Friday, February 20, 2015

মুহাম্মদ তাঁর ২য় স্ত্রী সওদাকে যে কারণে তালাক দিয়েছিলেন তা ক্ষমার অযোগ্য



মুহাম্মদ তার ২য় স্ত্রী সওদাকে  তালাক দিয়েছিলেন এক সময় । সওদা তখন মুহাম্মদকে কান্নাকাটি করে অনুরোধ করে বলেছিলেন তাকে তালাক না দিতে মুহাম্মদ তার জবাবে বলেন যে  আজীবন তাঁকে স্ত্রীর  মর্যাদা দিতে তিনি সম্মত আছেন, তবে তার জন্যে একটা শর্ত মানতে হবে ।  শর্তটা ছিলো - সওদাকে   মুহাম্মদের সঙ্গে শয্যা ভাগ করে নেওয়ার অধিকার ছাড়তে হবে এবং   মুহাম্মদের সঙ্গে দিন রাত্রি যাপনের  তাঁর  বরাদ্দ পালা  আয়েষাকে ছেড়ে দিতে হবে । এই শর্তে সওদা সম্মতি প্রদান করতে বিলম্ব করেন নি,  এই ভয়ে যে পাছে মুহাম্মদ তাঁকে  স্ত্রী হিসেবে ফিরিয়ে নিতে অস্বীকার করে বসেনসওদা   শর্ত মেনে নেওয়ার পর  মুহাম্মদ  তালাক প্রত্যাহার করে নিয়ে  তাঁকে স্ত্রী হিসেবে ফিরিয়ে নেন, কিন্তু তারপর আর কোনোদিন তিনি সওদার ঘরে যান নি  এবং   জীবনের বাকী দিনগুলিতে তাঁকে  একবার কাছে ঘেঁষতে দেন নি      তালাক নাকি সবচেয়ে নিকৃষ্ট বৈধ  কাজ এবং আল্লাহ  এই বৈধ কাজটি বিশেষ পরিস্থিতি  উপায়ন্তর ব্যতীত প্রয়োগ না করতেই বলেছেন  তা যদি সত্যি হয় তবে স্বয়ং  মুহাম্মদ  এমন নিকৃষ্ট কাজটি কেন করেছিলেন সওদার বেলায় ? সওদা কি কোনো গুরুতর অপরাধ করেছিলেন যা নবীর মান-মর্যাদাকে ধুলিসাৎ করেছিলো ? না কি নবীর সঙ্গে সওদা ক্রমাগত এরূপ রূঢ় আচরণ করতেন  যা নবীর জীবনকে দুঃসহ করে তুলেছিলো ?   না,  এমন কোনো ঘটনার উল্লেখ কোথাও পাওয়া যায় না মুসলিম ঐতিহাসিকগণ কিংবা মুসলিম সমাজের ধর্মীয় পন্ডিত নেতৃবৃন্দও সওদার বিরুদ্ধে সেরূপ কোনো অভিযোগ আনেন নি বরং তাঁরা  সওদার ভূয়সী প্রশংসাই করেছেন খাদিজার মৃত্যুর পর সওদা  মুহাম্মদকে যেভাবে তাঁর ধর্ম প্রচারের কাজে অত্যন্ত নিষ্ঠা সহকারে ও নিরলসভাবে সর্বপ্রকারের সহযোগিতা করেছিলেন তার প্রশংসাই  তাঁরা শতমুখে করেছেন কীরূপ প্রশংসা তা শোনা যাক তাঁদের কলমেই । সওদা সম্পর্কে বাংলাদেশের একজন লেখক লিখেছেন – “তাঁর অতিথিপরায়ণতা ও দানশীলতার জন্য তিনি চিরস্মরণীয়া হয়ে রয়েছেন । স্নেহ ও মমত্ববোধে তাঁর অন্তর ছিল ভরপুর । এ জন্য তিনি উম্মে কুলসুম ও ফাতেমার মাঝে বেদনার সামান্য আঁচড়ও লাগতে দেন নি । মাতৃহারা কন্যাদ্বয়কে তিনি স্বহস্তে আদর সোহাগ করতেন এবং তাদের মুখে হাসি ফুটিয়ে তোলার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাতেন । তাঁর সরলতা ও অভিলাষহীন চরিত্র রাসূলুল্লাহ [সাঃ]-কে প্রকৃতই বিমুগ্ধ করেছিল ।  হযরত সওদার [রাঃ] অন্তর ছিলো আল্লাহ ও রাসূলুল্লাহর [সাঃ]  প্রেমে বিভোর ।
হযরত সওদার [রাঃ] দায়িত্ব ও কর্তব্য ছিলো সুদূর প্রসারি । একদিকে হযরত রাসূলুল্লাহ [সাঃ] – এর দুঃখ কষ্ট  দূর করা, তার চলার পথকে সহজ ও সুগম করে তোলা, অপরদিকে বালিকা উম্মে কুলসুম ও ফাতেমার সুষ্ঠ পরিচর্যা করা । শুধু তাই নয়, অপ্রাপ্ত বয়স্কা সপত্নী বিবি আয়েশার [রাঃ] জীবনের বিকাশের পথ রচনা করা । যদি তিনি এই দায়িত্ব ও কর্তব্যটুকু পালন না করতেন তা’হলে  ইসলামের ইতিহাসের রূপরেখা অন্য রকম হতে বাধ্য ছিলো ।” [দ্রঃ মহানবী(সঃ) এঁর বিবাহ, মহম্মদ সাদাত আলি, মল্লিক ব্রাদার্স, কলকাতা, পৃ – ৩৪,৩৫]  সকলেই একবাক্যে স্বীকার করেছেন যে সওদা মুহাম্মদকে খাদিজার অভাব বুঝতে দেন নি তাহলে হেন গুণবতী স্ত্রী যিনি খাদিজার মৃত্যুর পর মনপ্রাণ সঁপে এবং অক্লান্ত সেবা পরিশ্রম দিয়ে মুহাম্মদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন তাঁকে  মুহাম্মদ তালাক দিয়েছিলেন কেন ? এর কারণটি কোনো মুসলিম ঐতিহাসিক বা ইসলামি পন্ডিত ব্যক্তিগণ কোথাও বাখ্যা বা আলোচনা করেন নি   করেন নি, কারণ  তা  ব্যক্ত করা বা উন্মোচন করা  মুসলমানদের কাছে খুবই অস্বস্তিকর, বিব্রতকর লজ্জাকর যে কারণে মুহাম্মদ সওদাকে তালাক দিয়েছিলেন তার একমাত্র কারণটি হলো সওদার সঙ্গে মহাম্মদ আর সহবাস করতে  চাইছিলেন না সেটা এজন্যে নয় যে সওদা তখন  বিগত-যৌবনা দেওয়ার হয়ে গিয়েছিলেন এবং সওদার আর মুহাম্মদকে কিছু ছিলো না তবুও মুহাম্মদ সওদাকে বিদায় করে দিতে চেয়েছিলেন জন্যে যে তখন ইতিমধ্যেই  তাঁ হারেমে একাধিক নারী এসে গিয়েছিলো যারা সওদার চেয়ে বয়সে অনেক ছোটো দেখতে অধিক সুন্দরী কম বয়সী অধিক সুন্দরী স্ত্রীদের ছেড়ে  সওদার সঙ্গে সময় বা রাত কাটাতে  তাঁ খুবই অসুবিধা হচ্ছিল, তাই  তিনি   তাঁর প্রতি ক্রমশঃ বিরক্ত হয়ে  উঠেছিলেন সেই বিরক্তিই ধীরে ধীরে শত্রুতা ও নিষ্ঠুরতাইয় পর্যবসিত হয়েছিলো । তারই ফলশ্রুতিতে মুহাম্মদ শেষ অবধি সওদাকে তালাক দেওয়ার মতো কঠিন অমানবিক সিদ্ধান্ত  নিতে দ্বিধা করেন নি  সওদার শরীরে মুহাম্মদ আর  তৃপ্ত হতে পারছিলেন না বলেই সওদাকে তালাক দিয়েছিলেন   মুহাম্মদ যে সওদাকে দূরে সরিয়ে দিয়েছিলেন এবং তাঁর সঙ্গে যাপন করার  বরাদ্দ সময়টা আয়েষার কাছেই  যাপন করতেন তা  কোনো  কল্পিত ভিত্তিহীন অভিযোগ নয় মুহাম্মদ কৃত এই অতি কুৎসিত, অমানবিক ও নিন্দনীয় ঘটনাটি যে সত্যি কোরানের  তফসীরে তার প্রমাণ রয়েছে কোরানের ৩৩/৫১ নং আয়াতের তফসীরে  গিরিশচন্দ্র সেন লিখেছেন – ‘‘কোন ব্যক্তির অনেক ভার্যা থাকিলে তাহার পক্ষে উচিত যে,পালাক্রমে প্রত্যেকের নিকট তুল্যভাবে থাকে  ... কিন্তু হযরত প্রত্যেকের পালার মধ্যে কোন প্রভেদ  করেন নাই, সকলের সম্বন্ধে তুল্য দৃষ্টি রাখিয়াছিলেন কেবল বিবি সুদা নিজের পালা বিবি আয়েষাকে দান করিয়াছিলেন  এই তফসীরে সওদা তাঁর পালা বা স্বামীর সঙ্গে যাপনের সময়কাল আয়েষাকে ছেড়ে দিয়েছিলেন তার উল্লেখ রয়েছে, কিন্তু উহ্য থেকে গেছে কেন  তিনি তাঁর স্বামীর সান্নিধ্যলাভের সুযোগ ও অধিকার ছেড়ে দিয়েছিলেন সেই কেনোর উত্তরটা খুব সহজেই অনুমেয়  গিরিশ সেনের তফসীরে কিন্তু একটা বিরাট মিথ্যে দাবী করা হয়েছে,  সেটা পাঠকদের  দৃষ্টিতে আনতে চাই দাবী করা হয়েছে যে মুহাম্মদ তাঁর স্ত্রীদের প্রতি পালা বন্টনে সমান সুবিচার করেছিলেন এটা যে মিথ্যা দাবি তার প্রমাণ তো সওদাই মুসলমান পন্ডিতগণ বলেন যে সওদা স্বেচ্ছায় তার ভাগ ছেড়ে দিয়েছিলেন   সওদা স্বেচ্ছায় তার ভাগ ছেড়ে দিয়েছিলেনএই উত্তরটি অবিশ্বাসযোগ্য অগ্রহণযোগ্য কোনো স্ত্রী বিনা কারণে তার অধিকার ছাড়ে ?   থাক সে কথা  বরং আমি চোখ ফেরাতে চাই সেখানে যেখানে আরো প্রমাণ দেখতে পাওয়া যায় যে মুহাম্মদ তাঁর স্ত্রীদের প্রতি মোটেই ন্যায় এবং সমান বিচার করেন নি শুধু সওদাকেই নয়, মুহাম্মদ আরো কয়েকজন স্ত্রীকে তাঁর নিকট থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছিলেন এবং কয়েকজনকে তাঁর কাছে টেনে নিয়েছিলেন মুহাম্মদ কোন কোন স্ত্রীদের দূরে ঠেলে দিয়েছিলেন এবং  কোন কোন স্ত্রীকে তাঁর বুকের কাছে পরম আদরে  টেনে নিয়েছিলেন তার উল্লেখ রয়েছে গিরিশ সেনের  উক্ত  তফসীরের শেষ ভাগে তিনি লিখেছেন – ‘সুদা, সফিয়া, জ্ববিরা,  ওম্ম হবিবা, ময়মুনা এই পাঁচ পত্নীকে তিনি দূরে রাখিয়াছিলেন, কিন্তু যখন যে প্রকার ইচ্ছা করিতেন তাহাদের ভাগের প্রতি লক্ষ্য রাখিতেন বিবি আয়েষা, হফসা, উম্মসালমা, এবং জয়নবকে হযরত নিকটে রাখিয়াছিলেন    যাদেরকে দূরে  রেখেছিলেন তাদের সকলের ভাগের প্রতি লক্ষ্য রাখতেন   দাবি যেমন অসত্য পরষ্পরবিরোধী, তেমনি শিশুসুলভ হাস্যকর যাদের মুহাম্মদ দূরে সরিয়ে রেখেছিলেন তাদের মধ্যে একমাত্র সফিয়ার বয়স ছিল বেশ কম, বাকিদের বয়স আয়েষা, যয়নব হফসার চেয়ে বেশী ছিলো অল্প বয়সী সফিয়াকে মুহাম্মদ কেন দূরে সরিয়ে রেখেছিলেন তা এক রহস্য বটে   তবে সে রহস্য অনন্মোচনযোগ্য মোটেই নয় সফিয়াকে দূরে ঠেলে দেওয়ার পেছনে সম্ভাব্য প্রধান কারণ হতে পারেফিয়ার মুহাম্মদের প্রতি যান্ত্রিক বিরূপ আচরণ     সফিয়া কোনদিনই মুহাম্মদকে তাঁর স্বামী বলে মন থেকে গ্রহণ করতে পারেন নি এবং তিনি[সফিয়া] তাঁকে[মুহাম্মদকে] মোটেই পছন্দ করতেন না যেভাবে মুহাম্মদ তাঁকে বিয়ে করেছিলেন তাতে তাঁর পক্ষে মুহাম্মদকে মনে প্রাণে মেনে নেওয়া সম্ভব ছিলো না  সফিয়া ছিলেন মদিনা থেকে কিছুটা দূরে অবস্থিত একটি সম্পদশালী ইহুদি মহল্লা খায়বারের সেনাপতি কেনানের অল্প বয়সী স্ত্রী । একদা মুহহাম্মদ অতর্কিতে খায়বার আক্রমণ করেন । সেই আক্রমণ প্রতিহত করা তাদের পক্ষে সম্ভব হয় নি । বহু ইহুদিকে মুহাম্মদের বাহিনী হত্যা করে খায়বারকে লুঠ করে নিয়ে এসেছিলো । লুঠ করে নিয়ে এসেছিলো  নারী ও পুরুষ নির্বিশেষে অনেক মানুষকেও যাদের মধ্যে সফিয়াও ছিলেন ।
সফিয়াকে তাঁর স্বামী, পিতা-ভ্রাতা আত্মীয়স্বজনের লাশের উপর দিয়ে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে গিয়ে মুহাম্মদের কাছে সমর্পণ করা হয়েছিলো   তাঁর সেই নিহত হয়ে যাওয়া আত্মীয়স্বজনদের জন্যে তাঁকে একটু কাঁদবার সময় ও  সুযোগও   না দিয়ে মুহাম্মদ সে রাত্রেই তাঁকে বিয়ে করে তাঁর সঙ্গে সহবাস করে তাঁর পাশবিক যৌনকামনা চরিতার্থ করেছিলেন ঘটনাকে অনেক ঐতিহাসিক সফিয়াকে মুহাম্মদ কর্তৃক ধর্ষণের কুৎসিত ঘটনা বলেই চিহ্নিত করেছেন স্বভাবতই সফিয়ার পক্ষে রকম একজন নিষ্ঠুর পিশাচসম মানুষকে স্বামী হিসেবে মনে প্রাণে গ্রহণ করা  ভালোবাসা সম্ভব ছিলো  না  মুহাম্মদ নিজেও সেটা নিশ্চয় বিলক্ষণ বুঝতে  পারতেন এর ফলশ্রুতিতে  মুহাম্মদ নিজেও সফিয়ার সান্নিধ্যে খুব একটা আনন্দ পেতেন না সম্ভবতঃ   এই কারণেই মুহাম্মদ সফিয়ার থেকে দূরে থাকতেই তাঁকে দূরে সরিয়ে  দিয়েছিলেন
মুহাম্মদ ও সওদার ঘটনা, অর্থাৎ সওদাকে তাঁর অধিকার থেকে বঞ্চিত করে এবং তাঁর প্রাপ্য ভাগ বা পালা আয়েষাকে বরাদ্দ করে তাঁকে দূরে ঠেলে দেওয়ার ঘটনা নিয়ে মুসলমানদের মধ্যে বিশেষ মতভেদ নেই  । মতভেদ সামান্য যা আছে তা হলো এই বিষয়ে  - মুহাম্মদ সওদাকে তাঁর পালা আয়েষার অনুকূলে ছেড়ে দিতে চাপ দিয়েছিলেন, নাকি সওদা নিজে থেকেই তাঁর পালা ছেড়ে দিয়েছিলেন আয়েষাকেদুটো মতই পাওয়া যায় হাদিস ও তফসীরে । একটা মত হলো এ রকম – “হযরত সওদা বিনতে যামআ’ [রাঃ] যখন খুবই বৃদ্ধা হয়ে যান এবং বুঝতে পারেন যে, রাসূলুল্লাহ [সঃ] তাঁকে পৃথক করে দেয়ার ইচ্ছা রাখেন তখন তিনি রাসূলুল্লাহ [সঃ] – কে বলেনঃ ‘আমি আমার পালা  হযরত আয়েষা [রাঃ] – কে দিয়ে দিলাম ।’  রাসূলুল্লাহ [সঃ] এটা স্বীকার করে নেন, এবং এর উপরেই সন্ধি হয়ে যায় ।”  [সূত্রঃ ইবনে কাথিরের তফসীর, ৪র্থ – ৭ম খন্ড, পৃ – ৫৮৪]   অন্য মতটি বলছে যে মুহাম্মদ নিজেই সওদাকে তাঁর পালা আয়েষাকে ছেড়ে দিতে বলেছিলেন । সে মতটি এরূপঃ “মুজাম–ই-আবুল আব্বাসের একটি মুরসাল হাদিসে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ [সঃ] হযরত সওদা [রাঃ] – এর নিকট তালাকের সংবাদ পাঠিয়েছিলেন । তিনি হযরত আয়েষা [রাঃ] – এর নিকট বসেছিলেন । হুযূর তথায় আগমন করলে হযরত সাওদা [রাঃ] তাঁকে বলেনঃ ‘যে আল্লাহ আপনার উপর স্বীয় বাণী অবতীর্ণ করেছেন এবং স্বীয় মাখলুকের মধ্যে আপনাকে স্বীয় বান্দা মনোনীত করেছেন তাঁর শপথ ! আপনি আমাকে ফিরিয়ে নিন । আমার বয়স খুব বেশি হয়ে গেছে । পুরুষের প্রতি আমার আর আসক্তি নেই । কিন্তু আমার বাসনা এই যে,  আমাকে যেন কিয়ামতের দিন আপনারে স্ত্রীদের মধ্যে উঠান হয় ।‘ রাসূলুল্লাহ [সঃ] এতে সম্মত হন এবং তাঁকে ফিরিয়ে নেন । অতঃপর তিনি বলেনঃ ‘হে আল্লাহর  রাসূল  [সঃ] ! আমি আমার পালার দিন ও রাত্রি আপনার প্রিয় পত্নী হযরত আয়েষা [রাঃ] – কে দান করে দিলাম ।’” [দ্রঃ- ঐ, পৃ – ৫৮৫]
ঘটনা যাই হোক, সওদা সহ কয়েকজন স্ত্রীদের দূরের সরিয়ে রাখাটা মুহাম্মদের শিষ্যদের মধ্যে ব্যাপক গুঞ্জন সৃষ্টি করেছিল । স্ত্রীদের প্রতি মুহাম্মদের এহেন এতো দৃষ্টিকটু, বৈষম্যমূলক  ও অমানবিক আচরণ মুসলমানদের ভীষণ আহত করেছিলো । এর কোনো সদুত্তর ছিলো না মুহাম্মদের কাছে । এ রকম ক্ষেত্রে সাধারনতঃ যা ঘটে, এক্ষেত্রেও তাই ঘটেছিলো । মুহাম্মদ তাঁর এহেন পৈশাচিক  ও অমানবিক কাজের পক্ষে  আল্লাহকে  ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে  শিষ্যদের  মুখ বন্ধ করছিলেন । সেই ঢালটি যে   একটি ওহি তা বলা বাহুল্য ।  ওহি নিয়ে এসে মুহাম্মদ বললেন যে তিনি যা করেছেন তা আল্লাহর ইচ্ছানুসারেই করেছেন  সেই ওহি বা আয়াতটি (৩৩/৫১, সুরা আহযাব) হলো – “তুমি ওদের  মধ্যে  যাকে ইচ্ছা তোমার নিকট হতে দূরে রাখতে পারো এবং যাকে ইচ্ছা গ্রহণ করতে পারো, এবং যাকে দূরে রেখেছো তাকে কামনা করলে কোনো অপরাধ নেই ।” 
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে  সওদার ভূমিকা নিয়েও  কিছু প্রশ্ন ওঠা অস্বাভাবিক নয় ।   কেন তিনি অবমাননাকর শর্তে সম্মত  হয়েছিলেন ? আত্মসম্মান ও আত্মমর্যাদা সম্পন্ন নারীর পক্ষে এমন নীচ শর্ত মানা কি সম্ভব  ? সে সময়ে আরবের নারীদের মধ্যে আত্মসম্মান ও আত্মমর্যাদাবোধ যথেষ্ট মাত্রায় ছিলো তার বহু প্রমাণ পাওয়া যায় । প্রাক ইসলাম যুগে নারীরা অনেক স্বাধীনতা অধিকার ভোগ করতো, ফলে তাদের  মধ্যে আত্মসম্মানবোধ ও আত্মমর্যাদাবোধ থাকাটাই স্বাভাবিক ছিলো । সওদাও তার ব্যতিক্রম ছিলেন না । এই বোধের কারণেই তিনি তাঁর প্রাক্তন স্বামী সাফরা বিন আমরকে  ত্যাগ করতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা ও বিলম্ব করেন নি । মক্কা থেকে মুহাম্মদের শিষ্যদের যে দলটি প্রথম আবিসিনিয়া  হিজরত [পলায়ন] করেছিলো সে দলে ছিলেন সওদা ও তাঁর স্বামী সাফরাআবিসিনিয়ায় খৃষ্টানদের সান্নিধ্যে থাকাকালীন সাফরা উপলব্ধি করেন যে মুহাম্মদ তাঁদের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন এবং ইসলাম ধর্ম নয়, খৃষ্টান ধর্মই   ঈশ্বরের সত্যিকারের ধর্ম । এই উপলব্ধি থেকে তিনি   ইসলাম ত্যাগ করে খৃষ্টান ধর্ম গ্রহণ করেন এবং সওদাকেও খৃষ্টান ধর্ম গ্রহণ করার পরামর্শ দেন । সওদা শুধু সেই পরামর্শটাই প্রত্যাখান করেন  নি, প্রত্যাখান করেছিলেন তাঁর স্বামীকেও । তারপর সওদা আর আবিসিনিয়ায় থাকেন নি, মক্কা শহরে ফিরে চলে এসেছিলেন । সওদা যখন মকায় ফিরে আসেন তার মাত্র কয়েকদিন আগে খাদিজার মৃত্যু হয়েছে । মুহাম্মদ সব শোনার পর সওদাকে বিয়ে করে নেন । মুহাম্মদ খাদিজার জীবদ্দশায় দ্বিতীয় বিয়ে করেন নি ।  এটাকে দৃষ্টান্ত হিসেবে তুলে ধরা দাবী করা হয় যে  মুহাম্মদ শুধু মানুষ হিসেবে সর্বশ্রেষ্ঠই ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন শ্রেষ্ঠ আদর্শবান পতিও যিনি সে সময়ে বহু বিবাহের প্রথা ব্যাপকহারে চালু থাকা সত্বেও  বয়স্কা স্ত্রী খাদিজার জীবদ্দশায় আর দ্বিতীয় বিয়ে করেন নি ।   সেই মুহাম্মদই  কিন্তু তাঁর সেই প্রাণপ্রিয় (!) স্ত্রী খাদিজার মৃত্যুর শোকের রেশ কাটতে না কাটতেই মাত্র কয়েকদিনের মাথায় সওদাকে বিয়ে করতে সংকোচ করেন নি ।  মুহাম্মদ কি সত্যিই খাদিজার প্রেমে আপ্লুত ছিলেন তাই দ্বিতীয় বিয়ে করেন নি ?  সত্যিই কি তিনি আদর্শবান ও ন্যায়বান  পতি ছিলেন ? সত্যিই কি তিনি খাদিজার প্রতি বিশ্বস্ত ছিলেন ?  সে সময়ে সত্যিই কি আরবে বহু বিবাহের ব্যাপক প্রচলন ছিল ? এই প্রশ্নগুলির সঠিক উত্তর নিয়ে  ঐতিহাসিকদের মধ্যে  প্রবল মতভেদ দেখা যায় । মুহাম্মদ খাদিজার জীবদ্দশায় কেনো দ্বিতীয় বিয়ে করেন নি তা আলোচনা করার অবকাশ এখানে নেই । তবে এ কথা জানিয়ে রাখা ভালো যে, খাদিজার প্রতি মুহাম্মদ  মুগ্ধতা ও বিশ্বস্ততার জন্যে বিয়ে দ্বিতীয় করেন  নি  এমনটা  নয় ।  খাদিজার জীবদ্দশায় দ্বিতীয় বিয়ে করার অবস্থা মুহাম্মদের ছিলো না বলে তিনি দ্বিতীয় বিয়ে করেন নি । সে কথা থাক,    সওদার কথায় ফেরা যাক ।  সওদা যখন তাঁর স্বামীর সঙ্গে  সম্পর্ক ছিন্ন করে মক্কায় ফিরে আসেন তখন একবারও ভাবেন নি তাঁর ভবিষ্যতের কথা ।  আর নিজের  ব্যক্তিত্বকে ও স্বধর্ম বিসর্জন দিয়ে স্বামীর ধর্মকেই নিজের ধর্ম বলে ভেবে  নিয়ে স্বামীর সংসারে পরগাছা হয়েও বাঁচতে চান নি; এবং অনিশ্চিত ও  অন্ধকার ভবিষ্যত জেনেও স্বামীকে ত্যাগ করে আবিসিনিয়া  থেকে তৎক্ষণাৎ মক্কায়  এক বস্ত্রেই  ফিরে আসতেও দ্বিধা বা ভয় করেন নিএতো  কঠিন ও বন্ধুর পথে পা বাড়িয়েছিলেন তিনি কোন শক্তি ও সাহসের জোরে ? সে তো প্রবল ব্যক্তিত্ব এবং আত্মসম্মানবোধের জোরেইসেই সওদাই মুহাম্মদের দেওয়া ঘৃণ্য শর্ত মেনে নিয়েছিলেন কেন ? এ বিষয়ে সওদা কী বলছিলেন তা বিশেষ জানা যায় না  তবে এর কারণ নিশ্চয় এটা  হতে পারে না  যে, তিনি শুধু ভরণ-পোষণের জন্যেই মুহাম্মদের ঐ অবমাননাকর  শর্তটি মেনে নিয়েছিলেন । সেটা সত্যি হতে পারে না এজন্যে যে, তাহলে তাঁর পূর্বতন স্বামীকে ত্যাগ করে চলে আসতে পারতেন না । মুহাম্মদের ঘৃণ্য শর্ত তিনি মেনে নিয়েছিলেন মনে হয় ইহকালের কথা  নয়,  একমাত্র পরকালের  কথা ভেবেই । তিনি বিশ্বাস করতেন নিঃসংশয়ে যে মুহাম্মদ ছিলেন আল্লাহর প্রেরিত পুরুষ ও নবী , এবং নবীর স্ত্রীরা মৃত্যুর পর  নিশ্চিতিভাবেই বেহেস্ত [স্বর্গ] লাভ করবে    পরকালে বেহেস্ত লাভের  সুযোগ সম্ভবতঃ তিনি হারাতে চান নি এবং সেজন্যেই  যে কোনো শর্তে তিনি মুহাম্মদের স্ত্রী থেকে যেতে চেয়েছিলেন । 
মুহাম্মদ সওদাকে যেভাবে তালাকের ভয় দেখিয়ে দূরে সরিয়ে দেওয়াটা যেমন নিন্দনীয়  ও ঘৃণ্য  কাজ,   তেমনি সওদার কাজটিও [শর্তটি মেনে নেওয়া]  সমর্থনযোগ্য  ও গ্রহণযোগ্য  নয়মুহাম্মদের এটা না বোঝার কোনো কারণ ছিলো না,  তাই তাঁর এই  ঘৃণ্য কাজটিকে বৈধ করার জন্যে যেমন তাঁর  একটি ওহির প্রয়োজন ছিলো, তেমনই  প্রয়োজন ছিলো এমন একটা ওহিরও যেটা সওদার কাজকেও  বৈধতা প্রদান করতে সক্ষমএর পূর্বে মুহাম্মদ যখন যা  চেয়েছেন, কিংবা তাঁর যখন যা প্রয়োজন হয়েছে, আল্লাহ তৎক্ষণাৎ তা পূরণ করে মুহাম্মদকে বাধিত করেছেন । এক্ষেত্রেও কোনো ব্যতিক্রম হয় নি, আল্লাহর ওহি পৌঁছে গেছে তড়িৎবেগে মুহাম্মদের কাছে । ওহিটি হলো -  “কোনো স্ত্রী যদি তার স্বামীর দুর্ব্যবহার ও উপেক্ষার আশংকা করে তবে তারা আপোষ নিষ্পত্তি করতে চাইলে তাদের কোনো দোষ নেই এবং আপোষ-নিষ্পতিই শ্রেয় ।”  [আয়াতঃ ৪/১২৮]  সওদাকে দূরে সরিয়ে রেখে তাঁর চেয়ে কম বয়সী ও অপেক্ষাকৃত অধিক সুন্দরী স্ত্রীদের সাথে আনন্দঘন জীবন যাপন করার হীন অভিলাষ চরিতার্থ করতে মুহাম্মদ যে দুটি ওহি বা আয়াত পাঠ করেছিলেন সে ওহি দুটিই শরিয়তী আইনের দুটি ধারা  হিসেবে আজো স্বীকৃত হয়ে রয়েছে এই ধারা দুটি মুসলিম নারীদের কী ভয়ঙ্কর ক্ষতি ও সর্বনাশ  করেছে তা পরিমাপ করা মানুষের অসাধ্য ।  সওদার জীবনে ঘটা ঐ সর্বনেশে ঘটনার পর  মুহাম্মদের অনুগামীরা  তাদের যাকে অপছন্দ হতো তাদের হয়  বিনা দ্বিধায় তালাক দিয়ে বিদায় করে দিতো,  না হয় করুণাবশতঃ তালাক না দিয়ে দূরে আস্তাকুঁড়ে ফেলে রাখতো । যাদের একটু বয়স বেশী হতো, কিংবা অসুস্থতাজনিত কারণে যাদের শ্রী কিছুটা নষ্ট হতো, কিংবা অন্য কোনো কারণে স্বামী যাদেরকে অপছন্দ করতো সেই সব স্ত্রীদের এটাই ছিল অবশ্যম্ভাবী পরিণতি । কাঁচা বয়সের স্ত্রীদের কাছে থাকার জন্যে একটু বয়স্ক স্ত্রীদের দূরে ঠেলে দেওয়া বা একেবারেই তালাক দিয়ে দেওয়া একটা মুসলিমদের সংস্কৃতি হয়ে দাঁড়িয়েছিল । না, মুহাম্মদ কিংবা ইসলাম ধর্মকে হেয় করার জন্যে এগুলো বানানো কোনো  গল্প নয় । এর ভুড়িভুড়ি প্রমাণ পাওয়া যাবে সে সময়ের ইতিহাসে এবং  হাদিস ও কোরানে সেই সংস্কৃতির রূপটি কি রকম ছিলো তা  কিছুটা  হলেও আন্দাজ করা যাবে  নীচের একটি ঘটনা ও  একজন বিখ্যাত সাহাবীর উক্তি  থেকে ।
 ৪/১২৮ নং আয়াতে নারীদের জন্যে ওই কুৎসিত নির্দেশ আসার পর কীভাবে তার প্রয়োগ শুরু হয়েছিল তার বহু ঘটনার বর্ণনা রয়েছে ইবনে কাথিরের তফসীরে । সে রকম একটা ঘটনা হলো এ রকম – “হযরত রাফে’ ইবনে খুদায়েজ আনসারী [রাঃ] – এর স্ত্রী যখন বৃদ্ধা হয়ে যান তখন তিনি এক নব যুবতীকে বিয়ে করেন ।  অতঃপর তিনি ঐ নব বিবাহিতা স্ত্রীকে পূর্বের স্ত্রীর উপর গুরুত্ব দিতে থাকেন । অবশেষে তাঁর স্ত্রী বাধ্য হয়ে তালাক যাচ্ঞা করেন । হযরত রাফে’ [রাঃ] তাকে তালাক দিয়ে দেন । কিন্তু ইদ্দত শেষ হওয়ার সময় নিকটবর্তী হলে তাকে ফিরিয়ে নেন । কিন্তু এবারেও ওই একই অবস্থা হয় যে তিনি যুবতী স্ত্রীর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েন । পূর্ব স্ত্রী আবার তালাক প্রার্থনা করেন । তিনি তাঁকে এবারও তালাক দিয়ে দেন । কিন্তু পুনরায় ফিরিয়ে নেন । এবারও অনুরূপ অবস্থাই ঘটে । অতঃপর ওই স্ত্রী কসম দিয়ে তালাক প্রার্থনা করে ।  তখন তিনি তাঁর ঐ বৃদ্ধা স্ত্রীকে বলেনঃ ‘চিন্তা করে দেখো, এটা কিন্তু শেষ তালাক ।  যদি তুমি চাও তবে তালাক দিয়ে দেই, নতুবা এই অবস্থায় থাকাই স্বীকার করে নাও ।’  সুতরাং তিনি স্বীয় অধিকার ছেড়ে দিয়ে ঐভাবেই বাস করতে থাকেন ।”  [৪র্থ-৭ম খন্ড, পৃষ্ঠা – ৫৮৭]
আলি ছিলেন মুহাম্মদের  খুড়তুতো ভাই ও আপন জামাতা  তিনি তাঁকে প্রাণাধিক ভালোবাসতেন এবং তাঁর জ্ঞানে ও শৌর্যে তিনি এতই মুগ্ধ ছিলেন যে তাঁকে  জ্ঞানের দরজা বলে আখ্যায়িত করেছিলেন  সেই আলিকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো একজন লোকের প্রায় অনুরূপ কৃতকর্মের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর অভিমত  কৃতকর্মটি এরূপ - একজন লোকের স্ত্রী রয়েছে, কিন্তু সে বৃদ্ধা হয়ে গেছে এবং তার আর ছেলেমেয়ে হয় না । তখন লোকটি একটি যুবতী নারীকে বিয়ে করে । এই বিষয়ে আলীকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেনঃ   “হযরত আলী এ সম্বন্ধে জিজ্ঞাসিত হয়ে বলেনঃ ‘এর দ্বারা ঐ স্ত্রীকে বোঝানো হয়েছে, যে তার বার্ধক্যের কারণে বা বিশ্রী হওয়ার কারণে বা অথবা দুশ্চরিত্রতার কারণে কিংবা অপরিচ্ছন্নতার কারণে তার স্বামীর নিকট দৃষ্টিকটূ হয়ে গেছে, সে কিন্তু কামনা করে যে, তার স্বামী যেন তালাক না দেয় । এ অবস্থায় সে যদি তার সমস্ত প্রাপ্য বা আংশিক প্রাপ্য ছেড়ে দিয়ে তার স্বামীর সঙ্গে সন্ধি করে নেয় তবে তা করতে পারে]”   [সূত্রঃ ঐ]
মুহাম্মদ তাঁর স্ত্রী সওদার সঙ্গে যে আচরণ করেছেন তা অত্যন্ত নিকৃষ্ট ও মানবতাবিরোধী । এরূপ  আচরণ করে নারীজাতির তিনি যে অপমান করেছেন তা ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ । নারী যে ভোগ্যপণ্য বৈ নয় – এই বার্তাই তিনি  দিয়ে যান এই আচরণের মাধ্যমে নিজের স্ত্রীর প্রতি চরম অবমাননাকর আচরণ করেই তিনি ক্ষান্ত হন নি, তিনি এহেন চরম কুৎসিত, নিকৃষ্ট,  ঘৃণ্য, জঘন্য এবং মানবতাবিরোধী অপরাধকে আল্লাহর নামে বৈধ বলে ঘোষণাও দিয়ে যান । তাঁর সাহাবীরাও এতো বিবেকহীন ও মনুষ্যত্বহীন ছিলেন যে কেউ  তাঁর কৃত উক্ত অন্যায় ও অপরাধের প্রতিবাদ করেন নি । বরং তাঁরা মুহাম্মদের সেই অপকর্ম ও কুকর্ম এবং তার সপক্ষে আল্লাহর নামে বানানো বিধানকে  শরিয়তি আইনের স্বীকৃতি দিয়ে দেন । ফলে আজো মুসলিম সমাজ সেই মানবতাবিরোধি অপরাধ ও অভিশাপ থেকে মুক্ত হতে পারে নি । বর্তমান যুগে তার প্রয়গের মাত্রা হয়তো কিছুটা কমেছে, কিন্তু সেই কুৎসিত ঐতিহ্যটি আজো  বিশ্বজুড়ে মুসলিম সমাজে বহমান থেকে গেছে  

  

 


Saturday, February 14, 2015

আপ ও কেজরিওয়ালের জয়ে অভিনন্দন জানানোর নৈতিক অধিকার মমতা ব্যানার্জীর নেই


দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনে এমন চমক  ছিলো কেউ আন্দাজ করতে পারে নি – মিডিয়া থেকে রাজনোতিক দল, কেউই, এমনকি কেজরিওয়াল এবং তাঁর নেতাকর্মীরাও  । কেজরিওয়াল নিরঙ্কুশ পাবেন এমন আভাষ পাওয়া যাচ্ছিল, কিন্তু ৬৭-৩-০ এই অনুপাত ছিলো সকলের কাছেই অকল্পনীয় । শতাব্দী প্রাচীন জাতীয় দল কংগ্রেস যারা স্বাধীনতা এনেছে বলে বড়াই করে এবং বৃটিশদের অনুকরণে অহঙ্কার করে বলে যে ভারতের কোথাও কংগ্রেসের সূর্য অস্ত যাবে না সেই কংগ্রেস দিল্লিতে সত্যিই অস্তাচলে চলে গেলো – একেবারে শুন্য আর মোদি-অমিত জুটি যাঁরা দিল্লির মসনদে বসেই গেছেন বলে শুধু দিন গুণছিলেন তারাও প্রায় নিশ্চিহ্ন আপের ঝাড়ু-ঝড়ে -  সত্তরে মাত্র তিনবিভিন্ন দলের ভোট প্রাপ্তির হারেও রয়েছে সমান চমক ।  ২০১৩-র বিধানসভায় কংগ্রেস পেয়েছিলো ২৫% ভোট । ২০১৪-র লোকসভায় কমে ১৫%, এবারে আরো কমে গিয়ে মাত্র ৯.৭%    আর মোদির অশ্বমেধের ঘোড়া দিল্লিতে কেজরিওয়ালের পায়ের কাছে এসে শুধু  চিৎপাটাংই  হয় নি, ভোটের ভূমিতেও ধ্বস নেমেছে তাঁদের । ২০১৩-র বিধান সভায় ৩৩.১% ভোট ২০১৪-র লোকসভায়  ১৫% বেড়ে  ৪৬% । এবার ঝাড়ু-ঝড়ে ১৪% উড়ে গিয়ে  ৩২.২%  
কেনো এতো বড়ো জয় একদিকে,  আর অন্যদিকে বিপর্যয় ? কংগ্রসের কথা যতো কম বলা যায় ততোই ভালো, বেশি কথা বলে শুধু শুধু সময় ও কাগজ নষ্ট । একটা কথা বলাই  যথেষ্ট কংরেস সম্পর্কে,  মানুষের কাছে দলটার বিশ্বাসযোগ্যতা  সব দিক থেকেই  একেবারে তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে, এবং এই দলের নেতৃত্ব কোনো কিছু থেকেই  শিক্ষা নিতে চায় না । আর বিজেপি, কংগ্রেসের বিপর্যয়ের সুযোগ নিয়ে যে দল  একের পর এক রাজ্য জয় করে  তর তর করে  এগিয়ে যাচ্ছিল,  তার  কেনো এমন ভূমিধ্বস পরাজয় ? কেজরিওয়াল বলেছেন কংগ্রেস ও বিজেপির অহঙ্কারই তাদের পরাজয়কে ত্বরান্বিত করেছে । অবশ্যই এটা একটা বড়ো কারণ । লোকসভা নির্বাচনে বিপুল জয়ে পেয়ে মোদি যে ভীষণ অহঙ্কারী হয়ে উঠেছিলেন তা তাঁর চলনে-বলনে এবং জীবন-যাপনে নগ্নভাবেই প্রকট  হয়ে দেখা দিয়েছে । তিনি ভেবেই নিয়েছিলেন  যে গত লোকসভা নির্বাচনে বিশাল জয় তাঁর জন্যেই হয়েছে, বিজেপির জন্যে নয়,  এই ধারণা  তাঁকে অহঙ্কারী করে তোলে । এই অহঙ্কার দিল্লির  মানুষ  পছন্দ করে  নি । শুধু মানুষ কেনো তাঁর দলের লোকেরাও পছন্দ করে নি । মোদি সচেতনভাবে একটা কাজ করে আসছেন প্রধান মন্ত্রী হওয়ার পর থেকে, তা হলো সরকারে ও দলে সমস্ত ক্ষমতা নিজের হাতে কেন্দ্রীভূত করা । দলে ও সরকারে একটাই মুখ – শুধু মোদির মুখ – এই অবস্থা তিনি ইতিমধ্যেই অনেকটাই তৈরী করেও ফেলেছেন । তা করতে গিয়ে সর্বত্র তিনি বশংবদদের তুলে নিয়ে এসেছেন যাতে সবাই  বিজেপির বদলে তাঁর নামে জয়ধ্বনি করে । সে লক্ষ্যেই তিনি দিল্লির যে নেতৃত্ব ২০১৩-র নির্বাচনে বিজেপিকে প্রায় ক্ষমতার কাছে পৌঁছে দিয়েছিলো তাঁদের মাথায় বসিয়ে দেন কিরণ বেদিকে   বিজেপি জিতলে  কিরণ যে মোদির নির্লজ্জ বশংবদ হতেন তা বলা বাহুল্য ।  অহঙ্কারী ব্যক্তির মাটিতে পা পড়ে না মোদিও মাটি ছেড়ে আকাশে উড়তে চাইছে    ভারতের সীমানা ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক ফিগার হতে চাইছেন । দেশের কাজকর্ম ফেলে রেখে বিশ্ব পরিক্রমায় মন দিয়েছে  সেই লক্ষ্যেই বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিধর রাষ্ট্রপ্রধান ওবামাকে নিয়ে এসেছেন প্রজাতন্ত্র দিবসে প্রধান অতিথি করে । গান্ধিজি, জহরলাল, ইন্দিরাগান্ধী ও রবীন্দ্রনাথের  আন্তর্জাতিক খ্যাতি ও পরিচিতিকে ছাপিয়ে বিশ্বের আঙিনায়  নিজেকে তুলে ধরতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন । তা করতে গিয়ে তিনি জীবন-যাপনেও দৃষ্টিকটু পরিবর্তন আনতে দ্বিধা করেন নি – প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে পরেছিলেন একটা দশলাখি কোট । এ   সব দিল্লির মানুষ ভালোভাবে নেয় নি । মোদি বহু প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন লোকসভা নির্বাচনে  দিল্লীর মানুষ তা বিশ্বাস করে তাঁকে দুহাত উজাড় করে ভোট দিয়ে কেজরিওয়াল ও কংগ্রেসকে শূন্য হাতে ফেরৎ পাঠিয়ে দিয়েছিলকংগ্রেসের বিরুদ্ধে মানুষের প্রধান ক্ষোভ ছিলো তিনটি – অনুয়ন্নন, অপশাসন ও দুর্নীতি । মোদি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন সাধারণ মানুষেরজন্যে কাজ করবেন, অপশাসন দূর করবেন এবং দুর্নীতি উচ্ছেদ করবেন এবং বিদেশে পাচার হওয়া  কালোটাকা ফিরিয়ে আনবেন ১০০ দিনের মধ্যে ।  কিন্তু কোন ক্ষেত্রেই এই প্রতিশ্রুতিগুলি রূপায়নের সদিচ্ছার ছাপ রাখতে পারে নি ।
একটা প্রবাদ চালু আছে ইংরাজীতে – Success has many fathers, but failure has none.   হ্যাঁ, সঙ্ঘপরিবারও হারের জন্যে দোষ চাপাচ্ছে মোদির উপর ।   অথচ সঙ্ঘপরিবারের উগ্র হিন্দুত্ববাদও বিজেপির বিপর্যয়ের একটা বড়ো কারণ ।  সঙ্ঘপ্রধান ভাগবত বলেছেন ভারতবাসী মানেই হিন্দু । তাঁর কথা তো শুধু কথা নয়, অহিন্দু সকলকে হিন্দু বানাতে জোর কদমে চালানো হচ্ছে  ‘ঘর ওয়াপাসি’ কর্মসূচী যাতে আছে  যেমন আর্থিক প্রলোভনের দাওয়ায় তেমনি আছে  বলপ্রয়োগ ও সন্ত্রাসের  প্রয়োগও । মোদি জামানার মাত্র কয়েক মাসের মধ্যে কমপক্ষে সাতটি গির্জায় হিন্দু সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়েছে । ইসলামি কায়দায় প্রচার করে অহিন্দুদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করার পরিকল্পিত প্রয়াস চলছে দেশজুড়ে  ইসলাম মানুষকে বিশ্বাসী ও অবিশ্বাসী এই দুভাগে ভাগ করে অবিশ্বাসীদের উপর অত্যাচার চালায়, আর সঙ্ঘপরিবার বলছে – যারা বিজেপি তারা রামজাদা ও বাকিরা হারামজাদা । হিন্দু রাষ্ট্র বানানোর লক্ষ্যে   হিন্দু নারীদের কেউ বলেছে চারটি সন্তান, কেউ বা বলেছে দশটি সন্তানের জন্ম দিতে । গান্ধিজীর হত্যাকারি নাথুরাম গডসের নামে মন্দির নির্মাণ করার কর্মসূচী হাতে নিয়েছে ।  সঙ্ঘপরিবার আরো বলেছে যে  জহরলাল নেহরুকেও হত্যা করাও দরকার  ছিলো । দিল্লির মানুষ এ সব পছন্দ করে নি । তাই হিন্দু-অহিন্দু নির্বিশেষে সব অংশের মানুষ এই উগ্র  হিন্দুত্ববাদকে প্রতিহত  করতে বিজেপির  বিরুদ্ধে আপকে ঢেলে ভোট দিয়েছে   দিল্লি এবার   স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে যে তারা  ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র  চাই, হিন্দুরাষ্ট্র নয়  । এই বার্তাটাই আমার মতে আপের বিশাল জয় ও বিজেপির পরাজয়ের সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক ।
এ কথা ঠিক যে কেজরিওয়ালের পক্ষে ব্যাপক নেতিবাচক ভোট পড়েছে,  কিন্তু এটাও অনস্বীকার্য যে তাঁর পক্ষে ইতিবাচক ভোটও খুব কম পড়ে নি ।  এখন সারা ভারতে দুর্নীতি একটা বড়ো ইস্যু । এই প্রশ্নে কোন দলেরই বিশ্বাসযোগ্যতা নেই, কংগ্রেস ও বিজেপির তো একেবারেই নেই ।  সেখানে কেজরিওয়ালই একমাত্র রাজনীতিক ব্যক্তিত্ব যিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের মধ্যে দিয়ে রাজনীতির অঙ্গনে পা রেখেছেন এবং সেই লড়াই তাঁর জারি থাকবে বলে অঙ্গিকার করেছেন । বহু  মানুষ  তাঁর এ কথায়  বিশ্বাস স্থাপন করে তাঁর দলকে ভোট দিয়েছে   সুশাসন আজ গোটা দেশেই দুর্লভ । ঘুষ ছাড়া সরকারি অফিসে যেমন  কাজ হয় না, তেমনি  ঘুষ কিংবা শাসক দলের ইশারা ছাড়া পুলিশও কোনো কাজ করে না । কেজরিওয়াল প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন স্বচ্ছ প্রশাসন উপহার দেবেন । তিনি যে মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দেন নি তার নমুনা প্রদর্শন করতে সমর্থ হয়েছিলো তাঁর ৪৯ দিনের সরকার ।  বিদ্যুতের  দাম কমানো ও প্রত্যকে বাড়িতে ন্যুনতম প্রয়োজনীয় পরিমাণ জল সরবরাহ করার যে প্রতিশ্রুতি  তিনি  দিয়েছিলেন তা যে একদম ফাঁকা প্রতিশ্রুতি ছিলো  না তার প্রমাণও দিল্লির মানুষ পেয়েছিলেন তাঁর সরকারের কাছ থেকে । ক্ষমতা পেলে সবাই দাম্ভিক ও অহংকারী হয়ে যায়,  কেউ নিজের ভুল স্বীকার করে না । কেজরিওয়াল যে তাঁদের দলে পড়েন না তার প্রমাণ দিল্লিবাসী পেয়েছে বহু ঘটনায় । ৪৯ দিনের মাথায় তাঁর সরকার ছেড়ে পালিয়ে যাওয়াটা দিল্লির মানুষ পছন্দ করে নি । এটা যে তাঁর ভুল হয়েছিলো তা উপলব্ধি  করা মাত্রই তা স্বীকার করে নিয়ে মানুষের কাছে গিয়ে   ক্ষমা চেয়ে নিয়েছিলেন । আর এটাও স্পষ্ট ছিলো যে ক্ষমা চাওয়ার মধ্যে তাঁর আন্তরিকতা ছিল, কপটতা ছিলো না,  যা  মানুষকে আশ্বস্ত করেছে অনেকটাই ।  একজন গরীব মানুষ ভুল বুঝে তাঁর গলায় মালা পরানোর নাম করে চড় মেরেছিলেন । তিনি ঐ লোকটার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার বদলে তাঁর বাড়ি গিয়ে জানবার চেষ্টা করেছিলেন  তাঁর উপর ঐ লোকটার ক্ষোভের কী কারণ যে মেরেছে তার দোষ না খুঁজে তিনি জানবার চেষ্টা করেছিলেন তাঁর নিজের কোনো দোষ বা ভুল আছে কী না । এমন ক্ষমাশীল, অদাম্ভিক, নিরহঙ্কারী, হৃদয়বান ও আত্মসমীক্ষক মানুষ তো দিল্লি কেনো ভুভারতেই  বিরল   আর একটা জিনিষ দিল্লির মানুষকে অনেক বেশী ভরসা জুগিয়েছে যা হলো দিল্লির জামা মসজিদের প্রধান ইমাম সৈয়দ আহমেদ বুখারীর সেধে সমর্থন দেওয়াকে পত্রপাঠ প্রত্যাখান করা । এ ঘটনা ভারতের ইতিহাসে এই প্রথম ঘটলো যা প্রকৃত ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র ও দেশ গড়ার ক্ষেত্রে এক নতুন দিক ও অধ্যায়ের সূচনা হলো বলে মনে হয়   এ প্রসঙ্গে আরো কিছু দরকারি কথা নিবন্ধের শেষ পরিচ্ছেদে আলোচনা করবো ।
দিল্লির এই ফলাফল সারা দেশে, এমনকি ভারতের বাইরেও সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলবে বলে মনে হয় ।  আমাদের রাজ্যে যে পরিবর্তনের সরকার চলছে তার কাজকর্মে মানুষ যারপর নাই হতাশ ও ক্ষুব্ধ । মানুষ পরিবর্তনের পরিবর্তনের চাইছে । এই রাজ্যে দিল্লির ভোটের প্রভাব কতটা পড়ে, কীভাবে পড়ে তার দেখার জন্যে আমাদের আরো কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে । কিন্তু কেজরিওয়ালের বিপুল জয়ে উচ্ছ্বসিত হয়ে যেভাবে এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী কেজরিওয়াল ও দিল্লির মানুষকে অভিনন্দন জানিয়েছেন তা তা রাজ্যবাসীকে অবাক করেছে । তবে মমতা ব্যানার্জীর উচ্চ্বাস দেখে শুধু অবাকই নয়,  রাজ্যের মানুষ হাসাহাসিও করছে  কারণ, দিল্লির মানুষ সেখানে যেমন বিজেপির হাত থেকে মুক্তি পেতে চেয়েছিলো এ রাজ্যের মানুষও তেমনি মমতার হাত থেকে মুক্তি পেতে আগ্রহী ।  মমতার তাই কেজরিওয়ালের জয়ে উচ্চ্বসিত হওয়ার চেয়ে বিমর্ষ হওয়ারই কথা ।   মমতার উচ্চ্বাসের পশ্চাতে  বোধ হয় দুটি কারণ আছে । এক. তাঁর প্রধান শত্রু পরাস্ত হয়েছে । দুই. স্বচ্ছ ভাবমূর্তির কেজরিওয়ালের উজ্জ্বলতায় তাঁর নিজের কালিমালিপ্ত ইমেজকে আড়াল করার ব্যর্থ প্রয়াস  মমতা ব্যানার্জীর কেজরিওয়ালকে অভিনন্দন জানানোর ঘটনা নিয়ে মানুষ প্রশ্ন করছে, মমতার কি  অভিনন্দন জানানোর কোনো নৈতিক অধিকারই আছে ?  কেজরিজির প্রধান লড়াই লড়াই যেখানে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সেখানে মমতা নিজেই বিরাট বিরাট দুর্নীতি ও আর্থিক কেলেঙ্কারীর  অভিযোগে অভিযুক্ত । হাওয়ায় চপ্পল পরে, আটপৌরে শাড়ি পরে ও টালির ছাউনির নীচে বাস করে সততার যে ইমেজ তৈরী করেছিলেন সেটা যে ছিলো অভিনয় ও নিরেট ভণ্ডামি তা এখন স্পষ্ট । তাঁকে আগে সততার প্রতীক বলা হতো, এখন কুখ্যাত চিটফাণ্ড সংস্থা সারদার প্রতীক বলছে মানুষ । কেজরিওয়াল যেখানে দিল্লির সরকারের অপশাসনের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করেছেন সেখানে মমতার সরকারের তো দুঃশাসন ও অপশাসনের সীমা-পরিসীমা নেই ।  পুলিশ প্রশাসন থেকে সাধারণ প্রশাসনের সর্বস্তরে ঘুষ ও দলতন্ত্রের দাপাদাপি  অসহনীয় হয়ে উঠেছে  চারিদিকে তোলাবাজি, সিণ্ডিকেট রাজ ও প্রোমোটার রাজের দাপট বাংলার অবস্থা আজ সঙ্গীন ।  নারী নির্যাতন ও ধর্ষণে পশ্ছিমবঙ্গকে এক নম্বরে পৌঁছে দিয়েছে তাঁর সরকার ।   তাঁর সরকার ও  দলের নীতি-নৈতিকতার বালাই বলতে কিছু নেই । দেদার অর্থ    পদ বিলিয়ে বিরোধী দলের জনপ্রতিনিধিদের ভাঙিয়ে এনে একের পর এক পঞ্চায়েত ও পৌর প্রতিষ্ঠানগুলি  দখল নেওয়ার এক নজিরবিহীন কুৎসিত খেলায় তিনি মত্তকেজরিওয়াল  ২০১৩-র নির্বাচনে  মুস্লিম ধর্মীয় নেতাদের স্মরণাপন্ন  হয়ে যে ভুল করেছিলেন এবার সে ভুলটি সংশোধন করে এক নয়া সোনালি ইতিহাস রচনা করেছেন    তিনি দিল্লির জামা মসজিদের ইমাম বুখারীর  যেচে দেওয়া সমর্থনকে  রূঢ়ভাবে  প্রত্যাখান করে ধর্মনিরপেক্ষতার পতাকা তুলে ধরার নজিরবিহীন সাহস দেখিয়েছেন ।  আর  মমতাতো   ইমাম বরকতি ও  পীরজাদা ত্বহা সিদ্দিকের মাঝে বসে হিজাব পরে দুহাত তুলে আল্লাহর কাছে দোওয়া করার ভণ্ডামি করে ধর্মনিরপেক্ষতার বুকে ছুরি মারতেও দ্বিধা করছেন না  বরকতি,  ত্বহা সিদ্দিকি, সিদ্দিকুল্লাহ প্রমুখ ধর্মীয় নেতারা তো তাঁকে রীতিমতো নাকে দড়ি দিয়ে যেমন খুশী ঘোরাচ্ছেন । তাঁরা বলেছিলেন সলমান রুশদি যেনো কলকাতায় পা না দেয় । মমতা রুশদিকে আসতে দেন নি । তাঁরা বলেছিলেন তসলিমা যেনো এ রাজ্যে আর ঢুকতে না পারে, মমতা তাঁকে ঢুকতে দিচ্ছেন না । তাঁরা মাদ্রাসা চেয়েছিলেন, তিনি এক হাজার মাদ্রাসার অনুমোদন দিতে বিলম্ব করেন নি । তাঁরা বলেছিলেন ইমাম ও মোয়াজ্জেনদের ভাতা দিতে, তিনি দিয়েছেন । তাঁরা দাবি করেছিলেন আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়-এর নাম বদলে আলিয়া মাদ্রাসা বিশ্ববিদ্যালয় রাখতে,  দাবি পূরণ করতে দ্বিধা করেন নি । তাঁরা   ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে তিস্তার বন্টনের চুক্তি হোক চায় নি,  মমতা সেই চুক্তি হতে দেন নি । ঐ নেতাদের কথাতেই কট্টর মৌলবাদি নেতা এবং সিমির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আহমেদ হাসানকে রাজ্যসভার সদস্য করেছেন    তাঁদের কথাতেই বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাঞ্চাল করার জন্যে  জামাতের সরকারবিরোধী জ্বালাও-পোড়াও হিংস্র আন্দোলনকে  তাঁর দল  নানাভাবে সহায়তা দিয়েছে  এ ক্ষেত্রে প্রধান মধ্যস্থাকারীর ভূমিকা পালন করেছেন  সেই আহমেদ হাসান । কলকাতার ধর্মীয় নেতারা বাংলাদেশের জামাতের  আহত কর্মীদের পশ্চিমবঙ্গে নিয়ে এসে চিকিৎসা করিয়ে আবার বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা  করেছেন ধারাবাহিকভাবে   সব জেনে শুনেও রাজ্য সরকারের পুলিশ নীরব ও নিষ্ক্রিয় থেকেছে । বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধীদের মুক্তির দাবিতে এ বঙ্গের  মৌলবাদীরা পুলিশী  প্রহরায় কলকাতার বুকে মিছিল করেছে, কিন্তু শাহবাগ আন্দোলনের  সমর্থনে মমতা ব্যানার্জীর পুলিশ আমাদের সংহতি মিছিল করতে দেয় নি । বরকতি-সিদ্দিকি-সিদ্দিকুল্লাহারা খাগড়াগড় বিষ্ফোরণ কাণ্ড ধামাচাপা দিতে বলেছিলেন, মমতা ব্যানার্জী  তাঁদের হতাশ করেন নি ।  এ সমস্ত অভিযোগ ভিত্তিহীন ভাবার অবকাশ নেই, কারণ তৃণমূল কংগ্রেস বা রাজ্য সরকার একটি অভিযোগকেও চ্যালেঞ্জ করে আদালতে যাওয়ার সাহস দেখাতে পারে নি   এহেন মমতা ব্যানার্জি কোন অধিকারে কেজরিওয়ালকে তাঁর জয়ের জন্যে অভিনন্দন জানাতে পারেন  ?   
প্রচুর ত্রুটি ও ঘাটতি থাকা সত্বেও ভারত  একটি ধর্মনিরপেক্ষ দেশ । স্বভাবতই রাষ্ট্র ও রাজনীতির সঙ্গে   ধর্মের সংযোগ ও সম্পর্ক থাকার কথা নয় এখানে । কিন্তু আছে । ভালোভাবে  এবং  দৃঢ়ভাবেই আছে । রাষ্ট্রের উপর ধর্মের ব্যাপক প্রভাব পরিলক্ষিত হয় সর্বত্র । ধর্মীয় নেতারা সর্বদা রাষ্ট্র ও  রাজনৈতিক দলগুলোর উপর ছড়ি ঘোরায় । মোল্লা-ইমাম, ঠাকুর-পুরোহিত, পীর বাবা ও সাধু বাবারা দেশ ও সমাজটাকে সর্বদা পেছন দিকে টানে । তবুও রাজনীতিকরা ভোট পাওয়ার জন্যে তাদের কাছে ছুটে যায় বারবার এবং তারা যা বলে তাই পালন করেনতাদের কথাতেই মুসলিম ব্যক্তিগত আইনকে সাংবিধানানিক  মর্যাদা দেওয়া হয়েছে একদিকে, আবার আর একদিকে বাবরি মসজিদকে ধ্বংস করার সময় সরকার চোখ বুঁজে থেকেছে । এ রকম অজস্র দৃষ্টান্ত আছে । তবে এটা অনস্বীকার্য যে মুসলিম ধর্মীয় নেতাদের খুশী করার প্রবণতা তুলনায় অনেক বেশী । এই কুসংস্কৃতি আবার এ রাজ্যেই  অধিক প্রবল । মূল কথা হলো প্রাক-স্বাধীন ভারতবর্ষে  রাষ্ট্রের সঙ্গে  ধর্মের এবং রাজনীতিক নেতাদের সঙ্গে  ও ধর্মীয় নেতাদের যে অশুভ জোট তৈরী হয়েছিলো তা স্বাধীনোত্তর ভারতে ফুলে-ফলে আরো পল্লবিত হয়েছে  এই জোট শুধু তো অশুভই নয়, এটা রাষ্ট্রের শরীরের পক্ষে যক্ষা ব্যাধির মতো বিপজ্জনক যা কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে আমাদের  গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি ও আদর্শকে ।  এই রোগটা যতদিন থাকবে ততোদিন গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার বিকাশে বিঘ্ন সৃষ্টি হতে থাকবে  রাষ্ট্র থেকে তাই ধর্মকে এবং রাজনীতি থেকে ধর্মীয় নেতাদের বিচ্ছিন্ন করার বিকল্প নেই । কাজটা খুব কঠিনও নয় বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি । কারণ ধর্মভীরু মানুষরা ধর্মীয় নেতাদের কথায় ভোট দেয় বলে যে ধারণা আছে তা একেবারে সঠিক নয়  । মুসলিমরা নাকি মোল্লা-মুফতিদের  কথায় ভোট দেয়, এই অভিযোগ শোনা যায় । রাজনিতিকরাও তাই বিশ্বাস করেন বলে তাঁরা মোল্লা-মুফতিদের কথায় প্রায় কান ধরে ওঠা-বসা করার মতো আচরণ করেন  । এই ধারণাটাও ভুল ।  এটা যে ভুল তা প্রমাণ পাওয়া গেলো দিল্লির এবারের ভোটে । কেজরিওয়াল এবার মুখের উপর দিল্লির জামা মসজিদের ইমামকে বলে দিয়েছিলেন যে তিনি তাঁর সমর্থন চান না । তৎসত্ত্বেও দিল্লির মুসলিমরা দুহাত উপুর করে ভোট দিয়েছেন কেজরিওয়ালকে । কেজরিওয়াল এ ভাবেই ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার যে নতুন অধ্যায় শুরু করলেন তা ভারতের ইতিহাসে একটি ঐতিহাসিক ও যুগান্তকারী ঘটনা ও অধ্যায় যা স্বর্ণাক্ষরে খোদায় করা থাকবে । আমার মতে দিল্লির নির্বাচনে এটাই আমাদের সবচেয়ে বড়ো অর্জন যা আপ ও কেজরিওয়ালের জয়ের থেকেও অনেক অনেক বড়োঅন্য রাজনীতিকরা  কেজরিওয়ালের পথ অনুসরণ করেন কী না সেদিকেই এবার গোটা ভারতের চোখ থাকবে ।  

বাংলাদেশের গণঅভ্যুত্থানে ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাইনি – পাঁচ

  দ্বিতীয় অধ্যায় শেখ হাসিনা ও শেখ মুজিবের প্রতি তীব্র গণরোষের নেপথ্যে ২০২৪ এর জুলাই অভ্যুত্থানের সফল পরিসমাপ্তি ঘটে ৩৬ দিন পর (৫ই ...