Sunday, July 7, 2013

পঞ্চায়েত ভোট ও ‘রমজান’ নিয়ে সরকার যে ন্যক্কারজনক ভূমিকা পালন করলো তার নিন্দা করার ভাষা নেই


২৮ শে জুন ও রা জুলাই , মাত্র পাঁচ দিনের ব্যবধানে দু দুবার সুপ্রীম কোর্টে গলা ধাক্কা খেলো রাজ্য সরকার । এই সরকার মানতেই চায় নি যে পঞ্চায়েত নির্বাচন সংগঠিত ও  পরিচালনা করার সম্পূর্ণ দায়িত্ব ও অধিকার সংবিধান ন্যাস্ত করেছে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের কাঁধে রাজ্য সরকার তাই নির্বাচন কমিশনারের সমস্ত প্রস্তাব উপেক্ষা করে নির্বাচনের বিজ্ঞপ্তি ঘোষণা করে দিয়েছিল । এমন কি উপযুক্ত নিরাপত্তার জন্যে কেন্দ্রীয় বাহিনী চেয়েছিল নির্বাচন কমিশন, রাজ্য তা অগ্রাহ্য করেছিলফলে নির্বাচন কমিশন গিয়েছিল আদালতে । সেই মামলায় সুপ্রীম কোর্ট মাত্র এক ঘন্টারও কম সময়ের শুনানি শেষে ২৮ শে জুন জানিয়ে দেয় যে পঞ্চায়েত নির্বাচনে শেষ কথা বলবে রাজ্য নির্বাচন কমিশনই এবং নির্বাচনের দফা, তারিখ ও নিরাপত্তা বাহিনীর প্রশ্নে কমিশন যা যা বলেছে সুপ্রীম কোর্ট তার সবগুলোই মেনে নিয়ে নির্বাচনের নির্ঘন্ট ঘোষণা করে দিয়েছে ।  এই রায়কে সরকারের গলা ধাক্কা খাওয়া বললেও কম বলা হয় । কিন্তু তাতে কি ! সরকার আর একটা গলা ধাক্কা খাওয়ার জন্যে চার দিনের মাথায় রা জুলাই আবার সুপ্রীম কোর্টে গেল । এবার আবদার  – রমজান মাসে ভোট করা যাবে না , নতুন করে ভোটের নির্ঘন্ট তৈরী করতে হবে । পরের দিনই  সুপ্রীম কোর্ট এক কলমের খাঁচায় সে আবদা্রো নাকচ করে দেয়  এবার আর শুধু গলা ধাক্কাই নয়, তার সঙ্গে দেয় প্রচন্ড একটা ধমকও । ধমকের সুরেই বিচারপতি  বলেন - ধর্মীয় আবেগ নয়, সবার উপরে থাকবে সংবিধানইবিচারপতি রাজ্যের আইনজীবিকে আরো বলেন - কেন্দ্রীয় বাহিনী দিতে আপনারা  গড়িমসি না করলে আগেই তো ভোট হয়ে যেত । রোজার মাসে ভোটের জন্যে তো দায়ী আপনারাই   
রাজ্য সরকার অপদস্থ হলে রাজ্যের মানুষ হিসেবে আমরা লজ্জায় অবনত হইকারণ, তাতে মাথা হেঁট হয় গোটা রাজ্যেরই, শুধু শাসক দলের মাথা হেঁট হয় না । কিন্তু আমাদের সরকারটা এমন একটা সরকার যারা তাদের নিজেদের মান-সম্মান নিয়ে মোটেই ভাবিত নয় , রাজ্যের মান-সম্মান তো পরের কথা ।  নিজেদের মান-সম্মান জলাঞ্জলি দেওয়ার অধিকার যে কারও আছে, কিন্তু কোনো সরকারের যে তার রাজ্যের মানুষের মান-সম্মান নিয়ে ছেলেখেলা করার অধিকার নেই এমন ন্যায়সংগত চিন্তা-ভাবনা এই সরকারের কাছে একেবারেই মূল্যহীন ও অর্থহীন । এই সরকার যা যা করেছে  সব জেনে বুঝেই করেছে । আদালতে যে সরকারকে গলাধাক্কা খেতে হবে তা সরকার বিলক্ষণ জানতো । কারণ, পঞ্চায়েত আইনে এত সুস্পষ্ট ভাষায় রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে পঞ্চায়েত নির্বাচন করার সার্বভৌম দায়িত্ব দিয়েছে যা বুঝবার জন্যে আইন বিশেষজ্ঞ হওয়ার দরকার লাগে না । সরকার এও জানতো যে নভেম্বর মাসে ভোট করানোর সুযোগ নেই । তবুও নির্বাচন কমিশনকে ঐ সময়ে ভোট করার প্রস্তাব দিয়েছিল , এটা জেনেই যে কমিশন তা প্রত্যাখান করবে । মোটের উপর মোদ্দা কথা হলো সরকার সচেতনভাবে এবং পরিকল্পনা মাফিকই সমস্ত বেআইনী পদক্ষেপগুলি নিয়েছে একের পর এক নিয়েছে  বারবার নিজের মুখ পুড়িয়েছে । 
     সরকার যে বারবার নিজের মুখ পোড়াচ্ছে  তার পশ্চাতে সরকারের একটা কুমতলব কাজ ছে । সরকার মতলব করেছিল – লোকসভা ভোটের আগে  পঞ্চায়েত ভোট করবে না । আর যদি করতেই হয় , তবে ভোটের নামে এমন প্রহসন করবে যাতে পুলিশি প্রহরায় শাসক দল সহজেই ভোট লুট করে পঞ্চায়েতের দখল নিতে পারে । এটা যে ফালতু কোনো অভিযোগ নয় তার সাক্ষী এখন গোটা রাজ্যরাজ্যবাসী দেখেছে  মনোনয়ন পর্বে কীভাবে শাসক দল বিরোধীদের উপর অত্যাচার ও নির্যাতন-নিপীড়ন চালিয়েছে । এবং দেখেছে কীভাবে পুলিশ শাসক দলের ভৈরববাহিনীকে প্রহরা ও সুরক্ষা দেওয়ার কাজে কত নগ্ন ভূমিকা পালন করেছে । সরকার যথা সময়ে পঞ্চায়েত ভোট করাতে চায় নি,  কারণ তারা আশঙ্কা করেছিল যে পঞ্চায়েত ভোটে আশানুরূপ ফল হবে না এবং তেমন যদি হয় তবে  লোকসভা ভোটে তাদের বিপর্যয় বা ভরাডুবি অনিবার্য হয়ে উঠবে ।
 এই জন্যেই  জনগণের ভোটাধিকার তথা গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করার পরিকল্পনা সরকার করেছিল । পাশাপাশি এই ছকও কষেছিল তাদের কীভাবে ভোট বাঞ্চাল করার হীন ষড়যন্ত্র মিথ্যা প্রচারণার মাধ্যমে চাপিয়ে দেবে নির্বাচন কমিশনার ও বিরোধী দলগুলোর ঘাড়ে । আর যদি ভোট করতেই হয় তাহলে তারজন্যে কী পরিকল্পনা ছিল সেটা উপরে আলোচনা করা হয়েছে ।  
এই হীন পরিকল্পনা ও ষড়যন্ত্র আড়াল করার জন্যে অনর্গল মিথ্যা প্রচার চালানো হচ্ছে নির্বাচন কমিশনার মীরা পান্ডের বিরুদ্ধে । তিনি নাকি শাসক দলকে হারানোর জন্যে সিপিএম ও কংগ্রেসের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে শীতকালে ভোট করলেন না তিনি নাকি ভোট বিরোধীদের সঙ্গে যোগসাজস করে ভোট বাঞ্চাল করার ষড়যন্ত্র করেছিলেন । তারজন্যেই নাকি ভরা বর্ষায় ভোট  হচ্ছে তিনিই নাকি মুসলমানদের বিরুদ্ধেও ষড়যন্ত্র করে রমজানে ভোটের ব্যবস্থা করলেন । এ ছাড়াও আরো অন্যভাবে অত্যন্ত কুৎসিত ভাষায় ও কদাকার ঢঙে তাঁর বিরুদ্ধে আক্রমণ চালানো হচ্ছে । যেভাবে অনর্গল মিথ্যা প্রচারণার মধ্য দিয়ে নিজদের অন্যায় ও অপকর্মকে আড়াল করার অপপ্রয়াস চালাচ্ছে এই সরকার তা দেখলে নির্ঘাতগোয়েবলসও লজ্জা পেত ।  
 যেহেতু ঘটনাচক্রে ভোটের নির্ঘন্ট পড়ে গেছে রমজান মাসেআর যায় কোথা ?  ঝাঁপিয়ে পড়লো মুসলিম সমাজের ধর্মীয় সংগঠনগুলি এবং ধর্ম-ব্যবসায়ী ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ শুরু করলো এমনভাবে হৈ চৈ যেন রমজান মাসে ভোট মানেই ইসলাম ধর্ম ও মুসলমানদের উপর একটা ঘোর বিপর্যয় নেমে আসা । রাস্তায় তাঁরা শুরু করলেন দাপাদাপি । না , রমজান মাসে ভোট কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না । মুসলমানপদের বিরুদ্ধে এটা এক গভীর ষড়যন্ত্র । রমজান মাস পবিত্রতম মাস, এবাদতের মাস , আত্মশুদ্ধির মাস, আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করে আল্লহর দয়া-দাক্ষিণ্য লাভের মাস- মুসলমানদের এই মাসের অপরিসীম করুণা ও কর্মফল থেকে বঞ্চিত করার জন্যে ষড়যন্ত্র করেই রমজান মাসে ভোটের আয়োজন করা হয়েছে । রমজান মাসে ভোট করা উদ্দেশ্য হলো মুসলমানদের  পঞ্চায়েত ভোট থেকে দূরে সরিয়ে রাখা ।  ষড়যন্ত্রষড়যন্ত্রনিশ্চিতভাবেই এ এক গভীর ষড়যন্ত্রবিরোধীদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে মুসলিম বিরোধী ব্রাহ্মণ নারী মীরা পান্ডে এক ভঙ্কর ষড়যন্ত্র করেছেন মুসলমানদের বিরুদ্ধে । এই ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করতে হবে । ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ ও তাঁদের সংগঠনগুলি বিক্ষোভের ডাক দিলেন মীরা পান্ডের বিরুদ্ধে ।
তৃণমূলের প্রধান ও সরকার তো বেজায় খুশী । মীরা পান্ডে ও বিরোধীদের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত ব্যবহৃত মিথ্যা কথাগুলি বহু ব্যবহারে ভোঁতা হয়ে আসছিল । নতুন অস্ত্রের সন্ধানে ছিলেন ঠিক এই সময়েই তাঁর বিশ্বস্ত মুসলিম ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ ও তাদের সাম্প্রদায়িক সংগঠনগুলো তাঁর হাতে তুলে দিলেন একটা ভয়ঙ্কর সাম্প্রদায়িক ধারালো অস্ত্র, মুসলিমদের ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত দেওয়ার এক মোক্ষম অস্ত্র । সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি চুলোয় যাক, সেই অস্ত্র নিয়ে তিনি নতুন উদ্যমে একদিকে নির্বাচন কমিশনার মীরা পান্ডে ও বিরোধীদের বিরুদ্ধে নেমে পড়লেন মাঠ-ময়দানে, আর একদিকে ছুটলেন সুপ্রীম কোর্টে ভোট পিছানোর নাম করে ভোট বাঞ্চাল করতে । দারুণ অস্ত্র ! দু দিকেই কাটবে । ভোট পিছলে খুব ভালো, না পিছলেও ভালো ।   
ভোট পিছতে পিছতে রমজানে এসে গেলো, তারজন্যে যে সরকারই দায়ী তা বলা বাহুল্য । আর সে কথা তো বলেছেন স্বয়ং সুপ্রীম কোর্টের  বিচারপতি । কিন্তু গোটা দেশজুড়ে শাসক দল , সরকার ও মুসলিম সমাজের ধর্মীয় নেতৃবৃন্দগণ তোলপাড় করছেন এই মিথ্যা কথা প্রচার করে যে,  বিরোধী দলগুলি ও নির্বাচন কমিশনার যোগসাজসের ফলেই রমজান মাসে ভোট হচ্ছে  যারফলে মুসলমানরা পড়েছে গভীর বিপাকে    
 মুসলিম সমাজের ধর্মীয় নেতৃবৃন্দগণ এমনভাবে বিষ ছড়ানোর ঢঙে প্রচার করছেন যেন রমজান মাসে এর আগে পৃথিবীতে কোথাও ভোট হয় নি । ব্যাপারটি কি সত্যি তাই ? আমাদের ভারতেই তো ভোট হয়েছে যার বহু উদাহরণ আছে । বিহারে সাত দফায় ভোট হয়েছে ২০০৫ সালে অক্টোবর-নভেম্বর মাসে, আর ঈদ ছিল ৫ ই নভেম্বর । ২০০৮ সালে বিহারে ও দিল্লীতে রমজানে মাসে ভোট হয়েছে । এছাড়া অনেক উপনির্বাচন হয়েছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে রমজান মাসে । কই তখন তো কলকাতার মুসলিম ধর্মীয় নেতা ও সংগঠনগুলিকে মুসলমানদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ষড়যন্ত্র বলে চিৎকার করতে শুনি নি । আগামী ২৭ শে জুলাই অর্থাৎ সামনের রমজানেই কোয়েথে অনুষ্ঠিত হবে সংসদের নির্বাচন । কোয়েথতো শুধু মুসলিম প্রধান দেশ নয়, ইসলামি রাষ্ট্রও । তাহলে কি কোয়েথের সরকার সেখানে মুসলমানদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে ?  কী বলেন মোল্লা-মুফতিগণ ?
 রমজান মাসে কেন ভোট করা যাবে না  এই প্রশ্নে যে সব যুক্তি প্রদর্শন করা হচ্ছে  তার বেশীরভাগই অতিশয় শিশুসুলভ ও হাস্যকর এবং কিছু আছে যা স্ববিরোধীতায় পরিপূর্ণ । তাঁদের সেই যুক্তিগুলি অপযুক্তি বৈ নয় । সেগুলির সবটার জবাব দিলে তা একটা গ্রন্থের আকার নেবে । তাই প্রধান কয়েকটি যুক্তির উপরে দৃষ্টিপাত করা যাক ।
একটি যুক্তি হলো – সারাদিন উপোষ রাখলে শরীর দুর্বল, ক্লান্ত ও অবসন্ন হয়ে পড়ে । এই অবস্থায় লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দেওয়া খুব কষ্টকর ব্যাপার । আর ভোট কর্মীদের পক্ষে ভোট নেওয়া কিংবা রাজনৈতিক কর্মীদের পক্ষে ভোটের প্রচার করা তো কার্যত অসম্ভব । এ প্রসঙ্গে প্রথমেই বলে নিতে চায় যে রোজা রেখে ভোট করা বা ভোট নেওয়া নিশ্চয় শক্ত কাজ । কিন্তু অসম্ভব - এ কথা বলা অতিশয়োক্তি বৈ নয় । মুসলমানদের যাঁরা শ্রমজীবী ও গরীব মানুষ তাদের জন্যে কি আল্লাহ্‌ রোজা ছাড় দিয়েছে ? তাঁদের তো দিনে হাড়ভাঙা খাটনি খাটতে হয় দিনে ৮/১০ ঘন্টা । আবার তাদের রোজা রাখাও ফরজ ( আবশ্যিক কর্তব্য ) । ব্যবসায়ীরা তো দিনে ১২/১৪ ঘন্টা কাজ করেন । মুসলমানরা একমাস রোজা রেখেও হাড়ভাঙা পরিশ্রম করতে পারবেন , কিন্তু ভোট করতে পারবেন না – এটা কী রকম যুক্তি  ?
দ্বিতীয় যুক্তি হলো – রোজার মাস শুধু উপবাস করা নয়, এবাদতের( আল্লাহ্‌কে বিশেষভাবে ডাকা ) মাসও বটে । এই মাসে ভোট হলে মুসলমানদের এবাদত করায় বিঘ্ন ঘটে । কিন্তু এবাদত বলতে যা কিছু বোঝায় তাতো সবই হয় রাত্রি বেলায় । একটা অতিরিক্ত নামায ( তারাবির নামায ) পড়তে হয় রাতের নামাযের পর । আর মাসের শেষের দিকে ৫/৭ টা রাত্রি রাত জেগে এবাদত করার রীতি আছে যা বাধ্যতামূলক নয় । অর্থাৎ এবাদত যা করার তাতো রাত্রিতে, সুতরাং রোজার মাসে ভোট হলে এবাদত করায় বিঘ্ন ঘটে এ কথা আসে কী করে ? আর তাই যদি হয়, তবে শ্রমজীবী ও ব্যবসায়ী মুসলমানরা কি এবাদত করেন না ? নাকি ইসলাম ধর্মে তাঁদের এবাদতের জন্যে কাজকর্ম বা বাণিজ্য করা বন্ধ রাখতে হয় ?
তৃতীয় যুক্তি হলো – রমজান মাস আত্মশুদ্ধির মাস । এ সময় মিথ্যা কথা বলা, মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেওয়া, ধোঁকা দেওয়া, গুজব করা, কুৎসা করা ইত্যাদি খারাপ কাজ করা নিষেধ । সুতরাং রোজার মাসে ভোট হলে আত্মশুদ্ধির মত মহৎ কাজে বিঘ্ন ঘটে , কারণ ভোটে তো এই খারাপ কাজগুলো করতেই হয় । সুতরাং রোজার মাসে ভোট মেনে নেওয়া যায় না । এ ক্ষেত্রে তাহলে কয়েকটা প্রশ্নের উদ্রেক না হয়ে পারে না ? রমজান মাস বাদে সারা বছর কি তবে ইসলাম ধর্মে খারাপ কাজগুলি করার অনুমতি আছে ? কিংবা, ভোটে এইসব খারাপ কাজগুলি করতেই হবে কেন ? নাকি ইসলাম ধর্ম বলেছে ভোটের সময় মিথ্যা কথা বলা, মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেওয়া, অপপ্রচার করা, ভয়-ভীতি প্রদর্শন করা প্রভৃতি খারাপ কজগুলি খুব একটা দোষের নয় ? নাকি ভোটে ধর্মীয় নেতারাও ব্যাপক মিথ্যা কথা বলেন, মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেন এবং অপপ্রচারে লিপ্ত হয়ে পড়েন ?  তাই কি তাঁরা ভাবছেন যে ভোটে তাঁদের ঈমান নষ্ট হয়ে যাবে ? নাকি নির্বাচন কমিশন বলেছে ভোটে  খারাপ কাজ করতে ? এই সব প্রশ্ন যদি অবান্তর হয়,  তবে রোজার মাসে ভোট হলে আত্মশুদ্ধির প্রক্রিয়া ব্যহত হবে কেন ?
রমজান মাসে ভোট হলে মুসলমানদের সমস্যা হবে, তাদের ধর্মাচরণের অধিকারে হস্তক্ষেপ করা হবে ইত্যাদি ইত্যাদি – চারিদিকে শুধু এই একটাই প্রচার । পশ্চিম বঙ্গে যেন আর কোনো সমস্যা নেই । মোল্লা-মুফতি-ইমামদের সঙ্গে তারস্বরে চিৎকার করছে সবাই , সব রাজনৈতিক দল , এ ক্ষেত্রে ডান বাম কোনো পক্ষই কম যায় না । কিন্তু ভোট যদি রমজানের জন্যে আরো পিছিয়ে যায় তবে কি কি সমস্যা হতে পারে সে কথা কেউ বলছে না । আমরা একবার সে দিকে লক্ষ্য করি । বিস্তারিত আলোচনা করা অবকাশ নেই , প্রধান ২/৩ টি বিষয়ের কথা উল্লেখ করতে চাই । ইতিমধ্যেই বিগত সমস্ত পঞ্চায়েত বডিগুলির মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছে । ফলে গ্রামে উন্নয়নের কাজ স্তব্ধ । এর ফলে কারা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ? ১০০ দিনের কাজ বন্ধ , কর্ম দিবস তৈরী হয় এমন সব কাজ বন্ধ । ফলে গরীব মানুষ পঞ্চায়েতের কাজ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন । নলকূপ খারাপ হলে , হচ্ছেও, ভালো করার কেউ নেই । কোথাও যদি বাঁধ কেটে যায় এই বর্ষায় এবং বন্যার সৃষ্টি হয়, তবে সেই বাঁধ মেরামত করে বন্যতা প্রতিরোধ করার কেউ নেই । মানুষের এখনই প্রধানের একটা ক্যারাক্টার সার্টিফিকেট প্রয়োজন, তাঁরা পাবেন না । এখনই একটা রেসিডেন্সিয়াল সার্টিফিকেট প্রয়োজন , মানুষ সেটা পাবেন না । আরও অন্যান্য বহু প্রয়োজন হতে পারে যা পঞ্চায়েত ছাড়া মিটবে না । পঞ্চায়েত নির্বাচন ঠিক সময়ে না হওয়ার জন্যে ইতিমধ্যেই এরূপ বহুবিধ সংকট তৈরী হয়েছে । যত ভোট পিছবে, এই সঙ্কট ততো গভীরতর হবে, প্রসারিত হবে ।
রমজান মাসে ভোট হলে কি সমস্যা,  ভোট আরো পিছিয়ে গেলে কি সমস্যা – এই দুটো জিনিষ তুলনামূলকভাবে আলোচনা করলে এটা অত্যন্ত পরিষ্কার যে, রমজানের অজুহাতে ভোট পিছিয়ে দিলে অনেক বেশী সমস্যা ও ক্ষতি হবে জনগণের যাঁদের মধ্যে ২৭% মুসলমানও আছেন । কিন্তু এ কথা বলবার লোক নেই, দল নেই । কিন্তু মোল্লা সমাজকে তোষণ করার লোক ও দলের অভাব নেই ।
মুসলিম সমাজের ধর্মীয় নেতারা ও সাম্প্রদায়িক মুসলিম সংগঠনগুলি সাধারণ মুসলমানদের কথা কোনোদিনই ভাবেন না। মুসলিম সমাজ যত ধর্মীয় ভাবাবেগে ভাসবে তাঁদের তত লাভ । কারণ,ধর্মই তাঁদের একমাত্র পুঁজি, এই পুঁজিকে রক্ষা করার জন্যে মুসলমানদের ধর্মীয় ভাবাবেগে সুড়সুড়ি না দিয়ে তাঁদের উপায় কী ।  জাতপাত ও সাম্প্রদায়িক বিভেদ যত বৃদ্ধি পাবে ওঁদের ব্যবসা তত বাড়বে, পসার তত বাড়বে । দেশের কথা, দেশের মানুষের কথা। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির কথা, সাধারণ মুসলমানদের জীবন-জীবিকার কথা ওঁরা ভাববেন কেন ? রমজান মাস কে হাতিয়ার করে ওঁরা যে ধরনের সংকীর্ণ তারফলে হিন্দু সাম্প্রদায়িক শক্তিগুলির হাতই শক্তিশালী হবে । এসব কারণে হিন্দু-মুসলিমদের মধ্যে পারষ্পরিক সম্পর্ক ও বিশ্বাসের জায়গাটা কিছুটা হলেও যে ক্ষতিগ্রস্থ হবে তা অনস্বীকার্য । খুবই পরিতাপের কথা হলো , এত বড়ো ক্ষতি যাতে না হয় সে কথা কোনো দল ভাবলো না । সংখ্যালঘুদের ভোটগুলি পেতে হবে,
তারজন্যে মোল্লাতন্ত্রকে তোষণ ( মুসলিম তোষণ নয়) করতে হবে , দেশটা গোল্লায় যায় যাক – এটাই এখন সব দলের নীতি , সব রাজনীতির শেষ কথা । এখানে সবাই সমান । মোল্লাদের তোষণ করতে মমতার সরকার ভোট পিছানোর আর্জি নিয়ে লজ্জার মাথা খেয়ে পড়িমরি করে সুপ্রীম কোর্টের চৌকাঠে গিয়ে হত্যে দিলেন । তার পিছন পিছন ছুটলো কংগ্রেস দলও । ছুটলেন সিপিএমের বিপ্লবী নেতা রেজ্জাক মোল্লাও । তিনি আবার মুসলমানদের ধোঁকা দেওয়ার ‘নয়া জামানা’ নামের সংগঠন না অফিস খুলে বসে আছেন । মোল্লাতন্ত্র তোষণের কী নির্লজ্জ প্রতিযোগিতা চলছে চারিদিকে !
মমতা ব্যানার্জ্জীর তোল্লা পেয়ে রমজান ইস্যুতে মোল্লা-মুফতি-ঈমাম সমাজ নির্বাচন কমিশনার মীরা পান্ডে এবং সুপ্রীম কোর্টের ঘাড়ে চেপেও প্রলয় নৃত্য শুরু করতে চেয়েছিল । সুপ্রীম কোর্টকে ধন্যবাদ যে এক মূহুর্ত দেরী না করে ঘাড় থেকে নামিয়ে দিয়েছে । অজস্র ধন্যবাদ যে মীরা পান্ডেকেও যে,  তিনি সংবিধানের প্রতি দায়বদ্ধতার প্রশ্নে কোনো আপোষ করেন নি ,  সরকার, শাসক দল এবং মোল্লাতন্ত্রের কাছে মাথা নত করেন নি । সাবাশ মীরা পান্ডে ! আপনাকে কুর্ণিশ জানাই । 
written on 03.07.2013

No comments:

Post a Comment

KARBALA: Truth and Lies

  KARBALA : Truth and Lies           GIASUDDIN                 Translated by SRIJIB BISWAS        ...