাজির ও
বানু কুনাইকা গোষ্ঠীর মতন তারাও মদিনা ছেড়ে চিরতরে চলে যাবে। কিন্তু মুহাম্মদ সেই প্রস্তাব
তৎক্ষণাৎ প্রত্যাখান করেন। বলেন যে বিচার না করে কাউকে ছাড়া হবে না এবং ওদের বিরুদ্ধে বিচার বসিয়েছিলেন। আসলে ওটা ছিলো বিচারের নামে প্রহসন মাত্র। পৃথিবীতে বিচারের নামে যতগুলি প্রহসন হয়েছে
তার মধ্যে এই প্রহসনটা ছিলো সবচেয়ে নিকৃষ্টও অমানবিক। জার্মানির রাইখস্ট্যাগ নিজে পুড়িয়ে হিটলার যেমন কম্যুনিস্টদের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে বিচারের নামে
প্রহসন করেছিলেন, কিংবা মিথ্যা রাসায়নিক অস্ত্র রাখার মিথ্যা অভিযোগে আমেরিকা যেমন
সাদ্দামের বিরুদ্ধে বিচারের নামে প্রহসন করেছিলেন, ঠিক সে রকমই একটি প্রহসন ছিলো বানু কুরাইজাদের
বিরুদ্ধে এই বিচারটি। এই প্রহসনে বিচারক নিয়োগ করা হয়েছিলো মদিনার আউস গোত্রের যে লোকটিকে [সা’দ
বিন মাজ] সে লোকটি ছিলো ইহুদী ধর্ম থেকে ধর্মান্তরিত মুসলমান। তিনি খন্দক
যুদ্ধে মুহাম্মদের পক্ষে অংশ নিয়ে গুরুতর
আহত হয়েছিলেন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছিলেন। সেই মৃত্যুপথ যাত্রীকেই মুহাম্মদ খাটে করে তুলে আনিয়ে বিচারকের আসনে বসিয়ে দিয়েছিলেন। সা’দ যে রায় দিয়েছিলো তা ছিলো পূর্বনির্ধারিতই যেমন
জার্মানির সংসদ ভবন [রাইখস্ট্যাগ] পোড়ানোর বিচার ও সাদ্দামের বিচারের রায় ছিল
পূর্বনির্ধারিত। সা’দ যে রায় দিয়েছিলো
সেটাই সম্ভবত ইতিহাসের সবচেয়ে
কুৎসিত ও বীভৎস রায়। সা’দের রায় ছিলো এরূপঃ “মুসলমানদিগের
সহিত সন্ধির শর্ত ভঙ্গ করার দরুন সমুদয় ইহুদি পুরুষদিগের প্রাণদন্ড হইবে,
স্ত্রীলোক এবং বালক-বালিকাগণ দাস-দাসীরূপে পরিগণিত হইবে এবং ইহুদীদিগের সমস্ত
সম্পতি মুসলিম সৈন্যদিগের মধ্যে ভাগ করিয়া দেওয়া হইবে।” এই রায় যে পূর্বনির্ধারিত ছিলো তার বোঝা যায়
দুটি ঘটনা থেকে। প্রথমটি ঘটনাটি হলো এ রকম - মুহাম্মদ রায়টি ঘোষিত হওয়ার সঙ্গে
সঙ্গে প্রকাশ্যেই স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাঁর
গভীর সন্তোষ ব্যক্ত করে বলেন, এটাই সঠিক রায়, আল্লাহ বিচার করলে এই রায়ই দিতেন। দ্বিতীয় ঘটনাটি হলো মুহাম্মদ বিচারের আগেই ইহুদিদের
লাশগুলি পুঁতে ফেলার জন্যে এক বিশাল লম্বা ও গভীর খাল কেটে রেখেছিলেন। মুহাম্মদ
হুসাইন হেকল The
Life of Muhammad. (p. 337) গ্রন্থে এ প্রসঙ্গে যা বলেছেন তার কিছু অংশ মহাম্মদ রফি বাজিল উদ্ধৃত করেছেন The Genocide of Banu Qurayza প্রবন্ধে। উদ্ধৃতিটি হলো - When Muhammad heard the verdict, he said: "By Him
Who dominates my soul, God is pleased with your judgment, 0 Sa'd; and so are
the believers. You have surely done your duty."
He then proceeded to Madinah where he commanded a large grave to be dug for the
Jewish fighters brought in to be killed and buried.[1] [http://wikiislam.net/wiki/The_Genocide_of_Banu_Qurayza] একই কথা বলেছেন James M.
Arlandson - “Sad sat next to Muhammad, and
when Sad issued the verdict, he made the prophet glad.
"O Sad! You have judged amongst them with (or similar to) the judgment of
the King Allah." Was there undue influence from
Muhammad on Sad who was dying and about to meet Allah?” [http://www.answering-islam.org/Authors/Arlandson/qurayza_jews.htm]
যদি ধরেও নেওয়া যায় যে বানু কুরাইজাদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত
বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগ সত্যি, তাহলেও কি তাদের বিরুদ্ধে এমন কঠোর শাস্তি সমর্থনযোগ্য? তাও আবার এমন একজন ব্যক্তির কাছ থেকে যিনি দাবি করছেন যে পৃথিবীতে হিংসার অবসান
করে শান্তি স্থাপনের জন্যে ঈশ্বর তাঁকে দূত
করে পাঠিয়েছেন। যদি তর্কের
খাতিরে এটাও
ধরে নেওয়া যায় যে বিশ্বাসঘাতকতার জন্যে এরূপ কঠোর শাস্তি প্রদান দোষের নয়, তবুও তো
প্রশ্ন ওঠে, নারী ও শিশুদের চরম শাস্তি দেওয়া হলো কেনো? তারাও কি বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলো মুহাম্মদের সঙ্গে?
সম্পূর্ণ বিনা দোষেই কি শিশু ও নারীদের শাস্তি দেওয়া হয় নি? আসল ঘটনা হলো বানু কুরাইজা গোষ্ঠীর কোনো দোষ ছিলো না, বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগটাই ছিলো
ভিত্তিহীন ও মনগড়া। ওটা ছিলো স্রেফ অজুহাত মাত্র। অভিযোগটি
সত্যি ছিলো না তার বহু প্রমাণ আমরা দেখতে পাই। যে যুদ্ধে বানু কুরাইজারা বিশ্বাসঘাতকতা
করেছিলো বলা হয়েছে সেটা আগেই বলেছি যে ইতিহাসে ‘খন্দক’
যুদ্ধ নামে খ্যাত। অভিযোগটি সত্যি হয় কি করে? যুদ্ধটি তো আদপেই
সংঘটিত হতে পারেনি। ঘটনাটি ৬২৭ খৃষ্টাব্দের। মক্কা ও সিরিয়ার রাস্তার পাশে কিছুটা ভিতরে মদিনা অবস্থিত। কোরেশদের প্রায়শঃই বাণিজ্য উপলক্ষ্যে ঐ রাস্তায় যাতায়াত করতে হতো। মুহাম্মদ বারবার কোরেশদের বাণিজ্য কাফেলার উপর
হামলা চালিয়ে লুঠতরাজ চালাতো ও তাদের হত্যাকরতো। বিনা প্ররোচনাতেই মুহাম্মদ এই ধরণের হানা এবং হত্যা
ও লুঠপাট চালাতেন। পর পর এরূপ হানায় কোরেশরা এটা বুঝতে
পেরেছিলো যে মুহাম্মদ তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য
স্তব্ধ করে দিয়ে তাদের অর্থনৈতিকভাবে ধ্বংস ও পঙ্গু করতে চাই। তাই অতিষ্ঠ হয়ে তারা মুসলমানদের একেবারেই
নিকেশ করার সঙ্কল্প
গ্রহণ করে। মুসলমানদের নিকেশ
করার শক্তি তাদের সবসময়ই ছিলো, ইচ্ছা করলে আগেই তারা তা করতে পারতো, কিন্তু কখনোই তারা এরূপ করার
কথা ভাবেনি। মুহাম্মদই তাদের সেই কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করেন। খন্দক
যুদ্ধ নামক কথিত যুদ্ধের কারণ এটাই। সৌদি আরবের এ যুগের বিশিষ্ট জীবনীকার
সফি-উর-রহামান আল-মুবারকপুরী খন্দক
যুদ্ধের কারণ বিশ্লেষণ করতে গিয়ে লিখেছেন -
Modern Saudi biographer
Safi-ur-Rahman al-Mubarakpuri expresses the right idea: . . . "[I]t was wise for the Muslims to
bring the commercial routes leading to Makkah [Mecca] under their control"
(p. 201). Then he lists eight raids between 623 and the Battle of Badr in AD
624. In each one, Muslims were the aggressors, to accomplish the big objective
of strangling Mecca’s trade. These raids that sometimes involved hundreds of
men continued steadily from that time to the Battle of the Trench. The Meccans
had had enough. So they wanted to finish off Islam, once and for all. [ http://www.answering-islam.org/Authors/Arlandson/qurayza_jews.htm] মক্কার কোরেশরা তাই আবু সুফিয়ানের
নেতৃত্বে ৬২৭ খৃষ্টাব্দে – মার্চ থেকে মে মাসের মধ্যে কোনো এক সময়ে - দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া পরিস্থিতিতে মদিনা
আক্রমণ করে। বিশাল শক্তি নিয়ে তারা এসেছিল মুসলমানদের সঙ্গে একেবারে শেষ যুদ্ধ
করার জন্যে। ৩০০
অশ্বারোহী সৈন্য সহ দশ /বারো হাজার সৈন্যবাহিনী ছিলো আবু
সুফিয়ানের সঙ্গে। তাদের সঙ্গে বানু
নাজির গোষ্ঠীর ইহুদিগণ এবং মক্কার পার্শবর্তী অঞ্চলের গাতাফান
গোষ্ঠীরা লেকেরাও যোগদান করেছিলো। অপরদিকে মুহাম্মদের পক্ষে
সৈন্য ছিলো মাত্র তিন হাজার যা দিয়ে মুহাম্মদের পক্ষে কোরেশদের মোকাবিলা করা মোটেই
সম্ভব ছিলো না। তবুও মুহাম্মদকে কোনো বিপর্যয়ের মধ্যে পড়তে হয় নি। কারণ
কোরেশদের মদিনা আক্রমণ করার পরিকল্পনা ও সঙ্কল্পের কথা মুহাম্মদ
জেনে গিয়েছিলেন প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই এবং সেই বিশাল বাহিনীর হাত থেকে আত্মরক্ষা করার
জন্যে তিনি মদিনার তিন দিকে একটি দশ হাত গভীর,
দশ হাত প্রস্থ ও ছ’ হাজার হাত দীর্ঘ পরিখা খনন করে
ফেলেন। বাকি ছিলো কেবল মদিনার উপকন্ঠে যেদিকে বানু কুরাইজা গোষ্ঠীর বসতি
ছিলো সেদিকটা। পরিখা কাটার পরামর্শ তাঁকে দিয়েছিলেন সোলেমান নামে তাঁরই এক পারসিক শিষ্য। আবু সুফিয়ানের নেতৃত্বে বিশাল সেই বাহিনী এসে তাই আটকে যায় ঐ পরিখায় এবং পরিখার ধারেই তারা ক্যাম্প তৈরী স্থাপন করে মদিনাকে অবরোধ করে
রাখে। এদিকে মদিনার দিক থেকে মুহাম্মদ তাঁর সৈন্যদের
পরিখা পাহারায় নিযুক্ত হওয়ার নির্দেশ দেন। আবু সুফিয়ানের দল বারবার পরিখা পার হয়ে এসে
মুসলমানদের আক্রমণ করার চেষ্টা করলে তা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। পরিখা পার হতে না
পেরে পাথর ও তীর ছুঁড়ে তারা মুসলমানদের উপর আক্রমণ চালানোর চেষ্টা করেছিলো।
অপরদিকে মুহাম্মদের বাহিনীও পাথর ও তীর
ছুঁড়ে কোরেশদের পাল্টা জবাব দিয়েছিলো। এভাবেই
দু পক্ষের পাথর ও তীর ছোঁড়ার মধ্যেই আক্রমণ পাল্টা আক্রমণ সীমিত থেকে গিয়েছিলো। তার ফলে সামান্য কয়েকজন আহত হয়েছিলো বটে, কিন্তু যুদ্ধ বলতে যা বোঝায় তা আদৌ
হয় নি। এভাবে মদিনার মুসলমানরা সাতাশ দিন অবরুদ্ধ অবস্থায় ছিলো কোরেশদের হাতে। তারপর একদিন রাত্রে প্রবল ঝড়-বৃষ্টি এসে সব কিছু ওলট-পালট করে দিয়ে চলে যায়। ঝড়ে কোরেশদের
ক্যাম্পগুলি সমস্তই ছিন্ন ভিন্ন ও
লণ্ড-ভণ্ড হয়ে যায়। যুদ্ধের জন্যে যে সমস্ত ঘোড়া ও অন্যান্য পশু নিয়ে এসেছিল কোরেশগণ সেগুলি
কোথায় দিনবিদিক ছুটে পালিয়ে যায়। ফলে কোরেশগণ বাধ্য হয়ে মদিনা ত্যাগ করে মক্কায়
ফিরে যায়। খন্দক যুদ্ধ যে বিনা যুদ্ধেই এভাবেই শেষ হয়েছিলো তা নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে একদম মতভেদ নেই। কবি গোলাম মোস্তফা এ প্রসঙ্গে যে বর্ণনা দিয়েছেন তা একটু
উদ্ধৃত করা যাক। তিনি লিখেছেন – “আবু সুফিয়ান ভাবিয়াছিল, দুই-এক দিনের মধ্যেই
তাহারা মদিনা জয় করিয়া আসিবে। কিন্তু দুই সপ্তাহ কাটিয়া গেল, তবু কিছুই হইল না। তখন সকলেই মহা দুর্ভাবনায় পড়িল। অবরোধ
তুলিয়া তাহারা ফিরিয়া যাইবার মতলব করিল।”
তিনি আরো লিখেছেন, “আকাশে কালো মেঘ দেখা দিল। দেখিতে দেখিতে ভীষণ
মরুঝটিকা উত্থিত হইয়া কোরেশদিগের সমুদয় ছাউনি উড়াইয়া লইয়া গেল। মুষলধারে
বৃষ্টিপাত আরম্ভ হইল। শিবিরে আগুন নিভিয়া গেল। রসদপত্র ও অন্যান্য উপকরণও
ভাঙয়া-চুরিয়া লণ্ড-ভণ্ড। ... ভীত-ত্রস্ত ও দিশেহারা হইয়া কোরেশগণ সেই রাত্রেই
মদিনা পরিত্যাগ করিয়া তাড়াতাড়ি মক্কার পথ ধরিল।” [দ্রঃ বিশ্বনবী, পৃ – ২০২,২০৩] একই কথা বলেছেন ইবনে ইশাক ও আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন
ঐতিহাসিক আলা তাবারিও। তাঁরা বলেছেন, Early biographer Ibn Ishaq says—and modern historians are in complete
agreement—that "[t]he siege continued without any actual fighting"
(p. 454). Early historian Tabari
agrees: "The Messenger of God and the
polytheists stayed in their positions for over twenty nights—nearly a month—with no
warfare between the troops, except for the shooting of arrows and the siege"
(vol. 8, p. 17). Again, modern western scholars agree on this point. http://wikiislam.net/wiki/The_Genocide_of_Banu_Qurayza] সুতরাং খন্দক যুদ্ধে যেখানে প্রকৃতপক্ষে যুদ্ধই হয় নি সেখানে
বানু কুরাইজাদের মুহাম্মদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার কথাটাই অবান্তর। তারা যে কোনোভাবেই মুহাম্মদের বিরুদ্ধে খন্দক
যুদ্ধের ঘটনায় কোরেশদের শিবিরে যোগ দেয় নি তার আরো বহু প্রমাণ পাওয়া যায়। মদিনা অবরুদ্ধ থাকার সময় বানু কুরাইজা গোষ্ঠীর
লোকেরা তাদের মহল্লাতেই অবস্থান করেছে। কোরেশরা আশা করেছিলো যে মুহাম্মদের অত্যাচারে
অতিষ্ঠ মদিনার বানু কুরাইজা গোষ্ঠী তাদের সঙ্গে যোগ দেবে। তারা এরূপ আশা করেছিলেন হয়তো এজন্যে যে ওদের মধ্যে থেকে কেউ
কেউ তাদের আশ্বস্ত করেছিলো যে তারা মদিনা
আক্রমণ করলে তাদের সঙ্গে যোগ দেবে।
কিন্তু পরে যে কারণেই হোক তারা পিছিয়ে গিয়েছিলো এবং নিরপেক্ষ অবস্থান
নিয়েছিলো। তাদের এই নিরপেক্ষ অবস্থানও
একটা অন্যতম কারণ যা কোরেশদের মদিনা থেকে অবরোধ তুলে নিতে বাধ্য করেছিলো। আবু
সুফিয়ান কেন তাঁর সৈন্যবাহিনী নিয়ে পশাচপসারণ করতে বাধ্য হয়েছিলেন তার কারণ মক্কা ফিরে যাবার সময় আক্ষেপের সুরে মুসলমানদের উদ্দেশ্যে চিৎকার করতে করতে বলে
গিয়েছিলেন। আবু সুফিয়ান কী বলেছিলেন তা ইবন ইশাককে উদ্ধৃতি করে মুহাম্মদ রফি বাজিল The Genocide of Banu Qurayza প্রবন্ধে লিখেছেন - Then Abu
Sufyan said: “O Quraish, we are not in a permanent camp; the horses and camels
are dying; the Banu Qurayza have broken their word to us and we have heard
disquieting reports of them. You can see the violence of the wind which leaves
us neither cooking-pots, or fire, nor tents to count on. Be off, for I am
going” [http://wikiislam.net/wiki/The_Genocide_of_Banu_Qurayza] ইবন ইশাকের বক্তব্যের প্রতিধ্বনি
শোনা যায় কবি গোলাম মোস্তাফার কন্ঠেও। তিনিও লিখেছেন যে বানু কুরাইজা গোষ্ঠীর ইহুদিরা খন্দক যুদ্ধে মুহাম্মদের বিপক্ষে কোরেশদের পক্ষাবলম্বন
করে নি। তিনি বিশ্বনবী গ্রন্থে এ
প্রসঙ্গে লিখেছেন – ‘এদিকে বনি-কোরাইজাগণও
কোরেশদিগের নিরাশ করিল। পূর্ব পরিকল্পনা অনুসারে তাহারা মুসলমানদিগকে আক্রমণ
করিতে সাহস করিল না। তখন আবু সুফিয়ান তাহাদের নিকট লোক পাঠাইয়া ইহার কারণ
জিজ্ঞাসা করিল। ইহুদীরা বলিলঃ “আজ আমাদের sabbat বা উপাসনার দিন,
কাজেই আমরা কোনমতেই যুদ্ধ করিতে পারিব না।” এই বিশ্বাসঘাতকতার দরুন কোরেশগণ ইহিদীদিগের উপর
মহাখাপ্পা হইয়া পড়িল।’ [পৃ – ২০২] একই অভিমত
ব্যক্ত করেছেন ড.ওসমান গণিও। প্রবল মরুঝড় বৃষ্টির ফলে আবু
সুফিয়ানরা কীরূপ বিপদে পড়েছিলেন তার বর্ণনা দেওয়ার পর তিনি লিখেছেন, - ‘তারা প্রতি মুহূর্তে কল্পনা করতে থাকলো হয়তো
এখনই হযরতের সৈন্যবাহিনী পরিখা পার হয়ে তাদের আক্রমণ করবে। ইতিমধ্যে তুলাইহা বিন
খাওয়াইলিদ চিৎকার করে বলে উঠলো – “হযরতের
লোকজন আমাদের মধ্যে এসে গেছে। তোমাদের নিজেদের রক্ষা কর।” এই কথা শোনা মাত্র
সেনাধ্যক্ষ আবু সুফিয়ান চিৎকার করে বলে উঠল – “হে কুরায়েশগণ, আমি সকাল পর্যন্ত
এখানে অবস্থান করব না। সমস্ত পশু নষ্ট হয়ে গেছে। বানু কুরাইজা আমাদের সঙ্গে চরম
বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। এবং তোমরা লক্ষ্য করছ ঝড় আমাদের কি মারাত্মক ক্ষতি করছে।
এখনই আমাদের চলে যাওয়া উচিত। আমি নিশ্চয়ই চলে যাচ্ছি।” [দ্রঃ মহানবী, পৃ-২৮৬]
প্রসঙ্গত একটা কথা এখানে বলে রাখি যে গোলাম মোস্তফা ও ওসমান গণি – এই দুই জন
মুহাম্মদের জীবনীকারই হলেন ঈমানদার মুসলমান
যাঁরা ইসলাম ধর্ম ও মুহাম্মদের প্রতি অন্ধ বিশ্বাস ও আনুগত্য পোষণ করেন। সুতরাং
তাঁরা ইহুদিদের দোষ স্খলন হয় এমন কোনো কথা বানিয়ে নিশ্চয় লিখেন নি। বরং যে কথাটি তাঁরা গোপন করে
গেছেন তা হলো এই যে, পরিখা খনন করার সময় বানু কুরাইজা গোষ্ঠী মুহাম্মদকে খনন কার্যে
যন্ত্রপাতি দিয়ে যথেষ্ট সাহায্য করেছিলো।
ঐতিহাসিক তথ প্রমাণ ছাড়াও যদি
কেবল যুক্তি দিয়ে বিচার করা হয় তাহলেও এটাই প্রতীয়মান হয় যে বানু কুরাইজা গোষ্ঠী কোরেশদের শিবিরে যোগদান করে নি। তারা কোরেশদের সঙ্গে যোগদান করলে
খন্দক যুদ্ধের ফলাফল নিশ্চতভাবেই অন্য রকম হতো। কারণ, মদিনার যেদিকে বানু
কুরাইজাদের মহল্লা ছিল সেদিকটা ছিল সম্পূর্ণ অরক্ষিত। বানু কুরাইজাগণ কোরেশদের সঙ্গে যোগ দিলে তাদের দিক
দিয়ে আবু সুফিয়ান নিশ্চয় মুহাম্মদ ও তাঁর বাহিনীর উপর ব্যাঘ্রবাহিনীর মতো ঝাঁপিয়ে
পড়তেন। তাহলে দশ/বারো হাজার কোরায়েশ সৈন্যের আক্রমণের মুখে মুহাম্মদ ও বাকি মুসলমানরা যে খড়কুটার মতো উড়ে যেতো তা বলা বাহুল্য।
আর কোরেশরা তো এসেই ছিলো মুসলমানদের নিকেশ করার জন্যে, এবং তারা নিশ্চয় একজন মুসলমানকেও জীবিত রেখে ঘরে ফিরে যেতো না। তার ফল হতো এই যে নিশ্চিতভাবেই খন্দক
যুদ্ধে মুসলমানরা নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতো এবং
পৃথিবীর বুক থেকে ইসলামের নাম ও নিশানাটাও মুছে যেতো। মুহাম্মদ রফি বাজিলও ঠিক এ
কথাটাই বলেছেন। তিনি বলেছেন - But this
alleged treachery on Banu Qurayza’s part is very hard to accept for a rational
mind. To be treacherous, Banu Qurayza must have joined the confederate army who
had come to attack the Muslims. If that were the case (had Banu
Qurayza joined the Meccan army) it would have ended in the total eradication of
Muslims.
কোরানে কয়েকটি আয়াত আছে খন্দক যুদ্ধের উপর। তার মধ্যে কয়েকটি
হলো ৩৩/৯-১০, এবং ৩৩/২৫। ৩৩/৯-১০ আয়াত দুটির অর্থ হলো – “হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা
তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহের কথা স্মরণ করো। যখন
শত্রুবাহিনী তোমাদের বিরুদ্ধে সমাগত হয়েছিলো, এবং আমি ওদের বিরুদ্ধে ঝঞ্ঝাবায়ু ও
অদৃশ্য বাহিনী প্রেরণ করেছিলাম।” ৩৩/২৫ নং আয়াতে কোরানের ভাষ্য হলো – “আল্লাহ অবিশ্বাসীদের তাদের
ক্রোধসহ তাদের বিফল মনোরথ হয়ে ফিরে যেতে বাধ্য করলেন। যুদ্ধে অবিশ্বাসীদের জন্যে
আল্লাহই যথেষ্ট ছিলেন। আল্লাহ সর্বশক্তিমান পরাক্রান্ত।” এই আয়াতগুলিতে বানু কুরাইজাদের বিষয়ে কিছু
উল্লেখ নেই। প্রকৃত ঘটনা হলো ইতিহাস ও অন্যান্য সূত্রে যে সকল তথ্য প্রমাণ পাওয়া যায় তাতে এটা কোনোভাবেই
প্রমাণিত হয় না যে মুহাম্মদের বিরুদ্ধে খন্দক যুদ্ধে বানু কুরাইজাগণ অংশ গ্রহন করেছিলো। তাহলে প্রশ্ন জাগে, মুহাম্মদ কেন বানু কুরাইজাদের বিরুদ্ধে অভিযান করেছিলেন এবং তাঁর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার মিথ্যা অভিযোগে কেনো তাদের বিরুদ্ধে বিচারের নামে
প্রহসন করেছিলেন? এই প্রশ্ন দুটির উত্তর নিহিত আছে খন্দক যুদ্ধের পূর্বেকার মদিনার পরিবেশ ও পরিস্থিতির
মধ্যে। কোরেশগণ মদিনা আক্রমণ করতে আসছে এটা অবগত হয়ে মুহাম্মদ বানু কুরাইজাদের তাঁর সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে
কোরেশদের মোকাবিলা করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু বলা বাহুল্য যে তারা মুহাম্মদের প্রস্তাবে
সম্মত হয় নি। এতে মুহাম্মদের এই ধারণা বদ্ধমূল হয় যে তাহলে বানু কুরাইজা গোষ্ঠী নিশ্চিতভাবেই তাঁর শত্রু এবং
কোরেশদের মিত্র।
সুতরাং খন্দক যুদ্ধে নিরপেক্ষ থাকলেও পরে যে কোনো সময়ে তারা
সরাসরি কোরেশদের পক্ষ নিতে পারে। মুহাম্মদের এই অনুমান হয়তো অমূলক ছিলো না। তিনি তাই ঠিক করেন যে ঘরের কাছের শত্রুকেই আগে শেষ করতে হবে। এটা একটা কারণ। দ্বিতীয়
কারণ হলো বানু কুরাইজাদের স্থাবর জমি-জায়গা বিষয়-আশয় ও ধন-দৌলত গ্রাস করা। পরের ধন-সম্পদ লুঠ করাকে মুহাম্মদ যে নীতি ও পেশা করে নিয়েছেন তা বদর যুদ্ধ এবং বানু কাইনুকা ও বানু নাজির
গোষ্ঠীর নির্বাসনের ঘটনায় প্রমাণিত। সুতরাং তাঁর পক্ষে এ
রকম পরিকল্পনা করা খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার
ছিলো। এই দুটি কারণেই মুহাম্মদ খন্দক যুদ্ধের পর পরই
বানু কুরাইজাদের বিরুদ্ধে অভিযান সংগঠিত করেছিলেন। কিন্তু তারা তো মুহাম্মদের
বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেনি, তাহলে কোন যুক্তিতে তিনি তাঁর শিষ্যদের বিরুদ্ধে অভিযান করার নির্দেশ দেবেন? কোনো যুক্তি ও কারণ না থাকায় তিনি জিব্রাইলকে অস্ত্র বানিয়ে ফেলেন। হ্যাঁ, তিনি বলেন যে জিব্রাইল মারফত আল্লাহ্ বানু কুরাইজা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অভিযানের
নির্দেশ পাঠিয়েছেন। হাদিসে এর প্রমাণ রয়েছে।
একটি হাদিসে এই অভিযান প্রসঙ্গে বলা হয়েছে যে খন্দক যুদ্ধে প্রায় একমাস অবরুদ্ধ
রাখার পর কোরেশগণ যখন মদিনা পরিত্যাগ করে চলে যায় তখন মুহাম্মদ তাঁর শিষ্যদের নিজ নিজ ঘরে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেন এবং তিনিও দুশ্চিন্তা মুক্ত
হয়ে আনন্দ চিত্তে তাঁর ঘরে ফিরে যান। কিন্তু ঘরে ফেরা মাত্রই তাঁর কাছে জিব্রাইল
[আল্লাহর বার্তাবাহক] এসে বলে যে, আল্লাহর
হুকুম হলো এখন বিশ্রাম নয়,
এক্ষুণি বানু কুরাইজাদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করতে হবে। মুহাম্মদ জানতে চান নি কেনো অভিযান
করতে হবে। তিনি আল্লাহর হুকুম শোনা মাত্রই শিষ্যদের অভিযানে বের হওয়ার নির্দেশ দিলেন। ইবন কাথির তাঁর
তফসির গ্রন্থে এই হাদিসটি বর্ণনা করেছেন। হাদিসট হলো – “ ... the
Messenger of Allah returned to Al-Madinah in triumph and the people put down
their weapons. While the Messenger of Allah was washing off the dust of battle
in the house of Umm Salamah, may Allah be pleased with her, Jibril, upon him be peace,
came to him wearing a turban of brocade, riding on a mule on which was a cloth
of silk brocade. He said, "Have
you put down your weapons, O Messenger of Allah" He said, "Yes"
He said, "But the angels have not put down their weapons. I have just now
come back from pursuing the people." Then he said: "Allah, may He be
blessed and exalted, commands you to get up and go to Banu Quraiza. According
to another report, "What a fighter you are! Have you put down your
weapons" He said, "Yes". He said, "But we have not put down
our weapons yet, get up and go to these people." He said:
"Where?" He said, "Banu Quraiza, for Allah has commanded me to
shake them." So the Messenger of Allah got up immediately, and commanded
the people to march towards Banu Quraiza, who were a few miles from Al-Madinah.” [http://wikiislam.net/wiki/The_Genocide_of_Banu_Qurayza]
এই হাদিসটির কোথাও উল্লেখ নেই যে বানু কুরাইজা গোষ্ঠীর মানুষরা খন্দক
যুদ্ধে মুহাম্মদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করেছিলো। তাহলে এই অভিযানের জন্যে
আল্লাহর জিব্রাইলকে দিয়ে মুহাম্মদের কাছে বার্তা
পাঠানোর কী প্রয়োজন ছিলো? হ্যাঁ, এ রকম বহু বার্তাই যখনই প্রয়োজন হয়েছে
তখনই তিনি পেয়ে গেছেন আল্লাহর কাছ থেকে চটজলদি। তাঁর যখনই কোনো কিছু করার অভিলাষ হয়েছে, অথচ সমাজের প্রচলিত
নিয়ম-নীতি ও প্রথা সেই অভিলাষ পূরণের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে তখনই আল্লাহ তাঁকে দ্রুত বার্তা পাঠিয়ে দিয়েছে তাঁর
অভিলাষ বাস্তবায়িত করার জন্যে। বানু কুরাইজাদের ঘিরে যে পরিকল্পনা তিনি
এঁটেছিলেন তা বাস্তবায়িত করার ক্ষেত্রেও কোনো ব্যত্যয় তাই ঘটে নি, যথা সময়ে আল্লাহর বার্তা তাঁর হাতে পৌঁছে গিয়েছিলো। বার্তা তো নয়, একেবারে
লাইসেন্স। এরূপ লাইসেন্স মুহাম্মদ পেয়েছিলেন ছ’ বছরের শিশু কন্যা আয়েষা
ও পালিত পুত্রের স্ত্রী জয়নাবকে বিয়ে করার সময়েও।
আবার এ রকম ঘটনাও বহু আছে যেখানে মুহাম্মদের বহু
অন্যায় ও অনৈতিক কাজকে আল্লাহ বৈধ কাজ বলে পরে লাইসেন্স দিয়েছে অথবা সে সব কাজের
দায় নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছে। বদর প্রান্তে কোরেশদের নিরস্ত্র বাণিজ্য কাফেলার
উপর হামলা, বানু কাইনুকা গোষ্ঠী ও বানু নাজির গোষ্ঠীকে নির্বাসিত করা, বানু
মুস্তালিক গোষ্ঠী ও খায়বারের ইহুদিদের উপর হামলা
এবং হত্যা ও লুটপাট চালানো ইত্যাদি অসংখ্য দৃষ্টান্ত রয়েছে যেখানে প্রতিটি
হামলা এবং লুটপাটকে আল্লাহ বৈধতা দিয়েছে ওহি বা বার্তা পাঠিয়ে। বানু কুরাইজাদের ক্ষেত্রেও তার ব্যতক্রম ঘটেনি। প্রায় হাজার খানেক পুরুষের শিরশ্ছেদ করা নৃশংস
হত্যাকান্ড সংঘটিত করা সহস্রাধিক নারী ও শিশুকে দাস-দাসী বানানোর ঘটনার বিরুদ্ধে
তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ ধ্বনিত হয়েছিল
ঘরে ও বাইরে। মুসলমানদের মধ্যেও গুঞ্জন শুরু হয়েছিলো। তাদের মুখ বন্ধ করতেও আল্লাহ বার্তা বা ওহি পাঠাতে ভুল করেনি। সেই ওহিটি হলো - কেতাবীদের মধ্যে যারা ওদের সাহায্য
করেছিল, তাদের তিনি তাদের দূর্গ হতে অবতরণে
বাধ্য করলেন, এবং তাদের অন্তরে ভীতি সঞ্চার করলেন, এখন তোমরা ওদের কতককে হত্যা
করছ, এবং কতককে বন্দি করছ। [কোরান – ৩৩/২৬]
প্রহসন পর্ব শেষ হলে মুহাম্মদ বিচারের রায় কার্যকর করার ভার দেন জামাতা আলি ও চাচাতো ভাই জুবায়েরকে। বানু কুরাইজাদের পুরুষ মানুষ ও যুবক ছেলেদের
৫/৬ জনেরে গ্রুপ করে তাদের মহল্লা থেকে প্রত্যেকের হাত দুটো পিছন দিকে বেঁধে খালের
কাছে এনে একের পর এক নৃশংসভাবে কতল শুরু করা হলো। ৯০০ জন ইহুদিকে কতল করতে অন্ধকার হয়ে যায়।
মুহাম্মদ এই নৃশংস হত্যাকান্ডটি নিজে বসে থেকে তাদারকি করেন। তারপর ৯০০ টি
কাটা মুন্ডু ও ৯০০ টি মুন্ডুহীন ধর পুঁতে ফেলে তার উপর মাটি চাপা দিয়ে মুহাম্মদ তাঁর সাহাবীদের বলেন তাঁর সামনে নারী ও শিশুদের
নিয়ে আসতে। মুসলমানরা ওদের ধরে নিয়ে আসেন এবং মুহাম্মদের সামনে দিয়ে হাঁটিয়ে নিয়ে
যান। মুহাম্মদ চোখ আটকে যায় ঊনিশ বছরের একজন যুবতীর প্রতি। ভীষণ রূপবতী এই
মেয়েটি বানু কুরাইজাদের সেনাপতির স্ত্রী যার নাম ছিলো রায়হানা। মুহাম্মদ তাঁর
সাহাবীদের বলেন রায়হানাকে তাঁর হারেমে
পৌঁছে দিতে। মুহাম্মদ রায়হানাকে বিয়ে করে
তাঁকে নিয়ে তিনদিন মধুচন্দ্রিমা যাপন করেন। তবে এটা নিয়ে ভিন্ন মতও শোনা যায়।
রায়হানা ইসলাম ধর্ম অবলম্বন করেন নি, মুহাম্মদ তাই তাঁকে তাঁর উপপত্নীদের কাছে
পাঠিয়ে দিয়েছিলেন।
কুরাইজাদের বীভৎস ও নারকীয় এই হত্যাকান্ডের বর্ণনা প্রসঙ্গে Sir
W.Muir লিখেছেন, “The
butchery began in the morning, lasted all the day, and continued by torch light
till the evening. Having thus drenched the market place with the blood seven to
eight hundred victims and having given command for the earth to be smoothed
over their remains, Mohammad returned from the horried spectacle to solace
himself with the charms of Rihana, whose husbands and all her male relatives
had just perished in the massacre.” [Source : Life of Mohmet, Sir W.Muir,
Voice of India, p-319]
এই ছিলো মুহাম্মদের সময়ে মদিনায় ইহুদি, মুসলমান ও অন্যান্য ধর্মগোষ্ঠীর মানুষদের শান্তিপূর্ণ ও সহবস্থানের মধ্যে বসবাস করার আসল ছবি! এই নিবন্ধ শেষ করার আগে ইহুদিদের প্রতি মুহাম্মদের মনোভাব – দৃষ্টিভঙ্গী কিরূপ ছিল তা বুঝে নেওয়ার জন্যে কোরানের একটি ওহি ও একটি হাদিস উল্লেখ করবো। হাদিসটি হলো - "রসুলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন, কিয়ামত সংঘটিত হবে না যে পর্যন্ত না তোমরা ইয়াহুদিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে। এমনকি তাদের কেউ যদি পাথরের আড়ালে আত্মগোপন করে, তাহলে পাথরও বলবে, ‘হে মুসলিম, আমার পেছনে ইয়াহুদি আছে তাকে হত্যা করো'। [বোখারী, ৫ম খন্ড, হাঃ নং- ২৭২৫] ইহুদিদের প্রসঙ্গে কোরানের একটি আয়াত (৫/৬৪) হলো - “এবং ইহুদিগণ বলে যে, আল্লাহ্র হস্ত আবদ্ধ। তাদের হস্তসমূহ শৃংখলাবদ্ধ হবে এবং তারা যা বলছে, তারজন্য অভিশপ্ত হবে। বরং তাঁর উভয় হস্তই প্রসারিত, তিনি যেরূপ ইচ্ছা দান করে থাকেন এবং তোমার প্রতিপালক হতে তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে, তাতে অনেকেরই বিদ্রোহ ও অবিশ্বাস বাড়বে। আমি তাদের মধ্যে উত্থানদিবস (কিয়ামত) পর্যন্ত শত্রুতা ও বিদ্বেষ সঞ্চার করেছি, যখন তারা যুদ্ধের অগ্নি প্রজ্বলিত করে, আল্লাহ্ তা নির্বাপিত করেন। এবং তারা পৃথিবীর বুকে অশান্তি উৎপাদন করে বড়ায়, বস্তুত আল্লাহ্ অশান্তি উৎপাদনকারীদের ভালোবাসেন না।
এই ছিলো মুহাম্মদের সময়ে মদিনায় ইহুদি, মুসলমান ও অন্যান্য ধর্মগোষ্ঠীর মানুষদের শান্তিপূর্ণ ও সহবস্থানের মধ্যে বসবাস করার আসল ছবি! এই নিবন্ধ শেষ করার আগে ইহুদিদের প্রতি মুহাম্মদের মনোভাব – দৃষ্টিভঙ্গী কিরূপ ছিল তা বুঝে নেওয়ার জন্যে কোরানের একটি ওহি ও একটি হাদিস উল্লেখ করবো। হাদিসটি হলো - "রসুলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন, কিয়ামত সংঘটিত হবে না যে পর্যন্ত না তোমরা ইয়াহুদিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে। এমনকি তাদের কেউ যদি পাথরের আড়ালে আত্মগোপন করে, তাহলে পাথরও বলবে, ‘হে মুসলিম, আমার পেছনে ইয়াহুদি আছে তাকে হত্যা করো'। [বোখারী, ৫ম খন্ড, হাঃ নং- ২৭২৫] ইহুদিদের প্রসঙ্গে কোরানের একটি আয়াত (৫/৬৪) হলো - “এবং ইহুদিগণ বলে যে, আল্লাহ্র হস্ত আবদ্ধ। তাদের হস্তসমূহ শৃংখলাবদ্ধ হবে এবং তারা যা বলছে, তারজন্য অভিশপ্ত হবে। বরং তাঁর উভয় হস্তই প্রসারিত, তিনি যেরূপ ইচ্ছা দান করে থাকেন এবং তোমার প্রতিপালক হতে তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে, তাতে অনেকেরই বিদ্রোহ ও অবিশ্বাস বাড়বে। আমি তাদের মধ্যে উত্থানদিবস (কিয়ামত) পর্যন্ত শত্রুতা ও বিদ্বেষ সঞ্চার করেছি, যখন তারা যুদ্ধের অগ্নি প্রজ্বলিত করে, আল্লাহ্ তা নির্বাপিত করেন। এবং তারা পৃথিবীর বুকে অশান্তি উৎপাদন করে বড়ায়, বস্তুত আল্লাহ্ অশান্তি উৎপাদনকারীদের ভালোবাসেন না।
"
.
No comments:
Post a Comment