Wednesday, September 17, 2014

দেশদ্রোহীতার অভিযোগে অভিযুক্ত আহমদ হাসান ইমরান কি ধর্মের সুড়সুড়ি দিয়ে পার পেয়ে যাবে ?



তৃণমূলের রাজ্যসভার সদস্য আহমদ হাসান ইমরানের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহীতার অভিযোগ  উঠেছে  এর আগেই সারদা কেলেঙ্কারীর সঙ্গে যোগসাজসের অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে । ইডির [ইনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টর] তদন্তকারী আধিকারিকরা তাঁকে ইতিমধ্যেই এই বিষয়ে দু দুবার জিজ্ঞাসাবাদও করেছেন সারদা-কেলেঙ্কারী হলো পশ্চিমবঙ্গের ইতিহাসে এ যাবৎ সবচেয়ে বৃহৎ  অর্থনৈতিক কেলেঙ্কারী । ভারতের  সবচেয়ে কুখ্যাত এই চিটফান্ড সংস্থাটি বেশী সুদের লোভ দেখিয়ে প্রায় দশ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করে প্রায় ১৭ লক্ষ লোককে পথে বসিয়েছে । সেই সারদা গ্রপের কর্ণধার সুদীপ্ত সেন তদন্তকারী আধিকারিকদের প্রশ্নের মুখে জানিয়েছেন যে আহমদ  হাসান ইমরানও সারদা গ্রুপের সঙ্গে জড়িত এবং তিনিও যারা সারদা গ্রপের থেকে কোট কোটি টাকা অয়াত্মসাৎ করে সারদাকে ডুবিয়েছে তাদের মধ্যে একজন ।  সংবাদে প্রকাশ যে, ইমরানের বিরুদ্ধে তোলা সুদীপ্তর   একট বড়ো অভিযোগ  হলো,  ১৫ কোটি টাকায় ইমরান তাঁর ‘কলম’ পত্রিকাটি তাঁকে বিক্রি করে দেওয়ার পরেও কাগজটার মালিকানা  হস্তান্তর করেন নি । খবরে প্রকাশ যে, ইডির আধিকারিকদের   প্রশ্নের জবাবে ইমরান যা বলেছেন তার মধ্যে প্রচুর অসামঞ্জস্য ও গড়মিল পাওয়া গেছে । তবে   না কি স্বীকার করেছেন যে তিনি ‘কলম’ পত্রিকা বিক্রি বাবদ সুদীপ্তর কাছ থেকে দশ কোটি টাকা নিয়েছেন । ইমরানের সম্পর্কে যে সব খবর প্রকাশিত হচ্ছে তাতে এটা দেখা যাচ্ছে যে তিনি একদিকে সুদীপ্তর চিটফান্ড ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত থেকে লক্ষ লক্ষ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে তাঁদেরকে পথে বসিয়েছেন, তিনিই আবার সুদীপ্তর সঙ্গে প্রতারণা করে কোটি কোটী টাকা আত্মসাৎ করেছেন । যাকে বলে বাটপাড়ি,  ইমরান ঠিক তাই করেছেন সুদীপ্তর সঙ্গে   ইমরান বহুদিন ধরে  চেষ্টা করে তাঁর একটা উজ্জ্বল ভাবমূর্তি গড়ে  তুলতে সক্ষম হয়েছিলেন মুসলিম সমাজের কাছে । সেই সুবাদে এতদিন তাঁর পরিচয় ছিলো যে, তিনি হলেন মুসলিম  সমাজের কল্যাণে নিয়োজিত ও আত্মোৎসর্গকারী একজন সৎ, পরিচ্ছন্ন  ও স্বচ্ছ ভাবমূর্তির মানুষ  ইমরানের এই ভাবমূর্তিকে আরো উজ্জ্বল করে তোলেন মমতা ব্যনার্জী তাঁকে রাজ্যসভার সাংসদ  নির্বাচিত করে ।  ইমরানের চোখ ঝলসানো এই উজ্জ্বল ভাবমূর্তি যে আদৌ সত্যি নয়, তা যে কেবলই কাঠ, কঞ্চি ও খড়ের কাঠামোর উপর কাদা রঙ তুলি শাড়ি গয়না দিয়ে তৈরী করা  দূর্গা প্রতিমার মিথ্যে  চোখ ধাঁধানো অপরূপ সৌন্দর্য মাত্র তা ধরা পড়ে যায় এক লহমায় এই সেদিন সারদা কেলেঙ্কারীর ধাক্কায় ।  পশ্চিমবঙ্গের মানুষ  সেদিন জানতে পারলেন  যে  ঈমানদার মুসলমানের লেবাসের মুখোসের আড়ালে  থাকা লুকিয়ে থাকা ইমরান আসলে  একজন ঠগ,  চোর ও প্রতারক বৈ নয় কিন্তু তখনও কি কেউ কল্পনা করতে পেরেছিলো  যে ইমরান শুধু  চোর, প্রতারক ও বাটপাড়ই নয়, তিনি একজন দেশদ্রোহী ও ভারতের শত্রুও  বটে ।  হ্যাঁ, ইমরানের বিরুদ্ধে গুরুতর এই অভিযোগটি নিয়েই দু দেশ – ভারত ও বাংলাদেশ -  এখন তোলপাড় ।

সারদার বিশাল অঙ্কের টাকা  সুদীপ্ত বিদেশে পাচার করেছেন – মারাত্মক এই  আশঙ্কা ও অভিযোগটি যে সত্যি তা ক্রমশঃ স্পষ্ট হয়ে উঠে সারদা কেলেঙ্কারী নিয়ে সিবিআই  তদন্ত শুরু করার পর থেকে ।  কিন্তু বোধ হয় কষ্মিনকালেও কেউ চিন্তাও করে নি যে, সেই পাচারের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল ও তাদের কোনো সাংসদের যোগ বা সম্পৃক্ততা থাকতে পারে । কিংবা কেউ এমনটিও কল্পনাও করতে পারে নি যে, সারদার টাকা কোনো সন্ত্রাসবাদী দলের হাতে যেতে পারে যাদের কাছে  সুস্পষ্ট রূপে ভারত  একটি  শত্রু দেশ ।  হ্যাঁ, কল্পনাতীত এমন একটা অভিযোগই সামনে এসেছে সারদার কর্ণধার  সুদীপ্ত ও তৃণমূল সাংসদ আহমদ হাসান ইমরানের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে যে বাংলাদেশের  জামাত-ই-ইসলামের তহবিলে সারদার কোটি কোটি টাকা পাঠানো হয়েছে সে দেশের সরকারকে উৎখাত করার উদ্দেশ্যে সংগঠিত হওয়া  হিংসাত্মক ও ধ্বংসাত্মক আন্দোলনকে সহায়তা দেওয়ার উদ্দেশ্যে   বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থা এরূপ দাবি করেছে বলে সংবাদে প্রকাশ এই সংস্থা আরো  দাবি করেছে যে সারদার বিপুল অঙ্কের টাকা জামাত ও তার অঙ্গ সংগঠনগুলির হাতে গিয়ে পৌঁছেছে ঐ সাংসদ আহমদ হাসান ইমরানের মাধ্যমে ।
বাংলাদেশের জামাতি ইসলাম একটি জঙ্গিবাদী রাজনোতিক দল । বাংলাদেশে শরিয়তি রাষ্ট্র স্থাপন করা তার প্রধান উদ্দেশ্য । সংসদীয় রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করলেও এই দলটি সংসদীয় রাজনীতিতে বিশ্বাসী নয়, বিশ্বাসী একমাত্র পবিত্র যুদ্ধ তথা  জিহাদেসন্ত্রাসবাদী কর্মকান্ডের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে শরিয়িতি রাষ্ট্র স্থাপনের  জন্যে তাই এই দলটি বিভিন্ন নামে  বাংলাদেশে জঙ্গি সংগঠন পরিচালনা করে  থাকে । এই দলের নেতারাই বাংলাদেশের মুক্তি যুদ্ধকে দমন ও ধ্বংস করার জন্যে পাক সেনাবাহিনীকে সাহায্য করার উদ্দেশ্যে রাজাকার, আল-বদর ও আল-সামস নামে প্রতিক্রিয়াশীল সংগঠন তৈরী করেছিল । তারা পাক সেনাবাহিনীর  সঙ্গে যৌথভাবে বাংলাদেশের বুকে যে নৃশংস গণহত্যালীলা ও তান্ডবলীলা চালিয়েছিলো ইতিহাসে তা বিরল ঘটনা । সেই বর্বর হত্যাকান্ড ও তান্ডবলীলার বলি হয়েছিলো  ত্রিশ লক্ষ বাঙালি এবং তিন লক্ষ বাঙালি নারীর সম্ভ্রম ।  এ হেন জামাতি ইসলামকে সারদা গ্রুপের কোটি কোটি টাকা দিয়ে সাহায্য করতে প্রধান ভূমিকা নিয়েছিলেন ইমরান ।  ইমরান  এই ভূমিকা পালন করেছেন ২০১২-১৩ সালে যখন যুদ্ধাপরাধী ওই জামাত নেতাদের বিরুদ্ধে বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে এবং প্রায় গোটা বাংলাদেশ তাদের ফাঁসীর দাবীতে উত্তাল । সেই  উত্তাল গণকন্ঠ ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত, স্তব্ধ ও বাঞ্চাল করার জন্যে তখন জামাতিরা হিংস্র  আন্দোলন পরিচালনা করছিলো । সেই আন্দোলনকে সফল করে তুলতে সারদায় সঞ্চিত লক্ষ লক্ষ গরীব মানুষের আমানতের  টাকা থেকে কোটি কোটি টাকা  ইমরান পৌঁছে দিয়েছিলেন জামাত নেতাদের হাতে ।   বাংলাদেশে গোয়েন্দা রিপোর্টের দাবি যে, শুধু অর্থই নয়, ইমরানের মাধ্যমে অর্থের পাশাপাশি আগ্নেয়াস্ত্র ও বিষ্ফোরকের বেশ কয়েকট চালানও ভারত থেকে পৌঁছে গিয়েছিলো জামাতের হাতে ।   এও শোনা যাচ্ছে  যে, বাংলাদেশের গোয়েন্দা রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, জামাত পরিচালিত বেশ কিছু হাসপাতাল, ব্যাঙ্ক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সারদার বিপুল পরিমাণ টাকা বেনামে লগ্নি করা হয়েছে এবং সেই টাকাও খরচ করা হয়েছে জামাতের সেই হিংস্র আন্দোলন তথা জ্বালাও-পোড়াও আন্দোলনে ।
সারদার টাকা দুভাবে বাংলাদেশে জামাতের হাতে পৌঁছে দেওয়া হতো বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে । বাংলাদেশের গোয়েন্দা রিপোর্টে বলা হয়েছে - এক). সীমান্ত অঞ্চলে নির্দিষ্ট চক্রের কাছে টাকা পোঁছে দেওয়া হতো  সারদার  এ্যাম্বুলেন্সে করে  এবং দুই). হাওলা ও হুন্ডির মাধ্যমেও সারদার টাকা পাঠানো হতো বাংলাদেশে ।  শুধু অর্থ পাচারই হতো না সারদার এ্যাম্বুলেন্সে, এমনকি বাংলাদেশে হিংসাত্মক আন্দোলনে আহত জামাতের নেতাদের ঐ এ্যাম্বুলেন্সে করেই পৌঁছে দেওয়া হতে এপারে সীমান্তের নিকটবর্তী বেসরকারি হাসপাতালে এবং চিকিৎসা শেষে ঐ এ্যাম্বুলেন্সেই আবার তাদের সীমান্তে পৌঁছে দেওয়া হতো । ভয়ঙ্কর এই কাজে  যুক্ত বলে যাদের নাম উঠে আসছে  তারা   তৃণমূল দলের  সঙ্গে যুক্ত ।    
কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্ট বলছে যে, পশ্চিমবঙ্গের ২০১১ সালের বিধান সভা নির্বাচনের আগেই বাংলাদেশের জামাতি ইসলামের সঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের উর্দুভাষী কিছু নেতার ঘনিষ্ঠতা হয়েছিলো এবং জামাতের লোকেরা সেই ভোটে সীমান্ত এলাকায় তৃণমূলের পক্ষে কাজ করেছিলো । সে সময় জামাতি ইসলাম নির্বাচনের কাজে তৃণমূলকে অর্থ দিয়েও সাহায্য করেছিলো । বাংলাদেশে একজন কূটনীতিক এমন কথাও বলেছেন বলে বলে শোনা যাচ্ছে যে, শুধু বিধান সভা নির্বাচনেই নয়, তারও আগে লোকসভা নির্বাচন ও ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনেও অনুপ্রবেশকারী জামাত নেতা-কর্মীরা তৃণমূলের হয়ে কাজ করেছে ।  তিনি আরো জানিয়েছেন যে, তৃণমূলের ঘনিষ্ঠ মুসলিম নেতারা বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে আসা জামাতের দুষ্কৃতিদের নানা জায়গায় মাসের পর মাস আশ্রয় দিয়ে রেখেছেন এবং সেই আশ্রয় শিবির এখনও বহাল আছে । গোয়েন্দা রিপোর্টে এও বলা হয়েছে যে, সেই সুসম্পর্ক থেকেই তৃণমূল দলও জামাতি ইসলামকে নানাভাবে সাহায্য করে এসেছে । সে সাহায্য তৃণমূল শুধু সারদার টাকা দিয়েইকরে নি, জামাতকে সন্তুষ্ট করতে  তিস্তা চুক্তি ও সীমান্ত চুক্তিও আটকে দিয়েছিলো এই দুটি চুক্তি আটকে দিয়ে জামাতিরা হাসিনার সরকারকে বিপদে ফেলতে চেয়েছিলো এবং  ভারত যে বাংলাদেশের শত্রু এই মিথ্যেটাকে সত্য বলে প্রমাণ করতে চেয়েছিলো ।  শাসক দল তৃণমূলের বিরুদ্ধে এ  অভিযোগ আগেই উঠেছিলো যে তারা মুসলিম মৌলবাদীদের সন্তুষ্ট করতে ইমরানকে রাজ্যসভার প্রার্থী করে জিতিয়ে এনেছিলোএখন তার সঙ্গে যেটা সংযোজিত হলো তা আরও মারাত্মক । অর্থাৎ শুধু পশ্চিমবঙ্গের মুসলিম মৌলবাদীদেরই নিয়, ইমরানকে প্রার্থী করার পেছনে বাংলাদেশের জামাতিদের  সন্তুষ্ট করাও তৃণমূলের লক্ষ ছিলো ।   
বাংলাদেশের জামতি ইসলামের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের শাসকদল তৃণমূল দলের এই মারাত্মক গোপন আঁতাতের অন্যতম প্রধান যোগসূত্র ইমরান বলে যে অভিযোগ উঠেছে তাকে তিনি ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছেন  । কিন্তু পারিপার্শ্বিক ঘটনাবলি ও সাক্ষ্য-প্রমাণ থেকে  তাঁর এই সাফাইকে  বিশ্বাসযোগ্য  বলে মনে হয় না । সংবাদ সূত্রে জানা যাচ্ছে যে, তিনি রাজ্যসভায় নির্বাচিত হওয়ার পর পরই বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাই কমিশনার পঙ্কজ সারন নয়াদিল্লীকে একটি রিপোর্ট পাঠিয়েছিলেন যাতে  বাংলাদেশের মাটিতে সক্রিয়  ভারত-বিরোধী জঙ্গিগোষ্ঠীগুলির সঙ্গে ইমরানের যোগাযোগের কথা উল্লেখ ছিলো । এই খবর পাওয়ার পর বিদেশ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক থেকে রাজ্য সরকারকে জানানো হয়েছিলো বলে  নবান্ন সূত্রে স্বীকার করা হয়েছে বলে খবর বেরিয়েছে । বাংলাদেশের মুসলিম মৌলবাদী দল, বিভিন্ন সংগঠন ও শক্তিগুলির সাথে ইমরানের যোগাযোগ রয়েছে তার খবর বিভিন্ন সূত্র থেকে উঠে আসছে । সে দেশের মুসলিম মৌলবাদীদিরা যেসব সংবাদপত্র ও বৈদ্যুতিন মাধ্যম চালায় সেগুলির মধ্যে ‘দিগন্ত’ টিভি ও ‘নয়া দিগন্ত’ সংবাদপত্র বিশেষ উল্লেখযোগ্য ।  বিদেশ মন্ত্রক সূত্রে খবরে প্রকাশ যে, জামাতি ইসলামের অনুসারী   ‘নয়া দিগন্তে’র ভারতীয় প্রতিনিধি হিসেবে ইমরান দীর্ঘদিন  কাজ করেছেন   সেই  কাগজে  ইমরানের বহু লেখাও প্রকাশিত হয়েছে   বিদেশ মন্ত্রক সূত্রে যে তথ্য সামনে এসেছে বলে খবর তাতো আরো চাঞ্চল্যকর ও মারাত্মক ।  সেই তথ্যানুসারে তিনি বাংলাদেশের শ্রী হট্ট অঞ্চল থেকে ১৯৭০-৭১ সালে ভারতে আসেন । তারপর আসাম ও উত্তরবঙ্গ হয়ে কলকাতায় আসেন । তারপর তিনি এ রজ্যে ‘ওয়েষ্ট বেঙ্গল মুসলিম স্টুডেন্টস আ্যাসোসিয়েশন’ নামে একটি মুসলিম মৌলবাদী ছাত্র সংগঠন তৈরী করেন ১৯৭৫-৭৬ সালে । ১৯৭৭ সালের ২৪ শে এপ্রিল আলিগড়ে জন্ম হয়েছিলো যে মুসলিম সন্ত্রাসবাদী সন্ত্রাসবাদী সংগঠন  ‘সিমি’ [স্টুডেন্টস ইসলামিক মুভমেন্ট অব ইন্ডিয়া]  তার একজন উদ্যোক্তাও ছিলেন তিনি এবং তিনি সেই সম্মেলন থেকেই ‘সিমি’র পশ্চিমবঙ্গ শাখার সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন । পরবর্তী তিন বছর তিনি ঐ পদে বহাল ছিলেন । ২০১১ এর ৯/১১ – এর ভয়ঙ্কর জঙ্গি হানার পর পর কেন্দ্রিয় সরকার সিমিকে নিষিদ্ধ করে । নিষিদ্ধ করা ইস্তক ইমরানই ছিলেন সিমির কর্ণধার । ইমরান সহ এ দেশের মুসলিম মৌলবাদীরা এখনও সন্ত্রাসবাদী এই সংগঠনের উপর থেকে নিষিধাজ্ঞা প্রত্যাহার করার জন্যে সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করে থাকে ।   অথচ সরকারের কাছে খবর রয়েছে  সিমি এখনও অন্য নামে  সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ চালিয়ে যাচ্ছে । 
ইমরান কলকাতার পার্ক সার্কাসের ১৯ দরগা রোডের অফিস থেকে ১৯৮১ সালে ‘সিমি’র মাসিক মুখপত্র হিসেব ‘কলম’ পত্রিকা বের করা শুরু করেন ।  তাঁর উপর ন্যাস্ত কাজের দায়িত্ব যোগ্যতার সাথে সম্পাদন করার জন্যে তাঁকে সিমির পাশাপাশি আরো বড়ো দায়িত্ব দেওয়া হয় । তাঁকে জেড্ডার ‘ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্ক’ – এর পূর্বাঞ্চলের অন্যতম কর্ণধার হিসেবে নিযুক্ত করা হয় । তারপর সিমির মাসিক মুখপত্র ‘কলম’ পত্রিকা ১৯৯৪ সাল থেকে সাপ্তাহিক পত্রিকা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে । পরে সারদার সঙ্গে যোগাযোগ ঘটলে দৈনিকে উন্নীত হয় ‘কলম’ । এই পত্রকাটি  বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে বিচার প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে  ধারাবাহিকভাবে খোলাখুলি খবর ও প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে । এই কাগজে হাসিনার বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে যে তাঁর সরকার বাংলাদেশের মাটি থেকে ইসলামকে মুছে দিতে গভীর ষড়যন্ত্র করছে ইসলামবিরোধী বিদেশী শক্তির সঙ্গে হাত মিলিয়ে ।  সেই ষড়যন্ত্র হলো  যুদ্ধাপরাধের মিথ্যা অভিযোগে জামাত ও মুসলিম সমাজের ধর্মীয় নেতাদের  ফাঁসী দিয়ে মুসলিম সমাজকে রক্তশুন্য [আলেমশুন্য] করা । শুধু অভিযোগই নয়, জামাত সেই বিচার প্রক্রিয়াকে বাঞ্চাল করার জন্যে যে খুন-হত্যা-অগ্নি সংযোগ ঘটিয়ে হাসিনার সরকারকে  উৎখাত করার অপচেষ্টা করে যাচ্ছিল তার পক্ষেও নিরবচ্ছিন্নভাবে ‘কলম’ পত্রিকায় এ দেশে জনমত তৈরী করার চেষ্টা করা হয়েছে নগ্নভাবে ।   সমস্ত মুসলিম মৌলবাদী সংগঠন ঐক্যবদ্ধ হয়ে যুদ্ধাপরাধী জামাত নেতাদের মুক্তির দাবিতে এ রাজ্যে  পথে নেমেছিলো ভারত সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করার জন্যে যাতে ভারত সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে সে দেশের উপর চাপ সৃষ্টি করে । এই আন্দোলন তৈরি করার ক্ষেত্রে ইমরান ও তাঁর কাগজ মুখ্য ভূমিকা  নিয়েছিলো । বাংলাদেশের ওই যুদ্ধাপরাধী জামাত নেতাদের মধ্যে গোলাম আযম, মতিউর রহমান নিযামি, দেলওয়ার হোসেন সাঈদি, আব্দুল কাদের মোল্লা প্রমুখের অনেকের সঙ্গেই ইমরানের প্রত্যক্ষ যোগাযোগ ছিলো বলে খবরে জানা যাচ্ছে । বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধীন ওই জামাত নেতারা [যাদের মধ্যে একজনে ফাঁসী হয়েছে, একজনে ৯০ বছরের জেল হয়েছে, কারো বিরুদ্ধে মৃত্যুদন্ডের সাজা ঘোষণা হয়েছে]  যে ভারতকেও শত্রু দেশ বলে মনে করে এবং সর্বদা ভারতবিরোধী কর্মকান্ড পরিচালনা করে তা সর্বজন বিদিত ।
দেশের মাটিতে বসে দেশবিরোধী কার্যকলাপে বিদেশের জঙ্গি সংগঠনকে মদত দেওয়া দেশদ্রোহী কাজ । এই অভিযোগ যদি ওঠে কোনো অনুপ্রবেশকারীর বিরুদ্ধে তবে সে অপরাধের মাত্রা বহুগুণ বেড়ে যায় তৃণমূল সাংসদ আহমদ হাসান ইমরানের বিরুদ্ধে সেই অভিযোগই উঠেছে । তিনি এই অভিযোগ অস্বীকার করছেন । আত্মপক্ষ সমর্থনের অধিকার সবার আছে । কিন্তু অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি যা বলছেন তা আর এক ধরণের ঘৃণ্য কৌশল ছাড়া কিছু নয়তিনি বলছেন না যে,  তদন্ত হোক, তদন্তের মুখোমুখি হতে আমি প্রস্তুত, অভিযোগ প্রমাণিত হলে যে কোনো শাস্তি মাথা পেতে নেবোঘুরিয়ে তিনি পাল্টা অভিযোগ করে বলছেন যে, আমি সংখ্যালঘু বলে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে আমাকে  ফাঁসানো হচ্ছে । এটা মুসলিম ভাবাবেগে সুড়সুড়ি দিয়ে  সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করার অপচেষ্টা বৈ নয় । এই হীন  প্রয়াস তিনি শুরু করেছেন যাতে তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা দেশদ্রোহীতার সমস্ত অভিযোগ  ধামাচাপা পড়ে যায় ।  তাঁকে বাঁচানোর জন্যে প্রত্যাশিতভাবেই তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছে শাসক দল এবং এ রাজ্যের মুসলিম মৌলবাদী নেতৃবৃন্দ, মুসলিম সাম্প্রদায়িক সংগঠনগুলি  এবং  মুসলিম বুদ্ধিজীবীদের একাংশ । তাঁরাও তারস্বরে চিৎকার করে ইমরানের সঙ্গে গলা মেলাচ্ছেন । এই মৌলবাদী নেতৃবৃন্দ হুমকি দিচ্ছে সংবাদ মাধ্যমগুলির উপর চড়াও হওয়ার । হুমকি দিচ্ছে সরকার যদি ইমরানের বিরুদ্ধে আইনগত  পদক্ষেপ করে তবে পথে নেমে অশান্তি করার । এ সব ঘটনা থেকে এটা স্পষ্ট যে ইমরান শুধু একা নয়, দেশদ্রোহীতার কাজে তাঁর সঙ্গে রয়েছে এক বিরাট চক্র   
অবিলম্বে ভারত সরকারের উচিত হচ্ছে ইমরানকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করা ।  ইমরানকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে যারা ভারতের মাটিতে বসে ভারতবিরোধী কাজে মুসলিম জঙ্গি সংগঠনগুলিকে মদত দিচ্ছে সেই চক্রটির হদিস করা সম্ভব হবে । অতীতে কংগ্রেস ও বামপন্থী দলগুলির অন্যায় প্রশ্রয় ও মদত পেয়ে মুসলিম মৌলবাদী ভারতবিরোধী এই চক্রটি ফুলে ফেঁপে দৈত্যকায় হয়ে উঠেছে । ধর্মীয় মৌলবাদী কর্মকান্ড সর্বদাই দেশের গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও  জাতীয় সংহতি নির্মাণের পক্ষে বড় বাধা হিসেবে পথরোধ করে । আর সেই মৌলবাদী শক্তি যদি মুসলিম মৌলবাদী শক্তি হয় তবে তা আরো বহুগুণ ভয়ঙ্কর বিপদের কারণ হতে পারে । এটা যে অমূলক কোনো আশঙ্কা নয় তা আল-কায়দা, তালিবান, লস্কর-ই-তৈবা,হুজি, হামাস, মুসলিম ব্রাদারহুড, বোকো হারাম, আইসিস প্রভৃতি মুসলিম জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলির কার্যকলাপই তার প্রমাণ । এ মতাবস্থায় আহমদ হাসান ইমরানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের জঙ্গি রাজনোতিক দল ও তার অঙ্গ জঙ্গি সংগঠনগুলিকে অর্থ ও অস্ত্র দিয়ে মদত দেওয়ার যে অভিযোগ উঠেছে তাকে অবহেলা বা উপেক্ষা করা যায় না । তা হলে তা হবে দেশের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তার সাথে আপোষ করা । ধর্মীয় সুড়সুড়ি দিয়ে ভারতে বসবাসকারী ভারতবিরোধী শক্তিগুলি যাতে পার পেয়ে না যায় সেটা দেখা ভারত সরকারের প্রাথমিক ও প্রধান কর্তব্য ।

KARBALA: Truth and Lies

  KARBALA : Truth and Lies           GIASUDDIN                 Translated by SRIJIB BISWAS        ...