গত
রাত্রে (১২ই আগষ্ট রাত্রে) একটি ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে ব্যাপক হিংসা ছড়ায় ব্যাঙ্গালোরে।
পোস্টটিতে ইসলামের প্রবর্তকের বিরুদ্ধে আপত্তিকর কিছু কথা লেখা আছে বলে অভিযোগ। নবীন নামের যার পোস্টকে কেন্দ্র করে ঘটনাটি ঘটেছে সে কংগ্রেস
বিধায়ক আখণ্ড শ্রীনিবাস মূর্তির ভাগ্নে। পোস্টটি প্রচারিত
হওয়ার পরেই হাজার খানেক উশৃঙ্খল মুসলিম জনতা কংগ্রেস বিধায়কের বাড়ির সামনে জড়ো হয়ে
বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে শুরু করে। তারপর তারা বিধায়কের বাড়ি ভাঙচুর করার লক্ষ্যে ব্যাপক
ইট ও পাথর ছোঁড়ে যার ফলে বিধায়কের বাড়ি বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। হামলাকারীরা বিধায়কের বাড়ির
নিরীহ নিরাপত্তা কর্মীকেও তারা বেধড়ক মারধর করে। বিধায়কের বাড়ির আশপাশে দাঁড়িয়ে থাকা
গাড়িগুলি ভাঙচুর করে তাতে আগুন লাগিয়ে দেয়। হিংসার খবর পেয়ে ডিজে হাল্লি ও কেজি হাল্লির পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছালে উশৃঙ্খল
জনতা তাদের উপরে চড়াও হয় এবং তাদের লক্ষ্য করে ইট ও পাথর বৃষ্টি শুরু করে। তারপর তারা
ডিজে হাল্লি থানায় চড়াও হয় এবং থানায় ব্যাপক ভাঙচুর করে। থানার ভিতর এবং আশেপাশে দাঁড়িয়ে
থাকা গাড়িগুলিও ভাঙচুর করে আগুনে ভষ্মিভূত করে দেয়। ঘটনাস্থলে উপস্থিত সাংবাদিকরাও
আক্রমণের হাত থেকে রেহায় পায় নি।
জনতাকে
ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ প্রথমে লাঠিচার্জ করে, তারপর কাঁদানে গ্যাস ছোঁড়ে এবং শূন্যে কয়েক
রাউণ্ড গুলি চালায়। তাতেও উন্মত্ত জনতা ছত্রভঙ্গ না হলে পুলিশ তাদের লক্ষ্য করে গুলি
চালায় বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। পুলিশের গুলিতে তিনজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া
গেছে। জনতা-পুলিশ সংঘর্ষে ষাট জন পুলিশ আহত হয়েছে যার মধ্যে এ্যাডিশনাল পুলিশ কমিশনারও
আছেন, এ কথা জানিয়েছেন ব্যাঙ্গালুরু পুলিশ কমিশনার কমল
পন্ত। খবরে প্রকাশ যে ঘটনাস্থলে থেকে ২০০/২৫০ জন দুষ্কৃতিকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে যে মুসলিমদের ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত দিয়েছে বলে অভিযোগ তাকে গ্রেপ্তার
করা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। পুলিশ আরও জানিয়েছে যে ডিজে হাল্লি ও কেজি হাল্লি অঞ্চলে
কারফিউ এবং ব্যাঙ্গালোরের ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। হিংসাত্মক ঘটনাটির সঙ্গে যুক্ত
রয়েছে গণতন্ত্রের লেবাস পরা মুসলিম রাজনৈতিক দল এসডিপিআইও
(Social Democratic Party of India)। এটা স্পষ্ট হয়েছে কারণ ধৃতদের মধ্যে মুজামিল
পাশা নামে ওই দলের একজন নেতাও রয়েছেন। এ কথা জানিয়েছেন ঐ দলেরই নেতা মুজাহিদ পাশা।
ফেসবুকে
ঠিক কী লেখা হয়েছে সেটা জানা যায় নি। সেটা জানার বিশেষ দরকারও নেই। কারণ, ভারত একটি গণতান্ত্রিক দেশ, এ দেশে বাক-স্বাধীনতা ও মত
প্রকাশের স্বাধীনতা সংবিধান স্বীকৃত যদিও তা বহুলাংশেই খণ্ডিত। তাই ফেসবুকে আপত্তিকর
কিছু লেখা থাকলেও এখানে কেহই আইন হাতে তুলে নিতে পারে না, সে অধিকার সংবিধান কাউকে
দেয় নি। ফেসবুকের কোনো পোস্ট যদি কোনো সম্প্রদায়ের কাছে আপত্তিকর মনে হয় তবে তার প্রতিবাদ
করার অধিকার তাদের নিশ্চয়ই আছে যেটা করতে হবে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে শান্তিপূর্ণভাবে।
ফেসবুকের পোস্ট কিংবা অন্য মিডিয়ায় কোনো লেখা বা মন্তব্য যদি দেশের আইন লংঘন করে তবে
তার বিচার করার ভার আদালতের, কোনো ব্যক্তির বা সম্প্রদায়ের নয়। এরূপ ক্ষেত্রে সব চেয়ে
ভালো হচ্ছে লেখার মাধ্যমেই প্রতিবাদ করা। তাছাড়া মিছিল, মিটিং, ধরনা ইত্যাদির মাধ্যমে
সরকারের কাছে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে শাস্তির দাবি জানানোর রাস্তা খোলা রয়েছে। সরকারের
উপর ভরসা না থাকলে আদালত রয়েছে। একটা গণতান্ত্রিক দেশে প্রতিবাদের নামে আইন হাত
তুলে
নেওয়া কিংবা হিংসাত্মক প্রতিবাদ করা সমর্থনযোগ্য নয়। এ ধরণের প্রতিবাদ করা আইনের চোখে
শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
তাছাড়া
আরও দুটো বিষয় খেয়াল রাখা অত্যন্ত জরুরী। যেমন - এক). কেউ যদি অপরাধ করে তবে তার দায়
শুধু তারই, তার কোনো আত্মীয়ের নয়। অথচ উশৃঙ্খল জনতা যে অভিযুক্ত তার মামার বাড়ি ভাঙচুর
করলো। মামাকে দায়ী করা কেন? এহেন ঘটনা খুবই নিন্দনীয়। কর্তব্যরত সাংবাদিকদের উপরেও
হামলা হলো। পুলিশ গিয়েছিলো হিংস্র জনতার তাণ্ডবের হাত থেকে বিধায়কের বাড়ি এবং তাঁর
পরিবারের লোকজনদের রক্ষা করতে। কিন্তু তাদের ওপরেও হামলা সংগঠিত করা হলো। এটা কি মগের
মুলুক নাকি? এসব গুণ্ডামি কি গণতন্ত্রে মানা যায়? দুই). অভিযুক্ত ব্যক্তিটি বলেছে যে
ঐ পোস্টটি সে করে নি। তার ফেসবুক এ্যাকাউণ্ট হ্যাক করে অন্য কেউ ওটা করেছে। সে সত্য
না মিথ্যা বলছে তার তদন্ত হওয়া দরকার। তদন্ত না করে কাউকে দোষী সাব্যস্ত করা যায় না।
আত্মরক্ষা করার অধিকার সংবিধানে স্বীকৃত। সে সুযোগ তারও প্রাপ্য। এটা গণতান্ত্রিক আইন
ও রীতি যা সকলকেই মানতে হবে।
কলমের জবাব কলমে
দেওয়া বাঞ্ছনীয়, হিংস্রতা দিয়ে নয়
সারা
বিশ্ব জুড়েই মুসলিমদের মধ্যে একটা বিশেষ প্রবণতা পরিলক্ষিত হচ্ছে, তা হলো – তাদের মধ্যে
সহনশীলতার প্রচণ্ড অভাব। এক্ষেত্রে জঙ্গি
মুসলমান এবং অজঙ্গি মুসলমানদের মধ্যে কোনো পার্থক্য চোখে পড়ে না। ইসলামের সামান্য সমালোচনাও
তারা শুনতে চায় না। বিশ্বের যে প্রান্তেই তা হোক না, মুসলিমরা বিশ্বজুড়েই তার প্রতিবাদে
হিংসায় মেতে ওঠে। ভাঙচুর, লুটপাট, ও হত্যা ইত্যাদি হিংসাত্মক কাজের মাধ্যমে তারা প্রতিবাদ
জানায়। এ প্রসঙ্গে দৃষ্টান্ত হিসাবে আমরা স্মরণ করতে পারি ফ্রান্সের শার্লি এব্দু (কার্টুন
পত্রিকা) অফিসে মুসলিম জঙ্গিদের ভয়ঙ্কর হামলার ঘটনাট। ইসলামের নবীর একটা কার্টুন আঁকার
জন্যে ঐ পত্রিকার কয়েকজন কার্টুনিস্টকে তারা নৃশংসভাবে হত্যা করেছিলো। নবীর কার্টুন
আঁকার জন্যে আমরা কলকাতার রাস্তাতেও মুসলিমদের দিনভোর তাণ্ডব দেখেছি। সার্টানিক ভার্সেস
লেখার জন্যে সলমান রুশদির বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের ফতোয়ার কথাও স্মরণ করা যেতে পারে।
ফতোয়া দিয়েছিলেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতোল্লা খোমেইনি। সেই ফতোয়ার পক্ষে
দাঁড়িয়েছিলো তামাম বিশ্বের মুসলিম সমাজ। তখন তাদের মধ্যে শিয়া-সুন্নির প্রভেদ মুছে
গিয়েছিলো। তসলিমা নাসরিনের ক্ষেত্রেও অনুরূপ ঘটনা ঘটতে আমরা দেখেছি। এ প্রসঙ্গে একটি
অতি তুচ্ছ সমালোচনার চরম শাস্তির একটি দৃষ্টান্তের কথা উল্লেখ করতে চাই। সালটা সম্ভবত
২০০৫। কলকাতার শহরতলীর আক্রা হাই মাদ্রাসার
একজন মুসলিম শিক্ষক একটি ঈদ সংখ্যার ম্যাগাজিনে একটা নিবন্ধে দু’টো প্রশ্ন রেখেছিলেন।
তার একটি হলো, একই বিষয়ে বিজ্ঞান ও কোরান ভিন্ন কথা বললে কোনটা গ্রহণ করবো? দ্বিতীয়
প্রশ্নটি এরূপ, মুসলমানদের দাবি হলো তাদের নবী হলেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব।
এ প্রসঙ্গে তাঁর প্রশ্ন ছিল, নবী তাঁর যুগের শ্রেষ্ঠ মানুষ হতে পারেন, কিন্তু তাঁকে
কি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব বলা যায়? এই দু’টি মামুলি প্রশ্ন তোলার জন্যে
মুফতিরা তাঁকে মোরতাদ ঘোষণা করে তাঁর মৃত্যুদণ্ডের ফতোয়া দিয়েছিলো। সেই ফতোয়া কার্যকর
করার জন্যে মুসলিমরা দল বেঁধে তাঁর বাড়িতে চড়াও হয়। তাঁকে না পেয়ে তাঁর বাড়িতে আগুন
লাগিয়ে দেয়। এটা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এটাই হচ্ছে মুসলিম সংস্কৃতি।
এই
সংস্কৃতির ধারক ও বাহক শুধু মোল্লা-মুফতিরাই নয়, এই সংস্কৃতির বাহক আধুনিক শিক্ষায়
শিক্ষিত মুসলিম সমাজও। ইসলামের ধর্মগ্রন্থ কিংবা নবীর সমালোচনা হলে তার প্রতিবাদে যে
মুসলিমরা রাস্তায় নেমে যে হিংসাত্মক আচরণ করে তার পুরোভাগে থাকে উচ্চ শিক্ষিত মুসলিমরাও।
মুসলিমরা বহুদিন থেকেই মাদ্রাসার শিক্ষার বদলে আধুনিক শিক্ষা গ্রহণ করছে। কিন্তু আধুনিক
শিক্ষাকে আদর্শ জ্ঞানে এ শিক্ষা গ্রহণ করে বলে মনে হয় না। আসলে ইসলামের আদর্শকে বুকে
আগলে রেখেই মুসলিম অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের কেরিয়ারের কথা ভেবে আধুনিক শিক্ষার স্কুলে
পাঠায়। কিন্তু বাড়িতে চালু থাকে মুসলিম সংস্কৃতির চর্চা। ফলে মুসলিম সমাজের সন্তানরা
আধুনিক শিক্ষা অর্জন করলেও আধুনিক যুগের উন্নত আদর্শ ও সংস্কৃতির শিক্ষা অর্জন করতে
পারে না। তার ফলে যা হওয়ার তাই হয়। ইসলামের ধর্মগ্রন্থে ভিন্ন ধর্মের নবী, দেব-দেবী
ও মানুষদের বিরুদ্ধে যে কঠিন সমালোচনাগুলি রয়েছে, শিক্ষিত মুসলিমরা মনে করে যে সে সমালোচনাগুলি
ন্যায়সঙ্গত এবং তা করার তাদের অধিকার আছে। কিন্তু তারাই আবার এ মনে করে যে, তাদের ধর্ম
ও নবীর বিরুদ্ধে কারও সমালোচনা করার অধিকার নেই। সেই ভ্রান্ত ধারণার বশবর্তী হয়েই মুসলিমরা
ব্যাঙ্গালোরে হিংস্র হয়ে উঠেছিলো।
আমরা
সমালোচনা করবো, কিন্তু কারো সমালোচনা আমরা শুনবো না – এটা মধ্যযুগীয় চিন্তা-ভাবনা ও
সংস্কৃতি। গণতন্ত্রের যুগে সেই সংস্কৃতি আঁকড়ে থাকা চলে না – এ কথা বুঝতে হবে মুসলিম
সমাজকে। তাদের উপলব্ধি করতে হবে যে, সমালোচনা করার অধিকার সবার আছে। ইসলামের সমালোচনার
জবাব অস্ত্র ও হিংসা দিয়ে নয়, দিতে হবে কলমের সাহায্যে। এটাই এ যুগের বৈশিষ্ট তা তাদের
বুঝতে হবে। বুঝতে হবে যে, সমাজের শান্তি ও শৃঙ্খলা স্থাপনের জন্যে এই বৈশিষ্টটা সবাইকে
মানতে হবে, মানতে হবে মুসলিম সমাজকেও।
এটা
গভীর দুঃখজনক ঘটনা যে মুসলিম সমাজ আজও মধ্যযুগীয় অন্ধকারে বুঁদ হয়ে রয়েছে। এই জমাট
বাঁধা চাপ চাপ অন্ধকারের মধ্যেও আশার একটু ক্ষীণ আলো দেখালেন ব্যাঙ্গালোরের কংগেসের
প্রাক্তন মন্ত্রী বি. জেড জামির খান। তিনি ক্রুদ্ধ মুসলিম জনতার হিংসাত্মক কার্যকলাপকে
আড়াল করেন নি। এমনকি পুলিশের গুলি চালনারও নিন্দা করেন নি। উল্টে যারা হিংসাত্মক আচরণ
করেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ পদক্ষেপ করতে সরকারের কাছে অনুরোধ করেছেন এবং মুসলিমদের
শান্ত থাকতে অনুরোধ জানিয়েছেন। এটাই তো কাম্য।
মেকি ধর্মনিরপেক্ষ
রাজনৈতিক নেতা এবং বিদ্বজনদের নেতিবাচক ভূমিকা
ভারতবর্ষে
গণতন্ত্রের সূচনা হয়েছে ১৯৪৭ সালে। তিয়াত্তর বছর ধরে এ দেশে গণতন্ত্রের চর্চা ও অনুশীলন
হচ্ছে (অবশ্য সততার সঙ্গে হচ্ছে এমন বলা যাবে না)। কিন্তু খুবই উদ্বেগের বিষয় হলো মুসলিম
সমাজকে সেই চর্চা ও অনুশীলনে আজও সামিল হতে তেমন দেখা যাচ্ছে না। এর জন্যে নিশ্চয়ই
প্রধানত মুসলিম সমাজই দায়ী। কিন্তু আমি মনে করি না যে এর দায় শুধু তাদেরই। অনেকখানি
দায় বর্তায় গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক দলগুলির উপরেও। দায় বর্তায় বুদ্ধিজীবী
ও বিদ্বজনদেরও যাঁরা গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতায়
বিশ্বাসী। এটা বলছি এ জন্যে যে, মুসলিমরা যখনই তাদের ধর্মের সমালোচনায় কাতর হয়ে উন্মত্ত
ও হিংস্র হয়ে ওঠে তখন রাজনৈতিক দলগুলি এবং বুদ্ধিজীবী ও বিদ্বজনরা কেউই তাদের নিন্দা
ও সমালোচনা করে না। অসাম্প্রদায়িক সরকারগুলি হিংসাশ্রয়ী জনতার বিরুদ্ধে কোনো কড়া পদক্ষেপ
করে না। বরং তাদের প্রশ্রয়ই দিয়ে থাকে এবং দুষ্কৃতিদের শাস্তি দেবার বদলে আড়াল করে।
প্রশ্রয় দেয় বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি ও বুদ্ধিজীবী সমাজও। হিংসাত্মক কার্যকলাপের নিন্দা
তো করেই না, ঘুরিয়ে যারা ইসলামের করে তাদের বিরুদ্ধেই কড়া সমালোচনায় মুখর হয়। বলে যে,
বাক-স্বাধীনতার নামে মানুষের ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত দেওয়া মানা যায় না। সরকার, বিরোধী
দল ও বুদ্ধিজীবী সমাজের নিরন্তর এরূপ প্রচ্ছন্ন প্রশ্রয় ও মদতই মুসলিমদের আজও অসহিষ্ণু
থেকে যাওয়ার জন্যে বহুলাংশেই দায়ী।
বিজেপি সরকারের
নেতিবাচক ভূমিকা
হিন্দু
ধর্মে ভিন্ন ধর্মের মানুষের বিরুদ্ধে হিংসা ও ঘৃণা ছড়ানোর কথা নেই। হিংসা ও ঘৃণার কথা
যা বলা আছে তা হিন্দুদের নিম্ন বর্ণের বিরুদ্ধে। অথচ বিজেপিকে দেখা যাচ্ছে মুসলিম,
খ্রিস্টান ও বৌদ্ধদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ও হিংসা ছড়াতে। মুসলিমরা মুসলিম দেশগুলিতে যা করে
তারাও সেরূপ আচরণ করছে। নিরীহ মুসলিমদের জোর
করে জয় শ্রীরাম বলাচ্ছে, না বললে মারধর করছে। গো-রক্ষার নামে মুসলিমদের উপর নির্মম
অত্যাচার চালাচ্ছে, এমনকি হত্যাও করছে। গো-মাংস খাওয়া নিষিদ্ধ করেছে কয়েকটি রাজ্যে।
এভাবে তারা তাদের খাদ্য সংস্কৃতি চাপিয়ে দিতে চাই অহিন্দুদের উপর। চাপানোর চেষ্টা করছে
হিন্দি ও সংস্কৃত ভাষা সহ তাদের হিন্দু সংস্কৃতিও। তারা এক কথায় মুসলিম, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টানদের
বিরুদ্ধে প্রতিশোধ ও প্রতিহিংসাকে প্রশ্রয় দিচ্ছে। এসবই গণতন্ত্র এ ধর্মনিরপেক্ষতার
পরিপন্থী। বিজেপির সেই ধারাকেই অনুসরণ করতে চেয়ে একটি বাজে সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিজেপির
সরকার মুসলিমদের গত রাত্রের হিংসাত্মক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে। বিজেপি সরকার সিদ্ধান্ত
নিয়েছে যে, ভাঙচুর ও অগ্নি সংযোগের ঘটনায় বাইক
ও মোটর গাড়ি সহ যে সমস্ত সম্পত্তি নষ্ট হয়েছে তার ক্ষতিপূরণ আদায় করা হবে হিংসাত্মক
ঘটনার সাথে যারা যুক্ত তাদের কাছ থেকে। এই পদক্ষেপটি বিজেপির প্রতিহিংসার রাজনিতি থেকে
উদ্ভুত। গণতন্ত্রে এরূপ হওয়া অবাঞ্ছনীয়। প্রসঙ্গত জানাই যে, হিংসাশ্রয়ী জনতার ওপর পুলিশের
গুলি চালানোর সমালোচনা আমি করছি না। ১৩.৮.২০