Thursday, July 9, 2015

মুহাম্মদের স্ত্রী রায়হানা ছিলেন একজন ইহুদি সেনাপতির স্ত্রী



রায়হানা ছিলেন  মদিনার ইহুদিদের বানু কুরাইজা গোষ্ঠীর সেনাপতির স্ত্রী   মুহাম্মদের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়েছিলো এক ভয়ঙ্কর নৃশংস হত্যাকাণ্ডের সংঘটিত হওয়ার পরমুহাম্মদের এই বিয়েটা  নিয়ে ব্যাপক মতভেদ রয়েছে । রায়হানা ছিলেন ইহুদিদের বনি কুরাইজা গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত  বন্দিনী সহস্রাধিক নারী ও শিশুদের একজন ।   এই গোষ্ঠীর সমস্ত পুরুষকে হত্যা করার পর সকল বন্দি শিশু ও বন্দিনী নারীদের মুসলমানদের মধ্যে বণ্টন করে দেওয়া হয়েছিলো ।  রায়হানা  মুহাম্মদের ভাগে পড়েছিলেনকেউ বলে রায়হানাকে মুহাম্মদ নিজেই পছন্দ করে  নিজের  হেফাজতে নিয়ে  তাঁকে বিয়ে করার প্রস্তাব দেন । বিয়ে করার জন্যে প্রথমে নুহাম্মদ তাঁকে ইসলামে দীক্ষা নিতে বলেন ।  কিন্তু রায়হানা স্বধুর্ম ত্যাগ করে মুসলমান হতে অসম্মতি জানালে  মুহাম্মদ তাঁকে দাসী তথা উপপত্নী করে রাখেন  ঐতিহাসিকদের একটা মত হলো যে রায়হানা জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত মুহাম্মদের ধর্ম গ্রহণ করেন নি এবং দাসী ও উপপত্নী অবস্থাতেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন । আর একটা মত অন্য কথা বলে -  রায়হান পরে  ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন এবং মুহাম্মদ  তাঁকে বিয়ে করেছিলেন     পরের মতটাই অধিক বিশ্বাসযোগ্য ।  যাঁরা প্রথম মতের পক্ষে তাঁদের মধ্যে অন্যতম  মোহাম্মদ হোসাইন হেইকল,  মুহাম্মদের মিশরীয় জীবনীকার,  লিখেছেন, “বানু কোরাইজা গোত্রের একজন বন্দিনী, নাম রায়হানা, বণ্টনের সময় মহানবী (সাঃ) – এর ভাগে পড়ে ।  মুহাম্মদ [সাঃ]  তাকে  ইসলাম গ্রহণের জন্য দাওয়াত দেন । কিন্তু রায়হানা একগুঁয়েমি করে তা প্রত্যাখান করে । মুহাম্মদ [সাঃ] তাকে বিবাহের প্রস্তাব করেন । কিন্তু রায়হানা বন্দিনী জীবনই বেছে নেয় । এটা তার নিজস্ব ধর্মপ্রীতি এবং জনগণের প্রতি গভীর মমত্ববোধেরই পরিচায়ক । ইসলাম গ্রহণ করে মুহাম্মদকে বিবাহ করলে ওসবের মায়া পরিত্যাগ করতে হবে ।” [দ্রঃ মহানবী (সঃ) – এর বিবাহ, মহম্মদ সাদাত আলি, পৃ – ৯৬]   প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য যে হেইকল একজন ইসলামের অন্ধ অনুরাগী ব্যক্তিত্ব ।  দ্বিতীয় মতের পক্ষের গবেষক-লেখক    ইসলামের আর একজন অন্ধ অনুরাগী  ড: মাজিদ আলি খান  লিখেছেন – “... রায়হানা যখন মহানবী [সাঃ] – এর ভাগে পড়ে, নবীজী তাকে স্বাধীনতা দেন ও বিবাহের প্রস্তাব করেন । কিন্তু রায়হানা দাসীত্বই বেছে নেয় । কিন্তু পরবর্তীকালে তিনি  ইসলাম গ্রহণের পর নবীজী রায়হানাকে বিবাহ করেন এবং মহানবী [সাঃ] বিদায় হজে থেকে প্রত্যাবর্তনের পর রায়হানা ইন্তেকাল করেন এবং  জান্নাতুল বাকীতে দাফন করা হয় ।” [দ্রঃ – ঐ, পৃ-৯৭]  প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য যে রায়হানাকে মুহাম্মদ যখন বিয়ে করার প্রস্তাব দেন তখন তাঁর  চার জন স্ত্রী বিদ্যমান ছিলেন । চারজন স্ত্রীর উপরে আর একজন নারীকে বিয়ে করাটা নিসঃন্দেহে নিন্দনীয় কাজ ।  তাই এই নিন্দনীয় কাজটা আড়াল করার জন্যে এই বিয়েটাকে বৈধ বলতেই হয় । তা করতে গিয়ে ইসলামের অনুরাগী লেখকগণ এমন কিছু যুক্তির অবতারণা করেছেন  যেগুলি  অপযুক্তিই বৈ নয় ।   হাফিজ গোলাম সারওয়ার, তিনিও গবেষক-লেখক বলে খ্যাত,  লিখেছেন, “মহানবী [সাঃ] যদি রায়হানাকে বিবাহের প্রস্তাব নিজের হাত বাড়িয়ে দিয়ে থাকেন তবে তা অবশ্যই তাকে [রায়হানাকে] রক্ষা করার জন্য, এর পেছনে স্বার্থপরতার কোনো উদ্দেশ্য ছিলো   না । ” [দ্রঃ – ঐ, পৃ-৯৬]   কিন্তু ঘটনা হলো যে  রায়হানাদের বন্দি ও দাসী করার আগে  মুহাম্মদ ও তাঁর শিষ্যরা মিলে  বানু কুরাইজা গোষ্ঠীর  সমস্ত পুরুষকে  [৮০০ থেকে  ৯০০ জন] হত্যা করা হয়েছিলো  যাদের মধ্যে  রায়হানার স্বামী, পিতা ও আত্মীয়-স্বজনরাও ছিলেন । রায়হানার স্বামী, পিতা, ভ্রাতা, আত্মীয়-স্বজন সবাইকে নৃসংসভাবে  হত্যা করে তাঁর কোন স্বার্থ  রক্ষা করতে চাওয়া হয়েছিলো ? একে   নিষ্ঠুর রসিকতা ছাড়া আর কী বলা যায় !   আবার  অনেকেই  বলেছেন যে    মুহাম্মদ  রায়হানাকে বিয়ে করেছিলেন  ইহুদিদের সঙ্গে মুসলমানদের মিলন সেতু গড়বার জন্যে    !   ড.ওসমান গণি, মুহাম্মদের জীবনীকার, এ প্রসঙ্গে লিখেছেন –“... এবং পরবর্তী সময়ে  ইহুদিনী রায়হানাকে স্ত্রীরূপে গ্রহণ করেছিলেন । এর গূঢ় তাৎপর্য ছিল, মহানবী [সাঃ] খ্রীস্টান ও ইহুদীদের সঙ্গে ভালবাসা ও সম্প্রিতি স্থাপনের জন্য উদার প্রাণে, কত মুক্তমনে খ্রীস্টান  এ ইহুদীদের স্ত্রীরূপে গ্রহণ করেছিলেন । এই অসবর্ণ বিবাহগুলো ছিল তার জ্বলন্ত প্রমাণ । তাছাড়া ওই সময়ে  সমস্ত মহিলাদের বিবাহ করার অন্য কোন কারণ ছিল না ।”  [দ্রঃ মহানবী, পৃ-৩৯৩]   একটা সম্প্রদায়ের সমস্ত পুরুষদের হত্যা করে, তাদের সমস্ত শিশু ও নারিদের বন্দি করে দাস-দাসী বানিয়ে তাদেরই একজন বন্দিনীকে বিয়ে করে মুহাম্মদ তাদের সাথে সম্প্রীতি স্থাপন করতে চেয়েছিলেন ?  ‘কাটা ঘায়ে নুনের  ছিটে দেওয়া’  আর কাকে বলে ?   এই প্রবাদ বাক্যটিও যেন যথেষ্ট নয় পৈশাচিক ও নৃশংস এই  ঘটনাটিকে বোঝানোর জন্যে  রায়হানার ক্ষেত্রে যা ঘটেছে তাকে পৃথিবীর ইতিহাসে  এক নজিরবিহীন মানসিক নির্যাতনের এক বিরল দৃষ্টান্ত বললে অত্যুক্তি হয় না অথচ এমন অমানবিক  ও জঘন্য ঘটনাটিকেই  মুসলিম ঐতিহাসিক ও পণ্ডিতরা অবলীলায় বর্ণনা করেছেন ইহুদীদের সঙ্গে ভালবাসা ও সম্প্রিতি স্থাপনের এক মহান উদ্যোগ ও প্রয়াস হিসেবে । এতো নির্লজ্জ ওকালতির ঘটনাও বোধ হয় ইতিহাসে বিরল ।
এখন প্রশ্ন হলো কয়েকশো বন্দি নারীর মধ্যে রায়হানাকেই কেনো মুহাম্মদ  বিয়ে করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন ? ইহুদিদের সঙ্গে ভ্রাতৃত্ব স্থাপনের জন্যে তো নয়ই । তা হলে কেন ? তা  বুঝতে  হলে   মুহাম্মদ ও রায়হানার বিয়েটা যে  প্রেক্ষাপটে সংঘটিত হয়েছিলো তার উপর দৃষ্টিপাত করতে হবে । সেই ঘটনাটি এরূপঃ
ঘটনাটি ঘটেছিলো ৬২৭ খৃস্টাব্দে খন্দক যুদ্ধের ঠিক অব্যবহিত পরেই । খন্দক যুদ্ধ হয়েছিলো মক্কার কোরেশদের সঙ্গে মুহাম্মদের বাহিনীর ।  তার আগে কোরেশরা  মুহাম্মদের বাহিনীর হাতে বারবার আক্রান্ত হয়েছে   সে সব আক্রমণে একদিকে যেমন তাদের বিপুল ধন-সম্পত্তি লুণ্ঠিত হয়েছে তেমনি অপরদিকে  মুসলমানদের হাতে তাদের অনেকেরই প্রাণহানিও ঘটেছে তাই তারা এক সময় স্থির করে যে মুসলমানদের আক্রমণের হাত থেকে বাঁচতে হলে তাদের চিরতরে আরবের বুক থেকে মুছেই ফেলতে হবে ।  সে উদ্দেশ্য নিয়েই বিশাল সৈন্যবাহিনী নিয়ে কোরেশরা মদিনা আক্রমণ করেছিলো । সৌদি আরবের এ যুগের বিশিষ্ট জীবনীকার সফি-উর-রহামান আল-মুবারকপুরী  খন্দক যুদ্ধের কারণ বিশ্লেষণ করতে গিয়ে লিখেছেন -  Modern Saudi biographer Safi-ur-Rahman al-Mubarakpuri expresses the right idea: . . . "[I]t was wise for the Muslims to bring the commercial routes leading to Makkah [Mecca] under their control" (p. 201). Then he lists eight raids between 623 and the Battle of Badr in AD 624. In each one, Muslims were the aggressors, to accomplish the big objective of strangling Mecca’s trade. These raids that sometimes involved hundreds of men continued steadily from that time to the Battle of the Trench. The Meccans had had enough. So they wanted to finish off Islam, once and for all.  [ http://www.answering-islam.org/Authors/Arlandson/qurayza_jews.htm]  মুহাম্মদ আগে থেকেই কোরেশদের এই আক্রমণের খবর জানতে পেরে মদিনার বাইরে তিন দিক জুড়ে বিরাট পরিখা খনন করান ।  কোরেশরা  সেই পরিখা ডিঙোতে না পেরে ব্যর্থ মনোরথ হয়ে ফিরে যায় । পরিখার দু’পার থেকে  পনের দিন ধরে দু’পক্ষই একে অপরকে  আক্রমণ ও পাল্টা আক্রমণ করেছিলো ।  যুদ্ধটা ইতিহাসে খন্দক যুদ্ধ নামে পরিচিত যদিও যুদ্ধটি আসলে দুর্লঙ্ঘ সেই পরিখাটির জন্যে হতেই পারে নি ।  কোরেশরা মক্কায় ফিরে যাওয়ার অব্যবহতি পরেই মুহাম্মদ তাঁর বাহিনীকে নিয়ে  অতর্কিতে ও বিনা প্ররোচনায় বানু কুরাইজা গোষ্ঠীর মহল্লার বিরুদ্ধে অভিযান করেন । কুরাইজা গোষ্ঠীর নিরীহ লোকেরা তখন আত্মরক্ষার্থে তাদের দূর্গ মধ্যে আশ্রয় নেয় । মুহাম্মদ তাদের মহল্লায় খাদ্য ও পানীয় জল সহ সমস্ত কিছুই প্রবেশ নিষিদ্ধ করেন । পনেরো দিন অবরুদ্ধ থাকার পর খাদ্যের রসদসম্ভার শেষ হয়ে গেলে তারা আত্মসমর্পণ করে । তারা মুহাম্মদদের কাছে তাদের সকলের প্রাণ ভিক্ষা চেয়ে প্রস্তাব পাঠায় । তারা বলে যে  তারা সমস্ত কিছু ছেড়ে দিয়ে সম্পূর্ণ খালি হাতে মদিনা ছেড়ে চলে যেতে প্রস্তুত আছে  । এই প্রস্তাবের জবাবে মুহাম্মদ কী বলেছিলেন তা আলোচনা করার আগে  আরো দু’টো ঘটনার কথা আলোচনা করা আবশ্যক । বানু কুরাইজারা  কেন এতো বড়ো ত্যাগের প্রস্তাব দিয়েছিলো সেটা বোঝার জন্যেই আগের ঘটনা দু’টো সম্পর্কে অবহিত হতে হবে । ঘটনা দু’টি  এরূপঃ
মদিনায় ইহুদিদের তিনটি গোষ্ঠী বাস করতো । গোষ্ঠী তিনটি হলো বানু কাইনুকা, বানু নাজির ও বানু কুরাইজা গোষ্ঠি । তাদের মধ্যে সদ্ভাব ছিলো না এবং গোষ্ঠীবিরোধ ছিলো প্রকট । ৬২৫ সালে মুহাম্মদ বানু কানুইকা গোষ্ঠীকে মদিনা থেকে  নির্বাসিত করেছিলেন তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিলো যে তারা একজন মুসলিম নারীর শ্লীলতা হানি করেছিল । এই নিয়ে ইহুদিদের সঙ্গে মুসলমানদের ঝগড়ার সূত্রপাত ঘটে এবং একজন মুসলমান ও একজন ইহুদির মৃত্যু হয় । এই ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে মুহাম্মদ তাদের কাছে গিয়ে বলেন, “হে ইহুদীগণ তোমরা যে জঘন্য কুকর্ম করিয়াছ, তাহার যথাযোগ্য প্রতিকার করিতে আমরা প্রস্তুত, আমার উপদেশ এইঃ তোমরা বশ্যতা স্বীকার কর, নতুবা কোরেশদিগের দশাই তোমাদের ঘটিবে ।” [দ্রঃ বিশ্বনবী, আহমদ পাবলিশিং হাউস, ঢাকা, পৃ – ১৬৬,১৬৭]  মুহাম্মদের এই আদেশ প্রত্যাখান করলে মুহাম্মদ তাদের উপর আক্রমণ করেন তখন তারা ভয়ে দূর্গের মধ্যে আশ্রয় নেয় । দু সপ্তাহ দূর্গে অবরুদ্ধ থাকার পর ইহুদিরা মুহাম্মদের কাছে আত্মসমর্পণ করে । মুহাম্মদ সকলকে নির্বাসন দন্ড দেন । প্রাণ রক্ষার জন্যে বানু কুনাইকা গোষ্ঠীর ইহুদিরা স্বধর্ম ত্যাগ না করে  মদিনা ত্যাগ করে চলে যায়অনেক  ঐতিহাসিক বলেছেন যে মুসলিম নারীর শ্লীলতাহানির ঘটনাটা ছিলো অজুহাত ।  আসল উদ্দেশ্য ছিলো  তাড়িয়ে দিয়ে তাদের সমস্ত স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তির দখল নেওয়া ।  সাধারণ যুক্তিতেই  এটা বোঝা যায় যে একজন নারীর শ্লীলতাহানির ঘটনোর জন্যে গোটা সম্প্রদায় দায়ী হতে পারে না এবং তারজন্যে  সমুদয় সম্প্রদায়কে  নির্বাসনের দণ্ড  দেওয়ারও প্রশ্ন আসে না   ঠিক তার পরের বছর বানু  নাজির গোষ্ঠীর মহল্লা অবরোধ করেন মুহাম্মদ এই অজুহাতে যে তাদের পক্ষ থেকে মুহাম্মদকে খাবারে বিষ মিশিয়ে তাঁকে হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছিলো । এটাও ছিলো মনগড়া অভিযোগ, কোনো প্রমাণ তিনি দেখাতে পারেন নি । তিনি বলেছিলেন যে স্বয়ং আল্লাহ তাঁকে এই ষড়যন্ত্রের কথা জানিয়েছে ।  শুধু  অবরোধই করেই ক্ষান্ত হন নি  তিনি  মুহাম্মদ  নির্দেশে  তাঁর শিষ্যদের  বানু নাজির গোষ্ঠীর সমস্ত খেজুর গাছ কেটে নষ্ট করার হুকুম দেন  খেজুর গাছ কাটার জন্যে মুহাম্মদকে  প্রবল সমালোচনার মুখে পড়তে হয় । এমন কি তাঁর শিষ্যরাও অনেকেই এটা মেনে নিতে পারেনি । তখন তিনি আল্লাহর দোহায় পাড়েন । বলেন আমি যা করেছি আল্লাহর নির্দেশেই করেছি । তিনি আবৃত্তি করে শোনান একটা আয়াত  – “তোমরা যে কতক খেজুর গাছ কেটেছো অথবা ওর শিকড়ের উপর তাকে দন্ডায়মান অবস্থায় পরিত্যাগ করেছো [ অর্থাৎ কতকগুলো না কেটে রেখে দিয়েছো ] তা তো আল্লাহর অনুমতিক্রমেই  [ কোরান – ৫৯/৫]  বানু নাজির গোষ্ঠির লোকেরা  দিন পনেরো পর  আত্মসমর্পণ করলে  মুহাম্মদ  তাদের  নির্বাসন দন্ডে  দন্ডিত করেন  ফলে প্রাণ রক্ষার্থে বানু নাজির গোষ্ঠীর  লোকজনও  বানু কুনাইকাদের মতই চিরদিনের মতো মদিনা ছেড়ে চলে যায় এই দু’টি নজিরবিহীন  অমানবিক নির্বাসনের  পরিপ্রেক্ষিতেই বানু কুরাইজা গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে মুহাম্মদকে তারা বলেছিলো যে তাদেরকে  অবরোধ মুক্ত করলে তারাও মদিনা ছেড়ে চলে যাবে ।  
কিন্তু মুহাম্মদ  বানু কুরাইজাদের  প্রস্তাবকে  সরাসর প্রত্যাখান করেন   তিনি বলেন যে, তোমরা আমার সঙ্গে চুক্তি   ভঙ্গ করে কোরেশদের পক্ষে আমার বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নিয়েছো, তাই তোমাদের বিচার করা হবে । আগেই বলেছি যে যুদ্ধটা আসলে হয়ই নি । খন্দক যুদ্ধ  যে বিনা যুদ্ধেই শেষ হয়েছিলো তা নিয়ে  ঐতিহাসিকদের মধ্যে কোনো  মতভেদ নেই ।  কবি গোলাম মোস্তফা, ইসলাম ও মুহাম্মদের অন্ধ অনুরাগী,  এ প্রসঙ্গে কী বর্ণনা দিয়েছেন তা  শোনা  যাক । তিনি লিখেছেন – “আবু সুফিয়ান ভাবিয়াছিল, দুই-এক দিনের মধ্যেই তাহারা মদিনা জয় করিয়া আসিবে । কিন্তু দুই সপ্তাহ কাটিয়া গেল, তবু কিছুই হইল না ।  তখন সকলেই মহা দুর্ভাবনায় পড়িল । অবরোধ তুলিয়া তাহারা ফিরিয়া যাইবার মতলব করিল ।”  তিনি আরো লিখেছেন, “ আকাশে কালো মেঘ দেখা দিল । দেখিতে দেখিতে ভীষণ মরুঝটিকা উত্থিত হইয়া কোরেশদিগের সমুদয় ছাউনি উড়াইয়া লইয়া গেল । মুষলধারে বৃষ্টিপাত আরম্ভ হইল । শিবিরে আগুন নিভিয়া গেল । রসদপত্র ও অন্যান্য উপকরণও ভাঙয়া-চুরিয়া লণ্ড-ভণ্ড । ... ভীত-ত্রস্ত ও দিশেহারা হইয়া কোরেশগণ সেই রাত্রেই মদিনা পরিত্যাগ করিয়া তাড়াতাড়ি মক্কার পথ ধরিল ।” [দ্রঃ বিশ্বনবী, পৃ – ২০২,২০৩]  একই কথা বলেছেন ইবনে ইশাক ও আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন  ঐতিহাসিক আলা তাবারিও । তাঁরা বলেছেন,   Early biographer Ibn Ishaq says—and modern historians are in complete agreement—that "[t]he siege continued without any actual fighting" (p. 454). Early historian Tabari agrees: "The Messenger of God and the polytheists stayed in their positions for over twenty nights—nearly a month—with no warfare between the troops, except for the shooting of arrows and the siege" (vol. 8, p. 17). Again, modern western scholars agree on this point. http://wikiislam.net/wiki/The_Genocide_of_Banu_Qurayza]  অর্থাৎ এটাই সত্যি যে খন্দক যুদ্ধে যেখানে প্রকৃতপক্ষে যুদ্ধই হয় নি সেখানে বানু কুরাইজাদের মুহাম্মদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার কথাটাই অবান্তর   তথাপি মুহাম্মদ তাদের বিরুদ্ধে সম্পূর্ণ মনগড়া অভিযোগ নিয়ে এসেছিলেন এবং তাদের বিচারও করেছিলেন । আসলে ওটা ছিলো বিচারের নামে একটা মস্ত বড়ো প্রহসন  আর সেটা   পৃথিবীতে বিচারের নামে যতগুলি প্রহসন হয়েছিলো তাদের মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্টজার্মানির রাইখস্ট্যাগ নিজে পুড়িয়ে হিটলার  যেমন কম্যুনিস্টদের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে বিচারের নামে প্রহসন করেছিলেন, কিংবা রাসায়নিক অস্ত্র রাখার মিথ্যা অভিযোগে আমেরিকা যেমন সাদ্দামের বিরুদ্ধে বিচারের নামে প্রহসন করেছিলেন,  ঠিক সে রকমই একটি প্রহসন ছিলো বানু কুরাইজাদের বিরুদ্ধে এই বিচারটি । এই প্রহসনে বিচারক নিয়োগ করা হয়েছিলো মদিনার আউস গোত্রের  যে লোকটিকে      [সা’দ বিন মাজ] সে লোকটি তার স্বধর্ম [ইহুদি]  পরিত্যাগ করে কিছুদিন আগেই মুসলমান হয়েছিলো এবং খন্দক যুদ্ধে মুহাম্মদের পক্ষে  যুদ্ধ করেছিলোতাই কোনো সন্দেহ নেই যে সা’দ যে রায় দিয়েছিলো তা ছিলো পূর্বনির্ধারিতই যেমন জার্মানির সংসদ ভবন [রাইখস্ট্যাগ] পোড়ানোর বিচার ও সাদ্দামের বিচারের রায় ছিল পূর্বনির্ধারিতসা’দ যে রায় দিয়েছিলো  সেটাই সম্ভবত  ইতিহাসের সবচেয়ে কুৎসিত ও বীভৎস রায় ।  সা’দের রায়ে  ছিলো – “মুসলমানদিগের সহিত সন্ধির শর্ত ভঙ্গ করার দরুন সমুদয় ইহুদি পুরুষদিগের প্রাণদন্ড হইবে, স্ত্রীলোক এবং বালক-বালিকাগণ দাস-দাসীরূপে পরিগণিত হইবে এবং ইহুদীদিগের সমস্ত সম্পতি মুসলিম সৈন্যদিগের মধ্যে ভাগ করিয়া দেওয়া হইবে 
প্রহসন পর্ব শেষ হলে বানু কুরাইজাদের  সমস্ত  পুরুষদের মুণ্ডুচ্ছেদ করে হত্যা করা হয় ।  তাদের মৃতদেহগুলিকে মাটিতে পুঁতে ফেলার জন্যে মদিনায় একটা বাজারে একটা গণকবর খোঁড়া হয়েছিল । এক সঙ্গে ৭/৮ জনের একটা দলকে পিছনে হাত দুটো বেঁধে কবরের কাছে নিয়ে এসে লাইন দিয়ে হাঁটু ভাঁজ করে দাঁড় করিয়ে দিয়ে তারপর  মুণ্ডূচ্ছেদ  করে তাদের লাশগুলো ঐ কবরে ফেলে দেওয়া হয়েছিলো ।  এই নৃশংস গণমুণ্ডুচ্ছেদ কাণ্ড শেষ হতে অন্ধকার নেমে এসেছিলো ।  নিধন পর্ব শেষে মাটি দিয়ে ভরাট করে দেওয়া হয়েছিলো গণকবরটি । তারপর ঐ ইহুদি সম্প্রদায়ের সমস্ত নারী ও শিশুকে মুহাম্মদের সামনে এনে লাইন  করে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়েছিলো । মুহাম্মদ তাদের অবজ্ঞাপূর্ণ দৃষ্টিতে অবলোকন করছিলেন ।  বানু কুরাইজাদের প্রধান সেনাপতির স্ত্রী মাত্র ঊনিশ বছর বয়সী রায়হানা ছিলেন অপূর্ব সুন্দরী । তাঁকে দেখা মাত্রই তাঁর রূপ-সৌন্দর্য ও দেহসৌষ্ঠব দেখে তিনি মুগ্ধ ও অভিভূত হয়ে পড়েন এবং তাঁকে বিয়ে করবেন বলে স্থির করে ফেলেন   তাই তিনি তাঁর শিষ্যদের   রায়হানাকে তাঁর ভাগে রেখে দিতে বলেন ।  বন্দিনী নারীদের একটা দলকে মুসলমানদের মধ্যে বণ্টন করে দিয়ে একটা দলকে মুহাম্মদ  বাজারে বিক্রি করে  দিয়েছিলেন । বন্টন পর্ব শেষ হলে তিনি রায়হানাকে ইসলাম ধর্মে দীক্ষা নিতে বলেন । রায়হানা প্রত্যাখান করেন । মুহাম্মদ তখন তাঁকে  উপপত্নী করে রেখে দেন । এবং সেই বর্বর গণহত্যাকাণ্ডের পর পরই  তিন দিন ধরে  তিনি রায়হানার  সঙ্গে মধুচন্দ্রিমা যাপন করেন । ভয়ঙ্কর এই ঘটনাটি ইরানী বংশোদ্ভূত খ্যাতনামা ঐতিহাসিক আনোয়ার হেকমত  কীভাবে বর্ণনা করেছেন তা দেখা যাক –
There was a charming young girl among them by the name of Rayhana, who lost her husband and all of her male relatives in the massacre. As soon as muhammad’s eye caught sight of the wretched Jewess in the long line of women and children, an irresistible passion to posses her came over him. He signaled his soldiers to bring her as his share of booty. “As they passed before the conqueror, his eyes marked the lovely Rayhana, and he destined her for himself.”
The girl is reported to have been around nineteen and as she refused to embrace Islam, she was sent to his harem as a concubine: the honeymoon started that very night of massacre and lasted three days.” [Vide: Women and the Koran, Page – 50, 51]
ইহুদি রমণী রায়হানাকে মুহাম্মদের বিয়ে করার এই হলো প্রেক্ষাপট । রায়হানাকে বিয়ে করার পসচাতে মুহাম্মদের কোনো খারাপ উদ্দেশ্য ছিলো না । বরং তাঁকে রক্ষা করা এবং  ইহুদিদের সঙ্গে   ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক নির্মাণ করাই ছিলো মুহাম্মদের প্রকৃত উদ্দেশ্য বলে যা দাবি করা হয় তা যে  মিথ্যার চরম বেসাতি তা একজন শিশুর পক্ষে বোঝাও কঠিন নয় ।  রায়হানার অসাধারণ রূপ-যৌবন-সৌন্দর্য ও দেহসৌষ্ঠব দেখেই  মুহাম্মদ তাঁর প্রতি আসক্ত হয়ে পড়েছিলেন এবং তাঁকে বিয়ে করার সেটাই যে  একমাত্র  তা নিয়ে সংশয়ের কোনো অবকাশ নেই ।
 
  


  

KARBALA: Truth and Lies

  KARBALA : Truth and Lies           GIASUDDIN                 Translated by SRIJIB BISWAS        ...