ইসলামি সন্ত্রাসের করাল গ্রাসের কবলে পড়লো কবিতা, প্রেম
ও মুক্তচিন্তার দেশ ফ্রান্সও। মুহাম্মদের ব্যাঙ্গচিত্র আঁকার জন্যে গত ৭ই জানুয়ারী প্যারিসের
একটি আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ব্যাঙ্গ পত্রিকা ‘শার্লি এবদু’র দপ্তরে ঢুকে দুজন
মুসলিম জঙ্গি ১০ জন ব্যাঙ্গচিত্র শিল্পীসহ
১২ জন সাংবাদিককে হত্যা করে। পরে আরো দু’জায়গায়
হামলা চালিয়ে তারা দুজন পুলিশ অফিসারসহ আরো পাঁচজনকে হত্যা করে। মুহাম্মদের
ব্যাঙ্গচিত্র ছাপানোর জন্যে ২০০৫ সালেও পত্রিকাটির
দপ্তরে মুসলিম জঙ্গিরা বোমা হামলা চালিয়েছিলো। সেবার অবশ্য হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটে
নি।
মুহাম্মদকে ব্যাঙ্গ করার অপরাধের শাস্তি হিসেবেই শুধু এতো বড়ো হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করা হয়েছে ভাবলে ভুল হবে। এই হত্যাকাণ্ডের পিছনে তাদের আরো দুটো বড়ো উদ্দেশ্য আছে – এক].
প্যারিস সহ সারা বিশ্বে একটা ভীতি ও ত্রাস
সঞ্চার করা। দুই]. সাধারণ
ইহুদিদের হত্যা করে জাতিগত প্রতিশোধ তোলা।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে ৯ই জানুয়ারী জঙ্গিরা একটি ইহুদি বাজারে ঢুকে কয়েকজন
নিরপরাধ ইহুদিকে হত্যা করেছে। ওদের প্রথম উদ্দেশ্যটি শার্লি
এবদু পত্রিকাটি এবং ফ্রান্সের মানুষ পুরোপুরি ব্যার্থ করে দিয়েছে। মুসলিম জঙ্গিরা
ভেবেছিলো যে প্রাণের ভয়ে পত্রিকাটি মুহাম্মদের ব্যাঙ্গচিত্র আঁকা থেকে বিরত হবে।
কিন্তু পত্রিকাটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে যে
মুহাম্মদের ব্যাঙ্গচিত্র এঁকেই এই নারকীয় গণহত্যাকাণ্ডের জবাব দেওয়া হবে। শার্লি তৎক্ষণাৎ বিপুল সাড়াও পেয়েছে দেশ-বিদেশ
থেকে।
আগে ছাপা হতো যেখানে ৬০,০০০ [ষাট হাজার] কপি, সেখানে
পরের সংখ্যাটির চাহিদা বেড়ে দাঁড়িয়েছে
ত্রিশ লক্ষ। সংখ্যাটি ইতিমধ্যেই [গত ১৪ই জানুয়ারী]
প্রকাশিত হয়েছে যার প্রচ্ছদে রয়েছে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী মুহাম্মদের ব্যাঙ্গচিত্র। প্রচ্ছদটি এ রকমঃ মাথায় সাদা পাগড়ি
পরিহিত মুহাম্মদ কাঁদছেন, চোখে এক ফোঁটা জল, হাতে ধরা একটি কাগজ যাতে লেখা – আমি
শার্লি। তার নীচে লেখা - সব ক্ষমা করে দিলাম। ব্যাঙ্গচিত্রটি এঁকেছেন আবার সেই অসম সাহসী ব্যাঙ্গচিত্র
শিল্পী ‘লুজ’ ওরফে ‘রেনল লুজিয়ের’ যিনি ২০০৫ সালেও মুহাম্মদের ব্যাঙ্গচিত্র এঁকে জঙ্গীদের কোপানলে পড়েছিলেন। রেনল সেদিন ঘটনাচক্রে প্রাণে বেঁচে গিয়েছেন, কারণ ঘুম থেকে উঠতে দেরী হওয়ায় ঠিক সময়ে পত্রিকা
দপ্তরে পৌঁছতে পারেন নি।
মুসলিম জঙ্গিদের বর্বর
হত্যাকাণ্ডের কড়া জবাব দিয়েছে ফ্রান্সের সরকার ও জনগণও। ১৭ জন মানুষকে হত্যার প্রতিবাদে ১৭ লক্ষ মানুষ ১০ই
জানুয়ারী পথে নেমে ছিলেন প্যারিসে। লক্ষ লক্ষ মানুষের হাতে ছিলো পোষ্টার যাতে লেখা ছিল
- ‘জ্য সুই শার্লি’ [আমিও শার্লি]। প্রতিবাদ মিছিলে সামিল ছিলেন নিহত ব্যাঙ্গচিত্র
শিল্পী ও সাংবাদিকদের পরিবারের সদস্যরাও। প্যারিসের বাইরে মিছিল
হয়েছে সেই দিন [১০ই জানুয়ারী] ফ্রান্সের বিভিন্ন শহরে, সব মিলিয়ে মোট ৩৭ লক্ষ
মানুষ হেঁটেছেন। প্যারিসের পা মিলিয়েছেন ৫০টি দেশের রাষ্ট্রীয় নেতৃবৃন্দ, অর্থাৎ
মুসলিম জঙ্গিদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সামিল
গোটা বিশ্বও। বিভিন্ন দেশের
রাষ্ট্রনেতারা মিছিলে সামিল হয়ে নিশ্চয় এই
বার্তাই দিলেন যে ভবিষ্যতেও ফ্রান্সের পাশে দাঁড়িয়ে তাঁরা ইসলামি সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে এক সাথে লড়াই
করবে। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া
ওলাঁদও বিশ্ববাসীর উদ্দেশ্যে ঘোষণা দিয়েছেন যে - প্যারিস শুধু আর ফ্রান্সের রাজধানীই নয়, জঙ্গি
সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের বিশ্ব-রাজধানীও।
মানবাধিকারে পক্ষ বড়ো বড়ো কথা বলা সুবিধাবাদী রাষ্ট্র আমেরিকা এই মিছিলে সামিল হয় নি। মিছিলে সামিল না হয়ে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে
সংগ্রামে আমেরিকা যে একঘরে হয়ে পড়েছে তা
বিলক্ষণ বুঝেছেন ওবামা। তাই
তাঁর দেশ অংশ না নেওয়ার জন্যে তিনি ভুল স্বীকার
করতে বাধ্য হয়েছেন। অবশ্য কিছু অজুহাত দেখিয়েছেন নিজের দোষকে লঘু করতে।
প্রায় গোটা বিশ্ব ফ্রান্স ও
‘শার্লি এবদু’র পাশে দাঁড়ালেও মনে রাখতে হবে যে বিশ্বের মধ্যে আর একটা বিশ্ব আছে
তার কথা। সেটা মুসলিম বিশ্ব। সেই মুসলিম বিশ্ব কিন্তু সামিল হয় নি মুসলিম
জঙ্গিদের নারকীয় হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে। মুসলিম বিশ্বে কিরূপ প্রতিক্রিয়া হয়েছে
সে কথা বলার আগে একবার চোখ রাখবো বিশ্ব-সংবাদ মাধ্যমে কী প্রতিক্রিয়া হয়েছে সে দিকে।
জঙ্গিরা ভয় পাইয়ে দিতে চেয়েছিলো
গোটা বিশ্বের সংবাদ মাধ্যমকেই। এ ক্ষেত্রেও
তাদের মনোবাঞ্ছা পূরণ করে নি বিশ্ব-সংবাদ মাধ্যম। শার্লির দপ্তরে হামলা ও
হত্যাকাণ্ডের পরদিনই অর্থাৎ ৮ই জানুয়ারী বিশ্ব-সংবাদ মাধ্যমে ঐ ঘটনার বিরুদ্ধে
প্রতিবাদ ও নিন্দার ঝড় বয়ে যায়। বিশেষ করে পশ্চিমা দেশগুলোর সংবাদমাধ্যমগুলো এই
হামলার নিন্দা জানিয়ে এবং নিহত ব্যাঙ্গচিত্রী, সাংবাদিক ও অন্যান্য ব্যক্তিদের প্রতি
শ্রদ্ধা ও সংহতি প্রকাশ করে নানা ধরনের এবং নতুন ও পুরোনো
কার্টুন প্রকাশ করে। পুরোনো কার্টুনগুলোর
মধ্যে সবচেয়ে বিতর্কিত যেটি, সেটিও বেশ কয়েকটি পত্রিকা ও গণমাধ্যম
প্রকাশ ও প্রচার করে। এসব প্রতিষ্ঠানের সম্পাদকদের বক্তব্য হলো, সন্ত্রাসের মুখে তাঁরা
যে ভীত নন, সেটা
প্রমাণ করার জন্যই তাঁরা মুহাম্মদের
কার্টুনটি পুনঃ প্রচারের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ইংলণ্ডের সবচেয়ে উদার ও বামপন্থী
হিসেবে পরিচিত পত্রিকা দি ইনডিপেনডেন্ট-এর
সম্পাদক অমল রাজন লিখেছেন,
তাঁর
সব ইন্দ্রিয় তাঁকে বলছে যে কার্টুনগুলো প্রকাশ করা উচিত।
তবে তিনি বলেছেন যে তিনি কোনো ঝুঁকি নেবেন না। ৮ই জানুয়ারী বিবিসির রাজনৈতিক বিতর্কের
অনুষ্ঠান ‘কোশ্চেন টাইম’-এ এই
বিষয়টি বিতর্কের জন্যে রাখা হয়েছিলো। আলোচকরা সবাই শার্লি এবদুর পক্ষে অর্থাৎ
মুহাম্মদের কার্টুন ছাপার পক্ষে মত দেন। শার্লির সাংবাদিকদের হত্যা করার পর ফেসবুকের
প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ লিখেছেন যে ফেসবুক থেকে ওই কার্টুন সরাতে রাজি না
হওয়ার কারণে কয়েক বছর আগে তাঁকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু না সরানোর যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তাকে তিনি সঠিক সিদ্ধান্ত বলেই
জানিয়েছেন। উদাহরণ আর বাড়ানোর দরকার নেই, এটা স্পষ্টভাবেই প্রতীয়মান যে মুসলিম জঙ্গিরা অস্ত্রের জোরে মুক্তচিন্তা, বাক-স্বাধীনতা ও মত
প্রকাশের অধিকারকে কেড়ে নিতে চাইছে তা কোনো দিনই সফল হবে না। তারা যতো আঘাত করবে
মুক্তচিন্তা ও বাক-স্বাধীনতার লড়াই ততো শক্তিশালী হবে।
মুসলিম বিশ্ব এখনো
মধ্যযুগীয় ধ্যন-ধারণা ও সংস্কৃতির বাইরে বেরিয়ে আসতে পারে নি। মুক্তচিন্তা, বাক-স্বাধীনতা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার
চেয়ে ইসলামি সংকীর্ণ ধ্যান-ধারণা ও
সংস্কৃতিকেই এই বিশ্ব এখনো প্রাধান্য দিতে চায়। মুহাম্মদের
ব্যাঙ্গচিত্র ছাপানোর চাইতে বারোজন
সাংবাদিক সহ সতেরো জন মানুষকে হত্যা করার ঘটনা তাদের কাছে তুচ্ছ। তাদের কাছে শার্লির
ব্যাঙ্গচিত্রীদের হত্যা করার জন্যে হত্যাকারী জঙ্গিরা দায়ী নয়, দায়ী ব্যাঙ্গচিত্রীরাই।
কারণ, তাদের মতে মুহাম্মদকে ব্যাঙ্গ করার অধিকার নেই। অন্যান্য ধর্মকে, ও ধর্মগুরুদের হেয় ও ব্যাঙ্গ করার অধিকার
মুসলমানদের আছে, কিন্তু মুহাম্মদকে ব্যাঙ্গ করার বা ইসলামের সমালোচনা করার অধিকার কারো নেই – গোটা বিশ্বকে তাদের এই শিশুসুলভ আব্দার
মানতে হবে, না হলে তারা সবাইকে হত্যা করবে এবং তাদের এই হত্যাকাণ্ডকে ন্যায়সঙ্গত বলে মেনে নিতে হবে! শার্লি
এবদুর নতুন সংখ্যায় [১৪ই জানুয়ারীর
সংখ্যা] প্রচ্ছদে আবার মুহাম্মদের ব্যাঙ্গচিত্র থাকায় আবারও বিরূপ প্রতিক্রিয়া
দেখা দিয়েছে মুসলিম বিশ্বে। তুরস্কের আদালত এই প্রচ্ছদটিকে অপমানজনক, অপরাধমূলক ও ধর্মদ্রোহী বলে ঘোষণা করেছে এবং যে যে ওয়েব সাইটে এটা থাকবে
সেটা ব্লক করার নির্দেশ দিয়েছে। সেনেগাল শার্লি এবদু পত্রিকাটিকে নিষিদ্ধ করেছে। সেনেগাল নিষিদ্ধ করেছে ফ্রান্সের লিবারেশন বলে আর একটি পত্রিকাকেও, কারণ তাদের প্রেসে
শার্লি এব্দুর পত্রিকা ছাপা হতো। জর্ডানের আল-দুস্তোর পত্রিকা লিখেছে - শার্লি এব্দু আবারো প্ররোচনা
দিচ্ছে। ইরানের সরকারী টিভি চ্যানেল আইআরআইএনএন মুহাম্মদের
ব্যাঙ্গচিত্র ছাপানোকে একটি উস্কানিমূলক
কাজ হিসেবে বর্ণনা করেছে। পাকিস্তানে ইমামরা শার্লির
ব্যাঙ্গচিত্রীদের হত্যাকারীদের সমর্থনে প্রকাশ্যে মিছিল করেছে। তারা তাদেরকে শহিদ বীর
মুজাহিদ [জিহাদি] বলে তাদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেছে। ঐ জঙ্গিরা পুলিশের
সঙ্গে সংঘর্ষে মারা যাওয়াই তাদের হয়ে গায়েবে জানাযা পড়েছে। ভারতেও প্রকাশ্যে
শার্লির এব্দুর ব্যাঙ্গচিত্রীদের হত্যাকারীদের
সমর্থনে মুখ খুলেছে বিএসপি নেতা ইয়াকুব কুরেশী। তিনি বলেছেন – যে বা যারা
মুহাম্মদকে অসম্মান করবে তাদের মৃত্যু অবস্যম্ভাবী। তিনি আরো জানিয়েছেন যে, প্রফেটকে অসম্মান করার অপরাধে, প্যারিসে যারা
সাংবাদিকদের হত্যা করেছে, তাদের তিনি টাকা দিয়ে পুরস্কৃত করতে ইচ্ছুক। মুসলিম
বুদ্ধিজীবীদের কণ্ঠেও প্রায় একই সুর শোনা যাচ্ছে। তাঁরা অবশ্য একটু ঘুরিয়ে সমর্থন করছেন
ঐ হত্যাকারীদের। কলম পত্রিকায় এই সব বুদ্ধিজীবীরা শার্লি এব্দুকে ইসলাম-বিদ্বেষী
বলে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে। তাঁরা বলছেন যে বাক-স্বাধীনতা ও মত প্রকাশের
স্বাধীনতার সীমা লঙ্ঘন করেছে শার্লি।
মুহাম্মদের ব্যাঙ্গচিত্র ছেপে প্ররোচনা
সৃষ্টি করেছে যা মুসলমানদের পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। বাংলাদেশের একজন মুসলিম কলমচি জনৈক কামাল আহমেদ প্রথম আলো কাগজে ১২ই
জানুয়ারী লিখেছেন - মত
প্রকাশের স্বাধীনতার সঙ্গে দায়িত্ববোধের বিষয়টি অবিচ্ছেদ্য। স্বাধীনতা
তত দূর পর্যন্ত বিস্তৃত, যত দূর পর্যন্ত প্রসারিত হলে তা অন্যের অধিকার
ক্ষুণ্ন করবে না। …….. প্রশ্ন উঠছে, নিরীহ মানুষের জীবনহানির
কারণ ঘটাতে পারে যে ধরনের সংবাদ বা নিবন্ধ, তা প্রকাশ করা
দায়িত্বশীলতার পরিচয় বহন করে কি না। কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সহিংসতার
উসকানি বা ঘৃণা-বিদ্বেষ ছড়ানো
সাংবাদিকতার নীতিবিরুদ্ধ বলেই বিবেচনা করা হয়। ঈমাম থেকে মুসলিম বুদ্ধিজীবী সবার এক সুর,
ইসলাম ও মুহাম্মদের সমালোচনা করা যাবে না। এই বুদ্ধিজীবীরা তাঁদের দোষ ঢাকতে গিয়ে
শার্লির বিরুদ্ধে ইসলাম-বিদ্বেষের মিথ্যা অভিযোগ আরোপ করছেন। এ অভিযোগ ভিত্তিহীন। গত ২৫ শে ডিসেম্বরেও পত্রিকাটি যীশুকে
নিয়ে ব্যাঙ্গচিত্র ছেপেছিলো। পত্রিকাটি সব ধর্মেরই মুখোশ ধরে টান দেয়। গোটা বিশ্বে
ইসলামি সন্ত্রাস যে ভয়াবহ রূপ পরিগ্রহ করেছে তার শিকড় প্রথিত রয়েছে মুহাম্মদের বাণী ও কর্মকাণ্ডে। ইসলামি
সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে হলে তাই মুহাম্মদের প্রসঙ্গ আসবেই। ব্যাঙ্গচিত্র শিল্পীরা তো মুহাম্মদের
ব্যাঙ্গচিত্র এঁকেই ইসলামি সন্ত্রাসের প্রতিবাদ জানাবেন, এখানে ইসলাম-বিদ্বেষ
অনুসন্ধান করাটা নিছকই অজুহাত।
মুহাম্মদের
ব্যাঙ্গচিত্র ছাপানোর জন্যে প্যারিসে যে হত্যাকাণ্ড চালানো হয়েছে তা ইসলামি নীতিরই
অঙ্গ। সপ্তম শতাব্দীতে মুহাম্মদ ও তাঁর সহযোদ্ধারা এটা শুরু করেছিলেন। মুহাম্মদ
বিন্দুমাত্র সমালোচনা বা তাঁকে বিদ্রুপ করা সহ্য করতেন না। যাঁরা সমালোচনা করতেন কিংবা তাঁকে নিয়ে কোনো ব্যাঙ্গাত্মক রচনা লিখতেন
তাঁদের নির্মমভাবে হত্যা করা হতো। এ রকম ক্ষেত্রে হয় মুহাম্মদ নিজে হত্যা করতেন,
না হয় হত্যা করার নির্দেশ দিতেন। এরূপ অনেক ঘটনা আছে। তার কয়েকটি ঘটনা এ রকমঃ
মুহাম্মদের প্রখ্যাত
জীবনীকার ইবন হিসাম ও ইবন ইশাক লিখেছেন যে মদিনায় ইহুদি মহিলা কবি আসমা বিনত মারওয়ানকে
৬২৪ খৃষ্টাব্দের জানুয়ারী মাসে হত্যা করা হয়েছিলো। তাঁর অপরাধ তিনি মুহাম্মদের
সমালোচনা করে কবিতা লিখতেন এবং মুহাম্মদ ও তাঁর ধর্ম ইসলামের বিরোধিতা করার জন্যে
মানুষদের সক্রিয় ভূমিকা নিতে আহ্বান করতেন। সে বছরেই ফেব্রুয়ারী মাসে
মদিনার আর একজন কবি আবু আফাককেও হত্যা করা হয়েছিলো। তাঁর অপরাধও ছিলো ঐ একটাই,
তিনি তাঁর কবিতায় মুহাম্মদের সমালোচনা ও বিরোধিতা করতেন। ৬২৪ সালের মার্চে
মুহাম্মদের নির্দেশে দুজন কোরেশকে হত্যা করা হয়েছিলো যাঁদের নাম ছিলো আল-নাজির ইবন
আল-হারিস ও উকবা বিন আবু মুয়াত। এঁরা মক্কার বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে অন্যতম
ছিলেন। বদর যুদ্ধে মুহাম্মদের হাতে যে ৭০ জন কোরেশ বন্দি হয়েছিলো, তাদের মধ্যে এঁরাও
ছিলেন। ৬৮ জনকে মুহাম্মদ মোটা টাকা মুক্তিপণ নিয়ে ছেড়ে দিয়েছিলেন, কিন্তু এই দু’জনকে
অর্থের বিনিময়ে মুক্তি দেন নি। তাঁদের দু’জনকেই
মুণ্ডুচ্ছেদ করে হত্যা করা হয়েছিলো। প্রথম জনের গলা কেটেছিলেন মুহাম্মদের
জামাই আলি। তাঁর অপরাধ ছিলো তিনি মুহাম্মদের সমালোচনা করে কবিতা লিখেছিলেন এবং
তাঁকে ব্যাঙ্গ করে গল্প লিখেছিলেন। উকবাকে হত্যা করা হয়েছিলো এ জন্যে যে মুহাম্মদ যখন নামাজ পড়ছিলেন তিনি তাঁর উপরে মৃত
পশুর নাড়ীভুঁড়ি ছুঁড়ে এবং তাঁর গলায় কাপড় জড়িয়ে দিয়ে উপাসনায় বিঘ্ন সৃষ্টি করেছিলেন। ৬২৪
খৃষ্টাব্দে সেপ্টেম্বর মাসে হত্যা করা হয়েছিলো কা’ব ইবন
আশরাফকে যদিও তিনি মুহাম্মদের ধর্মে দীক্ষিত হয়ে মক্কা থেকে মদিনায়
হিজরত করেছিলেন। তাঁর অপরাধ ছিলো এই যে,
বদর যুদ্ধের পর মুহাম্মদের নির্দেশে যে দু’জনকে হত্যা করা হয়েছিলো সেট মেনে নিতে
পারেন নি এবং মক্কায় গিয়ে এই ঘটনার
নিন্দা করেছিলেন। তারপর তিনি যখন মদিনায়
ফিরে আসেন তখন তাঁকে মুহাম্মদের নির্দেশে
হত্যা করা হয়। ৬২৪ খৃষ্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে ইহুদি কবি আবু রফি বিন আবি
হুকাইকাকে হত্যা করা হয়েছিলো। তাঁর অপরাধ ছিলো তিনিও তাঁর কবিতায় মুহাম্মদকে ব্যাঙ্গ করেছিলেন।
প্রশ্ন উঠতে পারে
বাজারে ঢুকে সাধারণ ইহুদিদের তারা হত্যা করলো কেনো? কারণ হলো, ইহুদিরা
মুহাম্মদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরে নি ঠিকই, কিন্তু তাঁদের ধর্ম ও ধর্মগুরুকে অপমান
করার জন্যে তাঁরা সরাসরি মুহাম্মদের বিরোধিতা করতেন এবং কবিতায় ও গল্পে মুহাম্মদের
স্বরূপ উন্মোচন করতেন নির্মমভাবে। এটা ছিলো ইহুদিদের একমাত্র অপরাধ। তাই তিনি ইহুদিদেরকে
অভিশপ্ত জাতি বলে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ও
তাদের হত্যা করার আদেশ দেন। কোরান ও হাদিসে এর ভুড়িভুড়ি প্রমাণ আছে।
কোরানের সে রকম একটি আয়াত হলো – “ইহুদিগণ বলে যে
আল্লাহর হাত আবদ্ধ। তাদের হাতসমূহ শৃঙ্খলাবদ্ধ হবে এবং তারা যা বলছে তারজন্যে
তারা অভিশপ্ত হবে। ..... আমি তাদের মধ্যে
উত্থানদিবস [কিয়ামত] পর্যন্ত শত্রুতা ও বিদ্বেষ সঞ্চার করেছি, যখন তারা যুদ্ধের
অগ্নি প্রজ্বলিত করে, আল্লাহ তা নির্বাপিত করেন, এবং তারা পৃথিবীর বুকে অশান্তি
উৎপাদন করে বেড়ায়, বস্তুত আল্লাহ অশান্তি উৎপাদনকারীদের ভালবাসেন না।” [সুরা
মায়দা, ৫/৬৪] মুহাম্মদের চোখে ইহুদি মাত্রই শত্রু, তাই তাদের সরাসরি হত্যা করার নির্দেশ দিয়ে যান তিনি।
সে রকম একটি হাদিস হলো - “রাসূলুল্লহ [সাঃ]
বলেছেন, তোমরা ইয়াহুদীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে। এমনকি তাদের কেউ যদি পাথরের আরালে
আত্মগোপন করে তাহলে পাথরও বলবে , ‘হে আল্লাহর বান্দা, আমার পেছনে ইয়াহুদী আছে তাকে হত্যা করো।” [বোখারী, ৫ম খন্ড, হাঃ নং- ২৭২৪]
U need medical treament my brother. I will help u with some money .
ReplyDelete