Sunday, July 30, 2017

খারিজি মাদ্রাসাগুলো যে জিহাদি বারুদের কারখানা,আর কবে বুঝবে আমাদের রাজ্য সরকার?

বাদুরিয়া-বসিরহাট দাঙ্গা প্রসঙ্গে লেখায় লিখেছিলাম, বসিরহাট এখনও ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরি, যে কোনো সময় আবার জেগে উঠতে পারে, বাদুরিয়া ও বসিরহাটে না হলেও অন্য কোনো স্থানে যে কোনো সময় যে কোনো মুহূর্তে, কারণ গোটা রাজ্যেই তৈরী হয়ে রয়েছে অসংখ্য আগ্নেয়গিরি।  কথাটা কে কীভাবে নিয়েছেন জানি না, বলেছিলাম কিন্তু সচেতনভাবেই। আশাংকাটা যে অমূলক নয় তার  প্রমাণ পাওয়া গেলো এন.আই.এ-এর সাম্প্রতিক  রিপোর্টে। (সূত্রঃ  http://www.bartamanpatrika.com/detailNews.php?cID=13&nID=65022) এন.আই.এ  জানিয়েছে যে বসিরহাট দাঙ্গায় কিছু খারিজি মাদ্রাসার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে, এবং খারিজি মাদ্রাসার বহু ছাত্র এই দাঙ্গায় সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলো। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী এই সংস্থা, আরো জানিয়েছে যে সীমান্ত অঞ্চল বসিরহাটে সরকারি অনুমোদনহীন বেশ কয়েকটি খারিজি মাদ্রাসা রয়েছে যেখানে বিভিন্ন জঙ্গিগোষ্ঠীর বিশেষ করে বাংলাদেশের জে.এম.বি-র (জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ – এর) নেতারা নিয়মিত আসে উস্কানিমূলক প্রচার থেকে কীভাবে বিভিন্ন জায়গায় সুকৌশলে গোলমাল পাকাতে হবে তার প্রশিক্ষণ তারা দেয়। এন.আই.এ আরো জানিয়েছে যে ২০১৪ সালে খাগড়াগড় বিষ্ফোরণকাণ্ডের পর  মাঝে বেশ কিছুদিন খারিজি মাদ্রাসাগুলি নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছিলো। তাছাড়া জে.এম.বি-র নেতৃত্ব নিয়ে সংকটের কারণে তাদের নেতাদের এ রাজ্যে আনোগোনা কিছুটা কমেওছিলো। নব্য জে.এম.বি চাঙা হওয়ার পর খারিজি মাদ্রাসাগুলি আবার সক্রিয় হয়েছে এবং আবার নতুন উদ্যমে জিহাদি নিয়োগ করার কাজও শুরু করেছে জঙ্গী সংগঠনগুলি প্রশিক্ষণ পদ্ধতিতে কিছু পরিবর্তন এনেছে, আগে ভিডিও ও বক্তৃতার মাধ্যমে বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরা হতো, এখন জোর  দেওয়া হচ্ছে উস্কানিমূলক বিভিন্ন প্রচারের ওপর। বিভিন্ন জায়গার গোলমালের ছবি দেখানো হয় যার সমস্ত ফুটেজেই জাল। এভাবে মাদ্রাসার অল্পবয়সী তালবিলিমদের তৈরী করা হচ্ছে যাতে সহজেই তাদের দাঙ্গা লাগানোর কাজে ব্যবহার করা যায়। এন.আই.এ এও জানিয়েছে যে, প্রশিক্ষিত তরুণ ছাত্রদের দু’টো ভাগে ভাগ করে দেওয়া হয় যাদের একদলের দায়িত্ব হলো বিভিন্ন জায়গায় স্থানীয় জনসাধারণের মধ্যে উস্কানিমূলক প্রচার চালিয়ে তাদের উত্তেজিত করা, এবং আর একদলের কাজ হলো অপারেশন চালানো।
সম্প্রতি বাদুরিয়া-বসিরহাট দাঙ্গা নিয়ে দেওয়া বিবৃতিতে মুখ্যমন্ত্রীও বলেছেন যে বসিরহাট দাঙ্গায় বাংলাদেশের জামাতি ইসলাম জড়িত ছিলো এবং তাদের লোকেরা  দাঙ্গাটা লাগিয়েছে অবশ্য এর জন্যে তিনি তাঁর সরকারের ব্যর্থতা স্বীকার করেন নি, সমস্ত দোষ  চাপিয়ে দিয়েছেন বিজেপি ও কেন্দ্রীয় সকারের কাঁধে। বলেছেন, বি.এস.এফ-ই সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশের জঙ্গিদের ঢুকিয়েছে এখানে দাঙ্গা করানোর জন্যে।  (সূত্রঃhttp://www.bbc.com/bengali/news-40649277) মুখ্যমন্ত্রী দাঙ্গার পেছনে বাংলাদেশের জামাতি ইসলামের হাত আছে মেনে নিলেও কিন্তু অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্যই অব্যক্ত রেখেছেন বা আড়াল করেছেন সেগুলির মধ্যে যেটা সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ সেটা হলো, এ রাজ্যের খারিজি মাদ্রাসার সঙ্গে বাংলাদেশের জঙ্গীদের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ থাকার কথা। প্রসঙ্গতঃ উল্লেখযোগ্য যে এ দেশে তিন রকমের মাদ্রাসা আছেযেমন হাই মাদ্রাসা, সিনিয়র মাদ্রাসা ও খারিজি মাদ্রাসা। প্রথম দু’ প্রকার মাদ্রাসা সরকারি অনুমোদন ও অনুদান প্রাপ্ত এবং তৃতীয় প্রকার মাদ্রাসা তথা খারিজি মাদ্রাসাগুলি সরকারি অনুমোদনহীন। হাই মাদ্রাসা ও সিনিয়র মাদ্রাসার সংখ্যা ৬১৪টি, কিন্তু খারিজি মাদ্রাসার সংখ্যা অসংখ্য, বিভিন্ন সূত্রে থাকা পাওয়া তথ্যানুসারে সংখ্যাটা হবে কমপক্ষে ৫/৬ হাজার। এই মাদ্রাসাগুলি চলে মুসলমানদের জাকাত ও দান এবং সৌদি আরবের টাকায়। সৌদি আরব শুধু অর্থই দেয় না, তার সাথে জিহাদও রপ্তানি করে। নানা কারণে খারিজি মাদ্রাসার সংখ্যা ক্রমে বেড়েই চলেছে। এই মাদ্রাসাগুলি কী পড়ায়, কী শেখায়, কী তাদের সিলেবাস, ছাত্র কারা ও কোত্থেকে আসে, শিক্ষক  হিসেবে কাদের নিয়োগ করা হয় এবং তারা সকলেই এ দেশের কী না  তার খবরাখবর কেউ রাখে বলে মনে হয় না। তবে খারিজি মাদ্রাসায় যে মূলতঃ ইসলামি শিক্ষা (কোরান, হাদিস ও ফিকাহ) শেখানো হয় তা বলা বাহুল্য। জিহাদ যেহেতু ইসলামের অঙ্গ, তাই খারিজি মাদ্রাসার সিলেবাসে জিহাদ যে থাকবে তা বলা বাহ্যল্য। এমনকি সরকারি অনুদান ও অনুমোদন প্রাপ্ত সিনিয়র মাদ্রাসার সিলেবাসেও জিহাদ পড়ানো হয়। জিহাদ পড়ানো এবং জিহাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া ও জিহাদি (মুজাহিদ) তৈরী করা রক জিনিষ নয়। সিনিয়র মাদ্রাসায় জিহাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় এমন অভিযোগ এ পর্যন্ত ওঠে নি, তবে কিছু খারিজি মাদ্রাসায় জিহাদের প্রশিক্ষণ যে দেওয়া হয় এবং জিহাদি তৈরী করা হয় এ অভিযোগ নতুন কিছু নয়।
জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি) একটি ভয়ংকর সন্ত্রাসবাদী জিহাদি সংগঠন। এই জেএমবি ২০০৫ সালে বাংলাদেশে ১৭ই আগষ্ট ৬৩টি জেলায় ৩৭৬টি জায়গায় সিরিজ বোমা-বিষ্ফোরণ ঘটিয়েছিলো। তাদের লক্ষ্য হলো বাংলাদেশে ইসলামি রাষ্ট্র স্থাপন করে ইসলামি আইনের বাস্তবায়ন করা। সিরিজ বোমা-বিষ্ফোরণের প্রাক্কালে প্রচারপত্রে বলেছিলো, ‘‘কোনো মুসলিম ভূখণ্ডে আল্লাহর বিধান ছাড়া অন্য কোনও বিধান চলতে পারে না। .... দেশের জেলা থেকে রাজধানী পর্যন্ত ... আদালত গঠন করে যে বিচারকার্য পরিচালনা করা হচ্ছে তার মূল ভিত্তি হচ্ছে মনুষ্য রচিত সংবিধান। ... কথা ছিল একজন মানুষ হিসেবে মানুষের কাজ হবে আল্লাহর দাসত্ব করা এবং আল্লাহর বিধানের আনুগত্য স্বীকার করা। কিন্তু সে মানুষ নিজেই সংবিধান রচনা করে আল্লাহর বিধানের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে।” জেএমবি আরো বলেছিলো, “জামা আতুল মুজাহিদিন এর কর্মীরা আল্লাহর সৈনিক। আল্লাহর আইন বাস্তাবায়ন করার জন্য এরা অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছে। যেমন তুলে নিয়েছিলেন নবী রাসুল, সাহাবি এবং যুগে যুগে বীর মুজাহিদিনগণ।” এই জেএমবির জঙ্গীরাই ২০০৪ সালে রাজশাহী ও নওগাঁ এলাকায় পাঁচটি শরিয়া আদালতে বিচার করে ২২ জনকে কতল করেছিল” জেএমবির দুই শীর্ষ নেতা বাংলাভাই ওরফে সিদ্দিকুল ইসলাম এবং সায়খ রহমানের আদালতের রায়ে ফাঁসীতে মৃত্যু হয়খাগড়াগড় বিষ্ফোরণ কাণ্ডে ঘটনাস্থলেই শাকিল গাজী নামে যে জঙ্গি মারা যায় সে ছিলো জেএমবির সদস্য। খাগড়াগড় বিষ্ফোরণ কাণ্ডের প্রধান হোতা সাজিদ ওরফে মাসুদ যে অবশেষে এনআইএ-এর জালে ধরা পড়েছিলো সে ছিলো জেএমবি-র শীর্ষ নেতা যার স্থান ছিলো বাংলাভাই ও শায়খ রহমানের পরেই।    
এ হেন কুখ্যাত জঙ্গি সংগঠন জেএমবি (এখন নব্য জেএমবি) এ রাজ্যে বিভিন্ন স্থানে খারিজি মাদ্রাসায় তাদের ঘাঁটি গেড়েছে এবং জিহাদি পাঠ ও প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। খাগড়াগড় কাণ্ডে এটা প্রমাণিত হয়ে গিয়েছে যে, শুধু সীমান্তবর্তী জেলাগুলিতেই নয়, গোটা রাজ্যেই তাদের নেট ওয়ার্ক কাজ করছে। ফলে  এমন আশঙ্কা করার যথেষ্ট কারণ আছে যে, শুধু সীমান্তবর্তী এলাকা নয়, গোটা রাজ্যই  দাঁড়িয়ে আছে বারুদের স্তুপের ওপর। আর বসিরহাটই শুধু ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরি ভাবলে ভুল হবে, গোটা রাজ্য জুড়েই  এরূপ অনেক আগ্নেয়গিরিই ঘুমিয়ে রয়েছে।      
খারিজি মাদ্রাসাগুলিই যেহেতু এ রাজ্যে জেএমবি ও অন্যান্য ইসলামি জঙ্গিগোষ্ঠীর ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে, তাই এই মাদ্রাসাগুলোর কাজকর্ম সম্পর্কে সরকার উদাসীন থাকতে পারে না। উদাসীন ও নীরব থাকা উচিত নয় জনগণেরও। কারণ এই মাদ্রাসাগুলি ক্রমশঃই আমাদের শান্ত-সম্প্রীতির পক্ষে হুমকি হয়ে উঠছে। কতিপয় মাদ্রাসা তো গোটা দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার কাছেও একটি বড়ো হুমকি হয়ে উঠেছে। দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার কাছে মাদ্রাসাগুলি যে একটা বড়ো হুমকি হয়ে উঠেছে তার প্রমাণ খাগড়াকাণ্ড ও বাদুরিয়া-বসিরহাট দাঙ্গা। খাগড়াগড়ে আগ্নেয়াস্ত্র তৈরী করার যে সব মাল-মশলা পাওয়া গিয়েছিলো সেগুলি বিশেষজ্ঞরা বলেছিলেন যে কেবল যুদ্ধেক্ষেত্রেই ব্যবহার করা হয়। যেখানে বিষ্ফোরণ ঘটেছিলো সেখান থেকে ৫০টিরও বেশী আইইডি (ইমপ্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস) সহ প্রচুর পরিমাণে রাসায়নিক বিষ্ফোরক দ্রব্য পাওয়া গিয়েছিলো। বিশেষজ্ঞরা বলেছিলেন যে, এগুলো একসঙ্গে বিষ্ফোরিত হলে দশ হাজার মানুষ মারা যেতে পারে। সে সময়ে এন.আই.এ-এর রিপোর্টে বলা হয়েছিলো যে, পশ্চিমবঙ্গে বহু জায়গায়তেই আইইডি তৈরী করার কারখানা ও আরো ভয়াবহ বিষ্ফোরক দ্রব্য তৈরী করার জন্যে গবেষণা কেন্দ্রও তৈরী করা হয়েছিলো বাংলাদেশের হাসিনা সরকারকে উচ্ছেদ করার জন্যে। এই ভয়ংকর খাগড়াগড় বিষ্ফোরণকাণ্ডের নেপথ্যে প্রধান হোতা ছিলো জেএমবি এবং তারা খারিজি মাদ্রাসা থেকেই তাদের এই সমস্ত জিহাদি কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতো। পশ্চিমবঙ্গের এই সব ঘাঁটি থেকে তারা গোটা ভারতবর্ষের বিভভিন্ন প্রান্তে তাদের নেট ওয়ার্ক ছড়িয়ে দিতো। খাগড়াগড় বিষ্ফোরণকাণ্ড থেকে পাওয়া এই গুটি কয়েক তথ্যের উল্লেখ করলাম এটা বোঝানোর জন্যে যে, খারিজি মাদ্রাসাগুলোর উপর যদি সরকারি নজর ও নিয়ন্ত্রণ না থাকে তবে এই মাদ্রাসাগুলিই সমগ্র দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ভয়ঙ্কর হুমকি হয়ে উঠতে পারে।
এটা বোঝানোর চেষ্টা আমি অনেক দিন থেকেই করে আসছি। একমাত্র বোধ হয় আমিই করছি। কিন্তু যাদের সবার আগে এটা বোঝার কথা এবং জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোকে কঠোর হাতে দমন করে দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও জনগণের স্বার্থকে সুরক্ষিত রাখার কথা তারা কেউই বোঝার চেষ্টা করছে বলে মনে হয় না। সব সরকারই দেশ ও জনগণের বৃহত্তর স্বার্থকে বলি চড়াচ্ছে দলীয় স্বার্থের যূপিকাষ্ঠে। পাছে মুসলমান জনগণ অসন্তুষ্ট হয় তাই খারিজি মাদ্রাসাগুলির প্রতি নজর রাখছে না এবং যে সব মাদ্রাসার বিরুদ্ধে জঙ্গীগোষ্ঠী ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের মারাত্মক অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপই করছে না। বামফ্রন্ট সরকারের মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য একবার এই সব মাদ্রাসাগুলির বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করবার হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন। ২০০২ সালে ২৪শে জানুয়ারী বলেছিলেন, ‘কিছু মাদ্রাসায় জাতীয়তাবিরোধী প্রচার হছে এবং তার নির্দিষ্ট খবর আমাদের কাছে আছে। সেটা আমরা কখনই করতে দিতে পারি না।’ তার চার দিন পর মুর্শিদাবাদের ডোমকলে বলেন, ‘অনুমোদন না থাকা সকল মাদ্রাসাকে মূল স্রোতের সঙ্গে মিশতে হবে। তাদের মাদ্রাসা বোর্ডের অনুমোদন নিতে হবে।’ কিন্তু ঐ হুঁশিয়ারি পর্যন্তই, তিনি আর এগোন নি। বুদ্ধদেব বাবু ঐ ঘোষণা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মোল্লা-মুফতি ও মুসলিম বুদ্ধিজীবিগণ পাল্টা সরকারের বিরুদ্ধে গলা চড়িয়ে বলতে শুরু করে যে, মাদ্রাসা ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে এসব বামফ্রন্ট সরকারের ষড়যন্ত্র। বুদ্ধদেব বাবুর সরকার তখন লেজ গুটিয়ে পশ্চাদপসারণ করেন এবং মহাকরণে মোল্লা-মুফতিদের ডেকে খারিজি মাদ্রাসার কাজে নাক গলাবেন না বলে মুচলেকা লিখে দেন। আমি এর তীব্র প্রতিবাদ করে সেদিন লিখেছিলাম, ‘তাই তো পশ্চিমবঙ্গ ক্রমশঃ ইসলামি জঙ্গিদের নিরাপদ বিচরণভূমি হয়ে উঠতে পেরেছে। ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে জঙ্গিদের নেটওয়ার্ক বিস্তার ও স্থাপনে কলকাতা আজ প্রশস্ত ও নিরাপদ করিডর হয়ে উঠেছে। (সূত্রঃ মুসলিম সমাজ বনাম ফতোয়া সন্ত্রাস, গিয়াসুদ্দিন, পৃ-১৩১)
মুসলিম ভোটের স্বার্থে মোল্লা-তোষণে মমতা ব্যানার্জী বুদ্ধবাবুদের চেয়ে বহু কদম এগিয়ে তা বলা বাহুল্য। ফল হয়েছে এই যেযে পশ্চিমবঙ্গকে বিদেশী জঙ্গীগোষ্ঠীগুলি বামফ্রন্ট শাসনে  সেফ করিডর মনে করতো সেটা এখন তাদের ঘাঁটিতে রূপান্তরিত হয়েছে। ঘঁটিতে রূপান্তরিত যে হয়েছে তার প্রমাণ  খাগড়াগড় বিষ্ফোরণকাণ্ড। তারপরেও কিন্তু তৃণমূল সরকার সতর্ক হয় নি। এন.আই.এ যখন ঐ বিষ্ফোরণকাণ্ডের সঙ্গে জেএমবি ও কতিপয় খারিজি মাদ্রাসার সম্পৃক্ত থাকার প্রমাণ মিলেছে বলে জানিয়েছে তখন সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী, ত্বহা সিদ্দিকি প্রমুখ ধর্মীয় নেতারা ‘সব মিথ্যা ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র’ বলে চীৎকার করে এন.আই.এ ও কেন্দ্রীয় সরকারের ওপর পাল্টা চাপ সৃষ্টি করার চেষ্টা করেছে। মমতা ব্যানার্জীর সরকার তখন ঐ ধর্মীয় নেতাদের তুষ্ট করতে দেশ ও জনগণের স্বার্থকে বলি দিয়ে  বিষ্ফোরণকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত জঙ্গি ও মাদ্রাসাগুলিকে আড়াল করার চেষ্টা করেছেন। এর ফল যে কতো মারাত্মক হয়েছে তা আমরা দেখলাম বাদুরিয়া-বসিরিহাট দাঙ্গায়। খারিজি মাদ্রাসাগুলিতে বসে এবার বিদেশী জঙ্গিগোষ্ঠীগুলি হিন্দু-মুসলমানের দাঙ্গা বাঁধানোর ষড়যন্ত্র ও পরিকল্পনা করা শুরু করেছে। কিন্তু এন.আই.এ-এর এমন মারাত্মক রিপোর্টেও তৃণমূল সরকার বিচলিত বোধ করছে বলে মনে হয় না। মুখ্যমন্ত্রী মোল্লা-তোষণ নীতি থেকে একচুলও নড়েন নি। তিনি মাওলানা ও পীরজাদাদের তুষ্ট করার জন্যে বাদুরিয়া-বসিরহাট দাঙ্গাকাণ্ডেও অভিযুক্ত মাদ্রাসা ও জঙ্গি মুসলমানদের আড়াল করলেন এবং সব দোষ চাপালেন বিজেপি ও কেন্দ্রীয় সরকারের ঘাড়ে। 
এর ফলে মোল্লা-মুফতি ও পীরজাদা এবং তাদের শিষ্যদের হাতই শুধু শক্ত হবে না, হাত আরো শক্ত হবে বিজেপি ও সঙ্ঘপরিবারেরও। কারণ, মমতা ব্যানার্জী মাদ্রাসা ও মুসলিম জঙ্গিদের যতো আড়াল   করবেন হিন্দুরা নিজেদের রক্ষা করতে ততো বেশী বিজেপির পতাকার নীচে আশ্রয় নিবে। আর এর পরিণতিতে পশ্চিমবঙ্গ অচিরেই হিন্দু মৌলবাদী ও মুসলিম মৌলবাদীদের দাঙ্গা করার আখড়ায় পরিণত হবে।      

       

  

    

Wednesday, July 12, 2017

বাদুরিয়া দাঙ্গাঃ রাজ্য সরকারের নির্লজ্জ ও নগ্ন মোল্লাতোষণ নীতির বিষময় ফল

এক সপ্তাহের মাথায় পরিস্থিতি আজো থমথমে। সংবাদপ্ত্র বলছে - পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলেও বসিরহাট এখনও ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরি(বর্তমান, ৮ই জুলাই)  লেখাটা যখন আপনারা পড়বেন তখন আশা করা যায় যে পরিস্থিতির আরো উন্নতি হবেকিন্তু আগ্নেয়গিরিটা যে পরে জেগে ওঠে লাভাস্রোত বইয়ে দেবে না এমন কথা হলফ করে বলা যায় না। বাদুরিয়া-বসিরহাটে যদি নাও জেগে ওঠে, অন্য কোনো আগ্নেয়গিরি অন্য কোথাও জেগে উঠতে পারে যে কোনো মুহূর্তেকারণ, গোটা রাজ্যেই এ রকম অসংখ্য আগ্নেয়গিরি ঘুমিয়ে রয়েছে। এ আগ্নেয়গিরি প্রাকৃতিক নয় সামাজিক, তাই নিরাময়যোগ্য। কিন্তু নিরাময় করার চেষ্টা নেই, উল্টে আড়াল করার চেষ্টা চলছে প্রাণপণ। ফলে একদিকে ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরিগুলো আরো শক্তি সঞ্চয় করার সুযোগ পাচ্ছে, অন্যদিকে নতুন নতুন এলাকায় নতুন নতুন আগ্নেয়গিরির জন্ম হচ্ছে। গোটা রাজ্য আগ্নেয়গিরিময় হয়ে উঠছে।
কে জানতো যে বাদুরিয়া ছিল একটা ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরি, একটি আপত্তিকর হিন্দুত্ববাদী ফেসবুক পোস্টে জেগে ওঠে গল গল করে বের করতে শুরু করবে ধর্মের বিষাক্ত লাভাস্রোত?  ফেসবুকে  ফটোশপ করা কাবার একটা ছবিটা বের হতেই তা দ্রুত ভাইরাল হয়ে ছড়িয়ে পড়ে। ৩রা জুলাই ভোরবেলা কেওশা বাজারে অবরোধ শুরু হয়, তারপর বেলা বাড়ার সঙ্গে বাঁশতলা, রামচন্দ্রপুর, তেঁতুলিয়া, গোকুলপুর প্রভৃতি অঞ্চলসহ বাদুরিয়া থানার প্রায় ৩০ কিমি জুড়ে প্রধান রাস্তাগুলি উন্মত্ত  জিহাদি মুসলিম জনতা কব্জা করে নেয়। বোমা-বন্দুক ও অন্যান্য ধারালো অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে পুলিশের নাকের ডগায় দাপিয়ে বেড়াতে থাকে।  টায়ার জ্বালিয়ে সমস্ত রাস্তা অবরোধ করে ফেলে, ফলে ট্রেন-বাস এবং অন্যান্য সমস্ত পরিবহণ চলাচল স্তব্ধ হয়ে যায়। রাস্তা অবরোধেই ক্ষান্ত থাকেনি ওরা,  হিন্দুদের দোকান ও বাড়িঘরে আগুন লাগিয়ে দেয় ও ভাংচুর করে বাঁশতলায়  একটি শবদেহ সৎকার করতে নিয়ে যাচ্ছিল একটি হিন্দু পরিবার মুসলিম-রোষের কবল থেকে রক্ষা পায় নি শব বহনকারী গাড়িটিও, ভাংচুর করে ফিরিয়ে দেয় পৈশাচিক মত্ততায় শায়েস্তানগরের শফিরাবাদে একটি স্কুল থেকে বলা হয়েছিলো যে দুপুরের খাবার খাওয়া শেষ হলেই স্কুল বন্ধ করে দেবে। কিন্তু সে টুকুও তর সয় নি, স্কুলটি ভাংচুর করে স্কুলের অনেক সম্পত্তি নষ্ট করে।  হিংস্র মুসলিম জনতার হাত থেকে হিন্দুদের রক্ষা করতে কিন্তু পুলিশের কার্যকরী কোনো ভূমিকাই চোখে পড়েনি।
এদিকে পুলিশ একাদশ শ্রেণীর যে ছেলেটি ( সৌভিক সরকার) ফেসবুকে আপত্তিকর ছবিটি পোস্ট বা শেয়ার করেছিলো তাকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে যায়। তার ফলে উন্মত্ত মুসলমানদের ক্ষোভ একটুও প্রশমিত হয় নি, উল্টে তারা ধেয়ে যায় বাদুরিয়া থানায় এবং   অভিযুক্তকে তাদের হাতে তুলে  দেওয়ার দাবি জানাতে থাকে পুলিশ সে দাবি না মানায় তারা থানা ও পুলিশের ওপর হামলা করে, বাদুড়িয়া থানার সামনেই পুলিশের তিন তিনটি গাড়ি জ্বালিয়ে দেয়  তথাপি উন্মত্ত জনতাকে প্রতিহত করার কোনো চেষ্টাই পুলিশ করেনি, সদর গেটে তালা ঝুলিয়ে থানার ভেতর থেকে সেই দৃশ্য দেখেছেন পুলিশকর্মীরা। (সূত্রঃ আনন্দবাজার, ৬ই জুলাই) রাস্তায় থাকা পুলিশরা কিন্তু মারের হাত থেকে রক্ষা পায়নি।  কাগজটি লিখেছে, গত তিন দিনে বসিরহাট, বাদুড়িয়ায় গোটা দশেক পুলিশের গাড়ি জ্বালিয়েছে দুষ্কৃতীরা। ভেঙেছে আরও বেশি। হাতে লাঠি আর মাথায় হেলমেট নিয়ে গোলমাল ঠেকাতে গিয়ে মার খেয়েছেন নিচুতলার পুলিশকর্মীরা। হিংস্র মুসলিম জনতার হাত থেকে রেহাই পায় নি পুলিশ সুপার এবং বসিরহাটের এসডিপিও  কেউই। 
বাদুরিয়ায় মুসলিমরা যে হিন্দুদের দোকান-বাড়িঘরে আগুন জ্বালে সে আগুনে হাত সেঁকে নিয়ে  হিন্দুরাও পাল্টা শুরু করে বসিরহাট ও স্বরূপনগরের বিভিন্ন স্থানে তাদের হাতে আক্রান্ত ও ক্ষতিগ্রস্থ হয় বহু নির্দোষ ও নিরীহ মুসলমানরা। বাদুরিয়ায় যা ছিলো একতরফা, সেটা বসিরহাট ও স্বরূপনগরে দাঙ্গার চেহারা নেয় স্বাধীনোত্তর কালে পশ্চিমবঙ্গে হিন্দুরা মুসলমানদের হাতে আক্রান্ত হলে পাল্টা আক্রমণ কখন করেছে আমার জানা নেই। এবার বাদুরিয়া দাঙ্গায় সেটা দেখা গেলো। তবে এর পেছনে আরএসএস ও বিজেপির উস্কানি ও মদত এবং সক্রিয় অংশগ্রহণ যে রয়েছে তা বলা বাহুল্যকট্টরপন্থী হিন্দু মৌলবাদী সংগঠন ‘হিন্দু সংহতি মঞ্চ’ তো মুসলমানদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যেই হিন্দুদের উস্কানি দিয়েছে ও দিচ্ছে। আমি যখন এই লেখা লিখছি (৯ই জুলাই) তখন শুনতে পাচ্ছি তেলেঙ্গানার একজন বিজেপি বিধায়ক পশ্চিবঙ্গের হিন্দুদের বার্তা পাঠিয়েছেন যা তীব্র উস্কানিমূলক। পশ্চিমবঙ্গকে ২০০২ এর গুজরাট বানানোর আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। বলেছেন তা না করতে পারলে পশ্চিমবাংলার হিন্দুদের বাংলাদেশের হিন্দু ও কাশ্মীরের ব্রাহ্মণদের দশা হবে।  
এই দাঙ্গার মধ্যেও সম্প্রীতি ও মানবতার কিছু মানবিক ছবি ও দৃশ্য  চোখে পড়লো যা কিছুটা হলেও আমাদের ভরসা জোগায়। যে শৌভিকের পোস্টে দাঙ্গার সূত্রপাত তাকে জিহাদি মুসলিমদের হাত থেকে বাঁচিয়েছেন সেখানকার মুসলমানরাই। মুসলমানরা একের পর এক হিন্দুদের বাড়িতে যখন আগুন লাগিয়েছে, তখন দমকলে খবর দিয়ে কিছু মুসলিম যুবকই আগুন নেভানোর প্রাণপণ প্রচেষ্টা করেছে। আবার দাঙ্গাক্রান্ত ঘর ছাড়া অনেক হিন্দু পরিবারকে হিন্দু-মুসলিমরা জোট-বেঁধে আশ্রয় দিয়েছে, খাবারও দিচ্ছে। এই দৃশ্যগুলি প্রমাণ করে - মুসলমানরা সবাই হিন্দুবিদ্বেষী ও সন্ত্রাসী নয় যা  হিন্দুত্ববাদীরা হিন্দুদের মাঝে নিরন্তর প্রচার করে ও উস্কানি দেয়।   
বাদুরিয়া দাঙ্গায় অন্তত চারটি নতুন বিশেষ বৈশিষ্ট আমার চোখে ধরা পড়েছে। সেগুলি হলো – (এক). ইসলামের পক্ষে আপত্তিকর পোস্টের প্রতিবাদে বাংলাদেশের মতোই মুসলিম মৌলবাদীরা নির্দোষ  হিন্দুদের ওপর বীভৎস সন্ত্রাস ও অত্যাচার সংগঠিত করলো। এবং সন্ত্রাসের সময় বাংলাদেশের সরকার যেমন আক্রান্ত হিন্দুদের নিরাপত্তা দেয় না, পশ্চিমবঙ্গের সরকারও তাই করলো।  (দুই).  এ রাজ্যে মুসলিম মৌলবাদীদের হাতে আক্রান্ত হলে হিন্দুরা সাধারণতঃ ভয়ে পিছু হটে এবং পুলিশের  কাছে নিরাপত্তা চায়। এবার কিন্তু বিপরীত ছবি দেখা গেলো।  হিন্দুরাও নির্দোষ মুসলমানদের উপর পাল্টা আক্রমণ ও সন্ত্রাস করলো (তিন). মুসলিম মৌলবাদীদের হাতে হিন্দুরা আক্রান্ত হলে এ রাজ্যের খবরের মাধ্যমগুলি তা প্রচার করে না। মুসলিম  মৌলবাদীদের আড়াল ও তুষ্ট করাই ছিলো তাদের এতদিনের নীতিসেই নীতি তারা এবার বর্জন করলো অবশ্য খবর নির্বাচন ও প্রচার করার ক্ষেত্রে মুসলিম মৌলবাদীদের তুষ্ট করার নীতি থেকে এক চুল সরে আসেনি।  (চার). মুসলিম মৌলবাদীদের যে কোনো সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ডকে তুচ্ছ ঘটনা বলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী এতোদিন চেপে গেছেন। তিনি এবার এই প্রথম রাজ্যপালের তীক্ষ গুঁতায় সাংবাদিক সম্মেলনে প্রকাশ্যেই স্বীকার করলেন যে মুসলমানরাই দাঙ্গা শুরু করেছে। বলেছেন, ‘এই কমিউনিটিকে যারা কাল থেকে শুরু করেছে তাদের বলবো আপনাদের জন্যে আমাকে অনেক কথা শুনতে হয়েছে।’ তারপর অবশ্য স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে তিনি সমস্ত দোষ বিজেপির ওপর চাপিয়ে দিয়েছেন। বলেছেন, বিজেপিই পরিকল্পিতভাবে দাঙ্গা লাগিয়েছে।  
এ রাজ্যের প্রায় সকল মিডিয়া মুখ্যমন্ত্রীর সেই অভিযোগটিকেই সত্য বলে প্রতিষ্ঠিত করার জন্যে মরিয়া হয়ে প্রচার চালাচ্ছে। তারা প্রাণপণে প্রমাণ করার চেষ্টা করে যাচ্ছে যে কাবা নিয়ে ফটোশপ করা পোস্টটির জন্যেই দাঙ্গা লেগেছে, এবং দাঙ্গা বাধানোর জন্যে বিজেপি পরিকল্পনা করেই ছবিটি পোস্ট করিয়েছে। হ্যাঁ, পোস্টটির সঙ্গে হিন্দুত্ববাদীদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সম্পৃক্ততা থাকতেই পারে। কিন্তু তারজন্যেই দাঙ্গা লাগবে কেনো? কোনো একজন হিন্দু একটি আপত্তিকর ছবি পোস্ট করেছে বলে কি সমস্ত হিন্দুই দায়ী? কেনো তাদের ওপর সশস্ত্র হামলা হবে? কেনো তাদের বাড়িঘর, দোকানপাট লুট, ভাংচুর কিংবা আগুন লাগিয়ে ধ্বংস করা হবে? আমাদের দেশে তো মানুষের বাক-স্বাধীনতা ভীষণ সীমিত ও খণ্ডিত,  এবং এ দেশের আইনেই তো অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে শাস্তির দাবি জানানোর সুযোগ রয়েছেতাছাড়া পুলিশ তো তৎপরতার সঙ্গে ২৪ ঘণ্টা যেতে না যেতে অভিযুক্তকে গ্রেপ্তারও করেছে। তাহলে তারপরেও হিন্দুদের ওপর হামলা অব্যাহত থাকার কোনো কারণ ছিলো কি? তাছাড়া শুধু হিন্দুদের ওপরেই সশস্ত্র হামলা অব্যাহত থাকে নি, হামলা চালানো হয়েছে পুলিশের ওপরেও  অভিযুক্তকে পুলিশের হাত থেকে ছিনিয়ে নেওয়ার জন্যে। একটা সভ্য দেশে অভিযুক্তকে আমাদের হাতে তুলে দিতে হবে, আমরা বিচার করবো, পুলিশের কাছে এমন দাবি করা যায়?  নাকি, উচ্ছৃঙ্খল ও সশস্ত্র উন্মত্ত জনতা এমন দাবি করলে পুলিশের হাত গুটিয়ে বসে থাকা উচিৎ? মাওলানা-মুফতিরা মুসলমানদের নিয়ে সংবিধান মেনে গণতান্ত্রিক পথে যদি আপত্তিকর পোস্টটির প্রতিবাদ করতো এবং সরকার ও প্রশাসনের কাছে অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে শাস্তি দেবার দাবি জানাতো তাহলে কি বিজেপির দাঙ্গা বাধানোর পরিকল্পনা (যদি সত্যিই সে পরিকল্পনা ওদের থাকতো) সফল হতে পারতো?
একটি আপত্তিকর ছবি ফেসবুকে পোস্ট করার ঘটনাকে উপেক্ষা করলে কি কাবার মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হতো? না কি মোল্লা-মুফতিদের উস্কানিতে ধর্মান্ধ মুসলমানরা নিরপরাধ হিন্দুদের ওপর হামলা না করলে দাঙ্গা বাধতো? এই প্রশ্নগুলো কেউ তেমন করে তুলছেন না। না তুলছে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি, না তুলছে এ রাজ্যের কোনো মিডিয়া, না তুলছেন বিদ্বজনেরা
পরিশেষে যে প্রশ্নটি তুলতে চাই – বাদুরিয়া দাঙ্গার জন্যে শুধু দাঙ্গাবাজ হিন্দু ও মুসলিম মৌলবাদীরাই কি দায়ী? সরকারের কোনো দায় নেই? মুসলিম মৌলবাদীরা শ’য়ে শ’য়ে হিন্দুদের ওপর হামলা, তাদের  বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়া ও পুলিশের ওপর সশস্ত্র হামলা করার সাহস পায় কী করে?  না, হঠাৎ করে এতো সাহসী তারা হয়ে ওঠেনি।  সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর মোল্লাতোষণ নীতির জন্যেই তারা এতো বেপরোয়া হয়ে ওঠেছে। তারা জানে যে পশ্চিমবঙ্গ তাদের স্বর্গরাজ্য ও মৃগয়াক্ষেত্র, এখানে হিন্দুদের মারলে-কাটলে, পুলিশকে লাঠি-বোমা মারলে কিছু হবে না, কারণ সরকার তাদের পেছনে আছে। এ রাজ্যে তারা দেগঙ্গা, সমুদ্রগড়, ধূলাগড়, ক্যানিং, কালিয়াচক ঘটিয়েছে, কিচ্ছু হয় নি। তারা মুসলিম সমাজের প্রগতিশীল মানুষদের উপর হামলা করেছে, কিচ্ছু হয়নি। ইমামরা তসলিমা নাসরিনের মুণ্ডু কাটার এবং  প্রধানমন্ত্রীর দাড়ি কাটার ফতোয়া দিয়েছে, কিচ্ছু হয়  নি। তাদের কথায় সরকার  আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন লেখক সেই তসলিমা বিতাড়িত হন এবং সলমান রুশদিও এ  রাজ্যে ঢুকতে পারেন না। তাদের ফতোয়ায় এ রাজ্যে এমনকি মেয়েদের ফুটবল প্রদর্শনীও বন্ধ হয়ে যায় শরিয়তের পরিপন্থী বলে। তো তারা আইন মানবে কেনো? বিজেপি সাম্প্রদায়িক দল, তারা মুসলমানদের বিরুদ্ধে হিন্দুদের উস্কানি দেবে তাও জানি তাদের ধর্মীয় মেরুকরণের বিষাক্ত রাজনীতির  তীব্র নিন্দা জানিয়েই বলতে চাই যে, সরকার ও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি যদি মোল্লাতোষণের  জঘন্য নীতি বর্জন না করে তবে পশ্চিমবঙ্গ  দাঙ্গার প্রবণতা আরো বৃদ্ধি পাবে।             



     

                  

KARBALA: Truth and Lies

  KARBALA : Truth and Lies           GIASUDDIN                 Translated by SRIJIB BISWAS        ...