Saturday, December 24, 2016

অবিশ্বাসী নারীকে জোরপূর্বক বিয়ে



‘জোরপূর্বক বিয়ে’ মানে একজন নারীকে জবরদখল করে নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাকে বিয়ে করা। কোনো নারীকে বিয়ে করে তার সঙ্গে যৌনমিলন করলে সেটা ধর্ষণের পর্যায়ে পড়ে। এমন বিয়েকে নিন্দা করার জন্যে নিন্দাসূচক কোনো ভাষা বা বিশেষণই যথেষ্ট নয়। যথেষ্ট নয় কুৎসিৎ, কদর্য, পাশবিক, বর্বরোচিত, জঘন্য, অমানবিক, ইত্যাদি  কুশব্দগুলিও।  রূপ  বিয়ে এতোই অসভ্য প্রকৃতির যা  কোনো সভ্য সমাজের পক্ষেই গ্রহণযোগ্য নয়। প্রাচীন কালে ও মধ্য যুগে যখন দাসপ্রথা চালু ছিলো তখন রাজা-বাদশা-সম্রাটরা এভাবে তাদের দখলে থাকা দাসীদের মধ্যে যারা খুবই রূপসী তাদের বিয়ে করতো সেদাসপ্রথার যুগে রাজ্য বা সাম্রাজ্য বিস্তারের যুগে রাজা-মহারাজারা যুদ্ধ করতো। যে রাজা বা সম্রাট যুদ্ধে বিজয়ী হতো সে যেমন বিজিত রাজার রাজ্যের দখল নিতো তেমনই সেখানকার মানুষদেরও বন্দী করে নিয়ে এসে দাস বানাতো। বলা বাহুল্য যে বন্দীদের মধ্যে নারীরাও থাকতো। তাদের মধ্যে যাদের যৌবন ও রূপ দেখে তারা মোহিত হয়ে যেতো তাদের বিয়ে করতো। বিয়ে করতো শুধু ভোগ করবে বলে। ফলে রাজা-বাদশা-সম্রাটদের হারেম সদা রূপসী নারীদের ভিড়ে টইটম্বুর থাকতো। সেই রূপসী  জায়াদের সঙ্গে  রাজা-বাদশা-সম্রাটদের শুধু দৈহিক সম্পর্কই থাকতো, সেখানে প্রেমের প্রবেশ ছিলো নিষিদ্ধ। হারেমের বাসীন্দা  ঊর্বশীদের রাণী বা সম্রাজ্ঞী নামে অভিহিত করা  হতো এবং  তাদের সেবায়  অনেক দাসদাসী নিযুক্ত থাকতো বটে, কিন্তু  প্রকৃত পক্ষে তাদের কোনো অধিকার ও স্বাধীনতা ছিলো না দেওয়া হতো না তাদের এতটুকু সম্মান ও মর্যাদা  সুতরাং  সংশয়ের বিন্দুমাত্র অবকাশ নেই যে দাসীদের বেছে বেছে বিয়ে করাটা ছিলো বিয়ের নামে এক  প্রকারের প্রহসন ও তামাশাসে প্রহসন ও তামাশা  করা হতো  বস্তুতঃ  সমগ্র নারীজাতিরে সঙ্গে। ফলে রাজা-বাদশাদের ঐ তামাশা-বিয়ে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পেলেও  সামাজিক স্বীকৃতি পায়নি।  রাজা, বাদশা বা সম্রাটরা সর্ব যুগেই নিজেদের ঈশ্বরের প্রতিনিধি বলে দাবি করতো। তারা বলতো যে তারা যা বলছে তা ঈশ্বরের কথা, তারা যে আইন প্রণয়ন করছে তা ঈশ্বরের আইন। কিন্তু তারা কেউ  দাসীদের জোর করে বিয়ে করার অপরাধকে ঢাকবার জন্যে ঈশ্বরের নামে বৈধ বলে প্রচার করেনি ফলে যে যুগে দাসপ্রথার রমরমা ছিলো সে যুগেও ‘জোরপূর্বক বিয়ে’ সামাজিক প্রথা হিসেবে স্বীকৃতি ও প্রতিষ্ঠা পায়নি।    
সব যুগেই রাজা, বাদশা বা সম্রাটদের হুকুম তামিল করাই ছিলো ধর্মগুরুদের কাজতারা তো আসলে   রাজা-মহারাজাদের উচ্ছিষ্টভোগী ভৃত্যই ছিলো। এই ভৃত্যরা তাদের প্রভুদের স্বার্থে ধর্মের বিধান তৈরী করতো এবং সেগুলো ঈশ্বরের নামে প্রচার করতো। পরে সেই বিধানগুলোই ধর্মগ্রন্থে লিপিবদ্ধ হতো ঈশ্বরের বিধান বলে। কিন্তু কোনো ধর্মগুরু ‘জোরপূর্বক বিয়ে’কে ঈশ্বরের দোহায় দিয়ে বৈধতা দিয়েছে বলে শোনা যায় না।  ফলে কোনো ধর্ম ও ধর্মগ্রন্থই এরূপ বিয়েকে ঈশ্বরের নামে বিধিসম্মত বলে স্বীকৃতি প্রদান করেনিতবে এক্ষেত্রে একমাত্র ব্যতিক্রম হলো ইসলাম ধর্ম। ইসলামে এরূপ জোরপূর্বক বিয়ে করা দোষের কিংবা অপরাধের নয়। এভাবে বিয়ে করা ইসলাম ধর্মে জায়েজ তথা বিধিসম্মত। ইসলামের প্রবর্তক মুহাম্মদ এই বিয়েকে আল্লাহর নামে মান্যতা ও বৈধতা দেশুধু বৈধতা প্রদানই করেন নি,  আরবে এবং সমগ্র ইসলামি সাম্রাজ্যে মুসলিম সমাজে এই বিয়ের ব্যাপক প্রচলন ও প্রসার ঘটিয়েছিলেন। তিনি নিজেও কয়েকজন অপরূপ সুন্দরী যুবতীকে জোরপূর্বক বিয়ে  করেছিলেনএর মধ্যে দিয়ে নারীজাতিকে তিনি  কী চোখে দেখতেন তার সম্যক পরিচয় পাওয়া যায়। শুধু পণ্যই নয়, নারী ছিলো তাঁর চোখে স্থাবর সম্পত্তিও যাদের লুঠ করা ও ভোগ করা যায়। 
না, শরিয়তি আইনে কিন্তু ‘জোরপূর্বক বিয়ে’র উল্লেখ নেই যেমন ‘চুক্তি বিয়ে’ (contractual marriage), ‘হিল্লা বিয়ে’ এবং ‘মুতা বিয়ে’র উল্লেখ আছে। থাকার কথাও নয়। কারণ, জোরপূর্বক বিয়ে করার ঘটনা আজো ঘটে, কিন্তু সে কথা কেউ স্বীকার করে না।  বরং নিজেদের  কুকীর্তি ঢাকা দিতে সবাই অন্য গল্প বলে। মুহাম্মদ ও তাঁর শিষ্যরাও তাই সে কথা মুখে স্বীকার করেন নি এবং তাঁরাও তাঁদের কুকীর্তিগুলি ঢাকতে বহু গল্প বানিয়েছেন। এ সব কথা থাক। মূল কথা হলো, এটাই নির্মম সত্য ও বাস্তব যে  জোরপূর্বক বিয়ে  ইসলামে আইনসিদ্ধ।  এটা যে বাস্তব এবং সত্যি তার হাজারো প্রমাণ  রয়েছে কোরান, হাদিস এবং মুহাম্মদের জীবনচর্চায়। প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য যে  মক্কা থেকে মদিনা যাওয়ার পর মুহাম্মদ এ বিয়ের প্রবর্তন করেন। মক্কায় এটা প্রচলন করার কথা  তাঁর পক্ষে ভাবা সম্ভবই ছিলো না। কারণ, প্রথমতঃ প্রথম জায়া খাদিজার উপস্থিতি এবং দ্বিতীয়তঃ  সাংগঠনিক দুর্বলতা। খাদিজা শুধু তাঁর জায়া ছিলেন না, তিনি তাঁর মনিবও ছিলেন।  কারণ বিয়ের আগে খাদিজা তাঁকে তাঁর বাণিজ্য দেখভাল করার জন্যে কর্মচারী নিযুক্ত ছিলেন। সুতরাং খাদিজার অধীনে থেকে নারীবিরোধী ও নারীবিদ্বেষী আইন প্রণয়ন করার কথা তাঁর পক্ষে স্বপ্নেও ভাবা সম্ভব ছিলো না। আর নতুন আইন বা প্রথা্র প্রচলন ঘটাবার জন্যে শক্তি ও সংগঠন থাকা আবশ্যক তার কোনোটাই মুহাম্মদের ছিলো না যতদিন তিনি মক্কায় ছিলেন।  প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য যে খাদিজার জীবদ্দশায় নারীবিরোধী  আইন তো দূরের কথা, নারীবিরোধী  একটা উক্তিও মুহাম্মদের কণ্ঠে শোনা যায় নি।
মদিনায় গিয়ে মুহাম্মদ অচিরেই তাঁর মত ও পথের আমূল পরিবর্তন আনেন। শান্তি, সহিষ্ণুতা ও ধৈর্যের পথ ছেড়ে বলপ্রয়োগ ও হিংসার পথ অবলম্বন করেন। আর সে পথটাই ইসলামের পরিভাষায় হলো পবিত্র জিহাদ (The holy war)ইসলাম প্রচার ও প্রসারের  হিংসাত্মক মত ও পথকে ঢাকবার জন্যে মুহাম্মদ   তার গায়ে ‘পবিত্র জিহাদ’-এর চাদর (তত্ত্ব) জড়িয়ে দেন। জিহাদের অর্থ হলো আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠার জন্যে আল্লাহর শত্রুদের বিরুদ্ধে হিংসাত্মক সশস্ত্র যুদ্ধ। তিনি শত্রুর নতুন সংজ্ঞা বাঁধলেন। বললেন,  যারা আল্লাহ ও আল্লাহর প্রেরিত
পুরুষকেস্বীকার করে তারাই আল্লাহর শত্রুদের ইসলামের পরিভাষায়  আল্লাহর শত্রুদের অবিশ্বাসী বলা হয়।  মুহাম্মদ আরো বললেন যে জিহাদ করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্যে ওয়াজিব অবশ্য পালনীয় কর্তব্য)। প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য যে ইসলাম প্রতিষ্ঠা ও প্রসারের ক্ষেত্রে মুহাম্মদের  প্রধান অস্ত্রই ছিলো  জিহাদ।   
জিহাদে শত্রুদের উপর বিজয় অর্জিত হলে শত্রুদের অধিকারে থাকে ভূমিতে ইসলামের পতাকা ওড়ানো হতো। তারপর  তাদের সোনা-দানা, হীরে-জহরত যতকিছু মূল্যবান সম্পত্তি থাকতো সবই লুঠ করে  মদিনায় নিয়ে আনা হতো। আর সেই সঙ্গে শত্রুদের মধ্যে যারা পালাতে পারতো না তাদের নারী, পুরুষ ও শিশু নির্বিশেষে সকলকেই বন্দি করে নিয়ে আসা হতো। বন্দি মানুষগুলো-সহ লুণ্ঠিত সমস্ত দ্রব্যই   পাঁচ ভাগের চার ভাগ মুহাম্মদ বণ্টন করে দিতেন জিহাদে অংশগ্রহণকারী মুসলমানদের মধ্যে। একদা স্বাধীন মানুষগুলোকে মুহাম্মদ এভাবে দাসত্বের শিকলে বেঁধে ফেলতেন। বিশ্বজুড়ে যখন সমাজ বিকাশের অনিবার্য নিয়মে দাসপ্রথা অবসান হওয়ার পথে তখন মুহাম্মদ সেই দাসপ্রথাকে পুনরায়  ইসলামে প্রবর্তন করলেন বল্গাহীনভাবে। বলা বাহুক্য যে প্রবর্তন করলেন আল্লাহর নামে।  মুহাম্মদ তাঁর শিষ্যদের বললেন যে তোমরা যা অর্জন করেছো তা পবিত্র জেনে ভোগ করো – এটাই আল্লাহর হুকুম। অবিশ্বাসী নারীদের প্রসঙ্গে বললেন যে তোমাদের ভাগে যে নারীরা পড়েছে তাদের তোমরা তোমাদের  স্ত্রীর ন্যায় যথেচ্ছ ভোগ করতে পারো, পছন্দ হলে তাদের বিয়ে করতে পারো, তাদের বিক্রি করেতেও পারো। মুসলমানরা তাই স্বভাবতই অবিশ্বাসী বন্দি নারীদের স্ত্রীরূপে যথেচ্ছ ভোগ করতো এবং এরই পাশাপাশি অতিশয় সুন্দরী ও অল্পবয়সী নারীদের রূপলাবণ্য দেখে মুগ্ধ হলে বিয়েও করতো। বলা বাহুল্য যে অবিশ্বাসী অসহায় নারীদের প্রবল অনিচ্ছা, অনীহা,  অসম্মতি আপত্তিকে অগ্রাহ্য করেই তারা বিয়ে করতো। অবিশ্বাসী নারীদেরতো প্রবল আপত্তি থাকায় স্বাভাবিক ছিলো। কারণ, তাদের চোখে জেহাদে অংশগ্রহণকারী মুসলমানরা ছিলো এক একজন ভয়ঙ্কর দস্যু। সেই দস্যুদের তারা তারা মনে মনে প্রচণ্ড ঘৃণা করতো। ঘৃণা করাটাই স্বাভাবিক ছিলো, কারণ তারাই তো তাদের চোখের সামনে তাদের পতি-পিতা-ভ্রাতা-সহ আত্মীয়-স্বজনদের হত্যা করেছে নির্মমভাবে। অথচ কী আশ্চর্য যে, সেই হত্যাকারী দস্যুদেরই মুহাম্মদ সমাজের সর্বশ্রেষ্ঠ মহান সন্তান বলে আখ্যায়িত করেছেন।  সুতরাং এ কথা বলার অপেক্ষা থাকে না যে, কোনো অবিশ্বাসী বন্দি নারীদের যখন মুসলমানরা বিয়ে করতো তখন তারা সেই বিয়ে মন থেকে কখনোই মেনে নিতে পারতেন না। অসহায় নারীদের জোরপূর্বক এই বিয়েকে মুহাম্মদ তবুও  বৈধতা দিতে কুণ্ঠা ও দ্বিধা করেন নি।  
লুঠ করে নিয়ে আসা কতিপয় অবিশ্বাসী বন্দিনারী তথা দাসীকে মুহাম্মদ নিজেও বিয়ে করেছিলেন। তার জন্যে তাঁর প্রবল সমালচনাও হয়েছিলো সমগ্র আরবে। সমালোচনা শুধু বাইরেই হয় নি, প্রবল গুঞ্জন  হয়েছিলো তাঁর শিষ্যদের মধ্যে এবং এমনকি তাঁর পত্নীদের মধ্যেও। সে সব সমালোচনা বন্ধ করার জন্যে অবশ্য আল্লাহ তাঁর সহায় হতে ভোলেনি! আল্লাহ তৎপরতার সাথে তাঁকে বৈধতার সীলমোহর প্রদান করেছিলো!  কোরানের  সেই সীলমোহরের বয়ানটি লিপিবদ্ধ রয়েছে।  দেখা যাক সে বয়ানে আল্লাহ কী বলেছে -   হে নবী! আমি তোমার জন্য বৈধ করেছি তোমার স্ত্রীগণকে যাদের তুমি দেনমোহর দান করেছ এবং এবং বৈধ করেছি তোমার অধিকারভুক্ত দাসীগণকে, যাদের আমি দান করেছি, এবং বিবাহের জন্য বৈধ করেছি তোমার চাচাতো ভগ্নী ফুফুতো ভগ্নী, মামাতো ভগ্নী খালাতো ভগ্নী যারা তোমার জন্যে দেশ ত্যাগ করেছে, এবং কোনো বিশ্বাসী নারী নবীর নিকট নিবেদন করতে চাইলে সেও বৈধ, এটা বিশেষ করে তোমার জন্য, অন্য বিশ্বাসীদের জন্য নয়, যাতে তোমার কোনো অসুবিধা না হয়বিশ্বাসীদের স্ত্রী এবং তাদের দাসীগণ সম্বন্ধে যা নির্ধারিত করেছি তা আমি জানি । আল্লাহ্‌ ক্ষমাশীল, দয়াময়।” (সুরা আহযাব, ৩৩/৫০)  কোরান বলছে ‘এবং বৈধ করেছি তোমার অধিকারভুক্ত দাসীগণকে, যাদের আমি দান করেছি’। বলা বাহুল্য যে এই ‘অধিকারভুক্ত দাসীগণ’ হলো সেই অবিশ্বাসী অসহায় নারীগণ যাদের লুঠ করে নিয়ে এসে ক্রীতদাসী বানানো হয়েছে। অবিশ্বাসী অসংখ্য মানুষকে হত্যা করে তাদের মাতা-পত্নী-ভগ্নীদের লুঠ করে নিয়ে এসে মুহাম্মদ বললেন যে ঐ নারীরা হলো আল্লাহর দান। কী নিষ্ঠুর রসিকতা! সেই অবিশ্বাসী নারীদের ভোগ করা ও বিয়ে করা যে মুহাম্মদ ছাড়াও সকল মুসলমানদের জন্যেই বৈধ সে কথা আগেই উল্লেখ করা হয়েছে। এ বিষয়ে কোরানের  ভাষ্যটি হলো এ রকমঃ “এবং নারীদের মধ্যে সধবাগণ (অবৈধ); কিন্তু তোমাদের দক্ষিণ হস্ত যাদের অধিকারী – আল্লাহ তোমাদের জন্য তাদেরকে বিধিবদ্ধ করেছেন।” (সুরা নিসা, ৪/২৪)  প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য যে এখানে যে সধবা নারীদের অবৈধ করা হয়েছে তারা কেবল মুসলিম নারী, অবিশ্বাসী নারীদের জন্যে এটা প্রযোজ্য নয়, তারা সধবা হলেও মুসলমানদের জন্যে তারা বৈধ।  অধিকারভুক্ত দাসী তথা অবিশ্বাসী নারীগণ মুসলমানদের জন্যে বৈধ এ কথা কোরানের অনেক আয়াতেই বলা হয়েছে।  সে রকম আর একটি আয়াত হলো,  “আর যদি তোমরা আশংকা কর যে পিতৃহীনগণের প্রতি সুবিচার করতে পারবে না, তবে নারীগণের মধ্য হতে তোমাদের মন মতো দু’টি, ও তিনটি ও চারটিকে বিয়ে করো;কিন্তু যদি তোমরা আশংকা করো যে, ন্যায় বিচার করতে পারবে না, তবে মাত্র একটি অথবা তোমাদের দক্ষিণ হস্ত যার অধিকারী (ক্রীতদাসী), এটা অবিচার না করার নিকটবর্তী।” (সুরা নিসা, ৪/৩) প্রসঙ্গতঃ সাহাবিদের অনেকের মধ্যেই যথেষ্ট মূল্যবোধ ও বিবেকবোধ ছিলো। ফলে তারা পরনারীদের ভোগ করা ও বিয়ে করার বিধানটা তারা মেনে নিতে পারেনি। তাদের সেই বিবেক বোধ ও মূল্যবোধকে ধ্বংস করতে মুহাম্মদ বারবার আল্লাহর ওহি আবৃত্তি করেছেন। সে রকম একটি ওহি হলোঃ  যুদ্ধে যা তোমরা লাভ করেছ তা বৈধ ও উত্তম ভেবে উপভোগ করো (সুরা আনফাল, /৬৯)   
আগেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, অধিকারভুক্ত অবিশ্বাসী নারীদের সম্মতি ব্যতিরেকেই মুসলমানরা বিয়ে করতো। সুতরাং এ ধরণের বিয়ে বলা বাহুল্য যে জোরপূর্বক বিয়ের শ্রেণিতেই পড়ে। পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে যে  এরূপ জোরপূর্বক বিয়ে মুহাম্মদ নিজেও করেছিলেন। সে রূপ বিয়ে করা পত্নীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য তিনজন ছিলেন জুবেইরিয়া,  সাফিয়া এবং রায়হানা বলা বাহুল্য যে এই তিনজনই ছিলেন কম বয়সী এবং অতীব সুন্দরী। প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য যে এঁরা ছিলেন ইহুদী সম্প্রদায়ের অভিজাত পরিবারের সধবা নারী যাদের পতিদের নির্মভাবে হত্যা করা হয়েছিলো। এঁদের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে ‘মুহাম্মদের হারেম সংবাদ’ অধ্যায়ে।           


Wednesday, December 14, 2016

মুতা বিয়ে





‘চুক্তি বিয়ে’ অপেক্ষা ‘হিল্লা বিয়ে’ যে অনেক বেশী পুরুষকেন্দ্রিক এবং নারীবিরোধি তার প্রমাণ আমরা  আগের আলোচনাতেই পেয়েছি।  কিন্তু ‘মুতা বিয়ে’ সেই ‘হিল্লা বিয়ে’র চেয়ে অনেক বেশী নিকৃষ্ট।  এই বিয়েতেও পূর্বোক্ত দু’টি বিয়ের মতোই একজন পুরুষ এবং একজন নারীর মধ্যে একটি চুক্তি   সম্পাদিত হয়। কিন্তু এ বিয়েতে যে চুক্তি হয় তা আগের বিয়ে দু’টির চুক্তিগুলির চেয়ে নারীজাতির পক্ষে    অনেক বেশী অবমাননাকর। এ বিয়েটা অনুষ্ঠিত হয় শুধু পুরুষের যৌনক্ষুধা নিবারণের প্রয়োজনে,   এবং এটা একটা অস্থায়ী বিয়ে যার মেয়াদ ফেকাহবিদদের  (ইসলামি শাস্ত্রকারদের) মতে সর্ব্বোচ্চ তিন দিন। এ বিয়েতে দাম্পত্যজীবন বলতে কিছু নেই। কারণ, মেয়াদ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিয়েটা আপনা থেকেই সাঙ্গ হয়ে যায়, তালাক দেওয়ার দরকার হয় না। এটা প্রকৃত বিচারে তাই বিয়েই নয়, বিয়ের নামে  প্রহসন মাত্র।    
‘মুতা বিয়েটা যতোই মন্দ হোক না কেনো,  বিয়েটা কিন্তু শরিয়ত-সম্মতই বিয়েটা যে শরিয়ত-সম্মত তা নিয়ে মুসলিম সমাজে মতানৈক্য নেই। মতানৈক্য যা আছে তা এর প্রেক্ষাপট বা  কারণ নিয়েআর মতানৈক্য আছে এটা এখনো জায়েজ (বৈধ), না নাজায়েজ (অবৈধ) তা নিয়ে। মতানৈক্যের বিষয়টি একটু পরে আলোচনা করবো। তার আগে চোখ একটু বোলানো যাক এর আইনি দিকটির প্রতি। 
‘মুতা বিয়ে’র আইন নিয়ে আলোচনা করার আগে অবশ্য একটা কথা বলে নেওয়া দরকার যে,  এ বিয়েটা মুহাম্মদই প্রথম প্রবর্তন করেছেন এমনটা কিন্তু নয়আরবে প্রাক-ইসলাম যুগে বহুকাল আগে থেকেই এ বিয়েটা চালু ছিলো। তবে এটা চালু ছিলো একটা প্রথা হিসেবে। ইসলাম এই প্রথাটাকে আইনের মর্যাদা প্রদান করে।  এ আইনটি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার অবকাশ এখানে নেই।  এ আইনটির প্রকৃত রূপ কী তা বোঝার জন্যে মাত্র কয়েকটি ধারা এখানে উল্লেখ করবো।  ধারাগুলি হলো -  (১). একজন পুরুষ ও একজন নারী পারষ্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে বিয়ের চুক্তিতে আবদ্ধ হবে(). নারী উত্তরাধিকার দাবি করতে পারবে না। (৩). বিয়েটা কয় দিনের জন্যে তা চুক্তিতে উল্লেখ করতে হবে। (৪).  ‘মুতা বিয়ে’র চুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধি করা যাবে না।  (৫). ‘মুতা বিয়ে’ শুধু নারীকে ভোগের জন্যে, সন্তান উৎপাদনের জন্যে নয়। (৬)  যদি নারীর গর্ভে সন্তান আসে তবে তার মালিক হবে পুরুষ, নারী নয়। (৭). ‘মুতা বিয়ে’র পর বর-কনের বিচ্ছেদের জন্যে তালাক দেওয়ার দরকার নেই। চুক্তির মেয়াদ শেষ হলে স্বতঃস্ফূর্তভাবে বিয়ের অবসান ঘটে এবং বর ও কনে পরষ্পর থেকে পৃথক হয়ে যায়।    
‘চুক্তি বিয়ে’ ও হিল্লা বিয়ে’র মতো ‘মুতা বিয়ে’তেও কোন কোন নারী  বৈধ এবং কোন কোন নারী অবৈধ তারও  সুস্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে ‘মুতা বিয়ে’র আইনে। যেমন  (১).  একজন মুসলিম নারীই কেবল ‘মুতা বিয়ে’র জন্যে বৈধ, অমুসলিম নারী নয়। (২). কোনো সধবা মুসলিম নারীর সঙ্গে এ বিয়ে বৈধ নয়। (৩). বিবাহিত পুরুষ তার স্ত্রীর অনুমতি ব্যতীত  এ বিয়ে করতে পারবে না। (৪). ক্রীতদাসী কোনো নারীর সঙ্গে তার মালিকের অনুমতি ব্যতীত ‘মুতা বিয়ে’ বৈধ  নয়। (৫). একজন সতী-সাধ্বী ও ধর্মপরায়ণা নারীই কেবল এ বিয়ের জন্যে বৈধ। বহুগামী ও অধার্মিক কোনো মুসলিম নারী  বৈধ নয়।  (৬). চুক্তিতে নারীর জন্যে একটা নির্দিষ্ট পরিমান পণ বা যৌতুকের উল্লেখ রাখতে হবে। এবং তা নগদ অর্থে বা কোনো বস্তুর বিনিময়ে মেটাতে হবে। (সূত্রঃhttps://www.al-islam.org/muta-temporary-marriage-in-islamic-law-sachiko-murata/four-pillars-muta) এগুলিই হলো ‘মুতা বিয়ে’ আইনের প্রধান প্রধান কথা বা ধারা    
‘মুতা বিয়ে’ উপলক্ষ্যে নারী ও পুরুষের মধ্যে যে চুক্তি হয় তা যে শুধু ভোগের জন্যে সে কথাটি ইসলামি পণ্ডিতগণ সুস্পষ্টভাবেই উল্লেখ করেছেন।  তাঁরা লিখেছেন, . In other words, she has been 'rented' for the purpose of sexual intercourse,  (সূত্রঃ  https://www.al-islam.org/muta-temporary-marriage-in-islamic-law-sachiko-murata/statutes-muta ) তাই নারীর পক্ষে অপমানকর এ রকম একটি অসভ্য চুক্তিকে বিয়ে বলে আখ্যা দেওয়া খুবই দুঃখজনক ও উপহাসজনক ব্যাপার। এটা না চুক্তি,  না বিয়ে, এটা আসলে স্বল্প মেয়াদের জন্যে এ এক প্রকারের কেনা-বেচা বৈ নয় এক্ষেত্রে একজন পুরুষ একজন নারীকে ভোগ করবে বলে স্বল্প সময়ের জন্যে খরিদ করে, উল্টোদিকে একজন অভাবগ্রস্ত নারী যৎসামান্য অর্থের বিনিময়ে তার শরীর ও সময় একজন পুরুষের কাছে  বিক্রি করে। এই কেনা-বেচাই কতকগুলি শর্ত থাকে যার  একটা  হলো, কেনা-বেচাটা স্বল্প সময়ের জন্যে, দাস যুগের দাস-দাসী কেনাবেচার মতো স্থায়ী কেনা-বেচা নয়।  ‘মুতা বিয়ে’ তো পতিতাবৃত্তির মতোই  প্রায় পতিতাবৃত্তিতে একজন পুরুষ  কিছু অর্থের বিনিময়ে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্যে একজন নারীর দেহ ও সময়কে কিনে নিয়ে তাকে ইচ্ছেমতো ভোগ করতে পারে এমনকি একজন পুরুষ পতিতালয় বা রাস্তা থেকে একজন নারীকে অর্থের বিনিময়ে কিছু সময়ের জন্যে বা কয়েক দিনের জন্যে যেখানে খুশী নিয়ে গিয়েও ইচ্ছে মতো ভোগ  করতে পারে। ‘মুতা বিয়ে’টাও তো কার্যতঃ তাই-ই। একজন নারী একান্তই অভাবে বা অন্য কোনো মজবুর পরিস্থিতিতে যেমন পতিতা হতে বাধ্য হয়, ঠিক তেমনইএকজন নারীও ‘মুতা বিয়ে’তে সম্মতি জানাতে বাধ্য হয়।  সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে ‘মুতা বিয়ে’  ও পতিতা বৃত্তির মধ্যে পার্থক্য বিশেষ নেই, পার্থক্য শুধু  নামে ইসলাম পতিতাবৃত্তিকে মৃত্যুদণ্ডযোগ্য অপরাধ বলে বাতিল করলেও ‘মুতা বিয়ে’কে বৈধতা দিয়েছে। কী হাস্যকর বৈপরিত্য!    
আগেই বলেছি যে, আরবে প্রাক-ইসলাম যুগ থেকেই এটা প্রচলিত ছিলো। সুতরাং  মুহাম্মদের সুযোগ ছিলো এই নারী কেনা-বেচা সদৃশ প্রথাটি বাতিল করার।  তাঁর সাহাবিগণের অনেকেই এ প্রথাটিকে ঘৃণার চোখে দেখতেন এবং তাঁদের অনেকের এ প্রত্যাশাও ছিলো যে মুহাম্মদ নিশ্চয় এ প্রথাটি রদ করে দেবেনএটা বোঝা যায় এ কারণে যে সাহাবিদের কেউ কেউ তাঁকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন  ‘মুতা বিয়ে’ আল্লাহর চোখে বৈধ  কী না। তাঁরা হয়তো এ প্রত্যাশা নিয়েই জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে মুহাম্মদ  ‘মুতা বিয়ে’কে অবৈধ বলে  বাতিল করে দেবেনকিন্তু তিনি তা করেন নি, উল্টে বৈধই বলেই ঘোষণা  দিয়েছিলেন। বৈধ বলে শুধু মান্যতা দিয়েই ক্ষান্ত হন নি, ‘মুতা বিয়ে’তে তিনি সাহাবিদের ব্যাপক   উৎসাহও দিয়েছিলেন উৎসাহ দিয়েছিলেন অবশ্য আল্লাহর দোহায় দিয়ে। বলেছিলেন, “আল্লাহ  তোমাদের জন্যে যা হালাল (বৈধ) করেছেন সেই পবিত্র বস্তুসমূহকে তোমরা হারাম (অবৈধ) করো না।” (কোরান, ৫/৮৭)  (অনুবাদ – ড. ওসমান গণী)   
‘মুতা বিয়ে’ নিয়ে ঘরে বাইরে ইসলামের ব্যাপক সমালোচনা যার ফলে মুসলিম সমাজের ধর্মগুরু ও বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে প্রবল অস্বস্তি বিব্রতভাব পরিলক্ষিত হয় সে অস্বস্তি এড়ানোর জন্যে  ধর্মগুরুদের একাংশ এবং  বুদ্ধিজীবীরা বলেন যে ‘মুতা বিয়ে’ ইসলামের গোড়ার যুগে বৈধ থাকলেও  এখন বৈধ নয়। ইসলামের প্রথম যুগে তৎকালীন পরিস্থিতির প্রয়োজনে এটা বৈধ থাকলেও পরে মুহাম্মদ এটা বাতিল করে  দে আগেই উল্লেখ করেছি যে এ ব্যাপারে  মুসলমানদের মধ্যে মতভেদ আছে। মুসলিমদের একটা অংশ  মনে করে না যে ‘মুতা বিয়ে’ অবৈধ বা রদ হয়ে গিয়েছে।  শিয়া মুসলিমদের দৃঢ় অভিমত হলো, মুহাম্মদমুতা বিয়েবাতিল করেন নি,  সুতরাং বিয়ে আগে যেমন বৈধ ছিলো, এখনো তেমনই বৈধ আছে।   ‘মুতা বিয়ে’ বৈধ, না বৈধ নয় তা নিয়ে  প্রবল বিতর্ক এখনো সমানে  অব্যাহত আছে এবং দু’ পক্ষই তাঁদের সপক্ষে প্রমাণ দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। তাঁদের দেওয়া তথ্য-প্রমাণগুলি নিয়ে একটু পরে আলোচনা করবো।        
মুতা বিয়ে আরবে প্রাক-ইসলাম যুগে প্রচলিত ছিলো বটে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, যে মুহাম্মদকে অনেকেই বিশেষ করে মুসলিমরা দুনিয়ার সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ নারীবাদী বলে আখ্যা দিয়েছেন সেই তিনি নারীজাতির পক্ষে এতো নিকৃষ্ট ও জঘন্য প্রথাকে কেনো বৈধ বলে মান্যতা দিয়েছিলে এবং গ্রহণ করেছিলেন?  এ প্রশ্নেও মুসলিম সমাজ সমান দ্বিধা বিভক্ত। একদল বলেন যে, আল্লাহর নবী আল্লাহর  আদেশ পালন করেছেন মাত্র। এ দাবির সপক্ষে প্রমাণ স্বরূপ তাঁরা কোরানের ৫/৮৭ নং আয়াতের কথা উল্লেখ করেন।  কিন্তু এ দাবিটি বড়োই হাস্যকর ও শিশুসুলভ বলে মনে হয়কারণ, তর্কের খাতিরে যদি ধরে নেওয়া যায় যে আল্লাহ সত্যি সত্যিই উক্ত আয়াত বা ওহি পাঠিয়েছিলো, তবুতো প্রশ্ন ওঠে,  মুহাম্মদ এমন একটি জঘন্য আইন বাতিল করার জন্যে আল্লাহর কাছে  দরবার করেন নি কেনো?  কেনো  বিনা বাক্য ব্যয়ে মেনে নিয়েছিলেন নারীর পক্ষে অবমাননাকর এমন ঘৃণ্য আইন? আসল ব্যাপারটা হলো এই যে  ওটা  আদৌ কোনো কারণই নয়‘মুতা বিয়ে’কে বৈধতা প্রদানের নেপথ্যে রয়েছে অন্য রহস্য আর বলা বাহুল্য যে সে রহস্যটি চাপা দেওয়ার জন্যেই আল্লাহর ওহির অজুহাত দেওয়া হয়  উলামার কট্টরপন্থী অংশ সেই রহস্য উন্মোচন করেছেন নির্মমভাবে । তাঁরা  বলেন যে ‘মুতা বিয়ে’কে রদ করার দাবি যারা করে তারা মুনাফেক (কপট মুসলমান) বৈ মুসলমান নয়।  এই কট্টরপন্থী  আলেমগণ কোরানকে  বিশ্বাস করেনঅন্ধভাবে, এবং মনে করেন আল্লাহর আইন নির্ভু্ল, ত্রুটিমুক্ত এবং চিরন্তন। তাঁরা আল্লাহর  আইনগুলি কে কোন চোখে দেখলো তার পরোয়া করেন নাতাঁরা তাই কোরানের কোনো আইনকে আড়াল বা গোপন বা অস্বীকার করার প্রয়োজন মনে করেন না। বরং উল্টে  কোরান ও শরিয়তকে যাতে কেউ সংশোধিত বা পরিমার্জিত করতে না পারে তারজন্যে তাঁরা সর্বদা অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকা পালন করে থাকেন।   
জিহাদের প্রয়োজনেই মুহাম্মদ ‘মুতা বিয়ে’কে যে বৈধতা দিয়েছিলেন সে কথা কট্টরপন্থীরা কখনো গোপন  করেন না।  কোরানের তফসিরে এবং বিভিন্ন হাদিসেও সে কথাটি সমর্থিত হয়েছে। ৫/৮৭ নং আয়াতের তফসিরে তফসিরকার ইবনে কাশির বর্ণনা করেছেন - “হযরত  সুফইয়ান সাওরী (রঃ) হযরত  ইবনে মাসউদ (রঃ) হতে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেনঃ আমরা এক যুদ্ধে দীর্ঘদিন পর্যন্ত নবী (সঃ) – এর সাথে অবস্থান করি এবং সে সময় আমাদদের সাথে স্ত্রীলোক ছিল না তখন আমরা তাকে জিজ্ঞাসা করিঃ আমরা কি খাসী হবো না (অর্থাৎ আমাদের অন্ডোকোষ কর্তন করবো না)?  তিনি তখন আমাদের এটা করতে নিষেধ করেন এবং আমাদেরকে একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্যে কাপড়ের বিনিময়ে স্ত্রীলোক বিয়ে করার অনুমতি প্রদান করেন। অতঃপর হযরত আবদুল্লাহ (রাঃ) এ আয়াতটি পাঠ করেন। কিন্তু এটা নিকাহে মুতা হারাম হওয়ার পূর্বেকার ঘটনাআল্লাহ্‌ তা’আলাই সবচেয়ে ভাল জানেন (দ্রঃ ইবনে কাশিরের তফসির, ৪র্থ – ৭ম খন্ড, পৃ – ৮৯৬)  
‘মুতা বিয়ে’ প্রসঙ্গে  হাদিসও সেই একই সাক্ষ্য দেয়।  বোখারী শরীফ এ প্রসঙ্গে লিখেছে,  While we were in the army, Allah’s apostle came to us  and said, ‘You have been allowed to have pleasure (Muta), so do it.  If a man and a woman agree to marry temporarily, their marriage should last for three nights, and if they want to continue, they may do so.’ There is also a very famous story related to us by Ibn Mas’ud and recorded in all the Islamic sources. We will allude to some aspect of it as it as mentioned in al-Bukhari, Ibn Mas’ud said.
“We used to participate in holy battles led by Allah’s apostle and we had no wives with us. At that time, he allowed us to marry women with a temporary contract and recited to us this verse. ‘O you who believe, make not unlawful the good things which Allah (God) has made lawful for you.’ (5:87).  (সূত্রঃ  ইসলাম নারী/কঙ্কর সিংহ, পৃ)    মুসলিম শরীফ লিখেছে - “It was proven that contractual marriage was permissible at the beginning of Islam. It used to be practiced during a journey or a raid, or when it was “necessary” and there was a lack of women. In one of Ibn Abu ‘Umar’s episodes, it said that it was admissible at the inception of Islam, especially when there was a need for it”.  (সূত্রঃ – ঐ)  
‘মুতা বিয়ে’ এখন অবৈধ – এ কথাটি বা দাবিটি  উপরে বর্ণিত তফসির ও হাদিসে উল্লেখিত রয়েছে। এ দাবিটি মূলতঃ সুন্নী মুসলিম সমাজেরকিন্তু  সুন্নি মুসলিমদের যারা  জিহাদের তত্ত্বে  এখনো বিশ্বাস করে এবং জিহাদি কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে  তাদের অভিমত হলো ‘মুতা বিয়ে’ চিরন্তন, অপরিবর্তনযোগ্য ও  অরহিতযোগ্য। নাইজিরিয়ায় ‘বোকো হারাম’  এবং ইরাক-সিরিয়ায় ‘আইসিস’ বা ‘আইএস’ – এর জঙ্গী সন্ত্রাসীরা তাই ‘মুতা বিয়ে’কে আবার সাড়ম্বরে ফিরিয়ে নিয়ে এসেছে। অবশ্য ‘মুতা বিয়ে’র সকল নিয়ম-নীতি যে তারা সঠিকভাবে পালন করছে তা নয়। যেমন ‘মুতা বিয়ে’র আইন অনুসারে  নারীর সম্মতি নেওয়াটা জরুরী মনে করে না।   ‘মুতা বিয়ে’র আইন অনুযায়ী  নারীদের  বৈধ-অবৈধ –এর যে তালিকা রয়েছে সেটাও তারা মানছে না। সে কথা থাক,  ‘মুতা বিয়ে’ রদ করা, না করার প্রশ্নে আবার ফিরে আসা যাক
যাঁরা ‘মুতা বিয়ে’ এখন অবৈধ বলে দাবি করেন  তাঁরা যে বিশেষ উদ্দেশ্য কোনো সাধনের জন্যে এ দাবি করেন তা সহজেই বোঝা যায়। সে উদ্দেশ্য হলো  ইসলামের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার করার জন্যে ‘মুতা বিয়ে’র কলঙ্ককে ইসলামের ঘাড় থেকে ঝেড়ে ফেলা।  এটা বোঝা যায় তাঁদের দাখিল করা   তথ্য-প্রমাণগুলি বিশ্লেষণ করে।  এটা দেখা যায় যে  তাঁদের পেশ করা তথ্য-প্রমাণগুলি প্রামাণ্যতা ও যুক্তির নিরিখে খুবই দুর্বল এবং মোটেই সংশয়োর্ধ বা প্রশ্নোর্ধ নয়। তাঁরা যে দলিলগুলি প্রমাণ হিসেবে হাজির করেছেন তার মধ্যে তিন’টি দলিল (একটি তফসির ও দুটি হাদিস) ইতিমধ্যেই উপরে উদ্ধৃত করা হয়েছে।  এরূপ আরো বহু দলিল আছে যেগুলির মূল কথা  একই।   সুতরাং  বেশী দলিল উদ্ধৃত না করে  আর মাত্র একটি দলিলই উল্লেখ করে এ প্রসঙ্গে ইতি টানতে চাই।  মুসলিম শরীফে বর্ণিত সেই দলিলটি হলো,  “It was proven that contractual marriage was permission in the beginning of Islam.  it used to be practiced during a journey or raid, or when it was ‘’necessary’’ and when there was a lack of women. In one of Ibn Abu  Umar’s episdes, it said that it was admissible at the inception of Islam, especially when there was a need for it.”  (সূত্রঃ ইসলাম ও নারী, কংকর সিংহ, পৃ-২৬)  এবার দলিলগুলি  একটু বিশ্লেষণ করা যাক।  উপরে উদ্ধৃত ৫/৮৭ – এর তফসির এবং হাদিসগুলিতে দাবি করা হয়েছে যে ‘মুতা বিয়ে’ ইসলামের গোড়ার দিকে বৈধ ছিলো, কিন্তু পরে রদ করে দেওয়া হয়েছে। যাঁরা বলেছেন যে ‘মুতা বিয়ে’ পরে রদ করে দেওয়া হয়েছিল তাঁরা কিন্তু তাঁদের সপক্ষে কোরান থেকে কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেন নি।  হাদিস বর্ণনাকারী কতিপয় ধর্মীয় নেতার উক্তিকেই প্রমাণ হিসেবে পেশ করেছেন মাত্র। কিন্তু ঐ ধর্মীয় নেতাদের বয়ানগুলি যে নির্ভুল তার নিশ্চয়তা কোথায়? এ প্রশ্নটি মোটেই উপেক্ষা করা যায় না, কারণ এর সম্পূর্ণ বিপরীত বয়ান শোনা যায় অন্য অনেক হাদিস  বর্ণনাকারীদের  কাছ থেকে।  হ্যাঁ, অনেক হাদিস আছে যেখান থেকে জানা যায় যে মুহাম্মদের মৃত্যুর পরে খেলাফতি শাসনে ‘মুতা বিয়ে’ প্রচলিত ছিলো। এ হাদিসগুলির কয়েকটি একটু পরে উদ্ধৃত করা হয়েছে। একটা কথা এখানে উল্লেখ করা খুবই প্রাসঙ্গিক হবে যে, ‘মুতা বিয়ে’ রদ করা হয়েছিলো – এ দাবির সত্যতা নিয়ে অনুসন্ধিৎসু মানুষদের মধ্যেই শুধু প্রশ্ন বা সংশয় নেই, হাদিস বর্ণনাকারীগণ নিজেরাও সত্যতা নিয়ে সংশয়মুক্ত ছিলেন না।  যাঁরা বলে গেছেন যে মুহাম্মদ ‘মুতা বিয়ে’ রদ করে দিয়ে গেছেন তাঁদের মনেও যে যথেষ্ট সংশয় ছিলো তা তফসিরে বর্ণিত ‘হযরত  ইবনে মাসউদ (রঃ)’ এর বর্ণনাতেই ফুটে উঠেছে।   ‘নিকাহে মুতা হারাম হওয়ার’ কথা উল্লেখ করার পরপরই তিনি স্বগতোক্তির মতো একটি তাৎপর্যপূর্ণ উক্তি করেছেন। উক্তিটি হলো -  আল্লাহ্‌ তা’আলাই সবচেয়ে ভাল জানেন’’  অর্থাৎ ‘মুতা বিয়ে’ হারাম করার ব্যাপারে তিনি নিজেই সংশয় ছিলেন না।  
এবার চোখ রাখা যাক তাঁদের দলিলগুলির প্রতি যাঁরা দাবি করেন যে ‘মুতা বিয়ে’ রদ করা হয় নি। সে রকম দু’টি হাদিস হলো,  – “আতা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ জাবির ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে উমরাহ আদায়ের জন্য (মক্কায়) আসলে আমরা তার বাড়িতে (আবাস স্থলে) গেলামলোকজন তাঁকে অনেক বিষয়ে জিজ্ঞেস করলো। অতঃপর ‘মুতা’আ’র কথা আলোচনা করলে তিনি বললেনঃ হ্যাঁ, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে এবং আবু বকর (রাঃ) ও উমারের খেলাফত কালে ‘মুতা’আ’ করেছি।  (মুসলিম শরীফ, ৫ম খণ্ড,  হাদিস নং - ৭২৭৯) “আবু যুবায়ের থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি জাবির ইবনে আবদুল্লাহকে (রাঃ) বলতে শুনেছিঃ আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এবং আবু বকর (রাঃ) ও উমারের খেলাফত কালে এক মুঠি আটা ও খেজুরের বিনিময়ে ‘মুতা’আ’ (সাময়িক বিয়ে) করতাম।” (ঐ, হাঃ নং – ৩২৮০)  এ হাদিস দু’টি থেকে এটা স্পষ্ট যে মুহাম্মদের মৃত্যুর পরে খলিফাদের শাসনকালে ‘মুতা বিয়ে’র প্রচলন ছিলো। এরূপ আরো বহু হাদিস রয়েছে। প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য যে আবু বকর ও উমার ফারুক ছিলেন মুহাম্মদের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ ও বিশ্বস্ত সাহাবী এবং মুহাম্মদের মৃত্যুর পর তাঁরা ছিলেন যথাক্রমে প্রথম ও দ্বিতীয়।  এ হাদিস দু’টিকে জাল বলে উড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ নেই। কারণ,সুন্নী মুসলিমদের কাছে মুসলিম শরীফ একটি সহিহ হাদিস বলে সমাদৃত।    
এবার মুসলিম সমাজের মধ্যেকার বিতর্কের বাইরে গিয়ে ‘মুতা বিয়ে’ রদ করা বা না করার বিষয়টি কোরানের আলোকে আলোচনা করা যাক।  (এক). ‘মুতা বিয়ে’ যতোই নিকৃষ্ট  এবং নারীজাতির পক্ষে  অবমাননাকর হোক না কেনো, মুহাম্মদ এই প্রথাটিকে বৈধ বলে মান্যতা দিয়েছিলেন এবং ‘মুতা বিয়ে’ করতে ঢালাও অনুমোদন দিয়েছিলেন। এটা তিনি করেছিলেন জিহাদের স্বার্থে। অপরদিকে মুহাম্মদ তাঁর শিষ্যদের জন্যে জিহাদ জারি রাখার আদেশ দিয়ে গেছেন ততদিন পর্যন্ত যতদিন না সমগ্র পৃথিবীতে ইসলামের শাসন সম্পূর্ণরূপে প্রতিষ্ঠিত হয়। সুতরাং এটা সহজেই বোধগম্য যে মুহাম্মদ ‘মুতা বিয়ে’ রদ করেন নি। (দুই). জিহাদের প্রয়োজনে মুহাম্মদ ‘মুতা বিয়ে’কে বৈধ বলে ঘোষণা দেওয়ার পরপরই (তফসিরকারদের বিবিরণ অনুযায়ী) আল্লাহ ওহি পাঠিয়ে তাতে সীলমোহর লাগিয়ে দেয়। সেই ওহিতে আল্লাহ মুহাম্মদকে এ কথা বলে নি যে,  অস্থায়ী ব্যবস্থা হিসেবে তোমার সময়লালের জন্যে ‘মুতা বিয়ে’ অনুমোদন করা হলো, তোমার মৃত্যুর পর এ বিয়ে আর বৈধ থাকবে না। সুতরাং  অস্থায়ী বিধি নয় এমন বিধিকে মাঝ পথে রদ করার প্রশ্ন ওঠে না। (তিন). কোরানের ১০/১৫ নং আয়াতে এ কথা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, আল্লাহর ওহি পরিবর্তন বা রদ করার ক্ষমতা মুহাম্মদের নেই। সুতরাং মুহাম্মদ নিজ ক্ষমতাবলে ‘মুতা বিয়ে’ রদ করে দিয়ে গেছেন এমনটা হওয়া সম্ভব নয়। (চার). ‘মুতা বিয়ে’ ছিলো আরবে একটা প্রথা মাত্র।  মুহাম্মদ এই প্রথাটিকে আইনের স্তরে উন্নীত করেন এবং শরিয়তি বিয়ের প্রধান বিয়ে ‘চুক্তি বিয়ে’র আদলেই এর আইনটিও প্রণয়ন করেন। সুতরাং এটাই প্রতীয়মান হয় যে, মুহাম্মদ ‘মুতা বিয়ে’টি শরিয়তে অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন চিরদিনের জন্যে যা রদ করার প্রশ্ন ওঠে না।   





KARBALA: Truth and Lies

  KARBALA : Truth and Lies           GIASUDDIN                 Translated by SRIJIB BISWAS        ...