Wednesday, January 16, 2019

বিজেপি সরকারের তিন তালাক বিরোধী বিল মুসলিম স্বার্থ বিরোধী যারা বলছে তারা মিথ্যাচার করছে

সৌদি আরব, ইরান, ইরাক, তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান, বাংলাদেশ সহ অর্ধেক মুসলিম বিশ্ব তিন তালাক আইনটি কবেই তালাক দিয়ে বসে আছে। ‌তারা তার পরিবর্তে প্রণয়ন করেছে ভিন্ন তালাক আইন। তাদের প্রণীত তালাক আইনগুলি আলাদা হলেও তাতে দুটি বিষয়ে অভিন্নতা রয়েছে। তা হলো এ রকম, স্বামী ও স্ত্রী উভয়কেই তালাক দেবার অধিকার দেওয়া হয়েছে এবং আদালতের বাইরে সবরকমের তালাককে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সৌদি আরব তো খুব সম্প্রতি তালাক আইনে নারীর অনুকূলে আর একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনী অনুমোদন করেছে। এর ফলে স্ত্রীকে তালাক দেবার পূর্বে তাকে সে কথা মেসেজ করে জানাতে হবে। এটা এ জন্য করা হয়েছে যাতে স্ত্রী আদালতে তালাক প‍রবর্তী সুযোগ-সুবিধার দাবি জানাতে পারে। প্রধান প্রধান মুসলিম দেশগুলো সহ অর্ধেক মুসলিম বিশ্বই এটা উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়েছে যে নারীর প্রতি অন্যায়, অবিচার ও বঞ্চনার অবসান এবং নারীর ক্ষমতায়নকে বাস্তবায়িত করতে হলে তিন তালাক আইনটি আমূল পাল্টানো কিংবা সম্পূর্ণ বর্জন করা আবশ্যক। তাদের এই উপলব্ধি ও তদনুযায়ী পদক্ষেপ করা কুর্ণিশ করার মতো কাজ।
মুসলিম দেশগুলো তাদের ধর্মীয় আবেগের উপর নারী ও দেশের স্বার্থকে স্থাপন করে শরিয়া তালাক অইনকে তালাক দিতে পেরেছে। এটা মোটেও সহজ কাজ ছিল না। কিন্তু আমাদের পক্ষে কাজটা ক‍রা অনেক সহজ ছিল। তবু স্বাধীনতার সাত দশক পার হওয়ার পরেও আমরা এ কাজটি আজও করতে পারলাম না। কংগ্রেস দল দাবি করে যে তারা ধর্মনিরপেক্ষ দল এবং ভারত একটি ধর্মনিরপেক্ষ দেশ। এরাই দীর্ঘ সময় দেশ শাসন করেছে। তথাপি তারা তিন তালাক আইনটি ব‍র্জন বা সংশোধন করার কোনো উদ‍্যোগই গ্রহণ করেনি। উল্টে বিজেপির মোদি সরকার যখন সেই কাজটি করতে উদ্যোগী হয়েছে ও পদক্ষেপ করছে তখনই তারা সেই পদক্ষেপকে ব্যর্থ করতে মরিয়া ভূমিকা পালন করছে। গত বছর মোদি সরকার সংসদে তিন তালাক বিরোধী বিল সংসদে পাশ করিয়েছে, কিন্তু রাজ্যসভায় সেটি আটকে যায়। কারণ রাজ্যসভায় বিরোধী পক্ষ সংখ্যাগরিষ্ঠ। সেখানে এই বিলটি আটকে দিতে প্রধান ভূমিকা পালন করে কংগ্রেস দল। ফলে ঐতিহাসিক এই বিলটি শেষ পর্যন্ত আইনের স্বীকৃতি পায়নি। মোদি সরকার গত বছরেই একেবারে অন্তিম লগ্নে আরেকবার এই বিলটিই লোকসভায় পাশ করিয়ে রাজ্যসভায় পেশ করতে উদ্যোগী হয়। কিন্তু গোটা বিরোধী পক্ষ পুনরায় চীনের প্রাচীর হয়ে দাঁড়িয়ে যায়। এক্ষেত্রেও কংগ্রেস দলই বিলের বিরুদ্ধে গোটা বিরোধী পক্ষকে ঐক্যবদ্ধ করতে প্রধান ভূমিকা পালন করে। কংগ্রেসের এই ন্যাক্কারজনক ভূমিকায় নগ্নভাবে সঙ্গত দিয়েছে দুই কম্যুনিস্ট পার্টি এবং অন্যান্য বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি। কী আশ্চর্য! এই দলগুলো নাকি ধর্মনিরপেক্ষ দল! এরা নাকি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র ও ধর্মনিরপেক্ষ দেশ গড়তে অঙ্গীকারবদ্ধ! এরা নাকি নারী-পুরুষের সমানাধিকারে বিশ্বাসী!
কংগ্রেস দল ও দুই কম্যুনিস্ট পার্টি সহ বিরোধী দলগুলো তিন তালাক বিরোধী বিল আটকাতে যা যা বলছে সেগুলো সবই হয় অজুহাত, না হয় মিথ্যা। সেই সমস্ত অজুহাত ও মিথ্যাচারগুলো ধরে ধরে আলোচনা করার অবকাশ এখানে নেই। এখানে মাত্র একটি অজুহাত ও একটি মিথ্যাচার নিয়ে আলোচনা করতে চেষ্টা করবো। ওরা যে অজুহাতগুলি খাড়া করার চেষ্টা করছে তার মধ্যে একটি হলো, তিন তালাককে নিষিদ্ধ ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ করতে চাওয়ার পেছনে বিজেপি ও নরেন্দ্র মোদীর নিশ্চয় কোনো দূরভিসন্ধি রয়েছে। আর যে মিথ্যাচারগুলি করছে তার মধ্যে একটি হলো এই যে,  তিন তালাক বিরোধী বিলটি আইনে রূপান্তরিত হলে মুসলিম নারীর স্বার্থ বিপন্ন হবে।
প্রথমে আলোচনা করা যাক অজুহাত প্রসঙ্গে। তিন তালাক বেআইনি করার পশ্চাতে বিজেপির কী দূরভিসন্ধি আছে তা তারা কেউই খোলসা করছেন না। অপরদিকে বিজেপি কিন্তু দাবি করছে যে মুসলিম নারীদের ন্যায় বিচার পাইয়ে দিতেই তারা তিন তালাক বাতিল করতে চায়। এটা কারো কাছে অজানা নয় যে বিজেপি একটি হিন্দু সাম্প্রদায়িক দল। সুতরাং এই দলটি নারীদের ন্যায় বিচার দিতে চায় এ দাবি বিশ্বাস করা সত্যিই কঠিন। সেজন্য কংগ্রেস ও বিরোধী পক্ষের দলগুলো যখন বলে যে তিন তালাক নিষিদ্ধ করার পেছনে বিজেপির কোনো দূরভিসন্ধি আছে তখন সে কথাটাই আপাত দৃষ্টিতে সত্যি ও সঠিক বলে মনে হয়। কিন্তু এটাও মনে রাখতে হবে যে আপাত দৃষ্টিতে যেটা সত্যি বলে মনে হয় সেটা সব সময় সত্যি হয় না। যেমন আপাত দৃষ্টিতে সূর্য পৃথিবীর চারপাশে ঘোরে বলে মনে হলেও প্রকৃত সত্যটি ঠিক তার বিপরীত। বিজেপির তিন তালাক আইন নিষিদ্ধ করতে চাওয়া নিয়ে বিরোধী পক্ষের তোলা অভিযোগটি ঠিক সে রকমই। কোনো দূরভিসন্ধির বশবর্তী হয়ে বিজেপি তিন তালাক নিষিদ্ধ করতে চায়ছে এ অভিযোগটা একেবারেই সত্যি নয়। এ অভিযোগটি যে মোটেও সত্যি নয় তার বড় প্রমাণ হলো প্রধান প্রধান মুসলিম দেশগুলো যারা তিন তালাক আইনটি হয় বাতিল করেছে, না হয় আইনটি আমূল সংশোধন করেছে। তিন তালাক আইনটি বাতিল করতে চাওয়ার পেছনে বিজেপির দূরভিসন্ধির অভিযোগ তোলা যে স্রেফ বাহানা তার আর একটি বড়ো প্রমাণ হলো এ প্রসঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের রায়। প্রসঙ্গত: উল্লেখ্য যে, সুপ্রিম কোর্ট তালাকপ্রাপ্ত কয়েকজন মুসলিম নারীর আবেদনের ভিত্তিতে তাৎক্ষণিক তিন তালাককে সম্পূর্ণ অসাংবিধনিক আখ্যা দেয় এবং নিষিদ্ধ করে। সেই রায়েই সুপ্রিম কোর্ট ভারত সরকারকে উক্ত রায়ের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ একটি আইন প্রণয়ন করারও নির্দেশ প্রদান করে।
এবার আসা যাক উপরে উল্লেখিত বিরোধী পক্ষের মিথ্যাচার প্রসঙ্গে। বিরোধীরা বলছে যে বিজেপি সরকারের আনা তিন তালাক বিরোধী বিলটি আইনে পরিণত হলে মুসলিম নারীর স্বার্থ বিপন্ন হবে। বিরোধীদের এই অভিযোগটি নগ্ন মিথ্যাচার ও প্রতারণার জঘন্য নিদর্শন বৈ নয়। এটি যে একটি মিথ্যাচার ও প্রতারণা ছাড়া কিছু নয় তা শরিয়া তিন তালাক আইনে চোখ রাখলে স্পষ্ট বোঝা যায়। তাই এবার শরিয়া তিন তালাক আইন কী বলছে তার প্রতি একটু কান পাতা যাক। এই আইনের প্রধান প্রধান কথাগুলি হলো, এক). স্পষ্ট বাক্যে অথবা পরোক্ষ বাক্যে অথবা ইশারা - ইঙ্গিতে অথবা লিখিতভাবে তালাক দিলে তা তৎক্ষণাৎ কার্যকর হবে। দুই). মত্ত অবস্থায় তালাক দিলেও তা তৎক্ষণাৎ কার্যকর হবে। তিন). তালাক কার্যকর হবার সঙ্গে সঙ্গে বিবাহ - বন্ধন ছিন্ন হবে এবং স্বামী তাকে ফিরিয়ে নিতে পারবে না। চার). স্ত্রীকে তালাক দিলে খোরপোষ পাবার অধিকার রোহিত হয়ে যাবে। পাঁঁচ). স্ত্রী স্বামীকে তালাক দিতে পারবে না। ছয়). স্ত্রী তালাক শরিয়া আদালতে তালাক চায়তে পারবে যদি ক). স্বামী সহবাসে অক্ষম হয়, অথবা খ). স্বামী উন্মাদ হয়, অথবা গ). চার বছর নিরুদ্দেশ থাকে। এসব ক্ষেত্রে স্ত্রী শরিয়া আদালতে তালাকের আবেদন করতে পারে মাত্র যা আদালতে নামঞ্জুরও (অননুমোদিতও) হতে পারে।
এই হলো অতি সংক্ষেপে শরিয়া তালাক আইন যার মতো ক্ষতিকর নারীবিরোধী আইন খুবই কমই আছে সারা বিশ্বে। এই আইনটিকে একট অসভ্য ও বর্বর কালা আইন বললেও কম বলা হয়। আর এই আইনটিকে রদ করলেই নাকি মুসলিম নারীর অকল্যাণ বৈ কল্যাণ হবে না! এই কথা যারা বলছে বলছে তারা প্রথম শ্রেণির ভণ্ড, প্রতারক ও মিথ্যেবাদী। এই মিথ্যেবাদীর দল প্রশ্ন তুলছে যে, তিন তালাক দেওয়ায় স্বামীর যদি কারাবাস হয় তবে স্ত্রীকে ভরণপোষণ কে দেবে? তাই তারা এই ধূয়া তুলে বলছে যে, মোদি সরকারের তিন তালাকবিরোধী বিলটি আইনে পরিণত হলে মুসলিম নারীদের সর্বনাশ হবে। 
বিরোধী পক্ষের এই কথাটি আপাত দৃষ্টিতে বিশ্বাসযোগ্য ও যুক্তিপূর্ণ মনে হতে পারে। কিন্তু বাস্তবে এটা একটা জঘন্য মিথ্যাচার বৈ নয়। কারণ, শরিয়তি তিন তালাক আইনে তালাকপ্রাপ্ত আইনে স্ত্রীদের ভরণপোষণ পাবার কোনো অধিকারই নেই। এই আইন অনুযায়ী একজন স্বামী যদি তার স্রীকে তালাক প্রদান করে তবে সে স্ত্রীকে খোরপোষ দিতে বাধ্য নয়, এমনকি সে বিত্তবানও হলেও নয়। এজন্যেই মুসলিম সমাজে কেউই তার স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার পর ভরণপোষণ প্রদান করে না। এটাই বিশ্বব্যাপী মুসলিম সমাজের একটি সাধারণ সংস্কৃতি। অথচ বিরোধী পক্ষ বলছে যে, তালাক দেবার পর স্বামীকে জেলে পাঠানো চলবে না যাতে তার কাছ থেকে স্ত্রীর খোরপোষ আদায় করা যায়। এ কথা বলে তারা মুসলিম নারীর সাথে ডাহা প্রতারণা করছেন। নির্লজ্জ প্রতারণা। সুতরাং কোনো সংশয় নেই যে, শরিয়তি তাৎক্ষণিক তিন তালাক আইন শুধু বেআইনী বা নিষিদ্ধ করাই যথেষ্ট নয়, তিন তালাক প্রদানকে নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি দণ্ডনীয় অপরাধ বলে গণ্য করাও সমান জরুরী। আইনে এরূপ সংস্থান থাকলে তবেই পুরুষরা খেয়ালের বশে কিংবা হীন স্বার্থ পূরণ করার জন্যে স্ত্রীকে তালাক দিতে ভয় পাবে।
মুসলিম ধর্মগুরুদের সঙ্গে কন্ঠ মিলিয়ে বিরোধী পক্ষ বলছে যে, তিন তালাক আইন নিষিদ্ধ করা জরুরী নয়। কারণ, মুসলিম সমাজে তাৎক্ষণিক তালাক প্রদানের যে ঘটনাগুলি ঘটে সেগুলোর নব্বই শতাংশ ক্ষেত্রেই আইনের অপব্যবহার ঘটে থাকে। যদি তর্কের খাতিরে ধরেও নেয়া যায় যে, মুসলিম ধর্মগুরুদের বক্তব্য বা দাবি যথার্থ, তাহলে প্রশ্ন, কেনো প্রায় দেড়শ' বছর ধরে এভাবে মুসলিম পুরুষরা আইনের অপব্যবহার করে চলেছে এবং এর প্রতিকারের উপায় কি? না, শরিয়তি আইনে এর প্রতিকার নেই। কারণ, শরিয়ত পুরুষকে তালাক দেওয়ার অবাধ ক্ষমতা প্রদান করেছে। আর ব্যক্তি মানুষ কিংবা সমাজ কিংবা রাষ্ট্র যার হাতেই অবাধ ক্ষমতা থাক না কেনো, সে ক্ষমতার অপব্যবহার হবেই যা রোধ করা কখনোই সম্ভব নয়। বিশ্বের সর্বকালের ইতিহাস এই সাক্ষ্যই দেয়। সুতরাং মুসলিম পুরুষ যাতে শরিয়তি তালাক আইনের অপব্যবহার না করতে পারে তারজন্যেও তাৎক্ষণিক তালাক আইন রদ করা একান্তই জরুরী, এর কোনো বিকল্প নেই।
শরিয়তি তালাক আইন নিষিদ্ধ করা এবং এর বিকল্প একটি আইন প্রণয়ন করা আর একটি কারণে জরুরী। তা হলো এই যে, শরিয়তি আইনে মুসলিম নারীর তালাক দেবার অধিকার নেই। এ কথা মানছেন আলেম সমাজের একাংশও। গোঁড়া মুসলিমরা অবশ্য এ কথা মানতে নারাজ। তাদের বক্তব্য  ইসলামে নারীকে তালাক দেবার অধিকার দিয়েছে, সেটা হলো খুলা তালাক। এই খুলা তালাক প্রদানের অধিকার আসলে নামেই অধিকার, প্রকৃত অধিকার নয়। কারণ, এই আইন অনুসারে স্ত্রী স্বামীর অনুমোদন ব্যতীত খুলা তালাকের অধিকার প্রয়োগ করতে পারে না। সুতরাং আলেম সমাজের একাংশ মানছেন যে, খুলা তালাক নারীর জন্যে যথেষ্ট নয়। খুলা তালাক আসলে তাই নারীর সঙ্গে এক প্রকার তামাশা বৈ নয়। 
শুধু ইসলামই মুসলিম নারীর সঙ্গে তামাশা করে নি, কংগ্রেস ও কম্যুনিস্টরাও মুসিলিম নারীর সঙ্গে সমানে তামাশা করে চলেছে। এ তামাশা তারা যে শুধু মোদি সরকারের আনা তিন তালাক বিরোধী বিলের ক্ষেত্রেই করছে এমনটা নয়, তামাশা করে চলেছে মুসলিম নারীর সঙ্গে তাদের জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপেই। ১৯৮৫ সালে সুপ্রীম কোর্ট শাহবানু মামলায় রায় দিয়ে বলেছিলো যে, উপার্জনহীন অসহায় মুসলিম তালাকপ্রাপ্ত নারীর খোরপোষ পাবার অধিকার রয়েছে তার প্রাক্তন স্বামীর নিকট থেকে। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী সংসদে আইন পাশ করিয়ে সুপ্রীম কোর্টের সেই রায়টি খারিজ করে দেন। সেই আইনটিও প্রণয়ন করা হয় মুসলিম স্বার্থ রক্ষা করার নামে। সেই কুখ্যাত আইনটিকে সমস্ত রাজনৈতিক দলই দু'হাত তুলে সমর্থন জানিয়েছিলো। মুসলিম নারীর সঙ্গে এভাবে বহু তামাশা করেছে কংগ্রেস, কম্যুনিস্ট পার্টি ও অন্যান্য পাতি বুর্জোয়া দলগুলি যারা নিজেদের মুসলিম দরদি ও ধর্মনিরপেক্ষ দল বলে দাবি করে। এ দেশের মুসলিম নারী তাদের প্রতি রাজনৈতিক দলগুলির এরূপ মেকি দরদ ও তামাশা দেখে দেখে প্রচণ্ড ক্লান্ত, বিরক্ত ও ক্ষুব্ধ। তাই তারা আর 'খুলা তালাক'-এর তামাশা দেখতে চায় না। তারা চাই তালাক দেবার সত্যিকারের অধিকার ও ক্ষমতা, চাই শরিয়তি তালাক আইনের চির অবসান, এবং চায় সম্পূর্ণ একটি নতুন তালাক আইন যেখানে নারী ও পুরুষের সমান অধিকার থাকবে। চায় এমন একটা তালাক আইন যার ফলে স্বামী অন্যায়ভাবে তালাক দিলে আদালতে তা খারিজ হয়ে যাবে, অন্যায় তালাক দেবার জন্যে তাকে কারাভোগ করতে হবে এবং স্ত্রীর খোরপোষও তাকে বহন করতে হবে। 
পরিশেষে বলতে চাই নির্দ্বিধায় যে, বিজেপি সরকার যে উদ্দেশ্যেই শরিয়তি তিন তালাক আইনটি বাতিল ও বেআইনি করতে বারবার উদ্যোগি হোক না কেনো, উদ্যোগটি কিন্তু নিঃসন্দেহে অতি শুভ ও ভীষণ প্রয়োজনীয়। এই উদ্যোগটি বাস্তবায়িত হলে শুধু মুসলিম নারীই উপকৃত ও লাভবান হতো না, লাভবান হতো গোটা মুসলিম সমাজই। এটাও স্পষ্ট যে, এই উদ্যোগটি অসফলই থেকে যাবে, কারণ ভোট-ভিখারি বিরোধী পক্ষ এখনও রাজ্যসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠ। এহেন পরিস্থিতিতে মুসলিম সমাজের, বিশেষ করে মুসলিম নারী সমাজের কর্তব্য হচ্ছে, শরিয়তি তালাক আইন বাতিলের দাবিতে যে আওয়াজ উঠেছে দেশজুড়ে তা ভবিষ্যতে যদি কখনোই থেমে না যায় সে বিষয়ে সতর্ক থাকা এবং নারী-পুরুষের সমানাধাইকারের ভিত্তিতে একটি বিকল্প তালাক আইন প্রণয়নের আন্দোলনকে গণয়ান্দোলনে উন্নীত করতে অবিরাম প্রয়াস চালিয়ে যাওয়া।
(এই লেখা হয় ২০১৮ এর শেষের দিকে না হয় ২০১৯ এর একেবারে প্রথম দিকে মদি সরকারের শেষ শীতকালীন অধিবেশন চলাকালীন সময়ে। লেখাটি লিখি বাংলা পোর্টাল 'বিতর্ক' এর জন্যে। বিতর্ক লেখাটি ছাপে যথেষ্ট দেরিতে। আর তারও অনেক পরে এটা আমার ব্লগে আপলোড করি। ১৫/৩/১৯)  

No comments:

Post a Comment

KARBALA: Truth and Lies

  KARBALA : Truth and Lies           GIASUDDIN                 Translated by SRIJIB BISWAS        ...