আইসিস [ISIS] - এর পর এবার নাইজিরিয়ার মুসলিম সন্ত্রাসবাদী সংগঠন ‘বোকো হারাম’ ইসলামি খেলাফত
স্থাপনের ঘোষণা দিলো। বোকো হারামের প্রধান আবুবকর সেকাও সেই ঘোষণায় বলেছেন যে তাঁরা নাইজিরিয়ার উত্তর-পূর্বে বোর্নো রাজ্যের গোজা শহরে ‘ইসলামিক খেলাফত’
স্থাপন করেছে। গত ২৪ শে
আগষ্ট, রবিবার ৫২ মিনিটের একটি ভিডিও রেকর্ডের মাধ্যমে সেকাও বিশ্ববাসীকে এই
সংবাদ অবহিত করেছেন। গোজা শহরে বিজয় হাসিল ও তথায় ইসলামি খেলাফত স্থাপন
করার সব কৃতিত্ব তিনি দিয়েছেন আল্লাহকে। তিনি বলেছেন, "Thanks
be to Allah who gave victory to our brethren in (the town of) Gwoza and made it
part of the Islamic caliphate," সেকাও আরো জানিয়েছেন যে এখন থেকে গোজা শহর আর নাইজিরিয়
সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক রাখবে না। He declared that Gwoza, in Borno state,
now has "nothing to do with Nigeria". সেকাও সদর্পে জানিয়েছেন যে, আল্লাহর অনুগ্রহে
আমরা বোর্নো রাজ্যের গোজা শহরে থাকতে
এসেছি, এখান থেকে আমরা ফিরে যাবো না - "By the grace of Allah we will not
leave the town. We have come to stay," [সংবাদ সূত্রটি হলো – Islamic Caliphate In Nigeria|Islamic Caliphate|Boko Haram] বোকো হারাম আরো জানিয়েছে
যে গোজা
শহরের উত্তর ও দক্ষিণে বিশাল অঞ্চল
এবং পার্শবর্তী যোবে রাজ্যের একটি
শহরও তারা নিয়ন্ত্রণ করছে। তবুও বোকো
হারাম নিয়ে মিডিয়ায় বিশেষ খবর দেখা যায় না। কিন্তু এটা একটা বিশ্বের ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসবাদী
সংগঠনগুলির একটি। মার্কিন যুক্ত্রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদ বোকো হারামকে অনেক আগেই অন্তর্দেশীয় কুখ্যাত
সন্ত্রাসবাদী সংগঠন বলে চিহ্নিত করেছে।
বোকো হারাম মিডিয়ার নজরে প্রথম
আসে সম্ভবতঃ এ বছর ১৬ই এপ্রিল। তারা সে দিন একটা স্কুল থেকে
২৭৬ জন স্কুল ছাত্রীকে অপহরণ করে। অপহরণের পর তাদের জিম্মী বানিয়ে সরকারকে বলে – হয়
আমাদের সংগঠনের নেতা-কর্মীদের মুক্তি দাও, না হলে আল্লাহর হুকুমে এই মেয়েদের বাজারে
বিক্রি করে দেবো। আজ পর্যন্ত নাইজিরিয় সরকার সেই স্কুলছাত্রীদের উদ্ধার করতে পারে
নি। ওদের সন্ত্রাসবাদী কাজের ধারা অব্যাহত রয়েছে। তাদের সন্ত্রাসবাদী কাজগুলির মধ্যে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য হল - আরো কুড়িজন নারীকে অপহরণ, গীর্জায় আক্রমণ ও উপাসনারত খৃষ্টানদের হত্যা,
৩১জন নাইজিরিয় নিরাপত্তা কর্মীকে হত্যা, ২০০ জন অসামরিক নাইজিরিয়কে হত্যা ইত্যাদি
ইত্যাদি। বোকো হারামের এ সব বীভৎস, পৈশাচিক ও নারকীয় সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপগুলি বোধ
হয় চাপা পড়ে যাচ্ছে গাজায় ইজরায়েলের
গণহত্যা এবং ইরাক ও সিরিয়ায় আইসিসের হাড়
হিম করা ক্রমাগত চলতে থাকা হত্যালীলার ঘটনায়।
বোকো হারাম নাইজিরিয়ায় ইসলামিক খেলাফত প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সন্ত্রাসবাদী
কার্যকলাপ চালিয়ে যাচ্ছে ২০০২ সাল থেকে। গত পাঁচ বছরে তারা কমপক্ষে ২০০০ অসামরিক
লোকজনকে হত্যা করেছে। এবং প্রাণ
রক্ষার্থে সাড়ে সাত লক্ষ নাইজিরিয় মানুষ ঘর ছাড়া হয়েছ। সামরিক বাহিনী ও প্রশাসনের
লোকজন ছাড়াও তারা সাধারণ মানুষকে অপহরণ ও হত্যা করছে তাদেরকে ভীত-সন্ত্রস্ত করে নিশ্চুপ করিয়ে দিতে বা পক্ষে টানতে। সাধারণ মানুষের অবস্থা খুবই
সঙ্গীন, সরকার তাদের নিরাপত্তা দিতে পারছে না, এমনকি সামরিক বাহিনীরও বোকো হারামের
মোকাবিলা করার শক্তি ও সাহস কোনোটাই নেই
বলে প্রতিভাত হচ্ছে।কয়েকদিন আগে যখন বোকো হারামের
সন্ত্রাসীরা গোজা শহরের ২০০ জন মানুষকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করে তার আগে স্থানীয়
সরকার আগে থেকে আক্রমণের খবর পেয়ে সরকারের কাছে আবেদন করেছিলো সেনা পাঠিয়ে তাদের
রক্ষা করার জন্যে। কিন্তু নাইজিরিয় সরকার সেনা পাঠাতে পারে নি। কারণ সেনা বাহিনী
যেতেই চায় নি। সেনা বাহিনী আরো
অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র ছাড়া গোজা শহরে যাবে না বলে দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে যে
সংবাদটি প্রকাশিত হয়েছে তা এ রকম - Soldiers this week refused to deploy to
Gwoza without better weapons in an apparent mutiny. মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর এ
বিষয়ে আগেই খবর দিয়েছিলো যে বোকো হারাম
তাদের বাহিনীকে যে আধুনিক ও উন্নত মানের প্রশিক্ষণ দেয় তা নাইজিরিয় সরকার তার
সামরিক বাহিনীকে দিতে পারে না এবং বোকো হারামের কাছে যে ধরণের উন্নত ও অত্যাধুনিক
অস্ত্রশস্ত্র ও ক্ষেপণাস্ত্র আছে তা সামরিক বাহিনীর হাতেও নেই।
আইসিস বা,
আইসিএল ইরাক ও সিরিয়ার বেশ কিছু অঞ্চল জুড়ে [সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় এলাক আলেপ্প
থেকে পূর্ব ইরাকের দিইয়ালা প্রদেশ পর্যন্ত] ইসলামি খেলাফত ঘোষণা করেছে গত
২৯শে জুন, যে দিন এ বছর মুসলিমদের পবিত্র রমজান মাসের সূচনা
হয়। আইসিস তখন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ কয়েকটি কথা
ঘোষণা করে। সেগুলি হলো – এক]. আইসিস [ISIS] এখন থেকে হবে আইএস [IS] অর্থাৎ ইসলামিক স্টেট। দুই]. তাদের
অধিকৃত অঞ্চলে তারা ইসলামি খেলাফত গঠন
করেছে। তিন]. আবুবকর আল-বাগদাদি তাদের
খলিফা, চার]. আবুবকর
আল-বাগদাদি এখন থেকে ‘খলিফা ইব্রাহিম’
নামে পরিচিতি পাবেন। পাঁচ]. বিশ্বের সকল মুসলমানকে আবুবকর আল-বাগদাদির কাছে বায়াত
[আনুগত্যের শপথ] নিতে হবে। আইসিস কে ‘আইএস’ করে খেলাফত গঠনের মধ্যে দিয়ে তারা যে বার্তা দিয়েছে তা
বিরাট তাৎপর্য বহন করে। তাহলো, সমগ্র বিশ্বকে তারা তাদের খেলাফতের অধীনে আনতে চায় এবং
গোটা বিশ্ব পরিচালিত হবে তাদের মনোনীত খলিফার
নির্দেশে ও শাসনে, যেমন মুহাম্মদ ও
তাঁর অনুগামী খলিফাদের অধীনে শাসিত ও পরিচালিত হতো মুসলিম বিশ্ব। ‘ইব্রাহিম’ একজন নবীর নাম যাঁর
বিশেষ মর্যাদা রয়েছে সমস্ত নবীদের মধ্যে। আবুবকর আল-বাগদাদিকে ‘খলিফা ইব্রাহিম’ হিসেবে পরিচিত করার মধ্যে দিয়ে আইএস গোটা বিশ্বের মুসলিমদের কাছে তাদ খেলাফত ও খলিফাকে একটি বিশেষ
মর্যাদা ও উচ্চতায় তুলে ধরতে চায়।
খেলাফত গঠনের ঘোষণাকে শুধু কথার
কথা হিসেবে দেখলে চলবে না। কারণ,
মুহাম্মদ ও তাঁর উত্তরসূরী প্রথম চারজন খলিফা – আবুবকর, ওমর ফারুক, ওসমান গণি ও
আলি - যাঁদেরকে ‘খোলাফায়ে রাশেদিন’ তথা সৎপথে পরিচালিত খলিফা হিসেবে মুসলুমানরা
জানে, যে পথে খেলাফত পরিচালনা করতেন সে
পথেই তারা খেলাফত পরিচালনা করছে, কোন আপোষ করছে না। ইহুদি,খৃষ্টান ও ইয়াজেদি সহ অমুসলিম যারা আছে
তাদের কাছে তারা এই বিকল্পগুলি দিয়েছিলো – এক]. মুসলমান হও, দুই]. অথবা জিজিয়া কর দাও, তিন]. অথবা ইসলামি
খেলাফত ছেড়ে চলে যাও, চার]. অথবা মৃত্যুর
জন্যে প্রস্তুত থাকো। কিন্তু রাষ্ট্রীয় সামরিক বাহিনীর সদস্য, সাধারণ পুলিশ
প্রশাসনের সদস্য এবং সাধারন শিয়া মুসলমানদের জন্যে আইসিস জঙ্গিরা হত্যা করা ছাড়া কোনো বিকল্প রাখে
নি। তাদের নাগালে পাওয়া মাত্রই নৃশসভাবে হত্যা করছে শিরচ্ছেদ করে অথবা ক্রশবিদ্ধ করে। শিয়ারা তাদের মতে মুসলমানই নয়, কারণ তারা [সুন্নীরা] যে কোরানকে অনুসরণ করে
এবং মনে করে যে সেটাই আসল কোরান যেটা আল্লাহর কাছে গচ্ছিত ও রক্ষিত আছে, সেই কোরানকে শিয়ারা জাল কোরান বলে প্রত্যাখান
করেছে। তাই শিয়ারা ইহুদি, খৃষ্টান ও পৌত্তলিকদের চেয়েও নিকৃষ্ট এবং আল্লাহ ও ইসলামের
সব চেয়ে বড়ো শত্রু। এদিকে অমুসলিমরা আইসিসের দেওয়া বিকল্পগুলি
বেছে নেওয়ার সময়সীমা পার হওয়ার আগে প্রাণ
রক্ষার্থে যারা পেরেছে তারা ইসলামিক স্টেট ছেড়ে যে যেখানে পেরেছে চলে গেছে। যেমন পঁচিশ হাজার খৃষ্টান ইরাকের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর
মসুল ছেড়ে চলে গিয়েছে। যাদের নিজের বাড়িঘর ছেড়ে যাওয়ার সামর্থ নেই তারা জিজিয়া কর দিয়ে জিম্মি হয়ে গোলামের মতো বাস করছে। ইয়াজিদিরা যারা ইসলাম কবুল করে নি, জিজিয়া
কর দিতেও সম্মত হয় নি, এবং বাড়িঘর ও দেশ ত্যাগ করেও যায় নি কিংবা যেতে পারেনি তাদের পাঁচশ জনকে [ইয়াজিদিরা মুসলমান নয়, আবার ইহুদি ও খৃষ্টানও
নয়] আইসিস বাহিনী নৃশংসভাবে হত্যা করা
হয়েছে এবং তাদের অনেককে জীবন্ত কবরে
পুঁতে দিয়েছে। শিয়াদের সমস্ত মসজিদ ও সৌধগুলি
তারা ধ্বংস করে উল্লাসে মেতে উঠেছে পিশাচ সদৃশ। গীর্যাগুলির দখল
করে সেখান থেকে ‘ক্রশ’ চিহ্নগুলি সরিয়ে দিয়ে কালো পতাকা ঝুলিয়ে দিয়েছে, এবং সেগুলিকে হয় মসজিদ, না
হয় ইসলামি শিক্ষাকেন্দ্রে রূূূপান্তরিত করেছে। নারীদের হিজাব পরিধান করা বাধ্যতামূলক করেছে। ধূমপান
নিষিদ্ধ করেছে। সমস্ত পানশালা ও কফি
হাউস বন্ধ করে দিয়েছে। নামাজের সময় সমস্ত দোকান-পাট বন্ধ রাখার নির্দেশ জারি করেছে, এই নির্দেশ ঠিকঠাক অনুসরণ করা হচ্ছে কী না তা দেখার জন্যে
ইসলামি স্টেটের জঙ্গিবাহিনী তাদের নির্দিষ্ট পোশাক পরে অস্ত্রশস্ত্র সহ শহর
জুড়ে টহল দিচ্ছে।
ইসলামিক স্টেটের পক্ষ থেকে যেমন
ঘোষণা করা হয়েছে যে বিশ্বের সব মুসলমানকে তাদের আনুগত্য মানতে হবে, তেমনি তার পাশাপাশি তারা এও ঘোষণা
করেছে যে পাশ্চাত্যের গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, মানবাধিকার, ইত্যাদি সমস্ত আইনি আবর্জনাগুলিও
ত্যাগ করতে হবে। ইরাকের ইসলামিক স্টেটের সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলের দায়িত্ব প্রাপ্ত প্রধান
সামরিক কমান্ডার আকা আবু ওমর আল-শিশানি এক সাক্ষাৎকারে ঘোষণা করেছেন যে তারা পৃথিবীতে
ততদিন জিহাদ চালিয়ে যাবে যতদিন না গোটা বিশ্ব তাদের খেলাফতের অধীনে আসবে ও তাদের
শাসন মেনে নিবে। আল-শিশানি উক্তিটি হলো এ রকম - ISIS has already
declared war on the world and promises to “fight them until they accept our
rule” under a new Islamic caliphate. আল-শিশানি একজন চেচেন বিদ্রোহী ও ধর্মান্তরিত মুসলমান।
লোকটা অবৈধভাবে অস্ত্র রাখার অপরাধে তিন বছর জেল খাটা দাগী আসামী। সে ঐ
সাক্ষাৎকারে বলেছে যে যারা ইসলামের বিরোধিতা করবে তারাই তাদের শত্রু; আইসিস তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করবে, তাদের নারীদের
অপহরণ করবে, তাদের শিশুদের অপহরণ করবে; হয় তারা ইসলামের পতাকার নীচে আসবে, না হয় নিশ্চিহ্ন হবে। তার বলা ইংরাজী ভাষ্যটি এ রকম - “We will
fight them. We will take their women. We will take their children. They have to
come to Islam or they will get wiped out.” আল-শিশানিকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো সিরিয়া ও ইরাকের সামরিক বাহিনী ও
প্রশাসনের সদস্য সহ অসামরিক শিয়া সম্প্রদায়ের মানুষদের শিরচ্ছেদ করে হত্যা করা বা ক্রশবিদ্ধ করে
হত্যা করার বিষয়ে। শিশানি তার জবাবে বলেছে যে আমাদের লক্ষ্য হলো, সমগ্র বিশ্বকে ইসলামি স্টেটের খেলাফতের অধীনে বশীভূত করা, যারা আমাদের কাজে বাধা সৃষ্টি করবে তারাই শরিয়া [আল্লাহর] আইনে আমাদের শত্রু ও
লক্ষ্যবস্তু। আকা আবু ওমর আল-শিশানির বিষ্ফোরক সাক্ষাৎকারটি
নিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার টিভি টক শোয়ের একজন নামকরা অ্যাঙ্কার টম ইলিয়ট। তিনি
জিজ্ঞেস করেছিলেন আল-শিশানিকে ‘ইসলাম শান্তির ধর্ম’ এই প্রসঙ্গে। এ প্রশ্নে সরাসরি ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ বলে শিশানি উত্তর দেয় - “It is the religion of prophet Muhammad Sallallahu Alaihi Wasallam. It
is not the religion of the Western hippie who tries to be accepted by you.”
শিশানি আরো একটা ভয়ঙ্কর
বার্তা দিয়েছে। তা হলো, ইরাক ও সিরিয়ার
শিয়া সম্প্রদায়ের মুসলমানরাই শুধু তাদের
টার্গেট নয়, তাদের সব থেকে বড়ো টার্গেট
হলো শিয়াদের শক্তির প্রধান কেন্দ্র ইরাক। ইরাক ও
সিরিয়ায় তাদের কাজ সমাধা হলে তারা শিয়াদের কেন্দ্রের
উপর আক্রমণ চালাবে। এ প্রসঙ্গে টম ইলিয়ট জানিয়েছেন যে কথা তা হলো, al-Shishani
promised to invade Iran when the ISIS in
Iraq finish their goals.
পৃথিবী জুড়ে আজ
মুসলিম সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলি যে ধরণের সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ চালিয়ে ব্যাপকহারে
অপহরণ, লুণ্ঠন ও গণহত্যা সংগঠিত করে চলেছে তা ২য় বিশ্বযুদ্ধের পর ইরাক ও
আফগানিস্তানে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের চালানো গণহত্যাকান্ড ছাড়া বিনা প্ররোচনায় আর
কোথাও ও কখনও ঘটেছে বলে মনে পড়ছে না। মুসলিম
সন্ত্রাসবাদকে আজ আর কোনো কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা বা বিপদ বলে ভাবলে ভুল হবে। আইসিসের জঙ্গিরা শুধু ইরাক ও ইরানের
মুসলমান নয়, পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মুসলমানরা গিয়ে সেখানে জিহাদে অংশ
নিয়েছে। আল-কায়দা এবং মিশরের মুসলিম ব্রাদারহুডও আইসিস ও বোকো হারামের মতো
অন্তর্দেশীয় সন্ত্রাসবাদী সংগঠন। ফলে নাইজিরিয়া এবং ইরাক ও সিরিয়ায় ‘ইসলামি
খেলাফত’ স্থাপন শুধু সেখানকার জনগণের গভীর সঙ্কট ও বিপদের বিষয় নয়। এ বিপদ
বিশ্বের মানব সমাজ ও মানব সভ্যতার। এটা যদি থামানো না যায় তবে গোটা বিশ্ব মুসলিম সন্ত্রাসবাদের
শিকার হবে; কেউ রেহাই পাবে না, কোনো দেশ
রেহাই পাবে না। অথচ এর বিরুদ্ধে কোনো
প্রতিবাদ ধ্বনিত হচ্ছে না। গাজায় ইজ্রায়েলি হানার বিরুদ্ধে লক্ষ্য করছি প্রবল
নিন্দা ও প্রতিবাদ, কমবেশী গোটা বিশ্বই মুখর; নিশ্চয় তা বাঞ্ছনীয় ও কাম্য; কিন্তু ইরাক, সিরিয়া ও নাইজিরিয়ায় মুসলিম
সন্ত্রাসবাদীরা যে নজিরবিহীনভাবে নৃশংস
নিধনযজ্ঞ চালাচ্ছে মাসের পর মাস, তার বিরুদ্ধে কোথাও কোনো প্রতিবাদ শোনা যাচ্ছে না। এমনকি কোনো আলোচনা-সমালোচনাও শোনা যাচ্ছে না।আইসিস ও বোকো হারাম যত বড়ো বিপদ আমাদের সামনে, আমার মনে হয় নির্বিচারে অমুসলিম ও শিয়াদের যেভাবে তারা শরিয়তি
শাস্তি হিসেবে গলা কেটে গণহত্যা চালাচ্ছে তাকে নির্বিবাদে মেনে নেওয়া তার চেয়েও
বড়ো বিপদ। জানি না, বিশ্ববিবেক এভাবে
কতদিন ঘুমাবে?
আমি পরিশেষে ভাবছি
মুসলমানদের কথা। বিশ্বের মুসলমানদের প্রায় ৯০% হলো সুন্নি মুসলমান। তারা কী
ভাবছেন? আমি নিশ্চিত যে সাধারণ মুসলমানদের অধিকাংশই মুসলিম সন্ত্রাসবাদীদের কার্যকলাপ
সমর্থন করে না। অবশ্য তারা নাইজিরিয়া ও ইরাক-সিরিয়ায় কী ঘটছে তার খবরও
বিশেষ জানে না। তারা কোথায় খেলাফত হলো কি
না হলো তা নিয়ে মোটেই ভাবিত নয়। কিন্তু বাকিরা যারা উচ্চ শিক্ষিত এবং বিশ্বের
খবরা-খবর রাখেন তারা কী করবেন? তাদের
সামনে দুটো খেলাফত, তারা কোনটা নেবেন আর
কোনটা নেবেন না? ইসলাম শান্তির ধর্ম এই বস্তাপচা বুলি বললে ওরা ছাড়বে না। কারণ,
ইসলাম শান্তির ধর্ম এ কথা মুহাম্মদ মদিনায় আসার পর নিজ মুখে একবারও বলেন নি। মক্কায় শান্তি, সম্প্রীতি ও
সহনশীলতার পক্ষে যা বলেছিলেন তা মদিনায়
এসে নির্মমভাবে বর্জন করে কাফেরদের ইসলামের শত্রু বলে নিকেশ করার কথা বলেছেন। শুধু বলেছেন তাই নয়, তিনি নিজেই অসংখ্য ইহুদি, খৃষ্টান ও
পৌত্তলিককে হত্যা করেছেন নৃৃৃশংসভাবে। অসংখ্য নারীকে বন্দি করে দাসী বানিয়ে গণিমতের মাল বলে
বাজারে বিক্রি করেছেন, না হয় অবলীলায় তাদের স্ত্রী রূপে ভোগ করেছেন।মুহাম্মদের উত্তরাধিকারী খলিফারা হাজার হাজার কাফেরদের
হত্যা করে, তাদের ধন-সম্পদ লুঠ করে, তাদের নারী ও শিশুদের বন্দি ও দাসী করে,
দাসীদের বিক্রি করে কিংবা ভোগ করে ইসলামি
সাম্রাজ্যের ব্যাপক বিস্তার ঘটিয়েছেন। সেই খলিফাদের প্রথম চারজনকে সুন্নি
মুসলমানগণ আজো সৎ পথের খলিফা ও ইসলামের সর্বোচ্চ নেতা বলে মানেন ও শ্রদ্ধা করেন। তাদের খেলাফতকে [৬৩২ – ৬৬১ খৃঃ] বিশ্বের সর্বকালের সেরা শাসনকাল বলে তারা আজো গর্ব বোধ করেন। সেই সুন্নি মুসলিমরা
কি করবেন এখন? আইসিসের খেলাফত, না বোকো হারামের খেলাফত, কোনটাকে গ্রহণ করবেন?
কার কাছে বয়াত [আনুগত্যের শপথ] নেবেন?
আবুবকর সেকাও না আবুবকর আল-বাগদাদি – কার কাছে? আবুবকর বাগদাদি বলেছে যে সমস্ত মুসলমানদের তাকে খলিফা বলে
মানতে হবে। তার দাবি কিন্তু ইসলাম সম্মতই। কারণ, খলিফা একজনই হয়, সেটাই ইসলাম সম্মত। আবুবকর সেকাও এখনও সে রকম দাবি জানায়
নি, তবে জানাতেও পারে। সুতরাং সুন্নি মুসলমানদের ঠিক করতে হবে কাকে তারা খলিফা
মানবেন। আইসিস বা বোকো হারাম যা করছে তা
ইসলাম সম্মত নয় এ কথা সর্বৈব মিথ্যা। আকা আবু ওমর আল-শিশানি সাক্ষাৎকারে
যতদিন ইসলামের শত্রু থাকবে ততদিন তাদের
বিরুদ্ধে জিহাদ করবে ও তাদের হত্যা করবে বলে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় যা বলেছে তা তার
নিজের কথা নয়, কথাগুলি সবই মুহাম্মদ ও কোরানের কথা। মুহাম্মদের শিক্ষা হলো, কাফেররা যতদিন না নত হয়ে
জিজিয়া কর দেয় ততদিন তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করে যেতে হবে। এ কথা কোরানের ৯/২৯ নং আয়াতে এভাবে ঘোষণা করা হয়েছে - “Fight
those who believe not in Allah nor the Last Day, nor hold that forbidden which
hath been forbidden by Allah and His Messenger, nor acknowledge the religion of
Truth, (even if they are) of the People of the Book (that is, Christians and
Jews), until they pay the Jizya with willing submission, and feel themselves
subdued.” আর কোরানের ২/১৯১-১৯৩ নং আয়াত বলছে কাফেরদের
যেখানে পাও সেখানেই হত্যা করবে, তবে যদি তারা বিরত হয় তবে আল্লাহ ক্ষমাশীল এবং যতদিন
পৃথিবীতে ফিৎনা [অশান্তি] থাকবে ওদের বিরুদ্ধে জিহাদ জারি রাখবে। কোরানের এই আয়াত তিনটি
হলো - “And
kill them wherever you find them, and turn them out from where they have turned
you out. And Al-Fitnah [disbelief] is worse than killing… but if they desist,
then lo! Allah is forgiving and merciful. And fight them until there is no more
Fitnah [disbelief and worshipping of others along with Allah] and worship is
for Allah alone. But if they cease, let there be no transgression except
against Az-Zalimun (the polytheists, and wrong-doers, etc.)”
আইসিস ও বোকো হারাম তো কোরানের এই কথাগুলিই বলছে ও সেগুলি
বাস্তবায়িত করছে। সুতরাং তারা যে ইসলামের
সঠিক পথেই আছে তা সংশয়াতীতভাবে সত্যি। তাই ইসলামকে সত্য, সঠিক ও শ্রেষ্ঠ ধর্ম মানতে হলে মানতে হবে আইসিস বা বোকো হারামকেও এবং তাদের খেলাফতকেও। নচেৎ তাদের খেলাফতকে অমান্য বা নিন্দা করলে ইসলামেরও
নিন্দা করতে হবে। মুহাম্মদকে বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ ও মহামানব
বলে মানবো, অথচ আল-বাগদাদি কিংবা আবুবকর সেকাওকে নেতা বলে মানবো না, এটা এক প্রকার নির্লজ্জ দ্বিচারিতা। যারা ইসলামের পক্ষে থাকবেন আবার ইসলামি
খেলাফতের বিপক্ষে যাবেন তারা হয় ভন্ড না
হয় কাপুরুষ। সামনে দুটো খেলাফত, সত্যিকারের মুসলমান হলে আপনাকে যে কোনো একটাকে
বেছে নিতেই হবে – এটাই বাস্তব, এর কোনো বিকল্প নেই। এ দেশে প্রকাশ্যে তা করা হয়ত যাবে না, কিন্তু মনে
মনে বেছে নিতে তো অসুবিধা নেই।
[বিঃদ্রঃ আকা আবু ওমর আল-শিশানির সাক্ষাৎকার ও
তৎসংস্লিষ্ট খবরের সূত্রটির ওয়েব লিঙ্কটি হলো -
http://www.inquisitr.com/1426809/isis-beheading-videos-banned-isil-leader-says-islam-is-not-the- ]religion-of-the-western-hippie/]
No comments:
Post a Comment