Thursday, October 31, 2019

বিশ্বের এক নম্বর কুখ্যাত সন্ত্রাসী বাগদাদী বিশ্বজয়ের স্বপ্ন ত্যাগ করে অবশেষে আত্মহননই করলেন

নিকাশ হয়ে গেল বিশ্বের এক নম্বর কুখ্যাত সন্ত্রাসী আবুবকর আল-বাগদাদী। সম্প্রতি (২৭.১০.১৯) মার্কিন সেনার 'কায়লা মুয়েলার' অভিযানে সেনারা বাগদাদীকে নাগালের মধ্যে পেয়ে যায়। পালাবার সমস্ত পথ ছিল রুদ্ধ। ফলে 'সুইসাইড ভেস্ট' (বোমা বাঁধা পোশাক) - এর বোতাম টিপে আত্মহত্যা করেন। সুইসাইড ভেস্টের বিষ্ফোরণে তাঁঁর তিন সন্তানও নিহত হয়।

 কে বেশি বিপজ্জনক ও ক্ষমতাশালী সন্ত্রাসী ছিল - লাদেন না বাগদাদী? 

ওসামা বিন লাদেনকেও নিকাশ করেছিল মার্কিন সেনা আট বছর আগে (২.৫.১১)। লাদেন ছিলেন সে সময়ের বিশ্বের এক নম্বর কুখ্যাত সন্ত্রাসী, বিশ্বের এক নম্বর ত্রাস সৃষ্টিকারীও। আর বাগদাদী ছিলেন এ সময়ের এক নম্বর কুখ্যাত সন্ত্রাসী, এক নম্বর বিশ্বত্রাস। এই দু'জনের মধ্যেই বাগদাদীই ছিলেন অনেক বেশি বিপজ্জনক ও  ত্রাস সৃষ্টিকারী বিশ্বের ভয়ংকরতম সন্ত্রাসী। লাদেনের সন্ত্রাসবাদী কার্যক্রম বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত থাকলেও তাঁঁর জঙ্গি সংগঠন আল-কায়দার জিহাদি কর্মকাণ্ড সীমাবদ্ধ ছিল মূলত আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও বাংলাদেশে। এর বাইরে তাঁঁর প্রধান নিশানা ছিল আমেরিকা। বিশ্ব জয় করে পৃথিবীর বুকে ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্য ও কর্মসূচি তাঁঁর ছিল না। অন্তত শোনা যায় নি সে কথা। পৃথিবীর ক্ষুদ্রতম কোনো ভূখণ্ডেও তিনি ইসলামি রাষ্ট্র স্থাপন করতে পারেন নি। ৯/১১/২০০১ - এর (আমেরিকার জোড়া টাওয়ারে বিমান হানার) ঘটনায় তাঁঁর মাথায় বিশ্বের এক নম্বর ভয়ংকর সন্ত্রাসীর মুকুট ওঠে। জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদী কার্যক্রম ও বিশ্বব্যাপী ত্রাস সৃষ্টিতে আবুবকর আল-বাগদাদী কিন্তু লাদেন অপেক্ষা বেশ কয়েক কদম এগিয়ে যান। তিনি ইরাক ও ইরানের বিস্তীর্ণ ভূখণ্ডে ইসলামী রাষ্ট্র (Islamic State, তথা IS) স্থাপন করেন। তিনি সেখানে নতুন করে খেলাফত পুন:স্থাপনের ঘোষণা দেন এবং নিজেকেই তার খলিফা হিসাবে ঘোষণা করেন। ইসলামে প্রথম খেলাফত যুগের শুরু হয় ৬৩২ খৃস্টাব্দে। মুহাম্মদের মৃত্যুর পর মদিনায় তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন আবুবকর যাঁকে বলা হয় ইসলামের প্রথম খলিফা। তারপর ১২৫৮ খৃ: খেলাফত যুগের পরিসমাপ্তি ঘটে। বাগদাদী সেই খেলাফতি জামানা ফিরিয়ে আনেন ইরাক-সিরিয়ায়। অত:পর তিনি ঘোষণা দেন যে তাঁঁর খেলাফত শুধু ইরাক-ইরানে সীমাবদ্ধ থাকবে না, গোটা বিশ্বকে তার খেলাফতের অধীনে নিয়ে আনবেন। তিনি ডিক্রি জারি করেন তাঁঁর শেষ নবীর কায়দায় যে, তার খেলাফতে শুধু সুন্নি মুসলমান থাকবে, আর যারা ইসলাম কবুল করে বাগদাদীর কাছে বয়াত (আনুগত্যের শপথ) নেবে না তাদের হয় জিজিয়া কর দিয়ে জিম্মি হয়ে বসবাস করতে হবে, নতুবা ইসলামিক স্টেট পরিত্যাগ করে চলে যেতে হবে, যারা দু'টোর কোনোটাই পালন করবে না তাদের হত্যা করা হবে। অত:পর তাঁঁর নির্দেশে আইএস জঙ্গিরা নৃশংস গণহত্যা, ধ্বংসকাণ্ড, অপহরণ, ধর্ষণ, লুটপাট শুরু করে। বীভৎসতার দিক থেকে এর নজির সারা বিশ্বে খুব কমই আছে। বাগদাদীর জল্লাদ বাহিনী যারা খেলাফতের নির্দেশে সাড়া দেয় নি তাদের বহু সংখ্যায় নৃশংসভাবে হত্যা করে। হাজার হাজার ইয়াহুদী, খৃষ্টান, শিয়া মুসলিম, ইয়াজিদি প্রাণ বাঁচাতে তাদের ভিটিমাটি ও সমস্ত সম্পত্তি ত্যাগ করে দেশান্তরী হয়। গোটা বিশ্বকে তার খেলাফতে নিয়ে আসার যে ঘোষণা দেন তাতে প্রভাবিত হয় সমগ্র বিশ্ব। কয়েক হাজার সুন্নি মুসলিম যুবক, এমনকি কিছু যুবতীও, বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে দলে দলে পঙ্গপালের মত বিশ্বজয়ের তথাকথিত পবিত্র জিহাদে সামিল হতে ইরাক ও সিরিয়ায় ছুটে যায়। বিশ্বের অন্যান্য জঙ্গি সংগঠনের  অসংখ্য জঙ্গিও তাদের নিজেদের সংগঠন ছেড়ে বাগদাদীর ডাকে সাড়া দিয়ে আইএসের পতাকা হাতে তুলে নেয়। এভাবে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি অতি দ্রুত বিশ্বের সমস্ত মুসলিম জঙ্গিদের এক নম্বর নেতা হয়ে ওঠেন। হয়ে ওঠেন এক নম্বর বিশ্বত্রাসী সন্ত্রাসীও এবং অচিরেই সহিংসতা, হিংস্রতা, নিষ্ঠুরতা ও বর্বরতায় ছাপিয়ে যায় লাদেনের আলকায়েদা ও মোল্লা ওমরের তালিবানিদের। এমনকি সাংগঠনিক শক্তি, সংগঠনের সংহতি ও বিস্তারেও তিনি বহুগুণ ছাপিয়ে যান লাদেনকে। লোকটা আমেরিকা, রাশিয়া সহ বিশ্বের সমস্ত অমিত শক্তিধর রাষ্ট্রগুলির বুকে কাঁপুনি ধরিয়ে দিতে সক্ষম হয়। একসময় আমেরিকা তো তাঁঁর মাথার দাম বাড়াতে বাড়াতে ১৭৭ কোটি টাকা করে দেয় যা বোধ হয় সর্বকালের রেকর্ড।

      মেধাবী ছাত্র থেকে ভয়ংকর জিহাদি হয়ে ওঠার গল্প

মেধাবী ছাত্র ছিলেন আবুবকর আল-বাগদাদী। জন্ম গ্রহণ করেছিলেন ইরাকে ১৯৭১ সালের ৮ই আগষ্ট। ইরাকের বাগদাদ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রী অর্জন করেন। বিষয় ছিল ইসলামিক স্টাডিজ। ফুটবল ছিল তাঁঁর প্রিয় খেলা। খেলতেনও খুব ভালো। দক্ষ ফুটবলার হয়ে উঠেছিলেন। সবাই ডাকতো তাঁঁকে ইরাকের মারাদোনা বলে। সেই মেধাবী ছাত্র ও দক্ষ ফুটবল খেলোয়াড় বাগদাদী এক সময় ঝুঁকতে থাকেন ইসলামি কট্টর মতাদর্শ ও জিহাদি সন্ত্রাসের দিকে। ধীরে ধীরে জঙ্গি ও সন্ত্রাসী হয়ে ওঠেন। এটাই তাঁঁদের স্বাভাবিক পরিণতি। কারণ, তার লেখাপড়ার বিষয় ছিল ইসলামিক স্টাডিজ। এই বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করলে যুক্তি, বুদ্ধি ও বিবেকহীন ব্যক্তিদের পক্ষে ধীরে ধীরে বর্বর জিহাদি হয়ে ওঠাটাই স্বাভাবিক। জিহাদি হয়ে ওঠা বাগদাদী যোগ দেন লাদেনের হাতে গড়ে তোলা জঙ্গি সংগঠন আল-কায়দার শাখা আই.এস.আই (ইসলামিক স্টেট ইন ইরাক) এর সঙ্গে। ক্ষুরধার মস্তিষ্ক সম্পন্ন বাগদাদী একজন সাধারণ জঙ্গি থেকে অতি দ্রুতই আই.এস.আই এর নেতা হয়ে ওঠেন।নেতৃত্বের পদে অধিষ্ঠিত হন ২০১০ সালে। ছিলেন ইসলামি আদর্শ ও জিহাদের প্রতি যারপরনাই নিষ্ঠাবান এবং কঠোর শৃঙ্খলাপরায়ন।  সেই মতাদর্শ, নিষ্ঠা ও শৃঙ্খলার জোরে সংগঠনের মধ্যে তাঁঁর নিরঙ্কুশ কতৃত্ব ও আধিপত্য প্রতিষ্ঠা হতে বিলম্ব হয়নি। 
আল-কায়দার প্রতি তাঁঁর অনুরাগ ও আনুগত্য বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। তার মনে হয় আল-কায়দা ইসলামি বিপ্লব সম্পন্ন করার উপযুক্ত সংগঠন নয় এবং আল-কায়দার সঙ্গে থাকলে ইরাক ও ইরানের রাষ্ট্র উচ্ছেদ করে ইসলামি রাষ্ট্র স্থাপন করা কখনোই সম্ভব নয়। তিনি তাই আই.এস.থেকে বেরিয়ে গিয়ে ২০১৩ সালে আইএসআইএল (ISIL) নামে পৃথক একটি সংগঠন গড়ে তোলেন। লেভান্ট হলো মধ্যপ্রাচ্যের একটি বৃহৎ ভূখণ্ড যার মধ্যে পড়ে ইরাক ও সিরিয়া ছাড়াও মিশর, লেবানন ও জর্ডান। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই তিনি জিহাদি কার্যকলাপের ভৌগোলিক সীমানা কাটছাঁট করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। আশু লক্ষ্য হিসাবে স্থির করেন যে, প্রাথমিক পর্যায়ে শুধু ইরাক ও ইরানে রাষ্ট্রশক্তির বিরুদ্ধে জিহাদ করে সেখানে একটি সত্যিকারের ইসলামি রাষ্ট্র তৈরি করেবেন। তাই তিনি তার সংগঠনের নামে বদল আনেন। আইএসআইলের বদলে নতুন নাম দেন আইএসআইএস অর্থাৎ ইসলামিক স্টেট অব ইরাক এণ্ড ইরান (ISIS)। রাষ্ট্রের সেনাবাহিনী এবং শিয়া মুসলমান সহ সমস্ত মুশরিক ও কাফের জনতার বিরুদ্ধে একের পর এক নৃশংস সন্ত্রাসী হামলা সংগঠিত করা শুরু করেন। এইসব হামলায় বহু সেনা ও অসামরিক মানুষ হতাহত হয়। হামলাগুলি মোকাবিলা করতে চূড়ান্ত ব্যর্থ হয় ইরাক ও ইরানের সরকার। ফলে ইরাক ও ইরানের রাষ্ট্রব্যবস্থা ও সাধারণ জনজীবন ক্রমশ বিপর্যস্ত হতে থাকে। ISIS জঙ্গি হানায় দু'ই রাষ্ট্রের সেনাবাহিনী ক্রমশও পিছু হটতে থাকে। এর প্রভাব পড়ে অন্যান্য সংগঠনের জঙ্গিদের উপর। আল-কায়দার সংগঠন আই.এস.আই এর সমস্ত জঙ্গি  বাগদাদীর সঙ্গে যোগ দেয়। তার পতাকা তলে যোগ জড়ো হয় অন্যান্য সংগঠনের বহু জঙ্গিও। ফলে বাগদাদীর ISIS ব্যাপক শক্তি বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং সন্ত্রাসী অভিযান আরো জোরদার করে তোলে। অচিরেই পৃথিবীর সবচেয়ে পরাক্রমশালী জিহাদি সংগঠনে পরিণত হয়। বাগদাদীর ক্রমবর্ধমান তীব্র জঙ্গি আক্রমণে সেনাবাহিনী আরো বেশি বেশি কোনঠাসা হতে থাকে, আরো বেশি পিছু হটতে থাকে। তাঁঁর পরাক্রম ও একের পর এক সফল জিহাদি অভিযানের খবর বাতাসের গতিতে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে যা গোঁড়া মুসলিম যুব সমাজকে প্রবলভাবে নাড়া দেয়। তারা বিশ্বের নানাপ্রান্ত থেকে শ'য়ে শ'য়ে পঙ্গপালের মত ইরাক ও ইরানে গিয়ে ISIS এর জঙ্গিবাহিনীতে যোগদান করে।
বাগদাদী ইরাক ও ইরানে তাঁঁর দখলিকৃত ভূখণ্ডে ২০১৪ সালে ইসলমি রাষ্ট্র গঠন করার ঘোষণা দেন যার নাম দেন আইএস (IS) তথা ইসলামিক স্টেট। সে সময়েই তার সংগঠন ISIS-এর নাম পরিবর্তন করে নতুন নাম দেন আইএস তথা IS। ইসলামী রাষ্ট্র স্থাপনের ঘোষণা দেওয়ার অব্যবহিত পরই (২৯শে জুন, ২০১৪) সেখানে খেলাফত গঠনের ঘোষণা দেন এবং নিজেকে তাঁঁর খলিফা হিসেবে নিযুক্ত করার ঘোষণাও দেন। খলিফা হয়েই ফতোয়া জারি করেন -  বিশ্বের সমস্ত মুসলমান এবং সমস্ত মুসলিম রাষ্ট্রের তিনি খলিফা, সবাইকে তার খেলাফতের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা করতে হবে এবং তার কাছে বয়াত (আনুগত্যের শপথ) নিতে হবে। যারা তার আনুগত্য স্বীকার করবে না, তার খেলাফতকে অস্বীকার করবে, তারা সবাই ইসলামের শত্রু। একটা বিশেষ লক্ষণীয় বিষয় হলো খেলাফতের ঘোষণা দেওয়ার নির্বাচনের দিনটি। খেলাফত স্থাপনের ঘোষণার দিনটি ছিল আরবি রমজান মাসের ১লা তারিখ যে দিনটি মুসলিম সম্প্রদায়ের কাছে একটি বিশেষ পবিত্র দিন।
বাগদাদীর খেলাফত স্থাপনের ঘোষণা শুধু নামেই ছিলো না, কাজেও তা করে দেখিয়ে গিয়েছেন। তার কয়েকটি দৃষ্টান্ত হলো এগুলো:
দৃষ্টান্ত এক. মুহাম্মদ এবং তাঁর পরম বিশ্বস্ত সাহাবী (অনুচর) প্রথম চার খলিফা যে উদ্দেশ্য ও কঠোর মনোভাবে নিয়ে খেলাফত পরিচালনা করতেন ঠিক সেই উদ্দেশ্য ও তাঁঁদের মতোই  কঠোর মনোভাবে নিয়েই বাগদাদীও তাঁঁর খেলাফত পরিচালনা করে গেছেন। তাঁঁর নবী ও পূর্বসূরি খলিফাদের মূল লক্ষ্য ছিল গোটা বিশ্বে খেলাফতি শাসন প্রতিষ্ঠা করা। মুহাম্মদ কিন্তু প্রথমেই বিশ্বকে জয় করার লক্ষ্য স্থির করেন নি। প্রথমে নিশানা করেন মদিনার প্রতি। তারপর মক্কা জয় করার প্রতি। এভাবে ধাপে ধাপে লক্ষ্যমাত্রার (target area) বিস্তার ঘটান এবং পর পর সাফল্য আসার পর গোটা বিশ্বে খেলাফত প্রতিষ্ঠা করার লক্ষমাত্রা স্থির করেন। মুহাম্মদের সাহাবী খলিফাগণও সে পথটাই অনুসরণ করে ধাপে ধাপে ইসলামী সাম্রাজ্যের বিস্তার ঘটিয়ে ছিলেন। বাগদাদীও তাঁঁদের মতো ধাপে ধাপে তার খেলাফত বিস্তারের লক্ষমাত্রা সম্প্রসারিত করেছেন। যেমন প্রথম লক্ষ্য ছিল ইরাক ও ইরানে খেলাফত স্থাপন করা। সেটা পূরণ হবার পর পরবর্তী লক্ষমাত্রার বিস্তার ঘটান। স্থির করেন যে ২০২০ সালের মধ্যে মধ্যপ্রাচ্য, এশিয়া মহাদেশের বৃহৎ অঞ্চল, উত্তর আফ্রিকা, স্পেন, আফ্রিকা ও বাল্কান অঞ্চলগুলিকে তাঁঁর খেলাফতের অধীনে নিয়ে আনবেন। তারপর দখল করবেন সৌদি আরব ও ইরান। তাঁর চোখ ছিল কাবা মসজিদের প্রতি। দৃষ্টান্ত দুই. খেলাফতের অন্তর্গত শিয়াদের সমস্ত মসজিদ ও সৌধ, খৃষ্টানদের সমস্ত গীর্জা ও সমস্ত ভাস্কর্য শিল্প ধ্বংস করেন।
দৃষ্টান্ত তিন. ফতোয়া জারি করেন যে তাঁঁর খেলাফতে শুধু সুন্নি মুসলিমরাই প্রথম শ্রেণীর নাগরিকের অধিকার ও মর্যাদা পাবে। অন্যদের হয় খেলাফত ত্যাগ করতে হবে, নচেৎ জিম্মি হয়ে থাকতে হবে।
দৃষ্টান্ত চার. তিনি মেয়েদের হিযাব পরা বাধ্যতামূলক করেন। সমস্ত পানশালা ও কফি হাউস বন্ধ করেন। ধূমপান নিষিদ্ধ করেন।
দৃষ্টান্ত পাঁচ. নামাজ পড়া ও রোজা রাখা বাধ্যতামূলক করেন। নামাজের সময় সমস্ত দোকান, বাজার ও অফিস-আদালত বন্ধ রাখার ফতোয়া জারি করেন।
দৃষ্টান্ত ছয়. সুদ লেনদেন নিষিদ্ধ করেন। সমস্ত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে তাদের সমস্ত অর্থ বাজেয়াপ্ত (লুঠ) করেন।
দৃষ্টান্ত সাত. বিনা বাধায় লুঠ করা সমস্ত স্থাবর অস্থাবর সম্পদকে গণিমতের মাল তথা বৈধ সম্পদ বলে ঘোষণা দেন এবং সেগুলো রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা করেন।
দৃষ্টান্ত আট. অপহৃত সকল অসুন্নি মুসলিম নারী সহ সকল মুশরিক ও অবিশ্বাসী নারী কে আইএস জঙ্গিদের জন্য ভোগ করা তথা ধর্ষণ করা বৈধ বলে ঘোষণা করেন।
দৃষ্টান্ত নয়. অপহৃত নারীদের ভোগ করার ক্ষেত্রে জঙ্গিদের মধ্যে সৃষ্টি হওয়া ব্যাপক বিশৃঙ্খলা রোধে কোরানের আলোকে একটি নতুন বিধিমালা তৈরি করেন।
দৃষ্টান্ত দশ. সকল মুসলিম দেশগুলোর প্রতি ঘোষণা দেন যে পাশ্চাত্য দেশগুলোর অনুকরণে তৈরি করা সমস্ত আইন-কানুন বাতিল করতে হবে এবং গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, মানবাধিকার ইত্যাদি সমস্ত অইসলামি নীতি ও ধ্যানধারণা বর্জন করতে হবে।
বাগদাদী ছিলেন আদর্শ খলিফা
নৃশংসতা, নিষ্ঠুরতা, বর্বরতা, পৈশাচিকতা হিংস্রতা, হত্যা, অপহরণ, ধর্ষণ, লুণ্ঠন, মানব পাচার ইত্যাদি সমস্ত আদিম, অমানবিক ও ভয়ংকর অপগুণগুলির দিক দিয়ে বাগদাদী ছিলেন একজন আদর্শ খলিফা। ছিলেন এ যুগের ইসলামের নবীর আদর্শ অনুসারী। মুহাম্মদ তাঁকে আল্লাহর নবী বলে স্বীকার না করার জন্যে কাফের ও মুশরিকদের উপর যে নৃশংস নির্যাতন ও নিপীড়ন চালিয়েছিলেন তার বর্ণনা শুনলে আজও গা শিউরে ওঠে। তাঁকে নবী মানতে অস্বীকার করার অপরাধে মদিনার বানু কুরাইজা গোষ্ঠীর ইহুদিদের ৮০০/৯০০ জন পুরুষের শিরচ্ছেদ করেন। সেই ভয়ংকর হত্যাকাণ্ডের তিনি নিজেই তত্বাবধান করেন। বাদদাদীও ইরাকের মসুল শহরে ৫০০ জন ইয়াজিদিকে জীবন্ত পুঁতে দেন। তাদের অপরাধ ছিল তারা তাঁঁকে খলিফা বলে স্বীকার করতে এবং জিজিয়া কর দিতে সম্মত হয় নি। মুহাম্মদ যেমন অবিশ্বাসীদের যাবতীয় স্থাবর ও  অস্থাবর সম্পদ লুট করে ফকির থেকে বাদশা হয়ে উঠেছিলেন রকেটের গতিতে, বাগদাদীও মাত্র কয়েক বছরে আইএসকে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী জিহাদি ও সন্ত্রাবাদী সংগঠনে পরিণত করে তুলে ছিলেন। আইএস এই বিপুল সম্পদ অর্জন করে তাদের নবীর অনুসৃত পথেই যার মধ্যে ছিল ব্যাপক লুটতরাজ, চোরাচালান, অপহরণ, মুক্তিপণ আদায়, মানব পাচার ইত্যাদি। যে সমস্ত শিয়া, ইয়াজিদি, ইহুদী, খৃষ্টান ও অন্যান্য কাফের সম্প্রদায়ের মানুষ খেলাফত ত্যাগ করে দেশান্তরী হয় তাদের সমস্ত সম্পত্তি বাগদাদী লুট করেছিলেন। লুট করেন খেলাফতের অধীনস্থ সমস্ত ব্যাংক। অতি মূল্যবান সমস্ত ভাস্কর্য পাচার করে বহু অর্থ উপার্জন করেন। তৈলক্ষেত্রগুলি থেকে তেল পাচার, গুরুত্বপূর্ণ অপহৃত ব্যক্তিদের কাছ থেকে মোটা মুক্তিপণ আদায় ও অপহৃতদের বিক্রি করেও বিপুল অর্থ উপার্জন করেন।
বিশ্বের সমস্ত মুসলিম জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদী গ্রুপের নেতারা তাদের সংগঠনর শাখা বিশ্বব্যাপী  ছড়িয়ে দিতে চেয়েছে এবং সাধ্যমত তারা পেরেছে। এ ব্যাপারে ওসামা বিন লাদেনের নাম বিশেষ উল্লেখযোগ্য। এক্ষেত্রেও বাগদাদীর নাম থাকবে সবার উপরেই। গ্রুপের প্রধান নেতা  হিসাবে কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন মাত্র ছ' বছর। ২০১৩ সালে নিজের দেশ ইরাকে তিনি তার নিজের গ্রুপ বা সংগঠন ISIL এর জন্ম দেন, তারপর মাত্র সাত বছরের মাথায় এ বছর (২০১৯) ২৭শে অক্টোবর নিহত হন। অর্থাৎ  তাঁঁর কার্যকালের মেয়াদ অতি সামান্যই। তবুও এই স্বল্প সময়ের মধ্যে বহু দেশে তার সংগঠন আইএসের শাখা ছড়িয়ে দিয়ে গেছেন যেগুলো এখনো জীবিত ও সক্রিয়। নিজের সংগঠনের বাইরেও সমমনোভাবাপন্ন বিশ্বের অন্যান্য মুসলিম জিহাদি গ্রুপকে সহায়তা দেন। এ পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য ও পরিসংখ্যান অনুযায়ী তিনি ২৯টি দেশে ১৪০টি জঙ্গি ও জিহাদি হামলায় উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা দিয়েছিলেন। এ ছিল তার সারা বিশ্বে শরিয়তি রাজ কায়েম করার মূল লক্ষ্য ও পরিকল্পনার অঙ্গ।
ইসলামী সাম্রাজ্যের প্রথম চার খলিফাকে (আবুবকর, ওমর ফারুক, ওসমান গণি ও আলীকে) সুন্নি মুসলিমরা খোলাফায়ে রাশিদিনের (সৎপথে পরিচালিত খলিফা) উপাধিতে ভূষিত করেন। অর্থাৎ তাঁঁরা মুহাম্মদ ও আল্লাহর আদর্শ ও নির্দেশ মেনে খেলাফত পরিচালনা করেছেন। অবশ্য তাঁঁরাও কোরানের বাইরে গিয়ে কয়েকটি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। সেগুলি অবশ্য কোরানের আদেশ ও আদর্শের পরিপন্থী ছিল না। মুহাম্মদ ও কোরানের নির্দেশ ও নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক কিছু কিছু পদক্ষেপ নেওয়া শুরু হয় মূলত পঞ্চম খলিফা আমির মুয়াবিয়ার (৬৬১-৬৮০ খৃ:) খেলাফতের সময় থেকে। তাঁঁর নেওয়া ইসলামের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও ইসলামের পরিপন্থি পদক্ষেপগুলির মধ্যে প্রধান তিনটি পদক্ষেপ হলো - ১). তিনি সর্বপ্রথম একটি ধর্মনিরপেক্ষ সেনাবাহিনী গড়ে তোলেন। ২). খলিফার উপদেষ্টা পরিষদেও (মজলিসে সুরায়) ধর্মনিরপেক্ষ নীতি চালু করেন। উক্ত পরিষদে তিনিই সর্বপ্রথম অমুসলিম সম্প্রদায় থেকে নানা বিষয়ে জ্ঞানী, পণ্ডিত, বুদ্ধিদীপ্ত বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সদস্য করেছিলেন যাঁদের মধ্যে ইহুদি ও খৃষ্টান সম্প্রদায়ের লোকও ছিল। ৩). একজন ইহুদি চিকিৎসককে তিনি তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসক নিয়োগ করেন। তিনি কিন্তু তাঁর নবী ও আল্লাহর প্রতি আস্থাবান ও আনুগত্যশীল ছিলেন না এমন নয়। তিনি তাঁর পৃর্বসূরি খলিফাদের চেয়ে অনেক বেশি বুদ্ধি ও বাস্তব জ্ঞান সম্পন্ন দূরদর্শী খলিফা ছিলেন। তাই তিনি ইসলাম ও খেলাফতের সংহতি, উন্নতি বিস্তারের প্রয়োজনে এমন কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করার ঝুঁকি নিতে সক্ষম হয়েছিলেন যেগুলি ছিলো ইসলামের সঙ্গে স্পষ্টতই সাংঘর্ষিক।
মুয়াবিয়া ইসলামের পরিপন্থি পদক্ষেপ করার যে সাহস ও পথ দেখান তাকে তাঁর উত্তরসূরি খলিফাগণ সামনের দিকে আরও অনেকদূর এগিয়ে নিয়ে যান। বিশেষ করে আব্বাসি যুগের মাঝামাঝি কয়েকজন খলিফা আরবের উন্নতি ও বিকাশের ক্ষেত্রে কোরানকে সবচেয়ে বড়ো প্রতিবন্ধক বলে মনে করতেন, খেলাফত তথা সাম্রাজ্য পরিচালনায় তাঁরা কোরানকে সম্পূর্ণ ব্রাত্য করে দেন। শুধু ব্রাত্যই করা হয় নি, কোরানের সমর্থনে সর্বপ্রকার লেখালেখি ও আলোচনা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ঘোষণা করা হয়েছিল যে কোরান হলো ব্যক্তির সৃষ্টি, আল্লাহর নয়। সেই খলিফাদের শাসন কালে এক সময় রাষ্ট্রীয় নীতি থেকে শরিয়তকে সম্পূর্ণ বর্জন করে একটি বিকল্প নীতি গ্রহণ করা হয়। সেই নীতিটি 'মুতাজিলা' নীতি নামে ইতিহাসে খ্যাত। খলিফা হারুণ রশিদ সর্বত্র মুতাজিলা নীতি কার্যকর করার জন্য একটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করেন। সেই নীতিটির একটি অন্যতম প্রধান ঘোষণা ছিল, সত্যের অনুসন্ধানে অন্ধবিশ্বাস ও অন্ধানুগত্য বর্জন করে চিন্তাকে সর্বপ্রকার বাধা থেকে মুক্ত করতে হবে। মুতাজিলা যুগের খলিফা আল-মামুন একটি আইন প্রণয়ন করেন যে আইনে নির্দেশ দেওয়া হয় যে, সবাইকে মানতে হবে এ কথা যে, কোরান মানুষের দ্বারা রচিত একটি গ্রন্থ, আল্লাহর নয়। যারা তা মানবে না তাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হবে। খুবই বেদনার বিষয় হলো এই যে আরবের ইতিহাসের এই স্বর্ণযুগের স্থায়িত্ব কাল ছিল মাত্র একশ' বছর (৭৫৪ - ৮৪৩)। খলিফা আল মুতাওয়াক্কিল  অব মুতাজিলা নীতিকে বর্জন করে খেলাফত পরিচালনায় ইসলাম ও কোরানকে ফিরিয়ে নিয়ে আসেন। 

প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য যে, মক্কায় বাস করত মূলত দু'টি গোত্র বা বংশের লোকজন  - হাসেম বংশ বা আব্বাস বংশ, উমাইয়া বংশের লোক। এই দু'ই বংশের মধ্যে গোড়া থেকেই ছিল পারষ্পরিক বৈরি মনোভাব। মুহাম্মদ হাসেমি বংশের লোক বলে তাঁর ধর্ম প্রচারে মক্কায় সবচাইতে বেশি বাধা এসেছিল উমাইয়া বংশ থেকে। মুয়াবিয়া ছিলেন উমাইয়া বংশের লোক। তাই তাঁর খলিফা হওয়াটা হাসেমি বংশের লোকজন মনেপ্রাণে মেনে নিতে পারে নি। সে অন্য কথা। সুতরাং সে কথা থাক। মূল আলোচনায় ফেরা যাক। মুয়াবিয়ার পর উমাইয়া বংশের আরও কয়েক জন খলিফার আসন অলঙ্কৃত করেছিলেন। সেজন্যই তাঁদের শাসন কাল ইতিহাসে উমাইয়া যুগ বলা হয়। তারপর এক সময় আব্বাস বংশের লোকেরা এক সময় উমাইয়াদের কাছ থেকে খেলাফত ছিনিয়ে নেয় এবং সেখানেই  উমাইয়া যুগের পরিসমাপ্তি ঘটে। অত:পর শেষ পর্যন্ত আব্বাস বংশের লোকেরাই খেলাফতের ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিলেন। এই শাসন কালটাকে বলা হয় আব্বাসি যুগ। আব্বাসি যুগের পরিসমাপ্তি ঘটে ১২৫৮ খৃষ্টাব্দে। সে বছর আব্বাস বংশের শেষ খলিফা বহি:শত্রুর হানা রুখতে ব্যর্থ হলে খেলাফতের ক্ষমতা চলে যায় আরবের বাইরে। সেজন্যেই বলা হয় যে খেলাফতি যুগের পরিসমাপ্তি হয় ১২৫৮ খৃস্টাব্দে। তারপর অনারব মুসলিমদের হাতে বিচ্ছিন্নভাবে নানা জাতি নানা বংশের হাতে বিশ্বের নানা প্রান্তে খেলাফতি শাসন টিকেছিল বিংশ শতাব্দীর সিকিভাগ পর্যন্ত। সর্বশেষ ওসমানিয়া খেলাফতের পরাজয় ঘটে ১৯২৪ খৃস্টাব্দে কামাল আতাতুর্কের কাছে এবং পৃথিবীর বুক থেকে চিরতরে খেলাফত মুছে যায়। 
৬৬০ সনে পঞ্চম খলিফা আমির মুয়াবিয়া সর্বপ্রথম শরিয়া নীতি থেকে সরে আসা শুরু করেন। এটা আগেই আলোচনা করা হয়েছে। তিনি এ রকম পদক্ষেপ নেওয়া অবশ্য শুরু করেন ইসলামি খেলাফত তথা ইসলামি সাম্রাজ্যের উন্নতি, বিকাশ ও সুরক্ষার প্রয়োজনে। মুয়াবিয়া যে কাজ শুরু করেন তাকে তাঁঁর উত্তরসূরিরা আরো এগিয়ে নিয়ে যান। সে কাজ পূর্ণতা পায় আব্বাসী যুগে যে যুগটি আরবের ইতিহাসে মুতাজিলা যুগ নামে খ্যাত। আব্বাস বংশের খলিফা আল-মুতাওয়াক্কিল মুতাজিলা মতবাদকে ইসলামবিরোধী আখ্যা দিয়ে বাতিল করে দেন এবং ৮৪৩ সনে পুনরায় শরিয়া শাসনকে ফিরিয়ে আনেন। 
খলিফা আল মুতাওয়াক্কিল শরিয়া শাসনের পুন:প্রবর্তন ঘটালেও তা সত্যিকারের শরিয়া শাসন ছিল না যে শরিয়া শাসন প্রবর্তন করেছিলেন মুহাম্মদ ও তাঁর প্রথম চার খলিফা (প্রতিনিধি)। সেজন্যই মুসলিমরা প্রথম চার খলিফা ছাড়া আর কোনো খলিফাকে আদর্শ খলিফা বা সৎপথে (ইসলামের পথে) পরিচালিত খলিফা বলে মানে না।
আইএস (IS) সুপ্রিমো আবুবকর আল বাগদাদী ১৯১৪ সনে ইরাকের মসুল শহরে ঘোষণা দেন যে তিনিই সত্যিকারের ইসলামী খেলাফত তথা শরিয়া শাসন প্রতিষ্ঠা করবেন পৃথিবীর বুকে পুন‍রায় নতুন করে। তাঁর ঘোষণা যে অতীতের অন্যান্য খলিফা ও বর্তমান মুসলিম বিশ্বের ধর্মীয় ও রাষ্ট্র নেতাদের মতন ফাঁকা আওয়াজ ছিল না তার নিখুঁত প্রমাণ তিনি রেখে গিয়েছেন তাঁর অতি স্বল্পকালীন খেলাফতকালে (২০১৪-২০১৯)। 
তাই যারা আজও মূর্খের মতন বিশ্বাস করে যে সমগ্র পৃথিবী জুড়ে একদিন না একদিন সত্যিকারের খেলাফত তথা আল্লাহর শরিয়া শাসনের প্রতিষ্ঠা হবেই তারা আইএস খলিফা আলবাগদাদীর মৃত্যুতে চরম হতাশ হবে। কারণ, তাদের মনে গভীর বিশ্বাস ও প্রত্যাশার জন্ম হয়েছিল যে বাগদাদী হলো সেই বহু কাঙ্খিত নেতা যাঁঁকে  আল্লাহ স্বয়ং প্রেরণ করেছে পৃথিবীকে শরিয়া শাসনের অধীনে নিয়ে আনার জন্যে। 
সুতরাং বাগদাদীর নিকাশ হয়ে যাওয়ার ঘটনা আর পাঁচটা কট্টর মুসলিম জঙ্গিনেতার মৃত্যু বা নিকাশ হওয়ার মতন কোনো মামুলি ঘটনা নয়।
যৌথবাহিনীর প্রতিরোধ ও পাল্টা হানায় সম্পূর্ণ কোণঠাসা হয়ে গোপন জায়গায় লুকিয়ে থাকা বগদাদীর নিকাশ হওয়াটা ছিল সময়ের অপেক্ষা মাত্র। বাগদাদীর বিনাশে মুসলিম জঙ্গি আন্দোলন শেষ হয়ে যাবে না ঠিকই, তবে তাঁর বিনাশের ফলে মুসলিম জঙ্গি আন্দোলনে অপূরণীয় ক্ষতি হবে যা ওসামা বিন লাদেনের নিকাশের ফলে যে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছিল তাকেও ছাপিয়ে যাবে। 
                     শেষ
(বি:দ্র:- লেখাটি শুরু করি ৩১ শে অক্টোবর, শেষ করলাম আজ ৮ই ডিসেম্বর। আমার সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত কারণে সীমাতিরিক্ত এই বিলম্ব। এই বিলম্ব কিন্তু আমার সম্পূর্ণ অনিচ্ছাকৃত। তবুও সকলের কাছে আমি ক্ষমাপ্রার্থী।)

KARBALA: Truth and Lies

  KARBALA : Truth and Lies           GIASUDDIN                 Translated by SRIJIB BISWAS        ...