Tuesday, March 8, 2016

মুসলিমদের উন্নতি নয়, আর সব নেতার মতো মমতারও নীতি হলো মোল্লাদের তোষণ করা



মমতার হাত ধরে এ রাজ্যে যে পরিবর্তন এসেছে তা ছিলো মানুষের বহু আকাঙ্খিত। এমনকি বহু বামপন্থী মানুষও পরিবর্তন চেয়েছিলেন এবং তাদের অনেকেই মমতার দলকে ভোট দিয়েছিলেন। অর্থাৎ মমতার পক্ষে যেমন ইতিবাচক ভোট ছিলো তেমনি নেতিবাচক ভোটও যথেষ্ট ছিলো। মমতার যে শ্লোগানটি মানুষকে সবচেয়ে বেশী আকৃষ্ট করেছিলো সেটা ছিলো – বদলা নয়, বদল চাই। যাঁরা মমতার পক্ষে ইতিবাচক ভোট প্রয়োগ করেছিলেন তাঁরা ভেবেছিলেন মমতা তাঁর সরকারের কাজের মাধ্যমে নেতিবাচক সমর্থনকে ইতিবাচক সমর্থনে পরিণত করার প্রয়াস করবেন। কিন্তু না, মমতার অনুরাগীদের সে আশা পূরণ হয় নি।
মমতার সরকারের কাজে ‘বদলা নয়, বদল চাই’ – এর প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। যাঁরা আশা করেছিলেন বাম জামানার অপশাসন ও কুশাসনের পরিবর্তন হবে এবং  স্বচ্ছ ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার প্রয়াস করবেন মমতা তাঁদের আশা ভঙ্গ হয়েছে। পুলিশের ভূমিকা খুবই নৈরাশ্যজনক – হয়, নিষ্ক্রিয় থাকছে, না হয় খুবই সক্রিয় হতে দেখা যাচ্ছে। পুলিশের অধিকাংশই আগে সিপিএমের তাবেদারি করতো, এখন অবস্থার আরো অবনতি হয়েছে এবং প্রায় সমস্ত পুলিশই শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের তাবেদারি করছে। পুলিশের তাবেদারিত্ব বাম জামানার চেয়ে অনেক বেশী নগ্ন ও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে। ফলে দুষ্কৃতিদের কার্যকলাপ ক্রমাগত বেড়ে চলেছে, এবং বাড়ছে নারীর উপর অত্যাচার ও ধর্ষণের ঘটনাও। নারীর উপর অত্যাচারের ঘটনায় পশ্চিমবঙ্গ তো ভারতের শীর্ষে পৌঁছে গেছে যা বাঙালি হিসেবে আমাদের ভীষণ লজ্জিত করেছে। কলেজগুলিতে আগে এসএফআই দৌরাত্ম চালাতো, এখন টিএমসির ছাত্র সংগঠন চালাচ্ছে , কিন্তু টিএমসিপির দৌরাত্ম এসএফআই – এর দৌরাত্মকে বহুগুণ ছাপিয়ে গেছে। গণতন্ত্র ও বাক স্বাধীনতার উপর নগ্নভাবে হস্তক্ষেপ করছে মমতা ব্যানার্জির সরকার। মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী বলেছেন সংবাদপত্রের উপর কাউনসিলিং করা প্রয়োজনঅনুগত হতে অস্বীকার করছে এমন সংবাদপত্রকে বিজ্ঞাপন দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে তাঁর সরকার। নজরুল ইসলামের (আইপিএস) সদ্য প্রকাশিত বইয়ের (মুসলমানদের করণীয়) প্রকাশককে যেভাবে ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে তা কার্যতঃ বইটি নিষিদ্ধ করার সামিল।
এসব কাণ্ড দেখে যাঁরা মমতাকে মনেপ্রাণে ভালবাসেন, সমর্থন করেন, শ্রদ্ধা করেন তাঁরাও  হতাশ। তাঁদের একাংশ ইতিমধ্যেই মুখ খুলতে শুরু করেছেন। সবচেয়ে বড়ো উদ্বেগের কথা হলো মমতা সমস্ত সমালোচনা ও প্রতিবাদকে সিপিএমের ষড়যন্ত্র বলে উড়িয়ে দিচ্ছেন যেমন সিপিএম সকল বিরোধী আন্দোলনে আমেরিকার ষড়যন্ত্র দেখতো।
হতাশা  দেখা যাচ্ছে মুসলমানদের মধ্যেও। তারা এর আগে কংগ্রেস ও  সিপিএমের কাছে প্রতারিত হয়েছেন, তাঁদের অনেকেই আশা করেছিলেন যে তাঁদের উন্নতির জন্যে মমতা এবার সত্যিই কিছু করবেন। তাঁরা অন্ততঃ এটা বিশ্বাস করতেন যে মমতা আর যাই করুক তাঁদের সঙ্গে প্রতারণা করবেন না। কিন্তু তিনি এক্ষেত্রেও বাম ও কংগ্রেস সরকারের  নীতির পরিবর্তন করার কোনো  আগ্রহ এ পর্যন্ত দেখান নি। কংগ্রেস ও সিপিএমের মতোই  তিনিও  মোল্লাতন্ত্র-তোষণের পথ ধরেই হাঁটছেন। মোল্লাতন্ত্রকে তোষণে মুসলমানদের অপকার বৈ উপকার বা ক্ষতি বৈ উন্নতি যে হয় না তা  সর্বজন সুবিদিতমুসলমানদের উন্নতির নামে মমতা এ পর্যন্ত যা করেছেন তাতে মুসলমান সমাজে কোনো কল্যাণ হবে না, বরং তাদের আরো  অকল্যাণ ও ব্যাপক ক্ষতিই হবে। ক্ষতি হবে সমগ্র দেশ ও সমাজেরই। মোদ্দা কথা হলো মুসলমানদের উন্নতির নামে মমতা যা করেছেন  তা মুসলমানদের    সঙ্গে প্রতারণা ব্যতীত নয়।  
মমতা ব্যানার্জী  এ পর্যন্ত মুসলমানদের উন্নতির নামে যে কাজগুলি করেছেন এবং করে চলেছেন সেগুলি হলো – এক). আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে ‘আলিয়া মাদ্রাসা বিশ্ববিদ্যালয়’ করেছেন। দুই). জোর কদমে হজ ভবনের উন্নতি সাধন ও সম্প্রসারণের কাজ চলছে। তিন). দশ হাজার মাদ্রাসাকে (ব্যাপক সংখ্যক খারিজি মাদ্রাসা-সহ) সরকারী অনুমোদন  দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। চার). ইমাম ও মুয়াজ্জিনদের ভাতা মঞ্জুর করেছেন। পাঁচ). এবং নিয়ম করে মুসলমানদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলিতে সপার্ষদ উপস্থিত থাকছেন। বলা বাহুল্য যে এই কাজগুলির কোনোটার সাথেই মুসলিম সমাজের উন্নতির কোনো যোগ নেই। এখন প্রশ্ন হলো মমতা তাহলে এ কাজগুলি কেনো রূপায়ন করছেন? করছেন কারণ এই কাজগুলিই চায়  মোল্লাতন্ত্রের প্রতিনিধিরা। তারা বলেছিলো  আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় নামটা পাল্টে আলিয়া মাদ্রাসা বিশ্ববিদ্যালয় করতে হবে।  মমতা ব্যানার্জী নিয়ম-কানুনের তোয়াক্কা না করে একটি সভায় ঘোষণা করে দিলেন ‘আলিয়া মাদ্রাসা বিশ্ববিদ্যালয়’ করে দিলাম। এই ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে উপস্থিত মুসলিম শ্রোতাদের  একাংশের   তীব্র প্রতিবাদ  ওঠে। মমতা তখন তৎক্ষণাৎ বলেন,  ঠিক আছে,  যা ছিলো তাই থাকবে। প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য যে বিশ্ববিদ্যালয়ের আগে ‘মাদ্রাসা’ শব্দটি বসানোর বিরুদ্ধে প্রথম থেকেই উচ্চ শিক্ষিত মুসলিম সমাজের একাংশের প্রবল আপত্তি ছিলো। মমতা এটা জানা সত্ত্বেও তা অগ্রাহ্য করেই ‘মাদ্রাসা’ শব্দটি জুড়ে দিয়েছিলেন যা প্রমাণ করে  মমতা ব্যানার্জীর কাছে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত মুসলিমদের চেয়ে  মোল্লা-মুফতিদের গুরুত্ব অনেক বেশী।  
হজ ভবনের উন্নতি ও সম্প্রসারণের ফলে উপকৃত হবে যারা হজ করতে যান। তাঁরা তো অতি ক্ষুদ্র অংশ এবং  আর্থিকভাবে যথেষ্ট স্বচ্ছল।  হজ ভবনে যথেষ্ট স্থানাভাবের কারণে থাকার অসুবিধা হলে   তাঁরা অনায়াসে হোটেলে থাকতে পারেন। সুতরাং হজ হাউসের উন্নতি ও সম্প্রসারনের কাজ করা জরুরী ছিলো না।
মাদ্রাসা শিক্ষায়  মুসলমানরা যে  পিছিয়ে পড়ছে তা তাঁরা উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়েছেন। তাই তাঁরা সাধারণতঃ মাদ্রাসায় তাঁদের ছেলেমেয়েদের  পাঠান না। কাছাকাছি  হাই স্কুল না পেলে (হ্যাঁ, স্বাধিনতার প্রায় ৭০ বছর পরেও এখনও মুসলিম অধ্যুষিত বহু অঞ্চল আছে যেখানে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ  অনুমোদিত হাই স্কুল নেই) অগত্যা  মাদ্রাসায় ভর্তি  করেন। মুসলিম সমাজ  ক্রমশঃ আধুনিক শিক্ষার দিকে ঝুঁকলেও  এ কথাও অনস্বীকার্য যে  এখনও  মুসলিমদের একাংশ  মাদ্রাসার প্রতি ভীষণ দুর্বল।  এঁরা  যে সবাই মোলা-মুফতি-মাওলানা-ইমাম তা নয়। এমনকি যাঁরা বুঝেছেন যে মাদ্রাসায় পড়ালে ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যত অন্ধকার তাঁদেরও মাদ্রাসার প্রতি সীমাহীন দুর্বলতা  দেখা যায়। মাদ্রাসা গড়ে তোলার জন্যে তাঁরাও অকাতরে অর্থ সাহায্য করেন। একদিকে মুসলিমদের থেকে প্রাপ্ত বিশাল অর্থ ভাণ্ডার, অপরদিকে সৌদি আরব এবং মধ্য প্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে আসা অঢেল অর্থ – এই বিপুল অর্থের দৌলতে চারিদিকে  ব্যাঙের ছাতার মতো ক্রমাগত গজিয়ে উঠছে শ’য়ে শ’য়ে খারিজি মাদ্রসা। এই সব মাদ্রাসা পরিচালনা করেন মোল্লা সমাজ। তাঁরাই খারিজি সেই মাদ্রাসাগুলির সরকারি অনুমোদনের দাবিতে সোচ্চার। মোল্লা সমাজকে তুষ্ট করতে বাম সরকারও  বহু মাদ্রাসার অনুমোদন দিয়েছিলো। সে পথ ধরেই মমতা ব্যানারজী ক্ষমতায় এসে এসেই দশ হাজার মাদ্রাসার অনুমোদন দেবার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন। এক সঙ্গে এতো বিপুল সংখ্যক খারিজি মাদ্রাসার সরকারি অনুমোদনের নজির সারা বিশ্বে  নেই। এটা করে তিনি বোঝালেন যে,  মোল্লাতন্ত্রের  প্রতিনিধিদের প্রতি  বামেদের চেয়েও তাঁর দরদ  ঢের বেশী। মোল্লাতন্ত্রকে তুষ্ট করতে গিয়ে হাজার হাজার মাদ্রাসাকে সরকারী অনুমোদন দেবার ঘোষণার ফল হবে কিন্তু ভয়ঙ্কর। এর ফলে শুধু মুসলনারাই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না, ক্ষতিগ্রস্ত হবে গোটা দেশ  কেনো তা হবে সে বিষয়ে  আলোকপাত করবো  নিবন্ধের একেবারে শেষে।
ইমাম ও মুয়াজ্জিনদের ভাতা দিতে হবে এ দাবি মুসলমানরা কোনোদিনই তোলেননি, এ দাবি শুধুমাত্র  মোল্লা সমাজের। ইমাম ও মুয়াজ্জিনদের যে সমস্যা আছে তা মুসলমান সমাজের ধর্মীয় অভ্যন্তরীণ বিষয় যা সমাধান করা তাঁদের নিজেদের কর্তব্য। ওরা সংখ্যায় এতোই নগণ্য যে তাদের কিছু অর্থ প্রাপ্তির সঙ্গে মুসলিম সমাজের কোনো কল্যাণের কোনো যোগসূত্রই খুঁজে পাওয়া যাবে না। তাছাড়া আর একটি বিষয় যুক্ত রয়েছে এর সঙ্গে। তাহলো, সরকারী কোষাগার থেকে ধর্মীয় নেতাদের ভাতা দেওয়া অসাংবিধানিক কাজও বটে। তবুও এ কাজের ভার মমতা তাঁর কাঁধে তুলে নিয়েছেন যখন তাঁর সরকার পূর্ববর্তী সরকারের করে যাওয়া বিপুল ঋণের ভারে ন্যুব্জ এবং যার ফলশ্রুতিতে অনেক  জরুরী কাজ করতে তিনি পারছেন না। আর একটি বিষয় বিশেষ লক্ষ্যণীয়, তাহলো, ৩রা এপ্রিল তিনি ইমামদের ভাতা দেওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পর মাত্র ছ’দিনের মাথায় বের করে দেন  সরকারী  বিজ্ঞপ্তি।  তারপর মাত্র ৭৮ দিনের মাথায়  ২৬ শে জুন তিনি ইমাম ভাতার চেক তুলে দেন ইমামদের হাতে। এতো দ্রুততার সাথে সরকারী সিদ্ধান্ত রূপায়ণের দৃষ্টান্ত সারা বিশ্বে  সম্ভবতঃ নেই। ইমামদের হাতে ভাতা তুলে দেওয়ার পদক্ষেপকে ধন্যবাদ জানিয়ে মোল্লাতন্ত্রের প্রতিনিধিরা মমতাকে বলেন, মুয়াজ্জিনদেরও ভাতা দিতে হবে। মমতা সে দাবি তৎক্ষণাৎ মঞ্জুর করেন। এ সব ঘটনা প্রমাণ করে,  মমতা ব্যানার্জী মোল্লাতন্ত্রীদের আস্থা, সহানুভূতি, দোয়া ও দয়া পেতে কতো মরিয়া।
আরো নানাভাবে মমতা মোল্লা সমাজকে এ বার্তা দিতে যার পর নাই আকুল যে,  অন্য আর সকলের চেয়ে তিনিই তাঁদের অনেক বেশী আপনজন। যেমন তিনি প্রায়শঃই ছুটে যান মুসলিম সমাজের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে এবং মুসলিম সংগঠনগুলির মঞ্চে। গিয়ে মোল্লা-মুফতিদের মাঝে মধ্যমণি হয়ে বসেন মাথায় বোরখা টেনে দিয়ে। সেখানে মুসলিমদের সঙ্গে মোনাজাত (দোয়া) করেন, বক্তৃতা করার সময় ‘ইনশাল্লাহ’, ‘আল্লাহুয়াকবার’ ‘খোদা হাফেজ’, ‘সালেমালেকুম’ ইত্যাদি ইসলামি শব্দগুলি অর্থ না বুঝেই ভুলভাল করে উচ্চারণ করেন। রোযা  এপ্তারের (ভাঙা) অনুষ্ঠানেও গিয়ে বসে পড়েন এবং ঐরূপ আচরণ করেন যেখানে অমুসলিমদের অংশ গ্রহণ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
মাদ্রাসা শিক্ষা শুধু পশ্চাদপদ নয়,  ভয়ংকরও। কেনো তা,  সে বিষয়ে এবার একটু আলোকপাত করা যাক। মাদ্রাসা শিক্ষা শুধু পশ্চাদপদ হলে তার মাশুল গুণতে হতো শুধু মুসলমানদেরই (সেটাও কারো কাম্য হতে পারে না),  কিন্তু ব্যাপারটা কেবল তাই-ই নয়। এর মধ্যে নিহিত রয়েছে এমন এক ভয়ঙ্কর বীজ যা অঙ্কুরিত হলে তার  মাশুল দিতে হবে গোটা দেশ ও সমগ্র মানবজাতিকে। মনে রাখতে হবে মাদ্রাসা বোর্ড পরিচালিত হাই মাদ্রসার মতো মাদ্রসার সিলেবাসের মতো নিরীহ সিলেবাস নয় ঐ বোর্ডেরই অধীন সিনিয়র মাদ্রাসা এবং খারিজি মাদ্রাসার সিলেবাস। এই মাদ্রসার সিলেবাসগুলি প্রধানতঃ কোরান এবং হাদিসকেন্দ্রিক। সিনিয়র মাদ্রাসার সিলেবাসে রয়েছে নাম মাত্র আধুনিক  শিক্ষা, কিন্তু খারিজি মাদ্রসাতে তাও নেই। এসব মাদ্রসায় পড়ানো হয় কোরান, কোরানের তফসির, হাদিস ও ইসলামের ইতিহাস এবং ভাষা হিসেবে শেখানো হয় আরবি, উর্দু ও ফার্সী ভাষা। মনে হতে বিদেশী ভাষা শিখলে এবং কোরান, হাদিস ও ইসলামের ইতিহাস পড়লে ক্ষতি কি,  ইসলাম তো  শান্তির ধর্ম? না, ব্যাপারটা মোটেই অতো সহজ নয়। ইসলাম আদৌ শান্তির ধর্ম নয় এবং স্বভাবতঃই মাদ্রসায় যা শেখানো হয় তা সম্পূর্ণরূপেই শান্তি ও সম্প্রীতির পরিপন্থী। হ্যাঁ,  অবিশ্বাস্য মনে হলেও এটাই সত্যি যে হিংসা, ঘৃণা এবং বিদ্বেষপূর্ণ নীতি ও বাণীতে কোরান ও হাদিস এবং ইসলামের ইতিহাস পরিপূর্ণ। এর সপক্ষে কয়েকটি উদ্ধৃতি দেওয়া যাক। কোরান স্পষ্ট ভাষায় মুসলমানদের জানাচ্ছে যে বিধর্মীরা তাদের শত্রু এবং তারা যেন তাদের সঙ্গে ভুলেও বন্ধুত্ব না করে। যেমন কোরান বলছে, “হে মুমিনগণ! মুমিন ছাড়া কাফেরকে বন্ধুরূপে নিও না” (/১৪৪) কোরান ৩/১১৮ নং আয়াতে বিধর্মীদের বিরুদ্ধে মুসলিমদের মনে তীব্র বিদ্বেষ ও শত্রুতার মনোভাব তৈরী করার উদ্দেশ্য বলছে, হে মুমিনগণ! তোমরা মুমিন ব্যতীত  অন্য কাউকে অন্তরঙ্গ বন্ধুরূপে গ্রহণ করিও না, তারা তোমাদের অমঙ্গল সাধনে ত্রুটি করে না। তোমরা কষ্টে থাক তাতেই তাদের আনন্দ। শত্রুতাপ্রসূত বিদ্বেষ তাদের মুখেই ফুটে ওঠে আর যা কিছু তাদের মনের মধ্যে লুকিয়ে আছে তা আরও অনেকগুণ বেশী জঘন্য।  এরূপ ভয়ঙ্কর বিদ্বেষপূর্ণ আরো বহু আয়াত আছে কোরানে। প্রশ্ন হলো, মুসলমানরা কি এই আদেশটি উপেক্ষা করতে পারেন? না, একজন মুসলমান নিজের বিবেক থেকে সে কীভাবে চলবে, কার সঙ্গে কীরূপ সম্পর্ক রাখবে বা না রাখবে তা স্থির করতে পারেন না। কোরান এ প্রসঙ্গে ৯/২৩ নং আয়াতে বলছে, “হে মুমিনগণ! তোমাদের পিতা ও ভাই ঈমান বাদে কুফরীকে ভালোবাসিলে তাহাদেরকে অন্তরঙ্গ বানাইও না; যাহারা বানাই তাহারাই যালিম।  কোরান তো ইহুদি ও খৃস্টানদের নাম ধরে বলেছে যে তারা মুসলমানদের শত্রু/৫১ নং আয়াতে কোরান বলছে, “হে বিশ্বাসীগণ!  ইহুদি ও খ্রিস্টানগণকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না, তারা পরষ্পরের বন্ধু। তোমাদের মধ্যে কেউ তাদের বন্ধুরূপে গ্রহণ করলে, সে তাদেরই একজন হবে। আল্লাহ্‌ অত্যাচারী সম্প্রদায়কে সৎপথে পরিচালিত করেন না। হাদিসেও এরূপ আদেশ ও বাণী প্রচুর রয়েছে। এগুলোই পড়ানো হয়, শেখানো হয় এবং  মাদ্রাসা পড়ুয়াদের  মনে বিধর্মীদের বিরুদ্ধে চির বিদ্বেষ ও  বৈরীতা সৃষ্টি করা হয় যা অন্য ধর্মের মানুষদের সঙ্গে সম্প্রীতি ও সহবস্থানের পথকে রুদ্ধ করে।
জিহাদ মাদ্রাসা সিলেবাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। জিহাদ ইসলামের প্রতিষ্ঠা ও বিস্তারের ক্ষেত্রে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। জিহাদ মানে বিধর্মীদের সাথে মুসলমানদের সশস্ত্র যুদ্ধ।  জিহাদ সম্পর্কে কোরান কী বলছে তার কয়েকটা নমুনা দেওয়া যাক। “যেখানেই পাবে তাদের হত্যা করবে। যেখান থেকে তোমাদের বহিষ্কার করেছে তোমরা তাদের সেখান থেকে বহিষ্কার করবে।” (২/১৯১) দাবি করা হয় যে ইসলাম যে যুদ্ধের কথা বলেছে তা আক্রমণাত্মক নয়, আত্মরক্ষামূলক। না, তা নয়। যারা আল্লাহ্‌র প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেনি তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করার স্পষ্ট নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ৯/২৯ নং আয়াতে। সেখানে বলা হয়েছে,  যারা আল্লাহ পাক ও পরকালে বিশ্বাস করে না, এবং আল্লাহ ও তাঁর রসুল যা        বৈধ করেছেন, তা বৈধ করে না। এবং যাদের গ্রন্থ দেওয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে যারা সত্য ধর্ম স্বীকার করে না, তোমরা তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করো যে পর্যন্ত তারা অধীনতা স্বীকার করে স্বহস্তে জিজিয়া না দান করে।  জিহাদি আদেশ মুসলমানদের জন্যে আজো বহাল তাও স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে কোরানে। দেখুন কোরান কী বলছে ২/১৯৩ নং আয়াতে – “তোমরা তাদের সাথে জিহাদ করতে থাকবে যে পর্যন্ত ...  আল্লাহর ধর্ম প্রতিষ্ঠ না হয়।” এ রকম আরো অসংখ্য আয়াত আছে। জিহাদ করার জন্যে মুসলমানদের একদিকে এ কথা বলে ব্যাপক  উৎসাহ দেওয়া হয়েছে যে জিহাদকারীরা সবাই জান্নাতে (স্বর্গে) যাবে। আবার জিহাদে যেতে অনিচ্ছুকদের এ কথা বলে ভয় দেখানো হয়েছে যারা জিহাদ না করেই মারা যাবে তারা  দোজখে (নরক) যাবে। এ সবই পাঠ দেওয়া হয় শুধু তাই নয়, মাদ্রসায় সশস্ত্র জিহাদের প্রশিক্ষণও  জিহাদে নামিয়ে দেওয়া হয়। মাদ্রাসা তাই শুধু কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয়, মাদ্রাসা হলো জিহাদিদের আঁতুর ঘরও বটে। তাই তো  যারা জিহাদে নেতৃত্ব করছে বা সামনে থেকে জিহাদ করছে তাদের প্রায় সবাই খারিজি মাদ্রাসার ছাত্র যাদের মধ্যে রয়েছে লাদেন, মোল্লা ওমর, কাসভ প্রমুখ ত্রাস সৃষ্টিকারী জিহাদি।
আমাদের দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি হলো সংকীর্ণ দলীয় স্বার্থে মোল্লা-মুফতি-ইমামদের তোয়াজ ও তুষ্ট করা। এই ধর্মীয় নেতারা যা যা দাবি করে শাসক দল ও সরকার সে মতোই কাজ করে। আগে কংগ্রেস ও সিপিএম করেছে এখন মমতা করছেন । মমতা করছেন আরো জঘন্যভাবে ও আরো নগ্নভাবে। এর ফলে মুসলমানরা আরো পিছিয়ে পড়বেন এবং অপরদিকে মুসলিম মৌলবাদীদের হাত আরো বেশী বেশী করে শক্তিশালি হবে। ওদের হাত যত শক্তিশালী হবে ততো জাতীয় সংহতি, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, ধর্মনিরপেক্ষতা ও গণতন্ত্র বিপন্ন হবে।

(এ নিবন্ধটি লেখা হয় মমতা ব্যানার্জীর সরকারে আসার ১৫ মাসের মধ্যে অর্থাৎ ২০১২ সালের আগষ্ট মাসের মাঝামাঝি। দৈনিক স্টেটসম্যান এটা ছাপে ঐ বছরেই ২৩শে আগষ্ট। সেই লেখাটাই একটি পরিমার্জিত করা [আপডেট নয়]  হয়েছে। লেখাটি এখনো অর্থাৎ ২০১৬ সালের এই মার্চেও সম্পূর্ণ প্রাসঙ্গিক)






Saturday, February 27, 2016

ইসলামের চোখে টাকা-পয়সা, সোনা-রূপা-হীরা প্রভৃতি ধনদৌলতের মতো নারীও গণিমতের মাল



কোরানের চোখে নারী যে ভোগ্যবস্তু তার প্রমাণ ‘গণিমত’-এর ইসলামি তত্ত্বেও নিহিত আছে। এই তত্ত্বের প্রবক্তা স্বয়ং মুহাম্মদ। বিধর্মীদের বিরুদ্ধে জিহাদে (পবিত্র যুদ্ধ!) মুসলিমরা বিজয়ী হলে তাদের সমস্ত স্থাবর সম্পত্তি লুট করে নিয়ে আসতো, লুট করা জিনিষপত্রের মধ্যে নারী, পুরুষ ও শিশুরাও থাকতো। মুসলিমরা  জিহাদে  বিধর্মীদের  নির্মমভাবে ব্যাপকহারে হত্যা করতো। বিজিত বিধর্মীদের মধ্যে যারা বেঁচে থাকতো এবং আত্মসমর্পণ করতো তাদের বন্দি করে নিয়ে আসতো। বিধর্মীদের উপর আক্রমণ করা, হত্যা করা, তাদের সর্বস্ব লুট করা, ও বন্দি করে নিয়ে আসার দস্যুসুলভ হিংস্র ও  পৈশাচিক কর্মকাণ্ড শুরু হয়েছিলো মুহাম্মদের নেতৃত্বেই।  লুটের এই  সব সামগ্রী কোরান বা ইসলামের পরিভাষায় হলো  গণিমতের মাল। লুটের   সমস্ত  সামগ্রী (লুটের মাল বলতে লজ্জা পায় বলে মুসলিম বুদ্ধিজীবী ও ধর্মগুরুগণ এখন লুটের মালকে বলেন যুদ্ধলব্ধ ধন) বণ্টন করা হতো যারা আক্রমণে (জিহাদে) অংশ নিতো তাদের মধ্যেবন্দি  বিধর্মীদের ক্রীতদাস বানিয়ে নিজেদের অধীনে  রাখাকে ইসলাম বৈধতা দিয়েছিলো  জিহাদে অংশ গ্রহণকারী মুসলমানদের মধ্যে। এমনকি  বণ্টন করা হতো নারী, পুরুষ ও শিশুদেরও, এবং  তারপর তাদের ক্রীতদাস করে রাখা হতো।  ক্রীতদাস ও ক্রীতদাসীদের বেগার খাটানো, বিক্রি করা,  এবং  যৌনদাসী রূপে যথেচ্ছ  ভোগ করাকেও ইসলাম  বৈধতা দিয়েছিলো আধুনিক যুগে ইসলামে এটা রহিত হয়ে গেছে এমনটা  ভাববার অবকাশ নেই। কারণ, কোরানের আইন তথা আল্লাহর আইনে পরিবর্তন আনার  অধিকার কারোর নেই । মুহাম্মদই  এ কথা বলে গিয়েছেন যার প্রমাণ রয়েছে কোরানেএ প্রসঙ্গে কোরানে বলা হয়েছে, “যখন আমার সুস্পষ্ট আয়াত (নিদর্শনসমূহ) তাদের নিকট পাঠ করা হয়, তখন  যারা আমার সাক্ষাতের আশা করে না, তারা বলে, - এটি ব্যতীত অন্য কোরয়ান আনো অথবা একে বদলাও । তুমি বলো আমার পক্ষে এটা বদলানো সম্ভব নয় । আমার প্রতি যা ওহি (প্রত্যাদেশ) হয় – আমি তাই-ই অনুসরণ করি, যদি আমি আমার প্রতিপালকের অবাধ্যতা করি, নিশ্চয়   মহা দিবসে আমার শাস্তির আশংকা আছে।”  (দ্রঃ- সুরা ইউনুছ, ১০/১৫, অনুবাদ – ড.অসমান গণি)   ‘আইএস’ – এর জঙ্গীরা সিরিয়া ও ইরাকে এবং ‘বোকো হারাম’  নাইজিরিয়ায় বিধর্মী ও শিয়া সম্প্রদায়ের নারীদের অপহরণ বন্দি করছে এবং তাদের যৌনদাসী রূপে যথেচ্ছ  ভোগ করছে , অথবা  বিক্রি  করছে । ‘আইএস’  জঙ্গীরা কীভাবে বন্দি করা নারীদের ধর্মের নামে ভোগ (ধর্ষণ) করছে তার মর্মন্তুদ আর্তনাদ শুনতে পাচ্ছি তাদের ডেরা থেকে কোনোক্রমে পালিয়ে আসা বা মুক্তি পাওয়া  নারীদের মুখ থেকে।  এ রকম একটি বীভৎস অভিজ্ঞতার কথা শুনিয়েছেন ইরাকের একজন ইয়াজিদি (ইয়াজিদিরা অমুসলিম) রমণী। সেই যুবতী  নারী সন্ত্রাসীদের হাতে অত্যাচারিত হওয়ার  যা বর্ণনা দিয়েছেন তার কয়েকটি কথা এ রকম -  ৩০ বারের বেশী ধর্ষতা হয়েছি। খাওয়ার সময় পাই না, বাথরুমে যাওয়ার সময় নেই।  মেয়েটি সব শেষে বলেছেন তাঁরা আর বাঁচতে চাই না।  মৃত্যু কামনা করে  তাই কাতর স্বরে সাংবাদিকদের অনুরোধ করে  বলেছেন, “দয়া করে মার্কিন বিমানগুলোকে বলুন, তারা যেন আমাদের এই ঘাঁটিতে বোমা মারে, আমরা মরতে চাই।” এই  নির্যাতিতা নারীদের  অপরাধ কী? অপরাধ হলো  তাঁরা বিধর্মী তথা  ইয়াজীদি সম্প্রাদায়ের মেয়ে। শুধু ইয়াজিদি নারীরাই নয়, এভাবে  য়ে শয়ে  খৃস্টান ও ইয়াহুদি, এবং এমনকি  শিয়া সম্প্রদায়ের মুসলিম  নারী ও  শিশুকন্যাদের বন্দি করে তাঁদের উপর অনুরূপ  অত্যাচার চালানো হচ্ছে।”  (সূত্রঃ আনন্দবাজার পত্রিকা, ২৯/১০/২০১৪, পুরো সংবাদটি পড়তে এখানে ক্লিক করুন -  http://www.anandabazar.com/international/%E0%A6%86%E0%A6%87%E0%A6%8F%E0%A6%B8-%E0%A6%AD-%E0%A6%AE-%E0%A6%AE-%E0%A6%A4-%E0%A6%AF-%E0%A6%95-%E0%A6%AE%E0%A6%A8-%E0%A6%A7%E0%A6%B0-%E0%A6%B7-%E0%A6%A4-%E0%A6%B0- %E0%A6%95-%E0%A6%89-%E0%A6%95-%E0%A6%89-%E0%A6%B8-%E0%A6%96-1.81850 )
একটু আগেই উল্লেখ করেছি যে স্বয়ং মুহাম্মদই আল্লাহর নামে আরবের মাটিতে  এই বর্বর প্রথার প্রবর্তন করেছিলেন। গণিমতের মাল বণ্টনের সময় তিনি একাই নিতেন পাঁচ ভাগের এক ভাগ, চার ভাগ  বণ্টন করতেন জিহাদে অংশ নেয়া বাকি মুসলিম দস্যুদেরদের মধ্যে। খুব সম্ভবতঃ  ৬২৪ খৃস্টাব্দে বদর যুদ্ধে এই প্রথা প্রথম প্রবর্তন করেন তিনি। সেই যুদ্ধে মক্কার  কোরেশদের পরাজিত করে যে সব সামগ্রী লুট করে নিয়ে এসেছিলেন তাদের মধ্যে  ৭০ জন বন্দিও ছিলো।   লুণ্ঠিত এ সব মাল  কী রূপে বন্টন করা হবে  এ প্রশ্ন উঠলে  মুহাম্মদ তাঁর শিষ্যদের আল্লাহ্‌র দোহাই দিয়ে বলেছিলেন  যে,  লুটের সমস্ত সামগ্রীর মালিক  আল্লাহ এবং তার রসুল তথা   মুহাম্মদ।  কোরানের সেই ভাষ্যটি হলো – “তারা তোমাকে (যুদ্ধলব্ধ) অতিরিক্ত সম্পদ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করছে, তুমি বলো – যুদ্ধলব্ধ দ্রব্যসম্ভার আল্লাহ ও তার  রাসুলের, অতএব  আল্লাহকে ভয় করো  এবং  তোমাদেরনিজেদের মধ্যে  সদ্ভাব স্থাপন করো, এবং আল্লাহ্‌ ও তার রাসুলের স্বীকার করো যদি তোমরা বিশ্বাসী হও।”  (সুরা আনফাল, ৮/১, অনুবাদ – ড.ওসমান গণি)  মুহাম্মদের এ কথা শুনে তাঁর শিষ্যদের একাংশ তীব্র আপত্তি ও প্রতিবাদ জানায়। পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে বলে মুহাম্মদ আর একটি ওহির অবতারণা করেন। সেটা হলো – “এবং আরো জেনে রেখো যে – যুদ্ধে যা তোমরা লাভ করো, তার এক-পঞ্চমাংশ আল্লাহ্‌র ও রসুলের এবং রসুলের আত্মীয়-স্বজন ও পিতৃহীন ইয়াতীম ও দরিদ্র এবং পথিকদের জন্য, যদি তোমরা আল্লাহ্‌র প্রতি বিশ্বাস করো এবং যেদিন উভয় দল সম্মিলিত হয়েছিলো, সেই মীমাংসার দিবসে আমি স্বীয় দাসের উপর যা অবতীর্ণ করেছিলাম, তার প্রতি বিশ্বাসী হও । ” (৮/৪১,অনুবাদ – ড.ওসমান গণি)    মুহাম্মদ এই  কথাগুলি আবৃত্তি  করার পর তাঁর  শিষ্যগণ তথা জিহাদিগণ শান্ত হয় এবং সেভাবেই লুটের সামগ্রীগুলো বণ্টন করা হয় । প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য যে,  পরের ধন-সম্পদ লুট করা মদিনার মানুষদের সংস্কৃতি ছিলো না। এমনকি মক্কার  যাযাবর প্রকৃতির অধিবাসীগণের মধ্যে  মরুপথে বাণিজ্য করতে যাওয়া বণিকদের কাফেলার উপর হামলা করা ও লুট করার রেওয়াজ ছিলো ঠিকই, কিন্তু কোনো মহল্লার উপর  অতর্কিতে আক্রমণ করে  তাদের সর্বস্ব লুট করতো এবং তাদের বন্দি করে নিয়ে এসে ক্রীতদাস বানাতো এমনটা বিশেষ শোনা যায় না।   ফলে মুহাম্মদের শিষ্যদের অনেকের  মধ্যেই পরাজিত ও বন্দিদের ক্রীতদাস বানানোর মতো অমানবিক কুৎসিত আদেশটি মন থেকে মেনে নিতে আপত্তি ছিলো । আপত্তি ছিলো পরনারীকে স্ত্রীর ন্যায় ভোগ করায়। এমনকি লুটের মালের ভাগ নিতেও আপত্তি ছিলো অনেকের । ডাকাতি করে নিয়ে আসা লুটের মালের ভাগ নিতেও আপত্তি ছিলো অনেকের।  বিবেকের তীব্র  দংশন অনুভব করছিলেন  তাঁরা । তাঁদের এই বিবেকবোধ এবং  উচ্চ মূল্যবোধগুলিকে মুহাম্মদ আল্লাহর ওহির দোহাই দিয়ে ধ্বংস করে দিতে সক্ষম হয়েছিলেন  যাঁরা লুটের মাল নিতে, কিংবা পরনারীকে ভোগ করতে আপত্তি জানিয়েছিলেন বা  দ্বিধাগ্রস্ত ছিলেন তাঁদেরকে মুহাম্মদ  বলেছিলেন যে তোমাদের জন্যে আল্লাহ্‌ এগুলো বৈধ করেছেন, তোমরা নির্ভয়ে ও নিঃশঙ্কোচে এ সব ভোগ করবে।   কোরানে বর্ণিত সেই কুৎসিৎ আদেশনামাটি হলো, - “যুদ্ধে যা তোমরা লাভ করেছ তা বৈধ ও উত্তম ভেবে ভোগ করো, আল্লাহ্‌কে ভয় করো, আল্লাহ্‌ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু ” (সুরা  আনফাল। ৮/৬৯,  অনুবাদ – ড.ওসমান গণি)    বিধর্মী ক্রীতদাসীরা মুসলমানদের কাছে  ভোগের জন্যে যে হালাল (বৈধ)  সে কথা কোরানে  অসংখ্যবার বলা হয়েছে। কোরান বলেছে পুরুষদের,  তোমরা স্বাধীন মুসলিম নারীদের বিয়ে করতে পারো দু’ই, তিন বা চারটি, কিন্তু  তোমাদের অধিকারে  যতো সংখ্যক  দাসী আছে  তাদেরকে  তোমরা  অবাধে ভোগ করতে পারবে, সেক্ষেত্রে সংখ্যার কোনো সীমা নেই।   কোরানের সেই আয়াত টি হলো (হে নবী! আমি তোমার জন্য বৈধ করেছি তোমার স্ত্রীগণকে যাদের তুমি দেনমোহর দান করেছ, এবং বৈধ করেছি – তোমার অধিকারভুক্ত দাসীগণকে, যাদের আমি দান করেছি, এবং বিবাহের জন্য বৈধ করেছি, তোমার চাচাতো ভগ্নি ও ফুফুতো ভগ্নি, মামাতো ভগ্নি ও খালাতো ভগ্নি যারা তোমার জন্য দেশ ত্যাগ করেছে, এবং কোনো বিশ্বাসী নারী নবীর নিকট নিবেদন করলে এবং নবী তাকে বিয়ে করতে চাইলে - সেও বৈধ, এটা বিশেষ করে তোমার জন্য, অন্য বিশ্বাসিদের জন্য নয়, যাতে তোমার অসুবিধা না হয়।” (৩৩/৫০, অনুবাদ – ড. ওসমান গণি)  এটা বিশেষ লক্ষ্যণীয় যে,  আয়াতে স্পষ্ট ঘোষণা দেওয়া  হয়েছে, ‘বৈধ করেছি – তোমার অধিকারভুক্ত দাসীগণকে যাদের আমি দান করেছি’অর্থাৎ দাসীর সংখ্যা দু’/চারশো বা দু’/চার হাজার যাই হোক না কেনো সবকেই ভোগ করা বৈধ। ইসলামের এই বিধি অনুসারেই খলিফারা হাজার হাজার দাসী বা উপপত্নী রাখতেন। একটি উদাহরণ দেয়া যাক – “অপর এক বর্ণনা থেকে পাওয়া যায়, আল-মুতাওয়াক্কিলের  চার হাজার উপপত্নী ছিল । তারা প্রত্যেকেই ছিল তাঁর শয্যাসঙ্গিনী ।  একবার তার এক সেনা প্রধানের কাছ থেকে উপহারস্বরুপ ২০০ জন ক্রীতদাসী লাভ করেছিলেন ।  রাজ্যপাল ও সেনাপ্রধানরা নিয়মমাফিক খলিফা অথবা উজিরদের কাছে অন্যান্য উপহারের সঙ্গে নারীও পাঠাতেন ।  সেই উপঢৌকন প্রেরণে ব্যর্থ হলে তাকে বিদ্রোহী বলে গণ্য করা হতউপহার হিসেবে প্রাপ্ত বিশ্বস্ত দাসদের নিয়ে আল-মামুন একটি পরিকল্পনা রচনা করেছিলেন। তিনি তাদেরকে সন্দেহজনক ক্ষেত্রে গুপ্তচর হিসেবে অথবা প্রয়োজনমাফিক হইচই সৃষ্টি করার কাজে নিয়োজিত করতেন।” (সূত্রঃ আরব জাতির ইতিহাস, ফিলিপ কে হিট্টি, পৃ – ৩২৬ )  উপরের দেওয়া তথ্যটি ফিলিপ কে হিট্টির মস্তিষ্ক প্রসূত নয় । তিনি যে যে সূত্র থেকে এই তথ্যগুলি পেয়েছেন সেগুলি হলো “নুওয়াইরি, নিহায়া, ৪ খন্ড, ৯২ পৃঃ  এবং মাসঊদী, ৭ খন্ড, পৃঃ ২৮১” 
প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য যে, ইরাক ও সিরিয়ায় জিহাদে নিযুক্ত  মুসলিমদের মধ্যে বন্দি নারীদের তথা যৌনদাসীদের  ভোগ করা নিয়ে প্রবল বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে যা আইএস-এর খলিফা আবুবকর  আল-বাগদাদী একেবারেই  নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না মুহাম্মদের সময়ে তিনি  নিজে নারী বন্দি-সহ  সমস্ত  লুণ্ঠিত দ্রব্য বণ্টন করতেন। তাঁর পরে সে কাজের দায়িত্ব পালন করতেন ইসলামি রাষ্ট্রের খলিফাগণ।  মুহাম্মদ এবং তাঁর পর পরই যাঁরা খলিফা হয়েছিলেন তাঁদের যে কর্তৃত্ব, আধিপত্য ও নিয়ন্ত্রণ ছিল ইসলামি খেলাফত (রাষ্ট্র) ও  জিহাদী মুসলিমদের উপর  সে কর্তৃত্ব, আধিপত্য ও নিয়ন্ত্রণ নেই  আবুবকর আল-বাগদাদীর। ফলে  ইসলামি স্টেট (আইএস) পরিচালিত ইসলামি খেলাফতে বিশৃঙ্খলা ও  সংকট তৈরী হয়েছে। এই সংকট সমাধানের জন্যে কীভাবে শরিয়তি আইন মেনে যৌনদাসীদের ভোগ (ধর্ষণ) করতে হবে তার জন্যে আইএস সম্প্রতি একটা  ফতোয়া (এখানে ফতোয়া মানে বিধিমালা)  জারি  করেছে।  ২০১৪ সালে এ ফতোয়াটি জারি করা হলেও আইএস-এর ‘কমিটি ফর রিসার্চ এণ্ড ফতোয়াজ’  ফতোয়াটি  ঘোষণা করেছে ২০১৫ সালের ২৯শে জানুয়ারী   এই ফতোয়ায় আইএস-এর  ধর্মতাত্ত্বিকগণ রীতিমতো বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছে কেনো বিধর্মী নারীদের যৌনদাসী করা ন্যায়সঙ্গত এবং তাদের কাকে, কখন ও কীভাবে ধর্ষণ করা বৈধ।  আইএস তার ৬৪ নং এই ফতোয়ায় ইসলামিক স্টেটের মধ্যে উদ্ভূত সংকটের কথা স্বীকার করে বলেছে যে, “আমাদের কিছু ভাই যৌনদাসীদের ব্যবহার করার আইন ভাঙছে । শরিয়তে এই বেআইনি কার্যকলাপের কোনো জায়গা নেই । তবে, এই বিষয়ক আইন নিয়ে বহু বছর আলোচনা হয়নি।”  তারপরই উক্ত ফতোয়ায়  বন্দি করা নারীদের কীভাবে ভোগ বা ধর্ষণ করলে তা হালাল (ইসলাম মতে বৈধ/আইন সিদ্ধ) হবে সে বিষয়ে পনেরোটি বিধি দেওয়া হয়েছেতার মধ্যে দু’টি বিধি হলো এ রকম – এক). বাবা ও ছেলে একই যৌনদাসীকে ভোগ করতে পারবে না। দুই). কোনো একজন মালিকের অধীনে মা ও মেয়ে  দু’জনই থাকলে তাদের একজনকে বেছে নিতে হবে । (সূত্রঃ
http://www.anandabazar.com/international/islamic-state-issues-fatwa-on-how-to-rape-a-woman-slave-1.273529)  এই ফতোয়াটি প্রকাশ্যে আসার পর স্বাভাবিকভাবেই বিশ্বজুড়ে তীব্র  আলোড়ন  সৃষ্টি হয়েছে।  মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ১২০ জন মুসলিম ধর্মগুরু  এটাকে অনৈসলামিক আখ্যা দিয়েছেন এবং অবিলম্বে নারীদের উপর এই জঘন্য পাশবিক অত্যাচার বন্ধ করার জন্যে আইএসের খলিফা আবুবকর আল-বাগদাদিকে চিঠি দিয়েছেন। কিন্তু বলা বাহুল্য যে আল-বাগদাদি এই চিঠিটাকে  মুনাফেকদের পাঠানো একটি ফালতু চিঠি বলে ডাস্টবিনে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে। ইসলামের পরিভাষায় তাদেরকে মুনাফেক বলে যারা ইসলামের কিছু অংশকে বিশ্বাস করে আর কিছু অংশকে করে না। যারা জিহাদের বিরোধিতা করে তারা তাই আইএসের কাছে মুনাফেক।  তাছাড়া আইএস এই চিঠিটার বক্তব্যকে গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজন মনে করেনি কারণ তারা জানে যে তাদের উক্ত ফতোয়াটি কোরানের  আলোকে রচনা করা হয়েছে।  কোন কোন নারী পুরুষের বিয়ের পাত্রী হিসেবে
বৈধ এবং কোন কোন নারি অবৈধ তা কোরানে স্পষ্ট করে বলে দেওয়া আছে।   ৩৩/৫০ নং আয়াতে (যা উপরে উদ্ধৃত করা হয়েছে) বর্ণনা করা হয়েছে  বৈধ নারীর তালিকা এবং অবৈধ নারীর  তালিকা রয়েছে  ৪/২৩ নং আয়াতে। এই আয়াতের কথাগুলি হলো, -“তোমাদের জন্য অবৈধ করা হয়েছে – তোমাদের মাতৃগণ, তোমাদের কন্যাগণ, তোমাদের ভগ্নিগণ,  তোমাদের ফুফুগণ, তোমাদের খালাগণ, তোমাদের ভ্রাতৃকন্যাগণ, তোমাদের ভগ্নিকন্যাগণ, তোমাদের সেই মাতৃগণ যারা তোমাদেরকে স্তন্য দান করেছে, তোমাদের দুগ্ধ ভগ্নিগণ,  তোমাদের স্ত্রীদের মাতৃগণ, তোমরা যাদের অভ্যন্তরে উপনীত হয়েছে সেই স্ত্রীদের যে সকল কন্যা তোমাদের ক্রোড়ে অবস্থিতা, কিন্তু তোমরা যদি তাদের অভ্যন্তরে উপনীত না হয়ে থাক তবে তোমাদের কোনো অপরাধ নেই; এবং যারা তোমাদের ঔরসজাত সে পুরুষদের পত্নিগণ, এবং যা অতীতে হয়ে গেছে তদ্ব্যতীত দু’ ভগ্নীকে কে একত্রিত করা।” এই আয়াত থেকে এটা স্পষ্ট যে,  মা ও মেয়েকে,  দুই সহদোর বোনকে  এবং  পুত্রবধূকে বিয়ে করা যাবে না। আইএস কোরানের এই বিধি মেনেই যৌনদাসীদের  ভোগ (ধর্ষণ)  করার ফতোয়া (বিধি-নিষেধ) প্রণয়ন করেছে। সুতরাং এ কথা বলা বাহুল্য যে, তাদের উক্ত ফতোয়াটি মোটেই  অনৈসলামিক নয়।      
 


           

বাংলাদেশের গণঅভ্যুত্থানে ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাইনি – পাঁচ

  দ্বিতীয় অধ্যায় শেখ হাসিনা ও শেখ মুজিবের প্রতি তীব্র গণরোষের নেপথ্যে ২০২৪ এর জুলাই অভ্যুত্থানের সফল পরিসমাপ্তি ঘটে ৩৬ দিন পর (৫ই ...