Wednesday, May 19, 2021

করোনা ডায়রি (ছয়) - করোনার উপসর্গ না থাকা মানেই করোনা সংক্রমিত নয় – এটা ধ্রুব সত্য নয়

আমাদের দেহে করোনার কোনো উপসর্গ নেই এবং আমরা কোনো প্রকার অসুস্থতার প্রকাশ নেই বলে আমরা কেউ নিশ্চিত হতে পারি না যে আমরা করোনা আক্রান্ত নয়। করোনা ভাইরাসের এটা একটা অন্যতম বৈশিষ্ট। এই ভাইরাসটি অনবরত রূপ বদল করছে, ফলে এর উপসর্গ ও বৈশিষ্ট্যগুলিরও অনবরত পরিবর্তন ঘটছে। কিন্তু গত বছরের প্রথম প্রজাতির করোনা ভাইরাসটির উপসর্গহীনতার বৈশিষ্ট্যটা এখনও থেকে গেছে। ফলে আমরা যারা আপাতত সুস্থ আছি এবং করোনা উপসর্গের কোনো চিহ্ন আমাদের দেহে দেখছি না তারা জোর দিয়ে বলতে পারব না যে আমরা করোনা সংক্রমিত হই নি। করোনা যেহেতু বায়ুবাহিত ভাইরাস এবং আমরা সবাই পারিবারিক ও সামাজিক জীব তাই আমাদের প্রতি মুহূর্তেই করোনা সংক্রমিত হবার আশংকা থেকেই যায়। কিন্তু না, তারজন্যে আমি বলছি না যে, করোনার উপসর্গ থাক বা না থাক আমাদের সকলকেই করোনা টেস্ট করতে ছুটতে হবে। তবে যাদের পরিবারে করোনা থাবা বসিয়েছে তাদের কথাটা সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র।

শরীরে করোনার কোনো উপসর্গ না থাকলে আমরা সাধারণত ধরে নিই যে আমরা করোনা সংক্রমিত নই। এটা কিন্তু ভ্রান্ত ধারণা। এই ভ্রান্ত ধারণার শিকার হচ্ছে কিন্তু করোনা আক্রান্ত পরিবারের মানুষজনও। এমন ঘটনাও দেখা যাচ্ছে যে, করোনা রোগীর সেবাযত্ন করার পর সেই পরিবারের কারও দেহে করোনার উপসর্গ দেখা না দিলে তারা ধরে নিচ্ছে যে তারা করোনা সংক্রমিত হয় নি। এমনকি এও দেখা যাচ্ছে যে, যে ব্যক্তি করোনা রোগীর সেবাযত্ন করেছে মাস্ক না পরেই তার দেহে করোনার উপসর্গের প্রকাশ না থাকায় সেও নিশ্চিতরূপেই ধরে নিচ্ছে যে সে করোনা সংক্রমিত হয় নি। 

এক্ষেত্রে আমার বলার কথা এই যে, করোনা রোগীর সেবাযত্ন করা উপসর্গহীন কোনো ব্যক্তিরই   করোনা টেস্ট (পিসিআর টেস্ট) না করিয়ে নিশ্চিত হওয়া উচিৎ নয় যে সে করোনা সংক্রমিত হয় নি। এ প্রসঙ্গে আর একটা জরুরী কথা বলি। করোনা সংক্রমিত ব্যক্তির দেহে কোনো উপসর্গ দেখা না দিলেও সে কিন্তু করানো স্প্রেডার এবং সে অন্য মানুষের দেহে করোনা ছড়াতে সক্ষম। তাই যে ব্যক্তি করোনা রোগীর সেবাযত্ন করেছে তার অবশ্যই করোনা টেস্ট করা উচিৎ। সেটা প্রয়োজন তার পরিবার সদস্যদের ও সমাজের অন্য মানুষের স্বার্থে। কোনো কারণে যদি তার পক্ষে করোনা টেস্ট করা সম্ভব না হয় তবে তাকে অবশ্যই হোম আইসোলেশনে থাকা উচিৎ।

আমি যা বললাম তা অবশ্যই চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের কথা যা গবেষণাগারে পরীক্ষিত ও প্রমাণিত সত্য এবং অসংখ্য পর্যবেক্ষণে সমর্থিত। আমি কিন্তু শুধু চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের কথার উপর ভরসা করেই (তাদের কথায় আমাদের অবশ্যই ভরসা রাখতে হবে) বলছি না, বলছি প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতালব্ধ কয়েকটি প্রমাণের ভিত্তিতে। তার মধ্যে দু’টি প্রমাণ রাখি এখানে। আমার প্রতিবেশী এবং আমার একজন ঘনিষ্ঠ আত্মীয় রাজস্থানের কোটা গিয়েছিলো তার পুত্রকে আনতে যে সেখানে মেডিকেলের পরীক্ষায় বসার জন্যে কোচিং নিচ্ছিল। আমার আত্মীয়টির কোনো উপসর্গ না থাকলেও সে করোনা টেস্ট করলে দেখা যায় যে সে করোনা সংক্রমিত হয়েছে। দ্বিতীয় প্রমাণটি হলো এই রকম, আমার মেয়ের শ্বশুর, দেওর দু’জনেই করোনাক্রান্ত হয়। আমার মেয়ে তখন আমার কাছে থাকায় আমার জামাইকেই তার বাবার যাবতীয় সেবাযত্ন করতে হয়। বাবার সেবাযত্ন করার সময় যাতে সেও সংক্রমিত না হয় তারজন্যে মাস্ক পরা, স্যানিটাইজ করা সহ যাবতীয় সতর্কতা সে অবলম্বন করেছিলো। ধীরে ধীরে তার বাবা ও ভাই সুস্থ হয়ে ওঠে। তারপর আমার জামাই করোনা টেস্ট করায় যদিও তার শরীরে করোনা উপসর্গ দেখা যায় নি। টেস্টে তারও করোনা পজিটিভ ধরা পড়ে।  

২০.০৫.২১    

 

No comments:

Post a Comment

KARBALA: Truth and Lies

  KARBALA : Truth and Lies           GIASUDDIN                 Translated by SRIJIB BISWAS        ...