Saturday, July 23, 2016

স্বাধীন মত প্রকাশের কণ্ঠরোধে আমার উপর মৃত্যুদণ্ডের ফতোয়া



এটা ‘রমযান’ মাস। মুসলমানদের কাছে সবচেয়ে পবিত্র মাস। তাদের বিশ্বাস এ মাসে ‘কোরান’ অবতীর্ণ হয়েছিলো মুহাম্মদের ওপর। শুধু কোরান নয়, অন্য আসমানি গ্রন্থও (আল্লাহর কেতাব) অন্যান্য নবিদের উপর এ মাসেই অবতীর্ণ হয়েছিল। মুসা নবির ওপর ‘তাওরাত’, দাউদ নবির ওপর ‘যবুর’ আর ঈশা নবির ওপর অবতীর্ণ হয়েছিল ‘ইনজিল’প্রত্যেক কেতাবেই নাকি রোযা রাখার নির্দেশ রয়েছে। ‘রোযা’ ফারসি  শব্দ। ‘তাওরাত’ গ্রন্থে রোযাকে বলা হয়েছে ‘হাত্ব’। ‘হাত্ব’ শব্দের অর্থ পাপ ধ্বংস করা। ‘যবুর’-এ রোযাকে অভিহিত করা হয়েছে ‘একারবত’ শব্দে যার অর্থ হলো নৈকট্য লাভ করা। ‘ইনজিল’ নামক ধর্মগ্রন্থে রোযার উল্লেখ আছে ‘ত্বাব’ শব্দে। ‘ত্বাব’-এর অর্থ পবিত্র হওয়া বা কলুষমুক্ত হওয়া। সর্বশেষ আল্লাহর কেতাব ‘কোরানে’ রোযাকে বলা হয়েছে সিয়াম। আরবি ‘সাওম’ শব্দ থেকে এসেছে সিয়াম। সাওমের অর্থ বিরত থাকা । আর রমযান এসেছে ‘রময’ শব্দ থেকে। ‘রময’ মানে দগ্ধ করা, পুড়িয়ে দেওয়া। কাম, ক্রোধ, লোভ-লালসা, হিংসা-দ্বেষ এসব পুড়িয়ে আত্মশুদ্ধ করাই হল সিয়াম সাধনা। রমযান মাসের কোন এক রাত্রি নাকি হাজার রাত্রির চেয়ে উত্তম। এ মাসের প্রথম ভাগে আল্লাহ রহমত দান করে, দ্বিতীয় ভাগে গুনাহ (পাপ) মাফ করে এবং শেষে ও তৃতীয় ভাগে মুসলমানদের দোযখের (নরক) আগুন মুক্ত করে। এমনই বিশাল গুরুত্ব রমযান মাসের।
আমি এসব বিশ্বাস করি না। তবু রমযান ও রোযা সম্পর্কে এত কথা উল্লেখ করলাম এজন্য যে, যে মাস সকল পাপ কার্য থেকে বিরত থাকার মাস, সে মাসেই আমার এখানে মৌলানা সম্প্রদায় একজন ‘মুরতাদ’কে হত্যা করার ফতোয়া দিয়েছে। সে মুরতাদ অন্য কেউ নয়, সে হল এই অধম,  গিয়াসুদ্দিন। তা কী আমার অপরাধ? আমার প্রথম অপরাধ, আমি নাস্তিক, ধর্মে-টর্মে আমার বিশ্বাস নেই, কোনরূপ ধর্মাচারণ আমি করি না। ধর্মকে কার্লমার্ক্স বলেছেন আফিঙ, বাংলাদেশের কবি রুদ্র মহম্মদ বলেছেন ‘হেমলক বিষ’, আমি মনে করি ধর্ম তার থেকেও ভয়ঙ্কর কিছু। ধর্মের কারণে পৃথিবীতে  যত যুদ্ধ ও প্রাণহানি হয়েছে অন্য কারণে বোধ হয় তত হয়নি। গরীব মানুষের, বিশেষ করে নারীজাতির সবচেয়ে বেশী ক্ষতি করেছে ধর্ম। আমি ধর্মে বিশ্বাস করি না ঠিকই, কিন্তু ধর্মপ্রাণ মানুষের প্রতি কারও চেয়ে ভালবাসা আমার কম নেই। আমি সব ধর্মের মানুষকে ভালবাসি। তবে বলতে দ্বিধা নেই যে একটু অধিক ভালবাসি মুসলমানদেরই। কারণ তারা সবচেয়ে দরিদ্র ও পশ্চাদপদ। আরও একটা কারণ হল, জন্মেছি মুসলমান পরিবারে, মুসলিম সমাজের মানুষের আদর-স্নেহ-ভালবাসা নিয়ে বড় হয়েছি। মানুষকে ভালবাসলে কী হবে,  আমি যে নাস্তিক,  তাই  বহুদিন থেকেই আমি মোল্লা সমাজের চোখের  বালি। আমার সম্পর্কে তাদের অন্তরে ক্রোধ ও জ্বালা  বহুদিন থেকেই।  
তিন দশকেরও বেশী রাজনীতি করেছি। বুকে ছিল সমাজবিপ্লবের স্বপ্ন। বুকভরা সে স্বপ্ন ভেঙ্গে গেলে বুকভরা যন্ত্রণা নিয়ে রাজনীতিকে (দলীয় রাজনীতিকে) বিদায় জানিয়েছি। মাইক্রোফোন ছেড়ে হাতে কলম তুলেছি। লেখনি শক্তি সামান্যই, নেই বলাই ভাল, তবু লিখি ধর্মান্ধতা, ধর্মীয় গোঁড়ামি আর সকল ধর্মীয় কুসংস্কারের বিরুদ্ধে। মুসলমানদের ভালবাসি বলেই লিখি। মোল্লা সমাজের খপ্পরে পড়ে মুসলিম সমাজ একশ’ বছর আধুনিক শিক্ষা থেকে মুখ ফিরিয়ে ছিল। এর ফলে মুসলিম সমাজে যে ক্ষতি হয়েছে তা কোনওভাবেই পূরণ হবে না। এখন জাকাত-ফেতরা-কোরবানির চামড়ার কোটি কোটি টাকা খারিজি মাদ্রাসায় খরচ করা হয়। প্রশ্ন তুলেছি কেন সেই টাকার একটা অংশ মুসলিম গরীব ছাত্রছাত্রীদের আধুনিক শিক্ষার জন্য ব্যয় করা হবে না। মুসলিম সমাজে নারিজাতির কোন মর্যাদা ও অধিকার নেই। তাদের স্বাধীনতার জন্য, তাদের অধিকারের পক্ষে লিখি। প্রশ্ন তুলেছি কেন মুসলিম পুরুষেরা চারটি স্ত্রী রাখার অধিকার, অকারণে স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার অধিকার ভোগ করবে? কেন স্বামী নির্যাতন-নিপীড়ন চালালেও স্ত্রী তালাক দিতে পারবে না? নারীকে পুরুষের সমান অধিকার কেন দেওয়া হবে না? কেন নারী বোরখা না পরলে খারাপ মেয়ে বলে অপমান করা হবে? পৃথিবীর প্রায় সকল মুসলিম রাষ্ট্রে বিবাহ ও তালাকের শরিয়ত আইন বাতিল করে আধুনিক আইন চালু করা হয়েছে। কেন ভারতে মুসলিম ব্যক্তিগত আইন চালু থাকবে?  মুসলিম নারী কেন হিন্দু নারী বা অন্য ধর্ম সম্প্রদায়ের নারীর সমান অধিকার পাবে না? পান থেকে চুন খসার মত তুচ্ছ ঘটনাতেও কেন মুসলিম নারীর ওপর মধ্যযুগীয় ফতোয়ার চাবুক চলবে? স্বামী স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার পর পুনরায় সহমতের ভিত্তিতে বিয়ে করতে চাইলে  স্ত্রীকে  কেন অন্য পুরুষের হাত ঘুরে আসতে হবে?  এই অসভ্য আইন এখনও এই সভ্য সমাজ কেন মানবে? কেন নারী সে অপমান সহ্য করবে? এ সব কথা লেখার জন্য আমার ওপর মুফতি-মোল্লা সমাজের পুরানো চাপা ক্রোধ ও জ্বালা  ধীরে ধীরে পুঞ্জীভূত হতে থাকে।  
তাঁদের সেই আক্রোশ ও অন্ধক্রোধের বিষ্ফোরণ ঘটল  গত অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে।   সে সময়  এক সপ্তাহের ব্যবধানে আমার দু’টি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয় দু’টি কাগজে। যার একটি বেরিয়েছিল ৬ই অক্টোবর  ‘দৈনিক স্টেটসম্যান’ পত্রিকায় (কলকাতার একটি দৈনিক  কাগজ) এবং  আর একটি বেরিয়েছিল  স্থানীয় একটি  সাপ্তাহিক সংবাদ ম্যাগাজিনে (জঙ্গিপুরের চিঠি)। প্রথম প্রবন্ধটি (বুদ্ধদেববাবু কলকাতাকে কলংকিত করেছিলেন, কলকাতা উচ্চ আদালত সে কলঙ্ক মুছে দিল) ছিল তসলিমা নাসরিনের আত্মজীবনীর তৃতীয় খণ্ড ‘দ্বিখণ্ডিত’ গ্রন্থের সমর্থনে লেখা। প্রবন্ধ দু’টিতে প্রাসঙ্গিকভাবেই মুহাম্মদের ব্যক্তিজীবনের কিছু কথার উল্লেখ রয়েছে। যেমন মুহাম্মদের বহুবিবাহ, পুত্রবধুকে বিয়ে করা এবং ছ’বছরের শিশুকন্যাকে বিয়ে করা প্রভৃতি বিষয়গুলির উল্লেখ রয়েছে।   লিখেছি যে কোরান অপৌরুষেয় কোনো গ্রন্থ নয়, কোরানের কথাগুলো  আসলে মুহাম্মদেরই কথা।  তিনি আল্লাহর মুখে বসিয়েছিলেন মানুষের বিশ্বাস অর্জনের জন্যমুফতি-মৌলানাদের এসব কথা হজম হওয়ার কথা নয়, হয়ও নি । আমি যা লিখেছি তা যে মিথ্যে নয় তা ওঁরা ভালভাবেই জানেন।   কিন্তু মুসলমান সমাজকে তো ক্ষ্যাপাতে হব, তাই আমার বিরুদ্ধে ওরা অপপ্রচার শুরু করে দেনবলছেন আমি নাকি সব মিথ্যা কথা লিখেছি আল্লাহর নবীকে অসম্মান ও অপমান করার জন্যে।  এসব লেখার জন্যে বিজেপি আমাকে  পাঁচ লক্ষ টাকা দিয়েছে  অপপ্রচারে স্বভাবতই বহু মানুষ আমার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছে। ক্ষুব্ধ এই মানুষগুলো অধিকাংশই লেখাপড়া জানেন না,  যাঁরা জানেন তাদের অধিকাংশই  আমার লেখাটা আদৌ পড়েন নি। ক্ষুব্ধ ও অশান্ত মানুষদের  জড়ো করে গত ১১ই অক্টোবর ঐ ধর্মগুরুরা প্রকাশ্য জনসভা  করে আমার বিরুদ্ধে ফতোয়া জারি  করেআমাকে মুরতাদ বলে ঘোষণা দেওয়া হয়।  বলে যে,  গিয়াসুদ্দিন আজ থেকে মুসলমানদের শত্রু এবং  তাকে  শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হলফতোয়ার পক্ষে অনেকেই বক্তৃতা দেন। তাঁদের মধ্যে  সাঈদ হাজী নামে একজন হাজীসাহেব যার তিনজন স্ত্রী রয়েছে  তিনি বলেন,  “কাউকে লাগবে না, আমরা বাপ-ব্যাটায় কাফি, আমরাই গিয়ে গিয়াসের গর্দান নেব। আর আপনারা যদি গিয়াসের গর্দান নিতে পারেন তবে দু’লাখ, পাঁচ লাখ যত টাকা লাগে আমি দেব। গিয়াসকে হত্যা যে করবে তার জন্যে মামলা লড়তে যা টাকা লাগবে  এবং তার পরিবারের ভরণপোষণের ভারও আমি একাই বহন করবো।” কয়েক হাজার মানুষ জড়ো হয়েছিল সভায়।  মুফতি-মাওলানাদের ভাষণ শুনে, বিশেষ করে  ওই হাজীসাহবের ভাষোণ শুনে সভা তখন উত্তেজনায় ফুটতে শুরু করে সভায় যিনি সভাপতিত্ব করেন তিনি একজন  নাম করা মুফতি  তিনি আবার তাঁর স্ত্রীকে সম্পূর্ণ বিনা দোষে  তালাক দিতে চেয়েছিলেন আমি তাঁর স্ত্রীর পক্ষে দাঁড়িয়েছিলাম এবং  তাঁকে বাধ্য করেছিলাম স্ত্রীকে তাঁর সংসারে  ফিরিয়ে নিতে। এখন  সেই মুফতি সাহেব  স্বভাবতই  আমার বিরুদ্ধে বেশী উত্তেজিত করেছেন মানুষের ধর্মীয় সুড়সুড়িতে আঘাত দিয়ে।
স্বাভাবিকভাবেই এলাকা জুড়ে আমার বিরুদ্ধে ব্যাপক উত্তেজনা তৈরী হয়েছে। জায়গায় জায়গায় উত্তেজিত মানুষদের জটলা দেখা যাচ্ছে। উত্তেজিত মানুষদের আমার বাড়িতে হামলা করার উস্কানি দেওয়াও চলছে অনবরত।  পরিস্থিতি এমনই বিরাজ করছে যে এই সময়ের মধ্যে ওদের নাগালের মধ্যে পেলে আমার উপর নিশ্চিতভাবেই ওরা ঝাঁপিয়ে পড়তো যখন এই প্রবন্ধ লিখছি তখনও পরিস্থিতি সমান অগ্নিগর্ভ রয়েছে। এই মুহূর্তে আমাকে ওরা হাতের কাছে  পেলে তার পরিণতি কী হতে পারে ভাবতেই গায়ে কাঁটা দিচ্ছে। 
প্রসঙ্গতঃ এটা উল্লেখ  করা সমীচীন হবে যে,   আমার   এলাকার ছবিটা  ধীরে ধীরে হলেও একটু একটু করে পাল্টাচ্ছে। কিছু যুবক আমার পাশে দাঁড়িয়েছে। উত্তেজিত ধর্মান্ধ মানুষগুলো আমাকে যখন মারব কাটব বলে প্রকাশ্যে  আস্ফালন করছে, হুমকি দিচ্ছে এবং সঙ্কল্প ব্যক্ত করছে তখন ওরা প্রতিবাদ করছে। ওদের অধিকাংশই আমার গ্রামের অধিবাসী, বাকিরা মিঠিপুর গ্রামপঞ্চায়েত এলাকার বিভিন্ন গ্রামের  শুধু যুবকরাই নয়, আমার পাশে দাঁড়িয়েছে চল্লিশোর্ধ ও পঞ্চাশোর্ধ কিছু মানুষও।  ওই প্রতিবাদী  মানুষদের ভূমিকা আমাকে যার পর নাই বিষ্মিত ও অভিভূত করেছে। যাঁরা আমার পক্ষে দাঁড়িয়েছে তাঁর আমার লেখার পক্ষে দাঁড়িয়েছে এমন নয়। তাঁরা যে সবাই আমার প্রবন্ধ দু’টি পড়েছে তাও মনে হয় না। তবু ওঁরা আমার পাশে দাঁড়িয়েছেনএর  প্রধান কারণ হলো আমি মিথ্যে কথা লিখতে পারি তা ওঁরা বিশ্বাস করেন না। ওঁরা মৃত্যুদণ্ডের ফতোয়ার বিরোধিতা করতে গিয়ে বলছেন,  আগে প্রমাণ করতে হবে গিয়াসুদ্দিন কোনটা মিথ্যা লিখেছেন। প্রমাণ ছাড়াই গিয়াসুদ্দিনের গায়ে  হাত দিলে  আমরা তা মেনে নেব না। কেউ কেওু এমনও বলেছেন যে, গিয়াসুদ্দিনের  মাথায় লাঠি মারার আগে আমাদের মাথায় মারতে হবেএভাবে ধীরে ধীরে হলেও কিছু আমুষ আমার পক্ষে মুখ খুলছেন। এদিকে ইতিমধ্যেই আমার গ্রামের সমাজও আমাকে সমাজচ্যুত করার ফতোয়া জারি করেছে । মসজিদে বসে একদিন ফতোয়া জারি করে গ্রামের মানুষদেরকে উদ্দেশ্যে করে ঘোষণা দিল  যে,  গিয়াসুদ্দিনের সঙ্গে কেউ চলাফেরা করতে পারবে না, তার সঙ্গে এমনকি কথাও বলতে পারবে না। যারা  এই নির্দেশ অগ্রাহ্য করে তার সঙ্গে যোগাযোগ রাইবে  তাদেরও একঘরে (সমাজচ্যুত)  করা হবে। গিয়াসের বাড়িতে হামলা হলে (তখন আমার বাড়ী এসে আমার উপর হামলা করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছিল)   কেউ যেন তাকে বাঁচাতে না যায়, যে যাবে তার উপর বিচার বসবে। মসজিদে বসে যখন এই ফতোয়া ও তৎসংক্রান্ত ঘোষণা দেওয়া হয় তখন মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। একদল হৈ হৈ করে ফতোয়াকে সমর্থন জানায়। তার মধ্যেই অবশ্য পঞ্চাশোর্ধ বয়সের একজন মানুষ উঠে দাঁড়িয়ে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন 
পরিস্থিতি একটু একটু করে পাল্টাচ্ছে বটে,  একটু একটু করে প্রতিবাদ হচ্ছে আমার পক্ষে। কিন্তু প্রতিবাদের কণ্ঠগুলি এখনও ভীষণ ক্ষীণ শোনাচ্ছে ওদের তুলনায়।  অর্থাৎ এটাই বাস্তব পরিস্থিতি যে আমি যে কোনো মুহূর্তে আক্রান্ত হতে পারি, এবং আমি খুনও হয়ে যেতে পারি।  নিরাপত্তা চেয়ে  তাই প্রশাসনের কাছে একটি আবেদন পাঠিয়েছি। কিন্তু আমাকে নিরাপত্তা দেওয়া তো পরের কথা, থানার ওসি আমার আবেদনপত্রটাই গ্রহণ করেন নি। পরিস্থিতির এই প্রতিকূলতা সত্ত্বেও  আমি এ ঘোষণা দিতে চাই যে, মৌলবাদীদের ভয়ে আমি কিছুতেই কলম  তুলে রাখব না। ধর্মান্ধতা, মুসলিম  মৌলবাদ, মুসলিম সমাজের গোঁড়ামি এবং যাবতীয় ধর্মীয় কুসংস্কারের বিরুদ্ধে আমার লড়াই আমৃত্যু জারি থাকবে, আমার কলম  খোলা থাকবে
পরিশেষে আর একটা কথা বলতে চাই যে, আমার জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে আমার কোন দুশ্চিন্তা নেই সে কথা বলব না,  কিন্তু সে দুশ্চিন্তাকে ছাপিয়ে গেছে আমার প্রাপ্তির আনন্দ। সে প্রাপ্তিটা হল, আমি বুঝেছি যে, ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আমি একা নই। এখনই পাশে  কিছু মানুষকে পেয়েছি, আশা করি ভবিষ্যতেও আরও বেশী মানুষকে পাশে পাব।  সব শেষে এখানকার রাজনৈতিক দলগুলির অবস্থানের কথা উল্লেখ করতে চাই। স্থানীয় কংগ্রেস  দলের নেতা ও কর্মীরা অধিকাংশই আমার বিরুদ্ধে দেওয়া ফতোয়াকে সমর্থন করছে এবং আমার বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক কথাবার্তা বলছে। তাদের দলের এখানকার  বিধায়ক সাংবাদিকদের জানিয়েছেন যে গিয়াসুদ্দিনের বিরুদ্ধে যে  ফতোয়া দেওয়া হয়েছে তাকে তিনি সমর্থন করেনআমার আশঙ্কা ছিল যে, সিপিএম হয় প্রচ্ছন্নভাবে মুসলিম মৌলবাদীদের মদত দেবে, না হয় নীরব থাকবে। কারণ,  ৬ই অক্টোবরের নিবন্ধে আমি তীব্র সমালোচনা করেছি বামফ্রন্ট সরকার ও তার মুখ্যমন্ত্রীর। তাছাড়া, মাত্র  বছর চারেক আগে আমি সিপিএম ছেড়ে বেরিয়ে এসেছি নীতি ও আদর্শের কারণে।  কিন্তু না, স্থানীয়ভাবে সিপিএম আমার বিরুদ্ধে যায় নি। বরং মৃদুস্বরে এবং অপ্রকাশ্যে হলেও ফতোয়ার  প্রতিবাদ করেছেন  এই দলের নেতা-কর্মীরা।  ফতোয়ার বিষয়ে সিপিএমের একজন জেলা কমিটির নেতার (জঙ্গীপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান)  কাছে  সাংবাদিকরা প্রতিক্রিয়া চাইলে তিনি কোন প্রতিক্রিয়া দেন নি। তবে  পিডিএস দলের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা আমার পাশেই দাঁড়িয়েছেন বলিষ্ঠভাবে।     
[বিঃদ্রঃ প্রবন্ধটি ২০০৫ সালের ২১শে অক্টোবর কলকাতা থেকে প্রকাশিত ‘দৈনিক স্টেস্টসম্যান’ পত্রিকায়  ছাপা হয়েছিলো। তার কয়েকদিন আগে আমার উপর জারি হয়েছিলো মৃত্যুদণ্ডের ফতোয়া।  কার্যতঃ ঘরের মধ্যে অবরুদ্ধ অবস্থায় ভয়ানক চাপের মধ্যে  প্রবন্ধটা লিখেছিলাম।  আমার প্রথম প্রবন্ধ সংকলন গ্রন্থে [মুসলিম সমাজ বনাম ফতোয়া সন্ত্রাস] প্রবন্ধটি রয়েছে। কিছুটা পরিমার্জিত ও পরিবর্ধিত রূপে  প্রবন্ধটি আমার ব্লগের পাঠকদের উদ্দেশ্যে নিবেদন করলাম।]
  


KARBALA: Truth and Lies

  KARBALA : Truth and Lies           GIASUDDIN                 Translated by SRIJIB BISWAS        ...