Friday, September 2, 2016

যাঁরা বলেন যে ৩৩/৩৩ আয়াতটি সব নারীর জন্যে প্রযোজ্য নয় তাঁরা অসৎ, ভণ্ড ও প্রতারক



মুসলিমরা দাবী করেন যে ইসলাম ধর্মই নারীমুক্তি ঘটিয়েছে এবং নারীকে পুরুষের সমান অধিকার ও স্বাধীনতা প্রদান করেছে। কিন্তু এ দাবী অবাস্তব ও আজগুবি তো বটেই, এমনকি শিশুসুলভ ও হাস্যকরও বটে। কেনো হাস্যকর তা নিরপেক্ষ অবস্থান থেকে কোরান ও হাদিস পড়লে স্পষ্ট বোঝা যায়।এ ব্যাপারে দু’টো দৃষ্টান্ত দেওয়া যেতে পারে। কোরান এক জায়গায় বলছে - নারীকে থাকতে হবে গৃহকোণে, আর এক জায়গায় বলছে - একান্ত প্রয়োজনে তাদের যদি বাড়ির বাইরে বের হতে হয় তবে অবশ্যই বোরখা পরতে হবে। কোরানের নির্দেশ মেনে চলা প্রত্যেক মুসলিমের জন্যে বাধ্যতামূলক। যে মানবে না তাকে শরিয়তি শাস্তি পেতে হবে। শাস্তির প্রকার নিয়ে অবশ্য মতভেদ ও মতবিরোধ রয়েছে। মুসলিম উগ্রপন্থীরা মনে করে যারা আল্লাহ্‌র নির্দেশ অগ্রাহ্য করার ঔদ্ধত্য দেখাবে তাদের মৃত্যুদণ্ডই হলো উপযুক্ত শাস্তি। আইএস জঙ্গিরা তাই বাংলাদেশে যাঁরা স্কুল-কলেজে শিক্ষকতা করছেন তাদের হত্যা করার হুমকি দিয়েছে। এ খবরটি করেছে গতো ৪ঠা আগষ্ট কানাডার একটি বাংলা কাগজ ‘বেঙ্গলি টাইমস’। খবরটির শিরোনাম ছিলো - সব নারী শিক্ষকদের হত্যার হুমকি জঙ্গি কামান্ডারেরপ্রগতিশীল মুসলিমরা বলেন যে, একমাত্র ইসলামই নারীকে শিক্ষার সম্পূর্ণ অধিকার দিয়েছে। সুতরাং মুসলিম জঙ্গীদের ঐ হুমকি ইসলামবিরোধী। পূর্বেই বলেছি প্রগতিশীল মুসলিমদের এই দাবীর কোনো ভিত্তি নেই। বরং যেটা সত্যি তা হলো, মুসলিম জঙ্গীরা যা বলে ও করে সেগুলো অধিকাংশই ইসলামসম্মত। তাই উক্ত হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে  ফেসবুকে  প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে লিখেছিলাম - 
·     আল্লাহ বলেছে, নারী থাকবে গৃহকোণে, সাজসজ্জা করে ঘরের বাইরে যাবে না। (কোরান - ৩৩/৩৩) আল্লাহ আরো বলেছে ঘরের বাইরে একান্তই যদি যেতে হয় তবে তাকে বোরখা পরতে হবে এবং নিজের চোখকে সংযত রাখতে হবে, পর পুরুষের দিকে চোখ চেয়ে তাকাবে না। (কোরান-২৪/৩১) যে নারীরা আল্লাহর এই নির্দেশ অগ্রাহ্য করবে তাকে শাস্তি দেওয়া সাচ্চা মুসলমানদের ঈমানি দায়িত্ব। শাস্তি কী রূপ হবে - মৃত্যুদণ্ড না অন্য কিছু - তা নিয়ে মতভেদ থাকতে পারে, কিন্তু যারা আল্লাহর নির্দেশ অগ্রাহ্য করে বোরখা  না পরে পুরুষের সঙ্গে মেলামেশা করবে, তাদের সঙ্গে চাকরি করবে বা অন্য কাজ করবে তাদের তো কঠোর শাস্তি পেতেই হবে।”
আমার এই প্রতিক্রিয়ায় প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন মাহবুব আলম নামে জনৈক একজন বাংলাদেশী মুসলিম ব্যক্তিত্বতিনি রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে আমাকে কটাক্ষ করে মন্তব্য করেন,
·         আপনি দেখি আর এক বাঁশের কেল্লা। কোরানের ৩৩/৩৩ আয়াতে শুধু নবী স্ত্রীদের সম্বন্ধে বলা হয়েছে। এই আয়াতটা শুরু হয়েছে এবং দিয়ে যা আগের আয়াতের সাথে একে সংযুক্ত। এটা সব নারিদের সম্পর্কে বলা হয় নাই। জামাত-শিবিরের মত আয়াতের শুধু পছন্দসই অংশ ব্যাবহার করেন কেন। আপনি এর আগেও একটা স্ট্যাটাসে এই আয়াতের রেফারেন্স দিছেন। শুধু ইসলাম বিরোধিতা করলেই অভিজিৎ হওয়া যায় না। গ্যন লাগে।”
এই মন্তব্যটির মাধ্যমে মাহবুব আলম আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগটি আনতে চেয়েছেন তা অতিশয় গুরুতরসেটা হলো, আমি ইসলামের বিরুদ্ধে কুৎসা করার জন্যে কোরানের বাণীর অপবাখ্যা করেছিইদানিং আনিষা রহমান নাম্নী বাংলাদেশের আর একজন জনৈক ঈমানদার মুসলিম নারীও বারবার একই অভিযোগ তুলছেন আমার বিরুদ্ধেতাঁর অভিযোগ, আমি নাকি কোরানের মিথ্যা রেফারেন্স দিচ্ছি। আমার বিরুদ্ধে আনীত এ অভিযোগ অবশ্য নতুন কিছু নয়।      
আমি কোরানের বাণীর অপবাখ্যা করেছি কী না সে প্রসঙ্গে পরে আসছি। তার আগে কিন্তু এ কথাটা বলা আবশ্যক যে মাহবুব আলম কিন্তু সত্যি কথাই বলেছেন যে কোরানের ঐ বাণীটি মুহাম্মদ তাঁর পত্নীদের নিমিত্তই দিয়েছিলেন, এ কথাটার উল্লেখ রয়েছে আয়াতের একবারে শেষে। আমি যেহেতু পুরো বাণীটি উদ্ধৃত করিনি তাই সে কথাটা অনুক্ত থেকে গেছে। এবার পুরো বাণীটি দেখা যাক –  
·         “এবং তোমরা স্বগৃহে অবস্থান করবে; প্রাচীন জাহিলী যুগের মত নিজেদেরকে প্রদর্শন করে বেড়াবে না। তোমরা নামায কায়েম করবে এবং যাকাত প্রদান করবে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সঃ) – এর অনুগত থাকবে; হে নবী পরিবার। আল্লাহ তো চান তোমাদের হতে শুধু অপবিত্রতা দূর করতে এবং তোমাদেরকে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র করতে।” (৩৩/৩৩) (অনুবাদ – ইবনে কাথির)  
মাহবুব আলম আরো বলেছেন যে, পত্নীদের উদ্দেশ্যেই যে বাণীটি দেওয়া হয়েছে তার প্রমাণ হলো  ৩৩/৩২ নং আয়াতটি অর্থাৎ ঠিক তার পূর্বের আয়াতটি হ্যাঁ, এ কথাটাও সত্যি যে  ৩৩/৩২ ও ৩৩/৩৩ নং আয়াত দু’টি পরষ্পর  সম্পৃক্ত। ৩৩/৩২ নং আয়াতটির ভাষ্য থেকেই সেটা স্পষ্ট। সেই ভাষ্যটি হলো -     
·     হে নবী পত্নীরা! তোমরা অন্য নারীদের মতো নও; যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় কর তবে পরপুরুষের সাথে কোমল কণ্ঠে এমনভাবে কথা বলো না যাতে অন্তরে যার ব্যাধি আছে, সে প্রলুব্ধ হয় এবং তোমরা ন্যায়সঙ্গত কথা বলবে। (৩৩/৩২)
প্রসঙ্গতঃ আর একটা কথা বলি যে, মুসলিম ধর্মগুরুদের মধ্যেও একটা অংশ রয়েছেন যাঁরা মাহবুব আলমের দাবী ও মতকে সমর্থন করেনতাঁরাও মনে করেন যে ৩৩/৩৩ নং আয়াতটি শুধু নবীপত্নীদের জন্যেই, সাধারণ মুসলিম নারীদের জন্যে আয়াতটি প্রযোজ্য নয়। এ পর্যন্ত আমি যা আলোচনা করেছি তাতে এটা মনে হতে পারে যে, আমার বিরুদ্ধে মাহবুব আলম যে অভিযোগ (কোরানের অপবাখ্যা করা) এনেছেন তা সত্যি বলে আমি স্বীকার করে নিচ্ছি এবং এটাও স্বীকার করে নিচ্ছি যে উক্ত আয়াতটি (৩৩/৩৩) সাধারণ মুসলিম নারীদের জন্যে নয়।  না, মোটেই তা নয়। কেনো তা নয়, সে কথায় এবার আসা যাক।
৩৩/৩৩ নং আয়াতটি কাদের উদ্দেশ্যে (শুধু মুহাম্মদের পত্নীদের উদ্দেশ্যে নাকি সকল নারীর উদ্দেশ্য) তা নিয়ে মুসলমানদের মধ্যে মতোবিরোধ আছে। বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠের মত হলো সমস্ত মুসলিম নারীর জন্যে আয়াতটি প্রযোজ্য। অপর অংশটি (এঁরা সংখ্যায় নগণ্য)  মনে করেন যে, সকল মুসলিম নারীর জন্যে প্রযোজ্য নয়দ্বিতীয় মত পোষণকারীরা জোর দেন আগের আয়াতটির (৩৩/৩২) উপর যে আয়াতটি শুরুই করা হয়েছে মুহাম্মদের স্ত্রীদের সম্বোধন করে। এখানে আমি আর একটা কথা যোগ করতে চাই যা তাঁদের বক্তব্যকেই জোরালো করবে। সে কথাটা হলো, শুধু দু’টি আয়াতই নয়, ৩৩/২৮ থেকে ৩৩/৩৫ পর্যন্ত পরপর আটটি আয়াতই মুহাম্মদের পত্নীদের উদ্দেশ্যে ব্যক্ত বা বর্ষিত হয়েছে।  কৌতূহলী পাঠকদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিয়ে বলছি যে লেখাটা দীর্ঘ হবে  বিধায় বাকি আয়াতগুলি উদ্ধৃত  করা থেকে বিরত থাকুতে হচ্ছে।  সে কথা থাক এবার আমার বক্তব্যে ফিরে আসি।
৩৩/৩২ ও ৩৩/৩৩ নং আয়াত দু’টোই উদ্ধৃত করা হয়েছে। পাঠক বন্ধুগণ আশা করি লক্ষ্য করেছেন যে, আয়াত দুটির কথাগুলি মুহাম্মদের পত্নীদের উদ্দেশ্যে বলা হয়েছে ঠিকই, কিন্তু কোথাও এমন কথা বলা হয় নি যে আয়াতদ্বয় সাধারণ মুসলিম নারীদের জন্যে প্রযোজ্য নয়। কিংবা এ কথাও বলা হয় নি যে, সাধারণ মুসলিম নারীগণ যদি গৃহকোণে অবস্থান না করে বাইরে স্বাধীনভাবে চলাফেরা করে তাতে দোষ নেই। বরং ৩৩/৩৩ নং আয়াতে স্পষ্ট করে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে বাড়ির বাইরে নারীদের চলাফেরা করা, নিজেদের প্রদর্শন করা যা প্রাক ইসলাম যুগে আরবের নারীগন করতেন তা আল্লাহ্‌ পছন্দ করে না।  আয়াতের ভাষ্য অনুযায়ী আল্লাহ্‌ মুহাম্মদের পত্নীদের বলছে যে, ‘প্রাচীন জাহিলী যুগের মত নিজেদেরকে প্রদর্শন করে বেড়াবে না।’ এর অর্থ স্পষ্ট যে আল্লাহ্‌ সকল নারীর জন্যেই প্রাক ইসলাম যুগের আরবের নারীদের মতো বাড়ির বাইরে চলাফেরা করা গর্হিত কাজ মনে করেসুতরাং যাঁদের সামান্য বোধবুদ্ধি আছে তাঁদেরও এটা বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয় যে নারীদের গৃহকোণের আবদ্ধ থাকার কোরানীয় নির্দেশটি সকল মুসলিম নারীদের জন্যেই প্রযোজ্য, শুধু মুহাম্মদের স্ত্রীদের জন্যে নয়পাঠকবন্ধুদের ৩৩/৩৩ নং আয়াতটির শেষাংশের প্রতি আরও একবার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। সেখানে মুহাম্মদের পত্নীদের উদ্দেশ্যে বলা হয়েছে যে, আল্লাহ্‌ চায় সকল অপবিত্রতা থেকে তাদের রক্ষা করতে এবং তাদেরকে সুম্পূর্ণরূপে পবিত্র করতে। এ কথাটা থেকে কি এটা স্পষ্ট নয় যে, নারী স্বাধীনভাবে বাড়ির বাইরে যাতায়াত করলে তাদের পবিত্রতা নষ্ট হয় এবং অপবিত্রতা থেকে বাঁচতে ও নিজেদের সম্পূর্ণ পবিত্র রাখতে নারীর  গৃহকোণে আবদ্ধ থাকা আবশ্যক। তাই যে সব তথাকথিত প্রগতিশীল মুসলমানরা বলেন যে ঘরে আবদ্ধ থাকা ও বোরখা পরার আদেশ সাধারণ মুসলিম নারীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয় তাঁদের আমি জিজ্ঞাসা করতে চাই, আপনাদের আল্লাহ্‌ কি সাধারণ মুসলিম নারীদের এবং আপনাদের পরিবারের নারীদেরকে ‘জাহিলি যুগের অপবিত্রতা’ থেকে রক্ষা করতে কিংবা সম্পূর্ণ পবিত্র করতে চাই না? বলা বাহুল্য যে, আপনাদের আল্লাহ্‌ নিশ্চয়ই এমনটা চাইতে পারে না
অতএব যুক্তি দিয়ে বিচার-বিশ্লেষণ করলে নিঃসংশয়ে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় যে, উক্ত আয়াত দু’টিতে মুহাম্মদের পত্নীদের সম্বোধন করে এবং তাঁদের উদ্দেশ্যে যে কথাগুলি বলা হয়েছে সে কথাগুলি বিশ্বের সকল মুসলিম নারীর জন্যেই প্রযোজ্য। এই যুক্তিকে মান্যতা শুধু আমরা যুক্তিবাদী মানুষরাই দিচ্ছি তাই নয়, এটা মেনে নিয়েছেন বিশ্বের তাবড় তাবড় মুসলিম ধর্মগুরুরাও। তাঁরা  কোরান ও হাদিসের আলোকে আয়াতদ্বয় বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছেন যে, আয়াতদ্বয়ের প্রত্যেকটি কথা ও আদেশ সমস্ত মুসলিম নারীদের জন্যে প্রযোজ্য এবং তাদের প্রত্যেকের জন্যেই সেগুলি অবশ্য পালনীয় কর্তব্য। তফসিরকার ইবনে কাসির একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন মুসলিম ধর্মগুরু। তিনি কোরানের যে তফসির লিখেছেন তা সারা বিশ্বে মুসলিম সমাজে সমাদৃত। তিনি কী বলেছেন তা দেখা যাক।
ইবনে কাসির অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে দাবী করেছেন যে উক্ত আয়াত দু’টি সকল মুসলিম নারীদের জন্যে সমান প্রযোজ্য। তিনি তাঁর দাবিকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন নানা তত্ত্ব, তথ্য ও যুক্তি দিয়ে। তিনি কী বলেছেন তা তাঁর বর্ণনা থেকেই শোনা যাক। প্রথমেই আলোকপাত করবো তাঁর উপস্থাপিত দু’টি যুক্তির প্রতি। প্রথম যুক্তিটি  এরূপ  -     
·      আল্লাহ তা’আলা স্বীয় প্রিয়তম নবী (সঃ) – এর সহধর্মিণীদেরকে আদব-কায়দা ও ভদ্রতা শিক্ষা দিচ্ছেন।সমস্ত স্ত্রীলোক তাদের অধীনস্থ। সুতরাং এই নির্দেশাবলী সমস্ত মুসলিম নারীর জন্যেই প্রযোজ্য। তিনি নবী (সঃ) – এর সহধর্মিণীদেরকে সম্বোধন করে বলেনঃ হে নবী পত্নীরা! তোমরা অন্যান্য সাধারণ নারীদের মত নও। তাদের তুলনায় তোমাদেওর মর্যাদা অনেক বেশী। যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় কর তবে পরপুরুষের সাথে কোমল কণ্ঠে এমনভাবে কথা বলো না যাতে অন্তরে যার ব্যাধি আছে সে প্রলুব্ধ হয় এবং তোমরা ন্যায়সঙ্গত কথা বলবে। স্ত্রীলোকদের পরপুরুষের সাথে কোমল সুরে এবং লোভনীয় ভঙ্গিতে  কথা বলা নিষিদ্ধ। সুমিষ্ট ভাষায় ও নরম সুরে কেবল স্বামীর  সঙ্গে কথা বলা যেতে পারে।  
 দ্বিতীয় যুক্তিটি  হলো -  
·    অজ্ঞতার যুগে নারীরা বেপর্দাভাবে চলাফেরা করতো। ইসলাম এরূপ বেপর্দাভাবে চলাফেরা করাকে হারাম ঘোষণা করেছে। ভঙ্গিমা করে নেচে নেচে চলাকে ইসলামে নিষিদ্ধ করেছে। দো-পাট্টা ও গায়ে চাদর গায়ে দিয়ে চলাফেরা করতে হবে। তা গায়ে দিয়ে গলায় জড়িয়ে রাখা ঠিক নয়। যাতে গলা ও কানের অলঙ্কার  অন্যের নযরে না পড়ে সেভাবে গায়ে দিতে হবে। এগুলো অসত্য আ বর্বর যুগের নিয়ম-পদ্ধতি ছিল। যা এ আয়াত দিয়ে নিষিদ্ধ করে দেয়া হয়েছে। (দ্রঃ ইবনে কাসিরের তফসির, পঞ্চদশ খণ্ড) 
     তারপর কোরান ও হাদিসকে উদ্ধৃত করে তিনি দেখিয়েছেন যে আল্লাহ্‌ সকল নারীদের ঘরের মধ্যেই থাকার নির্দেশ দিয়েছেতিনি লিখেছেন
·     এর পর মহিমাণ্বিত আল্লাহ বলেনঃ কোন জরুরী কাজকর্ম ছাড়া তোমরা বাড়ি হতে বের হবে না। নামায পড়তে যাওয়া শরয়ী প্রয়োজন। যেমন রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আল্লাহর বাঁদীদেরকে আল্লাহর মসজিদে যেতে বাধা প্রদান করবে না। কিন্তু তাদের উচিত যে, তারা বাড়ীতে যে সাদাসিধা পোশাকে পরে থাকে ঐ পোশাক পরেই যেন মসজিদে গমন করে।” অন্য একটি রেওয়াতে আছে যে, স্ত্রীলোকদের জন্য বাড়ীই উত্তম।   
আল্লাহ্‌ সকল নারীকে ঘরে থাকার নির্দেশই যে দিয়েছেন তার সমর্থনে কাসির আর একটি হাদিস বর্ণনা করেছেন যে হাদিসে মুহাম্মদ বলেছেন নারী যদি নিজের বাড়িতেই পর্দার সাথে অবস্থান করে আল্লাহ্‌র নির্দেশ পালন করে তবে সে  জিহাদীদের সমান মর্যাদা পাবে। কাসিরের কলমে বর্ণিত সেই হাদিসটি এরূপ –
·         হযরত আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলে, “একদা স্ত্রীলোকরা রাসূলুল্লাহ (সঃ) – এর নিকট এসে বলেঃ হে  আল্লাহর রাসূল! পুরুষলোকেরা আল্লাহর পথে জিহাদের ফজিলত নিয়ে যায়আমাদের জন্য কী এমন আমল আছে যার দ্বারা আমরা আল্লাহর পথে জিহাদকারীদের সমমর্যাদা লাভ করতে পারি?” উত্তরে রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “যারা নিজেদের বাড়ীতে (পর্দার) বসে সাথে (অথবা এ ধরণের কথা বলেন), তারা আল্লাহর পথে জিহাদকারীদের সমান মর্যাদা লাভ করবে।”    
ইসলামে সকল নারীকেই যে ঘরে আবদ্ধ থাকার নির্দেশ আছে তার সপক্ষে মুহাম্মদের আর একটি বাণীকে উদ্ধৃত করেছেন ইবন কাসির  সেখানে মুহাম্মদ সরাসরি বলেছেন যে ‘নারী হলো পর্দার বস্তু’ কথাটা অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে, কিন্তু একদম সত্যি কথা । নারীকে ‘বস্তু’ বলে উল্লেখ করে কীভাবে  মুহাম্মদ তাদের ঘরে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন তা দেখুন কাসিরের বর্ণনা থেকে –  
·         হযরত আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে,নবী (সঃ) বলেছেনঃ “নিশ্চয় স্ত্রীলোক পর্দার বস্তু। এরা যখন বাড়ী হতে বের হয় তখন শয়তান তাদের প্রতি ওঁৎ পেতে থাকে। তারা আল্লাহ তা’আলার খুব বেশী নিকটবর্তী হয় তখন যখন নিজের বাড়ীতে অবস্থান করে।”   
নারীদের ঘরে বন্দী করে রাখাটা নিশ্চিত করার জন্যে মুহাম্মদ ঘরের অন্দর মহলেই তাদের নামায আদায় করা অধিক উত্তম বলে ফতোয়া (বিধান) দিয়েছেনএমনকি নারী যাতে ঘরের বাইরে না যায় তারজন্যে মুহাম্মদ তাঁদের শয়তানের ভয়ও দেখিয়েছেন।   দুটি হাদিসকেও  কাসির তাঁর দাবির সমর্থনে অকাট্য প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপিত  করেছেন হাদিস দু’টি  হলো    
·         নবী (সঃ) বলেছেনঃ “নারীর অন্দর মহলের নামাজ তার বাড়ীর নামায হতে উত্তম এবং বাড়ীর নামায আঙিনার নামায হতে উত্তম।”   
·         হযরত আব্দুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী (সঃ) বলেছেনঃ “নিশ্চয়ই স্ত্রীলোক পর্দার বস্তু। এরা যখন বাড়ী হতে বের হয় তখন শয়তান তাদের প্রতি ওঁৎ পেতে থাকে। তারা আল্লাহ্‌ তা’আলার খুব বেশী নিকটবর্তী হয় তখন যখন তারা নিজেদের বাড়ীতে অবস্থান করে।”  

কাসির আরো অনেক হাদিস ও কোরানের সূত্র উল্লেখ করে দেখিয়েছেন যে সকল নারীকেই গৃহকোণে আবদ্ধ থাকার আদেশটি অবশ্যই পালন করতে হবে। সেই হাদিসগুলির মধ্যে মাত্র আর একটা হাদিসের উল্লেখ করে আলোচনায় ইতি টানবো। এই হাদিসটি এখানে খুবই প্রাসঙ্গিক ও ভীষণ  গুরুত্বপূর্ণপাছে নারী ঘরে আটকে থাকতে থাকতে বিদ্রোহ করে বসে তাই মুহাম্মদ নারীদের বেহেস্তের লোভ দেখিয়ে বস করতে চেয়েছেন। সেই হাদিসটি হলো -       
·          হযরত আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা স্ত্রীলোকেরা রাসুলূল্লাহ (সঃ)-এর নিকট এসে বলেঃ হে আল্লাহর রাসূল(সঃ)! পুরুষলোকেরা আল্লাহর পথে জিহাদের ফজিলত নিয়ে যায়। আমাদের জন্যে কী এমন আমল আছে যার দ্বারা আমরা আল্লাহর পথে জিহাদকারীদের সমমর্যাদা লাভ করিতে পারি?” উত্তরে রাসুলূল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “যারা নিজেদের বাড়িতে (পর্দার সাথে) বসে থাকে (অথবা এ ধরণের কথা তিনি বলেন), তারা আল্লাহর পথে জিহাদকারীদের আমলের মর্যাদা লাভ করবে।” ( কাসির প্রদত্ত উদ্ধৃতিগুলি নেওয়া হয়েছে তাঁর তফসির গ্রন্থ থেকে। দ্রঃ ইবনে কাসিরের তফসির, ১৫শ খণ্ড, পৃঃ ৭৮৩-৭৮৪)
পরিশেষে যে কথাটি বলে লেখাটায় ইতি টানবো  তা হলো, মুহাম্মদের পত্নীদের উদ্দেশ্যে যে আদেশ বা পরামর্শগুলি কোরানের ঐ আয়াত দু’টিতে ব্যক্ত করা হয়েছে সেগুলি সকল মুসলিম নারির জন্যেই সমান প্রযোজ্য তা বোঝার জন্যে তীক্ষ্ণ বুদ্ধির প্রয়োজন নেই।  তা হলে এ  টুকু বুদ্ধি কি মাহবুব আলমদের নেই? নিশ্চয়ই তা নয়।  আসলে মাহবুব আলমরা হলেন জ্ঞানপাপী।  তাঁরা প্রচণ্ড  অসৎ, সুবিধাবাদী, ধান্দাবাজ, ভণ্ড ও প্রতারকও বটে  ৩৩/৩৩ নং আয়াতের আদেশটি গোটা নারীজাতির সমস্ত অধিকার হরণ করার উদ্দেশ্যেই জারি করা হয়েছে তা মাহবুব আলমরা খুব ভালো করেই বোঝেন। তবু তাঁরা গোঁড়া মুসলিম সমাজের তোপের মুখে পড়বেন এই ভয়ে আয়াতটির সমালোচনা  করেন না এবং তাঁদের পরিবাররের নারীরা পাছে বিদ্রোহ করেন সেই ভয়ে বলেন  যে আদেশটি কেবল  মুহাম্মদের পত্নীদের জন্যেই জারি করা হয়েছিলো। 
       


Tuesday, August 23, 2016

মুসলিম ধর্মগুরু জাকির নায়েকের ‘পিস টিভি’র কাজ ছিলো বিশ্বজুড়ে ‘জিহাদ’ – এর পক্ষে মুসলিমদের উদ্বুদ্ধ করা




গত ১লা জুলাই বাংলাদেশের ঢাকার গুলশানে হোলি আর্টিজান বেকারী কাফেতে আইএস একটি ভয়ঙ্কর জঙ্গী হামলা  চালায় যে হামলায় বিদেশী নাগরিক-সহ কুড়িজন মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করে জঙ্গীরা। জঙ্গীদের মধ্যে জীবিত ধৃত একজন জঙ্গী  বলেছে যে সে জাকির নায়েকের ভাষণ শুনে জিহাদি তথা জঙ্গী হওয়ার অনুপ্রেরণা পেয়েছে এবং আইএস-এর সঙ্গে যোগ দিয়েছে।  শাসক আওয়ামী লীগের একজন নেতার পুত্র রোহন ইমতিয়াজ গুলশানে হামলার কয়েক দিন আগে ফেসবুকে জাকির নায়েককে উদ্ধৃত করে জিহাদের পক্ষে পোস্ট দিয়েছিলেন বলে কয়েকটি  সংবাধ্যম জানিয়েছে। আইএস – এর ভারতের হায়দ্রাবাদ-মডিউলের প্রধান ইব্রাহিম ইয়াজদানিও জাকির নায়েকের ভাষণ শুনে গভীরভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেনতিনি দীর্ঘদিন ধরে পিস টিভিতে জাকির নায়েকের বক্তৃতা শুনতেন এবং ২০১০ সালে  একবার নায়েকে দশদিনের প্রচার শিবিরে স্বেচ্ছাসেবকও ছিলেন সরকারী সূত্রেজানা যাচ্ছে। জাকির নায়েক (ভারতের মুম্বাইয়ের অধিবাসী) একজন মুসলিম ধর্মগুরু এবং ধর্ম প্রচারক। ধর্ম প্রচার করার জন্যে তিনি ‘ইসলামিক রিসার্চ ফাউণ্ডেশন নামে’ একটি শক্তিশালী সংগঠন আছে, এবং আছে পিস টিভি নামে নিজস্ব একটি বৈদ্যুতিন চ্যানেলও। পিস টিভির দৌলতে জাকির নায়েক আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে একটি ভীষণ পরিচিত নাম এবং ভীষণ জনপ্রিয় ধর্মগুরুও। ইংরাজী, হিন্দি, উর্দু ও বাংলা-সহ অনেক ভাষাতে এবং ভারতের বাইরে বাংলাদেশ ও চীন-সহ বহু দেশে পিস টিভি সম্প্রচারিত হয়। এক কোটি চল্লিশ লক্ষ তাঁর ফলোয়ার আছে এবং বিশ্বের কুড়ি কোটি মানুষ তাঁর পিস টিভির শ্রোতা।  এই পরিসংখ্যান থেকে অনুমান করা যায় তিনি কতোটা জনপ্রিয়। মুসলিম জঙ্গীদের অনেকেই তাঁর ভাষণ শুনে  উদ্বুদ্ধ হয়ে আইএস-এ  যোগ  দিয়েছে এই খবর জানার পর  বাংলাদেশ ও ভারত সরকার তাঁর পিস টিভির বন্ধ করে দেয়।
আমি বাক-স্বাধীনতা ও মত প্রাকাশের অধিকারের পক্ষে।  যেদিন থেকে হাতে কলম তুলে নিয়েছি সেদিন থেকেই এই অধিকারের পক্ষে লড়াই করছি।  বই  নিষিদ্ধ করা, ফেসবুক এ্যাকাউন্ট ক্লোজ করা, ব্লগ বন্ধ করা, সিনেমা বন্ধ করা, টিভি চ্যানেলে সিরিয়াল বন্ধ করা ও টিভি চ্যানেল বন্ধ করার তীব্র বিরোধী আমি। তসলিমা নাসরিনের  বই (দ্বিখণ্ডিত) নিষিদ্ধ করা হলে,, তাঁকে কলকাতা থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হলে, তাঁর একটি বইয়ের (নির্বাসন) আনুষ্ঠানিক প্রকাশ এবং ‘তারা’ টিভিতে একটি মেগা সিরিয়াল বন্ধ করে দেয়া হলে আমি প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছি। বাংলাদেশে যখন মুক্তমনা লেখক ও ব্লগাররা যখনই আক্রান্ত ও খুন হয়েছেন তখনই তার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছি। কলকাতায় যখন লেখক ও মাদ্রাসার  শিক্ষক মোরসালিন মোল্লা ও কাজী মাসুম আক্তার আক্রান্ত হয়েছেন তখনই প্রতিবাদে সরব হয়েছি। সেই আমি জাকির নায়েকের পিস টিভি বন্ধ করাকে সমর্থন করছি।  সমর্থন করছি, কারণ আমি  যেমন বাক-স্বাধীনতা ও   মত প্রকাশের পক্ষে তেমনই হিংসা ছড়ানো, হত্যা করা ও  হত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার বিপক্ষে। হিংসা প্রচার করা, হত্যা করা ও হত্যা করায় প্ররোচনা দেওয়া আমি মনে করি একটি ঘৃণ্যতম মানববিরোধী কাজ। জাকির নায়েকের পিস টিভির বিরুদ্ধে এই অভিযোগগুলি উঠেছে। তাই আমি পিস টিভি বন্ধ করাকে সমর্থন করি।
আমি যতোটা বাক-স্বাধীনতা ও লেখকের মত প্রকাশের পক্ষে ঠিক ততোটাই হিংসা ছড়ানো, হত্যা করা ও হত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার বিপক্ষে। বাক-স্বাধীনতা ও মত প্রকাশের অধিকারের নামে হিংসা প্রচার করা, হিংসাকে প্রশ্রয় দেওয়া, হত্যা করা ও হত্যা করায় প্ররোচনা দেওয়ার ঘোর বিরোধী আমি। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে হিংসা প্রচার করা, হিংসাকে সমর্থন করা বা মদত দেওয়া এবং হত্যাকে সমর্থন করা বা হত্যায় ইন্ধন জোগানো ও প্ররোচনা দেওয়া মানবতাবিরোধী ও মানববিরোধী কাজ। জাকির নায়েকের বিরুদ্ধে, তাঁর পিস টিভির বিরুদ্ধে  এই অভিযোগগুলি কিন্তু  জোরালোভাবেই রয়েছে। গুরুতরো অভিযোগ রয়েছে তাঁর নিজের তৈরী ও পরিচালিত সংগঠন ‘ইসলামিক রিসার্চ ফাউণ্ডেশন’ – এর বিরুদ্ধেও। নানা প্রলোভন ও বলপ্রয়োগের মাধ্যমে গণহারে হিন্দু ও খৃস্টানদের ধর্মান্তরকরণ করার কাজ করছে ‘ইসলামিক রিসার্চ ফাউণ্ডেশন’। ইতিমধ্যেই যে সব তথ্য ও প্রমাণগুলি সামনে এসেছে তাতে এই অভিযোগগুলি অসত্য, অবাস্তব ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে উড়িয়ে দেওয়া যাবে না। এসব কারণে জাকির নায়েকের পিস টিভির সম্প্রচার বন্ধ করে  দেওয়াকে সরকারের তরফে উপযুক্ত ও সঠিক পদক্ষেপ বলে মনে করি।  
পিস টিভির সম্প্রচার বন্ধ করার সরকারী পদক্ষেপকে সমর্থন জানিয়েও বলতে চাই যে, পিস টিভি বন্ধ করার  নৈতিক অধিকার নেই প্রধানমন্ত্রী মোদিজির। কারণ তিনি ও তাঁর সরকার নীতিগতভাবে হিংসা ছড়ানো এবং হত্যায় প্ররোচনার দেওয়ার বিরুদ্ধে নয়। তিনি সদম্ভে ঘোষণা করেন নিজেকে আরএসএস –এর একজন গর্বিত সৈনিক সৈনিক হিসেবে যে আরএসএস স্পষ্টতঃ উগ্র হিন্দুত্ববাদে বিশ্বাসী এবং ভারতের বুকে হিন্দুরাষ্ট্র স্থাপন করতে চায়। তাদের মূল লক্ষ্য  হলো ভারত থেকে মুসলমান ও খৃস্টানদের তাড়িয়ে বা  ধর্মান্তরিত করে মুসলিম ও খৃস্টান-মুক্ত হিন্দুভারত নির্মাণ করা সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে আরএসএস ও বিজেপির লোকেরা প্রতিদিনই মুসলমান ও খৃস্টানদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ও হিংসা ছড়াচ্ছে, এবং তাদের হত্যা  করার প্ররোচনা দিচ্ছে। ‘ঘর ওয়াপসি’, ‘লাভ জিহাদ’ প্রভৃতি কর্মসূচী নিয়ে আরএসএস –এর লোকজন ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত তারা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। বলা বাহুল্য যে এই কর্মসূচীগুলি কোনোটাই তারা অহিংস পথে প্রচার বা রূপায়ন করছে। যারা এসব  হিংসাত্মক ও ধ্বংসাত্মক প্রচার চালাচ্ছে তাদের মধ্যে বিজেপির বিধায়ক, সাংসদ ও মন্ত্রীরাও রয়েছেন। মোদিজি তাঁদের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত কোনো দৃষ্টিগ্রাহ্য রাজনৈতিক বা প্রশাসনিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেন নিতাই পিস টিভি বন্ধ করার তাঁর নৈতিক অধিকার নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।        
ফিরে আসি জাকির নায়েকের প্রশ্নে। তিনি এখন বলছেন তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা যাবতীয় অভিযোগ মিথ্যে। গত ২৫ শে জুলাই আবু ধাবিতে ইণ্ডিয়া টুডেকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি যা বলেছেন তা হলো - এক. কোথাও কোনো অনুষ্ঠানে হিংসা ও হত্যার পক্ষে বলি নি। ২. কোনো সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে কখনো ঘৃণা ছড়ায় নি। তিন. আমি ধর্মনিরপেক্ষ নীতিতে বিশ্বাস করি এবং সর্বদা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির  পক্ষেই  প্রচার করি।  ৪. কখনো সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন করি নি এবং ভবিষ্যতেও করবো না, কারণ কোরান সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন করে না। কোরান বলে যে একজন নির্দোষ ব্যক্তিকে হত্যা করা মানে সমগ্র মানবজাতিকে হত্যা করা। ৫. আইএস ইসলামিক সংগঠন নয় এবং মুসলিম  জঙ্গীরা ইসলামের কলঙ্ক। ৬. কখনো কোনো মুসলিমকে আমেরিকা বা অন্য কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরতে বলি নি। ৭. আমি অভিন্ন দেওয়ানী বিধিকে সমর্থন করি যদি সেটা পক্ষপাতহীন ও ন্যায্য হয়। তবে আমি মুসলিম ব্যক্তিগত আইনকেই সর্বোৎকৃষ্ট ও সর্বোত্তম মনে করি। ৮. আমার কুড়ি কোটি গোঁড়া অনুরাগী আছে যাদের মধ্যে ১০-২০ জন যদি আমার বক্তব্যের ভুল মানে করে তার জন্যে  আমাকে দোষারোপ করা হবে কেনো? নিজেকে নির্দোষ সাজাতে গিয়ে তিনি সব দোষ চাপিয়েছেন মিডিয়ার উপর।  বলেছেন, মিডিয়া তার বিরুদ্ধে যা প্রচার করছে তা মিথ্যা, বিকৃত, সাজানো ও ভেজালে ভরা। মিডিয়ার ঘাড়ে সব দোষ চাপালেও তিনি কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর স্তুতি গেয়েছেন দরাজ গলায়। বলেছেন যে মোদিজির সরকার আমাকে কখনো বিরক্ত বা জ্বালাতন করে নি। বলেছেন, মোদিজি হিন্দু-মুসলিম সম্পর্ক গড়ে তোলার প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন।
জাকির নায়েক নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করার জন্যে যা যা বলছেন তা মোটেই বিশ্বাসযোগ্য মনে হয় না। একটি বিশেষ লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো তিনি আত্মপক্ষ সমর্থনে যে দীর্ঘ বয়ান দিয়েছেন তাতে প্রধানমন্ত্রী মোদিজির বিন্দুমাত্র সমালোচনা নেই, বরং দরাজ কণ্ঠে মোদিজির প্রশংসা করেছেন।  বলেছেন,  মোদিজি স্বল্প সময়ের মধ্যেই এতো বেশী মুসলিম দেশ সফর সম্পন্ন করেছেন যা আগে কোনো প্রধানমন্ত্রী দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থেকেও করেন নি। বলেছেন, মোদিজির হিন্দু-মুসলিম সম্পর্ক গড়ে তোলার আন্তরিক প্রয়াস করছেন। এটা একটি ইতিবাচক দিক  এবং আমি এই কাজে তাঁর সঙ্গে আছি ও থাকবো।    
বলা বাহুল্য যে মোদিজি সম্পর্কে জাকির নায়েক যা বলেছেন তা সম্পূর্ণ তাঁর বিশ্বাসের বিপরীত। তাঁর কণ্ঠে মোদিজির প্রশংসা আমাদের মনে করিয়ে দেয় একটা বাংলা প্রবাদের কথা, ‘অতিভক্তি চোরের লক্ষণ’। তাঁর  বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলি সত্যি না হলে যে মোদিজির আস্কারা পেয়ে হিন্দুত্ববাদীরা মুসলমানদের হাতে গলা কাটতে চাইছে তাঁর স্তুতি কি তিনি গাইতেন?  তিনি সাফাইকৃত কথাগুলি  বিশ্লেষণ করলেই বোঝা যায় তিনি যা বলেছেন তা মিথ্যের ঠাসা বুনুন ছাড়া কিছু নয়। তিনি ইসলাম ধর্মের প্রচারক, অথচ দাবী করেছেন, তিনি ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাসী। তিনি বলেছেন তিনি অভিন্ন দেওয়ানী বিধি চান, আবার পরক্ষণেই বলেছেন ‘মুসলিম ব্যক্তিগত আইন’ই সবচেয়ে উত্তম ও উৎকৃষ্ট। বলা বাহুল্য যে,  দু’টো দাবীই  পরষ্পরবিরোধী ও মিথ্যে।  তিনি বলেছেন কখনো জিহাদ ও হিংসার পক্ষে বলেন নি, কারণ কোরান হিংসা ও হত্যার  কথা বলে না। এ দাবী যে  ভিত্তিহীন তার সাক্ষ্য বহন করছে কোরান নিজেই। কোরানের পাতায় পাতায় রয়েছে অমুসলিমদের বিরুদ্ধে জিহাদের কথা, তাদের হত্যা করার কথা, সারা বিশ্বে ইসলামী শাসন কায়েম করার কথা।  তাছাড়া তাঁর সাগরেদরাই তো স্বীকার করেছে যে তাঁর ভাষণ  শুনে  তারা জিহাদের অনুপ্রেরণা পেয়ে  আইএস – এ যোগ দিয়েছে।  তিনি বলেছেন যে তারা তাঁর বক্তব্যের ভুল মানে করেছে। না, তারা ভুল মানে করে নি, তারা যে সঠিক মানেই বুঝেছে তাঁর ভাষণের তার প্রমাণ দিচ্ছে তাঁর ভাষণের ভিডিও ফুটেজগুলি।  এই ফুটেজগুলিতে দেখা যাচ্ছে  যে তিনি বলছেন -  জিহাদের  জন্যে আত্মঘাতী মানববোমা ইসলামে বৈধ, প্রত্যেক মুসলমানেরই জিহাদি ও সন্ত্রাসবাদী হওয়া কর্তব্য। তিনি বলছেন, যেহেতু আমেরিকা মুসলমানদের উপর সন্ত্রাস চালাচ্ছে তাইআমেরিকার বিরুদ্ধে সন্ত্রাস চালানোয় দোষ নেই ।  তিনি খোলাখুলি বলেছেন যে,  ৯/১১-র ঘটনার জন্যে লাদেনের কাজকে তিনি সমর্থন করেন। তিনটি ভিডিও ফুটেজের লিংক নীচে দিলাম।   
শুধু মুসলিমরাই নয়, হিন্দু যুবক-যুবকরাও জাকিরজীর ভাষণে উদ্বুদ্ধ হয়ে মুসলিম জিহাদি হয়ে যাচ্ছে।  কেরালা পুলিশ জানিয়েছে যে কেরালা থেকে যে ২১জন নিখোঁজ রয়েছে তারা সম্ভবতঃ  আইএস –  যোগ দিয়েছে। তাঁরা এরূপ সন্দেহ করছেন পুলিশের হাতে ধৃত ধর্মান্তরিত একটি হিন্দু দম্পত্তির বয়ান থেকে। এরা হলো বেস্টিন ভিনসেন্ট ও মেরিল, ধর্মান্তরিত হয়ে যথাক্রমে ইয়াহিয়া ও মরিয়ম নাম ধারণ করেছে এবং সিরিয়া যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলো। আর একটি মারাত্মক অভিযোগ উঠেছে জাকির নায়েকের বিরুদ্ধ। তিনি তাঁর সংগঠন  ‘ইসলামিক রিসার্চ ফাউণ্ডেশন’ – এর মাধ্যমে গণহারে হিন্দু ও খৃস্টানদের ধর্মান্তরিত করার কাজ করে চলেছেন। এটা ফাঁস হয়েছে মহারাষ্ট্রের এ্যান্টি টেররিজম স্কোয়াডের হাতে তাঁর দু’ই  প্রধান সহযোগী রিজওয়ান খান ও আরশী কুরেশী  ধরা পড়ার পর। তাদের কাছ থেকে ৮০০ হিন্দু ও খৃস্টানকে ধর্মান্তরিত করার কাগজপত্র পাওয়া গেছে। তাদের কাছ থেকে জানা গেছে যে, ধর্মান্তরিত করার জন্যে  মাথা পিছু পঞ্চাশ হাজার টাকা দেওয়া হয়, এবং  তাতে কাজ না হলে ভীতি প্রদর্শনও করা হয়।  মেরিল ওরফে মরিয়মের ভাই এডিনও জ্যাকোব কেরালা  পুলিশের কাছে এই একই অভিযোগ করেছেন।  তিনি পুলিশের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন যে, বেস্টিন ভিনসেন্ট ওরফে ইয়াহিয়া  তাকে জোর করেই কুরেশীর কাছে মুম্বায়  নিয়ে গিয়েছিলো যে তাকে ইসলাম গ্রহণ করে আইএস – এ যোগদান করতে চাপ দিয়েছিলো।    
জাকির নায়েক যে  শিক্ষিত যুবক-যুবতীদের মগজ ধোলাই করে আইএস – এর রিক্রুটিং এজেন্ট হিসেবে কাজ করছেন এবং মোটা অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে ও ভীতি প্রদর্শন করে গণহারে ধর্মান্তরকরণের কাজ চালিয়ে  যাচ্ছেন তা অজানাই থেকে যেতো যদি গুলশান হামলায় একজন জঙ্গী জীবিত অবস্থায় এবং ‘ইসলামিক রিসার্চ ফাউণ্ডেশন’ - এর দুই চাঁই পুলিশের হাতে ধরা না পড়তো। জাকির নায়েকের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলি যখন এতোই গুরুতর তখন  শুধু পিস টিভি বন্ধ করলেই হবে না।  আইএস ও জাকির নায়েকের মধ্যে সম্পর্ক কী পর্যায়ে আছে, কতোটা গভীর সম্পর্ক আছে এসব অবশ্যই খতিয়ে দেখা উচিৎ। এটাও তদন্ত করে দেখা উচিৎ আইএস যখন  গুলশানে জঙ্গী হামলা চালায় ঠিক সে সময়েই তিনি সৌদি আরবে অবস্থান করছিলেন কেনো? তাহলে কি তাঁর কাছে ঐ জঙ্গী হামলার খবর ছিলো?  তাঁর বিরুদ্ধ ওঠা সব অভিযোগ মিথ্যে বলে দাবী করলেও কেনো তিনি ভারতে ফিরছেন না তাও খতিয়ে দেখা উচিৎ।  এসবের উত্তর জানার জন্যে তাঁকে ভারতে অবিলম্বে ফিরিয়ে নিয়ে এসে জিজ্জাসাবাদ করা দরকার। 

জাকির নায়েকের ভিডিও ফুটেজের  ৩টি লিংকঃ  https://youtu.be/-aVhAMFefx0,

বাংলাদেশের গণঅভ্যুত্থানে ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাইনি – পাঁচ

  দ্বিতীয় অধ্যায় শেখ হাসিনা ও শেখ মুজিবের প্রতি তীব্র গণরোষের নেপথ্যে ২০২৪ এর জুলাই অভ্যুত্থানের সফল পরিসমাপ্তি ঘটে ৩৬ দিন পর (৫ই ...