Sunday, April 22, 2018

হোক পঞ্চায়েত নির্বাচন, মমতা ব্যানার্জী কিন্তু পাখীর চোখ করেছেন প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারটাকেই

পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত নির্বাচন ২০১৮ হওয়ার কথা ছিল নির্বাচন কমিশনের নির্ঘন্ট অনুযায়ী ১লা, ৩রা ও ৫ই মে। কিন্তু কলকাতা উচ্চ আদালতের আদেশে মাঝপথে নির্বাচন প্রক্রিয়া বেশ কয়েকদিন স্থগিত থাকায় নির্বাচন যে পিছোচ্ছে তা নিয়ে সংশয় নেই। পঞ্চায়েত নির্বাচন কখন হবে তা জানার জন্যে আগামী সোমবার (২৩/৪/১৮) অপেক্ষা করতে হবে। পরিস্থিতিতে যে জটিলতা পরিলক্ষিত হচ্ছে তাতে সোমবারই যে নির্বাচন কমিশন পঞ্চায়েত নির্বাচনের নির্ঘন্ট ঘোষণা করতে পারবে, আর ঘোষণা হলেও যে সেটা আবার আদালতে চ্যালেঞ্জড হবে না তার নিশ্চয়তা নেই। পরিস্থিতি যে কখন কোন দিকে গড়াবে কে বলতে পারে। সুতরাং পঞ্চায়েত নির্বাচন কখন হবে সে প্রশ্নটি মুলতুবি থাক। আর তাছাড়া পঞ্চায়েত নির্বাচন কবে হবে আমার কাছে সেটা খুব বড় প্রশ্ন নয়, যেটা বড় প্রশ্ন তা হল, এই পঞ্চায়েত নির্বাচনই কি শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস আগামী লোকসভা নির্বাচনের পথের কাটাগুলি তুলে ফেলতে চাইছে? এটা আলোচনা করার জন্যেই এই নিবন্ধের অবতারণা।   
পঞ্চায়েত নির্বাচন যবেই হোক কীভাবে হবে এবং কেমন হবে তা অনেকটাই স্পষ্ট হয়ে গেছে মনোয়নয়ন পত্র জমা দেবার পর্বে যে সন্ত্রাস আমরা চাক্ষুস করেছি দুরদর্শনের পর্দায় এবং ১১ই এপ্রিল মনোয়নয়ন পত্র পরীক্ষা (স্ক্রুটিনি) শেষে যে তথ্য আমাদের হস্তগত হয়েছে তাতেইস্ক্রুটিনি শেষে দেখা গেছে যে দু’টো জেলা পরিষদ (বীরভূম ও বাঁকুড়া) বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস তাদের পকেটে পুরে ফেলেছে যার মধ্যে বীরভূম জেলা পরিষদ তো প্রায় বিরোধীশুন্য, ৪২ আসনে ৪১টিপশ্চিমবঙ্গে এটা বেনজির। শাসক দল বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় আসন দখলের সমস্ত রেকর্ড ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছে বাম জমানায় ২০০৩ সালে গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় তারা ১১% আসন দখল করেছিল। সেটাই ছিল তাদের ৩৪ বছরের আমলে সর্বোচ্চ। এত বিপুল সংখ্যক কেন্দ্রে বিরোধীরা মনোনয়ন পত্র জমা দিতে না পারার জন্যে সরকার ও শাসক দলের তীব্র সমালোচনা হয়েছিল। তাতে শাসক দলের নেতৃবৃন্দ বোধ হয় লজ্জা অনুভব করেছিলেন। তাই পরের দফায় ২০০৮ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় জেতা আসন নেমে যায় অর্ধেকে, ৫.৫৭ শতাংশে তৃণমূল কংগ্রেসে বোধ হয় লজ্জা পাওয়ার সংস্কৃতি   নেই। তাই ২০১৩ সালে পঞ্চায়েতে নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় ১১% আসন দখল করার পর প্রবল সমালোচিত হয়েও নির্বিকার ছিল। লজ্জা যে অনুভব করেনি তা বোঝা গেল এবারের পরিসংখ্যানে। এবার তারা গতবারের তুলনায় এবার আরও আড়াইগুণ (প্রায় ২৮%) আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় জয়ী হয়ে গিয়েছে। পরিসংখ্যানটা এরূপঃ ৪৮৬৫০টি গ্রাম পঞ্চায়েত আসনের মধ্যে তারা বিনা প্রতিদ্বন্দীতায়  জয়ী ১৩৫০০ আসনে। এই সংখ্যাটা ২৮% আসনেই যে আটকে থাকবে না তাও নিশ্চিত করে বলা  যায় সেটা ৩৫%, ৪০% কিংবা ৫০% হতেও পারে। কারণ, লাগাম ছাড়া সন্ত্রাস সত্ত্বেও যারা মনোনয়ন পত্র জমা দিতে পেরেছেন তাদের ভয় দেখানো হচ্ছে মনোনয়ন পত্র তুলে নেবার জন্যে। প্রত্যেকের বাড়ি বাড়ি গিয়ে মনোনয়ন পত্র না তুললে প্রাণনাশের  হুমকি পর্যন্ত দেওয়া হচ্ছে বলে বিরোধীরা অভিযোগ করছে। 
গায়ের জোরে পঞ্চায়েত দখল করার চেষ্টা বাম আমলেও হয়েছে, কিন্তু সেটা কখনোই এরূপ সর্বাত্মক ছিল না। তারা পঞ্চায়েতকে বিরোধীশুন্য করার পরিকল্পনাও কখনো করেনি। তৃণমূল কংগ্রেসকে দেখা যাচ্ছে যে তারা শুধু সিংহভাগ পঞ্চায়েত দখল করেই থেমে থাকতে রাজী নয়। গোটা পঞ্চায়েত ব্যবস্থাটাকেই তারা পকেটে পুড়ে নিতে চায়। তাই তারা চাইছে যে কোনও মুল্যে পুরো পঞ্চায়েতকেই  বিরোধীশুন্য করতে কিন্তু এটা তো শুধু বুথ দখল করে করা সম্ভব নয়তাই তাঁদের প্রথম পরিকল্পনা ছিল নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার বহু আগে থেকেই গ্রামে গ্রামে ভয়ের পরিবেশ রচনা করা যাতে বিরোধী দলের লোকেরা ভয়ে পঞ্চায়েত নির্বাচন প্রার্থী হতে না চায়। পরিকল্পনায় তাঁরা নিশ্চয় কিছুটা সাফল্য পেয়েছেতাঁদের দ্বিতীয় পরিকল্পনা ছিল যেখানে যেখানে হেরে যাওয়ার ভয় আছে সে সব জায়গায় মনোনয়ন পর্বেই মনোনয়ন পত্র জমা দেবার কেন্দ্রগুলিকে দখল করা যাতে বিরোধীরা মনোনয়ন পত্র জমা দিতে না পারে। এই কাজটি কত নগ্নভাবে তারা সম্পন্ন করেছে তা বৈদ্যুতিন চ্যানেলের কল্যাণে সারা দেশের মানুষ প্রত্যক্ষ করেছেন। মনোনয়ন পত্র জমা দেবার কেন্দ্রগুলি তথা বিডিও অফিস এবং এসডিও অফিসগুলিতে তৃণমূল কংগ্রেস পিকেট বসিয়েছে পুলিশ পিকেটের আদলেপিকেট বসিয়েছিল বিডিও অফিস এবং এসডিও অফিস যাওয়ার পথে রাস্তার মোড়ে মোড়েওতৃণমূল কংগ্রেসের বাহিনি বাসে বাসে যাত্রীদের তল্লাশি চালিয়েছে কারা মনোনয়ন পত্র জমা দিতে যাচ্ছে তা চেক করার জন্য যেমন পুলিশ তল্লাশি চালায় মাদক দ্রব্য চালানকারিদের ধরার জন্যে। পিকেটকারী তৃণমূলীরা যে নিরস্ত্র ছিল না তা বলা বাহুল্য। লাঠি, বোমা ও রিভলভার প্রভৃতি নানারূপ অস্ত্রশস্ত্রে তারা সকলেই সজ্জিত ছিল। বিরোধী দলের প্রার্থীরা বিডিও অফিস বা এসডিও অফিসে   যাওয়া মাত্রই তাদের উপর পিকেটকারীরা হায়েনার মত ঝাঁপিয়ে পড়েছে এবং  নৃশংসভাবে প্রহার করে তাদের কাছ থেকে মনোনয়ন পত্র কেড়ে নিয়ে টুকরো টুকরো করে ছিঁড়ে ফেলেছে। বিরোধী দলের সম্মানীয় প্রবীণ নেতা, সাংসদ, বিধায়ক প্রমুখ সম্মাননীয় জনপ্রতিনিধিরা, এমনকি মহিলারাও নিষ্কৃতি পায় নি ঐ বাহিনীর হাত থেকেতারা নৃশংসভাবে মেরে মাথা ফাটিয়েছে প্রাক্তন সাংসদ প্রবীণ বাসুদেব আচারিয়া ও রামচন্দ্র ডোমের মত সজ্জন ব্যক্তিদেরও। চুলের মুঠি ধরে টানাহ্যাঁচড়া করে, এবং কিল চড় ঘুষি মেরে একেবারে আদিম নির্লজ্জতায় হেনস্থা করেছে মহিলাদেরও। শাসক দলের এই সন্ত্রাস ও অসভ্যতা বর্ণনা করা মানুষের সাধ্যের অতীত।
মনোনয়ন পত্র জমা দেবার পর্ব জুড়ে শাসক দলের এই অদৃষ্টপূর্ব তাণ্ডব ও অসভ্যতার প্রতি বিরোধী দলগুলি বারবার নির্বাচন কমিশন, পুলিশ প্রশাসন ও আমলাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে এবং অবাধে মনোনয়ন পত্র জমা দেবার সুষ্ঠ ব্যবস্থা করার দাবী জানিয়েছে। কিন্তু নির্বাচন কমিশন, পুলিশ প্রশাসন ও আমলাতন্ত্র যে ভূমিকা পালন করেছে তা খুবই হতাশাব্যাঞ্জক। এই তিনটি সংস্থার প্রত্যেকটির সাংবিধানিক কর্তব্য হলো প্রত্যেক প্রার্থীর নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা যাতে মননয়ন পত্র জমা দেবার সময় থেকে শুরু করে ভোট গণনার দিন পর্যন্ত নিশ্চিন্তে এবং অবাধে ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে সক্ষম হয়। এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন কী ভূমিকা পালন করেছে সে বিষয়ে যাওয়ার পূর্বে পুলিশের ভুমিকার উপর দৃষ্টিপাত করা যাক। গোটা রাজ্যে সাধারণভাবে পুলিশের যে ভুমিকা চোখে পড়েছে তাতে কখনোই মনে হয় নি যে সংবিধান প্রদত্ত কর্তব্য পালন করার সামান্যতম আগ্রহ তাদের মধ্যে বিদ্যমান রয়েছে। ফলে বিডিও অফিস ও এসডিও অফিসগুলিতে শাসক দল যে   বেআইনী সশস্ত্র ক্যাম্পগুলি বসিয়েছিল সেগুলি তোলার চেষ্টা করতে পুলিশকে কোথাও দেখা যায় নি। পুলিশ বরং অস্ত্রধারী তৃণমূল কংগ্রেসের তাণ্ডববাহিনীকেই সুরক্ষা প্রদান করেছে। বিরোধী দলগুলি সংঘবদ্ধভাবে যেখানেই শাসক দলের সশস্ত্র হামলা প্রতিরোধ করে মনোনয়ন পত্র জমা দেবার চেষ্টা করেছে তখনই কেবল পুলিশকে সক্রিয় হতে দেখা গিয়েছে এবং তারা শাসক দলের পক্ষে সক্রিয় হয়ে বিরোধী দলের লোককেই মূলতঃ গ্রেপ্তার করে লক আপে পুরেছে। পুলিশ এরূপে নগ্নভাবেই শাসক দলের দুষ্কৃতিদের দমন করার পরিবর্তে পালন করেছে এবং বিরোধী পক্ষের নিরস্ত্র মানুষদের পালন করার পরিবর্তে দমন করেছে। পুলিশের এরূপ সংবিধান-বিরুদ্ধ ভূমিকাকে নিয়ন্ত্রণ করার কথা যে আমলাদের তাঁরাও তাঁদের কর্তব্য পালন করার আগ্রহ দেখান নি। এটা স্পষ্ট যে কারও অঙ্গুলি হেলনেই যে পুলিশ প্রশাসন ও আমলাতন্ত্র সাংবিধানিক কর্তব্য পালন করা থেকে বিরত রয়েছে এবং পঞ্চায়েত নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করছে। কিছু কিছু পুলিশ ও আমলা ব্যক্তিগত স্বার্থে বা ভয়ে সরকারের বশংবদ হয়ে থাকে। কিন্তু পুরো পুলিশ প্রশাসন ও আমলাতন্ত্রের এরূপ বশংবাদ হওয়ার ঘটনা ইতিহাসে বিরল।
নির্বাচন কমিশনের অশেষ ক্ষমতা। সে ক্ষমতা সংবিধান তাকে দিয়েছে নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ও অবাধ করার জন্যে। কিন্তু রাজ্য নির্বাচন কমিশন ঠিক তার উল্টো কাজটাই করছে। নির্বিঘ্নে মনোনয়ন পত্র জমা দেবার শান্তিপূর্ণ পরিবেশ তৈরী করার ক্ষেত্রে কোনও চেষ্টাই করতে দেখা যায় নি মুখ্য নির্বাচনী অফিসারকে। সুপ্রীম কোর্টের আদেশে সন্ত্রাসের কারণে যারা মনোনয়ন পত্র জমা দিতে পারে নি তাদের জন্যে মনোনয়ন পত্র জমা দেবার সময় সীমা একদিন বাড়িয়েও তিনি সেটা বাতিল করে দেন। শাসক দলের চাপেই যে তিনি বাতিল করেছেন তা দিবালোকের মত স্পষ্ট। মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহারের জন্য তিনি যে অনাবশ্যক দীর্ঘ সময় রেখেছেন তা যে শাসক দলের স্বার্থেই তা বলা বাহুল্য। রাজ্য সরকারের পুলিশ দিয়ে শান্তিপূর্ণ ও অবাধ নির্বাচন সম্পন্ন করা সম্ভব নয় জেনেও তিনি কেন্দ্রীয় বাহিনি আনার কার্যতঃ কোনও চেষ্টাই করে নি। মোদ্দা কথা হলো, রাজ্য  নির্বাচন কমিশন স্বাধীন ও স্বশাসিত সংস্থা এবং বিপুল ক্ষমতার অধিকারী হওয়া সও্বেও সংবিধান নির্দেশিত নিরপেক্ষ ও বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করার পরিবর্তে সরকারের তল্পিবাহকের ভূমিকা পালন করছে।
তৃণমূলের কংগেস সরকারের কাজকর্ম নিয়ে মানুষের মধ্যে ব্যাপক অসন্তোষ তৈরি হয়েছে ঠিকই। তবুও রাজ্যে যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে তাতে সুষ্ঠভাবে ভোট হলেও সব কটা জেলা পরিষদ এবং অধিকাংশ পঞ্চায়েত সমিতি ও গ্রাম পঞ্চায়েতেই শাসক দল জয়লাভ করবে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের ধারণা। এখন প্রশ্ন হলো, তাহলে শাসক দল রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে এত নগ্নভাবে বিরোধীদের উপর বল্গাহীন সন্ত্রাস নামাচ্ছে কেন? সেটা কি শুধুই পঞ্চায়েত থেকে বিরোধীদের মুছে দিতেই? না কি সেটা ছাড়াও আরও কিছু কারণ আছে? অনেকেই বলছেন যে মমতা ব্যানার্জীর বিরোধীদের মুছে দিতে বেপরোয়া হওয়ার তিনটি প্রধান কারণ রয়েছে। প্রথমতঃ - তিনি আস্থা হারিয়ে ফেলেছেন তাঁর দল ও নিজের উপর। দ্বিতীয়তঃ - বিজেপির ক্রমবর্ধমান প্রভাব ও সাংগঠনিক শক্তি এবং তাঁর দলের তীব্র অন্তর্দ্বন্দকে তিনি ভয় পাচ্ছেন। তৃতীয়তঃ - কংগ্রেস ও সিপিএম সিট সমঝোতা করে একসঙ্গে পঞ্চায়েত ভোটে লড়াই করতে পারে এমন সম্ভাবনা ক্রমশঃ উজ্জ্বল হচ্ছে। সিপিএম ও কংগ্রেসের এই সম্ভাব্য রসায়নকেও তিনি ভয় পাচ্ছেন।   
বিরোধীদের মুছে দেওয়া মানেই তো গণতন্ত্রকেই মুছে দেওয়া। সেটা করার চেষ্টা মানেই তো নিজের কবর খোঁড়া। শুধু উপরে বর্ণিত কারণগুলির জন্যে মমতা ব্যানার্জী গণতন্ত্রের উপর স্টীম রোলার চালিয়ে নিজের পতন ডেকে আনছেন বলে মনে হয় না। এমন হিটলারি পদক্ষেপ করার পেছনে অন্য কারণ আছে বলে মনে হয়। জাতীয় পরিস্থিতির দিকে তাকালে সেটা বোঝা যায়। সামনে বছর (২০১৯ সালে) লোকসভার নির্বাচন। সেই নির্বাচনে মমতা ব্যানার্জীর মনে করছেন যে কেন্দ্রে অবিজেপি ও অকংগ্রেসী সরকার তৈরী হবেএবং তিনি এও বিশ্বাস করেন যে রাজ্যের ৪২টা সিটই যদি তিনি জিততে পারেন তবে তিনিই প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে সব থেকে এগিয়ে থাকবেন।  এবার পঞ্চায়েত নির্বাচনে তিনি তাই ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনকেই পাখীর চোখ করেছেন। সেই নির্বাচনে ত্রিস্তরের পঞ্চায়েতের ভূমিকাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। সেজন্যেই তিনি পঞ্চায়েত থেকে বিরোধীদের মুছে ফেলতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন।  
১৮.০৪.১৮

Wednesday, April 4, 2018

একজন নারী হালালা বিয়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন, বুদ্ধিজীবীদের তবু মুখে রা নেই

মুর্শিদাবাদের রঘুনাথগঞ্জ থানার রনজিতপুর গ্রামে হালালা বিয়ের ফতোয়ায় রাজ্য জুড়ে তোলপাড় চলছে।  ঘটনাটির দুটি পিঠ রয়েছেএকটি পিঠ সমাজকে অন্ধকারে ডুবিয়ে রাখতে চায়ছে, আর অন্য পিঠটি সেই অন্ধকার ভেদ করে উজ্জ্বল দ্যুতি বিকিরণ করার চেষ্টা করছে। ঐ গ্রামের নাসিমা বিবিকে তার স্বামী রবিউল দেড়/দু’ বছর আগে তালাক দিয়েছিল। ওদের দুটি সন্তান আছে যার মধ্যে বড়টি ছেলে যে নবম শ্রেণীতে পড়ে এবং ছোটটি মেয়ে, অষ্টম শ্রেণীতে পড়েরবিউল নিজের ভুল বুঝতে পেরে স্ত্রী নাসিমাকে ফিরিয়ে নেব বলে স্থির করে। সন্তানদের মুখ চেয়ে নাসিমাও সম্মতি দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ২১শে ফেব্রুয়ারী বিবেক, বোধ ও বুদ্ধি সম্পন্ন কিছু মানুষ সালিশি সভায় সিদ্ধান্ত দেয় যে, বিয়ের আগে  রবিউলকে তার বাড়ি ও জমির  অর্ধেক অংশ নাসিমাকে লিখে দিতে হবে যাতে কথায় কথায় সে আবার তালাক দিতে না পারে, আর যদি দেয়ও তবে যেন নাসিমা ও তার সন্তানদের ভরণ-পোষণের অন্তত কিছুটা সুরাহা হয়। রবিউল তা মেনেও নেয়। এরপর রবিউল ও নাসিমার বিয়ের প্রস্তুতিও শুরু হয়। কিন্তু ভাঙা সংসার জোড়া লাগার শুভ প্রয়াসে জল ঢেলে দেয় মোল্লা-মুফতিদের একটি ফতোয়া। ফতোয়াটি হলো রবিউল ও নাসিমার পুনর্বার বিয়ের আগে নাসিমাকে হালালা বিয়ে করতে হবে। হালালা বিয়ের অর্থ হলো নাসিমাকে আগে অন্য একজন লোককে বিয়ে করতে হবে এবং তার সঙ্গে ন্যূনতম তিন দিন স্বামী-স্ত্রীর মত সংসার যাপন করতে হবে। তারপর ২য় স্বামী নাসিমাকে তালাক দেবার তিন চাঁদ পর নাসিমা রবিউলকে বিয়ে  উপযুক্ত হতে পারবে। এ কথা শুনে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন নাসিমা। তিনি বলেন যে, এমন জঘন্য বিধান তিনি কিছুতেই মানবেন না, তাতে যদি তাঁর  প্রথম স্বামীর সঙ্গে বিয়ে না হয় তাও কবুল। ফতোয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে তিনি সমাজকে পাল্টা প্রশ্ন করেন, আমি কি পুতুল যে সমাজের লোক আমাকে অন্য পুরুষের হাতে তুলে দেবে এবং সে আমাকে ইচ্ছে মত ভোগ করবে? আমার কি ইজ্জত ও আত্মমর্যাদা বলে কিছু থাকতে নেই?   
নাসিমা একজন ব্যতিক্রমী মহিলা। এই কুৎসিত ফতোয়ার বিরুদ্ধে তিনি লড়াই চালানোর পণ করবেন বলে স্থির করেছেন। তাই হালালা বিয়ের কুৎসিত ফতোয়াটিকে তীব্র ভাষায় প্রত্যাখান করেই তিনি ক্ষান্ত থাকেন নি। আনন্দ বাজার পত্রিকাকার মাধ্যমে জঘন্য এই ফতোয়া এবং তার বিরুদ্ধে তাঁর গর্জে ওঠার কথা গোটা দেশেকে জানিয়ে দেন।      
এই হলো ঘটনার দু’টি পিঠ যে কথা উপরে বলেছি। এক পিঠে রয়েছে শরিয়তের বলে বলীয়ান রঞ্জিতপুরের মাওলানা সমাজ যারা গোটা সমাজকে মধ্যযুগীয় অন্ধকারে ডুবিয়ে রাখতে  বদ্ধপরিকর, আর তার বিপরীত পিঠে রয়েছেন নাসিমা যিনি সভ্যতার মশাল হাতে নিয়ে অনড় দাঁড়িয়ে আছেন অন্ধকারের বুক চিরে আলো আনবার জন্যে। 
আধুনিক শিক্ষার প্রসারের ফলে মুসলিম সমাজেও বুদ্ধিজীবী শ্রেণীর আত্মপ্রকাশ ঘটেছে কয়েক যুগ পূর্বেই। কিন্তু মুসলিম বুদ্ধিজীবী শ্রেণীর মত এত ভীতু, সুবিধাবাদী ও স্বার্থপর শ্রেণী বোধ হয় আর কোথাও নেই। মোল্লা ও মুফতিরা যতই কুৎসিত, নিকৃষ্ট ও বর্বর ফতোয়া দিক না কেন এই বুদ্ধিজীবীরা হয় কাপুরুষোচিত মৌনতা অবলম্বন করেন, না হয় ফতোয়াকে অনৈসলামিক বলে মিথ্যাচার করে মানুষের সাথে প্রতারণা করেন। নাসিমার উপর জারি করা ফতোয়ার ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম কিছু ঘটে নি।একদিকে রনজিতপুর গ্রাম ও পার্শ্ববর্তী গ্রামের কলেজ-বিস্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা সহ গোটা মুসলিম বুদ্ধিজীবী সমাজ, যাঁরা ২১শে ফেব্রুয়ারীর সালিশি সভায় সঠিক বিবেচনাপ্রসূত ন্যায্য বিচার  করেছিলেন তাঁরাও, বোবা সেজে বসে রয়েছে, এবং অন্যদিকে মুসলিম বুদ্ধিজীবীদের কেউ কেউ আসরে নেমে যথারীতি মিথ্যাচার শুরু করেছেন। তাঁরা বলছেন যে হালালা বিয়ে ইসলামে সম্পূর্ণ অবৈধ এবং হালালা বিয়ের কোন ফতোয়া দেওয়াই হয় নি। মিথ্যা গল্প বানিয়ে আনন্দ বাজার পত্রিকা মুসলমানদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে এবং ইসলামের গায়ে কালিমা লেপন করছে। অন্যদিকে রনজিতপুরের  সমাজ থেকে নাসিমার উপর প্রবল চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে তাঁকে দিয়ে এ বিবৃতি দেওয়ার জন্যে যে আনন্দ বাজার পত্রিকা তাঁর মুখে যে কথাগুলি বসিয়েছে সে কথা তিনি বলেন নি। নাসিমা সেই চাপের কাছে এখনও মাথা নত করেন নি। কিন্তু তাঁকে ভীত ও সন্ত্রস্ত করার হীন প্রয়াস সমানে চলছে। এ রকম পরিস্থিতিতে মহিলাদের পক্ষে শেষ পর্যন্ত শিরদাঁড়া সোজা করে  রাখা খুবই কঠিন কাজ। আশা করি নাসিমা পারবেন।
অমুসলিম বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকাও খুবই হতাশাব্যাঞ্জক। এই বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে একদল আছেন যাঁরা আবার বিদ্বজন উপাধিপ্রাপ্ত। বিদ্বজনরা মাঝেমাঝেই নানা প্রসঙ্গে বেশ সরব হন। এঁরা হিন্দু মৌলবাদী আক্রমণ ও আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রায়ই সরব হোন। হিন্দুত্ববাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় খেতাব ফিরিয়ে দিতেও কুন্ঠা করেন না। বিদ্বজনদের এই আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন তামাম বুদ্ধিজীবী সমাজ। এঁদের এমনকি সরকারি দমন-পীড়নের বিরুদ্ধেও সরব হতে দেখা যায়। গণতন্ত্র রক্ষার্থে এও সমর্থনযোগ্য শুভ পদক্ষেপ। হিন্দু মৌলবাদী আগ্রাসন ও সন্ত্রাস এবং রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে বিদ্বজন ও বুদ্ধিজীবিদের এ ধরণের সক্রিয়তা ও প্রতিবাদ নিঃসন্দেহে সাধুবাদযোগ্য ও সমর্থনযোগ্য। কিন্তু এই বিদ্বজন ও বুদ্ধিজীবীকুল মুসলিম মৌলবাদী আগ্রাসন ও সন্ত্রাসের বেলায় মৌনীবাবা সেজে বসে থাকেন। মৌনীবাবা সেজে বসে থাকেন যখন মুসলিম সমাজে ফতোয়া সন্ত্রাস চালায় তখনও। মোল্লাতন্ত্রের ফতোয়া সন্ত্রাসের শিকার হয় মূলতঃ মুসলিম নারী এবং মুসলিম সমাজের যুক্তিবাদী লেখকগণ যাঁরা সমাজের সংস্কারের লক্ষ্যে কাজ করেন। ফতোয়া যতই বর্বর ও হিংসাশ্রয়ী হোক না অমুসলিম বুদ্ধিজীবীরা মরা মানুষবৎ নিশ্চুপ থাকেন। বলেন, ওটা মুসলমানদের ব্যাপার। কী নির্লজ্জ ও কাপুরুষোচিত প্রতিক্রিয়া। মুসলিমরা শুধুই মুসলিম, তারা যেন মানুষ নয়। তাই একজন মুসলিম নারীকে যখন মুসলিম সমাজের নেতারা ধর্মের নামে একজন মুসলিম ধর্ষকের হাতে তুলে দিতে হালালা বিয়ের ফতোয়া জারি করে তখন বিজ্ঞ অমুসলিম বুদ্দিজীবী সমাজ দূর থেকে বসে বসে তামাশা দেখেন।  এটাই দস্তুর। নাসিমার ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হয় নি। ধিক। শত কোটি ধিক  এই বুদ্ধিজীবী সমাজকে।
এই লেখাটা লিখছি নাসিমাকে তাঁর বীরত্বপূর্ণ লড়াইয়ের জন্যে কুর্ণিশ জানাতে এবং ভণ্ড মুসলিম বুদ্ধিজীবীরা যে মিথ্যাচার করছে তা বেআব্রু করব বলে হ্যাঁ, প্রথমেই নাসিমার লড়াইকে অকপট কুর্ণিশ জানাচ্ছি। কুর্ণিশ জানিয়ে তাঁর উদ্দেশ্যে বলতে চাই যে,  আপনি নিজেকে একা ভাববেন না। আপনার লড়াইয়ের পাশে ব্যাপক মানুষের নৈতিক সমর্থন রয়েছে এবং সর্বোপরি রয়েছে সুপ্রীম কোর্টের রায়। সুতরাং মনে রাখবেন যে, আপনার পক্ষে রয়েছে দেশের আইন ও সংবিধানআর ঐ ফতোয়াবাজ সমাজের মোল্লা ও মাতব্বররা তো আইনভঙ্গকারী। সুতরাং আপনি কোনও পরিস্থিতিতেই দেশের আইনভঙ্গকারীদের চোখ রাঙানীকে ভয় করবেন না  
হ্যাঁ, সেই মুসলিম বুদ্ধিজীবীরা অতি জঘন্য মিথ্যাচার করছেন যাঁরা বলছেন যে নাসিমাকে হালালা বিয়ের ফতোয়া দেওয়াই হয় নি, কারণ ইসলামে হালালা বিয়ে বৈধই নয় কেন তাঁরা মিথ্যাচার করছেন? করছেন নাসিমার রুখে দাঁড়ানোর ফলে শরিয়তি বিধানের যে কুৎসিত রূপটি বেআব্রু হয়ে পড়েছে সেটা ঢাকার জন্যে দুঃখজনক ঘটনা হল, তাঁরা ফতোয়াটি কার্যতঃ কুৎসিত বলে  মেনে নিচ্ছেন, কিন্তু সেটা বাতিল করার দাবি জানাচ্ছেন নাউল্টে মিথ্যা খবর করেছে বলে আনন্দ বাজারের বিরুদ্ধে মিথ্যা বদনাম রটাচ্ছেনশুধু তাই নয়, নাসিমার উপর চাপ দেওয়া হচ্ছে যাতে তিনি বলেন যে তাঁর কথাকে বিকৃত করা হয়েছে। একেই বোধ হয় বলে,  চোরের মায়ের বড় গলা। ইসলামে হালালা বিয়ে বৈধ নয় বলে ঐ ভণ্ড বুদ্ধিজীবীরা যেটা প্রচার করছেন সেটা যে বিশুদ্ধ মিথ্যা তার স্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে কোরান ও হাদিসে। হালালা বিয়ে প্রসঙ্গে কোরান ও হাদিস ঠিক কী বলছে তার প্রতি এবার দৃষ্টি নিবদ্ধ করা যাক।  
কোরানের বাকারা সুরায় হালালা বিয়ের স্পষ্ট বিধান রয়েছে। সেই বিধানটি হলো, “অতঃপর যদি সে তাকে তালাক দেয়, তবে সে তার জন্য বৈধ হবে না, যে পর্যন্ত না অন্য ব্যক্তির সঙ্গে বিবাহিত হবে। তারপর যদি সে যদি তাকে তালাক দেয়, এবং যদি উভয়ে মনে করে যে, তারা আল্লাহ্‌র সীমারেখে রক্ষা করতে সমর্থ হবে, তবে তাদের পুনর্মিলনে কারও কোনো অপরাধ হবে না, এবং এটাই আল্লাহ্‌র সীমারেখা, আল্লাহ্‌ তা জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেন। (২/২৩০, অনুবাদ – ড। ওসমান গণী) তালাকপ্রাপ্ত নারীর তার প্রাক্তন স্বামীর সঙ্গে বিয়ে করার আগে অন্য ব্যক্তিকে বিয়ে করাকে ইসলামের পরিভাষায় বলে হালালা বিয়ে বা হিল্লা বিয়ে। কোরানের এই আয়াতটির বাখ্যা দিয়ে গেছেন স্বয়ং মুহাম্মদসে বাখ্যায় তিনি প্রাঞ্জল ভাষায় বলেছেন যে, শুধু লোক দেখানো বিয়ে করলে হবে না, দ্বিতীয় স্বামীর সঙ্গে সহবাসও করতে হবে। এই হাদিসটিকে (মুহাম্মদ যা বলেছেন তাকে হাদিস বলে) মিথ্যা বলে নস্যাৎ করার কোনো সুযোগ নেইকারণ, এরূপ বহু হাদিস রয়েছে যেগুলি সমস্ত সহিহ হাদিসেই লিপিবদ্ধ রয়েছে। এরূপ একটি হাদিস এভাবে বর্ণিত হয়েছে,  “মুহাম্মদ ইবনে আ’লা হামদানী (রঃ) রেওয়াত করেছেন, আয়েশা (রাঃ) বলেন যে, রাসূলে পাক (সাঃ)কে একটি স্ত্রীলোক সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হল, যাকে কেউ বিবাহ করে পূর্ণ তালাক দিল। তারপর সে মহিলা আর এক ব্যক্তিকে বিবাহ করল; কিন্তু সে তার সাথে সঙ্গম করা ব্যতিরেকেই তালাক দিলএরূপ ক্ষেত্রে ঐ মহিলা প্রথম স্বামীর জন্য হালাল হবে কি না?  রাসূলে পাক (সাঃ) বললেন, না হবে না। যে পর্যন্ত না তারা পরষ্পরকে সম্ভোগ করে।” (দ্রঃ সহিহ মুসলিম শরীফ, ১-৮ খণ্ডে একত্রে, সোলেমানিয়া বুক হাউস, ঢাকা, হদিস নং – ৩৩৯৬)  অন্যান্য সমস্ত সহিহ হাদিস গ্রন্থেই এই হাদিসটি রয়েছে।
কোরানের ২/২৩০ নং আয়াত এবং হাদিসে তার যে বাখ্যা রয়েছে তা থেকে এটা স্পষ্ট প্রমাণিত হয় যে হালালা বিয়ে ইসলামে বৈধ। সুতরাং কোনও সংশয় নেই যে, যাঁরা হালালা বিয়েকে ইসলামে অবৈধ বলে দাবি ও প্রচার করছেন তাঁরা পুরোপুরিই মিথ্যাচার করছেন। এবং এর সঙ্গে তাঁরা আর একটা মিথ্যাচার করছেন যে হালালা বিয়ের ফতোয়া আদৌ দেওয়া হয় নি। নাসিমার হিতাকাঙ্খী ও নিকটাত্মীয়র কাছ থেকে আমি জেনেছি যে, নাসিমাকে হালালা বিয়ের ফতোয়া দেওয়ার খবরটিমিথ্যা বা বিকৃত নয়, একদম একশ’ শতাংশ সত্যি। ফতোয়া দেওয়াটা সত্যি বলেই সংশ্লিষ্ট খবরের কাগজের বিরুদ্ধে মিথ্যা বা বিকৃত খবর ছাপানোর মামলা দায়ের না করে নাসিমাকে দিয়ে বলানোর চেষ্টা করা হচ্ছে যে তাঁর দেওয়া বয়ানকে বিকৃত করে ছাপা হয়েছে।              
পরিশেষে দুটি কথা বলে এ লেখাটা শেষ করতে চাই। প্রথম কথাটি হলো, বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ, তালাক ও হালালা বিয়ের শরিয়তি বিধানগুলি পশ্চাদপদ তা মনে মনে অধিকাংশ মুসলমানই মানেন। কিন্তু তবুও এর থেকে মুসলিম সমাজ আজও নিষ্কৃতি পায় নি। কারণ মাওলানা ও মুফতিরা  যে ফতোয়া দেয় তা যতই কুৎসিত ও নিকৃষ্ট হোক  সকলেই  তা বিনা প্রতিবাদে মেনে নেয় নাসিমা খাতুন মানেন নি। তিনি রুখে দাঁড়িয়েছেন। আসুন সবাই তাঁর পাশে দাঁড়াই। আমার দ্বিতীয় কথাটি হলো,  রাজনৈতিক দলগুলোর স্থানীয় নেতাদের ভূমিকা খুবই হতাশাব্যঞ্জক। ভোট চোট হয়ে যায় এই ভয়ে সবাই মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছেননেতাদের কাছে আমার প্রশ্ন,  বোধ, বুদ্ধি ও  বিবেক  বিসর্জন দিকে আর কতকাল শুধু ভোট ও ক্ষমতার পেছনে ছুটবেন?                
২৫/৩/১৮
         

  









         
                         



Monday, April 2, 2018

রোহিঙ্গা-ছায়া যত দীর্ঘ হচ্ছে হিন্দু ও মুসলিমদের মধ্যে অবিশ্বাস ও দ্বন্দ তত বাড়ছে


রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ব্যাপারে ভারত সরকারের গৃহীত সিদ্ধান্তটি খুবই অবাঞ্ছিত ও অমানবিক। সিদ্ধান্তটি হলো, ভারতের ভূখণ্ডে ঢুকে পড়া রোহিঙ্গাদের চিহ্নিত করে ভারত থেকে বিতাড়িত করা হবে। সিদ্ধান্তটি রূপায়ন করার জন্যে কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্য সরকারগুলিকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবার নির্দেশিকাও পাঠিয়েছে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে যে, ভারত সরকার যা চেয়েছে বাস্তবে ঠিক তার উল্টোটাই ঘটছেকারণ, দেখা যাচ্ছে যে ভারতের মাটিতে রোহিঙ্গা-ছায়া অপসৃত হওয়ার বদলে উল্টে  দীর্ঘতর হচ্ছে। হ্যাঁ, বাস্তবটা চিত্রটা হলো এই যে, কতজন রোহিঙ্গা শরণার্থীদের এ দেশ থেকে বিতাড়িত করা হয়েছে তার খবর নেই, কিন্তু দেখা যাচ্ছে যে উল্টে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলার বারুইপুর থানায় দলে দলে ঢুকে পড়ছে এবং তাদের জন্যে কয়েকটি শিবিরও খোলা হয়েছে।             
রোহিঙ্গারা মুসলমান তাদের বিরুদ্ধ অভিযোগ রয়েছে যে তারা মিয়ানমারকে কখনই নিজেদের দেশ হিসেবে মনে করতে পারে নি। সেজন্যে তারা রাখাইন প্রদেশকে মিয়ানমার থেকে বিচ্ছিন্ন করে সেখানে ইসলামি রাষ্ট্র বানাতে বারবার জিহাদি হামলা চালিয়েছে মিয়ানমার রাষ্ট্র ও অসামরিক বৌদ্ধ নাগরিকদের ওপর। মিয়ানমার সরকার স্বভাবতই কড়া হাতে সেই জিহাদি সন্ত্রাস দমন করেছে। সেই রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়নের শিকার হতে হয়েছে নিরীহ রোহিঙ্গাদেরও। মাঝে মাঝে দেখা গেছে যে, রোহিঙ্গাদের উপর সেই রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন বীভৎস চেহার নিয়েছে। রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন যখনই ভয়ংকর হয়ে উঠেছে তখনই তারা মায়ানমার ত্যাগ করে বিভিন্ন দেশে গিয়ে আশ্রয় নিতে হয়েছে রাষ্ট্রীয় নিপীড়নে যখনই তারা স্বদেশ ত্যাগ করেছে, তখনই ত্যাগ করেছে হাজারে হাজারে কিংবা লাখে লাখে। তারা   মূলতঃ দেশ ছাড়ে বাংলাদেশে যাবে বলেকিন্তু বাংলাদেশও সীমান্তে কড়া নজরদারি থাকে। ফলে সবাই সে দেশে চেষ্টা করেও ঢুকতে পারে না। কয়েক লাখ রোহিঙ্গা যারা বাংলাদেশে শরণার্থী শিবিরে রয়েছে তারা সবাই ঢুকেছে চোরা পথে। যারা পারে নি তারা বিভিন্ন দেশে যেখানে পেরেছে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেএভাবেই তারা ভারতেও ঢুকে পড়েছে।  
রোহিঙ্গারা অতীতে যখন ভারতে প্রবেশ করেছে তখন টের পাওয়া  যায় নি  কিন্তু গত বছর যখন ওরা ভারত ভূখণ্ডে প্রবেশ করে তখন ভারত সরকার হৈ চৈ ফেলে দেয় এরূপ ঘটনা ঘটল কারণ, কেন্দ্রীয় সরকারে ক্ষমতাসীন রয়েছে আরএসএসের আদর্শপুষ্ট নরেন্দ্র মোদীর বিজেপি সরকার। প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য যে, আরএসএস ভারতকে হিন্দুরাষ্ট্র বানাবার লক্ষ্যে কাজ করে। রাষ্ট্রসংঘ বিশ্বের সকল মানুষের কাছে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের পাশে দাঁড়ানোর জন্যে আবেদন জানিয়েছে। তথাপি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তার সম্পূর্ণ বিপরীত অবস্থান নিয়েছেনরোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রতি মানবতা প্রদর্শন করা তো দূরের কথা, উল্টে তিনি তাদের চিহ্নিত করে ভারত থেকে  বের করে দেবার নির্মম আদেশ দিয়েছেন। ভারতবাসী হিসেবে সরকারের এ সিদ্ধান্তে আমি প্রচণ্ড বেদনাহত এবং লজ্জিতওকারণ, কোলের শিশু ও বৃদ্ধ-বৃদ্ধা সহ অসহায় ছিন্নমূল মানুষ যারা প্রাণের দায়ে নিজের দেশ ও বাস্তুভিটা ত্যাগ করে ভারতে এসে আশ্রয় নিয়েছে তাদের জোর করে তাড়িয়ে দেওয়া একটা ভীষণ বর্বরোচিত ও অমানবিক কাজ। স্বভাবতই এী সিদ্ধান্ত নেওয়ায় দেশ ও বিদেশে আমাদের সরকারকে প্রবল সমালোচনার মুখে পড়তে হয়।  
কবে থেকে পশ্চিমবঙ্গে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা প্রবেশ করছে, কীভাবে ও কাদের মদতে করছে, তাদের জন্যে কারা শিবির স্থাপন করেছে, কীভাবে ও কাদের সহযোগিতায় শিবিরগুলি চলছে সে বিষয়ে একটু পরে আলোকপাত করব। তার পূর্বে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বিষয়ে ভারত সরকার কর্তৃক গৃহীত সিদ্ধান্ত নিয়ে কয়েকটা কথা বলতে চাই রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বিতাড়ন করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্যে ভারত সরকারকে দেশ-বিদেশে যে সমালোচনা শুনতে হয়েছিল সেটা যে সরকারে প্রাপ্য ছিল তা সংশয়াতীত। সেই সমালোচনার জবাব দিতে সরকার ও শাসক দল বিজেপি নানা যুক্তির অবতারণা করেছে। যে যুক্তিগুলি সাজিয়েছে সেগুলি হল, (১). ভারতের মাটিতে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় জঙ্গী রোহিঙ্গাদেরও ঢুকে পড়ার প্রবল আশংকা রয়েছে। (২). শরণার্থীরা মাদক পাচার-সহ নানা প্রকার অসামাজিক কাজ যুক্ত হয়ে আইন-শৃংখলা ও সামাজিক সংকট সৃষ্টি করতে পারে, যেমন বাংলাদেশে  ঘটছে; শুধু বাংলাদেশেই নয়, বিশ্বের যে যে দেশ মুসলিম শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়েছে সেই সমস্ত দেশগুলোর অভিজ্ঞতাও কমবেশী এ রকমই। (৩). শরণার্থী শিবিরগুলো ভবিষ্যতে মুসলিম জঙ্গী সংগঠনগুলোর আশ্রয়দাতা কিংবা ডেরা হয়ে উঠতে পারে। এবং (৪).  মিয়ানমারের পরিস্থিতি ভাল হলেই যা তারা সেখানে ফিরে  যেতে চায়বে তার কোনও নিশ্চয়তা নেই; বাংলাদেশ সরকার এখন এই সমস্যায় জর্জরিত।   
হ্যাঁ, এটা অনস্বীকার্য যে, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়া নিঃসন্দেহে প্রবল ঝুঁকিপূর্ণ কাজ এবং সরকার যে যুক্তিগুলি দেখাচ্ছে সেগুলি কোনটাই অমূলক বা অবাস্তব নয়। এতদসত্ত্বেও নিরন্ন ছিন্নমূল মানুষদের তাড়িয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত কিছুতেই গ্রহণযোগ্য ও সমর্থনযোগ্য হতে পারে না। যে সমস্ত সমস্যা ও  বিপদের আশংকার কথা বলা হয়েছে তার পরিপ্রেক্ষিতে সরকার যা করতে পারত তা হল, (১) রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নতুন করে দেশের ভিতর প্রবেশ নিষিদ্ধ করা, এবং (২) যে রোহিঙ্গার ইতিমধ্যেই চলে এসেছে তাদের উপর কড়া নজর রাখা। 
প্রধানমন্ত্রী মাননীয় নরেন্দ্র মোদিজি কিন্তু এসব  না করে তার পরিবর্তে শরণার্থীদের বিতাড়িত করার অমানবিক সিদ্ধান্তটি নিয়েছেন। এখন প্রশ্ন হলো এমন বিবেকবর্জিত অমানবিক সিদ্ধান্ত তিনি কেন নিয়েছে? এর উত্তরে বলা যায় যে, তিনি আরএসএস (রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘ) – এর হিন্দু রাষ্ট্রের ভাবনা থেকে এ কাজটি করেছেন। রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের হাত থেকে প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে এসে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা আরএসএসের চোখে শরণার্থী নয়। তারা বিদেশী ও অনুপ্রবেশকারী। আরএসএসের তত্ত্ব হলো, প্রাণ বাঁচাতে স্বদেশ ছেড়ে পালিয়ে এসে যারা এ দেশে আশ্রয় নেয় তারা হিন্দু হলে শরণার্থী, আর মুসলমান হলে বিদেশী ও অনুপ্রবেশকারী। রোহিঙ্গারা যেহেতু মুসলমান তাই তারা শরণার্থী নয়, তারা বিদেশী ও অনুপ্রবেশকারী। আরএসএস বলছে এই রোহিঙ্গারা জাতীয় নিরাপত্তার কাছে হুমকি। সুতরাং তাদের জন্যে দয়া, মায়া, মমতা ও মানবতা প্রদর্শন করা যাবে না, তারা  যদি নারী এবং দুধের শিশু ও অশক্ত প্রবীণ মানুষ হয় তবুও নয় আরএসএসের এই সাম্প্রদায়িক ও সংকীর্ণ নীতিই প্রতিফলিত হয়েছে আমাদের প্রধানমন্ত্রীর নেওয়া সিদ্ধান্তে। অথচ আমাদের রাষ্ট্রনেতা ও বিদ্বজনেরা ভারতবর্ষ একটি বহুত্ববাদী ও সহিষ্ণু দেশ বলে কতই না গর্ব করেন!   
এবার আসা যাক পশ্চিমবঙ্গে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিয়ে যে কর্মকাণ্ড চলছে সে প্রসঙ্গে। আমরা জানি যে, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সরকারের কোন সিদ্ধান্তে ভিন্ন মত ও আপত্তি থাকলে সেটা প্রত্যাহারের দাবিতে জনগণ গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে।  কিন্তু সরকারি সিদ্ধান্ত ও আদেশকে  অমান্য করা যায় না। সুতরাং রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিয়ে আসা ও তাদের জন্যে শিবির খোলা অসাংবিধানিক কাজ। পশ্চিমবঙ্গে এই  অসাংবিধানিক কাজ চলছে গত বছর ডিসেম্বর থেকে। এই রাজ্যের দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলার বারুইপুর থানার হাড়দহ গ্রামে প্রথম এরূপ একটি শরণার্থী শিবির তৈরি করা হয়। তারপর  বারুইপুর  ও জীবনতলা থানা আরও কয়েকটি গ্রামে আরও কয়েকটি শিবির খোলা হয়েছে এবং দিন দিন রোহিঙ্গা শরণার্থীদের শিবির সংখ্যা বেড়ে চলেছে। শরণার্থী শিবিরগুলি চলছে ‘সারা বাংলা সংখ্যালঘু যুব ফেশারেশন’ - এর শাখা সংগঠন ‘দেশ বাঁচাও সামাজিক কমিটির’ নেতৃত্বে‘দেশ বাঁচাও সামাজিক কমিটির সভাপতি হোসেন গাজীর বয়ান অনুযায়ী তাঁদের নেতৃত্বে ৪০টিরও বেশী মুসলিম সংগঠন এই কাজগুলো করছে এই সংগঠনগুলির মধ্যে বঙ্গীয় ইমাম পরিষদ, বিশ্বমানব কল্যাণ ইসলামিক ট্রাস্ট ইত্যাদি মুসলিম সাম্প্রদায়িক সংগঠনগুলিও রয়েছে       
একটি বিশেষ লক্ষ্যণীয় ঘটনা হলো, রোহিঙ্গারা নিজেরাই এ রাজ্যে  এসে ঢুকেছে এমন নয়। সংগঠিত উদ্যোগ নিয়ে তাদের নিয়ে আসা হয়েছে ও হচ্ছে তাদের আনা হয়েছে হরিয়ানা, দিল্লি এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন শিবির থেকে রোহিঙ্গাদের  নিয়ে আসার ব্যাপারে ‘দেশ বাঁচাও সামাজিক কমিটির সভাপতি হোসেন গাজী অবশ্য একেক সময় একেক রকম কথা বলছেন। কখনও বলছে যে,  হরিয়ানার শরণার্থী শিবিরে বিজেপি ও তাদের সহযোগী সংগঠনগুলি আগুন লাগিয়ে কিছু ঘর পুড়িয়ে দিলে সেখান থেকে কয়েকটি পরিবার এসে হাড়দহ গ্রামে আশ্রয় নিয়েছে এ কথা তিনি খুব সম্প্রতি  (গত ১৫ই মার্চ) ইণ্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেছেন যা গত জানুয়ারী মাসে দেওয়া তাঁর বয়ান থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। সাম্প্রতিক বয়ানে তিনি বাংলাদেশের শরণার্থী শিবির থেকে রোহিঙ্গাদের নিয়ে আসার কথা অস্বীকার করেছেন। অথচ তিনিই গত জানুয়ারি মাসে ইণ্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে  জানিয়েছিলেন যে, বাংলাদেশের সঙ্গে সমন্বয় রেখে তাঁরা কাজ করছেন এ কাজের জন্যে তিনি নিজে একবার বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের শিবিরে গিয়েছেলেন, তারপর সেখান থেকে গিয়েছিলেন দিল্লি। সেখান থেকে রোহিঙ্গাদের নিয়ে আসেন বারুইপুর থানার কুলারি গ্রামে। তাঁর বয়ান কোট করে ইণ্ডিয়ান এক্সপ্রেস লিখেছে,  According to Gaji, his organisation coordinated with “people in Bangladesh, where he had visited once, and other Rohingyas in Delhi to get these families to Kulari(http://indianexpress.com/article/india/kulari-south-24-parganas-eight-rohingya-families-grateful-for-being-settled-in-west-bengal-5021161/)  কুলারি  ক্যাম্পে আশ্রয় পাওয়া ২৭ বছরের রোহিঙ্গা যুবক শহিদুলও সে কথাই বলেন। তিনি বলেন যে, তাঁরা বাংলাদেশ থেকে প্রথমে দিল্লি যান, তারপর তাঁরা দেশ বাঁচাও সামাজিক কমিটি এখানে আসার প্রস্তাব দেন, তারপর তাদের মাধ্যমে তারা এখানে আসেন। শহিদুল  ইণ্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে কী বলেছেন তা শোনা যাক, I worked as a daily labourer in Bangladesh before paying a tout some money to help us enter Bengal. Then, we went to Delhi. A few months later, we were offered this home by this organisation and we came here to stay,” said Sahidul (সূত্রঃ ঐ)  Photos: Rohingya refugees find safe haven in West Bengal village ...
বিজেপির রাজ্য শাখার অভিযোগের ভিত্তিতে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে শিবিরগুলি নিয়ে খোঁজখবর নেওয়ার আগে পর্যন্ত হোসেন গাজী সংবাদপত্রের সামনে ছিলেন অকপট। জানুয়ারী মাসে তিনি জানিয়েছিলেন যে তাঁর নিজের ১৫ কাঠা জমির উপর তিনি রোহিঙ্গাদের জন্যে শিবির করে দিয়েছেন এবং বলেন যে জনগণের কাছ থেকে চাঁদা তুলে শিবির নির্মাণ ও পরিচালনার কাজ  চললেও  তাঁর নিজের সাড়ে  তিন লাখ টাকা খরচ হয়ে গিয়েছে রোহিঙ্গাদের পেছনে। এসব কথা তিনি বলেন জানুয়ারী মাসে। সে সময় তিনি আরও  জানিয়েছিলেন যে, রোহিঙ্গা শিশুদের বিভিন্ন মাদ্রাসায় ভর্তি করে দেবার ব্যবস্থা তাঁরা করেছেনতাছাড়া তরুণ ও যুবক রোহিঙ্গাদের জন্যে করে দিয়েছেন কাজের ব্যবস্থাও। তিনি তখনই ব্জানিয়েছিলেন যে, রোহিঙ্গাদের অনেকেই দিন মজুরের কাজ শুরু করে দিয়েছে এবং তরুণ ছেলেরা বিভিন্ন চামরার কারখানায় ইন্টার্ণ হিসেবে কাজে যোগদান করেছে। তিনি আর একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তখন দিয়েছিলেন বলেছিলেন যে, প্রায় ৪০০০ (চার হাজার) রোহিঙ্গা পশ্চিম বাংলায় বিভিন্ন ক্যাম্পে রয়েছে। ওঁদের প্রধান নেতা সারা বাংলা সংখ্যালঘু যুব ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মহম্মদ কামরুজ্জামান অবশ্য বলেছেন বারুইপুর থানায় মাত্র এক দেড়শ’ রোহিঙ্গা শরণার্থী এসেছে। এটা তাঁদের কৃত বেআইনী কর্মকাণ্ডকে লঘু করে দেখানোর হীন প্রয়াস বলে মনে হয়। তিনি আর একটি বিষয় গোপন করার চেষ্টা করছেন। তাহলো এই যে,  তাঁরা রোহিঙ্গাদের ভারতীয় নাগরিকত্ব দাবি করছেন না। তাঁদের দাবি হল, যত দিন না তারা মিয়ানমার ফিরে যেতে পারছে ততদিন প্রশাসনকে তাদের নিরাপত্তা প্রদান করতে হবে। কিন্তু না, আসলে তাঁরা যে রোহিঙ্গাদের ভারতের নাগরিকত্বই চান তা স্পষ্ট করেই জানিয়েছিলেন  হোসেন গাজী। ইণ্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে তিনি কী বয়ান দিয়েছিলেন তা দেখা যাক, – “we will start a campaign for granting citizenship to Rohingya refugees,” (http://indianexpress.com/article/india/kulari-south-24-parganas-eight-rohingya-families-grateful-for-being-settled-in-west-bengal-5021161/)
এদিকে বিজেপি ক্রমশঃ গলা চড়াচ্ছে রোহিঙ্গাদের নিয়ে এসে আশ্রয় দেবার বিরুদ্ধেতারা রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পগুলি তুলে দেওয়া এবং এর সঙ্গে যুক্ত তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার  দাবি জানিয়েছে। ফলে যে প্রশাসনের নাকের ডগায় এতদিন অবাধে রোহিঙ্গাদের নিয়ে এসে তাদের জন্যে শিবির নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে সেই প্রশাসন কিছুটা হলেও নড়েচড়ে বসেছে। পুলিশ রোহিঙ্গা শিবিরে এসে খোঁজ খবর নিয়েছে এবং হোসেন গাজীকেও জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। এতে মুসলিম সংগঠনগুলি ভয়ানক ক্ষিপ্ত সেই ক্ষোভের বহিপ্রকাশ দেখা গে সারা বাংলা সংখ্যালঘু যুব ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মহম্মদ কামরুজ্জামান 500 OBC Muslims from WB in CAPF merit list, but centre denies ...একটি ভিডিও (https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=612632692424447&id=0010331645224) বার্তায়সেই বার্তায় তিনি পুলিশ প্রশাসন ও রাজ্য সরকারকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন ও হুমকি দিয়েছেন তিনি বলেছেন যে, পুলিশকে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সমস্ত তৎপরতা বন্ধ করতে হবে। তা না  করলে তাঁরা গোটা বাংলা স্তব্ধ করে দেবেন। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীকেও তিনি হুমকি  দিয়েছেন ঐ ভিডিও বার্তায় বলেছেন যে, রাজ্য সরকারের পুলিশ যদি একজন রোহিঙ্গারও লোম স্পর্শ করে তবে তাঁর সরকার নিজের কবর নিজেই খুঁড়বে। রোহিঙ্গাদের নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতি এভাবেই ক্রমশঃ জটিল ও উত্তপ্ত হয়ে উঠছেফলে  এই রাজ্যে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার পারদ চড়চড় করে  উপরে উঠছে।    
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জোর করে কুকুর বিড়ালের মত তাড়িয়ে দেওয়া যে ভীষণ অমানবিক কাজ সে কথা পুর্বেই বলেছিএটা এক প্রকার মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাও বটে। কিন্তু সরকারি সিদ্ধান্ত ও নির্দেশকে লঙ্ঘন করে দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলায় রোহিঙ্গাদের নিয়ে মুসলিম সংগঠনগুলি যে কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে তা কি সমর্থনযোগ্য? শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়া, অন্ন-বস্ত্র, চিকিৎসা ও অন্যান্য সেবা প্রদান করা নিঃসন্দেহে মহৎ ও মানবিক কাজ। কিন্তু মানবতার নামে কি সরকারকে চ্যালেঞ্জ করা সমীচীন? সরকারি আইনভঙ্গ করা যায়? বিশেষ করে সে কাজে যদি সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা বৃদ্ধি ও আইন-শৃংখলার অবনতি হওয়ার আশংকা থাকে?
মুসলিম সংগঠনগুলি লতে চায়ছে  যে তারা মানবতার খাতিরে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের পাশে দাঁড়িয়েছে এবং তাদের জন্যে রিলিফ ক্যাম্প করেছে। মানবতার ভড়ং দেখিয়ে কয়েকটি অসাম্প্রদায়িক সংগঠনও তাদের ইন্ধন ও মদত দিচ্ছে কিন্তু প্রায় অর্ধ শত মুসলিম সংগঠন জোট বাঁধার পেছনে সত্যিই কি মানবতার আদর্শ নিহিত আছে? গোটা রাজ্যকে স্তব্ধ করে দেবার হুমকি এবং মুখ্যমন্ত্রীকে সরকার ফেলে দেওয়ার ভীতি প্রদর্শনও মানবতার আদর্শে তাড়িত হয়ে? রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও প্রশাসনকে চ্যালেঞ্জ জানানো – এসব মানবতাবাদী কাজের নমুনা? বাস্তবে যেখানে কয়েক হাজার শরণার্থী এসেছে সেখানে কেন কমিয়ে মাত্র এক/দেড়শ’-র কথা বলা হচ্ছে? মানবতার স্বার্থেই যদি রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়া হয়ে থাকে তবে শরণার্থীদের আসল সংখ্যাটা আড়াল করা হচ্ছে কেন? না, মানবতার তাগিদে রোহিঙ্গাদের নিয়ে এসে শিবিরে রাখা হচ্ছে না। একদমই না। রোহিঙ্গাদের নিয়ে আসার পেছনে ইসলামিক উদ্দেশ্য ও কর্তব্য রয়েছে যেটা তারা গোপন করছে।
মুসলিম সংগঠনগুলি রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়িয়েছে তাদের ইমানি দায়িত্ব পালন করার জন্য। সেই কাজে তারা রোহিঙ্গাদের ব্যবহার করছে দাবার বোড়ে হিসেবে। মানবতাটা হলো মুখোশ এই মুখোশটা খসে পড়েছে তখনই যখন তারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে রোহিঙ্গা পরিবারের শিশু সন্তানদের নিয়ে গিয়ে খারিজি মাদ্রাসায় ভর্তি করেছেএখন প্রশ্ন হল, কোন ইমানি দায়িত্ব পালন করার জন্যে সরকারি আইন লংঘন করে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের এ রাজ্যে নিয়ে আসা হচ্ছে? প্রধানতঃ দু’টি দায়িত্ব পালন করার চেষ্টা করছে তারাপ্রথমটি হলো ইসলামের আন্তর্জাতিক মুসলিম ভ্রাতৃত্বের আহ্বানে সাড়া দেওয়া। সেটা এরূপঃ ইসলাম বলেছে পৃথিবীর সব মুসলমান পরষ্পরের ভাই। মুসলমানরা যদি কোথাও বিপদে পড়ে তবে তাদের সাহায্য করা বিশ্বের সকল মুসলমানদের কর্তব্য। মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলমানরা এখন যেহেতু বিপন্ন ও বিপদগ্রস্ত, তাই তাদের পাশে দাঁড়ানো এখন মুসলমানদের ইমানি দায়িত্ব। রোহিঙ্গাদের জন্যে শরণার্থী শিবির খুলে সেই দায়িত্ব পালন করছে মুসলিম সংগঠনগুলি। দ্বিতীয়টি হলঃ জিহাদি দায়িত্ব। জিহাদ করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য ওয়াজিব (অবশ্য পালনীয় কর্তব্য)। সরাসরি জিহাদে অংশ না নিয়েও জিহাদি কর্তব্য পালন করার ইসলামি বিধান আছে। অর্থাৎ মুজাহিদদের (জিহাদিদের) নানা ভাবে সহযোগিতা দিয়েও জিহাদি কর্তব্য পালন করা যায়। ভারতে প্রকাশ্যে জিহাদে অবতীর্ণ হওয়া যেহেতু আত্মহত্যার শামিল তাই এ দেশে মুসলিম সংগঠনগুলি আড়ালে থেকে জিহাদীদের সহায়তা দিয়ে থাকে। মুসলিম সংগঠনগুলি প্রকাশ্যে মুসলিমদের নানা দাবিদাওয়া নিয়ে প্রচার ও আন্দোলন করে ঠিকই, কিন্তু তাদের আসল কজ হলো গোপনে গোপনে জিহাদি কর্মকাণ্ডে মদত দেওয়া। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের শিবির খোলার পশ্চাতে রয়েছে মূলতঃ এই উদ্দেশ্যটি। প্রশ্ন উঠতে পারে যে শরণার্থী শিবির খুলে কীভাবে  জিহাদি কর্মকাণ্ডে দেওয়া সম্ভব? হ্যাঁ, সম্ভব। সেটা এভাবে - লোকচক্ষুর সামনে চলবে শরণার্থী শিবিরের মহৎ কর্মকাণ্ড আর লোকচক্ষুর আড়ালে এই শিবিরগুলিই মুজাহিদদের ডেরা হিসেবে কাজ করবে  
রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়ানোর পেছনে দু’টি আশু লক্ষ্যও রয়েছে। এক). রোহিঙ্গাদের সংগঠিত করে সাংগঠনিক শক্তি বাড়ানো। দুই). রোহিঙ্গাদের বাহানায় এ রাজ্যের মুসলিমদের সংগঠনের বিস্তার ঘটানো। বিজেপি সরকার রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাতে মুসলিম সমাজ সবচেয়ে বেশী আহত হয়েছে। মুসলিমদের এই ক্ষোভকে ব্যবহার করে তাদের সংগঠিত করা।   
মুসলিম সংগঠনগুলি কীভাবে আড়ালে থেকে জিহাদি কর্মকাণ্ডে মদত ও সহায়তা দেয় পশ্চিমবঙ্গের মানুষ তা জানে। ২০১৪ সালে পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার বর্ধমান শহরের বুকে খাগড়াগড় বিষ্ফোরণ কাণ্ডে তা দেখা গেছে। বাংলাদেশের জঙ্গী সংগঠন ‘জামাআতুল মুসলিম বাংলাদেশ’ বা জেএমবি ছিল ঐ বিষ্ফোরণ কাণ্ডের হোতা। বিষ্ফোরণ কাণ্ডের পর  অভিযুক্ত জঙ্গীদের এবং  বিষ্ফোরণ কাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত খারিজি মাদ্রাসাগুলিকে আড়াল করতে কীভাবে মুসলিম সংগঠনগুলি ঐক্যবদ্ধভাবে রাস্তায় নেমেছিল তা আমাদের স্মৃতিতে এখনও টাটকা হয়ে রয়েছে। তখনই এটা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল যে পশ্চিমবঙ্গের মুসলিম সংগঠনগুলি ও মুসলিম জঙ্গী সংগঠনগুলির মধ্যে একটা গভীর সম্পর্ক রয়েছে। জেএমবি ভারতের মাটিতে যে আজও সমান সক্রিয় তার প্রমাণ পাওয়া গেছে গত ১৮ই জানুয়ারী দলাই লামার সফরের সময় যখন বুদ্ধগয়ায় বিষ্ফোরণ কাণ্ড ঘটে গোয়েন্দা রিপোর্ট থেকে জানা যায় যে গত বছর নভেম্বর মাসে জেএমবি জঙ্গীরা হায়দ্রাবাদে বসে এই বিষ্ফোরণের ষড়যন্ত্র করেছিলঐ বিষ্ফোরণ কাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত কয়েকজন জঙ্গী সম্প্রতি পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে যাদের মধ্যে জেএমবির ধুলিয়ান মডিউল পয়গম্বর সেখও  আছে     
                                          NIA - .এর হাতে খাগড়াগড়ের হাতকাটা নাসিরুল্লাহ

মুসলিম সংগঠনগুলির ঔদ্ধত্য, দাপাদাপি এবং মুসলিম জঙ্গীদের আশ্রয় ও মদত প্রদান ইত্যাদি ঘটনাগুলি হিন্দু সমাজকে যে ক্ষুব্ধ করে তা বলা বাহুল্য  শুধু ক্ষোভই নয়, একাংশের মধ্যে আতংক ও ভীতিও তৈরী করে এই পরিস্থিতির সুযোগ নিতে বিজেপি হিন্দুদের  হিন্দুদের পাল্টা সংগঠিত করার চেষ্টা করে চলেছে। তাদের সেই চেষ্টা যে ফলপ্রসূ হচ্ছে তা ভোটের ফলাফলেই প্রমাণিত। শুধু যে ভোটই বাড়ছে তা নয়, সাংগঠনিক শক্তিও যে ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি লাভ করেছে তার প্রমাণ পাওয়া গেছে বাদুরিয়া-বসিরহাট দাঙ্গাতেওপশ্চিমবঙ্গে এর আগে পর্যন্ত হিন্দুরা যেখানে সংখ্যালঘু সেখানে মুসলিমদের হাতে শুধু একতরফা আক্রান্ত হয়েছে ও মারই খেয়েছে। বসিরহাট দাঙ্গায় তারা পাল্টা আক্রমণ করেছে এবং মেরেছেও।    
এই পটভূমিতে রোহিঙ্গাদের যেচে নিয়ে আসা ও তাদের জন্যে শিবির খোলার বিষয়টা বিচার করতে হবে। মুসলিম সংগঠনগুলি মানবতার দোহাই দিয়ে সরকারের  নির্দেশকে উপেক্ষা ও অগ্রাহ্য করে যখন রোহিঙ্গাদের নিয়ে আসতে শুরু করেছিল তখনই তাদের বাধা দেওয়া উচিৎ ছিল। কিন্তু বাধা দেবার পরিবর্তে শাসক দল মদত দিয়েছে, এবং প্রশাসন ও বিরোধী দলগুলি নীরব থেকেছে। সেই ধারা আজও অব্যাহত রয়েছে। এর সুযোগ নিচ্ছে বিজেপি। তারা হিন্দুদের মধ্যে যে নানা ঘটনায় মুসলিমদের বিরুদ্ধে যে অবিশ্বাস ও ক্ষোভ তৈরী হয়েছে তাকে আরো উসকে দেওয়ার চেষ্টা করছে। ফল যা হওয়ার তাই হচ্ছে, হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে পারষ্পরিক বিশ্বাস ও সৌহার্দ যেটুকু আছে সেটাও ধীরে ধীরে অন্তর্হিত হয়ে যাচ্ছে।    
খেয়ালে রাখতে হবে যে, এখন কেন্দ্রীয় সরকার এখন পরিচালনা করছে বিজেপি এবং পশ্চিমবঙ্গেও তারা যথেষ্ট শক্তিশালী এ হেন অবস্থায় রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আগমন এবং শিবিরের সংখ্যা যদি ক্রমশঃ বাড়তেই থাকে তবে তার পরিণতি মোটেই ভাল হবে না। একদিকে বাদুরিয়া ও বসিরহাটের   মত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার নতুন নতুন ক্ষেত্র তৈরী হবে। অন্যদিকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের শিবিরগুলি মুসলিম জঙ্গীদের ডেরা হয়ে উঠবে যা দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তাকে বিপন্ন করে তুলবে। এরূপ  পরিস্থিতির যাতে উদ্ভব না হয় তার জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে মুসলিম সংগঠনগুলির ভূমিকা  সম্পর্কে সর্বদা সতর্ক ও সজাগ থাকতে হবেপাশাপাশি এই কাজগুলিও করতে হবে। যেমন, রাজ্যে যাতে আর একজন শরণার্থীও  প্রবেশ না করতে পারে তা সুনিশ্চিত করতে হবে। যারা একটা রোহিঙ্গা পরিবারকেও নিয়ে আসবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে যে শিবিরগুলি চলছে সেগুলির গতিবিধির উপর কড়া নজর রাখতে হবে যাতে শিবিরগুলি জঙ্গিদের আশ্রয়স্থল ও ডেরা হয়ে উঠতে না পারে।  

২৭/৩/১৮        
 
       



  



KARBALA: Truth and Lies

  KARBALA : Truth and Lies           GIASUDDIN                 Translated by SRIJIB BISWAS        ...