Friday, October 6, 2017

রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান করা শুধু মায়ানমার সরকারের দায় নয়, রোহিঙ্গাদেরও দায় নিতে হবে



অন লাইনে চোখ রাখলে চোখের সামনে ভেসে উঠছে রোহিঙ্গাদের ওপর রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের হাড় হিম করা একের পর এক দৃশ্য ভেসে উঠছে রোহিঙ্গা স্মরণার্থীদের ক্রন্দনরত বিবর্ণ মুখের মর্মস্পর্শী ছবির মিছিল খবরের কাগজগুলিতেও প্রথম পাতা দখল করে থাকছে রোহিঙ্গাদের খবর। দুরদর্শনেও তাই। রোহিঙ্গা ইস্যু ভাইরাল হয়ে গিয়েছে। হওয়াটাই যে স্বাভাবিক। কারণ তাদের ওপর মায়ানমার সরকারের রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন মানবতা ও মানবাধিকারের সমস্ত সীমা অতিক্রম করে গিয়েছে। তাদের গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠছে। অভিযোগ যে তাদের টার্গেট করে গুলি করা হচ্ছে হত্যা করার জন্যে বাংলাদেশে বিদেশমন্ত্রী দাবী করেছেন যে রাখাইন প্রদেশে অন্ততঃ তিন হাজার রোহিঙ্গা নিধন হয়েছে।  রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন সত্যিই এমন মাত্রায় পৌঁছেছে যে প্রাণ বাঁচাতে প্রাণের ঝুঁকি নিয়েই বিপজ্জনক পথ ধরে রোহিঙ্গারা দেশ ছেড়ে পালাচ্ছেফলে রোহিঙ্গারা শয়ে শয়ে মারা যাচ্ছে হয়  জলে ডুবে না হয় পুলিশ ও সেনাবাহিনীর গুলিতে। এ অভিযোগ রোহিঙ্গারা শুধু করছে তা নয়, অভিযোগ করেছে সংবাদ মাধ্যমগুলিও। এ প্রসঙ্গে আন্তর্জাতিক অষ্ট্রেলিয় মানবাধিকার সংগঠন বলেছে -  Many people are risking their lives to escape using perilous routes – some are badly injured, and with children.  মানবাধিকার সংগঠনটি আরো বলেছে যে গতো দু সপ্তাহেরও কম সময়ে ৩,৭০,০০০ হাজার রোহিঙ্গা মিয়ানমার ছেড়ে বাংলাদেশের সীমান্তে পৌঁছে গেছেসংগঠনটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে - In less than two weeks, 370,000 Rohingya people have had to flee Myanmar to nearby Bangladesh. রোহিঙ্গাদের উপর রাষ্ট্রীয় নৃশংস দমন-পীড়নের যে সব বীভৎস খবর আসছে তাতে কিছু অতিরঞ্জন হয় তো আছে, কিন্তু তথাপি পরিস্থিতি যে ভয়াবহ তা নিয়ে সংশয়ের অবকাশ মনে হয় নেই।  সম্প্রতি বৌদ্ধ ধর্মগুরু দালাই লামাও  মায়ানমারে শান্তি ও সম্প্রীতি ফিরিয়ে আনার জন্যে আং সূচী ও মায়ানমারের অন্যান্য নেতাদের পদক্ষেপ নেবার আহ্বান জানিয়েছেন।  গতো ১১ই সেপ্টেম্বর  তিনি  আং সান সূচি ও মায়ানমার সরকারের উদ্দেশ্যে বলেছেন, “আপনারা শান্তি এবং সৌহার্দ্যের মাধ্যমে জনমানসে সম্প্রীতি ফিরিয়ে আনুন।” পরিস্থিতি এতোই ভয়াবহ হয়ে উঠেছে যে ১৩ই সেপ্টেম্বর বাংলাদেশে অবস্থিত ৪০টি দেশের রাষ্ট্রদূত একসঙ্গে রাষ্ট্রসঙ্ঘকে রোহিঙ্গা সংকটে হস্তক্ষেপ করার আবেদন জানিয়েছেন পরিস্থিতি যে ভীষণ রকম ভয়াবহ তা বোঝা যায় রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার সংক্রান্ত হাইকমিশনার জায়েদ আল হুসেনের মন্তব্যেও  তিনি বলেছেন –
মায়ানমারে রোহিঙ্গাদের উপরে যা চলছে তা “জাতি নিধনের আদর্শ উদাহরণ  
হুসেন মায়ানমার সরকারের পাশাপাশি ভারত সরকারেরও তীব্র সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, “মায়ানমারে যখন রোহিঙ্গারা আক্রমণ ও হিংসার শিকার হচ্ছেন, ঠিক তখনই ভারত নিজেদের এলাকা থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বহিষ্কার করার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা অন্যায়।” প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য যে ভারতে চল্লিশ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী রয়েছে। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রশ্নে ভারত সরকারের ভূমিকা সত্যিই খুবই হতাশাজনকএই ভূমিকায় ভারতবাসী হিসেবে আমি লজ্জিত ভারত সরকার প্রধানতঃ সাম্প্রদায়িক মনোভাব থেকে এমন লজ্জাজনক হীন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে বলে আমার ধারণা। আমার এই ধারণা ভ্রান্ত বা অভ্রান্ত যাই হোক না কেনো, এই সিদ্ধান্তের আমি তীব্র প্রতিবাদ করছি। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়া যে কোনো দেশের পক্ষেই ঝুঁকির, এটা জেনে ও মেনেও বলছি যে, যারা ইতিমধ্যেই ভারতীয় ভূখণ্ডে প্রবেশ করেছে তাদের আশ্রয় দেওয়া আমাদের রাষ্ট্রীয় নৈতিক মানবিক কর্তব্য। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়া কেনো ঝুঁকির কারণ সে প্রসঙ্গে পরে আসবো, কিন্তু  ঝুঁকি সত্ত্বেও ছিন্নমূল অসহায় চল্লিশ হাজার আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা একটু আশ্রয় ও অন্নের জন্যে যখন দরজায় এসে কড়া নাড়ে তখন তারা শত্রু হলেও তাদের আর্তিতে সাড়া দেওয়াটা সভ্য সমাজের ন্যূনতম রীতি ও কর্তব্যের মধ্যেই পড়ে। উল্টে তাদেরকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে তাড়িয়ে দেয়াটা চরম নিষ্ঠুরতা ও বর্বরতা  রূপ অমানবিক সিদ্ধান্ত নিয়ে মোদিজি  বিশ্ববাসীর কাছে আমাদের মাথা হেঁট করে দিলেন। 
মায়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের উপর যে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস ও নিপীড়ন চালাচ্ছে তার নিন্দা করার ভাষা নেই কিন্তু তা বলে মায়ামমার সরকারের বিরুদ্ধে মুসলমান নিধনের যে অভিযোগ উঠেছে তার সঙ্গে  আমি সহমত নই। কারণ, রোহিঙ্গা মুসলমান ব্যতীত অন্য গোত্রের মুসলমানরা সেখানে নিরাপদেই আছে। অবশ্য আমার এটা মনে হচ্ছে যে মায়ামমার সরকার তাদের মাটি থেকে রোহিঙ্গা মুসলমানদের নির্মূল করতে চাইছে। এ কথা আমি এর আগের নিবন্ধেও লিখেছি। সে লেখায়  আমি অভিযোগ আরও করেছি যে, রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের পাশাপাশি মায়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের পরিকল্পিতভাবে ভয়ঙ্কর মানসিক নিপীড়নও চালাচ্ছে যাতে তারা মায়ানমার ছেড়ে পালিয়ে যায়। সেই উদ্দেশ্যে মায়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব সহ সকল মৌলিক অধিকার কেড়ে নিয়েছে। আমি এও বলেছি যে, শুধু জঙ্গী ও সন্ত্রাসী রোহিঙ্গারাই নয়, মায়ানমার সরকারের রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের  শিকার হচ্ছে সাধারণ নিরীহ রোহিঙ্গারাও। আগের লেখায় তাই আমি দাবী জানিয়েছি যে, জঙ্গী রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মায়ানমার সরকার যতো খুশী কঠোর হোক, কিন্তু নির্দোষ ও নিরীহ রোহিঙ্গাদের উপর রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন বন্ধ করতে হবে এবং তাদের নিরাপত্তা দিতে হবে    
আমার সে লেখায় মুসলিম মৌলবাদীরা বেজায় রুষ্ট। রুষ্ট মানবাধিকার কর্মী ও সেক্যুলার তকমাধারী বন্ধুরাও। তাঁদের রোষের কারণ আমি বলেছি যে –
এক). মায়ানমার সরকার মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে ঠিকই, কিন্তু রোহিঙ্গারাও ধোওয়া তুলশী পাতা নয়।
দুই). রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে মায়ানমার সরকারের বিরুদ্ধে দুনিয়া জুড়ে একপেশে আলোচনা হচ্ছে।
তিন). মুসলমান বলেই রোহিঙ্গাদের উপর রাষ্ট্রীয় নির্যাতন হচ্ছে এটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও অবাস্তব অভিযোগএবং
চার). মুসলিম মৌলবাদীরা রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে বিশ্বজুড়ে সাম্প্রদায়িক বিষ ছড়াচ্ছে।       
আমি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় আবার জানাতে চাই যে, মায়ানমার সরকারের কাছে রোহিঙ্গাদের উপর রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন বন্ধ করা এবং তাদের নাগরিকত্ব-সহ সমস্ত মৌলিক অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার যে দাবী উঠেছে তার প্রতি আমার পূর্ণ সমর্থন আছে। তারপরেও খুবই বেদনার সাথে আমাকে বলতে হচ্ছে যে,  আন্তর্জাতিক মহল ও রাষ্ট্রপুঞ্জ নিরপেক্ষ অবস্থান গ্রহণ না করে মায়ানমার সরকারের বিরুদ্ধে সম্পূর্ণ একপেশে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। তাই আমি দাবী জানাচ্ছি যে, পূর্বানুমানের ভিত্তিতে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে একপেশে মনোভাব ও অবস্থান থেকেসরে এসে রাষ্ট্রসংঘ ও আন্তর্জাতিক মহলকে একটি  নিরপেক্ষ অবস্থান নিতে হবে। এবং অনুসন্ধান করে দেখতে হবে কেনো মায়ানমার সরকার রোহিঙ্গা নিধন-যজ্ঞ শুরু করেছে? সে কি শুধুই ধর্মীয় বিদ্বেষ থেকে, না কি অন্য কোনো কারণ রয়েছে এর পশ্চাতে? তা না হলে রোহিঙ্গা-সংকট নিয়ে যে একপেশে ও একবগ্গা আলোচনা হচ্ছে তা রোহিঙ্গা- সংকটের সমাধানকে ত্বরাণ্বিত করার বদলে আরো জটিল করে তুলবে। একপেশে ও একবগ্গা   আলোচনা ও সমালোচনার ফলে রোহিঙ্গারা মায়ানমারে কী ভূমিকা  পালন করছে সে সম্পর্কে বিশ্ববাসী  বিন্দুবিসর্গও জানতে পারছে না। রোহিঙ্গা-সংকট নিরসনে রাষ্ট্রসংঘকে কার্যকরী উপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে  হলে মায়ানমার রাষ্ট্রের ভূমিকার পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের ভূমিকা সম্পর্কেও সঠিকভাবে অবহিত হতে হবে। রোহিঙ্গাদের ভূমিকাটাও জানা অবশ্যই দরকার, কারণ মায়ানমার ও  রোহিঙ্গাদের পূর্ব ইতিহাস ঘেঁটে যে তথ্য ও খবর উঠে আসছে তাতে এটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে যে রোহিঙ্গা-সংকটের জন্যে শুধু মায়ানমার সরকারই দায়ী নয়, দায়ী রোহিঙ্গারাও। রোহিঙ্গাদের উপর রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের ঘটনাগুলি পর্যালোচনা করে দেখা যাচ্ছে যে, মায়ানমার সরকার বিনা প্ররোচনায় রোহিঙ্গাদের উপর রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন করেছে এমনটা বলা যাচ্ছে না।  বরং অপ্রিয় ও  নির্মম সত্যিটি হলো এই যে, মৌলবাদি ও জঙ্গী রোহিঙ্গাদের বৌদ্ধ ও রাষ্ট্রবিরোধী সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপই মায়ানমার সরকারকে বাধ্য করেছে বারবার রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সেনা অভিযানের সিদ্ধান্ত নিতেএ প্রসঙ্গে দুটো টাটকা উদাহরণ হাতের কাছেই দেখা যাচ্ছে।
(এক). গতো বছর (২০১৬) অক্টোবর মাসে মায়ানমার যখন সরকার রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সেনা অভিযানের নির্দেশ দেয় তার আগে ৯ই অক্টোবর সন্ত্রাসবাদী রোহিঙ্গারা ৩টি সীমান্ত  চৌকিতে হামলা চালিয়ে ৯জন সীমান্তরক্ষীকে হত্যা করে
(দুই). এবারও মায়ানমার সরকারকে সেনাভিযানের নির্দেশ দিতে বাধ্য করেছে জঙ্গী রোহিঙ্গারাই। রোহিঙ্গাদের নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন ‘আরসা’ (আরাকান রোহিঙ্গা সালভেশন আর্মি) গতো আগষ্ট মাসের শেষের দিকে ত্রিশটি পুলিশ চৌকি ও একটি সেনা ছাউনিতে ভয়াবহ সশস্ত্র হামলা চালিয়ে ১৫০ জন পুলিশ ও সেনাকে হত্যা করে এবং সেই হামলায় আহত হয় আরো অনেকে (http://www.anandabazar.com/international/un-raised-their-voice-on-rohingya-crisis-issue-1.673312)
শুধু রাষ্ট্রের বিরুদ্ধেই নয়, রোহিঙ্গাদের জিহাদি জঙ্গী হামলার শিকার বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের অসামরিক লোকজনও। রোহিঙ্গা মুসলমানরা সবাই মোটেই যে শান্তিপ্রিয় নয় এবং তারা রাষ্ট্র ও বৌদ্ধ সমাজের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদী হিংসাত্মক কার্যকলাপ চালিয়ে সরকারকে সেনা নামাতে বাধ্য করছে এ কথাটা সবাই চেপে যাচ্ছে। সবাই কেবল মায়ানমার সরকার ও আং সান সূচীর  উপর রোহিঙ্গাদের উপর রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন বন্ধ করার জন্যে চাপ সৃষ্টি করছে, কিন্তু কেউ রোহিঙ্গাদের উপর তাদের সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ বন্ধ করার জন্যে চাপ দেয়া তো দূরের কথা তাদের সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ডের কথাই মুখে আনছে না। রোহিঙ্গাদের সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের ভূমিকা নতুন কিছু নয়। সে এক দীর্ঘ ইতিহাস। সে ইতিহাস আলোচনা করার প্রয়োজনীয় পরিসর এই নিবন্ধ নেই। তবুও একান্ত প্রাসঙ্গিক বলে সেই ইতিহাসের পাতায় এক ঝলক চোখ বুলানো যাক।       
১৯৮২ সালে মায়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেয়। কোনো অবস্থাতেই কোনো জনগোষ্ঠীর নাগরিকত্ব কেড়ে নেয়ার ঘটনা সমর্থনযোগ্য নয়। তথাপি কেনো ও কোন পরিস্থিতিতে মায়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো তা আমাদের একটু খতিয়ে দেখার দরকার আছে আর সেজন্যে আমাদের একটু পেছনে যেতে হবে। ১৯৪৮ সালে মায়ানমার স্বাধীন হয়। খুবই দুঃখজনক ঘটনা হলো, রোহিঙ্গারা মায়ানমারের স্বাধীনতা সংগ্রামের বিরোধিতা করেছিলো। ১৯৪৭ সালে মায়ানমারের আকাশে বৃটিশ-সূর্য যখন অস্তমিত প্রায় তখন রাখাইন প্রদেশকে মায়ানমার থেকে বিচ্ছিন্ন করে পাকিস্তানের অঙ্গরাজ্য করার পরিকল্পনা করে রোহিঙ্গারা। সে উদ্দেশ্যে তারা বার্মিজ মুসলিম লীগ গঠন করে মুজাহিদ বাহিনী গড়ে তোলে এবং ভারতের মুসলিম লীগ নেতা মহম্মদ জিন্নার সঙ্গে যোগাযোগ করে। কিন্তু জিন্নাহ তাদের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন। ফলে সেবার তাদের সেই দেশবিরোধী জিহাদি মিশন ব্যর্থ হয়তথাপি স্বাধীন মায়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দিতে কুণ্ঠিত হয় নি। মায়ানমার সরকার ও মায়ানমারের মানুষদের এই ক্ষমাশীলতা, সহিষ্ণুতা, উদারতা ও মহানুভবতাকে উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হয় রোহিঙ্গা মুসলমানরা। ওদের ধর্মীয় গোঁড়ামি ও প্রবল রক্ষণোশীলতাই বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলো মায়ানমারকে তাদের নিজের দেশ ও তার সরকারকে নিজের সরকার বলে উপলব্ধি করার ক্ষেত্রে। উল্টে মায়ানমারকে তারা ভেবেছে দারুল হারব (শত্রু দেশ) এবং তাই মায়ানমারকে দারুল ইসলাম (ইসলামি রাষ্ট্র) বানাবার লক্ষ্যে সন্ত্রাসবাদী জিহাদি কার্যকলাপ তারা অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। তার জন্যে বার্মিজ মুসলিম লীগের পরিবর্তে তারা তৈরী করে একটি জিহাদি সংগঠন ‘আরসা’ (আরাকান রোহিঙ্গা সালভেশন আর্মি)। আরসা-র লক্ষ্য জিহাদের মাধ্যমে মায়ানমারকে বার্মিজদের হাত থেকে মুক্ত করে সেখানে ইসলামি রাষ্ট্র গঠন করা। রোহিঙ্গাদের এই জিহাদি সংগঠন ও হামলা দমন করার জন্যে নে উইন সামরিক সরকার রোহিঙ্গাদের উপর প্রথম রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন শুরু করেছিলো  ১৯৬২ সালে। এই নে উইনের সরকারই রোহিঙ্গাদের প্রথম বাংলাদেশী আখ্যা দিয়ে রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের মাধ্যমে তাদের বিতাড়নের প্রক্রিয়া শুরু করে সেই রাষ্ট্রী নিপীড়নের ধারাবাহিকতায় ১৯৮২ সালে  মায়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেয়। জঙ্গী রোহিঙ্গার জন্যে সমস্ত রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেয়ার ঘটনা নিশ্চয় নিন্দাজনক, কিন্তু এ কথাও তো অনস্বীকার্য যে মায়ানমার সরকারকে উক্ত কঠোর পদক্ষেপ নিতে প্ররোচিত করেছে রোহিঙ্গা মুসলমানরাই।      
১৩ হাজার বছর ধরে বৌদ্ধরা মায়ানমারের অধিবাসী। আর মায়ানমারে আরবদের আগমন মাত্র ১৩শো বছর আগে ৮ম কিংবা ৯ম শতাব্দীতেতারা এসেছিলো বাণিজ্য উপলক্ষ্যে। সেদিক থেকে বিচার করলে বৌদ্ধরা মায়ানমারের আদি ও মূল অধিবাসী, এবং মুসলমানরা বহিরাগত। মায়ানমার সরকার তাই রোহিঙ্গারা বহিরাগত বলে তাদের নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দিতে চাইছে না। মায়ানমার সরকারের এই দাবী কিন্তু সমর্থনযোগ্য ও গ্রহণযোগ্য নয়। দাবীটি সম্পূর্ণ অবাস্তব ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। কারণ হলো,  
এক). যারা বাণিজ্য করার জন্যে এসেছিলো তাদের অনেকেই নিজের দেশে ফিরে না গিয়ে মায়ানমারেই থেকে গিয়েছিলো
দুই). মায়ানমারের অধিকাংশ মুসলমানই ভারত,পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মুসলমানদের মতো ধর্মান্তরিত মুসলমান সুতরাং তারা যে মায়ানমারেরই অধবাসী, এবং বহিরাগত নয় তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই।
বৌদ্ধদের একটা অংশ কেনো ইসলাম গ্রহণ করেছিলো সেটা একটু দেখা যাক। কারণ আজকে রোহিঙ্গাদের যে সংকট তার সঙ্গে তার কিছুটা হলেও যোগসূত্র রয়েছে।      
১৪৩০ খৃষ্টাব্দে সুলায়মান শাহ ২৫০০০ হাজার সৈন্য নিয়ে অতর্কিতে আরাকানে হামলা চালিয়ে সেখানে ইসলামি রাষ্ট্র স্থাপন করেছিলো এবং সে রাষ্ট্রটি টিকেছিলো ১৪৭৮ সাল পর্যন্ত। সুলায়মান শাহ ছিলেন একদা একজন বৌদ্ধ রাজা যাঁর নাম ছিলো নরমখিলা। ১৪০৪ খৃস্টাব্দে মাত্র ২৪ বছরের আরাকানের যুবরাজ নরমখিলা পিতার সিংহাসনে আরোহণ করেন। এক সামন্তরাজার বোনকে অপহরণ করার জন্যে আরাকানের সমস্ত সামন্তরাজারা জোট বেঁধে তার উপর আক্রমণ চালালে তিনি আরাকান ছেড়ে পালিয়ে গিয়ে গৌড়ের সুলতানের কাছে আশ্রয় নেন। সেখানে তিনি ইসলাম গ্রহণ করে সুলায়মান শাহ নাম নেন এবং ২৪ বছর ধরে ইসলাম ধর্ম অনুশীলন ও  চর্চা করে একজন ঈমানদার মুসলমান হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলেনতারই পুরস্কার হিসেবে গৌড়ের সুলতান নাসিরুদ্দিন শাহ (মতান্তরে জালালুদ্দিন শাহ) তাঁকে তাঁর রাজ্য পুনরুদ্ধারের জন্যে একজন সেনাপতির নেতৃতে ২৫০০ হাজার সৈন্য দিয়ে সাহায্য করেন। বলা বাহুল্য যে, সুলায়মান শাহের শাসন কালে বৌদ্ধদের উপর ব্যাপক অকথ্য ও অমানবিক নিপীড়ন চালানো হয়েছিলোমুসলমানরা বৌদ্ধ  হিন্দুদের  ব্যাপকহারে  লুট হত্যা করেফলে প্রাণভয়ে বহু বৌদ্ধ ধর্মান্তরিত হয় এবং অনেকেই অন্য কোথাও পালিয়ে গিয়ে আশ্রয় নেয় সেই নিপীড়নের ইতিহাস বৌদ্ধরা নিশ্চয় ভোলে নি। বৌদ্ধদের উপর রোহিঙ্গাদের সেই নিপীড়নই বৌদ্ধদের একাংশের মধ্যে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে তীব্র ঘৃণা ও আক্রোশের জন্ম দিয়েছে। আরাকানে মুসলিম শাসন ফিরিয়ে আনার জন্যে রোহিঙ্গারা আজো মায়ানমার সরকার ও অসামরিক বৌদ্ধদের উপর সমানে সন্ত্রাসবাদী হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। যারা আরাকানের মূল জনগোষ্ঠী বৌদ্ধদের উপর ইসলামি শাসন, শিক্ষা ও সংস্কৃতি চাপিয়ে দিতে রোহিঙ্গারা জিহাদি সন্ত্রাস তথা যুদ্ধাভিযান সংগঠির করে থাকে মায়ানমার রাষ্ট্র ও বৌদ্ধদের উপর। রোহিঙ্গাদের উপর রাষ্ট্রীয় অত্যাচার থেকে বাঁচতে লাখে লাখে রোহিঙ্গারা যখন মায়ানমার ছেড়ে যে যেদিকে পারছে পালাচ্ছে তখনও জঙ্গী রোহিঙ্গারা তাদের জিহাদি কর্মকাণ্ডে অটল রয়েছে। অনলাইনে জঙ্গী নেতারা জিহাদের বার্তা দিয়ে রোহিঙ্গাদের মনোবল ধরে রাখার প্রয়াস জারি রেখেছে। একজন নেতার ভিডিও রেকর্ডিং – এর মাধ্যমে  রোহিঙ্গা মুজাহিদিনদের উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণ ভাইরাল হয়ে গিয়েছে। তিনি যে ভাষণ দিয়েছেন তার বাংলা অর্থ হলো –
যতোক্ষণ পর্যন্ত একজন কাফির এই দেশে (মায়ানমারে) আছে, ততোক্ষণ পর্যন্ত তাদের এই জিহাদ চলবে। সময় এখন এদের কতল করার  ইসলাম প্রতিষ্ঠা করার পরেই তাদের এই জিহাদ শেষ হবে মায়ানমারের এটাই হলো সত্যিকারের বাস্তব পরিস্থিতি
রূপ পরিস্থিতিতে এটা স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে রোহিঙ্গা-সংকট এর সমাধান শুধু মায়ানমার সরকারের হাতে নেই। রোহিঙ্গারা যতোদিন না জিহাদ ও জিহাদের আদর্শ পরিত্যাগ করে মায়ানমারকে নিজের দেশ মনে করবে, মায়ানমারের উদারতা, সহিষ্ণুতা, ক্ষমাশীলতা ও মহানুভবতার আদর্শ ও সংস্কৃতিকে সম্মান ও মান্য করতে শিখবে এবং সর্বোপরি দেশের সংবিধানকে স্বীকার ও মান্য করবে ততোদিন রোহিঙ্গা-সংকটের সমাধান আশা করা যায় না। মায়ানমারের সরকারের উপর হাজার রকমের চাপ প্রয়োগ করলেও হওয়া সম্ভব নয় বলেই মনে হয়।  
রোহিঙ্গা-সংকটের নেতিবাচক প্রভাব সারা বিশ্বেই পরিলক্ষিত হচ্ছে যা যথেষ্ট উদ্বেগের। রোহিঙ্গাদের উপর নিপীড়ন চালাচ্ছে মায়ানমার সরকার, কিন্তু মুসলিম মৌলবাদীরা ঘৃণা ও হিংসা ছড়াচ্ছে সমগ্র বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে যা খুবই উদ্বেগের বিষয়রোহিঙ্গাদের উপর রাষ্ট্রীয় নিপীড়নকে অস্ত্র করে মুসলিম সংগঠনগুলো নিজ নিজ জায়গায় অমুসলিমদের বিরুদ্ধে মুসলিমদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে। ভারতে ও পশ্চিমবঙ্গেও তারা এ কাজ করছে বেপরোয়াভাবে গতো ১২ই সেপ্টেম্বর কলকাতায় মুসলিম সংগঠনগুলো রোহিঙ্গাদের পক্ষে মিছিল করেছে যেখানে  তারা আওয়াজ তুলেছে - ‘নাড়া – এ - তকবির’, আর লক্ষাধিক কণ্ঠ আকাশ ফাটিয়ে মুসলমানরা জবাব দিয়েছে,  ‘আল্লাহু আকবার’। মিছিলে তো কিছু অমুসলিমও ছিলো, তাহলে এই জিহাদি ‘নাড়া’ কেনো? কেন এবং  কাদের বিরুদ্ধে এই ‘নাড়া’?         
ভারত থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও তাঁর সরকারেরএটা সব হিন্দুরাই সমর্থন করে বলে মনে হয় না। কিন্তু মুসলিম সংগঠনগুলির প্রচারের ধরণ এমনই যেনো রোহিঙ্গা ইস্যুতে গোটা হিন্দু সমাজ রয়েছে মোদির পেছনে। মুসলিম সংগঠগুলির দাবি  করছে, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের অবাধে ভারতে আশ্রয় দিতে হবে। এ দাবী কি সুবিবেচনা প্রসূত? কোটি কোটি মানুষ যে দেশে আজো বাস করে খোলা আকাশের নীচে, কোটি কোটি বেকার যে দেশে কাজের অভাবে ধুঁকতে ধুঁকতে এক সময় অসামাজিক কাজকর্মে জড়িয়ে পড়ে, যে দেশে প্রতিদিন কতোশত শিশু অচিকিৎসা ও অপুষ্টিতে মারা যায় তার ইয়ত্তা নেই, যে দেশ জনস্ফীতির ভারে ন্যুব্জ, সে দেশের পক্ষে ভিন দেশের লাখ লাখ শরণার্থীকে আশ্রয় দেয়া সম্ভব? একই কারণে বাংলাদেশও তো রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দিতে প্রচণ্ড অনিচ্ছুক। যারা ঢুকেছে তারা লুকিয়ে চুরিয়ে। অথচ বাস্তব সমস্যাকে অস্বীকার করে মুসলিম সংগঠনগুলি রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্যে ভারতের দরজা হাট করে খুলে দেবার অবাস্তব দাবী জানাচ্ছে মানবতার দোহাই দিয়েআসলে মানবতার মুখোশ পরে তারা সাম্প্রদায়িক তাস খেলার চেষ্টা করছে। কথায় আছে কারো সর্বনাশ তো কারো পৌষ মাস। রোহিঙ্গাদের সংকটকে তারা হাতিয়ার করে  সাম্প্রদায়িক বিষ ছড়াচ্ছে। সত্যিই কি রোহিঙ্গারা মুসলিম বলে তাদের দরদ উথলে উঠছে? রাহলে যখন ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অন্যায় যুদ্ধ করে ত্রিশ লাখ মুসলমানকে হত্যা করে, তিন লাখ মুসলিম নারীর সম্ভ্রম নষ্ট করে, এক কোটি মানুষ দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেয়, তখন তাদের মুসলিম-দরদ কোথায় গিয়েছিলো? বিশ্বজুড়ে সুন্নি মুসলমানরা প্রায় প্রতিদিনই তো শিয়া মুসলমান ও আহমদিয়া মুসলমানদের হত্যা করছে, তখন তাদের মুসলিম-দরদ  দেখতে পাওয়া যায় না কেনো?  
আর একটা কথা বলে শেষ করবো। প্রধানমন্ত্রীর রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বহিষ্কার করার সিদ্ধান্তের পেছনে অর্থনৈতিক কারণ ছাড়া আরও দুটি কারণ আছে বলে মনে হয়। তার একটি হলো, মুসলিম-বিদ্বেষ এবং আর একটি হলো রোহিঙ্গাদের ভয়।  প্রধানমন্ত্রীর মুসলিম-বিদ্বেষ নিঃসন্দেহে অতীব ঘৃণ্য ও নিন্দনীয় কিন্তু দ্বিতীয়টি কারণটিকে তো অমূলক বলা যাচ্ছে না। বাংলাদেশ সরকারও রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিতে একদমই চাই না। যারা ঢুকে পড়েছে তাদের নিয়ে তারা রীতিমতো ভয়ে ও আশংকায় রয়েছে। বাংলাদেশের যোগাযোগ মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের কথাতে তা স্পষ্ট। তিনি বলেছেন –
শরণার্থীর সাথে ষড়যন্ত্র, অবৈধ অস্ত্র, মাদক দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্র অনুপ্রবেশ করতে পারে।
একাত্তরের টিভি-র বার্তা পরিচালক সৈয়দ ইশতিয়াক রেযা এ কথাটাই আরো স্পষ্ট করে বলেছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন –
এসব রোহিঙ্গার একটি বড় অংশ সন্ত্রাসি, মাদক চোরাচালান ও অসামাজিক কাজে জড়িত। এবং বড় ভয়টা হলো কক্সবাজার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় থাকা বৌদ্ধদের বিরুদ্ধে এরা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। যেকোন উপায়ে সাম্প্রদায়িক  সম্প্রীতি নষ্ট করার পায়তারা করছে এরা। শুধুমাত্র বাংলাদেশেই নয়, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলিতে এরা নানা রকম অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে এরা জড়িয়ে পড়ছে। রোহিঙ্গারা মধ্যপ্রাচ্যে যাচ্ছে বাংলাদেশী পাসপোর্ট ব্যবহার করে। ফলে তাদের এসব অপকর্মের জন্যে আন্তর্জাতিক বিশ্বে ভাবমূর্তি খারাপ হচ্ছে বাংলাদেশ ও বাংলাদেশী শ্রমিকদের। দেশের একটি গোষ্ঠী, মূলত, ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িক রাজনীতি যারা করে, তারা রোহিঙ্গা সমস্যাকে রোহিঙ্গাদের সাথে বিবাদ হিসেবে দেখিয়ে উত্তেজনা তৈরি করতে চাচ্ছে। ফেসবুকে, অনলাইনে তারা ফটোশপ করে উত্তেজনা ছড়াতে ব্যস্ত।      (সূত্রঃ http://www.latestbdnews.com/only-opening-the-gate-is-not-solutions/)
ভারতের ক্ষেত্রেও রোহিঙ্গা স্মরণার্থীরা এখানকার জঙ্গী সংগঠনগুলোর সাথে জোট বাঁধবে না এ কথা হলপ করে কেউ বলতে পারে না। শুধু বাংলাদেশ বা ভারত নয়, আজ গোটা বিশ্বই মুসলমান শরণার্থীদের নিতে ভয়ে কম্পমানএকদিন যে দেশগুলি স্বতঃস্ফূর্তভাবে ইরাক ও সিরিয়ার লক্ষ লক্ষ মুসলিম রণার্থীদের আশ্রয় দিয়েছিল, আজ তারা সবাই ভয়ে প্রকম্পিত কেনো? শুধু মুসলিম-বিদ্বেষ বা ইসলাম-ফোবিয়া বলে চিৎকার করলে হবে না, কেনো মুসলিমদের সম্পর্কে অমুসলিমদের মধ্যে ভীতি তৈরী হয়েছে ও হচ্ছে এবং তা দ্রুতগতিতে বাড়ছে এবং এক দেশ থেকে আর এক দেশে ছড়িয়ে পড়ছে তা খতিয়ে দেখতে হবে মুসলিমদের নিজেদেরই
       
  


 


 

KARBALA: Truth and Lies

  KARBALA : Truth and Lies           GIASUDDIN                 Translated by SRIJIB BISWAS        ...