Wednesday, August 5, 2015

তিন জন স্ত্রী মুহাম্মদকে বিয়ের রাত্রেই প্রত্যাখান করেছিলেন


 ৮ম হিজরী [৬৩০ খ্রিঃ] ইসলামের ইতিহাসে ও মুহাম্মদের জীবনে  সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বছর । মুহাম্মদ ইসলাম ধর্মের প্রবর্তন করেছিলেন মক্কায় তাঁর আধিপত্য ও ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে । সেই লক্ষ্য  তিনি পূর্ণ করতে সক্ষম হন এই বছর ।  এই বছরেই তিনি মক্কা ও আরবের বুকে  জনগণের   উপর কতৃত্ব ও নেতৃত্ব স্থাপনের তাঁর বহু দিনের বাসনা চূড়ান্তরূপে বাস্তবায়িত করেন ।  মক্কার উপর চূড়ান্ত এই বিজয় হাসিল  করেন একেবারেই মসৃণভাবে একফোঁটা রক্তপাত ব্যতিরেকেই ।
৮ম হিজরীর শুরুতেই তিনি তাঁর ঘনিষ্ঠ সাহাবীদের বলেন যে, তিনি  ব্যাপক সংখ্যক মুসলিমদের  সঙ্গে নিয়ে হজে করতে যেতে চান  । তাঁর ইচ্ছা পূরণে সাহাবীরা তৎপর হয়ে ওঠেন এবং মুসলমানদের হজে যাওয়ার জন্যে মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকতে বলেন । ফলে ব্যাপক সাড়া পড়ে যায় তাদের মধ্যে । হজ যাত্রার প্রস্তুতি যখন শেষ তখন দেখা গেলো আক্ষরিক অর্থেই বিশাল বাহিনী হজে যাওয়ার জন্যে পুরোপুরি প্রস্তুত । সেই বাহিনীতে ছিলো দশ হাজার মুসলিম  নরনারী  । মুহাম্মদ এতো বড়ো বাহিনী শুধু হজ পালন করার জন্যেই গঠন করেন  এমনটা কিন্তু মোটেই  নয়তাঁর মূল পরিকল্পনা ছিলো এই বিশাল বাহিনী নিয়ে মক্কা অভিযান করা ও মক্কার দখল নেওয়া   তিনি কিন্তু কাউকে এই পরকল্পনার  কথা টের পেতে দেন নি । একান্তে নিজের মধ্যেই এটা গোপন রেখেছিলেন যাতে মক্কার কোরেশদের কাছে এ খবর কোনোক্রমেই আগাম পৌঁছে না যায় ।
মুহাম্মদ ৭ম হিজরীতে যখন দেখলেন যে মক্কার কোরেশরা হোদায়বিয়ার চুক্তি অক্ষরে অক্ষরে পালনে কোনো ত্রুটি করেনি   তখনই এই পরিকল্পনার ভাবনা তাঁর মাথায়  আসে । ৬ষ্ঠ [৬২৮ খ্রিঃ]  হিজরীতে মুহাম্মদ ও কোরেশদের মধ্যে হোদায়বিয়ায় বসে যে চুক্তি হয় সেটা হোদায়বিয়ার চুক্তি নামে ইতিহাসে খ্যাত । সেই চুক্তির মধ্যে একটা শর্ত ছিলো এ রকম – মুহাম্মদ পরের বছর থেকে তাঁর শিষ্যদের নিয়ে মাত্র তিন দিনের জন্যে  কাবা মন্দিরে হজ করতে যেতে পারবেন  কিন্তু তিন দিন পরই তাঁদের মক্কা ছেড়ে চলে যেতে হবে । আর সেই তিন দিন কোরেশদের পুরুষরা কেউ মক্কায় অবস্থা করবে না, তারা মক্কা থেকে দূরে কোথাও অবস্থান করবে যাতে মুহাম্মদের হজ পালনে কোনো প্রকার বিঘ্ন না ঘটে    কোরেশরা এই চুক্তিটি কতটা রুপায়ন করে  সে বিষয়ে মুহাম্মদ যথেষ্ট সন্দিহান ছিলেন ।  কিন্তু তিনি  ৭ম হিজরীতে  হজ করতে গিয়ে দেখলেন যে কোরেশরা সেই চুক্তি আন্তরিকতার সঙ্গে পালন করেছে । তাদের একজন পুরুষ মানুষও মক্কায় ছিলো না যে তিন দিন মুহাম্মদ ও তাঁর শিষ্যরা মক্কায় অবস্থান করেন । তিনি এও লক্ষ্য করলেন যে  তিন দিনের জন্যে মক্কা একেবারেই অরক্ষিত রয়েছে প্রাক ইসলাম  যুগে আরবের মানুষরা ছিলো নীতি পরায়ণ এবং কখনও তাদের ঐতিহ্য ভঙ্গ করতো না । এটা তাদের একটা বড়ো ও মহৎ গুণ ছিলোতাদের একটা ঐতিহ্য ছিলো বছরে চার মাস যুদ্ধ-বিগ্রহ না করা ।  সে সময় তারা কেউ অস্ত্র ধারণ করতো না এবং রক্তপাত ঘটাতো না । সেই চার মাসটিকে  তারা পবিত্র মাস বলে গণ্য করতো । মাস চারটি  ছিলো হজের মাস [জিলকদ মাস],  তার আগের ও পরের মাস এবং মহরম মাস । কোরেশরা এই বিশ্বাস রেখেছিলেন মুহাম্মদের উপরে যে তিনিও নিশ্চয় আরবের এই সুপ্রাচীন ও সুমহান  ঐতিহ্য মেনে চলবেন এবং পবিত্র মাসের পবিত্রতা রক্ষা করবেন তাই তারা তিন দিন মক্কাকে সম্পূর্ন অরক্ষিত রেখেও মক্কার বাইরে থাকার চুক্তিতে সম্মতি প্রদানে  দ্বিধা করেন নি । মুহাম্মদ কিন্তু কখনই  ঐতিহ্য ও নীতির প্রতি নিষ্ঠাবান  ছিলেন না । আরবদের  এই সততা, সরলতা ও ঐতিহ্যপরায়ণতার সুযোগ নিয়ে তাই  মুহাম্মদ মক্কা অভিযান করার পরিকল্পনা বা ষড়যন্ত্রের ছক কষে ফেলেন ৭ম বা ৮ম  হিজরীতে মক্কা থেকে ফিরে আসার পর ।  সেই পরিকল্পনা রূপায়ন করেন  ৮ম হিজরীতে ।  হজ করার নাম করে হজযাত্রীর বেশে  দশ হাজার সেনার সশস্ত্র বাহিনী নিয়ে মক্কা অভিযান করেন । সে সময়  মক্কার  কোরেশরা পবিত্র মাসের ঐতিহ্য  এবং  হোদায়বিয়ার চুক্তি মেনে  সম্পূর্ণ নিরস্ত্র ছিলো । ফলতঃ বিনা রক্তপাতে মক্কা জয় করতে মুহাম্মদের কোনো অসুবিধায় হয় নি  । অসহায় কোরেশদের তখন  প্রাণ রক্ষার্থে মুহাম্মদের বিশাল সশস্ত্র বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করা ছাড়া বিকল্প ছিলো না । সদম্ভে মক্কায় প্রবেশ করেই মুহাম্মদ সদলবলে প্রথমে  কাবা  মন্দিরে প্রবেশ করেন  যেখানে  ছিলো  বহু হাজার বছরের প্রাচীন ৩৬০টি দেব-দেবীর মূর্তি । তিনি স্বহস্তে লাঠি দিয়ে  মূর্তিগুলি ধ্বংস করতে শুরু করেন সংহার মূর্তি ধারণ করে  ‘সত্য এসেছে, মিথ্যা বিলুপ্ত হয়েছে’   বলতে বলতে মূর্তিগুলি ধ্বংস করার কাজে  মেতে ওঠেন ।   সমস্ত দেব-দেবীর মূর্তিগুলি  ধ্বংস করে কাবায়  প্রতিষ্ঠিত করেন একমাত্র আল্লাহকে যে ছিলো আরবদের প্রধান দেবতা তিনি আরবদের সমস্ত গোত্রের সকল বিগ্রহ ধ্বংস করে একমাত্র তাদের প্রধান দেবতা আল্লাহর প্রতিষ্ঠা করলেন বটে, কিন্তু তাদের বহু প্রাচীন ধর্মীয় রীতি ও সংস্কৃতিগুলি ত্যাগ করে নতুন কোনো রীতি-পদ্ধতি প্রবর্তন করতে পারলেন না । প্রাক ইসলাম যুগের আরবরা যে প্রক্রিয়ায়  হজক্রিয়া সম্পন্ন করতো ঠিক সে প্রক্রিয়াতেই মুহাম্মদ  হজ পালন করলেন ।  এসব কথা  আধুনিক যুগের ইসলামি পণ্ডিতগণ সযতনে গোপন করেন । তাঁরা দাবি করেন যে খোদ আল্লাহর নিকট থেকেই মুহাম্মদের নিকট হজ পালনের নির্দেশ এসেছিলো এবং কীভাবে  হজ পালন করতে হবে তার নিয়ম পদ্ধতিও । মুহাম্মদ যে প্রাক ইসলাম যুগের সমস্ত নিয়ম মেনেই হজ পালন করেছিলেন তা আমরা জানতে পারা যায়  গোঁড়ার দিকে যে সমস্ত ঐতিহাসিক  মুহাম্মদের জিবনী লিখেছেন তাঁদের  লেখা গ্রন্থ  থেকে । আল-তাবারি [৮৩৯-৯২৩ খ্রি.]  হলেন সে রকম একজন জীবনীকার ।  তিনি এ প্রসঙ্গে লিখেছেন –
The religious ceremonies performed by Muhammad on the day of the fall of Mecca were not any way different from those that the pagans had long observed. The sanctity of the ka’aba was preserved and the rites of the pilgrimage were maintained as in pre-Islamic  days. [Vide: Women and the Koran, Anoar Hekmat, p-69]
হজক্রিয়া সম্পন্ন করার পর  মুহাম্মদ  আরো কিছুদিন মক্কায় থেকে যান সেবার । এই সময়ে কোরেশরা একে একে এসে তাঁর হাতে হাত রেখে বয়াত [আন্যুগত্যের শপথ]  নেয়    নারীদেরও  বয়াত নিতে হয়েছিলো, তবে তারা দূর থেকেই নিয়েছিলো, কারণ তাদের তাঁর [মুহাম্মদের] হাতে হাত রাখার অনুমতি দেওয়া হয়  নি । বয়াতপর্ব শেষ হলে মুহাম্মদ মক্কায় তাঁর অনুগত কিছু লোককে নিযুক্ত করলেন মক্কার বুকে প্রশাসক ও ধর্মীয়নেতা হিসেবে কঠোরভাবে ইসলামি শাসন তথা মুহাম্মদীয় শাসন প্রতিষ্ঠা  করার জন্যে ।  তারপর  তিনি মক্কা ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের মানুষদের কাছে নির্দেশ পাঠালেন পনেরো দিনের মধ্যে তারা যেনো তাদের আরাধ্য দেব-দেবীর মূর্তিগুলি ধ্বংস করে ফেলে ।  মুহাম্মদের অনুরাগী ঐতিহাসিকরা দাবী করেন যে মুহাম্মদ মক্কার কোরেশদের অতীতের সকল শত্রুতার কথা ভুলে  তাদেরকে বিনা শর্তে ক্ষমা করে দেন যা পৃথিবিতে আজো এক বেনজির ও বিরল দৃষ্টান্ত হয়ে রয়েছে,  এবং কোরেশরাও তাঁর এই উদারতা, ক্ষমাশীলতা   ও মহানুভবতায় মুগ্ধ হয়ে দলে দলে তাঁর নিকট এসে  ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলো এ দাবি যে হাস্যকর তা বলা বাহুল্য । এই  ঐতিহাসিকরাই আবার  এ কথাও স্বীকার করেছেন যে মুহাম্মদ মক্কার প্রতিটি ঘর থেকে সমস্ত বিগ্রহ  ধ্বংস করার  নির্দেশ জারি করেছিলেন । এ প্রসঙ্গে ড.ওসমান গণী কী বলেছেন তা শোনা যাক –  মক্কায় হযরতের পনেরো দিনঃ   খালেদের অনুপ্রেরণায় অনুরোধে হযরত মক্কায় ১৫ দিন অতিবাহিত করেছিলেন বাকি কাজগুলো সমাধা করার জন্য তিনি নির্দেশ দিলেন কোন বিশ্বাসীর ঘরে কোন পুতুল বা মূর্তি থাকবে না বা তারা রাখবে না তখন কতকগুলো লোককে পাঠালেন ওইগুলিকে দূর করতে বিনা রক্তপাতে ” [দ্রঃ মহানবী, পৃ ৩৩৭] মক্কার কোরেশরা যে প্রাণভয়েই ইসলামকে গ্রহণ করতে  এবং প্রবল মনঃকষ্টের মধ্যেই তাদের আরাধ্য  দেব-দেবীর মূর্তিগুলি সরিয়ে ফেলতে বাধ্য হয়েছিলো তার প্রমাণ  রয়েছে গণীর সেই বর্ণনার পরের অংশেইসে অংশে  তিনি  লিখেছেন, “খালেদ বানু সাইবান গোত্রে গেলেন ওইগুলো নষ্ট করতে সেখানে পুতুলদের প্রধান উজ্জা ছিল তখন সেখানকার লোকেরা খালেদের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করে খালেদও তাদের কয়েকজনকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করেন  
বয়াতপর্ব এবং মুহাম্মদীয় শাসন প্রতিষ্ঠার জন্যে  প্রশাসনিক ধর্মীয় কাজগুলো সমাধা করার পর মুহাম্মদ এবার  মন দিলেন তাঁর হারেমের সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি করার দিকে এর পূর্বে  বিধর্মীদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সফল অভিযান শেষে প্রায় প্রত্যেকবারই তিনি তাদের মধ্যে থেকে একজন  সর্বাপেক্ষা সুন্দরী যুবতী নারীকে বিয়ে করেছেন এটা তিনি অভ্যাসে পরিণত করে ফেলেছিলেন  মক্কা অভিযান ও মক্কা বিজয় ছিলো তাঁর জীবনের প্রধান লক্ষ্য ও স্বপ্ন । আরবের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য কেন্দ্র  প্রধান  তীর্থকেন্দ্র সেই মক্কা নগরী উপর তিনি  চূড়ান্ত   বিজয় অর্জন করেছেন অর্জনের পর তিনি এখন আর কেবল  একজন স্বঘোষিত ঈশ্বরের প্রতিনিধিই নন, কিংবা শুধু একটা  ডাকাতদল বা দস্যুদলের [মক্কা বিজয়ের আগে আরবের মানুষদের কাছে  মুহাম্মদের এটাই ছিলো পরিচয়] নেতা বা সর্দার  নন,  তিনি এখন একজন সম্রাট,  একটা রাষ্ট্রের প্রধান । এখন তিনি আরবের দণ্ডমুণ্ডের কর্তা ।  তাঁর হাতে এখন  অশেষ ক্ষমতা ।  এমন পরিস্থিতিতে তিনি এখন  তো সুন্দরী ও যুবতী নারীর সন্ধান করবেন এ আর এমন কী !   হ্যাঁ, এ পর্বেও তিনি  বিয়ে করেন তাঁর হারেমের কলেবর বৃদ্ধির লক্ষ্যে     ইসলামের অনুগামী   মুহাম্মদের জীবনীকারগণ কিন্তু এই পর্বে মুহাম্মদ কাউকে বিয়ে করেছিলেন তা মানতে অস্বীকার করেন । তাঁরা বলেন যে মুহাম্মদ সর্বশেষ বিয়ে করেছিলেন মাইমুনাকে এবং তারপরেই আল্লাহ ওহির মাধ্যমে  মুহাম্মদকে আর বিয়ে না করার নির্দেশ পাঠান । তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ বলেছেন যে এ পর্বেই মুহাম্মদ তাঁর জীবনের শেষ বিয়েটা  করেছিলেন, এবং  মাইমুনাই ছিলেন সেই সৌভাগ্যশালী নারীকিন্তু না, এই তথ্যগুলি  সত্যি নয় । মধ্যযুগোত্তর কালের ইসলামের অনুরাগীদের মধ্যে একটা সাধারণ বৈশিষ্ট আমরা দেখতে পাই । তাঁরা যখন ইসলামের ইতিহাস কিংবা মুহাম্মদের জীবনচরিত রচনা করেন তখন তাঁরা অনেক তথ্য আড়াল করেন, অনেক তথ্য বিকৃত করেন আবার অনেক  মনগড়া তথ্য সংযোজিতও করেন । তাঁরা এটা করেন ইসলাম ও মুহাম্মদের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করে দেখানোর উদ্দেশ্যে । কিন্তু  বাস্তব ঘটনা  হলো এই যে  মুহাম্মদ তাঁর বাণী ও কর্মকাণ্ডের জন্যেই উজ্জ্বল ভাবমূর্তির অধিকারী নন । বহুগামীতা, বিধর্মীদের হত্যা, বিধর্মীদের নারী ও  শিশুদের বন্দি ও ক্রীতদাসত্ব করণ,  বিধর্মীদের ধন-সম্পত্তি  লুণ্ঠন,  প্রভৃতি কাজগুলো  কারো ভাবমূর্তি  উজ্জ্বল করার পক্ষে সহায়ক হয় না, উল্টোটাই হয় । আর সত্যি কথা বলতে কী যে   এ সব কাজের মধ্যে দিয়েই মুহাম্মদ তাঁর ধর্ম ও  সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছেন । সুতরাং এটাই নির্মম সত্যি ঘটনা যে  তিনি কখনোই দেবতুল্য ভাবমূর্তির  মানুষ  ছিলেন না । তাই তাঁর অনুগামী ঐতিহাসিক ও জীবনীকারদের তাঁর [মুহাম্মদের] চরিত্রে  উজ্জ্বলতা আরোপ করতেই হয় । তাঁকে মহান করে দেখানোর  এ ছাড়া আর উপায়ই কী আছে ?   আর সেজন্যেই তো তাঁদের ইতিহাসের অনেক তথ্য গোপন করতে হয়, কোথাও বিকৃত করতে হয় এবং কোথাও কোথাও আবার  মনগড়া তথ্যও সংযোজন  করতে হয় কিন্তু  তাঁরা যে  তথ্যগুলি গোপন বা আড়াল করেন, কিংবা বিকৃত করেন, কিংবা সংযোজন করেন  সেগুলি আমরা   জানতে পারি   গোঁড়ার  দিকের মুহাম্মদের জীবনী রচিয়তাদের লেখা গ্রন্থগুলি  থেকে । তাঁরা কোনো কিছুই গোপন বা বিকৃত করতেন না । তাঁদের লেখা গ্রন্থ থেকেই আমরা এই তথ্যটিও পাই যে মুহাম্মদ যে বছর মক্কা জয় করেছিলেন সে বছরেও মক্কায়  বিয়ে করেছিলেন ।  সেই  জীবনীকারদের মধ্যে অন্যতম  একজন হলেন  হলেন ইবন সা’দ [৭৪৭-৮২৩ খ্রি.]    তিনি এবং আরো কয়েকজন এ প্রসঙ্গে যে সব কথা লিখেছেন তা সংক্ষেপে  এখানে উল্লেখ করতে চাই ।  তাঁদের লেখা থেকে এটা জানা যায় যে মুহাম্মদ মক্কার তিনজন যুবতি ও সুন্দরী নারীকে বিয়ে করেছিলেন । তাঁরা এ প্রসঙ্গে আর একটা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করেছেন । তাঁরা বলেছেন যে এই তিনটি  বিয়ের ঘটনা মুহাম্মদের পক্ষে মোটেই  সুখকর  হয়ই  নি,  বরং  এই তিনটি বিয়েতে  তাঁকে চরম অপদস্থ হতে  হয়েছিলো । ইবনে সা’ব লিখেছেন যে মক্কায়  আসমা বিনত আল-নুমান নাম্নী একজন নারীকে মুহাম্মদ বিয়ে করেছিলেন,  কিন্তু  তিনি বিয়ের রাত্রেই মুহাম্মদের  সঙ্গে রাত্রি যাপনে  প্রবল আপত্তি জানান । আসমা  মুহাম্মদের ঘরে প্রবেশ করলে তিনি [মুহাম্মদ] ঘরের দরজা বন্ধ করে দরজার পর্দা টেনে দেন । তারপর মুহাম্মদ যেমনই আসমাকে আলিঙ্গন করতে তাঁর দিকে অগ্রসর হন তখন তিনি [আসমা]  বলেন,  আল্লাহ যেন আপনার হাত থেকে আমাকে রক্ষা করেন এবং আশ্রয় দেন  মুহাম্মদ তখন তাঁর জামার হাতা দিয়ে  তাঁর নিজের মাথা ঢেকে  নেন এবং বলেন, তোমার সুরক্ষার প্রার্থনা  মঞ্জুর করা হলো । ইবনে সা’দ কী লিখেছেন তা  উদ্ধৃত করেছেন আনয়ার হেকমত Women and the Koran গ্রন্থে । এ বিষয়ে ইবনে সা’দকে উদ্ধৃত করার আগে  আনোয়ার যে  কথাগুলি বলেছেন সেগুলি আগে শোনা যাক । তিনি  Women and the Koran  গ্রন্থের ৬৯ পৃষ্ঠায় যা লিখেছেন –  
The new converts gathered around Muhammad. By shaking the prophet’s hand, the men vowed allegiance to Allah’s apostle. The women converts were not allowed to shake his hand [Bai’at in Arabic].
After appointing some of his men as the mayor and religious jurists of the town, Muhammad turned his mind, as usual, to another wife. He chose a woman named ‘Asma Bint al-Numan, but on the wedding night she stubbornly refused to submit to his sexual desires.
আনোয়ার হেকমত এই কথাগুলি লেখার পরই  ইবনে সা’দকে উদ্ধৃত করেছেন । ইবনে সা’দ যে কথাগুলি লিখেছেন - –
When she [‘Asma Bint al-Numan] entered the room where he [prophet] was, he closed the door and released the curtain. When he thrust his hand towards her, she said, “I take refuge in Allah from thee.” The prophet immediately covered his head with his sleeve and said, “You are granted such a protection.”
আসমা কেনো মুহাম্মদকে প্রত্যাখান করেছিলেন সে বাখ্যা দিয়েছেন ফ্রান্সের ডারমেঙ্গহেম [Dermenghem ] যিনি ছিলেন সে দেশের  একজন খ্যাতনামা  মহাফেজখানার তত্ত্বাবধায়ক  তিনি  লিখেছেন যে আসমা ছিলেন  অভিজাত  এক গোত্রের  গোত্রপতির মেয়ে    তাই মুহাম্মদের মতো একজন সামান্য ও সাধারণ মানুষকে স্বামী হিসেবে গ্রহণ করতে তাঁর আত্মমর্যাদায় বেধেছিলো  । ডারমেঙ্গহেম যা লিখেছেন –
Asma as asking Muhammad: “Should a queen give herself to one of the people? I come from a tribe which receives everything and give nothing. I ask God to protect me against you. [Vide: Women and the Koran]
আনোয়ার হেকমত এ প্রসঙ্গে যাঁরা একেবারে গোঁড়ার দিকে মুহাম্মদের জীবনী লিখেছেন তাঁদের কথার সূত্র ধরে বলেছেন আসমার মুহাম্মদকে প্রত্যাখান করার আরো কিছু কারণের কথা শোনা যায়  । আসমা ছিলেন ভীষণ  সুন্দরী  এবং এক  সম্পদশালী গোত্রে এক বিখ্যাত বংশে তাঁর জন্ম ।  মুহাম্মদের অনেক ক্ষমতা ও অনেক অর্থ থাকলেও যেহেতু তিনি ষাট বয়সের এক বৃদ্ধ এবং তাঁর অনেকগুলি স্ত্রী বর্তমান তাই তাঁকে স্বামী হিসেবে মেনে নিতে আসমার রুচি সম্মতি দেয় নি ।   আনোয়ার এ প্রসঙ্গে লিখেছেন তাঁর উক্ত গ্রন্থের ৭০ পৃষ্ঠায় –
It is maintained by some of the earliest exegetes that ‘Asma was a young, charming woman from a famous and well-to-do clan. Muhammad was in his early sixties, with a harem of full of young, lovely wives. “She hated to share the same man with all others, and Muhammad’s power and money were not a strong motive for her to make him desirable.” 
ইনভার্টেড কমা [“She hated … make him desirable] –র মধ্যেকার কথাগুলি আনোয়ার হেকমত উদ্ধৃত করেছেন মরক্কোর প্রখ্যাত নারীবাদী ও সমাজবিজ্ঞানী ফতেমা মেরনিসির  লেখা থেকে । হেকমত বলেছেন যে,  বুখারি হাদিসেও উল্লেখ আছে যে আসমা মুহাম্মদকে প্রত্যাখান করেছিলেন । ‘বুখারি বলেছেন যে আসমা  মুহাম্মদকে  পছন্দ করতেন না তাই প্রত্যাখান করেছিলেন ।’ [হাদিসঃ   Al-Bukhari, Al-Shahih, p.459, x68, bab. 3]   
শুধু আসমাই নয়, মক্কার আরো দু’জন যুবতী মুহাম্মদকে প্রত্যাখান করার দুঃসাহস দেখিয়েছিলেন । তাঁদের একজনের নাম মুলেকা এবং অন্য জনের নাম ফতেমা । মুলেকা মুহাম্মদকে প্রত্যাখান করেছিলেন এ তথ্য পাওয়া যায় রাশিয়ার প্রখ্যাত মার্কসবাদী ঐতিহাসিক, সমাজতত্ত্ববিদ ও প্রাচ্যভাষাবিদ ম্যাক্সিম রবিনসনের লেখায় । বুখারি হাদিসেও এ কথার উল্লেখ রয়েছে । বুখারি লিখেছেন যে, মুলেকা ছিলেন একজন যুবতী ও অসাধারণ সুন্দরী যিনি মুহাম্মদের সঙ্গে এক বিছানায় রাত্রী যাপন করতে চান নি ।  [Vide: Al-Bukhari, Al-Sahih, p.459, x 68, Bab.3]  ডারমেঙ্গহেম [Dermenghem]  লিখেছেন যে, মুহাম্মদের দেহে কুষ্ঠ রোগের লক্ষণ দেখে তাঁকে প্রত্যাখান করেছিলেন। ফতেমা মুহাম্মদকে বিয়ের রাত্রেই প্রত্যাখান করেন এ তথ্য পাই ইবন সা’দের লেখায় । মুলেকা ও ফতেমার মুহাম্মদকে প্রত্যাখান করার ঘটনা বর্ণনা করেছেন আনোয়ার হেকমত তাঁর Women and the Koran গ্রন্থে । তাঁর বর্ণনাটা এরূপ –
 Muhammad encountered similar refusals from two other Meccan women he wished to add his harem. One, named Mulayka, is described by some early historians as hysterical. Others maintain that she was young and charming but simply did not care to sleep with Muhammad. Still others hold that separation was due to “symptoms of illness resembling leprosy.”
Finally, the other woman who declined to cohabit with Allah’s messenger on her     wedding night was named Fatima, the daughter of ‘Abd Duhak.  [see page 70]
  

  

KARBALA: Truth and Lies

  KARBALA : Truth and Lies           GIASUDDIN                 Translated by SRIJIB BISWAS        ...