Saturday, March 15, 2014

মক্কা মদিনার মাটিতে মৌলবাদী মুসলমানদের প্রাণের সংগঠন ‘মুসলিম ব্রাদারহুড’ নিষিদ্ধ


সৌদি আরব ‘মুসলিম ব্রাদারহুড’কে নিষিদ্ধ করলো
সৌদি আরবের সঙ্গে কয়েকটি সন্ত্রাসবাদী মুসলিম সংগঠনগুলির বিরোধ অনেকদিন ধরেই চলে আসছিলো অবশেষে তা চূড়ান্ত রূপ ধারণ করলো   সৌদি আরব কয়েকদিন আগে (৭ই মার্চ’১৪) ‘মুসলিম ব্রাদারহুড’ সহ কয়েকটি মুসলিম সংগঠনকে সন্ত্রাসবাদী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করে নিষিদ্ধ ঘোষণা করলো  ফলে এবার তাদের মধ্যে শুরু হয়ে গেলো সরাসরি সংঘাত, যাকে বলে একেবারে সম্মুখ সমরে এবার দুই প্রবল পরাক্রান্ত যুযুধান শক্তি অন্যান্য নিষিদ্ধ সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলি হলো ‘হামাস’, ‘নুসরা ফ্রন্ট’  ও ‘ইসলামিক স্টেট ইন ইরাক অ্যান্ড দ্যা লিভ্যান্ট’ এই সংগঠনগুলির সদস্যরা, বিশেষ করে  নুসরা ফ্রন্ট ও ইসলামিক স্টেট ইন ইরাক অ্যান্ড দ্যা লিভ্যান্ট – এর সদস্যরা এখন সিরিয়ায় বাসার আল আসাদের সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র লড়াই তথা ‘পবিত্র’ জেহাদ চালিয়ে যাচ্ছে মিশরেও তারা এখন এই ‘পবিত্র’ জেহাদের নামে রক্তের হোলি খেলায় প্রমত্ত  মিশরের  সরকারকে উৎখাত করে জনগণের দ্বারা প্রত্যাখাত মুহাম্মদ মুরসিকে ক্ষমতায় পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করতে ওরা জেহাদ শুরু করেছে নতুনভাবে   উল্লেখ্য, গত বছর (২০১৩) ৩রা জুলাই  প্রথম নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ড. মুহাম্মদ মুরসিকে মিশরের সেনা-সরকার ক্ষমতাচ্যুত করে এবং তার কিছুদিন পর ডিসেম্বর মাসে নিষিদ্ধ করে ‘ইখওয়ানুল মুসলিমিন’কে আরবী ভাষায় ‘ইখওয়ানুল মুসলিমিন’এর ইংরাজী ভাষায় নাম হলো ‘মুসলিম ব্রাদারহুড’ ।   মুরসিকে মিশরে  ক্ষমতায় নিয়ে আসার পশ্চাতে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছিলো ‘মুসলিম ব্রাদারহুড’ তথা ‘ইখওয়ানুল মুসলিমিন’ সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলিকে নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি সৌদি আরব কাতার থেকে তার রাষ্ট্রদূতকে প্রত্যাহার করে নিয়েছে । এরও একটি গভীর তাৎপর্য রয়েছে । তাৎপর্যটি হলো  - মিশর সরকার যে কাতারের আল জাজিরা টিভি চ্যানেলকে সে দেশের মাটিতে নিষিদ্ধ করেছে তাকে মান্যতা দেওয়া ও তার পাশে দৃঢ়ভাবে দাঁড়ানো । প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে কাতারের এই  আল জাজিরা চ্যানেলটি  মুসলিম  সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলি যেখানে যেখানে ‘পবিত্র’ জিহাদের নামে  সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ পরিচালনা করে তাদের পক্ষে কাজ করে থাকে । সৌদি প্রশাসন সন্ত্রাসবাদী মুসলিম সংগঠনগুলির বিরুদ্ধে আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ করেছে । তা হলো প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি ডিক্রি জারি করে সে দেশের নাগরিকদের উদ্দেশ্যে জানিয়েছে যে, যাদের বিরুদ্ধে বিদেশে ‘জিহাদে’ যুক্ত থাকার  প্রমাণ পাওয়া  যাবে তাদের ৩ থেকে  ৩০ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড  দেওয়া হবে
সৌদি আরবের সিদ্ধান্ত মুসলিম জঙ্গী সংগঠনগুলিকে জোড় ধাক্কা দেবে
মুসলিম সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলির বিরুদ্ধে সৌদি আরবের এই কঠিন পদক্ষেপগুলি বিশ্বরাজনীতিতে, বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে ও আফ্রিকার মুসলিম দেশগুলিতে সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলবে । এই প্রভাব হবে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সন্ত্রাসবাদী মুসলিম জঙ্গীসংগঠনগুলির ক্ষেত্রে নেতিবাচক এবং গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষ ও শান্তি-সম্প্রীতি-সৌহার্দের পক্ষে ইতিবাচক । কারণ,  একঃ সৌদি আরবে যেহেতু  মুসলমানদের প্রধান তীর্থক্ষেত্র হযরত মুহাম্মদ এবং তাঁর সাহাবী ও বংশধরদের স্মৃতি বিজড়িত  মক্কা ও মদিনা অবস্থিত, তাই সে দেশের সরকারের নেওয়া যে কোনো সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপের একটা গভীর প্রভাব সাধারণভাবে বিশ্বের মুসলমানদের ওপর পড়েই ।  দুইঃ ‘মুসলিম ব্রাদারহুড’কে   সন্ত্রাসবাদী সংগঠন হিসেবে এর পূর্বেই মিশর, সিরিয়া ও রাশিয়া চিহ্নিত ও  নিষিদ্ধ করেছে এবং  মিশর  এরও বহু আগে দুবার ( ১৯৪৮ ও ১৯৫৪ সালে ) ‘মুসলিম ব্রাদারহুড’কে  নিষিদ্ধ করেছিলো । তবুও  আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সন্ত্রাসবাদী সংগঠন হিসেবে ‘মুসলিম ব্রাদারহুডে’র নাম বিশেষ শোনা যায় নি । ফলে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে তাদের খুব অসুবিধায় পড়তে হয় নি বরং  মিশর, রাশিয়া ও সিরিয়ার তাদের বিরুদ্ধে তোলা অভিযোগকে তারা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলে এতদিন যে প্রচার করে এসেছে সেটাই বেশী মান্যতা পেয়ে এসেছে । এবার সৌদি আরবের সরকা তাদের নিষিদ্ধ ঘোষণা করায় আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে এই সংগঠনটি  অনেকটাই কোনঠাসা হয়ে পড়বে । তিনঃ ‘মুসলিম ব্রাদারহুড’ মিশরের একটি সংগঠন হলেও  ব্যাপ্তি ও বিশালত্বের দিক থেকে এটা একটা আন্তর্জাতিক সংগঠন যার নেটওয়ার্ক ছড়িয়ে রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যে ও আফ্রিকার প্রায় সমস্ত দেশে । ফলে মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার প্রায় সমস্ত  দেশগুলিতে ‘মুসলিম ব্রাদারহুড’ সর্বদাই সক্রিয় ভূমিকা নিতে সক্ষম এবং নিয়েও থাকে‘মুসলিম ব্রাদারহুড’ দুভাবেই কাজ করে থাকে । একটা গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ধারা আর একটি জেহাদী সন্ত্রাসবাদী ধারা । গণতান্ত্রিক  ধারায় কাজ করার জন্যে বিভিন্ন দেশে তারা আলাদা আলাদা নামে রাজনৈতিক দল  গঠন করেছে । বাহরিনে তাদের রাজনৈতিল সংগঠনের নাম Al – Menbar Islamic Society, জর্ডনে Islamic Front, ইরাকে Iraqi Islamic Party, কুয়েথে Hadas, ইয়েমেনে Yemeni Congregation for Reform, মরক্কোয় Justice and Development Party, আলজিরিয়ায় Movement for the Society Peace (MSP), সুদানে Islamic Charter Front, সোমালিয়ায় Harkat al – Islah or Reform Movement ইত্যাদি সকল দেশের সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলিকেই ‘মুসলিম ব্রাদারহুড’  নিয়ন্ত্রণ করে মিশর থেকে ।  আর স্বদেশে তথা মিশরে তাদের রাজনৈতিক সংগঠনের নাম The Freedom and Justice Party(FJP). মুরসি প্রেসিডেন্ট পদে লড়াই করে জিতেছিলো এই পার্টিরই প্রতিনিধি হয়ে । সেক্ষেত্রে বলা বাহুল্য  যে প্রধান ভূমিকা নিয়েছিলো ‘মুসলিম ব্রাদারহড’ই । গত বছর ৩রা জুলাই মুরসিকে সেনাবাহিনী ক্ষমতা থেকে উৎখাত করলে তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদের নামে যে সশস্ত্র হিংসাত্মক আন্দোলন চলছে তার নেতৃত্বে রয়েছে ঐ ‘মুসলিম ব্রাদারহুড’ই । আমাদের দেশের  আরএসএস ও বিজেপির মতো অনেকটাই যেখানে বিজেপি কোন নীতি নেবে, কোন পথ নেবে তা ঠীক করে আরএসএস, আর বিজেপি তা কার্যকরী করে বা করার চেষ্টা করে । ‘মুসলিম ব্রাদারহুড’ও নীতি, কৌশল ও কর্মসূচী স্থির করে দেয় আর তাদের রাজনৈতিক শাখা সংগঠনগুলি তা বাস্তবায়িত করে রাজনৈতিক সংগঠনের আড়ালে মুসলিম ব্রাদারহুড তার আসল (সন্ত্রাসবাদী) চেহারা গোপন করে রাখে যাতে সাধারণ শান্তিপ্রিয় মুসলমানদের দলে টানা যায় এভাবে কাজ করে তারা সর্বত্রই সুফলও লাভ করেছে । এভাবে আশি বছর ধরে চেষ্টা চালিয়ে মিশরে ওরা ক্ষমতায় আসতে পেরেছিলো ।  মুখে গণতন্ত্রের শ্লোগান, আর আসল উদ্দেশ্য হলো ইসলামি রাষ্ট্র কায়েমের জন্যে জেহাদ করা – এই যে ধোঁকা দিয়ে মুসলমানদের কাছে যাওয়া এবং তারপর দলে টেনে জেহাদে সামিল করার কাজ চালিয়ে আসছিলো তারা সে কাজটি আবার অনেকটাই ধাক্কা খাবে । 
কেন এই সংঘাত
সৌদি আরবের সঙ্গে মুসলিম ব্রাদারহুড সহ অন্যান্য মুসলিম জঙ্গী সংগঠনগুলির এই সংঘাত বিশ্বের মুসলমান সমাজের কাছে একেবারেই আশাতীত ও হতাশাব্যঞ্জক । কারণ, আদর্শগতভাবে দুটো শক্তিই একই মত ও পথের অনুসারী । উভয় শক্তিই প্যান ইসলামের নীতিতে বিশ্বাসী ও তার জন্যেই কাজ করে যাচ্ছে । উভয়েই সুন্নী মুসলমান গোত্রের অন্তর্ভুক্ত । উভয়েই চায় প্রত্যেকটি দেশে এবং সারা বিশ্বে পরিপূর্ণ ইসলামিক শাসনব্যবস্থা তথা ইসলামিক রাষ্ট্র-ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত বা প্রতিস্থাপন করতে । পৃথিবীতে পঞ্চাশের উপর মুসলমান অধ্যুষিত দেশ থাকলেও অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে সম্পূর্ণরূপে ইসলামি রাষ্ট্রব্যবস্থা কায়েম করেছে এমন একটিও দেশ নেই । তবে দু/তিনটি দেশ আছে যারা অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে প্রায় একশ শতাংশই ইসলামি রাষ্ট্রব্যবস্থা স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে । সেই দেশগুলির মধ্যে একটি হলো সৌদি আরব । সৌদি আরবে নারী সম্পূর্ণরূপে গৃহবন্দী ও বোরখাবন্দী ।  অবাধে চলাফেরা করা, লেখাপড়া করা, গান-বাজনা করা, চাকরি করা বা ব্যবসা করা, গাড়ি ড্রাইভ করা – এরূপ কোনো স্বাধীনতা ও অধিকার তাদের নেই । মুশরিক তথা বিধর্মীরা সে দেশে ২য় বা ৩য়, ৪র্থ শ্রেণির নাগরিক । সে দেশে নাগরিকদের ১০০%ই মুসলমান, কারণ মুসলমান ছাড়া অন্য ধর্ম সম্প্রদায়ের মানুষদের সে দেশে নাগরিকত্ব পাওয়ার অধিকার নেই । এমনকি বিধর্মীদের নিজ নিজ ধর্মাচরণেরও কোনো অধিকার নেই ।  গীর্জা, মন্দির, গুরুদ্বারা প্রভৃতি বিধর্মীয় উপাসনালয় স্থাপন করা সে দেশে দন্ডনীয় অপরাধ । ‘পবিত্র’ রমজান মাসে বিধর্মীদেরও দিনের বেলায় পানাহার করা দন্ডনীয় অপরাধ । সে দেশের ফৌজদারী অপরাধের শাস্তি প্রত্যেকটি ক্ষেত্রেই কোরান সম্মত যা সম্পূর্ণ রূপেই অমানবিক, মানবাধিকারবিরোধী,মানবতাবিরোধী ও নৃশশতম । চোরের শাস্তি হাত কেটে নেওয়া, ব্যভিচারের শাস্তি অপরাধীকে বুক পর্যন্ত মাটিতে পুঁতে প্রকাশ্যে বহুলোককে জড়ো করে তাদের সামনে পাথর ছুঁড়ে মেরে হত্যা করা ইত্যাদি । এতো যাকে বলে ‘আদর্শ’ ইসলামি রাষ্ট্র ঠিক তাই ।    ‘মুসলিম ব্রাদারহুড’ ও মুসলিম জঙ্গী সংগঠনগুলি বিশ্বের সর্বত্র যে ‘আদর্শ’ ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার  ‘মহান’ লক্ষ্য নিয়ে  ‘পবিত্র’ জেহাদে মত্ত রয়েছে এবং অবলীলায় অসংখ্য মানুষের প্রাণ সংহার করে চলেছে সেই ‘আদর্শ’ রাষ্ট্রই তো সৌদি আরবের রাজা সে দেশে কায়েম করেছে । তবে কেন ওদের মধ্যে এই সংঘাত ? কী কারণ রয়েছে এই সংঘাতের পশ্চাতে ?  তো কোটি টাকার প্রশ্নের চেয়েও দামী   
আপাত অবিশ্বাস্য সংঘাতের পশ্চাতে যে যে কারণগুলি কাজ করছে তা নিহিত রয়েছে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে  ইসলামের  মতাদর্শগত অবাস্তব ও অবৈজ্ঞানিক তত্ত্বের মধ্যে  । আল-কায়দা, হামাস, তালিবান ও ব্রাদারহুড প্রভৃতি জেহাদি সংগঠনগুলির সঙ্গে সৌদি আরবের  বিরোধ মূলতঃ সৌদি আরবের বিদেশ নীতি ও পদক্ষেপের প্রশ্নে ।  সৌদি আরবের  পররাষ্ট্র নীতি  এবং সেই নীতির অনুসারী গৃহীত পদক্ষেপগুলি স্পষ্টতঃই ইসলামের বিদেশনীতির পরিপন্থীইহুদীরা মুসলমানদের ঘোষিত শত্রু । কোরানে  একদম স্পষ্ট করেই ঘোষণা দেওয়া হয়েছে সে কথা । স্বভাবতঃই ইহুদী রাষ্ট্র হলো বিশ্বের তামাম  মুসলমানদের কাছেই শত্রু রাষ্ট্র । ইহুদী রাষ্ট্রের সঙ্গে তাই কোনো মুসলিম রাষ্ট্র কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে না । কোরানের ভাষায় সেই ‘অভিশপ্ত’ ইহুদী জাতির রাষ্ট্রকেই সৌদি আরব  স্বীকৃতি প্রদান করেছে যা ইসলামি নীতির ক্ষেত্রে একটা গুরুতর অপরাধ আফগানিস্তান ও ইরাকের উপর ভয়ঙ্কর হানা ও লাদেনকে হত্যার পর আমেরিকা এখন বিশ্বের মুসলিম উম্মাহর কাছে সবচেয়ে বড়ো ও ঘৃণ্যতম শত্রু ।  অথচ সৌদি আরব হলো আমেরিকার  বিশ্বস্ত মিত্র রাষ্ট্রগুলির মধ্যে একটি অন্যতম রাষ্ট্র ।  মিশরের বুক থেকে ইসলামি নীতির মূলোচ্ছেদ করে সে দেশে গামেল নাসের প্রতিস্থাপন করেন একটি ধর্মনিরপেক্ষ আধুনিক রাষ্ট্র । তারপর তাঁর যোগ্য উত্তরসুরী আনোয়ার সাদাত ইসরাইলের সঙ্গে চিরশত্রুতা পরিহার করে সন্ধি চুক্তির মাধ্যমে মৈত্রীর সম্পর্ক স্থাপন করেন । সেই মিশরের সঙ্গেও সৌদি আরব মিত্রতার বন্ধনে আবদ্ধ ।  গত বছর যখন ‘মুসলিম ব্রাদারহুড’ মদতপুষ্ট মুরসির সরকারকে মিশরের সেনাবাহিনী উৎখাত করে তখনও সৌদি আরব মুরসির পাশে দাঁড়ায় নি,  দাঁড়িয়েছিল সেনাবাহিনীর পাশেই সৌদি আরবের রাজা কয়েক বছর আগে ভ্যাটিকানে গিয়েছিলন পোপের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে । সেখানে গিয়ে পোপকে কথা দিয়ে এসেছেন যে খৃষ্টানদের গীর্জা স্থাপন করা ও প্রকাশ্যে ধর্মাচরণ করার অধিকার দেওয়া হবে সে দেশে । সৌদি আরবের রাজা সম্প্রতি নারীদের ভোটাধিকার এবং ভোটে দাঁড়াবার অধিকারও প্রদান করেছে । এমনকি সৌদি প্রশাসনের ‘মজলিশে শুরা’তেও নারীকে ঠাঁই দেওয়া হয়েছে খুব সম্প্রতি । সৌদি আরবের এই পদক্ষেপগুলির জন্যেই ‘পবিত্র’ জেহাদে  নিয়োজিত মুসলিম জঙ্গী সংগঠনগুলির সৌদি আরবের দ্বন্দ ক্রমে বৃদ্ধি পেতে পেতে এখন একেবারে সংঘাত ও সংঘর্ষের স্তরে পৌঁছে গেছে ।
এই সংঘাত ও সংঘর্ষ অনিবার্যই ছিলো, এটা এড়িয়ে যাওয়ার উপায় ছিলো না । সৌদি আরবের রাজা বৈদেশিক ক্ষেত্রে যে নীতি ও পদক্ষেপগুলি গ্রহণ করেছে তা যে ইসলামি নীতির উল্লঙ্ঘণ তা তিনি বিলক্ষণ জানেন । তৎসত্ত্বেও তিনি আভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক পরস্থিতির বাধ্য-বাধকতার কারণে ঐরূপ নীতি ও পদক্ষেপগুলি গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছেন । কী সেই বাধ্য-বাধ্যকতা তা আলোচনার করার বিস্তৃত অবকাশ এখানে নেই । তবুও এ প্রসঙ্গে দু-একটি কথা উল্লেখ করতে চাই । দেশের অভ্যন্তরে আল্লাহ ও আখেরী নবীর দোহাই দিয়ে জনগণকে কোনো ক্ষমতা ও অধিকার দেব না, নারীকে গৃহবন্দী করে রাখবো,  আবার  বিশ্বের সমস্ত অমুসলিম রাষ্ট্রের সঙ্গে ক্রমাগত যুদ্ধ্ব ও সংঘাত চালিয়ে যাবো এমন তত্ত্ব একেবারেই অচল ও অবাস্তব । এই তত্ত্বকে যারা মূর্খ ও ধর্মান্ধ তারাই বাস্তব সম্মত বলে মনে করে ও বিশ্বাস করে । এটা যে কী প্রকার ভয়ঙ্কর মূর্খতা তা ধর্মান্ধরা বুঝতে পারে না ক্ষমতায় যাওয়ার আগে । ক্ষমতাসীন মুসলিম শাসক গোষ্ঠীগুলো তা টের পাচ্ছে প্রতি মুহূর্তে হাড়ে হাড়ে । আল্লাহ ও নবীর উপর মূর্খের মত অন্ধ আনুগত্য ও বিশ্বাস স্থাপন করে সকল অমুসলিম রাষ্ট্রকে শত্রু ভেবে তাদের সঙ্গে সংঘাতে গেলে তার কী পরিণাম হয় তা হাড়ে হাড়ে বুঝছে সাদ্দামের বাথ পার্টি, লাদেনের আল-কায়দা ও আফগানিস্তানের মোল্লা ওমরের তালিবান গোষ্ঠী ।  নিজের অভিজ্ঞতায় ও অন্যদের দেখে সৌদি আরবের রাজা উপলব্ধি করেছেন সেই নির্মম ও কঠিন-কঠোর সত্য কথাটা । তাই আমেরিকা, ইসরায়েল, মিশর প্রভৃতি ইসলামী আদর্শের পরিপন্থী রাষ্ট্রগুলির সঙ্গে  মিত্রতার সম্পর্ক স্থাপন করতে বাধ্য  হয়েছেন  বাধ্য হচ্ছেন  পোপের সঙ্গে শত্রুতার সম্পর্ক ছেড়ে অনিচ্ছা সত্ত্বে হলেও ধীরে ধীরে সুসম্পর্ক গড়ে তোলার দিকে এগিয়ে যেতে । বাধ্য হচ্ছেন নারীর জন্যে একটু একটু করে হলেও বদ্ধ মুষ্টি আলগা করতে ।  
ভারতের মৌলবাদী মুসলমানরা সৌদি আরবের ওপর বেজায় চটেছে
ভারতের মুসলমান সমাজের বুদ্ধিজীবীরা এবং ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ অহরহ দাবী করে থাকেন যে ইসলামই হলো একমাত্র  শান্তির ধর্ম এবং  ইসলামের নীতি অনুসরণ করেই কেবল বিশ্বে শান্তি স্থাপন করা সম্ভব । তাঁদের আরও দাবী ইসলাম গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাস করে এবং পৃথিবীর বুকে মুহাম্মদই সর্বপ্রথম গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা  স্থাপন করে তার প্রমাণ রেখে গেছন । মুসলিম সন্ত্রাসবাদীরা বিশ্বজুড়ে যখন সন্ত্রাসবাদী কর্মকান্ড চালিয়ে অবাধে অসংখ্য নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করে তখন এই বুদ্ধিজীবীরা তারজন্যে কখনই ইসলামকে দোষারোপ করেন না । তাঁরা ইসলাম কখনই সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ সমর্থন করে না বলে হাত ধুয়ে ফেলেন । মুসলিম বুদ্ধিজীবীরা কি সত্যিই বিশ্বাস করেন যে ইসলাম খনু-সন্ত্রাস সমর্থন ও অনুমোদন করে না ?  এ প্রশ্ন কিন্তু বহু মানুষের ।  সন্ত্রাসবাদী কর্মকান্ডের প্রশ্নে ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ  সাধারণতঃ নীরবই থাকেন এবং এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে এড়িয়ে যান ।  তবে পীড়াপীড়ি করলে তাঁরাও ঐ রকম বুদ্ধিজীবী সুলভ ঢঙে উত্তর দিয়ে থাকেন ।  তবে তাঁরা উত্তর দেন মিন মিন করে, হৃদয়ের গভীর থেকে যে উত্তরটা আসে না তা বোঝা যায় ।  যদি সত্যিই এমনটা হয় যে ইসলামে হিংসা, খুন ও সন্ত্রাসের স্থান নেয় এবং ইসলাম সত্যিই শান্তির ধর্ম এবং ভারতের মুসলিম সমাজের ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ ও  বুদ্ধিজীবীগণও সত্যি  সত্যিই শান্তির পূজারী, তাহলে সৌদি আরবের সরকারকে তাঁদের সমর্থন জানানোর কথা । কারণ ‘মুসলিম ব্রাদারহুড’, ‘হামাস’ প্রভৃতি সংগঠনগুলি যে ইসলামি জেহাদে তথা সন্ত্রাসবাদী কর্মকান্ডে বিশ্বাসী ও লিপ্ত তা নিয়ে সংশয় বা সন্দেহের একটুও অবকাশ নেই ।  কিন্তু এই সংগঠনগুলিকে নিষিদ্ধ করার জন্যে ভারতের মুসলিম সমাজের ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ ও বুদ্ধিজীবীগণ সৌদি আরবের প্রতি তুষ্ট না হয়ে বেজায় চটেছেনএবং সেই মনোভাব তাঁরা হজম করতে পারছেন না,  বরং ভীষণ কড়া ভাষাতেই সৌদি সরকারের সিদ্ধান্তের নিন্দা, সমালোচনা ও প্রতিবাদ  জানাতে একটুও দ্বিধা করছেন না   সৌদি আরবের বিরুদ্ধে জ্বালায়, ক্ষোভে ও ক্রোধে ওঁরা কত ফুঁসছেন তা  কলকাতায় মুসলিম বুদ্ধিজীবীরা যে সব পত্র-পত্রিকা ( কলম, মিযান, নতুন গতি প্রভৃতি) নিয়মিত বের করেন সেগুলির পাতায় চোখ রাখলেই  টের পাওয়া যায় । ১১ই মার্চ  দৈনিক সংবাদ পত্র ‘কলম’ সৌদি আরবের বিরুদ্ধে প্রথম পাতাতেই চার কলাম জুড়ে একটি হেডলাইন সহ একটি  সংবাদ ছেপেছে । সংবাদে যে খবরটি আছে তা হলো, লখনউয়ের প্রখ্যাত ইসলামি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘নদওয়াতুল উলামা’ সৌদি সরকারের সফররত প্রতিনিধি দলকে বয়কট করেছে সন্ত্রাসবাদী ঐ সংগঠনগুলিএক নিষিদ্ধ করার প্রতিবাদে ।  পত্রিকাটি দাবী করেছে যে আমেরিকার চাপে সৌদি আরবের সরকার মাথা নত করেছে  পত্রিকাটি মিশরের ‘মুসলিম ব্রাদারহুডে’র নেতা আমর আবদেলকে উদ্ধৃত করে লিখেছে যে, এর ফলে মুসলিম ব্রাদারহুডের কর্মীদের মনোবল ভাঙবে না এবং তাদের আন্দোলনও থামবে না ।  উপর উক্ত প্রত্যেকটি কাগজেই ঐ একই সুরে সৌদি আরবের বিরুদ্ধে নিন্দা ও সমালোচনার ঝড় বইছে একদিকে, আর একদিকে ‘মুসলিম ব্রাদারহুড’, ‘হামাস’ সহ নিষিদ্ধ  সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলির প্রতি সহানুভূতি ও সহমর্মিতা জ্ঞাপন করা হচ্ছে  
এই ঘটনায় একটা বিষয় আমাদের কাছে স্পষ্ট হয়ে ওঠছে, তা হলো ঐ ধর্মীয় নেতা ও বুদ্ধিজীবীরা ইসলাম শান্তির ধর্ম বলে যে দাবী করে তা তাদের আসল কথা নয়, এবং আসলে তাঁরা মুসলিম সন্ত্রাসবাদী সংগঠন ও তাদের নেতা-কর্মীদের প্রতি প্রচন্ড সহানুভূতিশীল ও শ্রদ্ধাশীল । কিন্তু ভারতের মাটিতে সে মনোভাব তো প্রকাশ করা যায় না, সম্ভব নয়, তাই তাঁরা মনের আসল কথা মনের গভীরে গোপন করে রেখে নকল কথা বলেন । আসলে বলতে বাধ্য হন  এ হচ্ছে ভারতবাসী হিসেবে তাঁদের বাধ্য-বাধকতা । পরিস্থিতির বাধ্য-বাধ্যকতায় তো অনেক কিছুই আপোষ করতে হয় – এটাই তো দস্তুর । সৌদি আরব যেমন অনিচ্ছা সত্ত্বেও আমারিকা, ইজরাইল, মিশর প্রভৃতি রাষ্ট্রের সঙ্গে মৈত্রী স্থাপন করে, ইজরায়েলকে স্বীকৃতি দিয়ে, পোপের কাছে গিয়ে খৃষ্টানদের জন্যে কিছু ছাড় দিতে সম্মত হয়ে, ঘরে বাইরে মুসলিম মৌলবাদীদের বিরাগভাজন হয়েছে ।  ভারতের মুসলিমদের এভাবে কতই না আপোষ করতে হচ্ছে  - মনে প্রাণে কোরান-হাদিসকে মেনেও তাঁদের বলতে হয় ও হচ্ছে গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষ ও শান্তির কথা ।

Saturday, March 8, 2014

মানব সমাজের কল্যাণে মরণোত্তর দেহ দান করা একটা আবশ্যিক কর্তব্য


মানুষ হলো প্রাণীজগতের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ প্রাণী। শ্রেষ্ঠ তার মস্তিষ্কের অপরিমিত সর্বপ্রকার ক্ষমতার জন্যে। মানুষের প্রথম আবির্ভাব ২৬ লক্ষ বছর পূর্বে। আর আধুনিক মানুষের (আকার আকৃতির দিক থেকে) উওরণ ঘটে ১ লক্ষ ১৫ হাজার বছর পূর্বে। ভারতে আধুনিক মানুষের সন্ধান পাওয়া যায় ৬০-৭০ হাজার বছর পূর্বে। মানুষের জন্মের আগে ও পরে সৃষ্টি হওয়া হাজার হাজার প্রজাতি কবেই বিলুপ্ত হয়ে গেছে। প্রাকৃতিক পরিবেশে নিরন্তর পরিবর্তন ঘটে থাকে। সেই পরিবর্তনের সঙ্গে যারা নিজেদের খাপ খাওয়াতে পারেনা তারা বিলুপ্ত হয়। কিন্তু মানুষ বিলুপ্ত হয়নি। মানুষ শুধু টিকে নেই, তার অস্তিত্ব ও অবস্থানকে অনেক অনেক  উন্নত ও শক্তিশালী করেছে এবং  ক্রমাগত করে চলেছে।
মানুষ যেমন একধারে প্রকৃতির সঙ্গে সংগ্রাম করে তার নিরন্তর পরিবর্তনের সঙ্গে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে সক্ষম হয়েছে, তেমনি বহু ক্ষেত্রে প্রকৃতির প্রতিকূলতাকে জয় করে প্রকৃতিকে নিজের অনুকূলে নিয়ে এসে নিজেদের জয়যাত্রা অব্যাহত রাখতে সক্ষম হয়েছে। বিশ্ব প্রকৃতির ভান্ডার নানা রকম সম্পদে টইটম্বুর যে সম্পদের উপর প্রাণী হিসাবে কেবল মানুষই তারই আধিপত্য স্থাপন করেছে। সেই সম্পদ ব্যবহার করে মানুষ তার শারিরীক, জৈবিক, মানসিক, বৌদ্ধিক, সাংস্কৃতিক প্রভৃতি চাহিদাগুলি পূরণ করে মানব সমাজের উন্নতি ও বিকাশের ধারাকে অব্যাহত রাখতে সক্ষম হয়েছে। প্রকৃতির উপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা অসম্ভব। কিন্তু মানুষ কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রকৃতির উপর নিয়ন্ত্রণ স্থাপন করেছে তা অনস্বীকার্য। খরা ও বন্যার উপর মানুষ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে। স্থাপন করেছে সূর্যালোকের উপরেও অনেকখানি নিয়ন্ত্রণ। পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তিকে পরাস্ত করে মানুষ মহাকাশে পাড়ি দিয়েছে এবং সেখানে দীর্ঘ সময় ধরে অবস্থান করে গবেষণা কার্য পরিচালনা করছে। আরও উদাহরন আছে। এভাবেই মানুষ প্রকৃতির সঙ্গে সংগ্রামে ক্রমাগত সাফল্য অর্জন করে চলেছে। সে জন্যেই পৃথিবীর অস্তিত্ব যতদিন থাকবে মানুষও থাকবে, এই প্রজাতির প্রাণীটির বিলুপ্তি ঘটবে না।
পরিবর্তনশীল পরিবেশের সঙ্গে শুধু খাপ খাওয়ানো নয়, মানুষকে প্রথম থেকেই পরিবেশকে দূষণ থেকে রক্ষা করার দিকেও দৃষ্টিপাত করতে হয়েছে। আদিম যুগে যখন মানুষের বিজ্ঞানের কোনো জ্ঞান ছিল না তখন থেকেই, শুধু অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞানের উপর ভর করেই। মৃত দেহের সৎকার করেছে মানুষ মানব সমাজের সেই ঊষালগ্ন থেকেই। প্রাণীর মৃত্যুর পর মৃতদেহে যে পচনক্রিয়া হয় তার ফলে পরিবেশ বসবাসের অনুপযুক্ত হয়ে পড়ে। আমরা এখন এর কারণ জানি, কিন্তু সে যুগের মানুষ জানত না। কিন্তু মানুষ এটা জীবনের অভিজ্ঞতায় বুঝেছিল যে মৃতদেহ ঘরে বা পাশে নিয়ে  বাঁচা যায় না, সুতরাং এর বিহিত করা আবশ্যক। মানুষ বাঁচার তাগিদেই পরিবেশকে বসবাসের উপযুক্ত করে রাখতেই মৃতদেহের সৎকার প্রক্রিয়া শুরু করেছিল। সেই আদিম যুগে মানুষ ঈশ্বর, ঈশ্বরের ধর্ম এসব কথা শোনেই নি। তাই পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে বসবাসকারী মানব গোষ্ঠী এক এক যায়গায় এক এক রকম উপায়ে মৃতদেহের সৎকার করতো। কোথাও সমুদ্রের জলে ভাসিয়ে দিতো, কোথাও পুড়িয়ে দিতো, কোথাও  মাটিতে পুঁতে দিতো, আবার কোথাও পাহাড়ের অনেক উপরে উঠে নিরাপদ দুরত্বে রেখে দিত। সেই প্রক্রিয়াগুলি আজও অব্যাহতো রয়েছে, পার্থক্য শুধু এক জায়গাতেই, প্রত্যেকটি সৎকার প্রক্রিয়াতে ঈশ্বরকেন্দ্রিক ধর্মের নানারূপ বিধি-বিধান যুক্ত করা হয়েছে মাত্র। আর পদ্ধতিগত দিক থেকে অনেকটা ধোপদুরস্ত ও পরিশীলিত করা হয়েছে এই যা। প্রাচ্যের অধিকাংশ মানুষ যদিও এগুলো ঈশ্বর প্রদত্ত বিধান বলে বিশ্বাস করে এবং অনুসরণ করে, কিন্তু এগুলো যে মানুষের মনগড়া বিধান তা একটু গভীরভাবে চিন্তা করলে বোঝা যায়।
এযুগে বিজ্ঞানের সমস্ত শাখায় অকল্পনীয় অগ্রগতি ঘটেছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ক্ষেত্রেও অগ্রগতি ঘটেছে অনুরূপভাবে। এর ফলে প্রাণির মৃতদেহ সম্পর্কে, বিশেষতঃ মানুষের মৃতদেহ সম্পর্কে অতীতের ধ্যান-ধারণার ক্ষেত্রে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। অনুরূপ পরিবর্তন এসেছে পরিবেশবিজ্ঞানের ক্ষেত্রেও। মৃতদেহকে মানব সমাজের কল্যাণে কোনোদিন ব্যবহার করা যেতে পারে এবং মানুষের কাজে আসতে পারে এমন চিন্তাভাবনা অতীতে মানুষের কল্পনাশক্তিতেও ঠাঁই পায় নি। চিকিৎসাবিজ্ঞানের অবিশ্বাস্য অগ্রগতি ও উন্নতির ফলে এটা আজ সর্বজনবিদিত যে মানুষের মৃতদেহকে এখন মানব সমাজের কল্যাণে নানাভাবে কাজে লাগানো হচ্ছে। চিকিৎসাবিজ্ঞান আজ প্রমাণ করেছে যে মানুষের মৃতদেহ আর নষ্ট করে দেবার মতন অপ্রয়োজনীয় বা পরিবেশের দূষণ ঘটানোর মত ক্ষতিকর জড় বস্তু নয়। এ ছাড়া পরিবেশবিজ্ঞান আমাদেরর কাছে আর একটা জিনিষ প্রমাণ করেছে যে, মৃতদেহ সৎকার করার চালু পদ্ধতিগুলি প্রাচীনকালে পরিবেশ সুরক্ষার প্রশ্নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও বর্তমান যুগে তার উপযোগিতা ও কার্যকারিতে রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। মৃতদেহ সৎকারের সর্বাধিক প্রচলিত পদ্ধতি দাহ করা হোক কিংবা কবরস্থ করা হোক উভয় পদ্ধতিই পরিবেশের কাছে কমবেশী হুমকি হয়ে উঠেছে। সৎকারের এই প্রক্রিয়াগুলি কীভাবে পরিবেশের কাছে হুমকি হয়ে উঠেছে সে বিষয়ে আলোকপাত করার অবকাশ নেই এই নিবন্ধে যদিও এটা এই নিবন্ধের বিষয়ের সঙ্গে অঙ্গাঅঙ্গীভাবে যুক্ত। যদি সময় ও সু্যোগ আসে তবে এটা নিয়ে পরে আলোচনা করার প্রয়াস করা হবে। এখন সেই আলোচনায় ফেরা যাক যেটা এই নিবন্ধের প্রধান আলোচ্য বিষয়। একটু উপরে উল্লেখ করা হয়েছে যে মানুষের মৃতদেহ এখন পুড়িয়ে বা পুঁতে দিয়ে নষ্ট করে ফেলার মত অকেজো বা ক্ষতিকর জড় বস্তু নয় । মানবসমাজের কল্যাণে মানুষের মৃতদেহগুলি প্রভূত পরিমাণে অবদান রাখতে সক্ষম। কিন্তু ধর্মীয় কুসংস্কার বশতঃ মানুষের মৃতদেহগুলি যেহেতু আমরা নষ্ট করে ফেলি, তাই এই সৎকার পদ্ধতিগুলি মানবসমাজের কল্যাণ ও বিকাশের ক্ষেত্রে একটা বড়ো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। কীভাবে মানুষের মৃতদেহ আমারে মানব সমাজের কল্যাণে লাগাতে পারি কিংবা মৃতদেহ সৎকারের প্রচলিত পদ্ধতি ও রীতিনীতর পরিবর্তে বিকল্প কি উপায়ে আমরা সৎকার করতে পারি তা এবার দেখা যাক।
মানুষের মরণোত্তর দেহ দু রকম উপায়ে মানব সমাজের কল্যাণে কাজে লাগানো সম্ভব। এক). চিকিৎসা বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের জন্যে এই দেহ একান্তই আবশ্যক। কারো পক্ষে শুধু বই পড়ে একজন উপযুক্ত চিকিৎসক হওয়া সম্ভব নয়, চিকিৎসা বিজ্ঞানী হওয়া তো অনেক দূরের কথা।  মানুষের চিকৎসক হোক, কিংবা পশু চিকিৎসক, উভয়ক্ষেত্রেই শিক্ষার্থীকে শবদেহের ব্যবচ্ছেদ করেই শিক্ষা অর্জন করতে হবে। দুই). চিকিৎসাবিজ্ঞানের ব্যাপক উন্নতির ফলে এখন মানুষের মৃতদেহের অঙ্গগুলি জীবিত মানুষের দেহে প্রতিস্থাপন করা সম্ভব হচ্ছে। ফলে প্রতিদিনই বিশ্বের নানাপ্রান্তে অসংখ্য মরণাপন্ন মানুষজন নতুন জীবন লাভ করছে।
এখন প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক যে, মানুষ মারা গেলে তো তার অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলিরও মৃত্যু ঘটবে, তাহলে মৃত্যুর পর মানুষের মৃতদেহের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ প্রতিস্থাপনের কথা উঠছে কেন? না, মানুষের এ ধারণা সঠিক নয়। মানুষের মৃত্যু হলে সঙ্গে সঙ্গে শরীরের সকল অঙ্গপ্রত্যঙ্গের মৃত্যু হয় না। এ বিষয়ে আমাদের প্রথমেই যে কথাটা বুঝতে হবে যে মানুষের মৃত্যু সম্পর্কে আমাদের প্রচলিত সকল ধারণা ও বিশ্বাসগুলি ঠিক নয়। মৃত্যু কী এবং কীভাবে হয় সে বিষয়ে মানুষের যে ধারণা ও বিশ্বাস তা ধর্মগ্রন্থসমূহ থেকে পাওয়া।  ধর্মগ্রন্থ ঈশ্বরের রচিত বিধান বলে প্রাচ্যের অধিকাংশ মানুষ বিশ্বাস করলেও প্রকৃত ঘটনা তা নয়। প্রত্যেকটি ধর্মগ্রন্থই মনুষ্য দ্বারা রচিত এবং তাঁরা কেউই যে বৈজ্ঞানিক ছিলেন না তা বলা বাহুল্য। তাই মৃত্যু সম্পর্কে মানুষের প্রচলিত ধ্যানধারণা ও বিশ্বাসগুলির বিন্দুমাত্র বৈজ্ঞানিক ভিত্তি ও সত্যতা নেই। মৃত্যু সম্পর্কে চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরীক্ষালব্ধ প্রমাণিত আবিষ্কার ও জ্ঞানগুলি না জানার কারণে মানুষ ভ্রান্ত ধারণার শিকার হন। মানুষের মৃত্যু হওয়া মানে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় মস্তিষ্কের মৃত্যু হওয়া। মস্তিষ্কের মৃত্যু কারো জীবন ফিরিয়ে দেওয়া যায় না সত্য, কিন্তু চিকিৎসা বিজ্ঞানের একটি যুগান্তকারী আবিষ্কার হলো – মস্তিষ্কের মৃত্যুর সাথে সাথে মানব দেহের অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলির মৃত্যু হয় না, সেগুলি কয়েকঘণ্টা জীবিত ও সক্রিয় থাকে অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলি সক্রিয় থাকাকালীন শবদেহ থেকে সফলভাবে বিচ্ছিন্ন করে সংরক্ষণ করা ও অন্য জীবিত মানুষের দেহে প্রতিস্থাপন করা সম্ভব। এরূপ অঙ্গ প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে মূমুর্ষ রোগীকে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচানো ও তাকে নবজীবন প্রদান করা সম্ভব।এখন দেখা যাক কোন কোন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলি প্রতিস্থাপন করা সম্ভব ও করা হচ্ছে । মানব দেহের প্রতিস্থাপনযোগ্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলি হলো - ১). কর্ণিয়া, ২). বৃক্ক বা কিডনি, ৩). হৃৎপিন্ড বা হার্ট, ৪). ফুসফুস, ৫). অগ্ন্যাশয় বা প্যানক্রিয়াস, ৬). যকৃত বা লিভার, ৭). হাড়, ৮). মজ্জা, ৯). চামড়া, এবং ১০). রক্তআমরা প্রায় সকলেই অবগত যে একজন মানুষের দেহ থেকে কিডনি নিয়ে অন্য জনের দেহে সাফল্যের সঙ্গে প্রতিস্থাপন করার কাজকে আমাদের চিকিৎসক বন্ধুরা প্রায় জলভাতের মতো সহজ করে তুলেছেন। আমরা প্লাস্টিক সার্জারীর কথাও কমবেশী সকলেই অবহিত। প্লাস্টিক সার্জারীর অর্থ হলো শরীরের এক স্থানের চামড়া অন্যস্থানে প্রতিস্থাপন করা। হৃদযন্ত্রের বাইপাস (bypass) সার্জারীর সময় দেহের হাত বা পায়ের শিরা থেকে কিছুটা কেটে নিয়ে তা দিয়ে হৃদযন্ত্রে প্রতিস্থাপন করতে হয়। এ ধরণের সার্জারী বা শল্য চিকিৎসা তো সাফল্যের সঙ্গে এখন আকছার হচ্ছে। দেহের এক জায়গার হাড় কেটে অন্য জায়গায় প্রতিস্থাপন করা যে হয় এটা জানেনা এমন মানুষ খুব কমই আছেন।  এখন যকৃত স্থাপনেও সাফল্য এসেছে আমাদের দেশে। প্রতিস্থাপন করা হচ্ছে মানুষের ফুসফুস ও প্যানক্রিয়াস তথা অগ্ন্যাশয়ও। ব্লাড ক্যানসার আক্রান্ত রোগী কিংবা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার অভাবজনিত রোগের শিকার এমন রোগীদের দেহে অস্থিমজ্জা এখন সাফল্যের সঙ্গে প্রতিস্থাপন করে রোগীকে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচানো সম্ভব হচ্ছে। অসংখ্য মানুষ জন্মের পর নানা কারণে অন্ধ হয়ে যায়। এই সমস্ত মানুষের জীবন তখন পৃথিবীর আলো, রঙ,রূপ ও দৃষ্টিনন্দনসৌন্দর্য থেকে বঞ্চিত হয়ে এবং কর্মক্ষমতা হারিয়ে দুর্বিষহ হয়ে ওঠে।  মৃত্যুর ৬ ঘন্টার মধ্যে দুটি চোখ তুলে নিয়ে তার অক্ষিপট(রেটিনা) সংরক্ষণ করলে চোখ দুটি নষ্ট হয় না। ঐ চোখ দুটি দু’জন অন্ধ মানুষের অন্ধত্ব নিরসন করে তাদের দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিতে পারে। এ ভাবে কর্ণিয়া প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ অন্ধ মানুষকে দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব। চিকিৎসা বিজ্ঞানের এই মহাসাফল্যকে আমরা মানব কল্যাণে পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারছি না। তার প্রধান কারণ মানুষের ধর্মীয় কুসংস্কার। মানুষ ধর্মীয় কুসংস্কারের বশে শবদেহগুলি হয় পুড়িয়ে না হয় মাটিতে পুঁতে নষ্ট করে ফেলছেন।
চিকিৎসাবিজ্ঞানের অবিশ্বাস্য উন্নতি ও অগ্রগতি সত্ত্বেও এখনও বহু মানুষ অজানা রোগে মারা যায়। অজানা রোগগুলির কারণগুলি জানতে না পারলে এই মৃত্যু বন্ধ করা যাবে না। সে জন্যেই অর্থাৎ অজানা রোগের কারণগুলি অনুসন্ধান করার জন্যে মৃতদেহগুলির উপর পরীক্ষানিরীক্ষা চালানো একান্ত জরুরী। এই পরীক্ষাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় বলে ‘অটোপসি’ (Autopsy ) পরীক্ষা। অজানা রোগে মৃত্যুর পর শবদেহগুলি ধর্মীয় বিধি মেনে নষ্ট করার ফলে এই জরুরী কাজটি ব্যহত হচ্ছে। ধর্মীয় কুসংস্কারবশতঃ তাই মৃতদেহ নষ্ট না করে আমাদের একান্ত জরুরী কর্তব্য হলো সেগুলি মেডিক্যাল কলেজে দান করা। তা করতে পারলে অসংখ্য মানুষের অকাল মৃত্যু প্রতিরোধ করা সম্ভব। মরণোত্তর দেহ নষ্ট না করে চিকিৎসা বিজ্ঞানকে দান করা তাই নানা দিক থেকেই একটি মহৎ ও অবশ্য পালনীয় কর্তব্য। কিন্তু এ কাজে আমরা ভয়ানকভাবে পিছিয়ে, ফলে আমরা বহু মানুষের অকাল মৃত্যু প্রতিরোধ করতে ব্যর্থ হচ্ছি শুধু তাই নয়, চিকিৎসা বিজ্ঞানের কাজও বহুল পরিমাণে ব্যহত হচ্ছে। শুধু মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্যেই যে সংখ্যক শবদেহ প্রয়োজন তা পাওয়া যায় না। কারণ শবদেহের জন্যে এখনো আমাদের নির্ভর করতে হয় দুর্ঘটনায় মৃত দাবিদারহীন ব্যক্তির শবদেহের উপর। কিন্তু সেই শবদেহের সংখ্যা,  বলা বাহুল্য যে প্রয়োজনের তুলনায় ভীষণই অপ্রতুল ও নগণ্য
কোনো সংশয় নেই যে এ যুগে মানব সমাজের কল্যাণে চিকিৎসা বিজ্ঞানকে মরণোত্তর দেহ দান করা  সর্বাধিক গুরুত্ত্বপূর্ণ ও অতি আবশ্যক কাজগুলির অন্যতম।  কিন্তু অত্যন্ত দুঃখ ও পরিতাপের বিষয় হলো, এই কাজটি আমাদের দেশে সবচেয়ে অবহেলিত। অবহেলিত সর্বস্তরে – কী সরকারী, কী বেসরকারী। সরকারী স্তর থেকে এই কাজে মানুষকে সচেতন করার কোনো প্রয়াস নেওয়া হয় না, প্রয়াস নেয় না বিরোধী ভূমিকায় থাকা রাজনৈতিক দলগুলিও। এরূপ প্রয়াস নেওয়া হয়না কারণ, তাতে মানুষের দীর্ঘদিনের ধর্মীয় সংস্কার ও আবেগে আঘাত লাগবে এবং তারা তাদের প্রতি বিরূপ ও রুষ্ট হবে বিধায় তাদের ভোটব্যাঙ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সুতরাং অদূর ভবিষ্যতেও কোনো সরকার বা বিরোধী কোনো রাজনৈতিক দল মরণোত্তর দেহদানের বিষয়ে কোনো সদর্থক ভূমিকা গ্রহণ করবে এমন আশার ক্ষীণতম রশ্মিটুকুও দেখা যাচ্ছে না। মানবকল্যাণে নিয়োজিত বেসরকারী সংগঠনগুলিই একমাত্র ইতিবাচক ভূমিকা নিতে পারে যাদের জনসমর্থন বা ভোট হারাবার ভয় নেয়। কিন্তু সব বেসরকারী সংগঠন এ কাজে এগিয়ে আসবে না। যে সব সংগঠন ধর্মীয় বিশ্বাস ও কুসংস্কারের উর্দ্ধে এবং মুক্ত চিন্তা ও বিজ্ঞান চিন্তাচেতনায় বিশ্বাসী এবং বিজ্ঞান মনস্ক মানুষ ও মানব সমাজ নির্মাণের মহান ব্রত নিয়ে কাজ করে কেবল তারাই এই মহৎ কাজে এগিয়ে আসতে পারে। কিন্তু এই সংগঠনগুলিও এই কাজে অদ্যাবধি বিশেষভাবে আগ্রাহঈ হয়ে উঠেছে এ কথা বলা যায় না। কয়টি সংগঠন এই কাজ করছে তার তথ্য হাতের কাছে নেই, কিন্তু সংখ্যাটা যে প্রয়োজনের তুলনায় নগণ্য তা সংশয়াতীত।
একমাত্র এই কাজটাই করবার ব্রত নিয়ে যারা বা যে সব সংগঠন আমাদের রাজ্যে কাজ করছেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি নাম হলো – গণ দর্পণ।  কলকাতায় ১৯৮৫ সাল থেকে এই সংগঠনটি স্বনামধন্য ব্রজ রায়ের নেতৃত্বে কাজ করে চলেছে। তাঁরা এই কাজটিকে গণআন্দোলনে রূপ দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে। আমাদের উচিত ওদের পাশে দাঁড়ানো। কেউ মরণোত্তর দেহদান করতে চাইলে তাঁদের অফিসে গিয়ে অঙ্গীকার পত্রে স্বাক্ষর করে সে কাজটি সম্পন্ন করতে পারেন। এই মহৎ কাজে আগ্রহী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যাঁরা এই বিষয়ে বিশদ তথ্য পেতে চান তাঁরা তাঁদের সঙ্গে  নীচের ঠিকানায় যোগাযোগ করতে পারেন। তাদের ঠিকানা হলো - গণ দর্পণ, ৩২ ডি, ধীরেন্দ্র নাথ ঘোষ রোড, কলকাতা-৭০০০২৫ । দূরভাষ – ০৩৩২৭০২১৫০৪ , ই-মেলঃ ganadarpan@hotmail.com
২০.০৬.১৩ তারিখে  উত্তরণের মুখপত্র 'মানুষ' পত্রিকার জন্যে লেখা বিশেষ নিবন্ধ
যোগাযোগ করতে পারেন । 

বাংলাদেশের গণঅভ্যুত্থানে ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাইনি – পাঁচ

  দ্বিতীয় অধ্যায় শেখ হাসিনা ও শেখ মুজিবের প্রতি তীব্র গণরোষের নেপথ্যে ২০২৪ এর জুলাই অভ্যুত্থানের সফল পরিসমাপ্তি ঘটে ৩৬ দিন পর (৫ই ...