Sunday, November 16, 2014

মুসলিম মৌলবাদীদের নতুন দোসর জুটেছে প্রাক্তন নকসাল ও মানবাধিকার কর্মীরা



খাগড়াগড় বিষ্ফোরণ কান্ডের প্রধান পান্ডা জেএমবির শীর্ষ নেতা সাজিদ ওরফে মাসুদ অবশেষে ধরা পড়েছে। শাকিল গাজি, যে খাগড়াগড় বিষ্ফোরণে ঘটনাস্থলেই মারা যায় সেও ছিলো বাংলাদেশের জঙ্গি এবং জেএমবির সদস্য। শাকিলের পরিচয় জানার পরই আশঙ্কা করা গিয়েছিলো যে খাগড়াগড় বিষ্ফোরণের সঙ্গে বাংলাদেশের জঙ্গি সংগঠন জেএমবি-র যোগ রয়েছে। সাজিদ ধরা পড়ার পর  খাগড়াগড়  বিষ্ফোরণের  সঙ্গে ‘জেএমবি’-র যোগের আশঙ্কাটা যে সতিই  তা নিয়ে আর সন্দেহ রইলো নাতদন্তে আরো যে সব তথ্য উঠে এসেছে তাতে কয়েকটি মাদ্রাসায় যে জঙ্গিরা ঘাঁটি গেড়েছিলো এবং সেই মাদ্রাসাগুলিতে জিহাদের পাঠ ও প্রশিক্ষণ দুইই দেওয়া হতো তাও নিশ্চিত হওয়া গেছে।এতদসত্ত্বেও মুসলিম সমাজের ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ এখনও বাংলাদেশী জঙ্গি-যোগের এই ঘটনাকে ভূয়া, মিথ্য এবং ষড়যন্ত্র বলে সমানে গলাবাজি করে চলেছেনসমানে গলাবাজি করে বলছেন যে মাদ্রাসায় জঙ্গিযোগের অভিযোগও সম্পূর্ণ মিথ্যা। সমস্তই মিডিয়ার বানানো গল্প এবং বিজেপিরি ষড়যন্ত্র ইত্যাদি। তাঁদের সঙ্গে সমানে গলা মেলাচ্ছেন মুসলিম বুদ্ধিজীবীগণের একাংশও।  ওঁদের এই গলাবাজি আমাদের মনে করিয়ে দিচ্ছে ‘চোরের মায়ের বড়ো গলা’ - এই প্রবাদ বাক্যটার কথা। এই  গলাবাজি আমাকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে কানাডিয়ান মুসলিম চিন্তাবিদ তারেক ফাতাহ-র একটা সাম্প্রতিক মন্তব্যও তিনি সম্প্রতি ভারত  সফরে এসে বলেছেন -  India is the  only country where Muslims exert influence without fear. ফাতাহ-র  কথাটা  সম্পূর্ণ ঠিক নয়, তবে সম্পূর্ণ ভুলও নয় এ দেশে মুসলিম সমাজের ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষই হয় নিরক্ষর, নয় অল্প শিক্ষিত এবং দরিদ্রতাঁদের প্রভাব প্রতিপত্তি বলে কিছু নেই, তাই তাঁদের প্রভাব খাটানোর কথাটা অবান্তর বৈ নয়।  তবে এ দেশে মুসলিম সমাজের ধর্মীয় নেতারা যে ভীষণ প্রভাবশালী ও দাপুটে তা নিয়ে সংশয় নেই।  তাই তারেক ফাতাহ-র কথাটা  একটু সংশোধন করে নিয়ে এ ভাবে বলা যেতে পারে - India is the only country where Muslim religious leaders [Muslim fundamentalists] exert influence without fear.  
মুসলিম ধর্মীয় নেতারা খুব প্রভাবশালী এ জন্যে নয় যে তাঁদের কথায় মুসলিমরা ভোট দেয়। তবু তাঁরা সরকারের উপর প্রবলভাবেই প্রভাব খাটাতে পারেন। এর পেছনে মূলতঃ তিনটি কারণ আমি দেখি। এক] মুসলিম সমাজের অজ্ঞতা ও ধর্মান্ধতা, দুই]. মুসলিম সমাজের বুদ্ধিজীবীদের একাংশের ধর্মান্ধতা ও একাংশের কাপুরুষতা এবং তিন] রাজনৈতিক দল ও নেতাদের ভোটের সংকীর্ণ ও নোংরা রাজনীতি। দু একটা দৃষ্টান্ত দেওয়া যাক। সংবিধান প্রণয়নের সময় এই ধর্মীয় নেতারা যখন বলেছিলেন যে আমাদের  মুসলিম ব্যক্তিগত আইনই চাই, তখন মুসলিম সমাজ ধর্মান্ধতা ও অজ্ঞতার কারণে নীরব ছিলো। মুসলিম বুদ্ধিজীবীরা এই আইন ক্ষতি করবে জেনেও  প্রতিবাদ করেন নি তখন রাজনৈতিক দলগুলো মুসলিম সমাজের ধর্মীয় নেতাদের দাবি মেনে নিয়েছিলোফলে সংবিধানে এই কুৎসিত আইনটি পাশ হয়ে যায়।  ধর্মীয় নেতারা মুসলিম সমাজকে বিশুদ্ধ ইসলামি আইনে বেঁধে  রাখার জন্যে ‘অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল’ বোর্ড’ তৈরী করে সরকারকে বলেন,  এই বোর্ডকে মান্যতা দিতে হবে। মুসলিম সমাজ যথারিতি নীরব থাকে। নীরব দর্শক হয়ে থাকেন মুসলিম সমাজের ভীরু ও স্বার্থপর বুদ্ধিজীবীরাও। সরকারও বলে দিলো, তথাস্তু। ধর্মীয় নেতারা বললেন যে এই বোর্ডই মুসলিমদের প্রতিনিধিত্ব করবে। আবারো একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটলো মুসলিম সমাজ ও এই সমাজের বুদ্ধিজীবীদের পক্ষ থেকে। সরকার আবারো বললো, তথাস্তু। ১৯৮৫ সালে সুপ্রীম কোর্ট একটি খোরপোষের মামলায়  শাহবানুর পক্ষে রায় দেয়। ধর্মীয় নেতারা প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীকে বললেন এই রায় বাতিল করতে হবে। মুসলিম সমাজ আবারো  চুপচাপ থাকলো, এবং নীরব দর্শক হয়ে বসে থাকলো বিবেকহীন কাপুরুষ বুদ্ধিজীবী সমাজওরাজীব গান্ধীও বিবেকের ঘরে তালা দিয়ে সংসদে বিল আনলেন যাতে মুসলিম মেয়েরা আর কোনো দিন খোরপোষ দাবি করতে না পারেন। সকল রাজনৈতিক দলগুলিও  লজ্জা-শরমের মাথা খেয়ে ঐ কালা বিলটিকে সমর্থন জানালো।
মুসলিম সমাজের ধর্মীয় নেতাদের এভাবেই একের পর এক প্রশ্রয় দিয়ে মাথায় তোলা হয়েছে ফলে তাঁদের প্রভাব দিনের পর দিন বেড়েছে তাঁরা তাই যে কোনো দাবি, তা হোক না অসাংবিধানিক ও অমানবিক, অবলীলায় ও নির্ভয়ে সরকারের কাছে জানাতে পারেনএমনকি নির্ভয়ে দেশের সংবিধানকে দু পায়ে মাড়িয়ে যাওয়ার দুঃসাহসও দেখাতে পারেন মুসলিম সমাজের  কেউ যদি ইসলামি আইনের ন্যায় সঙ্গত সমালোচনাও করেন তবে তাঁরা তাঁকে কতল করার ফতোয়া দিতে পারেন, এমনকি কতলও করতে পারেন পুলিশের নাকের ডগায়। কারণ, তাঁদের সাত খুন মাফ। এই ক্ষমতা তাঁরা ভোগ করে আসছেন যুগ যুগ ধরে সেই জোরেই তাঁরা বর্ধমানের খাগড়াগড় বিষ্ফোরণ কান্ডের সঙ্গে যুক্ত সন্ত্রাসবাদী সংগঠন জেএমবি (বাংলাদেশের জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ) এবং মুসলিম জঙ্গিদের পাশেও  দাঁড়াতে পারেন নির্ভয়ে এমনকি তাঁরা তদন্তকারী দলকে  তদন্তকার্যে বাধা দেওয়ার হুমকিও দিতে পারেনপ্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, মাওলানা সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী বর্ধমান শহরে প্রকাশ্য সমাবেশে তদন্তকারী দলকে তদন্তে বাধা দেওয়া এবং ধৃত জঙ্গীদের নৈতিক, আইনী ও আর্থিক সহযোগিতা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
এখন আবার নতুন দোসর ও দোহার জুটেছে মুসলিম সমাজের ধর্মীয় নেতাদের। কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস ও বামপন্থী দলগুলো তো আছে বরাবরই, এখন দেখছি প্রাক্তন নকসাল নেতা ও মানবাধিকার কর্মীরাও এই ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে গলা মেলাচ্ছেনএঁরা তো দেখছি ধর্মীয় নেতাদের মঞ্চ শেয়ার করতেও লজ্জা বা সংকোচ বোধ করছেন নাযাঁরা নিজেদের ধর্মনিরপেক্ষ বলে জাহির করেন তাঁরা  যে ধর্মীয় নেতাদের পাশে বসে তাঁদের দোসর ও দোহারের ভূমিকা পালন করতে পারেন তা আমার ধারণা ও বিশ্বাসের অতীত ছিলো। অবশ্য তাঁরা যা করছেন সবই মানবাধিকার রক্ষার অজুহাতে । কথায় আছে না, খলের ছলের অভাবহয় নাতা যাদের হয়ে এঁরা নির্লজ্জ ওকালতি করছেন তাদের পরিচয়টা একটু  বিশ্লেষণ করা যাক
খাগড়াগড় বিষ্ফোরণ কান্ডের প্রধান পান্ডা বাংলাদেশের মাসুদ রানা ওরফে সাজিদ হলো একজন ভয়ঙ্কর জঙ্গী। জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের দুই প্রধান শীর্ষ নেতা বংলা ভাই ওরফে সিদ্দিকুল ইসলাম এবং শায়খ রহমানের পরই ছিলো মাসুদের স্থান। ঐ দুই শীর্ষনেতার ফাঁসী হয়। তারপর জেএমবি-র সংগঠনকে পুনরুজ্জীবিত করার ভার মাসুদ নিজের কাঁধে তুলে নেয়কিন্তু হাসিনা সরকার ক্ষমতায় এসে সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার ফলে তাদের পক্ষে বাংলাদেশে জঙ্গি কার্যকলাপ চালিয়ে যাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে। তখন  মাসুম রানারা পশ্চিমবঙ্গে ঢুকে পড়ে এবং আস্তানা গাড়েএখান থেকেই তারা বাংলাদেশের বুকে তাদের জঙ্গি কার্যকলাপ পরিচালনা করে আসছিলো ২০১০ সাল থেকে। এবার একটু পরিচয় দেওয়া যাক জেএমবি সম্পর্কে।  
জেএমবি-র দুই শীর্ষনেতাকে বাংলাদেশ সরকার ফাঁসীতে ঝুলিয়ে প্রাণদণ্ড দিয়েছে যা থেকে আঁচ করা যায় এই সংগঠনটি কীরূপ ভয়ঙ্কর সংগঠন। এই জেএমবিই বিএনপি সরকারের আমলেই ২০০৫ সালের ১৭ই আগষ্ট কুড়ি মিনিটের মধ্যে ৬৩টি জেলায় ৩৭৬ টি জায়গায় সিরিজ বোমা বিষ্ফোরোণ  ঘটিয়েছিলকেনো বোমা হামলা চালিয়েছিলো তা তারা লিফলেট প্রচার করে জানিয়ে দিয়েছিলো। প্রচারপত্রের মাথায় লেখা ছিল - জাম’আতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বাংলাদেশে ইসলামী আইন বাস্তবায়নের আহ্বান। সেই আহ্বানপত্রে তারা বলেছিলো, ‘কোনও মুসলিম ভূখন্ডে আল্লাহর বিধান ছাড়া অন্য কোনও বিধান চলতে পারে না। কিন্তু বড়ই পরিতাপের বিষয়, শতকরা নব্বই ভাগ  মুসলিম বাস করা সত্ত্বেও আমাদের দেশে আল্লাহর বিধান কার্যকর নেই। উপরন্তু দেশের জেলা থেকে রাজধানী পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে নিম্ন ও উচ্চ আদালত গঠন করে যে বিচারকার্য পরিচালনা করা হচ্ছে তার মূল ভিত্তি হচ্ছে মনুষ্য রচিত সংবিধান। এই সংবিধান প্রণয়ন করেছে কিছু জ্ঞানপাপী মানুষ। কথা ছিল একজন মানুষ হিসাবে মানুষের কাজ হবে আল্লাহর দাসত্ব করা ও আল্লাহর বিধানের আনুগত্য স্বীকার করা।  কিন্তু মানুষ নিজেই সংবিধান রচনা করে আল্লাহর বিধানের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে।’ তারা আরো বলেছিলো,‘জামা আতুল মুজাহিদিন এর কর্মীরা আল্লাহর সৈনিক। আল্লাহর আইন বাস্তবায়ন করার জন্য এরা অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছে। যেমন তুলে নিয়েছিলেন নবি রাসুল, সাহাবিগণ ও যুগে যুগে বীর মুজাহিদগণ। জামা আতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ লিফলেট ও প্রচারপত্রের মাধ্যমে সরকারকে ইসলামি হুকুমত প্রতিষ্ঠা করার জন্য ইতিপূর্বে দু’বার আহ্বান জানিয়েছে। প্রতিবারই সরকার তাদের কর্মীদের গ্রেপ্তার করেছেজামা আতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ এর পক্ষ থেকে সরকারের প্রতি ইসলামি হুকুমত প্রতিষ্ঠার এটা তৃতীয় আহ্বান। এই আহ্বানের পর সরকার যদি এ দেশে ইসলামি হুকুমত প্রতিষ্ঠা না করে, বরং আল্লাহর আইন চাওয়ার অপরাধে কোনও মুসলিমকে গ্রেপ্তার করে অথবা আলেম ওলামাগণের উপর নির্যাতন চালায় তাহলে জামা আতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ পাল্টা ব্যবস্থা নেবে।’ এই জেএমবির জঙ্গিরাই ২০০৪ সালে রাজশাহী ও নওগাঁ এলাকায় পাঁচটি শরিয়া আদালতে বিচার করে ২২ জনকে কতল করেছিল। জেএমবির শীর্ষ জঙ্গি, সেকেন্ড ইন কমাণ্ড তার দায় স্বীকার করে বলেছিলো, ঐ ২২ জনের মৃত্যুদন্ডের জন্য বিচারকরা দন্ডনীয় নয়। কারণ, এগুলো হত্যাকান্ড নয়, কতল।  ২০০৪ সালের ২১শে আগষ্ট  বিএনপি সরকারের আমলে হাসিনার জনসভায় যারা গ্রেনেড হামলা চালিয়েছিলো তাঁকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে তারা কারা? এই মুসলিম সন্ত্রাসবাদী জঙ্গিরাই সেদিন গ্রেনেড ছুঁড়েছিল
এই হলো জামা আতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ তথা জেএমবি।  কিছুদিন আগে আল-কায়দা ভারতে তাদের কাজকর্ম  শুরু করার ঘোষণা দিয়েছে। আল-কায়দা ও জেএমবির যৌথভাবে কাজ শুরু করে থাকে তাহলে বুঝতে হবে আমাদের জন্যে আরো বড়ো বিপদ অপেক্ষা করছে। এই বিপজ্জনক সন্ত্রাসবাদীদের আড়াল করছেন খোলাখুলি ভাবে মুসলিম সমাজের ধর্মীয় নেতারা। বিএনপি ও বাংলাদেশের জামাতি ইসলামের কায়দায় এই ধর্গোমীয় নেতারা গোয়েবলসের ঢঙে গলার শিরা ফুলিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন এই বলে যে  মাদ্রাসা ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে বিজেপির হয়ে মিডিয়াগুলো সব বানানো গল্প  প্রচার করছে।  বিএনপি ও জামাতি ইসলামও বলেছিল যে বাংলাভাই সম্পর্কে এই একই কথা। বলেছিলো  বাংলাভাই বলে কিছু নেই, সবই মিডিয়া ও আওয়ামি লিগের বানানো গল্প।  বিষ্ময়কর ঘটনা হলো মুসলিম ধর্মীয় নেতাদের সংগে গলা মিলিয়ে তাঁদের পাশে বসে একই প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন কয়েকজন  প্রাক্তন নকসাল নেতা এবং কিছু মানবাধিকার  কর্মী এঁরা তো মুসলিম সমাজের ধর্মীয় নেতাদেরও ছাপিয়ে যাচ্ছেন এটা বোঝাতে যে বিজেপি ও কতিপয় মিডিয়া জোট বেঁধেছে মুসলমানদের বিরুদ্ধে। এঁরা আমাদের মনে করিয়ে দিচ্ছেন সেই প্রবাদ বাক্যটার কথা – রাজা যতো বলেন পারিষদ বলে তার শতগুণতা এই পারিষদরা কী অমৃত বাণী প্রচার করছেন তা একটু শোনা যাক। প্রক্তন তৃণমূল সাংসদ ও গায়ক কবির সুমন বলেছেন ‘এনআইএ’কে তদন্তভার দেওয়া হয়েছে রাজ্যে ৩৫৬ নং ধারা জারি করে তৃণমূল কংগ্রেসের সরকারকে ফেলে দেওয়ার জন্যে। বাঃ! কী চমৎকার রাজনৈতিক ভাষ্য। এমন উদ্ভট দাবি তৃণমূল কংগ্রেসও এখন পর্যন্ত করেনি। খবরে প্রকাশ যে  বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী সুজাত ভদ্র বলেছেন, রাজ্যের অনেক জায়গায় রাজনৈতিক কিংবা গ্রাম্য বিবাদে বোমাবাজি চলছে, ‘এনআইএ’ সেদিকে নজর না দিয়ে বর্ধমানের খাগড়াগড় নিয়ে এত ধরপাকড়, চিরুনি তল্লাশি করছে কেবলমাত্র এই কারণে যে অভিযুক্তরা সকলে মুসলমান। বন্দিমুক্তি কমিটির সম্পাদক ছোটন দাস বলেছেন বলে খবরে প্রকাশ, ‘এখন আমেরিকার চোখে মুসলমানদের দেখা হচ্ছে আর তার ফলে যখনই বিষ্ফোরণ কান্ড ঘটছে তখনই মাদ্রাসা ও পুরো মুসলমান সমাজকে জুড়ে দেওয়া হচ্ছে।’ ‘মুসলিম মজলিসে মুশাওয়ারাত’ - এর ডাকে ‘মাদ্রাসার বিরুদ্ধে চক্রান্ত’ এই শিরনামে আহূত সভায় ছোটন দাস আরো বলেন যে, আজকের ঘটনা বিক্ষিপ্ত ঘটনা নয়। এক দেশ, এক জাতি ও এক সংস্কৃতির ফেরিওয়ালা বিজেপি মুসলমানদের বিরুদ্ধে ঘৃণার বাতাবরণ সৃষ্টি করছে।  ... কুকুরকে মারার আগে যেমন পাগল বলা হয়, তেমনই মুসলমানদের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করা হচ্ছে। বোরকা, টুপি ও দাড়িকে টার্গেট করা হচ্ছে।’ ছোটন দাস জানিয়েছেন ধৃত জঙ্গিদের পক্ষে তাঁরা উকিল দেবেন আদালতে। এপিডিআর-ও একই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাংলাদেশে জেএমবি-র দুই শীর্ষনেতা বাংলাভাই ও শায়খ রহমানের পক্ষে বাংলাদেশে কেউ দাঁড়ায় নি। সেই জেএমবি-র ধৃত জঙ্গি যারা বিষ্ফোরণ স্থলে ধরা পড়েছে তাদের পক্ষে দাঁড়াবে এঁরা!  কেন? কারণ, তারা যে সংখ্যালঘু মুসলমান। বাঃ! কী চমৎকার!  ইসলামি আইন প্রতিষ্ঠার জন্যে হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করা যাদের জীবনের ব্রত সেই হত্যাকারীদের প্রাপ্য ধিক্কার, তাদের প্রাপ্য কঠোর শাস্তি। কিন্তু সুজাত ভদ্র ও ছোটন দাসরা বলছেন, না, তাদের মানবাধিকার রক্ষা করাই প্রধান কর্তব্য  বাঃ! মানবাধিকার  কর্মীদের কী চমৎকার মেনিফেস্টো!
মুসলিম সমাজের ধর্মীয় নেতাদের এই নব্য দোসর ও দোহারদের কাছে আমি কিছু প্রশ্ন উত্থাপন করতে চাই। আপনারা জঙ্গিদের পাশে দাঁড়াতে চান দাঁড়ান, কিন্তু মুসলিম নেতাদের মতো মিথ্যা প্রচারণা চালাচ্ছেন কেনো ? কে বা কারা কোথায় বলেছে যে সব মুসলমানরাই জঙ্গি? কোন মিডিয়া বা কোন দল বলেছে যে সব মাদ্রাসাতেই জঙ্গি কার্যকলাপ হয়? কেউ একথা বলে নি। এমনকি বিজেপিও না।  তাহলে আপনারা যাঁরা নিজেদের সত্যের ধ্বজাধারী ও সেক্যুলার বলে দাবি করেন কেনো এত মিথ্যা প্রচারণায়  মত্ত হয়ে উঠছেন? আপনারা দু-চার জন মুসলিম জঙ্গির মানবাধিকার নিয়ে খুব উতলা হয়ে উঠেছেন, তা খুব ভালো কথা।  কিন্তু মুসলিম ধর্মীয় নেতারা যখন সলমান রুশদি ও তসলিমা নাসরিনের মতো আন্তর্জাতিক খ্যাতিমান ব্যক্তিদের মুন্ডুচ্ছেদ করার ফতোয়া দেন তখন আপনাদের মানবাধিকার রক্ষার দর্শন কোথায় মুখ লুকায়? কিংবা সিরিয়া ও ইরাকে আইএস যখন শ’য়ে শ’য়ে ইহুদি, খৃষ্টান ও অন্যান্য বিধর্মিদের হত্যা করে, এমনকি শিয়াপন্থী মুসলিমদেরও পাইকারী হারে হত্যা  করে তখন?  কিংবা যখন নাইজিরিয়ায় বোকো হারামের জঙ্গি সন্ত্রাসীরা ইহুদি ও খৃষ্টানদের নারী,পুরুষ, শিশু, বৃদ্ধ নির্বিশেষে সকলকে নির্বিচারে হত্যা করে তখন? কিংবা যখন তারা শ’য়ে শ’য়ে স্কুল ছাত্রী ও অন্যান্য নারীদের অপহরণ করে নিয়ে গিয়ে হয় জোর করে ধর্মান্তরিত করে বিয়ে করে, তাদের ভোগ করে, কিংবা বিক্রি করে দেয় মোটা অর্থের বিনিময়ে তখন? কিংবা বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে  যখন হিন্দু, খৃষ্টান ও বৌদ্ধদের নির্বিচারে হত্যা করা  হয়, তাদের নারীদের ধর্ষণ করা হয় তখন? যখন ধর্ষণ ও হত্যার হাত থেকে বাংলাদেশের নিরীহ হিন্দুরা প্রাণ রক্ষার্থে এপার বাংলায় কিংবা ত্রিপুরায় পালিয়ে আসে তখন? হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মোল্লা-মুফতিরা যখন শাহবাগ আন্দোলনের রূপকার ব্লগারদের মোরতাদ আখ্যা দিয়ে শিরচ্ছেদ করার ফতোয়া দেয়, কিংবা তারা যখন ঢাকা অবরোধ করার নাম করে সশস্ত্র জমায়েত করে হাসিনা সরকারকে উৎখাত করার জন্যে হিংসায় মত্ত হয়  তখন?
যখন শ্বশুরের কাছে ধর্ষিতা ইমরানাকে ধর্মীয় নেতারা বলে, ‘তোর তালাক হয়ে গেছে,  তোকে এখন  তোর শ্বশুরকেই বিয়ে করতে হবে’, তখন আপনাদের টিকি দেখতে পাওয়া যায় না কেনো? কিংবা গুঁড়িয়াকে যখন জোর করে তাঁর স্বামীর কাছ থেকে অন্য এক তথাকথিত স্বামীর  বিছানায় তুলে দেয়  মোল্লা-মুফতিরা তখন আপনাদের মানবাধিকার রক্ষার সংগঠন বধির হয়ে যায় কেনো?  প্রতিদিন শত শত মুসলিম নারীর তালাক হয়ে যায় বিনা দোষে তখন? গতকালই বাঙ্গলাদেশের একজন অধ্যাপককে হিজাবের বিরোধ করায় হত্যা করা হয়েছে। নিশ্চয় এই মর্মান্তিক  খবরটি আপনাদের কানে ঢুকবে না। কেনো ঢুকবে না?     
আপনারা এখন সংখ্যাগরিষ্ঠের সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধের মহান কর্তব্য পালন করছেন  তা বুঝতে পারছিবিজেপি দিল্লিতে ক্ষমতায়, এবং পশ্চিমবঙ্গেও নবান্নের দোরগড়ায় দাঁড়িয়ে, সুতরাং হিন্দু সাম্প্রদায়িকতা এই মুহূর্তে  যে বড়ো বিপদ তা অনস্বীকার্য।  কিন্তু মুসলিম  ধর্মীয় নেতাদের কোলে বসে হিন্দু সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াই? মুসলিম ধর্মীয় নেতারা কবে থেকে ধর্মনিরপেক্ষ ও সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী শক্তি হলো? মমতা ব্যানার্জী ইমাম বরকতি, ইমাম শফিক ও পীরজাদা ত্বহা সিদ্দিকীদের মাঝে বসে মাথায় হিজাব পরে দুহাত তুলে আল্লাহর কাছে দোওয়া করে বিজেপির বিরুদ্ধে মহান [!] সংগ্রামে নিয়োজিত আছেন দেখি।  আর আপনারা তো দেখছি মাওলানা সিদ্দিকুল্লাহর চৌধুরীদের জুনিয়র পার্টনার হয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে [মহৎ!] সংগ্রাম শুরু করেছেন!  কি চমৎকার! হিন্দু পুরোহিত ও খৃষ্টান যাজকরা সাম্প্রদায়িক, আর মুসলিম মাওলানারা ধর্মনিরপেক্ষ?  কংগ্রেস, লালু, মুলায়ম এবং মেকি কম্যুনিস্ট ও মেকি বামপন্থীরা নাগাড়ে মুসলিম মৌলবাদিদের পদলেহন করে এসেছে এভাবেই বিজেপির জুজু দেখিয়েতাতে বিজেপিকে ঠেকানো যায় নি, বরং বিজেপি আরো শক্তিশালী হয়েছে এবং বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে কেন্দ্রে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছে। আপনারা তো এই মেকি কম্যুনিস্টদের নিকট থেকেই একদা বেরিয়ে এসেছিলেন। ওঁদের সঙ্গ ছেড়ে বেরিয়ে এসেছেন ঠিকই,  কিন্তু ওঁদের বস্তাপচা ধ্যন-ধারণাগুলি এখনও দিব্যি আঁকড়ে ধরে বসে আছেন। তাই সব কিছুতেই আমেরিকার হাত ও ষড়যন্ত্রের গন্ধ  শুঁকছেন আমেরিকার হাত দেখতে পান আইএস, বোক হারাম, আল-কায়দা, তালিবান, লস্কর-ই-তৈবা, হুজি, জেএমবি, ইন্ডিয়ান মুজাহিদ, সিমি, প্রভৃতি জঙ্গি সংগঠনগুলির পিছনেও তাই আপনারা মুসলিম সন্ত্রাওবাদ কোথাও দেখতে পান না। তাদের নিন্দা করার কোনো কারণ দেখতে পান না। কিন্তু আপনারা গাজায় ইহুদি ফ্যাসীবাদ ঠিক দেখতে পান, যেমন দেখতে পান ভারতে হিন্দু সাম্প্রদায়িকতা ও ফ্যাসিবাদ। আপনাদের এই একদেশদর্শিতার জন্যেই তো বিজেপির উত্থান হয়েছে। আপনারা যত মুসলিম মৌলবাদিদের তোল্লা দেবেন হিন্দু মৌলবাদীরা ততই পাল্লা দিয়ে বাড়বে। আসলে আপনারাই বিজেপির সবচেয়ে বড়ো বন্ধু।

KARBALA: Truth and Lies

  KARBALA : Truth and Lies           GIASUDDIN                 Translated by SRIJIB BISWAS        ...