হিজাব
কী শুধু মুহাম্মদের পত্নী ও কন্যাদের জন্যে প্রযোজ্য, না কি সকল মুসলিম নারীর
জন্যেই? এ প্রশ্নে মুসলিম সমাজ দ্বিধা বিভক্ত। মুসলিম সমাজ আবার বহুধা বিভক্ত হিজাব
পরার ধরণ নিয়ে। বহুধা বিভক্ত হিযাবের প্রেক্ষাপট নিয়েও। বহুধা বিভক্ত হিজাবের পোশাক
নিয়েও। হিযাবের তৃতীয় ও চতুর্থ বিষয়টি নিয়ে বিতর্কের
প্রচুর অবকাশ রয়েছে। কিন্তু প্রথম দুটি বিষয় নিয়ে মতভেদ থাকার কথা নয়। তবুও আছে। প্রবলভাবেই আছে।
হিজাব কাদের জন্যে তা নিয়ে মতভেদ ও বিতর্ক কেন?
হিজাব
নিয়ে মতভেদ ও বিতর্ক যেটা আছে সেটা তৈরী করা। ইসলামি বিধানে অস্পষ্টতা বা ধোঁয়াশা
থাকার কারণে বিতর্ক ও মতভেদ তৈরী হয়েছে এমনটা আদৌ নয়। হ্যাঁ, আবারো বলছি যে, হিজাব
কাদের জন্যে প্রযোজ্য এবং কীভাবে হিজাব পরতে হবে সে বিষয়ে ইসলামি বিধান অত্যন্ত
প্রাঞ্জল যেখানে অস্পষ্টতা বা ধোঁয়াশা একেবারেই নেই। মুসলিম
বুদ্ধিজীবীগণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে হিজাব নিয়ে কিছু বিতর্ক সৃষ্টি করেছেন। মুসলিম
বুদ্ধিজীবীগণের মধ্যে যাঁরা মডারেট তকমাধারী বুদ্ধিজীবী তাঁরাই এই বিতর্কের
স্রষ্টা। এই বুদ্ধিজীবীরা ইংরাজী পরিভাষায় apologist বলে পরিচিত। এঁরা ইসলামের পশ্চাদপদ, বর্বর ও অমানবিক
বিধানগুলিকে প্রাণপণ আড়াল করার চেষ্টা করেন এবং সেই বিধানগুলির মনগড়া বাখ্যা দিয়ে
ইসলামের ভাবমূর্তিকে উজ্জ্বল করে দেখানোর চেষ্টা করেন। এঁরাই বলেন যে, হিজাব
প্রযোজ্য কেবল মুহাম্মদের পত্নী ও কন্যাদের জন্যে, সকল মুসলিম নারীর জন্যে নয়।
তাঁরা আবার হিজাব পরার ধরণেও মডারেট পন্থার স্রষ্টা।
আধুনিক
যুগে মুসলিম নারীর জন্যে হিজাব পরার বিধানটি অতি নিন্দনীয় একটি কুৎসিত বিধান
হিসেবে পরিগণিত। হিজাব অনেকের চোখেই একটি চলমান কারাগার সদৃশ। হিজাবকে নারী
দাসত্বের প্রতীক হিসেবেও গণ্য করা হয়। যে যে
বিধানগুলির জন্যে ইসলামের কঠোর সমালোচনা ও নিন্দা করা হয় তার মধ্যে অন্যতম একটি
হলো হিজাব। মুসলিমরা কিন্তু দাবী করে যে ইসলাম নারীকে পুরুষের অধীনতা ও দাসত্ব
থেকে মুক্ত করেছে, নারীকে স্বাধীনতা ও সম্মান দিয়েছে এবং পুরুষের সমানাধিকার
দিয়েছে। মুসলিমরা মুহাম্মদকে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ নারীবাদী ব্যক্তিত্ব বলেও
দাবী করেন। মুসলিমদের এই সকল দাবীকে সম্পূর্ণ নস্যাত করে দেয় হিজাবের বিধানটি। হিজাব শুধু নারীর ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যতা,
স্বাধীনতা ও স্বাধিকারই খর্বই করে নি, নারীকে করেছে চরম অপমান ও অপদস্থও।
তবে হিজাব আরোপ করে নারীকে খাটো করতে গিয়ে ইসলাম নিজেও কম খাটো হয় নি। হিজাবের
কারণে মানব সমাজে ইসলামের মাথাও যথেষ্ট হেঁট হয়েছে। হিযাব ইসলামের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল তো করেই নি, বরং ঢের মলিন ও কালিমালিপ্ত করেছে।
ইসলামের যে যে বিধানের জন্যে মডারেট মুসলিম বুদ্ধিজীবীগণ প্রচণ্ড বিব্রত বোধ করেন
তার মধ্যে একটি হলো হিজাব। উলামা (মুসলিম ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ) ইসলামে ভাল মন্দ যা আছে তার সবটার জন্যেই গর্ব
বোধ করেন। ফলে কোনো বিধানকেই, তা যতই খারাপ, কুৎসিত ও বর্বর হোক, তাঁরা অস্বীকার ও আড়াল করেন না এবং কোনো বিধানের জন্যেই তাঁরা বিব্রত বোধ করেন না। হিজাবের ক্ষেত্রেও তাঁরা তাই কোনো প্রকার ছলনা করেন না,
বরং সৎ ও অকপট থাকেন। মডারেট
মুসলিম বুদ্ধিজীবীগণ কিন্তু ইসলামের অনেক বিধানের জন্যেই বিব্রত বোধ করেন। তাই তাঁরা সেই বিধানগুলির বেলায় উলামার
মতো সৎ ও অকপট থাকতে পারেন না। আধুনিক যুগের পরিপ্রেক্ষিতে ইসলামের যে বিধানগুলি
মডারেট মুসলিম বুদ্ধিজীবীদেরকে অস্বস্তিকর ও লজ্জাকর অবস্থায় ফেলে সেগুলির কয়েকটি হলো
বহুবিবাহ, মুতা বিবাহ, হালালা বিবাহ, বাল্যবিবাহ, তালাক, জিহাদ, দাসপ্রথা, গণিমতের
মাল, ফারাজ আইন, দত্তক আইন, হিজাব ইত্যাদি ইত্যাদি। মুহাম্মদের ব্যক্তিজীবনের বহু
ঘটনাও তাঁদের প্রচণ্ড বিব্রত ও লজ্জিত করে। এ রকম বিব্রতকর ও লজ্জাকর অবস্থা থেকে
পরিত্রাণ পেতে তাঁরা ব্যাপক কপটতা ও মিথ্যাচারের আশ্রয় নেন। তাঁরা মিথ্যাচার করেন
আপাদমস্তক কুৎসিত ও বর্বর ইসলামি বিধানগুলি বর্ণনা ও বাখ্যা করার সময়। যে
বিধানগুলি ইসলামের ভাবমূর্তি মলিন ও মসীলিপ্ত করে সেই বিধানগুলিকে
তাঁরা মনের মাধুরী মিশিয়ে এমনভাবে বর্ণনা ও ব্যাখ্যা করেন যাতে ইসলামের ভাবমূর্তি
উজ্জ্বল দেখায়, এবং ইসলামকে একটা মহান ধর্ম বলে দাবী করা যায়। ফল
হয় এই যে, তাঁদের বর্ণনাকৃত ও ব্যাখ্যাকৃত বিধানগুলির সঙ্গে কোরানে বর্ণিত ও
ব্যাখ্যাকৃত বিধানগুলির মধ্যে সামঞ্জস্য থাকে না। শুধু তাই নয়, অধিকাংশ ক্ষেত্রে বৈপরীত্যও দেখা যায়। মডারেট মুসলিম
বুদ্ধিজীবীদের মিথ্যাচারের শিকার হিজাবের বিধানও।
ফলে হিজাব নিয়ে মুসলিম সমাজে তুমুল মতভেদ ও বিতর্কের উদ্ভব হয়েছে।
হিজাবের কোরানীয় বিধান
কোরানে
অনেকগুলি আয়াত আছে যেগুলির সঙ্গে হিজাবের সম্পৃক্ততা রয়েছে। কিন্তু
শুধু হিজাব নিয়েই অন্ততঃ যে দু’টি আয়াত আছে তাতে অত্যন্ত প্রাঞ্জল ভাষায় বলা হয়েছে যে, সমস্ত মুসলিম নারীকেই হিজাব পরতে হবে। না, শুধু বলাই হয় নি,
নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। হিযাবের প্রথম যে আয়াতটি মুহাম্মদ আবৃত্তি করেন ওহীর নামে তাতে হিযাব
আরোপ করা হয় তাঁর স্ত্রী ও কন্যা এবং সকল মুসলিম নারীদের উপর। হিজাবের দ্বিতীয়
যে আয়াতটি মুহাম্মদ আবৃত্তি করেন সে আয়াতে শুধু মুসলিম নারীদের হিজাব পরার
নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, সেখানে তাঁর স্ত্রী ও কন্যাদের কথা আলাদা করে উল্লেখ করা হয় নি। হিযাবের
প্রথম যে আয়াতটি মুহাম্মদ তাঁর সাহাবীদের শোনান সেটা হলো ৩৩/৫৯ নং আয়াত। এই
আয়াতটির আদি সুরা নম্বর হলো ৯০ (নব্বই)। এই আয়াতটির ভাষ্য হলো,
·
“হে নবী (সঃ)! তুমি তোমার স্ত্রীদেরকে, কন্যাদেরকে
এবং মুমিনদের নারীদেরকে বলঃ তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ তাদের নিজেদের উপরে টেনে
দেয়। এতে তাদের চেনা সহজ হবে; ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ ক্ষমাশীল পরম দয়ালু।”
(সুরা আহযাব, ৩৩/৫৯)
এই আয়াত এটা স্পষ্ট করেছে যে, শুধু নবীর স্ত্রী ও কন্যাদেরকেই নয়, সকল
মুসলিম নারীকেই হিজাব পরতে হবে। হিজাবের যে আয়াতে মুহাম্মদের পত্নী ও কন্যাদের কথার
উল্লেখ নেই, কেবল সাধারণ মুসলিম নারীর কথা বলা হয়েছে সেটি হলো ২৪/৩১ নং
আয়াত (আদি নম্বর ১০২ একশ’)। এই আয়াতটির বয়ান হলোঃ
·
“এবং বিশ্বাসিনী
নারীদিগকে বল, তারা যেনো স্ব স্ব দৃষ্টি সকলকে বদ্ধ করে এবং স্ব স্ব ভূষণ যাহা
তাহা হইতে ব্যক্ত হইয়া থাকে তদ্ব্যবতীত প্রকাশ না করে, এবং যেন তাহারা আপন কণ্ঠদেশে
স্বীয় বস্ত্রাঞ্চল ঝুলাইয়া রাখে, আপন স্বামী বা আপন শ্বশুর বা আপন পুত্র (এবং
পৌত্র) বা আপন স্বামীর পুত্র (সপত্নীজাত পুত্র) বা আপন ভ্রাতা বা আপন ভ্রাতুষ্পুত্র
বা আপন ভাগিনেয় বা আপন (ধর্মাবলম্বী) নারিগণ বা তাহাদের দক্ষিণ হস্ত যাহাদের উপর
স্বত্ব লাভ করিয়াছে সেই (দাসীগণ) বা নিষ্কাম অনুগামী পুরুষগণ এই সকলের এবং যাহারা
নারিগণের লজ্জাজনক ইন্দ্রিয় সম্বন্ধে জ্ঞান রাখে না সেই শিশুদিগের নিমিত্ত ভিন্ন
তাহারা আপন আভরণ যেন প্রকাশ না করে, এবং তাহারা যেন আপন শব্দায়মান (ভূষণযুক্ত) চরণ
বিক্ষেপ না করে, তাহা করিলে তাহারা আপন ভূষণ যাহা গোপন করিয়া থাকে (লোকে) তাহা
জানিতে পাইবে, এবং হে বিশ্বাসিগণ, তোমরা একযোগে ঈশ্বরের দিকে ফিরিয়া
আইস, সম্ভবতঃ তোমরা মুক্ত হইবে।” (সুরা নুর, ২৪/৩১)
৩৩/৫৯ নং আয়াতটি স্পষ্টতই জারি হয়েছে মুহাম্মদের
স্ত্রী, কন্যা ও সকল মুসলিম নারীদের উদ্দেশ্যে। ২৪/৩১ নং আয়াতটি জারি হয়েছে সকল মুসলিম নারীর জন্যে যেখানে তাদের উদ্দেশ্যে বিস্তারিত বিবরণ দিয়ে জানানো হয়েছে যে
কীভাবে হিজাব পরতে হবে এবং কার কার সামনে হিজাব পরার দরকার নেই। ৩৩/৫৯ নং আয়াতে মুসলিম নারীদের
কেন হিজাব পরতে হবে তার স্পষ্ট ব্যাখ্যা দিয়ে বলা হয়েছে যে, ‘এতে তাদের চেনা সহজ হবে; ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা
হবে না।’ অর্থাৎ নারীদের হিজাব পরার আদেশ দেওয়া হয়েছে যাতে তাদের কেউ ‘উত্যক্ত’
না করে। ‘উত্যক্ত’
হওয়ার হাত থেকে মুহাম্মদ নিশ্চয় সকল মুসলিম নারীকে রক্ষা করার কথাই ভেবেছেন, শুধু তাঁর
স্ত্রী ও কন্যাদের রক্ষা করার কথাই ভাবেন নি। সুতরাং নিঃসংশয়ে বলা যায়
যে, মডারেট মুসলিম বুদ্ধিজীবীরা যা বলেন (হিজাবের
বিধান শুধু মুহাম্মদের স্ত্রী ও কন্যাদের জন্যেই প্রযোজ্য, সাধারণ মুসলিম নারীর জন্যে নয়) তা নির্ভেজাল মিথ্যা।
বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে হিজাব
হিজাব কথাটা এসেছে আরবি ‘হাজাবা’
শব্দ থেকে। হাজাবা শব্দের অর্থ আড়াল করা। হিজাবের মূল উদ্দেশ্যই হলো নারীর চেহারা
পুরুষের সামনে থেকে আড়াল করা। আরও স্পষ্ট করে বললে নারীকে পর পুরুষের কাছ থেকে
লুকিয়ে রাখা। প্রাক ইসলাম যুগে নারী পুরুষ স্বচ্ছন্দে মেলামেশা করতো, পুরুষের
সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতো, নারী পছন্দ করে বিয়ে করতে পারতো ও বিয়ে ভাঙতে
পারতো, এক কথায় নারী অনেক স্বাধীন ছিলো এবং তাদের অনেক অধিকার ছিলো। ইসলাম নারীর
সে সমস্ত অধিকারগুলি একে একে হরণ করে নিয়েছে। আল্লাহর দোহায় দিয়ে মুহাম্মদ যে যে বিধানগুলির সাহায্যে নারীর সমস্ত অধিকার হরণ করেছেন
তার মধ্যে হিজাব হলো অন্যতম একটি। হিজাব বলতে আমরা সাধারণতঃ বুঝি যে এটা মুসলিম
নারীর জন্যে কেবল ঘরের বাইরে রাস্তাঘাটে চলাফেরা করার সময় প্রযোজ্য। কিন্তু আসলে
তা নয়, হিজাব নারীর জন্যে আপন গৃহের মধ্যেও সমান প্রযোজ্য। আসলে হিজাব একটা অনেক
বড়ো বিষয় শরিয়তি সংস্কৃতিতে, এটা শুধু এক টুকরো কাপড় দিয়ে নারীর শরীর বা চেহারা
ঢেকে ফেলার বিষয় নয়। তাই হিযাবের নানা দিক আছে, নানা ধরণ আছে। হিযাবের আর একটি সহজ
প্রতিশব্দ হল পর্দা। ইসলামে নারীর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশী জোর দেওয়া হয়েছে এই পর্দার উপর। হিজাব
বা পর্দার মূল উদ্দেশ্য হলো নারীকে পুরুষজাতির (স্বামী এবং রক্তযোগ আছে এমন
কতিপয় পুরুষ ছাড়া) থেকে সম্পূর্ণ আড়াল করা, বিচ্ছিন্ন করা এবং আপন গৃহের বাইরের জগত
থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করা। এই উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত করার জন্যে ইসলাম নারীকে তার
বাস গৃহের মধ্যেই অন্তরীণ থাকার নির্দেশ দিয়েছে। নারীকে গৃহবন্দী থাকার নির্দেশ
দেওয়া হয়েছে কোরানের ৩৩/৩৩ নং আয়াতে। সেই আয়াতে বলা হয়েছে,
· "তোমরা আপন আপন গৃহ সকলে
স্থিতি করিতে থাক ও প্রাক-জাহেলী যুগের মত সৌন্দর্য প্রদর্শন করো না।"
পূ নামাজ পড়ার জন্যে মুসলমানদের
মসজিদে যাওয়ার নির্দেশ রয়েছে। কিন্তু নারীর ক্ষেত্রে মুহাম্মদ বলেছেন যে তারা
মসজিদে যেতে পারে, তবে তাদের জন্যে বাড়িই উত্তম। তিনি ঠিক কী বলেছেন তা শোনা যাকঃ
· রাসূলুল্লাহ
(সঃ) বলেছেনঃ “আল্লাহর বাদীদেরকে আল্লাহর মসজিদে যেতে বাধা প্রদান করবে না।
কিন্তু তাদের উচিত যে, তারা বাড়ীতে যে সাদাসিধা পোশাকে পরে থাকে ঐ পোশাক পরেই যেন
মসজিদে গমন করে।” অন্য একটি রেওয়াতে আছে যে, স্ত্রীলোকদের জন্য বাড়ীই উত্তম।
(তফসিরঃ ইবনে কাথির, ১৫ খণ্ড, পৃষ্ঠা – ৭৮৪)
মুহাম্মদ নারীকে মসজিদে যেতে
নিরুৎসাহিত করেছেন কেন? সেটা যে তাদেরকে পুরুষজাতি ও বাইরের জগত থেকে বিচ্ছিন্ন করার লক্ষ্যেই তা বলা বাহুল্য।
পুরুষজাতির থেকে নারীকে বিচ্ছিন্ন করে রাখার জন্যে পুরুষকেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে
কোরানে। সেই নির্দেশে বলা হয়েছে যে তারা যেন নারীর কাছ থেকে কিছু চাইলে আড়াল থেকেই
চায়। সেই নির্দেশটি হলো,
·
"তোমরা তাঁদের
(নবী পত্নীদের) নিকট কিছু চাইলে পর্দার আড়াল থেকে চাও। এই বিধান তোমাদের ও তাদের
হৃদয়ের জন্য অধিকতর পবিত্রতার কারণ।" (৩৩/৫৩)
উপরের আয়াতটি যদিও মুহাম্মদের সাহাবিদের উদ্দেশ্যে জারি করা হয়েছে, কিন্তু এর মধ্যে দিয়ে আসলে সমস্ত
মুসলমান পুরুষ ও নারীদের কাছেই একটা স্পষ্ট বার্তা পাঠানো হয়েছে যে পুরুষরা
চেনাজানা বা প্রতিবেশী কোনো পরিবারের
নারীর কাছে কিছু চাইলে যেন পর্দার আড়াল থেকেই চায়। নারীর একান্ত প্রয়োজনেও যদি
ঘরের বাইরে যাওয়া আবশ্যক হয়ে পড়ে তবুও একা তার বাইরে যাওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা বলবৎ
করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে মুহাম্মদ বলেছেনঃ
· ‘কোনও স্ত্রী লোক যেন সাথে মুহরিম আত্মীয় ছাড়া একাকি একদিন ও এক রাত্রির দুরত্ব অতিক্রম না করে। (তিরমিযি শরীফ, হাঃ নং – ১১০৬ )
পাছে নারী একাকী বাইরে গিয়ে
অন্য পুরুষের সাথে কথা বলে, তাদের সাথে মেলামেশা করে, তাই নারীর উপর এই অন্যায় ও
অপমানকর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এমনকি নারীকে অন্ধ লোকের সামনেও পর্দা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ কথা শোনা
গেছে মুহাম্মদের স্ত্রীদের কাছ থেকেই। সেই হাদিসটি বর্ণনা করেছেন মুহাম্মদের পত্নী উম্মে সালমা। হাদিসটি এরূপঃ
· "হযরত উম্মে সালমা (রাঃ) হতে
বর্ণিত আছে যে, তিনি এবং হযরত মাইমুনা (রাঃ) রাসূলুল্ললাহ (সঃ) – এর নিকট ছিলেন
এমন সময় হযরত ইবনে উম্মে মাকতূম (রাঃ) তথায় আগমন করেন। এটা
ছিলো পর্দার হুকুম নাযিল হওয়ার পরের ঘটনা। রাসূলুল্লাহ (সঃ)
তাদেরকে বললেনঃ “তোমরা পর্দা কর।” তাঁরা বললেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! তিনি তো
অন্ধ লোক। তিনি আমাদেরকে দেখতেও পাবেন না এবং চিনতেও পারবেন না।” তখন রাসূলুল্লাহ
(সঃ) বললেনঃ “তোমরা তো অন্ধ নও যে তাকে দেখতে পাবে না?” (দ্রঃ ইবনে কাসিরের তফসির,
১৫শ’ খণ্ড, ২৪/৩১ – এর তফসির, পৃঃ ১৪৪)
অন্ধ পুরুষ মানুষের সামনেও
নারীকে পর্দা করতে হবে কেন? মুহাম্মদের স্ত্রীদের প্রশ্ন বা আপত্তি ছিলো যথার্থ। কিন্তু
মুহাম্মদ তাঁদের আপত্তি উড়িয়ে দিয়েছেন তাচ্ছিল্যের সঙ্গে যেভাবে স্বৈরশাসকরা উড়িয়ে
থাকেন। নারীজাতিকে পুরুষজাতি ও বহিঃর্জগৎ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন ও নিঃসঙ্গ করতেই মুহাম্মদ অন্ধ পুরুষদের সামনেও
নারীকে পর্দা করার নির্দেশ দেন। এসব কুৎসিত উদাহরণগুলি থেকেও এটা বোঝা যায় যে, মুহাম্মদ
হিযাবের বিধান আরোপ করেছেন সমগ্র মুসলিম নারীর উপর, শুধু তাঁর স্ত্রী ও কন্যাদেরে
উপর নয়।
মূলত মডারেট মুসলিম বুদ্ধিজীবীদের সৌজন্যে শুধু হিজাবের বিধান নিয়েই নয়, ব্যাপক বিতর্ক ও মতপার্থক্য তৈরি হয়েছে হিজাবের আকার, আয়তন ও ধরণ নিয়েও। এটার উপর আলোকপাত করবো অন্য একটি লেখায়।
No comments:
Post a Comment